
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এমএম ইমরুল কায়েস জানান, প্রধানমন্ত্রী সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বছর পূর্তি উপলক্ষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ ভাষণ দেবেন। তার ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনে সম্প্রচার করা হবে।
আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
আজ খুলনা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : ব্যক্তিগত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে সড়কপথে খুলনায় যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পার হয়ে নগরীর আড়ংঘাটা বাইপাস ধরে দিঘলিয়া ঘাটে পৌঁছবেন। দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় তার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে কেনা পাটগুদাম পরিদর্শন করবেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সবশেষ খুলনায় যান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এ সফর রাষ্ট্রীয় নয়। সে কারণে তার সঙ্গে আমাদের দলের কোনো নেতাকর্মীর সাক্ষাৎ হবে কি না, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তিনি বিশ্রাম নেওয়ার সময় দলের নেতাদের ডেকে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে জানতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় একটি জমি কেনা ছিল। জমির ওপর পাটগুদাম ছিল। নেত্রী দীর্ঘদিন সেখানে আসেননি। আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৮২ সালে একবার এসেছিলেন।’
আওয়ামী লীগের দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, দিঘলিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা দেখা করতে পারবেন। তাদের সঙ্গে খুলনাসহ এ অঞ্চলের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলাপ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সহধর্মিণীর নামে দিঘলিয়ার ভৈরব নদের কোলঘেঁষে নগরঘাট এলাকায় ১ একর ৪৪ শতক (৪ বিঘা) জমিতে পাটগুদাম ও এক কক্ষবিশিষ্ট ঘরসহ জমি কেনেন।
বিচারাধীন রাজস্ব-মামলার সংখ্যা ২৩ হাজারের বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে এসব মামলার নিষ্পত্তি হলে সরকারের আদায় হবে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু রাজস্ব-মামলার আপিল ট্রাইব্যুনাল, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট প্রভৃতি পার হয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লেগে যায়। উপরন্তু নতুন মামলা যোগ হয় প্রায় প্রতিদিন। এতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ে এবং নিষ্পত্তি হয়ে রাজস্ব আদায়ে গতি কমে যায়। কবে এ জট কাটবে তা অনিশ্চিত।
এসব মামলার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা। ভ্যাটে বা আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা যে অঙ্কের রাজস্ব পরিশোধ করেছেন এনবিআরের হিসাব তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা মামলা করেছেন। বিচারাধীন আয়কর মামলার বেশিরভাগই বড় অঙ্কের। এগুলোর অর্ধেকের বেশি করদাতারা করেছেন। এনবিআর থেকে করা মামলার সংখ্যাও কম নয়।
মামলা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনবিআরের হিসাবমতো রাজস্ব পরিশোধ না করলে করদাতাকে বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে এনবিআরে তলব করা হয়। নির্ধারিত দিনে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এনবিআরে তথ্য-প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়। এসব ক্ষেত্রে সমাধানে ২-৩ মাস বা বেশি সময় লেগে যায়।
যে পক্ষের প্রতিকূলে সিদ্ধান্ত হয় সে পক্ষ এনবিআরের আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করে। নতুনভাবে শুনানি চলে। সবকিছু শেষ করে মামলা নিষ্পত্তিতে বছর পার হয়ে যায়। ট্রাইব্যুনালে হেরে যাওয়া পক্ষ জজ কোর্টে যায়। সেখানে হেরে যাওয়া পক্ষ উচ্চ আদালতে যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে শুরু থেকে নতুনভাবে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। আপিল ট্রাইব্যুনাল, জজ কোর্ট পার হতে পারেনি এমন মামলার সংখ্যাও কম নয়। এভাবে মামলাচক্রে আটকা পড়ে আছে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। এক যুগ ধরে বিচারাধীন রয়েছে এমন রাজস্ব-মামলাও আছে। এনবিআর মামলাজট কমাতে চেষ্টা করছে। আদালতও আন্তরিক। তবু আশানুরূপ সাফল্য আসেনি।
এনবিআরের প্রধান কার্যালয় ও এনবিআরের বিভিন্ন দপ্তর থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে পৃথক পৃথক চিঠি দিয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারাধীন রাজস্ব-মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সাবেক কমিশনার শওকত হোসেন অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জোরালো চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের তৎকালীন কমিশনার (সাবেক) ও বর্তমানে এনবিআরের আপিলেট কমিশনের (২) কমিশনার শওকত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি বিচারাধীন রাজস্ব-মামলার নিষ্পত্তিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে চিঠি পাঠালে তিনি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন। এসব মামলায় সামান্য কিছু আদায় হয়েছে, তবে বেশিরভাগ অনাদায়ী।
শওকত হোসেনের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, সাজেক সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১৮টি চালানে পণ্য আমদানিতে ৪৩ কোটি টাকা শুল্ক পরিশোধ করে। এনবিআর বলেছে, তাদের কাছে রাজস্ব পাওনা ৯৫২ কোটি টাকা। পাওনা পরিশোধ করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ছাড়িয়ে নিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি এনবিআরের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে একটি লিখিত কাগজ বন্দরে জমা দিয়ে পণ্য ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। ৫ বছর ধরে এ মামলার পক্ষে-বিপক্ষে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন, শুনানি চলছে। এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে এখনো এনবিআর পাওনা রাজস্ব আদায় করতে পারেনি।
তার চিঠিতে আরও উল্লেখ ছিল, সাভার ডিইপিজেডের মেসার্স চায়না সাউথ ব্লিচিং অ্যান্ড ডাইং ফ্যাক্টরি লিমিটেডের কাছে ৫২০ কোটি টাকা রাজস্ব দাবি করেছে এনবিআর। গাজীপুরের ভোগরা এলাকার মেসার্স নাসরিন জামান লিটওয়্যার লিমিটেডের শুল্ককর ৫০ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকার মেসার্স বাংলাদেশ তাইওয়ান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে শুল্ককর ৩০ কোটি টাকা। নরসিংদীর পলাশের মেসার্স দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেডের শুল্ককরের পরিমাণ ৯১ কোটি টাকা। ময়মনসিংহের ভালুকার বড়াডুবা এলাকার মেসার্স এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল লিমিটেডের কাছে এনবিআর ৩২ কোটি টাকা দাবি করেছে। মেসার্স এইচ কবীর অ্যান্ড কোং লিমিটেডের কাছে এনবিআর ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব দাবি করেছে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট এলাকার মেসার্স আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড শিপওয়েজ লিমিটেডের শুল্ককরের পরিমাণ ২৫ কোটি টাকা।
মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ বিষয়ে এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজস্ব-মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে গঠিত বেঞ্চের অপর্যাপ্ততা, অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে রাজস্ব-মামলা পরিচালনায় আইন কর্মকর্তার স্বল্পতা, বিচারধীন মামলার সার্টিফায়েড কপিপ্রাপ্তিতে প্রক্রিয়াগত সমস্যা, ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রেফারেন্স মামলায় করদাতার আরজির কপি সংশিষ্ট দপ্তরের দেরিতে পাওয়া এবং রাজস্ব-মামলার শুনানিকালে আইন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধিদের লিয়াজোঁর অভাব। আয়কর আইনের ১৬ সিসিসি অনুযায়ী ন্যূনতম কর না দিয়ে আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সরাসরি হাইকোর্টে রিট করার কারণেও মামলা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ ছাড়া, অর্র্থ আইন অনুযায়ী সারচার্জ আরোপ করার বিরুদ্ধে মামলা করে নিয়মিত কর পরিশোধ করা হয় না।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করফাঁকির অভিযোগে আয়কর আইনের ৯৩ ধারায় মামলা পুনঃউšে§াচন করা হলে বা কোনো করদাতার তথ্য চেয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে ১১৩ ধারায় নোটিস দিলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও হাইকোর্টে রিট হয়। খেলাপি করদাতাদের কাছে বকেয়া আয়কর আদায়ের লক্ষ্যে ১৪৩ ধারা অনুযায়ী খেলাপি করদাতার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলেও হাইকোর্টে যাওয়া হয়। এসব কারণেও রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া জটে পড়ে। বিধিবিধান সম্পর্কে শুল্ককরদাতা ও আইন প্রয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাখ্যাগত পার্থক্যের কারণে (বিশেষভাবে শুল্কের পরিমাণ নিয়ে মতভিন্নতা, পণ্যের শ্রেণিবিন্যাস, পরিমাণগত ও মিথ্যা ঘোষণার কারণেও) মামলা হয়। ভ্যাট সম্পর্কিত মামলায় অবৈধ রেয়াত গ্রহণ, ভ্যাট দলিলাদি রক্ষণাবেক্ষণ না করা, মিথ্যা দাখিলপত্র দেওয়া, ভ্যাট চালান না দেওয়া, উৎসে কর পরিশোধ না করা এবং সময়মতো ভ্যাট পরিশোধ না করা প্রভৃতি কারণেও মামলা হয়। সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রাজস্ব-মামলার সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৭২। এসব মামলার নিষ্পত্তি হলে রাজস্ব খাতে সরকারের আদায় হবে ৩০ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা।
এনবিআর সদস্য মইনুল খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভ্যাট পরিশোধ করেছে বা আমদানি রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শুল্ক জমা দিয়েছে। এনবিআরের নজরে এসব পড়লে ঠিকমতো রাজস্ব পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের অঙ্গীকারনামা দিয়ে পণ্য ছাড় করিয়ে মামলা করে ব্যবসা চালাতে থাকে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজস্ব পরিশোধে বাধ্য নয় ব্যবসায়ী। মামলার তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনে ও শুনানিতে অনেক সময় লেগে যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা রাজস্ব পরিশোধে প্রক্রিয়া বিলম্ব করতেই মামলা করে থাকেন। অনেক সময় এনবিআরের হিসাবের সঙ্গে একমত না হলেও মামলা করেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাওনার পরিমাণ নিয়ে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও এনবিআর একমত না হলেই সাধারণত মামলা হয়। মামলা নিষ্পত্তিতে সময় লাগার জন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় আদালতের বাইরে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধনিষ্পত্তি আইনে (এডিআর) করদাতা, ব্যবসায়ী ও এনবিআরকে আহ্বান জানিয়েছে। এডিআরে দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তিতে ফ্যাসিলেটর হিসেবে এনবিআরের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে সেল গঠন করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় খুব একটা সফলতা আসেনি।
এডিআরের ফ্যাসিলেটর এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, এডিআরের আওতায় আয়কর খাতে কিছু করদাতা অংশ নিলেও শুল্ক ও ভ্যাট খাতে যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেসব আসছে না। ফলে রাজস্ব মামলাগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এডিআরে রাজস্ব-মামলার নিষ্পত্তি হলে আদালতের চেয়ে কম পরিমাণে রাজস্ব পরিশোধ করা যাবে। কিন্তু বেশিরভাগ মামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করে মামলা ঝুলিয়ে রাখা এবং রাজস্বও ঝুলিয়ে রাখা।
শীর্ষস্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এডিআরে মামলা নিষ্পত্তিতে এনবিআরের দিক থেকে দক্ষতার অভাব রয়েছে। এজন্য এডিআর সফল হয়নি।
এক তরুণ অ্যাম্বুলেন্সের পেছনের দিকের দরজা খুলে হতবিহ্বল এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। দায়িত্বরত আনসার সদস্য বললেন স্ট্রেচার লাগবে। তরুণটি স্ট্রেচারের খোঁজে অনির্দিষ্টভাবে কয়েক গজ যেতেই কেউ একজন তাকে সঙ্গে নিয়ে গেল। আমি উঁকি দিয়ে রোগীকে দেখার চেষ্টা করলাম। পায়ের দিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মারা গেছে না বেঁচে আছে বুঝলাম না। স্ট্রেচারসহ তরুণটি ফিরে এলো। সঙ্গে আরও দুজন। তারা ধরাধরি করে নামিয়ে স্ট্রেচারে উঠিয়ে রোগী নিয়ে গেল জরুরি বিভাগের দিকে। আমি যার কাছে এসেছি, তিনি আমার সহকর্মী। তাকে যে রোগীটি মাত্র জরুরি বিভাগে ঢুকল তার কথা বললাম। জানলাম যে স্ট্রেচারের জন্য যারা এসেছিলেন, যাদের এগিয়ে আসার পরার্থপরতা নিয়ে ভাবছিলাম, তারা আসলে এ জন্য টাকা নেন। পেশাদার সহায়তাকারী। আমরা জরুরি বিভাগ থেকে বের হয়ে ডিএমসির গেটের উল্টো দিকের চায়ের দোকানে গিয়ে বসি। সেখান থেকে ডিএমসির গেটের দিকে তাকিয়ে দেখি বিছানা, বালিশ থেকে শুরু করে রাইস কুকার, হিটারসহ নানান জরুরি তৈজস, ফলমূল, রান্নার উপকরণ, মনিহারি দ্রব্যের জমজমাট পসরা। আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমার সহকর্মী হেসে জানালেন, ‘ভাই হাসপাতালে ভর্তি হইলে সেখানে স্বজনদের ছোটখাটো সংসার পাতা লাগে।’
সহকর্মীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কী করা যায় বা কোন দিকে যাব ভাবতে ভাবতে জরুরি বিভাগেই ফেরত এলাম। রাত ৮টা। লাইন ধরে রোগীর স্বজনরা টিকিট কাটছেন। ফটক দিয়ে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কিছুটা তর্কবিতর্ক হচ্ছে রোগীর সঙ্গে কোনোভাবেই একজনের বেশি ঢোকা যাবে না; তবু একাধিক লোক ঢুকছে। আমিও ঢুকে গেলাম। ভেতরে চিকিৎসক ও নার্সরা ব্যস্ত রোগী নিয়ে। অজ্ঞান হয়ে পড়া এক রোগীকে দেখলাম। সাত থেকে আটজন লোক তার বেড ঘিরে দাঁড়িয়ে। চিকিৎসক নানা প্রশ্ন করে বোঝার চেষ্টা করছেন কীভাবে রোগী অজ্ঞান হয়েছেন। কেউ উত্তর দিতে পারছেন না। ১৫-২০ মিনিট ধরে জরুরি বিভাগের এক কোনায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। এখানে আগে এলেই আগে চিকিৎসা পাওয়া যাবে, বিষয়টা তেমন নয়। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তার সিরিয়াল অনেক পরে হলেও ওই রোগী অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেবা পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অজ্ঞান রোগীর জ্ঞান ফিরে এসেছে। চিকিৎসক বেড ঘিরে থাকাদের ভিড় কমাতে বললেন আর গেটের নিরাপত্তারক্ষীকে ধমক দিলেন এত লোক ঢুকেছে বলে। নিরাপত্তারক্ষী দরজায় দাঁড়িয়েই গলা চড়িয়ে ভিড় কমাতে বললেন। বুঝলাম চিকিৎসকের ধমক ও নিরাপত্তাকর্মীর গলা চড়ানো যেমন নিয়মিত ঘটনা এবং অযাচিত ভিড়ও তেমন।
বের হয়ে জরুরি বিভাগের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অজ্ঞান ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন যিনি, দেখি তিনিও বের হয়ে যাচ্ছেন। তার পিছু পিছু গিয়ে তাকে পরিচয় দিয়ে বললাম, ভাই দুই মিনিট কথা বলা যাবে। তিনি হেসে বললেন, আপনাকে তো ভেতরে দেখলাম। কোনো রোগী নিয়ে এসেছি কি না জানতে চাইলেন। না জানিয়ে বললাম, ওই রোগীর জ্ঞান ফিরল কীভাবে। তিনি আমাকে অবাক করে বললেন, ‘এমনিই ফিরেছে, কিছু করা লাগেনি। মনে হয় বাসাবাড়ির সুইচ পয়েন্ট থেকে শক খেয়েছিলেন।’ জানতে চাইলাম যে, তাহলে এতক্ষণ আপনি রোগীর সঙ্গের লোকদের এত প্রশ্ন করছিলেন যে! তিনি বললেন, ‘চিকিৎসা দিতে আমার জানা দরকার ছিল যে কী ধরনের বৈদ্যুতিক লাইন থেকে সে শক খেয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, জরুরি বিভাগে রোগীর সঙ্গে যারা আসেন তারা বেশিরভাগ সময় দরকারি তথ্য জানাতে পারেন না। এতে আমাদের চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা সাধারণ ধারণা ও রোগীর অবস্থা দেখে সাপোর্টিং চিকিৎসা শুরু করে দিই। আপনি দেখলেন, সেখানে সাত-আটজন আমাকে ঘিরে আছে, কিন্তু তারা কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারছে না। এ ধরনের স্বজনরা আবার সহজেই উত্তেজিত হয়ে যান। আমি আসলে তাদের বোঝাচ্ছিলাম যে চিকিৎসা হচ্ছে বা তাদের ব্যস্ত রাখছিলাম। আল্লাহর রহমতে লোকটির জ্ঞান ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছে।’ কোন ধরনের রোগী বেশি আসে জানতে চাইলে তিনি জানালেন, বাইক অ্যাকসিডেন্ট। এ ছাড়া বিষ খাওয়া, শক খাওয়া, হার্ট অ্যাটাক হওয়া, ট্রেনে কাটা রোগী বেশি। তিনি জানান, এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে (জরুরি বিভাগ) আসা রোগীর প্রাণ কীভাবে বাঁচানো সম্ভব, এটাই তাদের চিন্তায় থাকে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি স্বজনকে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টিই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই বিষয়টি মানতে চান না। রোগীর স্বজনদের বুঝতে হবে, এটি রোগীর সর্বোচ্চ স্বার্থের দিক চিন্তা করেই করা হচ্ছে।
হঠাৎ শোরগোল শুনে ফের জরুরি বিভাগে ঢুকলাম। দেখি এক বৃদ্ধ তোয়ালে প্যাঁচানো একটি শিশুকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন, তাকে ঘিরে আছে আটজন বোরকা পরিহিত নারী ও অন্তত সাতজন পুরুষ। বৃদ্ধটি বিলাপ করতে করতে কোনো এক বোরকা পরিহিতাকে বকছেন ‘যাও আরও ঘুরতে যাও, যাও বেড়াও, শিক্ষা হইছে...’। সঙ্গের পুরুষ সদস্যরা এক আনসার সদস্যের ওপর রাগ ঝাড়ছেন আপনারা মানুষ? কিচ্ছু বলতে পারব না..., দেখি কী করেন... ইত্যাদি। আনসারটিও অনড় দাঁড়িয়ে বলছেন এটা নিয়ম...। এক পুলিশ সদস্য এগিয়ে এসে আনসার সদস্যকে মৃদু ভর্ৎসনা করে সব থেকে কাতর ও উত্তেজিত যুবকটির পিঠে হাত দিয়ে সান্ত¡নার ভঙ্গিতে বললেন, ভাই বুঝতে পারছি, আপনি আসেন আমার সঙ্গে। যা বুঝলাম, দেড় বছরের শিশুটি বাসার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে খেলতে খেলতে বাথরুমে রাখা বড় বালতিতে পড়ে যায়। অন্যরা যখন টের পান ততক্ষণে সব শেষ।
দুই-তিন মিনিট পর পুলিশ সদস্য ওই যুবককে নিয়ে ফেরত এলেন শিশুটিকে পর্যবেক্ষণ রুমে নিয়ে গেলেন। পুলিশ সদস্যটিকে একা পেয়ে বললাম, ভাই আপনি তো ভালোই সামলালেন, সমস্যা কী? তিনি জানান, শিশুটি আগেই মারা গেছে, এখানে আনার পর ডাক্তার দেখেও তাই বলেছেন। তারা লাশ নিয়ে যেতে গেলে আনসার সদস্যরা বাধা দিয়েছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু তাই পুলিশ কেস হবে, তারপর লাশ নিতে হবে এ নিয়ে উত্তেজনা। তিনি বললেন, নিয়ম যেহেতু, আনসার বা আমরা কী করতে পারি। এমন পরিস্থিতিতে স্বজনরা খুব উত্তেজিত থাকেন, বুদ্ধি করে সামলাতে হয়। জরুরি বিভাগের সামনে এ পুলিশ সদস্যকে ভালো লাগল।
পর্যবেক্ষণ রুমের দরজা থেকে একটু দূরে জরুরি বিভাগের করিডরে দুজন বোরকা পরা নারী ভঙ্গুর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। মনে হলো পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুর স্বজনদের মধ্যে তারা ছিলেন। একটু দ্বিধা নিয়েই তাদের একজনের কাছে জানতে চাইলাম, বাচ্চাটা আপনার কী হয়? তিনি চোখ তুলে রাজ্যের হাহাকার ভরা কান্নাসিক্ত রক্তিম দৃষ্টি তুলে সব হারানো কণ্ঠে বললেন ‘আমার ছেলে’। আর কিছু জানতে চাওয়ার বা সান্ত¡না দেওয়ার সাহস পেলাম না, এক পা দুই পা করে সরে এলাম। সন্তান হারানো রক্তিম দৃষ্টির শূন্যতার রোদন বিধ্বস্ত ইরাক, সিরিয়া বা ইয়েমেনের বোরকা পরা মায়েদের চাহনি ছবিতে দেখেছি। কিন্তু ডিএমসির জরুরি বিভাগের সামনে তার মুখোমুখি হব ভাবিনি। মায়েদের এ বেদনার অব্যক্ত ভাষা তবে সর্বজনীন, যা দেশ-কাল ঘটনার সীমানা পার হয়ে যায়!
ইতিমধ্যে আরেকটি লাশ ঢুকেছে, ট্রেনে কাটা পড়া ব্যক্তির। কিন্তু তার সঙ্গে স্বজন বলতে কেউ নেই, রোদনও নেই। যিনি আছেন তিনিও নিহতের কেউ নন। ওই পুলিশ সদস্যকে দেখলাম তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে লাশের শরীরের আঘাতের দিকে চোখ বোলাচ্ছেন, সুরতহাল লিখবেন হয়তো। হঠাৎ আমার দিকে পুলিশ সদস্যটির চোখ পড়লে ঈষৎ হাসলেন, আমিও। বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। জরুরি বিভাগের ফটক পার হতে হতেই তিন-চারজনের একটি দলকে অতিক্রম করতে হলো, যাদের একজন শব্দহীন কাঁদছিলেন। স্বজন হারানোর চূড়ান্ত ক্ষতির সেই নীরব কান্না। সঙ্গের নারীটি একটু পিছিয়ে পড়েছেন, হাতে একটি বালিশ ধরে পা টেনে টেনে চলেছেন। শোকের ওজনে বালিশটিও অনেক ভারী হয়ে উঠেছে তার হাতে।
শয্যাসংকট ও অপর্যাপ্ত জনবলের পাশাপাশি পাহাড়সম বিভিন্ন অনিয়ম-সংকটের পরও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এ দেশের সাধারণ মানুষের ভরসার স্থল। ডিএমসি সাধারণত কাউকে ফেরায় না। সবারই আশ্রয় হয় বেডে না হলে, ফ্লোরে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছি আমরা। ২০২২ সাল আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটি বছর ছিল। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এ কঠিন সময়। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। রীতি অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনে তিনি ভাষণ দেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
সময় সাশ্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে একটি রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সকল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু মহান জাতীয় সংসদ। আপনারা জনপ্রতিনিধি, তাই জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল বঙ্গবন্ধুর সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে। আপনাদের সবাইকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
এদিকে এবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংসদে শেষ ভাষণ হওয়ায় সবাই আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় এবং স্মৃতিচারণ করেন। গত দুই বছর করোনার কারণে ভাষণের সময় কারও সঙ্গে দেখা না হলেও এবার তার সঙ্গে অনেকেই দেখা করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম ও বছরের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে রাষ্ট্রপতি সাংবাদিক লাউঞ্জে যান। সেখানে তিনি প্রায় এক ঘণ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করেন। জমিয়ে আড্ডা দেন তিনি। এরপর তার পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। এ সময় তিনি স্পিকার থাকায় অবস্থায় সংসদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাস্যরসে মেতে ওঠেন। বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজেএ) সভাপতি হারুন আল রশীদ, সাধারণ সম্পাদক নাফিজা দৌলা ও কোষাধ্যক্ষ সিরাজুজ্জামান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আগামী ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেবেন আবদুল হামিদ।
জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ অতিবাহিত করার কথা উল্লেখ করে সংসদে দেওয়া শেষ ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০২২ সাল আমাদের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জের একটি বছর। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এক কঠিন সময়। করোনা অতিমারী আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের এ অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে। তারপরও ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিবাচক। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। সরকার ঘোষিত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার কৃষি, গার্মেন্টসসহ ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের সরাসরি উপকারভোগী প্রায় ৭ কোটি ৩২ লাখ ব্যক্তি ও প্রায় ২ লাখ প্রতিষ্ঠান। সরকার কর্র্তৃক কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিগত অর্থবছরে ১৫ হাজার ১৭২ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা ভর্তুকি এবং ৩৯ হাজার কোটি টাকা সরল সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।’
আবদুল হামিদ বলেন, হর্টিকালচার, মৎস্য চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাতে পর্যাপ্ত ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৭ হাজারের অধিক সুবিধাভোগীর অনুকূলে স্বল্প সুদে প্রায় ২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মাছধরা বন্ধকালীন ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ লাখ ৪৫ হাজারের অধিক জেলে পরিবারকে প্রায় ৯৬ হাজার ৫৫০ টনের অধিক খাদ্যশস্য ভিজিএফ হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮ লাখের অধিক মৎস্য চাষি/খামারিকে প্রায় ৯০৩ কোটি টাকা নগদ এবং উৎপাদন উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে বস্ত্র ও পাট খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার এবং তৈরি পোশাক খাত থেকে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ সেøাগান নিয়ে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় ৫০ লাখ ১০ হাজারের অধিক নিম্ন আয়ের পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল এবং ২৪ টাকা দরে ৫ কেজি আটা বিতরণ করছে। খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রয় (ওএমএস) চালু আছে দেশের সব উল্লেখযোগ্য হাট-বাজারে। এ ছাড়া সরকার টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ীমূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল সরবরাহ করছে।
তিনি বলেন, এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও একজন দিনমজুরের বেতন দিনে কমপক্ষে ৭০০ টাকা। একই সঙ্গে বেড়েছে জাতীয় উৎপাদন। বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে এবং বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ১৪ লাখ টন, যা সন্তোষজনক। এ ছাড়া এবারে দেশব্যাপী আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জোরদার করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসে প্রতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির বাজেট বৃদ্ধি করা হচ্ছে যার পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। বর্তমানে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৫৭ লাখ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ জন।
বিগত অর্থবছরে ভিজিডি চক্রে সারা দেশে ১০ লাখ ৪০ হাজার উপকারভোগীকে প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগী ১২ লাখ ৫৪ হাজার জনকে মাসিক ৮০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে। সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সব নাগরিকের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে অধিবেশন : একাদশ সংসদের ২১তম অধিবেশন শুক্র ও শনিবার ছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন বিকেল সোয়া ৪টায় অধিবেশন শুরু হবে। গতকাল বেলা ৩টায় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
কমিটির সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটি সদস্য এবং সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন কমিটির সদস্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু, আনিসুল হক, গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।
এ ছাড়া বৈঠকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ১০ জানুয়ারি বিশেষ আলোচনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী এপ্রিল মাসে বিশেষ অধিবেশন হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। উল্লেখ্য, এ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতে সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। বৈঠকে একাদশ সংসদের ২১তম ও ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের প্রথম অধিবেশনের কার্যাদি নিষ্পন্নের জন্য সময় বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালাম বৈঠক সঞ্চালনা করেন। এতে সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
৫ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন : একাদশ সংসদের ২১তম ও ২০২৩ সালের প্রথম অধিবেশনের জন্য সংসদে পাঁচ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গতকাল স্পিকার এ মনোনয়ন দেন।
সভাপতিম-লীর সদস্যরা হচ্ছেন রমেশ চন্দ্র সেন (ঠাকুরগাঁও-১), এ কে এম শাজাহান কামাল (লক্ষ্মীপুর-৩), ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (কুমিল্লা-৩), কাজী ফিরোজ রশীদ (ঢাকা-৬) ও সালমা চৌধুরী (নারী আসন-৩৪)। স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে তালিকার অগ্রবর্তিতা অনুযায়ী তারা সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
আটজনের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত : সাবেক মন্ত্রী, দুজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, একজন সাবেক বিরোধীদলীয় হুইপ ও চারজন সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) মৃত্যুতে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। গতকাল স্পিকারের সভাপতিত্বে চলতি সংসদের ২১তম ও ২০২৩ সালের প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে এ শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
যাদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তারা হলেন সাবেক জ¦ালানি ও প্রাকৃতিকসম্পদ মন্ত্রী এবং সাবেক বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ মন্ত্রী, কুমিল্লা-৪ আসনের সাবেক এমপি এবিএম গোলাম মোস্তফা; ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এসএ মালেক; সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এবং বরিশাল-৪ আসনের এমপি শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন; সাবেক পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক এমপি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী; কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি ড. আলাউদ্দীন আহাম্মদ; সাবেক বিরোধীদলীয় হুইপ ও ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি মো. মসিউর রহমান; বগুড়া-৯ আসনের সাবেক এমপি এসএম ফারুক; পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক এমপি মো. শাহজাহান খান।
এ ছাড়া সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত অফিস সহায়ক কাম চাবিরক্ষক মো. মাহবুব আলম প্রধানের মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে।
শোক প্রস্তাবে এমপি মৃণাল কান্তি দাসের মা গীতা রানী দাস, এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলির বাবা মোশারেফ হোসেন (কালু), এমপি মো. শাহে আলমের মা মোসাম্মৎ রিজিয়া বেগম, চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মা হিরাবেন মোদি, ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো (পেলে), মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক সরকার, পীরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ হাইফুজ্জামান ফুল, স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর স্ত্রী অনিতা চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এ ছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে সংসদ গভীর শোক প্রকাশ করে সব বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানায়।
মৃত্যুবরণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে সংসদে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকিতে শেখ হাসিনা ভয় পান না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘তাদের (বিএনপি) আন্দোলনের হুমকি-ধমকিতে জনগণ হাসে। সরকার পতনের হুমকি-ধমকিতে শেখ হাসিনা ভয় পান না। অনেকে বলেছিল এই হবে, সেই হবে; দেশ সংঘাতে যাবে। কিন্তু কিছুই তো হলো না। বিএনপির কথা শুনলে এখন ঘোড়াও হাসে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির ৩০তম সম্মেলন উদ্বোধনকালে এ সব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এদেশে আর কোনোদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যার প্রমাণ বিগত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশন দেশে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারের পরিবর্তন চাইলে সব দলকে অবশ্যই নির্বাচনে আসতে হবে।’
ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে বদলে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আজ ইউরোপ-আমেরিকায় মন্দা দৃশ্যমান। করোনা এখনো ছাড়েনি। কবে যাবে, কেউ জানে না। চীন এখনো এর ফলভোগ করছে। এ সবের রেশ আমাদের এখানেও চলছে। তারপরও এখানে একজন রূপকার আছেন। সেই রূপকারের সঠিক সময়ে সঠিক ও সময়োপযোগী নেতৃত্বে শেখ হাসিনা আছেন। তিনি আছেন বলেই বিনা পয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি। এ বিশ^ সংকটেও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে এবং ঘুরে দাঁড়াবে।
সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মঈনুল হাসানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক, সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ।
রাজধানীর পান্থকুঞ্জের পাশের ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে ৮-১০টি পরিবার। এদের বেশিরভাগই পাশের ময়লার ডাম্পিং স্টেশনে কাজ করে। কেউ কেউ শ্রমিক বা রিকশাচালক। ফুটপাতেই তাদের সংসার। গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীতে রান্না-খাওয়া-ঘুম সবই তাদের হয় ফুটপাতে। বছরের অন্যান্য সময়টা কোনোভাবে কাটলেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বর্ষায়। তবে শীতের ভোগান্তি ছাড়িয়ে যায় সবকিছুকে। কনকনে শীতে এক দিকে যেমন অসহনীয় কষ্ট করতে হয় সেখানকার বড়দের তেমনি অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুরা।
ওই ফুটপাতে দীর্ঘদিন ধরেই সংসার পেতেছেন শ্রমিক জয়নাল মিয়া। এখন তিনি অসুস্থ। স্ত্রী নুরুননাহারের আয়ে ৩ বছরের সন্তান নিয়ে কোনোমতে দিন কেটে যায় তাদের। পরিবারের কারোরই নেই শীত নিবারণের ভালো কাপড়। শীত তীব্র হলে ঘুম আসে না জয়নাল মিয়ার। সারা রাত আগুন জ্বালিয়ে রাখেন ঝুপড়ির পাশে, ছোট্ট সন্তানটিকে ঢেকে রাখেন পলিথিনে। জয়নালের প্রতিবেশী ফুলশুনি বেগম পাশেই একটি মাটির হাঁড়িতে কাঠ পুড়িয়ে উত্তাপ নিচ্ছিলেন। তারও ভাষ্য, কনকনে শীতে সামান্য চটের বিছানায় ঘুম আসে না। দুদিন আগে একটা পাতলা কম্বল দিয়ে গেছে কেউ, কিন্তু তাতে শীত মানে না। একই অবস্থা রাজধানীর পরীবাগ ফুটওভার ব্রিজের নিচে থাকা রফিকুলের। তারও শীত নিবারণের ভরসা ময়লা-আবর্জনায় জ্বালানো আগুন। শীতের তীব্রতায় তারও ঘুম হয় না।
জয়নাল, ফুলশুনি বা রফিকুলের মতো রাজধানীর লক্ষাধিক ভাসমান মানুষ এই শীতে পড়েছেন চরম বিপাকে। ঢাকার বাইরে বিশেষ করে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষেরও একই দশা। শীতের এই তীব্রতায় তারা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে প্রবীণ ও শিশুরা। পূর্ণ বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত নানা রোগে। তবে সব পাশ কাটিয়েই কাজে নামতে হচ্ছে তাদের। রাজধানীর ইস্কাটনে রিকশাচালক নূরুল ইসলাম বলেন, দিনে যা রিকশা চালাই রাতে মোটেও পারি না। ঠা-ার রোগ আছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। বউ-বাচ্চাদের তো না খেয়ে রাখতে পারব না।
দুদিন আগে থেকে হঠাৎ করে নেমে আসা শীতে ঘন কুয়াশার কারণে ভরদুপুরেও মিলছে না রোদের দেখা। থার্মোমিটারের পারদ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে দেশের আট জেলায়। বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার কারণ হচ্ছে কুয়াশা। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে বৃহস্পতিবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার যশোরে দেশের সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারা দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যেই ছিল।
জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে ২-৩টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।
এদিকে পৌষের শেষে এসে শীতে কাঁপছে সারা দেশ। উত্তর-দক্ষিণ সব জনপদে বইছে শীতের কনকনে বাতাস। সঙ্গে রয়েছে ঘন কুয়াশাও। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঘন কুয়াশার কারণে জেলার অধিকাংশ সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে বিমান চলাচল। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।
এছাড়া প্রচণ্ড শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতে হাসপাতালগুলোতে ঠা-াজনিত রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বাড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজও।
কনকনে ঠা-ায় কাহিল কুড়িগ্রামের মানুষ : আবারও পৌষের কনকনে ঠা-া ও হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামের মানুষ। সূর্যের দেখা না মেলায় কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে প্রকৃতি। রাত যতই গভীর হয়, বাড়তে থাকতে কুয়াশা ও ঠা-ার মাত্রা। এদিকে কনকনে ঠা-ায় জেলায় বেড়েছে শীতজনিত রোগ। জেলার হাসপাতালগুলোর শিশু ও জেনারেল ওয়ার্ডে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
পঞ্চগড়ে আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু : শীতের জেলা পঞ্চগড়ে শীতার্তদের দুর্ভোগ কমছেই না। মাঝখানে দুদিন বিরতি দিয়ে আজ আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। উত্তরের কনকনে শীতল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়ছে এই এলাকার মানুষজন। আগের দুদিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও প্রায় দুপুর পর্যন্ত সূর্য মেঘে ঢাকা ছিল। কুয়াশা না থাকলেও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে উত্তরের কনকনে শীতল বাতাস কাঁপিয়েছে পঞ্চগড়ের মানুষকে। দুপুরের পর থেকে রোদের দেখা মিললেও কনকনে শীতল বাতাসের কারণে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও বাড়ছে না।
মাগুরায় বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ : মাগুরায় পৌষের শেষ সময়ে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মিললেও অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য কর্মব্যস্ত মানুষ বেরিয়ে পড়ছে। তীব্র কুয়াশার কারণে সড়কে সকাল ১০টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে মহাসড়কগুলোতে এ যানবাহন চলাচল করছে। পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে নসিমন, পিকআপ ভ্যানসহ সবজি-বোঝাই যানগুলো।
শীতে কাবু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষও : ঘনকুয়াশার সঙ্গে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর দুমকিসহ দক্ষিণের মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সূর্যালোকের দেখা মিললেও তাপের উষ্ণতা কম থাকায় প্রচ- শীত অনুভূত হয়েছে। কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌপথে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। রাত ৮টার পর থেকে ভোর ৭টা পর্যন্ত বগা ফেরি পারাপার বন্ধ রাখতে হয়েছে।
শীতের তীব্রতায় হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ : ফেনীতে গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ঘন কুয়াশার মধ্যে কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হয়ে ঠা-া, কাশি ও জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষগুলো। শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ দিনে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৭ বেডের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে দুই শতাধিক শিশু। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা এসব শিশুর অধিকাংশই নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত।
শীতবস্ত্র বিতরণ করলেন রাসিক মেয়র লিটন : রাজশাহীতে শীতবস্ত্র নিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। গতকাল দুপুরে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন রাসিক মেয়র।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক এবং পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, ফেনী, পটুয়াখালী ও মাগুরা প্রতিনিধি।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
‘বস্তি এলাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। পানি সরবরাহ ও নর্দমা লাইন প্রায়ই এক হয়ে যাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে দূষিত ও নোংরা পানি পান করছেন তারা।’ এভাবে বলছিলেন ঢাকার বস্তির জীবন মান নিয়ে কাজ করা ব্র্যাকের উন্নয়ন কর্মী বাছেরা আক্তার।
শুধু বস্তি এলাকা নয়, দেশের সব এলাকার সুপেয় পানি সরবরাহের চিত্র এমনই। রাজধানী ঢাকায় সরবরাহ করা পানিই না ফুটিয়ে পান করা যায় না। চট্টগ্রাম শহরের পানি লবণাক্ত। রাজশাহীর পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ। খুলনায় সরবরাহ করা পানিও না ফুটিয়ে পান করা যায় না। রয়েছে লবণাক্ততাও। গভীর নলকূপের পানিও নিরাপদ নয়, আর্সেনিক ও লবণাক্ততার কারণে ব্যবহার করাও দুষ্কর। পাহাড়ে সুপেয় পানির উৎস সীমিত। পাহাড়ি ছড়া শুকিয়ে যাচ্ছে। উজানে বাঁধ দেওয়ার কারণে নদন্ডনদীর পানিও কমছে। সুপেয় পানি ও সেচের জন্য অত্যধিক মাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে পানির স্তরও নিচে নেমে যাচ্ছে দিন দিন।
এ পরিস্থিতিতে আজ ২২ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য : ‘আসুন নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিত করি।’
সরকারের পানি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় মিষ্টি পানিসমৃদ্ধ বাংলাদেশেও সুপেয় পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকার মানুষ সুপেয় পানির বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেও নিরাপদ পানি মিলছে না। এ ব্যর্থতা ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনও হুমকিতে পড়ার শঙ্কা তৈরি করেছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. তানভীর আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহকৃত পানিকে সুপেয় পানি বলা যায়। তবে সেখানে কোনো ময়লা ঢুকে পড়লে সেই পানিকে আর সুপেয় থাকে না। সুপেয় পানি না ফুটিয়েই পান করা যাবে।’
পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ওয়াসার পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে অনেক সময় বাইরে ময়লা ঢুকে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এমন ঘটনা ঘটলে সেই পানিকে নিরাপদ বলা যাবে না। শুধু ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পানির মান ভালো হলে চলবে না, বাসা পর্যন্ত ভালো পানি পৌঁছে দিতে হবে। কেননা সরবরাহ লাইনের পানি নিরাপদ রাখাও সংস্থার দায়িত্ব।’
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এ জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি। আশা করি সবাই মিলে কাজ করে পানি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দূর করে আমরা নির্ধারণ সময়ে লক্ষ্যপূরণ করতে পারব।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার। এর মধ্যে ৫৯ ভাগ অর্থাৎ ৯ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ২২০ জন মানুষ সুপেয় পানি সুবিধার আওতায় এসেছে। আর সুপেয় পানি সুবিধার বাইরে রয়েছে ৪১ ভাগ অর্থাৎ ৬ কোটি ৭৭ লাখ ১৪ হাজার ৭৮০ জন মানুষ। এখনো দেশের ১০ ভাগ মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করছে।
বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-তে বলা হয়েছে, দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সুপেয় পানি প্রাপ্যতার বিবেচনায় ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চর এলাকা, বন্যাপ্রবণ এলাকা, উপকূলীয় এলাকা, হাওর এলাকা, বরেন্দ্র অঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকা। দেশের এই ছয় শ্রেণির এলাকা বিস্তৃত রয়েছে ১০০টি উপজেলায়। দেশের ১৫৯ সিটি ও পৌরসভায় সরবরাহ করা পানির মানও একই। ওইসব এলাকায় ১৬৮টি পানি শোধনাগার, ১ হাজার ৫০০টি গভীর নলকূপে ১৫ হাজার কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সরকার চালু রেখেছে। গ্রাম পর্যায়ের ২০ লাখ টিউবওয়েলের পানি নিরাপদ হওয়ার কথা ছিল। তবে আর্সেনিক ও মাত্রাতিরিক্ত আয়রন সে পানিও জনজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।
২০১৬ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বিশে^র সবচেয়ে বড় ‘গণবিষ’-এর উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের আর্সেনিক পরিস্থিতিকে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বছরে আর্সেনিকে ৪৩ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করা হয়। আর ২০০৩ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী, দেশের ২৯ শতাংশ নলকূপে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আর্সেনিক পাওয়া যায়। আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী শনাক্তে ২০১২ সালে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। তখন ৬৫ হাজার ৯১০ জন রোগী শনাক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে ৪২টি জেলার হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য সংগ্রহ করে। ওই হিসাব অনুযায়ী, ওই বছর এসব হাসপাতালে ১৮ হাজার ৬৬২ আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী সেবা গ্রহণ করে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের সরকারিভাবে স্থাপিত গভীর ও অগভীর নলকূপ রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। সেই হিসাবে জনসংখ্যার বিবেচনায় সরকার ৮৩ জনে একটি পানির উৎস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। সমগ্র জনসংখ্যার বিবেচনায় বর্তমান পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে ১১ ভাগ। আর শহর এলাকার জনসংখ্যা বিবেচনায় ৩৮ ভাগ।
এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারকে সুপেয় পানি সরবরাহে শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে হবে। সেটা করতে হলে প্রতি বছর ছয় ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। বর্তমান অগ্রগতি প্রায় এক ভাগ। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে সামনের দিনগুলোতে পানি সরবরাহ খাতের অর্জন আরও কম হতে পারে। এ জন্য লক্ষ্য পূরণে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে চারগুণ তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, দেশে বেসরকারি টিউবওয়েল রয়েছে প্রায় দেড় কোটি। আর সরকারি টিউবওয়েল রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এ দুটো ধরে হিসাব করতে দাঁড়ায় প্রতি ১০ জনে একটি পানির উৎস রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকায় পানযোগ্য পানি খুবই দুষ্পাপ্য। এসব এলাকার বেশিরভাগ উপজেলায় গভীর নলকূপ কার্যকর নয়। সরকার পানি সরবরাহ সেবার আওতায় আনতে পেরেছে ৯৮ দশমিক ৫০ ভাগ মানুষকে। এখনো ১ দশমিক ৫০ ভাগ মানুষ পানি সুবিধার আওতার বাইরে রয়েছে।
নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর : ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা বাড়ায় স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। যে হারে পানির স্তর নামছে, সে হারে পানির স্তর পূরণ হচ্ছে না। স্বাভাবিক অবস্থা ৬ থেকে ৭ ফুট নিচেই ভূগর্ভস্থ উৎসে পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই। ঢাকায় পানি পেতে ২৫৫ থেকে ২৬০ মিটার নিচে নামতে হচ্ছে। খুলনায় ভূগর্ভস্থ পানি নেমে গেছে ২৫-৩০ ফুট। রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর ১২০ থেকে ১৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। খরার মৌসুমে এ অবস্থা থাকে। বর্ষার মৌসুমে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়।
অন্যদিকে দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২-৩ মিটার নেমে যায়। আর ২৫ ভাগ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫-১০ মিটার নেমে যায়। বর্ষার মৌসুমে এসব এলাকার বেশিরভাগ অংশে পানির ভূগর্ভস্থ স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। তবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল ও দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে না। দেশের গৃহস্থালি ও খাবার পানির ৯৪ শতাংশ চাহিদা পূরণ হচ্ছে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। গ্রাম এলাকায় এ উৎস থেকে ৯৯ শতাংশ ও শহর এলাকায় ৮০ শতাংশ পানি সরবরাহ করা হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ১৮ শতাংশ নলকূপের পানি উত্তোলনে সমস্যা হয়। এ ছাড়া ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা, মধুমতী, আড়িয়াল খাঁ, গড়াই নদীর পানি কমে যাওয়ায় এসব এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পুনঃভরণ হয় না।
ভূ-উপরিস্থ সুপেয় পানির উৎসের অভাবে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর অঞ্চলে সারা বছর সুপেয় পানির সংকট থাকে। বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যরকম সংকট। খরার মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনার নলকূপগুলোতে পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। বর্ষার মৌসুমে দেশের অন্যান্য এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির শূন্য স্তরের ২৫ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। তবে বরেন্দ্র অঞ্চলে মাত্র ৮ শতাংশ পূরণ হয়। ওইসব এলাকায় ১৬০ ফুটের আগে পানির দেখা মিলছে না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূগর্ভস্থ পানি বিভাগের পরিচালক এবং পানি বিশেষজ্ঞ ড. আনোয়ার জাহিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারকে বর্ষায় কৃত্রিমভাবে মাটির নিচে পানি প্রবেশ করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমন উদ্যোগ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে দেশ বড় ধরনের পানি সংকটের মুখোমুখি হতে পারে।
উপকূলে লবণাক্ততা সমস্যা : ভূতত্ত্ববিদদের মতে, উপকূলীয় এলাকার পানিতে একবার লবণাক্ত পানি প্রবেশ করলে ওখানকার ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নদীতে পানি না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই অববাহিকা অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাবে। একই সঙ্গে সাগরের দিক থেকে লবণ পানি প্রবেশের হার বাড়বে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরের উপকূলীয় এলকাগুলোতে আমরা গভীর নলকূপ বসাতে পারি না। এই এলাকায় নলকূপে লবণাক্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে।’
উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা কমাতে উজান থেকে পানির প্রবাহ বাড়ানোর কথা বলছে ভূতত্ত্ববিদরা। কিন্তু ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ৫৬টি যৌথ নদী থেকে ইতিমধ্যে পানি প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে দেশের নদীগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে এবং শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়েও যাচ্ছে। নদীগুলোর গভীরতা কমে গিয়ে পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সারা নওরিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই পানির স্তর নিচে। এখন এই হার আরও বেড়েছে।’
বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে আলোচিত পুলিশ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভের রেসিডেন্ট পারমিট বাতিল করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সরকার। এর ফলে তার ভিসাও বাতিল হয়ে গেছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। একই সঙ্গে ভারতও তার পাসপোর্ট বাতিল করেছে বলে পুলিশ একটি সূত্র জানিয়েছে।
অন্যদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দিনভর গুঞ্জন ছিল দুবাই পুলিশ আরাভকে আটক করেছে। তবে তাকে আটকের বিষয়টি কেউ স্বীকার করছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আরাভের বিষয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, দুবাইতে থাকা আরাভের রেসিডেন্ট পারমিট সোমবার বাতিল করা হয়েছে। আটকের বিষয়ে তিনি বলেন,তাদের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। যতক্ষণ ইন্টারপোল বা দুবাই পুলিশ তাদের নিশ্চিত না করবে ততক্ষণ তারা গুঞ্জনকে পাত্তা দেবেন না। তবে তাকে আটকের জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারা চেষ্টা করছেন। আরাভ আটক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের টিম দুবাই পাঠানো হবে। সে জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আরাভকে নজরদারির মধ্যে রাখা আছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
এদিকে পুলিশে একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা খুনের পর আরাভ খান নামধারী রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। আরাভ খান নামে ওই দেশের পাসপোর্ট নিয়ে পরে তিনি দুবাই চলে যান। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার সে পাসপোর্ট বাতিল করেছে।
আটক হওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য আমার কাছে নেই। তবে দ্রুত তাকে আটক করা যাবে বলে আশা করছি।’
গতকাল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও বলেছেন, পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার পলাতক আসামি আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম দুবাইয়ে গ্রেপ্তার হননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এটুকুই বলতে পারি যে, বাংলাদেশের কোনো আসামি বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে পালিয়ে থাকতে পারবে না। আরাভের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে অফিশিয়ালি দুবাইয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।’
গত সোমবার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। ইন্টারপোল সেই আবেদন গ্রহণ করেছে।
জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত সপ্তাহে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন করার পর আলোচনায় আসেন জুয়েলার্সের মালিক আরাভ খান। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অনেক তারকাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। সেই তাকে পুলিশ সদস্য হত্যা মামলার আসামি বলে শনাক্ত করে ফেলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। আরাভ জুয়েলার্স নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক আরাভ খানের আসল নাম রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তার বাড়ি। তিনি সোহাগ মোল্লা, হৃদয় শেখ, আপন এরকম কয়েকটি নামেও পরিচিত। ২০১৮ সালের ৭ জুলাই ঢাকায় পুলিশের পরিদর্শক মামুন ইমরান খান খুন হন। সেই খুনের আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন রবিউল। দেশ ত্যাগের আগে ওই খুনের ঘটনার অন্য আসামিদের সঙ্গে আরাভকে আটক করেছিল ডিবি পুলিশ। ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে দুদিন রাখার পর তাকে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা ও রাজনৈতিক নেতার অনুরোধে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে বনানীর একটি ফ্ল্যাটে জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়ে খুন হন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান। গুম করতে লাশ গাড়িতে করে নেওয়া হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি জঙ্গলে। সেখানে লাশে পেট্রল ঢেলে আগুনে ঝলসে দেওয়া হয় চেহারা। সেই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন। ওই বছরের ১০ জুলাই মামুনের ভাই ঢাকার বনানী থানায় মামলা করেন। এ মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন মামুন ইমরান খান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন আরাভ খান।
মামুন ইমরান হত্যা মামলায় বাদীর সাক্ষ্য : মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন নিহতের ভাই ও মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম খান। গতকাল তার সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সাল আতিক বিন কাদের পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য আগামী ৪ জুন ধার্য করেন।
মামুন ইমরান হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ডিবির পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে আরাভের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া, ইমরানের বন্ধু রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হোসেন এবং দুই কিশোরী রয়েছেন। তাদের মধ্যে আরাভ ও সুরাইয়া পলাতক, দুই কিশোরী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার হচ্ছে শিশু আদালতে এবং তারা জামিনে আছেন।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, হত্যা মামলা হওয়ায় পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা শুনানি করছেন। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৩৮ জনকে।
স্বোপার্জিত স্বাধীনতাসহ অনেক ভাস্কর্যের শিল্পী শামীম সিকদার আর নেই। নিভৃতে জীবন কাটানো এই শিল্পী চলেও গেলেন খুব নিভৃতে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় একুশে পদকজয়ী ভাস্কর শামীম সিকদারের। আলোচিত কমিউনিস্ট নেতা সিরাজ সিকদারের বোন শামীম সিকদারের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামীম সিকদারের ভাস্কর্যগুলোর কিউরেটর মো. ইমরান হোসেন জানান, ঢাবির চারুকলার সাবেক অধ্যাপক নিজের শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করতে কয়েক মাস আগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তবে দেশে ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তিনি প্রায় এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে মৃত্যু হয় তার।
তিনি জানান, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বেলা ১১টায় শামীম সিকদারের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ শহীদ মিনার কিংবা তার যেকোনো একটি ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তার পরিবারের সদস্য ও শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে
মোহাম্মদপুরে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শামীম সিকদার ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর বগুড়া জেলার মহাস্থান গড়ের চিংগাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। পরে ১৯৭৬ সালে তিনি লন্ডনের স্যার জন কাস স্কুলে চলে যান। গত শতকের আশির দশকে চারুকলায় শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
১৯৭৪ সালে এই ভাস্কর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে স্থাপন করা হয়। ১৯৮০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ললিতকলা অনুষদের একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন। তিনি ২০০০ সালে একুশে পদক পান।
শামীম সিকদারের ছাত্র ও বর্তমানে ঢাবি ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুকুল কুমার বাড়ৈ প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুর পর দেশ রূপান্তকে জানিয়েছেন তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, ‘শামীম আরা সিকদার ভাস্কর্য বিভাগে আমার শিক্ষক ছিলেন। তার মতো শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক আজকের সময়ে খুবই কম পাওয়া যায়। তিনি অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন, শিক্ষার্থীদের মুখ দেখলেই তিনি বুঝতে পারতেন শিক্ষার্থী হয়তো সকালের খাবার খেয়ে আসেনি, তিনি তৎক্ষণাৎ তার খাবারের ব্যবস্থা করতেন। অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য তিনি ক্লাস ওয়ার্কের বাইরে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কমিশন ওয়ার্ক দিয়ে দিতেন। অত্যন্ত আধুনিকমনস্ক শিল্পী করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করতেন শিক্ষার্থীদের। প্রচ- মাত্রায় পরিশ্রমী কাজপাগল একজন ভাস্কর ছিলেন তিনি।’
মুকুল কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্য চর্চার ইতিহাসে সামাজিকভাবে ভাস্কর্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তার অবদান বিশালতম। তিনি আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। স্বাধীনতাসংগ্রামে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করার কথা মাঝেমধ্যে আমাদের শোনাতেন। বাংলাদেশের ভাস্কর্য চর্চার ইতিহাসে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।