
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছি আমরা। ২০২২ সাল আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং একটি বছর ছিল। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এ কঠিন সময়। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। রীতি অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনে তিনি ভাষণ দেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
সময় সাশ্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে একটি রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং তাদের সকল প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু মহান জাতীয় সংসদ। আপনারা জনপ্রতিনিধি, তাই জনস্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে জাতি এগিয়ে যাক ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল বঙ্গবন্ধুর সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে। আপনাদের সবাইকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
এদিকে এবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংসদে শেষ ভাষণ হওয়ায় সবাই আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় এবং স্মৃতিচারণ করেন। গত দুই বছর করোনার কারণে ভাষণের সময় কারও সঙ্গে দেখা না হলেও এবার তার সঙ্গে অনেকেই দেখা করেন।
একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম ও বছরের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে রাষ্ট্রপতি সাংবাদিক লাউঞ্জে যান। সেখানে তিনি প্রায় এক ঘণ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় করেন। জমিয়ে আড্ডা দেন তিনি। এরপর তার পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। এ সময় তিনি স্পিকার থাকায় অবস্থায় সংসদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। রাষ্ট্রপতি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাস্যরসে মেতে ওঠেন। বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজেএ) সভাপতি হারুন আল রশীদ, সাধারণ সম্পাদক নাফিজা দৌলা ও কোষাধ্যক্ষ সিরাজুজ্জামান প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আগামী ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেবেন আবদুল হামিদ।
জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ অতিবাহিত করার কথা উল্লেখ করে সংসদে দেওয়া শেষ ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘২০২২ সাল আমাদের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জের একটি বছর। সমগ্র বিশ্বই পার করছে এক কঠিন সময়। করোনা অতিমারী আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করে অর্থনীতির গতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হলেও রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের এ অগ্রযাত্রাকে শ্লথ করেছে। তারপরও ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিবাচক। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘করোনার অভিঘাত মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নের ফলে আমাদের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। সরকার ঘোষিত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার কৃষি, গার্মেন্টসসহ ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের সরাসরি উপকারভোগী প্রায় ৭ কোটি ৩২ লাখ ব্যক্তি ও প্রায় ২ লাখ প্রতিষ্ঠান। সরকার কর্র্তৃক কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিগত অর্থবছরে ১৫ হাজার ১৭২ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা ভর্তুকি এবং ৩৯ হাজার কোটি টাকা সরল সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।’
আবদুল হামিদ বলেন, হর্টিকালচার, মৎস্য চাষ, পোলট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাতে পর্যাপ্ত ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৭ হাজারের অধিক সুবিধাভোগীর অনুকূলে স্বল্প সুদে প্রায় ২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মাছধরা বন্ধকালীন ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ লাখ ৪৫ হাজারের অধিক জেলে পরিবারকে প্রায় ৯৬ হাজার ৫৫০ টনের অধিক খাদ্যশস্য ভিজিএফ হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮ লাখের অধিক মৎস্য চাষি/খামারিকে প্রায় ৯০৩ কোটি টাকা নগদ এবং উৎপাদন উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে বস্ত্র ও পাট খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার এবং তৈরি পোশাক খাত থেকে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ সেøাগান নিয়ে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় ৫০ লাখ ১০ হাজারের অধিক নিম্ন আয়ের পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল এবং ২৪ টাকা দরে ৫ কেজি আটা বিতরণ করছে। খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রয় (ওএমএস) চালু আছে দেশের সব উল্লেখযোগ্য হাট-বাজারে। এ ছাড়া সরকার টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ীমূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল সরবরাহ করছে।
তিনি বলেন, এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও একজন দিনমজুরের বেতন দিনে কমপক্ষে ৭০০ টাকা। একই সঙ্গে বেড়েছে জাতীয় উৎপাদন। বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে এবং বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ১৪ লাখ টন, যা সন্তোষজনক। এ ছাড়া এবারে দেশব্যাপী আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন জোরদার করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসে প্রতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির বাজেট বৃদ্ধি করা হচ্ছে যার পরিমাণ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। বর্তমানে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৫৭ লাখ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ জন।
বিগত অর্থবছরে ভিজিডি চক্রে সারা দেশে ১০ লাখ ৪০ হাজার উপকারভোগীকে প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগী ১২ লাখ ৫৪ হাজার জনকে মাসিক ৮০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে। সরকার ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের সব নাগরিকের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে অধিবেশন : একাদশ সংসদের ২১তম অধিবেশন শুক্র ও শনিবার ছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন বিকেল সোয়া ৪টায় অধিবেশন শুরু হবে। গতকাল বেলা ৩টায় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
কমিটির সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটি সদস্য এবং সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন কমিটির সদস্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু, আনিসুল হক, গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।
এ ছাড়া বৈঠকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ১০ জানুয়ারি বিশেষ আলোচনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী এপ্রিল মাসে বিশেষ অধিবেশন হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। উল্লেখ্য, এ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতে সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। বৈঠকে একাদশ সংসদের ২১তম ও ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের প্রথম অধিবেশনের কার্যাদি নিষ্পন্নের জন্য সময় বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালাম বৈঠক সঞ্চালনা করেন। এতে সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
৫ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন : একাদশ সংসদের ২১তম ও ২০২৩ সালের প্রথম অধিবেশনের জন্য সংসদে পাঁচ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গতকাল স্পিকার এ মনোনয়ন দেন।
সভাপতিম-লীর সদস্যরা হচ্ছেন রমেশ চন্দ্র সেন (ঠাকুরগাঁও-১), এ কে এম শাজাহান কামাল (লক্ষ্মীপুর-৩), ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন (কুমিল্লা-৩), কাজী ফিরোজ রশীদ (ঢাকা-৬) ও সালমা চৌধুরী (নারী আসন-৩৪)। স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে তালিকার অগ্রবর্তিতা অনুযায়ী তারা সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন।
আটজনের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত : সাবেক মন্ত্রী, দুজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী, একজন সাবেক বিরোধীদলীয় হুইপ ও চারজন সাবেক সংসদ সদস্যের (এমপি) মৃত্যুতে সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। গতকাল স্পিকারের সভাপতিত্বে চলতি সংসদের ২১তম ও ২০২৩ সালের প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে এ শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।
যাদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তারা হলেন সাবেক জ¦ালানি ও প্রাকৃতিকসম্পদ মন্ত্রী এবং সাবেক বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ মন্ত্রী, কুমিল্লা-৪ আসনের সাবেক এমপি এবিএম গোলাম মোস্তফা; ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এসএ মালেক; সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এবং বরিশাল-৪ আসনের এমপি শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন; সাবেক পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক এমপি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী; কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি ড. আলাউদ্দীন আহাম্মদ; সাবেক বিরোধীদলীয় হুইপ ও ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি মো. মসিউর রহমান; বগুড়া-৯ আসনের সাবেক এমপি এসএম ফারুক; পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক এমপি মো. শাহজাহান খান।
এ ছাড়া সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত অফিস সহায়ক কাম চাবিরক্ষক মো. মাহবুব আলম প্রধানের মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে।
শোক প্রস্তাবে এমপি মৃণাল কান্তি দাসের মা গীতা রানী দাস, এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলির বাবা মোশারেফ হোসেন (কালু), এমপি মো. শাহে আলমের মা মোসাম্মৎ রিজিয়া বেগম, চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মা হিরাবেন মোদি, ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো (পেলে), মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক সরকার, পীরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ হাইফুজ্জামান ফুল, স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর স্ত্রী অনিতা চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এ ছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে সংসদ গভীর শোক প্রকাশ করে সব বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানায়।
মৃত্যুবরণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে সংসদে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
বিচারাধীন রাজস্ব-মামলার সংখ্যা ২৩ হাজারের বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে এসব মামলার নিষ্পত্তি হলে সরকারের আদায় হবে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু রাজস্ব-মামলার আপিল ট্রাইব্যুনাল, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট প্রভৃতি পার হয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লেগে যায়। উপরন্তু নতুন মামলা যোগ হয় প্রায় প্রতিদিন। এতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ে এবং নিষ্পত্তি হয়ে রাজস্ব আদায়ে গতি কমে যায়। কবে এ জট কাটবে তা অনিশ্চিত।
এসব মামলার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা। ভ্যাটে বা আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা যে অঙ্কের রাজস্ব পরিশোধ করেছেন এনবিআরের হিসাব তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা মামলা করেছেন। বিচারাধীন আয়কর মামলার বেশিরভাগই বড় অঙ্কের। এগুলোর অর্ধেকের বেশি করদাতারা করেছেন। এনবিআর থেকে করা মামলার সংখ্যাও কম নয়।
মামলা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনবিআরের হিসাবমতো রাজস্ব পরিশোধ না করলে করদাতাকে বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে এনবিআরে তলব করা হয়। নির্ধারিত দিনে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এনবিআরে তথ্য-প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়। এসব ক্ষেত্রে সমাধানে ২-৩ মাস বা বেশি সময় লেগে যায়।
যে পক্ষের প্রতিকূলে সিদ্ধান্ত হয় সে পক্ষ এনবিআরের আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করে। নতুনভাবে শুনানি চলে। সবকিছু শেষ করে মামলা নিষ্পত্তিতে বছর পার হয়ে যায়। ট্রাইব্যুনালে হেরে যাওয়া পক্ষ জজ কোর্টে যায়। সেখানে হেরে যাওয়া পক্ষ উচ্চ আদালতে যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে শুরু থেকে নতুনভাবে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। আপিল ট্রাইব্যুনাল, জজ কোর্ট পার হতে পারেনি এমন মামলার সংখ্যাও কম নয়। এভাবে মামলাচক্রে আটকা পড়ে আছে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। এক যুগ ধরে বিচারাধীন রয়েছে এমন রাজস্ব-মামলাও আছে। এনবিআর মামলাজট কমাতে চেষ্টা করছে। আদালতও আন্তরিক। তবু আশানুরূপ সাফল্য আসেনি।
এনবিআরের প্রধান কার্যালয় ও এনবিআরের বিভিন্ন দপ্তর থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে পৃথক পৃথক চিঠি দিয়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচারাধীন রাজস্ব-মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সাবেক কমিশনার শওকত হোসেন অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জোরালো চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের তৎকালীন কমিশনার (সাবেক) ও বর্তমানে এনবিআরের আপিলেট কমিশনের (২) কমিশনার শওকত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি বিচারাধীন রাজস্ব-মামলার নিষ্পত্তিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে চিঠি পাঠালে তিনি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন। এসব মামলায় সামান্য কিছু আদায় হয়েছে, তবে বেশিরভাগ অনাদায়ী।
শওকত হোসেনের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, সাজেক সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১৮টি চালানে পণ্য আমদানিতে ৪৩ কোটি টাকা শুল্ক পরিশোধ করে। এনবিআর বলেছে, তাদের কাছে রাজস্ব পাওনা ৯৫২ কোটি টাকা। পাওনা পরিশোধ করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ছাড়িয়ে নিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি এনবিআরের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে একটি লিখিত কাগজ বন্দরে জমা দিয়ে পণ্য ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। ৫ বছর ধরে এ মামলার পক্ষে-বিপক্ষে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন, শুনানি চলছে। এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে এখনো এনবিআর পাওনা রাজস্ব আদায় করতে পারেনি।
তার চিঠিতে আরও উল্লেখ ছিল, সাভার ডিইপিজেডের মেসার্স চায়না সাউথ ব্লিচিং অ্যান্ড ডাইং ফ্যাক্টরি লিমিটেডের কাছে ৫২০ কোটি টাকা রাজস্ব দাবি করেছে এনবিআর। গাজীপুরের ভোগরা এলাকার মেসার্স নাসরিন জামান লিটওয়্যার লিমিটেডের শুল্ককর ৫০ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকার মেসার্স বাংলাদেশ তাইওয়ান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে শুল্ককর ৩০ কোটি টাকা। নরসিংদীর পলাশের মেসার্স দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেডের শুল্ককরের পরিমাণ ৯১ কোটি টাকা। ময়মনসিংহের ভালুকার বড়াডুবা এলাকার মেসার্স এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল লিমিটেডের কাছে এনবিআর ৩২ কোটি টাকা দাবি করেছে। মেসার্স এইচ কবীর অ্যান্ড কোং লিমিটেডের কাছে এনবিআর ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব দাবি করেছে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট এলাকার মেসার্স আনন্দ শিপইয়ার্ড অ্যান্ড শিপওয়েজ লিমিটেডের শুল্ককরের পরিমাণ ২৫ কোটি টাকা।
মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ বিষয়ে এনবিআরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজস্ব-মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে গঠিত বেঞ্চের অপর্যাপ্ততা, অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে রাজস্ব-মামলা পরিচালনায় আইন কর্মকর্তার স্বল্পতা, বিচারধীন মামলার সার্টিফায়েড কপিপ্রাপ্তিতে প্রক্রিয়াগত সমস্যা, ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রেফারেন্স মামলায় করদাতার আরজির কপি সংশিষ্ট দপ্তরের দেরিতে পাওয়া এবং রাজস্ব-মামলার শুনানিকালে আইন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধিদের লিয়াজোঁর অভাব। আয়কর আইনের ১৬ সিসিসি অনুযায়ী ন্যূনতম কর না দিয়ে আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সরাসরি হাইকোর্টে রিট করার কারণেও মামলা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ ছাড়া, অর্র্থ আইন অনুযায়ী সারচার্জ আরোপ করার বিরুদ্ধে মামলা করে নিয়মিত কর পরিশোধ করা হয় না।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করফাঁকির অভিযোগে আয়কর আইনের ৯৩ ধারায় মামলা পুনঃউšে§াচন করা হলে বা কোনো করদাতার তথ্য চেয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে ১১৩ ধারায় নোটিস দিলে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেও হাইকোর্টে রিট হয়। খেলাপি করদাতাদের কাছে বকেয়া আয়কর আদায়ের লক্ষ্যে ১৪৩ ধারা অনুযায়ী খেলাপি করদাতার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হলেও হাইকোর্টে যাওয়া হয়। এসব কারণেও রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া জটে পড়ে। বিধিবিধান সম্পর্কে শুল্ককরদাতা ও আইন প্রয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাখ্যাগত পার্থক্যের কারণে (বিশেষভাবে শুল্কের পরিমাণ নিয়ে মতভিন্নতা, পণ্যের শ্রেণিবিন্যাস, পরিমাণগত ও মিথ্যা ঘোষণার কারণেও) মামলা হয়। ভ্যাট সম্পর্কিত মামলায় অবৈধ রেয়াত গ্রহণ, ভ্যাট দলিলাদি রক্ষণাবেক্ষণ না করা, মিথ্যা দাখিলপত্র দেওয়া, ভ্যাট চালান না দেওয়া, উৎসে কর পরিশোধ না করা এবং সময়মতো ভ্যাট পরিশোধ না করা প্রভৃতি কারণেও মামলা হয়। সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রাজস্ব-মামলার সংখ্যা ২৪ হাজার ৫৭২। এসব মামলার নিষ্পত্তি হলে রাজস্ব খাতে সরকারের আদায় হবে ৩০ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা।
এনবিআর সদস্য মইনুল খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভ্যাট পরিশোধ করেছে বা আমদানি রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শুল্ক জমা দিয়েছে। এনবিআরের নজরে এসব পড়লে ঠিকমতো রাজস্ব পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের অঙ্গীকারনামা দিয়ে পণ্য ছাড় করিয়ে মামলা করে ব্যবসা চালাতে থাকে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজস্ব পরিশোধে বাধ্য নয় ব্যবসায়ী। মামলার তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনে ও শুনানিতে অনেক সময় লেগে যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা রাজস্ব পরিশোধে প্রক্রিয়া বিলম্ব করতেই মামলা করে থাকেন। অনেক সময় এনবিআরের হিসাবের সঙ্গে একমত না হলেও মামলা করেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাওনার পরিমাণ নিয়ে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও এনবিআর একমত না হলেই সাধারণত মামলা হয়। মামলা নিষ্পত্তিতে সময় লাগার জন্য ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় আদালতের বাইরে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধনিষ্পত্তি আইনে (এডিআর) করদাতা, ব্যবসায়ী ও এনবিআরকে আহ্বান জানিয়েছে। এডিআরে দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তিতে ফ্যাসিলেটর হিসেবে এনবিআরের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে সেল গঠন করা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় খুব একটা সফলতা আসেনি।
এডিআরের ফ্যাসিলেটর এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, এডিআরের আওতায় আয়কর খাতে কিছু করদাতা অংশ নিলেও শুল্ক ও ভ্যাট খাতে যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেসব আসছে না। ফলে রাজস্ব মামলাগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এডিআরে রাজস্ব-মামলার নিষ্পত্তি হলে আদালতের চেয়ে কম পরিমাণে রাজস্ব পরিশোধ করা যাবে। কিন্তু বেশিরভাগ মামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করে মামলা ঝুলিয়ে রাখা এবং রাজস্বও ঝুলিয়ে রাখা।
শীর্ষস্থানীয় এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এডিআরে মামলা নিষ্পত্তিতে এনবিআরের দিক থেকে দক্ষতার অভাব রয়েছে। এজন্য এডিআর সফল হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এমএম ইমরুল কায়েস জানান, প্রধানমন্ত্রী সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বছর পূর্তি উপলক্ষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ ভাষণ দেবেন। তার ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনে সম্প্রচার করা হবে।
আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করার পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
আজ খুলনা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : ব্যক্তিগত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে সড়কপথে খুলনায় যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পার হয়ে নগরীর আড়ংঘাটা বাইপাস ধরে দিঘলিয়া ঘাটে পৌঁছবেন। দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় তার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে কেনা পাটগুদাম পরিদর্শন করবেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সবশেষ খুলনায় যান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এ সফর রাষ্ট্রীয় নয়। সে কারণে তার সঙ্গে আমাদের দলের কোনো নেতাকর্মীর সাক্ষাৎ হবে কি না, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তিনি বিশ্রাম নেওয়ার সময় দলের নেতাদের ডেকে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে জানতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় একটি জমি কেনা ছিল। জমির ওপর পাটগুদাম ছিল। নেত্রী দীর্ঘদিন সেখানে আসেননি। আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৮২ সালে একবার এসেছিলেন।’
আওয়ামী লীগের দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, দিঘলিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা দেখা করতে পারবেন। তাদের সঙ্গে খুলনাসহ এ অঞ্চলের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলাপ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সহধর্মিণীর নামে দিঘলিয়ার ভৈরব নদের কোলঘেঁষে নগরঘাট এলাকায় ১ একর ৪৪ শতক (৪ বিঘা) জমিতে পাটগুদাম ও এক কক্ষবিশিষ্ট ঘরসহ জমি কেনেন।
এক তরুণ অ্যাম্বুলেন্সের পেছনের দিকের দরজা খুলে হতবিহ্বল এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। দায়িত্বরত আনসার সদস্য বললেন স্ট্রেচার লাগবে। তরুণটি স্ট্রেচারের খোঁজে অনির্দিষ্টভাবে কয়েক গজ যেতেই কেউ একজন তাকে সঙ্গে নিয়ে গেল। আমি উঁকি দিয়ে রোগীকে দেখার চেষ্টা করলাম। পায়ের দিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মারা গেছে না বেঁচে আছে বুঝলাম না। স্ট্রেচারসহ তরুণটি ফিরে এলো। সঙ্গে আরও দুজন। তারা ধরাধরি করে নামিয়ে স্ট্রেচারে উঠিয়ে রোগী নিয়ে গেল জরুরি বিভাগের দিকে। আমি যার কাছে এসেছি, তিনি আমার সহকর্মী। তাকে যে রোগীটি মাত্র জরুরি বিভাগে ঢুকল তার কথা বললাম। জানলাম যে স্ট্রেচারের জন্য যারা এসেছিলেন, যাদের এগিয়ে আসার পরার্থপরতা নিয়ে ভাবছিলাম, তারা আসলে এ জন্য টাকা নেন। পেশাদার সহায়তাকারী। আমরা জরুরি বিভাগ থেকে বের হয়ে ডিএমসির গেটের উল্টো দিকের চায়ের দোকানে গিয়ে বসি। সেখান থেকে ডিএমসির গেটের দিকে তাকিয়ে দেখি বিছানা, বালিশ থেকে শুরু করে রাইস কুকার, হিটারসহ নানান জরুরি তৈজস, ফলমূল, রান্নার উপকরণ, মনিহারি দ্রব্যের জমজমাট পসরা। আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমার সহকর্মী হেসে জানালেন, ‘ভাই হাসপাতালে ভর্তি হইলে সেখানে স্বজনদের ছোটখাটো সংসার পাতা লাগে।’
সহকর্মীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কী করা যায় বা কোন দিকে যাব ভাবতে ভাবতে জরুরি বিভাগেই ফেরত এলাম। রাত ৮টা। লাইন ধরে রোগীর স্বজনরা টিকিট কাটছেন। ফটক দিয়ে ঢুকতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কিছুটা তর্কবিতর্ক হচ্ছে রোগীর সঙ্গে কোনোভাবেই একজনের বেশি ঢোকা যাবে না; তবু একাধিক লোক ঢুকছে। আমিও ঢুকে গেলাম। ভেতরে চিকিৎসক ও নার্সরা ব্যস্ত রোগী নিয়ে। অজ্ঞান হয়ে পড়া এক রোগীকে দেখলাম। সাত থেকে আটজন লোক তার বেড ঘিরে দাঁড়িয়ে। চিকিৎসক নানা প্রশ্ন করে বোঝার চেষ্টা করছেন কীভাবে রোগী অজ্ঞান হয়েছেন। কেউ উত্তর দিতে পারছেন না। ১৫-২০ মিনিট ধরে জরুরি বিভাগের এক কোনায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। এখানে আগে এলেই আগে চিকিৎসা পাওয়া যাবে, বিষয়টা তেমন নয়। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তার সিরিয়াল অনেক পরে হলেও ওই রোগী অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেবা পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অজ্ঞান রোগীর জ্ঞান ফিরে এসেছে। চিকিৎসক বেড ঘিরে থাকাদের ভিড় কমাতে বললেন আর গেটের নিরাপত্তারক্ষীকে ধমক দিলেন এত লোক ঢুকেছে বলে। নিরাপত্তারক্ষী দরজায় দাঁড়িয়েই গলা চড়িয়ে ভিড় কমাতে বললেন। বুঝলাম চিকিৎসকের ধমক ও নিরাপত্তাকর্মীর গলা চড়ানো যেমন নিয়মিত ঘটনা এবং অযাচিত ভিড়ও তেমন।
বের হয়ে জরুরি বিভাগের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অজ্ঞান ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন যিনি, দেখি তিনিও বের হয়ে যাচ্ছেন। তার পিছু পিছু গিয়ে তাকে পরিচয় দিয়ে বললাম, ভাই দুই মিনিট কথা বলা যাবে। তিনি হেসে বললেন, আপনাকে তো ভেতরে দেখলাম। কোনো রোগী নিয়ে এসেছি কি না জানতে চাইলেন। না জানিয়ে বললাম, ওই রোগীর জ্ঞান ফিরল কীভাবে। তিনি আমাকে অবাক করে বললেন, ‘এমনিই ফিরেছে, কিছু করা লাগেনি। মনে হয় বাসাবাড়ির সুইচ পয়েন্ট থেকে শক খেয়েছিলেন।’ জানতে চাইলাম যে, তাহলে এতক্ষণ আপনি রোগীর সঙ্গের লোকদের এত প্রশ্ন করছিলেন যে! তিনি বললেন, ‘চিকিৎসা দিতে আমার জানা দরকার ছিল যে কী ধরনের বৈদ্যুতিক লাইন থেকে সে শক খেয়েছে। সমস্যা হচ্ছে, জরুরি বিভাগে রোগীর সঙ্গে যারা আসেন তারা বেশিরভাগ সময় দরকারি তথ্য জানাতে পারেন না। এতে আমাদের চিকিৎসা দিতে বেগ পেতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা সাধারণ ধারণা ও রোগীর অবস্থা দেখে সাপোর্টিং চিকিৎসা শুরু করে দিই। আপনি দেখলেন, সেখানে সাত-আটজন আমাকে ঘিরে আছে, কিন্তু তারা কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারছে না। এ ধরনের স্বজনরা আবার সহজেই উত্তেজিত হয়ে যান। আমি আসলে তাদের বোঝাচ্ছিলাম যে চিকিৎসা হচ্ছে বা তাদের ব্যস্ত রাখছিলাম। আল্লাহর রহমতে লোকটির জ্ঞান ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছে।’ কোন ধরনের রোগী বেশি আসে জানতে চাইলে তিনি জানালেন, বাইক অ্যাকসিডেন্ট। এ ছাড়া বিষ খাওয়া, শক খাওয়া, হার্ট অ্যাটাক হওয়া, ট্রেনে কাটা রোগী বেশি। তিনি জানান, এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে (জরুরি বিভাগ) আসা রোগীর প্রাণ কীভাবে বাঁচানো সম্ভব, এটাই তাদের চিন্তায় থাকে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি স্বজনকে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টিই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই বিষয়টি মানতে চান না। রোগীর স্বজনদের বুঝতে হবে, এটি রোগীর সর্বোচ্চ স্বার্থের দিক চিন্তা করেই করা হচ্ছে।
হঠাৎ শোরগোল শুনে ফের জরুরি বিভাগে ঢুকলাম। দেখি এক বৃদ্ধ তোয়ালে প্যাঁচানো একটি শিশুকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন, তাকে ঘিরে আছে আটজন বোরকা পরিহিত নারী ও অন্তত সাতজন পুরুষ। বৃদ্ধটি বিলাপ করতে করতে কোনো এক বোরকা পরিহিতাকে বকছেন ‘যাও আরও ঘুরতে যাও, যাও বেড়াও, শিক্ষা হইছে...’। সঙ্গের পুরুষ সদস্যরা এক আনসার সদস্যের ওপর রাগ ঝাড়ছেন আপনারা মানুষ? কিচ্ছু বলতে পারব না..., দেখি কী করেন... ইত্যাদি। আনসারটিও অনড় দাঁড়িয়ে বলছেন এটা নিয়ম...। এক পুলিশ সদস্য এগিয়ে এসে আনসার সদস্যকে মৃদু ভর্ৎসনা করে সব থেকে কাতর ও উত্তেজিত যুবকটির পিঠে হাত দিয়ে সান্ত¡নার ভঙ্গিতে বললেন, ভাই বুঝতে পারছি, আপনি আসেন আমার সঙ্গে। যা বুঝলাম, দেড় বছরের শিশুটি বাসার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে খেলতে খেলতে বাথরুমে রাখা বড় বালতিতে পড়ে যায়। অন্যরা যখন টের পান ততক্ষণে সব শেষ।
দুই-তিন মিনিট পর পুলিশ সদস্য ওই যুবককে নিয়ে ফেরত এলেন শিশুটিকে পর্যবেক্ষণ রুমে নিয়ে গেলেন। পুলিশ সদস্যটিকে একা পেয়ে বললাম, ভাই আপনি তো ভালোই সামলালেন, সমস্যা কী? তিনি জানান, শিশুটি আগেই মারা গেছে, এখানে আনার পর ডাক্তার দেখেও তাই বলেছেন। তারা লাশ নিয়ে যেতে গেলে আনসার সদস্যরা বাধা দিয়েছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু তাই পুলিশ কেস হবে, তারপর লাশ নিতে হবে এ নিয়ে উত্তেজনা। তিনি বললেন, নিয়ম যেহেতু, আনসার বা আমরা কী করতে পারি। এমন পরিস্থিতিতে স্বজনরা খুব উত্তেজিত থাকেন, বুদ্ধি করে সামলাতে হয়। জরুরি বিভাগের সামনে এ পুলিশ সদস্যকে ভালো লাগল।
পর্যবেক্ষণ রুমের দরজা থেকে একটু দূরে জরুরি বিভাগের করিডরে দুজন বোরকা পরা নারী ভঙ্গুর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। মনে হলো পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুর স্বজনদের মধ্যে তারা ছিলেন। একটু দ্বিধা নিয়েই তাদের একজনের কাছে জানতে চাইলাম, বাচ্চাটা আপনার কী হয়? তিনি চোখ তুলে রাজ্যের হাহাকার ভরা কান্নাসিক্ত রক্তিম দৃষ্টি তুলে সব হারানো কণ্ঠে বললেন ‘আমার ছেলে’। আর কিছু জানতে চাওয়ার বা সান্ত¡না দেওয়ার সাহস পেলাম না, এক পা দুই পা করে সরে এলাম। সন্তান হারানো রক্তিম দৃষ্টির শূন্যতার রোদন বিধ্বস্ত ইরাক, সিরিয়া বা ইয়েমেনের বোরকা পরা মায়েদের চাহনি ছবিতে দেখেছি। কিন্তু ডিএমসির জরুরি বিভাগের সামনে তার মুখোমুখি হব ভাবিনি। মায়েদের এ বেদনার অব্যক্ত ভাষা তবে সর্বজনীন, যা দেশ-কাল ঘটনার সীমানা পার হয়ে যায়!
ইতিমধ্যে আরেকটি লাশ ঢুকেছে, ট্রেনে কাটা পড়া ব্যক্তির। কিন্তু তার সঙ্গে স্বজন বলতে কেউ নেই, রোদনও নেই। যিনি আছেন তিনিও নিহতের কেউ নন। ওই পুলিশ সদস্যকে দেখলাম তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে লাশের শরীরের আঘাতের দিকে চোখ বোলাচ্ছেন, সুরতহাল লিখবেন হয়তো। হঠাৎ আমার দিকে পুলিশ সদস্যটির চোখ পড়লে ঈষৎ হাসলেন, আমিও। বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। জরুরি বিভাগের ফটক পার হতে হতেই তিন-চারজনের একটি দলকে অতিক্রম করতে হলো, যাদের একজন শব্দহীন কাঁদছিলেন। স্বজন হারানোর চূড়ান্ত ক্ষতির সেই নীরব কান্না। সঙ্গের নারীটি একটু পিছিয়ে পড়েছেন, হাতে একটি বালিশ ধরে পা টেনে টেনে চলেছেন। শোকের ওজনে বালিশটিও অনেক ভারী হয়ে উঠেছে তার হাতে।
শয্যাসংকট ও অপর্যাপ্ত জনবলের পাশাপাশি পাহাড়সম বিভিন্ন অনিয়ম-সংকটের পরও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এ দেশের সাধারণ মানুষের ভরসার স্থল। ডিএমসি সাধারণত কাউকে ফেরায় না। সবারই আশ্রয় হয় বেডে না হলে, ফ্লোরে।
বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকিতে শেখ হাসিনা ভয় পান না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘তাদের (বিএনপি) আন্দোলনের হুমকি-ধমকিতে জনগণ হাসে। সরকার পতনের হুমকি-ধমকিতে শেখ হাসিনা ভয় পান না। অনেকে বলেছিল এই হবে, সেই হবে; দেশ সংঘাতে যাবে। কিন্তু কিছুই তো হলো না। বিএনপির কথা শুনলে এখন ঘোড়াও হাসে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির ৩০তম সম্মেলন উদ্বোধনকালে এ সব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এদেশে আর কোনোদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যার প্রমাণ বিগত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশন দেশে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সরকারের পরিবর্তন চাইলে সব দলকে অবশ্যই নির্বাচনে আসতে হবে।’
ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো বিশ্বকে বদলে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আজ ইউরোপ-আমেরিকায় মন্দা দৃশ্যমান। করোনা এখনো ছাড়েনি। কবে যাবে, কেউ জানে না। চীন এখনো এর ফলভোগ করছে। এ সবের রেশ আমাদের এখানেও চলছে। তারপরও এখানে একজন রূপকার আছেন। সেই রূপকারের সঠিক সময়ে সঠিক ও সময়োপযোগী নেতৃত্বে শেখ হাসিনা আছেন। তিনি আছেন বলেই বিনা পয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি। এ বিশ^ সংকটেও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে এবং ঘুরে দাঁড়াবে।
সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মঈনুল হাসানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক, সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ।
রাজধানীর পান্থকুঞ্জের পাশের ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে ৮-১০টি পরিবার। এদের বেশিরভাগই পাশের ময়লার ডাম্পিং স্টেশনে কাজ করে। কেউ কেউ শ্রমিক বা রিকশাচালক। ফুটপাতেই তাদের সংসার। গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীতে রান্না-খাওয়া-ঘুম সবই তাদের হয় ফুটপাতে। বছরের অন্যান্য সময়টা কোনোভাবে কাটলেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বর্ষায়। তবে শীতের ভোগান্তি ছাড়িয়ে যায় সবকিছুকে। কনকনে শীতে এক দিকে যেমন অসহনীয় কষ্ট করতে হয় সেখানকার বড়দের তেমনি অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুরা।
ওই ফুটপাতে দীর্ঘদিন ধরেই সংসার পেতেছেন শ্রমিক জয়নাল মিয়া। এখন তিনি অসুস্থ। স্ত্রী নুরুননাহারের আয়ে ৩ বছরের সন্তান নিয়ে কোনোমতে দিন কেটে যায় তাদের। পরিবারের কারোরই নেই শীত নিবারণের ভালো কাপড়। শীত তীব্র হলে ঘুম আসে না জয়নাল মিয়ার। সারা রাত আগুন জ্বালিয়ে রাখেন ঝুপড়ির পাশে, ছোট্ট সন্তানটিকে ঢেকে রাখেন পলিথিনে। জয়নালের প্রতিবেশী ফুলশুনি বেগম পাশেই একটি মাটির হাঁড়িতে কাঠ পুড়িয়ে উত্তাপ নিচ্ছিলেন। তারও ভাষ্য, কনকনে শীতে সামান্য চটের বিছানায় ঘুম আসে না। দুদিন আগে একটা পাতলা কম্বল দিয়ে গেছে কেউ, কিন্তু তাতে শীত মানে না। একই অবস্থা রাজধানীর পরীবাগ ফুটওভার ব্রিজের নিচে থাকা রফিকুলের। তারও শীত নিবারণের ভরসা ময়লা-আবর্জনায় জ্বালানো আগুন। শীতের তীব্রতায় তারও ঘুম হয় না।
জয়নাল, ফুলশুনি বা রফিকুলের মতো রাজধানীর লক্ষাধিক ভাসমান মানুষ এই শীতে পড়েছেন চরম বিপাকে। ঢাকার বাইরে বিশেষ করে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষেরও একই দশা। শীতের এই তীব্রতায় তারা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টসহ ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে প্রবীণ ও শিশুরা। পূর্ণ বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত নানা রোগে। তবে সব পাশ কাটিয়েই কাজে নামতে হচ্ছে তাদের। রাজধানীর ইস্কাটনে রিকশাচালক নূরুল ইসলাম বলেন, দিনে যা রিকশা চালাই রাতে মোটেও পারি না। ঠা-ার রোগ আছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। বউ-বাচ্চাদের তো না খেয়ে রাখতে পারব না।
দুদিন আগে থেকে হঠাৎ করে নেমে আসা শীতে ঘন কুয়াশার কারণে ভরদুপুরেও মিলছে না রোদের দেখা। থার্মোমিটারের পারদ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে দেশের আট জেলায়। বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার কারণ হচ্ছে কুয়াশা। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে বৃহস্পতিবার মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার যশোরে দেশের সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারা দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যেই ছিল।
জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে ২-৩টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।
এদিকে পৌষের শেষে এসে শীতে কাঁপছে সারা দেশ। উত্তর-দক্ষিণ সব জনপদে বইছে শীতের কনকনে বাতাস। সঙ্গে রয়েছে ঘন কুয়াশাও। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঘন কুয়াশার কারণে জেলার অধিকাংশ সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে বিমান চলাচল। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।
এছাড়া প্রচণ্ড শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতে হাসপাতালগুলোতে ঠা-াজনিত রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক বাড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজও।
কনকনে ঠা-ায় কাহিল কুড়িগ্রামের মানুষ : আবারও পৌষের কনকনে ঠা-া ও হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামের মানুষ। সূর্যের দেখা না মেলায় কুয়াশায় ঢেকে রয়েছে প্রকৃতি। রাত যতই গভীর হয়, বাড়তে থাকতে কুয়াশা ও ঠা-ার মাত্রা। এদিকে কনকনে ঠা-ায় জেলায় বেড়েছে শীতজনিত রোগ। জেলার হাসপাতালগুলোর শিশু ও জেনারেল ওয়ার্ডে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।
পঞ্চগড়ে আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু : শীতের জেলা পঞ্চগড়ে শীতার্তদের দুর্ভোগ কমছেই না। মাঝখানে দুদিন বিরতি দিয়ে আজ আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। উত্তরের কনকনে শীতল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়ছে এই এলাকার মানুষজন। আগের দুদিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও প্রায় দুপুর পর্যন্ত সূর্য মেঘে ঢাকা ছিল। কুয়াশা না থাকলেও মেঘাচ্ছন্ন আকাশে উত্তরের কনকনে শীতল বাতাস কাঁপিয়েছে পঞ্চগড়ের মানুষকে। দুপুরের পর থেকে রোদের দেখা মিললেও কনকনে শীতল বাতাসের কারণে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও বাড়ছে না।
মাগুরায় বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ : মাগুরায় পৌষের শেষ সময়ে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মিললেও অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য কর্মব্যস্ত মানুষ বেরিয়ে পড়ছে। তীব্র কুয়াশার কারণে সড়কে সকাল ১০টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে মহাসড়কগুলোতে এ যানবাহন চলাচল করছে। পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে নসিমন, পিকআপ ভ্যানসহ সবজি-বোঝাই যানগুলো।
শীতে কাবু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষও : ঘনকুয়াশার সঙ্গে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর দুমকিসহ দক্ষিণের মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সূর্যালোকের দেখা মিললেও তাপের উষ্ণতা কম থাকায় প্রচ- শীত অনুভূত হয়েছে। কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌপথে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। রাত ৮টার পর থেকে ভোর ৭টা পর্যন্ত বগা ফেরি পারাপার বন্ধ রাখতে হয়েছে।
শীতের তীব্রতায় হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ : ফেনীতে গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ঘন কুয়াশার মধ্যে কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হয়ে ঠা-া, কাশি ও জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষগুলো। শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ দিনে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৭ বেডের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে দুই শতাধিক শিশু। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা এসব শিশুর অধিকাংশই নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত।
শীতবস্ত্র বিতরণ করলেন রাসিক মেয়র লিটন : রাজশাহীতে শীতবস্ত্র নিয়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। গতকাল দুপুরে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেন রাসিক মেয়র।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক এবং পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, ফেনী, পটুয়াখালী ও মাগুরা প্রতিনিধি।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
বরকতময় রমজান মাস পাওয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য মহা সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। যাতে বান্দার জন্য মহান মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করা অন্য সময়ের চেয়ে সহজতর। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫
বর্ণিত আয়াতে ‘শাহিদা’ (উপস্থিত ও বর্তমান থাকা) শব্দ দিয়ে রোজা সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আয়াতের শেষাংশে বান্দাকে ‘কৃতজ্ঞ’ হতে বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতর সাধারণ অর্থ উপকারীর উপকার মনে রাখা ও স্বীকার করে। এর সঙ্গে প্রশংসা, মহিমা, মূল্য ও যোগ্যতার বিষয়গুলো জড়িত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। কেননা তিনিই তো এর প্রাপ্য। চোখের প্রতি পলকে এবং হৃৎপিণ্ডের ওঠানামার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তার দেওয়া অসংখ্য নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। এই নিয়ামত এবং দান, যেগুলো প্রতি দিনে-রাতে নবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আমাদের উচিত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে।’ -সুরা আল ফুরকান : ৬২
ইসলাম কৃতজ্ঞতাকে উচ্চাসন দিয়েছে। তাই তো উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা যদি কেউ প্রকাশ না করে, তাহলে সে সমাজের চোখে তো নিন্দিত হয়ই, সে নিন্দিত হয় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছেও। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৫৪
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটা স্পষ্ট যে মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই অংশ। ইসলাম বলে, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।
অকৃতজ্ঞতা নীতিহীনতার পরিচয়। এর মাধ্যমে নিয়ামতের অপরিসীম ধারাকে দাতার সামনেই অসম্মান করা হয়। এ ধরনের আচরণের ফলে আরও বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার হ্রাস পায়। মানবজাতির প্রতি আদেশ হলো, তাদের প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।
কৃতজ্ঞতা কোনো কঠিন দায়িত্ব নয়, যেখানে ধৈর্যের সঙ্গে পথ চলতে হয়; বরং এটি হলো পরিপূর্ণতার পথ, যেটি দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ -সুরা বাকারা : ১৭২
মধুর আবেগ এবং হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়, একজন ব্যক্তিকে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য করে তোলে। তার রহমতের বর্ষণ ঠিক সেই উর্বর জমিতে ঢালা পানির ন্যায়, যা জমিনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করে তোলে। কৃতজ্ঞতা শুধু ঠোঁটে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নয়; বরং কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। অকৃতজ্ঞতার পরিণাম সম্পর্কে মানবজাতিকে ভয়ংকর পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৫২
রমজান মাসে অনেক পুণ্যের সমাহার ঘটে। পুণ্যময় এসব কাজের একটি হতে পারে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীকে অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
আজ রবিবার (২ এপ্রিল) সকাল ৯টায় রাজধানী ঢাকার বায়ুর মানের স্কোর ছিল ১২৫। এই স্কোরের অর্থ- ঢাকার দূষণমাত্রা 'সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর'। বাতাসের মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
একই সময়ে বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই। শহরটির দূষণের স্কোর ২৫৪ অর্থাৎ 'খুবই অস্বাস্থ্যকর'। দ্বিতীয় চীনের রাজধানী বেইজিং, স্কোর ১৬৬ অর্থাৎ 'অস্বাস্থ্যকর'। আর ১৬৪ স্কোর নিয়ে তৃতীয় ভারতের দিল্লি, এটিও 'অস্বাস্থ্যকর'।
উল্লেখ্য, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি, সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর আর ৩০১-এর বেশি হলে বিপজ্জনক।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’