
আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী তৃতীয় মেয়াদে আর রাষ্ট্রপতি থাকার সুযোগ নেই তার। ফলে ১০ বছর পর নতুন রাষ্ট্রপতি পাচ্ছে দেশ। যদিও ২৩ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হবে, কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী দুই মাস আগে অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সেই হিসেবে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগে বাকি আর ২২ দিন। এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে কে বসছেন রাষ্ট্রপতির চেয়ারে। বেশ কয়েকজন আছেন আলোচনায়। তবে এদের মধ্যে বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন। জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলোর পছন্দের প্রার্থী তিনি।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা ও শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি কে হবেন তা ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তারা মনে করেন, রাষ্ট্রপতি পদে চমক দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের টানা তিন মেয়াদে শেখ হাসিনা প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সংসদ এবং সবক্ষেত্রেই নারীর ক্ষমতায়নে চমক দেখিয়েছেন। তিনিই শিরীন শারমিন চৌধুরীকে প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। পরপর দুজনকে সংসদ উপনেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্পিকার হিসেবে এর আগে দুই মেয়াদে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। তারপর কে এই দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে ছিল ব্যাপক কৌতূহল। অনেকেই স্পিকার হতে চেয়েছেন। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে ড. শিরীন শারমিনকে স্পিকার করার সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রী। দলের ভেতরে-বাইরে কিছুটা আলোচনা ছিল, আবদুল হামিদের জায়গায় শিরীন শারমিন কতটা শক্ত অবস্থান করবেন। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শিরীন শারমিন নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি স্পিকার হন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি হওয়ার তালিকায় শিরীন শারমিন ছাড়াও জোর আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের মতো দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আছেন মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও বিদগ্ধ নেতা আমির হোসেন আমু, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নাম। এর বাইরে আলোচনায় আছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
গত বুধবার সংসদ ভবনের এলডি হলে এক কর্মশালা উদ্বোধনের পর চা-চক্রে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেনÑএমন প্রশ্নে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগে প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো অনেক যোগ্য লোক রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সম্ভাব্য সব তালিকায় আপনার নাম রয়েছে আপনি কি হচ্ছেন? জবাবে স্পিকার বলেন, আমি জানি না কেন আমার নাম আসছে। আমি এখানেও অনেক ভালো আছি। স্পিকার হিসেবে আমি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। আমার কাছে এই বিষয়ে কোনো খবর নেই।
তবে স্পিকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, আর ৯ বা ১০ মাসের মাথায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে সংসদের বাইরে দেশের বড় বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো এরই মধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশন এবং এই সরকারের অধীনে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শিবির থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চলছে। স্পিকার শিরীন শারমিন প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন এবং তিনি সংসদ ও সংবিধান সম্পর্কে ভালো জানেন। তা ছাড়া স্পিকার থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার রেওয়াজ এই সংসদে অনেক রয়েছে। স্পিকার থেকেই বিএনপির সময় ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। আবদুল হামিদও স্পিকার থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।
দলীয় শীর্ষ নেতারা মনে করেন, দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের দায়িত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা দেশে বিদেশে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। নারী রাষ্ট্রপতি দিয়ে আরেকটি রেকর্ড করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদ থেকে বিএনপির সদস্যরা ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। ফলে তাদের কোনো প্রার্থী থাকার সুযোগ নেই। আর সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে তাদের যদি নিজস্ব কোনো প্রার্থী না থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগদলীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মানে সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কারণ এই রাষ্ট্রপতির আমলেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক এই পদটি নিয়ে এত আলোচনা।
নির্বাচন কমিশন ও সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
## যেভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়
সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তফসিল ঘোষণাসহ এ নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনী কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে জমা দিতে হবে। সংসদ সদস্যরা ভোট দেওয়ার পর সংসদ কক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক বাক্সে তা জমা দেবেন। একজন সদস্য একটা ভোট দিতে পারবেন। স্পিকারও এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিকসংখ্যক ভোটপ্রাপ্তই রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ পাবেন। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে। আর একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী যদি হয়ে থাকেন, তাহলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের পক্ষ থেকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একজনকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়ে থাকে। ১৯৯০ সাল থেকে ২১তম রাষ্টপতি আবদুল হামিদ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ার মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদে যেহেতু আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই এবারও রাষ্ট্রপতি হিসেবে একাধিক প্রার্থীর নির্বাচন করার সুযোগ খুবই কম।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৫০(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একাধিক হোক বা না হোক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। ২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল তৎকালীন স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পান। এর ফলে বর্তমান রাষ্ট্রপতি তৃতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। আর সেটি অবশ্যই সংবিধান অনুযায়ী হবে। বর্তমান সরকার সংবিধানের আলোকেই সবকিছু করছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে ভর্তি হন। তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের চাওয়া থাকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো হলে থাকার সুযোগ পাওয়া। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আবাসিক হল না থাকায় ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই সে সুবিধা পান না। মাত্র ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পান। এরমধ্যে ৫৯ শতাংশ ছাত্র ও ৪১ শতাংশ ছাত্রী। আর শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ আবাসিক সুবিধা ভোগ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২১ সালের তথ্য নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বছর ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল। এরমধ্যে তিনটি অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে প্রতিবেদনে ৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সুবিধার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিলেন ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৪৫ জন। এরমধ্যে আবাসন সুবিধা পান ১ লাখ ৪ হাজার ৮৫২ জন। অর্থাৎ শতকরা ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। আর ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ১৫ হাজার ২৩৬ জন। এরমধ্যে আবাসিক সুবিধা ভোগ করছেন ২১ শতাংশ শিক্ষক। আর ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৮৩৩ জন। এরমধ্যে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ কর্মকর্তা এবং ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ কর্মচারী আবাসিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন সময়ে এখানে আসন সংখ্যা বাড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ইউজিসির অনুমোদন দিয়েছে। ফলে সেখানে সব শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা নেই। এভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া আসন সংখ্যা বাড়ানোয় সংকট তৈরি হচ্ছে। আমি বলব, এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিকল্পিত নীতিই দায়ী।’
অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকেই যে আবাসিক সুবিধা দিতে হবে, তা আইনে নেই। কোনো শিক্ষার্থী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে সে জানে আবাসিক সুবিধা পাবে না। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তখন সে ধরেই নেয় সে আবাসিক সুবিধা পাবে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এমন জায়গায় গড়ে উঠেছে, তার আশপাশে থাকার জায়গাও তেমন নেই। আবার ঢাকায় হলে তাদের অনেক টাকা খরচ করে থাকতে হয়। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক সুবিধা থাকলে তার পড়ালেখার জন্য সুবিধা হয়।’
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আবাসন সুবিধার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আর শতভাগ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পান মাত্র দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর একটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যটি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৩ শতাংশ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৯ শতাংশ ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ৪৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মোট হল বা ডরমিটরির সংখ্যা ২৬০টি। এরমধ্যে ১৫৯টি হল ছাত্রদের জন্য, যেখানে থাকেন ৬১ হাজার ৭০১ জন। আর ১০১টি হল ছাত্রীদের জন্য, যেখানে থাকেন ৪৩ হাজার ১৫১ জন। সবচেয়ে বেশি ৩৬টি হল রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, এরপরও তাদের মাত্র ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দূরদূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা হলে থাকলে খুব কম টাকায় মাস চালাতে পারেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হল না থাকায় প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই গণরুম বা রাজনৈতিক রুমের সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের ৮ জনের একটি রুমেই গাদাগাদি করে ৪০ জন পর্যন্ত থাকেন। আবার এই সুযোগে ছাত্রনেতারা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিকভাবে রুমে তুলে মাসে বা বাৎসরিক টাকাও আদায় করে থাকেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলগুলোতে নানা ধরনের নৈরাজ্যের সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৩৭ হাজার ৪২৮ জন ও হল রয়েছে ২৩টি। এতে ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা আছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৯টি হলে ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫টি হল থাকলেও সেখানে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ শতাংশ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৪, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৩, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ৬, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ১৭, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে। এর বাইরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১১ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো কোনো ধরনের আবাসিক সুবিধা গড়ে ওঠেনি।
এছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাসিক সুবিধা পান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭ শতাংশ। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১ শতাংশ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ শতাংশ শিক্ষক আবাসন সুবিধা পান। কর্মকর্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাসন সুবিধা পান শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ শতাংশ। আর কর্মচারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাসিক সুবিধা পান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
রাজধানী ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নে একটি সংগঠনের সুপারিশের ভিত্তিতে ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে সম্প্রতি অফিস আদেশ জারি করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (রাজউক)। ড্যাপ বাস্তবায়নে গঠিত এই কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন আবাসন খাতের শিল্প উদ্যোক্তারা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশদ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আবাসন খাতের বড় সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরি। একই সঙ্গে শুধু একটি সংগঠনের সুপারিশের জন্য ওয়ার্কিং কমিটি না করে সংশ্লিষ্ট সবার যৌক্তিক প্রস্তাবনা গ্রহণের সুযোগ রাখলে ড্যাপ বাস্তবায়ন সহজ হতো। তারা বলছেন, ২০১০ সালের ড্যাপ বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল শিল্প-উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত না করা।
এ প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ওয়ার্কিং কমিটি হতে পারে সেটিকে স্বাগত। তবে সেটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে হওয়া উচিত। দেখা গেল বিএলডিএ বা রিহ্যাবের মতো বড় সংগঠন ভালো মতামত দিল, সেগুলো নিয়েও আলোচনার সুযোগ রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড্যাপের গেজেট হওয়ার পর থেকে আলোচনা-সমালোচনা ছিল। এটি থাকাটা স্বাভাবিক। তবে একটি সংগঠনের (আইএবি) ড্যাপবিষয়ক সুপারিশমালা নিয়ে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটিকে আমি স্বাগত জানাতে পারছি না। কারণ সেখানে বলা হয়নি ড্যাপ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যৌক্তিক মতামত নিয়ে আলোচনা হবে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোনো একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি ঠিক না। এমন মতামত অনেকেই দিয়েছে। মতামত আছে।’
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)সহ আবাসন খাতের বড় সংগঠনগুলোর মতামত নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বড় স্টেকহোল্ডাররা যদি ড্যাপ বাস্তবায়নে এগিয়ে না আসে, তবে রাজধানীকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলা কঠিন হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘এটা আসলে এরকম কোনো ওয়ার্কিং কমিটি নয়। স্থপতি ইনস্টিটিউট স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর কাছে কিছু দাবি করেছিল। তখন বলা হয়েছিল (মন্ত্রণালয় থেকে) যদি যৌক্তিক কিছু হয়, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ ড্যাপবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। কমিটি যদি যৌক্তিক মনে করে তখন বিবেচনা করা হতে পারে। এটা (গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি) আসলে অফিশিয়াল কিছু নয়। কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটির ওপর কাজ করে একটা খসড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে দিলে সেটার ওপর পরে যদি যৌক্তিক মনে হয়, তাহলে আলোচনায় (মন্ত্রিসভা কমিটিতে) আসবে। সুপারিশমালায় দুয়েকটি এলাকায় ভবনের উচ্চতা (এফএআর) বাড়ানোর বিষয় ছাড়া আর কিছু আছে কিনা আমি এখনো দেখিনি।’
ওয়ার্কিং কমিটিতে আবাসন খাতের সংশ্লিষ্ট বড় সংগঠনগুলোকে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তো আসলে কোনো কমিটি না। আন অফিশিয়ালি দেখার জন্য বলা হয়েছে। স্থপতি ইনস্টিটিউট মন্ত্রণালয়ে কিছু সুপারিশ দিয়েছে। তখন মন্ত্রী বলেছেন, ‘এগুলো একটু দেখেন।’ এখন আন অফিশিয়ালি বিষয়টি দেখা হবে। পরে অফিশিয়ালি সেটি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। রাউজকের কর্মকর্তারা বিষয়টা বুঝে উনাকে (মন্ত্রী) জানাবেন। পরে আরও কাউকে প্রয়োজন হলে উনি (মন্ত্রী) ডাকবেন। এটা আমাদের কিছু না। এখানে রাজউকের কিছু করার নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে জটিলতা (ড্যাপ নিয়ে) তৈরি হয়েছে সেটি ওনারা (গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি) দেখবে। রিহ্যাব বা অন্য কেউ চাইলে আবেদন (স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বরাবর) করতে পারেন। তিনি (মন্ত্রী) যদি আবার আমাদের বলেন আমরা আবারও দেখব। কারণ আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে বিষয়টা নেই।’
আবাসন খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ) ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
ড্যাপ নিয়ে রাজউকের গঠিত ওয়ার্কিং কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে বিএলডিএর মহাব্যবস্থাপক নওশেরুল আলম বলেন, ‘আলোচনার জায়গা রাখাটা প্রশংসনীয়। ওয়ার্কিং কমিটির মাধ্যমে নিশ্চয় স্টেকহোল্ডাররা যৌক্তিক প্রস্তাবনা উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন। তবে আবাসন খাতে ৮০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। যারা বিএলডিএ ও রিহাবের সঙ্গে জড়িত। যেকোনো নীতিনির্ধারণে এই দুই সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব না থাকলে সেটা অপূর্ণ থেকে যাবে বলে মনে করছি।’
আবাসন শিল্পের খাতে জড়িত সংশ্লিষ্টরা দাবি করেন, ২০১০ সালে প্রণীত পরিকল্পনায় শিল্পের প্রতিনিধি না থাকার কারণে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। গত বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ড্যাপের গেজেট প্রকাশ করে সরকার। তবে এবারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ না করে ড্যাপ অনুমোদন করায়।
সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে (বিইপিসিএল) স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ১ হাজার ২৩ কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার ৬১৮ টাকা শুল্ক মওকুফ করেছে।
গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প আইনের ৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, প্রকল্পে আর্থিক দলিল ও চুক্তির বিপরীতে আরোপ করা স্ট্যাম্প ডিউটির ওই অর্থ মওকুফ করা হয়েছে। এর আগেও কয়লাসহ বিভিন্ন তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কয়েক হাজার কোটি টাকা শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে।
তবে এ ধরনের সুবিধা দিয়ে সরকার বিশ্বব্যাপী পরিত্যক্ত ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কয়লাবিদ্যুৎকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ।
গতকাল শনিবার রাতে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার আন্তর্জাতিক ফোরামে বলছে, কয়লা থেকে সরে এসে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াবে। কিন্তু দেশের মধ্যে কাজ করে আরেক রকম। এটা পুরোপুরি দ্বিমুখী নীতি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক অনেক বেশি হলেও তা কমে না। কিন্তু কয়লাবিদ্যুতের সঙ্গে সম্পর্কিত কেন্দ্রের শুল্ক মওকুফ করা হয়। কয়লাবিদ্যুৎ করলে তাদের ঋণের কোনো সীমা নেই। এর অর্থ হলো ভর্তুকি দিয়ে আত্মধ্বংসী কর্মকান্ড চালানো। জনগণের জন্য যেটা দরকার, সেটা শুল্ক আরোপ করে নিরুৎসাহিত করা।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, জনগণের জন্য যেটা খুব দরকার, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলে এ ধরনের প্রকল্প কোনোভাবেই শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে পারে না; বরং কয়লাবিদ্যুতে শুল্ক আরও বাড়িয়ে পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এই সুবিধা দেওয়া উচিত।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, পরিবেশের জন্য ক্ষতি হওয়ায় সরকার ২০২১ সালে ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। আপাতত নতুন করে কয়লাবিদ্যুৎ নির্মাণ না করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে যেসব কেন্দ্রের নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে, সেগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত।
দেশে বিভিন্ন বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিকে শুল্ক-করসহ নানা ধরনের কর ছাড় দেওয়া হয়। ১৮৯৯ সালের স্ট্যাম্প আইন মানলে এসব কোম্পানিকে শত শত কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে দিতে হতো। কিন্তু ২০২২ সালের জুলাইয়ে এ আইন সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয়, কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর স্ট্যাম্প ডিউটি যা-ই আরোপযোগ্য হোক না কেন, এর পরিমাণ কোনোভাবেই ১০ কোটি টাকার বেশি হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় স্বার্থে এবং ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর যুক্তি দেখিয়ে স্ট্যাম্প ডিউটি মওকুফের জন্য কয়েক বছর আগে বিদ্যুৎ বিভাগের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কাছে আবেদন করে বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক মওকুফের আবেদনটি অনুমোদন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারি ভাষ্যমতে দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এ ধরনের কেন্দ্র কেন দরকার? তা ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক ভালো বিকল্প আছে। যেমন নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে তুলনামূলক কম খরচে, কম সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান করে সেই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও কয়লার চেয়ে সব দিক দিয়ে লাভ হবে।
বরগুনায় ৩০৭ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশের আইসোটেক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আইসোটেক ইলেকট্রিফিকেশন কোম্পানি লিমিটেড’ ও চীনের ‘পাওয়ার চায়না রিসোর্স লিমিটেড’।
কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে চুক্তি সই হয়। এই কেন্দ্র থেকে সরকার ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ কিনবে। চুক্তি অনুযায়ী, ৪৫ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে বিপিডিবির ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন (আইপিপি/পিপিপি) এ বি এম জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষে গত ৩১ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে। তবে কিছু আনুষ্ঠানিকতা এখনো বাকি আছে। আশা করছি, শিগগিরই এটা শেষ হবে। বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।’ স্ট্যাম্প ডিউটি মওকুফের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সাধারণত এ সুবিধা দেওয়া হয়। এর বাইরে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে যদি উল্লেখ থাকে তাহলেও ডিউটি মওকুফ করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তিতে কী ধরনের শর্ত আছে, সেটা না দেখে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে না।’
প্রকল্পটি থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় সংরক্ষিত বন টেংরাগিরির দূরত্ব চার কিলোমিটারের কম। আর বরগুনার পাথরঘাটার সংরক্ষিত লালদিয়া বনের দূরত্ব এক কিলোমিটারের কম হওয়ায় কয়লাভিত্তিক এই কেন্দ্র নির্মাণের শুরুতে আপত্তি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে।
রাজধানী ঢাকায় গত বছর বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ ছিল খাদ্যবহির্ভূত খাতে। খাবারে ছিল ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০১১ সালের পর গত বছর মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। শহরের এবং গ্রামীণ উভয় মূল্যস্ফীতিই বেড়েছে, যা বাংলাদেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের দুর্দশা বাড়িয়েছে।
এসব তথ্য জানিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেছে, মূল্যস্ফীতি বাড়ার পেছনে প্রায় ১৭টি পণ্য সরাসরি অবদান রেখেছে।
গতকাল শনিবার পণ্য ও সেবার মূল্যবিষয়ক প্রতিবেদন ২০২২ প্রকাশ উপলক্ষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। ঢাকা মহানগর (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়ে গঠিত) ১১টি বাজার থেকে ১৪১টি খাদ্যসামগ্রী, ৪৯টি খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং ২৫টি পরিষেবার দৈনিক দাম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল তথ্য উপস্থাপন করেন ঢাকার বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর। তার মতে, চাল, আটা, ডাল, বেকারি পণ্য, চিনি, মাছ, ডিম, দেশি মুরগি, ভোজ্য তেল, আমদানিকৃত ফল, চা ও কফি, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানি করা দুধ, পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী ও পরিবহনে খরচ বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
ড. মাহফুজ কবীর জানান, ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। রাজধানী ঢাকায় গত বছর সাধারণ পরিবারের তুলনায় নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর গড় মূল্যস্ফীতির চাপ (৯ দশমিক ১৩ শতাংশ) কম ছিল। বার্ষিক খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি (যথাক্রমে ১০ দশমিক ৪১ এবং ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ) কম ছিল। যদিও উভয় শ্রেণির পণ্য ও সেবা মৌলিক প্রকৃতির ছিল। এ ছাড়া মৌসুমি প্রভাব এবং বাজারে সরবরাহের পর্যাপ্ততার কারণে কিছু খাদ্যদ্রব্যের দাম ওঠানামা করে। ভোগের ঝুড়িতে খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার অংশ খাদ্যপণ্যের তুলনায় কম ছিল। খাদ্যবহির্ভূত জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি বেশির ভাগই স্থায়ী প্রকৃতির ছিল। তাই খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি খাদ্য মূল্যস্ফীতির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল।
গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি থেকে ‘সাধারণ’ মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। মে মাসে কিছুটা কমার পর তা আবার জুন থেকে বাড়তে শুরু করে।
জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ার পর হঠাৎ করে আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায় উল্লেখ করে ড. মাহফুজ কবীর আরও জানান, পরবর্তী দুই মাস বাড়ার পর ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসে। জানুয়ারির তুলনায় অক্টোবরে ‘সাধারণ’ মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি ছিল। মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কম ছিল, যা আগস্টে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। ডিসেম্বরে তা কমে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ক্যাবের তথ্য মতে, প্রধানত মৌসুমি সবজির সহজলভ্যতা, আমন ধানের বাম্পার ফলন এবং মাছ-মাংসের দাম কমে যাওয়ায় ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে। বছরের শুরু থেকে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়তে দেখা গেছে।
ক্যাবর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও নিম্ন আয়ের মানুষের আয় বাড়েনি। এই আয় বেড়েছে উচ্চবিত্তদের। করোনা-পরবর্তী অনেক মানুষের আয় কমেছে। মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে প্রভাব পড়েছে।’ দ্রব্যের দাম একবার বাড়লে আর কমার আশা করা যায় নাÑ এমন মন্তব্য করে তিনি মানুষের আয় ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের আয় যাতে বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে সংকট আরও বাড়বে।
ক্যাবের মতে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা করতে সরকারকে শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম বাড়ানো উচিত। বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাজার মনিটরিং বাড়ানো উচিত। সিন্ডিকেশন ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ক্যাব, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
বেশি লাভের আশায় কক্সবাজার ও টেকনাফের অনেক ইয়াবা কারবারি এখন মানব পাচারে যুক্ত হয়েছে। গভীর রাতে সাগর দিয়ে পাচার করা হচ্ছে নারী-পুরুষ ও শিশুদের। আবার কাউকে কাউকে বিমানেও পাচার করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবই টার্গেট করে পাঠানো হচ্ছে তাদের। মানব পাচার নিয়ে সম্প্রতি তৈরি করা একটি প্রতিবেদনে পুলিশ ৬৫টি দালাল চক্র সক্রিয় বলে উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়।
পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মালয়েশিয়ায় যেতে আগ্রহী বা মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে মহেশখালীর কুতুবজুমসহ বিভিন্ন গোপন আস্তানায় একত্র করে পাচারকারী চক্র। তাজিয়াকাটা ঘাট থেকে রাতেই যাত্রা করে বঙ্গোপসাগরের উখিয়ার সোনারপাড়া, টেকনাফের বাহারছড়া শীলখালী, নোয়াখালীপাড়াসহ এসব স্থান থেকে বোটে ওঠানো হয়। গভীর সাগরে অপেক্ষমাণ বিভিন্ন দেশের জাহাজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বোটগুলো। প্রতিটি বোটে পাচারকারী চক্রের অন্তত ১০ জন করে সদস্য থাকে। যাদের কাজ হচ্ছে হুমকি দিয়ে ও মারধর করে বিদেশগামীদের কাছ থেকে টাকা আদায় ও জিম্মি করে রাখা। অনেক সময় বোট ডুবে গেলে তারা সাঁতরে মাছ ধরার ডিঙিনৌকায় আশ্রয় নেয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে কুতুবজুমের তাজিয়াকাটা বসতি গড়ে নূর ওরফে বার্মাইয়া নূরের পরিবার। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তারা ইয়াবা পাচারে সক্রিয়। নূরের নেতৃত্বেই তার চার ভাই মিলে গড়ে তুলেছেন একটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের রয়েছে মিয়ানমার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। মিয়ানমারে থাকা আত্মীয়দের মাধ্যমে ইয়াবা এনে ইয়াবার সাম্রাজ্য গড়েছে চক্রটি। ভাড়া করা বোটের মাধ্যমে ইয়াবার চালান এনে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে। এই চক্রের সক্রিয় নেতৃত্বে রয়েছে মো. নূর, তার ভাই মো. সেলিম, তাদের দূরসর্ম্পকীয় ভাগিনা মো. সোহেল। কুতুবজুম পশ্চিম পাড়ার বাদশা মেম্বারের ছেলে আবদুর রহিম, তার ফুফাতো ভাই লুতু মিয়া জড়িত। এখন তারা ইয়াবা কারবার ছেড়ে মানব পাচারে জড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এ চক্রটি ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। পাঁচ বছর ধরে তারা মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। মূলত নূরের পরিবার রোহিঙ্গা হওয়ায় উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের বহু আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজন রয়েছে। এই সুযোগ ব্যবহার করে তারা মানব পাচারের কারবার করছে। নূরের ভাই মো. সেলিম ক্যাম্পে গিয়ে স্বজনদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরে যাওয়ার ফাঁদে ফেলে। মহেশখালীর কুতুবজুমের ওই চক্রে নূর, তার ভাইসহ অন্তত ১০ জন সক্রিয়। তা ছাড়া উখিয়ার সোনাপাড়ায় রয়েছে পাঁচজনের একটি চক্র। আর উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছে ২০ জনের বেশি। পাশাপাশি টেকনাফের রয়েছে কয়েকজন। মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে রয়েছে অন্তত ২০ জন। তারা জাহাজ সরবরাহসহ সবকিছু বিষয় ম্যানেজ করে। কিছুদিন আগে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির পর থেকে চক্রের প্রধান হোতা নূরসহ অন্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে বোটের মালিক কুতুবজুমের মৌলভী গফুরকে এলাকায় দেখা যায়।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কক্সবাজারে এক সরকারি সফরকালে মানব পাচারের দালাল চক্র ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের প্রতিবেদনে টেকনাফ ও কক্সবাজারে মানব পাচারে সক্রিয় ৬৫টি দালাল চক্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি চক্রে ১৫ থেকে ২৫ জন করে সদস্য রয়েছেন। চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ওই টাকার একটি অংশ প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্য পেয়ে থাকেন। সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ মানব পাচারের ট্রানজিট পয়েন্ট হলেও পাচারকারী চক্রের বিস্তৃতি রয়েছে মহেশখালী থেকে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর পর্যন্ত।
মহেশখালীতে পাচারকারী চক্রের প্রধান ‘ঘাঁটি’ হচ্ছে কুতুবজুম ইউনিয়ন। কয়েক বছর ধরে এসব চক্র পাচারে সক্রিয়। গত দুই মাসে চক্রগুলো কয়েকটি চালান পাচার করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর দালাল হিসেবে কাজ করছে ১৬ নম্বর ক্যাম্পের মো. সায়ীদের ছেলে রোহিঙ্গা মো. রফিক ও বাদশা মিয়ার ছেলে হারুনের নেতৃত্বে অন্তত ৫০ জন। চক্রের সদস্যরা টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও বাহারছড়া উপকূল দিয়ে বেশির ভাগ মানুষ মালয়েশিয়ায় পাচার করছেন। দালালচক্রের নেতৃত্বে আছেন শাহপরীর দ্বীপের ধলু হোসেন ও শরীফ হোসেন। অদৃশ্য কারণে ধলু ও শরীফ সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। টেকনাফের সাবরাং এলাকার আকতার কামাল, সাঈদ কামাল, মোয়াজ্জেম হোসেন; রামুর কালিমারছড়ার মোহাম্মদ হোসেন; শাহপরীর দ্বীপ মাঝরপাড়ার জায়েত উল্লাহ, সাব্বির আহাম্মদ, সাজেদা বেগম, আব্দুল্লাহ, ইউনুচ, কলিম উল্লাহ, আব্দুস শুক্কুর, ঘোলাপাড়ার শামসুল আলম, কবির আহমদ, হাজিপাড়ার মুজিব উল্লাহসহ অন্তত ২৫০ জনের নাম এসেছে। কক্সবাজার এলাকায় দালাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নরসিংদীর মো. শাহজালাল, নুর মোহাম্মদ প্রকাশ ইমরান, জিয়াউর রহমান; নারায়ণগঞ্জের রফিকুল ইসলাম, শহিদ উল্লাহ, আবদুস সাত্তার; চুয়াডাঙ্গার মো. আকিম, মো. কাশেম, আকিল উদ্দিন, সিরাজগঞ্জের সাত্তার মোল্লা; কুড়িগ্রামের মো. সালাম, সাতক্ষীরার আশরাফ মিয়া; বগুড়ার সাহাব উদ্দিন; যশোরের আবুল কালাম; মেহেরপুরের আহাম্মদ উল্লাসহ অন্তত ১৫০ জন। চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষকে নিয়ে টেকনাফের দালালদের হাতে তুলে দেন। এরপর ছোট ছোট ট্রলারে মাছ ধরতে যাওয়ার অজুহাতে রোঙ্গিাদের সঙ্গে তাদেরও পাচার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কুতুবজুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামাল বলেন, ‘কুতুবজুমকেন্দ্রিক মানব পাচারকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে এটা ঠিক। মূলত চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারী চক্রগুলোই মানব পাচারে সক্রিয়। কম ঝামেলায় বেশি টাকা আয়ের লোভেই ইয়াবা ব্যবসীয়রা শুষ্ক মৌসুমকে কেন্দ্র করে মানব পাচারে সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিষয়টি আমি বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে জানিয়েছি। ইয়াবা ও মানব পাচার রোধে আমার যা সহযোগিতা করা দরকার, প্রশাসন চাইলে আমি করব।’
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ইয়াবা কারবারিরা এখন মানব পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ইয়াবা কারবারের চেয়ে মানব পাচার করতে পারলে অর্থ পাচ্ছে বেশি। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিও অনেকাংশে কম। কক্সবাজার ও টেকনাফে মানব পাচারের ঘটনা বেশি। এ নিয়ে পুলিশের একটি সংস্থা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে দালাল চক্রের নাম উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
মানহানির মামলায় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর লোকসভার সদস্য পদও হারিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে তাতে তিনি ভীত নন, বরং উৎফুল্ল। নিজের অবস্থান থেকেও পিছু হটবেন না বলে ঘোষণাও দিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যখন পার্লামেন্টে আমার পরবর্তী বক্তব্য নিয়ে ভীত, তখন আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো। আমি তার চোখে ভয় দেখেছি। এ জন্যই তারা আমাকে পার্লামেন্টে বলতে দিতে চায় না।
গতকাল শনিবার দুপুরে কংগ্রেস সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গৌতম আদানির সঙ্গে বিপেজির সম্পর্ক নিয়ে তার অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শুরু থেকে তিনি যে প্রশ্ন করে চলেছেন, এখনো সেটাই করবেন। শিল্পপতি গৌতম আদানির গোষ্ঠীতে যে ২০ হাজার কোটি রুপি লগ্নি হয়েছে, সেই টাকার উৎস কী? তার সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কই-বা কী?
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্নাটকে এক সমাবেশে রাহুল ‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কী করে?’ মন্তব্য করেছিলেন। ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুরনেশ মোদির করা মানহানির মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয় সুরাটের এক আদালত। সাজা দিলেও রাহুলকে জামিন দেন বিচারক, উচ্চ আদালতে আপিল করতে, তার সাজা ৩০ দিনের জন্য স্থগিতও রাখা হয়। ওই সাজার ওপর ভিত্তি করে পরদিনই লোকসভা সচিবালয় কেরালার ওয়েনাড আসন থেকে নির্বাচিত রাহুলকে পার্লামেন্টে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এসব নিয়ে দেশজুড়ে কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে কংগ্রেস, তার মধ্যেই গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাহুল। তিনি বলেন, তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হোক, কিংবা জেলেই পাঠানো হোক, তিনি তার কাজ চালিয়ে যাবেন।
লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি ভারতে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ চেয়েছেন, বিজেপির এমন অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, আমার নাম সাভারকার নয়, আমি গান্ধী, ক্ষমা চাইব না।
লন্ডনে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে পার্লামেন্টে বলতে স্পিকারকে অনুরোধ করার কথাও জানান সাবেক এই কংগ্রেস সভাপতি।
বলেন, আমার পদক্ষেপ কেবল একটিই, তা হলো সত্যের জন্য লড়া এবং দেশের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে রক্ষা করা। আজীবনের জন্য আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করুক, আজীবনের জন্য জেলে পাঠাক, আমি লড়ে যাব।
রাহুল বলেন, আমি ভারতের জনগণের গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বরের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য এখানে এসেছি। এটাই করে যাব। আমি কারও ভয়ে ভীত নই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।