
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে গভীর রাতে একটি বাড়িতে চুরি করার অভিযোগে এলাকাবাসীর হাতে আটক হয়েছেন শ্রমিক লীগ নেতাসহ দুজন। গত সোমবার রাত ৩টার দিকে মুছাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনার আহমেদের বাড়িতে তারা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন বলে জানিয়েছেন এলাকাটির বাসিন্দারা।
আটকরা হলেন কোম্পানীগঞ্জের চরকাঁকড়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. সরোয়ার (৪১) এবং মুছাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সর্দার বাড়ির আবদুল খালেকের ছেলে মো. আলমগীর (৩৮)। আটকের পর পিটুনি দিয়ে তাদের গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
চুরির শিকার একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, শ্রমিক লীগ নেতা সরোয়ার একটি চোরচক্রের নেতৃত্ব দেন। নিজের সিএনজিচালিত অটোরিকশা তিনি ব্যবহার করতেন চুরির কাজে। এর বিনিময়ে তিনি চুরির পণ্য ও টাকাপয়সার অর্ধেক ভাগ নিতেন। সোমবার রাতে সরোয়ারের নেতৃত্বে চোরের দল মুছাপুরে হামিদ মেম্বারের বাড়িতে চুরি করে টাকাপয়সা নিয়ে যায়। এরপর তারা পাশের আনার আহমেদের বাড়িতে চুরির উদ্দেশ্যে যায়। কিন্তু ওই পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি টের পেয়ে ধাওয়া করে আলমগীরকে আটক করেন। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে সরোয়ারকেও আটক করে এলাকাবাসী। এ ঘটনার সময় আরেক চোর রাসেল পালিয়ে যান। আটক দুজনের কাছ থেকে টাকা ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন বলেন, ‘যদি কোনো মানুষ ব্যক্তিগতভাবে ভুল করেন তার দায়ভার দল গ্রহণ করবে না।’
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সাদেকুর রহমান শ্রমিক লীগ নেতা সরোয়ারসহ দুজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় মামলার পর আটকদের আদালতে পাঠানো হয়।
ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে এটা বাণিজ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন এমন অভিযোগও আসছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের কাছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
সে কারণে বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের আশঙ্কা, সাধারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে না পারলে বাজারে পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এতে করে বাজারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি মুষ্টিমেয় আমদানিকারকের হাতে চলে যাবে। তারা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে ভোগান্তিতে ফেলার সুযোগ পাবে।
শবেবরাত, রমজান ও ঈদ উৎসবে চাহিদা বাড়ে এমন বেশিরভাগ পণ্য এখনো আমদানিনির্ভর। প্রতি বছর ধর্মীয় এসব আয়োজনের আগে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আমদানির প্রস্তুতি সেরে ফেলেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার অনুমতি পাচ্ছেন না।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন যে, এবার তাদের ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে অনেক ব্যাংক এলসি খোলার সুযোগ দিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছি বাংলাদেশ ব্যাংক একটা বিশেষ তহবিল খুলে ব্যবসায়ীদের এলসি খুলে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করুক। না হলে পণ্য সংকট হবে, দাম বেড়ে যাবে।’
সাধারণ ব্যবসায়ীরা না পেলেও প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আনছেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ব্যাংক তাদের তাদের বড় মাপের নিয়মিত হিসাবধারীদের বিশেষ কিছু সুবিধা সবসময়ই দিয়ে থাকে। তেলে মাথায় সবাই তেল দিতে চায়।’
এলসি খুলতে ব্যাংকের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকট আন্তর্জাতিক সমস্যা। চলমান সংকট আমাদের তৈরি না। শবেবরাত-রমজান-ঈদে পণ্য আনতে যে এলসি খুলতে চাইছে তাকেই দিতে চেষ্টা করছি। সবাইকে এখন না দিতে পারলেও আশা করছি প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়লে পারব।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বড় মাপের হিসাবধারীদের প্রতিটি ব্যাংকই ধরে রাখতে চায়। তাদের চাহিদামতো বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে।’ তবে ব্যাংকের দেওয়া সুবিধাও অনেকে অপব্যবহার করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমদানিকারকদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যার অধিকাংশ সুবিধাই গ্রহণ করেছেন বড় ব্যবসায়ীরা। এখন এলসির অর্থ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এতে ছোট ব্যবসায়ীরা পণ্য এনে বিক্রি করে দাম পরিশোধ করলেও বড় ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্য গুদামে রেখে দিচ্ছেন। এরপর বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বা শবেবরাত-রমজান-ঈদ এবং যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারে যখন চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে তখন বেশি দামে বিক্রি করছেন।’ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার দেওয়া সুবিধা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থগিত করা উচিত বলে জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকলেও শবেবরাত-রমজানে ৪০-৫০ হাজার টন লাগে। বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। এ সময়ে চাহিদা থাকে আড়াই থেকে তিন লাখ টনের মতো। সারা বছর ১৮ লাখ টন চিনির ৩ লাখ টনই লাগে শবেবরাত, রমজান ও ঈদে। সারা বছর ৫ লাখ টন মসুর ডালের মধ্যে শুধু রমজানে লাগে ৮০ হাজার টন। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার ৮০ শতাংশই লাগে রমজানে। বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের পাঁচ লাখ টনই দরকার হয় এ সময়ে। শবেবরাত-রমজান-ঈদে আরও চাহিদা বাড়ে গুঁড়ো দুধ, সব ধরনের মসলা, সেমাই, দেশি-বিদেশি ফল, পোলাওর চালসহ বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্যের। পোশাক, প্রসাধনী, জুতা-স্যান্ডেল, জুয়েলারি পণ্যেরও চাহিদা বাড়ে শবেবরাতের আগ থেকে ঈদ পর্যন্ত। এসব পণ্যের অনেকগুলো সম্পূর্ণ এবং কিছু পণ্যের বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর।
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বড় ব্যবসায়ীদের অনেকে ব্যাংকের মালিক। তাদের অনেকেই নিজস্ব ব্যংকের মাধ্যমে এলসি খুলেছেন। সব আমদানিকারকের তো আর নিজের ব্যাংক নেই। এসব ব্যবসায়ী ব্যাংকের বড় কর্তা বা মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলসি খুলছেন। তবে এ সংখ্যা কম।’ তার পরামর্শ হলো, সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কোন ধরনের পণ্য কারা আনছে, তা নজরদারিতে আনা। এ ছাড়া কিছু বড় ব্যবসায়ীকে এলসি খোলার অনুমতি না দিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের দেওয়া উচিত। এতে পণ্য আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়বে। বাজার মুষ্টিমেয় লোকের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকবে।
এখনই সরকারকে এ বিষয়ে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘কারও হাতে পণ্য মজুদ হয়ে গেলে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। অতীতে দেখা গেছে এমন পরিস্থিতিতে সরকার জিম্মি হয়ে পড়ে। সরকারকে এখনই রাজধানীকেন্দ্রিকতা ছেড়ে বিভাগীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের এলসি খুলে পণ্য আমদানির সুযোগ করে দিতে হবে।’
করোনার ক্ষতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তার প্রভাব দেশেও পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে আগ্রহী হচ্ছে না। সরকার ডলার সাশ্রয়ে বিলাস পণ্যসহ অনেক পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক হার বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্য আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটিও ছোট ব্যবসায়ীদের অসুবিধার কারণ।
প্রসাধনী ব্যবসায়ী জহিরুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরে দুই ঈদে প্রসাধনী সামগ্রীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয়। শবেবরাতের কয়েক মাস আগে থেকে এলসি খুলে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী আমদানি করি। শবেবরাতের পর থেকে দুই ঈদ পর্যন্ত বিক্রি করি। অথচ গত তিন মাস ধরে বহুবার একটি বেসরকারি ব্যাংকে গিয়ে এলসি খুলতে পারিনি।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ দোকান মালিক আছেন। তাদের মধ্যে অনেকই এলসি খুলে পণ্য আনেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘অনেক ব্যাংকের মালিক ব্যবসায়ী। এসব মালিকের অনেকে নিজে পণ্য না আনলেও অন্য ব্যবসায়ীদের নামে এলসি খুলে আমদানি করাচ্ছেন।’
হেলাল উদ্দিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এবারে পণ্য আনতে না পারায় মুষ্টিমেয় বড় ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বাজার নির্ভরশীল থাকবে। তারা ইচ্ছে করলেই দাম বাড়িয়ে দিতে পারবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, শবেবরাত, রমজান ও ঈদে চাহিদা বাড়ে এমন অনেক পণ্য আমদানির জন্য এখনো স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) চাল ও গম আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে দেশে এ দুই পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৩২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের। কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ১০৪ কোটি ৯৪ কোটি ডলার। একই সময়ে চাল আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গম আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি কমেছে ৬ শতাংশ এবং চিনি আমদানি কমেছে ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, কৃষি পণ্য আদমানিও কমেছে ব্যাপক হারে। এক বছরের ব্যবধানে কৃষি পণ্য আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। শুকনো খাবার আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
২০২২ সালের শেষ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অপরিশোধিত চিনির এলসি খোলার পরিমাণও আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন বীজ ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেল ৯৯ শতাংশ, ছোলা ৪৭ শতাংশ ও খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘এলসি খোলার বিষয়ে কিছু সমস্যা আছে। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। কেউ এলসি খুলতে চান, কিন্তু পারছেন না আমাদের জানালে আমরা ওই এলসির ব্যাপারে অনুরোধ করব।’
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন সরকারকে। তিনি বলেন, ‘না হলে পণ্য সংকট হবে, দাম বেড়ে যাবে।’
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে জাতির জনকের রক্তের ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমি বলেছিলাম এ দেশ স্বাধীন করে ছাড়ব, আজ দেশ স্বাধীন। তিনি বলেছিলেন, “রক্ত দিয়ে হলেও এ রক্তের ঋণ আমি শোধ করে যাব। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে, একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এ দেশের স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে বেঁচে থাকবে, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।” তিনি তার রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করে গেছেন, এখন আমাদের পালা।
আমাদের কর্তব্য তার রক্তের ঋণ শোধ করা। যেদিন গৃহহীন গৃহ পাবে, দেশের মানুষকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব। সেটা হবে রক্তের ঋণ শোধ করা।’
গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সংসদে আনা একটি সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি-১৪৭ ধারায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন সরকারি দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও নুরুল ইসলাম নাহিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও রওশন আরা মান্নান।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শপথ করছি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। সেটাই হবে জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করা। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গেছেন। জিডিপি ৯ শতাংশ নিয়ে গিয়েছিলেন। কেউ এখনো তা স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে ৮ শতাংশ পর্যন্ত নিতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু, ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র তিন বছর পর ১৯৭৩ সালে তিনি নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্য, মানুষের উন্নয়ন। তিনি চেয়েছিলেন দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃৃদ্ধ দেশ। এ দেশের মানুষ যাতে দুই বেলা দুই মুঠো ভাত-ডাল খেয়ে বেঁচে থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন এরশাদ, জিয়া, মোশতাক। কই তারা তো মানুষের উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন করে যেতে পারেননি। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষ খেতে পায়, দেশের উন্নয়ন করে চলেছে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুট্টো তার নিজের স্বার্থে টিকে থাকার জন্য এবং ভারতীয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রধানদের পাকিস্তানকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টির কথা বলেন। তারপরই ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। তিনি প্রথমেই লন্ডনে যান। ১০ জানুয়ারি তিনি ভারত ঘুরে দেশে ফিরে এসে প্রথমে পরিবারের কাছে না গিয়ে জনগণের কাছে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি থাকেন। তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য কারাগারে কবর খোঁড়াও হয়। তবে আমাদের এ যুদ্ধ কিন্তু জনযুদ্ধ ছিল। ভারতের মিত্রবাহিনীও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, হাজার হাজার ভারতীয় সেনাও মারা যান।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ ও দেশের মানুষ বড় ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস না হারাতে। সেই আপন ভাবা মানুষই তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করে।’
ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয় : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়। কেননা দলটি জনগণের জন্য কাজ করে। তিনি গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন।
সরকার পতনের চেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি-জামায়াত চক্রের দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার তাদের সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান সব এক জায়গায় হয়ে ক্ষমতা থেকে নাকি আমাদের উৎখাত করবে।’ খবর বাসসের।
বিএনপির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, বারবার যারা জনগণ দ্বারা বিতাড়িত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা আবার গণতন্ত্রের চর্চা করল কবে। তাদের নিজেদের মধ্যেই তো গণতন্ত্র নেই। খালেদা জিয়ার অধীনে দুটি নির্বাচন, একটি ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির, আরেকটি ২০০৬ সালের ৬ জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তারা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে দেশে-বিদেশে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বসে সারা দিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ নিয়ে। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ঠেকাতে পারে আওয়ামী লীগ। কেউ যদি ভোট চুরি করে, তাকে ক্ষমতার থেকে হঠাতে আওয়ামী লীগই পারে, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বারবার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্রের চর্চা আমরা নিজের দলে যেমন করি, দেশেও গণতন্ত্রের চর্চা করি। আজকের নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, ইভিএম এসবই তো আমরা চালু করেছি, যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোটটা দিতে পারে। স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে যেটা রেজাল্ট আসবে সেটাই আসল নির্বাচন’। তিনি বলেন, এটা সবার মনে রাখা উচিত যে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন ওঠায় না, প্রশ্ন ওঠাতে পারে না। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলেই হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা কয়টা আসন পেয়েছিল? ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯টি, আর উপনির্বাচনে একটি মিলিয়ে ৩০টি আসন। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বার্থে এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করে, জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে বলেই আজ জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশাআল্লাহ অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি আজ বুধবার। সারা দেশে যুগপৎ এই কর্মসূচির মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মাঠে থাকছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে সারা দিন মিছিল-সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবে দলটির সব স্তরের নেতাকর্মীরা। এতে করে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়েছে। সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। আওয়ামী লীগের পাল্টা মাঠে নামার ঘোষণায় বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের কর্মসূচির দিন দলটি কোনো কর্মসূচি রাখছে না। কিন্তু সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়, এর দায় তাদের নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপিকে বিশ্বাস করা যায় না। বিএনপি সুযোগ পেলেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ঘটিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। সেই অবিশ্বাসের জায়গা থেকে বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে সবখানেই পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। মাঠে সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোও পৃথকভাবে বৈঠক করে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি সবসময়ই জনগণের ও দেশের বিরুদ্ধ অবস্থানে থাকে। তাদের বিশ্বাস করা যায় না। তারা যেকোনো সময়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাই আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে। এতে উত্তাপ ছড়াবে কি না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কী করবে তা বলা মুশকিল। ফলে দেশের ও জনগণের পাহারাদার হিসেবে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার সব জায়গায় আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।’
বিএনপির যুগপৎ গণ-অবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাদের (বিএনপি) সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান, সব ‘অতি’রা এক হয়ে গেছে। আতিপাতি নেতা হয়ে একেবারে আমাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাতই করবে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ একেবারেই পড়ে গেল। এত সহজ নয়।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সবসময়ই দেশের মানুষের ভেতরে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। বিএনপি মূলত ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ধারক-বাহক। ফলে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করার।’
বিএনপির শীর্ষ নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্যান্য সময় কর্মসূচির তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ধড়পাকড় বেড়ে যেত তবে এবার তা যৎসামান্য। গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারা বলেন, গণ-অবস্থান কর্মসূচি থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিনে সারা দেশে জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যেদিন কার্যকর হবে সেদিন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর।
গণ-অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় পরবর্তী সময়ে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের প্রস্তাব দিতে বলেছেন। সদস্যরা নিজ নিজ প্রস্তাব দিয়েছেন। দলের হাইকমান্ড অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।’
আওয়ামী লীগ মাঠে থাকার ঘোষণায় রাজপথ উত্তপ্ত হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করি। আমাদের গণ-অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে তা আমি নিশ্চিত করতে পারি। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, একদলীয় শাসন কায়েমের বিষয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য ২৫ জানুয়ারি জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ অথবা গণ-অবস্থান কর্মসূচি আসতে পারে।
বিএনপির সমমনা জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলে আগামী ১৬/১৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচির প্রস্তাব রেখেছেন। বিএনপি অন্যান্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে। গণ-অবস্থান কর্মসূচি শেষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পৃথকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবে সবাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপিতে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
গণতন্ত্র মঞ্চ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির কাছে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন প্রীতম হোটেলের উল্টো দিকে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কারওয়ান বাজার এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণফোরাম মতিঝিলের আরামবাগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্ব প্রান্তে অবস্থান নেবে।
এছাড়া সিলেট বিভাগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রাজশাহী বিভাগে স্থায়ী কমিটি সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান, ময়মনসিংহে নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে সেলিমা রহমান, রংপুরে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কুমিল্লায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, খুলনায় ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ফরিদপুরে বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান।
উল্লেখ করার মতো ধরপাকড় নেই : গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে সামনে রেখে ধরপাকড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের মতো ধরপাকড় নেই খুব একটা। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহে গতকাল দুজনকে এবং মুন্সীগঞ্জে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণ-অবস্থান কর্মসূচির স্থান বরাদ্দে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টালবাহানা করলেও শেষ পর্যন্ত খুলনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপিতে বিএনপির প্রতিনিধিদল : গণ-অবস্থান কর্মসূচির অনুমতির জন্য গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। কর্মসূচির বিষয়ে ডিএমপি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে রাতে দেশ রূপান্তরকে জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
অপেক্ষা ও ব্যয় দুই-ই বাড়ছে দেশের প্রথম টানেল সড়ক বঙ্গবন্ধু টানেলে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ফার্নিচার কেনা, দুই প্রান্তে দুটি পুলিশ ক্যাম্প, ভ্যাটবৃদ্ধি ও ডলারের দাম বাড়ায় শেষ সময়ে এ মেগা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৩১৫ কোটি টাকা; সঙ্গে সময়ও বাড়ছে এক বছর। প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব আগামী ১৭ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটি ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার; যেখানে সরকারের অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের প্রকল্প ঋণ ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এটি একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। পরে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয়। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আবারও এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ানো হচ্ছে। চুক্তিকালের তুলনায় বর্তমানে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু বিভাগ জানায়, বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে পরিবর্তনের কারণে ব্যয়বৃদ্ধি, কয়েকটি খাতে কাজের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধি এবং ঋণ প্রদানকারী সংস্থার (চায়না এক্সিম ব্যাংক) প্রদানকৃত অর্থের ডলারের সঙ্গে মূল্য অবমূল্যায়ন, চুক্তি নবায়ন প্রভৃতি কারণে প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেতু বিভাগ থেকে মোট প্রকল্পব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা অর্থাৎ অনুমোদিত ব্যয় থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পটির একজন উপপরিচালক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, টানেলের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তবে ব্যয় বাড়ছে মূলত ডলারের দাম বাড়ার কারণে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যখন চুক্তি করা হয়, তখন ডলারের মূল্য ছিল ৮০ টাকা; এখন ১০৬ টাকা। তিনি বলেন, আনোয়ারার দুই প্রান্তের মানুষের যোগাযোগের কথা বিবেচনায় নতুন করে অ্যাপ্রোচ সড়ক যুক্ত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনের ব্যাখ্যা হিসেবে সেতু বিভাগ বলছে, পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতিতে টানেল নির্মাণ খাতে মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয় করার জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপির প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে সংস্থান ৪৯৪ কোটি টাকা বাড়ানো হয়, যা দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে প্রতিফলন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সেতু বিভাগ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের জন্য অবশিষ্ট ১ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার ডলার সমপরিমাণ ১১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সরকারি খাতে সংস্থান রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশি টাকা ও মার্কিন ডলারের বিনিময় হারে তারতম্যের কারণে ডিপিএ-তে বরাদ্দকৃত ৬৯ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্পের মূল কন্ট্রাক্ট থেকে কিছুক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে কার্যক্রমের পরিধি পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন টানেলের অ্যাপ্রোচ সড়ক গ্রেডে ডিজাইন করা হয়েছিল, পরে স্থানীয় চাহিদার প্রেক্ষাপটে গ্রেড সেপারেটেড সড়ক ডিজাইন করা হয়। এ ছাড়াও আন্ডারপাস, সার্ভিস রোড প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিমাণ ও ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে; যার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।
তারা বলছে, এ ব্যয় বাড়ার আরেকটি কারণ সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিকসামগ্রী, আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জাসামগ্রী ক্রয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী সার্ভিস এরিয়া ফ্যাসিলিটির আওতায় বিভিন্ন আইটেম বাবদ ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার সংস্থান আছে, যা সিভিল কাজের জন্য পর্যাপ্ত। সার্ভিস এরিয়া ফিট-আউট করার নিমিত্তে ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক আইটেম, টেক্সটাইল, কাটলারিজ/ক্রোকারিজ আইটেম প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সার্ভিস এরিয়ার সরকারি খাত থেকে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দুই প্রান্তে দুটি দোতলাবিশিষ্ট পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার স্টেশনের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ২২ কোটি টাকা।
প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ভ্যাট ও আইটির জন্য ১৩ শতাংশ হারে সংস্থান রাখা হয়েছিল। পরে এ হার পর্যায়ক্রমে বেড়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এই ১৫ শতাংশ হার অনুযায়ী অবশিষ্ট চুক্তিমূল্যের ওপর ভ্যাট ও আইটি খাতে সংস্থান রাখার জন্য ব্যয় বেড়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের ছেলের বউভাতে কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার ২৬৫ বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে শিক্ষকদের যোগদান বাধ্যতামূলক, চাঁদা তুলে উপহার দেওয়া এবং তা গ্রহণের ঘটনা ন্যক্কারজনক বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রীসহ জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
এ ঘটনা দেশের শিক্ষা খাতকে দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ধ্বংস করার শামিল মনে করছে সংস্থাটি। তারা এই ভয়াবহ দৃষ্টান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিকশিত দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতে জিম্মি অবস্থার চরম উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত কুড়িগ্রামের এই ঘটনা। প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না।’ টিআইবি মনে করে, প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের তিন দিন সংরক্ষিত ছুটির সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির জন্য সংরক্ষিত এই ছুটি এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহারের সুযোগ আছে কি না, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এতগুলো বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে কারও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও বাধ্যতামূলক জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে উপহার দেওয়ার ঘটনা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সক্রিয় যোগসাজশ না থাকলে কোনো অবস্থাতেই ঘটতে পারত না। প্রতিমন্ত্রী ও তার পরিবার এই উপহার গ্রহণ করে যে ন্যক্কারজনক মানসিকতার পরিচয় দিলেন, তার ব্যাখ্যা কী? আর এই পুরো ঘটনার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা না হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎই বা কী! সরকারের উচিত জনগণের, বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে তা ব্যাখ্যাসহ প্রকাশ করা।
গত রবিবার কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার ২৬৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে উপহারসহ শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে অংশ নেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’