
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন পাড়ি দিয়েছেন নক্ষত্রের পথে। গত রবিবার রাত দেড়টায় বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সদ্য সাবেক সভাপতি, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব, নগর পরিকল্পনাবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্থাপত্য শিল্পে যেমনা ছিলেন একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তেমনি মানবিক ও আধুনিক পৃথিবী গড়ে তোলার সহযাত্রী ছিলেন। যেকোনো অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার ক্ষুরধার অংশগ্রহণ ছিল
দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মোবাশে^র হোসেন অংশ নেন। সমরযুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসী সৈনিক। ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অগ্রসরমাণ স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণেও সরব হন। তার দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনী থেকে দেখা গেছে, স্থাপত্য শিল্পেই নয়, তার অবদান রয়েছে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে। নগরীর খেলার মাঠ রক্ষায় তিনি যেমন ছিলেন সোচ্চার তেমনি বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিল তার কঠোর অবস্থান।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনের বিশেষ করে বিসিবির যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন প্রয়াত মোবাশ্বের হোসেন। সর্বশেষ গত বছর ধানম-ি মাঠ ও তেঁতুলতলা মাঠ আন্দোলন নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। ছিলেন দেশের মাঠঘাট, খালবিল ও নদী দখলের বিরুদ্ধেও। তিনি ছিলেন সজ্জন, সহকর্মীদের প্রতি সহমর্মী ও দায়িত্বশীল।
জীবদ্দশায় তিনি যেমন একের পর এক বর্ণিল কাজ করে গেছেন তেমনি জীবনের শেষটায় রেখে গেছেন অনন্য স্বাক্ষর। আজ মঙ্গলবার তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দান করা হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তার (মোবাশে^র হোসেন) পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) তার মরদেহ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগে গ্রহণ করা হবে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের গবেষণার কাজে ব্যবহার হবে। তিনি জীবিত অবস্থায় তার দেহ দানের বিষয়টি চূড়ান্ত করেন।’
এদিকে মোবাশ্বের হোসেনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সব মহলে। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। সমাজের যেকোনো অনিয়মে সোচ্চার ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে দেশ একজন প্রতিভাদীপ্ত স্থপতি হারাল, এ শূন্যস্থান সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
গত রবিবার রাত ১টা ৩৮ মিনিটে ঢাকার শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থপতি মোবাশে^র হোসেনের মৃত্যু হয় বলে স্থপতি ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘উনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। সবশেষ দুই মাস তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। তখন তার ডায়ালাইসিস করা যাচ্ছিল না।’ ধীরে ধীরে শরীরের অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না জানিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম বিদেশে নিতে, কিন্তু তার শরীরের নাজুক অবস্থার কারণে বিদেশে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় তিনি গত রাতে (রবিবার) চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।’
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় মোবাশে^র হোসেনের মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার প্রিয় কর্মস্থল বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটে (আইএবি)। মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। সেখানেই তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। জানানো হয় রাষ্ট্রীয় সম্মান।
এদিকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে মোবাশ্বের হোসেনের গুণগ্রাহী ও বিশিষ্টজনরা বললেন, দেশ যখন এ উন্নয়নের মহীসোপানে তখন তার মতো একজন গুণীকে হারানো অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সুশাসন প্রশ্নে তিনি ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর। তার মতো সাহসী লোকের অভাব পূরণ করা কঠিন।
ঢাকার দুই মেয়র তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, নগর উন্নয়নের এ পুরোধার মৃত্যুতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুর রহমান বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে মোবাশে^র হোসেন কখনো ভয় পেতেন না।’ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘তিনি পরিকল্পিত নগরায়ণের একজন পথিকৃত ছিলেন।’ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘বিভিন্ন ইস্যুতে তার মতো স্পষ্টবাদী মানুষের খুব অভাব। এ ধরনের মানুষ যতই চলে যাবে ততই উদাহরণগুলো সরে যাবে। আশা করব ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের কর্মগুলো মনে রাখবে।’
সবার শ্রদ্ধা জানানো শেষে স্থপতি মোবাশে^র হোসেনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আরেক প্রিয় জায়গা ব্রাদার্স ইউনিয়নে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখান থেকে রাতে মরদেহ মরচুয়ারিতে রাখা হয়। আজ বিএসএমএমইউতে মরদেহ দান করা হবে।
১৯৪৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া মোবাশ্বের হোসেন ছিলেন এসোকনসাল্ট লিমিটেডের প্রধান স্থপতি। তিনি কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্টস এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল, এশিয়ার (আর্কেশিয়া) প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যের স্নাতক সম্পন্ন করা এ স্থপতি বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের কাজ করে গেছেন। এর মধ্যে প্রশিকা ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক ভবন ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন উল্লেখযোগ্য। পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনে সোচ্চার এ স্থপতি ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহসভাপতি ছিলেন।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সাবেক সভাপতি। এ ছাড়াও সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়কও ছিলেন। তিনি তার জীবনে কয়েকটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে আমেরিকান স্থপতি ইনস্টিটিউট (এআইএ) প্রেসিডেন্ট পদক-২০০৯ উল্লেখযোগ্য।
দেশবরেণ্য স্থপতি মোবাশ্বেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে দেশের প্রকৌশলীদের পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)। শোকবার্তা দিয়েছে বিসিবি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। এক শোকবার্তায় বলা হয়, মোবাশ্বের হোসেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি নৈতিক ও মানবিক সমাজ গঠনে আজীবন সাহসী ভূমিকা রেখে গেছেন। তার ভূমিকা জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তারা বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ২১ তলা ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স’র নকশা প্রণয়ন কমিটির অন্যতম পরামর্শক ছিলেন মোবাশ্বের হোসেন। তার মৃত্যুতে জাতি এক দেশবরেণ্য স্থপতিকে হারাল। স্থাপত্য শিল্পে তার অবদান জাতি গভীরভাবে স্মরণ রাখবে।
দুদিক থেকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। একদিকে ফাঁস করেছেন বিমানের ক্ষমতাধর এমডি মো. যাহিদ হোসেনের ক্ষমতাধর এমএলএসএস (পিয়ন) জাহিদ হাসান। আরেকদিকে ফাঁস করেছেন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য তাইজ ইবনে আনোয়ার। দুই হাত থেকে নিমেষে শত হাতে পৌঁছে যায় প্রশ্নপত্র। ফাঁসকারীদের পকেট ভারী হয়েছে, কিন্তু চুনকালি পড়েছে সরকারের মুখে।
ক্ষমতাধর এমডি পদ ফসকে যাওয়ার পথে ‘জামাই আদরে’ ফিরেছেন মন্ত্রণালয়ে। আর এমডির পিয়নকে পাঠানো হয়েছে জেলে। কর্তা যাহিদ ‘স্বর্গে’ গেছেন, কর্মী জাহিদ বলির পাঁঠা। আর তাইজ ইবনে আনোয়ার ফিরেছেন নিজের ঘরে। এক যাত্রায় কত ফল!
গত বছর ২১ অক্টোবর ছিল বিমানের ১৪৮টি পদে নিয়োগ পরীক্ষা। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় নেমে এলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর হতে বাধ্য হয়। জনরোষের ভয়ে বিমানও এবার পারেনি দায়সারা তদন্ত করতে। তাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে কীভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির দুদিক থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করা হলেও, এমডিকে দায়মুক্তি দিতে পারেনি কমিটি। তারা বলেছে, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেনি। কমিটির কারোর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট বা লিখিতভাবে বণ্টন করা হয়নি।
দায়িত্ব বণ্টন না করে গোলেমালে পরীক্ষা নেওয়ার অর্থ হচ্ছে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কাউকে সুযোগ করে দেওয়া। এর দায় সংস্থাপ্রধান হিসেবে এমডি এড়াতে পারেন না। এমডির পিয়নকে ফটোকপি করার কাজে ব্যবহার করার নির্দেশ কে দিয়েছে এ প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না তদন্ত কমিটি। বিমানের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা যাহিদ হোসেন। এমনকি তিনি এমডি, সিইও, পরিচালক (প্রশাসন) থেকে শুরু করে প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক সাপোর্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলসের পরিচালকও। উপসচিব হিসেবে প্রেষণে বিমানে গিয়েছেন। প্রেষণে থেকেই যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এখন অপেক্ষা করছেন সচিব পদে পদোন্নতির জন্য। গত জুলাইয়ে যাহিদ হোসেন নিজ ক্যাডারের আবু সালেহ মোস্তফা কামালের স্থলাভিষিক্ত হন।
২১ অক্টোবর প্রশ্নপত্রের কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েন প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত নিচের সারির কর্মচারীরা। গত ৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাহিদ হোসেনকে বিমান থেকে তুলে নিয়ে পদায়ন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে। যদিও গতকাল সোমবার পর্যন্ত তিনি সেখানে যোগ দিতে পারেননি। বিমান-পরিস্থিতির কারণেই তাকে মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। যাহিদ হোসেনকে বদলি করার পর বিমানের এমডি পদে যোগ দিয়েছেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিউল আজিম।
বিমানের নিজস্ব কর্মকর্তারা সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ পদে খুব একটা পদোন্নতি পান না। প্রশাসন ক্যাডার ও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রেষণে গিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এতে বিমানের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। তাইজ ইবনে আনোয়ার ছিলেন উপমহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা)। মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব (জিএসই-গ্রাউন্ড সার্ভিস ইক্যুইপমেন্ট) ছিল তার অতিরিক্ত দায়িত্ব। পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষে রাখা প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থা করেন তাইজ। তিনি তার দুই ড্রাইভারকে প্রশ্নফাঁস করতে সহায়তা করেছেন বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন এবং প্রমাণাদি গোয়েন্দা ও তদন্তকারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এ অবস্থায় গত রবিবার তাইজকে তার মূল দায়িত্বে ফিরিয়ে নিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় মাহমুদুল হাসানকে।
২১ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার দুদিন আগে (১৯ অক্টোবর) প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত করা হয়। চারজনের নিয়োগ কমিটি বৈঠক করে জিএম অ্যাডমিন মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মদের রুমে। জিএম জিএসই তাইজ ইবনে আনোয়ারের অনুরোধে জিএম অ্যাডমিনের ব্যবহৃত প্রিন্টার থেকে প্রশ্নপত্রের প্রিন্ট দেওয়া হয়। ফাইনাল চেকের জন্য প্রশ্নটি জিএসইকে দেওয়া হয়। চেক শেষে যদিও শ্রেডিং মেশিনে তা ধ্বংস করা হয়।
চার সদস্যের নিয়োগ কমিটির প্রধান প্রকৌশলী এআরএম কায়সার জামান তদন্তকারীদের বলেন, ‘১৯/১০/২০২২ তারিখে আমি যখন জিএম অ্যাডমিনের কক্ষে যাই তখন সেখানে জিএম অ্যাডমিন ও প্রিন্সিপাল বিএটিসি জিএসই অপারেশন পদের প্রশ্নপত্র নিয়ে কাজ করছিলেন। আমার প্রবেশের আনুমানিক ১৫ মিনিট পর জিএম জিএসই প্রবেশ করেন। জিএম অ্যাডমিন, জিএম জিএসইকে প্রশ্নপত্র চেক করতে বলেন। জিএম জিএসই বলেন, একটা প্রিন্টআউট করতে। একটি কাগজের বোথ সাইড প্রিন্ট করা হয়। এর আগে জিএম অ্যাডমিন বলেছিলেন স্ক্রিনে চেক করতে।’ একপর্যায়ে প্রধান প্রকৌশলী ওয়াশরুমে যান। তিনি জিএম জিএসইকে কোনো ছবি তুলতে দেখেননি বলে তদন্ত কমিটিকে জানান।
জিএম অ্যাডমিন মো. নিজাম উদ্দীন আহমেদ তদন্ত কমিটিকে বলেন, আমি কোনো প্রশ্নপত্রের প্রিন্টআউট নিতে চাইনি। যতটুকু মনে পড়ে তাইজ সাহেবের অনুরোধে প্রিন্টআউট বের করা হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ দুজন হলেন এমটি অপারেটর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ মাসুদ। তারা দুজনই ডিজিএম নিরাপত্তা তাইজ ইবনে আনোয়ারের গাড়ির চালক। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা বলেছেন, ডিজিএম নিরাপত্তার কাছ থেকে প্রশ্নপত্র পেয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘ডিজিএম সিকিউরিটি স্যার মোটরসাইকেলে করে অপারেশন বিল্ডিংয়ে আসেন। ইশারা দিলে আমরা দুজন তার কাছে যাই। আমাকে আর মাসুদকে ভাঁজ করা একটি কপি দেন। উভয় পাশে প্রশ্নপত্র ছাপানো ছিল। আমি ওই প্রশ্নপত্রের স্ক্রিনশট নিতে চাইলে তিনি ধমক দেন এবং প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত চলে যেতে বলেন।’
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন ফটোকপি করার সময় নিজের মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি ধারণ করেন এমডি যাহিদ হোসেনের এমএলএসএস জাহিদ হাসান। পরে তিনি এ প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরিচালক প্রশাসনের দপ্তরের এমএলএসএস সমাজু ওরফে সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরের এমএলএসএস আওলাদ হোসেনকে দেন। তারা তা দ্রুত ছড়িয়ে দেন। সে সময় তারা কারও কাছ থেকে ২ লাখ, কারও কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নেন। অনেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়েও প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেন।
তাইজ ইবনে আনোয়ার তদন্ত কমিটিকে জানান, তিনি শুরুতে প্রশ্নপত্র অন-স্ক্রিন চেক করেছিলেন। পরে প্রিন্ট করা হয়। প্রিন্ট নেওয়ার কারণ ঠিকমতো পেইজে আসে কি না, লেখা ঠিক থাকে কি না এসব বোঝা। জিএম অ্যাডমিন নিজের হাতে প্রিন্ট কপি শ্রেডিং মেশিনে দেন। প্রশ্ন দেখার সময় নিয়োগ কমিটির চারজনই রুমে ছিলেন, কেউ ওয়াশরুমে যাননি।
নিয়োগ পরীক্ষার দিনই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরিচালক অর্থ মো. নওসাদ হোসেনের নেতৃত্বে মহাব্যবস্থাপক সিএসকিউ নিরঞ্জন রায় ও উপমহাব্যবস্থাপক লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স রাশেদ মেহের চৌধুরী গত ২০ নভেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা প্রায় সবাই আটক বা জেলে। বিষয়টি আদালতে বিচারধীন থাকায় আর কিছু বলা সম্ভব নয়।’
তদন্ত কমিটির কাছে ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো না কোনোভাবে প্রশ্নপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন পেয়েছিলেন কিন্তু স্বীকার করেননি আটজন। পলাতক থাকায় কিছু কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি তদন্ত দল। প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য তদন্ত দলের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়েছেন।
১০ ক্যাটাগরির ১৪৮টি শূন্যপদে ভন্ডুল হওয়া লিখিত পরীক্ষায় ৪ হাজার ৩৮৮ জনের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। গত ২১ অক্টোবর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য তারা উত্তরার হাবিবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং আইইএস উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হন। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হলে পরীক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন।
বিমানের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম নতুন কিছু নয়। বছরজুড়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাটি কর্মী নিয়োগ দেয়। এসব নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফঁাঁসের মাধ্যমে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। সংস্থাটির বদলি, পদায়ন, কেনাকাটা, লিজ নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
সরকারের বেতন কাঠামোর চেয়ে খানিকটা বেশি বেতন এ সংস্থায়। কিন্তু এর কর্মীদের মধ্যে ‘ওনারশিপ’ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রায় প্রতি মাসেই সংস্থার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো মামলা হচ্ছে।
বিদেশে বসে দেশ বা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করলে ঢাকার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে না থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মিশন প্রধানদের নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশে বসে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের মন্ত্রণালয় থেকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সরকার মোটেও চিন্তিত নয়। সময়মতো এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের নিয়মেই নির্বাচন হবে। এখাবে সব দল আসলে ভালো, কেউ না আসতে চাইলে না আসবে।
ড. মোমেন বলেন, দেশে আগে ফ্রড ভোট হতো। একবার ১ কোটি ২৩ লাখ লোক ভুয়া ভোট দিয়েছে। এখন এটা বন্ধ। ফ্রডগিরি করতে পারবেন না। দেশে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। যাতে এরা ভালোভাবে নির্বাচন করতে পারে। সুতরাং সেখানে সব দল এলে ভালো। আমরা জনগণের ওপর বিশ্বাসী । জনগণ যাকে চাইবে তাকে ভোট দেব।
নতুন বছরের প্রথম দিন রবিবার বিদেশে বাংলাদেশ মিশন প্রধানদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারদের কী বার্তা দেওয়া হয়েছে তা জানতে চান সাংবাদিকরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিশন প্রধানদের বলা হয়েছে, কেউ যদি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দেয়, আপনারা (দূতরা) চুপ করে ঢাকার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। আপনি একজন দায়িত্বশীল মানুষ। সরকার আপনাকে সর্বোচ্চ কাজ দিয়েছে। আপনি আপনার দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছেন। কেউ যদি মিথ্যা বলে, আপনি (দূত) উত্তর দেবেন, একেবারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। মন্ত্রণালয়ের হুকুমের জন্য বসে থাকবেন না। আমরা নবযুগে প্রবেশ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল লোক। আপনারা (দূতরা) সেই অনুযায়ী কাজ করবেন, যেটা আপনারা ভালো মনে করেন।’
দূতদের ভাষ্য কী ছিল জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, তাদের বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বলেছেন, এতদিন ধরে তারা (দূতরা) এই প্র্যাকটিস করে এসেছেন (হুকুম দিলে রেসপন্স করা)।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি এখন থেকে আপনারা রেসপন্স করবেন এবং আমাদের জানাবেন। অনেকে আছেন মিশন প্রধানরা খারাপ কিছু হলে আমাদের জানাতে চান না। তারা লজ্জা পান। এখানে লজ্জার কোনো কারণ নেই। আমাদের সবকটি মিশন মিলেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা সবাই মিলে টিমওয়ার্ক। ভালো হোক খারাপ হোক, ঘটনা জানাতে হবে।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা মাস দুয়েক আগে হলেও বাংলাদেশে এক বছর আগ থেকেই হইচই শুরু হয়েছে। আর একে ঢং হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে নির্বাচন নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রিয় ক্লাব সান্তোসের ভিলা বেলমিরোতে খেলতে খেলতেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন পেলে। এই সবুজ গালিচায় চিহ্ন এঁকেছেন অজস্র ফুটবলীয় রূপকথার। গতকাল সে মাঠেই শেষবারের মতো ফিরলেন পেলে। অনন্তপথে যাত্রার আগে প্রিয় ক্লাবে কাটাবেন মরেও অমর ফুটবলের রাজা। তাকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় পেলের শেষ বিদায়ের দুদিনব্যাপী আনুষ্ঠানিকতা। পেলেকে একে একে সাধারণ মানুষ-ভক্ত থেকে শুরু করে বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। সেই তালিকায় ছিলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো থেকে শুরু করে সাবেক খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদসহ আরও অনেকে। ব্রাজিল মহাতারকার কফিনের পাশে ছিলেন তার স্ত্রী মার্সিয়া আওকি, ছেলে এদারসনসহ পরিবারের অনেকে।
পেলের ছেলে এদারসন শ্রদ্ধা জানান বাবাকে। বাবার কপালে হাত রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আওকি কফিনে রাখেন জপমালা। সে সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সবাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। বিশেষ করে জীবনসঙ্গিনী আওকি। বেশ কয়েকবারই তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়। সান্তোসের হোম ভেন্যু ভিলা বেলমিরোর মাঝ বরাবর বসানো হয় অস্থায়ী তাঁবু। সেখানে রাখা আছে ফুটবলের রাজার কফিন। কফিনের চারপাশ ছিল ফুলে ফুলে সাজানো। কফিনে শায়িত পেলের দেহের ওপরের অংশ সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। মুখটা ঢাকা ছিল সচ্ছ সাদা নেটের কাপড়ে। যেন প্রিয় তারকার মুখ শেষবারের মতো দেখতে পায় সবাই। কফিনের ডানদিকে সামান্য দূরে ছিল ব্যারিকেড। সেই ব্যারিকেডের পাশ দিয়ে শত শত সাধারণ মানুষ লাইন ধরে এসে পেলেকে শেষবারের মতো দেখে যান। এখানে ব্যারিকেড থাকলেও সাধারণ মানুষের মনে পেলে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন যুগের পর যুগ ধরে। ভিলা বেলমিরো মাঠের গ্যালারিতে লেখা ছিল ‘লং লিভ দ্য কিং’।
পেলেকে শ্রদ্ধা জানানোর পর ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি দেশকে অনুরোধ করব তাদের একটি করে স্টেডিয়াম মহান পেলের নামে নামকরণ করার।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশুরা যেন পেলের গুরুত্ব বুঝতে পারে সেটি ভেবে এমন প্রস্তাব দেওয়া হবে। আমরা এখানে খুব দুঃখ নিয়ে এসেছি। পেলে চিরন্তন। তিনি ফুটবলের বৈশ্বিক আইকন।’ ইনফান্তিনো ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল ফেডারেশন (কনমেবল) প্রধানসহ আরও অনেকে শুরুর দিকে শ্রদ্ধা জানান।
পেলেকে প্রথম শ্রদ্ধা জানানো সাধারণ ব্যক্তিটি ১৪ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। হুইল চেয়ারে করে এসেও পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় অনেককে। কার্লোস মোতা এবং তার ছেলে বের্নার্দো ৫০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন ফুটবলের রাজাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। ৫৯ বছরের মোতা এএফপিকে বলেন, ‘আমার ছোটবেলা কেটেছে পেলের অসামান্য সব কীর্তি দেখে। তাকে বিশ্বজয়ী হতে দেখে।’ ভক্তরা এসেছিলেন হাতে ব্রাজিলের ১০ নম্বর জার্সি আঁকড়ে ধরে; অনেকের হাতে ছিল পেলের পোস্টার। কেউ কেউ বিশ্বকাপের ডামি নিয়ে এসেছিলেন। তাদের অনেকের চোখেই ছিল বিষাদের অশ্রু। পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে সান্তোস স্টেডিয়ামের বাইরে অপেক্ষমাণ হাজারো মানুষ সারাক্ষণ গেয়েছেন পেলেকে নিয়ে লেখা একাধিক গান।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপ প্রথমে জানায়, পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটি নিয়ে ব্রাজিলে গেছেন ব্রাজিল ও পিএসজি তারকা নেইমার। তবে নেইমারের বাবা নেইমার সিনিয়র গ্লোবোকে বলেন, ‘সে আসবে না। তবে তার মন খুব খারাপ। সে আমাকে এখানে তার পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকতে বলেছে। কাউকে হারানো কত কষ্টের সেটা আমরা বুঝি। আমরা শুধু একজন খেলোয়াড়কেই হারাইনি, একজন মানুষকেও হারিয়েছি।’
ব্রাজিলের সান্তোসের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য ৯ ঘণ্টা। পেলেকে ভিলা বেলমিরোতে শ্রদ্ধা জানানো হবে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। আজ সান্তোসের রাস্তায় পেলের কফিন নিয়ে প্যারেড হওয়ার কথা রয়েছে। পেলেকে নেওয়ার কথা তার পৈতৃক ভিটাতে। সেখানে থাকেন তার শতবর্ষী মা দোনা সেলেস্তে আরান্তেস। তাকে দেখানোর পর পেলেকে সমাহিতের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তবে ডেইলি মিরর এক সংবাদে জানায়, পেলের মাকে নিয়ে আসা হতে পারে ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। এমনটি হলে আর পৈতৃক ভিটায় ফিরবেন না পেলে। পেলেকে সমাহিত করা হবে নিজের পছন্দ করে যাওয়া নেকরোপল একুমেনিকাতে। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পেলের শেষ ইচ্ছা ছিল নেকরোপল একুমেনিকার নবমতলায় চিরশায়িত হওয়ার। যেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় প্রিয় ভিলা বেলমিরোর মাঠ।
চলতি করবর্ষের নিয়মিত সময়ে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ইটিআইএনধারীর অর্ধেকেরও কম। ফলে কর পরিশোধে সক্ষমতা থাকার পরও যারা রিটার্ন জমা দেননি তাদের খোঁজে নামছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি করবর্ষে কেউ রিটার্ন জমা না দিলে বা রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল সোমবার থেকে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআরের বিভিন্ন কর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একাধিক কমিটি। এসব কমিটি প্রথম ধাপে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, বিলাসবহুল গাড়ির মালিক, বিভিন্ন করপোরেট হাউজে কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যরা রিটার্ন জমা দিয়েছেন কি না তার তথ্য খতিয়ে দেখবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন নামিদামি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হবে। স্কুল থেকে অভিভাবকরা কে কী করেন, কোথায় থাকেন, সব তথ্যই সংগ্রহ করা হবে। এরপর খোঁজ নেওয়া হবে তারা রিটার্ন দাখিল করেছেন কি না। এর আগে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অনেক অভিভাবক রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অনেকে ব্যবসায়ে লোকসান দেখিয়েছেন। অনেকে আবার ব্যবসা করলেও রিটার্ন জমা দেননি।
অতীতে এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে জাল কাগজপত্র নিয়ে রাস্তায় চলছে এমন প্রায় শতাধিক বিলাসবহুল গাড়ি চিহ্নিত করেছে এনবিআর। এসব গাড়ির মালিক মিথ্যা ঘোষণায় আনা গাড়ি কিনেছেন বা আমদানি করে ব্যবহার করেছেন। চলতি করবর্ষে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে বিলাসবহুল গাড়ির মাালিকদের চিহ্নিত করে রিটার্ন জমার তথ্য খতিয়ে দেখা হবে।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, সাধারণত বিভিন্ন করপোরেট হাউজ থেকে তাদের কর্মকর্তাদের কর পরিশোধ করে থাকে। অনেক সময় রিটার্ন জমা দিয়ে দেয় বা রিটার্ন জমার কাজে সহযোগিতা করে থাকে। এর আগে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, করপোরেট হাউজ থেকে এনবিআরের পাওনার কম রাজস্ব পরিশোধ করেছে।
ইটিআইএনধারীর অর্ধেকও রিটার্ন জমা দেননি : বর্তমানে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (ইটিআইএন) আছেন ৮২ লাখের কিছু বেশি। অর্থাৎ এসব ব্যক্তি করজালের আওতায় আছেন। প্রত্যেক ইটিআইএনধারী করদাতার রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এবার নিয়মিত সময়ের মধ্যে (১ জানুয়ারি) রিটার্ন জমা দিয়েছেন ২৮ লাখ ৫১ হাজার করদাতা। আরও ২ লাখ ৫০ হাজার করদাতা চলতি করবর্ষে রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন।
চলতি করবর্ষে নিয়মিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়ে আয়কর পরিশোধ হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার রিটার্ন দাখিলে প্রবৃদ্ধির হার ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত বছর এ সময় পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করেছিলেন ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৫ করদাতা। গত করবর্ষে আয়কর আদায় হয়েছিল ৩ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।
সৌদি আরবে একটি মসজিদে ইমামতি করতেন যুবক আবদুর রব (২৮)। সেখানে থাকা অবস্থায় ভার্চুয়াল বিভিন্ন মাধ্যমে জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরে অনলাইনে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে পরিচয় হয় আরও কিছু তরুণের সঙ্গে। কয়েকজনকে নিয়ে নিজেই গড়ে তোলেন একটি নেটওয়ার্ক। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি থেকে চলে আসেন দেশে। বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে না গিয়ে সরাসরি চলে যান জঙ্গি ক্যাম্পে। সেই জঙ্গি ক্যাম্পে আল-কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র জিহাদ করার পরিকল্পনা নিয়েই সংঘটিত হচ্ছিলেন তারা। অবশ্য কোনো অঘটন ঘটানোর আগেই রবিবার রাতে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে দলনেতা আবদুর রবসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি)।
গ্রেপ্তার অন্যরা হচ্ছে সাকিব (২৩), শামীম হোসেন (১৮), নাদিম শেখ (১৯), আবছার (২০) ও সাইদ উদ্দিন (১৮)। গতকাল সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
এদিকে, গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তারদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেছে আদালত। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রেপ্তার আবদুর রব সমন্বয়ক হয়ে সবাইকে অনলাইনে একত্রিত করে শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, জিহাদ, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করত। পরবর্তী সময়ে তাদের অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে অডিও-ভিডিও কলে যোগাযোগ স্থাপন করে। বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এরপর সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরও একজন বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আবদুর রব, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা জিহাদে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে ট্রেনিং গ্রহণ করবে। পরে তারা বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর নভেম্বর প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুসারে গত ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যায়। স্থানীয় সহযোগী ও গ্রেপ্তার আবছার তাদের টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। গ্রেপ্তার দলনেতা আবদুর রব ছুটি না পাওয়ায় যথাসময়ে দেশে আসতে ব্যর্থ হলে তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করে এবং অপেক্ষা করতে থাকে। গত ২২ নভেম্বর আবদুর রব দেশে এলে তার সহযোগী শামীম ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের অন্য সহযোগীদের ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন শলাপরামর্শ করে। দুদিন পর আবদুর ও শামীম মিলে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্যান্য সহযোগীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রেনিং নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান সিটিটিসির প্রধান।
কে এই আবদুর রব? : অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জিহাদের সমন্বয়ক মাওলানা আবদুর রব একজন কোরআনে হাফেজ এবং কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। ২০১৯ সালের জুন মাসে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে একটি মসজিদের ইমাম, পাশাপাশি হেফজ শিক্ষা দিতেন। সৌদিতে অবস্থানকালে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হন। অনলাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে সাইদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একইভাবে শামীম, সাকিব, নাদিমসহ ও আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়।
৫ দিনের রিমান্ড : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার ছয় জঙ্গির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।