
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রী হলে সরকারি নানা সুবিধা মেলে এটা বলাই বাহুল্য। সেখানে পাঁচ বছরে এর কোনো কিছুই স্পর্শ করেননি তিনি। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেননি। ওঠেননি সরকারের বরাদ্দকৃত বাড়িতেও। বিদেশ সফরে মন্ত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকলেও তিনি চড়েছেন বিমানের সাধারণ আসনে (ইকোনমি ক্লাস)। দুপুরের খাবারের জন্য সরকারি দপ্তরের কোনো খরচ নেননি। খাবার নিয়ে আসতেন বাসা থেকে। পরিবারের সদস্যদের প্রতি নির্দেশনা ছিল, তারা কেউ পাঁচ বছর জাতীয় সংসদ ভবন ও সচিবালয়মুখো হবেন না। পাঁচ বছর মন্ত্রিত্বে থেকেও সুযোগ-সুবিধা এড়িয়ে এমন নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
সময়টা ২০০৯ সালের শুরুর দিকে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শফিক আহমেদ তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি। আগের বছরের শেষদিকে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের অপেক্ষায়। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবি তখন তুঙ্গে। একই সঙ্গে আপিল বিভাগে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের শেষ (পাঁচজন তখন কারাগারে) ও রায় কার্যকর দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন প্রাজ্ঞ ও বিশ্বস্ত এবং আইনে পারদর্শী একজন ব্যক্তিত্বের। কাকে এ গুরু দায়িত্ব দেওয়া যায় এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল তখন রীতিমতো গবেষণায় ব্যস্ত। এর কয়েক মাস আগে ব্যারিস্টার শফিক সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে কারান্তরীণ আওয়ামী লীগ সভাপতি (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনাকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ে রেখেছিলেন মুখ্য ভূমিকা।
শফিক আহমেদ বলেন, ‘আমাকে ডেকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করা হলো। বললাম, আমি তো রাজনীতি করি না। সংসদ সদস্যও হইনি। টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব এলো। বললাম, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ভেবে দেখি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলাম। এ জন্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের চেতনায় ফিরে যাওয়া আমার জীবনের স্বপ্ন। এটাই হয়তো সেই সুযোগ। কিন্তু পথটা এত সহজ ছিল না। কোনো ভুল করা চলবে না। সব চিন্তা করেই মন্ত্রিত্বের পদে আসি।’ তিনি যোগ করেন, ‘বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছি, তাই মন্ত্রিত্বের সুবিধা নিইনি মূলত বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও দেশের মানুষের প্রতি সম্মান রেখে।’
শফিক আহমেদের ভাষায়, ‘রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ও সাংবিধানিক বিষয়ের সুরাহার উদ্দেশ্যে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছিলাম। শর্তই ছিল এ জন্য কোনো বেতন ও সুবিধা নেব না। আমি কিংবা আমার পরিবার মন্ত্রিত্বের সুবিধা উপভোগ করব এমন চিন্তা করে আসেনি। জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়। তাদের কষ্টের টাকা খরচ করতে মনে সায় দেয়নি।’
৮৬ বছর বয়সী এ মানুষটি এখন জীবনের গোধূলি বেলায় দাঁড়িয়ে। দেশের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী ও সংবিধান বিশ্লেষক। ৫৭ বছর ধরে উচ্চ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা থাকলেও প্রিয় কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টে যান মাঝেমধ্যেই। আইন ও বিচারাঙ্গনে থাকা সমস্যা নিয়ে মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে কথা বলেন। দেশের মানুষ কীভাবে দ্রুততম সময়ে বিচার পাবেন, কাউকে আদালতে দিনের পর দিন ঘুরতে হবে না, এ নিয়ে পথ বাতলে দেন।
বিশিষ্টজনরা প্রায়ই বলেন, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিরল চরিত্রের মানুষ। ক্ষমতা, লোভ তাকে স্পর্শ করেনি কখনো। আইন, বিচারাঙ্গনের মানুষরা বলেন, নানা ক্ষেত্রে ভূমিকার জন্য শফিক আহমেদ আইনজীবী সমাজের গর্ব। তিনি আইন, সংবিধান ও কর্মক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবীকে মূল্যায়ন করে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শফিক আহমেদ একজন বড় আইনজীবী। দেশের আইন ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যায় ওনার অবদান অপরিসীম। এখনো তিনি এ ভূমিকা রাখছেন। উনি যখন মন্ত্রী ছিলেন, সে সময়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সময় যেভাবে তিনি অকুতোভয়ে আইনি লড়াই করেছেন তা প্রত্যেক আইনজীবীর কাছেই গর্বের বিষয়। সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রেখেছেন। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আইন প্রণয়ন ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে তার ভূমিকা জাতি অবশ্যই স্মরণে রাখবে।’
সম্প্রতি রাজধানীর ইন্দিরা রোডের বাসায় শফিক আহমেদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তার স্ত্রী মাহফুজা খানম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি (১৯৬৬-৬৮)। ঐতিহ্যবাহী ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। একুশে পদক ও বেগম রোকেয়া পদকজয়ী মাহফুজা খানম ঢাকা বিশ্ব^বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, খেলাঘরের চেয়ারপারসনসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত। বড় ছেলে ডা. মাহফুজ শফিক, ছোট ছেলে ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক ও মেয়ে ডা. মাশরুরা শফিক নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত। প্রচারবিমুখ শফিক আহমেদ প্রচারে আসতে চান না। কিন্তু নানা কীর্তির কারণে প্রচারের আলো তাকে এখনো খুঁজে ফেরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়াটিক সোসাইটি, নটর ডেম কলেজ, ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিকস, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অন্তত ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত আছেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও অধ্যাপক মাহফুজা খানম দম্পতি। দুজনের যৌথ নামে ২০০৩ সাল থেকে মানিকগঞ্জের (মাহফুজা খানমের গ্রামের বাড়ি) ১৫৪টি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে প্রতি বছর বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার নারায়ণপুর গ্রামে শফিক আহমেদের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘বেগম ইয়াকুবুন্নেসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এখন জেলার সেরা প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।
সংবিধানকে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের চেতনায় ফিরিয়ে নিতে না পারার আক্ষেপ আছে শফিক আহমেদের। দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন না হওয়াও পোড়ায় তাকে। তিনি বলেন, ‘আমি তো তিনটি গুরুদায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই দায়িত্ব নিয়েছিলাম। তবে, একটি দায়িত্ব (সংবিধানকে ৭২-এ চেতনায় নিয়ে যাওয়া) পালন করতে পারিনি। এটি আরও আগেই করা উচিত ছিল। আমি আশাবাদী একটু কঠিন হলেও এটি অসম্ভব নয়। কারণটা হলো, সংবিধান একটি রাষ্ট্র ও জনগণকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। এ পথ দেখানোর মধ্যে যেন কোনো ভুলভ্রান্তি না হয়। এখন এর সঙ্গে যারা যুক্ত তারা নিশ্চয়ই সেটি বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, আইন-আদালতসহ সব ক্ষেত্রে কিছু উন্নতি অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হলে সেই উন্নতির সুফলটা রাষ্ট্রের মালিক জনগণ আরও বেশি পেত। বিচার দ্রুত নিশ্চিতে একটা সূক্ষ্ম পরিবর্তন হলে বিচারপ্রার্থীর সুফল আসত। অপরাধও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসত।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলাম। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য চেষ্টা করেছি, অনেকটা সফলও হয়েছি। মন্ত্রী থাকতে বেতন থেকে শুরু করে কোনো সুবিধাই নিইনি। এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে, চাইলে সবই সম্ভব। আমি মনে করি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একজন রাজনীতিবিদের বা মন্ত্রীর সততাটা খুবই জরুরি এবং সেটাই করা উচিত।’
স্বামী শফিক আহমেদকে নিয়ে গর্ব করেন মাহফুজা খানম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সংসার করছি। কখনো কোনো শঠতার আশ্রয় নেননি। আইন পেশায় জীবনে যে অর্থ উপার্জন করেছেন সংসার খরচ বাদে সব ব্যয় করেছেন মানুষ ও শিক্ষার কল্যাণে। যে কয়েকটি বছর মন্ত্রী ছিলেন, কোনো উপঢৌকন আসতে দেখিনি। মন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে আমাকে নানা সুবিধা দিতে অনেকেই এসেছিলেন। ফিরিয়ে দিয়েছি। তিনি (শফিক আহমেদ) অবাক হয়ে বলতেন, মন্ত্রীদের স্ত্রীদেরও গাড়ি-বাড়ি থাকতে হয় নাকি!’
তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রিত্বের পাঁচটি বছর একপ্রকার হুমকি ও মৃত্যু শঙ্কার মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ঘাড় বাঁচাতে আমাকে বিধবা হওয়ার ভয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু তিনি ছিলেন অটল।’
১৯৩৭ সালের ১৬ অক্টোবর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার নারায়ণপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শফিক আহমেদ। ১৯৫৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বে সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৫ সালে মেধা তালিকায় ১২তম স্থান পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একই বিশ^বিদ্যালয় থেকে পরে আইন বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৬৭ সালে বার অ্যাট ল ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হন তিনি।
জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ার প্রবণতা বহুদিন আগেই আলোচনার কেন্দ্র থেকে সরে গেছে। বামপন্থিদের সভা-সমাবেশে মাঝেমধ্যে আগে শোনা যেত, এখন সেটাও কমে এসেছে। বরং এখন রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের যে আধিপত্য শক্ত হচ্ছে সেটা নিয়েই বিভিন্ন মহলে আলোচনা আছে। বড় দুই দলের নেতারা একে অন্যকে দায় দিয়েছেন।
বড়, মধ্যম ও ছোট ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রায় সব রাজনৈতিক দলেই দলীয় পদ-পদবি পাওয়া শুরু করেছেন। এ তিনটি দলে পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসায়ীরাই নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে সব পেশার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও প্রতিনিধিত্ব ছিল। পার্থক্য হলো এখন রাজনীতি ও সংসদে অন্য পেশার লোকের সুযোগ কমে যাচ্ছে। সংসদে ও রাজনীতিতে বাড়ছে শুধু ব্যবসায়ীর সংখ্যা। দেশের বড় দলগুলোতে ভূরি ভূরি ব্যবসায়ী চালকের আসনে চলে গেছেন। নিশ্চয়ই রাজনীতির জন্য বেদনার সংবাদ এ সংস্কৃতি।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের হলফনামায় উল্লিখিত পেশা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৬১ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের প্রথম সংসদে এ হার ছিল ১৮ শতাংশ। একাদশ সংসদে পেশায় রাজনীতি এমন সংসদ সদস্য আছেন মাত্র ৫ শতাংশ। দলভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের সদস্যদের ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। অন্যদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৫৬ শতাংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী। অন্য সব পেশা মিলিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন ২১ শতাংশ। অন্য পেশা মানে শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, গৃহিণী ও পরামর্শক।
৭৩-এর পরের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে সমাজসেবী, কৃষিজীবী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিসক, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব সংসদে কমেছে। একমাত্র ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে সংসদে। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচন থেকে ব্যবসায়ীদের বেশি হারে সংসদে আসার প্রবণতা বেড়েছে।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাজনীতি ও অন্যান্য পেশার সংসদে প্রতিনিধিত্ব কমতে থাকলেও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বেড়েছে। পার্শ^বর্তী দেশ ভারতের ১৭তম লোকসভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে রাজনীতিক ৩৯ শতাংশ আর ব্যবসায়ী ২৩ শতাংশ। অন্যান্য পেশার সংসদ সদস্য রয়েছেন ৩৮ শতাংশ।
বিভিন্ন দল ও পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যা দেখে বলা যায় রাজনীতিকদের ভেতরে হতাশা ঝেঁকে বসেছে। ব্যবসায়ীরা মনোনয়ন নিতেও দলকে টাকা দেন, মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনে টাকা ছড়িয়ে জিতে আসেন। এসব কারণে সার্বক্ষণিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতাদের জন্য রাজনীতি কঠিন হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুধু সংসদ সদস্যই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে গঠিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বেও থাকছেন ব্যবসায়ীরা।
আওয়ামী লীগের ৮১ কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যবসায়ী আছেন ২৩ জন। তাদের কয়েকজন সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এখন ব্যবসা করছেন। সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমন্ডলী ও কেন্দ্রীয় সদস্য পদে রয়েছেন। রাজনীতি ও ব্যবসা এ দুই পেশা মিলিয়েও আছেন কমিটিতে। ৪১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদে আছেন ১৬ জন। জেলা পর্যায়ের ৭৮টি সাংগঠনিক কমিটিতে শীর্ষ দুই পদসহ বিভিন্ন পদে তিন শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে তো আছেই। এ ছাড়া সহযোগী সংগঠনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ ব্যবসায়ীদের দখলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের একজন হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদ মিলিয়ে কমপক্ষে শতাধিক পদদারী নেতা আছেন। ব্যবসা করে পরিচিতি পাওয়া দলের সভাপতিম-লীর সদস্য পর্যন্ত আছেন।
ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দল ও সরকারকে আলাদা করার চেষ্টার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের মন্ত্রী করা হয়নি। কিন্তু দলের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য পাল্টা যুক্তি দিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ নীতি অনুসরণ করা হলে ব্যবসায়ীদের দলীয় পদ কেন? তাছাড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে দলের অন্তত তিন ডজনেরও বেশি নেতা মন্ত্রী পদে আছেন। সেই দল ও সরকার কি চলছে না।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবীণ নেতা ও বাংলাদেশের প্রথম সংসদের নির্বাচিত সদস্য ফজলুর রহমান ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, সময় বদলেছে। পেশাজীবীদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব সবসময়ই ছিল। তিনি দাবি করেন, ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছে, তারপর রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছে ব্যবসায়ীদের।
১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ ২০০১ সালের সপ্তম সংসদ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পঞ্চম সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব ছিল প্রায় ৩৯ শতাংশ। ষষ্ঠ সংসদে তা বেড়ে হয় প্রায় ৪৭ শতাংশ। সপ্তম সংসদে ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫৭ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দাবি করেন, ’৯১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া ব্যবসায়ীদের অনেকেই প্রথমে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে বিএনপির দিকে ঝোঁকেন। মনোনয়ন পেয়ে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। সব প্রার্থীই যেকোনো মূল্যে জিততে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। নির্বাচনে সবচেয়ে কালো টাকা ছড়ানোর সুযোগটিও ৯১ সালে নির্বাচন থেকে মূলত বেশি হয়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনও বলেন, রাজনীতিতে ব্যবসায়ী থাকা যাবে না এমন কোনো বিধান নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত যেকোনো কিছুই নেতিবাচক দিক আছে।
রাজনৈতিক নেতাদের ভাষ্যমতে, সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আর এ ভুল করেনি। আওয়ামী লীগও ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে সুফলও আসে আওয়ামী লীগের ঘরে।
তবে ৯১-এর নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকার কথা স্বীকার করলেও সে সময় সহনীয় পর্যায়ে ছিল দাবি করেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০০৮ সালের পর তা আর কারও নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। বরং সেটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন রাজনীতিবিদ নয়, ব্যবসায়ীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। যেটি কারও কাম্য ছিল না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে একজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন দুজন, যুগ্ম মহাসচিব পদে একজন, সহসাংগঠনিক পদে একজন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আছেন তিনজন যারা পেশায় ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সম্পাদক পদে আরও আছেন সাতজন। ২০৯ জনের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ব্যবসায়ী আছেন প্রায় ৫০ জন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করতেন। কিন্তু সে সময় এদের শতকরা হার ছিল খুবই কম। ’৯১ সালে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরও সেই শতকরা হার গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ছিল। তবে ২০০৮ সালের পর তা আর কারও নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। বরং সেটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন রাজনীতিবিদ নয়, ব্যবসায়ীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। যেটি কারও কাম্য ছিল না।
তিনি বলেন, এখন ক্ষমতার কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের আধিক্য। গত ১৪ বছরে এটি লাগাম ছাড়িয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা দেখছে টাকা দিলেই বিনা ভোটে এমপি-মন্ত্রী হওয়া যায়। সেই সুযোগ তারা ভালোভাবেই নিয়েছে। ফলে রাজনীতিবিদরা জনগণের কথা চিন্তা করে চাইলেও ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। এটি দেশের জন্য অবশ্যই ভালো লক্ষণ নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের একাধিক প্রবীণ রাজনীতিক মনে করেন, রাজনীতিতে ব্যবসায়ীরা যুক্ত হলে জনসাধারণের কল্যাণে তা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিক্য ঘটলে জনগণের জীবনমানে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র তার সক্ষমতার সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ নিয়ে ফেলেছে। যেকোনো মুহূর্তে দেউলিয়া হতে পারে দেশটি। এ অবস্থায় দেউলিয়াত্ব এড়াতে এরই মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ত্বরিত ‘অসাধারণ’ কিছু উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন বৃহস্পতিবার হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির কাছে লিখিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
চিঠিতে ইয়েলেন বলেছেন, নতুন করে সব ঋণ কার্যক্রম স্থগিতাদেশের মেয়াদ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। চলবে আগামী ৫ জুন পর্যন্ত। এ সময় অর্থ বিভাগ সিভিল সার্ভিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং প্রতিবন্ধী তহবিলের অংশ পুরোপুরি বিনিয়োগ করতে পারবে না। ট্রেজারি বিভাগ পোস্টাল সার্ভিসের অবসরপ্রাপ্তদের স্বাস্থ্য সুবিধা তহবিলে পরিমাণের অতিরিক্ত বিনিয়োগ স্থগিত করবে। তবে অবসরপ্রাপ্ত ফেডারেল কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা এর কারণে প্রভাবিত হবে না।
ইয়েলেন গত সপ্তাহে কংগ্রেসকে ‘ঋণ সীমা বাড়ানো বা স্থগিত করার জন্য একটি সময়োপযোগী পদ্ধতিতে কাজ করার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন, কারণ এটি করতে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো দেউলিয়াত্বের মুখে পড়তে পারে। এতে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। এরই প্রেক্ষাপটে হোয়াইট হাউজ শুক্রবার কংগ্রেসকে ‘শর্ত ছাড়াই’ ঋণের সীমা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ নেওয়ার অর্থ হলো, দেশটির কংগ্রেস বৈদেশিক-দেশি ঋণ নেওয়ার সীমা বেঁধে দিয়েছিল তা প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। জ্যানেট ইয়েলেন জানিয়েছেন, দেশটির মোট ঋণ এখন ৩১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। তিনি ম্যাককার্থিকে লেখা চিঠিতে বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে কংগ্রেসকে অনুরোধ করছি যেন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ বিশ্বাস ও কৃতিত্ব রক্ষার জন্য অবিলম্বে কাজ শুরু করা হয়।’ প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র কখনো ঋণখেলাপি হয়নি। তবে গত ২৫ বছরে মধ্যে অর্থাৎ ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটি প্রায় প্রতি বছরই ঋণ নেওয়ার সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়িয়েই গেছে। এ সময়ের মধ্যে দেশটি অন্তত ২২ বার সর্বোচ্চ ঋণ নেওয়ার সীমা বাড়িয়েছে।
হোয়াইট হাউজের এক সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, এপ্রিলের মাঝামাঝি করের সময়সীমার পরে ঋণের সীমা বাড়ানোর নতুন একটি বিলের জন্য আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেবে।
স্পিকার ম্যাকার্থি অবশ্য মেডিকেয়ার এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো প্রোগ্রাম কাটছাঁটের আহ্বান জানিয়েছেন। কিছু রিপাবলিক সাংসদও ঋণের সীমা বাড়ানোর আগে ব্যয় হ্রাসের বিষয়ে একমত।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণতন্ত্র বিনষ্টকারী বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের বুলি শোভা পায় না। আমাদের গণতন্ত্র আমরাই চালাব। বিদেশি কারও ফরমায়েশে চলবে না। তিনি বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রের বস্ত্রহরণ করেছে। তাদের মুখে গণতন্ত্রের বুলি মানায় না। এ দেশে গণতন্ত্রের যত অর্জন, ৭৫-পরবর্তী গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে অগ্রভাগে ছিলেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই গণতন্ত্র শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও শেখ হাসিনা গণতন্ত্র বিকাশে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’ খবর বাসসের।
ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মৃত ইস্যু উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক। সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। সরকারের পরিবর্তন চাইলে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
কাদের বলেন, যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকা আওয়ামী লীগের সাত দশকের ইতিহাস, এটাই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করে না, ষড়যন্ত্রের শিকার হয়, আওয়ামী লীগ হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না কিন্তু বারবার হত্যা রাজনীতির শিকার হয়। এটাই বাস্তবতা। বিএনপি কখন যে কী বলে! তাদের ভেতরে গণতন্ত্র নেই। সম্মেলন হয় না কতদিন তাদের। নিজেরাই কমিটি দেয়। তারা কীভাবে গণতন্ত্র শেখাবে আওয়ামী লীগকে? তাদের আমলে ভোটচুরির রেকর্ড হয়েছে, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার করেছিল, ওয়ান ইলেভেনের এটা অন্যতম কারণ।’
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
বক্তারা বলেন, যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক কিংবা বিপদ-আপদে মানুষের পাশে থাকে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকলেও পাশে থাকে। এ জন্য বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগকে নিজেদের দল মনে করে।
ক্ষমতীনরা জিয়াউর রহমানকে, জিয়ার পরিবারকে এবং তার প্রতিষ্ঠিত দলকে ভয় পায়, যার কারণে বিএনপির ডাকা গণসমাবেশকেও ভয় পায় এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি করতে দিতে চায় না। আওয়ামী লীগের অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে নয়, জনগণের বিরুদ্ধে।’
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষ আওয়াজ তুলেছে তারা গণতন্ত্র হত্যাকারীদের আর ভোট দেবে না। লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করে যারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তারা অর্থনীতিকে আর মেরামত করতে পারবে না। যারা দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে, তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে পারবে না।’
পেশাজীবীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আপনাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং অবদানের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রত্যাশা এ সরকারকে বিদায় করে বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারকে বিদায় করার কোনো বিকল্প নেই। বিদায় করার জন্য আমরা ১০ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ যাতে গঠিত হয়, সে জন্য রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ২৭ দফা ঘোষণা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে আওয়ামী লীগ, সেখানে গণতন্ত্রের কোনো অবস্থান নয়। যেখানে আওয়ামী লীগ, সেখানেই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। যেখানে বিএনপি, সেখানেই গণতন্ত্রপূর্ণ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।’
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, কবি আব্দুল হাই শিকদার, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ।
দিনের বেলায় রাজধানীতে শীতের তীব্রতা কম থাকলেও বিকেল থেকে কমতে শুরু করে তাপমাত্রা। কয়েক দিন ধরে একই অবস্থা চলছে। অন্যদিকে দেশের ১৬ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে। গতকাল শুক্রবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তিন বছরের মধ্যে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ভোলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বেশির ভাগ বড় শহর থেকে শৈত্যপ্রবাহ প্রায় নেই হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ঘনবসতি, কংক্রিটের উঁচু ভবন আর জলাশয় ও সবুজ কম থাকায় শহরের তাপমাত্রা গ্রামের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে। ফলে শহরের পাশের এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও মূল শহরের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছে না।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল চলতি মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এই তাপমাত্রা রেকর্ড করে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা নিচের দিকে থাকায় সকাল সকাল সূর্য উঠলেও অনেক বেলা পর্যন্ত কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েক দিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে এ অঞ্চলে। শৈত্যপ্রবাহে দুর্ভোগে পড়েছে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষজন ও চা-শ্রমিকেরা। গত বুধবার থেকে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠা-ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে আরও কয়েক দিন।
একই অবস্থা নীলফামারীতে। উত্তরের হিম বাতাসের কনকনে ঠা-া অব্যাহত থাকায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ১৫ দিন ধরে এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম বলেন, নীলফামারীর তিস্তা নদীবিধৌত তিস্তাপাড়ের ডিমলা উপজেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্র ৮ ডিগ্রি এবং সৈয়দপুর উপজেলায় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, উত্তরাঞ্চলের এই জেলা হিমালয় থেকে আসা উত্তরের সমীরণ। এ কারণে শীতের অনুভূতি তুলনামূলক বেশি থাকে। সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে এবং ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। এ ছাড়া ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নেমে এলে তা মাঝারি আকারের এবং এর নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।