
বিরোধী দল থেকে ছিটকে পড়া বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসুক আওয়ামী লীগ চাইলেও দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও সমমনা অন্য দলগুলো তা চায় না। নির্বাচনী মিত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসুক তা চায় না। আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস মিলেছে। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও শরিক দলের এমন চাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, ভোটে বিএনপি অংশ নিলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকা অন্য দলগুলোর চাওয়া-পাওয়ায় অপূর্ণতা থেকে যাবে বলে তারা মনে করছেন। আসন ভাগাভাগিসহ শরিক দলের নানা চাওয়ায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে এটাও ভাবছেন তারা।
জাতীয় পার্টি নির্বাচনে বিএনপিকে না চাওয়ার কারণ সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতারা বলেন, সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসা নিশ্চিত রাখতে তারাও বিএনপিকে নির্বাচনে দেখতে চায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি যেসব দাবি-দাওয়া জানিয়েছে, তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাদের ক্ষমতার চেয়ারে বসাতে হবে। সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে বিএনপির সংবিধানের বাইরে চাওয়া মেনে নেওয়া অসম্ভব। ওই নেতা বলেন, নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি যা চায় তা মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৯ আসন নিয়ে বিএনপি বিরোধী দলের আসনে বসলেও ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে নির্বাচন ঠেকানোর জন্য আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ফলে জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দলীয় আসনে বসে। ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি সাতটি আসন পায়।
১৪ দলীয় জোটের শরিক ধর্মভিত্তিক দলের শীর্ষ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনে বিএনপি এলে অংশগ্রহণমূলক হবে, না এলে হবে না এ ধারণা থেকে দেশি-বিদেশি সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি ছাড়াও এ দেশে নির্বাচন হয়েছে, আগামী নির্বাচনও হবে। এ নেতা বলেন, জোটের অনেক বৈঠকে তিনি আওয়ামী লীগকে এ পরামর্শ দিয়েছেন। কারও অন্যায় চাওয়া মেনে নিয়ে তাদের নির্বাচনে আনার পদক্ষেপ নিতে তার দল ও জোটের আরও কয়েকটি দল আওয়ামী লীগকে নিরুৎসাহিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা শরিক দলের এ পরামর্শ আমলে নেননি। তারা মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। সরকারও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এ প্রত্যাশা করেন তারা। নির্বাচন প্রশ্নে শরিক দলগুলোর অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বলে দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিম-লীর এক সদস্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলই অংশগ্রহণ করুক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, সুষ্ঠুু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তরিক।’ তিনি বলেন, কোন দল নির্বাচনে আসবে, কোন দল আসবে না সেটা একেবারেই নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
জানা গেছে, বিএনপিকে ভোটে না চাওয়ার কারণ একেবারেই ওই দলগুলোর রাজনৈতিক স্বার্থে। বিএনপি ভোটে না এলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষিতে যাওয়া সহজ হবে এমনটাই মনে করে শরিকরা। বিএনপি ভোটে এলে জয়ের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছোট দলগুলোর দরকষাকষি ঠিক জমে উঠবে না। কারণ, তখন আওয়ামী লীগের মাথায় জয়ের হিসাব-নিকাশই থাকবে বেশি।
জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতাও দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় পার্টির সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসা অনিশ্চিত হয়ে যাবে এ শঙ্কায় বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসুক তা চায় না। বিএনপি নির্বাচনে এলে সংসদে বিরোধী দলের আসন হারাবে জাতীয় পার্টি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সবাই সবার মতো করে রাজনৈতিক স্বার্থ দেখছে। জাতীয় পার্টিসহ আমাদের শরিক দলগুলোর ভেতরে এমন কিছু চাওয়া রয়েছে সেটা তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলোচনায় ও বৈঠকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।’ তারা বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপিকে বাইরে রেখে এবারে নির্বাচন করা ঠিক সহজ হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সরকারের ওপর চাপ আছে বিদেশিদের। আছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপও। কোনো রাষ্ট্র এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সরকারকেই। এ পরিস্থিতিতে সে চাপ কাটিয়ে যেনতেন নির্বাচনের সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির ভেতরে ইতিবাচক দিকে থাকতে বিদেশি চাপ আছে। আবার বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও মনে করেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটবে বিএনপির। তাই নির্বাচন বর্জন নয়, নির্বাচন ঠেকাতে চাইবে তারা। নির্বাচন ঠেকাতে না পারলে বর্জন করবে না বিএনপি। নির্বাচন বর্জন করে রাজনীতি থেকে একেবারে হারিয়ে যাওয়ার রিস্ক এবার আর বিএনপি নেবে না। সভাপতিম-লীর ওই সদস্য আরও বলেন, বিএনপি তাদের দাবি আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সম্ভব না হলে শেষমেশ নির্বাচনে আসবে। কারণ, বিএনপি সরকারে না আসতে পারলেও সংসদের বাইরে আর থাকতে চায় না। সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে মাঠে থাকতে পারলে সফলতা আসবে এ চিন্তায় নির্বাচনে আসবেই বিএনপি।
ফলে ক্ষমতাসীন দলের জোটসঙ্গী ও সমমনারা বিএনপি ভোটে আসুক তা না চাইলেও রাজনৈতিক পূর্বাপর পরিস্থিতিতে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন তুলতে অনাগ্রহী আওয়ামী লীগও। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে একেবারেই সব ছেড়ে-ছুড়ে দেওয়ার মানসিকতাও দেখাবে না আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সত্য হলো, নির্বাচন ইস্যুতে বিদেশি চাপ যেমন সরকারের ওপর আছে, তেমনি বিএনপির ওপরও থাকবে। গত দুই দফার সংসদ নির্বাচনে বিদেশি শক্তিগুলোর নানা মত থাকলেও বিএনপি এবার নির্বাচনের বাইরে থাকুক তেমন ‘ব্যবস্থাপত্র’ নেই। ফলে বিএনপিও নির্বাচন বর্জন করবে না। আবার নির্বাচনে থাকবে সেই ঘোষণাও এখনই দেবে না বিএনপি। শেষ বেলায় নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে বিএনপি। এখন মাঠে অনড় থেকে কতটুকু দাবি আদায় করতে পারে সে চেষ্টায় আন্দোলন ও অনমনীয় অবস্থানে আছে দলটি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও শরিকরা জোট ছেড়ে যায়নি। হতাশার কথা জানালেও জোটে থেকেও গিয়েছিল অধিকাংশ দল। শেষ পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে জোট বিলুপ্ত করে। শরিকরা আলাদা জোট গঠন করে বিএনপির দাবি-দাওয়া সমর্থন করে তাদে সঙ্গে থেকে যায়। জোটের অন্তত চারজন নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, এখনো তাদের হতাশা আছে। কিন্তু অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কারণে বিএনপির সঙ্গে তারা থাকছেন।
গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন হঠাৎ করেই ২০ দলীয় জোট বিলুপ্তির ঘোষণা করে বিএনপি। দলটির গুলশানের কার্যালয়ে জোটের সব শরিককে ডেকে জানানো হয়, আজ থেকে যার যার মতো চলবে। দলগুলোর কেউ আজ থেকে জোটের পরিচয় দেবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসবে-২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আঁচ করতে পারলেও আগ বাড়িয়ে কথা বলেনি শরিকরা।
জোটের ওই বৈঠকেই শরিক নেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন অনানুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্তির এ ঘোষণা দেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। হতাশা ব্যক্ত করে জোট নেতারা তাকে জানান, অন্তত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জোট বিলুপ্তির ঘোষণা আসতে পারত। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করেন নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপির ঘোষণার পর অনেকটা কূল ছাড়া সাগরে পড়ে জোটসঙ্গীরা। উপায়ান্তর না দেখে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নতুন জোট গঠনের তৎপরতা শুরু করেন। দুভাবে বিভক্ত হয়ে ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নামে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গেই থাকে তারা।
জানতে চাইলে যুগপৎ আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘২০ দলীয় জোটকে নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতিবাচক ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছিল, সেটি ভেঙে দিতে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই আমরা এটি করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আমরা দেখাতে চেয়েছি বিএনপির রাজপথে বড় একক শক্তি এবং দেশের আপামর জনগণ দলটির সঙ্গে আছে। আবার যারা বিএনপির সঙ্গে আছে, তাদেরও একক অস্তিত্ব রয়েছে। তারাও কর্মসূচি পালন করতে পারে।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানান, গত দুই যুগে ২০ দলীয় জোটের (আদতে ২৩ দল) কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ছাড়া মূলত কারোই সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না। শক্তি-সামর্থ্যরে দিকে অনেক পিছিয়ে। মঞ্চে বক্তৃতার জন্য জোটের শীর্ষ নেতারা উন্মুখ হয়ে থাকলেও অধিকাংশেরই কর্মী সংকট থাকত। দেশি-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংখ্যার তত্ত্ব বিএনপি দেখাতে পারলেও এসব দলের দুই-একজন ছাড়া অধিকাংশেরই সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। বিরোধীপক্ষের মুখ বন্ধ রাখতে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও এই সিদ্ধান্ত নিতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতা বলছেন, বিএনপি না চাইলেও নানা কারণে বিএনপির সঙ্গে থাকতে চান তারা। বিএনপির নেতৃত্বে থাকা মানে মিডিয়া কভারেজ পাওয়া। দলকে টিকিয়ে রাখতে, জনগণের কাছে যেতে চাইলে মিডিয়া কভারেজের বিকল্প নেই। বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে যে মিডিয়া কভারেজ হয়, এখন যুগপৎ আন্দোলনে তার সিকিভাগও হয় না। দ্বিতীয়ত, বিএনপির নেতৃত্ব স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব জায়গায় সুবিধা মেলে। নির্বাচন এলেই জোটের শীর্ষ নেতারা সংসদ নির্বাচনের জন্য জোট থেকে মনোনয়ন চান। মনোনয়ন মিললে সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা থাকে। জেলা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, ইউপি নির্বাচনে জোটের মনোনয়নে জনপ্রতিনিধিও হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে বিএনপি না চাইলেও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাদের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে এসব দলকে।
আবার বিএনপির একেবারে ছেড়ে দিতে চায় না দলগুলোকে। তাই প্রকাশ্যে ও পর্দার অন্তরালে নানাভাবে তাদের সহায়তা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নজরুল ইসলাম খানকে। সংগঠিত হওয়া, আন্দোলনে থাকার পরামর্শ তার কাছ থেকেই আসে বলে জোটের একাধিক নেতা জানান।
বিএনপি জোট ভাঙায় কোনো ক্ষোভ রয়েছে কি না এমন প্রশ্ন ছিল বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপির) একাংশের মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিমের কাছে। তিনি বর্তমানে ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বলা নেই, কওয়া নেই, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া না মেনেই গত ডিসেম্বরের ৯ তারিখ আমাদের ডেকে বলে দেওয়া হলো ২০ দলীয় জোট আজ থেকে থাকবে না। এমনটা যে হবে সেটি ২০১৮ সালের পর থেকেই জোটসঙ্গীরা ধারণা করতে পারছিলেন। কিন্তু জোট যে প্রক্রিয়ায় গঠন হয়েছিল ভেঙে দিতেও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারত। জোট ভাঙার পেছনে তারা কোনো জোরালো যুক্তিও উপস্থাপন করেনি। ওই ঘোষণা পর জোটের সব শরিকের মধ্যেই চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু তারা সেটি প্রকাশ করছেন না।’
একাধিক শরিক নেতার আক্ষেপ, সারা বছর বিএনপির সঙ্গে থেকে রাজপথে সংগ্রামে থাকেন তারা। অথচ নির্বাচন এলেই বিভিন্ন নামে নতুন জোট তৈরি করে তাদের অবহেলিত রাখা হয়। বিএনপির দুর্দিনে তাদের দেওয়া কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোট ভাঙা পর্যন্ত খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিসহ কয়েকজন নেতা জেল খেটেছেন। আবার নানা চাপে জোট ত্যাগ করেন ন্যাপ ভাসানী, ইসলামী ঐক্যজোট, এনডিপি, এনপিপি, খেলাফত মজলিসের একাংশের নেতারা।
১২ দলীয় জোটের এক নেতা বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকেই জোটের শরিকদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছে। গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় রাখে বিএনপি। এবারও গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলে দীর্ঘ বছরের জোট বিলুপ্তি করল। বিলুপ্ত করার আগে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করল না বিএনপি।
১৯৯৯ সালে বিএনপি, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, অবিভক্ত ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে গঠন করা হয় চারদলীয় জোট। ২০০১ সালের নির্বাচনের কিছুদিন আগে এরশাদ চারদলীয় জোট ত্যাগ করেন। জাতীয় পার্টির তৎকালীন মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি) রয়ে যায় এ জোটে। ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে ব্যস্ত ছিল। বাতিল হয়ে যায় তাদের নিবন্ধন। আরেক শরিক ইসলামী ঐক্যজোট কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পরে চার দলকে সঙ্গে রেখেই ২০১২ সালে গঠিত হয় ১৮ দলীয় জোট। পরে জাতীয় পার্টি (জাফর) এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলকে নিয়ে করা হয় ২০ দলীয় জোট।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে নিয়ে বিএনপি গঠন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এ অভিমানে বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং এনডিপির মূল নেতারা জোট ত্যাগ করেন। পরে অবশ্য ত্যাগ করা জোটের একাংশ নেতাদের নিয়ে জোট জিইয়ে রাখে বিএনপি।
ডিজিটাল সংযোগ দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্য ডিজিটাল সংযোগ মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩-এর উদ্বোধন উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও বার্তায় তিনি ডিজিটাল পণ্য বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় তিন দিনের এ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার’ আয়োজন করেছে। দেশের আইটি ও আইটিইএস পণ্য ও সেবাগুলো প্রদর্শনই এ মেলার লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল বাস্তবতা, উদ্দীপিত বাস্তবতা, রোবোটিকস অ্যান্ড বিগ ডেটা সমন্বিত ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে চায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলে ফাইভ-জি সেবা নিশ্চিত করা হবে।’
ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্ম এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখছে।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচনী অঙ্গীকারে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশি জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, তার সরকার ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করেছে, যা সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের স্যাটেলাইট পরিবারের ৫৭তম গর্বিত সদস্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে বহুমুখী কার্যক্ষমতা সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে আর বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হবে না।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন কেব্ল স্থাপন করতে যাচ্ছে। কারণ ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা ৭২০০ জিবিপিএসে উন্নীত করা হবে। তৃতীয় সাবমেরিন কেব্ল স্থাপনের পর এটি ১৩২০০ জিবিপিএসে উন্নীত হবে। সৌদি আরব, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া ও ভারতকে ব্যান্ডউইথ লিজ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৪ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার আয় করছে।
সরকারপ্রধান উল্লেখ করেন যে, সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৯৮ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ গিগাবাইট ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে; যা জনগণ ও সরকারি অফিসগুলোতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে ৮ হাজার ৬০০টি পোস্ট অফিসকে ডিজিটালে পরিণত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ডিজিটাল বৈষম্য এবং দামের পার্থক্য দূর করা হয়েছে।
প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ‘এক দেশ এক দরের’ একটি সাধারণ শুল্ক চালু করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা চালু করার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অ্যাসোসিও (এএসওসিআইও)-২০২২ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকম খাতে প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে ১৪টি ক্যাটাগরিতে প্রথম প্রবর্তিত পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান বক্তব্য রাখেন।
আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, প্রস্তুতি নিচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবনে কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের পর সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন তদারকি করতে আসবে এবং তারা স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং এর ওপর এবং এর বাজেটের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল যার ভিত্তি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত রয়েছে। এই রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ) জন্ম গণমানুষ থেকে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম সেনানিবাস থেকে। তিনি আরও বলেন, এই দুই দলের প্রধান প্রথমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি হন, পরে তারা তাদের রাজনৈতিক দল গঠন করেন। জনগণের মধ্যে তাদের কোনো ভিত্তি নেই।
জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। জনগণের মধ্যে তাদের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১০ লাখের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশের জন্য বোঝা। তিনি সব পশ্চিমা দেশকে মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে সমর্থন প্রসারিত করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কভিড এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কষ্টে ফেলেছে। আমরা এই প্রভাব বন্ধ করার চেষ্টা করছি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এ যুদ্ধে কাদের লাভ, শুধু অস্ত্র বিক্রেতারাই লাভবান হচ্ছে। বিশ্বের উচিত অবিলম্বে এ যুদ্ধ বন্ধ করা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশে নারীর ক্ষমতায়নের কথাও সংক্ষেপে বর্ণনা করেন।
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে এবং তার দেশ মসৃণ উত্তরণে বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, আমি সবসময় বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে থাকব। আমি এ দেশের প্রতিটি কোণ পরিদর্শন করেছি এবং দেশের উল্লেখযোগ্য ও চিত্তাকর্ষক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করে মুগ্ধ হয়েছি।
নাথালি চুয়ার্ড বলেন, ‘বাংলাদেশকে কভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমি আশা করছি যে বাংলাদেশ এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আরও এগিয়ে যেতে পারবে।’
এ সময় সুইজারল্যান্ডের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত গণতন্ত্রের মান, এর স্থিতিশীলতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রশংসা করেন। তিনি দেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতিরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি মনে করেন, তাদের দ্রুত স্বদেশে ফিরে যাওয়া উচিত।
এ সময় অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। বাসস
গত বছর সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে দেশের চিনির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। চিনির সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে ব্যবসায়ীরা খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম বাড়িয়েছে কেজিতে ৬ টাকা। তবুও নতুন দামে চিনি কিনতে পারেননি ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরা তখন বলেছেন, বাজারে চিনির সরবরাহ কম। সেই থেকে চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাস কেটে গেলেও এখনো চিনি সংকটের সমাধান হয়নি। প্রতি কেজি চিনিতে সরকারের নির্ধারিত মূল্যেও বাজারে চিনি মিলছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার যখন আরেক দফা দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলো তখনো বাজারে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছিল কমপক্ষে কেজি ১১৫ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতেও প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ খুবই কম বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা।
গত বুধবার চিনি সরবরাহ ও দামের বিষয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি চিনির প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকে। তাদের কারণে বাজারে চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে সরকারের উচিত হবে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। প্রকৃতপক্ষে বাজারে কোনো ধরনের সংকট থেকে থাকলে সরকারের উচিত হবে সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া এবং চিনির আমদানি বাড়ানো।’
ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা ক্যাবের সভাপতি বলেন, ‘রমজানের পণ্যগুলোর মধ্যে চাহিদা শীর্ষে থাকে চিনি। রোজাদারদের স্বস্তির জন্য চিনির বাজার স্বাভাবিক হওয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা শুধু গণমাধ্যমের মাধ্যমে বলতে পারি, ভোক্তার কথা চিন্তা করে রমজানের আগেই যেন সরকার দ্রুত চিনির বাজার স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।’
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে চিনি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেজিপ্রতি খোলা চিনি ১০৮ ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা করে বিক্রি করে থাকে। বিশেষ করে কারওয়ান বাজারে চিনির ডিলাররা পরিচিত ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে চিনি বিক্রি করেন না। অনেকে রসিদ না দিয়ে চিনি বিক্রি করেন।
তেজগাঁও মহিলা কলেজ এলাকার চাঁদপুর স্টোরের মুদি দোকানি সিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত পাঁচ মাস ধরে ঠিকমতো চিনি বিক্রি করতে পারছেন না। বাজারে চিনির জন্য গেলে আজ আছে তো তো কাল নেই এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। কারওয়ান বাজারে রসিদ ছাড়া প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি কিনে আনতে হয় ৫ হাজার ৫৫০ টাকা। দোকানে সরবরাহ করা কোম্পানির বিক্রিয়কর্মীরাও প্যাকেটের গায়ের মূল্যের চেয়ে ২ টাকা অর্থাৎ প্রতি কেজি ১০৯ টাকা ছাড়া তাদের থেকে কেনা যায় না।’
চিনি সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি দাবি করে কারওয়ান বাজারের চিনির ডিলার ইব্রাহিম স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মোকাম কিংবা মিল কোথাও চিনি পাওয়া যায় না। অগ্রিম টাকা নিলেও চাহিদামতো চিনি দিতে পারে না। দৈনিক ১০০ বস্তা চিনির পরিবর্তে ৪০-৫০ বস্তা চিনি দিচ্ছে।’ রমজানের চিনির জন্য আরও হাহাকার চলবে বলেও এ ব্যবসায়ী আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের ম্যানেজার সিরাজুন্নবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিগগিরই বাজারে চিনির সরবরাহ ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে বাজারে প্যাকেটজাত চিনি সরবরাহ করছি। রমজান আসার আগেই চাহিদা অনুযায়ী ভোক্তারা নির্ধারিত মূল্যে চিনি কিনতে পারবে বলে আশা করা যায়।’
পাকেটের গায়ের মূল্যের চেয়ে দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোম্পানির পক্ষ থেকে দাম সমন্বয় করেই বিক্রি করছি, যেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে সাধারণ ভোক্তারা চিনি ক্রয় করতে পারেন। তবে আমাদের অনুপস্থিতিতে বাজারভেদে ব্যবসায়ীরা চিনির দাম বেশি নিয়ে থাকতে পারেন।’
বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তারা বলছে, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে অধিদপ্তর সবসময় মাঠে কাজ করছে। আসন্ন রমজানকে ঘিরে রোজাদারদের চাহিদার শীর্ষে থাকা সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিনি পরিশোধনকারী মিলগুলোতে অধিদপ্তরের নজরদারি রয়েছে। মিল থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত কোনো চক্র চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কি না তা জানা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য আমরা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চেয়েছি। যাতে করে চিনি সংকটের পেছনে কেউ থাকলে তাদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারি।’
জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরুর ঠিক আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেছেন, সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের পাশাপাশি দিকনির্দেশনা দিতে প্রতি বছর জেলা প্রশাসক বা ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলন বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি অধিবেশনে মন্ত্রী বা সচিবরা দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য গড়ে এক মিনিটের বেশি সময় পান না। এই স্বল্প সময়ে নীতিনির্ধারকরা যথাযথ নির্দেশনা দিতে পারেন না। তারা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে গেলেও সময়ের অভাবে কথা বলতে পারেন না।
নির্ধারিত সময়ে দিনের প্রথম অধিবেশন শুরু হলেও আর কোনো অধিবেশনই সময়মতো শুরু হয় না। এক অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই পরের অধিবেশনসংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিব-মহাপরিচালকসহ অন্যরা হাজির হয়ে যান। অনেক সময় পরবর্তী দুই-তিন অধিবেশনের নীতিনির্ধারকরাও উপস্থিত হয়ে যান। সম্মেলনে অধিবেশনের জট লেগে যায়। অধিবেশন শেষে তারা রাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ভোজে অংশ নেন। এ কারণে দিনে শুরুর সময় এবং রাতে শেষের সময় ঠিক রাখতে হয়। এই ঠিক রাখতে গিয়ে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করা হয়। অধিবেশনে উপস্থিত থাকলেও বেশিরভাগ অতিথি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না। অথচ তারা বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে ডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতি নেন এবং সম্মেলনে গিয়ে বসে থাকেন।
গত বুধবার চলতি বছরের ডিসি সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশন ছিল শিল্প, বাণিজ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে। এই তিন মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ সময় ছিল মাত্র ৪৫ মিনিট। ১২টা থেকে শুরু হয়ে এই অধিবেশন চলার কথা ছিল ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। এই অধিবেশন যথাসময়ে শুরু হতে পারেনি, তাই শেষ হওয়ারও সুযোগ নেই। এই অধিবেশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১৭ জন। অধিবেশনগুলোতে সাধারণত ৪-৫ জন ডিসি, ১ জন বিভাগীয় কমিশনার এবং অধিবেশন সভাপতি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বক্তব্য রাখেন। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনে ২৩ জনের কথা বলার কথা। ৪৫ মিনিটের অধিবেশনে সব অতিথি এবং রেওয়াজ অনুযায়ী ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার বক্তব্য রাখলে একজনের ভাগে দুই মিনিটের কম সময় পড়ে।
স্বল্প সময় কথা বলার জন্য আমন্ত্রিত অতিথি তালিকায় ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তিন মন্ত্রী। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ছিলেন প্রধান অতিথি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং প্রধানন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এই অধিবেশনে অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই অধিবেশনে মন্ত্রিবৃন্দ ও উপদেষ্টা কথা বলার পর আর সময়ই ছিল না। শুধু দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনই নয়, সব অধিবেশনই এভাবে শেষ হয়। দিনের প্রথম অধিবেশন সময়মতো শুরু হয়। বাকিগুলো শুরু হয় না তো শেষ হবে কীভাবে? তিনি আরও জানান, পুরো ডিসি সম্মেলনটাই তাড়াহুড়ার মধ্যে শেষ হয়। নীতিনির্ধারণী কথা কি এক-দুই মিনিটে শেষ হয়? যাই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে মন্ত্রীরাই কথা বলেন। অন্য অতিথিরা বহর হিসেবে থাকেন।
দ্বিতীয় দিবসের প্রথম অধিবেশন ছিল চার মন্ত্রণালয় নিয়ে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব, চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক, সিইও, পরিচালক এ অধিবেশনে বিভিন্ন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি অধিবেশনই এভাবে ঠাসা থাকে অতিথিদের ভারে।
একজন ডিসি জানিয়েছেন, ডিসি সম্মেলনে তাদের যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয় তার মধ্যে অনেক বিষয়ের সঙ্গেই ডিসিদের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে না। তারপরও নানা ধরনের নির্দেশনা তারা পান। একইভাবে ডিসিরাও নানা কাজের এখতিয়ার চান। যদিও শেষ পর্যন্ত এসব নির্দেশনা বা প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ হয় না বলে ওই ডিসির মত।
গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া ডিসি সম্মেলন শেষ হয় গতকাল বৃহস্পতিবার।
গত কোরবানির ঈদে পল্লবী থানায় ঢুকলাম তৃতীয়বারের মতো। ব্যক্তিগত কাজে এসেছি এখানে। আগের সেই পল্লবী থানা আর নেই। নতুন ভবন, নতুন পরিবেশ। আধুনিক সাজসজ্জা, আলো ঝলমলে থানার অভ্যন্তর ঝকঝকে। বাইরের আলো-বাতাস যেন থানায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ঢুকতে পারে, এমনভাবে ভবনের নকশা করা। নিচে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা, রিসেপশন এবং নাগরিক বিভিন্ন সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।
চওড়া সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই একজন নারী ডিউটি অফিসারের দেখা মিলল। তিনি বেশ নিষ্ঠার সঙ্গে যারা আগে এসেছে তাদের আগে সেবা দিচ্ছেন। আগে ভদ্রলোক গোছের বা একটু অবস্থাপন্নদের আগে সুযোগ দেওয়া হতো, সেই সংস্কৃতি এখন আর নেই। ক্ষমতাধর কেউ এলে কী হতো তা অবশ্য দেখার সুযোগ পাইনি।
আমার আসার কারণ ব্যাখ্যার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো। এর মধ্যে একজনকে ধরে নিয়ে এলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সেই ব্যক্তি হাউমাউ করে কাঁদছেন। তাকে ছেড়ে দিতে বলছেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা রাজি নন। এর আগে তাকে সুযোগ দেওয়া হলেও তার সংশোধন ঘটেনি। এবার তাই ছাড় নয়।
সিরিয়ালে আমার ডাক পড়লে ডিউটি অফিসারকে জানালাম সমস্যাটা। তিনি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার জন্য অপেক্ষা করতে বললেন। আমি বের হয়ে এলাম ওই কক্ষ থেকে। দোতলায় দুটি অংশ। বাম দিকের একটি বড় ঘরে যার যার টেবিল সামনে রেখে কাজে ব্যস্ত অনেকে। ডান দিকে লম্বা করিডর ধরে কর্মকর্তাদের কক্ষ। তারা সবাই কাজের প্রয়োজনে বাইরে ছিলেন। মোবাইল ফোনে একজনকে বলতে শুনলাম, ডিসি সাহেব আসছেন এদিকে। তার প্রটোকলের ব্যবস্থা করতে হবে।
সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) লেখার ডেস্ক। একজন পুরুষ সদস্য মনোযোগ দিয়ে লিখে দিচ্ছেন জিডি।
এসব দেখতে দেখতে আমার কাক্সিক্ষত কর্মকর্তা চলে এলেন। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তিনি সমস্যার কথা আগেই জানতেন। ফলে বিস্তারিত বলতে হলো না। তিনি আমাকে জিডির ডেস্কে নিয়ে গেলেন। এক তরুণ নির্দিষ্ট প্যাডে জিডির কপি লিখছেন। তার হাতের লেখা বেশ সুন্দর। দ্রুত লিখতে পারেন। জিডিতে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বাড়তি কিছু লিখতে তিনি নারাজ। জিডিতে অভিযোগকারীর পক্ষের নামে যা খুশি তাই তিনি কিছুতেই লিখবেন না।
কিছুক্ষণ পর মাথায় কাটা দাগ নিয়ে এলেন এক নারী। তার মাথা থেকে রক্ত ঝরছিল। ডেস্কে এসেই তিনি বলতে শুরু করলেন, আমারে আবার মারছে, আজ দুপুরে ভাতের কথা বইলা আবার মারছে। বুঝলাম, তার স্বামী তাকে পিটিয়েছেন আবার। তাকে আরেকজন ধরে ছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে আগে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তারপর জিডি করতে বললেন।
আমার কাজও ততক্ষণে শেষ হয়ে এসেছে। ডেস্কের সামনে কিছু বসার চেয়ার। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বসে আছেন। সবার বামে বসা এক নারী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। তার কান্না আটকে রাখা যাচ্ছে না। স্বজন হারানোর বেদনা মাঝে মাঝে জানান দিচ্ছে আশপাশ। শোক তাকে চেয়ারেও বসতে দিচ্ছে না। ধরে রাখতে হচ্ছে। কেউ একজন মারা গেছেন তার। মামলা করতে থানায় এসেছেন। স্বাভাবিক কর্মপরিবেশেও তার শোক সঞ্চারিত হচ্ছে অন্যদের মধ্যে। তবে শোক থিতু হওয়ার অবকাশ নেই। যারা আসছেন তাদের সবাইকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের।
আমার মনে হলো, প্রতিনিয়ত শোক, অপরাধের ঘটনা, সামাজিক নির্যাতনের ঘটনা সব দেখতে-শুনতে হয় পুলিশ সদস্যদের। সামাল দিতে হয়। তাদের কাজ আসলেই অনেক জটিল ও কঠিন।
অথচ পল্লবী থানার পরিবেশ এমন ছিল না। ২০১১-১২ সালের ঘটনা। আমার প্রথম ফোন চুরি হয় ওই সময়ে। খোলা জানালা দিয়ে লম্বা বাঁশের আগায় লোহার সঙ্গে চুম্বক জুড়ে আমার চার্জে রাখা ফোনটা নিয়ে যায় চোর। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। সকালে উঠে অনেক খুঁজেও যখন পেলাম না, বুঝলাম চুরি হয়েছে। চুরির এ পদ্ধতির কথা আগেই শুনেছিলাম। আমাদের ওপর তলার একজনের মোবাইল ফোনও এ পদ্ধতিতে চুরি হয়।
জীবনে প্রথম জিডি করার জন্য থানায় গেলাম। ‘ভদ্রলোকরা থানায় যান না’ এ রকম একটা কথা আমাদের সমাজে একসময় চালু ছিল। থানায় গেলেই ‘কলঙ্কের দাগ’ লেগে যাবে। তাই চুপি চুপি, পরিচিত কেউ যেন না দেখে এমন ভঙ্গিতে ঢুুকলাম পল্লবী থানায়।
পল্লবী থানা তখন ছিল ভাড়া বাড়িতে। পলেস্তারা ছিল না ওই ভবনের। ভবনটাও ছিল অনুজ্জ্বল, অনাধুনিক। সংকীর্ণ ঢোকার পথ, ছোট ছোট রুম। মরচে ধরা কলাপসিবল গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে কিছুটা অপ্রস্তুত হলাম। ঢুকতেই বাম দিকে দেখলাম, সিমেন্টের বস্তা দিয়ে অনেকটা বাঙ্কারের মতো একটা জায়গা। সেখানে একজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে। বুঝলাম, এটা নিরাপত্তার প্রয়োজনে করা।
নিচতলায় আর কী আছে বুঝতে পারলাম না। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে এসেছি জানালে একজন পুলিশ দোতলায় যেতে বলেন। আবছা আলোয় সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠলাম। সেখানে অপেক্ষাকৃত একটা বড় ঘর। তবে তাতে অপ্রতুল আলো। কাঠের চেয়ার-টেবিলে বসে আছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাদের কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা জানালাম। তারা কক্ষের বাইরে একটা কাউন্টার দেখিয়ে দিলেন। কাউন্টারে বসা পুলিশ সদস্য জিডির কারণ জানতে চাইলেন। তিনি কেমন যেন গড়িমসি করছিলেন। তাকে বোঝাতে বোঝাতে হতাশ হয়ে যাব এমন সময় পরিচিত বড় ভাইকে পেলাম। আমার ইউনিভার্সিটির বড় ভাই। এ থানায় ইন্সúেক্টর (তদন্ত) হিসেবে যোগ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন পরে দেখা। এ থানায় কবে এসেছেন জানতাম না। আমাকে দেখে তিনি নিয়ে গেলেন আরেক তলা ওপরে। প্রায়ন্ধকার ঘরে দেখলাম, বসার টেবিলের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থাও আছে। লুঙ্গি-গামছা ঝুলছে। ভাই আমাকে চা পানের সুযোগ দিলেন। তারপর নিচে থাকা সেই পুলিশ সদস্যকে ডেকে এনে আমার জিডি নিতে বললেন। ওনার সঙ্গে আবার দোতলায় এলাম। একটা নিউজপ্রিন্টের প্যাডের নিচে কার্বন পেপার রাখলেন। তারপর একপাশ খালি রেখে আমার অভিযোগ লিখলেন। তার মুখ কিঞ্চিৎ ভারী।
একবার যাওয়ার পর থানা নিয়ে আমার অস্বস্তি বা ভয় অনেকটা কেটে গেল। আমার মনে হলো, মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা বা বিচার পাওয়ার শুরু হয় থানা থেকেই। সেখানে যেতে কারও মনে দ্ব্যর্থতা থাকা ঠিক নয়।
পল্লবী থানা আমার বাসার উল্টো পাশে। প্রতিদিন রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে দেখতাম মানুষের জটলা। বুঝতাম কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার আত্মীয়-স্বজন থানার বাইরে জটলা করছে। আহাজারি করছে।
পল্লবী থানার এই দুই পরিস্থিতির মধ্যবর্তী আরেকটি পরিবর্তনেরও আমি সাক্ষী। সেটা মোবাইল ফোন চুরির বেশ কয়েক বছর পরের কথা। আরেকটা জিডি করার প্রয়োজন হলো আমার। তবে সেবার জিডি লেখাতে হলো বাইরে থেকে। থানার বাইরেই কিছু লোক থাকেন। তারা নির্দিষ্ট ফরম্যাটে জিডি লিখে দেন। এর জন্য তারা কিছু ‘পারিশ্রমিক’ নেন।
আমার দ্বিতীয় জিডিটিও ছিল মোবাইল ফোন সংশ্লিষ্ট। প্রথমবারের মোবাইল ফোনের খোঁজ পাইনি। পরেরবার বেশ দ্রুতই মোবাইল ফোনের সন্ধান মিলল। পুলিশ এখন অনেক আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন। নাগরিকদের সুবিধা দেওয়ার পরিসরও বেড়েছে। অনলাইনেও এখন জিডি করা যায়।
পুলিশ নিয়ে অনেক আপত্তি-অভিযোগ আছে এ কথা সত্য। তবে আমার এ লেখা তা নিয়ে নয়। আমি শুধু থানার সঙ্গে আমার যোগাযোগের স্মৃতি উল্লেখ করলাম। থানায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে একথা বলতেই হবে।
আমার পরিচিত সেই বড় ভাই এখন সিটিটিসিতে (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) ইউনিটে আছেন। তিনিও স্বীকার করলেন পল্লবী থানা বদলে গেছে অনেক। পুলিশ এবং নাগরিক সবার সুবিধা বেড়েছে। মনে মনে বললাম, নাগরিক সুবিধার অবারিত স্থান হয়ে থাক পুলিশ স্টেশন।
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের লোকজন সুলতানাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে মোবাইল ফোনে কল করে বিভিন্নজন তাকে জানান। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তার ভাগনি সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তার মাকে র্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। এরপর মন্টু তার ভাগনির সন্ধানে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। পরে বেলা ২টার দিকে সুলতানা জেসমিনের ছেলে তাকে আবার মোবাইল ফোনে কল করে জানান তার মা নওগাঁ সদর হাসপাতালে আছেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাগনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু ভেতরে গিয়ে ভাগনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন মন্টু। তবে জেসমিনকে র্যাবের কোন ক্যাম্প নেওয়া হয়েছিল তারা তার কিছুই জানতেন না। এর কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে গতকাল শনিবার। গতকাল বাদ আসর তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিভিন্নভাবে জানতে পারেন তার মাকে র্যাবের সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। এর পরই তার সন্ধানের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে জানতে পারেন তার মা নওগাঁ হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে তার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
সৈকতের দাবি, তার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে মৃত্যু হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর উপ-অধিনায়ক এএসপি মাসুদ রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।’
সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সুলতানা জেসমিন নামে এক রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন র্যাবের সদস্যরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালেই সুলতানা জেসমিনের পরিবারের লোকজন র্যাবের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ওই রোগী মারা যান বলে জানতে পেরেছি।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুলতানা জেসমিন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সুলতানা জেসমিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের অফিসার থেকে জিএম পদ পর্যন্ত পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২। অনুসরণ করা হচ্ছে পর্ষদের ৮১০তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত। এই অনিয়ম বন্ধ ও আগের নিয়মে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদন জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি দিলে বেশির ভাগ মেধাবী কর্মকর্তা বঞ্চিত হবেন। এতে কর্মকর্তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এই নীতি বাদ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই এমডির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পর্ষদের ৮১০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার/সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার/সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাৎকার/বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন,’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২-এর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ এর ফলে মেধাতালিকার কর্মীরা পদোন্নতি তো দূরের কথা, সাক্ষাৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২’-এ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ বিষয়ের ৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই প্রবিধানমালা মোতাবেক এবং তফসিলে বর্ণিত শর্তাবলী পরিপালন সাপেক্ষে, কোনো কর্মচারীকে পরবর্তী উচ্চতর পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দেওয়া হইবে। কিন্তু কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসেবে তাহার পদোন্নতি বা পদায়ন দাবি করিতে পারিবেন না।’
এদিকে, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকারদের পদোন্নতি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘ব্যাংকের চাকরিতে সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে,’ অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের ১:৩ নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
এ বছর সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার থেকে জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৫০, ৯১ ও ১৩ জন। এর বিপরীতে সম্ভাব্য পদোন্নতিযোগ্য পদের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০, ১৯ ও ৩ জন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ বিবেচনায় মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবেন ১৮০, ৫৭ ও ৬ জন। এতে বঞ্চিত হবে মেধাতালিকা। সুতরাং আলোচ্য পদোন্নতি নীতিমালা স্ববিরোধী ও চাকরি প্রবিধানমালার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং যেখানে সততা ও ন্যায়ের প্রতিফলন নেই।
সোনালী ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের তথ্য যাচাই-বাছাই ও গভীর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যেখানে দ্রুত পদোন্নতি হয়ে যায়, সেখানে সোনালী ব্যাংকে ব্যক্তি/গোষ্ঠী স্বার্থে প্রতিবার নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা আমদানি করে অনাকাক্সিক্ষত সময়ক্ষেপণ করে একেবারে বছরের শেষে এসে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এভাবে সোনালী ব্যাংকের দক্ষ ও মেধাবী কমকর্তারা এখন সব জায়গায় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় সোনালী ব্যাংকে একটি স্থায়ী নীতিমালা করা প্রয়োজন। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ প্রাধান্য পাবে না; বরং তা অপরিহার্য পছন্দরূপে সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হবে। যত দিন না এরূপ নীতিমালা করা সম্ভব, তত দিন কোনো বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কারণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যদি সততা, দক্ষতা ও মেধার পরিবর্তে কেবল জ্যেষ্ঠতাকেই বেছে নেওয়া হয়, তাহলে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন। চ্যালেঞ্জিং পদগুলো সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আফজাল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোনালী ব্যাংকে যেই নীতিমালা রয়েছে, এটি অন্যান্য জায়গায়ও আছে; বিশেষ করে কৃষি ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিংয়েও একই নীতি মেনে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এখানে একজনের বিপরীতে তিনজনকে ডাকা হচ্ছে। তা ছাড়া এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত।
মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন কি না এমন প্রশ্নে আফজাল করিম বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৫ হচ্ছে তার অর্জন। বাকি ১৫ নম্বর ভাইভা থেকে পাবেন। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো বৈষম্য হবে বলে মনে করি না। গত বছর অন্যভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ও কর্মকর্তাদের অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এটা থাকবেই।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটির ছাড়পত্র নেই। অনুমোদন ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও আবাসিক কার্যক্রম।
অনুমোদন তথা ছাড়পত্র না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান।
অনুমোদন না নিয়ে বিধি অমান্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহ বিভাগের উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে বিবেচনা থেকেই ভবন নির্মাণ করা হয়। সব ঠিক থাকলেই ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সনদ) দেওয়া হয়। সনদের বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণ এবং ব্যবহারের সুযোগ নেই। অভিযোগ এলে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়নি।’
ময়মনসিংহ গণপূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কস ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিয়ারেন্স নেওয়া দরকার। না নিলে আইন অমান্য করা হয়। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করব।’
একদিকে ভবনের অনুমোদন নেই, অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। দশতলা বঙ্গমাতা ছাত্রী হলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৬২টি ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এসবের কোনোটিরই মেয়াদ তথা কার্যকারিতা নেই। এ কথা নিশ্চিত করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নুসরাত শারমিন তানিয়া।
অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তিত। বারবার বলেও সমাধান পাইনি। আমাদের কিছু সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ নেই। তা ছাড়া এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে কাউকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। মোটকথা, এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। কিছুদিন আগে হলে আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। আমরা নিদানের ব্যবস্থার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্তের ছাড়পত্রহীন ভবনে হলের কার্যক্রম চলছে কি না জানতে চাইলে নুসরাত শারমিন বলেন, ‘আমাদের ডিপিডি ও প্রকৌশল দপ্তর বলেছে, সব অনুমোদন আছে। তবে তারা আমাদের কোনো ডকুমেন্ট দেয়নি।’
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দশতলা বঙ্গবন্ধু হল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, কলা ও বিজ্ঞান ভবনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটোরি, কোয়ার্টার ও প্রশাসনিক ভবনের। এমনকি নির্মাণাধীন কোনো ভবনের নকশার অনুমোদন নেই।’
আগুন নেভানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৪টি সিলিন্ডার থাকলেও অধিকাংশের মেয়াদ নেই; এসব ব্যবহারের নিয়মও কেউ জানে না। অগ্নিনির্বাপণের কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজনও নেই। ১৫৪টি সিলিন্ডারের মধ্যে বঙ্গমাতা হলে ৬২টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২২টি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৩০টি করে এবং প্রশাসনিক ভবনে ১০টি সিলিন্ডার রয়েছে বলে জানা গেলেও জায়গামতো সেগুলো দৃশ্যমান নয়।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গমাতা হলে আগুন লাগার গুজবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। এরপর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
৫৭ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো পানির উৎস নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে পানির ব্যবস্থা কীভাবে হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এত বড় ভবনের আগুন নেভানো তাদের রিজার্ভের পানি দিয়ে সম্ভব নয়।
আগুন নেভানোর সরঞ্জামের ঘাটতি ও ছাড়পত্র না থাকলেও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রয়েছে। আগুন লাগলে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা যাবে। আর জলাশয় নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ছাড়পত্রের বিষয়টি দেখা যাবে। আগুন লাগলে সৃষ্টিকর্তা না চাইলে আমাদের প্রস্তুতি দিয়েও লাভ হবে না। যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে।’
ভবনের গণপূর্ত ও ফায়ার সার্ভিসের সনদ না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলতে পারবে। যদি সেসবের প্রয়োজন থাকে আর আমাদের সেসব না থেকে থাকে, তাহলে আমরা প্রশাসনিকভাবে সেসব নিয়ে কাজ করব। এসব বিষয়ে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।’
বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী ফাইজাহ ওমর তূর্ণা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে থাকি। সারা দেশে যেভাবে আগুন লাগছে, চিন্তা হয়। আমাদের এত বড় হল, তার আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই; যা আছে তা ব্যবহার করতেও জানি না আমরা। আগুন লাগলে ভয়েই মরে যাব।’
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ফাহমিদ অর্ক বলেন, ‘আগুন নেভানোর যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। সত্বর সুরাহার ব্যবস্থা করা উচিত।’
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেব।’
মোবাইল টেলিফোনে, এক ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। বছর ২৫ আগে, বিষয়টি সাধারণের কল্পনার বাইরে ছিল। বর্তমানে এমন কোনো পেশার লোক নেই, যাদের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায় না। এমনকি, যারা নিত্য ভিক্ষা তনু রক্ষায় ব্যস্ত- সেই ভিক্ষুক শ্রেণির অধিকাংশের হাতেও মোবাইল। কিন্তু ৯০ দশকের শেষের দিকে, এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা মোটেও সহজ ছিল না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগে প্রায় সময় খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি এই দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঘিরে শক্তিশালী একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাগুলো।
ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির দৈত্য
দেশের পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অন্যতম। অনেকটা নীরবেই দলটি তার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে ৬ মার্চ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তারিখকেই সিপিবি তার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে উদযাপন করে।
আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার সব আমল এক রকম আর রোজার হিসাব ভিন্ন রকম। আল্লাহর কাছে বান্দা আমলের প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে বান্দাকে দান করবেন। আল্লাহ কেমন প্রতিদান দেবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমরা শুধু বুঝি, যে প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বিশেষভাবে দেবেন, তা তার শান মোতাবেক দেবেন।
রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে দেবেন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
তখনো দিনের আলো ফোটেনি পুরোপুরি, পুব আকাশ সবে একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হতে শুরু করলেন নীলরঙের টি-শার্ট পরা কিছু মানুষ। প্রথমে একজন-দুজন। তারপর পাঁচজন-দশজনের ছোট ছোট দলে। সংখ্যা দাঁড়াল ১২৭। এরা একটি বিশেষ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন। এরা এসেছেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরপরাধ বাঙালির ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার প্রতিবাদ জানাতে, এরা এসেছেন সেদিন যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, এরা এসেছেন শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিতে, এরা এসেছেন জাতীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’য় অংশ নিতে।
বাজার থেকে মুরগি কিনে ড্রেসিং করার পর অনেকেই মুরগির পা, গিলা-কলিজা (লটপট) ফেলে যান। আর এসব গিলা, কলিজা কম দামে কেনেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু বাজারে হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ায় এসব গিলা, কলিজার কদর বেড়েছে। তবে এখানেও দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ এসব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাজারে গিলা-কলিজাও ২৬০ টাকা কেজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই লেনদেন সম্পর্কিত একটি ফোনালাপ দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
১৬ লাখ টাকা ভাগাভাগি ছাত্রলীগের ৫ নেতার
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
মেধার মূল্যায়ন নেই সোনালী ব্যাংকে
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি গান গেয়েছেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। ‘ভোরের আলোয় ঝিকিমিকি’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন সুলতানা নূরজাহান রোজ। সুর ও সংগীত করেছেন সজীব দাস। অডিও রেকর্ডিং শেষে এখন চলছে ভিডিও নির্মাণের কাজ। ইয়ামিন এলানের পরিচালনায় মিউজিক ভিডিওটিতে ফাহমিদা নবীও আছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সুন্দর একটি গান করলাম। দেশ রাগের সুরে গানটি করা হয়েছে। এতে ঢোল, বাঁশি, তবলাসহ দেশীয় সংগীতের ছোঁয়া পাবেন শ্রোতারা। সুরকার সজীব দাস অনেক যত্ন নিয়ে গানটি করেছেন। আশা করছি গানের সুর ও মিউজিক ভিডিওটি শ্রোতা-দর্শকদের মন জয় করবে।’ গতকাল গানটি সুলতানা নূরজাহান রোজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে।
‘তুমি আর নেই সে তুমি’, চন্দিকা হাথুরসিংহের বেলায় শচীন দেব বর্মনের এই গানের কলিটা উপমা হিসেবে আসতেই পারে। দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক বদলে গেছেন শ্রীলঙ্কান এই কোচ। আগের মতো কড়া হেডমাস্টারের বদনাম এখনো শোনা যায়নি, সেই সঙ্গে প্রতিভার উপযাচক হিসেবেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। হাথুরুসিংহে প্রতিভার প্রয়োগ চান, তাহলে তার দলে জায়গা মিলবে। স্রেফ প্রতিভার জোরে জাতীয় দলে দিনের পর দিন জায়গা ধরে রাখার দিন শেষ, কাল চট্টগ্রামে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের কোচ।
শুধু প্রতিভায় মন গলবে না হাথুরুর
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম। দারুস সুন্নাহ ওয়াল ফিকর, মিরপুরের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম এবং মিরপুর সাংবাদিক এলাকার মসজিদে ফারুকের খতিব। হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি। দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন- রমজানের আমল, ইমামের গুণাবলি ও হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতাসহ সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে।
সকাল ১০টায় রেডিও নতুন সামরিক আদেশের ঘোষণা দিল। যখনই কোনো সাংবাদিক সেনা কর্মকর্তাদের কাছে কোনো তথ্য জানতে চান, তাদের রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কূটনৈতিক মিশনে পৌঁছার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। এক দল সাংবাদিক যখন সামনের দরজা দিয়ে একজন ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে বেরিয়ে এলেন, ক্যাপ্টেন ভয়ংকর ক্ষুব্ধ হলেন। তাদের ভেতরে ঢোকার হুকুম দিয়ে পেছন থেকে বললেন, ‘আপনাদের কীভাবে সামলাতে হবে আমি জানি। আমি আমার নিজের মানুষদের হত্যা করতে পারি। আমি আপনাদেরও হত্যা করতে পারব।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগে প্রায় সময় খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি এই দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঘিরে শক্তিশালী একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাগুলো।
অনুসন্ধানে কমিশন বাণিজ্য, ভুয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে একজনের ক্ষতিপূরণ অন্য ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়ার, প্রকৃত মালিকদের মামলা-মোকদ্দমার ফাঁদে আটকে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করাসহ নানান দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। ওই চক্রের সমন্বিত একটি তালিকাও করেছে সংস্থাগুলো। ওই চক্রে আছেন বর্তমান এবং সাবেক কিছু ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার, অফিস সহকারী, চেইনম্যান, জারিকারক, উমেদার, আইনজীবী কথিত দালাল।
এর আগে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট এলএ অফিসে ক্ষতিপূরণ বাণিজ্যে জড়িত ২৩টি সিন্ডিকেট থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান। ওইদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শহীদ শাহ আলম বীরউত্তম অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত দুদকের গণশুনানিতে তিনি এ কথা বলেছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, কতিপয় দালাল কর্তৃক দায়ের করা দেওয়ানি মামলা, অভিযোগ, আপত্তিসমূহ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন এলএ অফিসের সার্ভেয়ার ও কানুনগোরা।
দুর্নীতির বেশি অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে : গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি তারা হলেনÑ কানুনগো সেকান্দার আলী, মো. জাহাঙ্গীর, সার্ভেয়ার যথাক্রমে আব্দুল মমিন, মো. ইমাম হোসেন গাজী, আবু কাউসার সোহেল, মোক্তার হোসেন, শহীদুল ইসলাম মুরাদ, জোবায়ের, মো. শহীদুল হাসান, খাজা উদ্দিন, আমানাতুল মাওলা, মজিবুর রহমান, নূর চৌধুরী। এরমধ্যে কোনো কোনো সার্ভেয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় কারাভোগও করেছেন।
জানা গেছে, সার্ভেয়ার মুরাদ, খাজা উদ্দিন, আমানাতুল, মজিবুর, নূর চৌধুরী ছাড়া বাকি ছয় সার্ভেয়ার এবং দুই কানুনগো বর্তমানে এলএ অফিসে কর্মরত। অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন সার্ভেয়ার খাজা উদ্দিন। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে তাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও তদরিব করে তারা ফিরে এসেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ অফিসে।
চলতি বছরসহ সাম্প্রতিক সময়ের মামলা-অভিযোগ : চলতি বছর ৭ মার্চ ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কিছু কর্মচারীর যোগসাজশে জমির ক্ষতিপূরণের প্রায় ৩১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মিরসরাই উপজেলার মগাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ চারজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন মো. সলিমুল্লাহ ওরফে দিদার নামে এক ব্যক্তি।
সলিমুল্লাহর অভিযোগ, আবুল খায়ের নামে একজনকে তার বাবা মৃত শফিউল্লাহ’র ওয়ারিশ বানিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে ক্ষতিপূরণের প্রায় ৩১ লাখ টাকার চেক উত্তেলন করে নিয়েছেন অভিযুক্তরা। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো মোক্তার আহমদ এবং সার্ভেয়ারসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা সৈয়দ আহমদ। সম্প্রতি, ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার সেকান্দর আলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে (সিআর-৩৭২) মামলা দায়ের করেন আরেক ভুক্তভোগী।
কর্ণফুলী টানেলের জন্য আনোয়ারা উপজেলার ছাতুরি ও বেলছুড়া মৌজায় পৃথকভাবে অধিগ্রহণ করা (এলএ কেইস নং-৩০/২০১৬-২০১৭) ১৬ শতক জমির প্রকৃত মালিক মৃত মোহাম্মদ শেখের ওয়ারিশ নাজিম উদ্দিন। তার অভিযোগ, ২০২২ সালের নভেম্বরে এলএ অফিসের সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ ও কমল দাশ ক্ষতিপূরণের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চেক অন্য ব্যক্তিদের দিয়ে দেন।
এ ঘটনায় পটিয়া আদালতে মামলাও করেছেন ভুক্তভোগী নাজিম উদ্দিন। দুর্নীতির অভিযোগে সার্ভেয়ার কমল ও আবুল কালাম আজাদকে সাময়িক বহিষ্কারও করেছে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ। নাজিম উদ্দিন বলেন ‘জামাল রশিদ নামের এক ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের দেওয়া টাকা ফেরত আনার কথা বলে আমার পায়ে ধরে ক্ষমা চান সার্ভেয়ার কমল’।
ফরিদুল আলম নামে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, জাল দলিল তৈরি করে কর্ণফুলী টানেলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন মুছা নামে এক ব্যক্তি। আদালতে মামলা এবং এলএ অফিসে আপত্তি দেওয়া সত্ত্বেও এলএ মামলায় (৩৫/২০১৮-২০১৯) ১০ শতক জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬১ লাখ টাকা আবু সাদেক নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সার্ভেয়ার আবু কাউসার সোহেল ও মোক্তার হোসেন জড়িত।
মিরসরাই উপজেলার দক্ষিণ মগাদিয়া মৌজায় অধিগ্রহণ করা (এলএ মামলায় নম্বর ১৩/২০১৮-২০১৯) বিএস ১১৯৮ দাগের ৫ দশমিক ২১ একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ কোটি ৭১ লাখ ৬৩১ টাকা পেতে যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে অপর মামলা (৩৪৮/২০) দায়ের করেন জমির প্রকৃত মালিক নুরুল গণি।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় লিখিত আপত্তিও দেন তিনি। নুরুল গণির অভিযোগ, মামলা ও আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এলএ অফিসের সার্ভেয়ার মমিন ও ছায়েদুল হক মজুমদার পরস্পর যোগসাজশে ক্ষতিপূরণ বাবদ তার প্রাপ্য ৩ কোটি ৭১ লাখ ৬৩১ টাকার চেক দিয়ে দেন জনৈক সৌদামিনি বণিককে।
২০২২ সালের ১০ নভেম্বর ঘুষ দাবি, জোরপূর্বক আটক, ছবি তুলে পুলিশে দেওয়া এবং দুদকের মামলায় জড়িয়ে হয়রানির হুমকির অভিযোগে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা (এএলও) এহসান মুরাদসহ ছয়জন সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১ এ মামলা করেন মো. হেমায়তে হোসেন নামে এক ব্যক্তি। মামলাটি এখন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।
ভুয়া দলিল যাচাই না করে মিজানুর রহমান মাসুদ নামে এক ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা দিয়ে দেন সার্ভেয়ার আমানাতুল মওলা, মো. মজিবুর রহমান ও আশীষ চৌধুরী। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করে দুদক। ওই মামলায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আলোচ্য তিন সার্ভেয়ারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছা।
যেখানে ভাগ-বাটোয়ারা হয় : গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুসন্ধান বলছে, এলএ অফিসের সার্ভেয়ার ও অফিস সহকারীরা অফিস শেষ করে রাতে সুবিধামতো সময়ে নগরের চকবাজার, মেহেদীবাগ, জিইসির মোড়, গোল পাহাড় মোড়, বাদুরতলা, সদরঘাট কালিবাড়ী মোড়, প্রবর্তক মিমি সুপার মার্কেট, স্টেশন রোড, ষোলশহর নম্বর গেইট, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স, এমইএস কলেজ ও মহিলা কলেজ সংলগ্ন মোড়, সানমারের সামনে, ভিআইপি টাওয়ার, কাজির দেউড়ি, স্টেডিয়াম মোড় ও বহদ্দারহাট, শিল্পকলা একাডেমি এলাকায় দালাল চক্রের আইনজীবীদের চেম্বারে টাকা ভাগাভাগি হয়। এছাড়াও এলএ অফিসের সাবেক অফিস সহকারী মো. আনোয়ার হোসেনের দেব পাহাড়ের বাসায় ও সার্ভেয়ার আ. মমিনের মেহেদীবাগের সরকারি বাসায়, মো. গাজীর পূর্বকোণ অফিস সংলগ্ন বাসায় ও শহীদুল হাসানের বাসায় দালাল চক্রের সদস্যরা সরাসরি কাজ বুঝিয়ে দেওয়াসহ কমিশন বাণিজ্যের লেনদেন করে।
কোষাগারে পড়ে আছে হাজার কোটি টাকা : একটি মামলার ফাঁদে আটকা পড়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না নগরের শত শত ভূমি মালিক। চট্টগ্রামের তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে করা ওই মামলার কারণে বে-টার্মিনাল এবং সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে সরকারি কোষাগারে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় জমির মালিকদের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক দিতে পারছে না ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। মামলাটি করেছেন ব্রিটিশ আমলের জমিদারের বংশধর দাবি করা হালিশহর এলাকার মো. রকিবুল হাসানসহ কয়েকজন। ভুক্তভোগীরা আট বছর ধরে এলএ অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও মামলার কারণে ক্ষতিপূরণের চেক দিতে পারছে না জেলা প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে, শত শত ভুক্তভোগীকে মামলার ফাঁদে আটকে দিয়ে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন বাণিজ্যে নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। যারা ক্ষতিপূরণের ২০ থেকে ৪০ শতাংশ টাকা হাতে দিতে রাজি হচ্ছেন, তাদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে রাকিব চক্র। রকিবুল হাসানের দাবি, তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলার (৬২১/২০১৪) ৬৮ জন বাদী ব্রিটিশ আমলের জমিদার শেখ আবদুল আলী মালুমের বংশধর। ১৮৮৫ সালের একটি দলিল এবং আবদুল আলী মালুমের পাঁচ শতাধিক উত্তরাধিকারীর তালিকা আছে। আর এ তালিকাকে পুঁজি করেই আদালতে মামলা করেছেন রাকিব। মামলার বিবাদীর সংখ্যা এক হাজার ৫৬৮ জন।
সাংবাদিকের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের অসদাচরণ : ভূমি অধিগ্রহণ শাখার নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত ১৬ মার্চ বিকাল ৪টা ৫৯ মিনিটে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের মুঠোফানে কল করেন দেশ রূপান্তরের এক প্রতিবেদক। ফোন রিসিভ করে সুনির্দিষ্ট তথ্য সমেত তার (ডিসি) দপ্তরে গিয়ে কথা বলতে ওই প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। কথামতো বক্তব্য নিতে গত ২০ মার্চ জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের দপ্তরে গিয়ে এলএ অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে চলতি বছরসহ আগের বছরগুলোয় বর্তমান এবং সাবেক কয়েকজন কানুনগো, সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার (দুদকের করা) রেফারেন্স উল্লেখ করা একটি কাগজ জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়। এ সময় তার দপ্তরে জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসারসহ কিছু লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। কাগজে উল্লেখ করা তথ্যগুলো পড়ে দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদকের সঙ্গে চরম অসদাচরণ করেন জেলা প্রশাসক ফখরুজ্জামান। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কী করছি আপনি জানেন। খবর নেন। এসব অভিযোগ-মামলা পুরনো। আপনি (প্রতিবেদক) দালালি করতে এসেছেন। যান, আমি ঢাকায় দেশ রূপান্তরে কথা বলব।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’