
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ১৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১৪০টির পাওয়া ফলাফলে তিনি ভোট পেয়েছেন ৭৬ হাজার ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির গোলাম শহীদ রঞ্জু পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৯৫৯ ভোট।
গতকাল বুধবার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সকালে কনকনে শীতের দাপটে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই শীতে কাবু ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত কম। সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুরুষ ভোটারদের দেখা গেলেও নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। কেন্দ্রগুলোতে বুথের সামনে নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
এদিকে গাইবান্ধা-৫ আসনে দ্বিতীয়বারের উপনির্বাচন নিয়ে সন্তুষ্ট সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ভোট শেষে তিনি বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের শুরুটাও সুন্দর ছিল, শেষটাও চমৎকার ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সেদিক থেকে নির্বাচনটা সফল হয়েছে। গড়ে ৩৫ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণে কোনো ধীরগতি ছিল না দাবি করে সিইসি বলেন, সেরকম কোনো অভিযোগও ছিল না। ভোটে সিসি ক্যামেরা নতুন সংযোজন জানিয়ে তিনি বলেন, এটি অনেক তীক্ষè, সূক্ষ্ম ও কার্যকর হচ্ছে। প্রার্থীরাও গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সিইসি বলেন, যে অভিজ্ঞতা অর্জন করছি তাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ছে। জাতীয় নির্বাচনে সেটা আরও সমৃদ্ধ করবে বলে আশা করি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছয় উপজেলায় ২৫-৩০ শতাংশ ভোট পড়ে। দুপুরের পর থেকে ভোট প্রদানের হার কিছুটা বাড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত গড়ে ৩৫ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, অসন্তুষ্ট হতাম যদি কেউ বলত ভোট দিতে যেতে বাধা দিচ্ছে। প্রচণ্ড শীতের কারণে ভোটার কম হয়েছে বলে মনে হয়েছে।
এদিকে এবার ভোটে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করলেও তাদের বেশিরভাগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ছিল না কোনো উত্তেজনা বা উত্তাপ। তাদের নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে ভোটের মাঠে। আগের ভোটে তারা বাড়ি গিয়ে ডেকে ডেকে ভোটার আনলেও এবার তা লক্ষ করা যায়নি। ভোটকেন্দ্রের সামনে ছিল না কোনো সেøাগান। প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রে এলেও ছিল না মুহুর্মুহু করতালি।
ভোটে আগ্রহ ছিল না সাধারণ মানুষের : একই আসনে দুবার ভোটের আয়োজন হওয়ায় আগ্রহ ছিল না ভোটারদের মধ্যে। আগেরবারের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। গত ১২ অক্টোবর ভোট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এবারের ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ভোটারদের কাছে ভোটারের উপস্থিতি কম কেন জানতে চাইলে একজন বলেন, ‘এক ভোট কয়বার দেমো।’
ইভিএমের প্রভাব : এবার গোপন কক্ষে ভোটার ছাড়া অন্যদের প্রবেশে কড়াকড়ি থাকায় অসুস্থ ও বৃদ্ধদের ভোট দিতে আসতে দেখা যায়নি। কেননা ব্যালটের মাধ্যমে হলে আগের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে হুইল চেয়ার ও কোলে করে তাদের পরিবারের একজন সদস্য সঙ্গে গিয়ে ভোট দিতে সহযোগিতা করতে। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে আসতে দুয়েকজন অসুস্থ ও বৃদ্ধ ব্যক্তি ছাড়া এবার সেই চিত্র চোখে পড়েনি।
নৌকা-লাঙ্গল ছাড়া অন্যদের এজেন্ট নেই : নির্বাচনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্ট ছাড়া অন্য প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়নি। যারাও দায়িত্বে ছিলেন তারা ছিলেন চুপচাপ। ফলে কোনো ধরনের চাপ ছাড়াই ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন বলেছেন, পুনঃঘোষিত উপনির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। জাপা মনোনীত গোলাম শহীদ রঞ্জু বলেছেন, গত উপনির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। কিন্তু এবার শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট দিয়েছি। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হয়েছে।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. কামাল হোসেন বলেছেন, প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার কারণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। একই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার কারণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, এ আসনে ইভিএমে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় নয়টি কেন্দ্রে জেনারেটরের মাধ্যমে ইভিএম মেশিন চালানো হয়। প্রতি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮ জন।
এ আসন থেকে চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া গত বছর ২৩ জুলাই মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য হয়। তফসিল ঘোষণার পর উপনির্বাচন হয় গত বছর ১২ অক্টোবর। এদিন অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে দুপুরে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে ইসি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছর। এই এক বছর বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা নিয়েও ব্যস্ত থাকতে হবে। এমন ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি ‘রাজনৈতিক ফয়সালা’র ওপর ভরসা রাখছেন বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনায় সম্পৃক্ত শীর্ষ আইনজীবীরা।
নিরপেক্ষ সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপির শীর্ষ নেতারা রয়েছেন মামলা কিংবা সাজার ঝুঁকিতে। পুরনো মামলার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়তই নতুন মামলা হওয়ার খবর আসছে। যার প্রায় সবই পুলিশের ওপর হামলা, নাশকতা কিংবা বিস্ফোরক আইনে। আসামি করা হচ্ছে শত শত নেতাকর্মীকে। প্রায় প্রতিদিনই গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। জামিন নিতে নেতাকর্মীদের ছুটতে হচ্ছে অধস্তন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে। গ্রেপ্তার ও হয়রানির আতঙ্কে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।
অন্যদিকে দুর্নীতির অভিযোগে করা পুরনো মামলা এবং সাজার বিরুদ্ধে সহসাই আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগের ইঙ্গিত দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীরা। এ তালিকায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুকসহ অন্তত ১০ শীর্ষ নেতা।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন মোকাবিলায় সরকার পুরনো মামলা সচলের পাশাপাশি নতুন মামলার কৌশল অবলম্বন বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-মন্ত্রীদের ইঙ্গিত দেওয়ার খবর দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির শীর্ষ আইনজীবীরা বলছেন, দেড় দশক ধরে মামলা, জামিন আর বিচার নিয়ে কঠিন সময় যাচ্ছে তাদের। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে সারা দেশে এক লাখের বেশি মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির ৩৭ লাখ নেতাকর্মীকে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার এই সময়ে গত তিন মাসে সারা দেশে কয়েকশ মামলায় বিএনপির অন্তত ৭৫ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২৩ হাজার নেতাকর্মী রয়েছেন কারাগারে। গত আড়াই মাসে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৫০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী। আদালতের কর্মদিবসে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশের করা মামলায় আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়ছে। অতীতে এত বেশিসংখ্যক আগাম জামিনের নজির নেই বলে জানান আইনজীবীরা।
আইনজীবীদের অভিযোগ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে আদালতে ব্যস্ত রেখে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া, শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও কেন্দ্রীয় ও জনপ্রিয় নেতারা যাতে নির্বাচনে আসতে না পারেনএটি তারই অপকৌশল। আইনের বেড়াজালের এই সংকটময় পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবেএমন প্রশ্নে দলটির শীর্ষ আইনজীবীরা বলছেন, মামলাগুলো রাজনৈতিক। এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক ‘রাজনৈতিক ফয়সালা’তেই সমাধান হতে পারে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৫ বছর ধরে মামলা, জামিন আইনগতভাবেই সামাল দেওয়া হচ্ছে। তবে কয়েক মাস ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে দারুণ অসুবিধার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। সাধারণত নির্বাচনের প্রাক্কালে এসব ঘটনা ঘটে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতি কখন কোনদিকে যায় সেটা সরকারও বুঝতে পারে না। যারা বিরোধী দলে থাকে তারাও জানে না। সরকারি দল চায় ক্ষমতায় থাকতে আর বিরোধী দল চায় ক্ষমতার পরিবর্তন। এখন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মামলা আরও বাড়বে কি না, নেতাকর্মীরা কারাগারে থাকবে কি না, এর গতি প্রকৃতি কী হবে এটা সময়ই বলে দেবে।’
মার্চ নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘যেভাবে মামলা-গ্রেপ্তার চলছে, তাতে আমাদের তো কৌশলগত অবস্থান নিতেই হবে। পাশাপাশি আন্দোলন চলতে থাকবে। সবকিছুর জন্য একটু সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে। এ সময় সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে নেয় তাহলে তো কথাই নেই।’
খালেদা জিয়াসহ যেসব নেতার মামলা আলোচনায়: দুর্নীতির দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদ-প্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাতে সাত বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলটিও হাইকোর্টে দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয় নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে।
দুদকের প্রধান কৌঁসুলি মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতে মামলাগুলো বছরের পর বছর পড়ে ছিল। পুরনো মামলা নিষ্পত্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। আমরা আরও কিছুদিন দেখব। যদি তারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবী) কোনো উদ্যোগ না নেন, তাহলে আমরাই আপিল শুনানির উদ্যোগ নেব।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত হলে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। যদি নজির থেকেও থাকে এটা দেখার দায়িত্ব কার? এখন ইসি যদি কোনো ভুল করে সেটার দায় তো দুদক নেবে না।’
তবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের আইনজীবীরা বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে যেহেতু নিষ্পত্তি হয়নি, তাই খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপির শীর্ষ নেতা গয়েশ্বর রায়ের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম বাতিল প্রশ্নে দেওয়া রুল খারিজ করে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। মামলাটি বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে করা আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করেছে। সুপ্রিম কোর্টও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছে। বিচারিক আদালতে এ মামলায় শেষ সাক্ষীর (তদন্ত কর্মকর্তা) সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। গত ২৭ ডিসেম্বর ২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার দুর্নীতির আরেকটি মামলায় মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকার দুর্নীতির মামলায় পুনঃতদন্ত ও সাক্ষীর পুনরায় জেরা চেয়ে আবেদন উচ্চ আদালত খারিজ করে দিয়েছে। বিচারিক আদালতে আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনও শেষ হয়েছে।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানকে ১৩ বছর সাজা দিয়েছিল বিশেষ আদালত। হাইকোর্টে খালাসের পর আপিল বিভাগ মামলাটি ফের হাইকোর্টে পুনঃশুনানির জন্য পাঠিয়েছে। একই ধরনের মামলায় বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে ৯ বছরের কারাদন্ড দেয় বিচারিক আদালত। হাইকোর্টে খালাসের পর এই মামলাটিও আপিল বিভাগের আদেশে পুনঃশুনানিতে আসে। এর মধ্যে আমানের মামলাটি রয়েছে শুনানির শেষ পর্যায়ে।
দুর্নীতি দমন ব্যুরোর (বর্তমানে দুদক) নোটিসের জবাবে সম্পদের হিসাব বিবরণী না দেওয়ায় জয়নাল আবদিন ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা হয় ২০০০ সালের ১৯ জানুয়ারি। মামলায় অভিযোগ গঠনের বৈধতা নিয়ে আবেদন করলে ২০১০ সালের ১ জুন হাইকোর্ট রুলসহ মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয়। সম্প্রতি ২৩ বছরের পুরনো এ মামল সচলের উদ্যোগ নেয় দুদক। গত ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল খারিজ করে মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় এক মাস ধরে কারাগারে আছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্লট জালিয়াতি ও নকশাবহির্ভূত হোটেল নির্মাণের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। বিএনপির এই নেতা যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে।
ঢাকার বিচারিক আদালতে দুদকের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্থগিত থাকা মামলাগুলো এখন আইন মোতাবেক নিষ্পত্তি হয়ে আসবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দলের নেতারা কাকে দায়ী করে কী বললেন সেটা আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়। এখানে কোনো চাপ বা রাজনৈতিক বিবেচনার সুযোগ নেই।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কী হবে সেটি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবে। তবে রাজনীতিতে অনিবার্যভাবেই বিরোধ, মত ও পথের অমিল থাকে। কিন্তু আদালতকে ব্যবহার করে সরকারের জেল, জুলুমসহ সার্বিক কর্মকান্ডে মানুষ কিন্তু সরকারের সঙ্গে নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রের শক্তি চলে আদেশে। আর রাজনীতি চলে রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তে। তাই আমাদের হয়তো আরও অপেক্ষা করতে হবে।’
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের নামে মামলা কিংবা সাজার বিষয়টি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ফয়সালার ওপর নির্ভর করে। আমরাও সে অপেক্ষায় আছি। এখন সেটি কতদিন লাগতে পারে তা সময়ই বলে দেবে।’
সপ্তাহ দুয়েক আগে ফ্রান্সকে কাঁদিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ করে অধরা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন, আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছিলেন তৃতীয়বার বিশ্বজয়ের আনন্দ। দেশে সতীর্থদের নিয়ে সেই আনন্দ-উদযাপন শেষে প্রথমবার ফ্রান্সে ফিরলেন মেসি। এবার প্যারিসে, ক্লাব পিএসজিতে ফেরাটা তার তার জন্য ভিন্ন রকমের। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেসিকে সাদরে বরণ করে নেওয়া হয়েছে ক্লাবে। পিএসজি কমপ্লেক্সে দু’পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে পিএসজির সবাই গার্ড অব অনার দিয়েছেন তাকে। বিশ্বজয়ী তারকার হাতে পিএসজির পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে স্মারক সম্মাননা। উদ্ভাসিত মেসি আলোড়িত হয়েছেন সেই সংবর্ধনায়।
তবে মেসিকে এমন অনাড়ম্বর সম্ভাষণে খুশি হতে পারেননি সমর্থকরা। যোগযোগমাধ্যমে মেসিকে বরণ করে নেওয়ার মুহূর্তগুলো ভিডিও আকারে প্রকাশ করেছে পিএসজি। তাতে ক্লাবকে উদ্দেশ্য করে ভর্ৎসনাও আছে। তাদের দাবি, পিএসজির উচিত ছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কিংবদন্তিকে আরও বিশেষ কিছু করে আমন্ত্রন জানানো। ভক্তরা ভুল বলেননি। ভিডিও বানানো, সবাই মিলে গার্ড অব অনার ও সম্মাননা স্মারক দিলেও এর চেয়েও অনেক বেশি কিছু করা যেত মেসির জন্য। মেসি বিমানবন্দর থেকে একাই গাড়ি করে এসেছেন ক্লাবে। নেভি ব্লু জ্যাকেট ও কালো টি-শার্ট-প্যান্ট পরিহিত মেসি নিজেই তিনটি ছোট ব্যাগ হাতে ক্লাবের অনুশীলন ফ্যাসিলিটিতে আসেন। সেখানে নেইমার, ভেরাত্তিসহ উপস্থিত ফুটবলাররা অভিনন্দন জানান মেসিকে। এরপর ক্লাবের সবাই মিলে অনুশীলন মাঠে মেসিকে রোল অব অনার ও সম্মাননা স্মারক দেন। অথচ এইটুকুর সঙ্গে স্টেডিয়ামভর্তি সমর্থকদের সামনে মেসিকে শুভেচ্ছা জানানোর ব্যবস্থা তো করতেই পারত পিএসজি।
মেসিকে বরণ করে নিতে পুরো দলকেও রাখতে পারেনি পিএসজি। রবিবার লঁসের কাছে হারের পর মঙ্গলবার দলের অনেক ফুটবলারকেই ছুটি দেওয়া হয়। তাই তারা ক্লাবের অনুশীলন ফ্যাসিলিটিতে ছিলেন না। এদের মধ্যে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ফাইনাল প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের হ্যাটট্রিকম্যান কিলিয়ান এমবাপ্পে, মরক্কোর নায়ক আশরাফ হাকিমিও আছেন। দুজনেই ছুটি কাটাতে নিউইয়র্কে চলে গেছেন। ১১ জানুয়ারির আগেই ফিরবেন তারা। ওই দিন লিগ ওয়ানে অজিয়ারের সঙ্গে ম্যাচ পিএসজির। তার আগে অবশ্য শুক্রবার ফ্রেঞ্চ কাপে ম্যাচ আছে প্যারিসিয়ানদের, যাতে খেলবেন মেসি।
কিংবদন্তি ইমেজ পাওয়ার পর সম্ভবত সেরা সময়টা কাটিয়েছেন মেসি। নিজের দেশে একদম ছোটবেলার সময়ে ফিরে গিয়েছিলেন। দুই সপ্তাহ নিজের মতো করে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পেরেছেন সর্বজয়ী মেসি। বড়দিন ও নববর্ষ পালন করেছেন নিজ শহর রোজারিওতে। কিছুদিন আগে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায় তার ভাতিজির বিয়েতে নাচছিলেন মেসি। বিয়েবাড়িতে সাধারণ সমর্থকদের ভিড়ে মিশে গিয়েছেন কোনো বাছ-বিচার না করে। নিজেদের অনুষ্ঠানে থাকার বাইরে শহরে বেশি দেখা যায়নি মেসিকে।
মেসির শহরের পাশের শহর ফুনেসের মেয়র কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের সম্মান হিসেবে মেসিকে শহরের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাগরিকের সম্মানে ভূষিত করেন। সেই সম্মান গ্রহণের সময় নিজের বাসায় করা এক ভিডিও বার্তায় আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মেসি একই সঙ্গে ধন্যবাদ ও দুঃখ প্রকাশ করেন, ‘ফুনেস এবং রোজারিওর সব নাগরিককে এবং দেশের সবাইকে আমি ভালোবাসা জানাই। ধন্যবাদ জানাই আমার পাশে থাকার জন্য। একই সঙ্গে আমাকে ক্ষমা করবেন কারণ সবার সঙ্গে দেখা করা একরকম অসম্ভব তাই আমি খুব একটা বাইরে আসছি না।’
আর্জেন্টিনার পর্ব সেরে এবার মেসির ফ্রান্সে উদযাপনের পালা। লঁসের কাছে গত রাউন্ডে হারের পর লিগ শীর্ষে ব্যবধানটা কমেছে পিএসজির। সেই অবস্থান থেকে দলকে ভালো সময়ে ফেরাতে চাইবেন বিশ্বজয়ী তারকা। সঙ্গে তার পিএসজিতে আরও এক বছর চুক্তি বাড়ানোর খবরও উঠছে। আর সেটা একদম ফেলে দেওয়াও যাচ্ছে না। এই সপ্তাহেই মেসির ২০২৪-এর জুন পর্যন্ত পিএসজিতে থাকার সংবাদ চলে আসতেই পারে।
এদিকে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেওয়ায় বাংলাদেশকে আবারও ধন্যবাদ দিয়েছে দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ দিতে সোমবার আর্জেন্টিনায় নিযুক্ত বাংলাদেশের অনারারি কনসাল লিয়ান্দ্রো গাবারদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এএফএর প্রেসিডেন্ট ক্লডিও তাপিও। গাবারদির মাধ্যমে বাংলাদেশের ভক্তদের আর্জেন্টিনা জাতীয় দল ও অ্যাসোসিয়েশনের ধন্যবাদ পৌঁছে দেন এএফএ প্রধান। গাবারদি এক বিবৃতিতে জানান, ‘বিশ্বকাপ চলাকালে ঢাকা এবং অন্যান্য শহরে ভালোবাসামাখা সমর্থনের জন্য জাতীয় দলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ক্লদিও তাপিয়া।’
বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা দলের প্রতি এই অকুণ্ঠ সমর্থন শুধু মেসিদের দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রচার হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠিও পাঠান।
বিদায়ী বছরে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় আমদানি খরচ বেড়ে যায়। ফলে দেশের বাজারে ডলারের অস্থিরতা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিনিয়ত বাজারে ডলার ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে আরও ৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতি ডলারে ১০০ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও রিজার্ভের পতন ঠেকাতে পারছে না। চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩২ বিলিয়নে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গণনা পদ্ধতি অনুসারে তা দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়নে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রথমবারের মতো ব্যাংকগুলোর কাছে ১০০ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে তারা। এ নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) ৭৬৫ কোটি বা ৭.৬৫ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে ছয় মাসে রিজার্ভ থেকে এত ডলার কখনো বিক্রি হয়নি। অস্থির ডলার বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি (৭.৬২ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছিল তারা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজার থেকে উল্টো প্রায় ৮০০ কোটি (৮ বিলিয়ন) ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাপরবর্তী অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বেধে যাওয়ায় সারা বিশে^ই অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। রপ্তানির চেয়ে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডলার সংকট তৈরি হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির এলসিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় খরচ অনেকটা কমেছে। গত দুই মাস ধরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের দুই সূচক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। এই ধারা ঠিক থাকলে দ্রুত দেশের ডলার সংকট আরও কাটবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে তখন আর ডলার বেচতে হবে না।
নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই মাস অন্তর সুদসহ আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। দায় পরিশোধের মতো রিজার্ভ না থাকায় গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সম্প্রতি এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। নতুন বছরে আইএমএফের প্রতিশ্রুত ৪৫০ কোটি ডলার ঋণছাড় শুরুর আশা করা হচ্ছে। তবে সংস্থাটি থেকে ঋণ নিতে বাংলাদেশকে কিছু সংস্কার করতে হবে। শর্তের অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদ্ধতিতে রিজার্ভের হিসাব করতে হবে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে জোগান দেওয়া ৭ বিলিয়ন ডলারসহ বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতে সম্মত হয়েছে। ফলে চলতি সপ্তাহে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নামবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২২ জুন প্রথমবারের মতো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। করোনার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ছিল। করোনার প্রভাব শুরু হলে বিশ্ববাজারে সুদহার অনেক কমে যায়। তখন বিশ্বের অনেক দেশ বিদেশি ঋণ কমালেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়। ২০২১ সালে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পথ বেছে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১ সালের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনাপরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ জিনিসের দর বেড়েছে। এরপর রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের জুন শেষে ছিল ৪১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। গত এক বছরে রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমেছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আপতত মুক্তি পাচ্ছেন না। এ দুই নেতাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করায় তারা এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না। কারণ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানি হবে আগামী রবিবার।
এর আগে গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করার পর মির্জা ফখরুল ও আব্বাসের আইনজীবীবরা তাদের মুক্তিতে আর আইনগত বাধা নেই বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছিল, তারা আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে যাবে।
গতকাল বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন স্থগিতাদেশ না দিয়ে শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করেন। এ সময়ের মধ্যে ফখরুল-আব্বাসের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা কোনো জামিননামা (বেইল বন্ড) দিতে পারবেন না বলে আদেশ দেয় আদালত। ফলে রবিবার পর্যন্ত দুজনকে কারাগারে থাকতে হবে এবং ওই দিন সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির পর জামিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে বলে জানান উভয় পক্ষের আইনজীবীরা।
প্রায় এক মাস ধরে কারাগারে থাকা ফখরুল ও আব্বাসের জামিন চেয়ে অধস্তন আদালতে চারবার আবেদন করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই নামঞ্জুর হওয়ায় সোমবার হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। মঙ্গলবার হাইকোর্ট দুজনকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আদেশ দেয়। একই সঙ্গে কেন তাদের স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দেয় আদালত।
গতকাল হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে চেম্বার আদালতের এজলাসে উভয় পক্ষের বিপুলসংখ্যক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, মেহেদী হাছান চৌধুরী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। ফখরুল-আব্বাসের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, কায়সার কামাল, সগির হোসেন লিয়ন প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এস এম মুনীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জামিন স্থগিতের আবেদনটির ওপর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। তারা (ফখরুল-আব্বাসের আইনজীবী) অঙ্গীকার করেছেন যে এই সময়ে জামিননামা দেবেন না। সে পর্যন্ত দুজনকে কারাগারে থাকতে হবে।’
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘এই সময়ে জামিননামা দেওয়া হবে না বলে আমরা আদালতকে অবহিত করেছি। রবিবার সর্বোচ্চ আদালতে আমরা জামিন চাইব।’
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে মকবুল নামে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় পল্টন থানায় করা মামলায় ফখরুল, আব্বাসসহ দলটির ৪০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ৮ ডিসেম্বর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে নয়াপল্টনের সংঘর্ষের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন ৯ ডিসেম্বর আদালত তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। ফের জামিনের আবেদন করলে ১২ ডিসেম্বর ঢাকার একটি আদালত তা নামঞ্জুর করে। এরপর ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুজনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হয়। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতে দুজনের জামিনের আবেদন নাকচ হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্নিসন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তির পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে সেজন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সতর্ক থাকুন কেউ আবার অগ্নিসংযোগ-সন্ত্রাস করার সাহস না পায় এবং কেউ আর যাতে কখনো কারও জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার সকালে তার কার্যালয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রাম প্রসঙ্গে বলেন, ‘হ্যাঁ আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। ঠিক আছে জনগণকে নিয়ে করবে। সেক্ষেত্রে যদি কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা সবাইকে নিতে হবে। কারণ আজ বাংলাদেশের যতটুকু উন্নতি আমরা করেছি সেটা কিন্তু এমনি এমনি আসেনি। এজন্য আমাদের শ্রম দিতে হয়েছে, কষ্ট করতে হয়েছে, পরিকল্পনা করতে হয়েছে। যার ফলে মাত্র ১৪ বছরে আমরা বাংলাদেশের বিরাট পরিবর্তন আনতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী পুলিশের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানা রকম চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সমস্যার কারণে সৃষ্ট সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমস্যা, মানবসৃষ্ট দুর্যোগ-যেমন অগ্নিসন্ত্রাস বা নানা নৈরাজ্য যেখানে পুলিশ সদস্যদের নির্দয়ভাবে মারা হয়েছে, আমরা দেখেছি। কাজেই ভবিষ্যতে যাতে আমাদের এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে না পারে। কেউ যেন আর ঐ অগ্নিসন্ত্রাস করার সাহস না পায়। মানুষের জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা যেন কেউ বিঘিœত করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই আইনশৃঙ্খলাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীকেই পালন করতে হবে। এ জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং সেক্টর ওয়াইজ বাহিনী করে সার্বিক সুযোগ-সুবিধা তার সরকার বৃদ্ধি করে দিয়েছে কারণ একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পুলিশ বাহিনীকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হয়। থানা, তদন্ত কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এমনকি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নও তার সরকার করে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল হাসান। কয়েকজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার কথাও শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশ পুলিশের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।’ ব্রিটিশ অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চারজন সাংসদ গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে নির্বাচন কমিশন অনেকটাই স্বাধীন। আমরা আপনাদের ওয়েস্টমিনস্টারের গণতন্ত্র অনুসরণ করি। নির্বাচন পর্যবেক্ষক এলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে অতীতে সামরিক শাসকদের কাছ থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে আওয়ামী লীগের। সামরিক শাসকরা বন্দুক ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করত এবং রাজনৈতিক দল গঠন করে রাজনীতিতে পৃষ্ঠপোষকতা করত।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নিতে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ভোজ্যতেল আসত। ‘কিন্তু যুদ্ধের কারণে এই আইটেমগুলোর আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এই জিনিসগুলোর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের উদ্যোক্তাদের সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা সেখানে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকে স্বাগত জানাব।’
ব্রিটিশ এমপিরা বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা এ উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন। প্রেস সচিব বলেন, ‘বিশেষ করে তারা মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেলসহ কানেকটিভিটির উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।’
বাংলাদেশের উন্নয়নে এসব অবকাঠামো খুবই সহায়ক হবে বলে মনে করেন সংসদ সদস্যরা। ব্রিটেনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার উল্লেখ করে তারা বলেছেন, ব্রিটেন বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। তারা উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনেক পরিশ্রমী এবং তারা ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। তারা আরও বলেন, যুক্তরাজ্য জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে।
ব্রিটিশ এমপিরা বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করেছেন বলে জানান ইহসানুল করিম।
অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম. জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।