
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তথা সরকারের ‘শীতল’ সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। দেশটির মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর দুদিনের সফরে বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে এ ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। শুধু লুর সফরই নয়, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা (বিশেষ সহকারী) ও হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচারের সফরেও দেশটির সরকারের ইতিবাচক মনোভাব পাওয়া গেছে। তবে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসনের তরফে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চায় তারা। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নিষেধাজ্ঞা বিষয়েও বার্তা দিয়েছে। তারা চায় র্যাবের সংস্কার অর্থাৎ বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ ও র্যাবের পক্ষ থেকে যেন মানবাধিকার লঙ্ঘন করা না হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, র্যাবের নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন আলোচনা এবং লবিস্ট নিয়োগের ফলাফল ইতিবাচক। যুক্তরাষ্ট্র চায় র্যাবের সংস্কার এবং এ লক্ষ্যে তারা সরকারকে কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে। র্যাব সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়েছে।
র্যাব সংস্কারের বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শেই র্যাব গঠন করা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলে সেটা দেখা হবে। র্যাবের সব কাজ ভালো হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডোনাল্ড লুর সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হয়েছে। আর র্যাবের সংস্কার ইস্যুতে সরকারের ইতিবাচক সাড়া এ দুটি বিষয়ই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশগুলো যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা চায় সে ব্যাপারেও সরকারপ্রধানের প্রতিশ্রুতির কথা জানানো হয়েছে লুকে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুদিনের সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে লু দেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের অনুমতি এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে সরকারের মনোভাব নিয়ে জানতে চেয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তাদের সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে তার বাস্তবায়নের ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। লু বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষ অবলম্বন করছে না এবং করবেও না। যুক্তরাষ্ট্র চায় সুশাসন এবং গণতান্ত্রিক চর্চা।
বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড লু। যৌথ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় করতে এসেছেন এবং সেক্ষেত্রে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিনিধির বৈঠকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, সমাবেশ করার অধিকার, ভোটার ও বিরোধীপক্ষকে ভয়ভীতি দেখানো থেকে বিরত থাকা এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। ডোনাল্ড লু পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বলেছেন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিষয়ে যখনই কোনো সমস্যা দেখা দেবে যুক্তরাষ্ট্র সে বিষয়ে পরামর্শ দেবে। তারা বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে অবশ্যই দাঁড়াবে। বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করবে তারা। মানবাধিকারের বিষয়টি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
ডোনাল্ড লুর এ সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। লুর সঙ্গে বৈঠকেও গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। কীভাবে সম্পর্কটাকে আরও অর্থবহ করা যায়, এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনো প্রশ্ন তৈরি হলে সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সবসময়ই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। এ বিষয়টি আমরা আবারও মার্কিন প্রতিনিধিকে জানিয়েছি। আওয়ামী লীগ সংবিধানের রক্ষক এবং সংবিধান অনুযায়ী আমরা নির্বাচন করব। আওয়ামী লীগ সবসময় গণতান্ত্রিক পন্থায়ই সরকারে এসেছে। এটা আমরা সবাইকে বলে আসছি এবং জনগণও সেটি জানে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালিউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিদেশিরা আমাদের গণতন্ত্র ও সুশাসন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং কোনো প্রশ্ন এলে তা জানতে চাইতে পারে কিংবা পরামর্শ দিতে পারে। কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রও তাই চায়। কিন্তু আমরা দেখেছি বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো বারবার বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। এটা মোটেও ঠিক না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডোনাল্ড লুর সফরে এবং তিনি যে ব্রিফিং দিয়েছেন তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে তারা বাংলাদেশের নির্বাচনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে না এবং তারা কারও পক্ষে না। তারা তাদের পর্যবেক্ষণের বিষয় জানিয়েছে এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমি মনে করি এটি একটি ইতিবাচক সফর।’
জামালপুরের ইসলামপুরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনকে গত বছর ১৮ আগস্ট সাদা পোশাকের পুলিশ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসে ঢাকায়। পরিবারের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা নিয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পল্লবী থানায় মাদকের (ইয়াবা) মামলা ঠুকে তাকে চালান করে দেয় আদালতে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে রাফসানকে (ছদ্মনাম) সন্দেহভাজন দেখিয়ে আটক করে সাদা পোশাকের পুলিশ। তাকে ছেড়ে দিতে ২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার আত্মীয় হওয়ায় তার হস্তক্ষেপে ‘সরি’ বলে রাফসানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
দুটি কাহিনীতে সাদা পোশাকের পুলিশ কী করে না করে তা পরিষ্কার। এক কথায় একে বলে ‘জননিবর্তন’। সন্দেহ হলেই বা ‘সন্দেহ হচ্ছে মর্মে সন্দেহ’ হলেই পুলিশ কাজটি করে। এ ক্ষেত্রে প্রাইম মোভার টাকাকড়ি। অর্থাগমসম্ভবে সন্দেহ স্বাভাবিক! মানুষকে নিয়ে কেন এত সন্দেহ? এ সন্দেহের নিরসন কবে হবে? আদৌ হবে কি!
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে সারা দেশে সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে; উঠছে যুগ যুগ ধরে। ১৮৯৮ সালের আইন ২০২৩ সালেও কার্যকর থাকলে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। যারা আইন করেছিল সেই ব্রিটিশরাই এখন বাঙাল কায়দায় কাউকে আর সন্দেহ করে না। সন্দেহভাজন কাউকে জেরা ও তল্লাশিতে ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে হয়রানি, শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহের ঘটনাও এ দেশে নিয়মিত। ড্রাকোনিয়ান ল’ বহাল থাকলে যা হয় আরকি!
প্রসঙ্গত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারসংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হাইকোর্টের ভাষ্য, এ সংক্রান্ত রায় কার্যকর করার দিকে নজর দেওয়া উচিত। সবার অনুসরণ করা উচিত। করোনাকালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফেরত ২১৯ প্রবাসীকে সিআরপিসির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারসংক্রান্ত মামলার শুনানিতে এ মন্তব্য করেছিল আদালত।
২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল যুগান্তকারী রায়ে হাইকোর্ট ৫৪ ধারা প্রয়োগে কারও সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা না করা, আটক বা গ্রেপ্তারের সময় পরিচয় দেওয়া, কাউকে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ না দেওয়া, রিমান্ডে নির্যাতন না করা, ধারা সংশোধনের তাগিদ প্রভৃতি ১৫ দফা নির্দেশনা দেয়। ২০১৬ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগে এ রায় বহাল থাকে। ওই বছরের ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সংক্রান্ত নীতিমালা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যবিষয়ক নির্দেশনায় বলা হয়, নাগরিকের সম্মান রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উঁচুমানের পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। সংবিধানে স্বীকৃত নাগরিকের অধিকার রক্ষার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সতর্কতামূলক নির্দেশনা থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক বা গ্রেপ্তারে কৌশল পাল্টেছে। এখন মাদক বা অন্য কোনো মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৫ ধারায় পুলিশকে ভবঘুরে, অভ্যাসগত অপরাধী, চোরাই মাল বহনকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হলেও তারা যখন-তখন যাকে-তাকে আটক বা গ্রেপ্তার করে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠছে প্রায়ই।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীদের ভাষ্য, নিবর্তনমূলক ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের তাগিদ ছিল উচ্চ আদালতের। তাদের আপত্তি রয়েছে ৫৫ ধারা ও তল্লাশিসংক্রান্ত ১০৩ ধারা নিয়েও। দীর্ঘদিনেও আইনের সংস্কার ও সংশোধন হয়নি। উপরন্তু ৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ১৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি রয়েছে। তারা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ নিবর্তনমূলক আইনের সংশোধন না চাইলে আইনের ব্যত্যয় ও অপপ্রয়োগ হবেই।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব ঘটছে ৫৪ ধারার মতো নিবর্তনমূলক আইন আছে বলেই। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র জনগণের। অথচ ব্রিটিশের তৈরি নিবর্তনমূলক আইন দিয়ে দেশ চলছে। জনগণকে শাসন করার জন্য নিবর্তনমূলক আইন থাকা উচিত নয়। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ ভালো কোনো পদক্ষেপ নয়। কেন নয় তা আদালতে বলব।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৫৪ ধারা নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানা তো হচ্ছেই না, বরং কৌশলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগেই ব্যক্তিকে আসামি বানিয়ে দিচ্ছে। গত তিন-চার মাসে দেখেছি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাদা পোশাকধারীরা মানুষকে উঠিয়ে নেয়। অনেক ভিডিও ফুটেজ আমরা পাচ্ছি। এক সংস্থা আরেক সংস্থার নাম বলছে এবং আটকের বিষয়টি অস্বীকার করছে। পুলিশের পর্যবেক্ষণমূলক ব্যবস্থা কার্যকরী নয়।’
সাদা পোশাকে কতিপয় পুলিশের তৎপরতা : প্রতিদিনই বিভিন্ন থানার সাদা পোশাকের টিমের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আইজিপি কমপ্লেইন সেলেও প্রতিদিন অভিযোগ জমা পড়ছে। সাদা পোশাকে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার স্বীকারও হন পুলিশ সদস্যরা। তাদের অপতৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে পেশাদার অপরাধীরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা। এ কারণে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
এ সপ্তাহের শুরুতে রাত ১২টার দিকে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন হাসান ও পারভেজ নামে দুই বন্ধু। মিরপুর দুই নম্বর ফলপট্টি এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ পরিচয়ে দুই ব্যক্তি রিকশার গতিরোধ করে দেহ তল্লাশি করতে চায়। বাধা পেয়ে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দাবি করা হয় চা-নাশতার টাকা। পরে স্থানীয়রা জড়ো হলে দ্রুত তারা সটকে পড়ে। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মদের বার থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তিরা সাদা পোশাকধারীদের টার্গেটে পরিণত হন। বিভিন্ন ক্লাব থেকে আসা নারী-পুরুষরাও নিয়মিত হয়রানির শিকার হন। নারীদের খারাপ মেয়ে বলে বাজে মন্তব্যও করা হয়। মান-সম্মানের ভয়ে অনেকে টাকা দিয়ে নিষ্কৃতি পান। অনেক সময় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়। মাঝেমধ্যে হয়রানি বন্ধ থাকে। আবারও পুরনো রূপে ফেরে।
সিভিল টিম বলে কিছু নেই : পুলিশ সূত্র জানায়, থানা-পুলিশের সিভিল টিম গঠনের বা সাদা পোশাকে অভিযান চালানোর আইনগত ভিত্তি নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও থানা এলাকায় নজরদারির জন্য ওসি নিজ থানার আয়তন অনুসারে সিভিল টিম গঠন করেন। তারা রাতে তৎপর থাকে বলেই সন্দেহভাজনদের আটকের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাদা পোশাকে পুলিশ অভিযান চালাতে পারে না।’
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাদা পোশাকে একমাত্র স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোকজন চলাফেরা করে। ডিবি ও সিআইডি অভিযানের সময় ডিবি ও সিআইডির মনোগ্রামযুক্ত ‘কটি’ ব্যবহার করে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে অভিযান চালানোর এখতিয়ার কারও নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডিএমপির সব থানার ওসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিধিবদ্ধ ব্রাঞ্চ (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) ছাড়া আর কেউ সাদা পোশাকে অভিযানে যেতে পারবে না। গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হয়রানি থামছে না : আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩ ধারা অনুযায়ী কাউকে তল্লাশি করতে হলে একাধিক ব্যক্তিকে সাক্ষী রেখে করতে হবে। এ বিধান মানা হয় না বললেই চলে। গত ৪ জানুয়ারি রাত ১২টার দিকে কাজ শেষে রিকশায় করে মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসায় ফিরছিলেন স্বনামধন্য পত্রিকার একজন সাংবাদিক। কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে তাকে আটকানোর পর জেরার নামে মানসিকভাবে হেনস্তা করে পুলিশের একজন উপপরিদর্শক ও কনস্টেবল। শেষে পুলিশের পরিচিত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে রেহাই পান তিনি। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমার পেশার যেন কোনো মূল্যই নেই তাদের কাছে। সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হয় সহজেই অনুমেয়।’
গত বছর ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে ছাত্র অধিকারের পরিষদের দুই নেতাকে তুলে নিয়ে যায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাতেই তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। নূর খান লিটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে। জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা না থাকায় এমন হচ্ছে।’
সরকারের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচির বিরুদ্ধে সরব উপস্থিতি দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ঢাকায় বেশিরভাগ থানা, ওয়ার্ডের সড়কে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল। তারা মিছিল-সমাবেশ করেছে বিভিন্ন এলাকায়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশও করেছে ক্ষমতাসীনরা। ওই সমাবেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সরকার হটানো-টটানো বাদ দেন। আসেন ঠান্ডা মাথায়। বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হবে।’
গতকাল বিএনপির সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি ও শান্তি সমাবেশে বিএনপিকে উদ্দেশে এ কথা বলেন তিনি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমেরিকান সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চান। আমাদের দেশে আইন দিয়ে নির্বাচন কমিশন হয়েছে। ত্রুটিমুক্ত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সবই থাকবে ইসির অধীনে। শেখ হাসিনার সরকার অন্যান্য দেশের মতো রুটিন দায়িত্ব পালন করবে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ্যে করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনে আসতে ভয় পাচ্ছেন কেন? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জানি শেখ হাসিনার উন্নয়ন, অর্জন দেখে দেশের মানুষ খুশি, কিন্তু আপনাদের (বিএনপির) মন খারাপ।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে আসলে বিএনপি হেরে যাবে এ ভয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাঝেমধ্যে রেগে যান। হেরে গেলে রেগে যান। আগেভাগে হারার আগে হারছেন কেন? আপনাদের যদি এতই জনপ্রিয়তা থাকে সেই সক্ষমতা নির্বাচনে এসে দেখান। সেই সক্ষমতার পরীক্ষাটা নির্বাচনে দেখান। আমরা রেডি, আপনারা আসেন।’
১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে হটাতে বিএনপি গোলাপবাগের গরুর হাটে গিয়েছে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা প্রস্তুত হয়ে যান। কাজ আছে সামনে। বিশৃঙ্খলা ঘটানো, মানুষের জানমাল নিয়ে খেললে খেলা হবে। মানুষের জানমাল নিয়ে খেলবেন আর আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাব? হবে না। আপনারা প্রস্তুত হয়ে যান, খেলা হবে। খেলা হবে, জোরে খেলা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার খেলা হবে। যারা দুর্নীতি করে, মিথ্যাচার করে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করার জন্য খেলা হবে।’
জনগণের জানমাল রক্ষায় আওয়ামী লীগ রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ করছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আছি, সরকারে আছি। আমাদের দায়িত্ব দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর ওদের আয়োজন হচ্ছে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার জন্য বিক্ষোভ সমাবেশ।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাবেন। আমিও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছি বারবার। বিএনপি নেতারা অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাবেন। এটা নিয়ে কটাক্ষ করার কিছু নেই। তবে অসুস্থ রাজনীতি করে অসুস্থ হলে অসুস্থ বিএনপিকেও হাসপাতালে যেতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বলেন আমার কথার উত্তর তিনি দিতে চান না। তিনি নাকি দেন না। আমার কথার উত্তর দেওয়ার মতো সামর্থ্য, সত্য কথা বলার সাহস ফখরুল সাহেবের নেই। আমি সত্য কথা বলি। আর তারা মিথ্যাচার করেন, বিষোদগার করেন। এটাই হচ্ছে তাদের রাজনীতি।’
জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ইস্পাতকঠিন গণঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করা হবে। আগামী দিনে সরকার বিদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে। তাই আজকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের এ দায়িত্ব নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, যেখানেই গণতন্ত্র সেখানেই বিএনপির অবদান। আর যেখানে আওয়ামী লীগ সেখানেই গণতন্ত্রকে হত্যা।
ছোট ছোট মিছিল নিয়ে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে থাকেন বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠানে। দুপুর হতেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ভরে উঠে নয়াপল্টন সড়কে। বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ১০ দফাসহ বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে ড. মোশাররফ ছিলেন প্রধান বক্তা। এ সময় ২৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শেষে মিছিল বের হয়। মিছিলটি কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফকিরেরপুল মোড় প্রদক্ষিণ করে আবার নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি মহানগর ও উপজেলায় একযোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। ১০ দফা দাবিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে এটি তার তৃতীয় কর্মসূচি।
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে এ সরকারকে বিদায় করব। কয়েক দিন আগে সরকার কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে, বিদ্যুতের যে একটি কমিশন আছে তাদের কোনো মতামত না নিয়ে, গণশুনানি না করে সরকার প্রশাসনিক হুকুমের মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে এবং বলেছে, মাসে মাসে নাকি দাম সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে বিদ্যুতের দাম তারা বাড়াবে। কেন এ দাম বাড়ছে? কারণ সরকার ক্ষমতায় এসে কুইক রেন্টালের মাধ্যমে লুটপাট করেছে। আবার পার্লামেন্ট থেকে ইনডেমনিটিও পাস করেছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সময় বেশি দিন নেই, বলাবলি বন্ধ হয়ে যাবে। শতচেষ্টা করলেও এই সরকারকে রাখা যাবে না। সরকার ও প্রশাসন এক হয়ে লুটপাট করছে। কারণ এ সরকার ফ্যাসিস্ট ও অত্যাচারী। বিএনপি অন্য কোনো দেশের গোলামি করতে পারে না। রক্তচক্ষু হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার উপেক্ষা করে অধিকার আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাব। নেতাকর্মীদের ওপর আঘাত এলে অন্যায়কারীর প্রতি পাল্টা হাত তোলা নৈতিক অধিকার।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। আজকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে উচ্চ ট্যাক্স, উচ্চবিলের মাধ্যমে টাকা লুট করা হচ্ছে। আর এ টাকা ভোটচোরদের কাছে যাচ্ছে। তারা ১০ হাজার কোটি টাকার কাজ ৩০ হাজার কোটি টাকা করে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের আমিনুল হকের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম খান, বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঘিরে নয়াপল্টনের বিভিন্ন গলিতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরে রাজধানীর এফডিসিসংলগ্ন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দলটির নেতাকর্মীরা। মিছিলটি দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলটি মৎস্য ভবনের কাছে গিয়ে শেষ হয়। ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের ড. ফরহাদের সভাপতিত্বে মিছিলপূর্বক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিসহ জোটের নেতারা বক্তব্য দেন। ফরহাদ জানান, ২৫ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে।
২৫ জানুয়ারি বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয় গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন মঞ্চের পক্ষে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ২৫ তারিখ প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ১১টায় এবং জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করা হবে।
এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো ভোট হবে না। ১৪ বছরে এ সরকার এত অপরাধ করেছে, এত লুট করেছে ভোটের মুখোমুখি হওয়ার সাহস তাদের নেই। জামানত হারানোর যুগে প্রবেশ করেছেন।
স্বপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বাংলাদেশ ভাসানী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সারা দেশে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় কর্মসূচিতে বাধার অভিযোগ : এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যুগপৎ কর্মসূচি পালনে বাধার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের কাজীরদেউরি এলাকায় গতকাল বিকেলে বিএনপি কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছিল। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সংঘর্ষ বাধে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। তাদের দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিএনপি নেতাকর্মীরা কাজীরদেউরি এলাকার টাইলসের দোকানগুলোতে ভাঙচুর এবং ট্রাফিক পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। সন্ধ্যায় পর্যন্ত ১৬ জনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কাজীরদেউরি মোড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর পাওয়ার পর ফোর্স নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে তারা স্থান ত্যাগ করে। এ সময় স্টেডিয়ামের সামনে জেলা পুলিশের গাড়ি থেকে এক পুলিশ সদস্যকে নামিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করে।
খুলনা প্রতিনিধি জানান, মহানগর বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশ হয় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। মিছিল কর্মসূচি নবনির্মিত রেলস্টেশন এলাকা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়। বিএনপি কার্যালয় সংলগ্ন থানার মোড় ছিল কাঁটাতারের ব্যারিকেডে অবরুদ্ধ। ফলে কেসিসি মার্কেট এলাকায় জমায়েত ও মিছিলের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার কাপাসিয়ায় গতকাল সকালে বিক্ষোভ মিছিলে থানা পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এ সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানান গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ।
ঢাকার ধামরাইয়ে বিএনপি নেতা আলহাজ তমিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় বিক্ষোভকারীদের হামলায় মহিলা পুলিশ সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ তমিজ উদ্দিনসহ বিএনপির ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় ধামরাই থানা পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলায় ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ভৈরবে পুলিশি বাধায় কেন্দ্র ঘোষিত পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করতে পারেনি স্থানীয় বিএনপি। পরে দুপুরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের বাংলোতে সংবাদ সম্মেলন করে।
নাটোরের প্রতিনিধি জানান, সিংড়ায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির একটি মিছিল সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলা কার্যালয়ের সামনে থেকে বাসস্ট্যান্ড অভিমুখে বের হলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। সামনে এগোতে না পেরে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
এদিকে নরসিংদীর পলাশ উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান পাপন দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল দুপুরে সমাবেশে যাওয়ার পথে উপজেলার সামসুরটেকে এ গুলিবিদ্ধের ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে সন্দেহজনক এক ব্যক্তিকে তল্লাশি করে। তখন শার্ট দিয়ে মোড়ানো একটি মোবাইল ফোনের বক্স উদ্ধার করে তারা। ওই বক্সের ভেতর থেকে ৪ রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ৭.৬৫ অটোমেটিক পিস্তল পায়। পরে মো. বাচ্চু শেখ নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাচ্চু গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের গাছা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের গাড়িচালক। তার সঙ্গে থাকা জিপ গাড়িটিও জব্দ করে ডিবির ওই দলটি।
ঘটনা ২০১১ সালের ১৪ জানুয়াারির। ওই অভিযানের পর রমনা থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দেয় তারা। এতে বলা হয়, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার বাচ্চু শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মতো কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। আদালত এই প্রতিবেদন গ্রহণ করেনি। পরে ঘটনাটি অধিক তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)।
সিআইডি অস্ত্র মামলাটির তদন্ত শেষে চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। অভিযুক্তরা হলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম, তার গাড়িচালক মো. বাচ্চু শেখ, সিএম গালিব চৌধুরী ওরফে সোর্স খোকন ও বকুল মোল্লা।
সিআইডির তদন্ত সূত্রে জানা যায়, সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম লাভলী নামে এক নারীকে পছন্দ করতেন। তাকে পাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। একবার গাজীপুরে এক বিচিত্রা অনুষ্ঠানে লাভলীকে চা খাইয়ে অচেতন করেন। এই পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়ে তিনি লাভলীকে অপহরণ করার জন্য তার গ্রামের বাড়িতে হামলা করেও ব্যর্থ হন। অপরদিকে চেয়ারম্যান সিরাজের হাত থেকে বাঁচতে লাভলী তার এলাকার সাংবাদিক কলিমুল্লাহ নয়নের দারস্থ হন। তাদের মধ্যে যোগাযোগের একপর্যায়ে কলিমুল্লাহ নয়নকে বিয়ে করেন লাভলী। এদিকে সিরাজুল ইসলাম লাভলীকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। এ জন্য কলিমুল্লাহর কাছ থেকে লাভলীকে সরাতে নান পরিকল্পনা করতে থাকেন। একপর্যায়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন সিরাজ। মিথ্যা মামলা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জনকে টাকা দেন তিনি। পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র মামলায় নয়নকে ফাঁসিয়ে লাভলীকে বিয়ে করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সিএম গালিব চৌধুরীর মাধ্যমে একটি গুলিসহ অটোমেটিক পিস্তল সংগ্রহ করেন। সিরাজুল ইসলামের এ পরিকল্পনায় যুক্ত হয় বকুল মোল্লা। তারা কলিমুল্লাহ নয়নকে মগবাজারে এনে ডিবি পুলিশের মাধ্যমে অস্ত্রসহ ফাঁসিয়ে দেওয়ার ছক আঁকেন। এ জন্য ডিবি পুলিশের কয়েকজনকে টাকার বিনিময়ে তাদের পরিকল্পনায় যুক্ত করেন।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন সিরাজুলের সহযোগীদের সঙ্গে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কলিমুল্লাহ নয়নকে বিভিন্ন কৌশলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হন। ফলে পরিকল্পনায় যুক্ত থাকা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা ওই পিস্তলসহ সিরাজুলকে তার সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে তারা গ্রেপ্তার এড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করতে থাকেন। একপর্যায়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে গ্রেপ্তার এড়িয়ে যান তারা। পরে সিরাজের গাড়িচালক বাচ্চু শেখকে প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজান। পুলিশ বাচ্চু শেখকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার দেখিয়ে মামলা করে।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক পরিদর্শক মো. লুৎফর রহমান। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মামলাটির তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছি। এখন এটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আমি ঘটনার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
জানা গেছে, পরিকল্পনার মূলহোতা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১১টি জিডি রয়েছে। তার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম দীপ বলেন, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ, চোখেও দেখতে পান না। এ জন্য বাড়িতেই থাকেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে সিআইডি অভিযোগপত্র দেওয়ার পর অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে এখনো এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ বলেন, বাচ্চু শেখ এবং বকুল মোল্লা জামিনে রয়েছেন। বকুলকে এই ঘটনার দশ বছর পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে উচ্চ আদালত তাকে জামিন দেয়।
সাজানো এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করা বাচ্চু শেখ বলেন, ‘সিরাজ চেয়ারম্যান পরিকল্পনা করে আমাকে ফাঁসিয়েছিলেন। আমার কোনো দোষ ছিল না। সেটা আমি ডিবি অফিসারদেরও তখন জানিয়েছিলাম। এরপরও আমাকে এক বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। এখন নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।’
সিরাজুল ইসলামের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে জানতে চাইলে কলিমুল্লাহ নয়ন বলেন, ‘সিআইডির একজন অফিসার জানিয়েছিলেন এই অস্ত্র মামলায় আমাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আমি তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু জানতাম না। তবে তারা ওই দিন আমাকে ঘটনাস্থলে নেওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছিল।’
গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশে এ ঘটনাটির পর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিভাগীয় তদন্ত করা হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মগবাজারে ঘটনার দিন কলিমুল্লাহ নয়নকে না পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন সদস্য সিরাজুল ও গালিবকে ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে তার কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। সিরাজুল তার ভাইদের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে তাদের দেন।
জানা গেছে, অবৈধভাবে টাকার বিনিময়ে সিরাজুল ইসলামের ষড়যন্ত্রে যুক্ত হওয়া, অন্যদিকে তাদের আটকে রেখে টাকা নেওয়ায় গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রে ওই অভিযানে থাকা চার কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মতিয়ার রহমান, উপপরিদশক (এসআই) প্রদীপ, এসআই ইউসুফ ও এসআই দেলায়ার। তবে অভিযুক্ত গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাদের মন্তব্য জানতে ডিবি কার্যালয়সহ পুলিশের একাধিক দপ্তরে যোগাযোগ করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশের কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ওই ঘটনাতেও তাই হয়েছিল, যে কারণে এরপর এমন ঘটনা আর ঘটেনি। আইজিপির নির্দেশে পুলিশের সব ইউনিটের দায়িত্বরতদের কার্যক্রমে নজর রাখা হচ্ছে। ফলে কেউ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর সাহসও করছে না।
বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের যে প্রস্তাব দিয়েছে তা আগামী ৩০ জানুয়ারি সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় অনুমোদিত হতে পারে। বাংলাদেশ সফররত আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত বছরের ৯ নভেম্বর আইএমএফ বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানায়। তবে সেটি ছিল কর্মকর্তা পর্যায়ের ঐকমত্য। তখন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেবে তারা। প্রথম কিস্তির ঋণ দেওয়া হবে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আর সর্বশেষ কিস্তির ঋণ পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। আইএমএফের ঋণের সুদহার হবে বাজারদর অনুযায়ী, তাতে গড় সুদহার হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
গতকাল বিবৃতিতে আইএমএফের ডিএমডি অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনায় আমরা কর রাজস্ব বাড়ানো এবং আরও দক্ষ আর্থিক খাত গড়ে তোলার দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জসহ এই প্রোগ্রামের মূল কাজের ওপর নজর দিয়েছি। বেসরকারি বিনিয়োগ এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের সুবিধার্থে সংস্কারের কথা আলোচনা হয়েছে। এসব সংস্কার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও স্থিতিস্থাপক করে তুলতে এবং দীর্ঘমেয়াদি, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেছি, যা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে। আইএমএফের লক্ষ্য বাংলাদেশের জলবায়ু বিনিয়োগের চাহিদাকে সমর্থন করার জন্য সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সাহায্য করা।’
কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে আইএমএফ ডিএমডি বলেন, তাক লাগানো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য নিরসনে স্থির অগ্রগতি এবং জীবনমানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক নীতি মুদ্রাস্ফীতিকে স্থিতিশীল রাখতে, ঋণ-জিডিপি অনুপাত কমাতে এবং বাহ্যিক সংকটগুলো পর্যাপ্ত রাখতে সাহায্য করেছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশও এখন বৈশ্বিক ধাক্কার প্রভাব মোকাবিলা করছে। প্রথমে কভিড মহামারী, তারপরই ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের ফলে হওয়া সংকটটি তারাও মোকাবিলা করছে।
গতকাল আইএমএফ ডিএমডির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জ্যেষ্ঠ অর্থসচিব ফাতেমা ইয়াসমিন ও ঢাকায় আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ বেলআউটের (পুনরুদ্ধার) জন্য আইএমএফের কাছ থেকে কোনো সহায়তা চায় না; বরং পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আইএমএফের ঋণসহায়তা চাইছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইএমএফ প্রতিনিধির কাছে এক দশকে দেশে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, কৃষি, ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের অগ্রগতির গতি কমে গেছে। এ অবস্থায় দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তার জন্য সরকার সামাজিক সুরক্ষার জাল ও খাদ্য কর্মসূচি বাড়িয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পতিত জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তনের প্রশংসা করেন আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও। তিনি বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে উত্তরণে সহায়তা অব্যাহত রাখবে আইএমএফ।
আইএমএফ ডিএমডি অ্যান্তইনেত এম সায়েহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে বৈশি^ক অর্থনীতির সাম্প্রতিক গতিপ্রকৃতি এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈশ্বিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সুদের হার বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর করণীয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে সিমিত চন্দ্র (১২) নামের এক স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৭ জুন) ভোরে ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বেলগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া সিমিত চন্দ্র বেলগাছা গ্রামের মানিক চন্দ্র ড্রাইভারের ছেলে। অভিযুক্ত কিশোর (১৬) একই গ্রামের প্রদীপ চন্দ্রের (দর্জি) ছেলে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের গীতা সংঘ অনুষ্ঠান দেখতে যায় সিমিত ও তার বড় ভাই। সিমিতকে অনুষ্ঠানস্থলে রেখে বাড়িতে ফেরে তার বড় ভাই। পরে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সিমিতের সঙ্গে অভিযুক্ত কিশোরের কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় সিমিতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই কিশোর। পরে তাদের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের গর্তে সিমিতের মরদেহ পুতে রাখে। অনুষ্ঠান শেষে সিমিত বাড়িতে না ফিরলে স্বজনরা তার খোঁজে বের হয়। অভিযুক্ত কিশোরকে সিমিতের বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে সে অসংলগ্ন আচরণ করে। পরে তার বাবা প্রদীপ চন্দ্র তাদের পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের একটি গর্তে সিমিতের মরদেহ দেখিয়ে দেন। বুধবার ভোরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
আটক কিশোরের স্বীকারোক্তিতে সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ বলেন, অভিযুক্ত কিশোরের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। এ নিয়ে সিমিতসহ অনেকেই ওই কিশোরকে খোঁচা দিত। গত রাতে সিমিত ওই কিশোরের সাথে এ নিয়ে আবারও খোঁচা দিলে সে সিমিতের গলা চেপে ধরে। এত শ্বাসরোধ হয়ে শিশুটি মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত কিশোর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।