
ক্ষমতীনরা জিয়াউর রহমানকে, জিয়ার পরিবারকে এবং তার প্রতিষ্ঠিত দলকে ভয় পায়, যার কারণে বিএনপির ডাকা গণসমাবেশকেও ভয় পায় এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি করতে দিতে চায় না। আওয়ামী লীগের অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে নয়, জনগণের বিরুদ্ধে।’
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষ আওয়াজ তুলেছে তারা গণতন্ত্র হত্যাকারীদের আর ভোট দেবে না। লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করে যারা দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তারা অর্থনীতিকে আর মেরামত করতে পারবে না। যারা দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে, তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে পারবে না।’
পেশাজীবীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আপনাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং অবদানের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রত্যাশা এ সরকারকে বিদায় করে বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারকে বিদায় করার কোনো বিকল্প নেই। বিদায় করার জন্য আমরা ১০ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ যাতে গঠিত হয়, সে জন্য রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ২৭ দফা ঘোষণা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে আওয়ামী লীগ, সেখানে গণতন্ত্রের কোনো অবস্থান নয়। যেখানে আওয়ামী লীগ, সেখানেই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। যেখানে বিএনপি, সেখানেই গণতন্ত্রপূর্ণ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।’
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, কবি আব্দুল হাই শিকদার, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ।
জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ার প্রবণতা বহুদিন আগেই আলোচনার কেন্দ্র থেকে সরে গেছে। বামপন্থিদের সভা-সমাবেশে মাঝেমধ্যে আগে শোনা যেত, এখন সেটাও কমে এসেছে। বরং এখন রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের যে আধিপত্য শক্ত হচ্ছে সেটা নিয়েই বিভিন্ন মহলে আলোচনা আছে। বড় দুই দলের নেতারা একে অন্যকে দায় দিয়েছেন।
বড়, মধ্যম ও ছোট ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রায় সব রাজনৈতিক দলেই দলীয় পদ-পদবি পাওয়া শুরু করেছেন। এ তিনটি দলে পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসায়ীরাই নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে শুরু করেছেন।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে সব পেশার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও প্রতিনিধিত্ব ছিল। পার্থক্য হলো এখন রাজনীতি ও সংসদে অন্য পেশার লোকের সুযোগ কমে যাচ্ছে। সংসদে ও রাজনীতিতে বাড়ছে শুধু ব্যবসায়ীর সংখ্যা। দেশের বড় দলগুলোতে ভূরি ভূরি ব্যবসায়ী চালকের আসনে চলে গেছেন। নিশ্চয়ই রাজনীতির জন্য বেদনার সংবাদ এ সংস্কৃতি।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের হলফনামায় উল্লিখিত পেশা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৬১ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের প্রথম সংসদে এ হার ছিল ১৮ শতাংশ। একাদশ সংসদে পেশায় রাজনীতি এমন সংসদ সদস্য আছেন মাত্র ৫ শতাংশ। দলভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের সদস্যদের ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। অন্যদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৫৬ শতাংশ সংসদ সদস্যই ব্যবসায়ী। অন্য সব পেশা মিলিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন ২১ শতাংশ। অন্য পেশা মানে শিক্ষক, চিকিৎসক, কৃষক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, গৃহিণী ও পরামর্শক।
৭৩-এর পরের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে সমাজসেবী, কৃষিজীবী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, চিকিসক, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব সংসদে কমেছে। একমাত্র ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে সংসদে। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচন থেকে ব্যবসায়ীদের বেশি হারে সংসদে আসার প্রবণতা বেড়েছে।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাজনীতি ও অন্যান্য পেশার সংসদে প্রতিনিধিত্ব কমতে থাকলেও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বেড়েছে। পার্শ^বর্তী দেশ ভারতের ১৭তম লোকসভায় সংসদ সদস্যদের মধ্যে রাজনীতিক ৩৯ শতাংশ আর ব্যবসায়ী ২৩ শতাংশ। অন্যান্য পেশার সংসদ সদস্য রয়েছেন ৩৮ শতাংশ।
বিভিন্ন দল ও পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব এমন পর্যায়ে চলে গেছে, যা দেখে বলা যায় রাজনীতিকদের ভেতরে হতাশা ঝেঁকে বসেছে। ব্যবসায়ীরা মনোনয়ন নিতেও দলকে টাকা দেন, মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনে টাকা ছড়িয়ে জিতে আসেন। এসব কারণে সার্বক্ষণিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতাদের জন্য রাজনীতি কঠিন হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুধু সংসদ সদস্যই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে গঠিত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্বেও থাকছেন ব্যবসায়ীরা।
আওয়ামী লীগের ৮১ কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যবসায়ী আছেন ২৩ জন। তাদের কয়েকজন সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এখন ব্যবসা করছেন। সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমন্ডলী ও কেন্দ্রীয় সদস্য পদে রয়েছেন। রাজনীতি ও ব্যবসা এ দুই পেশা মিলিয়েও আছেন কমিটিতে। ৪১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদে আছেন ১৬ জন। জেলা পর্যায়ের ৭৮টি সাংগঠনিক কমিটিতে শীর্ষ দুই পদসহ বিভিন্ন পদে তিন শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে তো আছেই। এ ছাড়া সহযোগী সংগঠনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ ব্যবসায়ীদের দখলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের একজন হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদ মিলিয়ে কমপক্ষে শতাধিক পদদারী নেতা আছেন। ব্যবসা করে পরিচিতি পাওয়া দলের সভাপতিম-লীর সদস্য পর্যন্ত আছেন।
ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দল ও সরকারকে আলাদা করার চেষ্টার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের মন্ত্রী করা হয়নি। কিন্তু দলের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য পাল্টা যুক্তি দিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ নীতি অনুসরণ করা হলে ব্যবসায়ীদের দলীয় পদ কেন? তাছাড়া প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে দলের অন্তত তিন ডজনেরও বেশি নেতা মন্ত্রী পদে আছেন। সেই দল ও সরকার কি চলছে না।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবীণ নেতা ও বাংলাদেশের প্রথম সংসদের নির্বাচিত সদস্য ফজলুর রহমান ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, সময় বদলেছে। পেশাজীবীদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব সবসময়ই ছিল। তিনি দাবি করেন, ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছে, তারপর রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছে ব্যবসায়ীদের।
১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ ২০০১ সালের সপ্তম সংসদ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পঞ্চম সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব ছিল প্রায় ৩৯ শতাংশ। ষষ্ঠ সংসদে তা বেড়ে হয় প্রায় ৪৭ শতাংশ। সপ্তম সংসদে ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫৭ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা দাবি করেন, ’৯১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া ব্যবসায়ীদের অনেকেই প্রথমে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। না পেয়ে বিএনপির দিকে ঝোঁকেন। মনোনয়ন পেয়ে জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। সব প্রার্থীই যেকোনো মূল্যে জিততে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। নির্বাচনে সবচেয়ে কালো টাকা ছড়ানোর সুযোগটিও ৯১ সালে নির্বাচন থেকে মূলত বেশি হয়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনও বলেন, রাজনীতিতে ব্যবসায়ী থাকা যাবে না এমন কোনো বিধান নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত যেকোনো কিছুই নেতিবাচক দিক আছে।
রাজনৈতিক নেতাদের ভাষ্যমতে, সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আর এ ভুল করেনি। আওয়ামী লীগও ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাতে সুফলও আসে আওয়ামী লীগের ঘরে।
তবে ৯১-এর নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকার কথা স্বীকার করলেও সে সময় সহনীয় পর্যায়ে ছিল দাবি করেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০০৮ সালের পর তা আর কারও নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। বরং সেটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন রাজনীতিবিদ নয়, ব্যবসায়ীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। যেটি কারও কাম্য ছিল না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে একজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন দুজন, যুগ্ম মহাসচিব পদে একজন, সহসাংগঠনিক পদে একজন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আছেন তিনজন যারা পেশায় ব্যবসায়ী। বিভিন্ন সম্পাদক পদে আরও আছেন সাতজন। ২০৯ জনের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ব্যবসায়ী আছেন প্রায় ৫০ জন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করতেন। কিন্তু সে সময় এদের শতকরা হার ছিল খুবই কম। ’৯১ সালে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পরও সেই শতকরা হার গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ছিল। তবে ২০০৮ সালের পর তা আর কারও নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। বরং সেটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন রাজনীতিবিদ নয়, ব্যবসায়ীরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। যেটি কারও কাম্য ছিল না।
তিনি বলেন, এখন ক্ষমতার কেন্দ্রে ব্যবসায়ীদের আধিক্য। গত ১৪ বছরে এটি লাগাম ছাড়িয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা দেখছে টাকা দিলেই বিনা ভোটে এমপি-মন্ত্রী হওয়া যায়। সেই সুযোগ তারা ভালোভাবেই নিয়েছে। ফলে রাজনীতিবিদরা জনগণের কথা চিন্তা করে চাইলেও ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। এটি দেশের জন্য অবশ্যই ভালো লক্ষণ নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের একাধিক প্রবীণ রাজনীতিক মনে করেন, রাজনীতিতে ব্যবসায়ীরা যুক্ত হলে জনসাধারণের কল্যাণে তা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের আধিক্য ঘটলে জনগণের জীবনমানে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র তার সক্ষমতার সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ নিয়ে ফেলেছে। যেকোনো মুহূর্তে দেউলিয়া হতে পারে দেশটি। এ অবস্থায় দেউলিয়াত্ব এড়াতে এরই মধ্যে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ত্বরিত ‘অসাধারণ’ কিছু উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন বৃহস্পতিবার হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির কাছে লিখিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
চিঠিতে ইয়েলেন বলেছেন, নতুন করে সব ঋণ কার্যক্রম স্থগিতাদেশের মেয়াদ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। চলবে আগামী ৫ জুন পর্যন্ত। এ সময় অর্থ বিভাগ সিভিল সার্ভিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং প্রতিবন্ধী তহবিলের অংশ পুরোপুরি বিনিয়োগ করতে পারবে না। ট্রেজারি বিভাগ পোস্টাল সার্ভিসের অবসরপ্রাপ্তদের স্বাস্থ্য সুবিধা তহবিলে পরিমাণের অতিরিক্ত বিনিয়োগ স্থগিত করবে। তবে অবসরপ্রাপ্ত ফেডারেল কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা এর কারণে প্রভাবিত হবে না।
ইয়েলেন গত সপ্তাহে কংগ্রেসকে ‘ঋণ সীমা বাড়ানো বা স্থগিত করার জন্য একটি সময়োপযোগী পদ্ধতিতে কাজ করার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন, কারণ এটি করতে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো দেউলিয়াত্বের মুখে পড়তে পারে। এতে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। এরই প্রেক্ষাপটে হোয়াইট হাউজ শুক্রবার কংগ্রেসকে ‘শর্ত ছাড়াই’ ঋণের সীমা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ নেওয়ার অর্থ হলো, দেশটির কংগ্রেস বৈদেশিক-দেশি ঋণ নেওয়ার সীমা বেঁধে দিয়েছিল তা প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। জ্যানেট ইয়েলেন জানিয়েছেন, দেশটির মোট ঋণ এখন ৩১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। তিনি ম্যাককার্থিকে লেখা চিঠিতে বলেন, ‘আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে কংগ্রেসকে অনুরোধ করছি যেন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ বিশ্বাস ও কৃতিত্ব রক্ষার জন্য অবিলম্বে কাজ শুরু করা হয়।’ প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র কখনো ঋণখেলাপি হয়নি। তবে গত ২৫ বছরে মধ্যে অর্থাৎ ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটি প্রায় প্রতি বছরই ঋণ নেওয়ার সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়িয়েই গেছে। এ সময়ের মধ্যে দেশটি অন্তত ২২ বার সর্বোচ্চ ঋণ নেওয়ার সীমা বাড়িয়েছে।
হোয়াইট হাউজের এক সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, এপ্রিলের মাঝামাঝি করের সময়সীমার পরে ঋণের সীমা বাড়ানোর নতুন একটি বিলের জন্য আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেবে।
স্পিকার ম্যাকার্থি অবশ্য মেডিকেয়ার এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো প্রোগ্রাম কাটছাঁটের আহ্বান জানিয়েছেন। কিছু রিপাবলিক সাংসদও ঋণের সীমা বাড়ানোর আগে ব্যয় হ্রাসের বিষয়ে একমত।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রী হলে সরকারি নানা সুবিধা মেলে এটা বলাই বাহুল্য। সেখানে পাঁচ বছরে এর কোনো কিছুই স্পর্শ করেননি তিনি। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেননি। ওঠেননি সরকারের বরাদ্দকৃত বাড়িতেও। বিদেশ সফরে মন্ত্রীদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকলেও তিনি চড়েছেন বিমানের সাধারণ আসনে (ইকোনমি ক্লাস)। দুপুরের খাবারের জন্য সরকারি দপ্তরের কোনো খরচ নেননি। খাবার নিয়ে আসতেন বাসা থেকে। পরিবারের সদস্যদের প্রতি নির্দেশনা ছিল, তারা কেউ পাঁচ বছর জাতীয় সংসদ ভবন ও সচিবালয়মুখো হবেন না। পাঁচ বছর মন্ত্রিত্বে থেকেও সুযোগ-সুবিধা এড়িয়ে এমন নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
সময়টা ২০০৯ সালের শুরুর দিকে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শফিক আহমেদ তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি। আগের বছরের শেষদিকে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের অপেক্ষায়। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবি তখন তুঙ্গে। একই সঙ্গে আপিল বিভাগে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের শেষ (পাঁচজন তখন কারাগারে) ও রায় কার্যকর দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন প্রাজ্ঞ ও বিশ্বস্ত এবং আইনে পারদর্শী একজন ব্যক্তিত্বের। কাকে এ গুরু দায়িত্ব দেওয়া যায় এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহল তখন রীতিমতো গবেষণায় ব্যস্ত। এর কয়েক মাস আগে ব্যারিস্টার শফিক সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে কারান্তরীণ আওয়ামী লীগ সভাপতি (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনাকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ে রেখেছিলেন মুখ্য ভূমিকা।
শফিক আহমেদ বলেন, ‘আমাকে ডেকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করা হলো। বললাম, আমি তো রাজনীতি করি না। সংসদ সদস্যও হইনি। টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব এলো। বললাম, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ভেবে দেখি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলাম। এ জন্য রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের চেতনায় ফিরে যাওয়া আমার জীবনের স্বপ্ন। এটাই হয়তো সেই সুযোগ। কিন্তু পথটা এত সহজ ছিল না। কোনো ভুল করা চলবে না। সব চিন্তা করেই মন্ত্রিত্বের পদে আসি।’ তিনি যোগ করেন, ‘বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছি, তাই মন্ত্রিত্বের সুবিধা নিইনি মূলত বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও দেশের মানুষের প্রতি সম্মান রেখে।’
শফিক আহমেদের ভাষায়, ‘রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ও সাংবিধানিক বিষয়ের সুরাহার উদ্দেশ্যে দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছিলাম। শর্তই ছিল এ জন্য কোনো বেতন ও সুবিধা নেব না। আমি কিংবা আমার পরিবার মন্ত্রিত্বের সুবিধা উপভোগ করব এমন চিন্তা করে আসেনি। জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়। তাদের কষ্টের টাকা খরচ করতে মনে সায় দেয়নি।’
৮৬ বছর বয়সী এ মানুষটি এখন জীবনের গোধূলি বেলায় দাঁড়িয়ে। দেশের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী ও সংবিধান বিশ্লেষক। ৫৭ বছর ধরে উচ্চ আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা থাকলেও প্রিয় কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টে যান মাঝেমধ্যেই। আইন ও বিচারাঙ্গনে থাকা সমস্যা নিয়ে মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে কথা বলেন। দেশের মানুষ কীভাবে দ্রুততম সময়ে বিচার পাবেন, কাউকে আদালতে দিনের পর দিন ঘুরতে হবে না, এ নিয়ে পথ বাতলে দেন।
বিশিষ্টজনরা প্রায়ই বলেন, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিরল চরিত্রের মানুষ। ক্ষমতা, লোভ তাকে স্পর্শ করেনি কখনো। আইন, বিচারাঙ্গনের মানুষরা বলেন, নানা ক্ষেত্রে ভূমিকার জন্য শফিক আহমেদ আইনজীবী সমাজের গর্ব। তিনি আইন, সংবিধান ও কর্মক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবীকে মূল্যায়ন করে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শফিক আহমেদ একজন বড় আইনজীবী। দেশের আইন ও সাংবিধানিক ব্যাখ্যায় ওনার অবদান অপরিসীম। এখনো তিনি এ ভূমিকা রাখছেন। উনি যখন মন্ত্রী ছিলেন, সে সময়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সময় যেভাবে তিনি অকুতোভয়ে আইনি লড়াই করেছেন তা প্রত্যেক আইনজীবীর কাছেই গর্বের বিষয়। সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় তিনি ভূমিকা রেখেছেন। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আইন প্রণয়ন ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে তার ভূমিকা জাতি অবশ্যই স্মরণে রাখবে।’
সম্প্রতি রাজধানীর ইন্দিরা রোডের বাসায় শফিক আহমেদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তার স্ত্রী মাহফুজা খানম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি (১৯৬৬-৬৮)। ঐতিহ্যবাহী ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। একুশে পদক ও বেগম রোকেয়া পদকজয়ী মাহফুজা খানম ঢাকা বিশ্ব^বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, খেলাঘরের চেয়ারপারসনসহ নানা সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত। বড় ছেলে ডা. মাহফুজ শফিক, ছোট ছেলে ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক ও মেয়ে ডা. মাশরুরা শফিক নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত। প্রচারবিমুখ শফিক আহমেদ প্রচারে আসতে চান না। কিন্তু নানা কীর্তির কারণে প্রচারের আলো তাকে এখনো খুঁজে ফেরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়াটিক সোসাইটি, নটর ডেম কলেজ, ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিকস, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অন্তত ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত আছেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও অধ্যাপক মাহফুজা খানম দম্পতি। দুজনের যৌথ নামে ২০০৩ সাল থেকে মানিকগঞ্জের (মাহফুজা খানমের গ্রামের বাড়ি) ১৫৪টি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে প্রতি বছর বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার নারায়ণপুর গ্রামে শফিক আহমেদের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘বেগম ইয়াকুবুন্নেসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এখন জেলার সেরা প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।
সংবিধানকে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের চেতনায় ফিরিয়ে নিতে না পারার আক্ষেপ আছে শফিক আহমেদের। দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন না হওয়াও পোড়ায় তাকে। তিনি বলেন, ‘আমি তো তিনটি গুরুদায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই দায়িত্ব নিয়েছিলাম। তবে, একটি দায়িত্ব (সংবিধানকে ৭২-এ চেতনায় নিয়ে যাওয়া) পালন করতে পারিনি। এটি আরও আগেই করা উচিত ছিল। আমি আশাবাদী একটু কঠিন হলেও এটি অসম্ভব নয়। কারণটা হলো, সংবিধান একটি রাষ্ট্র ও জনগণকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। এ পথ দেখানোর মধ্যে যেন কোনো ভুলভ্রান্তি না হয়। এখন এর সঙ্গে যারা যুক্ত তারা নিশ্চয়ই সেটি বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরের বেশি সময় পার হয়েছে। রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, আইন-আদালতসহ সব ক্ষেত্রে কিছু উন্নতি অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হলে সেই উন্নতির সুফলটা রাষ্ট্রের মালিক জনগণ আরও বেশি পেত। বিচার দ্রুত নিশ্চিতে একটা সূক্ষ্ম পরিবর্তন হলে বিচারপ্রার্থীর সুফল আসত। অপরাধও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসত।’
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলাম। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য চেষ্টা করেছি, অনেকটা সফলও হয়েছি। মন্ত্রী থাকতে বেতন থেকে শুরু করে কোনো সুবিধাই নিইনি। এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে, চাইলে সবই সম্ভব। আমি মনে করি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একজন রাজনীতিবিদের বা মন্ত্রীর সততাটা খুবই জরুরি এবং সেটাই করা উচিত।’
স্বামী শফিক আহমেদকে নিয়ে গর্ব করেন মাহফুজা খানম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৫০ বছরের বেশি সময় ধরে সংসার করছি। কখনো কোনো শঠতার আশ্রয় নেননি। আইন পেশায় জীবনে যে অর্থ উপার্জন করেছেন সংসার খরচ বাদে সব ব্যয় করেছেন মানুষ ও শিক্ষার কল্যাণে। যে কয়েকটি বছর মন্ত্রী ছিলেন, কোনো উপঢৌকন আসতে দেখিনি। মন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে আমাকে নানা সুবিধা দিতে অনেকেই এসেছিলেন। ফিরিয়ে দিয়েছি। তিনি (শফিক আহমেদ) অবাক হয়ে বলতেন, মন্ত্রীদের স্ত্রীদেরও গাড়ি-বাড়ি থাকতে হয় নাকি!’
তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রিত্বের পাঁচটি বছর একপ্রকার হুমকি ও মৃত্যু শঙ্কার মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ঘাড় বাঁচাতে আমাকে বিধবা হওয়ার ভয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু তিনি ছিলেন অটল।’
১৯৩৭ সালের ১৬ অক্টোবর কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার নারায়ণপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শফিক আহমেদ। ১৯৫৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বে সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৫ সালে মেধা তালিকায় ১২তম স্থান পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে একই বিশ^বিদ্যালয় থেকে পরে আইন বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৬৭ সালে বার অ্যাট ল ডিগ্রি নিয়ে আইন পেশায় নিয়োজিত হন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণতন্ত্র বিনষ্টকারী বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের বুলি শোভা পায় না। আমাদের গণতন্ত্র আমরাই চালাব। বিদেশি কারও ফরমায়েশে চলবে না। তিনি বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রের বস্ত্রহরণ করেছে। তাদের মুখে গণতন্ত্রের বুলি মানায় না। এ দেশে গণতন্ত্রের যত অর্জন, ৭৫-পরবর্তী গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে অগ্রভাগে ছিলেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই গণতন্ত্র শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছে। শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও শেখ হাসিনা গণতন্ত্র বিকাশে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’ খবর বাসসের।
ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে মৃত ইস্যু উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক। সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। সরকারের পরিবর্তন চাইলে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
কাদের বলেন, যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকা আওয়ামী লীগের সাত দশকের ইতিহাস, এটাই আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করে না, ষড়যন্ত্রের শিকার হয়, আওয়ামী লীগ হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না কিন্তু বারবার হত্যা রাজনীতির শিকার হয়। এটাই বাস্তবতা। বিএনপি কখন যে কী বলে! তাদের ভেতরে গণতন্ত্র নেই। সম্মেলন হয় না কতদিন তাদের। নিজেরাই কমিটি দেয়। তারা কীভাবে গণতন্ত্র শেখাবে আওয়ামী লীগকে? তাদের আমলে ভোটচুরির রেকর্ড হয়েছে, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার করেছিল, ওয়ান ইলেভেনের এটা অন্যতম কারণ।’
আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
বক্তারা বলেন, যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক কিংবা বিপদ-আপদে মানুষের পাশে থাকে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকলেও পাশে থাকে। এ জন্য বাংলার মানুষ আওয়ামী লীগকে নিজেদের দল মনে করে।
দিনের বেলায় রাজধানীতে শীতের তীব্রতা কম থাকলেও বিকেল থেকে কমতে শুরু করে তাপমাত্রা। কয়েক দিন ধরে একই অবস্থা চলছে। অন্যদিকে দেশের ১৬ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে। গতকাল শুক্রবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তিন বছরের মধ্যে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ভোলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বেশির ভাগ বড় শহর থেকে শৈত্যপ্রবাহ প্রায় নেই হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ঘনবসতি, কংক্রিটের উঁচু ভবন আর জলাশয় ও সবুজ কম থাকায় শহরের তাপমাত্রা গ্রামের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকছে। ফলে শহরের পাশের এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও মূল শহরের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছে না।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গতকাল চলতি মৌসুমে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এই তাপমাত্রা রেকর্ড করে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা নিচের দিকে থাকায় সকাল সকাল সূর্য উঠলেও অনেক বেলা পর্যন্ত কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েক দিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে এ অঞ্চলে। শৈত্যপ্রবাহে দুর্ভোগে পড়েছে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষজন ও চা-শ্রমিকেরা। গত বুধবার থেকে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠা-ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে আরও কয়েক দিন।
একই অবস্থা নীলফামারীতে। উত্তরের হিম বাতাসের কনকনে ঠা-া অব্যাহত থাকায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ১৫ দিন ধরে এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম বলেন, নীলফামারীর তিস্তা নদীবিধৌত তিস্তাপাড়ের ডিমলা উপজেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্র ৮ ডিগ্রি এবং সৈয়দপুর উপজেলায় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, উত্তরাঞ্চলের এই জেলা হিমালয় থেকে আসা উত্তরের সমীরণ। এ কারণে শীতের অনুভূতি তুলনামূলক বেশি থাকে। সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে এবং ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। এ ছাড়া ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নেমে এলে তা মাঝারি আকারের এবং এর নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।