
করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনে ৯০ কোটি মানুষ সংক্রমিত হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়। এ হিসাবে দেশটির জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। চীনের সরকারি কর্মকর্তারাও বলছেন, অনেক প্রদেশ এবং নগরীতেই কভিড সংক্রমণের চূড়া পার হয়ে গেছে।
গতকাল শুক্রবার ওই গবেষণার বরাতে বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলেছে, সংক্রমণের দিক থেকে চীনের বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে শীর্ষে রাখা হয়েছে গানসু প্রদেশকে। সেখানে ৯১ শতাংশ মানুষের কভিড শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরপরের অবস্থানে আছে ইয়ুনান প্রদেশ। সেখানে ৮৪ শতাংশ মানুষের কভিড শনাক্ত হয়েছে। এরপর তৃতীয় অবস্থানে আছে কিংঘাই, যেখানে কভিড শনাক্ত হয়েছে ৮০ শতাংশ মানুষের।
নতুন চান্দ্র বছরে পল্লী এলাকাগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরও বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন চীনের শীর্ষ এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ। চীনের রোগ প্রতিরোধ কেন্দ্রের সাবেক প্রধান জেং গুয়াং জানিয়েছেন, তাদের ধারণা, চীনে কভিড সংক্রমণের ঢেউয়ের চূড়া দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
বিবিসি বলছে, নতুন বছর সামনে রেখে শত শত চীনা তাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছে। অনেকেই কভিড মহামারী শুরুর পর প্রথম বাড়ি যাচ্ছে।
চীন তাদের জিরো-কভিড নীতি পরিহার করার পর থেকে দৈনিক শনাক্তের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে না। কিন্তু দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বড় বড় নগরীর হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে যাচ্ছে। এ মাসের শুরুর দিকে এক অনুষ্ঠানে চীনের সংবাদমাধ্যম কাইকসিন নিউজকে রোগ প্রতিরোধ কেন্দ্রের সাবেক প্রধান জেং বলেছিলেন, এখন গ্রামীণ এলাকার দিকে নজর দেওয়ার সময়। কারণ, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন সেখানকার বয়স্ক ও অক্ষম লোকজন। দেশের অনেক পল্লী এলাকায় এখনো হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্র নেই।
চীনের হেনান প্রদেশই কেবল তাদের কভিড আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবিস্তারে প্রকাশ করেছে। এ মাসের শুরুর দিকে সেখানকার এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, প্রদেশটির ৯০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। শহর এবং গ্রাম দুই এলাকাতেই আক্রান্তের হার একই দেখা গেছে।
২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকার কুর্মিটোলায় নির্জন স্থানে ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। তদন্তে জানা যায়, মজনু নামের ভাসমান এক অপরাধী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পরে ধরাও পড়ে সে। ঠিক দুই বছর পরে একই সময়ে মগবাজার ফ্লাইওভারে মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গেও ভাসমান অপরাধী জড়িত থাকার তথ্য পায় তদন্তকারী সংস্থা।
এ দুটি ঘটনার মতোই ঢাকাসহ সারা দেশে ভাসমান অপরাধীরা প্রায় নানা অপরাধ ঘটাচ্ছে, যা পুলিশের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য তাদের তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভাসমান অপরাধীসহ সব ধরনের অপরাধীচক্রকে ধরতে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভাসমান অপরাধীদের নিয়ে গত মাসে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বলা হয়েছে, ভাসমান অপরাধীরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা দেওয়ার পর জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে। ওই তালিকায় অনুযায়ী, ১ লাখ ৫ হাজারের মতো ভাসমান অপরাধী আছে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরে সংখ্যা বেশি। রিকশাচালক, রং, কাঠ, স্যানেটারি ও রাজমিস্ত্রি, দোকান-কর্মচারী, ভাঙারি ব্যবসায়ী, ফেরিওয়ালা, হালকা যানবাহনের চালকবেশে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যায় এসব অপরাধী। ফলে তাদের ধরতে সমস্যা হচ্ছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানান, সারা দেশে ৪৫ হাজারের মতো বস্তি আছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আছে ১১০টি। এসব বস্তিতেই ভাসমান অপরাধীরা বেশি সক্রিয়। তা ছাড়া বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও ফুটপাতেও থাকে তারা।
রাজধানী ছাড়াও প্রায় সব কটি জেলায় ভাসমান অপরাধী আছে। এসব অপরাধীকে নিয়ন্ত্রণ করে কথিত রাজনৈতিক নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। অপরাধ ছাড়াও তাদের দিয়ে মিছিল-মিটিং করানো এমন তথ্য পেয়েছেন বলে জানান ওই পুলিশ সুপাররা। ভাসমান অপরাধীদের নিয়ে সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, ছয় মাস আগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কতজন ভাসমান অপরাধী আছে, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপার ও ইউনিটপ্রধানদের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। চিঠি পেয়ে ইউনিটপ্রধানরা বৈঠক করেন। থানার ওসিদের অনুসন্ধান করে তালিকা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গত মাসে পুলিশ সদর দপ্তরে এ-সংক্রান্ত বৈঠকে বলা হয়, ভাসমান অপরাধীরা এক এলাকায় অপরাধ ঘটিয়ে অন্য এলাকায় আস্তানা গাড়ে। সেখানে আবার অপরাধ ঘটিয়ে আরেক এলাকায় পালিয়ে যায়। এতে করে তাদের ধরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। বৈঠকে কিশোর গ্যাংয়ের তথ্যভাণ্ডার তৈরি, ভাসমান মানুষ নিয়ে নজরদারি বৃদ্ধি, বিট পুলিশিং জোরদার করার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। যে এলাকাগুলোয় ভাসমান লোকজনের আনাগোনা বেশি, ওই সব এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর তাগাদা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা বিমানবন্দর, বিশ^রোড, কদমতলী, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, হাইকোর্ট এলাকাসহ শতাধিক স্থানকে ভাসমান অপরাধের জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইতিমধ্যে।
গত বছর করা আদমশুমারি অনুযায়ী, সারা দেশে বস্তিতে থাকা মানুষের সংখ্যা পাওয়া গেছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। এর মধ্যে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২ লাখের বেশি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি অপরাধ পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর রাজধানীতে খুন হয়েছে ১৬৬ জন। এর মধ্যে ৫৫টি ঘটনা ঘটেছে ভাসমান অপরাধীদের হাতে। তারা খুন, ছিনতাই, মাদক সেবন থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধে জড়িত। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যেই খুনোখুনি করছে তারা। হত্যাকা-ের পাশাপাশি চুরি-ডাকাতি-ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে। ফুটপাত ও রেললাইনের পাশজুড়ে মাদক কেনাবেচা, যৌনবৃত্তি নিয়েও অপরাধের ঘটনা ঘটছে। তাদের কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বা থাকে না। যে কারণে তাদের আটক করা কঠিন হয়ে পড়ে।
পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার মহাখালীর কড়াইল বস্তি, জুরাইন বালুর মাঠ বস্তি, গোপীবাগের টিটিপাড়া বস্তি, মালিবাগের কুমিল্লা বস্তি, মোহাম্মদপুরের বালুর মাঠ বস্তি, মালিবাগের রেললাইন বস্তি, খিলগাঁওয়ের নোয়াখাইল্লা বস্তি, মীর হাজিরবাগ বস্তি, ধলপুর সিটিপল্লী বস্তি, নামাশ্যামপুর বস্তি, গেন্ডারিয়ার রেললাইন বস্তি, পার গেন্ডারিয়া বস্তি, মহাখালীর সাততলা বস্তি, পোস্তগোলা ডিআইটি বস্তি, ডেমরার চরপাড়া বস্তি, পূর্ব দোলাইরপাড় ডিপটি গলির বস্তিসহ বেশির ভাগ বস্তিতেই ভাসমান অপরাধীদের আস্তানা। প্রকাশ্যেই তারা মাদক বেচাকেনা করে। এসব ভাসমান অপরাধীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভাসমান অপরাধীদের ধরতে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে।
পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, ফেনী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শেরপুর, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা, বগুড়া, ফরিদপুর, পাবনা, টাঈাইল, ঢাকার সাভার, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী, কুষ্টিয়া এলাকায় ভাসমান অপরাধী বেশি। এসব অঞ্চলের বস্তিতেই বেশি বসবাস তাদের। অস্ত্র, মাদক কেনাবেচা, নারী ও শিশু পাচার, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত এই অপরাধীরা। প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক নেতারা বস্তির অপরাধীদের ব্যবহার করেন। যে কারণে প্রশাসনও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন গৃহকর্তা খোকন বসাক (৪২)। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মহাজনপাড়া গ্রামের বসাকপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
আগুন লাগার পর গৃহকর্তা কোনোরকম বের হয়ে আসতে পারলেও ঘরের ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যান তার বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললিতা বসাক (৬০), ছেলে সৌরভ বসাক (১২), মেয়ে শায়ন্তী বসাক (৪), স্ত্রী লাকী বসাক (৩২)। গুরুতর অবস্থায় খোকন বসাককে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রাত ২টা ১০ মিনিটে রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যান এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় খোকন বসাকের ঘর পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুনে পুড়ে মৃতদের লাশ উদ্ধার করেন এবং আহতকে হাসপাতালে পাঠান। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান সুমন জানান, নিহতদের লাশ পুলিশ এবং স্থানীয় পারুয়া ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। আগুনে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম, রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব মিলকী পুলিশ ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা ও লাশ উদ্ধার করেন।
উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক খোকন বসাক বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সেমিপাকা ঘরে বসবাস করতেন। তিন কক্ষবিশিষ্ট ঘরে বের হওয়ার একটাই দরজা। এ দরজা ছিল রান্নাঘরের সঙ্গে যুক্ত। রান্নাঘরের চুলা বেষ্টিত ছিল প্রচুর শুকনো কাঠের লাকড়ি। রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন ছড়িয়ে বাইরের পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। গৃহকর্তা খোকন বের হতে সক্ষম হলেও অন্যদের পথ খুঁজে পাওয়াই অসম্ভব হয়ে উঠে। উদ্ধারকর্মীদেরও ঘরে প্রবেশ করে লোকজনকে বের করে আনা সুযোগ ছিল না। আগুনে খোকন বসাকের সিএনজি অটোরিকশাটিও পুড়ে ছাই হয়েছে। হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পার্বতীপুরে আগুনে পুড়ে শিশুর মৃত্যু: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আগুনে পুড়ে চার বছরের এক ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম ইউসুফ ইমরান। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার চ-ীপুর ইউনিয়নের ঝাড়ুয়ারডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আকস্মিকভাবে এলাকার জনাব আলীর বাড়ির তিনটি ঘরে আগুন লেগে যায়। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কিছু সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন পরিবারের সদস্যরা। ততক্ষণে ঘরের মধ্যে ঘুমন্ত শিশু ইউসুফ ইমরান আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। এ সময় ১ লাখ টাকা, টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, গ্যাস সিলিন্ডারসহ বাড়ির সব আসবাব ভস্মীভূত হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, শালা নুর আলমের স্ত্রী সন্তান জন্মের তিন দিন পর মারা যান। এরপর থেকে নুর আলম ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। শিশু ইউছুফ ইমরানকে কোলে-পিঠে মানুষ করছিলেন জনাব আলী।
খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে পার্বতীপুর উপজলো সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমাদুল হাসান, দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন, পার্বতীপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত খান ও চ-ীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষীতগ্রস্তদের মাঝে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল ও খাদ্য বিতরণ করে।
বকশীগঞ্জে বৃদ্ধের মৃত্যু : জামালপুরের বকশীগঞ্জে শীত নিবারণ করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে সওদাগর আলী (৭৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের টুপকার চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রবণ প্রতিবন্ধী সওদাগর আলী শীত নিবারণের জন্য বাড়িতে কাঠ দিয়ে আগুন ধরান। একপর্যায়ে তার কাপড়ে আগুন ধরে যায়। পরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ঘটনার সময় বাড়ির লোকজন ঘুমিয়েছিলেন।
বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু জানান, অগ্নিদগ্ধে নিহত সওদাগরের লাশ দাফন করা হয়েছে।
আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত টঙ্গীর তুরাগতীর। লাখো মুসল্লির পদভারে পুণ্যময় নগরীর রূপ নিয়েছে টঙ্গী শহর। ইজতেমা ময়দানের চারপাশে কেবল সাদা টুপি আর পাঞ্জাবি। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির জমায়েতের মাধ্যমে তুরাগতীরে শুরু হয়েছে এবারের প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।
প্রথম দিন শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। শুক্রবার হওয়ায় গতকাল অনুষ্ঠিত হয় স্মরণকালের বৃহত্তম জুমার নামাজ। বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত নামাজে ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের।
সকাল থেকেই টঙ্গী, ঢাকা, উত্তরা, আশুলিয়া, সাভার ও আশপাশের এলাকার লোকজন জুমার নামাজে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার আগেই ইজতেমা মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক, অলিগলিসহ যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে নামাজে শরিক হন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গতকাল সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আনুষ্ঠানিকতা : ইজতেমার আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, শুক্রবার বাদ ফজর উর্দুতে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক মূল বয়ান শুরু করেন। জুমার আগে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা, জুমার খুতবা পড়েন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের। তিনিই জুমার নামাজে ইমামতি করেন। জুমার পর মূলমঞ্চ থেকে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা জুবায়ের ও বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট। বয়ান অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা উমর ফারুক।
ইজতেমাস্থলের বয়ানমঞ্চ থেকে মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি ভাষায় তা তরজমা হয়। পরে তাবলিগ মারকাজের শূরা সদস্য ও বুজুর্গরা ইমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে ফজিলতপূর্ণ বয়ান করেন। বয়ান বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি, ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
আয়োজকরা বলেছেন, বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচির মধ্যে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানোসহ নতুন জামাত তৈরি হবে।
শুক্রবার বয়ানে বলা হয়, ‘পৃথিবীতে ইমানের মূল্য অনেক। ইমানকে মজবুত করতে হলে আমাদের দাওয়াতি কাজে সময় দিতে হবে। আমরা যেন আল্লাহপাকের হুকুমমতো সারা জীবন চলতে পারি, সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে। নিজের আমল দিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল যে কাজে খুশি হন, তা আমাদের বেশি বেশি করতে হবে। আমাদের সবার আখেরাতের চিরস্থায়ী জিন্দিগির জন্য আবাদ করতে হবে।’
নামাজে ভিআইপি : জুমার নামাজে শরিক হন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান প্রমুখ।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : গাজীপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, জুমার নামাজ আদায় করতে আশপাশের জেলার অনেক মুসল্লি এখানে আসেন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ট্রাফিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যানজটমুক্ত চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, রবিবার আখেরি মোনাজাত হবে। মুসল্লি ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ তাতে অংশ নিতে আসবেন। তার জন্যই ট্রাফিক ব্যবস্থা। শনিবার মধ্যরাত থেকে টঙ্গী ব্রিজ, কামারপাড়া ব্রিজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরের বাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে ইজতেমা সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। ইজতেমা শেষে যাওয়ার সময় একই ব্যবস্থা থাকবে। আমরা নাগরিকদের কাছে সুশৃঙ্খল আচরণ আশা করি।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ খাবার ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সুষ্ঠু রাখার জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন ২১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
বিদেশি মুসল্লি : পুলিশ কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ইজতেমার পর্বের প্রথম দিন বিভিন্ন দেশ থেকে দুই হাজারের বেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
কন্ট্রোলরুম : ইজতেমা ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা ও মুসল্লিদের খেদমতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের (ডেসকো) পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা : এবারের বিশ্ব ইজতেমায় অর্ধশতাধিক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। হামদর্দের মেডিকেল ক্যাম্পে গত দুই দিনে প্রায় দুই হাজার মুসল্লিকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ১২৩ জনকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একজন বিদেশিসহ ১০ জনকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি ও তিনজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
ট্রাফিক ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের কারণে ইজতেমার প্রথম দিনে যানজটের মুখে পড়তে হয়নি রাজধানীর মানুষকে। গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার উত্তরাসহ আশপাশের এলাকায় তেমন যানজট দেখা যায়নি। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ও দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ পড়তে সড়কে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। উত্তরা ও গাজীপুরের তিন সড়কে যান চলাচল সীমিত রাখা হয়েছিল। তবে যাত্রীবাহী ও ইজতেমাগামী সব ধরনের যান চলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মুসল্লিরা যাতে নির্বিঘেœ নামাজ আদায় করতে পারেন, সে জন্য বাড্ডা, মহাখালী, এয়ারপোর্ট ও ধউর বেড়িবাঁধ সড়কের যানবাহন বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেয় ট্রাফিক পুলিশ।
উত্তরা-আব্দুল্লাহপুরে অনাবিল পরিবহনের চালকের সহকারী মঞ্জু মোল্লা দেশ রূপান্তরকে জানান, তাদের গাড়ি গাজীপুর থেকে বাড্ডা হয়ে যাত্রাবাড়ীতে যায়। আশার সময় তেমন যানজট পাননি। যাওয়ার সময় টঙ্গীতে সড়কে মুসল্লিরা নামাজে দাঁড়িয়েছেন, তাই আব্দুল্লাহপুরে অপেক্ষা করছেন।
ইজতেমা ময়দানের আশপাশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান : বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা এবং তাদের কাছ থেকে পণ্যের সঠিক মূল্য রাখার লক্ষ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। প্রথম দিনে ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইজতেমা ময়দানের পাশে মুন্নু সিরামিক গেটসংলগ্ন আল্লাহর দান হোটেলে পচা-বাসি খিচুড়ি বিক্রির অভিযোগে এর মালিককে ৫ হাজার, কামারপাড়া এলাকায় অতিরিক্ত দামে কম্বল বিক্রির অভিযোগে একজনকে ৪ হাজার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেজুর বিক্রির অভিযোগে একজনকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মুসল্লিদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।
ঝড়বৃষ্টির এক সন্ধ্যায় ফেনসিডিলের বোতল সঙ্গে নিয়ে মাদক উদ্ধারের সাজানো অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৪ লাখ টাকা নিজের পকেটে ঢোকানোর অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পরিদর্শক মো. রায়হান আহমেদ খানের বিরুদ্ধে। পরিদর্শক রায়হান একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে গেলেও জব্দ তালিকায় মাত্র ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা উদ্ধারের কথা উল্লেখ করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীর। গত বছরের ৪ অক্টোবর দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানা এলাকার তাজপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মোকসেদুল হকের বাড়িতে চালানো হয় ওই অভিযান।
অভিযানের সময় বাড়িতে ছিলেন না মোকসেদুল। অভিযান শেষে এলাকার দুজনকে সাক্ষী দেখিয়ে মোকসেদুল ও তার স্ত্রী মোছা. মার্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে ওই দুই ‘সাক্ষীকে’ দেখানো হয়নি উদ্ধার হওয়া টাকা ও মাদক। মামলাটির দুই সাক্ষীর সঙ্গেই কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। সাক্ষীরা জানিয়েছেন, অভিযানটি ছিল সাজানো। তাদের উদ্ধার হওয়া মাদক ও টাকার পরিমাণ জানানো হয়নি। ফলে অভিযান, টাকা ও মাদক উদ্ধার এবং দুজনের বিরুদ্ধে করা মামলার উপাদান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
মোকসেদুল হকের দাবি, তার কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য তিল তিল করে গোছানো এবং জমির বন্ধক ছোটানো থেকে পাওয়া টাকার সবই নিয়ে গেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাজানো অভিযানকারীরা। এক প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রুতার জেরে ওই সাজানো অভিযান চালানো হয় বলেও দাবি তার।
মোকসেদুল হক এ ঘটনার বিচার চেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরে আবেদন করেছেন। আর অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসি’র রংপুর বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) দিলারা রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তদন্ত এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে, আমি কাজ করছি।’
বিভিন্ন দপ্তরে করা মোকসেদুলের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের পহেলা অক্টোবর মোকসেদুরের চাচা আলহাজ মো. শহিদুর রহমান তার জমি মোকসেদুলের কাছ থেকে বন্ধক অবমুক্ত করে নেওয়ার জন্য মোট ৯ লাখ টাকা মোকসেদুলকে ফেরত দেন। এছাড়া মাছ, গরু ও ধান বিক্রির ৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকাসহ মোট ১৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা মোকসেদুলের কাছে গচ্ছিত ছিল। পরে ৪ অক্টোবর ঝড়বৃষ্টির সন্ধ্যায় পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খানের নেতৃত্বে দুজন বোরকা পরা নারীসহ ১৫-১৬ জনের একটি দল মোকসেদুলের বাড়িতে গিয়ে ২৪ বোতল ফেনসিডিল ফেলে রাখে। পরে সেগুলো উদ্ধারের নামে ঘরের আলমারির ড্রয়ার ভেঙে ১৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ সময় বাড়িতে থাকা মোকসেদুলের স্ত্রী ও মা-বাবাকে মারধর করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে বাড়ি থেকে মোকসেদুলের স্ত্রী মর্জিনাকে ধরে নিয়ে যায় সাজানো অভিযানকারীরা। পরে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় জব্দ দেখায় ২৪ বোতল ফেনসিডিল এবং মাত্র ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা। বাকি টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মোকসেদুলকে মামলায় ফাঁসানো ও হত্যার হুমকি দেন পরিদর্শক রায়হান।
এদিকে সন্ধ্যায় অভিযান চালানো হলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটির এজাহারে বলা হয়েছে, ‘৪ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোকসেদুলের বাড়িতে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যায় মোকসেদুল। ঘণ্টাব্যাপী চলা অভিযানে মো. আমিনুল হক (৬০) ও মো. রশিদুল আলম (৩২) সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে মোকসেদুলের শোবার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে কাঠের শোকেসের ওপরের ড্রয়ারে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে ২৪ বোতল কোডিন ফসফেট মিশ্রিত তরল পদার্থ ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। একই ব্যাগের ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।’
এই মামলায় জেলও খেটেছেন মোকসেদুল হক। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মামলাটির সাক্ষী মো. আমিনুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘‘অভিযান শেষে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে তা আমাকে দেখায়নি। মাদকও দেখিনি আমি। আমি উপস্থিত ছিলাম এজন্য আমাকে বলেছিল, ‘মাল পাইছি সই করো’। এই বলে একটা সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিছিল। সেখানে কিছু লেখা ছিল না।’’
সাদা কাগজে কেন স্বাক্ষর করলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে আমিনুল বলেন, ‘সে সময় মোকসেদুলের স্ত্রী-সন্তান, বুড়া বাপ-মা সবাই হাউমাউ করে কাঁদতেছিল। তাড়াতাড়ি আমার কাছ থেকে সইটা নিয়ে চলে গেছে। অভিযানকারীদের প্রশ্ন করার মতন অবস্থা ছিল না।’
মামলার আরেক সাক্ষী রশিদুল আলম বলেন, ‘আমাকে কোনো মাদক দেখায়নি। তবে একটা ব্যাগ ভর্তি মেলা টাকা দেখছি। কত টাকা ছিল বলে নাই।’
আর মোকসেদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একসময় মাদক বিক্রি করতাম। তবে এখন ভালো হয়ে গেছি। মুদি দোকান ও জমি চাষাবাদ করি। মেয়ের বিয়ের জন্য অল্প অল্প করে টাকা গুছিয়েছিলাম। কিন্তু আমার শত্রুরা মাদকের ইন্সপেক্টর রায়হান স্যারকে দিয়ে সাজানো অভিযান চালিয়ে সব টাকা নিয়ে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মোকসেদুল চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে অতীতে চারটি মাদকের মামলা আছে। সে প্রতিদিন ফেনসিডিল বিক্রি করে। তার বাসা থেকে মাদক ও টাকা উদ্ধার হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।’
কী পরিমাণ মাদক ও কত টাকা উদ্ধার হয়েছিল তা সাক্ষীদের দেখানো বা জানানো হয়নি কেন জানতে চাইলে এই মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদকের লোক কখনো ভুয়া মামলা করে না। যে কারও বাড়িতে অভিযান হলে বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা জব্দ করে নিয়ে যাচ্ছে, আর তার বউ আছে, ছেলে আছে, ছেলের বউ আছে, নাতি-নাতনি আছে, বৃদ্ধ বাবা-মা আছে, আশপাশে আরও আট থেকে দশটি বাড়ি আছে, টাকা গুনে কত টাকা জব্দ হলো তা দেখে কি আপনাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেবে?’
উৎসব-পার্বণ ছাড়াও প্রায় প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে বসে গানের আসর। তিনি গান করেন, গিটার আর স্যাক্সোফোন বাজিয়ে তাকে সংগত করেন দুই ছেলে। বড় ছেলে গিটারের সঙ্গে গানও করেন। সেজো জন স্যাক্সোফোনে তোলেন মোহনীয় সুর। চতুর্থ জন কবিতা আবৃত্তি করেন। পঞ্চম ছেলে কবিতাপ্রেমী এবং কবি। সাত ছেলে ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যৌথ বসবাস। এমন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব আর পারিবারিক বন্ধন যার, তিনি হলেন দেশের খ্যাতনামা শিল্প গ্রুপ পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
মাইজভান্ডারি গানের ভক্ত এই শিল্পপতির বাড়িটি যেন মরমি সংগীত লালন, মাইজভান্ডারি আর কাওয়ালি গানের কেন্দ্র। তার বাড়িতে নিয়মিতই ভক্তিমূলক গানের আসর বসে। পরিবারের সব সদস্যের পাশাপাশি ঘনিষ্ঠজনদের অনেকেই উপস্থিত থাকেন সেই আসরে। ‘মন অহংকারে দিন কাটালি মানুষ হবি কেমন করে। তোর সাধন ভজন নষ্ট হইল, হিংসা নিন্দা অহংকারে’-কবিয়াল রমেশ শীলের এ গানটি সুযোগ পেলেই গেয়ে শোনান সুফি মিজান।
শিল্পপতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে সুফি উপাধি দেওয়া হয় প্রায় ২৫ বছর আগে। আল্লামা রুমী সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আহমদুল হক তাকে এই উপাধি দেন বলে জানা যায়।
দেশের সেরা শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পিএইচপি। ২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়া গ্রুপটির টার্নওভার বছরে ৪ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সুফি মিজানুর রহমান। সাত ছেলেকে দিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব।
এমন বর্ণাঢ্য জীবন যার, তার শুরুটা হয়েছিল ১০০ টাকা বেতনের চাকরি দিয়ে। কিন্তু মেধা, পরিশ্রম আর নিষ্ঠার অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন পিএইচপি, যার মানে হলো শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি (পিস, হ্যাপিনেস, প্রসপারিটি)। এই তিন শব্দের অনুপ্রেরণা সঙ্গে নিয়ে বাবা ও ছেলেরা মিলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এমন বড় ও স্বনামখ্যাত শিল্প গ্রুপটিকে। একই সঙ্গে মাইজভাণ্ডারি ও মরমি সংগীতকে অমর ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করে চলেছেন সুফি মিজান ও তার সন্তানেরা।
আবদুল গফুর হালির মতো অসাধারণ গীতিকার ও সুরকার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সুফি মিজানের সান্নিধ্য পান। তার সব সৃষ্টিকে অমর করার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেন সুফি মিজান। গফুর হালির গান সংরক্ষণ করা, শিল্পীদের দিয়ে নতুন করে গান গাইয়ে নেওয়ার মতো অতিপ্রয়োজনীয় কাজটি করা ছাড়াও সুফি পরিবার মরমি শিল্পী কবিয়াল রমেশ শীলের সৃষ্টিকেও অমরত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। চট্টগ্রামের এই শিল্পীর গানগুলোও সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পরিবারটি।
বাংলা লোকগানের অন্যতম ধারা চাটগাঁইয়া গানের কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার শিল্পী গফুর হালি তার ‘চাটগাঁইয়া নাটক সমগ্র’ গ্রন্থে ‘তুলনাহীন মানুষ শিরোনামে’ লেখা একটি কবিতায় এই শিল্পপতি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমি একজন মানুষকে চিনি/মনুষ্যত্বের সব গুণ যার কাছে বিদ্যমান/আমার সেই প্রিয় মানুষটির নাম/আলহাজ্জ শাহ সুফি মিজানুর রহমান।’
গফুর হালি ও আঞ্চলিক গানের গবেষক সাংবাদিক নাসির উদ্দিন হায়দার সুফি মিজানুর রহমান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘সুফি সাহেব সেই ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে য্ক্তু ছিলেন। একসময় রেডিও-টিভিতেও গিয়েছিলেন। তবে তিনি চট্টগ্রামে আসার পর মাইজভান্ডারির খলিফা আবদুস সালাম ইছাপুরীর মুরিদ হন। আর তখন থেকেই তিনি মাইজভান্ডারি গানের প্রতি দরদি হয়ে ওঠেন। মাইজভান্ডারি গান শোনা, এই গানের শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, যন্ত্রসংগীত শিল্পীদের সহায়তা করা এসবই করছেন তিনি। সুফি সাহেবের কাছ থেকে প্রায় অর্ধশত শিল্পী সম্মানী পেয়ে আসছেন।’
কারখানায় লোহা গলিয়ে স্টিল নির্মাণ কিংবা কাচ তৈরিতে দেশের কিংবদন্তি হওয়ার পথে থাকা এই শিল্প পরিবার শিল্প উৎপাদনে যেমন ব্যস্ত, তেমনিভাবে নিজেদের জীবনযাপনকে শিল্পিত করে তুলতে সমান মনোযোগী। গান-বাজনার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধনের অনন্য উদাহরণও এ পরিবারটি। পাশাপাশি দুটি ভবনে সুফি মিজানুর রহমানসহ সাত ছেলে তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে খাবার খেতে রয়েছে ২০ চেয়ারের ডাইনিং টেবিল। যেখানে সুফি মিজানুর রহমান ও তাহমিনা রহমান দম্পতি সব ছেলে ও তাদের স্ত্রী-সন্তাদের সঙ্গে নিয়ে খাবার খেয়ে থাকেন।
বড় শিল্পপতি হলেও কারও সঙ্গে দেখা হলেই দীর্ঘ সালাম দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সুফি মিজান। এ মানুষটি নিজে খাওয়ার চেয়ে খাওয়াতেই বেশি ভালোবাসেন। অতিথি আপ্যায়নে তার জুড়ি মেলা ভার। তার প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে করলা ভাজি, ইলিশ মাছ, কই মাছ ও ছোট মাছ। খাওয়ার আগে ও পরে দুই দফা মোনাজাত করে মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন। ধর্মীয় অনুষ্ঠান, গান-বাজনা, হজ-জাকাত, খেলাধুলা, চিকিৎসাসেবা, এতিমখানাসহ সব ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এ জন্য সুফি মিজান ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থাও গঠন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবায় কাজ করে আসা সুফি মিজানুর রহমানকে ২০২০ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়।
নিজে সুমধুর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন যেমন তেলাওয়াত করতে পারেন, তেমনিভাবে মোয়াজ্জিন ও নামাজের জামাতে ইমামের দায়িত্বও পালন করতে পারেন এই শিল্পপতি। ধর্মীয় এসব আয়োজন সুন্দরভাবে করতে পারা ৮০ বছর বয়সী গুণী এই মানুষটির জন্ম হয়েছিল ১৯৪৩ সালের ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। স্থানীয় ভারত চন্দ্র বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে এসএসসি, ১৯৬৩ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একই কলেজ থেকে পরে তিনি বিকম ও ব্যাংকিং বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। ছাত্রাবস্থায় এইচএসসি পাসের পরপরই তিনি নারায়ণগঞ্জের জালাল জুট মিলে ১০০ টাকা বেতনে চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান (বর্তমানে সোনালী ব্যাংক) চট্টগ্রামের লালদীঘি শাখায় জুনিয়র ক্লার্ক হিসেবে যোগ দেন। এই ব্যাংক ছেড়ে ১৯৬৭ সালে যোগ দেন তৎকালীন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড (বর্তমানে পূবালী ব্যাংক) খাতুনগঞ্জ শাখায় ৮০০ টাকা বেতনে। বৈদেশিক বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ওই ব্যাংকেই কাজ করেন। আর এ শাখায় কাজ করতে গিয়েই দেশের বিভিন্ন ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুফি মিজান ব্যবসা শুরু করেন। গড়ে তোলেন শিল্পকারখানা। প্রথমে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, পরে রি-রোলিং মিল, ঢেউটিন, কাচ তৈরি, মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ডের প্রোটন গাড়ি কারখানা থেকে শুরু করে বর্তমানে ২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার।
ব্যক্তি সুফি মিজানুর রহমান ও তাহমিনা রহমান দম্পতির সাত ছেলে ও এক মেয়ে। এই সাত ছেলের প্রথম তিনজন যথাক্রমে মোহাম্মদ মহসিন, মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরের চারজন যথাক্রমে মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মোহাম্মদ আমীর হোসেন সোহেল, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু ও মোহাম্মদ আকতার পারভেজ হিরু পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। একমাত্র মেয়ে ফাতেমা তুজ জোহরা।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যেখানে তরুণরা এখন বিদেশেই স্থায়ী হয়ে যান, সেখানে সুফি মিজানুর রহমানের সব ছেলে দেশে ফিরে এসেছেন। বাবার সঙ্গে ব্যবসায় হাল ধরেছেন। বাবা ও সাত ছেলের সম্মিলিত মেধা ও পরিশ্রমে এগিয়ে গেছে পিএইচপি গ্রুপ। ব্যবসায় ক্রান্তিকাল এলেও তাদের সম্মিলিত প্রয়াসে তা ঠিকই সব উতরে যায়।
ছেলেদের সম্পর্কে বাবা সুফি মিজানুর রহমানের মন্তব্য, ‘আমার সাত ছেলে সাতটি সোনার টুকরো।’
বাবাদের কাছে সন্তান সব সময় সোনার টুকরোই হয়ে থাকে। কিন্তু সুফি মিজানের সন্তানরা প্রকৃতপক্ষেই ব্যতিক্রম। বাবার বিনয়ী আচরণ সব সন্তানের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। তারা যেমন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন, তেমনি মানবিক গুণাবলী ও সমাজসেবায়ও বাবার মতো।
এসবের বাইরেও তাদের রয়েছে শৈল্পিক মন। বাড়িতে যখন গানের আসর বসে, তখন গিটারে সুর ছড়িয়ে গান করেন বড় ছেলে মোহাম্মদ মহসিন। বড় ছেলে যখন গিটার বাজান, তখন সেজো ছেলে আনোয়ারুল হক স্যাক্সোফোনে সুর তোলেন। পঞ্চম ছেলে আমির হোসেন কবিতাপ্রেমী। নিজেও কবিতা লেখেন। চতুর্থ ছেলে আলী হোসেন কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করেন দারুণ ছন্দে।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।