
৫৪ বছর আগে আজকের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ আইয়ুব সরকারের পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি পুলিশের গুলিতে জীবন দেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মানুষ সে সময় ভয় ভুলে গিয়ে পথে নামে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী সেই সাহস আর প্রতিবাদের ভাষায় উজ্জীবিত হয়ে বের করে এক শোক মিছিল। একে একে তাতে যোগ দেয় ছাত্র, সাধারণ মানুষ, ছোট-বড় অফিস আদালতের কর্মচারী সবাই। দুই মাইল দীর্ঘ এই মিছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করেছিল সেদিন আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে। আসাদের শার্ট হয়ে ওঠে প্রাণের পতাকা। কবি শামসুর রাহমান লিখে ফেলেন তার অমর কবিতা আসাদের শার্ট। কবি লিখলেনÑ গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের/ জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট/ উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।
আসাদের মৃত্যুর খবরে ঢাকার বাইরেও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। যার পরিণতিতে ঘটে গেল ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান, আইয়ুব খানের পতন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ অন্য আসামিদের নিঃশর্ত মুক্তিলাভ। এই অভ্যুত্থান শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যেও বিপুলভাবে জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
শহীদ আসাদ ১৯৪৯ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আবু তাহের। শহীদ আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে তিনি শহীদ আসাদ নামে পরিচিত। আসাদ শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে জগন্নাথ কলেজ ও মুরারী চাঁদ মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি বিএ ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। শহীদ আসাদ তৎকালীন ঢাকা হল শাখার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে দুই ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও এনএসএফের একাংশ নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পরে ১৪ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেই ১১ দফা সারা দেশে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিল। ১১ দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করা হয়েছিল। ১৮ তারিখের মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরদিন (১৯ জানুয়ারি) মিছিল বের হলে আসাদুল হক নামে একজন (তিনি শহীদ আসাদ নন) গুলিবিদ্ধ হন। ২০ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে মিছিলটি বের হয়েছিল, তার প্রথম সারিতে ছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ। চানখাঁরপুল মোড় থেকে পুলিশের জিপ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছোড়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে আসাদের রক্তমাখা প্রাণহীন দেহ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে।
আসাদের মৃত্যুতে সারা দেশে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। আসাদ ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) অন্যতম নেতা। একই সঙ্গে কৃষক আন্দোলনের সংগঠক (প্রধানত শিবপুর এলাকায়) এবং গোপন কমিউনিস্ট পার্টির একাংশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসাদ যেখানে নিহত হয়েছিলেন তার পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত স্মৃতিস্তম্ভটি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। শহীদ আসাদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার স্মৃতিস্তম্ভ স্মৃতির ধুলায় আচ্ছন্ন। বছরের এই একটি দিন ছাড়া সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে তা। স্মৃতিস্তম্ভটি পরিচ্ছন্ন রাখতে খুব একটা উদ্যোগ দেখা যায় না কখনো। স্তম্ভের ভেতরে কাগজ, বোতল পড়ে থাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, লাল-সবুজের রঙের তুলির আঁচড় দিচ্ছেন একজন। স্মৃতিস্তম্ভের উপরে রক্তবর্ণে চকচক করে তোলা হয়েছে। আশপাশের কিছুটা জায়গাও পরিষ্কার করা হয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের পাশে চা বিক্রেতা মাসুদ বলেন, আমি গত চার-পাঁচ বছর এখানে চা বিক্রি করি। এখন যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সারা বছর এমন থাকে না। একটু আবর্জনার মতো থাকে। এখন যেমন পরিষ্কার করা হয়েছে, এরকম আবার আরেক বছর আসলে করবে।
আমিনুল নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, এখানে একটা স্মৃতিস্তম্ভ আছে আজকে জানলাম। কখনো খেয়াল করিনি। সকালে এসে দেখি পরিষ্কার করছে। পরে সকাল ৯টার দিকে কয়েকজন এসে দেখলাম রং লাগাচ্ছে। একজন এসে বলেছে কালকে যেন এখানে না বসি।
একই অবস্থা মোহাম্মদপুর এলাকায় আসাদের নামে নির্মিত তোরণের। তোরণটি এখনো আছে, কিন্তু পোস্টারে ঢাকা পড়েছে এর সৌন্দর্য। অথচ এই তোরণে পোস্টার সাঁটানো যে দণ্ডনীয় অপরাধ, তা স্পষ্ট করেই লেখা আছে সেখানে।
এখন পর্যন্ত আসাদের স্মৃতিসৌধ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ আসাদ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান মিলন। তিনি বলেন, এত বছর পর এসেও নিজেকে খুব লজ্জিত লাগে। কারণ এত বছর পার হয়ে গেলেও আসাদের নামে এখন পর্যন্ত কোনো স্মৃতিসৌধ হয়নি। আসাদ যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তার পাশে একটা স্মৃতিসৌধ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছি। কিন্তু বর্তমান সরকার আসার পরে সেটা স্থগিত হয়ে যায়।
আসাদ দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ আসাদের এ অসামান্য অবদান দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে শহীদ আসাদসহ বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী শহীদ আসাদ এদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার আত্মত্যাগ সবসময় আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রেরণা জোগাবে।
এক দশকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভোট প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্থায়ী সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনেও বড় দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরেই অবস্থান দলটির। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেখানে ইসলামী আন্দোলন আগেরবারের চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে।
দলটির ভোট বাড়ার রহস্য খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, মূলত তিনটি কারণে দলটির ভোটব্যাংক ভারী হচ্ছে। প্রথমত, দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রতি অবিশ্বাস এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বিবেচনায় নিয়ে মানুষ ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ঝুঁকছে। দ্বিতীয়ত, ধর্মভিত্তিক বা ইসলামী দল বলতে এতদিন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে বোঝানো হলেও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে তারা নির্বাচনে নিষিদ্ধ এবং রাজনীতিতে কোণঠাসা। তাদের বিকল্প হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়েছে। অন্য ইসলামী দলগুলোর পক্ষে না ঝুঁকে পড়ার আরও কারণ হচ্ছে এসব ছোট ছোট দল ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতো বড় দুই দলের সঙ্গে থাকছে।
তৃতীয়ত, বছরের প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী আন্দোলনের মাহফিল বা দাওয়াতি কর্মকান্ড চলে। এ ছাড়া ‘পীরভিত্তিক দল’ হওয়ায় ইসলামী আন্দোলনের সমর্থক সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে দেওবন্দ ও কওমি ঘরানার পীর হিসেবে ‘চরমোনাই ধারাটি’ বেশি গ্রহণযোগ্য।
তবে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলছেন, সাংগঠনিক দক্ষতা আর নির্বাচনী কৌশলেই তাদের ভোট বাড়ছে। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বে থাকা বিভিন্ন জোট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা জোট বা নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট দুটোর কেন্দ্রেরই দুর্নীতিবাজরা বসে আছেন। আমরা দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতার যাওয়ার সহযোগী হতে চাই না।’ ভোট বাড়ার পেছনের রহস্য কী এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘মানুষ ভালো কিছু চায়। আমরা ভালো কাজ করছি, ভালোর জন্য রাজনীতি করছি। করোনায় আমরাই প্রথম টিম করে মানুষের লাশ দাফন করেছি। বন্যার সময় ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। এতদিন মানুষ আমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানত না। এখন দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলো আমাদের নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে, মানুষও জানছে, তাই হাতপাখার প্রতি সমর্থনও বাড়ছে।’
মুরিদ বা পীরের ভক্তের দল হিসেবে পরিচিতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে তো হিন্দু সমর্থকও রয়েছেন। তাই এমন পরিচিতির ভিত্তি নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য হতে হলে মুরিদ হতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের আনুকূল্য, রাজনীতির মাঠে জামায়াতে ইসলামীর না থাকা, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিচারিতা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ইসলামী আন্দোলনের ভোট বাড়ছে।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দিন দিন ধর্মাশ্রয়ী হয়ে যাচ্ছি। উগ্রতার দিকে আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার বল প্রয়োগ করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে রাখছে। কিন্তু ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। রাজনৈতিক দলগুলো ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে, কিন্তু কাজ করে না। বরং অনেকাংশে তারা ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতান্ত্রিক সমাধান না করে, ধর্মভিত্তিক সমাধান করে।’ তিনি জানান, কয়েক বছর আগে সহিংস উগ্রবাদবিষয়ক গবেষকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘রিজলভ’-এর করা এক জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মর্মবস্তু হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মনে করেন, শরিয়াহ আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করে। ইসলামী আন্দোলনের ভোট বাড়ার পেছনে এ মনোভাবও খুব কাজ করছে বলে মনে হয়।
১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ একটি ইসলামী মোর্চা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। ’৯০ সালের দিকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে মোর্চাটি চরমোনাইয়ের পীর মুফতি ফজলুল করিমের (প্রয়াত) নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৮ সালে নিবন্ধনের সময় দলটির নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ করা হয়।
সংসদ নির্বাচনে ভোটচিত্র : ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এককভাবে ১৬০টি আসনে অংশ নেয় ইসলামী আন্দোলন। নব্বইয়ের পর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোর মধ্যে এ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে দলটি ১ দশমিক ০৫ শতাংশ ভোট অর্থাৎ ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৪ ভোট পেয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না এমন অভিযোগ করে অংশ নেয়নি দলটি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব আসনেই প্রার্থী দিয়ে আলোচনায় আসে ধর্মভিত্তিক দলটি। ওই নির্বাচনে একটি আসনে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়। ভোটগ্রহণের দিন নানা অনিয়মের অভিযোগে একপর্যায়ে ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দিলেও প্রায় ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ ভোট পড়ে দলটির বাক্সে। অর্থাৎ প্রায় ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৩ ভোট যায় তাদের ‘হাতপাখা’ প্রতীকে।
স্থানীয় নির্বাচনে ভোটচিত্র : ২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘হাতপাখা’ প্রতীকে মেয়র পদে ভোট করেছিলেন গোলাম মোস্তফা বাবু। তিনি ২৪ হাজার ৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দ্বিতীয় ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তৃতীয় হয়েছিলেন। গত ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলটির হয়ে আমিরুজ্জামান পিয়াল নির্বাচন করেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার এবারও নির্বাচিত হন। বিএনপি এবার ভোটে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের ভোটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন তৃতীয় অবস্থানে ছিল। ঢাকা উত্তরে দলটি পেয়েছিল ১৮ হাজার আর দক্ষিণে ১৫ হাজার ভোট।
২০২০ সালে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৬ হাজার ২৫৮ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৬ হাজার ৫২৫ পেয়ে তৃতীয় হয়েছে দলটি।
২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তৃতীয় হয় দলটি। ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল। রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছিল ইসলামী আন্দোলন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রায় ২০০-এর মতো নির্বাচিত ইউপি সদস্য রয়েছে। রাজধানী ঢাকার ডেমরায় হাজি ইব্রাহীম কাউন্সিলরসহ সারা দেশে সাতজন নির্বাচিত কাউন্সিল রয়েছে দলটির।
জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলনের জনপ্রিয়তা বাড়ার বড় একটি কারণ প্রয়াত পীর মাওলানা ফজলুল করিম। তার নেতৃত্বেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে দলটির কার্যক্রম। তার সময়েই ৬৪টি জেলাসহ বহু উপজেলায় দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল। তার অবর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি ইসলামী আন্দোলনের আমির এবং চরমোনাই তরিকার বর্তমান পীর। সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের আরেক ভাই সৈয়দ ফয়জুল করিম দলটির এক নম্বর নায়েবে আমির। তিনি চরমোনাইয়ের তরিকা অর্থাৎ বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটিরও নায়েবে আমির।
দলটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘পীরভিত্তিক’ দল হওয়ার কারণেই দেশের গ্রামাঞ্চলে ইসলাম মূল্যবোধের প্রতি অনুরক্ত মানুষের মধ্যে দলটির জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে।
গত ২ জানুয়ারি সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের ৮৭টি সাংগঠনিক জেলা, ৬৯১টি উপজেলা, ১১৯টি সিটি থানা, ৬১টি সদর পৌরসভা, ৩ হাজার ৫১৯টি ইউনিয়ন এবং ১২ হাজার ৬৭০টি ওয়ার্ডে ইসলামী আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। এমনকি দলটি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তাদের কমিটি গঠন করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল ও উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে দলটির ভক্ত বা সমর্থক সংখ্যা বেশি। রাজধানী ঢাকায়ও তাদের কার্যক্রম বেশ শক্ত। রামপুরায় জামিয়া মহিলা মাদ্রাসা, ভাটরায় সাইদিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসা, জুরাইন ও যাত্রাবাড়ীর বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসায় তাদের কর্মী ও সমর্থক রয়েছে।
দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড প্রসঙ্গে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রায় ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।’
মাংসের দোকানে ঝুলিয়ে রাখা সিনার একটি বড় টুকরো দেখিয়ে লাবিবা বলে, ‘বাবা, এটা নাও।’ কসাই পরিচিত। তিনি সিনার টুকরোটি ওজন দিয়ে বলেন, স্যার, তিন কেজির মতো আছে, পুরাটাই নিয়ে যান। বলি, দিয়ে দেন।
স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলাম। ফেরার পথে মেয়ের খাতা-কলম ও কিছু মাছ ও সবজি কেনার জন্য মিরপুর-১৩ বাজারে ঢোকা। দারুল উলুম মাদ্রাসার সামনে বাইক রেখে বাজারে ঢুকতেই মেয়ে চিৎকার করে ওঠে, ‘বাবা আজ গরুর মাংস নেব।’ বাবার মতো মেয়েরও পছন্দ গরুর মাংস।
‘বিল্লাল গোশত বিতানের’ সামনে বাপ-বেটি দাঁড়িয়ে আছি। কসাই মাংস কাটছেন। সাত-আট বছরের দুই শিশু নিয়ে দুজন নারীও দাঁড়িয়ে আছেন সেই দোকানের সামনে। তারাও তাকিয়ে আছে মাংসের দিকে। লাবিবার মতো তাদেরও এক শিশু বলছে, ‘মা, গোশত কিনো আইজকা।’ কিন্তু তারা কেউ মাংসের দরদাম করছেন না।
আমার মাংস কাটা শেষ। মাপ দিয়ে পলিথিনে ঢুকিয়ে কসাই বলেন, স্যার নেন। সাড়ে তিন কেজির একটু বেশি হইছে। আমি মাংসের ব্যাগ হাতে নিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য মানি ব্যাগ বের করি। বলি, কত দেব? কসাই বলেন, আড়াই হাজার হইছে। আপনি দুই হাজার চারশ টাকা দেন। আমি আশ্চর্য হয়ে বলি, এত টাকা? কত টাকা কেজি? কসাই বলেন, আজকে সাতশ টাকা।
কোরবানি ঈদের পর আর মাংস কেনা হয়নি। আমার মানি ব্যাগে এত টাকা নেই। মেয়ের খাতা-কলম ও কিছু মাছ ও সবজি নিতে হবে। কসাইকে বলি, এক কেজি দেন ভাই। কসাই নাছোড়বান্দা। বলেন, টাকা পরে দিয়েন। নিয়ে যান।
এখন নিলে তো পরে আবার টাকা দিতেই হবে। মাস শেষে যে টাকা বেতন পাই তার অর্ধেক চলে যায় বাসা ভাড়ায়। বাকি টাকা থেকে নেট বিল, ডিশ বিল, নিজের যাতায়াত, মেয়ের স্কুলের টিউশন ফি, প্রাইভেট টিউটরকে দিয়ে যা থাকে তা মাসের বাজার-সদাই করতেই শেষ হয়ে যায়। আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এমন সময় ওই নারী কসাইকে বলেন, বট (গরুর ভুঁড়ি) কত কইরা? কসাই বলেন, তিনশ টাকা কেজি। তখন ওই নারী বলেন, তাইলে হাফ কেজি মাপেন।
বেশি দিন আগের কথা নয়, কয়েক বছর আগেও ২৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনেছি। এখন সেই মাংস কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা। অথচ ৭০০ টাকা রাজধানীর রিকশাচালক কিংবা হকারদের দুদিনের আয়ের সমান। গরুর মাংস অনেক আগেই তাদের নাগালছাড়া হয়েছে। আজকে নাগালছাড়া হচ্ছে সীমিত আয়ের আমার। শেষ পর্যন্ত এক কেজি মাংস নিয়েই মাছ বাজারের দিকে এগিয়ে যাই।
মানিকগঞ্জ থেকে মাছ এনে বিক্রি করেন কামাল। নিজের জেলা বলেই তার সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে আমার। তার কাছে গিয়ে বলি, হাফ কেজি কাচকি দেন কামাল ভাই। তিনি কাচকি মাছ ওজন দেওয়ার জন্য বাটিতে তোলেন। লাবিবা আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দোকানে রাখা বড় একটি বোয়াল মাছের দিকে। দোকানদার বলেন, বোয়াল নেবেন? দেড় হাজার টাকা কেজি। পনেরো কেজির মতো হবে। আমি বলি, না। আপনি কাচকি মাপেন। লাবিবা আর মাছের দোকান থেকে সরে না। মাছটির মাথায় হাত দিতে চায়। সাহস পায় না। এত বড় বোয়াল লাবিবা এই প্রথম দেখল।
কাচকি ব্যাগে ঢুকিয়ে সবজি দোকানের দিকে হাঁটা দেব। তখন ট্রাউজার-হুডি পরা এক ভদ্রলোক বোয়াল মাছটি মাপতে বললেন। মেয়েকে নিয়ে সামনে এগোই। সবজির দোকানের আগে জাহাঙ্গীর আর মান্নান বসেন পাশাপাশি। একজন ইলিশ, আরেকজন রুই-কাতল মাছ বিক্রি করেন। আজকে কত টাকা কেজি ইলিশ? বলতেই মান্নান যেটি মাপছেন সেটি দেখিয়ে বলেন, এইটা বারোশ টাকা কেজি কইরা বেচতেছি। একজন নারী ছয়টি ইলিশ কিনছেন। লাবিবা আর আমি দাঁড়িয়ে দেখছি। লাবিবা বলে, বাবা, ইলিশ নেবে? আমি কিছু বলি না।
ঝাঁকায় থাকা ছোট সাইজের ইলিশ দেখিয়ে দাম জানতে চাইছি। এমন সময় কানে শব্দ এলো ‘ওই, একটা ইলিশ নে।’ তাকিয়ে দেখি, তিন তরুণ দাঁড়িয়ে। দেখে মনে হলো, কলেজছাত্র। ছোট সাইজের একটি ইলিশ তারা নিতে চাইছে। দোকানদার মাপ দিয়ে বলে, ছয়শ গ্রামের বেশি হইছে। পাঁচশ টাকা দেন। তারা একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে অন্য দোকানের দিকে চলে যায়। বলে, ‘থাক, আজ নেব না।’
দোকানদার বলেন, এরা প্রায়ই আসে। কিন্তু মাছ কিনে না। বলি, কেন? দোকানদার জানায়, তারা মেসে থেকে লেখাপড়া করে। শেষে দেখবেন, ঘোরাঘুরি করে ট্যাংরা কিনে নিয়ে যাবে।
বাজারের যে অবস্থা তাতে সীমিত আয়ের পরিবারগুলোরও আর এখন নিত্যদিন মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। সেখানে এই ছাত্ররা কীভাবে কিনবে? অনেক পরিবারে এখন গরুর মাংস বা ইলিশ কেনা হয় কেবল অতিথি এলে। ভবিষ্যতে হয়তো অতিথি এলেও তাদের পক্ষে মাছ-মাংস কেনা কঠিন হবে।
ষাটোর্ধ্ব এক নারী লাবিবার কাছে কিছু টাকা সাহায্য চাইছেন। আমি ডেকে জানতে পারি তার নাম কমলা। থাকেন পাশেই, বস্তিতে। বলেন, ‘এক কেজি আতপ চাল কিনে দেন। জাই (জাউ) রাইন্দ্যা খামু।’ দশ টাকা ধরিয়ে দিই তার হাতে।
আমিও আজ আর ইলিশ নিই না। লাবিবাকে নিয়ে সবজির দোকানে যাই। লাবিবা বলে, বাবা, ক্যাপসিকাম নাও। দুটি দোকানের পজিশনে একাই সবজি বেচেন মতলবের ছেলে মিজান। থাকেন মিরপুর-১৩ নম্বরে। জানান, এই বাজারে রাকিন সিটি ও ন্যাম গার্ডেনের বাসিন্দারাই বেশি বাজার করে থাকেন। তার কথায়, স্থানীয় বাড়িওয়ালারা খুব কমই বাজার করেন। তারা কোথায় করেন? মিজান বলেন, ভ্যান থেকেই বেশি কেনেন তারা।
দোকান ভাড়া কত দিতে হয়? মিজান বলেন, প্রতি দোকানে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। আর কারেন্ট বিল ও অন্যান্য খরচ দিয়ে আরও চার-সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়। তাতে লাভ থাকে? বলেন, মোটামুটি চলে যাচ্ছে আর কি।
সবজি কিনে মেয়েকে নিয়ে বাইকের কাছে চলে আসি। ব্যাগগুলো বাইকের হুকের সঙ্গে লাগাচ্ছি। বাজারের গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন এক বৃদ্ধ। হাতে একটি ব্যাগ। মলিন চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। লাবিবাকে পেছনে উঠিয়ে বাইক স্টার্ট দেব। বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বলেন, একটু মাংস দেবেন? এক কেজি মাংস থেকে আর কী দেব তাকে। বিশ টাকার একটা নোট হাতে দিয়ে বাইক স্টার্ট দিই। লেগুনা, রিকশা আর প্রাইভেট কারের ভিড় ঠেলে আমার বাইক হারম্যান মেইনার, স্কলাস্টিকা স্কুল পেরিয়ে ন্যাম গার্ডেনের দিকে এগিয়ে যায়।
নিজ সমুদ্রসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো জাহাজই প্রবেশ করতে দেবে না বাংলাদেশ। সেটা হোক বাংলাদেশের অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশের প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের জাহাজ। বিশেষ করে বাংলাদেশ এখন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও এর সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে ব্যস্ত। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো জাহাজ নিজ জলসীমায় প্রবেশ করতে দিয়ে নতুন ঝামেলায় জড়াতে চায় না ঢাকা। পরিস্থিতি উত্তরণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন ও গ্রহণযোগ্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এমন জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে অথবা যে দেশই তাদের জলসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেবে সেই দেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এছাড়া সমুদ্রসম্পদ রক্ষায়ও নড়চড়ে বসেছে সরকার। এমনকি সমুদ্রকেন্দ্রিক কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি নিরাপদ সমুদ্র নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক জোট এবং দেশগুলোর সঙ্গেও নিয়মিত বোঝাপাড়ায় রয়েছে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চলমান ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দুনিয়াজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নিজ বলয়ের শক্তি প্রদর্শন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে অন্য দেশগুলোকে; বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ঝুঁকি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ৯০টি জাহাজের তালিকা এরই মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন থেকে বিদেশি কোনো জাহাজ বাংলাদেশে আসার আগে অনুমতি চাইলে এবং জলসীমা ব্যবহার করতে চাইলে আগেই যেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ওই তালিকা ধরে খুব সহজেই নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজটি শনাক্ত করতে পারে। জাহাজটি যদি বাংলাদেশের পণ্য পরিবহন করে থাকে তবুও সেটি জলসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এক কথায় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ব্যবহার করতে পারবে না নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো জাহাজ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার একটি জাহাজ ‘স্পার্টা থ্রি’ সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে মোংলা বন্দরে ভিড়তে যাচ্ছিল। তখন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বাংলাদেশের নজরে না থাকায় এবং জাহাজের নাম পরিবর্তন করে ‘উরসা মেজর’ রাখায় রাশিয়ার কৌশলগত কারণ নির্ণয় করতে পারেনি বাংলাদেশ। রূপপুরের মালামাল বহন করলেও সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল আপত্তির মুখে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটির প্রবেশ আটকে দেয় বাংলাদেশ। রুশ কৌশল এবং জাহাজের নাম পরিবর্তন ও নিবন্ধন নম্বর একই থাকার বিষয়টি মিলিয়ে হতবাক হয়েছিলেন স্বয়ং সরকারেরও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস গত বছর ২০ ডিসেম্বর এক কূটনৈতিক পত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে ‘উরসা মেজর’। তাই জাহাজটিতে পণ্য ওঠানো-নামানো, জ্বালানি সরবরাহ, নাবিকদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় যুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশের নিষেধাজ্ঞা বা বড় আর্থিক দণ্ডের মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
এরপরও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজটি ভিড়তে দিতে বাংলাদেশের ওপর চাপও সৃষ্টি করেছিল রাশিয়া। এ নিয়ে সৃষ্ট বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। কড়া ভাষায় কূটনৈতিক বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সব রকমের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি। এরপর পণ্য খালাসের জন্য ভারতে অপেক্ষা করছিল জাহাজটি। এটির পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের কথা ছিল। তখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এ নিয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আগেও যা ছিল, এখনো তা-ই। ভারতের সেই নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। রুশ জাহাজটি যদি ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়ে থাকে বা ভিড়তে আসে, তাহলে তাই।’ অবশেষে সেখানেও পণ্য খালাসের অনুমতি না পাওয়ায় গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) রাশিয়ার পথ ধরতে হয়েছে ‘উরসা মেজরকে’।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ভারত হয়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন। তার এ সফরকে ঘিরে ঢাকায় বেশ জোরালো গুঞ্জন রয়েছে যে তিনি জাহাজটির পণ্য খালাসের অনুমতি দিতে বাদ সেধেছেন বলেই শেষ মুহূর্তে ভারত তাদের ‘ভারসাম্য কূটনীতি’ থেকে সরে গিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে ঢাকায় ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে জাহাজটির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, এরই মধ্যে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে অন্য জাহাজে করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল পাঠানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে অন্য জাহাজ আবার যাত্রা করবে এবং ঢাকায় এসে পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম এবং এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারাও বিব্রতবোধ করার কথা জানিয়েছেন।
বিদ্যুতের দাম বাড়লেও পিছু ছাড়ছে না লোডশেডিং। চাহিদা কম থাকায় গত কয়েক বছরে শীতকাল লোডশেডিংমুক্ত ছিল, তবে এ বছর তার ব্যতিক্রম হয়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের লোডশেডিং আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে তারা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলা সম্ভব নয়। সাশ্রয়ী নীতি অবলম্বন করলে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।
গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। গ্যাসের দাম বাড়লে আবারও বাড়বে বিদ্যুতের দাম। গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দামের সঙ্গে লোডশেডিংয়ের কারণে জীবন আরও অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২,৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও কম। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে ৪ হাজার ৭৩ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণজনিত কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
সর্বোচ্চ ১৪,৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত বছরের ১৬ এপ্রিল। তখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এ বছর গ্রীষ্মে চাহিদা বেড়ে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে বলে ধারণা করছে বিপিডিবি।
শীতকালে তাপমাত্রা কম হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। কিন্তু এবার শীতেও লোডশেডিং হচ্ছে। চলতি বছর ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এখনো চলছে লোডশেডিং। গত ১০ দিনে গড়ে ৫৫০ মেগাওয়াট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। অথচ চাহিদা ছিল ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও নিচে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যাহত হয়। সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন সম্ভব না হওয়ায় জুলাই থেকে সরকার ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরু করে। পরে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় লোডশেডিং কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তা চরম আকার ধারণ করে অক্টোবরের শুরুর দিকে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়। ওই সময় গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। তবে তাপমাত্রা কমতে থাকায় নভেম্বরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে যায়। ডিসেম্বর মাস অনেকটা লোডশেডিংমুক্ত থাকলেও এখন আবার শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিডিবির প্রক্ষেপণে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট ধরা হলেও এটা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেই থাকবে। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে আমাদের। কিন্তু জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় যে জ্বালানির দরকার তার জোগান দিতে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। সরকারও প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান করবে বলে আশ^স্ত করেছে। আশা করি, গ্রীষ্মে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং আরও কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র উৎপাদনে এলেও বড়জোর ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। তবু ঘাটতি থেকে যাবে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের সক্ষমতা সীমিত হয়ে গেছে।
সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। কিন্তু এজন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা দরকার। এই টাকা সমন্বয় করে গ্যাস-বিদ্যুতের যে দাম হবে তা সোনার চেয়েও দামি হবে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব, বলেন তিনি।
সংকট থেকে বের হওয়ার উপায় জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রথমত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিকীকরণ থেকে মুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সাশ্রয়ী হতে হবে। সর্বশেষ উপায় হলো, অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বন্ধ করতে হবে। তবেই সংকট কমবে। না হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
সূত্রমতে ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় তেল ও গ্যাস আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। গত জুলাই থেকে খোলাবাজারের এলএনজি কেনা বন্ধ। অর্থাভাবে গ্যাসের আমদানি বিল ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলা। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জমা বিলের অর্ধেক পরিশোধের মতো টাকা আছে পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাবে। নতুন করে ১০টি এলএনজি কার্গো আমদানি করতে হলে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে। টাকা না পেলে আমদানি করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকেও উৎপাদন কমে গেছে।
ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় উৎপাদনে যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় গত শনিবার বন্ধ হয়ে গেছে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৫৬০-৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার মজুদও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আমদানির এলসি খুলতে চাইছে না।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার মূলত সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়ার আশায় ছিল। মার্চের মধ্যে এ বিদ্যুৎ আসবে বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। জ্বালানি কেনার বিষয়টিও এখনো পরিষ্কার হয়নি। ফলে আগামী গ্রীষ্মে প্রায় ২৫০০ থেকে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে।
সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১০০০ মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে, বলেন ড. ইজাজ।
গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য দিয়ে গত বুধবার রাতে গাজীপুরের বাসন থানায় মামলা নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। মামলার বাদী দেখানো হয়েছে মারা যাওয়া রবিউল ইসলামের ছোট ভাই মো. মহিদুল ইসলামকে। তবে এজাহারে থাকা তার স্বাক্ষর নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকা রবিউলের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যেতে বুধবার ঢাকার শাহবাগ থানায় আবেদন করেন মহিদুল। সেখানে দেওয়া তার স্বাক্ষরের সঙ্গে এজাহারের স্বাক্ষরের মিল নেই।
স্বজনরা জানান, মহিদুল বুধবার বাসন থানায় যানইনি। সারাদিন হাসপাতালেই ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দুই থানায় দুটি কাগজে স্বাক্ষর গরমিল থাকায় মামলাটি কার মাধ্যমে করা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুলিশ বলছে, ঢাকা থেকে মহিদুলের স্বাক্ষর করা এজাহার এনে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে মারা যাওয়া রবিউল ইসলামের স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলছেন, তার বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী এবং দুটি কন্যাসন্তান অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। রবিউলের মৃত্যুর পর মরদেহ বুঝে পেতে থানা পুলিশ ও হাসপাতালে ২১ ঘণ্টার ঝক্কি পোহাতে হয়েছে তাদের। পরিবারটির সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এখন রবিউলের বাবা-মা তাদের একমাত্র জীবিত ছেলে মহিদুল ইসলামের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে নতুন করে আর ঝামেলায় পড়তে চান না।
জানা গেছে, গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামে জানাজা শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রবিউল ইসলামের মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে বুধবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে রংপুরের দিকে রওনা হন স্বজনরা। একই সময়ে রবিউলের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছোট ভাইসহ আরও কয়েক স্বজন অন্য একটি মাইক্রোবাসে রওনা হন। রবিউলের শ্যালক মো. রকিবুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, ঢাকার শ্যামলীতে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। দুলাভাই রবিউলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে গত বুধবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ দেখতে পান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাত ১১টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে রবিউলের লাশ গ্রামের বাড়ির পথে পাঠানো হয়। হাসপাতাল থেকে পুলিশ সদস্যরা পাহারা দিয়ে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। তবে পুলিশ গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত যায়নি।
রাকিবুল বলেন, ‘দুলাভাইয়ের (রবিউল) পরিবার থেকে কেউ কোনো অভিযোগ দিতে চাচ্ছে না। কেউ আর কোনো ভেজালে যেতে চাচ্ছে না। এখন তাদের পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। অনেকে বলছেন, ‘যে যাওয়ার সে তো চলেই গেছে। এখন এইটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করলে হয়তো আপনাদেরও দৌড়াতে হবে, ফ্যামিলিকেও দৌড়াতে হবে। যে অভিযোগ করবে তাকেও দৌড়াতে হবে।’ তাই পরিবারের লোকজন চাচ্ছে সরকারিভাবে কেসটা মিটমাট করে দিতে। এতে পরিবারের জন্য ভালো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুলাভাইয়ের পরিবারের লোকজন এখনো আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তাদের এখন একটিমাত্র ছেলে বেঁচে রয়েছে। তার দিকে তাকিয়ে কোনো আইনি ঝামেলায় যেতে চাচ্ছে না। এখন সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মহিদুলকে নিয়েই সবার স্বপ্ন। সে কোনো ঝামেলায় পড়লে পুরো পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যাবে। তার বৃদ্ধ মা-বাবা এবং দুলাভাইয়ের দুটি মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন পুরো পরিবার।’
মারা যাওয়া রবিউলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার সারাদিন এবং রাত ১১টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে সারাক্ষণ পুলিশ আমাদের নজরে রেখেছে। রাতে পুলিশ সদস্যরা লাশসহ আমাদের গাড়িতে উঠিয়ে ঢাকা শহর থেকে এগিয়ে দিয়েছে। এরপর তারা ছিল কিনা সেটা দেখিনি।’
বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর: রবিউল ইসলামের ছোট ভাই মহিদুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এর আগে মরদেহের সুরতহাল করা হয়। বাসন থানার ওসি আব্দুল মালেক খসরু বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।
থানায় সড়ক দুর্ঘটনার মামলা: রবিউল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় মামলা করা হয়েছে। তার ছোট ভাই মো. মহিদুল ইসলামকে বাদী উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ট্রাক ও চালকের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে মামলাটি করা হয়। এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তার (মহিদুল) ভাই রবিউল ইসলাম বুধবার রাত দেড়টার দিকে বাসন থানা থেকে তার সঙ্গীয় সাগর মিয়া, মো. সেলিম ও এমারত হোসেনকে নিয়ে বাসার দিকে আসছিলেন। এ সময় বাসন থানার অদূরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রিপন সরকারের পেট্রোলপাম্পের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় বেপরোয়া গতির অজ্ঞাত পরিচয়ের একটি দ্রুতগামী ট্রাক রবিউলকে ধাক্কা দেয়। এতে রবিউল মাথা, কপাল, পাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পান। পরে সঙ্গে থাকা লোকজন রবিউলকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত ২টা ৫০ মিনিটে তিনি ওই হাসপাতালে মারা যান।’
স্বাক্ষর নিয়ে বিভ্রান্তি: লাশ বিনা ময়নাতদন্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকার শাহবাগ থানায় আবেদন করেন রবিউলের ছোট ভাই মহিদুল ইসলাম। সারা দিন তিনি ওই হাসপাতালেই ছিলেন। এদিকে বুধবার রাত ১১টার দিকে তিনি বাসন থানায় মামলা করেন বলে পুলিশের দাবি। তবে স্বজনরা জানান, মহিদুল বুধবার বাসন থানায় যাননি। দুই থানায় দুটি কাগজে স্বাক্ষর গরমিল থাকায় মামলাটি কার মাধ্যমে করা তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বাসন থানায় করা মামলার স্বাক্ষর ও শাহবাগ থানার আবেদনে দেওয়া স্বাক্ষর দুটির মিল না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বাসন থানার ওসি আব্দুল মালেক খসরু বলেন, ‘মামলার কাগজটিতে মহিদুল স্বাক্ষর করেছেন। বাসন থানার এসআই সুকান্ত শাহবাগ থানায় গেলে সেখানে মহিদুল তার স্বাক্ষরযুক্ত মামলার অভিযোগটি জমা দেন। পরে এটি মামলা হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জিএমপির সদর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মামলার আবেদনের কপি পেয়ে এনআইডির সঙ্গে স্বাক্ষর যাচাই করেই মামলার কপি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার সময় তিনি (মহিদুল) থানায় এসেছিলেন কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে মামলার ক্ষেত্রে বাদী থানায় না এসেও মামলা করতে পারেন।’
জিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ) আবু তোরাব মো. শামছুর রহমান বলেন, ‘নিহতের পরিবার সড়ক দুর্ঘটনার অভিযোগে একটি মামলা করেছে। এ ছাড়া বিক্ষোভের নামে পুলিশের ক্ষতিসাধন করায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘লাশটি (রবিউলের) ঢাকার শাহবাগ থানার নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারা কীভাবে লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছে সেটি জানা নেই।’
রবিউলের মৃত্যুর ঘটনায় জিএমপির পক্ষ থেকে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে তদন্তকাজ শুরু করেছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘নিহতের পরিবারের স্বজন, এলাকাবাসীর অভিযোগসহ সবকিছু তদন্তের আওতায় থাকবে। এ ঘটনায় কেউ অন্যায় করে থাকলে, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্বজনদের অভিযোগ, অনলাইন জুয়া খেলা ও মাদক কারবারের অভিযোগে সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বাসা থেকে গত শনিবার তুলে নিয়ে যায় বাসন থানার এএসআই মাহবুবুর রহমান। প্রথমে রবিউলের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে পরিবারের লোকজন পুলিশকে ৩৫ হাজার টাকা দেয়। এরপর আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু এই টাকা দিতে না পারায় চার দিন রবিউলকে থানায় আটক রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার পুলিশের লোকজন রবিউলের স্ত্রী নূপুর আক্তারের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এরপর মধ্যরাতে থানা থেকে নূপুরকে জানানো হয়, রবিউল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তবে রবিউলের পরিবার কিংবা এলাকাবাসী পুলিশের এই ভাষ্য মেনে নেয়নি। পুলিশের নির্যাতনে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগে বুধবার সকালে এলাকাবাসী দুটি মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় এলাকাবাসী ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও চারটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ধাওয়া দিয়ে রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।