
ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে এটা বাণিজ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন এমন অভিযোগও আসছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের কাছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
সে কারণে বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের আশঙ্কা, সাধারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে না পারলে বাজারে পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এতে করে বাজারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি মুষ্টিমেয় আমদানিকারকের হাতে চলে যাবে। তারা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে ভোগান্তিতে ফেলার সুযোগ পাবে।
শবেবরাত, রমজান ও ঈদ উৎসবে চাহিদা বাড়ে এমন বেশিরভাগ পণ্য এখনো আমদানিনির্ভর। প্রতি বছর ধর্মীয় এসব আয়োজনের আগে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আমদানির প্রস্তুতি সেরে ফেলেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার অনুমতি পাচ্ছেন না।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন যে, এবার তাদের ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে অনেক ব্যাংক এলসি খোলার সুযোগ দিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছি বাংলাদেশ ব্যাংক একটা বিশেষ তহবিল খুলে ব্যবসায়ীদের এলসি খুলে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করুক। না হলে পণ্য সংকট হবে, দাম বেড়ে যাবে।’
সাধারণ ব্যবসায়ীরা না পেলেও প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আনছেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ব্যাংক তাদের তাদের বড় মাপের নিয়মিত হিসাবধারীদের বিশেষ কিছু সুবিধা সবসময়ই দিয়ে থাকে। তেলে মাথায় সবাই তেল দিতে চায়।’
এলসি খুলতে ব্যাংকের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকট আন্তর্জাতিক সমস্যা। চলমান সংকট আমাদের তৈরি না। শবেবরাত-রমজান-ঈদে পণ্য আনতে যে এলসি খুলতে চাইছে তাকেই দিতে চেষ্টা করছি। সবাইকে এখন না দিতে পারলেও আশা করছি প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়লে পারব।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বড় মাপের হিসাবধারীদের প্রতিটি ব্যাংকই ধরে রাখতে চায়। তাদের চাহিদামতো বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে।’ তবে ব্যাংকের দেওয়া সুবিধাও অনেকে অপব্যবহার করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমদানিকারকদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যার অধিকাংশ সুবিধাই গ্রহণ করেছেন বড় ব্যবসায়ীরা। এখন এলসির অর্থ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এতে ছোট ব্যবসায়ীরা পণ্য এনে বিক্রি করে দাম পরিশোধ করলেও বড় ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্য গুদামে রেখে দিচ্ছেন। এরপর বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বা শবেবরাত-রমজান-ঈদ এবং যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারে যখন চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে তখন বেশি দামে বিক্রি করছেন।’ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার দেওয়া সুবিধা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থগিত করা উচিত বলে জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকলেও শবেবরাত-রমজানে ৪০-৫০ হাজার টন লাগে। বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। এ সময়ে চাহিদা থাকে আড়াই থেকে তিন লাখ টনের মতো। সারা বছর ১৮ লাখ টন চিনির ৩ লাখ টনই লাগে শবেবরাত, রমজান ও ঈদে। সারা বছর ৫ লাখ টন মসুর ডালের মধ্যে শুধু রমজানে লাগে ৮০ হাজার টন। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার ৮০ শতাংশই লাগে রমজানে। বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের পাঁচ লাখ টনই দরকার হয় এ সময়ে। শবেবরাত-রমজান-ঈদে আরও চাহিদা বাড়ে গুঁড়ো দুধ, সব ধরনের মসলা, সেমাই, দেশি-বিদেশি ফল, পোলাওর চালসহ বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্যের। পোশাক, প্রসাধনী, জুতা-স্যান্ডেল, জুয়েলারি পণ্যেরও চাহিদা বাড়ে শবেবরাতের আগ থেকে ঈদ পর্যন্ত। এসব পণ্যের অনেকগুলো সম্পূর্ণ এবং কিছু পণ্যের বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর।
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বড় ব্যবসায়ীদের অনেকে ব্যাংকের মালিক। তাদের অনেকেই নিজস্ব ব্যংকের মাধ্যমে এলসি খুলেছেন। সব আমদানিকারকের তো আর নিজের ব্যাংক নেই। এসব ব্যবসায়ী ব্যাংকের বড় কর্তা বা মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলসি খুলছেন। তবে এ সংখ্যা কম।’ তার পরামর্শ হলো, সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কোন ধরনের পণ্য কারা আনছে, তা নজরদারিতে আনা। এ ছাড়া কিছু বড় ব্যবসায়ীকে এলসি খোলার অনুমতি না দিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের দেওয়া উচিত। এতে পণ্য আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়বে। বাজার মুষ্টিমেয় লোকের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকবে।
এখনই সরকারকে এ বিষয়ে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘কারও হাতে পণ্য মজুদ হয়ে গেলে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। অতীতে দেখা গেছে এমন পরিস্থিতিতে সরকার জিম্মি হয়ে পড়ে। সরকারকে এখনই রাজধানীকেন্দ্রিকতা ছেড়ে বিভাগীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের এলসি খুলে পণ্য আমদানির সুযোগ করে দিতে হবে।’
করোনার ক্ষতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তার প্রভাব দেশেও পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে আগ্রহী হচ্ছে না। সরকার ডলার সাশ্রয়ে বিলাস পণ্যসহ অনেক পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক হার বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্য আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটিও ছোট ব্যবসায়ীদের অসুবিধার কারণ।
প্রসাধনী ব্যবসায়ী জহিরুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরে দুই ঈদে প্রসাধনী সামগ্রীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয়। শবেবরাতের কয়েক মাস আগে থেকে এলসি খুলে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী আমদানি করি। শবেবরাতের পর থেকে দুই ঈদ পর্যন্ত বিক্রি করি। অথচ গত তিন মাস ধরে বহুবার একটি বেসরকারি ব্যাংকে গিয়ে এলসি খুলতে পারিনি।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ দোকান মালিক আছেন। তাদের মধ্যে অনেকই এলসি খুলে পণ্য আনেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘অনেক ব্যাংকের মালিক ব্যবসায়ী। এসব মালিকের অনেকে নিজে পণ্য না আনলেও অন্য ব্যবসায়ীদের নামে এলসি খুলে আমদানি করাচ্ছেন।’
হেলাল উদ্দিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এবারে পণ্য আনতে না পারায় মুষ্টিমেয় বড় ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বাজার নির্ভরশীল থাকবে। তারা ইচ্ছে করলেই দাম বাড়িয়ে দিতে পারবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, শবেবরাত, রমজান ও ঈদে চাহিদা বাড়ে এমন অনেক পণ্য আমদানির জন্য এখনো স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) চাল ও গম আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে দেশে এ দুই পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৩২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের। কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ১০৪ কোটি ৯৪ কোটি ডলার। একই সময়ে চাল আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গম আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি কমেছে ৬ শতাংশ এবং চিনি আমদানি কমেছে ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, কৃষি পণ্য আদমানিও কমেছে ব্যাপক হারে। এক বছরের ব্যবধানে কৃষি পণ্য আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। শুকনো খাবার আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
২০২২ সালের শেষ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অপরিশোধিত চিনির এলসি খোলার পরিমাণও আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন বীজ ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেল ৯৯ শতাংশ, ছোলা ৪৭ শতাংশ ও খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘এলসি খোলার বিষয়ে কিছু সমস্যা আছে। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। কেউ এলসি খুলতে চান, কিন্তু পারছেন না আমাদের জানালে আমরা ওই এলসির ব্যাপারে অনুরোধ করব।’
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন সরকারকে। তিনি বলেন, ‘না হলে পণ্য সংকট হবে, দাম বেড়ে যাবে।’
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে জাতির জনকের রক্তের ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমি বলেছিলাম এ দেশ স্বাধীন করে ছাড়ব, আজ দেশ স্বাধীন। তিনি বলেছিলেন, “রক্ত দিয়ে হলেও এ রক্তের ঋণ আমি শোধ করে যাব। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে, একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এ দেশের স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে বেঁচে থাকবে, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।” তিনি তার রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করে গেছেন, এখন আমাদের পালা।
আমাদের কর্তব্য তার রক্তের ঋণ শোধ করা। যেদিন গৃহহীন গৃহ পাবে, দেশের মানুষকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব। সেটা হবে রক্তের ঋণ শোধ করা।’
গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সংসদে আনা একটি সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি-১৪৭ ধারায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন সরকারি দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও নুরুল ইসলাম নাহিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও রওশন আরা মান্নান।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শপথ করছি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। সেটাই হবে জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করা। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গেছেন। জিডিপি ৯ শতাংশ নিয়ে গিয়েছিলেন। কেউ এখনো তা স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে ৮ শতাংশ পর্যন্ত নিতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু, ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র তিন বছর পর ১৯৭৩ সালে তিনি নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্য, মানুষের উন্নয়ন। তিনি চেয়েছিলেন দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃৃদ্ধ দেশ। এ দেশের মানুষ যাতে দুই বেলা দুই মুঠো ভাত-ডাল খেয়ে বেঁচে থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন এরশাদ, জিয়া, মোশতাক। কই তারা তো মানুষের উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন করে যেতে পারেননি। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষ খেতে পায়, দেশের উন্নয়ন করে চলেছে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুট্টো তার নিজের স্বার্থে টিকে থাকার জন্য এবং ভারতীয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রধানদের পাকিস্তানকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টির কথা বলেন। তারপরই ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। তিনি প্রথমেই লন্ডনে যান। ১০ জানুয়ারি তিনি ভারত ঘুরে দেশে ফিরে এসে প্রথমে পরিবারের কাছে না গিয়ে জনগণের কাছে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি থাকেন। তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য কারাগারে কবর খোঁড়াও হয়। তবে আমাদের এ যুদ্ধ কিন্তু জনযুদ্ধ ছিল। ভারতের মিত্রবাহিনীও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, হাজার হাজার ভারতীয় সেনাও মারা যান।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ ও দেশের মানুষ বড় ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস না হারাতে। সেই আপন ভাবা মানুষই তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করে।’
ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয় : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়। কেননা দলটি জনগণের জন্য কাজ করে। তিনি গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন।
সরকার পতনের চেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি-জামায়াত চক্রের দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার তাদের সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান সব এক জায়গায় হয়ে ক্ষমতা থেকে নাকি আমাদের উৎখাত করবে।’ খবর বাসসের।
বিএনপির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, বারবার যারা জনগণ দ্বারা বিতাড়িত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা আবার গণতন্ত্রের চর্চা করল কবে। তাদের নিজেদের মধ্যেই তো গণতন্ত্র নেই। খালেদা জিয়ার অধীনে দুটি নির্বাচন, একটি ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির, আরেকটি ২০০৬ সালের ৬ জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তারা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে দেশে-বিদেশে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বসে সারা দিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ নিয়ে। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ঠেকাতে পারে আওয়ামী লীগ। কেউ যদি ভোট চুরি করে, তাকে ক্ষমতার থেকে হঠাতে আওয়ামী লীগই পারে, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বারবার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্রের চর্চা আমরা নিজের দলে যেমন করি, দেশেও গণতন্ত্রের চর্চা করি। আজকের নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, ইভিএম এসবই তো আমরা চালু করেছি, যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোটটা দিতে পারে। স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে যেটা রেজাল্ট আসবে সেটাই আসল নির্বাচন’। তিনি বলেন, এটা সবার মনে রাখা উচিত যে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন ওঠায় না, প্রশ্ন ওঠাতে পারে না। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলেই হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা কয়টা আসন পেয়েছিল? ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯টি, আর উপনির্বাচনে একটি মিলিয়ে ৩০টি আসন। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বার্থে এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করে, জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে বলেই আজ জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশাআল্লাহ অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি আজ বুধবার। সারা দেশে যুগপৎ এই কর্মসূচির মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মাঠে থাকছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে সারা দিন মিছিল-সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবে দলটির সব স্তরের নেতাকর্মীরা। এতে করে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়েছে। সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। আওয়ামী লীগের পাল্টা মাঠে নামার ঘোষণায় বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের কর্মসূচির দিন দলটি কোনো কর্মসূচি রাখছে না। কিন্তু সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়, এর দায় তাদের নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপিকে বিশ্বাস করা যায় না। বিএনপি সুযোগ পেলেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ঘটিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। সেই অবিশ্বাসের জায়গা থেকে বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে সবখানেই পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। মাঠে সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোও পৃথকভাবে বৈঠক করে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি সবসময়ই জনগণের ও দেশের বিরুদ্ধ অবস্থানে থাকে। তাদের বিশ্বাস করা যায় না। তারা যেকোনো সময়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাই আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে। এতে উত্তাপ ছড়াবে কি না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কী করবে তা বলা মুশকিল। ফলে দেশের ও জনগণের পাহারাদার হিসেবে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার সব জায়গায় আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।’
বিএনপির যুগপৎ গণ-অবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাদের (বিএনপি) সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান, সব ‘অতি’রা এক হয়ে গেছে। আতিপাতি নেতা হয়ে একেবারে আমাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাতই করবে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ একেবারেই পড়ে গেল। এত সহজ নয়।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সবসময়ই দেশের মানুষের ভেতরে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। বিএনপি মূলত ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ধারক-বাহক। ফলে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করার।’
বিএনপির শীর্ষ নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্যান্য সময় কর্মসূচির তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ধড়পাকড় বেড়ে যেত তবে এবার তা যৎসামান্য। গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারা বলেন, গণ-অবস্থান কর্মসূচি থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিনে সারা দেশে জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যেদিন কার্যকর হবে সেদিন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর।
গণ-অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় পরবর্তী সময়ে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের প্রস্তাব দিতে বলেছেন। সদস্যরা নিজ নিজ প্রস্তাব দিয়েছেন। দলের হাইকমান্ড অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।’
আওয়ামী লীগ মাঠে থাকার ঘোষণায় রাজপথ উত্তপ্ত হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করি। আমাদের গণ-অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে তা আমি নিশ্চিত করতে পারি। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, একদলীয় শাসন কায়েমের বিষয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য ২৫ জানুয়ারি জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ অথবা গণ-অবস্থান কর্মসূচি আসতে পারে।
বিএনপির সমমনা জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলে আগামী ১৬/১৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচির প্রস্তাব রেখেছেন। বিএনপি অন্যান্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে। গণ-অবস্থান কর্মসূচি শেষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পৃথকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবে সবাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপিতে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
গণতন্ত্র মঞ্চ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির কাছে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন প্রীতম হোটেলের উল্টো দিকে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কারওয়ান বাজার এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণফোরাম মতিঝিলের আরামবাগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্ব প্রান্তে অবস্থান নেবে।
এছাড়া সিলেট বিভাগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রাজশাহী বিভাগে স্থায়ী কমিটি সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান, ময়মনসিংহে নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে সেলিমা রহমান, রংপুরে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কুমিল্লায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, খুলনায় ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ফরিদপুরে বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান।
উল্লেখ করার মতো ধরপাকড় নেই : গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে সামনে রেখে ধরপাকড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের মতো ধরপাকড় নেই খুব একটা। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহে গতকাল দুজনকে এবং মুন্সীগঞ্জে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণ-অবস্থান কর্মসূচির স্থান বরাদ্দে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টালবাহানা করলেও শেষ পর্যন্ত খুলনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপিতে বিএনপির প্রতিনিধিদল : গণ-অবস্থান কর্মসূচির অনুমতির জন্য গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। কর্মসূচির বিষয়ে ডিএমপি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে রাতে দেশ রূপান্তরকে জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
অপেক্ষা ও ব্যয় দুই-ই বাড়ছে দেশের প্রথম টানেল সড়ক বঙ্গবন্ধু টানেলে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ফার্নিচার কেনা, দুই প্রান্তে দুটি পুলিশ ক্যাম্প, ভ্যাটবৃদ্ধি ও ডলারের দাম বাড়ায় শেষ সময়ে এ মেগা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৩১৫ কোটি টাকা; সঙ্গে সময়ও বাড়ছে এক বছর। প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব আগামী ১৭ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটি ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার; যেখানে সরকারের অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের প্রকল্প ঋণ ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এটি একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। পরে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয়। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আবারও এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ানো হচ্ছে। চুক্তিকালের তুলনায় বর্তমানে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু বিভাগ জানায়, বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে পরিবর্তনের কারণে ব্যয়বৃদ্ধি, কয়েকটি খাতে কাজের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধি এবং ঋণ প্রদানকারী সংস্থার (চায়না এক্সিম ব্যাংক) প্রদানকৃত অর্থের ডলারের সঙ্গে মূল্য অবমূল্যায়ন, চুক্তি নবায়ন প্রভৃতি কারণে প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেতু বিভাগ থেকে মোট প্রকল্পব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা অর্থাৎ অনুমোদিত ব্যয় থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পটির একজন উপপরিচালক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, টানেলের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তবে ব্যয় বাড়ছে মূলত ডলারের দাম বাড়ার কারণে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যখন চুক্তি করা হয়, তখন ডলারের মূল্য ছিল ৮০ টাকা; এখন ১০৬ টাকা। তিনি বলেন, আনোয়ারার দুই প্রান্তের মানুষের যোগাযোগের কথা বিবেচনায় নতুন করে অ্যাপ্রোচ সড়ক যুক্ত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনের ব্যাখ্যা হিসেবে সেতু বিভাগ বলছে, পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতিতে টানেল নির্মাণ খাতে মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয় করার জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপির প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে সংস্থান ৪৯৪ কোটি টাকা বাড়ানো হয়, যা দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে প্রতিফলন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সেতু বিভাগ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের জন্য অবশিষ্ট ১ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার ডলার সমপরিমাণ ১১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সরকারি খাতে সংস্থান রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশি টাকা ও মার্কিন ডলারের বিনিময় হারে তারতম্যের কারণে ডিপিএ-তে বরাদ্দকৃত ৬৯ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্পের মূল কন্ট্রাক্ট থেকে কিছুক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে কার্যক্রমের পরিধি পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন টানেলের অ্যাপ্রোচ সড়ক গ্রেডে ডিজাইন করা হয়েছিল, পরে স্থানীয় চাহিদার প্রেক্ষাপটে গ্রেড সেপারেটেড সড়ক ডিজাইন করা হয়। এ ছাড়াও আন্ডারপাস, সার্ভিস রোড প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিমাণ ও ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে; যার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।
তারা বলছে, এ ব্যয় বাড়ার আরেকটি কারণ সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিকসামগ্রী, আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জাসামগ্রী ক্রয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী সার্ভিস এরিয়া ফ্যাসিলিটির আওতায় বিভিন্ন আইটেম বাবদ ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার সংস্থান আছে, যা সিভিল কাজের জন্য পর্যাপ্ত। সার্ভিস এরিয়া ফিট-আউট করার নিমিত্তে ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক আইটেম, টেক্সটাইল, কাটলারিজ/ক্রোকারিজ আইটেম প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সার্ভিস এরিয়ার সরকারি খাত থেকে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দুই প্রান্তে দুটি দোতলাবিশিষ্ট পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার স্টেশনের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ২২ কোটি টাকা।
প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ভ্যাট ও আইটির জন্য ১৩ শতাংশ হারে সংস্থান রাখা হয়েছিল। পরে এ হার পর্যায়ক্রমে বেড়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এই ১৫ শতাংশ হার অনুযায়ী অবশিষ্ট চুক্তিমূল্যের ওপর ভ্যাট ও আইটি খাতে সংস্থান রাখার জন্য ব্যয় বেড়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের ছেলের বউভাতে কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার ২৬৫ বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে শিক্ষকদের যোগদান বাধ্যতামূলক, চাঁদা তুলে উপহার দেওয়া এবং তা গ্রহণের ঘটনা ন্যক্কারজনক বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রীসহ জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
এ ঘটনা দেশের শিক্ষা খাতকে দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ধ্বংস করার শামিল মনে করছে সংস্থাটি। তারা এই ভয়াবহ দৃষ্টান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিকশিত দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতে জিম্মি অবস্থার চরম উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত কুড়িগ্রামের এই ঘটনা। প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না।’ টিআইবি মনে করে, প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের তিন দিন সংরক্ষিত ছুটির সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির জন্য সংরক্ষিত এই ছুটি এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহারের সুযোগ আছে কি না, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এতগুলো বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে কারও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও বাধ্যতামূলক জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে উপহার দেওয়ার ঘটনা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সক্রিয় যোগসাজশ না থাকলে কোনো অবস্থাতেই ঘটতে পারত না। প্রতিমন্ত্রী ও তার পরিবার এই উপহার গ্রহণ করে যে ন্যক্কারজনক মানসিকতার পরিচয় দিলেন, তার ব্যাখ্যা কী? আর এই পুরো ঘটনার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা না হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎই বা কী! সরকারের উচিত জনগণের, বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে তা ব্যাখ্যাসহ প্রকাশ করা।
গত রবিবার কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার ২৬৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে উপহারসহ শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে অংশ নেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগারের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়ে বিচারকাজ বিঘি্নত করার অভিযোগে জেলা আইনজীবী সমিতির ২১ আইনজীবীকে তলব করেছে উচ্চ আদালত। ২৩ জানুয়ারি জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুলসহ ২১ আইনজীবীকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে না তা জানতে রুল দিয়েছে আদালত। বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এ আদেশ দেন। গত ২ জানুয়ারি জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ)
মোহাম্মদ ফারুক ও আদালতের কর্মচারীদের সঙ্গে আইনজীবীদের অশালীন আচরণ, গালিগালাজ, হুমকি ও এজলাসে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা বারের সভাপতি ও অন্য আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর চিঠি পাঠান বিচারক মোহাম্মদ ফারুক। অভিযোগটি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপনের পর প্রধান বিচারপতি বিষয়টি হাইকোর্টের এ বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক আদেশে ১৭ জানুয়ারি জেলা বারের সভাপতি মো. তানভীর ভূঞা, সহ-সম্পাদক মো. আক্কাস আলীসহ তিন আইনজীবীকে হাইকোর্টে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে তলব করে। আইনজীবীদের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে গত কয়েক দিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের বিচারকাজে অচলাবস্থা চলছে।
গত সোমবার বিচারক শারমিন নিগার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়ে একটি চিঠি দেন। এতে তিনি বলেন, হাইকোর্ট আদালত অবমাননার রুল জারি করায় তারা (আইনজীবীরা) আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৫ ও ৮ জানুয়ারি তারিখে এজলাস চলাকালীন কতিপয় আইনজীবী তার বিরুদ্ধে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ সেøাগান দেন। এতে বিচারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ ও বিঘিœত করাসহ মানহানি করার অভিযোগ করেন।
বেঞ্চের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তুষার কান্তি রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, অভিযোগটি প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপনের পর বিষয়টি হাইকোর্টের এ বেঞ্চে পাঠান প্রধান বিচারপতি। এর ধারাবাহিকতায় আদালত ২১ আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুলসহ তাদের তলব করে আদেশ দেন।
দুই জজের অপসারণ দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবীদের আরও তিন দিনের কর্মবিরতি চলছে : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নিযার্তন দমন ট্রাব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক এবং আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আইনজীবীদের চলমান আদালত বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। গতকালও কোনো আইনজীবী আদালতে কোনো প্রকার শুনানিতে অংশ নেননি। আইনজীবী সমিতির সোমবারের ঘোষণাকৃত তিন কর্মদিবসের কর্মবিরতির গতকাল ছিল প্রথম দিন। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে এ আন্দোলন। আইনজীবী সমিতির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবীরা তাদের আন্দোলন চালানোর পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনকি গতকাল আইনজীবী সমিতির সিনিয়র নেতারা ঢাকায় সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।