
প্রতি বছরই নানা ধরনের পরিমার্জন করা হলেও পাঠ্যবইয়ে থেকেই যাচ্ছে ভুল আর অসংগতি। কিন্তু দীর্ঘ পরিকল্পনা ও যাচাই-বাছাই শেষে এ বছর থেকে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে ভুলত্রুটি খুবই কম থাকবে সেটাই আশা ছিল সবার। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের ভুল আর অসংগতি চোখে পড়ছে। এতে অনেকটাই হতাশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এ বছরের মাধ্যমিক স্তরের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির ‘Science Exercise Book’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের অনেক প্যারাগ্রাফ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট ‘nationalgeographic.org’ থেকে নেওয়া হয়েছে। কিছু প্যারাগ্রাফ ওয়ার্ড-বাই-ওয়ার্ড কপি করা হয়েছে। এ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে ‘বায়োডায়ভারসিটি’ অধ্যায়ে ৫ নম্বর পৃষ্ঠার প্রায় বেশিরভাগ লেখাই হুবহু কপি করা হয়েছে। আর ৩ নম্বর পৃষ্ঠার কিছু অংশও কপি করা হয়েছে। এভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন বইতে অসংখ্য বানান ভুল ও বাক্য গঠনে অসংগতি পাওয়া গেছে।
এ বইটির লেখক প্যানেলে ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ড. হাসিনা খান, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান, ড. মুশতাক ইবনে আইয়ূব ও রনি বসাক। আর সম্পাদনা করেছেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণির ‘Science Exercise Book’ বইয়ের একটি অংশ ‘ইন্টারনেট থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে’ বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার দায় স্বীকার করেছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের কোথায় কোথায় ভুলত্রুটি আছে তা খুঁজতে ইতিমধ্যে একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে একাধিক কমিটি মার্চ মাসে স্কুলে স্কুলে ঘুরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মতামত সংগ্রহ করবে। আগামী বছরের বই পরিমার্জনে তাদের মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। যতটা নির্ভুল পরিমার্জন করা যায়, সেটা আমরা করব।’
সূত্র জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি এবং দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রায় তিন বছর আগে কাজ শুরু হয়। ২০২২ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কথা ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও যথাযথ পা-ুলিপি তৈরি না হওয়ায় তা শুরু করা যায়নি। তবে ওই বছর কিছু স্কুলে পাইলটিং করা হয়। এরপর এ বছর থেকে তিনটি শ্রেণিতে তা চালু করা হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমের একাধিক বই বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের ব্যাক কভারে লেখা হয়েছে, ‘Government of the Peoples’ Republic of Bangladesh’. কিন্তু বাংলাদেশের অফিশিয়াল নাম ‘Government of the People’s Republic of Bangladesh’. এ ছাড়া এই শ্রেণির একাধিক বইয়ের অনেক জায়গায় একই শব্দের একেকভাবে লেখা হয়েছে। যেমন কেন/কেনো, পড়/পড়ো, নিচে/নীচে, যে কোন/যেকোন ইত্যাদি।
নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের নানা ভুলত্রুটি খুঁজে বের করেছেন মাসুম হাসান নামের একজন শিক্ষক। তিনি এতে ৪৮টি ভুল পেয়েছেন। এই বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় ‘লিটল থিংস’ কবিতাটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কবির নাম দেওয়া হয়নি। অথচ এই বহুল প্রচলিত কবিতাটি লিখেছেন আমেরিকান কবি জুলিয়া অ্যাবিগেল ফ্লেচার কার্নি। একইভাবে ১০১ পৃষ্ঠায় ‘মাই বুকস’ কবিতাটিতেও কবির নাম নেই।
এ ছাড়া বইটির বিভিন্ন পৃষ্ঠায় বানান, বাক্য গঠন ও গ্রামারের ব্যবহারে অসংখ্য ভুল রয়েছে। ১৭ নম্বর পৃষ্ঠার ৮ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে agesz, সঠিক হবে ধমবং. ১৮ পৃষ্ঠার ১১ নম্বর লাইনে আছে things, হবে Things. ২৩ পৃষ্ঠার ৭ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে ‘প্রাত্যাহিক’, সঠিক হবে ‘প্রাত্যহিক’। ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় মোটা অক্ষরে লেখা হয়েছে anoter, সঠিক হবে other. ৪০ পৃষ্ঠায় ১১ ও ১২ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে dinner, হবে supper. ৪৪ পৃষ্ঠায় ৭ নম্বর লাইনে আছে hand, হবে hands. ৫২ পৃষ্ঠায় ২ নম্বর লাইনে আছে his head, হবে her head. ৬৯ পৃষ্ঠায় ২৩ নম্বর লাইনে আছে Modal verb, হবে Modal verbs. ৮০ পৃষ্ঠায় ১ নম্বর লাইনে আছে has recently transferred, হবে has recently been transferred এবং ৫ নম্বর লাইনে আছে যব attends, হবে she attends. ৮২ পৃষ্ঠায় ১৭ নম্বর লাইনে আছে conversion, হবে conversation. ৮৪ পৃষ্ঠায় ১৮ নম্বর লাইনে আছে younger, হবে youngers. ৮৫ পৃষ্ঠায় ৬ নম্বর লাইনে আছে word means, হবে words mean. ৯২ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ৩ নম্বর লাইনে লেখা parent’s, হবে parents. ১০২ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে লেখা word, হবে words. ১০৪ পৃষ্ঠার ১০ নম্বর লাইনে লেখা ‘You’, হবে ‘you’ এবং শেষ লাইনে আছে ণড়ঁ, হবে ুড়ঁ. ১০৬ পৃষ্ঠার চিঠিতে শুরুতেই লেখা হয়েছে Assalamu Alaaikum, স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম বাদে অন্যান্য ধর্মের শিক্ষার্থী এ শব্দটি গ্রহণ করবে না। একই পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ৩ নম্বর লাইনে আছে ঈড়ারফ, হবে ঈঙঠওউ.
১০৮ পৃষ্ঠায় ২ নম্বর লাইনে লেখা ওভ, হবে রভ এবং ৪ নম্বর লাইনে আছে Dear madam/sir, হবে Dear Madam/Sir. ১০৯ পৃষ্ঠায় ৫ ও ১৮ নম্বর লাইনে আছে expressions, হবে Expression. ১১০ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ৭ নম্বর লাইনে আছে ‘অংশ গ্রহণ’ হবে ‘অংশগ্রহণ’। ১৩১ পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ৯ নম্বর লাইনে আছে oldest, হবে eldest. ১৩৩ পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে লেখা ‘কার্য্যক্রম’, লেখা উচিত ‘কার্যকলাপ বা কর্মকা-’ এবং নিচ থেকে ১ নম্বর লাইনে আছে ‘শ্রেনি’, হবে ‘শ্রেণি’। ১৩৪ পৃষ্ঠায় ৯ নম্বর লাইনে আছে ‘তাছাড়াও’, লেখা উচিত ‘এছাড়াও বা তাছাড়া’ এবং একই লাইনে আছে ‘বৈশিষ্ট্যবলী’ তবে লেখা উচিত ‘বৈশিষ্ট্যগুলো’।
১৩৮ পৃষ্ঠার নিচ থেকে প্রথম লাইনে আছে Eid-al-Azha, হবে Eid-al-Adha. ১৩৯ পৃষ্ঠার ৩ ও ৪ নম্বর লাইনে আছে each other, হবে one another. ১৪২ পৃষ্ঠার ৬ নম্বর লাইনে আছে I ate, হবে I have eaten. ১৪৫ পৃষ্ঠার ১০ নম্বর লাইনে আছে each othe's, হবে one another's. ১৪৮ পৃষ্ঠার ১৪ নম্বর লাইনে আছে ‘শব্দলোর’, হবে ‘শব্দগুলোর’। ১৪৯ পৃষ্ঠার ১৪ নম্বর লাইনে আছে Four Friend's, হবে Four Friends এবং একই লাইনে আছে ‘খুজে’, হবে ‘খুঁজে’। ১৫১ পৃষ্ঠার ৭ নম্বর লাইনে লেখা আছে ‘সব বন্ধু-বান্ধবদেরকে’, লেখা উচিত ‘সব বন্ধুকে’ এবং একই লাইনে আছে ‘উৎসবমূখর’, হবে ‘উৎসবমুখর’। ১৫৬ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ১০ নম্বর লাইনে আছে it’s paws, হবে its paws. ১৬০ পৃষ্ঠার ৫ নম্বর লাইনে লেখা religion, হবে religions. ১৬৪ পৃষ্ঠার ৬ নম্বর লাইনে listening, হবে listening to. ১৬৫ পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে লেখা ‘কৃত্তিমভাবে’, হবে ‘কৃত্রিমভাবে’। আর ১৬৭ পৃষ্ঠার ৫ নম্বর লাইনে আছে Celerate, হবে Celebrate এবং নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে আছে Starring, হবে Staring.
শুধু নতুন শিক্ষাক্রমই নয় পুরনো কারিকুলামের বইতেও রয়েছে অনেক ভুল। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় ও নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়।’ এখানে তথ্যগত দুটি ভুল আছে। প্রকৃতপক্ষে রাজারবাগে ছিল পুলিশ লাইনস, আর পিলখানায় ছিল ইপিআর সদর দপ্তর। গত বছরের বইয়েও একই ভুল ছিল। একই শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা আছে, ‘১২ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।’ এ তথ্যও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে শপথ পড়িয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। একই বইয়ের ১৮১ পৃষ্ঠায় ‘অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ও গণহত্যা’ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশজুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।’ প্রকৃত তথ্য হলো, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলা শুরু হয় ২৫ মার্চ কালরাতে।
গতকাল নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ে মোট ৯টি সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি। এতে মূলত ইতিহাসভিত্তিক কিছু তথ্যের সংশোধন করা হয়েছে।
ড. জাফর ইকবাল ও ড. হাসিনা খানের বিবৃতি : গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে ড. জাফর ইকবাল ও ড. হাসিনা খান বলেন, একই পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকেন, যাদের শ্রম ও নিষ্ঠার ফল বইটি। বিশেষত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে এসব লেখকের কাছ থেকেই একধরনের দায়িত্বশীলতা আশা করা হয়। সেখানে কোনো একজন লেখকের লেখা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তা আমাদের টিমের জন্য হতাশা ও মন খারাপের কারণ। ওই অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দুজন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বইটির প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে। কাজেই উল্লিখিত অভিযোগের বাইরেও যেকোনো যৌক্তিক মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয় তিন শতাধিক কর্মকর্তা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তখন এমএ আজিজ। নন গেজেটেড এ কর্মকর্তাদের নিয়োগ পরীক্ষা নেয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান তারা। তাদের মধ্যে বড় অংশই এখন জ্যেষ্ঠ ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদে পদোন্নতি পেয়ে কর্মরত। অন্তত ৩০ জেলা ও কমপক্ষে ১৮০ উপজেলায় জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন ওই কর্মকর্তারা।
অবশ্য আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সিআরআইয়ের তথ্যনুযায়ী এ সংখ্যা আরও বেশি। তাদের অপেশাদার আচরণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই সদস্য দেশ রূপান্তরের কাছে উদ্বেগের কথা প্রকাশ করে বলেছেন, ২০০৫ সালে নিয়োগ দেওয়া বেশিরভাগ কর্মকর্তা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। এদের বেশিরভাগই ছাত্রদল অথবা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক ওই পরিচয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা বড় দুশ্চিন্তার হয়ে উঠতে পারেন। এ কর্মকর্তারা রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এলাকার।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি শাসনামলে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সবসময়ই নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছেন। ফলে বিতর্কিত হয়েছে সাংবিধানিক এ কমিশনটি। শুধু নির্বাচন কর্মকর্তাই নয়, ভুয়া ভোটারও বানিয়েছে বিএনপি। বিতর্কিত নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি, কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে বেশি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের পদে থাকা নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব কর্মকর্তার অপেশাদার দায়িত্ব দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারার এমন ভয় দেখছে দলটি। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারাও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য উদ্বেগের। এসব কর্মকর্তাকে কীভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে পাওয়া যায় সেই কৌশল খুঁজছে ক্ষমতাসীনরা। তা না হলে নিষ্ক্রিয় করারও চিন্তা করেছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা আরও বলেন, ওই কর্মকর্তাদের অনেকের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নতুন করে যোগাযোগ বা সম্পর্ক ঝালাই করতে শুরু করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সোর্স ওই কর্মকর্তাদের ওপর কড়া নজরদারি করছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনে ভোট বন্ধের যে নজির স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন, তাতে বিএনপির আমলের নিয়োগ দেওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকতে পারে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীরা। ওই কর্মকর্তারা নানা নেতিবাচক ঘটনা তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছেন বলে সন্দেহ করছে আওয়ামী লীগ।
ভোট একেবারেই বন্ধ করে দেওয়ার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাইবান্ধার উপনির্বাচন প্রথম দফায় বন্ধ করার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ দূরত্ব কমাতে কমিশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তাতে সায় দেয়নি আওয়ামী লীগের কেউ।
সভাপতিম-লীর ওই নেতা আরও বলেন, ভোট বন্ধ করে দেওয়ার নজির সৃষ্টি করে যে জটিলতা তৈরি করা হয়েছে তা কমিশনকেই দূর করতে হবে এমন অবস্থান নেয় ক্ষমতাসীনরা। তিনি বলেন, অবশেষে নির্বাচন সম্পন্ন করে দূরত্ব কমাতে অনেকখানি সফল হলেও কমিশনের প্রতি এক ধরনের সন্দেহ দানা বেঁধেছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। এসব নানাদিক চিন্তা করে বিএনপির আমলে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কর্মকর্তাদের নিয়ে গত বছর ৩১ জুলাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল সুনির্দিষ্ট করে অভিযোগও দিয়েছে।
ওই সংলাপে ইসিতে দেওয়া ১৪ প্রস্তাবের মধ্যে ৩ নম্বরে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং এর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ দাবি করে। দলটি বলেছে, ‘এটি সর্বজন স্বীকৃত, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে একদিকে যেমন দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওইসব দলীয় ব্যক্তি এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
একই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে ব্যাপকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ। এসব কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের সব ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদের সরকারদলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে কারচুপি করার অসৎ উদ্দেশ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশন দলীয়করণ করেছিল। তাদের দলীয় ক্যাডারদের দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল। ভুয়া ভোটার বন্ধ করা গেছে। কিন্তু বিএনপির নিয়োগকৃত ছাত্রদলের দলীয় ক্যাডারদের চাকরিচ্যুত করা হয়নি। মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হৃদয়ের বিশালতার কারণে তারা বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। পদোন্নতি পেয়ে উচ্চ পদে আসীন হয়েছেন। এরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা।’
অবশ্য তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন সেসব কর্মকর্তার দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা নেন। পরবর্তী সময় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একটি অংশ চাকরিচ্যুত হয়।
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আমরা বিএনপির সময়ে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাপারে আমাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছি কমিশনকে।’
শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অ্যাম্বুলেন্সটি বরিশাল থেকে রোগী ও স্বজনদের নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। পুলিশ বলছে, পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাছে গতিনিরোধক পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ঢুকে দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ছয়জন।
শিবচর হাইওয়ে থানার পরিদর্শক আবু নাঈম মোহাম্মদ মোফাজ্জেল জানান, নিহতরা হলেন পটুয়াখালীর বাউফলের জাহানারা বেগম (৫৫), তার মেয়ে লুৎফুন নাহার লিমা (৩২), তাদের স্বজন ফজলে রাব্বী (২৮), স্বজন নবচেতনা পত্রিকার ব্যুরোপ্রধান মাসুদ রানা (৩৮), অ্যাম্বুলেন্সের চালক রবিউল ইসলাম (২৮) ও তার সহকারী হিরু মৃধা (২৭)।
জাহানারা বেগমের স্বজনরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকতেন লুৎফুন্নাহার লিমা। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে এক বছর আগে বাংলাদেশে আসেন। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মা জাহানারা বেগমকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু মায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে মায়ের সঙ্গে প্রাণ গেল তারও।
লিমার বাবা লতিফ মল্লিক ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকেন। ২০১০ সালে বাবার কাছে যান লিমা। পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার লিমা ফ্লোরিডায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। তার মা জাহানারা বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। লিমার মামাতো ভাই রুবেল বলেন, দুই-তিন মাসের মধ্যে মাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল লিমার। জীবনের কী নির্মম বাস্তবতা, মাকে নিয়ে তিনি না-ফেরার দেশে যাত্রা করলেন।
পুলিশ পরিদর্শক আবু নাঈম মোহাম্মদ মোফাজ্জেলের ভাষ্য, চালকের ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। তিনি বলেন, বিরতিহীনভাবে দীর্ঘ সময় অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কারণে চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সে কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত অ্যাম্বুলেন্সচালক রবিউলের ছোট ভাইয়ের বরাত দিয়ে আবু নাঈম মোহাম্মদ মোফাজ্জেল বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সচালক রবিউল গত রবিবার রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ভোলা যান। কোনো বিরতি না দিয়ে সোমবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন এবং মঙ্গলবার ভোর ৪টা ২০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হিসাব করলে দেখা যায়, ২৬ ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি কোনো বিরতি না দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছিলেন। আমরা ধারণা করছি, টানা ২৬ ঘণ্টা নির্ঘুম থাকায় অ্যাম্বুলেন্স চালানোর সময় তিনি ক্লান্তি অনুভব করছিলেন। তার চোখে ঘুম ছিল। সে কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
পুলিশ পরিদর্শক নাঈম জানান, রবিউল খুলনার চন্দ্রানীমহল উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের কাউসার আলীর ছেলে। পাঁচ বছরের ছেলে ইয়ামিন ও স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে (২৩) নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। থাকতেন ঢাকার খিলগাঁওয়ের তালতলা। সোনিয়া চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দ্বিতীয় সন্তানের মুখ না দেখেই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন রবিউল।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের দাফনের জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে টাকা হস্তান্তর করেন।
কামরুল হাসান সোহেল বলেন, ‘আজকের (গতকাল) দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। অর্থ দিয়ে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কখনোই নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবুও আমরা মৃতের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে অর্থ সহযোগিতা দিয়েছি। বেলা ২টার মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে।’
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর সার্কেলের এএসপি মো. মারুফ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পর ট্রাক ফেলে চালক পালিয়ে যান। পুলিশ ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স উদ্ধার করে শিবচর হাইওয়ে থানায় নিয়ে জব্দ করে রাখে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা হবে।
এদিকে এদিন গোপালগঞ্জ ও মাগুরায় পৃথক দুই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও দুজন। গোপালগঞ্জে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন মনির শেখ (৪৪) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী।
গত সোমবার গভীর রাতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পিজয়পাশায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশের এটিএসআই শহিদুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহত মনির শেখের বাড়ি সদর উপজেলার চন্দ্রদীঘলিয়া গ্রামে।
এদিকে মাগুরা শহরের ভায়না মোড়ে সোমবার রাতে ট্রাকচাপায় শরিফুল ইসলাম (৫৬) নামে এক প্রকৌশলী নিহত হয়েছেন। শরিফুল মাগুরা সদরের নরসিংহাটি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি মাগুরা সদর উপজেলা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শহরের ভায়না চোপদারপাড়া এলাকায় বাড়ি করে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
এদিকে রাজধানীর বনশ্রীতে ফরাজী হাসপাতালের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আশিকুর রহমান আশেক (২৬) নামে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোয়া ১১টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের মামাতো ভাই নয়ন বলেন, ‘সকালে ফরাজী হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে আমার ভাই গুরুতর আহত হন। আশেক রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেছে। ঘটনার পর অটোরিকশাচালক পালিয়ে যায়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে সখ্য গড়ে তোলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. রুবেল রানা (৩৫)। জুনায়েদ রুহানি রুবেল নামে খোলা তার ফেইসবুক আইডিতে ভুয়া সব তথ্য ও ছবি দিয়ে ওই ছাত্রীর বিশ্বস্ততাও অর্জন করেন। কিন্তু ওই ছাত্রী যখন জানতে পারেন রুবেল ভুয়া পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়েছেন, তখন যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপর রুবেল ওই ছাত্রীকে ভয় দেখানো থেকে শুরু করে আপত্তিকর ছবিসংবলিত পোস্টার করে সাঁটান ক্যাম্পাসে। দুর্বিষহ করে তোলে ওই ছাত্রীর জীবন।
আরেক ভুক্তভোগী ময়মনসিংহের ভালুকার মো. রুবেল খান। তার সঙ্গেও ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে সখ্য গড়েন প্রতারক রুবেল রানা। পরে রুবেল খানের স্ত্রীকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগের কথা বলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন প্রতারক রুবেল রানা। এ ঘটনায় ঢাকার পল্লবী থানায় মামলা করেন রুবেল খান। একইভাবে চাকরি দেওয়ার নাম করে ময়মনসিংহের আশরাফুলের কাছ থেকে ২ লাখ এবং নুরুল আমিনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকাসহ অসংখ্য ব্যক্তির কাছ থেকে রুবেল রানা টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরে ১১ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমণ্ডি থানা এলাকা থেকে রুবেল রানা ওরফে জুনায়েদ রুহানী ওরফে রুহানী রুবেলকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে এই রুবেলের নানা অপকর্মের তথ্য। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতারক রুবেল নিজেকে কখনো ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো মন্ত্রী-এমপির পিএস আবার কখনো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। তার টার্গেটে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া নারী শিক্ষার্থীরাও। রুবেলের খপ্পরে পড়ে প্রায় অর্ধশত নারী প্রতারণার শিকার হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই সামাজিকভাবে মর্যাদাহানির ভয়ে থানায় অভিযোগ করেননি। তবে রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর অসংখ্য ভুক্তভোগী ডিবির কাছে অভিযোগ করছেন।
এ প্রসঙ্গে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রতারকের বিষয়ে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। ফেইসবুকে পরিচিত ব্যক্তি ছাড়া বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ না করা, চাকরি দেওয়ার নামে প্রলোভনে না পড়া ও অর্থ লেনদেন না করার বিষয়ে আমরা সব সময় সতর্ক করি। এরপরও মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। আমরা অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রতারক রুবেলের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী ৬ জানুয়ারি ডিএমপির তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলাটির এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নরসিংদীর রায়পুরা থানার শ্রীরামপুর রেলগেট এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে রুবেল রানার সঙ্গে ২০২০ সালের প্রথম দিকে পরিচয় হয় ওই ছাত্রীর। রুবেল নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দেন। এর পর থেকে রুবেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ফেইসবুকের মেসেঞ্জারে বিভিন্ন সময়ে আলাপ হতে থাকে। এ সময় ছাত্রীর বিভিন্ন ছবি সংরক্ষণ করে রাখেন রুবেল। ২০২১ সালে রুবেলের ভুয়া পরিচয় সম্পর্কে জানতে পেরে ওই ছাত্রী সম্পর্ক থেকে সরে আসেন। কিন্তু রুবেল তখন আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। কারসাজির মাধ্যমে ওই ছাত্রীর ফেইসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এ ছাড়া গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামোর দেয়াল ও আশপাশে পোস্টার সাঁটান। যাতে ওই ছাত্রীর ব্যক্তিগত ছবি এবং অন্য আরেকটি সম্পাদনা করা ছবিসহ ‘চিনে রাখুন ডিভোর্সি, বহুরূপী, মিষ্টভাষী প্রতারক..., চোখ রাখুন, ফেইসবুক, ইউটিউবে’ এমন আপত্তিকর কথা লেখে। রুবেল ওই ছাত্রীর বাড়ির ঠিকানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভুয়া কাগজ পাঠান বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ভুক্তভোগী মো. রুবেল খানের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালে ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জারে আলাপের মাধ্যমে রুবেল রানার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে স্ত্রীর চাকরির জন্য দেওয়া ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ফেরত চাইলে প্রতারক রুবেল রানা ফোন নম্বর বদলে ফেলেন। এরপর মেসেঞ্জারে রুবেল রানা জানান, টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের দিয়ে তুলে এনে শায়েস্তা করবেন।
প্রতারক রুবেল রানার ‘জুনায়েদ রুহানী রুবেল’ নামের ফেইসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা গেছে, জাতীয় সংসদ ভবনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেইসবুকে আপলোড করেছেন। পোশাকে ম্যাজিস্ট্রেটদের মনোগ্রাম লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানো অফিসে বসে ছবি তুলে সেই ছবিও ফেইসবুকে আপলোড করেছেন। তার চাকচিক্য দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের প্রধান অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক বলেন, ‘রুবলের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা এলাকায়। তিনি আপাদমস্তক প্রতারক। তার এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এত দিন আত্মগোপনে ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় সরকারের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে থাকেন। নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া কখনো কখনো নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির পিএস হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন।’
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নিজেকে উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে করোনাকালে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান নিয়েছেন রুবেল রানা। এভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প অনুমোদনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাড়াহুড়া করলেও গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার আলোচ্যসূচিতে আসেনি। ফলে এ মাসে আর প্রকল্পটি অনুমোদনের সম্ভাবনা প্রায় নেই। এ কারণে জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে একধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের পর প্রস্তুতি নিতে অন্তত ৯ মাস সময় লাগবে বলে ইসি জানিয়েছে। তারা আশা করেছিল, জানুয়ারির মাঝামাঝি প্রকল্পটি অনুমোদন হলে পুরো প্রস্তুতি নিতে পারবে।
পরবর্তী একনেক সভা আবার কবে হবে, সেটা নির্ধারণ করা নেই। এর আগের একনেক সভা হয়েছিল দুই মাস আগে। নতুন প্রকল্প ও সংশোধনী প্রকল্প হাতে আসার পর পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদন হয়ে প্রকল্পগুলো একনেক সভায় তোলা হয়। ইভিএম প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন ইসিতে পাঠিয়েছে। সেটা সংশোধিত হয়ে আবার পরিকল্পনা কমিশনেও এসেছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন এ বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করছে। কমিশনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চাইলে প্রকল্পটি টেবিলে উঠবে।
গতকাল একনেক সভায় প্রকল্পটি টেবিলে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু জানতে চাননি।
প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ইভিএম আমাদের তালিকায় ছিল না। এটা আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়াধীন আছে। যদি এটা অনুমোদন না হয়, তবে সংশ্লিষ্টরা দেখবেন। এটা আমার আওতায় নেই। আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে কিছু বলিনি।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের লক্ষ্য নিয়ে ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক নতুন (দ্বিতীয়) প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসি। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পর কমিশন কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে সংশোধন করতে বলেছে।
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী বছরের জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইভিএম সেট নির্বাচন উপযোগী করার জন্য ৯ মাস সময়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে ইসি। ইভিএম সেট কেনা, সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, বিভাগীয় পর্যায়ের ১০টি ওয়্যারহাউজের জন্য জমি কেনা, পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন কেনার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে খরচ জোগানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি করতে কমপক্ষে ছয় মাস লাগতে পারে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রপোজাল (প্রস্তাব) দিয়ে রেখেছি। এখন পাস করানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এটি পাস না হলে আমাদের ব্যালটেই যেতে হবে।’ ইভিএম প্রকল্প পাস করানো নিয়ে তাদের অতিরিক্ত তদবির নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
ইসির এই প্রকল্পের মেয়াদ হবে ৫ বছর। এই প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ইভিএম কেনাসহ ইসি খরচ করতে চায় ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি ইভিএম সংক্রান্ত বর্তমান প্রকল্প (প্রথম) ২০২৩ সালের জুনে শেষ হচ্ছে। ২০১৮ সালে নেওয়া ওই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
প্রথম প্রকল্পের জন্য কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ১২ হাজার নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয় প্রকল্পেও খরচের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে। ভোটগ্রহণে ধীরগতি, আঙুলের ছাপ না মেলা, মেশিন নষ্ট হওয়া, কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগার মতো নেতিবাচক ঘটনাও রয়েছে। তুলনামূলক চিত্রে দেখা গেছে, ইভিএমে ভোটগ্রহণ ব্যালটের চেয়ে কম।
বিপুল খরচ: চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে জাতীয় সংসদের অর্ধেক আসনে ইভিএমের মতো বিতর্কিত পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের ইসির লক্ষ্য ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বাজারদর যাচাই না করেই ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি ইভিএমের দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। দেশে এখন যেসব ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো কেনা হয় ২০১৮ সালে। তখন প্রতিটি ইভিএমের দাম পড়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
এর আগে ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রথমবার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে। প্রথম পর্যায়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১১ হাজার ৫৫৬ টাকা দরে ১৩০ ইউনিট ইভিএম সংগ্রহ করে ওই কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩২ হাজার ৫৪৭ টাকা দরে ৪০০টি ও তৃতীয় পর্যায়ে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ৪৬ হাজার ৫০১ টাকা দরে ৭০০টি সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৩০ ইউনিট কিনেছিল ড. হুদা কমিশন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৯৩টি ইভিএম দিয়ে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ ও উপনির্বাচন করা হয়েছে। নতুন প্রকল্পের জন্য ৫৩৪টি ডবল কেভিন পিকআপ কেনা হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে প্রথম প্রকল্পে থাকা আরও ৪টি জিপ ও ১টি মাইক্রোবাস। এর বাইরেও অতিরিক্ত ৪টি জিপ ও ৬টি মাইক্রোবাস আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিতে চায় ইসি। প্রকল্পের জন্য আনসার সদস্য ছাড়াও জনবল লাগবে ১ হাজার ১৩৫ জন। পাঁচ বছরে ৫টি সেমিনার বাবদ ২ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে চায় ইসি। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ৬ ধাপে প্রশিক্ষণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। পরামর্শকদের জন্য ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতিবছরের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা চায় ইসি। ইভিএম প্রচারে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুধু প্রচারণার জন্যই যদি ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে, সেটি অনেক খরচ বলে আমার মনে হয়। ইভিএম প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে খরচ হবে। কিন্তু এ পরিমাণ হবে বলে আমি মনে করি না। ইভিএম এ ভোট হবে কি না, সেটাই তো চূড়ান্ত না। ইভিএম প্রচারণার জন্য তো বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার আছে। আমি জানি না তারা বন্দুক পাওয়ার আশায় কামান চাইল কি না।’
কতটা কার্যকর হবে ইভিএম : এ পর্যন্ত ইভিএমে যত নির্বাচন হয়েছে, এর বেশির ভাগেই ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের নিচে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, কেবল আঙুলের ছাপ মুছে যাওয়াজনিত সমস্যা নয়, অনেক সময় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না নেওয়ার কারণে ভোটের ধীরগতি হয়। অনেক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিজেই কারিগরি বিষয় ভালো বোঝেন না। যে কারণে তারা ভোটের দিন কিছুটা পিছিয়ে থাকেন।
সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এসব নির্বাচনে গড়ে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। এসব নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ। ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে ধীরগতি।
গত বছর ৫ নভেম্বর ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম, ভোট পড়েছে মাত্র ২৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। একই অবস্থা দেখা যায়, গাইবান্ধা উপনির্বাচনে। এখানে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।
আঙুলের ছাপ না মেলায় বিপাকে পড়তে হয়েছে অনেককে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের পরে গিয়েও ভোট নিতে হয়ে ভোটারদের।
গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। এই নির্বাচনে ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সেখানে ইভিএমে ভোটগ্রহণ বেলা সাড়ে ৪টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় রাত ৮টায়।
ইভিএমে ভোটগ্রহণে ধীরগতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল। রংপুরের ভোট শেষে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে ইভিএমটা ব্যালটের চেয়ে সেøা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলছিল না। কেন ভোট বিলম্বিত হচ্ছে, অভিযোগটা এর আগে আমরা কখনো পাইনি। এটা আমাদের খুব উদ্বিগ্ন করে তুলল।’
২০১১ সালে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ চালু করে। ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম বিকল হয়ে পড়ে। ওগুলো কেনা হয়েছিল বুয়েটের কাছ থেকে।
তবে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে জটিলতা হবে না বলে মনে করেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘তরুণদের ইভিএম নিয়ে জটিলতায় পড়তে হবে না। কারণ তারা এ বিষয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু যারা সিনিয়র সিটিজেন (বয়স্ক) রয়েছেন, তাদের ভোটদানে একটু জটিলতা হতে পারে।’ ইসি চাইলে এ জটিলতা নিরসন করতে পারে, তাদের কাছে যথেষ্ট সময় রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মনিরা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় নির্বাচনে যতটা মানুষের আগ্রহ ছিল, সংসদীয় উপনির্বাচনে সে আগ্রহ ছিল না। এ কারণে উপনির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ভোট দিতে আসে। সেখানে কিন্তু বর্তমানে ইভিএম নিয়ে যে সংকট দেখা দিচ্ছে, সেটা প্রকট হতে পারে।’
বিদেশি ওমরাহ হাজিদের জন্য সমন্বিত বীমা ব্যয় ২৩৫ সৌদি রিয়েল থেকে কমিয়ে ৮৭ সৌদি রিয়েল করেছে সৌদি সরকার। যা চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে বিদেশি ওমরাহ হাজিদের ব্যয় ১৪৮ সৌদি রিয়েল বা ৬৩ শতাংশ হ্রাস পেল। গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি ঘোষণা দিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘ওমরাহ’র এ বীমা পলিসিটি একটি সমন্বিত পলিসি, যার মাধ্যমে সৌদি আরবের বাইরে থেকে ওমরাহ করতে আসা হাজিদের জন্য কার্যকর হবে।
সৌদি আরবে যাওয়ার আগে ভিসা প্রসেসিংয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এ বীমা পলিসির মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবে অবস্থানকালে চিকিৎসা, হাসপাতালে ভর্তি, চিকিৎসা, গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা, জরুরি প্রসব, জরুরি দাঁতের চিকিৎসা, ট্রাফিক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা, ডায়ালাইসিস এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ চিকিৎসা স্থানান্তরের মতো জরুরি অবস্থা।
এ বীমাটি মূলত দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মৃত্যু, মৃত ব্যক্তির দেহ তার দেশে ফেরত দেওয়া এবং আদালতের রায়ের মাধ্যমে জারি করা মামলার ক্ষতিপূরণের মতো সাধারণ মামলাগুলোও কভার করে। এর মধ্যে ফ্লাইট বিলম্বের ক্ষতিপূরণ ও ফ্লাইট বাতিলের ক্ষতিপূরণও অন্তর্ভুক্ত। হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বীমার মেয়াদ সৌদি আরবে প্রবেশের দিন থেকে ৯০ দিন কার্যকর থাকবে।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।