
আগামী দুই বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি পাঁচটি ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যাবে। দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে দেশের অর্থনীতির প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) প্রকাশিত বিশ্ব ঝুঁকি প্রতিবেদন ২০২৩-এ বাংলাদেশের এসব ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের জন্য প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি, বিদেশি ঋণের বোঝা ও পণ্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়া। বাকি দুটির মধ্যে রয়েছে মানবসৃষ্ট পরিবেশের ক্ষতির কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ও সম্পদের ব্যবহার নিয়ে ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারের ১ হাজার ২০০ বেশি বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যবসায়ী, সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং নাগরিক সমাজের করা বিশ্লেষণ। বিশ্বব্যাপী ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সর্বশেষ গ্লোবাল রিস্কস পারসেপশন সার্ভের (জিআরপিএস) ফলাফল উপস্থাপন করে ডব্লিউইএফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিআরপিএসের এ প্রতিক্রিয়াগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে সদ্য শেষ হওয়া বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ থেকে অক্টোবরের ৫ তারিখ পর্যন্ত সময়ে। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষদের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, ‘আগামী দুই বছরের মধ্যে আপনার দেশে কোন পাঁচটি ঝুঁকি সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে?’ অপশন হিসেবে তাদের সামনে ৩৫টি ভিন্ন ভিন্ন অপশন ছিল।
বাংলাদেশে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ডব্লিউইএফের জরিপের পার্টনার হিসেবে কাজ করেছে। সিপিডির দৃষ্টিতে দ্রুত বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি নির্বাচিত ঝুঁকি ছিল এ জরিপে। যে সময় জরিপটি করা হয়, তখন বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশের ওপরে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে, ভোক্তার পণ্যমূল্যের মূল্যস্ফীতি গত ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ ছিল, যেটি গত আগস্টে ছিল ১০ শতাংশের ওপরে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২৩ ও ’২৪ সালটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই সুখকর হবে না। বিশ্বের মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু আমদানিনির্ভরতার কারণে বাংলাদেশ এ ধরনের ঝুঁকি কিছুতেই এড়াতে পারবে না। আমদানি মূল্যস্ফীতির চাপ তো থাকছেই, পাশাপাশি জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) আন্তর্জাতিক ঋণের পরিমাণ এখনো কম। তবে জিডিপিতে অভ্যন্তরীণ ঋণের অনুপাত ক্রমেই বাড়ছে। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়ছে।
এ বছরের গ্লোবাল রিস্ক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার চরম অবনতি এবং ভূ-অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব আগামী দুই বছরের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ তিনটি ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে গিয়ে ব্যর্থতার ফলে সামাজিক অবক্ষয় এবং সামাজিক মেরুকরণ স্বল্পমেয়াদে দুটি প্রধান বৈশ্বিক ঝুঁকি।
এতে আরও বলা হয়, জীবনযাত্রার ব্যয় আগামী দুই বছরে বিশ্বব্যাপী ঝুঁকির ওপর প্রাধান্য পাবে। এ সময়ের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ব্যর্থতা পরবর্তী দশকে প্রাধান্য পাবে।
কভিড মহামারীর পরিস্থিতির মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের খাদ্য ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক দশক ধরে সমস্যায় পড়া এ দুটি খাতে বেশ অগ্রগতি হয়েছিল। কিন্তু কডিভ ও যুদ্ধ এর প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু অতি পরিচিত ও কিছু নতুন ঝুঁকির সামনে এসে পড়েছে সারা বিশ্ব।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু পুরনো সমস্যা নতুন করে সামনে এসেছে। মূল্যস্ফীতি, বাণিজ্যযুুদ্ধ, বাজার থেকে মূলধন হারিয়ে যাওয়া, সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া, ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, পারমাণবিক যুদ্ধের ভূতসহ বেশ কিছু সমস্যা এখন সামনে। এগুলো এ প্রজন্মের ব্যবসায়ী নেতারা এবং পাবলিক নীতিনির্ধারকরা দেখতে দেখতে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
বিশ্বের ভূরাজনৈতিক ঝুঁকিতে নতুন উন্নয়নের ধারা প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু এতে যোগ হয়েছে ঋণের অস্থিতিশীল মাত্রা, নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা, বৈশ্বিক বিনিয়োগে ঘাটতি ও বিশ্বায়নের সংকট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো গবেষণা। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণায় খুব একটা আগ্রহ নেই। সরকারি-বেসরকারি ১৫৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৩টি গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি। আর ৪৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ লাখ টাকার নিচে লোক দেখানো ব্যয় করেছে। এমনকি এক বছরে ৫৭ বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রকাশনাও বের করতে পারেনি। বাংলাদেশে এই গবেষণার চিত্র অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ৫০ সরকারি ও ১০৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১ সালের তথ্য নিয়ে তৈরি ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে গবেষণার এই দুরবস্থার চিত্র উঠে এসেছে।
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় না করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টি সরকারি ও ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ১০ লাখ টাকার নিচে ব্যয় করেছে ৭টি সরকারি ও ৪২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরে কোনো গবেষণা নিবন্ধ বের হয়নি। বেসরকারির ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৪২।
এর আগে ২০২০ সালে ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার পেছনে কোনো খরচ করেনি। তবে ২০২১ সালে এ সংখ্যা কমে ৩৩ হয়েছে। অর্থাৎ সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই গবেষণার খাতায় নাম ওঠাতে লোকদেখানো ব্যয় করেছে। যাতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয় না তা কেউ বলতে না পারে। এজন্য তারা ছলচাতুরী করে গবেষণা খাতে ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ টাকার মতো ব্যয় করে ইউজিসির তালিকায় নাম তুলেছে।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা না হওয়াটা দুঃখজনক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম-বেশি গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ হয়। বিজ্ঞান ও কৃষিতে আমাদের ভালো গবেষণা হয়। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে এই গবেষণার অর্থ সবসময় সঠিকভাবে ব্যবহার হয় না। আর বেসরকারি ১৫ থেকে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো। বাকি ৭০ থেকে ৮০টি হলো পাঠশালা। এখানে একজন শিক্ষককে প্রতিদিন পাঁচ-ছয়টি ক্লাস নিতে হয়। তাদের বেতনও খুব কম। তারা গবেষণার চিন্তাও করতে পারে না। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিরা চায়, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হোক আর টাকা আসুক। গবেষণায় তারা বরাদ্দও রাখেন না।’
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তবে টাকার অঙ্কে তা মাত্র ৮ কোটি। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা করে ব্যয় করেছে রাজশাহী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২১ সালে ৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় মোট ব্যয় ছিল ৭৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ফলে বাকি অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গবেষণায় নামমাত্র ব্যয় করেই দায় সেরেছে।
তবে গবেষণার দিক দিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গেছে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বোচ্চ ৫৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা গবেষণায় ব্যয় করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ কোটি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা গবেষণায় ব্যয় করেছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ। এ ছাড়া গবেষণায় উল্লেখযোগ্য ব্যয় করেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে গবেষণা অন্যতম পূর্বশর্ত। উন্নত দেশগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে গবেষণার মতো অত্যাবশ্যকীয় খাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা উল্লেখ করার মতো নয়। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই নিজেদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মনে করে। বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই গবেষণাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। ফলে দেশের উচ্চশিক্ষার মান এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, যে দেশে যত বেশি গবেষণার জন্য আর্থিক প্রণোদনাসহ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়, সে দেশ তত বেশি সমৃদ্ধ। যেমন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ইত্যাদি দেশে বারবার গবেষণা ছাড়া অপেক্ষাকৃত ছোট বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে যেসব দেশে বার্ষিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়, সে রকম ৯০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত থাকলেও বাংলাদেশ বরাবরের মতোই অনুপস্থিত।
দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতগুলোর মধ্যে গার্মেন্টস অন্যতম। আর এই খাতকে আরও শক্তিশালী করতে দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়। যাদের নিত্যনতুন গবেষণার মাধ্যমে এই খাতের সমৃদ্ধি অর্জনে কাজ করার কথা। অথচ ২০২১ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ব্যয় ছিল মাত্র ৫০ লাখ টাকা। এমনকি ওই বছরে তাদের একটিও গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়নি। দেশকে ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ১০ হাজার কোটি টাকার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) জমা দেওয়া হলেও ২০২১ সালে তারা গবেষণায় ব্যয় করেছে মাত্র ৬ লাখ টাকা, ছিল না কোনো প্রকাশনা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৯ বছরের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি গবেষণায় এক টাকাও খরচ করেনি। পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ গবেষণায় এক টাকাও ব্যয় করেনি। নামমাত্র ব্যয় করেছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ৭ লাখ ৪৩ হাজার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ২ লাখ ৫২ হাজার, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ৫ লাখ ৯৮ হাজার, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ১ লাখ ২৯ হাজার, সিটি ইউনিভার্সিটি ২ লাখ ৫০ হাজার, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ১ লাখ ৯৮ হাজার, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ২০ হাজার, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা ৬৮ হাজার, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অনেক বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ই এক লাখ টাকার নিচে ব্যয় করে গবেষণার খাতায় নাম তুলেছে।
তবে ইউজিসি প্রতিবছর গবেষণার জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রকার বৃত্তি ও ফেলোশিপ দিয়ে থাকে। ২০২১ সালে তারা এ খাতে ৮৯৪টি প্রকল্পের জন্য ১ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার ৭৯০ টাকা ব্যয় করেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি ইউজিসির গবেষণা বরাদ্দের গড় করা হয়, তাহলে প্রতিটি প্রকল্পের জন্য গড়ে বরাদ্দ মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে গবেষণা হয় না। তাই শিক্ষকরা বরাদ্দ নিলেও বেশিরভাগই প্রকৃত অর্থে কোনো গবেষণা না করে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়ে দায় সারেন।
রাত ৩টা। হঠাৎ হঠাৎ ট্রাক চলাচলের শব্দ কিংবা মোড়ে মোড়ে বেওয়ারিশ কুকুরের ডাক শোনা যায়। শীতের রাত, তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যেই রাস্তায় অনেক মানুষের গলার নিচুস্বর কানে আসে। কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া এত রাতে মানুষের জটলা সাধারণত হয় না। আমি থাকি তিনতলায়। কৌতূহলবশত বারান্দা থেকে নিচে উঁকি দিতেই দেখা গেল সারিবদ্ধ কয়েকজন নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। কেউ কি মারা গেল? তাহলে তো মসজিদের মাইকে ঘোষণা শুনতাম। কারও সঙ্গে কারও ঝগড়া কিংবা চুরি-ডাকাতির ঘটনা না তো? তাহলে তো চিৎকার-চেঁচামেচি হতো। কিন্তু তেমন কিছুই না।
কিছুটা সময় লাগলেও বোঝা গেল, আমার বাড়ির পাশেই খোলাবাজারে (ওএমএস) পণ্য বিক্রির দোকান খোলার অপেক্ষায় আছেন এসব লোকজন। তাদের পেছনে দূরত্ব রেখে ইটের টুকরো দিয়ে সিরিয়াল দেওয়া। কিন্তু রাত ৩টায় কেন? আমি যতদূর জানি সকাল ৮টার আগে ওএমএসের দোকানটি খোলে না। জানতে পারি সকাল হতে হতে লাইন অনেক দীর্ঘ হয়ে যায়। অনেক সময় সকালে এসে লাইনে দাঁড়ালে পণ্য পেতে দুপুর গড়িয়ে যায়। তাই লাইনের প্রথম দিকে যাতে থাকা যায় সে জন্য তারা রাতেই এসে অপেক্ষা করছেন। তীব্র শীতও অভাবের তাড়নাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে ওএমএসের লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া গতি কী। কাপড় জোড়াতালি দিয়ে বা সেলাই করে চলা যায়। কিন্তু না খেয়ে কি বেঁচে থাকা যায়?
সময়টা ছিল ১০ জানুয়ারি শেষ প্রহর। সেদিন আটা দেবে। আটার দাম এখানে প্রতি কেজি ২৫ টাকা, যা দোকানে ৫০ টাকা। একজন পাঁচ কেজি করে আটা নিতে পারবেন। এ কারণে এখান থেকেই বহুদিন ধরে আটা নিচ্ছেন এক নারী। নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, স্বামী রিকশা চালায়। দুই মেয়ে, এক ছেলে। স্বামী সারা দিন রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে ফেরেন। আবার সকালে বের হতে হয় রিকশা নিয়ে। ছেলে ছোট। আর মেয়েরা ছোট হলেও দিনের বেলায় লাইনে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু রাতে না।
শুধু এ নারীই নন, তার মতো আরও প্রায় ১০-১২ জন মধ্যবয়সী নারী লাইনে দাঁড়ানো। কথা বলার সময় কেউ কেউ শাড়ির আঁচল কিংবা চাদরে মুখ ঢাকছিলেন। কেউ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিলেন। এ শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে রাত জেগে কয়েক কেজি আটার জন্য একজন মানুষ তখনই দাঁড়ায় যখন তার খরচের লাগাম টানতে হিমশিম অবস্থা হয়। এ রাতে অনেক কিছুরই ভয় থাকে। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকে। তা সত্ত্বেও তারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কারও কাছে হাত পাতার চেয়ে কিছুটা কষ্ট করে বেঁচে থাকার চেষ্টা।
সীমার বয়স ৪০। স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দুই ছেলে, দুই মেয়ে। বড় ছেলে বাবার সঙ্গে কাজ করে। বয়স ১৮। ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। দুই মেয়ে স্কুলে পড়ে। তিনি বাসাবাড়িতে কাজ করেন। চাদরে মুখ ঢেকে বলেন, ‘সংসারে এত খরচ। কী করমু। এখান থেকে চাল, আটা নিই। বাজারে ডাবল দাম। একটু কষ্ট হলেও খরচ তো বাঁচে।’ রাতে কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ছেলের বাবা আর ছেলে সকালে কাজে যায়। মেয়েরা স্কুলে পড়ে, লাইনে দাঁড়াতে দিই না, মানুষ দেখব। আমিও তো সকালে কাজে যাই। এ জন্য রাতে আসছি।’
পেছন থেকে মায়া নামে এক নারী বলছিলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম এত বাড়ছে। আমরা গরিব মানুষ যেখানে কমে পাই, সেখানেই যাই। কী করমু। খাইতে তো হয়। না খাইয়া বাঁচমু কেমনে। দিনের বেলা লাইনে দাঁড়াইতে শরম লাগে।’
যখন কথা হচ্ছিল, তখন কেউ কেউ সামনে থেকে সরে যাচ্ছিলেন, হয়তো কোনো ভয়ে বা লজ্জায়।
এলাকায় আমার বসবাস দীর্ঘদিনের। প্রায় ৪০ বছর। একটু নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করেন এখানে। কয়েকটি বস্তিও আছে। এদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থাকেন। তারা আমার পরিচিত, আমাকে চেনেন তারা। অনেকের অবস্থা হয়তো কিছুদিন আগেও মোটামুটি ভালোই ছিল। কম খেলেও কারও কাছে হাত পেতে বা ন্যায্যমূল্যের দোকানে লাইনে দাঁড়াতে হতো না। অবাক করা বিষয়, মুখ ঢেকে যারা আমাকে আড়াল করতে চাইছেন ওরা তারাই।
সবুজবাগ থানাধীন দক্ষিণগাঁও ৩ নম্বর রোডে কাছাকাছি স্থানে তিনটি ওএমএসের দোকান। সকালে প্রতিটিতেই শতাধিক মানুষের লাইন দেখতে পাই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এখানেও গভীর রাতে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে দোকান খোলার অপেক্ষায় থাকেন। আরও একটি বিষয় খেয়াল করি, ওএমএস কার্যক্রমের শুরুতে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গোপন রাখতে চাইতেন। কিন্তু গত ১০ জানুয়ারি অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকে দেখলাম যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, তারা আর মুখ লুকাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত আগস্ট মাসে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বর মাসে তা হয় ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ওই সময় মূল্যস্ফীতি বা খাদ্যপণ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল দুই অঙ্কের কাছাকাছি। পেট্রল, অকটেন, ডিজেলসহ জ¦ালানি তেলের দাম গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সাড়ে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
যদিও বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, খাদ্যপণ্যে ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা নভেম্বর মাসে ছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। যা গত নভেম্বর মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
অর্থাৎ একজন মানুষকে দৈনিক যেসব পণ্যসামগ্রী ব্যবহার করতে হয় এর প্রতিটির মূল্যই বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ বা তারও বেশি। এ কারণে খাদ্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে ওএমএসের লাইন দাঁড়ানো ছাড়া স্বল্প আয়ের ও নিম্ন-মধ্যবিত্তে আর কী বিকল্প থাকতে পারে?
বাসার পাশের ওএমএসের দোকানে দিনের বেলায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন ষাটোর্ধ্ব আবদুল মালেক। এলাকায় থাকেন দীর্ঘদিন। আগে ছোটখাটো চাকরি করতেন। কাছে গিয়ে নিচুস্বরে জানতে চাই, চাচা আপনি কী নিচ্ছেন। সাবলীলভাবেই বললেন, ‘আটা নেব। এখানে আটা ভালো দেয়। আগেও নিয়েছি। দোকানের চেয়ে অর্ধেক দাম। তাই খরচ বাঁচাতে এখানে আসছি। লাইনে দাঁড়াতে হয় এই যা।’ যোগ করলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, কোনো উপায় নেই।’
বাংলাদেশে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য নেওয়া মেগা প্রকল্পে জি-২০ নেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণের জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য আমরা আরও কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছি। এসব প্রকল্পের জন্য আমাদের উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন। এ বিষয়ে জি-২০ সহায়ক হবে বলে আমি আশা করি।’
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট-২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ‘বৈশ্বিক দক্ষিণের’ (গ্লোবাল সাউথ) উন্নয়নের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জি-২০ জোটের সামনে ছয়টি প্রস্তাবও রেখেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিকে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপট) বিবেচনায় নিয়ে একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।’
গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোয় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এই সম্মেলন বিশ্বজুড়ে তাদের সমকক্ষদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার এক অনন্য সুযোগ করে দেবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ গ্লোবাল সাউথের একটি দেশ এবং ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ ধারণার আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জি-২০-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানায়। আসুন আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং একটি উন্নত বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করি।
টেকসই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তার প্রথম প্রস্তাবে শেখ হাসিনা বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন যা এসডিজির সমান্তরালে সামগ্রিকভাবে বৈষম্যকে মোকাবিলা করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয়ত, স্বল্পোন্নত দেশ, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য বিশেষ অর্থায়নের প্রয়োজন। তাদের উত্তরণের সময় এটি পূরণ করতে হবে। চতুর্থ প্রস্তাবে তিনি নারীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল ডিভাইডস’ সেতুবন্ধ রচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিনিয়োগ করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা নেওয়ার জন্য অর্থায়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর সমর্থন অত্যাবশ্যক।
পঞ্চমত শেখ হাসিনা বলেন, সব মানুষেরই ভালোভাবে জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। তিনি বলেন, বৈশ্বিক সম্প্রদায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যেন ভুলবেন না।
ষষ্ঠ প্রস্তাবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাউথ-সাউথ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে অংশীদার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাত, থিংক-ট্যাংক এবং অন্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় পাঁচ দশক আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী জি-২০ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জি-২০ প্ল্যাটফর্মকে আরও অর্থবহ করার জন্য তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করি।’ তিনি ‘ভয়েস অব দ্য সাউথ সামিট’ আহ্বান করার এবং ‘মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন’ বিষয়ক উদ্বোধনী অধিবেশনে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও অভিনন্দন জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের স্তম্ভ হিসেবে মানব উন্নয়নের প্রকৃত মূল্যে বিশ্বাস করে এবং এটা সরকারের নীতিতে প্রতিফলিত হয়। আমরা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সহযোগিতায় মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য আপনার (মোদির) জোরালো উদ্যোগে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক কভিড-১৯ মহামারী এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা এবং খাদ্য, জ্বালানি ও সারের সংকট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে যুক্ত করে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যে ভাষণ দেন তা উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য, মানসম্মত জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক দায়িত্ব রয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আজও প্রাসঙ্গিক। এই চেতনাকে সামনে রেখে, আমরা মানুষের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে স্বীকৃত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএমএফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ জিডিপির দিক থেকে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে মাত্র এক দশকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ এলডিসি স্তর থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য সব শর্ত পূরণ করেছে। এটি সন্তোষজনক যে বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম সেরা কভিড প্রতিরোধী দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সেরা পারফরমার হিসেবে স্থান পেয়েছে।
আর্থিক এবং অন্যান্য প্রণোদনার জন্য ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ২৮টি প্যাকেজ সরাসরি ৭ কোটি ৩ লাখ লোক এবং ২ লাখ ১৩ হাজার সংস্থার কাছে পৌঁছেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটি শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে উন্নত ভৌত অবকাঠামো দিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার আকাক্সক্ষা রাখি।
তিনি বলেন, গত বছর স্ব-অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করা হয়েছ, যা জিডিপি বাড়াবে। কয়েক দিন আগে রাজধানী ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেল সার্ভিস চালু হয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ শেষ করব, যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৩৫ লাখ মানুষকে বিনা খরচে ঘর এবং জীবিকার উপায় করে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের আকাক্সক্ষা হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক দেশে রূপান্তরিত করা এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু সহনশীল বদ্বীপ গড়ে তোলা। আমরা টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য এবং সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করার প্রত্যাশা করি। বাসস
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে ইতিমধ্যেই রাজনীতিতে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বেশ উচ্চৈঃস্বরেই নিজের নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা আছে। বিদেশিদের চাপও আসতে শুরু করেছে বিভিন্নভাবে। এ চাপ সামলাতে সংবিধান সমুন্নত রাখার কৌশল ধরেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাবে এমনটাই জানা গেছে দলটির নেতাদের কাছ থেকে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংবিধানের মধ্যে থেকেই বিদেশি যেকোনো পরামর্শ সরকার রাখবে। সংবিধানকে ভিত্তি ধরে এগোনোর কৌশল বিফল হবে এমনটা মনে করেন না ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যু ও নির্বাচন বিষয়ে বিদেশি পরামর্শ আমলে নেওয়ার একমাত্র পথ সংবিধানসম্মত উপায় অবলম্বন করা। তাতে আওয়ামী লীগের দুই কূল রক্ষা পাবে। বিদেশিদের পরামর্শ যেমন রাখা হবে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকারও থাকবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দেশই সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে না। আর সেটা আমরাও মানতে বাধ্য নই।’ দলের সঙ্গে বিদেশিদের সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে কাজ করা এই নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ সরকারের নেই। সংবিধানের মধ্যে থাকা সকল সুযোগ সব দল সমানভাবে ভোগ করবে।’
ফারুক খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই বলে আসছেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কাউকে নির্বাচনে আনতে, ক্ষমতায় নিতে অন্যায় আবদার রাখার মতো দল কি আওয়ামী লীগ?
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ সরকারের নেই। সুতরাং নিরপেক্ষ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার বিএনপির দাবি কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংবিধানে যেভাবে বলা আছে সেভাবেই। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা দাবি করেন বিদেশিরা চাপ দিতে পারবে, কিন্তু সংবিধান বা আইন লঙ্ঘনের জন্য চাপ দিতে পারবে না তারা। প্রত্যেক দেশেরই আলাদা আইন-সংবিধান থাকে। সেই নির্দেশিত পথে চলতে হয় সরকারকে। আওয়ামী লীগের অবস্থান এইদিকে থাকলে বিএনপির দাবি মানার চাপ দিতে নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে যাবে বিদেশিরা।
তারা বলেন, সংবিধানে থাকা সকল সুযোগ সব দল ও গোষ্ঠীর নিশ্চিত করা হবে। প্রয়োজনে বিদেশিদের কাছে অঙ্গীকার করা হবে, কিন্তু সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ সরকারের নেই।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানায়, তাদের মূল অবস্থান হলো কোনো অনির্বাচিত প্রতিনিধি বা স্বল্প সময়ের কোনো সরকারের হাতে নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগ দেবে না। এর বাইরে অন্য দাবিতে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা-প্রস্তুতি আওয়ামী লীগ রাখবে। নির্বাচনকালীন সরকারের ক্ষমতা কমিয়ে কীভাবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা যায় তেমন গ্রহণযোগ্য ‘ব্যবস্থাপত্র’ থাকলে সেখানে ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকবে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে সরকার। ভোটের সময় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অবাধ যাতায়াত ও ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে সরকার সকল সহযোগিতা দেবে। এমনকি নির্বাচনের সময় সকল রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবেএ ব্যাপারে কারও কোনো পরামর্শ থাকলে সেটিও ইতিবাচকভাবে নেবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন যে, নির্বাচনের আগে অর্থাৎ চলতি বছর মার্চের শেষে এ ধরনের সকল কিছুতেই আপস করা ও ছাড় দেওয়ার মনোভাব দেখানো হবে; কিন্তু সংবিধানের বাইরে যাওয়ার বিদেশিদের দাবি ও চাপ সুকৌশলে এড়িয়ে চলবে দল ও সরকার।
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংবিধান সমুন্নত রাখার এই কৌশলের কারণে বিদেশি শক্তিগুলো চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারবে নাএ বিশ্বাস তাদের আছে। তারা মনে করেন, সংবিধান সমুন্নত রাখার প্রশ্নে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি দুর্বল হয়ে যাবে। তাই নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে চাপ দেওয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে বিদেশিরা।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা বলেন, বিএনপি যেমন লবিস্ট নিয়োগ করে বিদেশিদের কৃপা নেওয়ার চেষ্টা করছে, তেমনি সরকারও লবিস্ট নিয়োগ করে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ যে নেই তাদের সেটা বোঝাতে সমর্থ হচ্ছে। পাশাপাশি সংবিধানসম্মত সবকিছুতে আওয়ামী লীগ বা সরকারের দ্বিমত না থাকার কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকদের দাবি, সংবিধান লঙ্ঘন না করার বিষয়ে দলের প্রচার সফল হচ্ছে। কারণ দেশের জনগণ তা মেনে নিতেও শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে বিদেশিরাও এ ব্যাপারে চাপ সৃষ্টির নৈতিকতা হারাবে।
এ ছাড়া কৌশলের অংশ হিসেবে বিদেশি দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কর্মকর্তাদের উপস্থিতি থাকা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতারাও যাচ্ছেন। সংবিধানের বাইরে কেন যাওয়া যাবে না সে বিষয়ে বিদেশি ওই কর্মকর্তাদের কাছে আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরছেন তারা। একই সঙ্গে বিদেশিদের জানিয়ে দিচ্ছেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের জন্য বিদেশি হস্তক্ষেপ বা চেষ্টা বেআইনি হবে, নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে, জনগণের কাছে বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে এবং গ্রহণযোগ্য হবে না।
জামায়াত ছাড়া বিএনপির টিকে থাকাই দুষ্কর বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার একই কথা বলেছি, সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি। বিএনপি-জামায়াত একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাদের একটিকে ছাড়া আরেকটির চলবে না। জামায়াত ছাড়া বিএনপির টিকে থাকাই দুষ্কর।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নেতিবাচক রাজনীতি করতে করতে বিএনপি যেখানে গিয়ে পৌঁছেছে, তাদের বড় সমাবেশ, বড় মিছিল করতে হলে জামায়াতকে দরকার। জামায়াতের আবার একটি সমর্থক-কর্মীর ব্যাংক আছে। কাজেই সমাবেশ বড় করতে হলে, মিছিলে লোক বেশি আনতে হলে জামায়াত ছাড়া তাদের (বিএনপি) চলবে না।’
ফরিদপুরে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিতে সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বুধবার কোথাও সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ফরিদপুরে যেটা হয়েছে, সেটা হচ্ছে তাদের মিটিং থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে সেটা বেশি দূর গড়ায়নি। সমাধান হয়ে গেছে। আর ময়মনসিংহে স্পটে কিছু হয়নি। তবে তাদের গাড়ি নাকি আক্রান্ত হয়েছে। ঢিল ছুড়েছে, এ রকম কিছু হয়েছে। ঢাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
বিএনপির সঙ্গে পাল্টা কোনো কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা কর্মসূচি পালন করেছি। পরদিন ১১ জানুয়ারি আমাদের কর্মসূচি ছিল। মহানগরী উত্তর-দক্ষিণ আমাদের যুবলীগ-ছাত্রলীগ, অন্য সহযোগী সংগঠন, মফস্বলের উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করেছি। এটি সব সময় হয়ে আসছে। এখানে পাল্টাপাল্টির কোনো বিষয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজপথে আছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, আমাদের বিক্ষোভ করার কিছু নেই। তবে শান্তি সমাবেশ করব। শান্তির শোভাযাত্রা করব। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।’
বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের তো কোনো নেতা নেই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে নেতৃত্ব দেবেন। রাজনৈতিকভাবে তিনি আমাদের সভাপতি। তিনি আমাদের পরবর্তী নির্বাচনের নেতা। তাদের কে? তারা কখনও বলে বেগম জিয়া, কখনো বলে তারেক রহমান তাদের নেতা। কিন্তু তাদের নির্বাচন করার যোগ্যতা নেই। তারা অভিযুক্ত আসামি। কাকে তারা নেতা বানাবেন? গতবার কামাল হোসেন ছিলেন। পরে তাদের মানসম্মানও বিঘ্নিত হয়ে গেছে। সবাই জানেন, শেষ পর্যন্ত তিনিও (কামাল) হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এবার কী হবে, সময় বলে দেবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের প্রচেষ্টায় সমাজপতিদের বাধায় ঘরছাড়া সেই নবদম্পতি অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন। ওই নবদম্পতিকে অবশেষে মেনে নিয়েছেন ও সমাজপতিরা।
বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেলে জেলা পুলিশের একটি দল তাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়।
এর আগে ওই নবদম্পতি মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। পুলিশ সুপার সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেন।
ছেলে মৎস্যজীবী পরিবারের হওয়ায় তাদেরকে ঘরে তুলতে পারছিলেন না। সেই বিয়েকে অস্বীকার করেন স্থানীয় সমাজপতি ও গ্রামের মোড়লরা। বিষয়টি নিয়ে গত ২৮ মার্চ দেশ রূপান্তরে ‘সমাজপতিদের না জানিয়ে বিয়ে, ঘরছাড়া নবদম্পতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরই এ ঘটনা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবালা ইউনিয়নের উত্তর কাগাবলা গ্রামের ইমন মিয়ার সাথে গত ১৯ মার্চ সাতবাক গ্রামের পলি আক্তারের বিয়ে হয়। ধর্মীয় বিধান মেনে চার লাখ টাকা কাবিন নির্ধারণ করে নিকাহনামা রেজিস্ট্রির মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কথা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর বাধা হয়ে দাঁড়ান স্থানীয় মুরব্বিরা। তাদের দাবি, প্রথা অনুযায়ী মৎস্যজীবী পরিবারের সঙ্গে বাইরের কারো বিয়ে হয় না।
গত ২৫ মার্চ পলি আক্তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর আলোচনায় আসে বিষয়টি।
বাড়ি ফিরে নবদম্পতি পলি আক্তার ও ইমন মিয়া বলেন, সমাজপতিদের ভয়ে আমরা আত্মগোপনে ছিলাম। আমরা বাড়ি ফিরেছি। সমাজ আমাদেরকে মেনে নিয়েছে। আমি পুলিশ প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাদের কারণে আমরা নতুন জীবন ফিরে পেলাম।
আপার কাগাবলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমন মোস্তফা বলেন, নবদম্পতি তাদের বাড়ি ফিরেছেন। গ্রামের সব পক্ষকে নিয়ে মডেল থানায় বসে বিষয়টি সমাধান করা হয়। সেখানে সবাই একমত হয়েছে, তাদের সংসারে কেউ বাধা দেবেন না। আমরা তাদের মেনে নিয়েছি।
মৌলভীবাজারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, সমাজের সবাই তাদের মেনে নিয়েছেন। বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধান হয়েছে। যার কারণে নবদম্পতি বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। পুলিশের একটি টিম তাদেরকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে।
যদি কোনো নারী কমপক্ষে দুটি মুরগি পালন করেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তাকে শ্রমশক্তির আওতায় এনেছে সরকার। অথচ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে কর্মের আওতায় এসেছেন এমন পরিসংখ্যানের হিসাবই দেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের কথা থাকলে শ্রমশক্তি জরিপটি ছয় বছর পর প্রকাশ করল বিবিএস। এতে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার বলে উল্লেখ করা হযেছে। যা ২০১৭ সালের জরিপে ছিল ২৭ লাখ। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। শ্রমশক্তি জরিপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন তবে তাকে বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার আছে। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ছয় বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার।
জরিপে দেখা গেছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধান এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল।
জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
জরিপের হিসাবে আরও দেখা যায়, দেশে শ্রমশক্তির বাইরে আছেন ৪ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নারী ৩ কোটি ৪৮ লাখ, পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বেকারত্ব কমে আসার পাশাপাশি কর্মে নিয়োজিত জনবলও বেড়েছে দেশে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে অর্থনীতির মূল গতিবিধি আমরা বুঝতে পারব। আমরা কোনো তথ্যই লুকিয়ে রাখব না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের গৃহিণীরা প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করেন। তাদের শ্রম হিসাব করা হয় না। তাদের শ্রম হিসাবে এলে জিডিপির আকার ৬০০ থেকে ৭০০ বিলিয়ন হতো। নারীদের শ্রমের প্রকৃত বিচার হয় না। আমরা আশা করছি এখন থেকে এ তথ্য প্রতি তিন মাসেই পাব।
আইএলওর আইন মানা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইএলওর মানদ- অনুযায়ী এ জরিপ করা হয়েছে। কডিডের সময় আমাদের দেশে বেকারত্ব কমেছে কারণ সে সময় আমরা শিল্প খোলা রেখেছিলাম। লকডাউনে সড়কে বাস চলাচল করতে দিয়েছি। ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সে সময়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এটি প্রভিশনাল রিপোর্ট। এ তথ্য মূল প্রতিবেদনে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থনীতির হাল বোঝার জন্য এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকার বাড়ছে নাকি কমছে সে তথ্য সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, এগুলো সবসময়ই এসে থাকে। এসব প্রশ্ন আসবেই। শহরের মহিলা শ্রমিক কমে গেছে, তার মানে হলো তারা গ্রামে গিয়ে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের বিষয়ে বিশেষ সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে।
এ সময় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডেটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডেটাবেজ নেই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে সাভারের আশুলিয়া থানাধীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংলগ্ন আমবাগান এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মো. গোলাম কিবরিয়া নামে এক ব্যক্তির করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান। তিনি বলেন, ‘শামসুজ্জামানকে আদালতে পাঠানো হবে।’ তবে গতকাল রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে আদালতে পাঠানোর তথ্য পাওয়া যায়নি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, ‘২৯ মার্চ ২.১৫ ঘটিকায়’ এজাহার পেয়ে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
শামসুজ্জামান গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিমের ভাই। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের (৩৫তম আবর্তনের) ছাত্র ছিলেন। পড়ালেখা করার সময়ও তিনি প্রথম আলো পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোররাত ৪টার দিকে তিনটি গাড়িতে মোট ১৬ জন ব্যক্তি শামসুজ্জামানের বাসার সামনে যান। তাদের মধ্যে ৭-৮ জন বাসার ভেতরে ঢোকেন। একজন শামসুজ্জামানের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোনসেট ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যান। বাসায় ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করার পর তাকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান ওই ব্যক্তিরা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বটতলার নুরজাহান হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, শামসুজ্জামানসহ ১৯ জন সাহরির খাবার খান। ভোর পৌনে ৫টার দিকে বটতলা থেকে তারা আবার শামসুজ্জামানের বাসায় যান। দ্বিতীয়বার বাসায় যাওয়ার সময় আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় শামসুজ্জামানের বাসায় ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম।
আরিফুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাসায় এসে তারা জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন। শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তোলা হয়। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আবার তারা বের হয়ে যান। বাসা তল্লাশির সময় দুবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন উপস্থিত ছিলেন।’
শামসুজ্জামানকে আটকের সময় ওই বাসার মালিককে ডাকেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জানান, শামসুজ্জামানের করা একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রের আপত্তি আছে। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নেওয়া হচ্ছে।
ছেলের গ্রেপ্তারের খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা করিমন নেসা। রাতের আঁধারে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই কি দেশের বিচার? শামসের ভাই রবিউল দেশের জন্য শহীদ হইছে। শহীদের ভাইয়ের রক্ত, একই রক্ত। দেশের জন্য জীবন দিয়া গেল যে, সে তার ভাই। আজ তার বাবা নাই।’
করিমন নেসা বলেন, ‘আল্লাহ আমার স্বামীরে নিছে, এক সন্তানরে নিছে। আমি খালি চাই, আমার এই ছেলে বুকে ফিরে আসুক। আমি আর কিচ্ছু চাই না। আমার সন্তান ঘরে থাকব, আমি ওর মা ডাক শুনব।’
উল্লেখ্য, গত রবিবার প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘কার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় অসংগতিটি নজরে আসে এবং সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদন সংশোধন করে সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখসহ পরে আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি যে উক্তিটি ওই শিশুর। বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।
শামসুজ্জামান শামসের গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য যে কেউ ক্ষুব্ধ হতে পারেন। তাদেরই একজন মামলা করেছেন।’ তবে কে মামলা করেছেন, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাদীর নাম জানাতে পারেননি। গতকাল দুপুরে মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে ‘বেসরকারি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের মধ্যে অনুদান বিতরণ ও বার্ষিক ড্রাগ রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। রাষ্ট্রও আইন অনুযায়ী চলে। প্রথম আলো যে সংবাদটি প্রকাশ করেছে, সেটা যে মিথ্যা ছিল, তা ৭১ টিভির সংবাদে পরিষ্কার হয়ে উঠে এসেছে। প্রথম আলোর সাংবাদিক সাহেব যে নিউজটি করেছেন সেটা সঠিক ছিল না। যেটা ৭১ টিভির মাধ্যমে আপনারাই প্রকাশ করেছেন। এই সংবাদটা যে ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাপানো হয়েছে ৭১ টিভির মাধ্যমে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। এই নিউজটা আপনাদের কাছেও নিশ্চয়ই ভালো লাগেনি।’
তবে একজন সাংবাদিককে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে যেতে হবে কেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার বাদী গোলাম কিবরিয়া রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, যুবলীগের ঢাকা মহনগর উত্তরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক তিনি। একই ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথম আলোর রিপোর্টে সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বা কারও চাপের মুখে তিনি মামলা করেননি বলে দাবি করেছেন।
মামলার এজাহারে ঘটনার তারিখ ও সময় উল্লেখ রয়েছে ২৯ মার্চ ২০২৩ ও ১.৩২ ঘটিকা। অর্থাৎ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩২ মিনিটে ব্যক্তিগত কাজে বাদী গোলাম কিবরিয়া তেজগাঁও থানাধীন ফার্মগেট এলাকার আল রাজী হাসপাতালের সামনে অবস্থানকালে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ব্রাউজ করছিলেন। ওই সময় দেখতে পান, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে। একই সঙ্গে ওই সংবাদটি পত্রিকাটির ফেসবুক পেজে শেয়ার করে। সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি, সেই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ সামাজিকমাধ্যমে সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং সংবাদটি দেশ-বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করে। এই ঘটনায় মহান স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সোনালি গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবসের দিনে এ সংবাদ প্রকাশ করায় বিশ্বব্যাপী দেশের ভাবমূর্তি ও স্বাধীনতার অর্জন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ৭১ টিভি চ্যানেল ও তাদের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। নাম-পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ গতকাল রাতে মোবাইল ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শামস দুটো কোটেশন দিয়েছিল, একটা এক দিনমজুরের, আরেকটা হচ্ছে এক কিশোরের। সেই রিপোর্টের মধ্যে এখনো সেটা আছে। তারপর আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়েছি তখন ছবিটা গেছে কিশোরের, কোটেশনটা গেছে দিনমজুরের। আমরা যখন দেখেছি দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে নিয়েছি। নিউজটা কিন্তু এখনো আছে এবং নিউজের মধ্যে আমরা সংশোধনী দিয়েছি মিস কমিউনিকেশন হতে পারে বলে। এখানে শামসের বিন্দুমাত্র দোষ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর যেটা হতে পারত, আমাদের প্রেস কাউন্সিল আছে, সিস্টেম আছে, ওইদিকে যেহেতু যায়নি তাতে বোঝা যায় আমাদের সাংবাদিকতা চাপের মধ্যে আছে। কারণ এখানে ছোট্ট ঘটনায় গভীর রাতে মামলা হয়েছে। খুব ভোরে তাকে বাড়ি থেকে তুলে এনেছে। শামস তো কোনো চুরিও করেনি, অপরাধও করেনি, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’
আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সব আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করছি। শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে একটি মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করার কথা। আমরা অপেক্ষা করছি। আইনি যেসব পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয় আমরা আমাদের সহকর্মীর জন্য করব।’
সম্পাদকদের উদ্বেগ : সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং তাকে আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। গতকাল বুধবার সংগঠনটির পক্ষে সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের দেওয়া এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়। একই সঙ্গে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।
এ ছাড়া ঢাকার সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসকে তার বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এডিটরস গিল্ড অব বাংলাদেশ। গতকাল এক বিবৃতিতে বিষয়টি প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তিরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ২৫(২), ২৬(২), ২৯(১), ৩১(২) ও ৩৫(২) ধারায় মামলা ও আটকে সম্পাদক পরিষদ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ইতোমধ্যেই সাংবাদিকতাসহ বাকস্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের কাছ থেকেও আইনটির পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিয়োজন ও সংযোজনের বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ, সুপারিশ ও উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।’
এতে বলা হয়েছে, ‘আইনটি তৈরির সময় থেকেই সম্পাদক পরিষদ এবং সাংবাদিকরা এ আইনের বিষয়ে উদ্বেগ ও আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। আইনমন্ত্রী এই আইনের বিভিন্ন রকম অপব্যবহার এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও এই আইনের মাধ্যমে সংবাদকর্মী ও মুক্তমত প্রকাশকারী ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, কোনো সংবাদে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ ও মামলা করতে পারেন। কিন্তু সেটি না করে সরাসরি ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হচ্ছে। তাই সাংবাদিকতার স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্রুত সংশোধনসহ সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসসহ সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে এই আইনে কেউ গ্রেপ্তার বা আটক থাকলে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছে সংগঠনটি।
এডিটরস গিল্ডের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের কোনোভাবেই গ্রেপ্তার, হয়রানি বা নির্যাতন করা যাবে না। গণমাধ্যমের জন্য মুক্ত ও স্বাধীন কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে এডিটরস গিল্ড বলেছে, প্রথম আলো যদি সাংবাদিকতার নীতিবিরুদ্ধ কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে সাহায্য চাইতে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।