
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ক্লোজড সার্র্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা বা সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার নিয়ে দোটানায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্রে সিসিটিভি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)এমনটি জানালেও জাতীয় নির্বাচনে এর পুরোপুরি না আংশিক ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
ইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেট ঘাটতি, কারিগরি দিকসহ নানা সীমাবদ্ধতায় ৩০০ আসনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার অসম্ভব। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও কারিগরি দিক নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারা বলছেন ইসি চাইলে ৩০০ আসনেই এই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভব।
৪ জানুয়ারি গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়। প্রতিটি কেন্দ্রেই সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। ভোট পরিস্থিতি দেখতে রাজধানীর নির্বাচন ভবনে ইসির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সকাল ৮টা থেকেই সিসি ক্যামেরা টিভিতে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান।
পরে সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, সুষ্ঠু ভোটের ক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় নির্বাচনে এই ক্যামেরা ব্যবহার হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন।
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এই আসনে গত ১২ অক্টোবর উপনির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরায় এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি। ওই সিদ্ধান্তের পর সিসিটিভি নিয়ে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট, এমনকি সাধারণ মানুষের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হয়। জাতীয় নির্বাচনের ৩০০টি আসনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে ভোট জালিয়াতি রোধ করা, দিনের ভোট রাতে হওয়া থেকে বিরত রাখাসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়বে বলে মনে করছেন তারা। ফলে চাইলেই কেউ জোর করে ভোট ছিনিয়ে নিয়ে ফলাফল পরিবর্তন করতে পারবে না।
যদিও সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার নিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (সংসদ নির্বাচনের আইন) কিছু বলা নেই। তবে নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, তাতে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের কথা বলা রয়েছে।
গাইবান্ধা উপনির্বাচনের সঙ্গে জড়িত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ওই আসনের ভোটকেন্দ্রের বুথগুলোতে ১২৪২টি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে খরচ হয়েছিল ৮০ লাখ টাকার মতো। ইসি যদি ৩০০ আসনেই সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করতে চায়, তাহলে আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে সম্ভাব্য খরচ ৩০০ কোটি টাকার মতো হবে।
তবে নির্বাচন কমিশন থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য ১৩,১৬২ দশমিক ৫০ লাখ টাকা বা ১৩১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা ভাড়া, কানেকশন সেট, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য এই বাজেট বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এর সঙ্গে জনবল, ট্রেনিংসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে কর্মকর্তারা জানান।
ইসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্র্মকর্তারা জানান, সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের খরচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হবে যেখানে ইন্টারনেট নেই। কারণ, সেখানে কানেকশনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেখা গেছে, অনেক সময় উপজেলা থেকেও তার টেনে ইন্টারনেট কানেকশন দিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যায়।
তবে অন্যান্য খাতে খরচ কমিয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করা যায় বলে মনে করছেন ইসির ওই কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় একটি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হয়। সেটির খরচ যদি কমানো যায় (বড় পরিসরে না করে যতটুকু লাগে ঠিক ততটুকু) তাহলে খরচ কমবে। নির্বাচনের দিন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকেন। সে ক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের খুব একটা কাজ থাকে না। দেশের ৫২২টি উপজেলার এসব কর্মকর্তাকে (কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়জনও রয়েছেন) যদি কাজে লাগানো যায়, তাহলে লোকবলের খরচ কমে আসবে। আবার প্রিসাইডিং অফিসারদের নিয়োগ দেওয়া হয় দুই-এক দিন আগে। তাদেরও ট্রেনিংয়ে খরচ হবে। সেটি না করে যদি অনলাইনে একটা ট্রেনিং করিয়ে দেওয়া যায় একযোগে, তাহলে এখানেও খরচ কমবে। ইসি চাইলে খরচ কমিয়ে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে ভোটকেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, কতগুলো আসনে সিসিটিভি ব্যবহার করা হবে, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ইতিমধ্যে ৬টিঁ প্রস্তাব দিয়েছে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান। সেগুলো নিয়ে উপস্থাপন করে সম্ভাব্যতা সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খানসহ আইডিইএ (ষফবহঃরভরপধঃরড়হ ঝুংঃবস ভড়ৎ ঊহযধহপরহম অপপবংং ঃড় ঝবৎারপবং) প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। চলতি মাসের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে ৩০০ আসনে একযোগে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নির্বাচন মনিটরিং সম্ভব কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রকল্পে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, বিষয়টি নিয়ে নানাভাবে কাজ করা হচ্ছে। অবশ্যই সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে তারা ব্যাংক অব চায়নার কথা বলেন। পুরো বিশে^ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাংকটির শাখাগুলোর কাজকর্ম তারা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনিটরিং করে। শুধু চীনেই ব্যাংকটির দুই হাজারের বেশি শাখা রয়েছে। তারা পারলে ইসি ৩০০ আসনে কেন পারবে না? ওই কর্মকর্তারা বলছেন, কমপক্ষে ৬ মাস আগে থেকে তাদের কাজ করতে দিতে হবে। কেননা, দেড় মাস আগে থেকে তারা কাজ শেষ করে টেস্টিংয়ে যেতে না পারলে শেষ সময়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা হতে পারে। তাই প্রস্তাব পাস করতে হলে জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর (ডিপিডি-কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কারিগরি সক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব শিগগির এ বিষয়ে কমিশন থেকে জানানো হবে।’
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। তবে কতগুলো আসনে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার হবে, সেটি কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ বিষয়ে কাজ চলছে।’
পুলিশের মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্টের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত। জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল রবিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশে গত ৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত ফখরুল ও আব্বাসের জামিননামা (বেইল বন্ড) না দিতে তাদের আইনজীবীদের যে আদেশ দিয়েছিল সেটি প্রত্যাহার (রিকল) করেছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে দুজনের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের দেওয়া রুল সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে আদেশপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছে আদালত।
আদেশের পর বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সাংবাদিকদের বলেন, নতুন কোনো মামলা না থাকলে ফখরুল-আব্বাসের কারামুক্তিতে বাধা নেই। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালত যে স্বাধীনভাবে বিচারকাজ করতে পারছে দুজনের জামিন বহালে তা প্রমাণ হলো।
অধস্তন আদালতে চারবার জামিনের আবেদন না-মঞ্জুরের পর গত ২ জানুয়ারি দুজনের পক্ষে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট ফখরুল-আব্বাসকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আদেশ দেয়। একই সঙ্গে কেন তাদের জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দেয় আদালত। পরদিন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ৪ জানুয়ারি আদেশে এ বিষয়ে রবিবার (গতকাল) শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠায় চেম্বার আদালত। তবে এই সময়ের দুজনের আইনজীবী কোনো জামিননামা দিতে পারবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি গতকাল শুনানিতে ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। ফখরুল-আব্বাসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আদেশের পর অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগ জামিনের যে আদেশটি দিয়েছে সেটি বহাল রয়েছে। লিখিত আদেশটি পেলে আমরা জামিননামা দাখিল করব। দুজনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো মামলা নেই। কাজেই আমরা মনে করি জামিননামা দাখিলের পর তারা কারামুক্তি পাবেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তারা (বিএনপি ও দলটির আইনজীবীরা) সবার বিরুদ্ধে বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করেন। আদালতের বিরুদ্ধে তারা যে এই ধরনের কথা বলেন, আজকে কী প্রমাণ হলো? আজকে তো আপিল বিভাগ সাবমিশন গ্রহণ করে জামিন দিলেন।’
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে মকবুল নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ফখরুল ও আব্বাসের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধানো ও পুলিশের ওপর হামলায় উসকানি দেওয়া ও ককটেল উদ্ধারের অভিযোগ করে পল্টন থানায় মামলা করে পুলিশ। এতে এ দুই শীর্ষ নেতাসহ দলটির ৪০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ৮ ডিসেম্বর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে নয়াপল্টনের সংঘর্ষের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন ৯ ডিসেম্বর আদালত তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরপর আরও তিনবার অধস্তন আদালতে দুজনের জামিন না-মঞ্জুর হয়। গত ২১ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চাইলে তা না-মঞ্জুর করে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে একনেকে নতুন প্রকল্প পাস না হলে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে ইভিএম প্রসঙ্গ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৈঠকে বুয়েট শিক্ষক প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী, তথ্য বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলামসহ প্রযুক্তিবিদরা অংশ নেন।
ইভিএম প্রকল্প খুব একটা এগোয়নি উল্লেখ করে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেছেন, প্রকল্পের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করব বলে আমরা বলেছিলাম। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পাস না হলে আমাদের কাছে বর্তমানে যা আছে, তাই দিয়েই ভোট করব। মধ্য জানুয়ারির মধ্যে নতুন প্রকল্প পাস না হলে ব্যালটে যেতে হবে। সেই প্রস্তুতিও নিতে হবে। টাইমলি হলে তো ভালো। না হলে যা আছে তা নিয়েই করব।
এ কমিশনার বলেন, এসব নীতিনির্ধারকদের (মন্ত্রণালয়/সরকার) সঙ্গে কথা হয়নি। এটার রীতিও নেই। ইসি সচিবালয় হয়তো কথা বলবে। আমাদের সক্ষমতা যা আছে, তাই করব। আমাদের সক্ষমতা তো জানামতে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করার মতো আছে। এখন কী আছে জানি না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের বিষয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আরপিও বিল আকারে রেডি করছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমাদের কাছে পাঠাবে বলে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি ও সরবরাহের কাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েট অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেছেন, ইসির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত। অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই যাক না কেন, তাদের তো এ অভিজ্ঞতা নেই। কাজেই এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত এবং ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়া উচিত।
শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ডেটাবেজ যেখানেই থাকুক সব একেবারে আইডেন্টিক্যাল হতে হবে। এটায় দ্বিমত নেই। যদি আইডেন্টিক্যাল না থাকে এটা হাস্যকর হয়ে যাবে। এটা তো শিউর। এখন এটা কমিশনে আছে না অন্য কোথাও আছে, এটা তো মেটার করে না। কাজেই ভোটার তালিকার যে ডেটা নেওয়া হয় সেটা থেকেই এনআইডি হয়। বেসিক্যালি এখন ইভিএম হবে কি হবে না সেটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনা হয়েছে যে এই ডেটাগুলো অন্য কোথাও থাকলে ইভিএম ব্যবহারে কোনো ঝামেলা হবে কি না। টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে তো ঝামেলা হওয়ার কথা নয়। কারণ একই জিনিস। এখানে থাকুক আর অন্য কোথাও থাকুক।
তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে আমরা সবাই সেটা স্বীকার করে নিচ্ছি, অত্যন্ত সুন্দর একটা ডেটাবেজ আছে। ১৮ বছরের নিচে যারা আছে তাদের তথ্য নিতে চাচ্ছি। এখন কমিশন না অন্য কেউ নেবে এটা নিয়ে আলোচনা করেছি।
জাতীয় পরিচয়পত্রের মালিকানা রাষ্ট্রের বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী। তিনি বলেন, মালিকানা হচ্ছে রাষ্ট্র। সরকারই টাকা দিয়ে এটা (এনআইডি) তৈরি করেছে। টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে ইতিবাচক, নেতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত কমিশন বা সরকার নেবে। তারা আরও জানবেন বিষয়টা। তারপর আলোচনা করে বিষয়টা সিদ্ধান্ত নেবেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ হত্যা মামলার একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি আমাতুল্লাহ বুশরাকে জামিন দিয়েছে আদালত। দুই মাস পর গতকাল রবিবার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসীন ইফতেখার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হওয়া পর্যন্ত বুশরার জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই আদালত শুনানি শেষে আদেশ অপেক্ষমাণ রাখে। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় আদেশের জন্য রবিবার (গতকাল) দিন ধার্য করে আদালত। আদালতে বুশরার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল ও রহমান হাওলাদার। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হুমায়ুন কবীর।
মামলার তদন্ত চলাকালে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদ গণমাধ্যমে জানান, ফারদিন হত্যা মামলায় বান্ধবী বুশরার সংশ্লিষ্টতা নেই, তবে বাকিটা আদালতের সিদ্ধান্ত। মামলার অভিযোগপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হবে।
গত বছর ৪ নভেম্বর রাতে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বান্ধবী বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুশরাকে বাসায় এগিয়ে দিতে যান ফারদিন। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৯ নভেম্বর রাতে রামপুরা থানায় ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে ছেলে হত্যার অভিযোগ এনে বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় বেশ কয়েকজনের নামে একটি হত্যা মামলা করেন। পরদিন বুশরাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ওইদিন তাকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে ১৬ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ আসে আদালত থেকে। ইতিমধ্যে ডিবি ও র্যাব জানিয়েছে, হতাশা থেকে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারদিন।
প্রতি বছরই পুলিশ সপ্তাহে নানা বিষয়ে দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপ্রতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য কয়েকজন মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তারা দাবি তুলেছেন। বরাবরেই মতোই এবারো সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে। পুরনো দাবির পাশাপাশি নতুন কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের পুুলিশ সপ্তাহে। গতকাল রবিবার পুলিশ সপ্তাহ শেষ হয়। সেদিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জোরালোভাবেই দাবি উত্থাপন করার পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তারা কেন দাবিগুলো পূরণ হচ্ছে না তা-ও জানতে চেয়েছেন বলে বাহিনীর একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ শুরু হয়। ওই দিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী পুুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের নিয়ে বিশেষ দরবারও করেন। পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেন। অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে জ্বালানি তেল ব্যবহার না কমানোর জন্য অনুরোধ জানান। তিনি পুলিশের সিভিল সদস্যদের জন্য ভাতা বাড়ানোরও অনুরোধ করেন। রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি শাহ আলম প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান, রেল পুলিশের নিজস্ব ভবন করার জন্য রেলের খালি জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য। দাবিগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। তিনি লিখিতভাবে প্রস্তাব দিতে বলেছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, শনিবার রাতে রাজারবাগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা বেশ কিছু নতুন দাবি উত্থাপন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাইবার সিকিউরিটি ও সামাজিক মাধ্যম ঘিরে অপরাধ ঠেকানোসহ শাস্তি নিশ্চিতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি স্বতন্ত্র ইউনিট গঠনের দাবি করা হয়েছে। ইউনিটটির নাম হবে পুলিশ সাইবার ব্যুরো। পাশাপাশি পুলিশকে অধীন অধিদপ্তর আখ্যা না দিয়ে স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ গঠন, পুলিশের জন্য স্বতন্ত্র ইউনিভার্সিটি অব ক্রাইম অ্যান্ড সিকিউরিটি গঠন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ (ডিজি) ১০টি গ্রেড-১ পদ সৃজনের দাবি করা হয়েছে। সাইবার অপরাধ রোধ ও তদন্তে পুলিশের শুধু ডিএমপিতে আলাদা ইউনিট রয়েছে, কিন্তু জেলার কোথাও নেই। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি অংশ কাজ করে থাকে। বৈঠকে বলা হয়, একজন অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে সাইবার ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। জেলায় নেতৃত্ব দেবেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তার অধীনে দুজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), চারজন পরিদর্শক, আট উপপরিদর্শক (এসআই), ১৬ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) থাকবে অপারেশনাল টিমে। এই বক্তব্যের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিব একমত পোষণ করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনা করে সমাধান করবেন।
ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, একজন ডিআইজি বৈঠকে প্রস্তাব করেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, আনসার ব্যাটালিয়নের মূল দপ্তরকে বলা হয় সদর দপ্তর। কিন্তু পুলিশের সদর দপ্তরকে বলা হয় পুলিশ অধিদপ্তর। পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন করা হলে আইজিপি মন্ত্রণালয়ে বসেই সিনিয়র সচিবের ভূমিকা পালন করতে পারবেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানও অর্থ মন্ত্রণালয়ে বসে সিনিয়র সচিবের ভূমিকা পালন করেন। আইজিপির পদটি সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবও একই পদমর্যাদার। পুলিশের ছুটি, বদলির মতো কাজগুলো এখন জননিরাপত্তা বিভাগের মাধ্যমেই করা হয়। পুলিশের চাওয়া, এসব কাজ আইজিপির অধীনেই থাকুক। এতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একমত পোষণ করে বলেন, সবাই বসে প্রস্তাবটি কীভাবে সমাধান করা যায়, সেই চেষ্টা করা হবে।
এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বৈঠকে বলেন, বিশে^র অন্যান্য দেশে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশেও ফরেনসিক কিংবা সাইবার সিকিউরিটি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন, বিট পুলিশিং, জেন্ডার ইকুয়েলিটি পুলিশিংয়ের জন্য পুলিশ ইউনিভার্সিটি বা ইউনিভার্সিটি অব ক্রিমিনাল বা ক্রাইম অ্যান্ড সিকিউরিটি নামে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি উত্থাপন করেন তিনি। তা ছাড়া আলাদা মেডিকেল কোর গঠন করারও দাবি করেন তিনি।
ওই পুলিশ সুপার মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন- প্রতি বছরই তারা নানা দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু এসব বাস্তবায়ন কেন হয় না। তিনি বলেন, শুধু আশ্বাসই দেওয়া হয়, এই আশ্বাসের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার জন্যও অনুরোধ জানান তিনি।
তা ছাড়া পার্বত্য এলাকায় তিনটি আলাদা এপিবিএন ব্যাটালিয়ন গঠন করারও দাবি এসেছে। ডিএমপি কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালকসহ পুলিশে সচিব পদমর্যাদার ১০টি গ্রেড-১ পদ দাবি করা হয়।
পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গতকাল দিনব্যাপী আইনমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। রাতে বৈঠক হয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে। আইনমন্ত্রীর কাছে দাবি করা হয়, মানি লন্ডারিং মামলা বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। পুলিশের সব কটি ইউনিট যেন এসব মামলা তদন্ত করতে পারে, সেই ব্যবস্থা যেন তিনি নেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আসলে আমরা শুধু দাবিই করে আসছি, নীতিনির্ধারকরা আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছেন। গত কয়েকটি পুলিশ সপ্তাহে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আশ্বাস পেয়ে আসছি আমরা। এবারও একই অবস্থা হয়েছে আমাদের।’
স্টেশন কাউন্টারে সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট না পেয়ে কালোবাজারে কেনেন এক শিক্ষার্থী। টিকিট পেয়েই ছাড়েন স্বস্তির নিশ্বাস। কিন্তু ভালো করে খেয়াল করেই চোখ কপালে ওঠে তার। টিকিটটি যে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নামে কাটা! নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষার্থী জানান, ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার বিকেলে কুলাউড়া স্টেশনে। অবশ্য ওই স্টেশনের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামেও টিকিট কাটার ঘটনা ঘটেছে। টিকিট বিক্রির সফটওয়্যারে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় ও অনলাইনে টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের আন্তরিকতার ঘাটতিতে এমন হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
শনিবারের ঘটনার বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে তার কেনা টিকিট দেখিয়ে বলেন, জরুরি কাজে ঢাকায় যাওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু অনলাইনে ও স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট পাচ্ছিলাম না। পরে স্টেশনে এক কালোবাজারির কাছ থেকে গায়ের মূল্যের প্রায় দেড়গুণ দামে টিকিট কিনি। প্রথমে যাত্রীর নাম খেয়াল করিনি। পরে খেয়াল করে দেখে আমি তো অবাক।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, অনলাইনে আইডি খুলতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর, মোবাইল নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা লাগে। নিয়ম অনুযায়ী, অনলাইনে একটি আইডি থেকে সপ্তাহে চারবারের বেশি টিকিট কাটা যায় না। তবে কালোবাজারিরা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের একাধিক সিম এ কাজে ব্যবহার করে থাকেন। তারা এসব সিমের মাধ্যমে আইডি খোলেন। এ ক্ষেত্রে একই এনআইডি অথবা একাধিক এনআইডিও ব্যবহার করেন। ভুয়া নামে খোলা আইডির বিপরীতে টিকিট কেটে চড়া মূল্যে বিক্রি করেন। সফটওয়্যারে এনআইডি যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় কালোবাজারিরা সহজেই টিকিট কিনতে পারেন।
রেলওয়ের অনলাইনের সফটওয়্যারের সঙ্গে এনআইডির সার্ভারের লিংক থাকলে সহজেই এ অপতৎপরতা ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করেন সিলেট-আখাউড়া রেলপথে দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের পরিবহন পরিদর্শক তৌফিকুল আজীম। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের সুযোগ থাকলে সহজেই টিকিট ক্রেতার নাম-ঠিকানা যাচাই করা যাবে। কালোবাজারিরা আর অতিরিক্ত টিকিট কিনতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে কুলাউড়ার ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার রুমান আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, টিকিট বিক্রির সময় কাউন্টারের লোকজন অনেক সময় নাম-ঠিকানা সেভাবে যাচাই করতে পারেন না। আগে বুকিং থাকলে টাকা পরিশোধ করলে টিকিট দিয়ে দেন। আবার অনেক কালোবাজারি সহজ ডটকম থেকে কিনে নেন। পরে বেশি দামে বিক্রি করেন। এমন ঘটনা এই পথে হরহামেশাই ঘটে। এর আগে একবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামেও টিকিট কিনেছিলেন এক কালোবাজারি। তিনি বলেন, এটা চাইলে সহজ ডটকম খুব সহজেই সমাধান করতে পারে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সহজ ডটকমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে হিটস্ট্রোকে মাঠেই রিয়া আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে মঙ্গলবারের (৩০ মে) খেলায় সদর উপজেলার এক ছাত্রী মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নিহত রিয়া আক্তার কালিহাতীর ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলা ছিল। রিয়া মাঠে খেলতে নেমে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোঘণা করেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, মরদেহ সোমবারই দাফন করা হয়েছে। আমরা রিয়ার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে খেলতে গিয়ে মেয়েটি মারা গেছে। মঙ্গলবারের খেলায় সদর উপজেলার একটি মেয়ে মাঠে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টটি আগামী ১২ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রচণ্ড রোদে ছাত্রীদের খেলতে অসুবিধার বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
রিয়া আক্তারকে খেলতে নামতে বাধ্য করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজা উদ্দিন তালুকদার বলেন, এখনকার বাচ্চারা রোদের মধ্যে এ ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নয়। প্রচণ্ড রোদে হঠাৎ করে মাঠে খেলতে নামলে তাদের জীবন ঝুঁকি থাকে। রোদের তাপে অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। তাই রোদের মধ্যে এভাবে বাচ্চাদের দিয়ে খেলানো উচিত নয়। বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা দরকার।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
আকাশযাত্রা নিরাপদ ও শান্তিময় করাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুদের একমাত্র ব্রত। ফ্লাইট ছাড়ার পর মধ্য আকাশে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে যিনি স্মিত হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, স্যার আপনার সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলবেন, চা কফি, কিংবা অন্য কিছু? এরপর যারা খাবার দেবেন, আবার সুনিপুণভাবে সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাবেন, আপনার ঘুম পাড়ানোর জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করবেন, সেটাই কেবিন ক্রুদের পেশা।
তারাই কেবিন ক্রু। যারা উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত সময়টুকু সার্বক্ষণিক সেবা শুশ্রূষা নিশ্চিত করেন। ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ করলে কিংবা ঘরে অসুস্থ স্বজন রেখে আসলেও আপনার সামনে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। এটাই তাদের মূল দায়িত্ব। বিশ্বব্যাপী এটাকে বলা হয় ‘গ্লামার জব ইন দ্য স্কাই‘।
আজ ৩১ মে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস। কানাডা ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০১৫ সালে বিশ্বে প্রথম কেবিন ক্রু দিবস পালন করা হয়। প্রথম ৪৮০ জন কেবিন ক্রু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান সেবা প্রতিষ্ঠান- যেখানে কাজ করছেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও নবীন কেবিন ক্রু। যারা পরিবার আত্মীস্বজনকে দূরে রেখে বিভিন্ন উৎসব, ছুটি ও বিশেষ দিনেও নিজেদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ কর্মঘণ্টার বিপরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত। অতীতে বিমানের দেশে ও দেশের বাইরে জরুরি অবতরণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রুদের প্রচেষ্টায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে রাখা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও বিমান কেবিন ক্রুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া অসুস্থ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদান, আকাশপথে প্রসূতি যাত্রীদের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা ও গুরুতর আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর তারা রেখেছেন। আকাশপথে কেবিন ক্রুদের নিবিড় সেবায় অসংখ্যা অসুস্থ যাত্রী সুস্থতার সঙ্গে তাদের গন্তব্যে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য কেবিন ক্রু একটি অনন্য সাধারণ পেশা হিসেবে পরিচিত।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সীমিত পরিসরে বিশেষ আয়োজন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েন। এবার হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকায় তারা সীমিত করেছে সব কর্মসূচি। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম দস্তগীর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সমস্ত কেবিন ক্রুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এ উপলক্ষে আজ বুধবার কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েশন অফিসে একটি কেক কেটে সব সদস্যকে শুভ্চ্ছো জানানো হবে। দিবসটিতে তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় ও সবার কুশলাদি বিনিময় করে করোনার মাঝেও এই কঠিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সবাইকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত।
সুশিক্ষিত ও আলট্রা মডার্ন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহলও লক্ষ্যণীয়। বিমানে কেবিন ক্রুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দস্তগীর বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা অবশ্যই মর্যাদাসম্পন্ন পেশা। বিমান সেই মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। এখন আমাদের দাবি ২০১৮ সালের এডমিন অর্ডার অনুযায়ী আমাদের সকল সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রদান করা হোক।
কেবিন ক্রুদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে গোলাম দস্তগীর জানান, কেবিন ক্রুদের দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ফেস অব দ্য এয়ারলাইন হিসেবে। কারণ কেবিন ক্রুদের আচরণ ও পেশাদারিত্বই এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী ধরে রাখা এবং নতুন যাত্রীদের আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, লাস্ট লাইন অব দ্য ডিফেন্স হিসেবে। কারণ আকাশে উড্ডয়নের পরে যে কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কেবিন ক্রু ছাড়া আর কোনো সিকিউরিটি পার্সোনাল থাকেন না। সমগ্র পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব পেশা রয়েছে তন্মধ্যে কেবিন ক্রু অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রুরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় স্বল্প সুবিধা সংবলিত পরিবেশে কেবিন ক্রুরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
একজন ভ্রমণকারীর ভ্রমণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিরাপদ করে তোলাই কেবিন ক্রুদের মূল কর্তব্য। প্রতিটি সফল উড্ডয়ন ও অবতরণ একজন কেবিন ক্রুকে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ, রাজনৈতিক ভ্রমণ, চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশযাত্রা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই থাকেন কেবিন ক্রুদের ভ্রমণসঙ্গী। কেবিন ক্রুদের বলা হয়, ফার্স্ট রেসপনডার।
দস্তগীর বলেন, কেবিন ক্রুদের হার্টঅ্যাটাক, হাইপোক্সিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, হাইপোগ্লাসেমিয়া, হাইপারগ্লোসিমায়, চকিং, নোজ ব্লিডিং এবং প্রেগন্যান্ট ডেলিভারির দায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। পেশাদারিত্বের এই দক্ষতায় সত্যিকার অর্থেই আকাশ হয়ে উঠুক শান্তির নীড়। বিমান আকাশে ওড়ার একঘণ্টা আগে ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রুদের আবহাওয়া ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেয়।
এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, সি পকেট সংক্রান্ত তথ্য, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইক্যুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইড প্রভৃতি ঠিকঠাক আছে কিনা এসব কেবিন ক্রুদের দেখে নিতে হয়।
বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা, যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং বিমান আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীদের সিট বেল্ট লাগাতে বলাও কেবিন ক্রুদের কাজের পর্যায়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিমান ওঠানামা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পাইলটের হয় কেবিন ক্রুদের বলতে হয়। এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
আজ বুধবার বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’।
তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হবে। দিবসটি উদযাপন উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) প্রতিবছরের মত এবারও যথাযথ গুরুত্বের সাথে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়য়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য এবং সার্বিকভাবে গোটা জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতেও ভুমিকা রাখে তামাক। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের পিছনে সংঘাত-যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি তামাক চাষের একটি প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ।
অন্যদিকে পৃথিবীব্যাপী উৎকৃষ্ট মানের জমি ক্রমবর্ধমানহারে তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার একর। অথচ তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের ১.৩ শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। তামাকচাষের কারণে খাদ্য ফসলের জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে রবি মৌসুমের প্রধান খাদ্য ফসলগুলোর মধ্যে বোরো, গম এবং আলু অন্যতম এবং এ মৌসুমেই তামাক চাষ হয়ে থাকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই তামাক নিয়ন্ত্রণকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্তর্ভুক্ত (টার্গেট ৩এ) করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তামাকের সরবরাহ এবং চাহিদা কমিয়ে আনাই হতে পারে তামাকের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সঠিক উপায়।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে অতিরিক্ত যে লাভের কথা প্রচার করা হয়, তার প্রায় সবটাই বানোয়াট। আপাতদৃষ্টিতে তামাক চাষে বেশি আয় উপার্জন হলেও এই আয় থেকে পারিবারিক শ্রমের পারিতোষিক, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত নিজস্ব গাছের বা কাঠের দাম, পরিবেশের ক্ষতি, স্বাস্থ্য ব্যয় ইত্যাদি বাদ দিলে তামাক চাষে লাভের বদলে ক্ষতি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে নেট সোশ্যাল রিটার্ন ঋণাত্মক, প্রতি একরে ক্ষতি ৯১৬.১১ ডলার।
টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ বন নিধনের পেছনে তামাক চাষ দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার তিনটি উপজেলায় তামাকপাতা শুকানোর (কিউরিং) কাজে এক বছরেই প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি কাঠ ব্যবহৃত হয়েছে। স্থানীয় বন থেকে এইসব কাঠ সংগ্রহ করায় পাহাড়গুলো বৃক্ষহীন হয়ে পড়ছে এবং সেখানকার অধিবাসীরা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নিকটস্থ জলাশয়ে মিশে মৎস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, তামাক চাষের ক্ষতি থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্য তামাক কোম্পানিগুলো প্রায়শই নিজেদের অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করে। তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচির (সিএসআর) মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের ঘটানো ক্ষতি আড়াল করে এবং দায় এড়ানোর চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করণের মাধ্যমেই এসব ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।