
বিএনপি এখন পথহারা পথিকের মতো দিশেহারা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি ভুয়া। তাদের কথা লোকে আর বিশ^াস করে না। রাজনীতির মাঠে খেলার সূচনা হয়েছে। এ খেলা পুরোদমে শুরু হলে বিএনপি গণজোয়ারে হারিয়ে যাবে।’
গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন নেতাকর্মীরা আছে, জনগণ নাই। এখন জনগণের কথা নাই। জনগণ ভালো আছে, বিএনপির মন খারাপ।’
বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হায়রে আন্দোলন! যত নেতা বাড়ে, যত জোট বাড়ে, বাড়তে বাড়তে ৫৪। জোয়ার যেটুকু ছিল, ঢেউ এসেছিল কিছু, সেই ঢেউ আর জোয়ার এখন ভাটায় নেমে গেছে। আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, সরকার পতন, জোট গঠন ভুয়া। সব ভুয়া মিলে, ভুয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জলিল ভাইয়ের (আবদুল জলিল) ট্রাম্পকার্ড দেখেছিলাম। ৩০ এপ্রিল (২০০৪)। ফখরুল মনে করেছিলেন, তিনি একটা লাল কার্ড দেখাইয়া দেবেন। আমাদের জলিল সাহেবের ট্রাম্পকার্ডের পরিণতি কী, আমরাও জানি। তখন আপনাদের আমল। ট্রাম্পকার্ডের পরে লালকার্ড। ফলাফল শূন্য। ভুয়া। লালকার্ড, সরকারের পতন, ৫৪ দল, ১০ দফা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার...সবই ভুয়া। এরা ভুয়া নিয়েই আছে।’
‘দেশে একদলীয় বাকশাল শাসন চলছে’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ফখরুলকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘বাকশালটা কী ব্যাখ্যা করেন। বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ। বাকশাল কিন্তু একদল নয়। বাকশাল হচ্ছে জাতীয় দল। সব দলকে নিয়ে, সব মতকে নিয়েই বাকশাল।’
গণ-অভ্যুত্থানের ডাক দিয়ে বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের বলেন, ‘এই ভূখন্ডে গণ-অভ্যুত্থান একটিই হয়েছিল। সেটা ঊনসত্তর সালে। নব্বইয়ের আন্দোলনকে আমি বলব গণ-আন্দোলন। ওটাও গণ-অভ্যুত্থান ছিল না। এরশাদের শিকড় ছিল অত্যন্ত দুর্বল, সেই জন্য গণ-আন্দোলনেই ভীত হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।’
আগামী নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আবারও ষড়যন্ত্র করছে। কারণ তারা জানে এ নির্বাচনে তারা হেরে যাবে। জঙ্গিবাদ, খুন, অত্যাচারসহ সন্ত্রাসী কর্মকা- ছিল বিএনপির। তাই জনবিচ্ছিন্ন কাজের জন্যই জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতারা।
গত ১০ বছরে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে চারগুণের বেশি। বিপরীতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যয় কমে অর্ধেকে নামলেও এ খাতের অগ্রগতি খুবই হতাশাজনক। বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম দেশীয় গ্যাসের চেয়ে অন্তত পাঁচ-সাতগুণ বেশি হলেও আমদানির তৎপরতা যে হারে বেড়েছে, সে হারে বাড়েনি দেশীয় জ্বালানির অনুসন্ধান কার্যক্রম।
গত ১৩ বছরে বিদ্যুতের দাম ১১ আর গ্যাসের দাম বেড়েছে ৬ বার। ধারাবাহিকভাবে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে এ খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও সরকার সেদিকে যাচ্ছে না। বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। পাশাপাশি দেশের জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন না করে এলএনজি আমদানি করছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ার সঙ্গে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। এর পরিণতি ভয়াবহ।’
তিনি বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে সরকার। কিন্তু এ জন্য ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা দরকার। এ টাকা সমন্বয় করে গ্যাস-বিদ্যুতের যে দাম হবে তা সোনার চেয়েও দামি হবে।’ তার মতে, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার কারণেই লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বাড়ছে। আর এটি চাপানো হচ্ছে ভোক্তার ওপর। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে এখন বিদ্যুতের দাম আবার বাড়ানো হচ্ছে। অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর চেয়ে অন্যায় আর কিছু হতে পারে না।
সূত্রমতে, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল ২ টাকা ৬১ পয়সা। এখন তা বেড়ে ১০ টাকা ছাড়িয়েছে। গত ১৮ জানুয়ারি বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ বাড়ানোর ফলে ব্যয় আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ডিজেলে চালিত বিদ্যুকেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গড়ে ৪৩.৪২, ফার্নেস অয়েল থেকে ১৫.৫১, কয়লা থেকে ১২.৭৭, নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌরবিদ্যুৎ) থেকে ১২.৬৪, গ্যাসে চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৩.৪৬, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২.৬৭ এবং আমদানি করা বিদ্যুতের জন্য ৫.৯৫ টাকা ব্যয় হয়েছে।
বর্তমানে দেশে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ১৭.৬২ সেন্ট থেকে ২২.৭১ সেন্ট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে অর্থাৎ ২২.৭১ সেন্ট দরে ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ১৮.৮৯ সেন্ট। বরিশাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম ১৭ দশমিক ৬২ সেন্ট এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম ধরা হয়েছে ১৭.২০ সেন্ট।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ার আগে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় গড়ে ২ টাকা বেড়ে প্রায় ১২ টাকায় দাঁড়াবে। তবে খোলাবাজার থেকে আমদানি করে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ালে এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কাছাকাছি। তবে সৌরবিদ্যুতের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক কমালে দাম আরও কমবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যতটুকু উৎপাদন ততটুকু বিল এ শর্তে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চুক্তি হওয়ায় শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেই তারা বিদ্যুৎ পাবে। কিন্তু তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও ‘ক্যাপাসিটি পেমেন্ট’ হিসেবে অর্থ পরিশোধ করতে হয় সরকারকে। সৌরবিদ্যুতে কোনো জ্বালানি লাগে না। অর্থাৎ জ্বালানি আমদানির জন্য ডলার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুতের দাম ক্রমে বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদ-ে একটা দেশে চাহিদার তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি সক্ষমতা থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশে প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়তি সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ভুল পরিকল্পনার কারণে প্রয়োজন ছাড়াই একের পর এক বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া বা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারকে কেন্দ্র ভাড়া দিতে হয়েছে ১৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলার পাশাপাশি বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন সময়ে নানা পরিকল্পনার কথা বললেও তার অগ্রগতি খুব সামান্য।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় বলা হয়েছে, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ৮৯ শতাংশ কমেছে। এ উৎস থেকে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে তারা কাজ করছেন। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যে অগ্রগতি, তাতে এ লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছানো নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৯৪২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো ২৩০ মেগাওয়াট। সে হিসাবে মোট বিদ্যুতের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিমাণ ছিল ৪.৬ শতাংশ। বর্তমানে দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস হিসেবে গ্রিডভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ থেকে মাত্র ২৫৯ মেগাওয়াট এবং জলবিদ্যুৎ (২০০৯-এর আগে স্থাপিত) থেকে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। শতকরা হিসাবে এর পরিমাণ ২ শতাংশ। এর বাইরে অফগ্রিড সৌরবিদ্যুতের পরিমাণ ৪১৮ মেগাওয়াট। যদিও অফগ্রিড সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার ৭০-৮০ শতাংশ অকেজো হয়ে রয়েছে বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সাইফুল হক বলেন, ‘গত ১০ বছরে দেশে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। কিন্তু দেশে সৌরবিদ্যুতের আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। এ খাতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার। তাহলে বিদ্যুৎ জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে।’
গত ১৩ বছরে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ৪.৭৫ গুণ। এ সময়ে ১৮৫৪০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ গ্রিডে যোগ হয়েছে। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎ এসেছে মাত্র ২৩০ মেগাওয়াট।
জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা বাড়ায় ব্যয় বাড়ছে। ২০০৯ সালে দেশে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি করা গ্যাসসহ মোট উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩৭৬০ মিলিয়ন ঘনফুটে। কিন্তু গড়ে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ২৬০০-২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, গত ১৩ বছরে পাঁচটি নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার এবং কিছু কূপ সংস্কারের মাধ্যমে দেশীয় উৎস থেকে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করছে সরকার। পাশাপাশি সরকার খোলাবাজার থেকে বেশি দামের এলএনজি আমদানি করছে।
দেশে এলএনজি সরবরাহে দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সরবরাহ ক্ষমতা এরই মধ্যে নেমে গেছে ৫০ শতাংশের নিচে। তবু আরও দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি করতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি এবং বাংলাদেশের সামিট গ্রুপ এ টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে।
সূত্রমতে, দেশীয় কোম্পানির উৎপাদিত গ্যাসের খরচ প্রতি ইউনিটে ১ টাকা ২৭ পয়সা। আর দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে উৎপাদিত গ্যাসের খরচ ২ টাকা ৯১ পয়সা। আমদানি করা গ্যাসের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে খরচ প্রায় ৫০ টাকা। বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে এ দাম কমবেশি হয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম মনে করেন, আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ব্যয় বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘স্থলভাগে এখনো যে গ্যাস রয়েছে, তার একটি অংশ আমরা আবিষ্কার করে উত্তোলন করছি। বড় অংশের সন্ধান এখনো আমরা করিনি। আরও বেশি অনুসন্ধান করা দরকার। নিজেদের গ্যাস পেলে জ্বালানির দাম এভাবে বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।’ বিদেশি কোম্পানি ও এলএনজি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে সরকার স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
১২টি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এ ১২টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পূর্বাচল ১০০ ফুট খাল খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন; আজিমপুরে বিচারকদের আবাসন এবং মিরপুর ও তেজগাঁওয়ে কয়েকটি আবাসন প্রকল্প। রমনা পার্কের আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পটিও উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে।
৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এগুলোর উদ্বোধন করবেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গৃহায়নমন্ত্রী মো. শরীফ আহমেদ বলেছেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১২টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে আমরা প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করেছি। রমনা পার্কে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থল হবে। প্রধানমন্ত্রী এসব উদ্বোধন করবেন ভার্চুয়ালি।
জানা গেছে, ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ; ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ; ঢাকার মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ; নোয়াখালী সদরে অফিসার্স কোয়ার্টারে ৩২৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ; ঢাকার রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রমনা লেকসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সার্বিক সৌন্দর্যবর্ধন; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার লাইব্রেরি ভবন, এনেক্স ভবন ও অডিটরিয়াম নবায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ, মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১৪ তলা ভবনে ১২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ; সিলেটের সুনামগঞ্জে সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন; কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের দুই পাশে ১০০ ফুট খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১২ দশমিক ৫০ কিমি দীর্ঘ খাল, ১২ কিমি কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোড, ৫টি এট-গ্রেড ইন্টারসেকশন, ৬টি ব্রিজ, ৯টি আর্চ ব্রিজ, ২টি আন্ডারপাস, ৬টি ফুটওভার ব্রিজ, ২ কিমি জিআরপি পাইপলাইন স্থাপন, ২টি সøুইচগেট ও পাম্পহাউজ নির্মাণ এবং পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, পলখান উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্বাচল আদর্শ কলেজ ভবন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন হবে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ১০০ মিটার খাল প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হবে। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত বর্ষা মৌসুমে কুড়িল, ডিওএইচএস বারিধারা, সেনানিবাস ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ড্যাপ অনুযায়ী ডুমনি, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ এলাকার নকশা ঠিক রাখা ও পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো, ভবিষ্যতে ঢাকা শহরের বর্ধমান ট্রাফিক পরিস্থিতি সামলানো এবং কুড়িল ও আশপাশের এলাকায় নগরায়ণের কথা চিন্তা করে ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখতে ফ্লাইওভার ও এট-গ্রেড ইন্টারসেকশন তৈরি করা হয়েছে।
কুড়িল প্রভৃতি এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য পাইলের মাধ্যমে জিআরপি পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে কুড়িল, নিকুঞ্জ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বারিধারা ডিওএইচএস, ঢাকা সেনানিবাস, বসুন্ধরা, কাওলা, জোয়ার সাহারা, বরুয়ার জলাবদ্ধতার নিরসন হয়েছে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) উল্লিখিত ডুমনী, বোয়ালিয়া ও এডি-৮ খাল পুনরুদ্ধার করে এর উন্নয়ন ও ধারণক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এখানে আরেকটি প্রকল্প হলো পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫৯২ কোটি টাকা। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে পূর্বাচলে নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা সম্পন্ন করাসহ চারটি ফেইজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১০টি ১৪ তলা ভবনের ‘স্বপ্ননগর-১’-এ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১৪ তলাবিশিষ্ট ১০টি ভবনে ১৫৪৫ বর্গফুট আয়তনের ৫২০টি, ১৩৩৮ বর্গফুট আয়তনের ৪১৬টি ও ৮৭৮ বর্গফুট আয়তনের ১০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১০০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে উদ্বোধনের তালিকায়।
গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ফুসফুস হিসেবেখ্যাত রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সার্বিক সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে পার্কের দুই ধারে লেকের ওপর কাঠের ডেক, চারটি আধুনিক টয়লেট, সিরামিক ব্রিকের কালভার্ট, রমনা চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও শিশু কর্নার রয়েছে।
এ বছর শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই তুলে দেওয়ার পর থেকেই বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। ইন্টারনেট থেকে হুবহু কপি করা, ভুল তথ্য, ইতিহাস বিকৃতি, মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য বাদ, বিতর্কিত তত্ত্ব, ইসলামবিরোধী ছবিসহ নানা কিছু নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সপ্তম শ্রেণির একটি বইয়ের ভুলে দায় স্বীকার করে নিয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দুটি কমিটি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে বড় ধরনের সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বছর স্কুলগুলোতে তা সংশোধনী আকারে পাঠানো হবে। আগামী বছর এসব ভুল সংশোধন ও বইগুলোতে বড় ধরনের পরিমার্জন করা হবে।
সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ডারউইনের তত্ত্ব শেখানো নিয়ে। এ তত্ত্ব ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী বইয়ের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। মূলত বোঝানো হয়েছে, কালের বিবর্তনে বানর থেকে ধাপে ধাপে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘খুঁজে দেখি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস’ ঠিক তার পরের পৃষ্ঠায় অর্থাৎ ১১৫ পৃষ্ঠায় ‘বিভিন্ন সময়ের মানুষ’ শিরোনাম দিয়ে চারটি ছবির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মানুষ আগে মূলত বানর ছিল। আর তারপরই কয়েকটি ধাপে বানর থেকেই মানুষের আকৃতি রূপান্তরিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ডারউইনের মতবাদ বহু পুরনো এবং তা প্রতিষ্ঠিত নয়। তবে তা আগে ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ানো হতো। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের তা পড়ানো হতো। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে তা ষষ্ঠ শ্রেণিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানায়, নতুন শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি নিয়ে ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে আলোচনা হয়েছে, ডারউইনের মতবাদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে না রাখলেও চলবে। তাই এ বিষয়টি বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। তবে যেহেতু ভুলত্রুটি সংশোধনে কমিটি করা হচ্ছে, তাই তা বাদ দেওয়া হলে তাদের মাধ্যমেই করা হবে। সবচেয়ে বেশি সংশোধন হচ্ছে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান বইয়ে। এ দুটি বই নিয়ে বৈঠকে বেশি আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া শিল্প সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা ও ধর্মশিক্ষা বইতে বড় সংশোধন করা হবে। অন্যান্য বইতে মূলত ভুলত্রুটি সংশোধন হবে।
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘আমরা এ বছরের বইয়ের পা-ুলিপি চূড়ান্ত করার আগে যেসব ছবি বাদ দিয়েছিলাম, সেগুলোও থেকে গেছে। অতএব সরষের মধ্যেও কোনো ভূত আছে কি না তা আমরা খুঁজে দেখব। ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবেদনশীল কোনো বিষয় থাকলে আমরা নিশ্চয়ই নজর দেব। আওয়ামী লীগ কখনোই ধর্মবিরোধী বা বিদ্বেষী কিছু করেনি।’
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নামেও ভুল করা হয়েছে। শেখ বাদ দিয়ে শুধু লেখা হয়েছে লুৎফর রহমান। ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘ছেলেবেলার মুজিব’ শিরোনামে ৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারি অফিসের কেরানি। অথচ তিনি ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার। পদটি আজও দেশের সব জেলা জজ আদালতে বহাল আছে। কেরানি শব্দটি সাধারণত তাচ্ছিল্য করে বলা হয়। একই পৃষ্ঠার দুই জায়গায় কেরানি শব্দটা লেখা হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাবার নামের সঙ্গে ‘শেখ’ শব্দ যুক্ত করা হয়নি। ওই বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় ‘ভাষা আন্দোলন’ শিরোনামে আন্দোলনের বর্ণনায় কোথাও বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরা হয়নি। একই বইয়ের তিন জায়গায় কোথাও ‘বাঙালি’ হ্রস্ব ইকার দিয়ে, কোথাও ‘বাঙালী’ দীর্ঘ ঈ কার দিয়ে, আবার কোথাও লেখা হয়েছে, ‘বাঙ্গালি’।
ষষ্ঠ শ্রেণির একই বইয়ের ৭৭ পৃষ্ঠায় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম সরকার’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, কর্নেল ওসমানীকে জেনারেল পদ দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি করা হয়। শুদ্ধ হচ্ছে, তিনি কর্নেল পদে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিনায়ক। আর দেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার পর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভুলত্রুটি সংশোধনে যে কমিটি হবে তারা দ্রুততার সঙ্গে তাদের কাজ শেষ করবে। ডারউইনের মতবাদ পড়া মানে তা বিশ^াস করা নয়। আবার এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিতও নয়। ফলে কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমরা কারও সেন্টিমেন্টে আঘাত দিতে পারি না। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম বছর ভুলত্রুটি কিছু থাকতে পারে, আগামী বছর তা অনেকটাই কমে আসবে।’
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৭০ পৃষ্ঠায় ‘রাজনৈতিক সংযোগ’ শিরোনামে লেখা হয়েছে তোমরা তো জানো ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিজ বাড়িতে গ্রেপ্তার বরণ করার আগে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রাম যেন এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার বরণ করেছেন, অর্থাৎ স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। যা কোনোভাবেই সঠিক নয় বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদরা।
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠায় ‘নতুন পরিচয়’ অনুচ্ছেদে শরীফার গল্প অংশে শিক্ষার্থীদের জন্য গল্পে গল্পে শেখানো হয়েছে একজন ছেলে তার চিন্তা থেকেই এবং আচরণগত পরিবর্তন করে নিজেকে মেয়ে পরিচয় দিতে পারে। এমনকি একজন ছেলে তার ইচ্ছার কারণে নিজেকে মেয়ে হিসেবেও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠবইয়ে ১১তম অধ্যায়ের ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে কিশোর-কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকালে তাদের শরীরের নানা অঙ্গের যেভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে প্রকাশ্যে তা পড়ার উপযোগী নয় বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। একই বইয়ের ১২২ পৃষ্ঠায় মেয়ের বিভিন্ন অঙ্গের যেভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা আরও আপত্তিকর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৯৫ পৃষ্ঠায় বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসনকে আগেকার মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য এবং পরের ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শাসনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সুলতানি শাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আলোচনা করা হয়েছে। ইতিহাস অংশে মুসলিম নেতৃত্বকে খাটো করে দেখা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের অনেক বই মাদ্রাসায় পাঠদানের উপযোগী নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। কারণ সেখানে যেভাবে যেসব ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তা মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে মেলে না। তাই অনেক মাদ্রাসায় কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো দেওয়া হয়নি। আবার কোনো বইয়ের কিছু অধ্যায় তারা পড়াবেন না বলেও নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস চলতি বছরের হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ৭০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বিমানের এ সংক্রান্ত প্রস্তাব বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। প্রস্তাবিত ভাড়া অযৌক্তিক এবং সংশোধনের দাবি করেছে হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
গত বছর হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চলতি বছর তা ২ লাখ ১০ হাজার ৩৩৭ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বিমান।
বিমান বলছে, গত বছর হজ মৌসুমের তুলনায় চলতি বছর জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার ২১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি বিমানের।
প্রতি বছর বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। মন্ত্রিসভা বৈঠকে এসব প্যাকেজ অনুমোদন করার রেওয়াজ থাকলেও নতুন হজ আইনের কারণে তা আর মন্ত্রিসভায় তোলা হয় না। হজসংক্রান্ত নির্বাহী কমিটি এসব প্যাকেজ অনুমোদন করে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত নির্বাহী কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও হাবের নেতারা রয়েছেন। এ নির্বাহী কমিটির প্যাকেজের আলোকে এজেন্সিদের সংগঠন হাবও একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করে।
সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের হজ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে গত ৯ জানুয়ারি। এতে পূর্ণ কোটাই পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।
দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর এখন হজ প্যাকেজ ঘোষণার পালা। প্যাকেজ ঘোষণার অন্যতম উপাদান হলো বিমান ভাড়া। বিমান ভাড়া নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা একমত হতে পারছেন না।
হাব সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিমান হয়তো এই ভাড়া প্রস্তাব করেছে। আলোচনার টেবিলে ভাড়া চূড়ান্ত হবে। হজযাত্রীদের বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় কাজ করে। একদিকে হজযাত্রীরা মনে করেন বিমান বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অন্যদিকে বিমান মনে করে তারা কম ভাড়া নিচ্ছে। উভয়পক্ষের অবস্থানের কারণে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়। এই সংকট নিরসন হতে পারে টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে। যেখানে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি স্টেকহোল্ডাররা থাকবেন। বাস ভাড়ার ক্ষেত্রেও এ ধরনের কমিটি হয়। এ ক্ষেত্রেও টেকনিক্যাল কমিটি হতে পারে।’
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানের ভাড়া চূড়ান্ত হলেই তারা প্যাকেজের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারবেন। বিমান ভাড়া ছাড়া প্যাকেজের অন্যান্য উপাদান প্রায় সবই চূড়ান্ত হয়েছে। এখন বিমান ভাড়া চূড়ান্ত হওয়ার পালা। প্রতি বছরই বিমান ভাড়া নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতেও বিলম্ব হয়। এতে সাধারণ হজযাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হন।
বাংলাদেশ থেকে যে হজযাত্রী যান তার অর্ধেক বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং বাকি অর্ধেক সৌদিয়া ও ফ্লাইনাজ এয়ারলাইনস বহন করে। বিমান হজযাত্রী বহনের জন্য যে ভাড়া নির্ধারণ করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনসগুলোও একই ভাড়ায় যাত্রী বহন করবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, বিমান অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে সৌদি এয়ারলাইনসগুলোকেও উচ্চহারে মুনাফা করার সুযোগ দিচ্ছে। অর্ধেক হজযাত্রী বহন করার শর্ত হিসেবে এ বছরও বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব ৬৩ হাজার ৫৯৯ জন হজযাত্রী বহন করবে। প্রস্তাবিত ভাড়া চূড়ান্ত হলে সৌদি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহন করে নিয়ে যাবে প্রায় ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা।
একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া বেশি। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরব যেতে হয় বেশি ভাড়া দিয়ে। এমনকি মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার এয়ারলাইনসগুলো তাদের স্বদেশি হজযাত্রী বহন করে বাংলাদেশ বিমানের ভাড়ার তুলনায় অনেক কম টাকায়। তাছাড়া স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা-জেদ্দা রুটে আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়া সর্বোচ্চ ৯০ হাজার টাকা হলে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কেন ২ লাখ ১০ হাজার হবে?
মহামারী করোনার কারণে ২০২০ ও ’২১ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সীমিত পরিসরে হজ আয়োজন করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে সে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে গত বছর হজযাত্রীদের আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় মক্কা নগরী। যদিও সৌদি সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়মে স্বাভাবিকের চেয়ে কমসংখ্যক হজযাত্রী হজ পালনের সুযোগ পান।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর ৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালন করবেন। এর মধ্যে বহির্বিশ্ব থেকে প্রায় ২০ লাখ এবং স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ মুসলমান হজে অংশ নেবেন। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে ২৮ জুন।
২০১৬ সাল থেকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে রাজধানীর জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউট (নিকডু) এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ডায়ালাইসিস সেন্টার পরিচালনা করে আসছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্যানডোর। সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এ সেন্টারে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ডায়ালাইসিস করার কথা প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু এসব নিয়মের অনেক কিছুই মানা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও রোগীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিকডুর ডায়ালাইসিস সেন্টারের চিকিৎসক ও রোগীরা দেশ রূপান্তরকে জানান, কিডনি রোগীর একবার ডায়ালাইসিস করতে ডায়ালাইজারসহ ২৫ ধরনের উপকরণ লাগে। কিছু উপকরণ বারবার ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ডায়ালাইজার ব্যবহার করা হচ্ছে ছয়বার। অথচ স্যানডোর এসব উপকরণ প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রে একবার ব্যবহার দেখিয়ে বিল করছে। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের উপকরণ। এমনকি রোগীর প্রকৃত তথ্য গোপন করে প্রতি বছর মিস কেস (ডায়ালাইসিস না করিয়ে) হিসেবে বিল করছে পৌনে এক কোটি টাকার মতো। আর এসব অভিযোগের কারণেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্যানডোর বিল আটকে দিয়েছে। স্যানডোরের হিসাবে, সরকারের কাছে তাদের পাওনা হয়েছে ৩১ কোটি টাকার মতো।
গত সোমবার সরেজমিনে নিকডুতে ডায়ালাইসিস নেওয়া রোগী, রোগীর স্বজন ও হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের খোঁজ নিয়ে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় গত রবিবার স্যানডোর নিকডুতে ছয় ঘণ্টা এবং পরদিন সোমবার তিন ঘণ্টা ডায়ালাইসিস বন্ধ রাখে। পূর্ব ঘোষণা না থাকায় এ সময় ডায়ালাইসিস নিতে আসা রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ সময় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়, শিগগির বকেয়া বিল পরিশোধ করা না হলে ভবিষ্যতে ডায়ালাইসিস সেন্টার পরিচালনায় সমস্যা হতে পারে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মিস কেসের বিষয়টা জানা আছে। আমরা বিষয়টা দেখছি। অবৈধভাবে বেশি টাকা নিতে পারবে না।’
নিকডুর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ডেপুটি পরিচালক) ডা. আকতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরেকে বলেন, ‘হাসপাতালের কিছু মেশিন আছে, সেখানে ভর্তি রোগীদের ডায়ালাইসিস আমরা নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে ও দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে নিজেরাই করি। কিন্তু সরকারের সঙ্গে স্যানডোরের চুক্তি থাকায় পার্টনারশিপে পরিচালিত ডায়ালাইসিস সেন্টারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা চাইলে ডায়ালাইসিস মেশিন বৃদ্ধি করতে পারি না। আবার যদি সরকারের নির্দেশ আসে, আমাদের মেশিন দেয়, তাহলে ব্যাপকভাবে সরকারিভাবেই ডায়ালাইসিস চালু করতে পারব।’
নিকডুর হিসাবরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ১৯ হাজার ৫০০ সেশন ডায়ালাইসিস দেওয়ার কথা। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৫০ সেশন দেওয়ার কথা বিনামূল্যে। সে হিসেবে বিনামূল্যে দেওয়ার কথা মোট ডায়ালাইসিসের ১০ শতাংশ। কিন্তু সে নিয়ম মানছে না প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তির পর মোট ডায়ালাইসিসের সংখ্যা বাড়লেও, সে অনুপাতে বিনামূল্যে ডায়ালাইসিসের সংখ্যা বাড়ায়নি স্যানডোর। এখান থেকে তারা একটি মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
নিকডুতে স্যানডোর সেন্টারের হিসাব শাখা থেকে জানা গেছে, ডায়ালাইসিস সেন্টারে থেকে গত বছর ২৯ হাজার ৫০০ সেশনের বেশি ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। করোনা মহামারীর সময় এ সংখ্যা ছিল ৮০-৯০ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ১১০ সেশন ডায়ালাইসিস দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিদিন কিছু রোগী নানা কারণে ডায়ালাইসিস নিতে আসে না, তাদের মিস কেস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবার কেউ মারা গেলে মৃত্যুর তথ্য সেন্টারে না এলে সেটাও মিস কেস হিসবে থাকে। এ সেন্টারে প্রতি মাসে ১০-১২ জন রোগী মারা যায়। মৃত্যুজনিত এবং কোনো কারণে ডায়ালাইসিস নেননি এমন ‘মিস কেস’র সংখ্যা সপ্তাহে ৩০-৩৫ সেশন।
নিকডুর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিকডুর পাশাপাশি চমেকেও সপ্তাহে ৩০-৩৫ সেশন মিস কেস থাকে। অর্থাৎ দুই হাসপাতালে সপ্তাহে মিস কেসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ সেশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দুটি হাসপাতালের মধ্যে বর্তমানে নিকডুতে ৬৯টি ও চমেকে ৩৫টি মেশিনে সেবা দেয় স্যানডোর। বর্তমানে এ দুই হাসপাতালের মধ্যে সরকারিভাবে ভর্তুকি মূল্যে নিকডুতে ৩৭৪ এবং চমেকে ৩৬০ রোগীসহ ৭৩৪ জন ডায়ালাইসিস সেবা পাচ্ছেন। এর বাইরে যদি কোনো রোগী এই সেন্টারে ডায়ালাইসিস করাতে চান তাহলে বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা দিয়েই ডায়ালাইসিস নিতে হয়। যারা সরকারি ভর্তুকি পান তাদের দিতে হয় ৫৩৫ টাকা।
নিকডুর কর্মকর্তারা জানান, স্যানডোরের হিসাবেই প্রতি বছর ৩ হাজার ১২০ সেশন মিস কেস হিসেবে থাকে। সে হিসেবে বিল আসে ৭৪ লাখ ৮৮ হাজার। গত ছয় বছরে ৬ কোটির টাকার বেশি বিল করেছে। অথচ এসব রোগীকে ডায়ালাইসিস দিতে হয়নি।
নিকডুর ডায়ালাইসিস সেন্টারে (স্যানডোর) ব্যবস্থাপক নিয়াজ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একবার (এক সেশন) ডায়ালাইসিস করতে ডায়ালাইজারসহ ২৫ ধরনের ইক্যুইপমেন্ট লাগে। কিছু ইক্যুইপমেন্ট রিইউজ (বারবার ব্যবহার) করা হয়। এর মধ্যে ডায়ালাইজার ছয়বার ব্যবহার করা হয়। এতে প্রতি সেশন খরচ হয় ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। আর যেসব মিস কেসের কথা বলা হচ্ছে, সেসব রোগীর জন্য আমাদের খরচ হয়। কারণ তাদের ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা রাখতে গিয়ে উপকরণ, জনবলসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের খরচ হয়। সুতরাং সেই বিল আমাদের ধরতেই হবে।’
ডায়ালাইসিসের উপকরণ ব্যবহারের নিয়ম জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ও ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হলে প্রত্যেকটি উপকরণ একবারই ব্যবহার করার নিয়ম। আমাদের দেশে বহু প্রতিষ্ঠান আছে তারা এসব উপকরণ একাধিকবার ব্যবহার করে। একটি ডায়ালাইজার সর্বোচ্চ দুই-তিনবার ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সেটি কেউ কেউ ৬-১০ বারও ব্যবহার করে। এতে রোগীর যে উপকার হওয়ার কথা, তার চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্যানডোর বিল আটকে যাওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে। তার মধ্যে মিস কেস, মৃত ব্যক্তি ডায়ালাইসিস নিয়েছে দেখিয়ে বিল করার অভিযোগ রয়েছে। চুক্তিপত্রে কিছু ত্রুটি থাকায় প্রতি বছর ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি কারণে বর্তমানে ডায়ালাইসিস খরচ বেড়ে ২ হাজার ৯৩৫ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বেসরকারিভাবে এর চেয়েও কম খরচে ডায়ালাইসিস নেওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি স্যানডোর আরও ১৭টি হাসপাতালে তাদের সেবা বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। এটা পেয়ে গেলে সরকার আরও বেকায়দায় পড়বে।
কিডনি বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, দেশে দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন। তাদের মধ্যে ৪০ হাজারের মতো মানুষের ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। মাত্র ১০ হাজার মানুষ এ সুযোগ পান। এ ছাড়া রোগে আক্রান্ত প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিস করতে পারেন না। আর যারা ডায়ালাইসিস শুরু করেন তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগী অর্থাভাবে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন এবং ৫০ শতাংশ রোগী দুই বছরের মধ্যে মারা যান।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।