
‘ক্রীতদাসের হাসি’ লিখে শওকত ওসমান বাঙালি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালি ক্রীতদাস নয়। এই অর্থে তিনি বাঙালিকে জাগিয়েছিলেন। বাঙালি জেগেছে অনেকবার, একাত্তরেও জেগেছিল। তেমনভাবে জেগে ওঠার, জ¦লে ওঠার ঘটনা ইতিহাসে ওই একবারই। তারপর তার নিরন্তর নিজর্¦লন; পেছনে হাঁটার বিরামহীন প্রয়াস। জ¦লে ওঠার স্ফুলিঙ্গ (ইস্ক্রা) দেখা যাচ্ছে না। বাঙালির মুখে-মুখাবয়বে ‘ক্রীতদাসের হাসি’র আভা এখনো দেখতে পাওয়া যায়। সবাই নিজেকে বাঙালি বলতেও অকুণ্ঠ নয়।
সে যাই হোক, এখন তার পুত্র ইয়াফেস জাগিয়ে রাখেন সবাইকে ইয়াফেস ওসমান জাগিয়ে রাখেন মন্ত্রিসভাকে। মন্ত্রিসভার কবি তিনি। পিতার মতো পুত্রও লেখাকেই আশ্রয় করেছেন যেন তা সাধনার চর্যা ও চর্চা ক্ষেত্র। মন্ত্রিসভার গুরুগম্ভীর আলোচনায় যখন ক্লান্তি ভর করে তখনই ডাক পড়ে ইয়াফেস ওসমানের। তখন মৃদুভাষী ইয়াফেস ওসমান স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর কবিতা, তবে রাজনীতিই মুখ্য বিষয়। সমকালীন ঘটনাকে তুলে আনেন তিনি কবিতার পঙ্ক্তিমালায়। সমাজের দুষ্টচক্রের ‘অপলীলা’র কথা ছন্দময় বিন্যাসে উপস্থাপন করেন। সহজ ও সাবলীল তার বিস্ময় ও ক্ষোভের স্বগত প্রকাশ।
ইয়াফেস ওসমানের কবিতার তারিফ করেন মন্ত্রিসভার সহকর্মীরা। হাততালি দিয়ে, টেবিল চাপড়ে উৎসাহ দেন। তিনি পরম উৎসাহে নতুন লেখার রসদ জোগাড়ে ব্যস্ত হন।
প্রাচীনকালে রাজদরবারে থাকত সভাকবি (পোয়েট লরিয়েট)। কাব্যরচনা আর রাজাকে আনন্দদান তাদের কাজ ছিল। ইয়াফেস ওসমান সভাকবি নন। তবে এ আধুনিককালে উপমিত করে তাকে এমনটা বললেও খুব বেশি বাড়িয়ে বলা হবে না, যদিও তাতে তার আপত্তি আছে। এটা তার সহজাত কর্মের অনেকগুলোর একটি। লেখক সত্তা তার একান্ত নিজস্ব সত্তা, যাতে তিনি নিজেকে খুঁজে পান; আমোদিত হন এবং সহকর্মীদের আমোদিত করেন।
মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের কবিতা পড়ে চাঙ্গা রাখলেও নিজের কাজে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেন না তিনি। কাঁধে তুলে নিয়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের ভার। সরকারের সাফল্য খানিকটা তার ওপরও ভর করে আছে। কারণ তিনি বাস্তবায়ন করছেন দেশের সবচেয়ে দামি রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প।
এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন অথচ তার মধ্যে ফোকাসে আসার ন্যূনতম চেষ্টা নেই। প্রচারপ্রদীপ থেকে সহস্র হাত দূরে থাকতে চান। নীরবে নিভৃতে নিজের কাজটাই করতে চান সরসভাবে, সফলতার সঙ্গে। মন্ত্রিসভার অনেক সহকর্মীর মতো সাংবাদিক ডেকে বলেন না, ‘প্রকল্পের কাজ ৭০ ভাগ শেষ।’ কিংবা বলেন না যে, ‘এক মাস পর ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হবে।’
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করার ঝক্কি ছিল অনেক। এ কারণে ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার ইচ্ছা থাকার পরও কাজ শুরু করতে পারেনি। স্বাধীনতার অনেক দিন পর সাহসী এ সিদ্ধান্ত নিতে ইয়াফেস ওসমানকে সাহস জুগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের গণমাধ্যমগুলো সরব ছিল পারমাণবিক বর্জ্য কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে। শেষে অনেক দেনদরবার করে এ বর্জ্য রাশিয়াতেই নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করান ইয়াফেস ওসমান।
ইয়াফেস ওসমানকে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সঙ্গী করেন দূরবর্তী স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার স্বপ্নে। প্রায় ১৪ বছর আগে সেই যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ঢুকেছেন, আজও সেখানেই আছেন। মন্ত্রণালয়টিতে বাহুল্য বলে কিছু নেই। ঝকঝকে তকতকেও নয় কোনো কিছু। বদলায়নি টেবিল চেয়ারগুলোও।
অন্য মন্ত্রণালয়গুলোতে কী হয়? মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরই কীভাবে রুমটি জাঁকজমকপূর্ণ করা যায় সেই চিন্তায় মগ্ন হন মন্ত্রী। তাতে তাল দেয় ক্ষমতালিপ্সু কিছু আমলা আর অধিদপ্তরের ঠিকাদার। মন্ত্রীকে কিছু গছাতে পারলেই তাদের লাভ। অধিদপ্তর থেকে টাকা এনে প্রথমেই মন্ত্রীর দপ্তর আধুনিক করা হয়। এরপর সচিবের। পরে পুরো মন্ত্রণালয়কে চকচকে করা হয়। বাহ্যিকভাবে ঝকঝকে তকতকে হলেও ভেতরে সেই ঘুণে ধরা ফাইল চালাচালি। টাকা খাওয়ার মহোৎসব চলে বিরামহীন।
যারা মাঠে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সেই দপ্তরের টাকায় মন্ত্রী বা সচিবের অফিস রুম সাজালে তাদের তদারকি করার কিছু থাকে না। তখন অধিদপ্তরই মন্ত্রণালয় চালায় আর মন্ত্রণালয় হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে। ইয়াফেস ওসমান এসবের ধারেকাছে যাননি। চতুর আমলাদের ফাঁদে পড়েননি তিনি, সাড়া দেননি চৌকস ঠিকাদারদের প্রলোভনে।
এর পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। মন্ত্রিসভায় ঢুকেছিলেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। দ্বিতীয় মেয়াদের কিছুদিন পার হওয়ার পর পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। ইয়াফেস ওসমান যখন পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন তখন সেই কেবিনেটের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু। কী গুণে পূর্ণ হলেন ইয়াফেস ওসমান জানতে চাইলে মুজিবুল হক বলেন, ‘তিনি শোনেন বেশি, বলেন কম। এটাই তার প্রধান গুণ। একই গুণের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও “প্রতি” থেকে “পূর্ণ” হয়েছেন।’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়েও নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ সংবিধানই তাকে দিয়েছে। টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হয়ে ১৩ বছর মন্ত্রী থাকার নজির ইয়াফেস ওসমান ছাড়া আর কারও নেই এ দেশে। রেকর্ড সময় মন্ত্রী থাকার পরও তার নির্বাচন করার কোনো মোহ নেই। তিনি জনগণের কোলাহল এড়িয়ে নীরবে নিজের কাজটাই করতে চান। ঠিক যেমন বিজ্ঞানীরা করে। ইয়াফেস ওসমানের কাজও বিজ্ঞানীদের নিয়েই, যারা সারা জীবন গবেষণা করেই কাটিয়ে দেন। দুনিয়াবির খবর তারা তেমন রাখেন না।
স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ১৯৪৬ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামে জন্মেছেন। তার পিতা কালজয়ী কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান এবং মাতা সালেহা ওসমান। চট্টগ্রাম মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে তার পড়াশোনা। এসএসসি পাস করেন ১৯৬৩ সালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর নটর ডেম হয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটে। স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হন।
পিতার লেখালেখিতেই পুত্র অনুপ্রাণিত হয়েছেন। শওকত ওসমান বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের মুক্তচিন্তার অগ্রদূত। বাঙালিকে জাগিয়ে তুলতে লিখেছেন নাটক, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা। প্রয়াত অধ্যাপক হুমায়ুুন আজাদ শওকত ওসমানকে বলতেন ‘অগ্রবর্তী আধুনিক মানুষ’। পিতার মতো লেখালেখিতে বিখ্যাত না হলেও ইয়াফেস ওসমান স্বনামধন্য কবি। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’, ‘নষ্ট কাল কষ্ট কাল’, ‘নয় মানুষ, কয় মানুষ’ এবং জয়তু জননেত্রী উল্লেখযোগ্য।
এখন ভোট থেকে দূরে থাকলেও সারা জীবনই ভোটবিমুখ ছিলেন না তিনি। ইয়াফেস ওসমান ১৯৭০ সালে বুয়েটের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ৭০ সালে বুয়েটের ভিপি ছিলেন তাহলে ৭১ সালে কি বিদেশে উচ্চ ডিগ্রি নিতে চলে গিয়েছিলেন? গরিব মেহনতি মানুষের করের টাকায় লেখাপড়া করে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীরা সচরাচর যা করেন? না, তা নয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, ২ নম্বর সেক্টরে।
স্থপতি হিসেবেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি। জুনিয়র স্থপতি হিসেবে ড. এফ আর খানের সহযোগীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তিনি। পেশাগত জীবনে স্থাপত্য ও নকশা প্রতিষ্ঠান প্রকল্প উপদেষ্টা লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রূপপুরে নির্মীয়মাণ দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। দেশের সবচেয়ে খরুচে এ প্রকল্প শুরু করতে সরকারকে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য সমঝোতা স্মারক ও বিভিন্ন ধরনের চুক্তি করতে হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) ডেকে এর অবকাঠামো মূল্যায়ন করাতে হয়েছে। সংসদে একাধিক আইন পাস করাতে হয়েছে। এসব কাজ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতোই জটিল। দীর্ঘ সময় লেগে থেকে এসব কাজ দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছেন ইয়াফেস ওসমান। ২০২৪ বা ’২৫ সালে এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলেই তার পরিশ্রম সার্থক হবে। দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেলে আক্ষরিক অর্থেই দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হবে। মন্ত্রীর সাফল্যই দেশের সাফল্য, দেশবাসী কায়মনোবাক্যে তার সাফল্য কামনা করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ বছরের শেষে অথবা সামনের বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠীর সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। তিনি এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হতে দেবেন না।
টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বছরপূর্তি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের শেষ দিকে আসছে সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে স্বাধীনতাবিরোধীরা আবারও সোচ্চার হচ্ছে। তাদের কাজ হলো গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। এরা লুণ্ঠন করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী ও বিবৃতিজীবী নিয়োগ করেছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরা মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না।’
দেশবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং ইন্ধন জোগাবেন না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম একটি আইন পাস করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সরকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের দল, জনগণের শান্তিতে বিশ্বাসী, জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। জনগণ ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আওয়ামী লীগ দেশ গড়ার জাতীয় দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। যদি বিজয়ী না করে, তাহলে আমরা জনগণের কাতারে চলে যাব। তবে যেখানেই থাকি, আমরা জনগণের সেবা করে যাব।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের এবং জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশ এগিয়েছে অনেক। তবে আরও এগিয়ে নিতে হবে। একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈবপ্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সব ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।’ ‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে সরাব জঞ্জাল,/এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার চারটি চরণ তুলে ধরে তার বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী।
কী দিতে পেরেছি তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন : প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে এক টানা ১৪ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। এই ১৪ বছরে আমরা দেশ এবং দেশের জনগণকে কী দিতে পেরেছি, তার বিচার-বিশ্লেষণ আপনারা করবেন। বর্ষপূর্তিতে আমি শুধু কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করে আপনাদের স্মৃতিকে নাড়া দিতে চাই।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখনো বিশ্বব্যাপী মন্দাবস্থা চলছিল। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশচুম্বী। অন্যদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছিল নিম্নমুখী। বিদ্যুতের অভাবে দিনের পর দিন লোডশেডিং চলত। গ্যাসের অভাবে শিল্পকারখানার মালিকেরা যেমন হাহাকার করত, তেমনি চুলা জ্বলত না মানুষের বাড়িতে। সারসহ কৃষি উপকরণের উচ্চমূল্য এবং জ্বালানি তেলের অভাবে কৃষকের নাভিশ্বাস উঠেছিল। এমনি এক অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিই।’
এ সময় শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প ২০২১’ সালের পর ‘রূপকল্প ২০৪১’ এবং ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘রূপকল্প ২০২১-এর পর আমরা রূপকল্প ২০৪১ এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ প্রণয়ন করেছি। রূপকল্প ২০২১-এ আমরা অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম। আজকে সন্তুষ্টচিত্তে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সক্ষম হয়েছি। রূপকল্প-২০৪১ লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করা। বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে একটি টেকসই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে টিকিয়ে রাখা।’
জনগণ এরই মধ্যে তার সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল পেতে শুরু করেছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সুফল জনগণ আজ পেতে শুরু করেছে। আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায়। নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত আজ মধ্যবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে গ্যাসের চুলায় রান্না হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করেছি। এই সেতু দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সড়ক পথে ঢাকা এবং অন্যান্য জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। গত ২৮-এ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক স্পর্শ করেছি। কিছুদিনের মধ্যেই শুধু বাংলাদেশেই নয়, চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ-বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হবে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা ২০১৮ সালের মে মাসে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ এ দেশের মহৎ ও বৃহৎ অর্জনসমূহ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই অর্জিত হয়েছে।’
২০০১-০৬ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় : প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি জোট আবার ক্ষমতায় আসে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ওই ৫ বছর ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। হত্যা, গুম, ধর্ষণ, লুটপাট, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো এবং জঙ্গিবাদের লালন-পালনসহ অপশাসন-কুশাসনে জোট সরকার যে মাইলফলক স্থাপন করেছিল, এদেশের মানুষ আগে কখনো তা দেখেনি। শুধু আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয় ওই সময়। অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়ে। মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস, সাক্ষরতা হ্রাস জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলে। মেয়াদ শেষে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্বাভাবিক ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ষড়যন্ত্র করে। দলীয় রাষ্ট্রপতিকেই প্রধান উপদেষ্টার পদ দিয়ে সরকার গঠন করে ৬ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রহসনের উদ্যোগ নেয়। জনগণ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এমনি এক অরাজক পরিস্থিতির মুখে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। তারাও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শুধু ব্যর্থই হয়নি, নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কালিমালিপ্ত করে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সরকার ছবিসহ একটি সুষ্ঠু ভোটার তালিকা তৈরি এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সংস্কার সম্পন্ন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা একটানা ১৪ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছি। ১৬ বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায় কয়েকটি আর্থ-সামাজিক সূচকের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তা তুলে ধরতে চাই। এসময় তিনি জোট সরকারের সময়ের এবং গত ১৪ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
১৪ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে : শেখ হাসিনা বলেন, গত ১৪ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রধান নদীগুলোর ওপর সেতু নির্মাণ। বিগত ১৪ বছরে আমরা পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু, তিস্তা সেতু, পায়রা সেতু, দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা, দ্বিতীয় গোমতী সেতুসহ শত শত সেতু, সড়ক, মহাসড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ করেছি। এ ছাড়া ঢাকায় হানিফ ফ্লাইওভার, তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার, কমলাপুর-শাহজাহানপুর ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার ফ্লাইওভার, চট্টগ্রামে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার ও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারসহ বহুসংখ্যক ছোট-বড় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।
করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অবরোধের কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে : করোনা মহামারীর ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এবং রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি অবরোধের ফলে খাদ্য, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে পরিবহন খরচ। ফলে আমাদের দেশেও জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমরা কয়েকটি পণ্য বেশি দামে কিনে স্বল্পদামে সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল। কিন্তু আপনাদের সহায়তায় এবং আমাদের সরকারের সময়মতো উদ্যোগ গ্রহণের ফলে আমরা খুব ভালোভাবে সেই মহামারী মোকাবিলা করতে পেরেছি। টিকা পাওয়ার যোগ্য শতভাগ মানুষকে বিনামূল্যে টিকা প্রদান করা হয়েছে। অর্থনীতিতে মহামারীর প্রভাব মোকাবিলায় ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছি। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতনভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৭টি।
বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল : প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ বছরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোলমডেল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দিজীবনের অবসান হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার শান্তিপূর্ণ মীমাংসার মাধ্যমে আমরা বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকার ওপর সার্বভৌম অধিকার অর্জন করেছি। আমরা ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।
বিপিএলের ডামাডোলে ঢাকায় এসে উপস্থিত শ্রীধরন শ্রীরাম। জোর গুঞ্জন তার সঙ্গে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি কোচ হিসেবে চুক্তি নবায়ন করতে চলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ভারতীয় এই কোচ গত বিশ্বকাপে ছিলেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্বে। এই ফরম্যাটের কোচ হিসেবে নতুন বিকল্প না থাকায় তাকেই লম্বা সময়ের জন্য রাখতে পারে বিসিবি। অবশ্য এই কোচের সঙ্গে চুক্তি যে ২০২৪ বিশ্বকাপ পর্যন্ত গড়াতে পারে তার আভাস আগেই মিলেছিল। সেটা সত্যি করতেই হয়ত বিপিএলের সময় ঢাকায় ৪৬ বছর বয়সী কোচ।
কাল বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে বিপিএলের প্রথম ম্যাচ স্টেডিয়ামে বসে দেখেছেন শ্রীরাম। জানা গেছে, সংক্ষিপ্ত আকারে বিসিবি প্রধানের সঙ্গে চুক্তির আলোচনাও সেরেছেন। ওই সময় টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও উপস্থিত ছিলেন। বিপিএলের প্রস্তুতি শুরুর পর গতকালই প্রথমবার মিরপুরে আসেন সাকিব। অবশ্য বিসিবির পক্ষ থেকে চুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। দেশ রূপান্তরকে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান জালাল ইউনুস বলেন, ‘না, কোনো চুক্তি এখনো হয়নি। আলোচনা চলছে। সে শনিবার পর্যন্ত থাকছে। এই সময়ে সে খেলা দেখবে। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে না অন্য কিছুর ব্যাপারে আলোচনা, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আনুষ্ঠানিক কিছু হলে জানানো হবে।’ এদিকে শ্রীরাম দেশ রূপান্তরকে জানান সে বিপিএল উদ্বোধনী দেখতে এসেছে। তবে চুক্তির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
গত মেয়াদে বিশ্বকাপের আগে বারবারই লম্বা সময়ের পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন শ্রীরাম। তাতেই স্পষ্ট এই কোচের সঙ্গেই টি-টোয়েন্টির চুক্তি করছে বিসিবি। শ্রীরামের অধীনে বাংলাদেশ আরব আমিরাতের সঙ্গে দুই ম্যাচের সিরিজ, নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে। এই সময়ে ১৩ ম্যাচে চারটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি ৯ ম্যাচে হেরেছে।
বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার ১৫২ বিদেশি জামিনের পরও মুক্তি পাচ্ছেন না। তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে আটক আছেন। এমনকি তাদের দায়িত্বও নিচ্ছে না দূতাবাসগুলো। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মাসখানেক আগে এক বৈঠকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রধানদের কাছে (দূতাবাসের মাধ্যমে) চিঠি দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, জেলায় জেলায় কূটনীতিকদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। নির্দেশনা পেয়ে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার কাজও শুরু করে দিয়েছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের চলাচলে সীমিত করার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
কারাগারে থাকা এসব বিদেশি বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রতারণা মামলার আসামি। কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বিদেশি বন্দি রয়েছেন ৭১২ জন। তাদের মধ্যে ১৫২ বন্দি রয়েছেন মুক্তির অপেক্ষায়। কারা ভাষায় তাদের আরপি (রিলিজ প্রিজন) বন্দি বলা হয়। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৫, চট্টগ্রামে ২২, কক্সবাজারে ২৭, টাঙ্গাইলে একজন ও বাকি বন্দিরা কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি ও কাশিমপুর পার্ট-১-এ বন্দি রয়েছেন।
সাজা শেষ হওয়ার পর ফিরিয়ে নিতে বন্দিদের নাম-ঠিকানাসহ সব তথ্য সংবলিত কাগজ ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসকে দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওইসব দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়। এরপরও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এসব বন্দি মিয়ানমার, ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, তানজানিয়া, নাইজেরিয়া ও আফ্রিকার নাগরিক।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেসব বিদেশি অপরাধী জামিন পেয়েছেন তাদের সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দূতাবাসগুলোকে আমরা অনুরোধ করেছি। কারা কর্র্তৃপক্ষও বিষয়টি অবহিত করেছে আমাদের। গ্রেপ্তার হওয়া বেশিরভাগ বিদেশি প্রতারণাসহ নানা মামলার আসামি। যেসব বিদেশি অপরাধ করবে তাদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ বিদেশিদের নিজ দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদের কীভাবে পাঠানো যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেক বিদেশি আছে তাদের ভিসার মেয়াদ নেই। তাদের খুঁজে বের করতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ৫০০ বিদেশি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। বাংলাদেশে ফেইসবুকে উপহারের নামে প্রতারণা, হেরোইন, কোকেনসহ মাদক কারবার, ব্যাংকের এটিএম বুথের জালিয়াতি, বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রার কারবার, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, সোনা চোরাচালান, অনলাইনে ক্যাসিনো এবং মানব পাচারে এসব অপরাধী জড়িত। আবার তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে বেশ কিছু সুন্দরী নারী। নারীদের দিয়ে তারা ব্ল্যাকমেইল করে থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে বিমানবন্দরে প্রতারণা করছেন। আবার কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে নানা কারবার চালাচ্ছেন। যেসব বিদেশির ভিসার মেয়াদ নেই তাদের একটি তালিকা করার কাজ প্রায় সম্পন্ন করে এনেছে দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। ওই তালিকাটি কয়েক দিনের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে। তাছাড়া এ তালিকার আগে আরেকটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৭০০ বিদেশির ওয়ার্ক পারমিট নেই।
ওই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যারা জামিন পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই। তাদের নিতে কেউ কারাগারেও আসছেন না। তাদের আমরা ছেড়ে দিলে আবারও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। যতটুকু জেনেছি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোতে যোগাযোগ করলেও তারা সাড়া দিচ্ছে না। তাদের কারাগার থেকে বের করে সরাসরি সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না আমরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, অবৈধ বিদেশিরা প্রতারণা, মাদক ও জাল টাকার কারবারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকার নাগরিকরা বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বেশি প্রতারণা করছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি জেলায় কূটনীতিকদের তালিকা করার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে জেলার এসপিরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি কূটনীতিকদের চলাচলেও আমরা নজরদারি করছি। তাদের নিরাপত্তা দিতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাসখানেক আগে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভার বৈঠকে অবৈধ বিদেশিদের ব্যাপারে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। যারা জামিন পেয়েও মুক্ত হয়নি সেই বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। যেভাবেই হোক অবৈধদের বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। বিদেশিরা যাতে এলোমেলোভাবে বসবাস করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কারাবন্দি বিদেশি নাগরিকদের বেশিরভাগেরই বৈধ কাগজ নেই। তারা নিজের দেশের নাম বললেও সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করছে না। বন্দিদের পরিচয় সম্পর্কে জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করা হলেও সময়মতো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি দূতাবাসগুলো যথাযথ সহযোগিতা করছে না আমাদের। তিনি আরও বলেন, বিদেশি বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে প্রচলিত আইনের বাইরে কিছু নিয়ম রয়েছে। দেশি বন্দিরা নিজ জিম্মায় বের হতে পারলেও বিদেশিদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের কর্মকর্তা অথবা তাদের বৈধ অভিভাবক প্রয়োজন হয়। বর্তমানে কারাগারে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা বিদেশি বন্দিরা কোনোটাই পাচ্ছে না। এ কারণে তাদের মুক্তিও মিলছে না।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অতীতের গৌরব হারিয়ে এখন অনেকটা গতিহীন। এর মধ্যেও দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি গঠন, পুনর্গঠন ও হালনাগাদ না করা এবং অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, কোন্দলের কারণে ছাত্রসংগঠনটিতে চলছে অস্থিরতা। সম্প্রতি এই অস্থিরতা আরও বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যখন আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সময়, তখন হঠাৎ করে সংগঠনের একটি অংশ পেছনের ঘটনা সামনে এনে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের বিরুদ্ধে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা ও নিজ সংগঠনের জুনিয়রদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, টাকার বিনিময়ে ও ব্যক্তিগত অনুগতদের দিয়ে কমিটি গঠন, স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মপ্রচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এসব নিয়ে সংগঠনের মধ্যে চলছে চরম অস্থিরতা। যদিও সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে অন্য নেতাদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে এমন অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা আমাদের জানাতে পারেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানাতে পারেন। তারা তা না করে গণমাধ্যমের কাছে মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে হাজির হচ্ছেন। এখন যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে তা পুরনো।’ হঠাৎ করে এসব অভিযোগ কেন আনা হচ্ছে, তা সহজেই বোঝা যায়, এমন মন্তব্য করে তিনি দাবি করেন, ‘সংগঠনের ভেতরে সরকারের এজেন্ট ঢুকে পড়েছে। তাদের প্ররোচনায় নিজ সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। এভাবে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সামনে যদি তারা দায়িত্বে আসতে চান কীভাবে চালাবেন সংগঠন?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের বিগত কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে গত বছরের ১৭ এপ্রিল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ‘সুপার ফাইভ’ কমিটি ঘোষণা করেন। এতে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি, সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক এবং জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংগঠনটির অন্য তিন নেতার সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নিজেদের মতো করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করের। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের ৩০২ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা আসে। এর চার দিন পর কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তারা জানান, ঘোষিত কমিটিতে সংগঠনের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগে এসএসসি পাস করাসহ বিবাহিত ও অছাত্ররাও রয়েছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির সিদ্ধান্তে ৩২ জনের পদ স্থগিত করা হয়।
পদবঞ্চিতরা আরও অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মপ্রচার, অধীন নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সংগঠনের বাইরে নিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের দিয়ে জেলা নেতাদের নির্দেশনা দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। কমিটি ঘোষণার পর সবাইকে নিয়ে সংগঠন পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন তারা। সর্বশেষ ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গুম, খুন হওয়া নেতাদের নাম উল্লেখ করে যে স্মারক প্রকাশ করা হয় তার নিচে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটি না লিখে লেখা হয়েছে শ্রাবণ-জুয়েল পরিষদ।
তারা আরও বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে সংগঠনের সভাপতি শ্রাবণকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়। সাধারণ সম্পাদককে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় গণসমাবেশের সভাপতি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন। সংগঠনের বাইরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশের দিন দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের মধ্যে একজন করে বক্তব্য দেবেন। ওই দিন সমাবেশে ছাত্রদলের সভাপতি শ্রাবণকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়। জুয়েলকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় তিনি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একইভাবে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নাও বক্তব্য রাখার সুযোগ চান। সুযোগ না দেওয়ায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের ক্ষোভের কারণে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বিরক্ত হন। তবে আমাদের কেউ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানাইনি। কারণ তিনি নিজেই অনলাইনে সমাবেশে যুক্ত ছিলেন। সবকিছু দেখেছেন। দলীয় সিদ্ধান্তে সবকিছু হয়, এটা সবার বোঝা উচিত।’
১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ছাত্রদল স্বৈরাচার এরাশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমানে ছাত্রদলের সেই ইমেজ নেই। এ বিষয়ে খোদ দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আক্ষেপ করে ছাত্রদলেরই এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় গুরু দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ছাত্রদল আমাদের পথ দেখিয়েছিল। কিন্তু সেই ছাত্রদল এখন আর নেই। ছাত্রদল ব্যর্থ হয়েছে তাদের ভূমিকা পালন করতে।’
যে অভিযোগ উঠেছে সে প্রসঙ্গে ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে আমাদের রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ অবস্থায় সংগঠনের কিছু নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক কিছু নেতা যারা বিএনপির সঙ্গে জড়িত, তারা সংগঠনে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে ভিন্ন একটি বলয় তৈরি করে হাইকমান্ডকে ভুল বার্তা দেওয়াসহ নানা অপপ্রচার চলছে। আমাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তারা বলতে পারেন। কিন্তু তারা তা না করে বিএনপিবিরোধী কিছু গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের কাছে গিয়ে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরছেন। এতে করে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।’
৩২ নেতার পদ স্থগিতের বিষয়ে শ্রাবণ বলেন, ‘বিভ্রান্তিকারীদের অপপ্রচারে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার চার দিন পরেই তাদের পদ স্থগিত করা হয়। এতে যেমন সংগঠনের ভাবমূর্তির সংকট হয়েছে, তেমনি নিয়মবহির্ভূত ওই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েছেন পদ স্থগিত করা রাজপথের নেতারা। অথচ কমিটি ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে অভিযোগ জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। এ জন্য অভিযোগ বাক্স খোলা হয়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল, সেসব তদন্ত করে ক্লিন ইমেজের নেতাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদায়ন করা হয়।’
শ্রাবণ বলেন, ‘কোনো রকম তথ্যপ্রমাণ ও যাচাই-বাছাই ছাড়া শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে এসব ছাত্রনেতার পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ দেওয়া হয়নি। মূলত সংগঠনকে দুর্বল করার জন্যই সংগঠনবিরোধী এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অপপ্রচারকারীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে বিএনপির একটি অংশের নেতা। যারা চেয়েছিলেন ছাত্রদলকে তাদের পকেটে নিতে।’
ছাত্রদলের সভাপতির অভিযোগের তীর কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের বিরুদ্ধে। শ্রাবণ বলেন, ‘শুরু থেকে রাকিব সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে একটি ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন। এখান থেকে ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা চলছে। এমনকি তার নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে (কমল ফোর্স গ্রুপ) অনুসারীদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবিরোধী স্ট্যাটাস, প্রচারণা এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নিউজের লিঙ্ক শেয়ার করার জন্য নির্দেশনা দেন বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।’
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় কার্যালয় থেকে যেসব নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তার মধ্যে রাকিব ছিলেন। রাকিব বর্তমানে জেলে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এক যুগ ধরে কমিটি নেই ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের : প্রায় এক যুগ ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতাধীন থানা কমিটি নেই। এসব থানা ইউনিটের মধ্যে রয়েছে খিলক্ষেত, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পঞ্চল, তুরাগ, উত্তরা পশ্চিম, দক্ষিণ খান। ৭ বছরের বেশি সময় ধরে কমিটি নেই বাড্ডা, ভাটারা, গুলশান, বনানী, বিমানবন্দর ও উত্তরখান থানা ইউনিটের। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পশ্চিমের আওতাধীন থানা ইউনিটগুলোর কমিটিও নেই। দলের দুর্দিনে তাই অনেক নেতাকর্মী এখন পরিচয়হীন। অথচ এই ১২ বছরে চারটি কেন্দ্রীয় সংসদ ও চারটি মহানগর উত্তর ছাত্রদলের কমিটি গত হয়েছে এবং পাঁচবার কর্মিসভা করেছে। তিনটি টিম গঠন করেও কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে সংগঠনটি। স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক লেনদেন ও নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির কোন্দল, দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের দ্বন্দ্বকেও দায়ী করছেন নেতারা।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কমিটি গঠনের জন্য গঠিত টিম লিডার আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে। কাজ চলছে।’
চার দিনের সফরে আজ শনিবার ঢাকা আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা (বিশেষ সহকারী) এবং হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার। এদিকে দুই দিনের সফরে আগামী ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসার কথা রয়েছে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর।
জো বাইডেনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা আইলিন লাউবাচার ঢাকা সফরের প্রথম দিনেই সফরসঙ্গীদের নিয়ে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন। ঢাকায় ফিরে তারা পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক করবেন। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বাইডেনের উপদেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সফরকালে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাইডেন প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা উভয় নীতিনির্ধারকের সঙ্গে বৈঠকে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পাশাপাশি শ্রম অধিকার, দরপত্র প্রতিযোগিতায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়গুলো আলোচনা হবে। এ ছাড়া র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জিএসপি পুনর্বহাল, শান্তিরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্ব দেবে ঢাকা।
যশরাজ ফিল্মসের হাত ধরে বড় পর্দায় শাহরুখ খানের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী বলিউড। তার 'পাঠান' বক্স অফিসে নজির গড়ছে। ভারতীয় ছবির সাফল্য পাড়ি দিয়েছে আমেরিকাতেও।
৪ বছর পর বড় পর্দায় ফিরেছেন শাহরুখ। 'পাঠান'-এ তার অ্যাকশন দেখতে দলে দলে হলে যাচ্ছেন অনুরাগীরা। মুক্তির পর প্রথম কয়েক দিনেই বিপুল টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে এই ছবি। গড়েছে একাধিক নজির। গত বুধবার, ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পায় 'পাঠান'। রবিবার পঞ্চম দিনে ছবিটি বিশ্বজুড়ে ৫০০ কোটির বেশি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে। কোনো কোনো পরিসংখ্যানে দাবি, পঞ্চম দিনের শেষে 'পাঠান'-এর আয় সাড়ে ৫০০ কোটি। মুক্তির প্রথম ৪ দিনই দেশের বাজারে হাফ সেঞ্চুরি করেছিল 'পাঠান'। রবিবারও তার অন্যথা হয়নি। ৫০ কোটির গণ্ডি পেরিয়ে এই ছবি রবিবার দেশে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। ভারতে এখন পর্যন্ত 'পাঠান'-এর মোট আয় ২৮২ কোটি টাকা। শনি ও রবিবার সপ্তাহান্তেই আরও বেশি করে এই ছবি দেখতে হলে যান মানুষ। চতুর্থ দিনে দেশের বক্স অফিসে শাহরুখের ছবির আয় ছিল ৫১ কোটি টাকা। সারা বিশ্বে এ ছবির মোট রোজগার শনিবার পর্যন্ত ছিল ৪২৯ কোটি টাকা। রবিবার এক লাফে ৫০০ কোটির গণ্ডি ছাড়িয়েছে 'পাঠান'।
দেশের বাইরে 'পাঠান' মোট ১০০টি দেশে মুক্তি পেয়েছে। বিদেশে ২৫০০টি পর্দায় এই ছবি দেখানো হচ্ছে। ভারতে এই ছবি চলছে সাড়ে ৫ হাজার পর্দায়। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই ৬৯৪টি সিনেমা হলে 'পাঠান' মুক্তি পেয়েছে। সেখানে রমরমিয়ে চলছে শাহরুখ, দীপিকা পাডুকোন এবং জন আব্রাহাম অভিনীত ছবিটি। নজির গড়েছে। উত্তর আমেরিকার বক্স অফিসে হিন্দি ছবি হিসাবে 'পাঠান'-এর প্রথম দিনের আয় সর্বোচ্চ। ছবিটি মুক্তির দিন ১৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৫ কোটি টাকা) আয় করেছে আমেরিকায়। উত্তর আমেরিকার ৬৯৪টি সিনেমা হলে সাম্প্রতিককালে মুক্তিপ্রাপ্ত যেকোনো ছবির তুলনায় 'পাঠান'-এর গড় সবচেয়ে বেশি।
আয়ের গড় হিসাবে হলিউডকেও টেক্কা দিচ্ছেন শাহরুখ। এই নিরিখে হলিউডের ৩টি ছবি কেবল 'পাঠান'-এর সামনে রয়েছে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সেরা গড়ের তালিকায় তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্থানে শেষ করতে পারে 'পাঠান'। তালিকায় 'পাঠান'-এর আগে রয়েছে 'অ্যাভাটার : দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’, 'পুস ইন দ্য বুটস : দ্য লাস্ট উইশ' এবং 'এ ম্যান কলড ওটো'।
কাস্টমস লাইসেন্সিং বিধিমালা বাতিলের দাবিতে আজ থেকে দুই দিন দেশের সব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. সুলতান হোসেন খান।
লিখিত বক্তব্যে সুলতান হোসেন খান জানান, কাস্টমস এজেন্টস লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০১৬ তে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বিধি সন্নিবেশিত থাকায় বিধিমালা জারির পর ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বিধি সংশোধনের দাবি জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হলেও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃপক্ষ বিধিমালা সংশোধনের কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
‘উপরন্তু ২০২০-২০২১ সালের বাজেট প্রস্তাবনার সঙ্গে আরও কঠিন শর্ত যুক্ত করে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ জারি করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে উত্থাপিত লাইসেন্সিং রুলের কয়েকটি বিধি ও উপবিধি সংশোধনীর প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত বাজেটেও কোনোরূপ সংশোধনী আনা হয়নি।’
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকরী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গত বছরের জুনে সারা দেশে একদিনের কর্মবিরতি পালন করে সিঅ্যান্ডএফ সংশ্লিষ্টরা। জুন মাসের শেষে আবারও দুই দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা দিলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে লাইসেন্সিং রুলসহ অন্যান্য বিধিসমূহ সংশোধনের জন্য কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। এ বিষয়ে ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেও কার্যকর কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে লাইসেন্সিং বিধিমালা-২০২০ এর আইন ও বিধি পরিবর্তন ও সংশোধনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি সোম ও মঙ্গলবার দেশের সকল কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফেডারেশন যে সকল বিধিবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আমদানিকারকের কাছে শুল্ক করাদি পাওনা থাকলে সংশ্লিষ্ট সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের লাইসেন্স নবায়ন না করার বিধান বাতিল করা, উত্তরাধিকারের অনুকূলে লাইসেন্স হস্তান্তর সংশ্লিষ্ট শর্ত শিথিল করা, শুল্ককর পরিশোধ না করলে লাইসেন্স বাতিল ও অর্থদণ্ড আরোপের বিধান বাতিল করা, মূল লাইসেন্স বাতিল হলে রেফারেন্স লাইসেন্স বাতিলের বিধি বাদ দেওয়া, দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান না করা, শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা-২০০০ এর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ভুলের অজুহাতে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানার আদেশ বাতিলের দাবি উল্লেখযোগ্য।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব শামছুর রহমান, সহসভাপতি জনাব শেখ মো. মোখলেছুর রহমান (লাভলু), অর্থ সচিব এ কে এম আকতার হোসেন, বন্দর বিষয়ক সচিব জনাব মো. খায়রুল বাশার প্রমুখ।
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী শীতকালীন পিঠা উৎসব-২০২৩। রবিবার সকাল ১১টায় বনানীস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচবিআর টাওয়ারের নীচতলায় ফিতা কেটে পিঠা উৎসব ২০২৩ এর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুন্নবী মোল্লা ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইফ্ফাত জাহান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কাজী এ এস এম আরিফ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোফাজ্জেল মাওলা, ফার্মেসি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেখ ফিরোজ উদ্দীন আহমেদ, ফাইন্যান্স ডিরেক্টর শিপার আহমেদ, ডেপুটি রেজিষ্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা বেগমসহ অন্যরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাড়ি থেকে হরেক রকম পিঠা তৈরি করে এনে স্টল সাঁজিয়েছেন। আটটি স্টলে ছিলো নানা রকম পিঠার সমাহার।
এর মধ্যে ছিলো- ভাজাপুলি, দুধপুলি, নারিকেল পাকন, ছেই পিঠা, পাটি সাপটা, ফুলঝুরি, নকশি পিঠা, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝালপুলি, দুধপিঠা, মিষ্টান্নের মধ্যে ছিলো- কুনাফা, কাস্টার্ড, পুডিং, বালুশাই ও পায়েস। নানা অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় পিঠার পসরা সাজিয়ে উৎসবে আগতদের মনোযোগ কেড়েছে আয়োজকরা।
বাহারি নামের এসব পিঠা খেতে শিক্ষার্থীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়েছে এসব পিঠা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল ও মেশিনারি পণ্য নিয়ে রাশিয়া থেকে আসা বিদেশি জাহাজ ‘এম,ভি আনকা সান’ ও ‘এম,ভি সাপোডিলা’ মোংলা বন্দরে ভিড়েছে। রবিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়ে আনকা সান ও সন্ধ্যা ৭টায় ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে সাপোডিলা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইলেকট্রিক্যাল মালামাল নিয়ে ভেনুটা পতাকাবাহী জাহাজ এম,ভি আনকা সান রবিবার বিকেল পৌনে ৫টায় মোংলা বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। ১ হাজার ৯৭৯ প্যাকেজের ১ হাজার ৪শ মেট্রিক টন ইলেকট্রিক্যাল পণ্য নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর রাশিয়ার নভরস্কি বন্দর থেকে ছেড়ে আসে এ জাহাজটি। এ ছাড়া রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর থেকে ৪৩৬ প্যাকেজের ৫১৮ মেট্রিক টন মেশিনারি পণ্য নিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে ভিড়ে বিদেশি জাহাজ এম,ভি সাপোডিলা।
বিদেশি জাহাজ আনকা সান’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট কনভেয়ার শিপিং লাইনসের খুলনার ম্যানেজার (অপারেশন শিপিং) সাধন কুমার চক্রবর্তী ও সাপোডিলা’র স্থানীয় শিপিং এজেন্ট ইন্টারপোর্ট’র খুলনার ম্যানেজার অসিম মন্ডল জানান, বন্দর জেটিতে অবস্থান নেয়া এ জাহাজ দুটি থেকে রবিবার সন্ধ্যার পর অর্থাৎ রাত থেকে পণ্য খালাস শুরু হবে। এরপর জাহাজের এ পণ্য খালাস করে জেটিতে রাখা হবে। তারপর সোম বা মঙ্গলবার থেকে তা সড়ক পথে নেয়া হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে মোংলা বন্দরে এসেছিল বিদেশি জাহাজ এম,ভি কামিল্লা। এ জাহাজগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত।
উল্লেখ্যে, সম্প্রতি ৭টি জাহাজ কোম্পানির ৬৯টি জাহাজে রূপপুরের মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রেক্ষিতে রূপপুরের মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এম,ভি উসরা মেজরকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি তখন। ওই জাহাজটির ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে ভেড়ার শিডিউল ছিল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় তা আর সম্ভব হয়নি। পরে অবশ্য ওই জাহাজটি পণ্য খালাসে ভারতে গেলে সেখানেও পণ্য খালাস করতে না পারায় ফেরত যায় উসরা মেজর। যা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
চলছে শীত মৌসুম। এই সময় ফুলকপি খাবেন না, তা কি হয়? ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি; যা রান্না কিংবা কাঁচা যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়। তবে ফুলকপির পাতাও কম উপকারী নয়। অনেকেই ফুলকপির পাতা ফেলে দেন। কিন্তু এর গুণ জানলে এমন করার আগে দু’বার ভাববেন।
ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ক্যালসিয়াম প্রভৃতি রয়েছে। যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে।
ওজন কমাতে
মেদ ঝরাতে পরিশ্রম কম করেন না কেউই। অথচ হাতের সামনে এমন উপকারী জিনিস থাকতেও, অপ্রয়োজনীয় ভেবে ফেলে দিচ্ছি। ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার। ওজন কমাতে চাইলে অতি অবশ্যই রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন এই পাতা। শুধু লেটুস নয়, সালাদেও এই পাতা রাখতে পারেন।
দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে
গবেষণা বলছে, ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি, চোখ সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করে। চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারেন ফুলকপির পাতার উপর। রাতকানা রোগের আশঙ্কা দূর করতে এই পাতা কার্যকর।
হাড়ের যত্নে
শীতকালে হাড়ের বাড়তি খেয়াল রাখার দরকার পড়ে। তাই চিকিৎসকরা ক্যালশিয়ামে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন। ফুলকপির পাতা হল ক্যালশিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। এমনকি, ঋতুবন্ধের পরেও অনেক শারীরিক সমস্যা এড়াতে খেতে পারেন ফুলকপির পাতা।
সন্তানের বেড়ে ওঠায়
ফুলকপির পাতায় রয়েছে ভরপুর পরিমাণে প্রোটিন এবং খনিজ পদার্থ, যা শিশুর বেড়ে ওঠায় সাহায্য করবে। পুষ্টিবিদরা শিশুর বা়ড়ন্ত বয়সে এমন কিছু খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকেন, যেগুলো তাদের উচ্চতা, ওজন এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করবে। ফুলকপির পাতা সেই খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম।
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দে য়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এই সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নীল পানির চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) দেখে মনে হবে যেন উন্নত কোনো দেশের বন্দর। এই নীল জলরাশির তীরেই গড়ে উঠবে উপমহাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এই নীল পানি দেখে আশাবাদী হওয়ার বদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। যার কারণ হলো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চ্যানেলের জন্য খরচ হওয়া প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার দায় পড়তে যাচ্ছে চবকের কাঁধে।
গত রবিবার মাতারবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, ৩৫০ মিটার চওড়া ও ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল নির্মাণের কাজ শেষ। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় জেটি নির্মাণও হয়ে গেছে, সেই জেটিতে ইতিমধ্যে ১১২টি জাহাজ ভিড়েছেও। কিন্তু চ্যানেলের জন্য চবককে পরিশোধ করতে হবে ৯ হাজার ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ হিসেবে রয়েছে ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ এবং বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই টাকা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছিল। আর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যই চ্যানেলটি নির্মাণ হয়েছিল। এখন যেহেতু এই চ্যানেলকে ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে, তাই তা নির্মাণের সব খরচ চবককে পরিশোধ করতে হবে বলে গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়, যে কমিটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের কাছে চ্যানেলটি ও তা নির্মাণের ব্যয় হস্তান্তরের পদ্ধতি নির্ধারণ করবে।
কিন্তু এই টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চবক। এ বিষয়ে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে জাইকার ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ ঋণের পরিশোধ শুরু হবে আগামী বছর থেকে। সেই হিসাবে প্রথম বছরে পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। শুধু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ঋণ নয়, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের জন্য জাইকা থেকে ৬ হাজার ৭৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে চবক। এই টাকার বিপরীতে ২০২৯ সালে জাইকাকে দিতে হবে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, পরে প্রতি বছর ঋণ ও সুদ বাবদ দিতে হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরের ড্রেজিং বাবদ বছরে খরচ হবে প্রায় ৫০ কোটি এবং এই বন্দর পরিচালনায় প্রতি বছর ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শুধু ঋণ শোধ বাবদ চবককে পরিশোধ করতে হবে ৪ হাজার ৪২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগামী বছর লাগবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে ২০২৬ সাল থেকে প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে চবক। অন্যদিকে চবকের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তাহলে চবক এত টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চবকের দাবি, চ্যানেল নির্মাণের খরচ যাতে তাদের কাঁধে দেওয়া না হয়। কিন্তু এই টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কয়লাবিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই চ্যানেল কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নিমির্ত হয়েছে। এখন যেহেতু বন্দর কর্র্তৃপক্ষ চ্যানেল ব্যবহার করবে, তাহলে তো তাদের টাকা দিতেই হবে। আর এই টাকা তো ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লাবিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাইকা একটি প্রস্তাবনা দেয়। সেই প্রস্তাবনা ও পরে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করা হয়। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকার বাজেট একনেক থেকে অনুমোদন করে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ীতে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাবন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব পূরণ করবে মাতারবাড়ী বন্দর।
আর কখনো রাজনীতিতে জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মুচলেকা দিয়ে এ কথা বলেছে তারা। সংগঠনটির নেতারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অংশও হবেন না তারা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন কোনো সম্পর্কেই জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলাম বেশ কিছু শর্তও দিয়েছে। শর্তে তারা বলেছে, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ যেসব নেতা কারাবন্দি রয়েছেন তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলাম গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এ মুচলেকা দেয় এবং এসব শর্ত বা দাবি জানায়।
আগে হেফাজত নেতারা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারপর দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মুচলেকা দেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা হেফাজতের মুচলেকা দেওয়ার কথা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। সরকারের সহযোগী হিসেবে থাকার অঙ্গীকার করেছে হেফাজত।
১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়; তারা রাজনীতি করবে না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তারা জোটবদ্ধও হবে না।
হেফাজতে ইসলাম আরও কিছু শর্ত দিয়েছে, যেমন কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর বৃহত্তম বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক) সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে মামুনুল হক এবং আরও কয়েকজনকে এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সরকারি মহল। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামুনুলকে ছাড়তে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, কাদিয়ানি সম্প্রদায় বিষয়ে হেফাজতের দাবি আপাতত আমলে নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বিদেশি চাপ আসবে। যে চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ঝামেলায় জড়ানো যাবে না বলে হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে। বেফাক ইস্যুতেও আপাতত কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না সরকার। বেফাককে সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মানাও আপাতত অসম্ভব, জানিয়েছে সরকার। তবে হেফাজত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, অন্য শর্তগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে।
হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে সরকারের বিরুদ্ধে; এসব ব্যাপারে কথা বলতে হবে তাদের। জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে হেফাজতকে। হেফাজত নেতারা বলেছেন, জামায়াত ইস্যুতে তারা কোনো ছাড় দেবে না। জামায়াতকে তারা ইসলামের ধারক-বাহক মনে করে না।
বলা যায়, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়েছে। এটা একটা ‘পলিটিক্যাল ডিল অর আন্ডারস্ট্যান্ডিং’। জানা গেছে, এ সমঝোতার ভিত্তিতেই হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০৩টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং নেতারা জামিন পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনো তদন্ত হচ্ছে ২০৩টি মামলার। অনেক দিন ধরেই তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। হেফাজত নেতাকর্মীদের অনেকে কারাগারেও আছেন। তবে বেশিরভাগ আসামি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।
পুলিশের পাশাপাশি হেফাজত নেতারা মামলাগুলো নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা এগুলোর নিষ্পত্তি চান। এ নিয়ে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজত নেতারা। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা পেয়ে পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ১০ জন নেতা জামিন পেয়েছেন। তারা যেকোনো সময় কারামুক্ত হবেন। তবে মামুনুল হক আপাতত মুক্ত হচ্ছেন না।
হেফাজত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। তারা বলেন, এসবের জন্যই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছি আমরা। তবে সমঝোতার কথা সবিস্তারে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। হেফাজত নেতারা সরকারের অঙ্গীকার করেছে, তারা রাজনৈতিক কর্মকা- চালাবেন না। শুধু ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকা-ের সমালেচনাও করবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আশ্বস্ত করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। মামলাগুলোর অনেক আসামি জামিনে আছে, কেউ কেউ জামিন ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমালোচনাও হচ্ছে সবখানে। এগুলোর দ্রুত সুরাহা চাচ্ছি আমরাও।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে তারা। একপর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। সে সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয় এবং পুলিশসহ সহস্রাধিক হেফাজত নেতাকর্মী আহত হয়। হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা হয়। ওইসব মামলার কোনোটাতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
হেফাজত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন। বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলাম নিয়ে কাজ করি। একটি মহল আমাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা রাজনীতি করছি না, আর করবও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আমরাও চাচ্ছি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর বৈঠক করেছি। তাতে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। অনেক কথা হয়েছে। আমাদের শর্তও তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতা ছাড়া কোনো কিছুরই সমাধান হয় না। আমরা চাই না সরকারের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হোক। আমরা কথা বলেছি। সরকারপ্রধান ইতিবাচক হিসেবে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’