
গাজীপুরে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য দিয়ে গত বুধবার রাতে গাজীপুরের বাসন থানায় মামলা নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। মামলার বাদী দেখানো হয়েছে মারা যাওয়া রবিউল ইসলামের ছোট ভাই মো. মহিদুল ইসলামকে। তবে এজাহারে থাকা তার স্বাক্ষর নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকা রবিউলের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যেতে বুধবার ঢাকার শাহবাগ থানায় আবেদন করেন মহিদুল। সেখানে দেওয়া তার স্বাক্ষরের সঙ্গে এজাহারের স্বাক্ষরের মিল নেই।
স্বজনরা জানান, মহিদুল বুধবার বাসন থানায় যানইনি। সারাদিন হাসপাতালেই ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে দুই থানায় দুটি কাগজে স্বাক্ষর গরমিল থাকায় মামলাটি কার মাধ্যমে করা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুলিশ বলছে, ঢাকা থেকে মহিদুলের স্বাক্ষর করা এজাহার এনে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে মারা যাওয়া রবিউল ইসলামের স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলছেন, তার বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী এবং দুটি কন্যাসন্তান অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। রবিউলের মৃত্যুর পর মরদেহ বুঝে পেতে থানা পুলিশ ও হাসপাতালে ২১ ঘণ্টার ঝক্কি পোহাতে হয়েছে তাদের। পরিবারটির সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এখন রবিউলের বাবা-মা তাদের একমাত্র জীবিত ছেলে মহিদুল ইসলামের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে নতুন করে আর ঝামেলায় পড়তে চান না।
জানা গেছে, গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামে জানাজা শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রবিউল ইসলামের মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে বুধবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে রংপুরের দিকে রওনা হন স্বজনরা। একই সময়ে রবিউলের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছোট ভাইসহ আরও কয়েক স্বজন অন্য একটি মাইক্রোবাসে রওনা হন। রবিউলের শ্যালক মো. রকিবুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।
তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, ঢাকার শ্যামলীতে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। দুলাভাই রবিউলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে গত বুধবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মরদেহ দেখতে পান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাত ১১টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে রবিউলের লাশ গ্রামের বাড়ির পথে পাঠানো হয়। হাসপাতাল থেকে পুলিশ সদস্যরা পাহারা দিয়ে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। তবে পুলিশ গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত যায়নি।
রাকিবুল বলেন, ‘দুলাভাইয়ের (রবিউল) পরিবার থেকে কেউ কোনো অভিযোগ দিতে চাচ্ছে না। কেউ আর কোনো ভেজালে যেতে চাচ্ছে না। এখন তাদের পরিবারের সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। অনেকে বলছেন, ‘যে যাওয়ার সে তো চলেই গেছে। এখন এইটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করলে হয়তো আপনাদেরও দৌড়াতে হবে, ফ্যামিলিকেও দৌড়াতে হবে। যে অভিযোগ করবে তাকেও দৌড়াতে হবে।’ তাই পরিবারের লোকজন চাচ্ছে সরকারিভাবে কেসটা মিটমাট করে দিতে। এতে পরিবারের জন্য ভালো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুলাভাইয়ের পরিবারের লোকজন এখনো আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তাদের এখন একটিমাত্র ছেলে বেঁচে রয়েছে। তার দিকে তাকিয়ে কোনো আইনি ঝামেলায় যেতে চাচ্ছে না। এখন সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মহিদুলকে নিয়েই সবার স্বপ্ন। সে কোনো ঝামেলায় পড়লে পুরো পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যাবে। তার বৃদ্ধ মা-বাবা এবং দুলাভাইয়ের দুটি মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন পুরো পরিবার।’
মারা যাওয়া রবিউলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার সারাদিন এবং রাত ১১টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে সারাক্ষণ পুলিশ আমাদের নজরে রেখেছে। রাতে পুলিশ সদস্যরা লাশসহ আমাদের গাড়িতে উঠিয়ে ঢাকা শহর থেকে এগিয়ে দিয়েছে। এরপর তারা ছিল কিনা সেটা দেখিনি।’
বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর: রবিউল ইসলামের ছোট ভাই মহিদুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এর আগে মরদেহের সুরতহাল করা হয়। বাসন থানার ওসি আব্দুল মালেক খসরু বিষয়টি নিশ্চত করেছেন।
থানায় সড়ক দুর্ঘটনার মামলা: রবিউল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় মামলা করা হয়েছে। তার ছোট ভাই মো. মহিদুল ইসলামকে বাদী উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ট্রাক ও চালকের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে মামলাটি করা হয়। এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তার (মহিদুল) ভাই রবিউল ইসলাম বুধবার রাত দেড়টার দিকে বাসন থানা থেকে তার সঙ্গীয় সাগর মিয়া, মো. সেলিম ও এমারত হোসেনকে নিয়ে বাসার দিকে আসছিলেন। এ সময় বাসন থানার অদূরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রিপন সরকারের পেট্রোলপাম্পের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় বেপরোয়া গতির অজ্ঞাত পরিচয়ের একটি দ্রুতগামী ট্রাক রবিউলকে ধাক্কা দেয়। এতে রবিউল মাথা, কপাল, পাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পান। পরে সঙ্গে থাকা লোকজন রবিউলকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাত ২টা ৫০ মিনিটে তিনি ওই হাসপাতালে মারা যান।’
স্বাক্ষর নিয়ে বিভ্রান্তি: লাশ বিনা ময়নাতদন্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকার শাহবাগ থানায় আবেদন করেন রবিউলের ছোট ভাই মহিদুল ইসলাম। সারা দিন তিনি ওই হাসপাতালেই ছিলেন। এদিকে বুধবার রাত ১১টার দিকে তিনি বাসন থানায় মামলা করেন বলে পুলিশের দাবি। তবে স্বজনরা জানান, মহিদুল বুধবার বাসন থানায় যাননি। দুই থানায় দুটি কাগজে স্বাক্ষর গরমিল থাকায় মামলাটি কার মাধ্যমে করা তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বাসন থানায় করা মামলার স্বাক্ষর ও শাহবাগ থানার আবেদনে দেওয়া স্বাক্ষর দুটির মিল না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বাসন থানার ওসি আব্দুল মালেক খসরু বলেন, ‘মামলার কাগজটিতে মহিদুল স্বাক্ষর করেছেন। বাসন থানার এসআই সুকান্ত শাহবাগ থানায় গেলে সেখানে মহিদুল তার স্বাক্ষরযুক্ত মামলার অভিযোগটি জমা দেন। পরে এটি মামলা হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জিএমপির সদর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মামলার আবেদনের কপি পেয়ে এনআইডির সঙ্গে স্বাক্ষর যাচাই করেই মামলার কপি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার সময় তিনি (মহিদুল) থানায় এসেছিলেন কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে মামলার ক্ষেত্রে বাদী থানায় না এসেও মামলা করতে পারেন।’
জিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ) আবু তোরাব মো. শামছুর রহমান বলেন, ‘নিহতের পরিবার সড়ক দুর্ঘটনার অভিযোগে একটি মামলা করেছে। এ ছাড়া বিক্ষোভের নামে পুলিশের ক্ষতিসাধন করায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘লাশটি (রবিউলের) ঢাকার শাহবাগ থানার নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারা কীভাবে লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়েছে সেটি জানা নেই।’
রবিউলের মৃত্যুর ঘটনায় জিএমপির পক্ষ থেকে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে তদন্তকাজ শুরু করেছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘নিহতের পরিবারের স্বজন, এলাকাবাসীর অভিযোগসহ সবকিছু তদন্তের আওতায় থাকবে। এ ঘটনায় কেউ অন্যায় করে থাকলে, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্বজনদের অভিযোগ, অনলাইন জুয়া খেলা ও মাদক কারবারের অভিযোগে সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বাসা থেকে গত শনিবার তুলে নিয়ে যায় বাসন থানার এএসআই মাহবুবুর রহমান। প্রথমে রবিউলের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে পরিবারের লোকজন পুলিশকে ৩৫ হাজার টাকা দেয়। এরপর আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু এই টাকা দিতে না পারায় চার দিন রবিউলকে থানায় আটক রাখা হয়। পরে মঙ্গলবার পুলিশের লোকজন রবিউলের স্ত্রী নূপুর আক্তারের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এরপর মধ্যরাতে থানা থেকে নূপুরকে জানানো হয়, রবিউল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তবে রবিউলের পরিবার কিংবা এলাকাবাসী পুলিশের এই ভাষ্য মেনে নেয়নি। পুলিশের নির্যাতনে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগে বুধবার সকালে এলাকাবাসী দুটি মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় এলাকাবাসী ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও চারটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ধাওয়া দিয়ে রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এক দশকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভোট প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্থায়ী সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনেও বড় দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরেই অবস্থান দলটির। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেখানে ইসলামী আন্দোলন আগেরবারের চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে।
দলটির ভোট বাড়ার রহস্য খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, মূলত তিনটি কারণে দলটির ভোটব্যাংক ভারী হচ্ছে। প্রথমত, দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রতি অবিশ্বাস এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বিবেচনায় নিয়ে মানুষ ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ঝুঁকছে। দ্বিতীয়ত, ধর্মভিত্তিক বা ইসলামী দল বলতে এতদিন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে বোঝানো হলেও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে তারা নির্বাচনে নিষিদ্ধ এবং রাজনীতিতে কোণঠাসা। তাদের বিকল্প হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়েছে। অন্য ইসলামী দলগুলোর পক্ষে না ঝুঁকে পড়ার আরও কারণ হচ্ছে এসব ছোট ছোট দল ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতো বড় দুই দলের সঙ্গে থাকছে।
তৃতীয়ত, বছরের প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী আন্দোলনের মাহফিল বা দাওয়াতি কর্মকান্ড চলে। এ ছাড়া ‘পীরভিত্তিক দল’ হওয়ায় ইসলামী আন্দোলনের সমর্থক সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে দেওবন্দ ও কওমি ঘরানার পীর হিসেবে ‘চরমোনাই ধারাটি’ বেশি গ্রহণযোগ্য।
তবে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলছেন, সাংগঠনিক দক্ষতা আর নির্বাচনী কৌশলেই তাদের ভোট বাড়ছে। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বে থাকা বিভিন্ন জোট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা জোট বা নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট দুটোর কেন্দ্রেরই দুর্নীতিবাজরা বসে আছেন। আমরা দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতার যাওয়ার সহযোগী হতে চাই না।’ ভোট বাড়ার পেছনের রহস্য কী এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘মানুষ ভালো কিছু চায়। আমরা ভালো কাজ করছি, ভালোর জন্য রাজনীতি করছি। করোনায় আমরাই প্রথম টিম করে মানুষের লাশ দাফন করেছি। বন্যার সময় ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। এতদিন মানুষ আমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানত না। এখন দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলো আমাদের নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে, মানুষও জানছে, তাই হাতপাখার প্রতি সমর্থনও বাড়ছে।’
মুরিদ বা পীরের ভক্তের দল হিসেবে পরিচিতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে তো হিন্দু সমর্থকও রয়েছেন। তাই এমন পরিচিতির ভিত্তি নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য হতে হলে মুরিদ হতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের আনুকূল্য, রাজনীতির মাঠে জামায়াতে ইসলামীর না থাকা, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিচারিতা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ইসলামী আন্দোলনের ভোট বাড়ছে।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দিন দিন ধর্মাশ্রয়ী হয়ে যাচ্ছি। উগ্রতার দিকে আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার বল প্রয়োগ করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে রাখছে। কিন্তু ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। রাজনৈতিক দলগুলো ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে, কিন্তু কাজ করে না। বরং অনেকাংশে তারা ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতান্ত্রিক সমাধান না করে, ধর্মভিত্তিক সমাধান করে।’ তিনি জানান, কয়েক বছর আগে সহিংস উগ্রবাদবিষয়ক গবেষকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘রিজলভ’-এর করা এক জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মর্মবস্তু হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মনে করেন, শরিয়াহ আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করে। ইসলামী আন্দোলনের ভোট বাড়ার পেছনে এ মনোভাবও খুব কাজ করছে বলে মনে হয়।
১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ একটি ইসলামী মোর্চা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। ’৯০ সালের দিকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে মোর্চাটি চরমোনাইয়ের পীর মুফতি ফজলুল করিমের (প্রয়াত) নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৮ সালে নিবন্ধনের সময় দলটির নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ করা হয়।
সংসদ নির্বাচনে ভোটচিত্র : ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এককভাবে ১৬০টি আসনে অংশ নেয় ইসলামী আন্দোলন। নব্বইয়ের পর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোর মধ্যে এ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে দলটি ১ দশমিক ০৫ শতাংশ ভোট অর্থাৎ ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৪ ভোট পেয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না এমন অভিযোগ করে অংশ নেয়নি দলটি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব আসনেই প্রার্থী দিয়ে আলোচনায় আসে ধর্মভিত্তিক দলটি। ওই নির্বাচনে একটি আসনে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়। ভোটগ্রহণের দিন নানা অনিয়মের অভিযোগে একপর্যায়ে ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দিলেও প্রায় ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ ভোট পড়ে দলটির বাক্সে। অর্থাৎ প্রায় ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৩ ভোট যায় তাদের ‘হাতপাখা’ প্রতীকে।
স্থানীয় নির্বাচনে ভোটচিত্র : ২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘হাতপাখা’ প্রতীকে মেয়র পদে ভোট করেছিলেন গোলাম মোস্তফা বাবু। তিনি ২৪ হাজার ৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দ্বিতীয় ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তৃতীয় হয়েছিলেন। গত ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলটির হয়ে আমিরুজ্জামান পিয়াল নির্বাচন করেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার এবারও নির্বাচিত হন। বিএনপি এবার ভোটে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের ভোটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন তৃতীয় অবস্থানে ছিল। ঢাকা উত্তরে দলটি পেয়েছিল ১৮ হাজার আর দক্ষিণে ১৫ হাজার ভোট।
২০২০ সালে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৬ হাজার ২৫৮ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৬ হাজার ৫২৫ পেয়ে তৃতীয় হয়েছে দলটি।
২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তৃতীয় হয় দলটি। ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল। রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছিল ইসলামী আন্দোলন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রায় ২০০-এর মতো নির্বাচিত ইউপি সদস্য রয়েছে। রাজধানী ঢাকার ডেমরায় হাজি ইব্রাহীম কাউন্সিলরসহ সারা দেশে সাতজন নির্বাচিত কাউন্সিল রয়েছে দলটির।
জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলনের জনপ্রিয়তা বাড়ার বড় একটি কারণ প্রয়াত পীর মাওলানা ফজলুল করিম। তার নেতৃত্বেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে দলটির কার্যক্রম। তার সময়েই ৬৪টি জেলাসহ বহু উপজেলায় দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল। তার অবর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি ইসলামী আন্দোলনের আমির এবং চরমোনাই তরিকার বর্তমান পীর। সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের আরেক ভাই সৈয়দ ফয়জুল করিম দলটির এক নম্বর নায়েবে আমির। তিনি চরমোনাইয়ের তরিকা অর্থাৎ বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটিরও নায়েবে আমির।
দলটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘পীরভিত্তিক’ দল হওয়ার কারণেই দেশের গ্রামাঞ্চলে ইসলাম মূল্যবোধের প্রতি অনুরক্ত মানুষের মধ্যে দলটির জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে।
গত ২ জানুয়ারি সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের ৮৭টি সাংগঠনিক জেলা, ৬৯১টি উপজেলা, ১১৯টি সিটি থানা, ৬১টি সদর পৌরসভা, ৩ হাজার ৫১৯টি ইউনিয়ন এবং ১২ হাজার ৬৭০টি ওয়ার্ডে ইসলামী আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। এমনকি দলটি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তাদের কমিটি গঠন করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল ও উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে দলটির ভক্ত বা সমর্থক সংখ্যা বেশি। রাজধানী ঢাকায়ও তাদের কার্যক্রম বেশ শক্ত। রামপুরায় জামিয়া মহিলা মাদ্রাসা, ভাটরায় সাইদিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসা, জুরাইন ও যাত্রাবাড়ীর বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসায় তাদের কর্মী ও সমর্থক রয়েছে।
দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড প্রসঙ্গে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রায় ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।’
মাংসের দোকানে ঝুলিয়ে রাখা সিনার একটি বড় টুকরো দেখিয়ে লাবিবা বলে, ‘বাবা, এটা নাও।’ কসাই পরিচিত। তিনি সিনার টুকরোটি ওজন দিয়ে বলেন, স্যার, তিন কেজির মতো আছে, পুরাটাই নিয়ে যান। বলি, দিয়ে দেন।
স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলাম। ফেরার পথে মেয়ের খাতা-কলম ও কিছু মাছ ও সবজি কেনার জন্য মিরপুর-১৩ বাজারে ঢোকা। দারুল উলুম মাদ্রাসার সামনে বাইক রেখে বাজারে ঢুকতেই মেয়ে চিৎকার করে ওঠে, ‘বাবা আজ গরুর মাংস নেব।’ বাবার মতো মেয়েরও পছন্দ গরুর মাংস।
‘বিল্লাল গোশত বিতানের’ সামনে বাপ-বেটি দাঁড়িয়ে আছি। কসাই মাংস কাটছেন। সাত-আট বছরের দুই শিশু নিয়ে দুজন নারীও দাঁড়িয়ে আছেন সেই দোকানের সামনে। তারাও তাকিয়ে আছে মাংসের দিকে। লাবিবার মতো তাদেরও এক শিশু বলছে, ‘মা, গোশত কিনো আইজকা।’ কিন্তু তারা কেউ মাংসের দরদাম করছেন না।
আমার মাংস কাটা শেষ। মাপ দিয়ে পলিথিনে ঢুকিয়ে কসাই বলেন, স্যার নেন। সাড়ে তিন কেজির একটু বেশি হইছে। আমি মাংসের ব্যাগ হাতে নিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য মানি ব্যাগ বের করি। বলি, কত দেব? কসাই বলেন, আড়াই হাজার হইছে। আপনি দুই হাজার চারশ টাকা দেন। আমি আশ্চর্য হয়ে বলি, এত টাকা? কত টাকা কেজি? কসাই বলেন, আজকে সাতশ টাকা।
কোরবানি ঈদের পর আর মাংস কেনা হয়নি। আমার মানি ব্যাগে এত টাকা নেই। মেয়ের খাতা-কলম ও কিছু মাছ ও সবজি নিতে হবে। কসাইকে বলি, এক কেজি দেন ভাই। কসাই নাছোড়বান্দা। বলেন, টাকা পরে দিয়েন। নিয়ে যান।
এখন নিলে তো পরে আবার টাকা দিতেই হবে। মাস শেষে যে টাকা বেতন পাই তার অর্ধেক চলে যায় বাসা ভাড়ায়। বাকি টাকা থেকে নেট বিল, ডিশ বিল, নিজের যাতায়াত, মেয়ের স্কুলের টিউশন ফি, প্রাইভেট টিউটরকে দিয়ে যা থাকে তা মাসের বাজার-সদাই করতেই শেষ হয়ে যায়। আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এমন সময় ওই নারী কসাইকে বলেন, বট (গরুর ভুঁড়ি) কত কইরা? কসাই বলেন, তিনশ টাকা কেজি। তখন ওই নারী বলেন, তাইলে হাফ কেজি মাপেন।
বেশি দিন আগের কথা নয়, কয়েক বছর আগেও ২৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনেছি। এখন সেই মাংস কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা। অথচ ৭০০ টাকা রাজধানীর রিকশাচালক কিংবা হকারদের দুদিনের আয়ের সমান। গরুর মাংস অনেক আগেই তাদের নাগালছাড়া হয়েছে। আজকে নাগালছাড়া হচ্ছে সীমিত আয়ের আমার। শেষ পর্যন্ত এক কেজি মাংস নিয়েই মাছ বাজারের দিকে এগিয়ে যাই।
মানিকগঞ্জ থেকে মাছ এনে বিক্রি করেন কামাল। নিজের জেলা বলেই তার সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে আমার। তার কাছে গিয়ে বলি, হাফ কেজি কাচকি দেন কামাল ভাই। তিনি কাচকি মাছ ওজন দেওয়ার জন্য বাটিতে তোলেন। লাবিবা আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দোকানে রাখা বড় একটি বোয়াল মাছের দিকে। দোকানদার বলেন, বোয়াল নেবেন? দেড় হাজার টাকা কেজি। পনেরো কেজির মতো হবে। আমি বলি, না। আপনি কাচকি মাপেন। লাবিবা আর মাছের দোকান থেকে সরে না। মাছটির মাথায় হাত দিতে চায়। সাহস পায় না। এত বড় বোয়াল লাবিবা এই প্রথম দেখল।
কাচকি ব্যাগে ঢুকিয়ে সবজি দোকানের দিকে হাঁটা দেব। তখন ট্রাউজার-হুডি পরা এক ভদ্রলোক বোয়াল মাছটি মাপতে বললেন। মেয়েকে নিয়ে সামনে এগোই। সবজির দোকানের আগে জাহাঙ্গীর আর মান্নান বসেন পাশাপাশি। একজন ইলিশ, আরেকজন রুই-কাতল মাছ বিক্রি করেন। আজকে কত টাকা কেজি ইলিশ? বলতেই মান্নান যেটি মাপছেন সেটি দেখিয়ে বলেন, এইটা বারোশ টাকা কেজি কইরা বেচতেছি। একজন নারী ছয়টি ইলিশ কিনছেন। লাবিবা আর আমি দাঁড়িয়ে দেখছি। লাবিবা বলে, বাবা, ইলিশ নেবে? আমি কিছু বলি না।
ঝাঁকায় থাকা ছোট সাইজের ইলিশ দেখিয়ে দাম জানতে চাইছি। এমন সময় কানে শব্দ এলো ‘ওই, একটা ইলিশ নে।’ তাকিয়ে দেখি, তিন তরুণ দাঁড়িয়ে। দেখে মনে হলো, কলেজছাত্র। ছোট সাইজের একটি ইলিশ তারা নিতে চাইছে। দোকানদার মাপ দিয়ে বলে, ছয়শ গ্রামের বেশি হইছে। পাঁচশ টাকা দেন। তারা একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে অন্য দোকানের দিকে চলে যায়। বলে, ‘থাক, আজ নেব না।’
দোকানদার বলেন, এরা প্রায়ই আসে। কিন্তু মাছ কিনে না। বলি, কেন? দোকানদার জানায়, তারা মেসে থেকে লেখাপড়া করে। শেষে দেখবেন, ঘোরাঘুরি করে ট্যাংরা কিনে নিয়ে যাবে।
বাজারের যে অবস্থা তাতে সীমিত আয়ের পরিবারগুলোরও আর এখন নিত্যদিন মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। সেখানে এই ছাত্ররা কীভাবে কিনবে? অনেক পরিবারে এখন গরুর মাংস বা ইলিশ কেনা হয় কেবল অতিথি এলে। ভবিষ্যতে হয়তো অতিথি এলেও তাদের পক্ষে মাছ-মাংস কেনা কঠিন হবে।
ষাটোর্ধ্ব এক নারী লাবিবার কাছে কিছু টাকা সাহায্য চাইছেন। আমি ডেকে জানতে পারি তার নাম কমলা। থাকেন পাশেই, বস্তিতে। বলেন, ‘এক কেজি আতপ চাল কিনে দেন। জাই (জাউ) রাইন্দ্যা খামু।’ দশ টাকা ধরিয়ে দিই তার হাতে।
আমিও আজ আর ইলিশ নিই না। লাবিবাকে নিয়ে সবজির দোকানে যাই। লাবিবা বলে, বাবা, ক্যাপসিকাম নাও। দুটি দোকানের পজিশনে একাই সবজি বেচেন মতলবের ছেলে মিজান। থাকেন মিরপুর-১৩ নম্বরে। জানান, এই বাজারে রাকিন সিটি ও ন্যাম গার্ডেনের বাসিন্দারাই বেশি বাজার করে থাকেন। তার কথায়, স্থানীয় বাড়িওয়ালারা খুব কমই বাজার করেন। তারা কোথায় করেন? মিজান বলেন, ভ্যান থেকেই বেশি কেনেন তারা।
দোকান ভাড়া কত দিতে হয়? মিজান বলেন, প্রতি দোকানে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। আর কারেন্ট বিল ও অন্যান্য খরচ দিয়ে আরও চার-সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়। তাতে লাভ থাকে? বলেন, মোটামুটি চলে যাচ্ছে আর কি।
সবজি কিনে মেয়েকে নিয়ে বাইকের কাছে চলে আসি। ব্যাগগুলো বাইকের হুকের সঙ্গে লাগাচ্ছি। বাজারের গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন এক বৃদ্ধ। হাতে একটি ব্যাগ। মলিন চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। লাবিবাকে পেছনে উঠিয়ে বাইক স্টার্ট দেব। বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বলেন, একটু মাংস দেবেন? এক কেজি মাংস থেকে আর কী দেব তাকে। বিশ টাকার একটা নোট হাতে দিয়ে বাইক স্টার্ট দিই। লেগুনা, রিকশা আর প্রাইভেট কারের ভিড় ঠেলে আমার বাইক হারম্যান মেইনার, স্কলাস্টিকা স্কুল পেরিয়ে ন্যাম গার্ডেনের দিকে এগিয়ে যায়।
নিজ সমুদ্রসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো জাহাজই প্রবেশ করতে দেবে না বাংলাদেশ। সেটা হোক বাংলাদেশের অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশের প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের জাহাজ। বিশেষ করে বাংলাদেশ এখন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও এর সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে ব্যস্ত। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো জাহাজ নিজ জলসীমায় প্রবেশ করতে দিয়ে নতুন ঝামেলায় জড়াতে চায় না ঢাকা। পরিস্থিতি উত্তরণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন ও গ্রহণযোগ্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এমন জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে অথবা যে দেশই তাদের জলসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেবে সেই দেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এছাড়া সমুদ্রসম্পদ রক্ষায়ও নড়চড়ে বসেছে সরকার। এমনকি সমুদ্রকেন্দ্রিক কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি নিরাপদ সমুদ্র নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক জোট এবং দেশগুলোর সঙ্গেও নিয়মিত বোঝাপাড়ায় রয়েছে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চলমান ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দুনিয়াজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নিজ বলয়ের শক্তি প্রদর্শন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে অন্য দেশগুলোকে; বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ঝুঁকি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ৯০টি জাহাজের তালিকা এরই মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন থেকে বিদেশি কোনো জাহাজ বাংলাদেশে আসার আগে অনুমতি চাইলে এবং জলসীমা ব্যবহার করতে চাইলে আগেই যেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ওই তালিকা ধরে খুব সহজেই নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজটি শনাক্ত করতে পারে। জাহাজটি যদি বাংলাদেশের পণ্য পরিবহন করে থাকে তবুও সেটি জলসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এক কথায় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ব্যবহার করতে পারবে না নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো জাহাজ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার একটি জাহাজ ‘স্পার্টা থ্রি’ সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে মোংলা বন্দরে ভিড়তে যাচ্ছিল। তখন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বাংলাদেশের নজরে না থাকায় এবং জাহাজের নাম পরিবর্তন করে ‘উরসা মেজর’ রাখায় রাশিয়ার কৌশলগত কারণ নির্ণয় করতে পারেনি বাংলাদেশ। রূপপুরের মালামাল বহন করলেও সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল আপত্তির মুখে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটির প্রবেশ আটকে দেয় বাংলাদেশ। রুশ কৌশল এবং জাহাজের নাম পরিবর্তন ও নিবন্ধন নম্বর একই থাকার বিষয়টি মিলিয়ে হতবাক হয়েছিলেন স্বয়ং সরকারেরও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস গত বছর ২০ ডিসেম্বর এক কূটনৈতিক পত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে ‘উরসা মেজর’। তাই জাহাজটিতে পণ্য ওঠানো-নামানো, জ্বালানি সরবরাহ, নাবিকদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় যুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশের নিষেধাজ্ঞা বা বড় আর্থিক দণ্ডের মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
এরপরও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজটি ভিড়তে দিতে বাংলাদেশের ওপর চাপও সৃষ্টি করেছিল রাশিয়া। এ নিয়ে সৃষ্ট বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। কড়া ভাষায় কূটনৈতিক বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সব রকমের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি। এরপর পণ্য খালাসের জন্য ভারতে অপেক্ষা করছিল জাহাজটি। এটির পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের কথা ছিল। তখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এ নিয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আগেও যা ছিল, এখনো তা-ই। ভারতের সেই নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। রুশ জাহাজটি যদি ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়ে থাকে বা ভিড়তে আসে, তাহলে তাই।’ অবশেষে সেখানেও পণ্য খালাসের অনুমতি না পাওয়ায় গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) রাশিয়ার পথ ধরতে হয়েছে ‘উরসা মেজরকে’।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ভারত হয়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন। তার এ সফরকে ঘিরে ঢাকায় বেশ জোরালো গুঞ্জন রয়েছে যে তিনি জাহাজটির পণ্য খালাসের অনুমতি দিতে বাদ সেধেছেন বলেই শেষ মুহূর্তে ভারত তাদের ‘ভারসাম্য কূটনীতি’ থেকে সরে গিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে ঢাকায় ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে জাহাজটির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, এরই মধ্যে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে অন্য জাহাজে করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল পাঠানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে অন্য জাহাজ আবার যাত্রা করবে এবং ঢাকায় এসে পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম এবং এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারাও বিব্রতবোধ করার কথা জানিয়েছেন।
বিদ্যুতের দাম বাড়লেও পিছু ছাড়ছে না লোডশেডিং। চাহিদা কম থাকায় গত কয়েক বছরে শীতকাল লোডশেডিংমুক্ত ছিল, তবে এ বছর তার ব্যতিক্রম হয়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের লোডশেডিং আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে তারা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলা সম্ভব নয়। সাশ্রয়ী নীতি অবলম্বন করলে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।
গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। গ্যাসের দাম বাড়লে আবারও বাড়বে বিদ্যুতের দাম। গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দামের সঙ্গে লোডশেডিংয়ের কারণে জীবন আরও অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২,৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও কম। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে ৪ হাজার ৭৩ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণজনিত কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
সর্বোচ্চ ১৪,৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত বছরের ১৬ এপ্রিল। তখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এ বছর গ্রীষ্মে চাহিদা বেড়ে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে বলে ধারণা করছে বিপিডিবি।
শীতকালে তাপমাত্রা কম হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। কিন্তু এবার শীতেও লোডশেডিং হচ্ছে। চলতি বছর ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এখনো চলছে লোডশেডিং। গত ১০ দিনে গড়ে ৫৫০ মেগাওয়াট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। অথচ চাহিদা ছিল ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও নিচে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যাহত হয়। সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন সম্ভব না হওয়ায় জুলাই থেকে সরকার ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরু করে। পরে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় লোডশেডিং কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তা চরম আকার ধারণ করে অক্টোবরের শুরুর দিকে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়। ওই সময় গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। তবে তাপমাত্রা কমতে থাকায় নভেম্বরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে যায়। ডিসেম্বর মাস অনেকটা লোডশেডিংমুক্ত থাকলেও এখন আবার শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিডিবির প্রক্ষেপণে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট ধরা হলেও এটা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেই থাকবে। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে আমাদের। কিন্তু জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় যে জ্বালানির দরকার তার জোগান দিতে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। সরকারও প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান করবে বলে আশ^স্ত করেছে। আশা করি, গ্রীষ্মে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং আরও কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র উৎপাদনে এলেও বড়জোর ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। তবু ঘাটতি থেকে যাবে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের সক্ষমতা সীমিত হয়ে গেছে।
সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। কিন্তু এজন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা দরকার। এই টাকা সমন্বয় করে গ্যাস-বিদ্যুতের যে দাম হবে তা সোনার চেয়েও দামি হবে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব, বলেন তিনি।
সংকট থেকে বের হওয়ার উপায় জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রথমত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিকীকরণ থেকে মুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সাশ্রয়ী হতে হবে। সর্বশেষ উপায় হলো, অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বন্ধ করতে হবে। তবেই সংকট কমবে। না হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
সূত্রমতে ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় তেল ও গ্যাস আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। গত জুলাই থেকে খোলাবাজারের এলএনজি কেনা বন্ধ। অর্থাভাবে গ্যাসের আমদানি বিল ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলা। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জমা বিলের অর্ধেক পরিশোধের মতো টাকা আছে পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাবে। নতুন করে ১০টি এলএনজি কার্গো আমদানি করতে হলে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে। টাকা না পেলে আমদানি করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকেও উৎপাদন কমে গেছে।
ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় উৎপাদনে যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় গত শনিবার বন্ধ হয়ে গেছে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৫৬০-৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার মজুদও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আমদানির এলসি খুলতে চাইছে না।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার মূলত সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়ার আশায় ছিল। মার্চের মধ্যে এ বিদ্যুৎ আসবে বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। জ্বালানি কেনার বিষয়টিও এখনো পরিষ্কার হয়নি। ফলে আগামী গ্রীষ্মে প্রায় ২৫০০ থেকে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে।
সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১০০০ মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে, বলেন ড. ইজাজ।
৫৪ বছর আগে আজকের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ আইয়ুব সরকারের পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি পুলিশের গুলিতে জীবন দেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মানুষ সে সময় ভয় ভুলে গিয়ে পথে নামে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী সেই সাহস আর প্রতিবাদের ভাষায় উজ্জীবিত হয়ে বের করে এক শোক মিছিল। একে একে তাতে যোগ দেয় ছাত্র, সাধারণ মানুষ, ছোট-বড় অফিস আদালতের কর্মচারী সবাই। দুই মাইল দীর্ঘ এই মিছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করেছিল সেদিন আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে। আসাদের শার্ট হয়ে ওঠে প্রাণের পতাকা। কবি শামসুর রাহমান লিখে ফেলেন তার অমর কবিতা আসাদের শার্ট। কবি লিখলেনÑ গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের/ জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট/ উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।
আসাদের মৃত্যুর খবরে ঢাকার বাইরেও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। যার পরিণতিতে ঘটে গেল ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান, আইয়ুব খানের পতন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ অন্য আসামিদের নিঃশর্ত মুক্তিলাভ। এই অভ্যুত্থান শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যেও বিপুলভাবে জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
শহীদ আসাদ ১৯৪৯ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আবু তাহের। শহীদ আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে তিনি শহীদ আসাদ নামে পরিচিত। আসাদ শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে জগন্নাথ কলেজ ও মুরারী চাঁদ মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি বিএ ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। শহীদ আসাদ তৎকালীন ঢাকা হল শাখার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে দুই ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও এনএসএফের একাংশ নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পরে ১৪ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেই ১১ দফা সারা দেশে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিল। ১১ দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করা হয়েছিল। ১৮ তারিখের মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরদিন (১৯ জানুয়ারি) মিছিল বের হলে আসাদুল হক নামে একজন (তিনি শহীদ আসাদ নন) গুলিবিদ্ধ হন। ২০ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে মিছিলটি বের হয়েছিল, তার প্রথম সারিতে ছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ। চানখাঁরপুল মোড় থেকে পুলিশের জিপ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছোড়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে আসাদের রক্তমাখা প্রাণহীন দেহ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে।
আসাদের মৃত্যুতে সারা দেশে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। আসাদ ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) অন্যতম নেতা। একই সঙ্গে কৃষক আন্দোলনের সংগঠক (প্রধানত শিবপুর এলাকায়) এবং গোপন কমিউনিস্ট পার্টির একাংশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসাদ যেখানে নিহত হয়েছিলেন তার পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত স্মৃতিস্তম্ভটি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। শহীদ আসাদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার স্মৃতিস্তম্ভ স্মৃতির ধুলায় আচ্ছন্ন। বছরের এই একটি দিন ছাড়া সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে তা। স্মৃতিস্তম্ভটি পরিচ্ছন্ন রাখতে খুব একটা উদ্যোগ দেখা যায় না কখনো। স্তম্ভের ভেতরে কাগজ, বোতল পড়ে থাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, লাল-সবুজের রঙের তুলির আঁচড় দিচ্ছেন একজন। স্মৃতিস্তম্ভের উপরে রক্তবর্ণে চকচক করে তোলা হয়েছে। আশপাশের কিছুটা জায়গাও পরিষ্কার করা হয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের পাশে চা বিক্রেতা মাসুদ বলেন, আমি গত চার-পাঁচ বছর এখানে চা বিক্রি করি। এখন যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সারা বছর এমন থাকে না। একটু আবর্জনার মতো থাকে। এখন যেমন পরিষ্কার করা হয়েছে, এরকম আবার আরেক বছর আসলে করবে।
আমিনুল নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, এখানে একটা স্মৃতিস্তম্ভ আছে আজকে জানলাম। কখনো খেয়াল করিনি। সকালে এসে দেখি পরিষ্কার করছে। পরে সকাল ৯টার দিকে কয়েকজন এসে দেখলাম রং লাগাচ্ছে। একজন এসে বলেছে কালকে যেন এখানে না বসি।
একই অবস্থা মোহাম্মদপুর এলাকায় আসাদের নামে নির্মিত তোরণের। তোরণটি এখনো আছে, কিন্তু পোস্টারে ঢাকা পড়েছে এর সৌন্দর্য। অথচ এই তোরণে পোস্টার সাঁটানো যে দণ্ডনীয় অপরাধ, তা স্পষ্ট করেই লেখা আছে সেখানে।
এখন পর্যন্ত আসাদের স্মৃতিসৌধ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ আসাদ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান মিলন। তিনি বলেন, এত বছর পর এসেও নিজেকে খুব লজ্জিত লাগে। কারণ এত বছর পার হয়ে গেলেও আসাদের নামে এখন পর্যন্ত কোনো স্মৃতিসৌধ হয়নি। আসাদ যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তার পাশে একটা স্মৃতিসৌধ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছি। কিন্তু বর্তমান সরকার আসার পরে সেটা স্থগিত হয়ে যায়।
আসাদ দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ আসাদের এ অসামান্য অবদান দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে শহীদ আসাদসহ বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী শহীদ আসাদ এদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার আত্মত্যাগ সবসময় আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রেরণা জোগাবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা, কানেকটিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েইডংয়ের দুই দদফা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। তবে বৈঠক শেষে ঢাকা কিংবা চীন কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পররাষ্ট্র সচিব ও চীনা ভাইস মিনিস্টার প্রতিনিধিদল নিয়ে বের হন। সেখান থেকে ওয়েইডং যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। সেখানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে চীনের একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চায়নিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো।
রোহিঙ্গা ইস্যু : বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে চীন। ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডংয়ের সফর মূলত গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীন বৈঠকের ফলোআপ। একই সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। সেজন্য চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তারা এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে “যান এবং দেখুন” এবং বাংলাদেশে “আসুন এবং কথা বলুন” সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনা পক্ষ।’
জিডিআই : বৈঠকে চীনের নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময় জিডিআই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। জিডিআই উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হোক, চীন এটি চায় এবং এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফপর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সফর করার প্রস্তাব : উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফরে চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। এরপর আর কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে বেইজিং কর্র্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সান ওয়েইডংকে গত নভেম্বরে এশিয়াবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় ভাইস মিনিস্টার হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। তবে ১০ বছর আগে তিনি ভিন্ন পদে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আজ রবিবার চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। গত শুক্রবার রাতে প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, তিনি ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠক বিনিময় স্মরণ করেছেন, যা সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন।
উভয় পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পক্ষ গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদির মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংঝু সরাসরি ফ্লাইট আবার চালুর জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপ আয়োজনে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।