
প্রিয় ক্লাব সান্তোসের ভিলা বেলমিরোতে খেলতে খেলতেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন পেলে। এই সবুজ গালিচায় চিহ্ন এঁকেছেন অজস্র ফুটবলীয় রূপকথার। গতকাল সে মাঠেই শেষবারের মতো ফিরলেন পেলে। অনন্তপথে যাত্রার আগে প্রিয় ক্লাবে কাটাবেন মরেও অমর ফুটবলের রাজা। তাকে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় পেলের শেষ বিদায়ের দুদিনব্যাপী আনুষ্ঠানিকতা। পেলেকে একে একে সাধারণ মানুষ-ভক্ত থেকে শুরু করে বিখ্যাত অনেক ব্যক্তি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। সেই তালিকায় ছিলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো থেকে শুরু করে সাবেক খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদসহ আরও অনেকে। ব্রাজিল মহাতারকার কফিনের পাশে ছিলেন তার স্ত্রী মার্সিয়া আওকি, ছেলে এদারসনসহ পরিবারের অনেকে।
পেলের ছেলে এদারসন শ্রদ্ধা জানান বাবাকে। বাবার কপালে হাত রেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আওকি কফিনে রাখেন জপমালা। সে সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সবাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। বিশেষ করে জীবনসঙ্গিনী আওকি। বেশ কয়েকবারই তাকে চোখ মুছতে দেখা যায়। সান্তোসের হোম ভেন্যু ভিলা বেলমিরোর মাঝ বরাবর বসানো হয় অস্থায়ী তাঁবু। সেখানে রাখা আছে ফুটবলের রাজার কফিন। কফিনের চারপাশ ছিল ফুলে ফুলে সাজানো। কফিনে শায়িত পেলের দেহের ওপরের অংশ সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। মুখটা ঢাকা ছিল সচ্ছ সাদা নেটের কাপড়ে। যেন প্রিয় তারকার মুখ শেষবারের মতো দেখতে পায় সবাই। কফিনের ডানদিকে সামান্য দূরে ছিল ব্যারিকেড। সেই ব্যারিকেডের পাশ দিয়ে শত শত সাধারণ মানুষ লাইন ধরে এসে পেলেকে শেষবারের মতো দেখে যান। এখানে ব্যারিকেড থাকলেও সাধারণ মানুষের মনে পেলে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন যুগের পর যুগ ধরে। ভিলা বেলমিরো মাঠের গ্যালারিতে লেখা ছিল ‘লং লিভ দ্য কিং’।
পেলেকে শ্রদ্ধা জানানোর পর ফিফা প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো বলেন, ‘বিশ্বের প্রতিটি দেশকে অনুরোধ করব তাদের একটি করে স্টেডিয়াম মহান পেলের নামে নামকরণ করার।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশুরা যেন পেলের গুরুত্ব বুঝতে পারে সেটি ভেবে এমন প্রস্তাব দেওয়া হবে। আমরা এখানে খুব দুঃখ নিয়ে এসেছি। পেলে চিরন্তন। তিনি ফুটবলের বৈশ্বিক আইকন।’ ইনফান্তিনো ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল ফেডারেশন (কনমেবল) প্রধানসহ আরও অনেকে শুরুর দিকে শ্রদ্ধা জানান।
পেলেকে প্রথম শ্রদ্ধা জানানো সাধারণ ব্যক্তিটি ১৪ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন। হুইল চেয়ারে করে এসেও পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় অনেককে। কার্লোস মোতা এবং তার ছেলে বের্নার্দো ৫০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন ফুটবলের রাজাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। ৫৯ বছরের মোতা এএফপিকে বলেন, ‘আমার ছোটবেলা কেটেছে পেলের অসামান্য সব কীর্তি দেখে। তাকে বিশ্বজয়ী হতে দেখে।’ ভক্তরা এসেছিলেন হাতে ব্রাজিলের ১০ নম্বর জার্সি আঁকড়ে ধরে; অনেকের হাতে ছিল পেলের পোস্টার। কেউ কেউ বিশ্বকাপের ডামি নিয়ে এসেছিলেন। তাদের অনেকের চোখেই ছিল বিষাদের অশ্রু। পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে সান্তোস স্টেডিয়ামের বাইরে অপেক্ষমাণ হাজারো মানুষ সারাক্ষণ গেয়েছেন পেলেকে নিয়ে লেখা একাধিক গান।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপ প্রথমে জানায়, পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটি নিয়ে ব্রাজিলে গেছেন ব্রাজিল ও পিএসজি তারকা নেইমার। তবে নেইমারের বাবা নেইমার সিনিয়র গ্লোবোকে বলেন, ‘সে আসবে না। তবে তার মন খুব খারাপ। সে আমাকে এখানে তার পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকতে বলেছে। কাউকে হারানো কত কষ্টের সেটা আমরা বুঝি। আমরা শুধু একজন খেলোয়াড়কেই হারাইনি, একজন মানুষকেও হারিয়েছি।’
ব্রাজিলের সান্তোসের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য ৯ ঘণ্টা। পেলেকে ভিলা বেলমিরোতে শ্রদ্ধা জানানো হবে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। আজ সান্তোসের রাস্তায় পেলের কফিন নিয়ে প্যারেড হওয়ার কথা রয়েছে। পেলেকে নেওয়ার কথা তার পৈতৃক ভিটাতে। সেখানে থাকেন তার শতবর্ষী মা দোনা সেলেস্তে আরান্তেস। তাকে দেখানোর পর পেলেকে সমাহিতের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তবে ডেইলি মিরর এক সংবাদে জানায়, পেলের মাকে নিয়ে আসা হতে পারে ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। এমনটি হলে আর পৈতৃক ভিটায় ফিরবেন না পেলে। পেলেকে সমাহিত করা হবে নিজের পছন্দ করে যাওয়া নেকরোপল একুমেনিকাতে। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পেলের শেষ ইচ্ছা ছিল নেকরোপল একুমেনিকার নবমতলায় চিরশায়িত হওয়ার। যেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় প্রিয় ভিলা বেলমিরোর মাঠ।
দুদিক থেকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। একদিকে ফাঁস করেছেন বিমানের ক্ষমতাধর এমডি মো. যাহিদ হোসেনের ক্ষমতাধর এমএলএসএস (পিয়ন) জাহিদ হাসান। আরেকদিকে ফাঁস করেছেন প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য তাইজ ইবনে আনোয়ার। দুই হাত থেকে নিমেষে শত হাতে পৌঁছে যায় প্রশ্নপত্র। ফাঁসকারীদের পকেট ভারী হয়েছে, কিন্তু চুনকালি পড়েছে সরকারের মুখে।
ক্ষমতাধর এমডি পদ ফসকে যাওয়ার পথে ‘জামাই আদরে’ ফিরেছেন মন্ত্রণালয়ে। আর এমডির পিয়নকে পাঠানো হয়েছে জেলে। কর্তা যাহিদ ‘স্বর্গে’ গেছেন, কর্মী জাহিদ বলির পাঁঠা। আর তাইজ ইবনে আনোয়ার ফিরেছেন নিজের ঘরে। এক যাত্রায় কত ফল!
গত বছর ২১ অক্টোবর ছিল বিমানের ১৪৮টি পদে নিয়োগ পরীক্ষা। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় নেমে এলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর হতে বাধ্য হয়। জনরোষের ভয়ে বিমানও এবার পারেনি দায়সারা তদন্ত করতে। তাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে কীভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির দুদিক থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে তদন্ত শেষ করার চেষ্টা করা হলেও, এমডিকে দায়মুক্তি দিতে পারেনি কমিটি। তারা বলেছে, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটি কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেনি। কমিটির কারোর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট বা লিখিতভাবে বণ্টন করা হয়নি।
দায়িত্ব বণ্টন না করে গোলেমালে পরীক্ষা নেওয়ার অর্থ হচ্ছে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কাউকে সুযোগ করে দেওয়া। এর দায় সংস্থাপ্রধান হিসেবে এমডি এড়াতে পারেন না। এমডির পিয়নকে ফটোকপি করার কাজে ব্যবহার করার নির্দেশ কে দিয়েছে এ প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না তদন্ত কমিটি। বিমানের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা যাহিদ হোসেন। এমনকি তিনি এমডি, সিইও, পরিচালক (প্রশাসন) থেকে শুরু করে প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক সাপোর্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলসের পরিচালকও। উপসচিব হিসেবে প্রেষণে বিমানে গিয়েছেন। প্রেষণে থেকেই যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এখন অপেক্ষা করছেন সচিব পদে পদোন্নতির জন্য। গত জুলাইয়ে যাহিদ হোসেন নিজ ক্যাডারের আবু সালেহ মোস্তফা কামালের স্থলাভিষিক্ত হন।
২১ অক্টোবর প্রশ্নপত্রের কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েন প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত নিচের সারির কর্মচারীরা। গত ৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাহিদ হোসেনকে বিমান থেকে তুলে নিয়ে পদায়ন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে। যদিও গতকাল সোমবার পর্যন্ত তিনি সেখানে যোগ দিতে পারেননি। বিমান-পরিস্থিতির কারণেই তাকে মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। যাহিদ হোসেনকে বদলি করার পর বিমানের এমডি পদে যোগ দিয়েছেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিউল আজিম।
বিমানের নিজস্ব কর্মকর্তারা সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ পদে খুব একটা পদোন্নতি পান না। প্রশাসন ক্যাডার ও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রেষণে গিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। এতে বিমানের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। তাইজ ইবনে আনোয়ার ছিলেন উপমহাব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা)। মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব (জিএসই-গ্রাউন্ড সার্ভিস ইক্যুইপমেন্ট) ছিল তার অতিরিক্ত দায়িত্ব। পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষে রাখা প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তার জন্য সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থা করেন তাইজ। তিনি তার দুই ড্রাইভারকে প্রশ্নফাঁস করতে সহায়তা করেছেন বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন এবং প্রমাণাদি গোয়েন্দা ও তদন্তকারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এ অবস্থায় গত রবিবার তাইজকে তার মূল দায়িত্বে ফিরিয়ে নিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয় মাহমুদুল হাসানকে।
২১ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার দুদিন আগে (১৯ অক্টোবর) প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত করা হয়। চারজনের নিয়োগ কমিটি বৈঠক করে জিএম অ্যাডমিন মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মদের রুমে। জিএম জিএসই তাইজ ইবনে আনোয়ারের অনুরোধে জিএম অ্যাডমিনের ব্যবহৃত প্রিন্টার থেকে প্রশ্নপত্রের প্রিন্ট দেওয়া হয়। ফাইনাল চেকের জন্য প্রশ্নটি জিএসইকে দেওয়া হয়। চেক শেষে যদিও শ্রেডিং মেশিনে তা ধ্বংস করা হয়।
চার সদস্যের নিয়োগ কমিটির প্রধান প্রকৌশলী এআরএম কায়সার জামান তদন্তকারীদের বলেন, ‘১৯/১০/২০২২ তারিখে আমি যখন জিএম অ্যাডমিনের কক্ষে যাই তখন সেখানে জিএম অ্যাডমিন ও প্রিন্সিপাল বিএটিসি জিএসই অপারেশন পদের প্রশ্নপত্র নিয়ে কাজ করছিলেন। আমার প্রবেশের আনুমানিক ১৫ মিনিট পর জিএম জিএসই প্রবেশ করেন। জিএম অ্যাডমিন, জিএম জিএসইকে প্রশ্নপত্র চেক করতে বলেন। জিএম জিএসই বলেন, একটা প্রিন্টআউট করতে। একটি কাগজের বোথ সাইড প্রিন্ট করা হয়। এর আগে জিএম অ্যাডমিন বলেছিলেন স্ক্রিনে চেক করতে।’ একপর্যায়ে প্রধান প্রকৌশলী ওয়াশরুমে যান। তিনি জিএম জিএসইকে কোনো ছবি তুলতে দেখেননি বলে তদন্ত কমিটিকে জানান।
জিএম অ্যাডমিন মো. নিজাম উদ্দীন আহমেদ তদন্ত কমিটিকে বলেন, আমি কোনো প্রশ্নপত্রের প্রিন্টআউট নিতে চাইনি। যতটুকু মনে পড়ে তাইজ সাহেবের অনুরোধে প্রিন্টআউট বের করা হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ দুজন হলেন এমটি অপারেটর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ মাসুদ। তারা দুজনই ডিজিএম নিরাপত্তা তাইজ ইবনে আনোয়ারের গাড়ির চালক। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তারা বলেছেন, ডিজিএম নিরাপত্তার কাছ থেকে প্রশ্নপত্র পেয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘ডিজিএম সিকিউরিটি স্যার মোটরসাইকেলে করে অপারেশন বিল্ডিংয়ে আসেন। ইশারা দিলে আমরা দুজন তার কাছে যাই। আমাকে আর মাসুদকে ভাঁজ করা একটি কপি দেন। উভয় পাশে প্রশ্নপত্র ছাপানো ছিল। আমি ওই প্রশ্নপত্রের স্ক্রিনশট নিতে চাইলে তিনি ধমক দেন এবং প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত চলে যেতে বলেন।’
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন ফটোকপি করার সময় নিজের মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি ধারণ করেন এমডি যাহিদ হোসেনের এমএলএসএস জাহিদ হাসান। পরে তিনি এ প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরিচালক প্রশাসনের দপ্তরের এমএলএসএস সমাজু ওরফে সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরের এমএলএসএস আওলাদ হোসেনকে দেন। তারা তা দ্রুত ছড়িয়ে দেন। সে সময় তারা কারও কাছ থেকে ২ লাখ, কারও কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নেন। অনেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়েও প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেন।
তাইজ ইবনে আনোয়ার তদন্ত কমিটিকে জানান, তিনি শুরুতে প্রশ্নপত্র অন-স্ক্রিন চেক করেছিলেন। পরে প্রিন্ট করা হয়। প্রিন্ট নেওয়ার কারণ ঠিকমতো পেইজে আসে কি না, লেখা ঠিক থাকে কি না এসব বোঝা। জিএম অ্যাডমিন নিজের হাতে প্রিন্ট কপি শ্রেডিং মেশিনে দেন। প্রশ্ন দেখার সময় নিয়োগ কমিটির চারজনই রুমে ছিলেন, কেউ ওয়াশরুমে যাননি।
নিয়োগ পরীক্ষার দিনই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরিচালক অর্থ মো. নওসাদ হোসেনের নেতৃত্বে মহাব্যবস্থাপক সিএসকিউ নিরঞ্জন রায় ও উপমহাব্যবস্থাপক লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স রাশেদ মেহের চৌধুরী গত ২০ নভেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা প্রায় সবাই আটক বা জেলে। বিষয়টি আদালতে বিচারধীন থাকায় আর কিছু বলা সম্ভব নয়।’
তদন্ত কমিটির কাছে ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো না কোনোভাবে প্রশ্নপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। প্রশ্ন পেয়েছিলেন কিন্তু স্বীকার করেননি আটজন। পলাতক থাকায় কিছু কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি তদন্ত দল। প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য তদন্ত দলের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়েছেন।
১০ ক্যাটাগরির ১৪৮টি শূন্যপদে ভন্ডুল হওয়া লিখিত পরীক্ষায় ৪ হাজার ৩৮৮ জনের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। গত ২১ অক্টোবর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য তারা উত্তরার হাবিবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং আইইএস উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হন। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হলে পরীক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন।
বিমানের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম নতুন কিছু নয়। বছরজুড়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাটি কর্মী নিয়োগ দেয়। এসব নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফঁাঁসের মাধ্যমে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। সংস্থাটির বদলি, পদায়ন, কেনাকাটা, লিজ নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
সরকারের বেতন কাঠামোর চেয়ে খানিকটা বেশি বেতন এ সংস্থায়। কিন্তু এর কর্মীদের মধ্যে ‘ওনারশিপ’ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রায় প্রতি মাসেই সংস্থার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো না কোনো মামলা হচ্ছে।
বিদেশে বসে দেশ বা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করলে ঢাকার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে না থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ মিশন প্রধানদের নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশে বসে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের মন্ত্রণালয় থেকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সরকার মোটেও চিন্তিত নয়। সময়মতো এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের নিয়মেই নির্বাচন হবে। এখাবে সব দল আসলে ভালো, কেউ না আসতে চাইলে না আসবে।
ড. মোমেন বলেন, দেশে আগে ফ্রড ভোট হতো। একবার ১ কোটি ২৩ লাখ লোক ভুয়া ভোট দিয়েছে। এখন এটা বন্ধ। ফ্রডগিরি করতে পারবেন না। দেশে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। যাতে এরা ভালোভাবে নির্বাচন করতে পারে। সুতরাং সেখানে সব দল এলে ভালো। আমরা জনগণের ওপর বিশ্বাসী । জনগণ যাকে চাইবে তাকে ভোট দেব।
নতুন বছরের প্রথম দিন রবিবার বিদেশে বাংলাদেশ মিশন প্রধানদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারদের কী বার্তা দেওয়া হয়েছে তা জানতে চান সাংবাদিকরা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিশন প্রধানদের বলা হয়েছে, কেউ যদি মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দেয়, আপনারা (দূতরা) চুপ করে ঢাকার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। আপনি একজন দায়িত্বশীল মানুষ। সরকার আপনাকে সর্বোচ্চ কাজ দিয়েছে। আপনি আপনার দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছেন। কেউ যদি মিথ্যা বলে, আপনি (দূত) উত্তর দেবেন, একেবারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। মন্ত্রণালয়ের হুকুমের জন্য বসে থাকবেন না। আমরা নবযুগে প্রবেশ করেছি। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল লোক। আপনারা (দূতরা) সেই অনুযায়ী কাজ করবেন, যেটা আপনারা ভালো মনে করেন।’
দূতদের ভাষ্য কী ছিল জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, তাদের বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে বলেছেন, এতদিন ধরে তারা (দূতরা) এই প্র্যাকটিস করে এসেছেন (হুকুম দিলে রেসপন্স করা)।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি এখন থেকে আপনারা রেসপন্স করবেন এবং আমাদের জানাবেন। অনেকে আছেন মিশন প্রধানরা খারাপ কিছু হলে আমাদের জানাতে চান না। তারা লজ্জা পান। এখানে লজ্জার কোনো কারণ নেই। আমাদের সবকটি মিশন মিলেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমরা সবাই মিলে টিমওয়ার্ক। ভালো হোক খারাপ হোক, ঘটনা জানাতে হবে।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনা মাস দুয়েক আগে হলেও বাংলাদেশে এক বছর আগ থেকেই হইচই শুরু হয়েছে। আর একে ঢং হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে নির্বাচন নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন পাড়ি দিয়েছেন নক্ষত্রের পথে। গত রবিবার রাত দেড়টায় বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সদ্য সাবেক সভাপতি, দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব, নগর পরিকল্পনাবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্থাপত্য শিল্পে যেমনা ছিলেন একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, তেমনি মানবিক ও আধুনিক পৃথিবী গড়ে তোলার সহযাত্রী ছিলেন। যেকোনো অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার ক্ষুরধার অংশগ্রহণ ছিল
দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মোবাশে^র হোসেন অংশ নেন। সমরযুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসী সৈনিক। ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। এরপর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অগ্রসরমাণ স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণেও সরব হন। তার দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনী থেকে দেখা গেছে, স্থাপত্য শিল্পেই নয়, তার অবদান রয়েছে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে। নগরীর খেলার মাঠ রক্ষায় তিনি যেমন ছিলেন সোচ্চার তেমনি বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিল তার কঠোর অবস্থান।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনের বিশেষ করে বিসিবির যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন প্রয়াত মোবাশ্বের হোসেন। সর্বশেষ গত বছর ধানম-ি মাঠ ও তেঁতুলতলা মাঠ আন্দোলন নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। ছিলেন দেশের মাঠঘাট, খালবিল ও নদী দখলের বিরুদ্ধেও। তিনি ছিলেন সজ্জন, সহকর্মীদের প্রতি সহমর্মী ও দায়িত্বশীল।
জীবদ্দশায় তিনি যেমন একের পর এক বর্ণিল কাজ করে গেছেন তেমনি জীবনের শেষটায় রেখে গেছেন অনন্য স্বাক্ষর। আজ মঙ্গলবার তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দান করা হবে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তার (মোবাশে^র হোসেন) পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) তার মরদেহ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগে গ্রহণ করা হবে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের গবেষণার কাজে ব্যবহার হবে। তিনি জীবিত অবস্থায় তার দেহ দানের বিষয়টি চূড়ান্ত করেন।’
এদিকে মোবাশ্বের হোসেনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সব মহলে। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। সমাজের যেকোনো অনিয়মে সোচ্চার ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে দেশ একজন প্রতিভাদীপ্ত স্থপতি হারাল, এ শূন্যস্থান সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
গত রবিবার রাত ১টা ৩৮ মিনিটে ঢাকার শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থপতি মোবাশে^র হোসেনের মৃত্যু হয় বলে স্থপতি ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘উনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। সবশেষ দুই মাস তাকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। তখন তার ডায়ালাইসিস করা যাচ্ছিল না।’ ধীরে ধীরে শরীরের অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না জানিয়ে ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম বিদেশে নিতে, কিন্তু তার শরীরের নাজুক অবস্থার কারণে বিদেশে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় তিনি গত রাতে (রবিবার) চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।’
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় মোবাশে^র হোসেনের মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার প্রিয় কর্মস্থল বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটে (আইএবি)। মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে এক শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। সেখানেই তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। জানানো হয় রাষ্ট্রীয় সম্মান।
এদিকে শ্রদ্ধা জানাতে এসে মোবাশ্বের হোসেনের গুণগ্রাহী ও বিশিষ্টজনরা বললেন, দেশ যখন এ উন্নয়নের মহীসোপানে তখন তার মতো একজন গুণীকে হারানো অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সুশাসন প্রশ্নে তিনি ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর। তার মতো সাহসী লোকের অভাব পূরণ করা কঠিন।
ঢাকার দুই মেয়র তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, নগর উন্নয়নের এ পুরোধার মৃত্যুতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুর রহমান বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে মোবাশে^র হোসেন কখনো ভয় পেতেন না।’ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘তিনি পরিকল্পিত নগরায়ণের একজন পথিকৃত ছিলেন।’ বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘বিভিন্ন ইস্যুতে তার মতো স্পষ্টবাদী মানুষের খুব অভাব। এ ধরনের মানুষ যতই চলে যাবে ততই উদাহরণগুলো সরে যাবে। আশা করব ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের কর্মগুলো মনে রাখবে।’
সবার শ্রদ্ধা জানানো শেষে স্থপতি মোবাশে^র হোসেনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় আরেক প্রিয় জায়গা ব্রাদার্স ইউনিয়নে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখান থেকে রাতে মরদেহ মরচুয়ারিতে রাখা হয়। আজ বিএসএমএমইউতে মরদেহ দান করা হবে।
১৯৪৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম নেওয়া মোবাশ্বের হোসেন ছিলেন এসোকনসাল্ট লিমিটেডের প্রধান স্থপতি। তিনি কমনওয়েলথ অ্যাসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্টস এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল, এশিয়ার (আর্কেশিয়া) প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যের স্নাতক সম্পন্ন করা এ স্থপতি বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের কাজ করে গেছেন। এর মধ্যে প্রশিকা ভবন, গ্রামীণ ব্যাংক ভবন ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন উল্লেখযোগ্য। পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনে সোচ্চার এ স্থপতি ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সহসভাপতি ছিলেন।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সাবেক সভাপতি। এ ছাড়াও সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়কও ছিলেন। তিনি তার জীবনে কয়েকটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে আমেরিকান স্থপতি ইনস্টিটিউট (এআইএ) প্রেসিডেন্ট পদক-২০০৯ উল্লেখযোগ্য।
দেশবরেণ্য স্থপতি মোবাশ্বেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে দেশের প্রকৌশলীদের পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)। শোকবার্তা দিয়েছে বিসিবি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনসহ বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। এক শোকবার্তায় বলা হয়, মোবাশ্বের হোসেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি নৈতিক ও মানবিক সমাজ গঠনে আজীবন সাহসী ভূমিকা রেখে গেছেন। তার ভূমিকা জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তারা বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ২১ তলা ‘বঙ্গবন্ধু মিডিয়া কমপ্লেক্স’র নকশা প্রণয়ন কমিটির অন্যতম পরামর্শক ছিলেন মোবাশ্বের হোসেন। তার মৃত্যুতে জাতি এক দেশবরেণ্য স্থপতিকে হারাল। স্থাপত্য শিল্পে তার অবদান জাতি গভীরভাবে স্মরণ রাখবে।
চলতি করবর্ষের নিয়মিত সময়ে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ইটিআইএনধারীর অর্ধেকেরও কম। ফলে কর পরিশোধে সক্ষমতা থাকার পরও যারা রিটার্ন জমা দেননি তাদের খোঁজে নামছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি করবর্ষে কেউ রিটার্ন জমা না দিলে বা রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল সোমবার থেকে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআরের বিভিন্ন কর অঞ্চলের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একাধিক কমিটি। এসব কমিটি প্রথম ধাপে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, বিলাসবহুল গাড়ির মালিক, বিভিন্ন করপোরেট হাউজে কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যরা রিটার্ন জমা দিয়েছেন কি না তার তথ্য খতিয়ে দেখবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন নামিদামি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অভিভাবকদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হবে। স্কুল থেকে অভিভাবকরা কে কী করেন, কোথায় থাকেন, সব তথ্যই সংগ্রহ করা হবে। এরপর খোঁজ নেওয়া হবে তারা রিটার্ন দাখিল করেছেন কি না। এর আগে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অনেক অভিভাবক রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অনেকে ব্যবসায়ে লোকসান দেখিয়েছেন। অনেকে আবার ব্যবসা করলেও রিটার্ন জমা দেননি।
অতীতে এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে জাল কাগজপত্র নিয়ে রাস্তায় চলছে এমন প্রায় শতাধিক বিলাসবহুল গাড়ি চিহ্নিত করেছে এনবিআর। এসব গাড়ির মালিক মিথ্যা ঘোষণায় আনা গাড়ি কিনেছেন বা আমদানি করে ব্যবহার করেছেন। চলতি করবর্ষে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে বিলাসবহুল গাড়ির মাালিকদের চিহ্নিত করে রিটার্ন জমার তথ্য খতিয়ে দেখা হবে।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, সাধারণত বিভিন্ন করপোরেট হাউজ থেকে তাদের কর্মকর্তাদের কর পরিশোধ করে থাকে। অনেক সময় রিটার্ন জমা দিয়ে দেয় বা রিটার্ন জমার কাজে সহযোগিতা করে থাকে। এর আগে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, করপোরেট হাউজ থেকে এনবিআরের পাওনার কম রাজস্ব পরিশোধ করেছে।
ইটিআইএনধারীর অর্ধেকও রিটার্ন জমা দেননি : বর্তমানে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (ইটিআইএন) আছেন ৮২ লাখের কিছু বেশি। অর্থাৎ এসব ব্যক্তি করজালের আওতায় আছেন। প্রত্যেক ইটিআইএনধারী করদাতার রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এবার নিয়মিত সময়ের মধ্যে (১ জানুয়ারি) রিটার্ন জমা দিয়েছেন ২৮ লাখ ৫১ হাজার করদাতা। আরও ২ লাখ ৫০ হাজার করদাতা চলতি করবর্ষে রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছেন।
চলতি করবর্ষে নিয়মিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়ে আয়কর পরিশোধ হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার রিটার্ন দাখিলে প্রবৃদ্ধির হার ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত বছর এ সময় পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করেছিলেন ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৫ করদাতা। গত করবর্ষে আয়কর আদায় হয়েছিল ৩ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।
সৌদি আরবে একটি মসজিদে ইমামতি করতেন যুবক আবদুর রব (২৮)। সেখানে থাকা অবস্থায় ভার্চুয়াল বিভিন্ন মাধ্যমে জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরে অনলাইনে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে পরিচয় হয় আরও কিছু তরুণের সঙ্গে। কয়েকজনকে নিয়ে নিজেই গড়ে তোলেন একটি নেটওয়ার্ক। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌদি থেকে চলে আসেন দেশে। বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে না গিয়ে সরাসরি চলে যান জঙ্গি ক্যাম্পে। সেই জঙ্গি ক্যাম্পে আল-কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র জিহাদ করার পরিকল্পনা নিয়েই সংঘটিত হচ্ছিলেন তারা। অবশ্য কোনো অঘটন ঘটানোর আগেই রবিবার রাতে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে দলনেতা আবদুর রবসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি)।
গ্রেপ্তার অন্যরা হচ্ছে সাকিব (২৩), শামীম হোসেন (১৮), নাদিম শেখ (১৯), আবছার (২০) ও সাইদ উদ্দিন (১৮)। গতকাল সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
এদিকে, গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তারদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে মঞ্জুর করেছে আদালত। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রেপ্তার আবদুর রব সমন্বয়ক হয়ে সবাইকে অনলাইনে একত্রিত করে শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, জিহাদ, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করত। পরবর্তী সময়ে তাদের অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে অডিও-ভিডিও কলে যোগাযোগ স্থাপন করে। বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। এরপর সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরও একজন বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আবদুর রব, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা জিহাদে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে ট্রেনিং গ্রহণ করবে। পরে তারা বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর নভেম্বর প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুসারে গত ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যায়। স্থানীয় সহযোগী ও গ্রেপ্তার আবছার তাদের টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। গ্রেপ্তার দলনেতা আবদুর রব ছুটি না পাওয়ায় যথাসময়ে দেশে আসতে ব্যর্থ হলে তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করে এবং অপেক্ষা করতে থাকে। গত ২২ নভেম্বর আবদুর রব দেশে এলে তার সহযোগী শামীম ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের অন্য সহযোগীদের ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন শলাপরামর্শ করে। দুদিন পর আবদুর ও শামীম মিলে সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্যান্য সহযোগীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রেনিং নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান সিটিটিসির প্রধান।
কে এই আবদুর রব? : অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জিহাদের সমন্বয়ক মাওলানা আবদুর রব একজন কোরআনে হাফেজ এবং কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। ২০১৯ সালের জুন মাসে সৌদি আরবে চলে যান। সেখানে একটি মসজিদের ইমাম, পাশাপাশি হেফজ শিক্ষা দিতেন। সৌদিতে অবস্থানকালে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হন। অনলাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে সাইদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একইভাবে শামীম, সাকিব, নাদিমসহ ও আরও কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়।
৫ দিনের রিমান্ড : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা সন্ত্রাস বিরোধ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার ছয় জঙ্গির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।