
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে গভীর রাতে একটি বাড়িতে চুরি করার অভিযোগে এলাকাবাসীর হাতে আটক হয়েছেন শ্রমিক লীগ নেতাসহ দুজন। গত সোমবার রাত ৩টার দিকে মুছাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনার আহমেদের বাড়িতে তারা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন বলে জানিয়েছেন এলাকাটির বাসিন্দারা।
আটকরা হলেন কোম্পানীগঞ্জের চরকাঁকড়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. সরোয়ার (৪১) এবং মুছাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সর্দার বাড়ির আবদুল খালেকের ছেলে মো. আলমগীর (৩৮)। আটকের পর পিটুনি দিয়ে তাদের গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
চুরির শিকার একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, শ্রমিক লীগ নেতা সরোয়ার একটি চোরচক্রের নেতৃত্ব দেন। নিজের সিএনজিচালিত অটোরিকশা তিনি ব্যবহার করতেন চুরির কাজে। এর বিনিময়ে তিনি চুরির পণ্য ও টাকাপয়সার অর্ধেক ভাগ নিতেন। সোমবার রাতে সরোয়ারের নেতৃত্বে চোরের দল মুছাপুরে হামিদ মেম্বারের বাড়িতে চুরি করে টাকাপয়সা নিয়ে যায়। এরপর তারা পাশের আনার আহমেদের বাড়িতে চুরির উদ্দেশ্যে যায়। কিন্তু ওই পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি টের পেয়ে ধাওয়া করে আলমগীরকে আটক করেন। পরে তার তথ্যের ভিত্তিতে সরোয়ারকেও আটক করে এলাকাবাসী। এ ঘটনার সময় আরেক চোর রাসেল পালিয়ে যান। আটক দুজনের কাছ থেকে টাকা ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বাহার উদ্দিন বলেন, ‘যদি কোনো মানুষ ব্যক্তিগতভাবে ভুল করেন তার দায়ভার দল গ্রহণ করবে না।’
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সাদেকুর রহমান শ্রমিক লীগ নেতা সরোয়ারসহ দুজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় মামলার পর আটকদের আদালতে পাঠানো হয়।
ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে এটা বাণিজ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন এমন অভিযোগও আসছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের কাছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিনির্ভর পণ্যের বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে।
সে কারণে বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের আশঙ্কা, সাধারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে না পারলে বাজারে পণ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এতে করে বাজারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি মুষ্টিমেয় আমদানিকারকের হাতে চলে যাবে। তারা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে ক্রেতাকে ভোগান্তিতে ফেলার সুযোগ পাবে।
শবেবরাত, রমজান ও ঈদ উৎসবে চাহিদা বাড়ে এমন বেশিরভাগ পণ্য এখনো আমদানিনির্ভর। প্রতি বছর ধর্মীয় এসব আয়োজনের আগে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আমদানির প্রস্তুতি সেরে ফেলেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার অনুমতি পাচ্ছেন না।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন যে, এবার তাদের ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে অনেক ব্যাংক এলসি খোলার সুযোগ দিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছি বাংলাদেশ ব্যাংক একটা বিশেষ তহবিল খুলে ব্যবসায়ীদের এলসি খুলে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করুক। না হলে পণ্য সংকট হবে, দাম বেড়ে যাবে।’
সাধারণ ব্যবসায়ীরা না পেলেও প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আনছেন এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘ব্যাংক তাদের তাদের বড় মাপের নিয়মিত হিসাবধারীদের বিশেষ কিছু সুবিধা সবসময়ই দিয়ে থাকে। তেলে মাথায় সবাই তেল দিতে চায়।’
এলসি খুলতে ব্যাংকের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকট আন্তর্জাতিক সমস্যা। চলমান সংকট আমাদের তৈরি না। শবেবরাত-রমজান-ঈদে পণ্য আনতে যে এলসি খুলতে চাইছে তাকেই দিতে চেষ্টা করছি। সবাইকে এখন না দিতে পারলেও আশা করছি প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়লে পারব।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বড় মাপের হিসাবধারীদের প্রতিটি ব্যাংকই ধরে রাখতে চায়। তাদের চাহিদামতো বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে।’ তবে ব্যাংকের দেওয়া সুবিধাও অনেকে অপব্যবহার করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমদানিকারকদের নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যার অধিকাংশ সুবিধাই গ্রহণ করেছেন বড় ব্যবসায়ীরা। এখন এলসির অর্থ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এতে ছোট ব্যবসায়ীরা পণ্য এনে বিক্রি করে দাম পরিশোধ করলেও বড় ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্য গুদামে রেখে দিচ্ছেন। এরপর বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বা শবেবরাত-রমজান-ঈদ এবং যেকোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে বাজারে যখন চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে তখন বেশি দামে বিক্রি করছেন।’ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার দেওয়া সুবিধা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থগিত করা উচিত বলে জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, প্রতি মাসে ৫-৬ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকলেও শবেবরাত-রমজানে ৪০-৫০ হাজার টন লাগে। বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। এ সময়ে চাহিদা থাকে আড়াই থেকে তিন লাখ টনের মতো। সারা বছর ১৮ লাখ টন চিনির ৩ লাখ টনই লাগে শবেবরাত, রমজান ও ঈদে। সারা বছর ৫ লাখ টন মসুর ডালের মধ্যে শুধু রমজানে লাগে ৮০ হাজার টন। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার ৮০ শতাংশই লাগে রমজানে। বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের পাঁচ লাখ টনই দরকার হয় এ সময়ে। শবেবরাত-রমজান-ঈদে আরও চাহিদা বাড়ে গুঁড়ো দুধ, সব ধরনের মসলা, সেমাই, দেশি-বিদেশি ফল, পোলাওর চালসহ বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্যের। পোশাক, প্রসাধনী, জুতা-স্যান্ডেল, জুয়েলারি পণ্যেরও চাহিদা বাড়ে শবেবরাতের আগ থেকে ঈদ পর্যন্ত। এসব পণ্যের অনেকগুলো সম্পূর্ণ এবং কিছু পণ্যের বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর।
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বড় ব্যবসায়ীদের অনেকে ব্যাংকের মালিক। তাদের অনেকেই নিজস্ব ব্যংকের মাধ্যমে এলসি খুলেছেন। সব আমদানিকারকের তো আর নিজের ব্যাংক নেই। এসব ব্যবসায়ী ব্যাংকের বড় কর্তা বা মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলসি খুলছেন। তবে এ সংখ্যা কম।’ তার পরামর্শ হলো, সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে কোন ধরনের পণ্য কারা আনছে, তা নজরদারিতে আনা। এ ছাড়া কিছু বড় ব্যবসায়ীকে এলসি খোলার অনুমতি না দিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের দেওয়া উচিত। এতে পণ্য আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়বে। বাজার মুষ্টিমেয় লোকের নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকবে।
এখনই সরকারকে এ বিষয়ে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘কারও হাতে পণ্য মজুদ হয়ে গেলে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। অতীতে দেখা গেছে এমন পরিস্থিতিতে সরকার জিম্মি হয়ে পড়ে। সরকারকে এখনই রাজধানীকেন্দ্রিকতা ছেড়ে বিভাগীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের এলসি খুলে পণ্য আমদানির সুযোগ করে দিতে হবে।’
করোনার ক্ষতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তার প্রভাব দেশেও পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে আগ্রহী হচ্ছে না। সরকার ডলার সাশ্রয়ে বিলাস পণ্যসহ অনেক পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক হার বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্য আমদানিতে শতভাগ এলসি মার্জিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটিও ছোট ব্যবসায়ীদের অসুবিধার কারণ।
প্রসাধনী ব্যবসায়ী জহিরুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বছরে দুই ঈদে প্রসাধনী সামগ্রীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয়। শবেবরাতের কয়েক মাস আগে থেকে এলসি খুলে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী আমদানি করি। শবেবরাতের পর থেকে দুই ঈদ পর্যন্ত বিক্রি করি। অথচ গত তিন মাস ধরে বহুবার একটি বেসরকারি ব্যাংকে গিয়ে এলসি খুলতে পারিনি।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ দোকান মালিক আছেন। তাদের মধ্যে অনেকই এলসি খুলে পণ্য আনেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘অনেক ব্যাংকের মালিক ব্যবসায়ী। এসব মালিকের অনেকে নিজে পণ্য না আনলেও অন্য ব্যবসায়ীদের নামে এলসি খুলে আমদানি করাচ্ছেন।’
হেলাল উদ্দিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এবারে পণ্য আনতে না পারায় মুষ্টিমেয় বড় ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বাজার নির্ভরশীল থাকবে। তারা ইচ্ছে করলেই দাম বাড়িয়ে দিতে পারবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, শবেবরাত, রমজান ও ঈদে চাহিদা বাড়ে এমন অনেক পণ্য আমদানির জন্য এখনো স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) চাল ও গম আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে দেশে এ দুই পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৩২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের। কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ১০৪ কোটি ৯৪ কোটি ডলার। একই সময়ে চাল আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গম আমদানি কমেছে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি কমেছে ৬ শতাংশ এবং চিনি আমদানি কমেছে ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, কৃষি পণ্য আদমানিও কমেছে ব্যাপক হারে। এক বছরের ব্যবধানে কৃষি পণ্য আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। শুকনো খাবার আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।
২০২২ সালের শেষ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অপরিশোধিত চিনির এলসি খোলার পরিমাণও আগের বছরের চেয়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৪৭ শতাংশ, সয়াবিন বীজ ৮৩ শতাংশ, অপরিশোধিত পাম তেল ৯৯ শতাংশ, ছোলা ৪৭ শতাংশ ও খেজুর আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ৩০ শতাংশ।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘এলসি খোলার বিষয়ে কিছু সমস্যা আছে। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। কেউ এলসি খুলতে চান, কিন্তু পারছেন না আমাদের জানালে আমরা ওই এলসির ব্যাপারে অনুরোধ করব।’
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন সরকারকে। তিনি বলেন, ‘না হলে পণ্য সংকট হবে, দাম বেড়ে যাবে।’
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে জাতির জনকের রক্তের ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমি বলেছিলাম এ দেশ স্বাধীন করে ছাড়ব, আজ দেশ স্বাধীন। তিনি বলেছিলেন, “রক্ত দিয়ে হলেও এ রক্তের ঋণ আমি শোধ করে যাব। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে, একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এ দেশের স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে বেঁচে থাকবে, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।” তিনি তার রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করে গেছেন, এখন আমাদের পালা।
আমাদের কর্তব্য তার রক্তের ঋণ শোধ করা। যেদিন গৃহহীন গৃহ পাবে, দেশের মানুষকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব। সেটা হবে রক্তের ঋণ শোধ করা।’
গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সংসদে আনা একটি সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি-১৪৭ ধারায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন সরকারি দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও নুরুল ইসলাম নাহিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও রওশন আরা মান্নান।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শপথ করছি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। সেটাই হবে জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করা। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গেছেন। জিডিপি ৯ শতাংশ নিয়ে গিয়েছিলেন। কেউ এখনো তা স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে ৮ শতাংশ পর্যন্ত নিতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু, ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র তিন বছর পর ১৯৭৩ সালে তিনি নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্য, মানুষের উন্নয়ন। তিনি চেয়েছিলেন দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃৃদ্ধ দেশ। এ দেশের মানুষ যাতে দুই বেলা দুই মুঠো ভাত-ডাল খেয়ে বেঁচে থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন এরশাদ, জিয়া, মোশতাক। কই তারা তো মানুষের উন্নয়ন, দেশের উন্নয়ন করে যেতে পারেননি। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষ খেতে পায়, দেশের উন্নয়ন করে চলেছে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুট্টো তার নিজের স্বার্থে টিকে থাকার জন্য এবং ভারতীয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রধানদের পাকিস্তানকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টির কথা বলেন। তারপরই ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। তিনি প্রথমেই লন্ডনে যান। ১০ জানুয়ারি তিনি ভারত ঘুরে দেশে ফিরে এসে প্রথমে পরিবারের কাছে না গিয়ে জনগণের কাছে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি থাকেন। তাকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য কারাগারে কবর খোঁড়াও হয়। তবে আমাদের এ যুদ্ধ কিন্তু জনযুদ্ধ ছিল। ভারতের মিত্রবাহিনীও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, হাজার হাজার ভারতীয় সেনাও মারা যান।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশ ও দেশের মানুষ বড় ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, মানুষের ওপর বিশ্বাস না হারাতে। সেই আপন ভাবা মানুষই তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করে।’
ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয় : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়। কেননা দলটি জনগণের জন্য কাজ করে। তিনি গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন।
সরকার পতনের চেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি-জামায়াত চক্রের দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার তাদের সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান সব এক জায়গায় হয়ে ক্ষমতা থেকে নাকি আমাদের উৎখাত করবে।’ খবর বাসসের।
বিএনপির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, বারবার যারা জনগণ দ্বারা বিতাড়িত ও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা আবার গণতন্ত্রের চর্চা করল কবে। তাদের নিজেদের মধ্যেই তো গণতন্ত্র নেই। খালেদা জিয়ার অধীনে দুটি নির্বাচন, একটি ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির, আরেকটি ২০০৬ সালের ৬ জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তারা বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। তিনি বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে দেশে-বিদেশে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে বসে সারা দিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ নিয়ে। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ঠেকাতে পারে আওয়ামী লীগ। কেউ যদি ভোট চুরি করে, তাকে ক্ষমতার থেকে হঠাতে আওয়ামী লীগই পারে, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বারবার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্রের চর্চা আমরা নিজের দলে যেমন করি, দেশেও গণতন্ত্রের চর্চা করি। আজকের নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, ইভিএম এসবই তো আমরা চালু করেছি, যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোটটা দিতে পারে। স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে যেটা রেজাল্ট আসবে সেটাই আসল নির্বাচন’। তিনি বলেন, এটা সবার মনে রাখা উচিত যে ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন ওঠায় না, প্রশ্ন ওঠাতে পারে না। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলেই হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা কয়টা আসন পেয়েছিল? ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯টি, আর উপনির্বাচনে একটি মিলিয়ে ৩০টি আসন। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বার্থে এবং তাদের কল্যাণে কাজ করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি করে, জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে বলেই আজ জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশাআল্লাহ অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচি আজ বুধবার। সারা দেশে যুগপৎ এই কর্মসূচির মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মাঠে থাকছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে সারা দিন মিছিল-সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবে দলটির সব স্তরের নেতাকর্মীরা। এতে করে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়েছে। সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। আওয়ামী লীগের পাল্টা মাঠে নামার ঘোষণায় বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের কর্মসূচির দিন দলটি কোনো কর্মসূচি রাখছে না। কিন্তু সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়, এর দায় তাদের নিতে হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপিকে বিশ্বাস করা যায় না। বিএনপি সুযোগ পেলেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ঘটিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। সেই অবিশ্বাসের জায়গা থেকে বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে সবখানেই পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। মাঠে সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোও পৃথকভাবে বৈঠক করে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি সবসময়ই জনগণের ও দেশের বিরুদ্ধ অবস্থানে থাকে। তাদের বিশ্বাস করা যায় না। তারা যেকোনো সময়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। তাই আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে। এতে উত্তাপ ছড়াবে কি না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কী করবে তা বলা মুশকিল। ফলে দেশের ও জনগণের পাহারাদার হিসেবে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন রিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার সব জায়গায় আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।’
বিএনপির যুগপৎ গণ-অবস্থান কর্মসূচির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাদের (বিএনপি) সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান, সব ‘অতি’রা এক হয়ে গেছে। আতিপাতি নেতা হয়ে একেবারে আমাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাতই করবে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ একেবারেই পড়ে গেল। এত সহজ নয়।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সবসময়ই দেশের মানুষের ভেতরে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে। বিএনপি মূলত ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ধারক-বাহক। ফলে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করার।’
বিএনপির শীর্ষ নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্যান্য সময় কর্মসূচির তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ধড়পাকড় বেড়ে যেত তবে এবার তা যৎসামান্য। গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারা বলেন, গণ-অবস্থান কর্মসূচি থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিনে সারা দেশে জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত যেদিন কার্যকর হবে সেদিন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর।
গণ-অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় পরবর্তী সময়ে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের প্রস্তাব দিতে বলেছেন। সদস্যরা নিজ নিজ প্রস্তাব দিয়েছেন। দলের হাইকমান্ড অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।’
আওয়ামী লীগ মাঠে থাকার ঘোষণায় রাজপথ উত্তপ্ত হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করি। আমাদের গণ-অবস্থান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে তা আমি নিশ্চিত করতে পারি। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকলে এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, একদলীয় শাসন কায়েমের বিষয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য ২৫ জানুয়ারি জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ অথবা গণ-অবস্থান কর্মসূচি আসতে পারে।
বিএনপির সমমনা জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি দলের শীর্ষ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলে আগামী ১৬/১৭ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচির প্রস্তাব রেখেছেন। বিএনপি অন্যান্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে। গণ-অবস্থান কর্মসূচি শেষে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পৃথকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবে সবাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপিতে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
গণতন্ত্র মঞ্চ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির কাছে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন প্রীতম হোটেলের উল্টো দিকে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কারওয়ান বাজার এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে, গণফোরাম মতিঝিলের আরামবাগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্ব প্রান্তে অবস্থান নেবে।
এছাড়া সিলেট বিভাগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, রাজশাহী বিভাগে স্থায়ী কমিটি সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান, ময়মনসিংহে নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশালে সেলিমা রহমান, রংপুরে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কুমিল্লায় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, খুলনায় ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ফরিদপুরে বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান।
উল্লেখ করার মতো ধরপাকড় নেই : গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে সামনে রেখে ধরপাকড়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের মতো ধরপাকড় নেই খুব একটা। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহে গতকাল দুজনকে এবং মুন্সীগঞ্জে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণ-অবস্থান কর্মসূচির স্থান বরাদ্দে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টালবাহানা করলেও শেষ পর্যন্ত খুলনা জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপিতে বিএনপির প্রতিনিধিদল : গণ-অবস্থান কর্মসূচির অনুমতির জন্য গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। কর্মসূচির বিষয়ে ডিএমপি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে রাতে দেশ রূপান্তরকে জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
অপেক্ষা ও ব্যয় দুই-ই বাড়ছে দেশের প্রথম টানেল সড়ক বঙ্গবন্ধু টানেলে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ফার্নিচার কেনা, দুই প্রান্তে দুটি পুলিশ ক্যাম্প, ভ্যাটবৃদ্ধি ও ডলারের দাম বাড়ায় শেষ সময়ে এ মেগা প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৩১৫ কোটি টাকা; সঙ্গে সময়ও বাড়ছে এক বছর। প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব আগামী ১৭ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটি ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার; যেখানে সরকারের অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি এবং চায়না এক্সিম ব্যাংকের প্রকল্প ঋণ ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এটি একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। পরে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয়। মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আবারও এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকল্প ব্যয়ও বাড়ানো হচ্ছে। চুক্তিকালের তুলনায় বর্তমানে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু বিভাগ জানায়, বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে পরিবর্তনের কারণে ব্যয়বৃদ্ধি, কয়েকটি খাতে কাজের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধি এবং ঋণ প্রদানকারী সংস্থার (চায়না এক্সিম ব্যাংক) প্রদানকৃত অর্থের ডলারের সঙ্গে মূল্য অবমূল্যায়ন, চুক্তি নবায়ন প্রভৃতি কারণে প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেতু বিভাগ থেকে মোট প্রকল্পব্যয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা অর্থাৎ অনুমোদিত ব্যয় থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পটির একজন উপপরিচালক গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, টানেলের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তবে ব্যয় বাড়ছে মূলত ডলারের দাম বাড়ার কারণে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যখন চুক্তি করা হয়, তখন ডলারের মূল্য ছিল ৮০ টাকা; এখন ১০৬ টাকা। তিনি বলেন, আনোয়ারার দুই প্রান্তের মানুষের যোগাযোগের কথা বিবেচনায় নতুন করে অ্যাপ্রোচ সড়ক যুক্ত করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সংশোধনের ব্যাখ্যা হিসেবে সেতু বিভাগ বলছে, পরিকল্পনা কমিশনের সম্মতিতে টানেল নির্মাণ খাতে মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয় করার জন্য প্রথম সংশোধিত ডিপিপির প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে সংস্থান ৪৯৪ কোটি টাকা বাড়ানো হয়, যা দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে প্রতিফলন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সেতু বিভাগ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের জন্য অবশিষ্ট ১ কোটি ১১ লাখ ৮০ হাজার ডলার সমপরিমাণ ১১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সরকারি খাতে সংস্থান রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশি টাকা ও মার্কিন ডলারের বিনিময় হারে তারতম্যের কারণে ডিপিএ-তে বরাদ্দকৃত ৬৯ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলারের বিপরীতে ১৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্পের মূল কন্ট্রাক্ট থেকে কিছুক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে কার্যক্রমের পরিধি পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন টানেলের অ্যাপ্রোচ সড়ক গ্রেডে ডিজাইন করা হয়েছিল, পরে স্থানীয় চাহিদার প্রেক্ষাপটে গ্রেড সেপারেটেড সড়ক ডিজাইন করা হয়। এ ছাড়াও আন্ডারপাস, সার্ভিস রোড প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিমাণ ও ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে; যার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।
তারা বলছে, এ ব্যয় বাড়ার আরেকটি কারণ সার্ভিস এরিয়ার তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিকসামগ্রী, আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জাসামগ্রী ক্রয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী সার্ভিস এরিয়া ফ্যাসিলিটির আওতায় বিভিন্ন আইটেম বাবদ ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার সংস্থান আছে, যা সিভিল কাজের জন্য পর্যাপ্ত। সার্ভিস এরিয়া ফিট-আউট করার নিমিত্তে ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক আইটেম, টেক্সটাইল, কাটলারিজ/ক্রোকারিজ আইটেম প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সার্ভিস এরিয়ার সরকারি খাত থেকে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
দুই প্রান্তে দুটি দোতলাবিশিষ্ট পুলিশ ক্যাম্প ও ফায়ার স্টেশনের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ২২ কোটি টাকা।
প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ভ্যাট ও আইটির জন্য ১৩ শতাংশ হারে সংস্থান রাখা হয়েছিল। পরে এ হার পর্যায়ক্রমে বেড়ে বর্তমানে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এই ১৫ শতাংশ হার অনুযায়ী অবশিষ্ট চুক্তিমূল্যের ওপর ভ্যাট ও আইটি খাতে সংস্থান রাখার জন্য ব্যয় বেড়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের ছেলের বউভাতে কুড়িগ্রামের তিন উপজেলার ২৬৫ বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে শিক্ষকদের যোগদান বাধ্যতামূলক, চাঁদা তুলে উপহার দেওয়া এবং তা গ্রহণের ঘটনা ন্যক্কারজনক বলে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রীসহ জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।
এ ঘটনা দেশের শিক্ষা খাতকে দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ধ্বংস করার শামিল মনে করছে সংস্থাটি। তারা এই ভয়াবহ দৃষ্টান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিকশিত দলীয়করণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতে জিম্মি অবস্থার চরম উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত কুড়িগ্রামের এই ঘটনা। প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের কেউ এর দায় এড়াতে পারেন না।’ টিআইবি মনে করে, প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের তিন দিন সংরক্ষিত ছুটির সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণের বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতির জন্য সংরক্ষিত এই ছুটি এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহারের সুযোগ আছে কি না, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এতগুলো বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে কারও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও বাধ্যতামূলক জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করে উপহার দেওয়ার ঘটনা জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সক্রিয় যোগসাজশ না থাকলে কোনো অবস্থাতেই ঘটতে পারত না। প্রতিমন্ত্রী ও তার পরিবার এই উপহার গ্রহণ করে যে ন্যক্কারজনক মানসিকতার পরিচয় দিলেন, তার ব্যাখ্যা কী? আর এই পুরো ঘটনার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা না হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎই বা কী! সরকারের উচিত জনগণের, বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জ্ঞাতার্থে তা ব্যাখ্যাসহ প্রকাশ করা।
গত রবিবার কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার ২৬৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে উপহারসহ শিক্ষকরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতে অংশ নেন।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন গ্যারেথ বেল। তাই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়েলসের সাবেক অধিনায়কের। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্তার মিলান। বেলের বাজি সিটির পক্ষে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন ও টটেনহামে খেলার সময় ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলেছেন বেল। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফলাফলের সঙ্গে ম্যাচসেরা কে হবেন সেই মতামতও দিয়েছেন বেল। ইন্সটাগ্রামে বেল বলেন, 'ম্যানসিটি ৫-০ তে হারাবে ইন্তার মিলানকে।’
বেলের মতে, ম্যাচসেরা হবেন সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৩ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বেল। তার আগে কাতার বিশ্বকাপে খেলে বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন।
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে পেপ গার্দিওলার দল। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ট্রেবল হবে তাদের। ২০২১ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল ম্যানসিটি।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবে মিডল অর্ডাররা দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। তাতে ভারতকে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অসিরা। এই রান তাড়া করলেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন শিরোপাজয়ী হবে ভারত। রান টপকালে শুধু জয়ই হবে না, হবে রেকর্ডও। তাই শেষ দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের পানে তাকিয়ে থাকবে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বিশ্বরেকর্ডটাই করতে হবে ভারতকে। করতে হবে টেস্টের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। আর না হলে ড্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওভালে পঞ্চম দিনের পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে কোহলি-রাহানেদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ভারতের সামনে।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে নেমে লন্ডনের ওভালে আজ চতুর্থ দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান। দুই বছরের জন্য টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দিনে ভারতের দরকার ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৭ উইকেট। শেষ দিনের শুরুটা করবেন অজিঙ্কা রাহানে (২০*), সঙ্গে বিরাট কোহলি (৪৪*)।
টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজের ওই জয় এখনো সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সে হিসেবে ওভালে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে মেজাজে। প্রথম ৭ ওভারে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল করেন ৪১ রান। গ্রিনের বিতর্কিত এক ক্যাচে বোল্যান্ডের বলে গিল আউট হলেও খেলার ধরন পাল্টাননি রোহিতরা।
১৯ ওভারে ৯১ রান তোলা ভারত ২০তম ওভারে হারায় রোহিতকে। এই ইনিংস খেলার পথে ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত।
রোহিতের আউটের পর যখন সবাই ভাবছিলেন, উইকেটে থাকা চেতেশ্বর পূজারা তাঁর চিরাচরিত ধরন মেনে রয়েসয়ে ব্যাটিং করবেন। তবে পূজারা আউট হন নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে কামিন্সের বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে।
এর আগে ৪ উইকেটে ১২৩ রান তুলে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ চতুর্থ দিন সকালটা দুর্দান্ত শুরু করেন ভারতের পেসাররা। কাল ৪১ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন চতুর্থ দিনে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন উমেশ যাদবের দলে। স্লিপে চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৬ বলে ৪ চারে ৪১ রান করেছেন লাবুশেন। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*) ও বোলার মিচেল স্টার্কের (৪১) ৯৩ রানের জুটিতে দারুণ পুঁজি গড়ে ফেলে অজিরা। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা সহজ হয় দলটির। হয়তো জয়ের পথটাও তৈরি হলো ওই জুটিতে।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন বলেই লাতিন দেশটিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা। এর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনা–প্রীতি থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে অতীতের সেই ভালোবাসা বা উদ্দীপনাকে চরমভাবে হার মানিয়েছে। আর এর কারণ ওই একটাই, মেসি।
মেসি যে ইউরোপের ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসে গত বুধবার। এখনও নাম লেখাননি, কবে থেকে মায়ামির হয়ে মাঠে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। শুধু মেসি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টার মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
গুগলে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাবটিকে খোঁজা শুরু করে সারা বিশ্বের মেসি–সমর্থকেরা। গুগলে গত ৭ দিনে সবচেয়ে বেশি মায়ামিকে খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। গুগলে এই খোঁজার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে মেসির নিজের দেশ আর্জেন্টিনার চেয়েও। কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি ১৪ কোটি। সেই বিবেচনায় এটাই তো হওয়ার কথা।
মূলত গুগল ট্রেন্ডে কোনো ওয়েব সার্চের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হচ্ছে ১০০। বাংলাদেশ এখানে পেয়েছে এক শই। শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৮৪।
গুগল ট্রেন্ডের এই তালিকায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার পরের নামটা নেপালের। তারা পেয়েছে ৮২। চার নম্বরে আছে হাইতি (৮১), আর পাঁচে আইভরি কোস্ট (৭৩)। এই তালিকায় সেরা দশে আছে ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া। মেসিকে নিজেদের লিগে নিতে চাওয়া সৌদি আরব আছে এই তালিকার ১৪ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ৫১ নম্বরে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেশের ক্লাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভালোই জানাশোনা থাকার কথা। তা ইন্টার মায়ামি ক্লাব হিসেবে যতই নতুন হোক না কেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ বছরে ৭ বারই চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনেই ৫ বার। কিন্তু ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। দুবছর আগে ফাইনালে উঠলেও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। অবশেষে গেঁরো খুলতে পারল তারা। ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা জিতেছে তারা।
ইস্তানবুলের ফাইনালে ইতালীয় ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। একমাত্র গোলটি করেছেন ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে এবারের মৌসুমে ট্রেবলও পূরণ করে নিল সিটি। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। তাদের আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতেছিল তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর কোচ হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের নতুন রেকর্ডও গড়লেন গার্দিওলা। এর আগে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
২০২১-র ফাইনালে রদ্রিকে না খেলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল গার্দিওলার। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সিটির জয়ের মূলনায়ক সেই রদ্রি। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার গোল নিয়ে অতো ভাবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে একটা গোল ছিল তারা। সেটি ছিল এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচের প্রথমটি। সেই গোলের পেছনে অবদান ছিল যার সেই বার্নার্দ সিলভা ইস্তানবুলে গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে ইন্তার গোললাইনের কাছ থেকে বল ফিরিয়ে দেন বক্সের মাথায়। অরক্ষতি রদ্রির কথা কেউ ভাবেইনি। ডান পায়ের চতুর শটে দুই ডিফেন্ডারের পা এড়িয়ে ডান দিকে জালে জড়ায় বল (১-০)।
এর পরপরই সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ইন্তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, দিমারকোর হেড বাধা পায় পোস্টে। ২০২১'র ফাইনালে মতো এবারো চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মধ্যমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনে। ৩৬ মিনিটেই মাঠে নামা ফিল ফোডেন ইন্তারের আক্রমণ ভাগে বার বার হানা দিয়েছেন। তবে সিটির আর গোল পায়নি। বরং গোল খেতে পারতো তারা। কিন্তু গোলরক্ষক এডারসনের দক্ষতায় দুবার নিশ্চিত বেচে যায়। রবিন গোসেনের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু নেন গোলরক্ষক বরাবর। কোনো মতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এডারসন।
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এডারসনের আরও একটি দুর্দান্ত সেভ। কর্নার থেকে গোসেনের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে উল্লাসে মাতে সিটিজেনরা।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’