
মাংস বিক্রেতাদের অনুমতিপত্র বা লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এই অনুমতিপত্র নিতে ১৫ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। জবাইখানা, মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন ও পরিচালনার জন্যও অনুমতিপত্র নিতে হবে; যা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এই সিদ্ধান্তকে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন মাংস ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এটি বাস্তবায়ন হলে ভোক্তার পকেট থেকেই এই টাকা কেটে রাখা হবে।
গত ২৮ ডিসেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, মাংস বা মাংসজাত পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ প্রতি সপ্তাহে এক টনের নিচে হলে আবেদন ফি এক হাজার, অনুমতিপত্রের ফি ১৫ হাজার ও নবায়ন ফি দেড় হাজার টাকা দিতে হবে। এক টনের বেশি কিন্তু আট টনের নিচে হলে আবেদন ফি দুই হাজার, অনুমতিপত্রের ফি ২৫ হাজার ও নবায়ন ফি সাড়ে সাত হাজার টাকা লাগবে। আর আট টন বা তার বেশি হলে আবেদন ফি তিন হাজার, অনুমতিপত্রের ফি ৭০ হাজার ও নবায়ন ফি ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আমল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জারি করা নতুন নীতিমালার বিষয়ে আমরা অবগত নই। আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে দেশের সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ এমনিতে ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। ভারত থেকে চোরাই পথে আসা মানহীন মাংস দেশের সব হোটেল রেস্তোরাঁয় বিক্রি হচ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই। একইভাবে সরকারের আমলাদের একপক্ষীয় সিদ্ধান্তের কারণে দেশের চামড়াশিল্প ধ্বংসের পথে। আমাদের সঙ্গে তারা আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করে না। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ গরু জবাই হয়। কিন্তু তার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আমাদের চামড়াশিল্প আমদানিনির্ভর হয়ে পড়েছে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জারি করা নীতিমালার পরিবর্তন না এলে ভোক্তার পকেট থেকে টাকা আদায়ের হুঁশিয়ারি দিয়ে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘পকেটের টাকা দিয়ে ব্যবসা করে লস দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের পকেট কেটে সরকার ও হাট ইজারাদার যে টাকা নেবে, আমরা ভোক্তার পকেট কেটে সেই টাকা উত্তোলন করব।’
ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে এটা বাণিজ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন এমন অভিযোগও আসছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের কাছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
সে কারণে বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের আশঙ্কা, সাধারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে না পারলে বাজারে পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এতে করে বাজারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি মুষ্টিমেয় আমদানিকারকের হাতে চলে যাবে। তারা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে ভোগান্তিতে ফেলার সুযোগ পাবে।
শবেবরাত, রমজান ও ঈদ উৎসবে চাহিদা বাড়ে এমন বেশিরভাগ পণ্য এখনো আমদানিনির্ভর। প্রতি বছর ধর্মীয় এসব আয়োজনের আগে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আমদানির প্রস্তুতি সেরে ফেলেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার অনুমতি পাচ্ছেন না।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন যে, এবার তাদের ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে অনেক ব্যাংক এলসি খোলার সুযোগ দিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছি বাংলাদেশ ব্যাংক একটা বিশেষ তহবিল খুলে ব্যবসায়ীদের এলসি খুলে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করুক। না হলে পণ্য সংকট হবে, দাম বেড়ে যাবে।’
সাধারণ ব্যবসায়ীরা না পেলেও প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আনছেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ব্যাংক তাদের তাদের বড় মাপের নিয়মিত হিসাবধারীদের বিশেষ কিছু সুবিধা সবসময়ই দিয়ে থাকে। তেলে মাথায় সবাই তেল দিতে চায়।’
এলসি খুলতে ব্যাংকের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকট আন্তর্জাতিক সমস্যা। চলমান সংকট আমাদের তৈরি না। শবেবরাত-রমজান-ঈদে পণ্য আনতে যে এলসি খুলতে চাইছে তাকেই দিতে চেষ্টা করছি। সবাইকে এখন না দিতে পারলেও আশা করছি প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়লে পারব।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বড় মাপের হিসাবধারীদের প্রতিটি ব্যাংকই ধরে রাখতে চায়। তাদের চাহিদামতো বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে।’ তবে ব্যাংকের দেওয়া সুবিধাও অনেকে অপব্যবহার করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমদানিকারকদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যার অধিকাংশ সুবিধাই গ্রহণ করেছেন বড় ব্যবসায়ীরা। এখন এলসির অর্থ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এতে ছোট ব্যবসায়ীরা পণ্য এনে বিক্রি করে দাম পরিশোধ করলেও বড় ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্য গুদামে রেখে দিচ্ছেন। এরপর বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বা শবেবরাত-রমজান-ঈদ এবং যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারে যখন চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে তখন বেশি দামে বিক্রি করছেন।’ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার দেওয়া সুবিধা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থগিত করা উচিত বলে জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকলেও শবেবরাত-রমজানে ৪০-৫০ হাজার টন লাগে। বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। এ সময়ে চাহিদা থাকে আড়াই থেকে তিন লাখ টনের মতো। সারা বছর ১৮ লাখ টন চিনির ৩ লাখ টনই লাগে শবেবরাত, রমজান ও ঈদে। সারা বছর ৫ লাখ টন মসুর ডালের মধ্যে শুধু রমজানে লাগে ৮০ হাজার টন। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার ৮০ শতাংশই লাগে রমজানে। বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের পাঁচ লাখ টনই দরকার হয় এ সময়ে। শবেবরাত-রমজান-ঈদে আরও চাহিদা বাড়ে গুঁড়ো দুধ, সব ধরনের মসলা, সেমাই, দেশি-বিদেশি ফল, পোলাওর চালসহ বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্যের। পোশাক, প্রসাধনী, জুতা-স্যান্ডেল, জুয়েলারি পণ্যেরও চাহিদা বাড়ে শবেবরাতের আগ থেকে ঈদ পর্যন্ত। এসব পণ্যের অনেকগুলো সম্পূর্ণ এবং কিছু পণ্যের বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর।
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বড় ব্যবসায়ীদের অনেকে ব্যাংকের মালিক। তাদের অনেকেই নিজস্ব ব্যংকের মাধ্যমে এলসি খুলেছেন। সব আমদানিকারকের তো আর নিজের ব্যাংক নেই। এসব ব্যবসায়ী ব্যাংকের বড় কর্তা বা মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলসি খুলছেন। তবে এ সংখ্যা কম।’ তার পরামর্শ হলো, সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কোন ধরনের পণ্য কারা আনছে, তা নজরদারিতে আনা। এ ছাড়া কিছু বড় ব্যবসায়ীকে এলসি খোলার অনুমতি না দিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের দেওয়া উচিত। এতে পণ্য আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়বে। বাজার মুষ্টিমেয় লোকের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকবে।
এখনই সরকারকে এ বিষয়ে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘কারও হাতে পণ্য মজুদ হয়ে গেলে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। অতীতে দেখা গেছে এমন পরিস্থিতিতে সরকার জিম্মি হয়ে পড়ে। সরকারকে এখনই রাজধানীকেন্দ্রিকতা ছেড়ে বিভাগীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের এলসি খুলে পণ্য আমদানির সুযোগ করে দিতে হবে।’
করোনার ক্ষতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তার প্রভাব দেশেও পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে আগ্রহী হচ্ছে না। সরকার ডলার সাশ্রয়ে বিলাস পণ্যসহ অনেক পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক হার বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্য আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটিও ছোট ব্যবসায়ীদের অসুবিধার কারণ।
প্রসাধনী ব্যবসায়ী জহিরুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরে দুই ঈদে প্রসাধনী সামগ্রীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয়। শবেবরাতের কয়েক মাস আগে থেকে এলসি খুলে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী আমদানি করি। শবেবরাতের পর থেকে দুই ঈদ পর্যন্ত বিক্রি করি। অথচ গত তিন মাস ধরে বহুবার একটি বেসরকারি ব্যাংকে গিয়ে এলসি খুলতে পারিনি।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ দোকান মালিক আছেন। তাদের মধ্যে অনেকই এলসি খুলে পণ্য আনেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘অনেক ব্যাংকের মালিক ব্যবসায়ী। এসব মালিকের অনেকে নিজে পণ্য না আনলেও অন্য ব্যবসায়ীদের নামে এলসি খুলে আমদানি করাচ্ছেন।’
হেলাল উদ্দিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এবারে পণ্য আনতে না পারায় মুষ্টিমেয় বড় ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বাজার নির্ভরশীল থাকবে। তারা ইচ্ছে করলেই দাম বাড়িয়ে দিতে পারবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, শবেবরাত, রমজান ও ঈদে চাহিদা বাড়ে এমন অনেক পণ্য আমদানির জন্য এখনো স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) চাল ও গম আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে দেশে এ দুই পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৩২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের। কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ১০৪ কোটি ৯৪ কোটি ডলার। একই সময়ে চাল আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গম আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি কমেছে ৬ শতাংশ এবং চিনি আমদানি কমেছে ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, কৃষি পণ্য আদমানিও কমেছে ব্যাপক হারে। এক বছরের ব্যবধানে কৃষি পণ্য আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। শুকনো খাবার আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
২০২২ সালের শেষ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অপরিশোধিত চিনির এলসি খোলার পরিমাণও আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন বীজ ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেল ৯৯ শতাংশ, ছোলা ৪৭ শতাংশ ও খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘এলসি খোলার বিষয়ে কিছু সমস্যা আছে। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। কেউ এলসি খুলতে চান, কিন্তু পারছেন না আমাদের জানালে আমরা ওই এলসির ব্যাপারে অনুরোধ করব।’
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন সরকারকে। তিনি বলেন, ‘না হলে পণ্য সংকট হবে, দাম বেড়ে যাবে।’
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে জাতির জনকের রক্তের ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমি বলেছিলাম এ দেশ স্বাধীন করে ছাড়ব, আজ দেশ স্বাধীন। তিনি বলেছিলেন, “রক্ত দিয়ে হলেও এ রক্তের ঋণ আমি শোধ করে যাব। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে, একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এ দেশের স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে বেঁচে থাকবে, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।” তিনি তার রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করে গেছেন, এখন আমাদের পালা।
আমাদের কর্তব্য তার রক্তের ঋণ শোধ করা। যেদিন গৃহহীন গৃহ পাবে, দেশের মানুষকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব। সেটা হবে রক্তের ঋণ শোধ করা।’
গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সংসদে আনা একটি সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি-১৪৭ ধারায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন সরকারি দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও নুরুল ইসলাম নাহিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও রওশন আরা মান্নান।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শপথ করছি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। সেটাই হবে জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করা। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গেছেন। জিডিপি ৯ শতাংশ নিয়ে গিয়েছিলেন। কেউ এখনো তা স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে ৮ শতাংশ পর্যন্ত নিতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু, ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র তিন বছর পর ১৯৭৩ সালে তিনি নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্য, মানুষের উন্নয়ন। তিনি চেয়েছিলেন দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃৃদ্ধ দেশ। এ দেশের মানুষ যাতে দুই বেলা দুই মুঠো ভাত-ডাল খেয়ে বেঁচে থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন এরশাদ, জিয়া, মোশতাক। কই তারা তো মানুষের উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন করে যেতে পারেননি। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষ খেতে পায়, দেশের উন্নয়ন করে চলেছে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুট্টো তার নিজের স্বার্থে টিকে থাকার জন্য এবং ভারতীয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রধানদের পাকিস্তানকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টির কথা বলেন। তারপরই ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। তিনি প্রথমেই লন্ডনে যান। ১০ জানুয়ারি তিনি ভারত ঘুরে দেশে ফিরে এসে প্রথমে পরিবারের কাছে না গিয়ে জনগণের কাছে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি থাকেন। তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য কারাগারে কবর খোঁড়াও হয়। তবে আমাদের এ যুদ্ধ কিন্তু জনযুদ্ধ ছিল। ভারতের মিত্রবাহিনীও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, হাজার হাজার ভারতীয় সেনাও মারা যান।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ ও দেশের মানুষ বড় ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস না হারাতে। সেই আপন ভাবা মানুষই তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করে।’
ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয় : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়। কেননা দলটি জনগণের জন্য কাজ করে। তিনি গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন।
সরকার পতনের চেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি-জামায়াত চক্রের দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার তাদের সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান সব এক জায়গায় হয়ে ক্ষমতা থেকে নাকি আমাদের উৎখাত করবে।’ খবর বাসসের।
বিএনপির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, বারবার যারা জনগণ দ্বারা বিতাড়িত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা আবার গণতন্ত্রের চর্চা করল কবে। তাদের নিজেদের মধ্যেই তো গণতন্ত্র নেই। খালেদা জিয়ার অধীনে দুটি নির্বাচন, একটি ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির, আরেকটি ২০০৬ সালের ৬ জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তারা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে দেশে-বিদেশে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বসে সারা দিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ নিয়ে। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ঠেকাতে পারে আওয়ামী লীগ। কেউ যদি ভোট চুরি করে, তাকে ক্ষমতার থেকে হঠাতে আওয়ামী লীগই পারে, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বারবার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্রের চর্চা আমরা নিজের দলে যেমন করি, দেশেও গণতন্ত্রের চর্চা করি। আজকের নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, ইভিএম এসবই তো আমরা চালু করেছি, যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোটটা দিতে পারে। স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে যেটা রেজাল্ট আসবে সেটাই আসল নির্বাচন’। তিনি বলেন, এটা সবার মনে রাখা উচিত যে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন ওঠায় না, প্রশ্ন ওঠাতে পারে না। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলেই হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা কয়টা আসন পেয়েছিল? ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯টি, আর উপনির্বাচনে একটি মিলিয়ে ৩০টি আসন। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বার্থে এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করে, জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে বলেই আজ জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশাআল্লাহ অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি আজ বুধবার। সারা দেশে যুগপৎ এই কর্মসূচির মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মাঠে থাকছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে সারা দিন মিছিল-সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবে দলটির সব স্তরের নেতাকর্মীরা। এতে করে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়েছে। সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। আওয়ামী লীগের পাল্টা মাঠে নামার ঘোষণায় বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের কর্মসূচির দিন দলটি কোনো কর্মসূচি রাখছে না। কিন্তু সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়, এর দায় তাদের নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপিকে বিশ্বাস করা যায় না। বিএনপি সুযোগ পেলেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ঘটিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। সেই অবিশ্বাসের জায়গা থেকে বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে সবখানেই পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। মাঠে সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোও পৃথকভাবে বৈঠক করে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি সবসময়ই জনগণের ও দেশের বিরুদ্ধ অবস্থানে থাকে। তাদের বিশ্বাস করা যায় না। তারা যেকোনো সময়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাই আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে। এতে উত্তাপ ছড়াবে কি না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কী করবে তা বলা মুশকিল। ফলে দেশের ও জনগণের পাহারাদার হিসেবে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার সব জায়গায় আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।’
বিএনপির যুগপৎ গণ-অবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাদের (বিএনপি) সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান, সব ‘অতি’রা এক হয়ে গেছে। আতিপাতি নেতা হয়ে একেবারে আমাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাতই করবে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ একেবারেই পড়ে গেল। এত সহজ নয়।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সবসময়ই দেশের মানুষের ভেতরে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। বিএনপি মূলত ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ধারক-বাহক। ফলে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করার।’
বিএনপির শীর্ষ নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্যান্য সময় কর্মসূচির তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ধড়পাকড় বেড়ে যেত তবে এবার তা যৎসামান্য। গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারা বলেন, গণ-অবস্থান কর্মসূচি থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিনে সারা দেশে জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যেদিন কার্যকর হবে সেদিন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর।
গণ-অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় পরবর্তী সময়ে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের প্রস্তাব দিতে বলেছেন। সদস্যরা নিজ নিজ প্রস্তাব দিয়েছেন। দলের হাইকমান্ড অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।’
আওয়ামী লীগ মাঠে থাকার ঘোষণায় রাজপথ উত্তপ্ত হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করি। আমাদের গণ-অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে তা আমি নিশ্চিত করতে পারি। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, একদলীয় শাসন কায়েমের বিষয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য ২৫ জানুয়ারি জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ অথবা গণ-অবস্থান কর্মসূচি আসতে পারে।
বিএনপির সমমনা জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলে আগামী ১৬/১৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচির প্রস্তাব রেখেছেন। বিএনপি অন্যান্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে। গণ-অবস্থান কর্মসূচি শেষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পৃথকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবে সবাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপিতে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
গণতন্ত্র মঞ্চ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির কাছে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন প্রীতম হোটেলের উল্টো দিকে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কারওয়ান বাজার এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণফোরাম মতিঝিলের আরামবাগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্ব প্রান্তে অবস্থান নেবে।
এছাড়া সিলেট বিভাগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রাজশাহী বিভাগে স্থায়ী কমিটি সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান, ময়মনসিংহে নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে সেলিমা রহমান, রংপুরে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কুমিল্লায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, খুলনায় ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ফরিদপুরে বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান।
উল্লেখ করার মতো ধরপাকড় নেই : গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে সামনে রেখে ধরপাকড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের মতো ধরপাকড় নেই খুব একটা। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহে গতকাল দুজনকে এবং মুন্সীগঞ্জে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণ-অবস্থান কর্মসূচির স্থান বরাদ্দে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টালবাহানা করলেও শেষ পর্যন্ত খুলনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপিতে বিএনপির প্রতিনিধিদল : গণ-অবস্থান কর্মসূচির অনুমতির জন্য গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। কর্মসূচির বিষয়ে ডিএমপি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে রাতে দেশ রূপান্তরকে জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
অপেক্ষা ও ব্যয় দুই-ই বাড়ছে দেশের প্রথম টানেল সড়ক বঙ্গবন্ধু টানেলে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ফার্নিচার কেনা, দুই প্রান্তে দুটি পুলিশ ক্যাম্প, ভ্যাটবৃদ্ধি ও ডলারের দাম বাড়ায় শেষ সময়ে এ মেগা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৩১৫ কোটি টাকা; সঙ্গে সময়ও বাড়ছে এক বছর। প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব আগামী ১৭ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটি ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার; যেখানে সরকারের অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের প্রকল্প ঋণ ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এটি একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। পরে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয়। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আবারও এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ানো হচ্ছে। চুক্তিকালের তুলনায় বর্তমানে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু বিভাগ জানায়, বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে পরিবর্তনের কারণে ব্যয়বৃদ্ধি, কয়েকটি খাতে কাজের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধি এবং ঋণ প্রদানকারী সংস্থার (চায়না এক্সিম ব্যাংক) প্রদানকৃত অর্থের ডলারের সঙ্গে মূল্য অবমূল্যায়ন, চুক্তি নবায়ন প্রভৃতি কারণে প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেতু বিভাগ থেকে মোট প্রকল্পব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা অর্থাৎ অনুমোদিত ব্যয় থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পটির একজন উপপরিচালক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, টানেলের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তবে ব্যয় বাড়ছে মূলত ডলারের দাম বাড়ার কারণে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যখন চুক্তি করা হয়, তখন ডলারের মূল্য ছিল ৮০ টাকা; এখন ১০৬ টাকা। তিনি বলেন, আনোয়ারার দুই প্রান্তের মানুষের যোগাযোগের কথা বিবেচনায় নতুন করে অ্যাপ্রোচ সড়ক যুক্ত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনের ব্যাখ্যা হিসেবে সেতু বিভাগ বলছে, পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতিতে টানেল নির্মাণ খাতে মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয় করার জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপির প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে সংস্থান ৪৯৪ কোটি টাকা বাড়ানো হয়, যা দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে প্রতিফলন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সেতু বিভাগ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের জন্য অবশিষ্ট ১ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার ডলার সমপরিমাণ ১১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সরকারি খাতে সংস্থান রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশি টাকা ও মার্কিন ডলারের বিনিময় হারে তারতম্যের কারণে ডিপিএ-তে বরাদ্দকৃত ৬৯ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্পের মূল কন্ট্রাক্ট থেকে কিছুক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে কার্যক্রমের পরিধি পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন টানেলের অ্যাপ্রোচ সড়ক গ্রেডে ডিজাইন করা হয়েছিল, পরে স্থানীয় চাহিদার প্রেক্ষাপটে গ্রেড সেপারেটেড সড়ক ডিজাইন করা হয়। এ ছাড়াও আন্ডারপাস, সার্ভিস রোড প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিমাণ ও ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে; যার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।
তারা বলছে, এ ব্যয় বাড়ার আরেকটি কারণ সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিকসামগ্রী, আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জাসামগ্রী ক্রয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী সার্ভিস এরিয়া ফ্যাসিলিটির আওতায় বিভিন্ন আইটেম বাবদ ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার সংস্থান আছে, যা সিভিল কাজের জন্য পর্যাপ্ত। সার্ভিস এরিয়া ফিট-আউট করার নিমিত্তে ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক আইটেম, টেক্সটাইল, কাটলারিজ/ক্রোকারিজ আইটেম প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সার্ভিস এরিয়ার সরকারি খাত থেকে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দুই প্রান্তে দুটি দোতলাবিশিষ্ট পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার স্টেশনের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ২২ কোটি টাকা।
প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ভ্যাট ও আইটির জন্য ১৩ শতাংশ হারে সংস্থান রাখা হয়েছিল। পরে এ হার পর্যায়ক্রমে বেড়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এই ১৫ শতাংশ হার অনুযায়ী অবশিষ্ট চুক্তিমূল্যের ওপর ভ্যাট ও আইটি খাতে সংস্থান রাখার জন্য ব্যয় বেড়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের ছেলের বউভাতে কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার ২৬৫ বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে শিক্ষকদের যোগদান বাধ্যতামূলক, চাঁদা তুলে উপহার দেওয়া এবং তা গ্রহণের ঘটনা ন্যক্কারজনক বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রীসহ জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
এ ঘটনা দেশের শিক্ষা খাতকে দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ধ্বংস করার শামিল মনে করছে সংস্থাটি। তারা এই ভয়াবহ দৃষ্টান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিকশিত দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতে জিম্মি অবস্থার চরম উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত কুড়িগ্রামের এই ঘটনা। প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না।’ টিআইবি মনে করে, প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের তিন দিন সংরক্ষিত ছুটির সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির জন্য সংরক্ষিত এই ছুটি এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহারের সুযোগ আছে কি না, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এতগুলো বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে কারও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও বাধ্যতামূলক জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে উপহার দেওয়ার ঘটনা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সক্রিয় যোগসাজশ না থাকলে কোনো অবস্থাতেই ঘটতে পারত না। প্রতিমন্ত্রী ও তার পরিবার এই উপহার গ্রহণ করে যে ন্যক্কারজনক মানসিকতার পরিচয় দিলেন, তার ব্যাখ্যা কী? আর এই পুরো ঘটনার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা না হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎই বা কী! সরকারের উচিত জনগণের, বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে তা ব্যাখ্যাসহ প্রকাশ করা।
গত রবিবার কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার ২৬৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে উপহারসহ শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে অংশ নেন।
শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এ দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অ·ফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভ‚মি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহ‚র্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহ‚র্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।