
আগামী দিনগুলোতে আওয়ামী লীগকে কী করতে হবে সেটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের নবনির্বাচিত কমিটিকে সে অনুযায়ী কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এ অবস্থায় আগের কমিটির অধিকাংশ নেতাকে রেখেই নতুন যে কমিটি করা হয়েছে সেটা নিয়ে নানা আলোচনাও তৈরি হয়েছে। দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই কমিটি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে সেই অঙ্ক নিয়ে বসেছেন সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শেষ হয়েছে গত শনিবার। সভাপতি শেখ হাসিনা ও টানা তৃতীয়বার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৪৮ নেতা নির্বাচন করেছেন দলের কাউন্সিলররা। সভাপতিমণ্ডলীর দুটি পদ, ৫টি সম্পাদকীয় পদ ও ২৮টি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্যের পদ এখনো শূন্য রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলনে যেমন উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা থাকার কথা ছিল এবার শুরু থেকেই তাতে ঘাটতি দেখা গেছে। কারণ সম্মেলনে তেমন বড় পরিবর্তন হবে নাআগে থেকেই এই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবু কেউ কেউ যেমন পদোন্নতির আশায় ছিলেন, তেমনি বাদ পড়ার আশঙ্কাও ছিল।
নেতা নির্বাচনের অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনে নির্বাচনএ বিষয়টি মাথায় রেখে দলের নেতৃত্বে খুব বেশি পরিবর্তন চান না তিনি। নেতৃত্ব নির্বাচন শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে সারা বছর যারা সক্রিয় থেকেছেন, এবারের সম্মেলনে পদোন্নতির আশায় ছিলেনতারা নিরাশ হয়েছেন। আবার আগামী নির্বাচনের স্বার্থে যে ধরনের কার্যকর নেতৃত্ব মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন সেটা না হওয়ায়ও নিরাশ হয়েছেন নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ।
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের বড় একটি অংশ এবারের সম্মেলনে তাদের মূল্যায়ন হবে আশা করেছিল, নেতা হতে না পারায় বড় ওই অংশটিও হতাশ হয়েছে। আবার টানা দুই-তিনবার একই পদে পড়ে থাকা নেতারাও পদোন্নতি না হওয়ায় অসন্তুষ্টিতে আছেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচবার থাকা মাহাবুবউল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনিকে পেছনের দিকে রেখে এ পদের নেতাদের তালিকা ঘোষণা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সভাপতি শেখ হাসিনা প্রথমে হাছান মাহমুদের নাম ঘোষণা করেন, এরপর হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সর্বশেষ নাম ঘোষণা করেন দীপু মনির। সঙ্গে সঙ্গেই সম্মেলনস্থলে আলোচনার কেন্দ্র হয়ে ওঠেন হানিফ। উপস্থিত কাউন্সিলর-ডেলিগেটসহ সবার প্রশ্ন, ঘোষণা কী ভুল হলো? না হানিফ ও দীপু মনির পদাবনতি ঘটল? এরপর অনেকেই আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে ঢু মারতে শুরু করেন। গতকাল এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে আর কোনো নাম নেই। ২০তম সম্মেলনের পরও এ পদ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। সেবারও প্রথম হানিফের নাম ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় নাম ঘোষণা করা হয় জাহাঙ্গীর কবির নানকের। পরের দিন নানক গণভবনে গিয়ে তাকে এক নম্বর বানাতে সভাপতি শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন। এসময় তিনি রাজনীতিতে জ্যেষ্ঠতার কথা ও নিজের ত্যাগের কথা তুলে ধরেন, কিন্তু সংশোধন করা হয়নি।
অবশ্য গতকাল সকালে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, যেভাবে ঘোষণা হয়েছে সেটাই থাকবে। এই নিয়ে কমিটির সংশ্লিষ্ট পদের নেতাসহ কয়েক নেতার কাছে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রসঙ্গটি নিয়ে কোনো কথা বলতে পারব না।’ তবে তিনি বলেন, দুয়েকদিন পর বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সম্পাদকীয় পদের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অধিবেশন মঞ্চ থেকে যেভাবে ঘোষণা হয় সাধারণত ক্রমিক নম্বরও সেভাবেই থাকে। ঘোষণা অনুযায়ী থেকে থাকলে ৫ বারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ ও দীপুর পদাবনতি ঘটেছে।
একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশেষ পরিকল্পনায় ক্রমিকে হাছান মাহমুদকে এগিয়ে এক নম্বরে আনা হয়েছে। আগামী বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেখানে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এগিয়ে রাখা হয়েছে। তেমন কিছু ঘটলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা হাছান মাহমুদের। এ ছাড়া আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাকে এগিয়ে রাখার পরিকল্পনা থেকেও এটি হতে পারে। এবারও একই জটিলতায় পড়লেন হানিফ। এটি অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সম্মেলন ও নতুন নেতা নির্বাচন প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) যাকে নিয়ে দল পরিচালনা করবেন আমরাও তাকে চাই।’ আগামী নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে আনা ও আন্দোলন মোকাবিলায় এই কমিটি কতটা উপযুক্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই উপযুক্ত।’
নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাষ বোস দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন এই কমিটির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এরমধ্যে অন্যতম দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখাও চ্যালঞ্জ বলেন তিনি।
নতুন কমিটির চার চ্যালেঞ্জ
আওয়ামী লীগের নতুন নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দলের নবনির্বাচিত সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল রবিবার নির্বাচিত নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে এসব কথা বলেন তিনি।
সেখানে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে উদ্ধৃত করে দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, দলের মধ্যে যেখানে যে ছোটখাটো ভুলত্রুটি আছে তা মিটিয়ে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে বলেছেন তিনি।
নতুন কমিটির সামনে যে চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা তার মধ্যে প্রধান চ্যালেঞ্জটি হলো আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ বিএনপির ধ্বংসাত্মক রাজনীতি, মিথ্যাচার-গুজব মোকাবিলা করা। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব নিরসনে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরা। শেষ চ্যালেঞ্জ দলের ঐক্য অটুট রাখা।
করোনা মহামারী প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত নেতৃত্বকে বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ করোনা আবার চোখ রাঙাচ্ছে। এ ছাড়া অপপ্রচারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেছেন, পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত সংগঠনের কার্যক্রম বিস্তার করতে হবে। যেসব জেলায় সংগঠনের দুর্বল অবস্থা সেখানে সবল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচন পর্যন্ত সবাইকে ঘরে নয়, মাঠে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত শনিবারে সম্মেলনে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভালো। এখন শুধু তাদের উজ্জীবিত রাখাই কেন্দ্রীয় নেতাদের একমাত্র কাজ।
জানতে চাইলে ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা নির্বাচিতরা নেত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়েছি। এসময় তিনি ৪টি চ্যালেঞ্জ নতুন কমিটিকে মোকাবিলা করতে হবে জানিয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
বাম ঘরানার প্রভাব কমেছে
দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগে বাম আদর্শের অনুসারী নেতারাও যোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগে তাদের একরকম আধিপত্যও ছিল। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদকসহ সম্পাদকম-লীর একাধিক পদে ছিলেন বাম ঘরানা থেকে আসা নেতারা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে বাম আদর্শের নেতাদের সংখ্যা কমতে শুরু করে।
সর্বশেষ গত শনিবার দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে বিভিন্ন পদে নির্বাচিত ৪৮ নেতার মধ্যে বামপন্থা ছেড়ে আসা দুজন নেতা আছেন। তারা দুজনই সভাপতিম-লীতে আছেন। এ দুজন হলেন মতিয়া চৌধুরী ও শাজাহান খান। বাদ পড়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ ও আবদুল মান্নান খান। তাদের দুজনকেই দলের উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
যদিও বাম আদর্শের বিভিন্ন দল নিয়ে ২০০৪ সালে ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দলীয় জোট গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা বিএনপির বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন শুরু করে আদর্শিক জোট ১৪ দল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময় সরকারেও ছিলেন বাম শরিকের নেতারা। বাদ পড়েন বর্তমান সরকারের সময়।
শূন্যপদের দুই দিক। একদিকে কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে বেকার। দুই পক্ষ দুই মেরুতে অবস্থান করে। কর্তৃপক্ষ শূন্যপদ পূরণে বরাবরই অনীহা দেখায়। আর চাকরিপ্রার্থীরা হাহাকার নিয়ে অপেক্ষা করে।
এই দুই পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধের কাজটি ঠিকমতো করতে পারছে না সরকার। জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ যখন বেকার, তখন শূন্যপদ পূরণে যে তৎপরতা দেখানো দরকার তা অনুপস্থিত। দীর্ঘদিনে এই জায়গাটিতে কোনো দক্ষতাও গড়ে ওঠেনি।
নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার দায়িত্ব নিয়েই যেসব কাজে গুরুত্ব দিয়েছেন তার মধ্যে শূন্যপদ পূরণ অন্যতম। প্রশাসনের রেওয়াজ হচ্ছে তিন থেকে ছয় মাস পর সচিব সভা করা। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ সভায় প্রশাসনের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনার আলোকে নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছয় মাস অপেক্ষা করতে চাচ্ছেন না। এ কারণে সচিব সভা হওয়ার মাত্র ৩০ দিনের মধ্যেই তিনি নতুন করে সচিব সভা ডেকেছেন। আগের সচিব সভাটি ছিল বিদায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সভা। এবারের সচিব সভাটি হবে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব কীভাবে প্রশাসনকে সাজাতে চান তার বার্তা দেওয়ার সভা।
আজ সোমবার অনুষ্ঠেয় সভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শূন্যপদে নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা। বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও অধীনস্ত দপ্তরের শূন্যপদ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য সচিবদের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৈঠকে শূন্যপদ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন দর্শন বাস্তবায়নে সচিবদের ভূমিকা এবং ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মন্ত্রণালয়গুলোর ভূমিকা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। তবে শূন্যপদ কীভাবে পূরণ করা যায় সেটাই মুখ্য। সচিবদের শূন্যপদ সংক্রান্ত সব তথ্য সঙ্গে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া শূন্যপদের তথ্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও সংগ্রহ করেছে। সরকারের মোট শূন্যপদের সংখ্যা ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৭। এর মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয়ের অধীনেই ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৬। সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, ৬৬ হাজার ৫৩৪টি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শূন্যপদ ৫৬ হাজার ১৩৮, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩০ হাজার ৫৯১, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৭ হাজার ৬১০, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ২২ হাজার ৭৭৬, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১৪ হাজার ৬২৪, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ১২ হাজার ১২৩, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ১১ হাজার ১০২।
সরকারের মোট ৪৪টি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কিছু মন্ত্রণালয়ের একাধিক বিভাগ রয়েছে। সাধারণত একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় পরিচালিত হলেও প্রতিটি বিভাগের আলাদা সচিব রয়েছেন। এসব সচিবই আজকের সচিব সভায় অংশ নেবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, যে সাত মন্ত্রণালয়ে শূন্যপদ বেশি সেগুলোতে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হবে। বাকিগুলো তদারকির আওতায় থাকলেও কম গুরুত্ব পাবে। আর খেয়াল রাখা হবে এগুলোতে জনবল নিয়োগ করতে না করতেই যেন আবারও পদ শূন্য না হয়ে যায়। সংস্থাগুলো সাধারণত শূন্যপদ জমিয়ে রাখে। অর্থাৎ একসঙ্গে অনেক শূন্যপদ হলে তারা নিয়োগের উদ্যোগ নেয়। এই অবস্থা থেকেও বের হয়ে আসা যাবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের শূন্যপদের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, শূন্যপদ পূরণে কৃষি মন্ত্রণালয় তৎপর। কৃষির এত বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী যে, একদিকে লোক নেওয়া হয়, অন্যদিকে অবসরে চলে যায়। এসব শূন্যপদে যেন কোনো শূন্যতার সৃষ্টি না হয় সেটা আমরা বরাবরই লক্ষ রেখেছি।
দেশে যে পরিমাণ চাকরিপ্রত্যাশী তার তুলনায় চাকরির সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। শ্রম মন্ত্রণালয়ের মতে, প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ জনশক্তি শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এই কর্মসংস্থানের মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি আর ৯৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের। উচ্চশিক্ষা শেষ করে অনেকে সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করেন বছরের পর বছর। একাধিক বিসিএস এবং একের পর এক সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বেকারত্বের হার ৩৪ শতাংশ আর স্নাতক পর্যায়ে এই হার ৩৭ শতাংশ। মহামারীর আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত বেকারত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আইএলও’র এ বছর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে মহামারীর পর বেকারের সংখ্যা মহামারীর আগের তুলনায় ৫০ লাখ বেড়েছে।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল চাকরির সুবিধা পরিবারে পরিবারে পৌঁছে দেওয়া। যেখানে রাজস্ব খাতভুক্ত পদের বড় সংখ্যা শূন্য থাকে, সেখানে ক্ষমতাসীন দলের এ প্রতিশ্রুতি যে পূরণ হয়নি তা সহজেই অনুমান করা যায়। বছরে সরকার গড়ে ৫০ হাজার শূন্যপদ পূরণ করতে পারে। গত অর্থবছরে সরকার ৫১ হাজার ৯০৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছে। মহামারীর কারণে তার আগের অর্থবছর এই সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৫৫৩, যা অর্ধেকেরও কম।
বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকার পরও সরকার শূন্যপদে জনবল নিয়োগ করতে পারে না। এই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা শূন্যপদ পূরণে আগ্রহী হন না। জনবল নিয়োগ করতে গেলে ‘বদনাম’ হওয়ার আশঙ্কায় তারা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেন। বদনাম হলে আরও ওপরের পদে পদোন্নতি পাওয়ার আশা ভঙ্গ হতে পারে এ কারণে কর্মকর্তারা নিয়োগে আগ্রহ হারান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সচিব দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেই সবার আগে ডেকে পাঠান মন্ত্রী। তিনি জানতে চান নিয়োগে তার সুপারিশমতো কত শতাংশ নেওয়া হবে। অনেক ক্ষেত্রেই মন্ত্রীর কথা রাখতে গেলে আর কোনো প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ থাকে না। কখনো কখনো মন্ত্রীরা শূন্যপদের চেয়ে বেশিসংখ্যক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাপ দেন।
কিন্তু সচিবের বক্তব্যের ঠিক উল্টো অভিযোগ করেন মন্ত্রীরা। গত মাসে সচিবালয়ে চার নম্বর ভবনে গিয়েছিলেন একজন চাকরিপ্রার্থী। নওগাঁ থেকে আসা ওই প্রার্থী একটি অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগের সর্বশেষ অবস্থার খবর নিতে গিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে তিনি মন্ত্রীর রুমে পৌঁছে যান। শূন্যপদে নিয়োগের খবর নিতে মন্ত্রী ফোনে কথা বলেন ওই অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে। ফোনে কথা বলা শেষ করে মন্ত্রী উপস্থিত দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধিকে জানান, টাকা খাওয়ার হিসাব চূড়ান্ত করতে পারছেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকার হিসাব না মিলবে ততক্ষণ নিয়োগ আটকে রাখেন আমলারা।
মন্ত্রী-সচিবদের ধাক্কাধাক্কিতে একদিকে শূন্যপদ বাড়ছে। অন্যদিকে বেকারদের হাহাকার দীর্ঘতর হচ্ছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন সাবেক শিক্ষার্থী জানান, অনেকে মনে করেন ইংরেজিতে পাস করলেই চাকরি পাওয়া যায়। আসলে তা নয়। মাস্টার্স করতে করতেই ২৭ বছর পার হওয়া ওই তরুণ বলেন, বিশ^বিদ্যালয় শেষ করে চেষ্টা করলে দুটো বিসিএস দেওয়া যায়। এছাড়া নন-ক্যাডার চাকরিই ভরসা। কিন্তু তিন বছরে কত আর দরখাস্ত করা যায়। দরখাস্ত করলেই লিখিত পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ কার্ড আসে না। আবার অনেক সময় একদিনে পাঁচটি লিখিত পরীক্ষারও চিঠি এসেছে। আর ক্যাডার পদের সংখ্যা কম থাকায় এতে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। এসব কারণে বেসরকারি চাকরিই ভরসা। সেই বেসরকারি চাকরি করতেও ইদানিং ঘুষ দিতে হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
নিজে কিছু করছেন না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুব উন্নয়নে গিয়েছিলাম। তারা এক লাখ টাকা ঋণ দেবে। কিন্তু তারা সাপোর্ট হিসেবে জমির দলিল চায়। আমি জমির দলিল পাব কী করে। আমার বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় তো আমার নামে কোনো জমি হবে না।
বাংলাদেশ মধ্য ও উন্নত আয়ের দেশের দিকে যাচ্ছে। দেশে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়ের অভাব নেই। কিন্তু সমস্যা হলো এই তরুণদের উপযুক্ত শিক্ষা নেই। ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায়ও তারা দক্ষ নন। এই কারণে দেশীয় তরুণদের বাদ দিয়ে বিদেশিদের নিয়োগ দিতে হচ্ছে। এসব বিদেশি নাগরিক বছরে কয়েক বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের শূন্যপদ পূরণ করতে হলে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়া এসব পদ পূরণ করা সম্ভব হবে না। কার বদনাম হবে বা কে টাকা ঘুষ নিচ্ছে এগুলো উপেক্ষা করে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু সিদ্ধান্তেই চলবে না নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তা না হলে বিপর্যয়ের সময় শুনতে হবে জনবল নেই। নারায়ণগঞ্জের হাশেম ফুডের কারখানায় দীর্ঘ সময় আগুন জ¦লছিল। এ আগুন দ্রুত নেভানো গেল না দক্ষ জনবলের অভাবে।
প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে আরটি-পিসিআর সংবলিত মডার্ন মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবটি কোনো কাজে আসছে না। বর্তমানে এটি হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের রেস্ট হাউজে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গত কয়েক মাস ধরে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সুনির্মল রায় ভবনটিকে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করছেন।
করোনা মহামারীর সময়ে করোনা রোগী শনাক্ত করার জন্য সরকার হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে পিসিআরসহ মাইক্রো বায়োলজি ল্যাব তৈরির জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু ৫ বছরেও শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের নিজস্ব ক্যাম্পাস না হওয়ায় শুরু থেকেই হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের নতুন ভবনের ২টি ফ্লোর অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগটিতে ল্যাব স্থাপন করার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কক্ষটি দিতে প্রথমে গড়িমসি শুরু করেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে দ্রুত সময়ে আইসোলেশন বিভাগ থেকে পুরনো মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়।
হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে আইসোলেশন বিভাগে ৭টি এসি, নতুন টাইলস, সিলিং, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে মডার্ন মাইক্রো বায়োলজি ল্যাব স্থাপনে উপযোগী করে দেয়। কাজ শেষ হওয়ার পর ল্যাবটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নাকি মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ গ্রহণ করবেন এ নিয়ে শুরু হয় ঠেলাঠেলি। নানা অজুহাত দেখিয়ে কেউ এর দায়িত্ব নিতে রাজি না হওয়ায় এভাবে প্রায় ৬ মাস পার হয়ে যায়।
অবশেষে গত ১১ এপ্রিল গণপূর্ত বিভাগ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসার ডা. সুনির্মল রায়ের কাছে ল্যাবটি হস্তান্তর করে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ল্যাবের একটি এসি রুমে চেয়ার, টেবিল, পালং, পর্দা, টেলিফোনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়েছে।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওই কক্ষে অবস্থানরত অধ্যক্ষ সুনির্মলকে সেখানে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে দ্রুত বাথরুমে চলে যান। এ সময় তার সঙ্গে কলেজ থেকে আসা পিয়ন স্বাধীন সরকার ভবনের মূল গেটে তালা লাগিয়ে এ প্রতিনিধিকে নিয়ে বের হয়ে যান। স্বাধীন জানান, ‘স্যারের বাসা না থাকায় এখানে থাকেন।’
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনা মহামারীর বিষয়টি চিন্তা করে ল্যাব উপযোগী করতে দিন-রাত কাজ করিয়েছি। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য গণপূর্ত বিভাগ দৌড়ের ওপর রেখেছিল। দুঃখের বিষয় এখন তা রেস্টহাউজ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এখনো কাজের বিল না পাওযায় প্রতিদিন অফিসে ধরনা দিচ্ছি।
এদিকে মেডিকেল কলেজের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. কান্ত্রিপ্রিয় দাশের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মেশিনপত্র কবে আসবে তা তারা জানেন না। ভবনটি খালি পড়ে থাকায় সেখানে অধ্যক্ষ সুনির্মল রায় আপাতত বসবাস করছেন। মেশিনপত্র এলে তিনি সরে যাবেন।’
দেশে বছরজুড়ে করোনা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। বছরের শেষের দিকে সংক্রমণ সর্বনিম্নে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ভারত ও চীনে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট রোগটি নিয়ে দেশে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে আবার নতুন সতর্কতা দিয়েছে।
চলতি বছর ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব দেখেছে মানুষ। ডেঙ্গুতে ২২ বছরের ইতিহাসে এ বছরই সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ মারা গেছে। নতুন রোগ মাঙ্কিপক্স নিয়ে বেশ আতঙ্কে ছিল মানুষ। ডেঙ্গুও ভুগিয়েছে বেশ। সে হিসেবে এ বছর রোগ-শোক নিয়েই দিন কেটেছে মানুষের। স্বাস্থ্য বিভাগও ব্যস্ত ছিল এসব রোগ প্রতিরোধে, চিকিৎসাসেবায়।
অবশ্য স্বাস্থ্য খাতে বছরের বড় সাফল্য ছিল করোনার টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে। গত বছরের শেষের দিকে শুরু হওয়া করোনা টিকার বুস্টার বা তৃতীয় ডোজ কর্মসূচি এ বছর আরও গতি পায়। নতুন করে শুরু হয় ১২-১৭ বছর ও ৫-১১ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান কর্মসূচি।
চলতি বছর স্বাস্থ্য খাতে নতুন কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য পরামর্শক কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে একটা জিনিস পরিলক্ষিত হয়েছে যে আমরা সব সময় রি-অ্যাকটিভ, কোনো সময় প্রো-অ্যাকটিভ হতে পারলাম না; অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারি সমস্যা আসছে, কিন্তু সমাধানে আগেভাগেই কোনো কাজ করতে পারি না। যখন সমস্যা আসে, তখন খুব প্রো-অ্যাকটিভ হই, হুড়োহুড়ি শুরু করি। ফলে শুরুর দিকে বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয় মানুষকে, অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।’
এই জনস্বাস্থ্যবিদ চলতি বছর স্বাস্থ্য খাতে দুটি সাফল্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কভিডকে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমাদের মৃত্যুর সংখ্যা ও গুরুতর অসুস্থতা কম হয়েছে। দ্বিতীয় সাফল্য টিকা। কভিড টিকার সাফল্য অনেক বেশি। তবে এই সফলতার মধ্যেও অনেক ব্যর্থতা আছে। তৃতীয় ডোজ ঠিকমতো দিতে পারছি না। এখন চতুর্থ ডোজের লোকই পাওয়া যাচ্ছে না।’
বছর শেষে করোনায় নতুন উদ্বেগ : ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। এরপর এর প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের শুরুর দিক থেকে কমে আসে সংক্রমণ। তবে দফায় দফায় সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ভীতির সৃষ্টি করে জনমনে। এ বছর জুন-জুলাইয়ে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়লে চতুর্থ ঢেউয়ের আশঙ্কা করেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবেশী দেশ ভারত, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সে শঙ্কা আরও প্রবল হয়। বছরের শেষ দিকে এসে করোনা সংক্রমণের ধারা নিম্নমুখী হয়। কিন্তু এ মাসের শুরু থেকেই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নতুন করে উদ্বেগে ফেলেছে বাংলাদেশকে। ভারতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দেওয়ায় এবং চীনে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন করে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা এবং সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে সংক্রমণ সর্বনিম্ন। টিকা নেওয়ার হার ভালো। অনেকে সংক্রমিত হয়ে গেছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সারা বিশে^ ৯০ শতাংশ লোক হয় টিকা অথবা সংক্রমিত হয়ে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে সেই হার ৯৫ শতাংশ। সারা বিশে^র মধ্যে শুধু আফ্রিকার কয়েকটি দেশে টিকার অবস্থা ভালো নয়। বাংলাদেশে টিকার হার ভালো। কিন্তু নতুন ভ্যারিয়েন্ট যদি ছড়াতে থাকে, তাহলে সেটা আরও বেশি মিউটেশন বা পরিবর্তিত হয়ে আরও খারাপ হতে পারে। কাজেই সতর্ক থাকতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাত দিন পর গতকাল করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মারা গেল ২৯ হাজার ৪৩৯ জন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগী আরও কমে ছয়জনে ও শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হলো ২০ লাখ ৩৭ হাজার ২৪ জন।
সাফল্য করোনা টিকায় : চলতি বছর করোনা টিকা সংগ্রহ ও দেওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে স্বাস্থ্য খাত। বিশে^ যে পাঁচটি দেশ প্রথম টিকার ব্যাপারে পরিকল্পনা করেছিল তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। টিকাদানের হারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম এবং বিশে^র মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।
টিকার সংকট কেটে যাওয়ায় গণটিকা ও বুস্টার ডোজ দেওয়ার নানা উদ্যোগ নেয় সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল রবিবার পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ৮৭ শতাংশ টিকার প্রথম ডোজ, ৭৪ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ ও ৪৮ শতাংশ তৃতীয় ডোজ নিয়েছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া টিকার চতুর্থ ডোজ নিয়েছে ৬৬ হাজার ২৩৯ জন।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘গত বছরের মতো এ বছরও আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা টিকা কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা কভিড নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। কয়েক দফায় বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ায় দ্বিতীয় ডোজের হার বেড়েছে। এখন তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ চলছে। করোনা কমে যাওয়ায় মানুষের টিকা নেওয়ার আগ্রহ কিছুটা কমেছে। কিন্তু করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে টিকা নিতে হবে।’
মাঙ্কিপক্স নিয়ে আতঙ্ক : করোনার মধ্যেই নতুন রোগ মাঙ্কিপক্স আতঙ্ক দেখা দেয় দেশে। এ বছর আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশে^র প্রায় ১২টি দেশে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। গত আগস্টে ভারতেও মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। এ নিয়ে বাংলাদেশেও ভীতিকর অবস্থা তৈরি হয়। সংক্রমণ এড়াতে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের স্থল, বিমান ও নৌপথে সতর্কতা জারি করে। এর মধ্যে ঢাকায় চর্মরোগে আক্রান্ত একজন তুরস্কের নাগরিকের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে এমন খবরে হইচই পড়ে যায়। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই ব্যক্তি মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী নয় বলে জানায়। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব ঘটেনি।
ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব : দেশে ডেঙ্গুর ২২ বছরের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল বাদে বছরের প্রায় পুরোটা সময়ই দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। জুন থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে ওঠে। সেপ্টেম্বরে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়াও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এ সময় দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর শয্যা সংকট দেখা দেয়। আগের বছরগুলোতে সেপ্টেম্বরের শেষে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে এলেও এ বছর সেপ্টেম্বরের পর সংক্রমণ ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
অতীতের যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখেছে বাংলাদেশ। চলতি বছর এ পর্যন্ত মারা গেছে ২৭৬ জন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২ হাজার ২১ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৯ হাজার ৫৬ এবং ঢাকার বাইরের ২২ হাজার ৯৬৫ জন।
ছিল অন্যান্য রোগের প্রকোপ : ব্যাকটেরিয়াজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপও শঙ্কা ছড়িয়েছিল বছরের মার্চ ও এপ্রিলের দিকে। গরমের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মাঝে এই পানিবাহিত ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। এ অবস্থা চলমান থাকে অক্টোবর পর্যন্ত। এতে রাজধানীর মহাখালী কলেরা হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চাপ বাড়ে।
এ বছর দেশে অসংক্রামক রোগের প্রবণতাও বেড়েছে। হৃদরোগ, ক্যানসারসহ অনেক রোগের ব্যাপারে বছরজুড়ে সভা-সেমিনারে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
স্বপ্নের মেট্রোরেল এখন বাস্তবে রূপ নেবে। ২৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। উদ্বোধনের দিন প্রথম টিকিট কেটে যাত্রী হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সাধারণ যাত্রীরা ২৯ ডিসেম্বর থেকে চড়তে পারবেন মেট্রোরেলে। মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ২০ টাকা। এ ছাড়া কার্ডেও কাটা যাবে মেট্রোরেলের টিকিট। গতকাল রবিবার ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক এসব তথ্য জানান।
এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের প্রথম টিকিট কাটবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রী, সচিব, জাইকা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা ভ্রমণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে টিকিট কেটে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলে চড়বেন। এখন পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্তই হয়েছে।’
মেট্রোরেল সংশ্লিষ্টরা জানান, সাপ্তাহিক, মাসিক বা পারিবারিক কার্ডে আগে থেকে টিকিট কিনতে হবে। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা যন্ত্রে কার্ডে টাকা ভরা (রিচার্জ) যাবে। পরবর্তী সময়ে মুঠোফোনে রিচার্জের মতো করে যেকোনো জায়গা থেকে কার্ড রিচার্জের ব্যবস্থা চালু করা হবে।
প্ল্যাটফর্মে ঢোকার সময় যাত্রীদের কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে দরজা খুলবে না। এরপর নেমে যাওয়ার সময় আবার কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা না হলে যাত্রী বের হতে পারবেন না। আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেওয়া হবে। এটাকে সিঙ্গেল জার্নি টিকিটও বলা হয়। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটিও স্মার্ট কার্ডের মতো। ভাড়ার অতিরিক্ত যাতায়াত করলে ওই কার্ড দিয়ে দরজা খুলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করেই বের হতে হবে।
এদিকে মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া হবে ২০ টাকা। এখন দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে ভাড়া দিতে হবে ৬০ টাকা। উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা সাউথ স্টেশনের ভাড়া একই ২০ টাকা। এ ছাড়া প্রথম স্টেশন (উত্তরা নর্থ) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা।
আবার পল্লবী থেকে মিরপুর-১১ বা কাজীপাড়া যেকোনো স্টেশনে নামলেই ২০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। তবে পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া বা আগারগাঁও যেকোনো স্টেশনে নামলে ভাড়া দিতে হবে ৩০ টাকা। তবে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মেট্রোরেলে চলাচলে কোনো ভাড়া দিতে হবে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজধানীর বড় একটা অংশের যাত্রীদের এ মেট্রোরেলে চড়াতে পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে। আর মেট্রোরেল যানজটের শহরে নিরাপদ একটি বাহন হবে দেশের মানুষের জন্য।’
আওয়ামী লীগ নেতারা যা বলেন করেন তার উল্টোটা। কথা দিয়ে কথা না রাখাই তাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট। তাই আগামীদিনে বিএনপিকে নিজেদের সিদ্ধান্ত কর্মসূচি ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করতে হবে। গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা বলেন বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পঞ্চগড়ে বিএনপির গণমিছিলে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন যুবদল নেতা আরেফিন। তার মৃত্যু বিফলে যাবে না। জনগণ আগামীদিনে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে শহীদদের আত্মার শান্তি ফিরিয়ে আনবেন।’
গত ১৩ ডিসেম্বর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্মেলনের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির প্রস্তুতি সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের দিন ঢাকায় বিএনপির গণমিছিলের ডাক দেওয়ার সমালোচনা করে বলেন, ঐদিন আমাদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিএনপি গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটি উসকানি বা সংঘাত চাওয়ার শামিল। বিএনপি সেদিন গণমিছিল করতে চাইলে তাদের ঢাকার বাইরে করার পরামর্শও দেন ওবায়দুল কাদের।
পরে ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক আচরণ করতে চাই। এজন্য ১০ দফার আলোকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পুনঃবিন্যাস করছি। আমরা ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করব না। ঢাকা বাদে সারাদেশে যে কর্মসূচি রয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। ঢাকায় ২৪ তারিখের পরিবর্তে ৩০ তারিখ গণমিছিল করবে বিএনপি।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনুরোধ আমরা কর্মসূচি পেছালাম, সৌজন্যতা দেখালাম। বিনিময়ে তারা পঞ্চগড়ে আমাদের লাশ উপহার দিয়েছে। এই হলো আওয়ামী লীগের চরিত্র।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অতীত অপকর্মের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস কথা দিয়ে কথা না রাখার ইতিহাস। তারা যা বলে করে তার উল্টোটা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কাজ করে স্বৈরাচারের স্টাইলে। উনি একাধিকবার বলেছেন, বিরোধী দলীয় কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার কথার কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। গত ২২ আগস্ট ও ১২ অক্টোবরের কর্মসূচিতে বিএনপির ১৫ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায়। এরপর গত ২৪ ডিসেম্বর সারাদেশে গণমিছিলের কর্মসূচি পালনকালে পঞ্চগড়ে পুলিশ গুলি করে যুবদল নেতা আরেফিনকে হত্যা করেছে।’
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।