
‘ছোট মেয়ে সায়ন্তী চিৎকার করে বলছিল, ‘বাবা আগুন, বের হও, বের হও।’ তার চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙে। আমি বের হয়ে বেঁচে যাই; কিন্তু তাকে বের করতে পারিনি। বাবা, মা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে সবাই পুড়ে গেছে। কাউকে বাঁচাতে পারিনি।’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ছয়তলায় বার্ন ইউনিটের সামনের পথচারী হাঁটার পথে শুয়ে ৪২ বছর বয়সী অগ্নিদগ্ধ খোকন বসাক একথা বলতে বলতে অঝোরে কান্নায় বুক ভাসিয়েছেন। শরীরের উপরের অংশ পুড়ে যাওয়ায় সেখানে ব্যান্ডেজ লাগানো আছে। যন্ত্রণায় কাতর খোকনের শরীরে শ্বাসনালিসহ পুড়েছে ২০ শতাংশ।
কাছে গিয়ে জানা যায়, পরিবারের সবাইকে হারানোর শোক কুরে কুরে খাচ্ছে তাকে। যে সন্তানের ডাকে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বাঁচিয়ে নিলো, সেই সন্তানকে আগুন থেকে মৃত উদ্ধারের যন্ত্রণায় সে কাতর।
অগ্নিকান্ডের ঘটনা নিয়ে দগ্ধ খোকন বসাক বলেন, দুই শিশু সন্তানের ডাকে ঘুম ভাঙার পর দেখি আমার ঘর জ্বলছে। এরপর তাদেরসহ বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে জড়ো হই বারান্দায়। তখন ঘরের সব ক’টি রুম পুড়ছে। আগুন নেভানোর চিন্তায় আমি বের হয়ে যাই। বাইরে গিয়ে পাগলের মতো চেঁচিয়েছি। কাউকে পাইনি। আগুন এত বেড়ে গেছে যে, কাউকে আর বের করতে পারছিলাম না। নলকূপের পানি দিয়ে নেভানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি একা আর পারিনি। চোখের সামনে আমার পুরো পরিবার জ্বলে মরেছে ওই বারান্দায়।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মহাজনপাড়ায় এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। বসতঘরে একটি মাত্র দরজা এবং প্রচুর পরিমাণ লাকড়ি থাকায় অগ্নিকান্ডে মারা যান কাঙ্গাল বসাক (৭০), ললিতা বসাক (৬০), লাকী বসাক (৩২), সৌরভ বসাক (১২), সায়ন্তী বসাক (৪)। আর ২০ শতাংশ আগুনে পুড়ে বেঁচে যান সিএনজি অটোরিকশা চালক খোকন বসাক। তার বাম হাত, বুক ও পিঠ পুড়ে গেছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, তার শ্বাসনালির কিছু অংশও পোড়া গেছে।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে এলেও বন্ধের দিন হওয়ায় চিকিৎসকদের দেখা মিলছে না বলে জানিয়েছেন খোকনের স্বজন টিপলু বসাক। তিনি বলেন, ‘আগুনে পুরো পরিবার পুড়ে যাওয়া খোকন দগ্ধ শরীর নিয়ে আহাজারি করছিল। এক পর্যায়ে খোকনও আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় কিছু করতে পারিনি। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মেডিকেলে আনার পর খোকনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বলেছে, শ্বাসনালিও কিছুটা পুড়েছে। কিন্তু বন্ধের কারণে আজকে (শুক্রবার) কোনো ডাক্তার তাকে দেখতে আসেনি।’
রাঙ্গ্নিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সুমন বলেন, ‘ঘর থেকে বের হওয়ার দরজা একটা হওয়ায় অন্যরা বের হতে পারেনি। তারা সেখানেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। লাকড়ির চুলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে বলে ধারণা করছি।’
২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকার কুর্মিটোলায় নির্জন স্থানে ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। তদন্তে জানা যায়, মজনু নামের ভাসমান এক অপরাধী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পরে ধরাও পড়ে সে। ঠিক দুই বছর পরে একই সময়ে মগবাজার ফ্লাইওভারে মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গেও ভাসমান অপরাধী জড়িত থাকার তথ্য পায় তদন্তকারী সংস্থা।
এ দুটি ঘটনার মতোই ঢাকাসহ সারা দেশে ভাসমান অপরাধীরা প্রায় নানা অপরাধ ঘটাচ্ছে, যা পুলিশের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য তাদের তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভাসমান অপরাধীসহ সব ধরনের অপরাধীচক্রকে ধরতে পুলিশকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভাসমান অপরাধীদের নিয়ে গত মাসে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বলা হয়েছে, ভাসমান অপরাধীরা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা দেওয়ার পর জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে। ওই তালিকায় অনুযায়ী, ১ লাখ ৫ হাজারের মতো ভাসমান অপরাধী আছে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরে সংখ্যা বেশি। রিকশাচালক, রং, কাঠ, স্যানেটারি ও রাজমিস্ত্রি, দোকান-কর্মচারী, ভাঙারি ব্যবসায়ী, ফেরিওয়ালা, হালকা যানবাহনের চালকবেশে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যায় এসব অপরাধী। ফলে তাদের ধরতে সমস্যা হচ্ছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানান, সারা দেশে ৪৫ হাজারের মতো বস্তি আছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আছে ১১০টি। এসব বস্তিতেই ভাসমান অপরাধীরা বেশি সক্রিয়। তা ছাড়া বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও ফুটপাতেও থাকে তারা।
রাজধানী ছাড়াও প্রায় সব কটি জেলায় ভাসমান অপরাধী আছে। এসব অপরাধীকে নিয়ন্ত্রণ করে কথিত রাজনৈতিক নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। অপরাধ ছাড়াও তাদের দিয়ে মিছিল-মিটিং করানো এমন তথ্য পেয়েছেন বলে জানান ওই পুলিশ সুপাররা। ভাসমান অপরাধীদের নিয়ে সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, ছয় মাস আগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কতজন ভাসমান অপরাধী আছে, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপার ও ইউনিটপ্রধানদের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তর। চিঠি পেয়ে ইউনিটপ্রধানরা বৈঠক করেন। থানার ওসিদের অনুসন্ধান করে তালিকা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
গত মাসে পুলিশ সদর দপ্তরে এ-সংক্রান্ত বৈঠকে বলা হয়, ভাসমান অপরাধীরা এক এলাকায় অপরাধ ঘটিয়ে অন্য এলাকায় আস্তানা গাড়ে। সেখানে আবার অপরাধ ঘটিয়ে আরেক এলাকায় পালিয়ে যায়। এতে করে তাদের ধরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে। বৈঠকে কিশোর গ্যাংয়ের তথ্যভাণ্ডার তৈরি, ভাসমান মানুষ নিয়ে নজরদারি বৃদ্ধি, বিট পুলিশিং জোরদার করার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। যে এলাকাগুলোয় ভাসমান লোকজনের আনাগোনা বেশি, ওই সব এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর তাগাদা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা বিমানবন্দর, বিশ^রোড, কদমতলী, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, হাইকোর্ট এলাকাসহ শতাধিক স্থানকে ভাসমান অপরাধের জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ইতিমধ্যে।
গত বছর করা আদমশুমারি অনুযায়ী, সারা দেশে বস্তিতে থাকা মানুষের সংখ্যা পাওয়া গেছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। এর মধ্যে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২ লাখের বেশি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি অপরাধ পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর রাজধানীতে খুন হয়েছে ১৬৬ জন। এর মধ্যে ৫৫টি ঘটনা ঘটেছে ভাসমান অপরাধীদের হাতে। তারা খুন, ছিনতাই, মাদক সেবন থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধে জড়িত। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যেই খুনোখুনি করছে তারা। হত্যাকা-ের পাশাপাশি চুরি-ডাকাতি-ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে। ফুটপাত ও রেললাইনের পাশজুড়ে মাদক কেনাবেচা, যৌনবৃত্তি নিয়েও অপরাধের ঘটনা ঘটছে। তাদের কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বা থাকে না। যে কারণে তাদের আটক করা কঠিন হয়ে পড়ে।
পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার মহাখালীর কড়াইল বস্তি, জুরাইন বালুর মাঠ বস্তি, গোপীবাগের টিটিপাড়া বস্তি, মালিবাগের কুমিল্লা বস্তি, মোহাম্মদপুরের বালুর মাঠ বস্তি, মালিবাগের রেললাইন বস্তি, খিলগাঁওয়ের নোয়াখাইল্লা বস্তি, মীর হাজিরবাগ বস্তি, ধলপুর সিটিপল্লী বস্তি, নামাশ্যামপুর বস্তি, গেন্ডারিয়ার রেললাইন বস্তি, পার গেন্ডারিয়া বস্তি, মহাখালীর সাততলা বস্তি, পোস্তগোলা ডিআইটি বস্তি, ডেমরার চরপাড়া বস্তি, পূর্ব দোলাইরপাড় ডিপটি গলির বস্তিসহ বেশির ভাগ বস্তিতেই ভাসমান অপরাধীদের আস্তানা। প্রকাশ্যেই তারা মাদক বেচাকেনা করে। এসব ভাসমান অপরাধীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভাসমান অপরাধীদের ধরতে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে।
পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, ফেনী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শেরপুর, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা, বগুড়া, ফরিদপুর, পাবনা, টাঈাইল, ঢাকার সাভার, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী, কুষ্টিয়া এলাকায় ভাসমান অপরাধী বেশি। এসব অঞ্চলের বস্তিতেই বেশি বসবাস তাদের। অস্ত্র, মাদক কেনাবেচা, নারী ও শিশু পাচার, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত এই অপরাধীরা। প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক নেতারা বস্তির অপরাধীদের ব্যবহার করেন। যে কারণে প্রশাসনও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন গৃহকর্তা খোকন বসাক (৪২)। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মহাজনপাড়া গ্রামের বসাকপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
আগুন লাগার পর গৃহকর্তা কোনোরকম বের হয়ে আসতে পারলেও ঘরের ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যান তার বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললিতা বসাক (৬০), ছেলে সৌরভ বসাক (১২), মেয়ে শায়ন্তী বসাক (৪), স্ত্রী লাকী বসাক (৩২)। গুরুতর অবস্থায় খোকন বসাককে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রাত ২টা ১০ মিনিটে রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যান এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় খোকন বসাকের ঘর পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুনে পুড়ে মৃতদের লাশ উদ্ধার করেন এবং আহতকে হাসপাতালে পাঠান। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান সুমন জানান, নিহতদের লাশ পুলিশ এবং স্থানীয় পারুয়া ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। আগুনে ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম, রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব মিলকী পুলিশ ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা ও লাশ উদ্ধার করেন।
উদ্ধারকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক খোকন বসাক বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সেমিপাকা ঘরে বসবাস করতেন। তিন কক্ষবিশিষ্ট ঘরে বের হওয়ার একটাই দরজা। এ দরজা ছিল রান্নাঘরের সঙ্গে যুক্ত। রান্নাঘরের চুলা বেষ্টিত ছিল প্রচুর শুকনো কাঠের লাকড়ি। রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন ছড়িয়ে বাইরের পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। গৃহকর্তা খোকন বের হতে সক্ষম হলেও অন্যদের পথ খুঁজে পাওয়াই অসম্ভব হয়ে উঠে। উদ্ধারকর্মীদেরও ঘরে প্রবেশ করে লোকজনকে বের করে আনা সুযোগ ছিল না। আগুনে খোকন বসাকের সিএনজি অটোরিকশাটিও পুড়ে ছাই হয়েছে। হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পার্বতীপুরে আগুনে পুড়ে শিশুর মৃত্যু: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আগুনে পুড়ে চার বছরের এক ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম ইউসুফ ইমরান। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার চ-ীপুর ইউনিয়নের ঝাড়ুয়ারডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আকস্মিকভাবে এলাকার জনাব আলীর বাড়ির তিনটি ঘরে আগুন লেগে যায়। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কিছু সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন পরিবারের সদস্যরা। ততক্ষণে ঘরের মধ্যে ঘুমন্ত শিশু ইউসুফ ইমরান আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। এ সময় ১ লাখ টাকা, টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, গ্যাস সিলিন্ডারসহ বাড়ির সব আসবাব ভস্মীভূত হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, শালা নুর আলমের স্ত্রী সন্তান জন্মের তিন দিন পর মারা যান। এরপর থেকে নুর আলম ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। শিশু ইউছুফ ইমরানকে কোলে-পিঠে মানুষ করছিলেন জনাব আলী।
খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে পার্বতীপুর উপজলো সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমাদুল হাসান, দিনাজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন, পার্বতীপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত খান ও চ-ীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষীতগ্রস্তদের মাঝে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল ও খাদ্য বিতরণ করে।
বকশীগঞ্জে বৃদ্ধের মৃত্যু : জামালপুরের বকশীগঞ্জে শীত নিবারণ করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে সওদাগর আলী (৭৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের টুপকার চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রবণ প্রতিবন্ধী সওদাগর আলী শীত নিবারণের জন্য বাড়িতে কাঠ দিয়ে আগুন ধরান। একপর্যায়ে তার কাপড়ে আগুন ধরে যায়। পরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ঘটনার সময় বাড়ির লোকজন ঘুমিয়েছিলেন।
বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু জানান, অগ্নিদগ্ধে নিহত সওদাগরের লাশ দাফন করা হয়েছে।
আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত টঙ্গীর তুরাগতীর। লাখো মুসল্লির পদভারে পুণ্যময় নগরীর রূপ নিয়েছে টঙ্গী শহর। ইজতেমা ময়দানের চারপাশে কেবল সাদা টুপি আর পাঞ্জাবি। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির জমায়েতের মাধ্যমে তুরাগতীরে শুরু হয়েছে এবারের প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা।
প্রথম দিন শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। শুক্রবার হওয়ায় গতকাল অনুষ্ঠিত হয় স্মরণকালের বৃহত্তম জুমার নামাজ। বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত নামাজে ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের।
সকাল থেকেই টঙ্গী, ঢাকা, উত্তরা, আশুলিয়া, সাভার ও আশপাশের এলাকার লোকজন জুমার নামাজে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার আগেই ইজতেমা মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক, অলিগলিসহ যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে নামাজে শরিক হন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গতকাল সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আনুষ্ঠানিকতা : ইজতেমার আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, শুক্রবার বাদ ফজর উর্দুতে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক মূল বয়ান শুরু করেন। জুমার আগে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা, জুমার খুতবা পড়েন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের। তিনিই জুমার নামাজে ইমামতি করেন। জুমার পর মূলমঞ্চ থেকে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা জুবায়ের ও বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট। বয়ান অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা উমর ফারুক।
ইজতেমাস্থলের বয়ানমঞ্চ থেকে মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি ভাষায় তা তরজমা হয়। পরে তাবলিগ মারকাজের শূরা সদস্য ও বুজুর্গরা ইমান, আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে ফজিলতপূর্ণ বয়ান করেন। বয়ান বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি, ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়।
আয়োজকরা বলেছেন, বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচির মধ্যে আম ও খাস বয়ান, তালিম, তাশকিল, ৬ উছুলের হাকিকত, দরসে কোরআন, দরসে হাদিস, চিল্লায় নাম লেখানোসহ নতুন জামাত তৈরি হবে।
শুক্রবার বয়ানে বলা হয়, ‘পৃথিবীতে ইমানের মূল্য অনেক। ইমানকে মজবুত করতে হলে আমাদের দাওয়াতি কাজে সময় দিতে হবে। আমরা যেন আল্লাহপাকের হুকুমমতো সারা জীবন চলতে পারি, সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে। নিজের আমল দিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল যে কাজে খুশি হন, তা আমাদের বেশি বেশি করতে হবে। আমাদের সবার আখেরাতের চিরস্থায়ী জিন্দিগির জন্য আবাদ করতে হবে।’
নামাজে ভিআইপি : জুমার নামাজে শরিক হন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান প্রমুখ।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : গাজীপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, জুমার নামাজ আদায় করতে আশপাশের জেলার অনেক মুসল্লি এখানে আসেন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, ট্রাফিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যানজটমুক্ত চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, রবিবার আখেরি মোনাজাত হবে। মুসল্লি ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ তাতে অংশ নিতে আসবেন। তার জন্যই ট্রাফিক ব্যবস্থা। শনিবার মধ্যরাত থেকে টঙ্গী ব্রিজ, কামারপাড়া ব্রিজ, ভোগড়া বাইপাস, মীরের বাজার এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে ইজতেমা সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। ইজতেমা শেষে যাওয়ার সময় একই ব্যবস্থা থাকবে। আমরা নাগরিকদের কাছে সুশৃঙ্খল আচরণ আশা করি।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ খাবার ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো সুষ্ঠু রাখার জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রতিদিন ২১টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।
বিদেশি মুসল্লি : পুলিশ কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ইজতেমার পর্বের প্রথম দিন বিভিন্ন দেশ থেকে দুই হাজারের বেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
কন্ট্রোলরুম : ইজতেমা ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা ও মুসল্লিদের খেদমতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের (ডেসকো) পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা : এবারের বিশ্ব ইজতেমায় অর্ধশতাধিক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। হামদর্দের মেডিকেল ক্যাম্পে গত দুই দিনে প্রায় দুই হাজার মুসল্লিকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ১২৩ জনকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একজন বিদেশিসহ ১০ জনকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি ও তিনজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
ট্রাফিক ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাসের কারণে ইজতেমার প্রথম দিনে যানজটের মুখে পড়তে হয়নি রাজধানীর মানুষকে। গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার উত্তরাসহ আশপাশের এলাকায় তেমন যানজট দেখা যায়নি। বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ও দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ পড়তে সড়কে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। উত্তরা ও গাজীপুরের তিন সড়কে যান চলাচল সীমিত রাখা হয়েছিল। তবে যাত্রীবাহী ও ইজতেমাগামী সব ধরনের যান চলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মুসল্লিরা যাতে নির্বিঘেœ নামাজ আদায় করতে পারেন, সে জন্য বাড্ডা, মহাখালী, এয়ারপোর্ট ও ধউর বেড়িবাঁধ সড়কের যানবাহন বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেয় ট্রাফিক পুলিশ।
উত্তরা-আব্দুল্লাহপুরে অনাবিল পরিবহনের চালকের সহকারী মঞ্জু মোল্লা দেশ রূপান্তরকে জানান, তাদের গাড়ি গাজীপুর থেকে বাড্ডা হয়ে যাত্রাবাড়ীতে যায়। আশার সময় তেমন যানজট পাননি। যাওয়ার সময় টঙ্গীতে সড়কে মুসল্লিরা নামাজে দাঁড়িয়েছেন, তাই আব্দুল্লাহপুরে অপেক্ষা করছেন।
ইজতেমা ময়দানের আশপাশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান : বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা এবং তাদের কাছ থেকে পণ্যের সঠিক মূল্য রাখার লক্ষ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। প্রথম দিনে ইজতেমা ময়দানের আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইজতেমা ময়দানের পাশে মুন্নু সিরামিক গেটসংলগ্ন আল্লাহর দান হোটেলে পচা-বাসি খিচুড়ি বিক্রির অভিযোগে এর মালিককে ৫ হাজার, কামারপাড়া এলাকায় অতিরিক্ত দামে কম্বল বিক্রির অভিযোগে একজনকে ৪ হাজার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খেজুর বিক্রির অভিযোগে একজনকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মুসল্লিদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।
ঝড়বৃষ্টির এক সন্ধ্যায় ফেনসিডিলের বোতল সঙ্গে নিয়ে মাদক উদ্ধারের সাজানো অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৪ লাখ টাকা নিজের পকেটে ঢোকানোর অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পরিদর্শক মো. রায়হান আহমেদ খানের বিরুদ্ধে। পরিদর্শক রায়হান একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে গেলেও জব্দ তালিকায় মাত্র ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা উদ্ধারের কথা উল্লেখ করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীর। গত বছরের ৪ অক্টোবর দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানা এলাকার তাজপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মোকসেদুল হকের বাড়িতে চালানো হয় ওই অভিযান।
অভিযানের সময় বাড়িতে ছিলেন না মোকসেদুল। অভিযান শেষে এলাকার দুজনকে সাক্ষী দেখিয়ে মোকসেদুল ও তার স্ত্রী মোছা. মার্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। কিন্তু ঘটনাস্থলে ওই দুই ‘সাক্ষীকে’ দেখানো হয়নি উদ্ধার হওয়া টাকা ও মাদক। মামলাটির দুই সাক্ষীর সঙ্গেই কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। সাক্ষীরা জানিয়েছেন, অভিযানটি ছিল সাজানো। তাদের উদ্ধার হওয়া মাদক ও টাকার পরিমাণ জানানো হয়নি। ফলে অভিযান, টাকা ও মাদক উদ্ধার এবং দুজনের বিরুদ্ধে করা মামলার উপাদান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
মোকসেদুল হকের দাবি, তার কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য তিল তিল করে গোছানো এবং জমির বন্ধক ছোটানো থেকে পাওয়া টাকার সবই নিয়ে গেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাজানো অভিযানকারীরা। এক প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রুতার জেরে ওই সাজানো অভিযান চালানো হয় বলেও দাবি তার।
মোকসেদুল হক এ ঘটনার বিচার চেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরে আবেদন করেছেন। আর অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসি’র রংপুর বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) দিলারা রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তদন্ত এখনো প্রক্রিয়াধীন আছে, আমি কাজ করছি।’
বিভিন্ন দপ্তরে করা মোকসেদুলের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের পহেলা অক্টোবর মোকসেদুরের চাচা আলহাজ মো. শহিদুর রহমান তার জমি মোকসেদুলের কাছ থেকে বন্ধক অবমুক্ত করে নেওয়ার জন্য মোট ৯ লাখ টাকা মোকসেদুলকে ফেরত দেন। এছাড়া মাছ, গরু ও ধান বিক্রির ৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকাসহ মোট ১৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা মোকসেদুলের কাছে গচ্ছিত ছিল। পরে ৪ অক্টোবর ঝড়বৃষ্টির সন্ধ্যায় পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খানের নেতৃত্বে দুজন বোরকা পরা নারীসহ ১৫-১৬ জনের একটি দল মোকসেদুলের বাড়িতে গিয়ে ২৪ বোতল ফেনসিডিল ফেলে রাখে। পরে সেগুলো উদ্ধারের নামে ঘরের আলমারির ড্রয়ার ভেঙে ১৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ সময় বাড়িতে থাকা মোকসেদুলের স্ত্রী ও মা-বাবাকে মারধর করা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে বাড়ি থেকে মোকসেদুলের স্ত্রী মর্জিনাকে ধরে নিয়ে যায় সাজানো অভিযানকারীরা। পরে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় করা মামলায় জব্দ দেখায় ২৪ বোতল ফেনসিডিল এবং মাত্র ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা। বাকি টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মোকসেদুলকে মামলায় ফাঁসানো ও হত্যার হুমকি দেন পরিদর্শক রায়হান।
এদিকে সন্ধ্যায় অভিযান চালানো হলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটির এজাহারে বলা হয়েছে, ‘৪ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোকসেদুলের বাড়িতে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যায় মোকসেদুল। ঘণ্টাব্যাপী চলা অভিযানে মো. আমিনুল হক (৬০) ও মো. রশিদুল আলম (৩২) সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে মোকসেদুলের শোবার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে কাঠের শোকেসের ওপরের ড্রয়ারে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে ২৪ বোতল কোডিন ফসফেট মিশ্রিত তরল পদার্থ ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। একই ব্যাগের ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।’
এই মামলায় জেলও খেটেছেন মোকসেদুল হক। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মামলাটির সাক্ষী মো. আমিনুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘‘অভিযান শেষে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে তা আমাকে দেখায়নি। মাদকও দেখিনি আমি। আমি উপস্থিত ছিলাম এজন্য আমাকে বলেছিল, ‘মাল পাইছি সই করো’। এই বলে একটা সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিছিল। সেখানে কিছু লেখা ছিল না।’’
সাদা কাগজে কেন স্বাক্ষর করলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে আমিনুল বলেন, ‘সে সময় মোকসেদুলের স্ত্রী-সন্তান, বুড়া বাপ-মা সবাই হাউমাউ করে কাঁদতেছিল। তাড়াতাড়ি আমার কাছ থেকে সইটা নিয়ে চলে গেছে। অভিযানকারীদের প্রশ্ন করার মতন অবস্থা ছিল না।’
মামলার আরেক সাক্ষী রশিদুল আলম বলেন, ‘আমাকে কোনো মাদক দেখায়নি। তবে একটা ব্যাগ ভর্তি মেলা টাকা দেখছি। কত টাকা ছিল বলে নাই।’
আর মোকসেদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একসময় মাদক বিক্রি করতাম। তবে এখন ভালো হয়ে গেছি। মুদি দোকান ও জমি চাষাবাদ করি। মেয়ের বিয়ের জন্য অল্প অল্প করে টাকা গুছিয়েছিলাম। কিন্তু আমার শত্রুরা মাদকের ইন্সপেক্টর রায়হান স্যারকে দিয়ে সাজানো অভিযান চালিয়ে সব টাকা নিয়ে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিদর্শক রায়হান আহমেদ খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মোকসেদুল চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে অতীতে চারটি মাদকের মামলা আছে। সে প্রতিদিন ফেনসিডিল বিক্রি করে। তার বাসা থেকে মাদক ও টাকা উদ্ধার হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা।’
কী পরিমাণ মাদক ও কত টাকা উদ্ধার হয়েছিল তা সাক্ষীদের দেখানো বা জানানো হয়নি কেন জানতে চাইলে এই মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদকের লোক কখনো ভুয়া মামলা করে না। যে কারও বাড়িতে অভিযান হলে বাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা জব্দ করে নিয়ে যাচ্ছে, আর তার বউ আছে, ছেলে আছে, ছেলের বউ আছে, নাতি-নাতনি আছে, বৃদ্ধ বাবা-মা আছে, আশপাশে আরও আট থেকে দশটি বাড়ি আছে, টাকা গুনে কত টাকা জব্দ হলো তা দেখে কি আপনাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেবে?’
উৎসব-পার্বণ ছাড়াও প্রায় প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে বসে গানের আসর। তিনি গান করেন, গিটার আর স্যাক্সোফোন বাজিয়ে তাকে সংগত করেন দুই ছেলে। বড় ছেলে গিটারের সঙ্গে গানও করেন। সেজো জন স্যাক্সোফোনে তোলেন মোহনীয় সুর। চতুর্থ জন কবিতা আবৃত্তি করেন। পঞ্চম ছেলে কবিতাপ্রেমী এবং কবি। সাত ছেলে ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যৌথ বসবাস। এমন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব আর পারিবারিক বন্ধন যার, তিনি হলেন দেশের খ্যাতনামা শিল্প গ্রুপ পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
মাইজভান্ডারি গানের ভক্ত এই শিল্পপতির বাড়িটি যেন মরমি সংগীত লালন, মাইজভান্ডারি আর কাওয়ালি গানের কেন্দ্র। তার বাড়িতে নিয়মিতই ভক্তিমূলক গানের আসর বসে। পরিবারের সব সদস্যের পাশাপাশি ঘনিষ্ঠজনদের অনেকেই উপস্থিত থাকেন সেই আসরে। ‘মন অহংকারে দিন কাটালি মানুষ হবি কেমন করে। তোর সাধন ভজন নষ্ট হইল, হিংসা নিন্দা অহংকারে’-কবিয়াল রমেশ শীলের এ গানটি সুযোগ পেলেই গেয়ে শোনান সুফি মিজান।
শিল্পপতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে সুফি উপাধি দেওয়া হয় প্রায় ২৫ বছর আগে। আল্লামা রুমী সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আহমদুল হক তাকে এই উপাধি দেন বলে জানা যায়।
দেশের সেরা শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পিএইচপি। ২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়া গ্রুপটির টার্নওভার বছরে ৪ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সুফি মিজানুর রহমান। সাত ছেলেকে দিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব।
এমন বর্ণাঢ্য জীবন যার, তার শুরুটা হয়েছিল ১০০ টাকা বেতনের চাকরি দিয়ে। কিন্তু মেধা, পরিশ্রম আর নিষ্ঠার অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন পিএইচপি, যার মানে হলো শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি (পিস, হ্যাপিনেস, প্রসপারিটি)। এই তিন শব্দের অনুপ্রেরণা সঙ্গে নিয়ে বাবা ও ছেলেরা মিলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এমন বড় ও স্বনামখ্যাত শিল্প গ্রুপটিকে। একই সঙ্গে মাইজভাণ্ডারি ও মরমি সংগীতকে অমর ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করে চলেছেন সুফি মিজান ও তার সন্তানেরা।
আবদুল গফুর হালির মতো অসাধারণ গীতিকার ও সুরকার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সুফি মিজানের সান্নিধ্য পান। তার সব সৃষ্টিকে অমর করার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেন সুফি মিজান। গফুর হালির গান সংরক্ষণ করা, শিল্পীদের দিয়ে নতুন করে গান গাইয়ে নেওয়ার মতো অতিপ্রয়োজনীয় কাজটি করা ছাড়াও সুফি পরিবার মরমি শিল্পী কবিয়াল রমেশ শীলের সৃষ্টিকেও অমরত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। চট্টগ্রামের এই শিল্পীর গানগুলোও সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পরিবারটি।
বাংলা লোকগানের অন্যতম ধারা চাটগাঁইয়া গানের কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার শিল্পী গফুর হালি তার ‘চাটগাঁইয়া নাটক সমগ্র’ গ্রন্থে ‘তুলনাহীন মানুষ শিরোনামে’ লেখা একটি কবিতায় এই শিল্পপতি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমি একজন মানুষকে চিনি/মনুষ্যত্বের সব গুণ যার কাছে বিদ্যমান/আমার সেই প্রিয় মানুষটির নাম/আলহাজ্জ শাহ সুফি মিজানুর রহমান।’
গফুর হালি ও আঞ্চলিক গানের গবেষক সাংবাদিক নাসির উদ্দিন হায়দার সুফি মিজানুর রহমান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘সুফি সাহেব সেই ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে য্ক্তু ছিলেন। একসময় রেডিও-টিভিতেও গিয়েছিলেন। তবে তিনি চট্টগ্রামে আসার পর মাইজভান্ডারির খলিফা আবদুস সালাম ইছাপুরীর মুরিদ হন। আর তখন থেকেই তিনি মাইজভান্ডারি গানের প্রতি দরদি হয়ে ওঠেন। মাইজভান্ডারি গান শোনা, এই গানের শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, যন্ত্রসংগীত শিল্পীদের সহায়তা করা এসবই করছেন তিনি। সুফি সাহেবের কাছ থেকে প্রায় অর্ধশত শিল্পী সম্মানী পেয়ে আসছেন।’
কারখানায় লোহা গলিয়ে স্টিল নির্মাণ কিংবা কাচ তৈরিতে দেশের কিংবদন্তি হওয়ার পথে থাকা এই শিল্প পরিবার শিল্প উৎপাদনে যেমন ব্যস্ত, তেমনিভাবে নিজেদের জীবনযাপনকে শিল্পিত করে তুলতে সমান মনোযোগী। গান-বাজনার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধনের অনন্য উদাহরণও এ পরিবারটি। পাশাপাশি দুটি ভবনে সুফি মিজানুর রহমানসহ সাত ছেলে তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে খাবার খেতে রয়েছে ২০ চেয়ারের ডাইনিং টেবিল। যেখানে সুফি মিজানুর রহমান ও তাহমিনা রহমান দম্পতি সব ছেলে ও তাদের স্ত্রী-সন্তাদের সঙ্গে নিয়ে খাবার খেয়ে থাকেন।
বড় শিল্পপতি হলেও কারও সঙ্গে দেখা হলেই দীর্ঘ সালাম দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সুফি মিজান। এ মানুষটি নিজে খাওয়ার চেয়ে খাওয়াতেই বেশি ভালোবাসেন। অতিথি আপ্যায়নে তার জুড়ি মেলা ভার। তার প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে করলা ভাজি, ইলিশ মাছ, কই মাছ ও ছোট মাছ। খাওয়ার আগে ও পরে দুই দফা মোনাজাত করে মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে শুকরিয়া আদায় করেন। ধর্মীয় অনুষ্ঠান, গান-বাজনা, হজ-জাকাত, খেলাধুলা, চিকিৎসাসেবা, এতিমখানাসহ সব ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এ জন্য সুফি মিজান ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থাও গঠন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবায় কাজ করে আসা সুফি মিজানুর রহমানকে ২০২০ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়।
নিজে সুমধুর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন যেমন তেলাওয়াত করতে পারেন, তেমনিভাবে মোয়াজ্জিন ও নামাজের জামাতে ইমামের দায়িত্বও পালন করতে পারেন এই শিল্পপতি। ধর্মীয় এসব আয়োজন সুন্দরভাবে করতে পারা ৮০ বছর বয়সী গুণী এই মানুষটির জন্ম হয়েছিল ১৯৪৩ সালের ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। স্থানীয় ভারত চন্দ্র বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে এসএসসি, ১৯৬৩ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একই কলেজ থেকে পরে তিনি বিকম ও ব্যাংকিং বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেন। ছাত্রাবস্থায় এইচএসসি পাসের পরপরই তিনি নারায়ণগঞ্জের জালাল জুট মিলে ১০০ টাকা বেতনে চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান (বর্তমানে সোনালী ব্যাংক) চট্টগ্রামের লালদীঘি শাখায় জুনিয়র ক্লার্ক হিসেবে যোগ দেন। এই ব্যাংক ছেড়ে ১৯৬৭ সালে যোগ দেন তৎকালীন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড (বর্তমানে পূবালী ব্যাংক) খাতুনগঞ্জ শাখায় ৮০০ টাকা বেতনে। বৈদেশিক বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ওই ব্যাংকেই কাজ করেন। আর এ শাখায় কাজ করতে গিয়েই দেশের বিভিন্ন ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সুফি মিজান ব্যবসা শুরু করেন। গড়ে তোলেন শিল্পকারখানা। প্রথমে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড, পরে রি-রোলিং মিল, ঢেউটিন, কাচ তৈরি, মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ডের প্রোটন গাড়ি কারখানা থেকে শুরু করে বর্তমানে ২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার।
ব্যক্তি সুফি মিজানুর রহমান ও তাহমিনা রহমান দম্পতির সাত ছেলে ও এক মেয়ে। এই সাত ছেলের প্রথম তিনজন যথাক্রমে মোহাম্মদ মহসিন, মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। পরের চারজন যথাক্রমে মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মোহাম্মদ আমীর হোসেন সোহেল, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু ও মোহাম্মদ আকতার পারভেজ হিরু পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। একমাত্র মেয়ে ফাতেমা তুজ জোহরা।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে যেখানে তরুণরা এখন বিদেশেই স্থায়ী হয়ে যান, সেখানে সুফি মিজানুর রহমানের সব ছেলে দেশে ফিরে এসেছেন। বাবার সঙ্গে ব্যবসায় হাল ধরেছেন। বাবা ও সাত ছেলের সম্মিলিত মেধা ও পরিশ্রমে এগিয়ে গেছে পিএইচপি গ্রুপ। ব্যবসায় ক্রান্তিকাল এলেও তাদের সম্মিলিত প্রয়াসে তা ঠিকই সব উতরে যায়।
ছেলেদের সম্পর্কে বাবা সুফি মিজানুর রহমানের মন্তব্য, ‘আমার সাত ছেলে সাতটি সোনার টুকরো।’
বাবাদের কাছে সন্তান সব সময় সোনার টুকরোই হয়ে থাকে। কিন্তু সুফি মিজানের সন্তানরা প্রকৃতপক্ষেই ব্যতিক্রম। বাবার বিনয়ী আচরণ সব সন্তানের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। তারা যেমন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন, তেমনি মানবিক গুণাবলী ও সমাজসেবায়ও বাবার মতো।
এসবের বাইরেও তাদের রয়েছে শৈল্পিক মন। বাড়িতে যখন গানের আসর বসে, তখন গিটারে সুর ছড়িয়ে গান করেন বড় ছেলে মোহাম্মদ মহসিন। বড় ছেলে যখন গিটার বাজান, তখন সেজো ছেলে আনোয়ারুল হক স্যাক্সোফোনে সুর তোলেন। পঞ্চম ছেলে আমির হোসেন কবিতাপ্রেমী। নিজেও কবিতা লেখেন। চতুর্থ ছেলে আলী হোসেন কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করেন দারুণ ছন্দে।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।