
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ঢাকায় বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচির জবাবে শান্তি সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল শুক্রবার ঢাকার ৯টি স্থানে এই কর্মসূচি পালন করে দলটি।
শ্যামলীতে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক আছে। আমরা কোনো ধরনের সহিংসতায় জড়াব না। তবে আঘাত করা হলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’
বিকেল পৌনে ৪টায় প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের শান্তি সমাবেশে যোগ দেন। তখন নেতাকর্মীদের অবস্থান গাবতলীমুখী মিরপুর সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তাদের নিরাপত্তার জন্য মাইক থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে গাবতলীমুখী সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট, যা পুরো নিউমার্কেট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের পর যান চলাচল শুরু হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি চেয়ে প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ৬০ বিশিষ্টজনের বিবৃতির সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ফখরুলের মুক্তি চায়, ভালো। ফখরুল তাদের বন্ধু। তাদের শুভাকাক্সক্ষী। তিনি অসুস্থ আমরা জানি না।’ তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডে বিবৃতি দিয়েছিলেন নাকি জানতে চান ওবায়দুল কাদের।
জঙ্গিবাদ রুখতে হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের রুখতে হবে। হাওয়া ভবনের লুটেরাদের রুখতে হবে। তারা (বিএনপি) বলে রাষ্ট্র মেরামত করবে। বিএনপি এই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে। এই রাষ্ট্রের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছে তারা। এই রাষ্ট্রে অর্থ পাচার করেছে বিএনপি। পাঁচ বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বিএনপি। তারা রাজনীতি নষ্ট করে। যারা নষ্ট রাজনীতি করে তারা রাষ্ট্র মেরামত করতে পারে না। ধ্বংস করতে পারে।’
শ্যামলী ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উত্তরা, ফার্মগেট, মহাখালী, গাবতলী, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, বাড্ডা ইউলুপ, যাত্রাবাড়ী এলাকায় আয়োজিত শান্তি সমাবেশে যোগ দেন। দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন এবং সমাবেশ করেন। ছাত্রলীগের উদ্যোগে শাহবাগ চত্বরে শান্তি সমাবেশ করা হয়।
বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে গতকাল দুপুর থেকে ঢাকার ৯টি স্থানে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জুমার নামাজের পরপরই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হতে থাকেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শ্যামলী সিনেমা হলের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে যোগ দেন। ওই সমাবেশ আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মোহাম্মদপুর থানা শাখা। জুমার নামাজের পর খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন।
সমাবেশে ওবায়দুল কাদেরের আগে বক্তব্য দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি সাদেক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা প্রমুখ।
১০ নম্বর জার্সির এই যে বিশেষত্ব তার একটি গল্প আছে এবং সেটা পেলেকে ঘিরেই। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে অনাকাক্সিক্ষতভাবে ১০ নম্বর পেয়ে যান ১৭ বছরের পেলে। ওই জার্সি গায়ে পুরো বিশ্বকাপ মাতিয়ে দেন। এরপর থেকে এই ১০ নম্বরের মহিমা বেড়ে যায়। ফুটবলে ১০ নম্বরের অর্থ দাঁড়ায় বিশেষ দ্যুতি ও সৃজনশীলতা। আর এই শুরুটা হয় সুইডেন বিশ্বকাপে পেলের পারফরম্যান্সের পরই। অথচ পেলে নিজেই বলেছিলেন এই জার্সি তার গায়ে ওঠার কথাই ছিল না। সাধারণ ১০ নম্বর যার জন্য ফুটবলে অসাধারণ হয়ে গেল সেই কিংবদন্তির বিদায়ে কাঁদছে ফুটবলাঙ্গন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুদে স্মরণিকায় ভরিয়ে তুলছেন ফুটবলের বাইরের লোকেরাও। বিশেষ মানুষদের ছাপিয়ে সংবাদমাধ্যম জনতার কাতারেও ছড়িয়ে পড়েছে শোক।
১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপে ব্রাজিল ফেডারেশন নম্বরবিহীন জার্সি পাঠিয়ে দেয় ফুটবলারদের জন্য। কিন্তু ১৯৫৪ বিশ্বকাপ থেকেই ফিফার নিয়ম জার্সিতে নম্বর থাকা চাই। তাই নম্বরহীন জার্সি নিয়ে বিপাকে পড়ে ব্রাজিল। ওই সময় ফিফার কোনো এক কর্মকর্তা ত্বরিত ব্রাজিল ফুটবলারদের জার্সি নম্বর ঠিক করে দেন। তাতে পেলের কাছে পড়ে ১০ নম্বরটি। এই ঘটনা অনেক বছর পর প্রকাশ্যে আসে। ওই সময় প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ১৭ বছরের তরুণ পেলে অবাক হয়ে বলেছিলেন, ‘আমি ভাবিনি এই জার্সি আমি পাব। কারণ জানতাম এটা দলে বয়সী বা অভিজ্ঞ কেউ পরে থাকেন। নবাগতরা ১০ নম্বর কখনই পরেন না।’ এ যেন ভবিতব্য। সেবার বিধাতা লিখেই রেখেছিলেন ১০ নম্বর উঠবে পেলের গায়ে। এরপর পেলের নামে ১০ আলোকিত হয়ে উঠবে ফুটবলে।
সেই পেলে বৃহস্পতিবার রাতে ফুটবলের পৃথিবীকে আঁধার করে দিয়ে ৮২ বছর বয়সে চলে গেলেন পরপারে। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত পেলে অনেক দিন ধরেই হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে হারলেন সেই যুদ্ধে। ব্রাজিল কিংবদন্তির বিদায়ে মনে পড়ে ১৯৭৭ সালে মৃত্যু নিয়ে তার করা উক্তি, ‘পৃথিবীতে সবকিছুই একটি খেলা। একটি ক্ষণস্থায়ী জিনিস। আমরা সবাই মৃত। আমরা সবাই একরকম, তাই না?’ ১০ নম্বর জার্সির মতো তার নামের নামকরণটাও চমকপ্রদ। পেলের আসল নাম এডসন আরান্তেস ডু নাসিমেন্তো। তবে ফুটবল মাঠেই কোনো একসময় তার সতীর্থ ‘বেলে’ নামের গোলরক্ষককে ডাকতে গিয়ে ভুলে তাকে পেলে ডেকেছিল কেউ। এরপর থেকেই পেলে নাম ছড়িয়ে পড়ে তার। নিজের নাম নিয়ে মৃত্যুর ব্যাপারে তার আরেকটি উক্তি ছিল এমন, ‘পেলে মরে না। পেলে কখনই মরবে না। পেলে চিরজীবী থেকে যাবে। কিন্তু এডসন একজন সাধারণ মানুষ, যে একদিন মারা যাবে। আর মানুষ তাকে ভুলে যাবে।’
পেলে ভুল বলেছেন। বিশ্ব তার বিদায়ে যেভাবে ফেটে পড়েছে, তাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম যেমন পেলেকে ইতিহাস, ঈশ্বর বলেছে। পেলের সতীর্থ ৯১ বছর বয়সী মারিও জাগালো আবেগঘন বার্তায় সতীর্থকে মনে রাখার কথাই বললেন, ‘সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ পেলে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। যে কিনা ১০ নম্বর জার্সিকে সম্মানিত করেছে। যে আমাদের সম্মানিত করেছে, সে চলে গেল। তুমি যেমন হাসিমাখা মুখে বিদায় নিলে আমিও তোমাকে হাসিমাখা মুখে আমার সঙ্গে রাখব। তুমি অবিনশ্বর।’ রোনালদো আরও একটু এগিয়ে লিখেছেন, ‘পেলে একজনই। সে সবসময়ই বিরাজমান। শীর্ষস্থানটা ধরে রেখে সে আজ আমাদের ছেড়ে গেল।’
এ ছাড়া পেলেকে লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমারসহ পুরো বিশ্বের সাবেক ও বর্তমান ফুটবলাররা স্মরণ করছেন নিজেদের শব্দে। ক্রীড়াক্ষেত্রের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ফুটবলের বাইরে আর কোনো খেলায় বিশ্বকে এক করা যায় না। এই একটি খেলার জন্য খুব কঠিন অবস্থা থেকে পেলের উঠে আসা শোনার মতো গল্প। আজ তার বিদায়ে আমি এবং আমার পরিবার গভীর শোকপ্রকাশ করছি।’ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পেলের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ফুটবলে পেলে অন্যতম সেরা একজন। খেলাই যে বিশ্বের মানুষকে একসুতোয় বাঁধতে পারে তা তিনি বুঝেছিলেন।’
শুধু উঁচু স্তরের নয়। ব্রাজিলে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকে সমবেদনা জানিয়ে দেশটির জনগণ পেলেকে স্মরণ করেছেন। বিশ্বের সকল ফুটবলপ্রেমী নিজেদের মতো পেলেকে স্মরণ করছেন। ঠিক যেমন দুই বছর আগে ডিয়াগো ম্যারাডোনার বিদায় স্মরণীয় হয়ে আছে।
আকাশের ঠিকানায় চিঠি হয়তো লেখা যায়, কিন্তু কোনো ডাকপিওন সেই চিঠি ওপারে পৌঁছে দেয় না। বছর দুয়েক আগে ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর যে খোলা চিঠি লিখেছিলেন পেলে, সেটা নিজেই বোধহয় নিয়ে গেলেন হাতে করে। মর্ত্যে কখনো আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর আর ফুটবলের রাজাকে একই দলে সতীর্থ হয়ে খেলতে দেখা যায়নি। স্বর্গে নিশ্চয়ই দেশের সীমানা, রাজনীতি এসব কিছু নেই। ওপারে নিশ্চয়ই একই জার্সিতে খেলবেন পেলে আর ম্যারাডোনা।
বছর দুই আগে, নভেম্বরের ২৫ তারিখে ধুলোর পৃথিবী ছেড়ে স্বর্গলোকে পাড়ি জমিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর। তার ধরাধামে আগমনের আগেই ফুটবলের রাজা সিংহাসনে বসে গেছেন ১৯৫৪’র বিশ্বকাপে। ম্যারাডোনা পৃথিবী ছাড়লেন ২০২০ সালে, পেলে আরেকটু বেশি দিন বাঁচলেন। দুজনের খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা সময়ে কেউই একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না, তবুও দুজনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে তুলনা হয়েছে প্রতিনিয়ত। দুজনের সম্পর্কে তিক্ততাও ছিল একটা সময়ে। একই সময়ে দুজনেরই আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়। দুজনেই দুজনের আত্মজীবনীতে অন্যকে নিয়ে বেশ বিরূপ কথাবার্তাই লিখেছেন। ম্যারাডোনা লিখেছিলেন যে, পেলের সঙ্গে সান্তোসের এক কোচের সমকামী সম্পর্ক আছে। অন্যদিকে পেলে আজীবন খেলায় মাদকের প্রভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন; ম্যারাডোনার মাদক গ্রহণের ব্যাপারে পেলে বলেছিলেন যে, এসব ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উৎসাহিত করে। সব মিলিয়ে দুজনের ভেতর সম্পর্কে একটা তিক্ততা থাকলেও পরে বরফ গলে এবং দুজনেই বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
ম্যারাডোনার মৃত্যুর দিন সাতেক পর বন্ধুকে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখেছিলেন পেলে। হৃদয়ের অনুভূতিগুলো শব্দের অক্ষরে হয়ে উঠেছিল এক বিয়োগগাথা; পেলে লিখেছিলেন, ‘তুমি নেই সাত দিন হয়ে গেল। সারাটা জীবন অনেকেই আমাদের তুলনা করে গেছে। তুমি ছিলে এক প্রতিভা, যার দ্যুতিতে বিমোহিত ছিল গোটা বিশ্ব। তুমি ছিলে বল পায়ে এক জাদুকর, সত্যিকারের কিংবদন্তি। তবে সবকিছুর ওপরে তুমি ছিলে আমার খুব কাছের বন্ধু। একজন বড় হৃদয়ের মানুষ।
আজকে আমি জানি, পৃথিবীটা আরও সুন্দর হতে পারত যদি আমাদের দুজনকে নিয়ে এত তুলনা না হতো আর আমরা পরস্পরকে আরও বেশি শ্রদ্ধা করতে পারতাম। আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, তোমার কোনো তুলনা হয় না।
তোমার ক্যারিয়ারজুড়ে ফুটবল খেলেছ বিশুদ্ধ আবেগ দিয়ে। আর তোমার মতো করে, তোমার পন্থায় তুমি আমাদের শিখিয়েছ প্রতিটা দিন কী করে ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলতে হয়। তুমি আগেভাগেই চলে গেলে, তাই আমাকে কথাটা বলার সুযোগ দিলে না। আজ বলছি, ডিয়েগো তোমায় অনেক ভালোবাসি।
হে আমার প্রিয় বন্ধু, জীবনের এই যাত্রায় পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। একদিন স্বর্গে নিশ্চয়ই আমরা একই দলের হয়ে খেলব। আর সেদিনই আমি গোল না করেও হাত উঁচিয়ে উদযাপন করব। কারণ সেদিনই যে আমি অবশেষে তোমাকে আবার জড়িয়ে ধরতে পারব।’
সেই দিনটা এসেই গেল অবধারিত ভাবে। সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে পেলে ভর্তি হয়েছিলেন বেশ কিছুদিন আগে, ডাক্তাররা শেষ চেষ্টা করছিলেন। কিছুদিন আগে পেলের পরিবারের সব সদস্য দেখা করেন তার সঙ্গে, বড়দিনের দিন সবাই ছিলেন হাসপাতালে। পেলের মেয়ে কেলি নাসিমেন্তোর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এর পোস্টগুলো থেকেই জানা যাচ্ছিল, সবাই আসলে তৈরি হচ্ছিলেন ফুটবলের রাজার অন্তিম যাত্রার জন্য।
পেলের নশ্বর দেহ পড়ে থাকবে মর্ত্য,ে তার আত্মা নিঃসন্দেহে পৌঁছে গেছে স্বর্গলোকে। ৮২ বছরের দীর্ঘ জীবনে পেলে অনেককেই দেখেছেন পৃথিবীর অধ্যায় শেষ করে অনন্তলোকে পাড়ি জমাতে। ইয়োহান ক্রুইফ না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পর পেলে শোক প্রকাশ করেছিলেন এভাবে, ‘ইয়োহান ক্রুইফ ছিল অসাধারণ এক খেলোয়াড় এবং কোচ। আমাদের ফুটবল পরিবারে সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক উত্তরাধিকার রেখে যাচ্ছে। আমরা অসাধারণ এক মানুষকে হারিয়েছে। আমরা যেন তার উৎকর্ষতার উদাহরণ মেনে চলতে পারি।’ পর্তুগাল কিংবদন্তি ইউসেবিওর মৃত্যুর পর পেলে লিখেছিলেন, ‘ইউসেবিও ছিল আমার ভাইয়ের মতো, তার মৃত্যুতে খুবই শোকাহত।’
অনন্তলোকে গিয়ে নিশ্চয়ই ম্যারাডোনার পাশাপাশি ক্রুইফ, ইউসেবিও সবাইকে নিয়েই একসঙ্গে খেলবেন পেলে। কী দারুণ একটা দলই না হবে সেটা! হাফটাইমে নিশ্চয়ই পেলে তাদের শোনাবেন এক খুদে জাদুকরের বিশ্বকাপ জেতার গল্পটা। কারণ এই কিংবদন্তিদের কেউই তো লিওনেল মেসিকে বিশ্বকাপ জিততে দেখে যেতে পারেননি। ম্যারাডোনা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন, আর্জেন্টিনাবাসী কি ভুলে গিয়েছে ডিয়েগোকে? পেলে হয়তো তখন বলবেন ‘না, মেসির মাঝেই তারা খুঁজে নিয়েছে তাদের প্রিয় ডিয়েগোকে।’
স্বর্গ থেকেই ফুটবলের দেবতা হয়তো এসেছিলেন মর্ত্য,ে পেলের বেশ ধরে। তিনিই ফিরে গেলেন অনন্তলোকে। পেছনে পড়ে রইল তিনটা বিশ্বকাপ আর কত স্মৃতি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসানকেই দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে বাছাই করেছে ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়ালেখকদের প্রাচীন সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ)। গতকাল সংগঠনটি দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় বিএসপিএ’র ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা-উত্তর সেরা দশ ক্রীড়াবিদের তালিকা ঘোষণা করে। ৯ সদস্যের স্বাধীন বিচারক প্যানেল নাম্বারিংয়ের ভিত্তিতে সেরা ১২০ জন ক্রীড়াবিদের মধ্য থেকে ১০ জন মনোনীত করেন। সেখান থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব। বিএসপিএ সভাপতি সনৎ বাবলার সবাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মনোনীত ১০ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এ সময় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়াসাংবাদিকদের এশিয়ান সংস্থা এআইপিএস এশিয়ার সভাপতি হি ডং জং এবং পৃষ্ঠপোষক বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ও বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। একই মঞ্চে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ক্রিকেট ব্যাটে জয় বাংলা লিখে মাঠে নামা রাকিবুল হাসানকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। এছাড়া ১০ জন জ্যেষ্ঠ ক্রীড়াসাংবাদিককে দেওয়া হয় সম্মাননা। মনোনীত ১০ ক্রীড়াবিদ ও ১০ ক্রীড়াসাংবাদিককে স্মারক ছাড়াও দেওয়া হয়েছে অর্থ পুরস্কার।
সদ্য প্রয়াত ফুটবলের রাজা পেলের প্রতি সম্মান জানাতে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। এরপর একে একে পুরস্কৃত করা হয় ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান রাখা ব্যক্তিদের। স্বাধীন ও স্বতন্ত্র বিচারক প্যানেল চুলচেরা বাছাই বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেছেন বাংলাদেশের সেরা ১০ ক্রীড়াবিদ। ক্রম অনুসারে মনোনীত শীর্ষ ১০ ক্রীড়াবিদ হলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান (দশম), সাঁতারু মোশাররফ হোসেন খান (নবম) স্প্রিন্টার প্রয়াত শাহ আলম (অষ্টম), শুটার আসিফ হোসেন খান (সপ্তম), ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা (ষষ্ঠ), বক্সার মোশাররফ হোসেন (পঞ্চম), ফুটবলার প্রয়াত মোনেম মুন্না (চতুর্থ), দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদ (তৃতীয়), ফুটবলার কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন (দ্বিতীয়) ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান (প্রথম)।
বিশেষ সম্মাননাপ্রাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রাকিবুল হাসান তার সম্মাননা উৎসর্গ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যদের। এ ছাড়া প্রাপ্ত অর্থ পুরস্কার তিনি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে দেওয়ার কথা বলেন। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের ক্রীড়া সম্পাদক দিলু খন্দকার বলেন, ‘চল্লিশ বছরে ক্যারিয়ারে প্রথম স্বীকৃতি পেলাম। সাংবাদিকরাও যে সম্মানিত হতে পারেন, সেটাই এই মঞ্চে প্রমাণিত হলো।’
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত হয়ে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘৬০ বছর পূর্তিতে আমরা অংশীদার হতে পেরে সম্মানিত হতে পেরেছি। এই সংগঠনের দীর্ঘ চলাটা সৌভাগ্যের। আমরা সৌভাগ্যের সাক্ষী। ক্রীড়াসাংবাদিকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। গণমাধ্যম খেলাধুলাকে সবার সামনে তুলে ধরে। খেলার ইতিহাসের নির্মাতা আপনারা। মূল পৃষ্ঠপোষকও আপনারাই। খেলোয়াড়দের আপনারাই তারকা বানান। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াও আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারি। আপনারা যেহেতু ফুটবল নিয়ে লেখেন, তৃণমূলের ফুটবল উঠে আসে না আপনাদের লেখনীতে। অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত থাকে, যা আমাদের কষ্ট দেয়। আশা করছি আপনারা তৃণমূলে দৃষ্টি দেবেন। সাধারণ মানুষের ভালোবাসার খেলা ফুটবল। যে ১০ জন সম্মানিত হয়েছেন, তারা স্বমহিমায় সেরা হয়েছেন। এদের মাধ্যমেই এদেশের ক্রীড়াঙ্গন সমৃদ্ধ হয়েছে।’
এআইপিএস এশিয়া সভাপতি হি ডং জং বলেন, ‘৬০ বছর একটা সংগঠনের বয়স। এটা বিশাল একটা ব্যাপার। আমার মনে হয় এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সংগঠন বিএসপিএ এবং অবশ্যই অন্যতম সেরা সদস্য। তারা ওয়েলফেয়ারে যেভাবে ক্রীড়াসাংবাদিকদের জন্য কাজ করছে, তা হতে পারে অনুকরণীয়। আমি সত্যিই অভিভূত এরকম আয়োজনের অংশ হতে পেরে। সব পুরস্কারপ্রাপ্তকে জানাই অভিনন্দন।’ প্রধান অতিথি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বিএসপিএকে। তারা শুধু উদযাপন করছে না। তারা তাদের জ্যেষ্ঠ ক্রীড়াসাংবাদিক ও ক্রীড়ালেখকদের সম্মানিত করছে। একই সঙ্গে আমাদের ক্রীড়াবিদদেরও সম্মান জানাচ্ছেÑ যা আপনাদের এই উদযাপন নতুনমাত্রা পেয়েছে। আমি আগেও আপনাদের নানা অনুষ্ঠানে এসে মুগ্ধ হয়েছি। আপনারা সবসময় আমাকে পাশে পাবেন।’
আগামী ১১ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগ ও মহানগরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে একই কর্মসূচি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট এবং ১১ দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ বর্তমান সরকারবিরোধী আরও কয়েকটি দল ও সংগঠন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে আলাদা আলাদাভাবে পালিত গণমিছিল কর্মসূচি থেকে এই গণঅবস্থানের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা ৩৩টি রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে এই গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হয়। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আরেক বিভাগীয় শহর রংপুরে গতকাল এই গণমিছিল বের করা হয়।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল দুপুরে গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ১০ দফা দাবির প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল। দ্বিতীয় কর্মসূচি হচ্ছে আগামী ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি। ঢাকায় এ কর্মসূচি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে হবে। ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে নয়টি বিভাগীয় শহরে একইভাবে চার ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। স্বৈরাচারী সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি দেব আমরা।’
গণমিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। মনে করেছিল, ১০ ডিসেম্বরের আগে মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করলে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাবে। যত গ্রেপ্তার, যত নির্যাতন হোক না কেন, রাস্তায় আমাদের নেতাকর্মী শুধু নয় জনগণ নেমে গেছে। আর তাদের দমানো যাবে না।’
দুপুর ২টায় গণমিছিল শুরুর ঘোষণা থাকলেও সকাল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। হলুদ, লাল, বেগুনিসহ নানান সব রঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ শোডাউন করেন তারা। জমায়েত হওয়া নেতাকর্মীরা সেখানে জুমার নামাজ আদায় করেন। কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেয়। বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে বিজয়নগরের নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়সহ আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে কাকরাইল ও মালিবাগ মোড় হয়ে মগবাজারে গিয়ে শেষ হয়।
শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ আমানের : বিএনপির গণমিছিলের সামনের অংশে থাকা নেতাকর্মীরা বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে মগবাজার মোড়ে এসে পৌঁছালে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান হ্যান্ডমাইকে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণমিছিল আজ শেষ। আমি মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করছি। আপনার সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যাবেন। কোনো ধরনের ঝামেলা করবেন না। মিছিলের পেছনে যারা আছেন তারাও মগবাজার এসে মিছিল শেষ করবেন।’ বিএনপির এই নেতা সবাইকে চলে যেতে বলার পাশাপাশি সড়কের জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন।
অবশ্য গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, গণমিছিল কাকরাইল, শান্তিনগর ও মালিবাগ হয়ে মগবাজার চৌরাস্তা ঘুরে ফের নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হবে।
এর আগে বিএনপি ছাড়াও আলাদাভাবে একইদিনে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছিল দলটির সঙ্গে বর্তমান সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে গণমিছিল বের করার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে তাদের সেখানে দেখা যায়নি। শান্তিনগর এলাকার একটি মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
এলডিপির গণমিছিল: যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীতে গণমিছিল করে এলডিপি। বিকেলে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে এলডিপি কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ মোড় ঘুরে মগবাজারে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। গণমিছিলে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এলডিপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিছিলপূর্ব সমাবেশে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আগামী ১১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারাদেশে গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
১২ দলীয় জোটের গণমিছিল : বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে ১১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন জোটটির নেতা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী মোহাম্মদ আবু তাহের, মুসলিম লীগের মহাসচিব জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ ইকরাম, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম ও বাংলাদেশ ইসলামী পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম।
১১ দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের গণমিছিল : বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করেন সমমনা জোটের নেতারা। পরে পুরানা পল্টন হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি মোড়ে গিয়ে শেষ হয় তাদের গণমিছিল। এর আগে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আগামী ১১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। গণমিছিলে উপস্থিত ছিলেন জাগপা’র সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি আজহারুল ইসলাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদেক এবং গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী।
প্রেস ক্লাবের সামনে গণমিছিলের আগে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ : সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সেখানে তারা সমাবেশ করেন। এই মঞ্চের ব্যানারে জোটবদ্ধ ৭ দলের কয়েকশ নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশ থেকে আগামী ১১ জানুয়ারি ১০ বিভাগে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বের করা গণমিছিল পল্টন মোড়, বিজয়নগর সড়ক হয়ে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পল্টন ও মতিঝিল এলাকায়ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষের সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন জামায়াতের ১১ জন। তাদের মধ্যে আহত দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টার দিকে মগবাজার থেকে জামায়াতের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি মৌচাক মোড়ে পৌঁছলে পুলিশের বাধায় কিছুটা পিছু হটে। পরে তারা মালিবাগের দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয় ১১ জনকে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখা থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শুক্রবার জামাত-শিবিরের ব্যানারে হঠাৎ মালিবাগ টাওয়ারের সামনে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজের পর অনুমতি ছাড়াই মিছিল শুরু করে জামায়াত। তারা মৌচাকে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড শুরু করে। এতে বাধা দেওয়ায় পুলিশের ওপর হামলা শুরু করে। জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলায় ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজন জামায়াত-শিবির কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, মৌচাকে জামায়াতের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান, রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. বায়েজীদুর রহমান, রমনা থানার উপরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ওসমান মাসুম, এসআই সুবীর কুমার কর্মকার, এসআই হাবিবুর রহমান, এসআই মোহাইমিনুল হাসান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কবির হোসেন, এএসআই মো. ফিরোজ মিয়া এবং পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) পূর্ব বিভাগের কনস্টেবল সৌরভ নাথ ও কনস্টেবল সাদী মোহাম্মদ।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘হামলাকারীদের হাতে জামায়াতের ব্যানার ছিল। তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।’
সংঘর্ষে আহত দুই জামায়াত কর্মীকে আটক করে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা হলেন আল আমিন (২৫) ও আব্দুর সোবহান (৬২)। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম শফিক জানান, মৌচাক-মালিবাগ এলাকায় মিছিল করার সময় তারা আহত হন।
আহত আল আমিন তেজগাঁও ইউনিট (২৫ মেট্রো) জামায়াতের বাইতুল মাল সম্পাদক। বাসা নাবিস্কো এলাকায়। আর আব্দুর সোবহান জামায়াতকর্মী বলে জানা গেছে। আল আমিনের মাথায় আঘাত রয়েছে। আর অপরজনের হাতে আঘাত।
এদিকে জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক থেকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর পর্যন্ত এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াতের কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। বিএনপির ঘোষিত ‘যুগপৎ কর্মসূচি’র গণমিছিলের সঙ্গে একাত্ম হয়ে শুক্রবার জামায়াতও ঢাকায় একই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার গতকাল দুপুরে পল্টন মোড়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে আমরা নিরাপত্তা বলয় রেখেছি যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়। ঢাকা শহরে যেহেতু জামায়াতে ইসলামীকে গণমিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়নি তারা কোথায় করবে আমরা তা জানি না।’
তিনি আরও বলেন, জনদুর্ভোগ যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে আমরা ঢাকা শহরে পুলিশ মোতায়েন করেছি। আগামীকাল থার্টি ফার্স্ট নাইট আর আজ রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের কর্মসূচি রয়েছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।