
আধুনিক মুদ্রা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনছে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রা। ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল বাস্তবতায় অন্তত দুই হাজার প্রতিষ্ঠান এসব মুদ্রার লেনদেন করছে। বেশ কয়েকটি দেশে এসবের প্রচলন শুরু হলেও বাংলাদেশ এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। তবে দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অবৈধ লেনদেন হচ্ছে বলে জানা গেছে। ভার্চুয়াল মুদ্রা লেনদেনকারীদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ; অভিযুক্ত করছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মানি লন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি তারা।
ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো ভার্চুয়াল মুদ্রা যা ডিজিটাল ওয়ালেটে বা আইডির মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। এই কারেন্সির লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। ব্লকচেইন তথ্য সংরক্ষণের একটি ডিজিটাল পদ্ধতি। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি তথা চেইনের মতো করে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এসব মুদ্রার লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে থাকে না। ব্যবহারকারীরা পরিচয় প্রকাশ না করে সরাসরি লেনদেন করে।
গত বছরের মে মাসে বিটকয়েন লেনদেনের অভিযোগে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে ১২ জনকে আটক করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে ২৯টি কম্পিউটার, ৩টি ল্যাপটপ, ১৫টি মোবাইল ফোন এবং নথিপত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করে। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেপ্তার সুমন বাড্ডায় ৩২ জন কর্মচারী নিয়ে বিটকয়েনের ব্যবসা করেছে। সে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাটসহ প্লট ও সুপার শপের মালিক হয়েছে।
বলা হয়, এই ১২ জন দেশের সবচেয়ে বড় বিটকয়েনের লেনদেনকারী গ্রুপ। র্যাব দাবি করে, তদন্তে গ্রুপটির বিটকয়েন লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য জানা গেছে। এরপর বাড্ডা থানায় করা র্যাবের মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি সিআইডি ঢাকা মেট্রো উত্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফরেনসিক রিপোর্ট। জব্দ করা ডিভাইসগুলো সংশ্লিষ্ট ইউনিটে পাঠানোর পর এখনো ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। ফলে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
একই মামলায় মানি লন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান করছে সিআইডির ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তবে এখনো তারা মামলা দায়ের করতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা জানায়, এখন পর্যন্ত দুটি ভার্চুয়াল ওয়ালেটের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এগুলোতে কী পরিমাণ লেনদেন হয়েছে তা প্রমাণ করার উপায় তাদের জানা নেই। অভিযুক্তরা নিজেদের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেনের বিষয়ে যেসব বার্তা আদান-প্রদান করেছে তাও মামলা করতে সহায়ক হবে। মানি লন্ডারিং আইনে ওয়ালেটের লেনদেনের তথ্য ছাড়া মামলা দুর্বল হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন না করায় এর তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে ওয়ালেট দেখিয়ে চার্জশিট করা ছাড়া বিকল্প নেই।
ভার্চুয়াল কারেন্সি লেনদেনের অন্য ঘটনাগুলোর অনুসন্ধান শুরু করেছে ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তবে অনুসন্ধান শেষ করে মামলা দায়ের করতে পারেনি তারা। সিআইডির ফিনান্সিয়াল ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিটকয়েন লেনদেনের একটি মামলার অনুসন্ধান প্রায় শেষের দিকে। শিগগির মামলা দায়ের করে বিস্তারিত তদন্ত শুরু করা হবে।
পুলিশের অন্য ইউনিটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের অভিযোগে ২৮ জনের বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইউনিটে মামলার তদন্ত চলছে। অধিকাংশ মামলার তদন্তই ফরেনসিক প্রতিবেদন না পাওয়ায় আটকে আছে। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষ করেছে। কেবল ওয়ালেট শনাক্ত করেই আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে তারা। এ বিষয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মত জানা যায়নি।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্লকচেইননির্ভর মুদ্রা লেনদেন অনেক বেড়েছে। ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে অপরাধীরাও লেনদেন করছে। প্রযুক্তির নতুন এই বিষয় নিয়ন্ত্রণে পুলিশের দক্ষতা নেই বললেই চলে, তাই যথাযথ তদন্ত হচ্ছে না। প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ডিভাইস ছাড়া এসব মামলার তদন্ত বা অনুসন্ধান গতি পাবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, পুলিশের উচিত বিটকয়েনের মতো মাধ্যম ব্যবহার করে অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে আলাদা টিম করা, যারা এসব বিষয়ে প্রযুক্তিতে দক্ষ হবে। অর্থ পাচারের বিষয়ে যারা অনুসন্ধান করছে তাদেরও প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় ডিভাইস দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, পুলিশ শুধু ওয়ালেট শনাক্ত করেই তদন্ত শেষ করছে। নিজেরা দক্ষ হয়ে উঠতে না পারলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তাদের উচিত যারা এসব বিষয়ে এক্সপার্ট তাদের সহযোগিতা নেওয়া।
ফরেনসিক পরীক্ষায় সিআইডির সক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করে সিআইডির ফরেনসিক শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার ড. মো. নাজমুল করিম খান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট মামলার ফরেনসিক পরীক্ষার সক্ষমতা আমাদের আছে। তবে কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষা করছি তা গোপনীয়। আমাদের কাছে আসা ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত মামলার রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছি। কোনো রিপোর্ট ঝুলে নেই।
বছরের শুরুতে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তরে। তাতে পুলিশের সাইবার ইউনিট এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের প্রশিক্ষণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার সংগ্রহের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চিঠিতে বিটকয়েনের ব্যবহারকারী ও ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশনার পাশাপাশি বিটকয়েনের প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞানলাভে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়।
তখন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ইন্টারপোল ও এফবিআইয়ের সঙ্গে সিআইডির কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেছে। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তারা প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেবে। তবে নজরদারির সরঞ্জামাদির দাম অনেক বেশি হওয়ায় এখনই তা কেনা হবে না। এ ছাড়া ডার্কওয়েব ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে তিন বছরের প্রশিক্ষণ দেবে বলেছে। এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত উদ্যোগ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৭ সালে বিটকয়েনের মতো কৃত্রিম মুদ্রায় লেনদেন করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। এর পরেও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তারা।
ক্রিপ্টোকারেন্সিকে একেবারে নাকচ না করার ব্যাপারে কথাবার্তা চলে সংস্থাগুলোর মধ্যে। সরকারের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি ডিভিশন ২০২০ সালের মার্চে ন্যাশনাল ব্লকচেইন স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করে। কৌশলপত্রে তারা বলে, ব্লকচেইন স্টার্টআপে ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। ভবিষ্যতে এটা বাড়তে পারে। বাংলাদেশি সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা একটা সুযোগ। ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকায় বাংলাদেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না।
স্ট্র্যাটেজিতে বলা হয়, যথাযথ প্রযুক্তি, আইন ও নীতিকাঠামোর অভাবে এ ধরনের ডোমেইন দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পথ উন্মুক্ত করে দিতে পারে। এই উভয় সংকট কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে ভাবা উচিত।
গত বছর একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে সিআইডি অভিমত চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ জবাবে বলে, ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন স্বীকৃত না হলেও এটিকে অপরাধ বলা যায় না। তবে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর আওতায় অপরাধ গণ্য হতে পারে।
১০ নম্বর জার্সির এই যে বিশেষত্ব তার একটি গল্প আছে এবং সেটা পেলেকে ঘিরেই। ১৯৫৮ বিশ্বকাপে অনাকাক্সিক্ষতভাবে ১০ নম্বর পেয়ে যান ১৭ বছরের পেলে। ওই জার্সি গায়ে পুরো বিশ্বকাপ মাতিয়ে দেন। এরপর থেকে এই ১০ নম্বরের মহিমা বেড়ে যায়। ফুটবলে ১০ নম্বরের অর্থ দাঁড়ায় বিশেষ দ্যুতি ও সৃজনশীলতা। আর এই শুরুটা হয় সুইডেন বিশ্বকাপে পেলের পারফরম্যান্সের পরই। অথচ পেলে নিজেই বলেছিলেন এই জার্সি তার গায়ে ওঠার কথাই ছিল না। সাধারণ ১০ নম্বর যার জন্য ফুটবলে অসাধারণ হয়ে গেল সেই কিংবদন্তির বিদায়ে কাঁদছে ফুটবলাঙ্গন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুদে স্মরণিকায় ভরিয়ে তুলছেন ফুটবলের বাইরের লোকেরাও। বিশেষ মানুষদের ছাপিয়ে সংবাদমাধ্যম জনতার কাতারেও ছড়িয়ে পড়েছে শোক।
১৯৫৮ সুইডেন বিশ্বকাপে ব্রাজিল ফেডারেশন নম্বরবিহীন জার্সি পাঠিয়ে দেয় ফুটবলারদের জন্য। কিন্তু ১৯৫৪ বিশ্বকাপ থেকেই ফিফার নিয়ম জার্সিতে নম্বর থাকা চাই। তাই নম্বরহীন জার্সি নিয়ে বিপাকে পড়ে ব্রাজিল। ওই সময় ফিফার কোনো এক কর্মকর্তা ত্বরিত ব্রাজিল ফুটবলারদের জার্সি নম্বর ঠিক করে দেন। তাতে পেলের কাছে পড়ে ১০ নম্বরটি। এই ঘটনা অনেক বছর পর প্রকাশ্যে আসে। ওই সময় প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ১৭ বছরের তরুণ পেলে অবাক হয়ে বলেছিলেন, ‘আমি ভাবিনি এই জার্সি আমি পাব। কারণ জানতাম এটা দলে বয়সী বা অভিজ্ঞ কেউ পরে থাকেন। নবাগতরা ১০ নম্বর কখনই পরেন না।’ এ যেন ভবিতব্য। সেবার বিধাতা লিখেই রেখেছিলেন ১০ নম্বর উঠবে পেলের গায়ে। এরপর পেলের নামে ১০ আলোকিত হয়ে উঠবে ফুটবলে।
সেই পেলে বৃহস্পতিবার রাতে ফুটবলের পৃথিবীকে আঁধার করে দিয়ে ৮২ বছর বয়সে চলে গেলেন পরপারে। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত পেলে অনেক দিন ধরেই হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে হারলেন সেই যুদ্ধে। ব্রাজিল কিংবদন্তির বিদায়ে মনে পড়ে ১৯৭৭ সালে মৃত্যু নিয়ে তার করা উক্তি, ‘পৃথিবীতে সবকিছুই একটি খেলা। একটি ক্ষণস্থায়ী জিনিস। আমরা সবাই মৃত। আমরা সবাই একরকম, তাই না?’ ১০ নম্বর জার্সির মতো তার নামের নামকরণটাও চমকপ্রদ। পেলের আসল নাম এডসন আরান্তেস ডু নাসিমেন্তো। তবে ফুটবল মাঠেই কোনো একসময় তার সতীর্থ ‘বেলে’ নামের গোলরক্ষককে ডাকতে গিয়ে ভুলে তাকে পেলে ডেকেছিল কেউ। এরপর থেকেই পেলে নাম ছড়িয়ে পড়ে তার। নিজের নাম নিয়ে মৃত্যুর ব্যাপারে তার আরেকটি উক্তি ছিল এমন, ‘পেলে মরে না। পেলে কখনই মরবে না। পেলে চিরজীবী থেকে যাবে। কিন্তু এডসন একজন সাধারণ মানুষ, যে একদিন মারা যাবে। আর মানুষ তাকে ভুলে যাবে।’
পেলে ভুল বলেছেন। বিশ্ব তার বিদায়ে যেভাবে ফেটে পড়েছে, তাকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম যেমন পেলেকে ইতিহাস, ঈশ্বর বলেছে। পেলের সতীর্থ ৯১ বছর বয়সী মারিও জাগালো আবেগঘন বার্তায় সতীর্থকে মনে রাখার কথাই বললেন, ‘সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ পেলে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। যে কিনা ১০ নম্বর জার্সিকে সম্মানিত করেছে। যে আমাদের সম্মানিত করেছে, সে চলে গেল। তুমি যেমন হাসিমাখা মুখে বিদায় নিলে আমিও তোমাকে হাসিমাখা মুখে আমার সঙ্গে রাখব। তুমি অবিনশ্বর।’ রোনালদো আরও একটু এগিয়ে লিখেছেন, ‘পেলে একজনই। সে সবসময়ই বিরাজমান। শীর্ষস্থানটা ধরে রেখে সে আজ আমাদের ছেড়ে গেল।’
এ ছাড়া পেলেকে লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমারসহ পুরো বিশ্বের সাবেক ও বর্তমান ফুটবলাররা স্মরণ করছেন নিজেদের শব্দে। ক্রীড়াক্ষেত্রের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ফুটবলের বাইরে আর কোনো খেলায় বিশ্বকে এক করা যায় না। এই একটি খেলার জন্য খুব কঠিন অবস্থা থেকে পেলের উঠে আসা শোনার মতো গল্প। আজ তার বিদায়ে আমি এবং আমার পরিবার গভীর শোকপ্রকাশ করছি।’ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পেলের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘ফুটবলে পেলে অন্যতম সেরা একজন। খেলাই যে বিশ্বের মানুষকে একসুতোয় বাঁধতে পারে তা তিনি বুঝেছিলেন।’
শুধু উঁচু স্তরের নয়। ব্রাজিলে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকে সমবেদনা জানিয়ে দেশটির জনগণ পেলেকে স্মরণ করেছেন। বিশ্বের সকল ফুটবলপ্রেমী নিজেদের মতো পেলেকে স্মরণ করছেন। ঠিক যেমন দুই বছর আগে ডিয়াগো ম্যারাডোনার বিদায় স্মরণীয় হয়ে আছে।
আকাশের ঠিকানায় চিঠি হয়তো লেখা যায়, কিন্তু কোনো ডাকপিওন সেই চিঠি ওপারে পৌঁছে দেয় না। বছর দুয়েক আগে ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর যে খোলা চিঠি লিখেছিলেন পেলে, সেটা নিজেই বোধহয় নিয়ে গেলেন হাতে করে। মর্ত্যে কখনো আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর আর ফুটবলের রাজাকে একই দলে সতীর্থ হয়ে খেলতে দেখা যায়নি। স্বর্গে নিশ্চয়ই দেশের সীমানা, রাজনীতি এসব কিছু নেই। ওপারে নিশ্চয়ই একই জার্সিতে খেলবেন পেলে আর ম্যারাডোনা।
বছর দুই আগে, নভেম্বরের ২৫ তারিখে ধুলোর পৃথিবী ছেড়ে স্বর্গলোকে পাড়ি জমিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর। তার ধরাধামে আগমনের আগেই ফুটবলের রাজা সিংহাসনে বসে গেছেন ১৯৫৪’র বিশ্বকাপে। ম্যারাডোনা পৃথিবী ছাড়লেন ২০২০ সালে, পেলে আরেকটু বেশি দিন বাঁচলেন। দুজনের খেলোয়াড়ি জীবনের সেরা সময়ে কেউই একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না, তবুও দুজনের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে তুলনা হয়েছে প্রতিনিয়ত। দুজনের সম্পর্কে তিক্ততাও ছিল একটা সময়ে। একই সময়ে দুজনেরই আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়। দুজনেই দুজনের আত্মজীবনীতে অন্যকে নিয়ে বেশ বিরূপ কথাবার্তাই লিখেছেন। ম্যারাডোনা লিখেছিলেন যে, পেলের সঙ্গে সান্তোসের এক কোচের সমকামী সম্পর্ক আছে। অন্যদিকে পেলে আজীবন খেলায় মাদকের প্রভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন; ম্যারাডোনার মাদক গ্রহণের ব্যাপারে পেলে বলেছিলেন যে, এসব ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উৎসাহিত করে। সব মিলিয়ে দুজনের ভেতর সম্পর্কে একটা তিক্ততা থাকলেও পরে বরফ গলে এবং দুজনেই বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
ম্যারাডোনার মৃত্যুর দিন সাতেক পর বন্ধুকে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখেছিলেন পেলে। হৃদয়ের অনুভূতিগুলো শব্দের অক্ষরে হয়ে উঠেছিল এক বিয়োগগাথা; পেলে লিখেছিলেন, ‘তুমি নেই সাত দিন হয়ে গেল। সারাটা জীবন অনেকেই আমাদের তুলনা করে গেছে। তুমি ছিলে এক প্রতিভা, যার দ্যুতিতে বিমোহিত ছিল গোটা বিশ্ব। তুমি ছিলে বল পায়ে এক জাদুকর, সত্যিকারের কিংবদন্তি। তবে সবকিছুর ওপরে তুমি ছিলে আমার খুব কাছের বন্ধু। একজন বড় হৃদয়ের মানুষ।
আজকে আমি জানি, পৃথিবীটা আরও সুন্দর হতে পারত যদি আমাদের দুজনকে নিয়ে এত তুলনা না হতো আর আমরা পরস্পরকে আরও বেশি শ্রদ্ধা করতে পারতাম। আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, তোমার কোনো তুলনা হয় না।
তোমার ক্যারিয়ারজুড়ে ফুটবল খেলেছ বিশুদ্ধ আবেগ দিয়ে। আর তোমার মতো করে, তোমার পন্থায় তুমি আমাদের শিখিয়েছ প্রতিটা দিন কী করে ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলতে হয়। তুমি আগেভাগেই চলে গেলে, তাই আমাকে কথাটা বলার সুযোগ দিলে না। আজ বলছি, ডিয়েগো তোমায় অনেক ভালোবাসি।
হে আমার প্রিয় বন্ধু, জীবনের এই যাত্রায় পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। একদিন স্বর্গে নিশ্চয়ই আমরা একই দলের হয়ে খেলব। আর সেদিনই আমি গোল না করেও হাত উঁচিয়ে উদযাপন করব। কারণ সেদিনই যে আমি অবশেষে তোমাকে আবার জড়িয়ে ধরতে পারব।’
সেই দিনটা এসেই গেল অবধারিত ভাবে। সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে পেলে ভর্তি হয়েছিলেন বেশ কিছুদিন আগে, ডাক্তাররা শেষ চেষ্টা করছিলেন। কিছুদিন আগে পেলের পরিবারের সব সদস্য দেখা করেন তার সঙ্গে, বড়দিনের দিন সবাই ছিলেন হাসপাতালে। পেলের মেয়ে কেলি নাসিমেন্তোর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এর পোস্টগুলো থেকেই জানা যাচ্ছিল, সবাই আসলে তৈরি হচ্ছিলেন ফুটবলের রাজার অন্তিম যাত্রার জন্য।
পেলের নশ্বর দেহ পড়ে থাকবে মর্ত্য,ে তার আত্মা নিঃসন্দেহে পৌঁছে গেছে স্বর্গলোকে। ৮২ বছরের দীর্ঘ জীবনে পেলে অনেককেই দেখেছেন পৃথিবীর অধ্যায় শেষ করে অনন্তলোকে পাড়ি জমাতে। ইয়োহান ক্রুইফ না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পর পেলে শোক প্রকাশ করেছিলেন এভাবে, ‘ইয়োহান ক্রুইফ ছিল অসাধারণ এক খেলোয়াড় এবং কোচ। আমাদের ফুটবল পরিবারে সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক উত্তরাধিকার রেখে যাচ্ছে। আমরা অসাধারণ এক মানুষকে হারিয়েছে। আমরা যেন তার উৎকর্ষতার উদাহরণ মেনে চলতে পারি।’ পর্তুগাল কিংবদন্তি ইউসেবিওর মৃত্যুর পর পেলে লিখেছিলেন, ‘ইউসেবিও ছিল আমার ভাইয়ের মতো, তার মৃত্যুতে খুবই শোকাহত।’
অনন্তলোকে গিয়ে নিশ্চয়ই ম্যারাডোনার পাশাপাশি ক্রুইফ, ইউসেবিও সবাইকে নিয়েই একসঙ্গে খেলবেন পেলে। কী দারুণ একটা দলই না হবে সেটা! হাফটাইমে নিশ্চয়ই পেলে তাদের শোনাবেন এক খুদে জাদুকরের বিশ্বকাপ জেতার গল্পটা। কারণ এই কিংবদন্তিদের কেউই তো লিওনেল মেসিকে বিশ্বকাপ জিততে দেখে যেতে পারেননি। ম্যারাডোনা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন, আর্জেন্টিনাবাসী কি ভুলে গিয়েছে ডিয়েগোকে? পেলে হয়তো তখন বলবেন ‘না, মেসির মাঝেই তারা খুঁজে নিয়েছে তাদের প্রিয় ডিয়েগোকে।’
স্বর্গ থেকেই ফুটবলের দেবতা হয়তো এসেছিলেন মর্ত্য,ে পেলের বেশ ধরে। তিনিই ফিরে গেলেন অনন্তলোকে। পেছনে পড়ে রইল তিনটা বিশ্বকাপ আর কত স্মৃতি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসানকেই দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে বাছাই করেছে ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়ালেখকদের প্রাচীন সংগঠন বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ)। গতকাল সংগঠনটি দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় বিএসপিএ’র ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা-উত্তর সেরা দশ ক্রীড়াবিদের তালিকা ঘোষণা করে। ৯ সদস্যের স্বাধীন বিচারক প্যানেল নাম্বারিংয়ের ভিত্তিতে সেরা ১২০ জন ক্রীড়াবিদের মধ্য থেকে ১০ জন মনোনীত করেন। সেখান থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব। বিএসপিএ সভাপতি সনৎ বাবলার সবাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মনোনীত ১০ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এ সময় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়াসাংবাদিকদের এশিয়ান সংস্থা এআইপিএস এশিয়ার সভাপতি হি ডং জং এবং পৃষ্ঠপোষক বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা ও বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। একই মঞ্চে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ক্রিকেট ব্যাটে জয় বাংলা লিখে মাঠে নামা রাকিবুল হাসানকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। এছাড়া ১০ জন জ্যেষ্ঠ ক্রীড়াসাংবাদিককে দেওয়া হয় সম্মাননা। মনোনীত ১০ ক্রীড়াবিদ ও ১০ ক্রীড়াসাংবাদিককে স্মারক ছাড়াও দেওয়া হয়েছে অর্থ পুরস্কার।
সদ্য প্রয়াত ফুটবলের রাজা পেলের প্রতি সম্মান জানাতে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। এরপর একে একে পুরস্কৃত করা হয় ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদান রাখা ব্যক্তিদের। স্বাধীন ও স্বতন্ত্র বিচারক প্যানেল চুলচেরা বাছাই বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেছেন বাংলাদেশের সেরা ১০ ক্রীড়াবিদ। ক্রম অনুসারে মনোনীত শীর্ষ ১০ ক্রীড়াবিদ হলেন গলফার সিদ্দিকুর রহমান (দশম), সাঁতারু মোশাররফ হোসেন খান (নবম) স্প্রিন্টার প্রয়াত শাহ আলম (অষ্টম), শুটার আসিফ হোসেন খান (সপ্তম), ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা (ষষ্ঠ), বক্সার মোশাররফ হোসেন (পঞ্চম), ফুটবলার প্রয়াত মোনেম মুন্না (চতুর্থ), দাবাড়ু নিয়াজ মোর্শেদ (তৃতীয়), ফুটবলার কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন (দ্বিতীয়) ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান (প্রথম)।
বিশেষ সম্মাননাপ্রাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রাকিবুল হাসান তার সম্মাননা উৎসর্গ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যদের। এ ছাড়া প্রাপ্ত অর্থ পুরস্কার তিনি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে দেওয়ার কথা বলেন। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের ক্রীড়া সম্পাদক দিলু খন্দকার বলেন, ‘চল্লিশ বছরে ক্যারিয়ারে প্রথম স্বীকৃতি পেলাম। সাংবাদিকরাও যে সম্মানিত হতে পারেন, সেটাই এই মঞ্চে প্রমাণিত হলো।’
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত হয়ে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘৬০ বছর পূর্তিতে আমরা অংশীদার হতে পেরে সম্মানিত হতে পেরেছি। এই সংগঠনের দীর্ঘ চলাটা সৌভাগ্যের। আমরা সৌভাগ্যের সাক্ষী। ক্রীড়াসাংবাদিকদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। গণমাধ্যম খেলাধুলাকে সবার সামনে তুলে ধরে। খেলার ইতিহাসের নির্মাতা আপনারা। মূল পৃষ্ঠপোষকও আপনারাই। খেলোয়াড়দের আপনারাই তারকা বানান। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াও আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারি। আপনারা যেহেতু ফুটবল নিয়ে লেখেন, তৃণমূলের ফুটবল উঠে আসে না আপনাদের লেখনীতে। অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত থাকে, যা আমাদের কষ্ট দেয়। আশা করছি আপনারা তৃণমূলে দৃষ্টি দেবেন। সাধারণ মানুষের ভালোবাসার খেলা ফুটবল। যে ১০ জন সম্মানিত হয়েছেন, তারা স্বমহিমায় সেরা হয়েছেন। এদের মাধ্যমেই এদেশের ক্রীড়াঙ্গন সমৃদ্ধ হয়েছে।’
এআইপিএস এশিয়া সভাপতি হি ডং জং বলেন, ‘৬০ বছর একটা সংগঠনের বয়স। এটা বিশাল একটা ব্যাপার। আমার মনে হয় এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সংগঠন বিএসপিএ এবং অবশ্যই অন্যতম সেরা সদস্য। তারা ওয়েলফেয়ারে যেভাবে ক্রীড়াসাংবাদিকদের জন্য কাজ করছে, তা হতে পারে অনুকরণীয়। আমি সত্যিই অভিভূত এরকম আয়োজনের অংশ হতে পেরে। সব পুরস্কারপ্রাপ্তকে জানাই অভিনন্দন।’ প্রধান অতিথি ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি বিএসপিএকে। তারা শুধু উদযাপন করছে না। তারা তাদের জ্যেষ্ঠ ক্রীড়াসাংবাদিক ও ক্রীড়ালেখকদের সম্মানিত করছে। একই সঙ্গে আমাদের ক্রীড়াবিদদেরও সম্মান জানাচ্ছেÑ যা আপনাদের এই উদযাপন নতুনমাত্রা পেয়েছে। আমি আগেও আপনাদের নানা অনুষ্ঠানে এসে মুগ্ধ হয়েছি। আপনারা সবসময় আমাকে পাশে পাবেন।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ঢাকায় বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচির জবাবে শান্তি সমাবেশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল শুক্রবার ঢাকার ৯টি স্থানে এই কর্মসূচি পালন করে দলটি।
শ্যামলীতে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক আছে। আমরা কোনো ধরনের সহিংসতায় জড়াব না। তবে আঘাত করা হলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’
বিকেল পৌনে ৪টায় প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের শান্তি সমাবেশে যোগ দেন। তখন নেতাকর্মীদের অবস্থান গাবতলীমুখী মিরপুর সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তাদের নিরাপত্তার জন্য মাইক থেকে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখতে অনুরোধ করা হয়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে গাবতলীমুখী সড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট, যা পুরো নিউমার্কেট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের পর যান চলাচল শুরু হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি চেয়ে প্রবীণ রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ ৬০ বিশিষ্টজনের বিবৃতির সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ফখরুলের মুক্তি চায়, ভালো। ফখরুল তাদের বন্ধু। তাদের শুভাকাক্সক্ষী। তিনি অসুস্থ আমরা জানি না।’ তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডে বিবৃতি দিয়েছিলেন নাকি জানতে চান ওবায়দুল কাদের।
জঙ্গিবাদ রুখতে হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের রুখতে হবে। হাওয়া ভবনের লুটেরাদের রুখতে হবে। তারা (বিএনপি) বলে রাষ্ট্র মেরামত করবে। বিএনপি এই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে। এই রাষ্ট্রের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছে তারা। এই রাষ্ট্রে অর্থ পাচার করেছে বিএনপি। পাঁচ বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বিএনপি। তারা রাজনীতি নষ্ট করে। যারা নষ্ট রাজনীতি করে তারা রাষ্ট্র মেরামত করতে পারে না। ধ্বংস করতে পারে।’
শ্যামলী ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উত্তরা, ফার্মগেট, মহাখালী, গাবতলী, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর, বাড্ডা ইউলুপ, যাত্রাবাড়ী এলাকায় আয়োজিত শান্তি সমাবেশে যোগ দেন। দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন এবং সমাবেশ করেন। ছাত্রলীগের উদ্যোগে শাহবাগ চত্বরে শান্তি সমাবেশ করা হয়।
বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে গতকাল দুপুর থেকে ঢাকার ৯টি স্থানে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জুমার নামাজের পরপরই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল নিয়ে নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হতে থাকেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শ্যামলী সিনেমা হলের সামনে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে যোগ দেন। ওই সমাবেশ আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মোহাম্মদপুর থানা শাখা। জুমার নামাজের পর খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন।
সমাবেশে ওবায়দুল কাদেরের আগে বক্তব্য দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি সাদেক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা প্রমুখ।
আগামী ১১ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগ ও মহানগরে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে একই কর্মসূচি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট এবং ১১ দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ বর্তমান সরকারবিরোধী আরও কয়েকটি দল ও সংগঠন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে আলাদা আলাদাভাবে পালিত গণমিছিল কর্মসূচি থেকে এই গণঅবস্থানের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা ৩৩টি রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে এই গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হয়। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আরেক বিভাগীয় শহর রংপুরে গতকাল এই গণমিছিল বের করা হয়।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গতকাল দুপুরে গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ১০ দফা দাবির প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল। দ্বিতীয় কর্মসূচি হচ্ছে আগামী ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচি। ঢাকায় এ কর্মসূচি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে হবে। ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে নয়টি বিভাগীয় শহরে একইভাবে চার ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। স্বৈরাচারী সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি দেব আমরা।’
গণমিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। মনে করেছিল, ১০ ডিসেম্বরের আগে মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করলে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাবে। যত গ্রেপ্তার, যত নির্যাতন হোক না কেন, রাস্তায় আমাদের নেতাকর্মী শুধু নয় জনগণ নেমে গেছে। আর তাদের দমানো যাবে না।’
দুপুর ২টায় গণমিছিল শুরুর ঘোষণা থাকলেও সকাল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। হলুদ, লাল, বেগুনিসহ নানান সব রঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ শোডাউন করেন তারা। জমায়েত হওয়া নেতাকর্মীরা সেখানে জুমার নামাজ আদায় করেন। কাকরাইল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেয়। বিএনপির এই কর্মসূচি ঘিরে বিজয়নগরের নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়সহ আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে কাকরাইল ও মালিবাগ মোড় হয়ে মগবাজারে গিয়ে শেষ হয়।
শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ আমানের : বিএনপির গণমিছিলের সামনের অংশে থাকা নেতাকর্মীরা বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে মগবাজার মোড়ে এসে পৌঁছালে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান হ্যান্ডমাইকে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণমিছিল আজ শেষ। আমি মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করছি। আপনার সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফিরে যাবেন। কোনো ধরনের ঝামেলা করবেন না। মিছিলের পেছনে যারা আছেন তারাও মগবাজার এসে মিছিল শেষ করবেন।’ বিএনপির এই নেতা সবাইকে চলে যেতে বলার পাশাপাশি সড়কের জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন।
অবশ্য গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, গণমিছিল কাকরাইল, শান্তিনগর ও মালিবাগ হয়ে মগবাজার চৌরাস্তা ঘুরে ফের নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হবে।
এর আগে বিএনপি ছাড়াও আলাদাভাবে একইদিনে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছিল দলটির সঙ্গে বর্তমান সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে গণমিছিল বের করার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে তাদের সেখানে দেখা যায়নি। শান্তিনগর এলাকার একটি মসজিদ থেকে জুমার নামাজের পর জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
এলডিপির গণমিছিল: যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীতে গণমিছিল করে এলডিপি। বিকেলে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে এলডিপি কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ মোড় ঘুরে মগবাজারে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। গণমিছিলে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে এলডিপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিছিলপূর্ব সমাবেশে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আগামী ১১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারাদেশে গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
১২ দলীয় জোটের গণমিছিল : বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে ১১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন জোটটির নেতা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী মোহাম্মদ আবু তাহের, মুসলিম লীগের মহাসচিব জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ ইকরাম, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম ও বাংলাদেশ ইসলামী পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম।
১১ দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের গণমিছিল : বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করেন সমমনা জোটের নেতারা। পরে পুরানা পল্টন হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি মোড়ে গিয়ে শেষ হয় তাদের গণমিছিল। এর আগে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আগামী ১১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন। গণমিছিলে উপস্থিত ছিলেন জাগপা’র সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি আজহারুল ইসলাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদেক এবং গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী।
প্রেস ক্লাবের সামনে গণমিছিলের আগে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ : সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সেখানে তারা সমাবেশ করেন। এই মঞ্চের ব্যানারে জোটবদ্ধ ৭ দলের কয়েকশ নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশ থেকে আগামী ১১ জানুয়ারি ১০ বিভাগে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বের করা গণমিছিল পল্টন মোড়, বিজয়নগর সড়ক হয়ে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।