
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন। সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে একনেকে নতুন প্রকল্প পাস না হলে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে ইভিএম প্রসঙ্গ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৈঠকে বুয়েট শিক্ষক প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী, তথ্য বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলামসহ প্রযুক্তিবিদরা অংশ নেন।
ইভিএম প্রকল্প খুব একটা এগোয়নি উল্লেখ করে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেছেন, প্রকল্পের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করব বলে আমরা বলেছিলাম। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পাস না হলে আমাদের কাছে বর্তমানে যা আছে, তাই দিয়েই ভোট করব। মধ্য জানুয়ারির মধ্যে নতুন প্রকল্প পাস না হলে ব্যালটে যেতে হবে। সেই প্রস্তুতিও নিতে হবে। টাইমলি হলে তো ভালো। না হলে যা আছে তা নিয়েই করব।
এ কমিশনার বলেন, এসব নীতিনির্ধারকদের (মন্ত্রণালয়/সরকার) সঙ্গে কথা হয়নি। এটার রীতিও নেই। ইসি সচিবালয় হয়তো কথা বলবে। আমাদের সক্ষমতা যা আছে, তাই করব। আমাদের সক্ষমতা তো জানামতে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করার মতো আছে। এখন কী আছে জানি না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের বিষয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, আরপিও বিল আকারে রেডি করছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমাদের কাছে পাঠাবে বলে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি ও সরবরাহের কাজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
বুয়েট অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেছেন, ইসির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত। অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই যাক না কেন, তাদের তো এ অভিজ্ঞতা নেই। কাজেই এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো উচিত এবং ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়া উচিত।
শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ডেটাবেজ যেখানেই থাকুক সব একেবারে আইডেন্টিক্যাল হতে হবে। এটায় দ্বিমত নেই। যদি আইডেন্টিক্যাল না থাকে এটা হাস্যকর হয়ে যাবে। এটা তো শিউর। এখন এটা কমিশনে আছে না অন্য কোথাও আছে, এটা তো মেটার করে না। কাজেই ভোটার তালিকার যে ডেটা নেওয়া হয় সেটা থেকেই এনআইডি হয়। বেসিক্যালি এখন ইভিএম হবে কি হবে না সেটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনা হয়েছে যে এই ডেটাগুলো অন্য কোথাও থাকলে ইভিএম ব্যবহারে কোনো ঝামেলা হবে কি না। টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে তো ঝামেলা হওয়ার কথা নয়। কারণ একই জিনিস। এখানে থাকুক আর অন্য কোথাও থাকুক।
তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে আমরা সবাই সেটা স্বীকার করে নিচ্ছি, অত্যন্ত সুন্দর একটা ডেটাবেজ আছে। ১৮ বছরের নিচে যারা আছে তাদের তথ্য নিতে চাচ্ছি। এখন কমিশন না অন্য কেউ নেবে এটা নিয়ে আলোচনা করেছি।
জাতীয় পরিচয়পত্রের মালিকানা রাষ্ট্রের বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী। তিনি বলেন, মালিকানা হচ্ছে রাষ্ট্র। সরকারই টাকা দিয়ে এটা (এনআইডি) তৈরি করেছে। টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে ইতিবাচক, নেতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত কমিশন বা সরকার নেবে। তারা আরও জানবেন বিষয়টা। তারপর আলোচনা করে বিষয়টা সিদ্ধান্ত নেবেন।
পুলিশের মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্টের দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন জামিন বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত। জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল রবিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশে গত ৪ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত ফখরুল ও আব্বাসের জামিননামা (বেইল বন্ড) না দিতে তাদের আইনজীবীদের যে আদেশ দিয়েছিল সেটি প্রত্যাহার (রিকল) করেছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে দুজনের জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টের দেওয়া রুল সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে আদেশপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছে আদালত।
আদেশের পর বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সাংবাদিকদের বলেন, নতুন কোনো মামলা না থাকলে ফখরুল-আব্বাসের কারামুক্তিতে বাধা নেই। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আদালত যে স্বাধীনভাবে বিচারকাজ করতে পারছে দুজনের জামিন বহালে তা প্রমাণ হলো।
অধস্তন আদালতে চারবার জামিনের আবেদন না-মঞ্জুরের পর গত ২ জানুয়ারি দুজনের পক্ষে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। গত ৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট ফখরুল-আব্বাসকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আদেশ দেয়। একই সঙ্গে কেন তাদের জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল দেয় আদালত। পরদিন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে ৪ জানুয়ারি আদেশে এ বিষয়ে রবিবার (গতকাল) শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠায় চেম্বার আদালত। তবে এই সময়ের দুজনের আইনজীবী কোনো জামিননামা দিতে পারবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি গতকাল শুনানিতে ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। ফখরুল-আব্বাসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আদেশের পর অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগ জামিনের যে আদেশটি দিয়েছে সেটি বহাল রয়েছে। লিখিত আদেশটি পেলে আমরা জামিননামা দাখিল করব। দুজনের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো মামলা নেই। কাজেই আমরা মনে করি জামিননামা দাখিলের পর তারা কারামুক্তি পাবেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তারা (বিএনপি ও দলটির আইনজীবীরা) সবার বিরুদ্ধে বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করেন। আদালতের বিরুদ্ধে তারা যে এই ধরনের কথা বলেন, আজকে কী প্রমাণ হলো? আজকে তো আপিল বিভাগ সাবমিশন গ্রহণ করে জামিন দিলেন।’
গত ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে মকবুল নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ফখরুল ও আব্বাসের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধানো ও পুলিশের ওপর হামলায় উসকানি দেওয়া ও ককটেল উদ্ধারের অভিযোগ করে পল্টন থানায় মামলা করে পুলিশ। এতে এ দুই শীর্ষ নেতাসহ দলটির ৪০০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ৮ ডিসেম্বর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে নয়াপল্টনের সংঘর্ষের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন ৯ ডিসেম্বর আদালত তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এরপর আরও তিনবার অধস্তন আদালতে দুজনের জামিন না-মঞ্জুর হয়। গত ২১ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চাইলে তা না-মঞ্জুর করে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ হত্যা মামলার একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি আমাতুল্লাহ বুশরাকে জামিন দিয়েছে আদালত। দুই মাস পর গতকাল রবিবার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসীন ইফতেখার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হওয়া পর্যন্ত বুশরার জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার একই আদালত শুনানি শেষে আদেশ অপেক্ষমাণ রাখে। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় আদেশের জন্য রবিবার (গতকাল) দিন ধার্য করে আদালত। আদালতে বুশরার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোখলেছুর রহমান বাদল ও রহমান হাওলাদার। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হুমায়ুন কবীর।
মামলার তদন্ত চলাকালে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন-অর-রশিদ গণমাধ্যমে জানান, ফারদিন হত্যা মামলায় বান্ধবী বুশরার সংশ্লিষ্টতা নেই, তবে বাকিটা আদালতের সিদ্ধান্ত। মামলার অভিযোগপত্রে বিষয়টি উল্লেখ করা হবে।
গত বছর ৪ নভেম্বর রাতে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বান্ধবী বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুশরাকে বাসায় এগিয়ে দিতে যান ফারদিন। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৯ নভেম্বর রাতে রামপুরা থানায় ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে ছেলে হত্যার অভিযোগ এনে বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় বেশ কয়েকজনের নামে একটি হত্যা মামলা করেন। পরদিন বুশরাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ওইদিন তাকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড শেষে ১৬ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ আসে আদালত থেকে। ইতিমধ্যে ডিবি ও র্যাব জানিয়েছে, হতাশা থেকে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারদিন।
প্রতি বছরই পুলিশ সপ্তাহে নানা বিষয়ে দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপ্রতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য কয়েকজন মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তারা দাবি তুলেছেন। বরাবরেই মতোই এবারো সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে। পুরনো দাবির পাশাপাশি নতুন কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে এবারের পুুলিশ সপ্তাহে। গতকাল রবিবার পুলিশ সপ্তাহ শেষ হয়। সেদিন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জোরালোভাবেই দাবি উত্থাপন করার পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তারা কেন দাবিগুলো পূরণ হচ্ছে না তা-ও জানতে চেয়েছেন বলে বাহিনীর একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩ শুরু হয়। ওই দিন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী পুুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের নিয়ে বিশেষ দরবারও করেন। পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেন। অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে জ্বালানি তেল ব্যবহার না কমানোর জন্য অনুরোধ জানান। তিনি পুলিশের সিভিল সদস্যদের জন্য ভাতা বাড়ানোরও অনুরোধ করেন। রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি শাহ আলম প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান, রেল পুলিশের নিজস্ব ভবন করার জন্য রেলের খালি জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য। দাবিগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। তিনি লিখিতভাবে প্রস্তাব দিতে বলেছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, শনিবার রাতে রাজারবাগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা বেশ কিছু নতুন দাবি উত্থাপন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাইবার সিকিউরিটি ও সামাজিক মাধ্যম ঘিরে অপরাধ ঠেকানোসহ শাস্তি নিশ্চিতে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি স্বতন্ত্র ইউনিট গঠনের দাবি করা হয়েছে। ইউনিটটির নাম হবে পুলিশ সাইবার ব্যুরো। পাশাপাশি পুলিশকে অধীন অধিদপ্তর আখ্যা না দিয়ে স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ গঠন, পুলিশের জন্য স্বতন্ত্র ইউনিভার্সিটি অব ক্রাইম অ্যান্ড সিকিউরিটি গঠন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ (ডিজি) ১০টি গ্রেড-১ পদ সৃজনের দাবি করা হয়েছে। সাইবার অপরাধ রোধ ও তদন্তে পুলিশের শুধু ডিএমপিতে আলাদা ইউনিট রয়েছে, কিন্তু জেলার কোথাও নেই। পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি অংশ কাজ করে থাকে। বৈঠকে বলা হয়, একজন অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে সাইবার ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। জেলায় নেতৃত্ব দেবেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তার অধীনে দুজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি), চারজন পরিদর্শক, আট উপপরিদর্শক (এসআই), ১৬ সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) থাকবে অপারেশনাল টিমে। এই বক্তব্যের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিব একমত পোষণ করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনা করে সমাধান করবেন।
ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, একজন ডিআইজি বৈঠকে প্রস্তাব করেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড, আনসার ব্যাটালিয়নের মূল দপ্তরকে বলা হয় সদর দপ্তর। কিন্তু পুলিশের সদর দপ্তরকে বলা হয় পুলিশ অধিদপ্তর। পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন করা হলে আইজিপি মন্ত্রণালয়ে বসেই সিনিয়র সচিবের ভূমিকা পালন করতে পারবেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানও অর্থ মন্ত্রণালয়ে বসে সিনিয়র সচিবের ভূমিকা পালন করেন। আইজিপির পদটি সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবও একই পদমর্যাদার। পুলিশের ছুটি, বদলির মতো কাজগুলো এখন জননিরাপত্তা বিভাগের মাধ্যমেই করা হয়। পুলিশের চাওয়া, এসব কাজ আইজিপির অধীনেই থাকুক। এতেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একমত পোষণ করে বলেন, সবাই বসে প্রস্তাবটি কীভাবে সমাধান করা যায়, সেই চেষ্টা করা হবে।
এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বৈঠকে বলেন, বিশে^র অন্যান্য দেশে নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশেও ফরেনসিক কিংবা সাইবার সিকিউরিটি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন, বিট পুলিশিং, জেন্ডার ইকুয়েলিটি পুলিশিংয়ের জন্য পুলিশ ইউনিভার্সিটি বা ইউনিভার্সিটি অব ক্রিমিনাল বা ক্রাইম অ্যান্ড সিকিউরিটি নামে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবি উত্থাপন করেন তিনি। তা ছাড়া আলাদা মেডিকেল কোর গঠন করারও দাবি করেন তিনি।
ওই পুলিশ সুপার মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন- প্রতি বছরই তারা নানা দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু এসব বাস্তবায়ন কেন হয় না। তিনি বলেন, শুধু আশ্বাসই দেওয়া হয়, এই আশ্বাসের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার জন্যও অনুরোধ জানান তিনি।
তা ছাড়া পার্বত্য এলাকায় তিনটি আলাদা এপিবিএন ব্যাটালিয়ন গঠন করারও দাবি এসেছে। ডিএমপি কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালকসহ পুলিশে সচিব পদমর্যাদার ১০টি গ্রেড-১ পদ দাবি করা হয়।
পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গতকাল দিনব্যাপী আইনমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। রাতে বৈঠক হয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে। আইনমন্ত্রীর কাছে দাবি করা হয়, মানি লন্ডারিং মামলা বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। পুলিশের সব কটি ইউনিট যেন এসব মামলা তদন্ত করতে পারে, সেই ব্যবস্থা যেন তিনি নেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আসলে আমরা শুধু দাবিই করে আসছি, নীতিনির্ধারকরা আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছেন। গত কয়েকটি পুলিশ সপ্তাহে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আশ্বাস পেয়ে আসছি আমরা। এবারও একই অবস্থা হয়েছে আমাদের।’
স্টেশন কাউন্টারে সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট না পেয়ে কালোবাজারে কেনেন এক শিক্ষার্থী। টিকিট পেয়েই ছাড়েন স্বস্তির নিশ্বাস। কিন্তু ভালো করে খেয়াল করেই চোখ কপালে ওঠে তার। টিকিটটি যে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নামে কাটা! নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষার্থী জানান, ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার বিকেলে কুলাউড়া স্টেশনে। অবশ্য ওই স্টেশনের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামেও টিকিট কাটার ঘটনা ঘটেছে। টিকিট বিক্রির সফটওয়্যারে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় ও অনলাইনে টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের আন্তরিকতার ঘাটতিতে এমন হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
শনিবারের ঘটনার বিষয়ে ওই শিক্ষার্থী দেশ রূপান্তরকে তার কেনা টিকিট দেখিয়ে বলেন, জরুরি কাজে ঢাকায় যাওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু অনলাইনে ও স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট পাচ্ছিলাম না। পরে স্টেশনে এক কালোবাজারির কাছ থেকে গায়ের মূল্যের প্রায় দেড়গুণ দামে টিকিট কিনি। প্রথমে যাত্রীর নাম খেয়াল করিনি। পরে খেয়াল করে দেখে আমি তো অবাক।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, অনলাইনে আইডি খুলতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর, মোবাইল নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা লাগে। নিয়ম অনুযায়ী, অনলাইনে একটি আইডি থেকে সপ্তাহে চারবারের বেশি টিকিট কাটা যায় না। তবে কালোবাজারিরা বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের একাধিক সিম এ কাজে ব্যবহার করে থাকেন। তারা এসব সিমের মাধ্যমে আইডি খোলেন। এ ক্ষেত্রে একই এনআইডি অথবা একাধিক এনআইডিও ব্যবহার করেন। ভুয়া নামে খোলা আইডির বিপরীতে টিকিট কেটে চড়া মূল্যে বিক্রি করেন। সফটওয়্যারে এনআইডি যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় কালোবাজারিরা সহজেই টিকিট কিনতে পারেন।
রেলওয়ের অনলাইনের সফটওয়্যারের সঙ্গে এনআইডির সার্ভারের লিংক থাকলে সহজেই এ অপতৎপরতা ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করেন সিলেট-আখাউড়া রেলপথে দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের পরিবহন পরিদর্শক তৌফিকুল আজীম। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের সুযোগ থাকলে সহজেই টিকিট ক্রেতার নাম-ঠিকানা যাচাই করা যাবে। কালোবাজারিরা আর অতিরিক্ত টিকিট কিনতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে কুলাউড়ার ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার রুমান আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, টিকিট বিক্রির সময় কাউন্টারের লোকজন অনেক সময় নাম-ঠিকানা সেভাবে যাচাই করতে পারেন না। আগে বুকিং থাকলে টাকা পরিশোধ করলে টিকিট দিয়ে দেন। আবার অনেক কালোবাজারি সহজ ডটকম থেকে কিনে নেন। পরে বেশি দামে বিক্রি করেন। এমন ঘটনা এই পথে হরহামেশাই ঘটে। এর আগে একবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামেও টিকিট কিনেছিলেন এক কালোবাজারি। তিনি বলেন, এটা চাইলে সহজ ডটকম খুব সহজেই সমাধান করতে পারে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সহজ ডটকমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
মহামারী করোনার প্রভাব কাটিয়ে যখন দেশ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা ঠিক ওই সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। এরপর থেকে দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাসে জনজীবন। এ পরিস্থিতিতে এবার গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোস্পানিগুলোতে। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব কিছুতে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে মধ্যবিত্তরা আরেক দফা খরচের খাতা টেনে ধরতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ১ টাকা ১০ পয়সা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। সেই হিসাবে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৩ পয়সা করার সুপারিশ করা হলো। এতে গড়ে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে ১৫ দশমিক ৪৩ ভাগ। গতকাল রবিবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনের শহীদ এ কে এম শামসুল হক খান অডিটরিয়ামে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি সংক্রান্ত গণশুনানিতে এ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিণতিতে আবারও দেশে সব জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে। এ সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে না বাড়ানোই উচিত হবে। বাজারের যে সার্বিক অবস্থা, গ্রাহক পর্যায়ে এখন বাড়ালে ভোক্তাদের ওপর দ্বিগুণ চাপ পড়বে।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে শুনানিতে পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতি টন কয়লার দাম ২৩০ ডলার এবং প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৭০ টাকা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। কিন্তু বিইআরসি পাইকারি মূল্যবৃদ্ধিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজেই এই মূল্য কাঠামো ধরে দাম বাড়ানো হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে না।
শুনানিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তাদের প্রস্তাবে জানায়, দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। একইভাবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২৩৪ কোটি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ১ হাজার ৫৫১ কোটি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা, নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ৫৩৫ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে দাবি করা হয়েছে। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) কোনো আর্থিক অঙ্ক দাঁড় না করালেও বলেছে, দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে।
রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা অর্ণব সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চার-পাঁচ বছর আগেও আমার দুই রুমের বাসায় বিদ্যুৎ বিল আসত ৪০০-৫০০ টাকা। গত দুই বছরে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এখন যদি আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তাহলে ২ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। ফলে পরিবহন ভাড়াসহ বাজারের সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এই মুহূর্তে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়লে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারে সংসার চালানো দায় হয়ে যাবে।
বছরের শুরুতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি আত্মঘাতী বলে মনে করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লে ২০২৩ সালের মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেওয়া হবে। বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইচ্ছামতো মুনাফা করার জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, সিস্টেম লস, অনিয়ম বন্ধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার। অন্যদিকে বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির ফলে জনগণের কষ্ট বাড়ছে।
তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুতের দামবৃদ্ধি করে যে টাকা আয় করবে তার কয়েকগুণ প্রভাব পড়বে। সরকারের ইন্টারনাল অনেক ধরনের ব্যয় আছে, সেটা অ্যাডজাস্ট করলেই মূল্যবৃদ্ধির বাইরে মোকাবিলা করা যায়। তিনি বলেন, করপোরেট ট্যাক্স সব সময় মুনাফা থেকে হয়। দাম বৃদ্ধি করে সেই টাকা সরকারকে দেওয়া হয়। আমরা বলেছি যে পরিমাণ করপোরেট ট্যাক্স সরকারকে দেবেন সেটা কমিয়ে দেন। তাহলে গ্রাহক পর্যায়ে একটা সমন্বয় হয়।
তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, বিতরণকারী সংস্থার প্রস্তাবের যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। বিইআরসি আইন-২০০৩ এর ৫৪ ধারায় আমাদের ভোক্তার যে সব অভিযোগ, তা নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে।
এদিকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বামজোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নিয়ম রক্ষার্থে গণশুনানি করে। কার্যত তারা সরকারের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যদিও এটা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। যখন পাইকারি পর্যায়ে বাড়িয়েছে তখন যদি ভোক্তা পর্যায়ে বাড়াত তাহলে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়বে বলে দাম বাড়ায়নি। এখন ঠিকই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। বর্তমান যে সংকট সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যেতে হবে। আমাদের যে গ্যাসক্ষেত্রগুলো আছে সেগুলোও সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে কাজে আসেনি। তিনি বলেন, বর্তমান আর্থিক সংকটে সরকার দায়িত্বশীল হলে জনগণের ঘাড়ের বোঝা কমানোর চেষ্টা করত। মানুষের সুবিধা-অসুবিধার দিকে তাদের কোনো নজর নেই। বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা প্রমাণ করেছেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধ করে বিদ্যুৎ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। অথচ এটি না করে জনগণের কাঁধে এই বোঝা চাপানো হচ্ছে।
বর্তমান চড়া মূল্যস্ফীতির সময়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচসহ সব জায়গায় এর প্রভাব পড়বে, যা বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের ওপর চাপানো হবে। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যৌক্তিক হবে না।’
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।