
বিদেশি ওমরাহ হাজিদের জন্য সমন্বিত বীমা ব্যয় ২৩৫ সৌদি রিয়েল থেকে কমিয়ে ৮৭ সৌদি রিয়েল করেছে সৌদি সরকার। যা চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে বিদেশি ওমরাহ হাজিদের ব্যয় ১৪৮ সৌদি রিয়েল বা ৬৩ শতাংশ হ্রাস পেল। গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে একটি ঘোষণা দিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘ওমরাহ’র এ বীমা পলিসিটি একটি সমন্বিত পলিসি, যার মাধ্যমে সৌদি আরবের বাইরে থেকে ওমরাহ করতে আসা হাজিদের জন্য কার্যকর হবে।
সৌদি আরবে যাওয়ার আগে ভিসা প্রসেসিংয়ের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এ বীমা পলিসির মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবে অবস্থানকালে চিকিৎসা, হাসপাতালে ভর্তি, চিকিৎসা, গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা, জরুরি প্রসব, জরুরি দাঁতের চিকিৎসা, ট্রাফিক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা, ডায়ালাইসিস এবং অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ চিকিৎসা স্থানান্তরের মতো জরুরি অবস্থা।
এ বীমাটি মূলত দুর্ঘটনাজনিত স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মৃত্যু, মৃত ব্যক্তির দেহ তার দেশে ফেরত দেওয়া এবং আদালতের রায়ের মাধ্যমে জারি করা মামলার ক্ষতিপূরণের মতো সাধারণ মামলাগুলোও কভার করে। এর মধ্যে ফ্লাইট বিলম্বের ক্ষতিপূরণ ও ফ্লাইট বাতিলের ক্ষতিপূরণও অন্তর্ভুক্ত। হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বীমার মেয়াদ সৌদি আরবে প্রবেশের দিন থেকে ৯০ দিন কার্যকর থাকবে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হয় তিন শতাধিক কর্মকর্তা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন তখন এমএ আজিজ। নন গেজেটেড এ কর্মকর্তাদের নিয়োগ পরীক্ষা নেয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান তারা। তাদের মধ্যে বড় অংশই এখন জ্যেষ্ঠ ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদে পদোন্নতি পেয়ে কর্মরত। অন্তত ৩০ জেলা ও কমপক্ষে ১৮০ উপজেলায় জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন ওই কর্মকর্তারা।
অবশ্য আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সিআরআইয়ের তথ্যনুযায়ী এ সংখ্যা আরও বেশি। তাদের অপেশাদার আচরণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার আশঙ্কা করছে আওয়ামী লীগ।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুই সদস্য দেশ রূপান্তরের কাছে উদ্বেগের কথা প্রকাশ করে বলেছেন, ২০০৫ সালে নিয়োগ দেওয়া বেশিরভাগ কর্মকর্তা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। এদের বেশিরভাগই ছাত্রদল অথবা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক ওই পরিচয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা বড় দুশ্চিন্তার হয়ে উঠতে পারেন। এ কর্মকর্তারা রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এলাকার।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি শাসনামলে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সবসময়ই নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করেছেন। ফলে বিতর্কিত হয়েছে সাংবিধানিক এ কমিশনটি। শুধু নির্বাচন কর্মকর্তাই নয়, ভুয়া ভোটারও বানিয়েছে বিএনপি। বিতর্কিত নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি, কমিশনকে সজাগ থাকতে হবে বেশি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের পদে থাকা নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব কর্মকর্তার অপেশাদার দায়িত্ব দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারার এমন ভয় দেখছে দলটি। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারাও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য উদ্বেগের। এসব কর্মকর্তাকে কীভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনে পাওয়া যায় সেই কৌশল খুঁজছে ক্ষমতাসীনরা। তা না হলে নিষ্ক্রিয় করারও চিন্তা করেছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা আরও বলেন, ওই কর্মকর্তাদের অনেকের সঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নতুন করে যোগাযোগ বা সম্পর্ক ঝালাই করতে শুরু করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সোর্স ওই কর্মকর্তাদের ওপর কড়া নজরদারি করছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনে ভোট বন্ধের যে নজির স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন, তাতে বিএনপির আমলের নিয়োগ দেওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকতে পারে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীরা। ওই কর্মকর্তারা নানা নেতিবাচক ঘটনা তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছেন বলে সন্দেহ করছে আওয়ামী লীগ।
ভোট একেবারেই বন্ধ করে দেওয়ার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাইবান্ধার উপনির্বাচন প্রথম দফায় বন্ধ করার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এ দূরত্ব কমাতে কমিশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তাতে সায় দেয়নি আওয়ামী লীগের কেউ।
সভাপতিম-লীর ওই নেতা আরও বলেন, ভোট বন্ধ করে দেওয়ার নজির সৃষ্টি করে যে জটিলতা তৈরি করা হয়েছে তা কমিশনকেই দূর করতে হবে এমন অবস্থান নেয় ক্ষমতাসীনরা। তিনি বলেন, অবশেষে নির্বাচন সম্পন্ন করে দূরত্ব কমাতে অনেকখানি সফল হলেও কমিশনের প্রতি এক ধরনের সন্দেহ দানা বেঁধেছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। এসব নানাদিক চিন্তা করে বিএনপির আমলে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কর্মকর্তাদের নিয়ে গত বছর ৩১ জুলাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল সুনির্দিষ্ট করে অভিযোগও দিয়েছে।
ওই সংলাপে ইসিতে দেওয়া ১৪ প্রস্তাবের মধ্যে ৩ নম্বরে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং এর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ দাবি করে। দলটি বলেছে, ‘এটি সর্বজন স্বীকৃত, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য সব সরকারের সময় নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে একদিকে যেমন দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওইসব দলীয় ব্যক্তি এখন নির্বাচন কমিশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
একই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে ব্যাপকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকেই এখন জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ। এসব কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুতপূর্বক তাদের সব ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদের সরকারদলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে কারচুপি করার অসৎ উদ্দেশ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশন দলীয়করণ করেছিল। তাদের দলীয় ক্যাডারদের দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল। ভুয়া ভোটার বন্ধ করা গেছে। কিন্তু বিএনপির নিয়োগকৃত ছাত্রদলের দলীয় ক্যাডারদের চাকরিচ্যুত করা হয়নি। মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হৃদয়ের বিশালতার কারণে তারা বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। পদোন্নতি পেয়ে উচ্চ পদে আসীন হয়েছেন। এরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা।’
অবশ্য তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন সেসব কর্মকর্তার দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা নেন। পরবর্তী সময় বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একটি অংশ চাকরিচ্যুত হয়।
আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আমরা বিএনপির সময়ে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাপারে আমাদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছি কমিশনকে।’
শরীয়তপুরের জাজিরা এলাকায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অ্যাম্বুলেন্সটি বরিশাল থেকে রোগী ও স্বজনদের নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। পুলিশ বলছে, পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার কাছে গতিনিরোধক পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের পেছনে ঢুকে দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ছয়জন।
শিবচর হাইওয়ে থানার পরিদর্শক আবু নাঈম মোহাম্মদ মোফাজ্জেল জানান, নিহতরা হলেন পটুয়াখালীর বাউফলের জাহানারা বেগম (৫৫), তার মেয়ে লুৎফুন নাহার লিমা (৩২), তাদের স্বজন ফজলে রাব্বী (২৮), স্বজন নবচেতনা পত্রিকার ব্যুরোপ্রধান মাসুদ রানা (৩৮), অ্যাম্বুলেন্সের চালক রবিউল ইসলাম (২৮) ও তার সহকারী হিরু মৃধা (২৭)।
জাহানারা বেগমের স্বজনরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকতেন লুৎফুন্নাহার লিমা। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে এক বছর আগে বাংলাদেশে আসেন। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মা জাহানারা বেগমকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু মায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে মায়ের সঙ্গে প্রাণ গেল তারও।
লিমার বাবা লতিফ মল্লিক ২০০০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকেন। ২০১০ সালে বাবার কাছে যান লিমা। পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার লিমা ফ্লোরিডায় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন। তার মা জাহানারা বেগম গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। লিমার মামাতো ভাই রুবেল বলেন, দুই-তিন মাসের মধ্যে মাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল লিমার। জীবনের কী নির্মম বাস্তবতা, মাকে নিয়ে তিনি না-ফেরার দেশে যাত্রা করলেন।
পুলিশ পরিদর্শক আবু নাঈম মোহাম্মদ মোফাজ্জেলের ভাষ্য, চালকের ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। তিনি বলেন, বিরতিহীনভাবে দীর্ঘ সময় অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কারণে চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সে কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত অ্যাম্বুলেন্সচালক রবিউলের ছোট ভাইয়ের বরাত দিয়ে আবু নাঈম মোহাম্মদ মোফাজ্জেল বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সচালক রবিউল গত রবিবার রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ভোলা যান। কোনো বিরতি না দিয়ে সোমবার রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন এবং মঙ্গলবার ভোর ৪টা ২০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হিসাব করলে দেখা যায়, ২৬ ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি কোনো বিরতি না দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছিলেন। আমরা ধারণা করছি, টানা ২৬ ঘণ্টা নির্ঘুম থাকায় অ্যাম্বুলেন্স চালানোর সময় তিনি ক্লান্তি অনুভব করছিলেন। তার চোখে ঘুম ছিল। সে কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
পুলিশ পরিদর্শক নাঈম জানান, রবিউল খুলনার চন্দ্রানীমহল উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের কাউসার আলীর ছেলে। পাঁচ বছরের ছেলে ইয়ামিন ও স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে (২৩) নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। থাকতেন ঢাকার খিলগাঁওয়ের তালতলা। সোনিয়া চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। দ্বিতীয় সন্তানের মুখ না দেখেই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন রবিউল।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের দাফনের জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে টাকা হস্তান্তর করেন।
কামরুল হাসান সোহেল বলেন, ‘আজকের (গতকাল) দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। অর্থ দিয়ে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কখনোই নিরূপণ করা সম্ভব নয়। তবুও আমরা মৃতের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে অর্থ সহযোগিতা দিয়েছি। বেলা ২টার মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে।’
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর সার্কেলের এএসপি মো. মারুফ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার পর ট্রাক ফেলে চালক পালিয়ে যান। পুলিশ ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স উদ্ধার করে শিবচর হাইওয়ে থানায় নিয়ে জব্দ করে রাখে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা হবে।
এদিকে এদিন গোপালগঞ্জ ও মাগুরায় পৃথক দুই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও দুজন। গোপালগঞ্জে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন মনির শেখ (৪৪) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী।
গত সোমবার গভীর রাতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পিজয়পাশায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশের এটিএসআই শহিদুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহত মনির শেখের বাড়ি সদর উপজেলার চন্দ্রদীঘলিয়া গ্রামে।
এদিকে মাগুরা শহরের ভায়না মোড়ে সোমবার রাতে ট্রাকচাপায় শরিফুল ইসলাম (৫৬) নামে এক প্রকৌশলী নিহত হয়েছেন। শরিফুল মাগুরা সদরের নরসিংহাটি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি মাগুরা সদর উপজেলা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শহরের ভায়না চোপদারপাড়া এলাকায় বাড়ি করে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।
এদিকে রাজধানীর বনশ্রীতে ফরাজী হাসপাতালের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আশিকুর রহমান আশেক (২৬) নামে একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোয়া ১১টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের মামাতো ভাই নয়ন বলেন, ‘সকালে ফরাজী হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে আমার ভাই গুরুতর আহত হন। আশেক রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করেছে। ঘটনার পর অটোরিকশাচালক পালিয়ে যায়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে সখ্য গড়ে তোলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. রুবেল রানা (৩৫)। জুনায়েদ রুহানি রুবেল নামে খোলা তার ফেইসবুক আইডিতে ভুয়া সব তথ্য ও ছবি দিয়ে ওই ছাত্রীর বিশ্বস্ততাও অর্জন করেন। কিন্তু ওই ছাত্রী যখন জানতে পারেন রুবেল ভুয়া পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়েছেন, তখন যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এরপর রুবেল ওই ছাত্রীকে ভয় দেখানো থেকে শুরু করে আপত্তিকর ছবিসংবলিত পোস্টার করে সাঁটান ক্যাম্পাসে। দুর্বিষহ করে তোলে ওই ছাত্রীর জীবন।
আরেক ভুক্তভোগী ময়মনসিংহের ভালুকার মো. রুবেল খান। তার সঙ্গেও ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে সখ্য গড়েন প্রতারক রুবেল রানা। পরে রুবেল খানের স্ত্রীকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগের কথা বলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন প্রতারক রুবেল রানা। এ ঘটনায় ঢাকার পল্লবী থানায় মামলা করেন রুবেল খান। একইভাবে চাকরি দেওয়ার নাম করে ময়মনসিংহের আশরাফুলের কাছ থেকে ২ লাখ এবং নুরুল আমিনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকাসহ অসংখ্য ব্যক্তির কাছ থেকে রুবেল রানা টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরে ১১ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমণ্ডি থানা এলাকা থেকে রুবেল রানা ওরফে জুনায়েদ রুহানী ওরফে রুহানী রুবেলকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে এই রুবেলের নানা অপকর্মের তথ্য। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতারক রুবেল নিজেকে কখনো ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো মন্ত্রী-এমপির পিএস আবার কখনো বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। তার টার্গেটে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া নারী শিক্ষার্থীরাও। রুবেলের খপ্পরে পড়ে প্রায় অর্ধশত নারী প্রতারণার শিকার হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই সামাজিকভাবে মর্যাদাহানির ভয়ে থানায় অভিযোগ করেননি। তবে রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর অসংখ্য ভুক্তভোগী ডিবির কাছে অভিযোগ করছেন।
এ প্রসঙ্গে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের প্রতারকের বিষয়ে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। ফেইসবুকে পরিচিত ব্যক্তি ছাড়া বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ না করা, চাকরি দেওয়ার নামে প্রলোভনে না পড়া ও অর্থ লেনদেন না করার বিষয়ে আমরা সব সময় সতর্ক করি। এরপরও মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। আমরা অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
প্রতারক রুবেলের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী ৬ জানুয়ারি ডিএমপির তেজগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলাটির এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নরসিংদীর রায়পুরা থানার শ্রীরামপুর রেলগেট এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে রুবেল রানার সঙ্গে ২০২০ সালের প্রথম দিকে পরিচয় হয় ওই ছাত্রীর। রুবেল নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দেন। এর পর থেকে রুবেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ফেইসবুকের মেসেঞ্জারে বিভিন্ন সময়ে আলাপ হতে থাকে। এ সময় ছাত্রীর বিভিন্ন ছবি সংরক্ষণ করে রাখেন রুবেল। ২০২১ সালে রুবেলের ভুয়া পরিচয় সম্পর্কে জানতে পেরে ওই ছাত্রী সম্পর্ক থেকে সরে আসেন। কিন্তু রুবেল তখন আগ্রাসী ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। কারসাজির মাধ্যমে ওই ছাত্রীর ফেইসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এ ছাড়া গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামোর দেয়াল ও আশপাশে পোস্টার সাঁটান। যাতে ওই ছাত্রীর ব্যক্তিগত ছবি এবং অন্য আরেকটি সম্পাদনা করা ছবিসহ ‘চিনে রাখুন ডিভোর্সি, বহুরূপী, মিষ্টভাষী প্রতারক..., চোখ রাখুন, ফেইসবুক, ইউটিউবে’ এমন আপত্তিকর কথা লেখে। রুবেল ওই ছাত্রীর বাড়ির ঠিকানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভুয়া কাগজ পাঠান বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ভুক্তভোগী মো. রুবেল খানের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালে ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জারে আলাপের মাধ্যমে রুবেল রানার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে স্ত্রীর চাকরির জন্য দেওয়া ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ফেরত চাইলে প্রতারক রুবেল রানা ফোন নম্বর বদলে ফেলেন। এরপর মেসেঞ্জারে রুবেল রানা জানান, টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের দিয়ে তুলে এনে শায়েস্তা করবেন।
প্রতারক রুবেল রানার ‘জুনায়েদ রুহানী রুবেল’ নামের ফেইসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা গেছে, জাতীয় সংসদ ভবনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেইসবুকে আপলোড করেছেন। পোশাকে ম্যাজিস্ট্রেটদের মনোগ্রাম লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানো অফিসে বসে ছবি তুলে সেই ছবিও ফেইসবুকে আপলোড করেছেন। তার চাকচিক্য দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের প্রধান অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক বলেন, ‘রুবলের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা এলাকায়। তিনি আপাদমস্তক প্রতারক। তার এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এত দিন আত্মগোপনে ছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় সরকারের বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে থাকেন। নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া কখনো কখনো নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির পিএস হিসেবেও পরিচয় দিয়ে থাকেন।’
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নিজেকে উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে করোনাকালে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান নিয়েছেন রুবেল রানা। এভাবে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।’
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প অনুমোদনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাড়াহুড়া করলেও গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার আলোচ্যসূচিতে আসেনি। ফলে এ মাসে আর প্রকল্পটি অনুমোদনের সম্ভাবনা প্রায় নেই। এ কারণে জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে একধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে।
প্রকল্পটি অনুমোদনের পর প্রস্তুতি নিতে অন্তত ৯ মাস সময় লাগবে বলে ইসি জানিয়েছে। তারা আশা করেছিল, জানুয়ারির মাঝামাঝি প্রকল্পটি অনুমোদন হলে পুরো প্রস্তুতি নিতে পারবে।
পরবর্তী একনেক সভা আবার কবে হবে, সেটা নির্ধারণ করা নেই। এর আগের একনেক সভা হয়েছিল দুই মাস আগে। নতুন প্রকল্প ও সংশোধনী প্রকল্প হাতে আসার পর পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদন হয়ে প্রকল্পগুলো একনেক সভায় তোলা হয়। ইভিএম প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন ইসিতে পাঠিয়েছে। সেটা সংশোধিত হয়ে আবার পরিকল্পনা কমিশনেও এসেছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন এ বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করছে। কমিশনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চাইলে প্রকল্পটি টেবিলে উঠবে।
গতকাল একনেক সভায় প্রকল্পটি টেবিলে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু জানতে চাননি।
প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ইভিএম আমাদের তালিকায় ছিল না। এটা আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়াধীন আছে। যদি এটা অনুমোদন না হয়, তবে সংশ্লিষ্টরা দেখবেন। এটা আমার আওতায় নেই। আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে কিছু বলিনি।’
আগামী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের লক্ষ্য নিয়ে ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক নতুন (দ্বিতীয়) প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসি। প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পর কমিশন কিছু বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে সংশোধন করতে বলেছে।
ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী বছরের জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইভিএম সেট নির্বাচন উপযোগী করার জন্য ৯ মাস সময়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে ইসি। ইভিএম সেট কেনা, সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, বিভাগীয় পর্যায়ের ১০টি ওয়্যারহাউজের জন্য জমি কেনা, পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন কেনার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে খরচ জোগানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি করতে কমপক্ষে ছয় মাস লাগতে পারে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রপোজাল (প্রস্তাব) দিয়ে রেখেছি। এখন পাস করানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এটি পাস না হলে আমাদের ব্যালটেই যেতে হবে।’ ইভিএম প্রকল্প পাস করানো নিয়ে তাদের অতিরিক্ত তদবির নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
ইসির এই প্রকল্পের মেয়াদ হবে ৫ বছর। এই প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ইভিএম কেনাসহ ইসি খরচ করতে চায় ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি ইভিএম সংক্রান্ত বর্তমান প্রকল্প (প্রথম) ২০২৩ সালের জুনে শেষ হচ্ছে। ২০১৮ সালে নেওয়া ওই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
প্রথম প্রকল্পের জন্য কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে ১২ হাজার নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয় প্রকল্পেও খরচের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে। ভোটগ্রহণে ধীরগতি, আঙুলের ছাপ না মেলা, মেশিন নষ্ট হওয়া, কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগার মতো নেতিবাচক ঘটনাও রয়েছে। তুলনামূলক চিত্রে দেখা গেছে, ইভিএমে ভোটগ্রহণ ব্যালটের চেয়ে কম।
বিপুল খরচ: চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে জাতীয় সংসদের অর্ধেক আসনে ইভিএমের মতো বিতর্কিত পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের ইসির লক্ষ্য ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বাজারদর যাচাই না করেই ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি ইভিএমের দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। দেশে এখন যেসব ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো কেনা হয় ২০১৮ সালে। তখন প্রতিটি ইভিএমের দাম পড়েছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা।
এর আগে ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রথমবার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে। প্রথম পর্যায়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১১ হাজার ৫৫৬ টাকা দরে ১৩০ ইউনিট ইভিএম সংগ্রহ করে ওই কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে একই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩২ হাজার ৫৪৭ টাকা দরে ৪০০টি ও তৃতীয় পর্যায়ে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ৪৬ হাজার ৫০১ টাকা দরে ৭০০টি সব মিলিয়ে ১ হাজার ২৩০ ইউনিট কিনেছিল ড. হুদা কমিশন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৯৩টি ইভিএম দিয়ে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ ও উপনির্বাচন করা হয়েছে। নতুন প্রকল্পের জন্য ৫৩৪টি ডবল কেভিন পিকআপ কেনা হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে প্রথম প্রকল্পে থাকা আরও ৪টি জিপ ও ১টি মাইক্রোবাস। এর বাইরেও অতিরিক্ত ৪টি জিপ ও ৬টি মাইক্রোবাস আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিতে চায় ইসি। প্রকল্পের জন্য আনসার সদস্য ছাড়াও জনবল লাগবে ১ হাজার ১৩৫ জন। পাঁচ বছরে ৫টি সেমিনার বাবদ ২ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে চায় ইসি। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ৬ ধাপে প্রশিক্ষণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। পরামর্শকদের জন্য ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতিবছরের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা চায় ইসি। ইভিএম প্রচারে ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুধু প্রচারণার জন্যই যদি ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে, সেটি অনেক খরচ বলে আমার মনে হয়। ইভিএম প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে খরচ হবে। কিন্তু এ পরিমাণ হবে বলে আমি মনে করি না। ইভিএম এ ভোট হবে কি না, সেটাই তো চূড়ান্ত না। ইভিএম প্রচারণার জন্য তো বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার আছে। আমি জানি না তারা বন্দুক পাওয়ার আশায় কামান চাইল কি না।’
কতটা কার্যকর হবে ইভিএম : এ পর্যন্ত ইভিএমে যত নির্বাচন হয়েছে, এর বেশির ভাগেই ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশের নিচে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, কেবল আঙুলের ছাপ মুছে যাওয়াজনিত সমস্যা নয়, অনেক সময় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না নেওয়ার কারণে ভোটের ধীরগতি হয়। অনেক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিজেই কারিগরি বিষয় ভালো বোঝেন না। যে কারণে তারা ভোটের দিন কিছুটা পিছিয়ে থাকেন।
সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। এসব নির্বাচনে গড়ে ২৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। এসব নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ। ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে ধীরগতি।
গত বছর ৫ নভেম্বর ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম, ভোট পড়েছে মাত্র ২৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। একই অবস্থা দেখা যায়, গাইবান্ধা উপনির্বাচনে। এখানে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।
আঙুলের ছাপ না মেলায় বিপাকে পড়তে হয়েছে অনেককে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের পরে গিয়েও ভোট নিতে হয়ে ভোটারদের।
গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হয়। এই নির্বাচনে ৬৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। সেখানে ইভিএমে ভোটগ্রহণ বেলা সাড়ে ৪টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয় রাত ৮টায়।
ইভিএমে ভোটগ্রহণে ধীরগতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল। রংপুরের ভোট শেষে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে ইভিএমটা ব্যালটের চেয়ে সেøা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলছিল না। কেন ভোট বিলম্বিত হচ্ছে, অভিযোগটা এর আগে আমরা কখনো পাইনি। এটা আমাদের খুব উদ্বিগ্ন করে তুলল।’
২০১১ সালে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ চালু করে। ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম বিকল হয়ে পড়ে। ওগুলো কেনা হয়েছিল বুয়েটের কাছ থেকে।
তবে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে জটিলতা হবে না বলে মনে করেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘তরুণদের ইভিএম নিয়ে জটিলতায় পড়তে হবে না। কারণ তারা এ বিষয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু যারা সিনিয়র সিটিজেন (বয়স্ক) রয়েছেন, তাদের ভোটদানে একটু জটিলতা হতে পারে।’ ইসি চাইলে এ জটিলতা নিরসন করতে পারে, তাদের কাছে যথেষ্ট সময় রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মনিরা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় নির্বাচনে যতটা মানুষের আগ্রহ ছিল, সংসদীয় উপনির্বাচনে সে আগ্রহ ছিল না। এ কারণে উপনির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল না। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ভোট দিতে আসে। সেখানে কিন্তু বর্তমানে ইভিএম নিয়ে যে সংকট দেখা দিচ্ছে, সেটা প্রকট হতে পারে।’
প্রতি বছরই নানা ধরনের পরিমার্জন করা হলেও পাঠ্যবইয়ে থেকেই যাচ্ছে ভুল আর অসংগতি। কিন্তু দীর্ঘ পরিকল্পনা ও যাচাই-বাছাই শেষে এ বছর থেকে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে ভুলত্রুটি খুবই কম থাকবে সেটাই আশা ছিল সবার। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের ভুল আর অসংগতি চোখে পড়ছে। এতে অনেকটাই হতাশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এ বছরের মাধ্যমিক স্তরের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির ‘Science Exercise Book’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের অনেক প্যারাগ্রাফ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট ‘nationalgeographic.org’ থেকে নেওয়া হয়েছে। কিছু প্যারাগ্রাফ ওয়ার্ড-বাই-ওয়ার্ড কপি করা হয়েছে। এ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে ‘বায়োডায়ভারসিটি’ অধ্যায়ে ৫ নম্বর পৃষ্ঠার প্রায় বেশিরভাগ লেখাই হুবহু কপি করা হয়েছে। আর ৩ নম্বর পৃষ্ঠার কিছু অংশও কপি করা হয়েছে। এভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বিভিন্ন বইতে অসংখ্য বানান ভুল ও বাক্য গঠনে অসংগতি পাওয়া গেছে।
এ বইটির লেখক প্যানেলে ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ড. হাসিনা খান, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান, ড. মুশতাক ইবনে আইয়ূব ও রনি বসাক। আর সম্পাদনা করেছেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণির ‘Science Exercise Book’ বইয়ের একটি অংশ ‘ইন্টারনেট থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে’ বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার দায় স্বীকার করেছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের কোথায় কোথায় ভুলত্রুটি আছে তা খুঁজতে ইতিমধ্যে একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে একাধিক কমিটি মার্চ মাসে স্কুলে স্কুলে ঘুরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মতামত সংগ্রহ করবে। আগামী বছরের বই পরিমার্জনে তাদের মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। যতটা নির্ভুল পরিমার্জন করা যায়, সেটা আমরা করব।’
সূত্র জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি এবং দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রায় তিন বছর আগে কাজ শুরু হয়। ২০২২ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কথা ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও যথাযথ পা-ুলিপি তৈরি না হওয়ায় তা শুরু করা যায়নি। তবে ওই বছর কিছু স্কুলে পাইলটিং করা হয়। এরপর এ বছর থেকে তিনটি শ্রেণিতে তা চালু করা হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমের একাধিক বই বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের ব্যাক কভারে লেখা হয়েছে, ‘Government of the Peoples’ Republic of Bangladesh’. কিন্তু বাংলাদেশের অফিশিয়াল নাম ‘Government of the People’s Republic of Bangladesh’. এ ছাড়া এই শ্রেণির একাধিক বইয়ের অনেক জায়গায় একই শব্দের একেকভাবে লেখা হয়েছে। যেমন কেন/কেনো, পড়/পড়ো, নিচে/নীচে, যে কোন/যেকোন ইত্যাদি।
নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের নানা ভুলত্রুটি খুঁজে বের করেছেন মাসুম হাসান নামের একজন শিক্ষক। তিনি এতে ৪৮টি ভুল পেয়েছেন। এই বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠায় ‘লিটল থিংস’ কবিতাটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কবির নাম দেওয়া হয়নি। অথচ এই বহুল প্রচলিত কবিতাটি লিখেছেন আমেরিকান কবি জুলিয়া অ্যাবিগেল ফ্লেচার কার্নি। একইভাবে ১০১ পৃষ্ঠায় ‘মাই বুকস’ কবিতাটিতেও কবির নাম নেই।
এ ছাড়া বইটির বিভিন্ন পৃষ্ঠায় বানান, বাক্য গঠন ও গ্রামারের ব্যবহারে অসংখ্য ভুল রয়েছে। ১৭ নম্বর পৃষ্ঠার ৮ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে agesz, সঠিক হবে ধমবং. ১৮ পৃষ্ঠার ১১ নম্বর লাইনে আছে things, হবে Things. ২৩ পৃষ্ঠার ৭ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে ‘প্রাত্যাহিক’, সঠিক হবে ‘প্রাত্যহিক’। ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় মোটা অক্ষরে লেখা হয়েছে anoter, সঠিক হবে other. ৪০ পৃষ্ঠায় ১১ ও ১২ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে dinner, হবে supper. ৪৪ পৃষ্ঠায় ৭ নম্বর লাইনে আছে hand, হবে hands. ৫২ পৃষ্ঠায় ২ নম্বর লাইনে আছে his head, হবে her head. ৬৯ পৃষ্ঠায় ২৩ নম্বর লাইনে আছে Modal verb, হবে Modal verbs. ৮০ পৃষ্ঠায় ১ নম্বর লাইনে আছে has recently transferred, হবে has recently been transferred এবং ৫ নম্বর লাইনে আছে যব attends, হবে she attends. ৮২ পৃষ্ঠায় ১৭ নম্বর লাইনে আছে conversion, হবে conversation. ৮৪ পৃষ্ঠায় ১৮ নম্বর লাইনে আছে younger, হবে youngers. ৮৫ পৃষ্ঠায় ৬ নম্বর লাইনে আছে word means, হবে words mean. ৯২ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ৩ নম্বর লাইনে লেখা parent’s, হবে parents. ১০২ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে লেখা word, হবে words. ১০৪ পৃষ্ঠার ১০ নম্বর লাইনে লেখা ‘You’, হবে ‘you’ এবং শেষ লাইনে আছে ণড়ঁ, হবে ুড়ঁ. ১০৬ পৃষ্ঠার চিঠিতে শুরুতেই লেখা হয়েছে Assalamu Alaaikum, স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম বাদে অন্যান্য ধর্মের শিক্ষার্থী এ শব্দটি গ্রহণ করবে না। একই পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ৩ নম্বর লাইনে আছে ঈড়ারফ, হবে ঈঙঠওউ.
১০৮ পৃষ্ঠায় ২ নম্বর লাইনে লেখা ওভ, হবে রভ এবং ৪ নম্বর লাইনে আছে Dear madam/sir, হবে Dear Madam/Sir. ১০৯ পৃষ্ঠায় ৫ ও ১৮ নম্বর লাইনে আছে expressions, হবে Expression. ১১০ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ৭ নম্বর লাইনে আছে ‘অংশ গ্রহণ’ হবে ‘অংশগ্রহণ’। ১৩১ পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ৯ নম্বর লাইনে আছে oldest, হবে eldest. ১৩৩ পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে লেখা ‘কার্য্যক্রম’, লেখা উচিত ‘কার্যকলাপ বা কর্মকা-’ এবং নিচ থেকে ১ নম্বর লাইনে আছে ‘শ্রেনি’, হবে ‘শ্রেণি’। ১৩৪ পৃষ্ঠায় ৯ নম্বর লাইনে আছে ‘তাছাড়াও’, লেখা উচিত ‘এছাড়াও বা তাছাড়া’ এবং একই লাইনে আছে ‘বৈশিষ্ট্যবলী’ তবে লেখা উচিত ‘বৈশিষ্ট্যগুলো’।
১৩৮ পৃষ্ঠার নিচ থেকে প্রথম লাইনে আছে Eid-al-Azha, হবে Eid-al-Adha. ১৩৯ পৃষ্ঠার ৩ ও ৪ নম্বর লাইনে আছে each other, হবে one another. ১৪২ পৃষ্ঠার ৬ নম্বর লাইনে আছে I ate, হবে I have eaten. ১৪৫ পৃষ্ঠার ১০ নম্বর লাইনে আছে each othe's, হবে one another's. ১৪৮ পৃষ্ঠার ১৪ নম্বর লাইনে আছে ‘শব্দলোর’, হবে ‘শব্দগুলোর’। ১৪৯ পৃষ্ঠার ১৪ নম্বর লাইনে আছে Four Friend's, হবে Four Friends এবং একই লাইনে আছে ‘খুজে’, হবে ‘খুঁজে’। ১৫১ পৃষ্ঠার ৭ নম্বর লাইনে লেখা আছে ‘সব বন্ধু-বান্ধবদেরকে’, লেখা উচিত ‘সব বন্ধুকে’ এবং একই লাইনে আছে ‘উৎসবমূখর’, হবে ‘উৎসবমুখর’। ১৫৬ পৃষ্ঠার নিচ থেকে ১০ নম্বর লাইনে আছে it’s paws, হবে its paws. ১৬০ পৃষ্ঠার ৫ নম্বর লাইনে লেখা religion, হবে religions. ১৬৪ পৃষ্ঠার ৬ নম্বর লাইনে listening, হবে listening to. ১৬৫ পৃষ্ঠায় নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে লেখা ‘কৃত্তিমভাবে’, হবে ‘কৃত্রিমভাবে’। আর ১৬৭ পৃষ্ঠার ৫ নম্বর লাইনে আছে Celerate, হবে Celebrate এবং নিচ থেকে ২ নম্বর লাইনে আছে Starring, হবে Staring.
শুধু নতুন শিক্ষাক্রমই নয় পুরনো কারিকুলামের বইতেও রয়েছে অনেক ভুল। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় ও নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়।’ এখানে তথ্যগত দুটি ভুল আছে। প্রকৃতপক্ষে রাজারবাগে ছিল পুলিশ লাইনস, আর পিলখানায় ছিল ইপিআর সদর দপ্তর। গত বছরের বইয়েও একই ভুল ছিল। একই শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা আছে, ‘১২ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।’ এ তথ্যও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে শপথ পড়িয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। একই বইয়ের ১৮১ পৃষ্ঠায় ‘অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ও গণহত্যা’ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশজুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।’ প্রকৃত তথ্য হলো, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলা শুরু হয় ২৫ মার্চ কালরাতে।
গতকাল নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং পৌরনীতি ও নাগরিকতা বিষয়ে মোট ৯টি সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি। এতে মূলত ইতিহাসভিত্তিক কিছু তথ্যের সংশোধন করা হয়েছে।
ড. জাফর ইকবাল ও ড. হাসিনা খানের বিবৃতি : গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে ড. জাফর ইকবাল ও ড. হাসিনা খান বলেন, একই পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকেন, যাদের শ্রম ও নিষ্ঠার ফল বইটি। বিশেষত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে এসব লেখকের কাছ থেকেই একধরনের দায়িত্বশীলতা আশা করা হয়। সেখানে কোনো একজন লেখকের লেখা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তা আমাদের টিমের জন্য হতাশা ও মন খারাপের কারণ। ওই অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দুজন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বইটির প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে। কাজেই উল্লিখিত অভিযোগের বাইরেও যেকোনো যৌক্তিক মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।