
বাংলাদেশে ২০২০ সালে যেসব মানব পাচারের ঘটনা শনাক্ত করা গেছে তার বেশিরভাগই ঘটেছে ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগীয় অঞ্চলে। জাতিসংঘের মানবপাচার বিষয়ক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর যৌথভাবে ‘ট্রাফিকিং ইন পার্সনস ইন বাংলাদেশ’ নামে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। খবর বিবিসি বাংলা।
জেলা হিসেবে বাংলাদেশের ৭টি জেলায় সবচেয়ে বেশি মানব পাচারের ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে। এসব জেলা হচ্ছে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ। এসব জেলা থেকে প্রতি লাখে দেড় জনের বেশি মানুষ পাচারের শিকার হয়।
ঢাকা, খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের মানব পাচার চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়ার ঘটনা ঘটে খুলনা বিভাগে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সব এলাকার বাসিন্দারাই মানব পাচারের শিকার হয়। তবে ঢাকা, খুলনা এবং সিলেট এই তিন অঞ্চলের মানুষ বেশি পাচার হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। যেসব এলাকার সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বেশি সেসব এলাকায় মানব পাচারের ঘটনা বেশি ঘটে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় খুলনা বিভাগের কথা। এই বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে দীর্ঘ স্থলসীমান্ত রয়েছে এবং সেখান থেকে কলকাতাও দূরে নয়। যার কারণে ২০২০ সালে এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানব পাচারের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে অভিবাসন নিয়ে গবেষণার কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রামরুর পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, যেকোনো সীমান্ত এলাকা যেখানে পারাপারটা তুলনামূলক সহজ; সেখানে অনিয়মিত অভিবাসনের সঙ্গে সঙ্গে মানব পাচারের বিষয়টিও ঘটে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছু এলাকা মানব পাচারের হাব বা পকেট হিসেবে কাজ করে। এসব এলাকায় মানব পাচারকারী চক্র বেশ সক্রিয় থাকে এবং তারা সেখানকার বাসিন্দাদের নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার করে থাকে।’
মেরিনা সুলতানা বলেন, যেসব জেলা পকেট হিসেবে কাজ করে সেখানে দেখা যায় যে, অনেক মানুষ আগে থেকেই বিদেশে থাকে এবং তাদের দেখাদেখি অন্যরাও যেতে চায়। এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানব পাচারের শিকার হয় নারীরা। উদাহরণ হিসেবে তিনি মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং নরসিংদীর কথা তুলে ধরেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, যেসব কারণে মানব পাচার হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে উন্নত জীবনের আশায় এবং আর্থিক সচ্ছলতার প্রলোভনে। প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক কারণে পাচারের শিকার হন।
অন্যদিকে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে সৌদি আরব থেকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে ১১ জনকে, ভারত থেকে ৫ জনকে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে একজন করে বাংলাদেশিকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে। এরা সবাই মানব পাচারের শিকার হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাবাসন করে ফেরত পাঠানো হয়েছে সৌদি আরব থেকে। এরপর ওমান থেকে দুজন এবং ভারত থেকে একজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
মেরিনা সুলতানা বলেন, ভালো চাকরির প্রলোভনে যারা মানব পাচারের শিকার হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা জানে না যে তারা আসলে পাচারের শিকার হচ্ছে। আর পাচারকারীরা তাদের না বলে বিদেশ নিয়ে বিক্রি করে দেয়।
যেসব বিষয় মানব পাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় তার মধ্যে রয়েছে, অর্থনৈতিক কারণ, অন্তরঙ্গ সঙ্গী যে কিনা মানব পাচারকারী, অভিবাসনের প্রলোভন, শিক্ষা এবং বিদেশি ভাষা জানার অভাব, মানসিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যাযুক্ত পরিবারের সদস্য হওয়া, বাবা-মায়ের যতœ না-পাওয়া শিশু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।
‘ট্রাফিকিং ইন পার্সনস ইন বাংলাদেশ’ নামে প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা মানব পাচারে যুক্ত থাকে, তারা আসলে অন্য কাজের তুলনায় এ কাজে বেশি অর্থ আয় সম্ভব হয় বলে এই অপরাধের সঙ্গে জড়ায়।
তাদের হিসাবে, প্রতিটি মানব পাচারের জন্য একজন পাচারকারী ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত টাকা আয় করে থাকেযা প্রচলিত পেশার তুলনায় অনেক বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে যেসব দেশের প্রত্যাবাসনের চুক্তি রয়েছে, সেসব দেশ থেকে ফেরত আনা ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
কিন্তু যেসব দেশের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি নেই সেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ পাচার হয়েছে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ভেতরেই অনেকে পাচারের শিকার হয়। এতে বলা হচ্ছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৭৩০টি মানব পাচারের ঘটনা জানা গেছে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে ৭৭৮টি এবং ২০১৮ সালে ৫৬১টি মানব পাচারের ঘটনা জানা যায়।
বিরোধী দল থেকে ছিটকে পড়া বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসুক আওয়ামী লীগ চাইলেও দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও সমমনা অন্য দলগুলো তা চায় না। নির্বাচনী মিত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসুক তা চায় না। আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস মিলেছে। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও শরিক দলের এমন চাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, ভোটে বিএনপি অংশ নিলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকা অন্য দলগুলোর চাওয়া-পাওয়ায় অপূর্ণতা থেকে যাবে বলে তারা মনে করছেন। আসন ভাগাভাগিসহ শরিক দলের নানা চাওয়ায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে এটাও ভাবছেন তারা।
জাতীয় পার্টি নির্বাচনে বিএনপিকে না চাওয়ার কারণ সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতারা বলেন, সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসা নিশ্চিত রাখতে তারাও বিএনপিকে নির্বাচনে দেখতে চায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি যেসব দাবি-দাওয়া জানিয়েছে, তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাদের ক্ষমতার চেয়ারে বসাতে হবে। সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে বিএনপির সংবিধানের বাইরে চাওয়া মেনে নেওয়া অসম্ভব। ওই নেতা বলেন, নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি যা চায় তা মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৯ আসন নিয়ে বিএনপি বিরোধী দলের আসনে বসলেও ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে নির্বাচন ঠেকানোর জন্য আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ফলে জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দলীয় আসনে বসে। ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিলেও বিএনপি সাতটি আসন পায়।
১৪ দলীয় জোটের শরিক ধর্মভিত্তিক দলের শীর্ষ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনে বিএনপি এলে অংশগ্রহণমূলক হবে, না এলে হবে না এ ধারণা থেকে দেশি-বিদেশি সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি ছাড়াও এ দেশে নির্বাচন হয়েছে, আগামী নির্বাচনও হবে। এ নেতা বলেন, জোটের অনেক বৈঠকে তিনি আওয়ামী লীগকে এ পরামর্শ দিয়েছেন। কারও অন্যায় চাওয়া মেনে নিয়ে তাদের নির্বাচনে আনার পদক্ষেপ নিতে তার দল ও জোটের আরও কয়েকটি দল আওয়ামী লীগকে নিরুৎসাহিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা শরিক দলের এ পরামর্শ আমলে নেননি। তারা মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। সরকারও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। এ জন্য দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এ প্রত্যাশা করেন তারা। নির্বাচন প্রশ্নে শরিক দলগুলোর অবস্থানের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বলে দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিম-লীর এক সদস্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলই অংশগ্রহণ করুক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, সুষ্ঠুু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আন্তরিক।’ তিনি বলেন, কোন দল নির্বাচনে আসবে, কোন দল আসবে না সেটা একেবারেই নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
জানা গেছে, বিএনপিকে ভোটে না চাওয়ার কারণ একেবারেই ওই দলগুলোর রাজনৈতিক স্বার্থে। বিএনপি ভোটে না এলে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষিতে যাওয়া সহজ হবে এমনটাই মনে করে শরিকরা। বিএনপি ভোটে এলে জয়ের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছোট দলগুলোর দরকষাকষি ঠিক জমে উঠবে না। কারণ, তখন আওয়ামী লীগের মাথায় জয়ের হিসাব-নিকাশই থাকবে বেশি।
জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতাও দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় পার্টির সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসা অনিশ্চিত হয়ে যাবে এ শঙ্কায় বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসুক তা চায় না। বিএনপি নির্বাচনে এলে সংসদে বিরোধী দলের আসন হারাবে জাতীয় পার্টি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সবাই সবার মতো করে রাজনৈতিক স্বার্থ দেখছে। জাতীয় পার্টিসহ আমাদের শরিক দলগুলোর ভেতরে এমন কিছু চাওয়া রয়েছে সেটা তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলোচনায় ও বৈঠকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।’ তারা বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপিকে বাইরে রেখে এবারে নির্বাচন করা ঠিক সহজ হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে সরকারের ওপর চাপ আছে বিদেশিদের। আছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপও। কোনো রাষ্ট্র এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সরকারকেই। এ পরিস্থিতিতে সে চাপ কাটিয়ে যেনতেন নির্বাচনের সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপির ভেতরে ইতিবাচক দিকে থাকতে বিদেশি চাপ আছে। আবার বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও মনে করেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটবে বিএনপির। তাই নির্বাচন বর্জন নয়, নির্বাচন ঠেকাতে চাইবে তারা। নির্বাচন ঠেকাতে না পারলে বর্জন করবে না বিএনপি। নির্বাচন বর্জন করে রাজনীতি থেকে একেবারে হারিয়ে যাওয়ার রিস্ক এবার আর বিএনপি নেবে না। সভাপতিম-লীর ওই সদস্য আরও বলেন, বিএনপি তাদের দাবি আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সম্ভব না হলে শেষমেশ নির্বাচনে আসবে। কারণ, বিএনপি সরকারে না আসতে পারলেও সংসদের বাইরে আর থাকতে চায় না। সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে মাঠে থাকতে পারলে সফলতা আসবে এ চিন্তায় নির্বাচনে আসবেই বিএনপি।
ফলে ক্ষমতাসীন দলের জোটসঙ্গী ও সমমনারা বিএনপি ভোটে আসুক তা না চাইলেও রাজনৈতিক পূর্বাপর পরিস্থিতিতে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন তুলতে অনাগ্রহী আওয়ামী লীগও। সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে একেবারেই সব ছেড়ে-ছুড়ে দেওয়ার মানসিকতাও দেখাবে না আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সত্য হলো, নির্বাচন ইস্যুতে বিদেশি চাপ যেমন সরকারের ওপর আছে, তেমনি বিএনপির ওপরও থাকবে। গত দুই দফার সংসদ নির্বাচনে বিদেশি শক্তিগুলোর নানা মত থাকলেও বিএনপি এবার নির্বাচনের বাইরে থাকুক তেমন ‘ব্যবস্থাপত্র’ নেই। ফলে বিএনপিও নির্বাচন বর্জন করবে না। আবার নির্বাচনে থাকবে সেই ঘোষণাও এখনই দেবে না বিএনপি। শেষ বেলায় নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে বিএনপি। এখন মাঠে অনড় থেকে কতটুকু দাবি আদায় করতে পারে সে চেষ্টায় আন্দোলন ও অনমনীয় অবস্থানে আছে দলটি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও শরিকরা জোট ছেড়ে যায়নি। হতাশার কথা জানালেও জোটে থেকেও গিয়েছিল অধিকাংশ দল। শেষ পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে জোট বিলুপ্ত করে। শরিকরা আলাদা জোট গঠন করে বিএনপির দাবি-দাওয়া সমর্থন করে তাদে সঙ্গে থেকে যায়। জোটের অন্তত চারজন নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, এখনো তাদের হতাশা আছে। কিন্তু অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কারণে বিএনপির সঙ্গে তারা থাকছেন।
গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন হঠাৎ করেই ২০ দলীয় জোট বিলুপ্তির ঘোষণা করে বিএনপি। দলটির গুলশানের কার্যালয়ে জোটের সব শরিককে ডেকে জানানো হয়, আজ থেকে যার যার মতো চলবে। দলগুলোর কেউ আজ থেকে জোটের পরিচয় দেবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসবে-২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আঁচ করতে পারলেও আগ বাড়িয়ে কথা বলেনি শরিকরা।
জোটের ওই বৈঠকেই শরিক নেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন অনানুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্তির এ ঘোষণা দেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। হতাশা ব্যক্ত করে জোট নেতারা তাকে জানান, অন্তত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় জোট বিলুপ্তির ঘোষণা আসতে পারত। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ করেন নজরুল ইসলাম খান।
বিএনপির ঘোষণার পর অনেকটা কূল ছাড়া সাগরে পড়ে জোটসঙ্গীরা। উপায়ান্তর না দেখে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নতুন জোট গঠনের তৎপরতা শুরু করেন। দুভাবে বিভক্ত হয়ে ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নামে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গেই থাকে তারা।
জানতে চাইলে যুগপৎ আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘২০ দলীয় জোটকে নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতিবাচক ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছিল, সেটি ভেঙে দিতে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেই আমরা এটি করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আমরা দেখাতে চেয়েছি বিএনপির রাজপথে বড় একক শক্তি এবং দেশের আপামর জনগণ দলটির সঙ্গে আছে। আবার যারা বিএনপির সঙ্গে আছে, তাদেরও একক অস্তিত্ব রয়েছে। তারাও কর্মসূচি পালন করতে পারে।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানান, গত দুই যুগে ২০ দলীয় জোটের (আদতে ২৩ দল) কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ছাড়া মূলত কারোই সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল না। শক্তি-সামর্থ্যরে দিকে অনেক পিছিয়ে। মঞ্চে বক্তৃতার জন্য জোটের শীর্ষ নেতারা উন্মুখ হয়ে থাকলেও অধিকাংশেরই কর্মী সংকট থাকত। দেশি-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংখ্যার তত্ত্ব বিএনপি দেখাতে পারলেও এসব দলের দুই-একজন ছাড়া অধিকাংশেরই সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। বিরোধীপক্ষের মুখ বন্ধ রাখতে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও এই সিদ্ধান্ত নিতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের একাধিক নেতা বলছেন, বিএনপি না চাইলেও নানা কারণে বিএনপির সঙ্গে থাকতে চান তারা। বিএনপির নেতৃত্বে থাকা মানে মিডিয়া কভারেজ পাওয়া। দলকে টিকিয়ে রাখতে, জনগণের কাছে যেতে চাইলে মিডিয়া কভারেজের বিকল্প নেই। বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে যে মিডিয়া কভারেজ হয়, এখন যুগপৎ আন্দোলনে তার সিকিভাগও হয় না। দ্বিতীয়ত, বিএনপির নেতৃত্ব স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব জায়গায় সুবিধা মেলে। নির্বাচন এলেই জোটের শীর্ষ নেতারা সংসদ নির্বাচনের জন্য জোট থেকে মনোনয়ন চান। মনোনয়ন মিললে সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ী হয়ে আসার সম্ভাবনা থাকে। জেলা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, ইউপি নির্বাচনে জোটের মনোনয়নে জনপ্রতিনিধিও হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে বিএনপি না চাইলেও নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাদের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে এসব দলকে।
আবার বিএনপির একেবারে ছেড়ে দিতে চায় না দলগুলোকে। তাই প্রকাশ্যে ও পর্দার অন্তরালে নানাভাবে তাদের সহায়তা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নজরুল ইসলাম খানকে। সংগঠিত হওয়া, আন্দোলনে থাকার পরামর্শ তার কাছ থেকেই আসে বলে জোটের একাধিক নেতা জানান।
বিএনপি জোট ভাঙায় কোনো ক্ষোভ রয়েছে কি না এমন প্রশ্ন ছিল বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপির) একাংশের মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিমের কাছে। তিনি বর্তমানে ১২ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বলা নেই, কওয়া নেই, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া না মেনেই গত ডিসেম্বরের ৯ তারিখ আমাদের ডেকে বলে দেওয়া হলো ২০ দলীয় জোট আজ থেকে থাকবে না। এমনটা যে হবে সেটি ২০১৮ সালের পর থেকেই জোটসঙ্গীরা ধারণা করতে পারছিলেন। কিন্তু জোট যে প্রক্রিয়ায় গঠন হয়েছিল ভেঙে দিতেও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারত। জোট ভাঙার পেছনে তারা কোনো জোরালো যুক্তিও উপস্থাপন করেনি। ওই ঘোষণা পর জোটের সব শরিকের মধ্যেই চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু তারা সেটি প্রকাশ করছেন না।’
একাধিক শরিক নেতার আক্ষেপ, সারা বছর বিএনপির সঙ্গে থেকে রাজপথে সংগ্রামে থাকেন তারা। অথচ নির্বাচন এলেই বিভিন্ন নামে নতুন জোট তৈরি করে তাদের অবহেলিত রাখা হয়। বিএনপির দুর্দিনে তাদের দেওয়া কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোট ভাঙা পর্যন্ত খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিসহ কয়েকজন নেতা জেল খেটেছেন। আবার নানা চাপে জোট ত্যাগ করেন ন্যাপ ভাসানী, ইসলামী ঐক্যজোট, এনডিপি, এনপিপি, খেলাফত মজলিসের একাংশের নেতারা।
১২ দলীয় জোটের এক নেতা বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকেই জোটের শরিকদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে আসছে। গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় রাখে বিএনপি। এবারও গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলে দীর্ঘ বছরের জোট বিলুপ্তি করল। বিলুপ্ত করার আগে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করল না বিএনপি।
১৯৯৯ সালে বিএনপি, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, অবিভক্ত ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে গঠন করা হয় চারদলীয় জোট। ২০০১ সালের নির্বাচনের কিছুদিন আগে এরশাদ চারদলীয় জোট ত্যাগ করেন। জাতীয় পার্টির তৎকালীন মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি) রয়ে যায় এ জোটে। ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে ব্যস্ত ছিল। বাতিল হয়ে যায় তাদের নিবন্ধন। আরেক শরিক ইসলামী ঐক্যজোট কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পরে চার দলকে সঙ্গে রেখেই ২০১২ সালে গঠিত হয় ১৮ দলীয় জোট। পরে জাতীয় পার্টি (জাফর) এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলকে নিয়ে করা হয় ২০ দলীয় জোট।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে নিয়ে বিএনপি গঠন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এ অভিমানে বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং এনডিপির মূল নেতারা জোট ত্যাগ করেন। পরে অবশ্য ত্যাগ করা জোটের একাংশ নেতাদের নিয়ে জোট জিইয়ে রাখে বিএনপি।
ডিজিটাল সংযোগ দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্য ডিজিটাল সংযোগ মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩-এর উদ্বোধন উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও বার্তায় তিনি ডিজিটাল পণ্য বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় তিন দিনের এ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার’ আয়োজন করেছে। দেশের আইটি ও আইটিইএস পণ্য ও সেবাগুলো প্রদর্শনই এ মেলার লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল বাস্তবতা, উদ্দীপিত বাস্তবতা, রোবোটিকস অ্যান্ড বিগ ডেটা সমন্বিত ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে চায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিল্পাঞ্চলে ফাইভ-জি সেবা নিশ্চিত করা হবে।’
ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্ম এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখছে।
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচনী অঙ্গীকারে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশি জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, তার সরকার ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করেছে, যা সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের স্যাটেলাইট পরিবারের ৫৭তম গর্বিত সদস্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে বহুমুখী কার্যক্ষমতা সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে আর বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হবে না।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন কেব্ল স্থাপন করতে যাচ্ছে। কারণ ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা ৭২০০ জিবিপিএসে উন্নীত করা হবে। তৃতীয় সাবমেরিন কেব্ল স্থাপনের পর এটি ১৩২০০ জিবিপিএসে উন্নীত হবে। সৌদি আরব, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া ও ভারতকে ব্যান্ডউইথ লিজ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৪ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার আয় করছে।
সরকারপ্রধান উল্লেখ করেন যে, সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৯৮ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ গিগাবাইট ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে; যা জনগণ ও সরকারি অফিসগুলোতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সহায়তা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, সারা দেশে ৮ হাজার ৬০০টি পোস্ট অফিসকে ডিজিটালে পরিণত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি। গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ডিজিটাল বৈষম্য এবং দামের পার্থক্য দূর করা হয়েছে।
প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ‘এক দেশ এক দরের’ একটি সাধারণ শুল্ক চালু করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা চালু করার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অ্যাসোসিও (এএসওসিআইও)-২০২২ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকম খাতে প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে ১৪টি ক্যাটাগরিতে প্রথম প্রবর্তিত পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান বক্তব্য রাখেন।
আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, প্রস্তুতি নিচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবনে কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের পর সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন তদারকি করতে আসবে এবং তারা স্বাধীনভাবে তাদের কাজ করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং এর ওপর এবং এর বাজেটের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল যার ভিত্তি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত রয়েছে। এই রাজনৈতিক দলের (আওয়ামী লীগ) জন্ম গণমানুষ থেকে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির জন্ম সেনানিবাস থেকে। তিনি আরও বলেন, এই দুই দলের প্রধান প্রথমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি হন, পরে তারা তাদের রাজনৈতিক দল গঠন করেন। জনগণের মধ্যে তাদের কোনো ভিত্তি নেই।
জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে সরকারপ্রধান বলেন, তারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। জনগণের মধ্যে তাদের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১০ লাখের বেশি মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশের জন্য বোঝা। তিনি সব পশ্চিমা দেশকে মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে সমর্থন প্রসারিত করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কভিড এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কষ্টে ফেলেছে। আমরা এই প্রভাব বন্ধ করার চেষ্টা করছি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এ যুদ্ধে কাদের লাভ, শুধু অস্ত্র বিক্রেতারাই লাভবান হচ্ছে। বিশ্বের উচিত অবিলম্বে এ যুদ্ধ বন্ধ করা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশে নারীর ক্ষমতায়নের কথাও সংক্ষেপে বর্ণনা করেন।
সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে এবং তার দেশ মসৃণ উত্তরণে বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, আমি সবসময় বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে থাকব। আমি এ দেশের প্রতিটি কোণ পরিদর্শন করেছি এবং দেশের উল্লেখযোগ্য ও চিত্তাকর্ষক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করে মুগ্ধ হয়েছি।
নাথালি চুয়ার্ড বলেন, ‘বাংলাদেশকে কভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমি আশা করছি যে বাংলাদেশ এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আরও এগিয়ে যেতে পারবে।’
এ সময় সুইজারল্যান্ডের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত গণতন্ত্রের মান, এর স্থিতিশীলতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রশংসা করেন। তিনি দেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও অগ্রগতিরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি মনে করেন, তাদের দ্রুত স্বদেশে ফিরে যাওয়া উচিত।
এ সময় অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। বাসস
গত বছর সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে দেশের চিনির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। চিনির সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে ব্যবসায়ীরা খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম বাড়িয়েছে কেজিতে ৬ টাকা। তবুও নতুন দামে চিনি কিনতে পারেননি ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরা তখন বলেছেন, বাজারে চিনির সরবরাহ কম। সেই থেকে চলতি জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাস কেটে গেলেও এখনো চিনি সংকটের সমাধান হয়নি। প্রতি কেজি চিনিতে সরকারের নির্ধারিত মূল্যেও বাজারে চিনি মিলছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার যখন আরেক দফা দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলো তখনো বাজারে খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছিল কমপক্ষে কেজি ১১৫ টাকা দরে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতেও প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ খুবই কম বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা।
গত বুধবার চিনি সরবরাহ ও দামের বিষয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি চিনির প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকে। তাদের কারণে বাজারে চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে সরকারের উচিত হবে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। প্রকৃতপক্ষে বাজারে কোনো ধরনের সংকট থেকে থাকলে সরকারের উচিত হবে সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়া এবং চিনির আমদানি বাড়ানো।’
ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা ক্যাবের সভাপতি বলেন, ‘রমজানের পণ্যগুলোর মধ্যে চাহিদা শীর্ষে থাকে চিনি। রোজাদারদের স্বস্তির জন্য চিনির বাজার স্বাভাবিক হওয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা শুধু গণমাধ্যমের মাধ্যমে বলতে পারি, ভোক্তার কথা চিন্তা করে রমজানের আগেই যেন সরকার দ্রুত চিনির বাজার স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে।’
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে চিনি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেজিপ্রতি খোলা চিনি ১০৮ ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা করে বিক্রি করে থাকে। বিশেষ করে কারওয়ান বাজারে চিনির ডিলাররা পরিচিত ব্যবসায়ী ছাড়া অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে চিনি বিক্রি করেন না। অনেকে রসিদ না দিয়ে চিনি বিক্রি করেন।
তেজগাঁও মহিলা কলেজ এলাকার চাঁদপুর স্টোরের মুদি দোকানি সিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত পাঁচ মাস ধরে ঠিকমতো চিনি বিক্রি করতে পারছেন না। বাজারে চিনির জন্য গেলে আজ আছে তো তো কাল নেই এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। কারওয়ান বাজারে রসিদ ছাড়া প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি কিনে আনতে হয় ৫ হাজার ৫৫০ টাকা। দোকানে সরবরাহ করা কোম্পানির বিক্রিয়কর্মীরাও প্যাকেটের গায়ের মূল্যের চেয়ে ২ টাকা অর্থাৎ প্রতি কেজি ১০৯ টাকা ছাড়া তাদের থেকে কেনা যায় না।’
চিনি সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি দাবি করে কারওয়ান বাজারের চিনির ডিলার ইব্রাহিম স্টোরের স্বত্বাধিকারী ইব্রাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মোকাম কিংবা মিল কোথাও চিনি পাওয়া যায় না। অগ্রিম টাকা নিলেও চাহিদামতো চিনি দিতে পারে না। দৈনিক ১০০ বস্তা চিনির পরিবর্তে ৪০-৫০ বস্তা চিনি দিচ্ছে।’ রমজানের চিনির জন্য আরও হাহাকার চলবে বলেও এ ব্যবসায়ী আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের ম্যানেজার সিরাজুন্নবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিগগিরই বাজারে চিনির সরবরাহ ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে বাজারে প্যাকেটজাত চিনি সরবরাহ করছি। রমজান আসার আগেই চাহিদা অনুযায়ী ভোক্তারা নির্ধারিত মূল্যে চিনি কিনতে পারবে বলে আশা করা যায়।’
পাকেটের গায়ের মূল্যের চেয়ে দাম বেশি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোম্পানির পক্ষ থেকে দাম সমন্বয় করেই বিক্রি করছি, যেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে সাধারণ ভোক্তারা চিনি ক্রয় করতে পারেন। তবে আমাদের অনুপস্থিতিতে বাজারভেদে ব্যবসায়ীরা চিনির দাম বেশি নিয়ে থাকতে পারেন।’
বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তারা বলছে, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে অধিদপ্তর সবসময় মাঠে কাজ করছে। আসন্ন রমজানকে ঘিরে রোজাদারদের চাহিদার শীর্ষে থাকা সব ধরনের পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিনি পরিশোধনকারী মিলগুলোতে অধিদপ্তরের নজরদারি রয়েছে। মিল থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত কোনো চক্র চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কি না তা জানা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য আমরা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চেয়েছি। যাতে করে চিনি সংকটের পেছনে কেউ থাকলে তাদের আইনের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারি।’
জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরুর ঠিক আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেছেন, সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের পাশাপাশি দিকনির্দেশনা দিতে প্রতি বছর জেলা প্রশাসক বা ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলন বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি অধিবেশনে মন্ত্রী বা সচিবরা দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য গড়ে এক মিনিটের বেশি সময় পান না। এই স্বল্প সময়ে নীতিনির্ধারকরা যথাযথ নির্দেশনা দিতে পারেন না। তারা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে গেলেও সময়ের অভাবে কথা বলতে পারেন না।
নির্ধারিত সময়ে দিনের প্রথম অধিবেশন শুরু হলেও আর কোনো অধিবেশনই সময়মতো শুরু হয় না। এক অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই পরের অধিবেশনসংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিব-মহাপরিচালকসহ অন্যরা হাজির হয়ে যান। অনেক সময় পরবর্তী দুই-তিন অধিবেশনের নীতিনির্ধারকরাও উপস্থিত হয়ে যান। সম্মেলনে অধিবেশনের জট লেগে যায়। অধিবেশন শেষে তারা রাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ভোজে অংশ নেন। এ কারণে দিনে শুরুর সময় এবং রাতে শেষের সময় ঠিক রাখতে হয়। এই ঠিক রাখতে গিয়ে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করা হয়। অধিবেশনে উপস্থিত থাকলেও বেশিরভাগ অতিথি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না। অথচ তারা বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে ডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতি নেন এবং সম্মেলনে গিয়ে বসে থাকেন।
গত বুধবার চলতি বছরের ডিসি সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশন ছিল শিল্প, বাণিজ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে। এই তিন মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ সময় ছিল মাত্র ৪৫ মিনিট। ১২টা থেকে শুরু হয়ে এই অধিবেশন চলার কথা ছিল ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। এই অধিবেশন যথাসময়ে শুরু হতে পারেনি, তাই শেষ হওয়ারও সুযোগ নেই। এই অধিবেশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ১৭ জন। অধিবেশনগুলোতে সাধারণত ৪-৫ জন ডিসি, ১ জন বিভাগীয় কমিশনার এবং অধিবেশন সভাপতি হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বক্তব্য রাখেন। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনে ২৩ জনের কথা বলার কথা। ৪৫ মিনিটের অধিবেশনে সব অতিথি এবং রেওয়াজ অনুযায়ী ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার বক্তব্য রাখলে একজনের ভাগে দুই মিনিটের কম সময় পড়ে।
স্বল্প সময় কথা বলার জন্য আমন্ত্রিত অতিথি তালিকায় ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তিন মন্ত্রী। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ছিলেন প্রধান অতিথি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং প্রধানন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এই অধিবেশনে অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই অধিবেশনে মন্ত্রিবৃন্দ ও উপদেষ্টা কথা বলার পর আর সময়ই ছিল না। শুধু দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনই নয়, সব অধিবেশনই এভাবে শেষ হয়। দিনের প্রথম অধিবেশন সময়মতো শুরু হয়। বাকিগুলো শুরু হয় না তো শেষ হবে কীভাবে? তিনি আরও জানান, পুরো ডিসি সম্মেলনটাই তাড়াহুড়ার মধ্যে শেষ হয়। নীতিনির্ধারণী কথা কি এক-দুই মিনিটে শেষ হয়? যাই হোক, বাস্তবতা হচ্ছে মন্ত্রীরাই কথা বলেন। অন্য অতিথিরা বহর হিসেবে থাকেন।
দ্বিতীয় দিবসের প্রথম অধিবেশন ছিল চার মন্ত্রণালয় নিয়ে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব, চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক, সিইও, পরিচালক এ অধিবেশনে বিভিন্ন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি অধিবেশনই এভাবে ঠাসা থাকে অতিথিদের ভারে।
একজন ডিসি জানিয়েছেন, ডিসি সম্মেলনে তাদের যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয় তার মধ্যে অনেক বিষয়ের সঙ্গেই ডিসিদের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে না। তারপরও নানা ধরনের নির্দেশনা তারা পান। একইভাবে ডিসিরাও নানা কাজের এখতিয়ার চান। যদিও শেষ পর্যন্ত এসব নির্দেশনা বা প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ হয় না বলে ওই ডিসির মত।
গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া ডিসি সম্মেলন শেষ হয় গতকাল বৃহস্পতিবার।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।