
স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সারা বিশে^র নজর কেড়েছে। সারা বিশে^র মতো বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিশ^ব্যাংকও। এ মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, শিক্ষায় উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসন বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ, যেখানে বিনিয়োগ সহযোগী হিসেবে এগিয়ে আসবে বিশ^ব্যাংক।
গতকাল রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ^ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সেলিব্রেটিং এ জার্নি টুগেদার : বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ফিফটিথ অ্যানিভার্সারি ইভেন্ট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক্সেল ভন ট্রটসেনবার্গ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি। অথচ ২০০০ সাল পর্যন্ত এ দেশের অর্থনীতির গতি ছিল খুবই ধীরগতির। এ সময় পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ৬ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি ছিল। এ সময়ে লাখো মানুষ দারিদ্র্যসীমা থেকে বেরিয়ে এসেছে। ১৯৭২ সাল থেকে বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে এ দেশের পথচলা শুরুর পর এখন দেশের মানুষের গড় আয় ২১ শতাংশ বেড়েছে। ফলে ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয় তারা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সফলতা কডিভ মহামারী নিয়ন্ত্রণ।
বাংলাদেশের সাফল্যের একটি দিক হলো জলবায়ু সংকটে ভুক্তভোগীদের রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ। বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র বানানোর এ মডেলটি প্রশংসনীয়। বিশ্বের জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা সব দেশকে এটি অনুসরণ করার পরামর্শ দেব। আগামীকাল মঙ্গলবার দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন ট্রটসেনবার্গ।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে এ দেশে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি। বিশ^ব্যাংক কানাডার সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে আলোচনা করে এদের জন্য ৫৯ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে। ট্রটসেনবার্গ বাংলাদেশের সঙ্গে ৫০ বছরের ফলপ্রসূ অংশীদারিত্ব উদযাপনকালে, বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাংকের দৃঢ় সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। পরে বিশ্বব্যাংকের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটালাইজেশনের একটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জও আছে। তবে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, ৭২ সালের পর এখন পর্যন্ত রপ্তানি আয় ১০ গুণ বেড়েছে।
অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা দেওয়া হবে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি নির্ভর করে বাংলাদেশের নেওয়া প্রকল্পের গুরুত্বের ওপর। আমরা এখন জলবায়ু ও শিক্ষায় জোর দিচ্ছি। এ ছাড়া সব দেশেই ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) মাধ্যমে সমান বিনিয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ প্রকল্প বিদেশি অর্থায়নে হয়। গত বছর অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) দেশগুলো থেকে অনেক মূলধন নিয়েছে বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রটসেনবার্গ বলেন, এ ইস্যুকে আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এটা এ দেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। সবাই আশা করছে তারা যেন রাজনৈতিকভাবে নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে। মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাব।
পদ্মা সেতুর বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়া ভুল ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতি বছর সারা বিশ্বের তিন শতাধিক প্রকল্প প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। এটিও সে তালিকাতেই পড়েছিল।
ট্রটসেনবার্গ বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশ অচিন্তনীয় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, কডিড-১৯, ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জের সময়ে আমরা বাংলাদেশকে এর উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশের উন্নয়ন শুরু। ৭২ সাল থেকে জিডিপির আকার ৭৪ গুণ বেড়েছে। ১৯৭২ সালে জিডিপির আকার ছিল ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমাদের দারিদ্র্যের হার কমে হয়েছে ২০ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলার। গড় আয়ু বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু, তবে আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি শেখ হাসিনা, এটা নিয়ে কারোর প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক অনেক সহায়তা করছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের পরবর্তী টার্গেট ২০৩১ সালে বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ স্মার্ট ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লাই সেক প্রমুখ।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বলেন, স্বাধীনতার সময়ের দরিদ্র দেশের পরিচয় থেকে এ দেশ বিশে^র দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সম্মানীয় পর্যায়ে। এ দেশের অগ্রযাত্রায় সবসময় অংশীদার হবে বিশ্বব্যাংক।
গত পাঁচ দশকের অসাধারণ যাত্রায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অংশীদার। ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য হয়। ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংক প্রথম প্রকল্প হাতে নেয়। যার মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি ও শিল্পের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণ ও বিদ্যুৎ খাতের সহায়তার জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের জরুরি পুনরুদ্ধার ঋণ দেওয়া হয়। একই সময়ে বিশ্বব্যাংক চারটি প্রকল্প পুনরায় চালু করে।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রমে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) আওতায় অনুদান, সুদবিহীন ঋণ এবং নমনীয় ঋণ হিসেবে প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৫৩টি চলমান প্রকল্পে প্রায় ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার তালিকাভুক্ত। কিন্তু বাস্তবে অস্তিত্ব নেই। অথচ সরকারি শুল্ক সুবিধার আওতায় বিদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। এমন ৫৩টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থার প্রাথমিক তদন্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের তথ্যও মিলেছে। এ ছাড়া আরও ৭১টি প্রতিষ্ঠান একই সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করার মাধ্যমে আর্থিক অনিয়ম ও অর্থ পাচারে যুক্ত বলে এনবিআরের তদন্তে জানা গেছে।
চিহ্নিত এই ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তদন্ত শেষে পর্যায়ক্রমে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব জব্দ করা হয়। এ ছাড়া ব্যবসার লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। আমদানি-রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক শিল্প ও এর সহযোগী শিল্পের প্রতিষ্ঠান। তাদের পাচার করা অর্থের পরিমাণ চিহ্নিত করতে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সদস্য এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেকটি প্রতিষ্ঠান একাধিক চালানে কম করেও ৫ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকার পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করেছে। অন্যদিকে একেকটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের পরিমাণও ৮ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকা বা তার বেশি। এই হিসাবে ১২৪ প্রতিষ্ঠান প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার পণ্য এনে অবৈধভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে এবং আরও প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাচার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে এসব পাওয়া গেলেও চূড়ান্ত হিসাবের কাজ চলছে। চূড়ান্ত হিসাবে অর্থের পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে।
এভাবে শুল্ক সুবিধায় কাঁচামাল এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়ার কারণে দেশি শিল্পে কী ধরনের প্রভাব পড়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশি শিল্প সব ধরনের রাজস্ব পরিশোধ করে পণ্য উৎপাদন করে বলে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি। অন্যদিকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানিতে শুল্ক দেওয়া লাগে না বলে খরচ কম হয়। তাই দাম কম থাকে। কম দামে পণ্য পাওয়ায় ক্রেতারা এসব পণ্য বেশি কেনে। অন্যদিকে দেশি পণ্য ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও এর সঙ্গে পেরে ওঠে না। ফলে দেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়ছে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ১৭ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি ১২৪ প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের (২০১৭-২০২১) আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখেছে। বিশেষভাবে কী পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি হয়েছে, কতটা উৎপাদন করা হয়েছে, রপ্তানির পরিমাণ কত, ব্যাংকে এলসি বা ঋণপত্রের মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ কোন কোন দেশের অনুকূলে পাঠানো হয়েছে, তদন্তে এসব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যে ৭১ প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে আছে, তারা কাঁচামাল আমদানি ও রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করেছে। যে পরিমাণের কাঁচামাল প্রয়োজন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। অন্যদিকে যা রপ্তানি করার কথা তার চেয়ে কম পরিমাণ এবং নামসর্বস্ব পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলোও বাইরে থেকে কিনে নামমাত্র পণ্য রপ্তানি করেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক ও সহযোগী শিল্প কারখানা ছাড়াও ইলেকট্রিক, প্লাস্টিক খাতের প্রতিষ্ঠান আছে। কাঁচামাল হিসেবে তারা আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়াম পেপার, লাইনার পেপার, পলিপ্রোপাইলিন (পিপি), বিএপিপি ও এডহেসিভ টেপ, প্লাস্টিক দানা, হ্যাঙ্গার, পলিথিন, সুতা, কাপড়, তারসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম আমদানি করেছে। কিন্তু সেসব কাঁচামাল কারখানায় না নিয়ে রাজধানীর নয়াবাজার, বংশাল, বকশীবাজার, হাতেম টাওয়ার, ধোলাইখাল, টঙ্গীতে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিরপুর ২ নম্বরের বেলুকুচি নিট ওয়্যার, আদাবরের ঠিকানায় কভারস অ্যান্ড কভার ইন্ডাস্ট্রি, শ্যামপুর কদমতলীর ইমপেকস প্যাকেজিং লিমিটেড, টঙ্গীর এম এম ওয়াশিং প্ল্যান্ট লিমিটেড, বনানীর বিমানবন্দর সড়কের পারসা লিমিটেড, বনানী জি ও এইচ ব্লকে রাইন ফ্যাশন লিমিটেড, টঙ্গীর ওয়েলড ড্রেসেস লিমিটেড, মিরপুর পল্লবী সেকশন ৭-এর মারকাভ ডিজাইনারস লিমিটেড, ঢাকার কোতোয়ালির ঠিকানায় ম্যানিলা পলিমার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডসহ ১২৪ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকানায় গিয়ে ৫৩টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাস্তবে কোথাও দোকান, আবাসিক ভবন, শপিং মল, ছাত্রী হোস্টেল, স্কুল পাওয়া গেছে। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার ঠিকানায় আফট্যাকস লিমিটেড অবস্থিত বলা হলেও বাস্তবে সেখানে রয়েছে দোকান।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শতভাগ রপ্তানিমুখী হিসেবে ১২৪টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত। উৎপাদনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হিসেবে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাদের দাবি, কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য রপ্তানিসংক্রান্ত একটি কাগজেও তাদের স্বাক্ষর নেই। তবে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, এসব ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর বাবুবাজারে বিক্রি করতে নেওয়ার সময় ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তারা বন্ড সুবিধা বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাগজসহ একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করে। এসব কাগজ এবি প্যাকেজিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান বন্দর থেকে খালাস করে এনেছিল। আটক পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ১৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে শুল্ক-করসহ দাম হয় প্রায় ২৬ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন চালানে এক বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকার পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করেছে।
শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদনে সরকার কাঁচামাল আমদানিতে ‘বন্ড সুবিধা’ নামে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। এই সুবিধা নেওয়া প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক দিতে হয় না। এই সুবিধা পেতে হলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। শর্তগুলোর অন্যতম হলো, শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামালের সবটা উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। উৎপাদিত সব পণ্য রপ্তানি করতে হবে এবং সামান্য কাঁচামালও খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে শাস্তি হিসেবে বন্ড সুবিধা বাতিল এবং ব্যবসায়ের লাইসেন্স স্থগিত হবে। আর্থিক অনিয়মের সমপরিমাণ অর্থ, রাজস্ব এবং জরিমানাসহ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। প্রয়োজনে কারখানার জমি, যন্ত্রপাতি জব্দ করা হবে। আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার আইনি সুযোগ আছে। শাস্তি হিসেবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা যাবে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১২৪টি প্রতিষ্ঠান আমদানিকৃত কাঁচামালের যে দাম উল্লেখ করে ঋণপত্র বা এলসি খুলে অর্থ পাঠিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে আমদানি করেছে তার চেয়ে কম দামের ও কম পরিমাণের পণ্য। আমদানিকারকরা গোপনে বিদেশে নিজস্ব মালিকানাধীন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান খুলে তার অনুকূলে দাম হিসেবে অর্থ পাঠিয়েছে। এ অবৈধ কারবারে ব্যাংক, বন্দর ও এনবিআরের কিছু অসাধু ব্যক্তিকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সাবেক কমিশনার এবং এনবিআর সদস্য ড. শহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করতে এনবিআর নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে আইনি প্যাঁচে অনেক সময় তাদের শাস্তির আওতায় আনতে সময় লেগে যায়। এ বিষয়ে আরও কাজ করার সুযোগ আছে।
বন্ড দুর্নীতি চিহ্নিত করতে প্রিভেন্টিভ, নিয়মিত ও বিশেষ অডিট করা হয়। এসব অডিটে প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পর চূড়ান্ত তদন্ত করা হয়। তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে মাস থেকে বছরও পার হয়ে যায়। এরপর শুনানির জন্য অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের তলব করা হয়। তারপর মামলা হয় এনবিআরের আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলা নিষ্পত্তিতে পার হয়ে যায় বছরের পর বছর। রায় হওয়ার পর যেকোনো পক্ষের উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। আটকে থাকা মামলার সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে বন্ড দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইন সংশোধনসহ এনবিআরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
দলকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দলকে শক্তিশালী করার জন্য সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার একাধিক নজির স্থাপন করেছে আওয়ামী লীগ। তবে এ নিয়ে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। তারা বলছেন, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ঝুঁকি মনে করলে সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন?
অবশ্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সংগঠন শক্তিশালী করার জন্যই যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সেই সিদ্ধান্ত দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে মূলত এমন মনে হলে সরে আসতে হয়। তারা বলেন, এমন কোনো বিধিনিষেধ নেই যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে বাস্তবায়ন করতেই হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রত্যেকটি দলের নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা থাকে। তেমনি সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য নানা পরিকল্পনায় এগিয়ে যেতে হয় আওয়ামী লীগকে। এ বিষয়টি পুরোপুরি সময় ও প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে।’
দলকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘটনায় দলের প্রাণশক্তি হিসেবে বিবেচিত আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বেশ অসন্তুষ্ট। কেন্দ্রীয় কোনো কোনো নেতা অসন্তুষ্ট থাকলেও প্রকাশ্যে বলার সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তারা। তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাব জানা গেছে।
দলটির সভাপতিমন্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে না পারার কারণে দলের শৃঙ্খলাও ধরে রাখা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ওই নেতার দাবি, যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে মনে করা হয় সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন?
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা দাবি করেন, জেলা-উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দল বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত। দলীয় ঐক্য নষ্ট হওয়ার অন্যতম একটি কারণও সিদ্ধান্তে অটল থাকতে না পারা। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরে এলে অপরাধীরা অপরাধ করতে ভয় পায় না। গত এক যুগে বেশি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগে।
তারা মনে করেন, এ কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার দলীয় ঐক্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনের আগে ঐক্যের এ মিশন কতখানি সফল হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভেতরে। কারণ ত্যাগী ও আদর্শে অটল নেতাকর্মীদের হাতে এখন দল নেই। ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগ এখন পাঁচমিশালি নেতাকর্মীতে পূর্ণ। ক্ষমতার এক যুগে এই পাঁচমিশালি নেতাকর্মীদের শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে থাকা এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত ১৪ বছরে দলে একটি বড় প্রেশার গ্রুপ তৈরি হয়েছে। ওই গ্রুপটি ভুলভাল বুঝিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে নেতৃত্বকে চাপে রাখে। ফলে দলের নেতাকর্মী ও দলের বাইরে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে আস্থা রাখতে পারে না।
গত ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত চার বছরেই কমপক্ষে ২০টি সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা থেকে এসেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ৮১ সদস্যের এ কমিটির। অন্য ফোরামেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের স্বার্থে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেন। পরে কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সেসব চূড়ান্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতেও ওই সভা করতে হয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দল ও সরকার আলাদা হবে। এ নীতি অনুসরণের কারণে ১৪ দলীয় জোটের কোনো নেতাকেও রাখা হয়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৃতীয় দফার মন্ত্রিসভায়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে দলের আইন সম্পাদকের পদ ছাড়তে হয়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হক চৌধুরী নওফেল মন্ত্রীর চেয়ারে বসায় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ ছাড়তে হয়েছে। অপরদিকে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে থেকেও তারা মন্ত্রী।
গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যিনি সংসদ সদস্য হবেন তিনি তৃণমূলে কোনো পর্যায়ের কমিটিতে শীর্ষ দুই পদে থাকতে পারবেন না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয় আওয়ামী লীগ থেকে। ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার ৪০টিরও বেশি জেলায় সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন সংসদ সদস্যরাই। ওই সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে একাধিক জেলায় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক দুজনই দলীয় সংসদ সদস্য। উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতেও ওই সিদ্ধান্ত মানা হয়নি।
২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইন করা হয়। ওই আইনে ২০১৫ সালে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে স্থানীয় সকল পর্যায়ে নির্বাচন প্রথম শুরু হয়। ওই নির্বাচনে অধিকাংশ এলাকায় দল মনোনীত প্রার্থীকে তৃণমূল আওয়ামী লীগ সাদরে গ্রহণ করেনি। অথবা দলীয় সংসদ সদস্যের পছন্দ হয়নি নৌকা প্রতীক পাওয়া ওই প্রার্থীকে। ফলে দলেরই আরেকজন বিদ্রোহ করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে নেমে পড়েন। ওই স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী ও বিএনপির প্রার্থীরা বেশি জয়লাভ করে। দলীয় প্রতীকে প্রথম নির্বাচন হওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে তেমন কোনো শক্ত অবস্থানে যায়নি আওয়ামী লীগ।
বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূল আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে তৃণমূল থেকে ভোটাভুটি করে অথবা সমঝোতার ভিত্তিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। এজন্য ২০১৬ সালের জাতীয় সম্মেলনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। ওই বোর্ডের সভাপতিও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ওই বোর্ডই চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে। কেন্দ্র থেকে আরও বলা হয়, তৃণমূল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী যার নাম আগে আসবে তাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। কিন্তু দেখা যায়, তৃণমূলের তালিকায় নাম আসেনি কিন্তু মনোনয়ন পেয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারগুলোও তৃণমূলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। বিদ্রোহের লাগাম টানতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে তাদের দল থেকে বহিষ্কার ও প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। তৃণমূল পর্যায়ে তাদের বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রকে।
২০২১ সালে স্থানীয় সরকারের অধীনে সিটি করপোরেশন মেয়র, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ভোট শুরু হয়। ভোটে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা করেন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলতে স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন যে কেউ। তিনি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ জিতুক সেটা চায় না আওয়ামী লীগ। এই ঘোষণায় স্থানীয় নির্বাচনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে সকলে।
দলের শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ায় আওয়ামী লীগ আবারও সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। তবুও ভয়হীন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তারা মনে করতেন, ভোটে জিততে পারলে বহিষ্কার করা হবে না। ফলে নির্বাচন হলেই কেন্দ্র কঠোর অবস্থানে থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থীর লাগাম টানা যায়নি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশও আসে।
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা নাম প্রকাশে অনীহা জানিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই জেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয় গত ডিসেম্বরে। সেখানে তৃণমূল থেকে তিনজনের নাম পাঠানো হয়। পরে দেখা যায়, মনোনয়ন বোর্ড এমন একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে, যার নাম কেন্দ্রে পাঠানোই হয়নি।
সর্বশেষ গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করার দায়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার করা হয়। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। পরে মেয়রের দায়িত্ব থেকেও সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হন তিনি। কিন্তু অপরাধ ভিন্ন হলেও স্থানীয় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় তার বহিষ্কারাদেশও প্রত্যাহার করা হয়।
প্রণয় রায়কে কোথায় পাব? ২০০০ সালের শুরুতে এরকম একটা জিজ্ঞাসা নিয়ে আমি তখন ফোন করেছিলাম এনডিটিভিরই এক স্পোর্টস রিপোর্টারকে, যে প্রণয় রায়কে ব্যক্তিগতভাবে বহু বছর খুব ভালো চেনে, তার প্রতিষ্ঠানে বহু বছর চাকরি করেছে। মনে রাখতে হবে, এমন একটা সময় তখন, যখন সেলফোন সবে এসেছে বা আসেনি, সেই সময় কাউকে ধরার জন্য, এখন যেরকম একটা যন্ত্রই সতেরো সেকেন্ডে কাউকে ধরিয়ে দেয়, তখন তা সম্ভব ছিল না। আর প্রণয় রায়ের মতো বিখ্যাত কেউ হলে তো সেটা প্রায় অসম্ভব। আমি এনডিটিভিতে কয়েকবার ফোন করে নিষ্ফল চেষ্টার পর এই রিপোর্টারের শরণ নেই। তখন সে খোঁজটোজ নিয়ে জানাল, প্রণয় রায় এখন ট্রেনে করে দিল্লি থেকে বোম্বে যাচ্ছেন। আমি সে সময় একটা বই লিখি, যে বইটা ছিল অনেক প্রফেশনালের লেখার সংকলন। বইটার নাম ছিল সেলিব্রেটি এখন আপনিও। আমার কোথাও মনে হয়েছিল যে, এই বইটা যেহেতু টেলিভিশন দুনিয়ায় কী করে সফল হতে হবে এবং সফল হয়ে কীভাবে চলতে হবে তার ওপর একটা কম্পাইলেশন, সেখানে প্রণয় রায়ের কোনো কিছু থাকবে না এটা হতেই পারে না এবং সেই বইটাতে অনেকেই লিখেছিলেন। রাজদীপ, অর্ণব গোস্বামী, রজত শর্মা, তখন খুব বিখ্যাত আরজে রুবি ভাটিয়া, প্রিয়া টেন্ডুলকার। আমার মনে হয়েছিল যে, এই বইটার মুখবন্ধ, তারই করা উচিত, যিনি ভারতীয় টেলিভিশনের জনক এবং সেই কাজটা প্রণয় রায় ছাড়া আর কে করতে পারেন! কিন্তু আমি খুব আশ্চর্য শুনে, যে এনডিটিভির মালিক, তিনি কি না দিল্লি থেকে মুম্বাই যাচ্ছেন ট্রেনে করে! এবং শুনলাম ট্রেন থেকে তিনি মুম্বাইতে নেমে, আবার নাকি ট্রেনে উঠবেন। অর্থাৎ সারমর্ম হচ্ছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে আমি তাকে ধরতে পারব না। আমার জন্য যেটা তখনকার মতো সবচেয়ে অবাক লেগেছিল যে, টানা তিন দিন ট্রেনে চড়ে ভারতবর্ষ ঘুরছেন, এত বড় এমন একজন মানুষ যার কাছে প্রত্যেকটা সেকেন্ড দামি। তখন আমায় ওর সহকর্মীরা বললেন যে, উনি এরকমই মাঝেমধ্যে ট্রেনে করে ভারত দেখতে বেরিয়ে পড়েন। বহুকষ্টে প্রণয় রায়কে তারপর ধরা গিয়েছিল। মুখবন্ধটা উনিই লিখেছিলেন আমার বইয়ের। কিন্তু আমার বিস্ময় এখনো কাটেনি। এরকম একজন মিডিয়া ব্যারেন কী করে তার ব্যস্ততার মধ্যে ট্রেন ট্রাভেলের মতো একটা ইচ্ছাকৃত ঝুঁকি নিতে পারেন, ঝক্কি নিতে পারেন, যেখানে তিনি সহজেই দুই ঘণ্টায় মুম্বাই থেকে দিল্লি প্লেনে পৌঁছে যেতে পারেন। প্রণয় রায় নামটার সঙ্গে প্রথম পরিচয় আর সবার মতোই অনেক দূর থেকে। ‘ওয়ার্ল্ড দিস উইক’ বলে একটা অনুষ্ঠান থেকে এবং তখন দেখেই মনে হয়েছিল যে, ফেলুদার কখনো ইংলিশ ভার্সন হলে, সেখানে তার রোলটা করার পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত প্রণয় রায়। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, হাইট; ফেলুদা অবশ্য কখনো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রাখেননি, কিন্তু তিনি যে বাঙালি, ইন্টেলেকচুয়াল, যে মননের সঙ্গে ফেলুদাকে দেখতে অভ্যস্ত বা বাঙালি এক করে ফেলেছে, সেই পুরো ফেলুদার ভাবধারাটাই যেন প্রণয় রায় তার মধ্যে বহন করেন। অর্থাৎ তিনি অকুতোভয়। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তিনি শিক্ষিত এবং তিনি খুব সচল, খুব অ্যালার্ট। ওয়ার্ল্ড দিস উইক-এ তাকে দেখে যেরকম সারা ভারতবর্ষ মোহাবিষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তারপর আমরা তাকে দেখলাম ইলেকশন অ্যানালাইসিস করতে এবং তখনই একটা নতুন টার্মের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটল। যার নাম হচ্ছে সেফোলজিস্টস অর্থাৎ যিনি ইলেকশন ট্রেন্ডস এবং স্ট্যাটিসটিকস বিশ্লেষণ করেন। ভারতবর্ষে তার আগে, প্রাক-প্রণয় রায় যুগে যেমন পেশাদার টেলিভিশন ছিল না, তেমনি সেফোলজিস্ট শব্দটাও শোনা যায়নি। যাই হোক, প্রণয় রায় তারপর আমাদের সঙ্গে, নির্বাচনের আগে প্রাক-নির্বাচনী সিট পোল করা শুরু করলেন। নির্বাচনের পর বিশ্লেষণ শুরু করলেন এবং নতুন একটা ঘরানা নিয়ে এলেন যেটা এর আগে ভারতীয় টেলিভিশনে কেউ দেখেনি। এবং যেটার মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিতে অসম্ভব একটা আন্তর্জাতিকতা আছে। আমার তখন থেকেই মনে হতো যে, এই ভদ্রলোকের সঙ্গে যে করে হোক, আলাপ করতে হবে, আবার একই সঙ্গে মনে হতো যে, আলাপ হলে যদি মুগ্ধতা কেটে যায় তাহলে আলাপ না হওয়াই ভালো। দূর থেকে তাকে দেখাটাই ভালো। দুরকম একটা, স্ববিরোধী একটা ভাবনা নিজের মনের মধ্যে ঘুরত। এরপর প্রণয় রায় দেখালেন যে, তিনি শুধু এককভাবে স্টার নন। অর্থাৎ তার শুধু স্টার হলেই চলছিল। স্টার প্রণয় রায়ই যথেষ্ট ছিলেন ভারতবর্ষের জন্য যেভাবে তিনি বিল গেটসকে ইন্টারভিউ করেছেন, যেভাবে তিনি নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে কথা বলেছেন, যেভাবে তার শোগুলো বিশ্লেষণ করেছেন, কখনো কখনো বড় শো করতে এসেছেন লাইভ শো, সেটাই যথেষ্ট ছিল টেলিভিশনের পৃথিবীতে, তাকে পাকাপাকিভাবে রেখে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি ঠিক করলেন যে, তাকে শুধু ভারতীয় টেলিভিশনের অমিতাভ বচ্চন হলেই চলবে না, তাকে একই সঙ্গে হতে হবে ভারতীয় টেলিভিশনের রাজ কাপুর। তাই এনডিটিভি প্রতিষ্ঠা করে নিলেন, তার আগপর্যন্ত তিনি অনুষ্ঠানগুলো স্টারে করছিলেন, অন্য চ্যানেলে করছিলেন, এবার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান নিয়ে এলেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানে একটা, যেটাকে লেফট লিবারেল সেন্টিমেন্ট আমরা বলি, সেটার তো ধারক এবং বাহক হয়ে গেলেন গোটা ভারতবর্ষে, একই সঙ্গে অনেক তারার জন্ম দিলেন।
এ তারার জন্ম দেওয়া নিয়ে ভারতবর্ষের মিডিয়া জগতে দুই রকম মতবাদ আছে। বেশিরভাগ মিডিয়া ব্যারেন, তারা মনে করেন যে স্টার তৈরি করাটা বিপজ্জনক, কারণ স্টার আজ আছে, কাল অন্যের হয়ে তারাবাজি করবে। আমাকে ছেড়ে দেবে। তখন সেই তারাবাজির আলোটা আমাকে সহ্য করতে হবে। তার চেয়ে বাবা সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, আমি যদি কিছু স্ক্রিন প্রফেশনাল তৈরি করি যাদের বাহ্যিক সেরকম কোনো পরিচিতি নামডাক থাকবে না, কিন্তু যারা খুব এফিশিয়েন্ট হবে। যেটাকে আমরা অনেক সময় ক্রিকেটের ভাষায় বলি লাইন অ্যান্ড লেন বোলার। অর্থাৎ তার ফ্ল্যামবয়েন্স থাকবে না, সে অত্যন্ত পেশাদার হবে, মানে কাজটা তুলে দেবে। যদি সেরকম করি তাহলে সুবিধা হচ্ছে যে, সেই ধরনের পেশাদার সে যদি অন্য জায়গায় চলে যায় আমি আরেকটা পেশাদারকে নিয়ে আসতে পারব। কিন্তু যদি আমার এখান থেকে একটা রাজদীপ চলে যায়, কী অর্ণব চলে যায়, তাহলে আমার সমস্যা যে লোকে প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করবে যে, ও চলে গেল কেন? ও নেই কেন? তখন অনেক রকম আমার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ ভারতীয়, আবার বলছি, বেশিরভাগ ভারতীয় মিডিয়া ব্যারেন আজও তাই মনে করেন, ভারতের সবচেয়ে বড় খবরের কাগজ টাইমস অব ইন্ডিয়া তারা আজও ওই ঘরানায় বিশ্বাসী যে, স্টার তোলার দরকার নেই, তোলার দরকার আছে এফিশিয়েন্ট প্রফেশনাল, প্রণয় রায় এখানেও ইউনিক, তিনি এই ধারণাটা কমপ্লিটলি ভেঙে দিয়েছেন, এত সব স্তর তিনি তুলেছেন, যে ভারতীয় টেলিভিশনে সেকেন্ড কোনো নমুনাও নেই বোধহয়। এক থেকে দশ, দিকে দিকে কতগুলো নাম বলব? অর্ণব গোস্বামী, বরখা দত্ত, রাজদীপ, নিধি, রাজদান, রবিশ কুমার, শ্রীনিবাসন জৈন, বিক্রম চন্দ প্রত্যেকে একেকজন স্টার ভারতীয় মিডিয়া জগতের এবং ওদের প্রত্যেককে কিন্তু তুলেছেন প্রণয় রায়। অনেকেই ছেড়ে গেছেন, তাতে তার কিছু এসে যায়নি। তিনি স্টার তৈরির কারখানাতে একইরকমভাবে মনোনিবেশ করেছেন। পরের লোকটাকে বের করে আনার জন্য ইভেন এই চাপের মুখে অচঞ্চলতা এটাও প্রণয় রায়ের একটা হিউজ ট্রেডমার্ক। আমি কখনো দেখিনি কোনো ছবিতে, কখনো শুনিনি যে তিনি অত্যন্ত স্ট্রেসড হয়ে আছেন, নিশ্চয়ই স্ট্রেসড হয়েছেন গত কিছুদিন, কয়েক মাসের ঘটনা যে রকম যখন তিনি এনডিটিভি ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন, অবশ্যই স্ট্রেসের মুখে ছিলেন, কিন্তু কোথাও কখনো পাবলিকলি স্ট্রেসের ভাবটা দেখাননি, যাতে তার ডিগনিটিটা অক্ষুন্ন থাকে, এই পাবলিক লাইফে প্রচ- স্ট্রেসের মধ্যে ডিগনিটি বজায় রাখাটাও প্রণয় রায়ের একটা হিউজ হিউজ ট্রেডমার্ক এবং এটা অনুকরণযোগ্য। আমার একটা সময় বারবার মনে হতো যে প্রণয় রায়ের সঙ্গে কাজ করছি না কেন? কেন প্রণয় রায়ের কোম্পানিতে কাজ করার চেষ্টা করছি না? তারপর সবাই বলত যে, একটু প্রণয় রায়ের সঙ্গে কাজ করতে হলে অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজ থেকে পাস করতে হবে অথবা তাদের বাবাদের হতে হবে আইএফএস কিংবা আইএস, প্রণয় যাদের রিক্রুট করেন তাদের যদি আমরা দেখি তারা কোথা থেকে এসেছে, তাহলে দেখা যাবে তারা অত্যন্ত উচ্চবিত্ত সমাজ থেকে এসেছে।
প্রণয় রায়ের ওখানে একেবারে লোয়ার মিডল ক্লাস কেউ নেই, হয়তো কথাটা কতটা অসত্য, হয়তো কথাটা কিছুটা সত্য। কিন্তু আমি সাম হাউ আর কখনো চেষ্টা করিনি। দূর থেকে সবসময় একটা অদ্ভুত রেসপেক্ট এনডিটিভি গ্রুপ সম্পর্কে আমার এবং অন্য অনেক সাংবাদিককুলের বজায় ছিল যে, এরা হয়তো চাপের মুখে তাদের টেকনিক চেঞ্জ করেনি। তারা হয়তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছে না, অনেকে বলত যে এনডিটিভিতে ডিসকাশনগুলো খুব বোরিং হয়ে যাচ্ছে। হতে পারে কিন্তু তারা সাবেকি যে ছাঁচটা সাংবাদিকতার, সেটা টেলিভিশনের ঢঙ্কানিনাদে এসেও কিন্তু বজায় রেখেছিল। এবং এই চিৎকার-চেঁচামেচি, মারদাঙ্গা যেটা আধুনিক ভারতীয় টেলিভিশনের ট্রেডমার্ক হয়ে গেছে, সেটা থেকে বরাবর এনডিটিভি দূরে থেকেছে।
তাতে তাদের টিআরপি পড়েছে। তারা কেয়ারও করেনি। তারা মনে করেছে, আমরা এভাবে করতে চাই। এভাবেই করব। বাকি পৃথিবী যা ইচ্ছে বলুক, কিছু আসে যায় না। রাষ্ট্রপতি ভবনে এনডিটিভির একটা বিশাল অনুষ্ঠান হয়েছিল যখন প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি, সেটাতে অমিতাভ বচ্চন, শচীন টেন্ডুলকার, আশা ভোঁসলেসহ অনেকে এসেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানটা দেখতে দেখতে আমার মনে হচ্ছিল যে, একজন মানুষের কতটা হোল্ড থাকলে তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে তার চ্যানেলের এরকম একটা অনুষ্ঠান করতে পারেন। পরবর্তীকালে সেটা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।
প্রশ্ন উঠেছিল কী করে রাষ্ট্রপতি একটা প্রাইভেট চ্যানেলকে সেখানে অনুষ্ঠান করতে দিতে পারেন। কিন্তু আমার বারবার মনে হচ্ছিল যে, শ্রদ্ধার কোন পর্যায়ে গেলে, কন্টাক্টস কোন পর্যায়ে থাকলে, তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে তার ব্যক্তিগত চ্যানেলের এরকম একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন! মহেন্দ্র সিং ধোনি একটা সময় এনডিটিভির সঙ্গে ছিলেন এবং তখন এনডিটিভির দু-একটা অনুষ্ঠান করেছিলেন। আমার মনে আছে, ধোনি একবার সাউথ আফ্রিকায় বললেন, আরে এনডিটিভি কী করে করছে! এটাই প্রণয় রায়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য এ কথাটা যে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো মানুষ বলছেন! এটা ঠিক শোভা পায় না অর্থাৎ সবসময় এনডিটিভির একটা নির্দিষ্ট বেঞ্চমার্ক ছিল। সেটা হচ্ছে শাসকের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই। প্রশ্ন তোলা। সাহসী প্রশ্ন তোলা। আবার চাপের মুখে মাথা না নামানো, ওই যে বললাম একটা বামপন্থি লেফট লিবারেল দৃষ্টিভঙ্গি।
অনেকেই বলত যে, প্রণয়ের স্ত্রী রাধিকা রায়ের বোন যেহেতু বৃন্দা কারাত, সেজন্যই এ দৃষ্টিভঙ্গি। আমার কখনো তা মনে হয়নি। আমার মনে হয়েছিল প্রণয় রায়ের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি। একেবারে তিনি কলকাতায় হয়তো খুব বেশি সময় কাটাননি। কিন্তু কলকাতার ওই উদার বামপন্থি যে দৃষ্টিভঙ্গি, সেই উদার বামপন্থার সঙ্গে তার মনোভাব একেবারে একরকম। এবং সে জন্যই, বদলে যাওয়া ভারতবর্ষে তার বারবার করে সমস্যা হচ্ছিল এবং সমস্যা হওয়ার বোধহয় কথাও ছিল। কারণ তিনি যেটা বলছিলেন, শাসকরা বলছিলেন কমপ্লিটলি তার বিপরীত কিছু। এখনকার ভারতবর্ষের মিডিয়ায় বিপরীতমুখী আওয়াজটা আর কিছুদিন বাদে আমার ধারণা একমাত্র ফিল্মেই দেখা যাবে, ভারতবর্ষের টেলিভিশনে দেখা যাবে না।
আমার তো মনে হয় যখন এই ছবিগুলো দেখানো হবে যে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কী রকম লড়াই করেছিল, এককালে আনন্দবাজার গ্রুপ কী লড়াই করেছিল, টাইমস নিয়ে মাঝখানে গিয়ে লড়াই করেছে, এনডিটিভি দীর্ঘদিন ধরে কী লড়াই করেছে সেগুলো বোধহয় ইতিহাসের পাতাতেই চলে গেল। তাই বলে প্রণয় রায়! যিনি কখনো ইতিহাসের কথায় যাবেন না। প্রণয় রায় ইতিহাস হয়ে ইতিহাসের পাতায় থাকবেন। আমার মনে হয়েছে যখন একটা সময় জগমোহন ডালমিয়া রবি শাস্ত্রীকে ইন্ডিয়ান টিমের কোচ হতে বলছিলেন এবং তিনি কোচ হব কি হব না এটা নিয়ে নানান কথা বলছিলেন। তখন আমায় শাস্ত্রী বলেছিলেন যে, আমি তিনটে শর্ত দিয়েছি, একটা শর্ত যে টিম সিলেকশনের ভার আমাকে দিতে হবে। দুই, টিম সিলেকশনের ভার আমার যদি না থাকে, আমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মত থাকবে। তিন, চূড়ান্ত এগারোর ব্যাপারে আমার মতামত থাকবে। ফোর্থ, টিমের ফিটনেসের ব্যাপারে আমি কিছু কথা বলব। আমি তখন বলেছিলাম যে, আপনি ম্যানেজার হয়তো হবেন। কিন্তু আপনি থাকতে পারবেন না। কারণ আজাহারউদ্দিন। আপনি যদি এসব কথা বলেন তাহলে আজহারউদ্দিন আপনাকে ম্যানেজার রাখবেন না। উনি যেরকম পাওয়ারফুল, ডালমিয়ার সঙ্গে যেরকম সম্পর্ক, আপনাকে চলে যেতে হবে। তখন শাস্ত্রী বলেছিলেন যে, চলে যেতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু গোটা ড্রেসিংরুম জানবে, আমায় কেন চলে যেতে হয়েছিল। ওই রেসপেক্টটাই আমার পাওনা হবে। শাস্ত্রী সেই সময় ভারতীয় দলের কোচ হননি এবং হন অনেক পরে, কিন্তু আজ কোথাও মনে হচ্ছে যে, প্রণয় রায়ের এনডিটিভি থেকে চলে যাওয়া তার অসম্মান, তার অমর্যাদা এসবকিছু ইতিহাসে থেকে গেল, এভাবে ইতিহাস জানল লোকটাকে কেন চলে যেতে হয়েছিল। আমি ইমরান খানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনাকে এই যে জেলে পুরে অসম্মান করা হলো, আপনার কী মনে হয়েছিল সেই সময়? উনি বলেছিলেন, আমার কিছুই মনে হয়নি, আমার মনে হয়েছিল, গবেটগুলো যে ভুল করেছিল, সেগুলো ইতিহাসের পাতায় চলে গেল।
প্রণয় রায়ের কাহিনী সম্পর্কে আবার তাই মনে হয় যে, গবেটগুলো কী করে জানবে যে ওরা নিজেদেরও ইতিহাসের পাতায় নিয়ে চলে গেল। কিন্তু এটা নিশ্চয়ই সাময়িক। আর তাই বলছি, প্রণয় রায় চলে যাবেন নতুন প্রণয় রায় নিশ্চয়ই ফেরত আসবেন, তাই এটা দীর্ঘকালীন হতে পারে না। এটা সাময়িক। তাই লেখাটার হেডিং বললাম, মেরুদণ্ডের টাইম আউট।
শ্রুতিলিপি : শিমুল সালাহ্উদ্দিন
ভারতীয় দৃশ্য গণমাধ্যম (ভিজ্যুয়াল মিডিয়া) এনডিটিভির নিয়ন্ত্রণ আদানির হাতে গেছে এ বছরেই অর্থাৎ ২০২৩ সালে, আনুষ্ঠানিকভাবে। আদানি নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করায় এনডিটিভি বোর্ড থেকে এর প্রতিষ্ঠাতারা অবশ্য কিছুদিন আগেই পদত্যাগ করেছেন। এনডিটিভির দাপ্তরিক নাম নিউ দিল্লি টেলিভিশন লিমিটেড। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রণয় রায় এবং রাধিকা রায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বিলিয়নেয়ার গৌতম আদানির বাণিজ্য-সাম্রাজ্য এ মিডিয়া কোম্পানিটির বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক এখন। এনডিটিভির পরিচালনার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে। রায়দের সঙ্গে অন্য চারজন প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকও পদত্যাগ করেছেন।
আদানি অঁতরপ্রনর (আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড) তার সাবসিডিয়ারি আরআরপিআর হোল্ডিং এবং বিশ^প্রধান কমার্শিয়ালের মাধ্যমে এডিটিভির প্রায় ৬৫ শতাংশের (৬৪.৭২%) মালিক। নতুন মালিকানা-বিন্যাসে রায়রা ৫ শতাংশ (জনপ্রতি ২.৫ শতাংশ) মালিকানার অধিকারী। প্রণয় রায় বলেছেন, কোম্পানির মালিকানায় পরিবর্তন আসায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। তার ভাষায়, এর আর কোনো কারণ নেই। ভারতের প্রথিতযশা এ সাংবাদিক এডিটিভির নির্বাহী সহ-চেয়ারপারসনের পদ থেকে সরে দাাঁড়িয়েছেন।
এনডিটিভির অধিগ্রহণকারী গৌতম আদানি বিশে^র তৃতীয় ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক এবং জেফ বেজোসের পরই তিনি। এখন তিনি আরেক ভারতীয় বিলিয়নেয়ার মুকেশ আম্বানির মিডিয়া সাম্রাজ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবেন। মুকেশও তার মিডিয়া সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন বেশ আগে থেকেই। এনডিটিভির মালিকানা পেয়ে আদানির সুবিধাই হলো। বিশ্বমানের মিডিয়া-অবকাঠামো রয়েছে এনডিটিভির; মেধাবী সাংবাদিকও রয়েছে। এনডিটিভিকে একটি সমৃদ্ধ মাল্টি-প্ল্যাটফর্ম গ্লোবাল নিউজ অর্গানাইজেশনে পরিণত করতে চান আদানি। সুসংহত করতে এতে বিনিয়োগও বাড়াবেন।
এনডিটিভি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালে। সাংবাদিক দম্পতি প্রণয় রায় ও রাধিকা রায়ের মালিকানায়। কথা হচ্ছে, নিজস্ব বিনিয়োগ, আলাপ-আলোচনা এবং প্রতিষ্ঠাতাদের অজান্তেই আদানির হতে চলে গেছে এনডিটিভির মালিকানা। ফলে পাবলিক কনফিডেন্সে বেশ কিছুটা আঘাত লেগেছে। আদানির মালিকানা ঘোষিত হওয়ার পর শেয়ারবাজারে এনডিটিভির শেয়ারের দাম ২০ শতাংশ পড়ে গিয়েছিল। অতিসম্প্রতি দাম ১.২ শতাংশ বেড়েছে বটে, কিন্তু জনতুষ্টি এখনো আগের অবস্থায় যায়নি।
দ্য ওয়ার্ল্ড দিস উইক নামের একটামাত্র শো দিয়ে এনডিটিভির যাত্রা শুরু রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দূরদর্শনের ওপর প্রতিবেদন দিয়ে। কোনো গ্র্যান্ড প্ল্যান তখনো ছিল না প্রতিষ্ঠাতাদের। সাপ্তাহিক প্রতিবেদন দিয়ে শুরু করা চ্যানেলটিকে দিনে ২৪ ঘণ্টার প্রাইভেট চ্যানেলে এবং ভারতের প্রথম প্রাইভেট চানেলে পরিণত করার বিশেষ কোনো পরিকল্পনাও প্রণয়-রাধিকার ছিল না; তবে কালে সেটি হয়েছে। ক্রমে ইন্ডিপেনডেন্ট ব্রডকাস্টার হয়ে উঠেছে এনডিটিভি। তারপর তিন দশক পার হলো।
এখন মালিকানা গেল আদানির হাতে। অনেকে তাকে নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে জানেন। অবশ্য তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এমনই যে, সব দলের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য। ২০২২-এর মার্চে মি. আদানির নতুন কোম্পানি এএমজি মিডিয়া নেটওয়ার্কস লিমিটেড ডিজিটাল বিজনেস নিউজ কোম্পানি কিন্টিলিয়নের শেয়ার কেনে। কিন্টিলিয়নের ওই শেয়ার এতটাই নগণ্য যে, তা আদানির মনোযোগ আকর্ষণ করতে যথেষ্ট ছিল না। আদানির বড় কোনো প্ল্যান আছে কি না তা কিন্টিলিয়নর মালিকপক্ষের ভাবনায় আসেনি। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, এনডিটিভি কিনে নেওয়াটা কোনো ব্যাপার ছিল না আদানির কাছে। এখন তার অ্যাটেনশন বদলেছে। এক ধরনের চালাকি আছে তার মালিক হওয়ায়। এটাই আলোচনার সরস বিষয়। কৌশলে কি তিনি নিয়োগ করেছিলেন ‘অপ্সরা’! যেমন পুরাকালে করা হতো। সর অপসারণ করে নেয় যারা তারাই তো অপ্সরা। আদানি তাহলে বাণিজ্যদুধের সর গোপনে মেরে দিয়েছেন। পৌরাণিক চাতুর্যের লক্ষণ আছে তার মালিক হওয়ায়।
এনডিটিভি বেশ কিছু কারণে আলোচ্য বেসরকারি ভিজ্যুয়াল মিডিয়া। ভোট-বিশ্লেষণে পাইওনিয়ার; ডাডাভিত্তিক বিশ্লেষণে ভারতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। প্রভাতি অনুষ্ঠানে, লাইফস্টাইল বিষয়ক অনুষ্ঠানেও এনডিটিভি জুড়িহীন। অনলাইনেও তার প্রবল উপস্থিতি আছে। অনলাইন ফলোয়ার ৩৫ মিলিয়ন। এনডিটিভিকে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, আলজাজিরার মতো মিডিয়া আউটলেট বানাতে চান আদানি। ৭৬ শতাংশ লোক এনডিটিভির খবর বিশ্বাস করে। যদিও আদানির মালিকানা গ্রহণে অনেকেই বিরক্ত; তারা মনে করে আদানির টেকওভারের ফলে এনডিটিভির এডিটরিয়াল ইন্টিগ্রিটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদিও আদানি বলেছেন, Òthere’s nothing to fear. “Independence means if government has done something wrong, you say it’s wrong,” …. “But at the same time, you should have courage when the government is doing the right thing. You have to also say that.Ó”
ধনকুবেররা কত কথাই বলে, আদানির কথাও ওইরকম কথাই কি না দেখতে হবে চোখ-কান খুলে। মিডিয়া মালিক হওয়ার বৈশ্বিক প্রবণতা মোটে ভালো নয়। গণমাধ্যমের স্বকীয়তা মালিক হওয়ার সুবাদে বিকিয়ে দেওয়ার অনেক নজির আছে। আমাদের এখানেও আছে।
অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ডিসিরা (জেলা প্রশাসকরা) স্বস্তিতে আছেন। তাদের সবচেয়ে বড় স্বস্তি দিয়েছে হুটহাট বদলি বন্ধ হওয়া। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিশেষ করে এমপিরা তাদের একসময় ঘোষণা দিয়ে বদলি করে দিতেন। ডিসিদের স্বস্তি সুদৃঢ় করেছে তাদের ওপর সরকারের অতিমাত্রার নির্ভরতাও। ত্রাণ বিতরণ ও দরিদ্র অসহায় মানুষের তালিকা তৈরির কাজ ডিসিদের স্বস্তির প্রমাণক হলেও এসব রাজনীতিবিদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়িয়েছে বলে মনে করেন অনেক বর্তমান ও সাবেক ডিসি।
গত এক বছরে ৪০ জন উপসচিবকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাদের বদলি করা হয়েছে সেই কয়েকজনের মধ্যে অঞ্জনা খান মজলিস এবং জসীম উদ্দিন হায়দার অন্যতম। অঞ্জনা খান মজলিসকে চাঁদপুর থেকে নেত্রকোনায় বদলি করা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিকের সঙ্গে লড়তে গিয়েই মূলত বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন অঞ্জনা খান মজলিস। ডিসি অঞ্জনা খাসজমি উদ্ধারে রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। মামলা করার ২১ দিনের মাথায় বদলি করা হয় তাকে।
টাঙ্গাইলে বদলির আগে জসীম উদ্দিন হায়দার ছিলেন বরিশালের ডিসি। সেখানে দায়িত্ব পালনের সময় বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ভোটকেন্দ্রে বিত-া এবং এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণসহ নানা ঘটনা ঘটে। এতে জড়িয়ে পড়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনসহ গোটা প্রশাসন। এসব ঘটনার বেশ কিছু দিন পর বরিশালের ওই সময়ের ডিসি জসীম উদ্দিন হায়দারকে টাঙ্গাইলে বদলি করা হয়।
একজন ডিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অঞ্জনা আর জসীমের বিষয় দুটিই প্রমাণ করে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমেছে। গত এক বছরে কেবল তাদের দুজনকেই স্থানীয় রাজনীতিবিদের চাপে সরাতে হয়েছে। তারপরও তাদের প্রত্যাহার করা হয়নি। এক জেলা থেকে সরিয়ে অন্য জেলায় দেওয়া হয়েছে। সরকার যদি মনে করত তারা অপরাধী, তাহলে তাদের প্রত্যাহার করা হতো। রাজনৈতিক চাপের কারণে তাদের কেবল সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অঞ্জনা খান মজলিস আর জসীম উদ্দিন হায়দার ছাড়াও গত বছর আলোচনায় ছিলেন নাফিসা আরেফিন। গত বছরের ৫ জানুয়ারি নাফিসাকে নীলফামারীর ডিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু ঘটনার এক সপ্তাহ না যেতেই নাফিসার ডিসি পদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। নাফিসা সম্পর্কে অভিযোগ ছিল, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শামসুন্নাহার হল ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের জন্য আয়োজিত ব্রিফিংয়েও তাকে ডাকেনি।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিসি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনস্বার্থে নিয়োজিত। কিন্তু এরূপ জনস্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে কেউ কেউ প্রভাব বলয়ের রোষানলে পড়েন। তখন যদি তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করা হয়, তবে এ ধরনের কর্মকর্তারা হতোদ্যম হবেন। ভবিষ্যতে ঝুঁকি নিতে থাকবেন দ্বিধান্বিত। পরিণতি জেনে অন্যরাও এ থেকে নেতিবাচক শিক্ষাই লাভ করবেন। আর তা হচ্ছে জনস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে নিজের গা বাঁচিয়ে চলা। কাজেই সবকিছুকে নিয়মের মধ্যেই করা উচিত। এর ব্যত্যয় ঘটাতে গেলেই বিপদে পড়তে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিভাগের একজন ডিসি বলেন, আমাদের সিনিয়রদের মুখে শুনেছি তারা কত ঝামেলার মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছেন। এমপিরা ডিসিকে প্রকাশ্যে বদলির হুমকি দিয়ে ঢাকা আসতেন, সেখান থেকেই বদলির আদেশ নিজের জেলার ডিসির কাছে পাঠিয়ে দিতেন। সেই সময়ের সিনিয়রদের দৃষ্টিতে আমরা অনেকটাই স্বস্তিতে কাজ করছি। যদিও কিছু রাজনীতিবিদ সুযোগ পেলেই আমাদের বিরোধিতা করেন। সরকারপ্রধানের ইচ্ছায় আমরা মহামারীর সময় ত্রাণ বিলি করেছি। চরম দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষদের নামের তালিকা করেছি। এতে করে সাধারণ মানুষের উপকার হয়েছে বলেই আমরা মনে করি।
এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিভাগের ওই ডিসি বলেন, সরকারি চাকরিতে বদলি একটি আবশ্যিক শর্ত। নানা কারণে বদলি করতে হয়। বিশেষ করে স্থানান্তরের বদলির ক্ষেত্রে কিছু একটা সময়সীমা মেনে চলা হয়। কেননা, এক স্থান থেকে অন্যত্র বদলি করলে তার সংসারজীবন কিছুটা ওলটপালট হয়। নতুন জায়গায় সংসার পাতার ঝঞ্ঝাট অনেক। কিছুটা অতিরিক্ত অর্থের বিষয়ও থাকে। অসময়োচিত বদলি অত্যাবশ্যক না হলে পরিহার করতে বলা হয়। তার ওপর কোনো কর্মকর্তা যদি জনস্বার্থে ভালো কোনো উদ্যোগ নিতে গিয়ে প্রভাবশালী মহলের বিরাগভাজন হন, সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা চায় তাকে সেখান থেকে বদলি করাতে। বদলি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট থাকেন, তাদের উচিত সচেতন ও সক্রিয়ভাবে এ ধরনের বদলির প্রচেষ্টা ঠেকানো। কারণ একজন কর্মকর্তা বদলি হয়ে গেলে সেখানকার সেবা গ্রহীতাদেরও কিছু সমস্যা হয়।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমলাতন্ত্র দৃষ্টিকটুভাবে সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করছে বলে অভিযোগ রাজনীতিবিদদের। তাদের মতে, আমলাদের কেউ কেউ নিজেদের মূল দায়িত্ব ভুলে দলীয় কর্মীর মতো কাজ করছেন। অনেকেই মনে করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় আনতে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাতেই তারা নিজেদের সর্বেসর্বা ভাবতে শুরু করেছেন। ক্ষমতায় আসতে নেতাকর্মী, জনগণের ভোটের গুরুত্ব কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতেও রাজনীতিবিদদের প্রভাব কমেছে। তোফায়েল আহমেদের মতো রাজনীতিবিদও সংসদে আমলাদের বাড়াবাড়ি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তোফায়েল আহমেদের মতো ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদও রাজনীতিবিদদের অসহায়ত্বের কথা বলেন সংসদে।
সংসদের বাইরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, ‘আমলাতন্ত্রের বিকল্পও তো নেই। কেউ আমলাতন্ত্রের বিকল্প বের করতে পারেনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন এর বিকল্প বের করতে পারেনি। চীনারা পারেনি। ফেরাউনও পারেনি। খলিফারাও পারেননি। সেই মহান আমলাতন্ত্র আমাদের মধ্যেও আছে।’
প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি করার বিধান নেই। কিন্তু গত এক যুগ ধরে সচিবালয় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে দলবাজির প্রতিযোগিতা চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কে কত বড় নেতাকর্মী সেটা প্রমাণের চেষ্টা চলছে। ডিসিরাও এর বাইরে নন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
সার কারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রেখে আমদানিকৃত গ্যাসের ওপর ভর দিয়ে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্যাসের চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এরপরও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে ভুগতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এভাবে গ্যাস বন্ধ কিংবা সীমিত করে জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টার ফলে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্রাহকরা যেমন ঠিকমতো গ্যাস পাবে না, তেমনি গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়বে। সার কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে।
গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে বাড়তে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হয়। রমজান, সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মকালে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে পেট্রোবাংলা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৭০০ থেকে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে থেকে প্রায় ২২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং বাকি গ্যাসের চাহিদা পূরণ হবে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি দিয়ে।
বর্তমানে দেশে দৈনিক প্রায় ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এবং বাকি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলা বাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৭০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হলে ঘাটতি থাকবে। যার প্রভাব পড়বে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য খাতে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভর করে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা ভুল। কারণ কদিন আগেও বিশ^বাজারে এলএনজির দাম ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। এখন সেটা অনেক কমলেও যেকোনো পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই দাম বাড়তে পারে। তখন গ্যাসের সংকট আরও বাড়বে।’
‘সংকটের মুখে পড়ে সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। আরও আগেই এ কাজ করা দরকার ছিল। অন্তত ২০১৮ সাল থেকে যখন আমদানি শুরু হয় তখন থেকেও যদি অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হতো তাহলে এতদিনে অনেক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আজকের এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না’ যোগ করেন তিনি।
বদরূল ইমাম বলেন, এলএনজি আমদানিতে যতবেশি নজর দেওয়া হয়েছে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ততটায় অবহেলিত রয়েছে। প্রতি বছর অন্তত ৫ থেকে ৭টা কূপ খনন করা গেলে সংকট অনেকটাই কাটানো সম্ভব হবে।
সূত্রমতে, বিশ^বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। দাম কমতে থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে খোলাবাজার থেকে প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে গড়ে প্রতিদিন ২৬০০ থেকে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। চলতি মাস থেকে এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি করায় গ্যাসের সরবরাহও বেড়ে গেছে। এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, মে মাসে ৩০০ মিলিয়ন এবং জুনে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি খোলাবাজার থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশীয় গ্যাস এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলাবাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। তবে এর মধ্যে যদি কোনো কারণে খোলাবাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যায় তাহলে গ্যাস সরবরাহ আরও কমবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গ্যাস সরবরাহে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেলে বাসাবাড়ি ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ কমানো অথবা সরবরাহ বন্ধ করা হবে দিনের কিছু সময়ের জন্য। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হবে। তবে রমজানে সাহরি ও ইফতার তৈরিতে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে মানুষের ভোগান্তি অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তারাবি নামাজের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং হলে সেই ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে বদরূল ইমাম বলেন, ‘এটা একটা জোড়াতালির পরিকল্পনা। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করা নাগরিক হিসেবে সমর্থনযোগ্য নয়। এতে এলপিজির দামও আরও বেড়ে যাবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গত বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আমদানিকৃত ও দেশীয় বিদ্যুতের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা হবে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস অয়েল ও অন্যান্য জ¦ালানির পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২০০ থেকে ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা দুরূহ হয়ে যাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে কয়লা ও অন্যান্য জ¦ালানি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় অন্যান্য কেন্দ্রগুলো থেকেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সবমিলে এ বছর অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এ পরিস্থিতিতে উচ্চদামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।