
গত ১০ বছরে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে চারগুণের বেশি। বিপরীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যয় কমে অর্ধেকে নামলেও এ খাতের অগ্রগতি খুবই হতাশাজনক। বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম দেশীয় গ্যাসের চেয়ে অন্তত পাঁচ-সাতগুণ বেশি হলেও আমদানির তৎপরতা যে হারে বেড়েছে, সে হারে বাড়েনি দেশীয় জ্বালানির অনুসন্ধান কার্যক্রম।
গত ১৩ বছরে বিদ্যুতের দাম ১১ আর গ্যাসের দাম বেড়েছে ৬ বার। ধারাবাহিকভাবে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে এ খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও সরকার সেদিকে যাচ্ছে না। বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। পাশাপাশি দেশের জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন না করে এলএনজি আমদানি করছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার সঙ্গে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। এর পরিণতি ভয়াবহ।’
তিনি বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে সরকার। কিন্তু এ জন্য ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা দরকার। এ টাকা সমন্বয় করে গ্যাস-বিদ্যুতের যে দাম হবে তা সোনার চেয়েও দামি হবে।’ তার মতে, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার কারণেই লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বাড়ছে। আর এটি চাপানো হচ্ছে ভোক্তার ওপর। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এখন বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানো হচ্ছে। অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর চেয়ে অন্যায় আর কিছু হতে পারে না।
সূত্রমতে, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল ২ টাকা ৬১ পয়সা। এখন তা বেড়ে ১০ টাকা ছাড়িয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ বাড়ানোর ফলে ব্যয় আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিজেলে চালিত বিদ্যুকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গড়ে ৪৩.৪২, ফার্নেস অয়েল থেকে ১৫.৫১, কয়লা থেকে ১২.৭৭, নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌরবিদ্যুৎ) থেকে ১২.৬৪, গ্যাসে চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩.৪৬, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২.৬৭ এবং আমদানি করা বিদ্যুতের জন্য ৫.৯৫ টাকা ব্যয় হয়েছে।
বর্তমানে দেশে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ১৭.৬২ সেন্ট থেকে ২২.৭১ সেন্ট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে অর্থাৎ ২২.৭১ সেন্ট দরে ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ১৮.৮৯ সেন্ট। বরিশাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম ১৭ দশমিক ৬২ সেন্ট এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ১৭.২০ সেন্ট।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ার আগে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় গড়ে ২ টাকা বেড়ে প্রায় ১২ টাকায় দাঁড়াবে। তবে খোলাবাজার থেকে আমদানি করে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ালে এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কাছাকাছি। তবে সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক কমালে দাম আরও কমবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যতটুকু উৎপাদন ততটুকু বিল এ শর্তে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চুক্তি হওয়ায় শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই তারা বিদ্যুৎ পাবে। কিন্তু তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’ হিসেবে অর্থ পরিশোধ করতে হয় সরকারকে। সৌরবিদ্যুতে কোনো জ্বালানি লাগে না। অর্থাৎ জ্বালানি আমদানির জন্য ডলার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতের দাম ক্রমে বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদ-ে একটা দেশে চাহিদার তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি সক্ষমতা থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশে প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়তি সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ভুল পরিকল্পনার কারণে প্রয়োজন ছাড়াই একের পর এক বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া বা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারকে কেন্দ্র ভাড়া দিতে হয়েছে ১৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলার পাশাপাশি বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন সময়ে নানা পরিকল্পনার কথা বললেও তার অগ্রগতি খুব সামান্য।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ৮৯ শতাংশ কমেছে। এ উৎস থেকে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে তারা কাজ করছেন। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যে অগ্রগতি, তাতে এ লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছানো নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৯৪২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো ২৩০ মেগাওয়াট। সে হিসাবে মোট বিদ্যুতের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিমাণ ছিল ৪.৬ শতাংশ। বর্তমানে দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস হিসেবে গ্রিডভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ থেকে মাত্র ২৫৯ মেগাওয়াট এবং জলবিদ্যুৎ (২০০৯-এর আগে স্থাপিত) থেকে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। শতকরা হিসাবে এর পরিমাণ ২ শতাংশ। এর বাইরে অফগ্রিড সৌরবিদ্যুতের পরিমাণ ৪১৮ মেগাওয়াট। যদিও অফগ্রিড সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার ৭০-৮০ শতাংশ অকেজো হয়ে রয়েছে বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল হক বলেন, ‘গত ১০ বছরে দেশে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। কিন্তু দেশে সৌরবিদ্যুতের আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। এ খাতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার। তাহলে বিদ্যুৎ জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে।’
গত ১৩ বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ৪.৭৫ গুণ। এ সময়ে ১৮৫৪০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ গ্রিডে যোগ হয়েছে। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎ এসেছে মাত্র ২৩০ মেগাওয়াট।
জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা বাড়ায় ব্যয় বাড়ছে। ২০০৯ সালে দেশে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি করা গ্যাসসহ মোট উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুটে। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ২৬০০-২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, গত ১৩ বছরে পাঁচটি নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার এবং কিছু কূপ সংস্কারের মাধ্যমে দেশীয় উৎস থেকে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করছে সরকার। পাশাপাশি সরকার খোলাবাজার থেকে বেশি দামের এলএনজি আমদানি করছে।
দেশে এলএনজি সরবরাহে দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সরবরাহ ক্ষমতা এরই মধ্যে নেমে গেছে ৫০ শতাংশের নিচে। তবু আরও দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি এবং বাংলাদেশের সামিট গ্রুপ এ টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে।
সূত্রমতে, দেশীয় কোম্পানির উৎপাদিত গ্যাসের খরচ প্রতি ইউনিটে ১ টাকা ২৭ পয়সা। আর দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে উৎপাদিত গ্যাসের খরচ ২ টাকা ৯১ পয়সা। আমদানি করা গ্যাসের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে খরচ প্রায় ৫০ টাকা। বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে এ দাম কমবেশি হয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম মনে করেন, আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ব্যয় বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘স্থলভাগে এখনো যে গ্যাস রয়েছে, তার একটি অংশ আমরা আবিষ্কার করে উত্তোলন করছি। বড় অংশের সন্ধান এখনো আমরা করিনি। আরও বেশি অনুসন্ধান করা দরকার। নিজেদের গ্যাস পেলে জ্বালানির দাম এভাবে বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।’ বিদেশি কোম্পানি ও এলএনজি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে সরকার স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
১২টি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এ ১২টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পূর্বাচল ১০০ ফুট খাল খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন; আজিমপুরে বিচারকদের আবাসন এবং মিরপুর ও তেজগাঁওয়ে কয়েকটি আবাসন প্রকল্প। রমনা পার্কের আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটিও উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে।
৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এগুলোর উদ্বোধন করবেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গৃহায়নমন্ত্রী মো. শরীফ আহমেদ বলেছেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১২টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে আমরা প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করেছি। রমনা পার্কে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থল হবে। প্রধানমন্ত্রী এসব উদ্বোধন করবেন ভার্চুয়ালি।
জানা গেছে, ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ; ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ; ঢাকার মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ; নোয়াখালী সদরে অফিসার্স কোয়ার্টারে ৩২৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ; ঢাকার রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রমনা লেকসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সার্বিক সৌন্দর্যবর্ধন; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার লাইব্রেরি ভবন, এনেক্স ভবন ও অডিটরিয়াম নবায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ, মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১৪ তলা ভবনে ১২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ; সিলেটের সুনামগঞ্জে সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন; কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের দুই পাশে ১০০ ফুট খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১২ দশমিক ৫০ কিমি দীর্ঘ খাল, ১২ কিমি কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোড, ৫টি এট-গ্রেড ইন্টারসেকশন, ৬টি ব্রিজ, ৯টি আর্চ ব্রিজ, ২টি আন্ডারপাস, ৬টি ফুটওভার ব্রিজ, ২ কিমি জিআরপি পাইপলাইন স্থাপন, ২টি সøুইচগেট ও পাম্পহাউজ নির্মাণ এবং পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, পলখান উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্বাচল আদর্শ কলেজ ভবন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন হবে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ১০০ মিটার খাল প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হবে। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত বর্ষা মৌসুমে কুড়িল, ডিওএইচএস বারিধারা, সেনানিবাস ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ড্যাপ অনুযায়ী ডুমনি, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ এলাকার নকশা ঠিক রাখা ও পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো, ভবিষ্যতে ঢাকা শহরের বর্ধমান ট্রাফিক পরিস্থিতি সামলানো এবং কুড়িল ও আশপাশের এলাকায় নগরায়ণের কথা চিন্তা করে ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখতে ফ্লাইওভার ও এট-গ্রেড ইন্টারসেকশন তৈরি করা হয়েছে।
কুড়িল প্রভৃতি এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইলের মাধ্যমে জিআরপি পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে কুড়িল, নিকুঞ্জ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বারিধারা ডিওএইচএস, ঢাকা সেনানিবাস, বসুন্ধরা, কাওলা, জোয়ার সাহারা, বরুয়ার জলাবদ্ধতার নিরসন হয়েছে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) উল্লিখিত ডুমনী, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খাল পুনরুদ্ধার করে এর উন্নয়ন ও ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এখানে আরেকটি প্রকল্প হলো পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫৯২ কোটি টাকা। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে পূর্বাচলে নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা সম্পন্ন করাসহ চারটি ফেইজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১০টি ১৪ তলা ভবনের ‘স্বপ্ননগর-১’-এ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১৪ তলাবিশিষ্ট ১০টি ভবনে ১৫৪৫ বর্গফুট আয়তনের ৫২০টি, ১৩৩৮ বর্গফুট আয়তনের ৪১৬টি ও ৮৭৮ বর্গফুট আয়তনের ১০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১০০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে উদ্বোধনের তালিকায়।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ফুসফুস হিসেবেখ্যাত রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সার্বিক সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে পার্কের দুই ধারে লেকের ওপর কাঠের ডেক, চারটি আধুনিক টয়লেট, সিরামিক ব্রিকের কালভার্ট, রমনা চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও শিশু কর্নার রয়েছে।
এ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই তুলে দেওয়ার পর থেকেই বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। ইন্টারনেট থেকে হুবহু কপি করা, ভুল তথ্য, ইতিহাস বিকৃতি, মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য বাদ, বিতর্কিত তত্ত্ব, ইসলামবিরোধী ছবিসহ নানা কিছু নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সপ্তম শ্রেণির একটি বইয়ের ভুলে দায় স্বীকার করে নিয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুটি কমিটি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বছর স্কুলগুলোতে তা সংশোধনী আকারে পাঠানো হবে। আগামী বছর এসব ভুল সংশোধন ও বইগুলোতে বড় ধরনের পরিমার্জন করা হবে।
সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ডারউইনের তত্ত্ব শেখানো নিয়ে। এ তত্ত্ব ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। মূলত বোঝানো হয়েছে, কালের বিবর্তনে বানর থেকে ধাপে ধাপে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘খুঁজে দেখি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস’ ঠিক তার পরের পৃষ্ঠায় অর্থাৎ ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘বিভিন্ন সময়ের মানুষ’ শিরোনাম দিয়ে চারটি ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে মূলত বানর ছিল। আর তারপরই কয়েকটি ধাপে বানর থেকেই মানুষের আকৃতি রূপান্তরিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ডারউইনের মতবাদ বহু পুরনো এবং তা প্রতিষ্ঠিত নয়। তবে তা আগে ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ানো হতো। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হতো। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে তা ষষ্ঠ শ্রেণিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, নতুন শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি নিয়ে ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আলোচনা হয়েছে, ডারউইনের মতবাদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে না রাখলেও চলবে। তাই এ বিষয়টি বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে যেহেতু ভুলত্রুটি সংশোধনে কমিটি করা হচ্ছে, তাই তা বাদ দেওয়া হলে তাদের মাধ্যমেই করা হবে। সবচেয়ে বেশি সংশোধন হচ্ছে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান বইয়ে। এ দুটি বই নিয়ে বৈঠকে বেশি আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া শিল্প সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা ও ধর্মশিক্ষা বইতে বড় সংশোধন করা হবে। অন্যান্য বইতে মূলত ভুলত্রুটি সংশোধন হবে।
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘আমরা এ বছরের বইয়ের পা-ুলিপি চূড়ান্ত করার আগে যেসব ছবি বাদ দিয়েছিলাম, সেগুলোও থেকে গেছে। অতএব সরষের মধ্যেও কোনো ভূত আছে কি না তা আমরা খুঁজে দেখব। ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবেদনশীল কোনো বিষয় থাকলে আমরা নিশ্চয়ই নজর দেব। আওয়ামী লীগ কখনোই ধর্মবিরোধী বা বিদ্বেষী কিছু করেনি।’
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নামেও ভুল করা হয়েছে। শেখ বাদ দিয়ে শুধু লেখা হয়েছে লুৎফর রহমান। ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘ছেলেবেলার মুজিব’ শিরোনামে ৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারি অফিসের কেরানি। অথচ তিনি ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার। পদটি আজও দেশের সব জেলা জজ আদালতে বহাল আছে। কেরানি শব্দটি সাধারণত তাচ্ছিল্য করে বলা হয়। একই পৃষ্ঠার দুই জায়গায় কেরানি শব্দটা লেখা হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাবার নামের সঙ্গে ‘শেখ’ শব্দ যুক্ত করা হয়নি। ওই বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় ‘ভাষা আন্দোলন’ শিরোনামে আন্দোলনের বর্ণনায় কোথাও বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরা হয়নি। একই বইয়ের তিন জায়গায় কোথাও ‘বাঙালি’ হ্রস্ব ইকার দিয়ে, কোথাও ‘বাঙালী’ দীর্ঘ ঈ কার দিয়ে, আবার কোথাও লেখা হয়েছে, ‘বাঙ্গালি’।
ষষ্ঠ শ্রেণির একই বইয়ের ৭৭ পৃষ্ঠায় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, কর্নেল ওসমানীকে জেনারেল পদ দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি করা হয়। শুদ্ধ হচ্ছে, তিনি কর্নেল পদে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক। আর দেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার পর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভুলত্রুটি সংশোধনে যে কমিটি হবে তারা দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাজ শেষ করবে। ডারউইনের মতবাদ পড়া মানে তা বিশ^াস করা নয়। আবার এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিতও নয়। ফলে কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা কারও সেন্টিমেন্টে আঘাত দিতে পারি না। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম বছর ভুলত্রুটি কিছু থাকতে পারে, আগামী বছর তা অনেকটাই কমে আসবে।’
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৭০ পৃষ্ঠায় ‘রাজনৈতিক সংযোগ’ শিরোনামে লেখা হয়েছে তোমরা তো জানো ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিজ বাড়িতে গ্রেপ্তার বরণ করার আগে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রাম যেন এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার বরণ করেছেন, অর্থাৎ স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। যা কোনোভাবেই সঠিক নয় বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠায় ‘নতুন পরিচয়’ অনুচ্ছেদে শরীফার গল্প অংশে শিক্ষার্থীদের জন্য গল্পে গল্পে শেখানো হয়েছে একজন ছেলে তার চিন্তা থেকেই এবং আচরণগত পরিবর্তন করে নিজেকে মেয়ে পরিচয় দিতে পারে। এমনকি একজন ছেলে তার ইচ্ছার কারণে নিজেকে মেয়ে হিসেবেও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠবইয়ে ১১তম অধ্যায়ের ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে কিশোর-কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকালে তাদের শরীরের নানা অঙ্গের যেভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে প্রকাশ্যে তা পড়ার উপযোগী নয় বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। একই বইয়ের ১২২ পৃষ্ঠায় মেয়ের বিভিন্ন অঙ্গের যেভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা আরও আপত্তিকর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৯৫ পৃষ্ঠায় বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনকে আগেকার মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য এবং পরের ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সুলতানি শাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আলোচনা করা হয়েছে। ইতিহাস অংশে মুসলিম নেতৃত্বকে খাটো করে দেখা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের অনেক বই মাদ্রাসায় পাঠদানের উপযোগী নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। কারণ সেখানে যেভাবে যেসব ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তা মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে মেলে না। তাই অনেক মাদ্রাসায় কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো দেওয়া হয়নি। আবার কোনো বইয়ের কিছু অধ্যায় তারা পড়াবেন না বলেও নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস চলতি বছরের হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ৭০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বিমানের এ সংক্রান্ত প্রস্তাব বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। প্রস্তাবিত ভাড়া অযৌক্তিক এবং সংশোধনের দাবি করেছে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
গত বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চলতি বছর তা ২ লাখ ১০ হাজার ৩৩৭ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বিমান।
বিমান বলছে, গত বছর হজ মৌসুমের তুলনায় চলতি বছর জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার ২১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি বিমানের।
প্রতি বছর বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। মন্ত্রিসভা বৈঠকে এসব প্যাকেজ অনুমোদন করার রেওয়াজ থাকলেও নতুন হজ আইনের কারণে তা আর মন্ত্রিসভায় তোলা হয় না। হজসংক্রান্ত নির্বাহী কমিটি এসব প্যাকেজ অনুমোদন করে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত নির্বাহী কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও হাবের নেতারা রয়েছেন। এ নির্বাহী কমিটির প্যাকেজের আলোকে এজেন্সিদের সংগঠন হাবও একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করে।
সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের হজ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে গত ৯ জানুয়ারি। এতে পূর্ণ কোটাই পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।
দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর এখন হজ প্যাকেজ ঘোষণার পালা। প্যাকেজ ঘোষণার অন্যতম উপাদান হলো বিমান ভাড়া। বিমান ভাড়া নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা একমত হতে পারছেন না।
হাব সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিমান হয়তো এই ভাড়া প্রস্তাব করেছে। আলোচনার টেবিলে ভাড়া চূড়ান্ত হবে। হজযাত্রীদের বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় কাজ করে। একদিকে হজযাত্রীরা মনে করেন বিমান বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অন্যদিকে বিমান মনে করে তারা কম ভাড়া নিচ্ছে। উভয়পক্ষের অবস্থানের কারণে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়। এই সংকট নিরসন হতে পারে টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে। যেখানে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডাররা থাকবেন। বাস ভাড়ার ক্ষেত্রেও এ ধরনের কমিটি হয়। এ ক্ষেত্রেও টেকনিক্যাল কমিটি হতে পারে।’
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানের ভাড়া চূড়ান্ত হলেই তারা প্যাকেজের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারবেন। বিমান ভাড়া ছাড়া প্যাকেজের অন্যান্য উপাদান প্রায় সবই চূড়ান্ত হয়েছে। এখন বিমান ভাড়া চূড়ান্ত হওয়ার পালা। প্রতি বছরই বিমান ভাড়া নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতেও বিলম্ব হয়। এতে সাধারণ হজযাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন।
বাংলাদেশ থেকে যে হজযাত্রী যান তার অর্ধেক বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং বাকি অর্ধেক সৌদিয়া ও ফ্লাইনাজ এয়ারলাইনস বহন করে। বিমান হজযাত্রী বহনের জন্য যে ভাড়া নির্ধারণ করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনসগুলোও একই ভাড়ায় যাত্রী বহন করবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, বিমান অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে সৌদি এয়ারলাইনসগুলোকেও উচ্চহারে মুনাফা করার সুযোগ দিচ্ছে। অর্ধেক হজযাত্রী বহন করার শর্ত হিসেবে এ বছরও বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন হজযাত্রী বহন করবে। প্রস্তাবিত ভাড়া চূড়ান্ত হলে সৌদি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহন করে নিয়ে যাবে প্রায় ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা।
একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বেশি। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরব যেতে হয় বেশি ভাড়া দিয়ে। এমনকি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার এয়ারলাইনসগুলো তাদের স্বদেশি হজযাত্রী বহন করে বাংলাদেশ বিমানের ভাড়ার তুলনায় অনেক কম টাকায়। তাছাড়া স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা-জেদ্দা রুটে আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়া সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা হলে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কেন ২ লাখ ১০ হাজার হবে?
মহামারী করোনার কারণে ২০২০ ও ’২১ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সীমিত পরিসরে হজ আয়োজন করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে সে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গত বছর হজযাত্রীদের আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় মক্কা নগরী। যদিও সৌদি সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মে স্বাভাবিকের চেয়ে কমসংখ্যক হজযাত্রী হজ পালনের সুযোগ পান।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর ৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালন করবেন। এর মধ্যে বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় ২০ লাখ এবং স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ মুসলমান হজে অংশ নেবেন। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে ২৮ জুন।
২০১৬ সাল থেকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে রাজধানীর জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট (নিকডু) এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ডায়ালাইসিস সেন্টার পরিচালনা করে আসছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডোর। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ সেন্টারে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ডায়ালাইসিস করার কথা প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু এসব নিয়মের অনেক কিছুই মানা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও রোগীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিকডুর ডায়ালাইসিস সেন্টারের চিকিৎসক ও রোগীরা দেশ রূপান্তরকে জানান, কিডনি রোগীর একবার ডায়ালাইসিস করতে ডায়ালাইজারসহ ২৫ ধরনের উপকরণ লাগে। কিছু উপকরণ বারবার ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ডায়ালাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে ছয়বার। অথচ স্যানডোর এসব উপকরণ প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে একবার ব্যবহার দেখিয়ে বিল করছে। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের উপকরণ। এমনকি রোগীর প্রকৃত তথ্য গোপন করে প্রতি বছর মিস কেস (ডায়ালাইসিস না করিয়ে) হিসেবে বিল করছে পৌনে এক কোটি টাকার মতো। আর এসব অভিযোগের কারণেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্যানডোর বিল আটকে দিয়েছে। স্যানডোরের হিসাবে, সরকারের কাছে তাদের পাওনা হয়েছে ৩১ কোটি টাকার মতো।
গত সোমবার সরেজমিনে নিকডুতে ডায়ালাইসিস নেওয়া রোগী, রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খোঁজ নিয়ে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় গত রবিবার স্যানডোর নিকডুতে ছয় ঘণ্টা এবং পরদিন সোমবার তিন ঘণ্টা ডায়ালাইসিস বন্ধ রাখে। পূর্ব ঘোষণা না থাকায় এ সময় ডায়ালাইসিস নিতে আসা রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিগগির বকেয়া বিল পরিশোধ করা না হলে ভবিষ্যতে ডায়ালাইসিস সেন্টার পরিচালনায় সমস্যা হতে পারে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিস কেসের বিষয়টা জানা আছে। আমরা বিষয়টা দেখছি। অবৈধভাবে বেশি টাকা নিতে পারবে না।’
নিকডুর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ডেপুটি পরিচালক) ডা. আকতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরেকে বলেন, ‘হাসপাতালের কিছু মেশিন আছে, সেখানে ভর্তি রোগীদের ডায়ালাইসিস আমরা নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে ও দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে নিজেরাই করি। কিন্তু সরকারের সঙ্গে স্যানডোরের চুক্তি থাকায় পার্টনারশিপে পরিচালিত ডায়ালাইসিস সেন্টারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা চাইলে ডায়ালাইসিস মেশিন বৃদ্ধি করতে পারি না। আবার যদি সরকারের নির্দেশ আসে, আমাদের মেশিন দেয়, তাহলে ব্যাপকভাবে সরকারিভাবেই ডায়ালাইসিস চালু করতে পারব।’
নিকডুর হিসাবরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ১৯ হাজার ৫০০ সেশন ডায়ালাইসিস দেওয়ার কথা। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৫০ সেশন দেওয়ার কথা বিনামূল্যে। সে হিসেবে বিনামূল্যে দেওয়ার কথা মোট ডায়ালাইসিসের ১০ শতাংশ। কিন্তু সে নিয়ম মানছে না প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তির পর মোট ডায়ালাইসিসের সংখ্যা বাড়লেও, সে অনুপাতে বিনামূল্যে ডায়ালাইসিসের সংখ্যা বাড়ায়নি স্যানডোর। এখান থেকে তারা একটি মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
নিকডুতে স্যানডোর সেন্টারের হিসাব শাখা থেকে জানা গেছে, ডায়ালাইসিস সেন্টারে থেকে গত বছর ২৯ হাজার ৫০০ সেশনের বেশি ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। করোনা মহামারীর সময় এ সংখ্যা ছিল ৮০-৯০ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ১১০ সেশন ডায়ালাইসিস দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিদিন কিছু রোগী নানা কারণে ডায়ালাইসিস নিতে আসে না, তাদের মিস কেস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবার কেউ মারা গেলে মৃত্যুর তথ্য সেন্টারে না এলে সেটাও মিস কেস হিসবে থাকে। এ সেন্টারে প্রতি মাসে ১০-১২ জন রোগী মারা যায়। মৃত্যুজনিত এবং কোনো কারণে ডায়ালাইসিস নেননি এমন ‘মিস কেস’র সংখ্যা সপ্তাহে ৩০-৩৫ সেশন।
নিকডুর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিকডুর পাশাপাশি চমেকেও সপ্তাহে ৩০-৩৫ সেশন মিস কেস থাকে। অর্থাৎ দুই হাসপাতালে সপ্তাহে মিস কেসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ সেশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দুটি হাসপাতালের মধ্যে বর্তমানে নিকডুতে ৬৯টি ও চমেকে ৩৫টি মেশিনে সেবা দেয় স্যানডোর। বর্তমানে এ দুই হাসপাতালের মধ্যে সরকারিভাবে ভর্তুকি মূল্যে নিকডুতে ৩৭৪ এবং চমেকে ৩৬০ রোগীসহ ৭৩৪ জন ডায়ালাইসিস সেবা পাচ্ছেন। এর বাইরে যদি কোনো রোগী এই সেন্টারে ডায়ালাইসিস করাতে চান তাহলে বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা দিয়েই ডায়ালাইসিস নিতে হয়। যারা সরকারি ভর্তুকি পান তাদের দিতে হয় ৫৩৫ টাকা।
নিকডুর কর্মকর্তারা জানান, স্যানডোরের হিসাবেই প্রতি বছর ৩ হাজার ১২০ সেশন মিস কেস হিসেবে থাকে। সে হিসেবে বিল আসে ৭৪ লাখ ৮৮ হাজার। গত ছয় বছরে ৬ কোটির টাকার বেশি বিল করেছে। অথচ এসব রোগীকে ডায়ালাইসিস দিতে হয়নি।
নিকডুর ডায়ালাইসিস সেন্টারে (স্যানডোর) ব্যবস্থাপক নিয়াজ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একবার (এক সেশন) ডায়ালাইসিস করতে ডায়ালাইজারসহ ২৫ ধরনের ইক্যুইপমেন্ট লাগে। কিছু ইক্যুইপমেন্ট রিইউজ (বারবার ব্যবহার) করা হয়। এর মধ্যে ডায়ালাইজার ছয়বার ব্যবহার করা হয়। এতে প্রতি সেশন খরচ হয় ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। আর যেসব মিস কেসের কথা বলা হচ্ছে, সেসব রোগীর জন্য আমাদের খরচ হয়। কারণ তাদের ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা রাখতে গিয়ে উপকরণ, জনবলসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের খরচ হয়। সুতরাং সেই বিল আমাদের ধরতেই হবে।’
ডায়ালাইসিসের উপকরণ ব্যবহারের নিয়ম জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ও ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হলে প্রত্যেকটি উপকরণ একবারই ব্যবহার করার নিয়ম। আমাদের দেশে বহু প্রতিষ্ঠান আছে তারা এসব উপকরণ একাধিকবার ব্যবহার করে। একটি ডায়ালাইজার সর্বোচ্চ দুই-তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সেটি কেউ কেউ ৬-১০ বারও ব্যবহার করে। এতে রোগীর যে উপকার হওয়ার কথা, তার চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্যানডোর বিল আটকে যাওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে। তার মধ্যে মিস কেস, মৃত ব্যক্তি ডায়ালাইসিস নিয়েছে দেখিয়ে বিল করার অভিযোগ রয়েছে। চুক্তিপত্রে কিছু ত্রুটি থাকায় প্রতি বছর ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি কারণে বর্তমানে ডায়ালাইসিস খরচ বেড়ে ২ হাজার ৯৩৫ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বেসরকারিভাবে এর চেয়েও কম খরচে ডায়ালাইসিস নেওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি স্যানডোর আরও ১৭টি হাসপাতালে তাদের সেবা বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এটা পেয়ে গেলে সরকার আরও বেকায়দায় পড়বে।
কিডনি বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, দেশে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন। তাদের মধ্যে ৪০ হাজারের মতো মানুষের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। মাত্র ১০ হাজার মানুষ এ সুযোগ পান। এ ছাড়া রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিস করতে পারেন না। আর যারা ডায়ালাইসিস শুরু করেন তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগী অর্থাভাবে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন এবং ৫০ শতাংশ রোগী দুই বছরের মধ্যে মারা যান।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এ তফসিল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে ১২ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র যাচাই হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর ভোটগ্রহণ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।
এ বিষয়ে সিইসি জানান, একাধিক প্রার্থী হলে ১৯ ফেব্রুয়ারি সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচন কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে নিজের সই দিয়ে তা জমা দেবেন সংসদ সদস্যরা। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে (প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিসে নির্ধারিত দিনে অফিস চলাকালে) মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। প্রার্থীর সংখ্যা একজনের বেশি না হলে যিনি মনোয়নয়নপত্র জমা দেবেন তাকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে বিধিমালা অনুযায়ী ভোট হবে।
২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. আবদুল হামিদ। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেয়াদ অবসানের কারণে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির তারিখের আগের নব্বই থেকে ষাট দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। ফলে ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
মানহানির মামলায় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর লোকসভার সদস্য পদও হারিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে তাতে তিনি ভীত নন, বরং উৎফুল্ল। নিজের অবস্থান থেকেও পিছু হটবেন না বলে ঘোষণাও দিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যখন পার্লামেন্টে আমার পরবর্তী বক্তব্য নিয়ে ভীত, তখন আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো। আমি তার চোখে ভয় দেখেছি। এ জন্যই তারা আমাকে পার্লামেন্টে বলতে দিতে চায় না।
গতকাল শনিবার দুপুরে কংগ্রেস সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গৌতম আদানির সঙ্গে বিপেজির সম্পর্ক নিয়ে তার অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শুরু থেকে তিনি যে প্রশ্ন করে চলেছেন, এখনো সেটাই করবেন। শিল্পপতি গৌতম আদানির গোষ্ঠীতে যে ২০ হাজার কোটি রুপি লগ্নি হয়েছে, সেই টাকার উৎস কী? তার সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কই-বা কী?
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্নাটকে এক সমাবেশে রাহুল ‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কী করে?’ মন্তব্য করেছিলেন। ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুরনেশ মোদির করা মানহানির মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয় সুরাটের এক আদালত। সাজা দিলেও রাহুলকে জামিন দেন বিচারক, উচ্চ আদালতে আপিল করতে, তার সাজা ৩০ দিনের জন্য স্থগিতও রাখা হয়। ওই সাজার ওপর ভিত্তি করে পরদিনই লোকসভা সচিবালয় কেরালার ওয়েনাড আসন থেকে নির্বাচিত রাহুলকে পার্লামেন্টে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এসব নিয়ে দেশজুড়ে কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে কংগ্রেস, তার মধ্যেই গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাহুল। তিনি বলেন, তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হোক, কিংবা জেলেই পাঠানো হোক, তিনি তার কাজ চালিয়ে যাবেন।
লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি ভারতে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ চেয়েছেন, বিজেপির এমন অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, আমার নাম সাভারকার নয়, আমি গান্ধী, ক্ষমা চাইব না।
লন্ডনে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে পার্লামেন্টে বলতে স্পিকারকে অনুরোধ করার কথাও জানান সাবেক এই কংগ্রেস সভাপতি।
বলেন, আমার পদক্ষেপ কেবল একটিই, তা হলো সত্যের জন্য লড়া এবং দেশের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে রক্ষা করা। আজীবনের জন্য আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করুক, আজীবনের জন্য জেলে পাঠাক, আমি লড়ে যাব।
রাহুল বলেন, আমি ভারতের জনগণের গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বরের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য এখানে এসেছি। এটাই করে যাব। আমি কারও ভয়ে ভীত নই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।