
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে নির্মিত বলিউড সিনেমা ‘ফারাজ’ মুক্তি না দেওয়ার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অবিন্তা কবিরের পরিবারের সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ছবিটির মুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ওই ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ বলেছেন, ‘আমি মা, আমার মেয়েকে হারিয়েছি। মেয়ের জীবন কীভাবে চলে গেছে সেটা বড় পর্দায় দেখাচ্ছে, অন্যরা উপভোগ করছে এবং অন্য মানুষ সেখান থেকে ব্যবসা করে পয়সা নিচ্ছে, এগুলো মা হিসেবে আমি কীভাবে চাইব। এতে শুধু আমার মেয়ের নয়, দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। আমি চাই না, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এই সিনেমা না আসুক।’ আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে বলিউড সিনেমা ‘ফারাজ’। গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমার ট্রেলার সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শাহজাদপুরে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আপত্তি জানান রুবা আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ফারাজ সিনেমাটি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করবে। সিনেমাটির নির্মাতা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এ ঘটনায় কোনো সহমর্মিতাও প্রকাশ করেনি। আইনি নোটিস পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আমার দেশে যখন এটা আসবে প্লিজ ওটিটিতে এটা প্রকাশ হতে দিয়েন না। দেশের মানুষের দরকার নেই এটা দেখার। এটা দেখা কোনো মায়ের পক্ষে সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি ছয় মাস মুভিটাকে আটকে রেখেছি, এটা না হলে ছয় মাস আগেই মুভিটা মুক্তি পেয়ে যেত। আমি প্রথম ২০১৯ সালে এই মুভিটির সম্পর্কে জানতে পারি। এই মুভির প্রথম পোস্টার ২০২১ সালের ৫ আগস্ট প্রথম আমার হাতে এসেছে। এই মুভি বন্ধের জন্য আমি নির্মাতাদের কাছে উকিল নোটিস পর্যন্ত পাঠিয়েছি।’
রুবা আহমেদ বলেন, ‘আমার মেয়ে সাধারণ জনতা। আমার মেয়ে কোনো পণ্য না। ও কোনো কিচ্ছু না। ও অবিন্তা কবির, আমার মেয়ে। আপনারা কেউ ওকে জানতেন না। আপনারা কী আসলেই অবিন্তা কবিরকে চিনতেন? যদি ও ২০১৬তে মারা না যেত? চিনতেন না। আপনারা ওর (অবিন্তা) নামটা জেনেছেন; কারণ শি পাসড ওয়ে দ্যাট নাইট।’
বলিউড সিনেমা ফারাজ নির্মিত হয়েছে ‘হলি আর্টিজান: একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান’ বইয়ের সূত্র ধরে। বইটি লিখেছেন দৈনিক বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি নুরুজ্জামান লাবু।
অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ফারাজ সিনেমাটি নিয়ে অবিন্তা কবিরের পরিবারের আপত্তি আছে। সিনেমাটিতে অবিন্তা কবির ও তার পরিবারের সদস্যদের চরিত্র উপস্থাপন করা হবে। এ নিয়ে অবিন্তার পরিবারের সদস্যরা বিব্রত।’ তিনি আরও বলেন, ‘হলি আর্টিজানের হামলার ঘটনার পর অবিন্তা কবিরের পরিবারের সদস্যরা আড়ালে থাকতেন। এই প্রথম তারা গণমাধ্যমের সামনে আসলেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন বাঙালি তরুণী অবিন্তা কবির। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকায় ফেরার তিন দিন পর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন তিনি। তার স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’।
অবিন্তার মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবিন্তা, তারিশ এবং ফারাজ হোসাইন আরও বাকি অন্যদের সঙ্গে এই দুনিয়া থেকে চলে গেছে। আমি মনে করি এটাই যথেষ্ট, এটা নিয়ে সিনেমা বানানোর কোনো মানে দেখি না। আর মুভিটার নামটা ফারাজ হয়েছে তার কারণটা হলো এখানে ডেফিনিটলি একটা ক্যারেক্টারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেই ক্যারেক্টারে জোর দিতে গিয়ে, আমার মেয়ের কথা চলে আসছে।’
অবিন্তার মা রুবা আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা কেউ জানি না সেদিন ওরা কীসের মধ্যে দিয়ে গেছে। কেউ আমরা জানি না, কোনোদিন জানতেও পারব না। সো আমরা একটা গল্প বানালাম। সেই গল্প বানিয়ে মুভিটা তৈরি করলাম। কিন্তু এই মুভির সঙ্গে যে পরিবারগুলো আছে, সেই পরিবারগুলোর কাছে থেকে তো কনসেন্ট নিতে হবে। সেই কনসেন্ট তো নেওয়া হলো না।’
রুবা আহমেদ আরও বলেন, ‘এই মুভিতে আমার মেয়ের জন্য আরেকজন জীবন দিয়ে দিয়েছে, সে হিরো। নো, দ্যাটস রং। আমি এটা বিশ্বাস করি না। কারণ এটার কোনো প্রমাণ নেই। ওখান থেকে কেউ ফিরে আসেনি। যারা বেঁচে এসেছে তারা কেউ কিচ্ছু জানে না, বলতে পারে না। এখানে কোনো ইভিডেন্স নেই যে কেউ হিরো হয়েছে। যদি হিরো হয়ে থাকে তাহলে ২২টা মানুষ যে চলে গেছে (মারা যাওয়া) তারা হিরো। আমরা কেউ না।’
তিনি বলেন, ‘সো কাউকে এককভাবে হিরো বানানোটা আপনারা যদি আমাকে বলেন, আমি সেটা বিশ্বাস করি না। ইটস অ্যা রং, রং স্টেইটমেন্ট। এটা হতে পারে না। এই মুভিটা রং, এটা কোনোদিনই হতে পারে না।’
এক দশকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভোট প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্থায়ী সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনেও বড় দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরেই অবস্থান দলটির। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, সেখানে ইসলামী আন্দোলন আগেরবারের চেয়ে দ্বিগুণ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে।
দলটির ভোট বাড়ার রহস্য খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, মূলত তিনটি কারণে দলটির ভোটব্যাংক ভারী হচ্ছে। প্রথমত, দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রতি অবিশ্বাস এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা বিবেচনায় নিয়ে মানুষ ইসলামী আন্দোলনের প্রতি ঝুঁকছে। দ্বিতীয়ত, ধর্মভিত্তিক বা ইসলামী দল বলতে এতদিন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে বোঝানো হলেও যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে তারা নির্বাচনে নিষিদ্ধ এবং রাজনীতিতে কোণঠাসা। তাদের বিকল্প হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়েছে। অন্য ইসলামী দলগুলোর পক্ষে না ঝুঁকে পড়ার আরও কারণ হচ্ছে এসব ছোট ছোট দল ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতো বড় দুই দলের সঙ্গে থাকছে।
তৃতীয়ত, বছরের প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী আন্দোলনের মাহফিল বা দাওয়াতি কর্মকান্ড চলে। এ ছাড়া ‘পীরভিত্তিক দল’ হওয়ায় ইসলামী আন্দোলনের সমর্থক সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে দেওবন্দ ও কওমি ঘরানার পীর হিসেবে ‘চরমোনাই ধারাটি’ বেশি গ্রহণযোগ্য।
তবে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা বলছেন, সাংগঠনিক দক্ষতা আর নির্বাচনী কৌশলেই তাদের ভোট বাড়ছে। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্বে থাকা বিভিন্ন জোট আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা জোট বা নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট দুটোর কেন্দ্রেরই দুর্নীতিবাজরা বসে আছেন। আমরা দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতার যাওয়ার সহযোগী হতে চাই না।’ ভোট বাড়ার পেছনের রহস্য কী এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘মানুষ ভালো কিছু চায়। আমরা ভালো কাজ করছি, ভালোর জন্য রাজনীতি করছি। করোনায় আমরাই প্রথম টিম করে মানুষের লাশ দাফন করেছি। বন্যার সময় ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি। এতদিন মানুষ আমাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানত না। এখন দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলো আমাদের নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে, মানুষও জানছে, তাই হাতপাখার প্রতি সমর্থনও বাড়ছে।’
মুরিদ বা পীরের ভক্তের দল হিসেবে পরিচিতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে তো হিন্দু সমর্থকও রয়েছেন। তাই এমন পরিচিতির ভিত্তি নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্য হতে হলে মুরিদ হতে হবে এমন কোনো শর্ত নেই।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের আনুকূল্য, রাজনীতির মাঠে জামায়াতে ইসলামীর না থাকা, বড় রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিচারিতা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে ইসলামী আন্দোলনের ভোট বাড়ছে।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দিন দিন ধর্মাশ্রয়ী হয়ে যাচ্ছি। উগ্রতার দিকে আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার বল প্রয়োগ করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে রাখছে। কিন্তু ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। রাজনৈতিক দলগুলো ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে, কিন্তু কাজ করে না। বরং অনেকাংশে তারা ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারা গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতান্ত্রিক সমাধান না করে, ধর্মভিত্তিক সমাধান করে।’ তিনি জানান, কয়েক বছর আগে সহিংস উগ্রবাদবিষয়ক গবেষকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘রিজলভ’-এর করা এক জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মর্মবস্তু হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মনে করেন, শরিয়াহ আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করে। ইসলামী আন্দোলনের ভোট বাড়ার পেছনে এ মনোভাবও খুব কাজ করছে বলে মনে হয়।
১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ একটি ইসলামী মোর্চা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। ’৯০ সালের দিকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে মোর্চাটি চরমোনাইয়ের পীর মুফতি ফজলুল করিমের (প্রয়াত) নেতৃত্বে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৮ সালে নিবন্ধনের সময় দলটির নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ করা হয়।
সংসদ নির্বাচনে ভোটচিত্র : ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এককভাবে ১৬০টি আসনে অংশ নেয় ইসলামী আন্দোলন। নব্বইয়ের পর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোর মধ্যে এ সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে দলটি ১ দশমিক ০৫ শতাংশ ভোট অর্থাৎ ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৪ ভোট পেয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না এমন অভিযোগ করে অংশ নেয়নি দলটি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব আসনেই প্রার্থী দিয়ে আলোচনায় আসে ধর্মভিত্তিক দলটি। ওই নির্বাচনে একটি আসনে তাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়। ভোটগ্রহণের দিন নানা অনিয়মের অভিযোগে একপর্যায়ে ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দিলেও প্রায় ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ ভোট পড়ে দলটির বাক্সে। অর্থাৎ প্রায় ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৩ ভোট যায় তাদের ‘হাতপাখা’ প্রতীকে।
স্থানীয় নির্বাচনে ভোটচিত্র : ২০১৭ সালে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘হাতপাখা’ প্রতীকে মেয়র পদে ভোট করেছিলেন গোলাম মোস্তফা বাবু। তিনি ২৪ হাজার ৩ ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জয়ী হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী দ্বিতীয় ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তৃতীয় হয়েছিলেন। গত ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলটির হয়ে আমিরুজ্জামান পিয়াল নির্বাচন করেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার এবারও নির্বাচিত হন। বিএনপি এবার ভোটে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের ভোটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন তৃতীয় অবস্থানে ছিল। ঢাকা উত্তরে দলটি পেয়েছিল ১৮ হাজার আর দক্ষিণে ১৫ হাজার ভোট।
২০২০ সালে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৬ হাজার ২৫৮ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৬ হাজার ৫২৫ পেয়ে তৃতীয় হয়েছে দলটি।
২০১৬ সালের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তৃতীয় হয় দলটি। ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল। রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছিল ইসলামী আন্দোলন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রায় ২০০-এর মতো নির্বাচিত ইউপি সদস্য রয়েছে। রাজধানী ঢাকার ডেমরায় হাজি ইব্রাহীম কাউন্সিলরসহ সারা দেশে সাতজন নির্বাচিত কাউন্সিল রয়েছে দলটির।
জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলনের জনপ্রিয়তা বাড়ার বড় একটি কারণ প্রয়াত পীর মাওলানা ফজলুল করিম। তার নেতৃত্বেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে দলটির কার্যক্রম। তার সময়েই ৬৪টি জেলাসহ বহু উপজেলায় দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল। তার অবর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি ইসলামী আন্দোলনের আমির এবং চরমোনাই তরিকার বর্তমান পীর। সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের আরেক ভাই সৈয়দ ফয়জুল করিম দলটির এক নম্বর নায়েবে আমির। তিনি চরমোনাইয়ের তরিকা অর্থাৎ বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটিরও নায়েবে আমির।
দলটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘পীরভিত্তিক’ দল হওয়ার কারণেই দেশের গ্রামাঞ্চলে ইসলাম মূল্যবোধের প্রতি অনুরক্ত মানুষের মধ্যে দলটির জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে।
গত ২ জানুয়ারি সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের ৮৭টি সাংগঠনিক জেলা, ৬৯১টি উপজেলা, ১১৯টি সিটি থানা, ৬১টি সদর পৌরসভা, ৩ হাজার ৫১৯টি ইউনিয়ন এবং ১২ হাজার ৬৭০টি ওয়ার্ডে ইসলামী আন্দোলনের কমিটি রয়েছে। এমনকি দলটি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে তাদের কমিটি গঠন করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল ও উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, লালমনিরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে দলটির ভক্ত বা সমর্থক সংখ্যা বেশি। রাজধানী ঢাকায়ও তাদের কার্যক্রম বেশ শক্ত। রামপুরায় জামিয়া মহিলা মাদ্রাসা, ভাটরায় সাইদিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসা, জুরাইন ও যাত্রাবাড়ীর বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসায় তাদের কর্মী ও সমর্থক রয়েছে।
দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড প্রসঙ্গে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রায় ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।’
মাংসের দোকানে ঝুলিয়ে রাখা সিনার একটি বড় টুকরো দেখিয়ে লাবিবা বলে, ‘বাবা, এটা নাও।’ কসাই পরিচিত। তিনি সিনার টুকরোটি ওজন দিয়ে বলেন, স্যার, তিন কেজির মতো আছে, পুরাটাই নিয়ে যান। বলি, দিয়ে দেন।
স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে ফিরছিলাম। ফেরার পথে মেয়ের খাতা-কলম ও কিছু মাছ ও সবজি কেনার জন্য মিরপুর-১৩ বাজারে ঢোকা। দারুল উলুম মাদ্রাসার সামনে বাইক রেখে বাজারে ঢুকতেই মেয়ে চিৎকার করে ওঠে, ‘বাবা আজ গরুর মাংস নেব।’ বাবার মতো মেয়েরও পছন্দ গরুর মাংস।
‘বিল্লাল গোশত বিতানের’ সামনে বাপ-বেটি দাঁড়িয়ে আছি। কসাই মাংস কাটছেন। সাত-আট বছরের দুই শিশু নিয়ে দুজন নারীও দাঁড়িয়ে আছেন সেই দোকানের সামনে। তারাও তাকিয়ে আছে মাংসের দিকে। লাবিবার মতো তাদেরও এক শিশু বলছে, ‘মা, গোশত কিনো আইজকা।’ কিন্তু তারা কেউ মাংসের দরদাম করছেন না।
আমার মাংস কাটা শেষ। মাপ দিয়ে পলিথিনে ঢুকিয়ে কসাই বলেন, স্যার নেন। সাড়ে তিন কেজির একটু বেশি হইছে। আমি মাংসের ব্যাগ হাতে নিয়ে টাকা দেওয়ার জন্য মানি ব্যাগ বের করি। বলি, কত দেব? কসাই বলেন, আড়াই হাজার হইছে। আপনি দুই হাজার চারশ টাকা দেন। আমি আশ্চর্য হয়ে বলি, এত টাকা? কত টাকা কেজি? কসাই বলেন, আজকে সাতশ টাকা।
কোরবানি ঈদের পর আর মাংস কেনা হয়নি। আমার মানি ব্যাগে এত টাকা নেই। মেয়ের খাতা-কলম ও কিছু মাছ ও সবজি নিতে হবে। কসাইকে বলি, এক কেজি দেন ভাই। কসাই নাছোড়বান্দা। বলেন, টাকা পরে দিয়েন। নিয়ে যান।
এখন নিলে তো পরে আবার টাকা দিতেই হবে। মাস শেষে যে টাকা বেতন পাই তার অর্ধেক চলে যায় বাসা ভাড়ায়। বাকি টাকা থেকে নেট বিল, ডিশ বিল, নিজের যাতায়াত, মেয়ের স্কুলের টিউশন ফি, প্রাইভেট টিউটরকে দিয়ে যা থাকে তা মাসের বাজার-সদাই করতেই শেষ হয়ে যায়। আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এমন সময় ওই নারী কসাইকে বলেন, বট (গরুর ভুঁড়ি) কত কইরা? কসাই বলেন, তিনশ টাকা কেজি। তখন ওই নারী বলেন, তাইলে হাফ কেজি মাপেন।
বেশি দিন আগের কথা নয়, কয়েক বছর আগেও ২৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস কিনেছি। এখন সেই মাংস কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা। অথচ ৭০০ টাকা রাজধানীর রিকশাচালক কিংবা হকারদের দুদিনের আয়ের সমান। গরুর মাংস অনেক আগেই তাদের নাগালছাড়া হয়েছে। আজকে নাগালছাড়া হচ্ছে সীমিত আয়ের আমার। শেষ পর্যন্ত এক কেজি মাংস নিয়েই মাছ বাজারের দিকে এগিয়ে যাই।
মানিকগঞ্জ থেকে মাছ এনে বিক্রি করেন কামাল। নিজের জেলা বলেই তার সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে আমার। তার কাছে গিয়ে বলি, হাফ কেজি কাচকি দেন কামাল ভাই। তিনি কাচকি মাছ ওজন দেওয়ার জন্য বাটিতে তোলেন। লাবিবা আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দোকানে রাখা বড় একটি বোয়াল মাছের দিকে। দোকানদার বলেন, বোয়াল নেবেন? দেড় হাজার টাকা কেজি। পনেরো কেজির মতো হবে। আমি বলি, না। আপনি কাচকি মাপেন। লাবিবা আর মাছের দোকান থেকে সরে না। মাছটির মাথায় হাত দিতে চায়। সাহস পায় না। এত বড় বোয়াল লাবিবা এই প্রথম দেখল।
কাচকি ব্যাগে ঢুকিয়ে সবজি দোকানের দিকে হাঁটা দেব। তখন ট্রাউজার-হুডি পরা এক ভদ্রলোক বোয়াল মাছটি মাপতে বললেন। মেয়েকে নিয়ে সামনে এগোই। সবজির দোকানের আগে জাহাঙ্গীর আর মান্নান বসেন পাশাপাশি। একজন ইলিশ, আরেকজন রুই-কাতল মাছ বিক্রি করেন। আজকে কত টাকা কেজি ইলিশ? বলতেই মান্নান যেটি মাপছেন সেটি দেখিয়ে বলেন, এইটা বারোশ টাকা কেজি কইরা বেচতেছি। একজন নারী ছয়টি ইলিশ কিনছেন। লাবিবা আর আমি দাঁড়িয়ে দেখছি। লাবিবা বলে, বাবা, ইলিশ নেবে? আমি কিছু বলি না।
ঝাঁকায় থাকা ছোট সাইজের ইলিশ দেখিয়ে দাম জানতে চাইছি। এমন সময় কানে শব্দ এলো ‘ওই, একটা ইলিশ নে।’ তাকিয়ে দেখি, তিন তরুণ দাঁড়িয়ে। দেখে মনে হলো, কলেজছাত্র। ছোট সাইজের একটি ইলিশ তারা নিতে চাইছে। দোকানদার মাপ দিয়ে বলে, ছয়শ গ্রামের বেশি হইছে। পাঁচশ টাকা দেন। তারা একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে অন্য দোকানের দিকে চলে যায়। বলে, ‘থাক, আজ নেব না।’
দোকানদার বলেন, এরা প্রায়ই আসে। কিন্তু মাছ কিনে না। বলি, কেন? দোকানদার জানায়, তারা মেসে থেকে লেখাপড়া করে। শেষে দেখবেন, ঘোরাঘুরি করে ট্যাংরা কিনে নিয়ে যাবে।
বাজারের যে অবস্থা তাতে সীমিত আয়ের পরিবারগুলোরও আর এখন নিত্যদিন মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। সেখানে এই ছাত্ররা কীভাবে কিনবে? অনেক পরিবারে এখন গরুর মাংস বা ইলিশ কেনা হয় কেবল অতিথি এলে। ভবিষ্যতে হয়তো অতিথি এলেও তাদের পক্ষে মাছ-মাংস কেনা কঠিন হবে।
ষাটোর্ধ্ব এক নারী লাবিবার কাছে কিছু টাকা সাহায্য চাইছেন। আমি ডেকে জানতে পারি তার নাম কমলা। থাকেন পাশেই, বস্তিতে। বলেন, ‘এক কেজি আতপ চাল কিনে দেন। জাই (জাউ) রাইন্দ্যা খামু।’ দশ টাকা ধরিয়ে দিই তার হাতে।
আমিও আজ আর ইলিশ নিই না। লাবিবাকে নিয়ে সবজির দোকানে যাই। লাবিবা বলে, বাবা, ক্যাপসিকাম নাও। দুটি দোকানের পজিশনে একাই সবজি বেচেন মতলবের ছেলে মিজান। থাকেন মিরপুর-১৩ নম্বরে। জানান, এই বাজারে রাকিন সিটি ও ন্যাম গার্ডেনের বাসিন্দারাই বেশি বাজার করে থাকেন। তার কথায়, স্থানীয় বাড়িওয়ালারা খুব কমই বাজার করেন। তারা কোথায় করেন? মিজান বলেন, ভ্যান থেকেই বেশি কেনেন তারা।
দোকান ভাড়া কত দিতে হয়? মিজান বলেন, প্রতি দোকানে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। আর কারেন্ট বিল ও অন্যান্য খরচ দিয়ে আরও চার-সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়। তাতে লাভ থাকে? বলেন, মোটামুটি চলে যাচ্ছে আর কি।
সবজি কিনে মেয়েকে নিয়ে বাইকের কাছে চলে আসি। ব্যাগগুলো বাইকের হুকের সঙ্গে লাগাচ্ছি। বাজারের গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন এক বৃদ্ধ। হাতে একটি ব্যাগ। মলিন চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। লাবিবাকে পেছনে উঠিয়ে বাইক স্টার্ট দেব। বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বলেন, একটু মাংস দেবেন? এক কেজি মাংস থেকে আর কী দেব তাকে। বিশ টাকার একটা নোট হাতে দিয়ে বাইক স্টার্ট দিই। লেগুনা, রিকশা আর প্রাইভেট কারের ভিড় ঠেলে আমার বাইক হারম্যান মেইনার, স্কলাস্টিকা স্কুল পেরিয়ে ন্যাম গার্ডেনের দিকে এগিয়ে যায়।
নিজ সমুদ্রসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো জাহাজই প্রবেশ করতে দেবে না বাংলাদেশ। সেটা হোক বাংলাদেশের অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশের প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের জাহাজ। বিশেষ করে বাংলাদেশ এখন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও এর সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে ব্যস্ত। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো জাহাজ নিজ জলসীমায় প্রবেশ করতে দিয়ে নতুন ঝামেলায় জড়াতে চায় না ঢাকা। পরিস্থিতি উত্তরণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন ও গ্রহণযোগ্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে সরকার।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা। নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এমন জাহাজ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে অথবা যে দেশই তাদের জলসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেবে সেই দেশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এছাড়া সমুদ্রসম্পদ রক্ষায়ও নড়চড়ে বসেছে সরকার। এমনকি সমুদ্রকেন্দ্রিক কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশেষ নজরদারির পাশাপাশি নিরাপদ সমুদ্র নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক জোট এবং দেশগুলোর সঙ্গেও নিয়মিত বোঝাপাড়ায় রয়েছে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, চলমান ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দুনিয়াজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নিজ বলয়ের শক্তি প্রদর্শন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে অন্য দেশগুলোকে; বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ঝুঁকি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ৯০টি জাহাজের তালিকা এরই মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন থেকে বিদেশি কোনো জাহাজ বাংলাদেশে আসার আগে অনুমতি চাইলে এবং জলসীমা ব্যবহার করতে চাইলে আগেই যেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ওই তালিকা ধরে খুব সহজেই নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজটি শনাক্ত করতে পারে। জাহাজটি যদি বাংলাদেশের পণ্য পরিবহন করে থাকে তবুও সেটি জলসীমায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এক কথায় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ব্যবহার করতে পারবে না নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো জাহাজ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার একটি জাহাজ ‘স্পার্টা থ্রি’ সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে মোংলা বন্দরে ভিড়তে যাচ্ছিল। তখন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বাংলাদেশের নজরে না থাকায় এবং জাহাজের নাম পরিবর্তন করে ‘উরসা মেজর’ রাখায় রাশিয়ার কৌশলগত কারণ নির্ণয় করতে পারেনি বাংলাদেশ। রূপপুরের মালামাল বহন করলেও সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল আপত্তির মুখে রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজটির প্রবেশ আটকে দেয় বাংলাদেশ। রুশ কৌশল এবং জাহাজের নাম পরিবর্তন ও নিবন্ধন নম্বর একই থাকার বিষয়টি মিলিয়ে হতবাক হয়েছিলেন স্বয়ং সরকারেরও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস গত বছর ২০ ডিসেম্বর এক কূটনৈতিক পত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে ‘উরসা মেজর’। তাই জাহাজটিতে পণ্য ওঠানো-নামানো, জ্বালানি সরবরাহ, নাবিকদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতায় যুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশের নিষেধাজ্ঞা বা বড় আর্থিক দণ্ডের মুখে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
এরপরও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজটি ভিড়তে দিতে বাংলাদেশের ওপর চাপও সৃষ্টি করেছিল রাশিয়া। এ নিয়ে সৃষ্ট বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। কড়া ভাষায় কূটনৈতিক বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সব রকমের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি। এরপর পণ্য খালাসের জন্য ভারতে অপেক্ষা করছিল জাহাজটি। এটির পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে পণ্য খালাসের কথা ছিল। তখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এ নিয়ে বিবিসিকে বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আগেও যা ছিল, এখনো তা-ই। ভারতের সেই নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি। রুশ জাহাজটি যদি ভারতের কোনো বন্দরে ভিড়ে থাকে বা ভিড়তে আসে, তাহলে তাই।’ অবশেষে সেখানেও পণ্য খালাসের অনুমতি না পাওয়ায় গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) রাশিয়ার পথ ধরতে হয়েছে ‘উরসা মেজরকে’।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ভারত হয়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন। তার এ সফরকে ঘিরে ঢাকায় বেশ জোরালো গুঞ্জন রয়েছে যে তিনি জাহাজটির পণ্য খালাসের অনুমতি দিতে বাদ সেধেছেন বলেই শেষ মুহূর্তে ভারত তাদের ‘ভারসাম্য কূটনীতি’ থেকে সরে গিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে ঢাকায় ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে জাহাজটির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, এরই মধ্যে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে অন্য জাহাজে করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল পাঠানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই মালামাল নিয়ে রাশিয়া থেকে অন্য জাহাজ আবার যাত্রা করবে এবং ঢাকায় এসে পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম এবং এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ নিয়ে কথা বলতে নারাজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারাও বিব্রতবোধ করার কথা জানিয়েছেন।
বিদ্যুতের দাম বাড়লেও পিছু ছাড়ছে না লোডশেডিং। চাহিদা কম থাকায় গত কয়েক বছরে শীতকাল লোডশেডিংমুক্ত ছিল, তবে এ বছর তার ব্যতিক্রম হয়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের লোডশেডিং আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে তারা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলা সম্ভব নয়। সাশ্রয়ী নীতি অবলম্বন করলে পরিস্থিতি হয়তো কিছুটা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।
গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। গ্যাসের দাম বাড়লে আবারও বাড়বে বিদ্যুতের দাম। গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দামের সঙ্গে লোডশেডিংয়ের কারণে জীবন আরও অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২,৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও কম। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে ৪ হাজার ৭৩ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণজনিত কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
সর্বোচ্চ ১৪,৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত বছরের ১৬ এপ্রিল। তখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। এ বছর গ্রীষ্মে চাহিদা বেড়ে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে বলে ধারণা করছে বিপিডিবি।
শীতকালে তাপমাত্রা কম হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। কিন্তু এবার শীতেও লোডশেডিং হচ্ছে। চলতি বছর ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এখনো চলছে লোডশেডিং। গত ১০ দিনে গড়ে ৫৫০ মেগাওয়াট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। অথচ চাহিদা ছিল ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও নিচে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যাহত হয়। সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের উৎপাদন সম্ভব না হওয়ায় জুলাই থেকে সরকার ঘোষণা দিয়ে লোডশেডিং শুরু করে। পরে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় লোডশেডিং কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তা চরম আকার ধারণ করে অক্টোবরের শুরুর দিকে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায়। ওই সময় গড়ে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। তবে তাপমাত্রা কমতে থাকায় নভেম্বরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে যায়। ডিসেম্বর মাস অনেকটা লোডশেডিংমুক্ত থাকলেও এখন আবার শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিডিবির প্রক্ষেপণে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট ধরা হলেও এটা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেই থাকবে। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে আমাদের। কিন্তু জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় যে জ্বালানির দরকার তার জোগান দিতে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে। সরকারও প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থান করবে বলে আশ^স্ত করেছে। আশা করি, গ্রীষ্মে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং আরও কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র উৎপাদনে এলেও বড়জোর ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। তবু ঘাটতি থেকে যাবে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের সক্ষমতা সীমিত হয়ে গেছে।
সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। কিন্তু এজন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা দরকার। এই টাকা সমন্বয় করে গ্যাস-বিদ্যুতের যে দাম হবে তা সোনার চেয়েও দামি হবে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব, বলেন তিনি।
সংকট থেকে বের হওয়ার উপায় জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রথমত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিকীকরণ থেকে মুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সাশ্রয়ী হতে হবে। সর্বশেষ উপায় হলো, অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বন্ধ করতে হবে। তবেই সংকট কমবে। না হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
সূত্রমতে ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় তেল ও গ্যাস আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। গত জুলাই থেকে খোলাবাজারের এলএনজি কেনা বন্ধ। অর্থাভাবে গ্যাসের আমদানি বিল ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন পেট্রোবাংলা। জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জমা বিলের অর্ধেক পরিশোধের মতো টাকা আছে পেট্রোবাংলার ব্যাংক হিসাবে। নতুন করে ১০টি এলএনজি কার্গো আমদানি করতে হলে আরও ২৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে। টাকা না পেলে আমদানি করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকেও উৎপাদন কমে গেছে।
ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় উৎপাদনে যাওয়ার ২৭ দিনের মাথায় গত শনিবার বন্ধ হয়ে গেছে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৫৬০-৫৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার মজুদও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আমদানির এলসি খুলতে চাইছে না।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার মূলত সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পাওয়ার আশায় ছিল। মার্চের মধ্যে এ বিদ্যুৎ আসবে বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। জ্বালানি কেনার বিষয়টিও এখনো পরিষ্কার হয়নি। ফলে আগামী গ্রীষ্মে প্রায় ২৫০০ থেকে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে।
সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১০০০ মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে, বলেন ড. ইজাজ।
৫৪ বছর আগে আজকের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ আইয়ুব সরকারের পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি পুলিশের গুলিতে জীবন দেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মানুষ সে সময় ভয় ভুলে গিয়ে পথে নামে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী সেই সাহস আর প্রতিবাদের ভাষায় উজ্জীবিত হয়ে বের করে এক শোক মিছিল। একে একে তাতে যোগ দেয় ছাত্র, সাধারণ মানুষ, ছোট-বড় অফিস আদালতের কর্মচারী সবাই। দুই মাইল দীর্ঘ এই মিছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করেছিল সেদিন আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে। আসাদের শার্ট হয়ে ওঠে প্রাণের পতাকা। কবি শামসুর রাহমান লিখে ফেলেন তার অমর কবিতা আসাদের শার্ট। কবি লিখলেনÑ গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের/ জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট/ উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।
আসাদের মৃত্যুর খবরে ঢাকার বাইরেও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। যার পরিণতিতে ঘটে গেল ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান, আইয়ুব খানের পতন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুসহ অন্য আসামিদের নিঃশর্ত মুক্তিলাভ। এই অভ্যুত্থান শ্রমিক ও কৃষকের মধ্যেও বিপুলভাবে জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
শহীদ আসাদ ১৯৪৯ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আবু তাহের। শহীদ আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ। তবে তিনি শহীদ আসাদ নামে পরিচিত। আসাদ শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে জগন্নাথ কলেজ ও মুরারী চাঁদ মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি বিএ ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। শহীদ আসাদ তৎকালীন ঢাকা হল শাখার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে দুই ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও এনএসএফের একাংশ নিয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পরে ১৪ জানুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেই ১১ দফা সারা দেশে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিল। ১১ দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ১৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করা হয়েছিল। ১৮ তারিখের মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। পরদিন (১৯ জানুয়ারি) মিছিল বের হলে আসাদুল হক নামে একজন (তিনি শহীদ আসাদ নন) গুলিবিদ্ধ হন। ২০ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে মিছিলটি বের হয়েছিল, তার প্রথম সারিতে ছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ। চানখাঁরপুল মোড় থেকে পুলিশের জিপ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছোড়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে আসাদের রক্তমাখা প্রাণহীন দেহ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে।
আসাদের মৃত্যুতে সারা দেশে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। আসাদ ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) অন্যতম নেতা। একই সঙ্গে কৃষক আন্দোলনের সংগঠক (প্রধানত শিবপুর এলাকায়) এবং গোপন কমিউনিস্ট পার্টির একাংশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসাদ যেখানে নিহত হয়েছিলেন তার পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত স্মৃতিস্তম্ভটি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। শহীদ আসাদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার স্মৃতিস্তম্ভ স্মৃতির ধুলায় আচ্ছন্ন। বছরের এই একটি দিন ছাড়া সারা বছর অযত্নে পড়ে থাকে তা। স্মৃতিস্তম্ভটি পরিচ্ছন্ন রাখতে খুব একটা উদ্যোগ দেখা যায় না কখনো। স্তম্ভের ভেতরে কাগজ, বোতল পড়ে থাকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, লাল-সবুজের রঙের তুলির আঁচড় দিচ্ছেন একজন। স্মৃতিস্তম্ভের উপরে রক্তবর্ণে চকচক করে তোলা হয়েছে। আশপাশের কিছুটা জায়গাও পরিষ্কার করা হয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের পাশে চা বিক্রেতা মাসুদ বলেন, আমি গত চার-পাঁচ বছর এখানে চা বিক্রি করি। এখন যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সারা বছর এমন থাকে না। একটু আবর্জনার মতো থাকে। এখন যেমন পরিষ্কার করা হয়েছে, এরকম আবার আরেক বছর আসলে করবে।
আমিনুল নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, এখানে একটা স্মৃতিস্তম্ভ আছে আজকে জানলাম। কখনো খেয়াল করিনি। সকালে এসে দেখি পরিষ্কার করছে। পরে সকাল ৯টার দিকে কয়েকজন এসে দেখলাম রং লাগাচ্ছে। একজন এসে বলেছে কালকে যেন এখানে না বসি।
একই অবস্থা মোহাম্মদপুর এলাকায় আসাদের নামে নির্মিত তোরণের। তোরণটি এখনো আছে, কিন্তু পোস্টারে ঢাকা পড়েছে এর সৌন্দর্য। অথচ এই তোরণে পোস্টার সাঁটানো যে দণ্ডনীয় অপরাধ, তা স্পষ্ট করেই লেখা আছে সেখানে।
এখন পর্যন্ত আসাদের স্মৃতিসৌধ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ আসাদ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান মিলন। তিনি বলেন, এত বছর পর এসেও নিজেকে খুব লজ্জিত লাগে। কারণ এত বছর পার হয়ে গেলেও আসাদের নামে এখন পর্যন্ত কোনো স্মৃতিসৌধ হয়নি। আসাদ যেখানে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তার পাশে একটা স্মৃতিসৌধ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছি। কিন্তু বর্তমান সরকার আসার পরে সেটা স্থগিত হয়ে যায়।
আসাদ দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ আসাদের এ অসামান্য অবদান দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে শহীদ আসাদসহ বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী শহীদ আসাদ এদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার আত্মত্যাগ সবসময় আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রেরণা জোগাবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।