
আগামী ১ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে পারবেন সরকারি চিকিৎসকরা। অফিস সময়ের বাইরে কর্মস্থলে বসেই যাতে চিকিৎসকরা রোগী দেখতে পারেন সে জন্য সরকার এই ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের’ উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য হাসপাতালে আলাদা চেম্বার করে দেবে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ। গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সরকারের এই উদ্যোগের কথা জানান।
সরকারের এই ঘোষণার পরপরই ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের’ যৌক্তিকতা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাদের মতে, এই ব্যবস্থা চালু হলে রাষ্ট্র, রোগী, চিকিৎসক সবপক্ষই লাভবান হবে। কিন্তু সে মত মানতে নারাজ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এতে দরিদ্র রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ব্যবস্থার সুফল নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এ ধরনের চেম্বারে সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বসানো খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। তা ছাড়া রোগী দেখার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের আগের মতোই বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হবে। এমনকি সরকার প্রস্তাবিত ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’কে বর্তমান সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন বলেও মনে করছেন তারা। তারা এই উদ্যোগকে সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে বেসরকারি রোগী ধরার একটি প্রক্রিয়া বলেও মনে করছেন। ১ মার্চ থেকে শুরু করতে চায় সরকার : গত সোমবার চিকিৎসকদের নানা সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সরকারি চিকিৎসকদের ‘ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের’ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জানান, এ বছরের ১ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট অফিস সময়ের পর সরকারি হাসপাতালেই চেম্বার করে ব্যক্তিগত রোগী দেখতে পারবেন। এ বিষয়ে চিকিৎসক নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের মতামত নিয়েছে সরকার। এই কাজটি শুরু করতে দ্রুতই একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। এই কাজটি শুরু হলে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন ক্লিনিক, ফার্মেসিতে ডাক্তার দেখানোর ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন। প্রাথমিকভাবে দেশের ৫০টি উপজেলা, ২০টি জেলা এবং পাঁচটি মেডিকেল কলেজে এই সেবা শুরু হবে।
অনেক কিছুই অস্পষ্ট: স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের নানা সংগঠনের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকের কথা বললেও এসব সংগঠনের কর্মকর্তারা কেউই এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি। কোন ধরনের চিকিৎসকরা এসব ব্যক্তিগত চেম্বারে বসবেন, সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বসবেন কি না, চেম্বারে বসার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আছে কি না, ফি কত হবে, চেম্বারে দেখা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা সার্জারির প্রয়োজন হলে সেটা কোথায় করবেন রোগীরাÑ এসব বিষয়ে একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার এটা বাধ্যতামূলক করছে না। যে কেউ ইচ্ছে হলে চেম্বারে বসতে পারেন, নাও বসতে পারেন। অনেক সিনিয়র ডাক্তার তারা কিন্তু এই ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস করবেন না, জুনিয়র ডাক্তাররাই করবেন।’
এ ব্যাপারে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা বৈকালিক সেবা দেওয়ার একটা উদ্যোগ। এটা হলে হাসপাতালের রোগীরাও চিকিৎসকদের সেবা পাবে। এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যবস্থা আছে, সে মডেল অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালেও এই ব্যবস্থাটা চালু করা হচ্ছে। শুধু মডেলটায় কিছু পরিবর্তন আনা হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল তার নিজস্ব আইনে চলে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছু নিয়মকানুন আছে। এখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এখানে ফি নেওয়া হবে, সেটা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। ব্যক্তিগত চেম্বারে অনেক বেশি টাকা ফি নেওয়া হয়, হাসপাতালে সেটা কম নেওয়া হবে। সব ডাক্তারকে মাসে সব দিন রোগী দেখতে হবে না। সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে রোগী দেখতে হবে। বাইরেও তিনি তার চেম্বারে প্র্যাকটিস করতে পারবেন।’
দরিদ্র রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে : সরকারি চিকিৎসকদের এই ধরনের প্র্যাকটিস নিয়ে তুমুল সমালোচনা করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব। তিনি এর আইনগত বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিশেষজ্ঞ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার সরকারি চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার হাসপাতালে আনছে। পয়সা দিয়ে রোগীকে তাদের চেম্বারে দেখবেন। অথচ টাকা দিয়ে সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা অবৈধ। কারণ সরকারি হাসপাতালে যে কোনো ডাক্তার প্র্যাকটিস করেন সরকারি স্থাপনায়। তিনি কিছুতেই সেখানে ব্যক্তিগত রোগী দেখতে পারেন না। সরকার বাধ্য করছে চেম্বার করতে, ডাক্তারদের সুযোগ দিচ্ছে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখতে।
তিনি প্রশ্ন করেন, এসব চেম্বার থেকে রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সার্জারি কোথায় হবে? তা হলে কি সরকারি হাসপাতাল প্রাইভেট রোগী ধরার সেন্টার বানাচ্ছে? সরকার চিকিৎসা দিতে পারছে না বলে? অথচ সরকারি হাসপাতালে ডাক্তাররা কোনো ক্যাশ ট্রানজিকশন করলে, সেটি দুর্নীতিতে পড়ে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এসব চেম্বারে সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বসবেন না। বসবেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তারমানে একজন রোগী তার পছন্দমতো ডাক্তারকে দেখাতে পারলেন না। অথচ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে এ ধরনের ব্যবস্থা আছে। সেখানে রোগী যায়, রোগীরা ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে সব ডায়াগনস্টিক আছে। সবকিছুই একজন রোগী সেখানে পায়। এ ছাড়া তাদের একটা উইং আছে, যেখানে তারা কনসালটেশন করেন, রোগী ধরেন, চিকিৎসা করেন।
এই ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বেÑ জানিয়ে ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, সরকারি হাসপাতালে কি সিট খালি থাকে? তা হলে সেখানে ডাক্তারদের দেখানোর পর রোগীরা কোথায় যাবে? সেই বেসরকারি হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালের চেম্বারে ডাক্তার দেখাবে, আবার বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে সার্জারি করবে। তারমানে গরিব মানুষরা আরও ভোগান্তিতে পড়বে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বসে বেসরকারি রোগী ধরার একটা প্রক্রিয়া।
রূপরেখা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা: সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ব্যাপারে সরকারের রূপরেখা দেখে নিজেদের প্রস্তাব জানাতে চান সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার কেবল বলল চালু হবে। এটার জন্য একটা কমিটি করবে। কমিটি কী বলতে চাইছে শুনি, তারপর দেখা যাবে। তখন বোঝা যাবে আমাদের সঙ্গে কতটা টেকসই করে। এটার চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, তেমনি যদি এটা সফল করতে পারি তা হলে ভালো দিকও আছে। কেমন প্রস্তাব আসে, সেটা দেখি, তারপর ভাবা যাবে।’
লাভ দেখছে সরকারপক্ষ : সরকারি চিকিৎসকদের ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে রোগী ও চিকিৎসক উভয় পক্ষের লাভ দেখছেন সরকার সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা। এ ব্যাপারে বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও চিকিৎসকের সংখ্যা জনসংখ্যা অনুপাতে অনেক কম। আবার কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন, তারা বাইরে চেম্বার করলে রোগী হয় না। এতে চিকিৎসকের বৈষয়িক ক্ষতি হলো তিনি রোগী পেলেন না, আর রোগীর ক্ষতি হলো তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাতে পারলেন না। এখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নানা জায়গায় বসেন। ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস শুরু হলে তারা তাদের নির্দিষ্ট হাসপাতালে বসবেন এবং রোগীরা একসঙ্গে অনেক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাবেন।
এই চিকিৎসক নেতা আরও বলেন, রোগীদের আরেকটা লাভ হলো, বাইরে যে ফি দেবে, সেটা এখানে কম দেবে। ডায়াগনস্টিক ফি’ও কম হবে। সরকারের লাভ হলো রোগী যে ফি দেবে, সেখান থেকে একটা অংশ সরকার পাবে। রোগীর থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সরকার নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে পারবে, বা পুরনো যন্ত্রপাতি মেরামত করতে পারবে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে।
চেম্বার না, দরকার সরকারি ব্যবস্থাপনার সংস্কার : ডা. রশীদ-ই-মাহবুব সরকারের উদ্দেশে বলেন, এসব (ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস) না করে চিকিৎসা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। সেই জায়গায় কেউ যাচ্ছে না। সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় পয়সা দেবেন না, অব্যবস্থাপনা দূর করবেন না, আরও অব্যবস্থাপনা চাপানোর ব্যবস্থা করবেন। সরকার একটা কিছু করতে চাইছে। ভালো কিছু করুক। কী করলে ভালো হবে, সেটা ভাবুক। ডাক্তারদের সরকারি হাসপাতালে চেম্বার করে সেটা ভালো হবে না।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এই উদ্যোগ চালু করতে হলে আইনের পরিবর্তন করতে হবে। ডাক্তারদের সার্ভিস রুলের পরিবর্তন করতে হবে। সরকার যদি মনে করে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ডাক্তারদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না, সেটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে, কত টাকা লাগবে, অবকাঠামোগত কী পরিবর্তন লাগবে, সেটার সংস্কার করতে হবে।
গণবিরোধী আখ্যা জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের : সরকারের এই উদ্যোগকে গণবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে সংগঠনটি। গত সোমবার সংগঠনের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রওশন আরা, জনস্বাস্থ্য সংগঠক অনুপ কুন্ডু ও সামিউল আলম এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত জনগণের ট্যাক্সের অর্থে প্রতিষ্ঠিত সরকারি হাসপাতালগুলোকে ক্রমান্বয়ে বেসরকারিকরণের এক চক্রান্ত। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের খেদমতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে জনগণকে চিকিৎসা প্রদানের সেবাব্যবস্থাকে খর্ব করে বর্তমান সরকার ইউজার ফি চালু করেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ফি দিয়ে বৈকালিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্র্যাকটিস করতে দিয়েছে। এখন সমগ্র রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা সেবা খাতকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দিতে চলেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্তের মানুষের দুর্দশা বৃদ্ধি করবে।’
আইন অনুযায়ী তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের একক ক্ষমতা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হলেও তাদের তা করতে দেওয়া হয় না। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের একক এখতিয়ার কমিশনের থাকলেও সম্প্রতি সেটিও খর্ব হয়েছে।
সরকারের নির্বাহী আদেশ আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের হস্তক্ষেপের কারণে লাইসেন্সসংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি সীমিত পরিসরে বিরোধ মীমাংসা ছাড়া আর কিছুই এককভাবে করতে পারছে না জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে ভোক্তার মতোই কমিশনও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে কমিশনের মোট জনবল সংখ্যা ৮৪। প্রতি বছর বেতনভাতা ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। দিনে দিনে ক্ষমতা খর্ব হওয়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ কী বা এ কমিশনের কোনো প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য মোহাম্মদ মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী গত সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, “এখন শুধু লাইসেন্সসংক্রান্ত কিছু কাজ আর ‘আরবিট্রেশনটা’ (বিরোধ মীমাংসা) কমিশনের হাতে আছে। দরকার হলে দুদিন পর সরকার সেটাও ‘উইথড্র’ (প্রত্যাহার) করবে। যখন দেখবে আরবিট্রেশনগুলো সুবিধাভোগীদের বিপক্ষে যাচ্ছে তখন এটাও উইথড্র হবে। সরকারের নির্বাহী ক্ষমতায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সুযোগ রেখে যে আইন হলো তা করা হয়েছে তাদের মোটাতাজা করার জন্য।” তিনি বলেন, ‘নতুন এ আইন করার ফলে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের কাছ থেকে দূরে গেল না কাছে এলো সেই বিষয়টা অনুধাবন করা দরকার।’
খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিইআরসির এ সদস্য বলেন, ‘আমার মেয়াদ আছে আর কয়েক দিন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করিনি। কারণ আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছেন যেটা তোমার পছন্দ হবে না সেই কাজ তুমি করবে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছি।’
বিইআরসির কার্যাবলির প্রথমেই জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত এবং এনার্জি অডিটের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবহারের খরচের হিসাব যাচাইয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর বাস্তবায়ন নেই বললে চলে। অন্যদিকে জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করা এবং সরকারকে সুপারিশ করা কমিশনের কার্যাবলির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও এর বাস্তবায়ন তেমন একটা চোখে পড়ে না।
উচ্চ আদালতের আদেশে কমিশন প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের মূল্য সমন্বয় শুরু করেছে। কিন্তু বাজারে কখনই বিইআরসি ঘোষিত মূল্যহার অনুযায়ী এলপি গ্যাস পাওয়া যায় না। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির সামান্য সিস্টেম লস কমাতে পারে না কমিশন। সেখানে অন্যান্য কাজ কীভাবে করবে? বিইআরসি নির্দেশ দেয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। এ জন্য কিছু করারও সক্ষমতা নেই কমিশনের।’
সূত্রমতে, অভিযোগের ভিত্তিতে বিইআরসি আইন অনুযায়ী লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠান ও ভোক্তার মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করে কমিশন। কিন্তু গত ১০ বছরে কমিশনে ৩৭৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ২১০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির হার কম হওয়া এবং জনসচেতনার অভাবে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ কম করা হয় বলে অনেকে মনে করেন।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করতে করতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা ভোক্তার জন্য এবং বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত তথা সামগ্রিক দেশের জন্য অশনিসংকেত।’ তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত পুরোপুরি কারিগরি। এর সঙ্গে আইনের নানারকম বিষয় জড়িত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সই করা ছাড়া তারা কিছুই করে না। এভাবে তো সাধারণ মানুষের কল্যাণ সম্ভব নয়। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বলে সেখানে কিছুটা হলেও বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতা করতে হতো। তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল। সেখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল বলে কোম্পানিগুলোও যেনতেন হিসাব উপস্থাপন করে মূল্যহার বাড়ানোর ব্যাপারে কঠিন চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হয়। কিন্তু আইন সংশোধনের কারণে সেই সুযোগ আর থাকল না। তড়িঘড়ি করে করা এ সংশোধন অসাধু ব্যবসাকে সুরক্ষা দেবে বলে তিনি দাবি করেন।
শামসুল আলম মনে করেন, বিইআরসি আইন সংশোধন করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিয়ে ক্ষমতার সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে সরকার। অন্যদিকে বিইআরসি আইন অনুযায়ী তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের একক ক্ষমতা বিইআরসির হলেও তারা তা করতে পারে না। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ আইন লঙ্ঘন করে অনেক আগে থেকেই অবৈধভাবে তরল জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করে আসছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নিজে তরল জ্বালানি ব্যবসায়ী তথা বিইআরসির লাইসেন্সি হওয়া সত্ত্বেও ফার্নেস অয়েলের মূল্য বিপিসিই নির্ধারণ করে। আর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে অন্যসব কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি তেলের ক্রয়-বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। এসব ক্ষেত্রে সিস্টেম লসের নামে তেল চুরি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল ও কয়লার ব্যবহার বেশি দেখানো হয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন কোম্পানি এবং সংস্থার পরিচালনা বোর্ডে পদাধিকারবলে মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্য কর্মকর্তা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালক। ফলে ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় বিইআরসি এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।
সরকারের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রবল চাপে ২০০৩ সালের মার্চ মাসে বিইআরসি আইন করা হয়। এরপর ২০০৫, ২০১০ ও ২০২০ সালে এ আইন সংশোধন করা হয়। এর মধ্যে আইনের ৩৪ ধারার উপধারা-৫-এ উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনা হয় ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর। এর আগে বছরে সর্বোচ্চ একবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম সমন্বয় বা পুনর্নির্ধারণের সুযোগ থাকলেও নতুন ওই সংশোধনীতে একাধিকবার দাম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়। এর ফলে গ্রাহকের কাঁধে এক বছরেই একাধিকবার দাম বৃদ্ধির খড়গ নেমে আসে।
সম্প্রতি বিইআরসির পাশাপাশি সরকারকে ভোক্তাপর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম পুনর্র্নির্ধারণ ও সমন্বয় করার ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এরপরই গণশুনানি ছাড়াই চলতি মাসে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
সরকারের ওই আদেশ জারির আগে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদন নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করেছিল বিইআরসি। চলতি মাসে মূল্যসংক্রান্ত নতুন আদেশ দেবে বলে জানিয়েছিল কমিশন। কিন্তু এর মধ্যেই গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সরকার। এরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে বিইআরসির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
বিইআরসির আইন অনুযায়ী, গণশুনানির মাধ্যমে দাম সমন্বয় হবে। এ ক্ষেত্রে বাড়তেও পারে কমতেও পারে। কিন্তু বিইআরসির দাম কমানোর কোনো নজির নেই। গণশুনানিতে ভোক্তারা দাম কমানোর বিষয়টি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করলেও তা আমলে না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দাম বাড়ানোর সময় অবশ্য সংস্থাগুলোকে সাশ্রয়ী ও দক্ষ হওয়ার পরামর্শসহ নানারকম শর্ত জুড়ে দেয় কমিশন।
তবে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির প্রস্তাব অনুসারে, কখনই দাম বাড়ায়নি বিইআরসি। এর আগে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এলেও বিইআরসি বাড়িয়েছে ২০ শতাংশ। গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এলে বিইআরসি বাড়িয়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ।
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।
নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির’ অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রুপের ঘাড়ে প্রচুর ঋণ রয়েছে যা এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে। এছাড়া প্রতিবেদনে মরিশাস এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা থাকার ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছে। এদিকে মঙ্গলবার রিপোর্টটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারবাজারে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বুধবার একদিনের লেনদেনে আদানি গ্রুপ তাদের বাজারমূল্য থেকে ১১০০ কোটি ডলার খুইয়ে ফেলে।
এই রিপোর্ট এমন সময় প্রকাশ করা হয় যখন আদানি গ্রুপ শেয়ারবাজারে প্রচুর সংখ্যায় শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছিল। গতকাল শুক্রবার এই গ্রুপের ২৪০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল।
তবে আদানি গ্রুপ বলছে, হিনডেনবার্গের রিপোর্ট ‘বিদ্বেষমূলক’ এবং ভুল তথ্যে ভরা। তারা বলেছে, মার্কিন এই কোম্পানির বিরুদ্ধে তারা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করার কথা বিবেচনা করছে। আদানি গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম।
ভোগ্যপণ্য ছাড়াও তাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ জ্বালানি, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং অবকাঠামো নির্মাণের মতো বড় বড় খাতে বিস্তৃত। ফোর্বস সাময়িকীর মতে, আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি এখন এশিয়ার এক নম্বর ধনী, এবং বিশ্বের ধনীদের তালিকায় তার অবস্থান চার নম্বরে।
আদানি গ্রুপ দাবি করেছে, তারা সব ধরনের আইন অনুসরণ করে ব্যবসা করে। গ্রুপের প্রধান আইন কর্মকর্তা যতিন জালুনধোয়ালা বলেছেন, ‘(হিনডেনবার্গের) এই রিপোর্ট প্রকাশের পর ভারতের শেয়ারবাজারে যে টালমাটাল অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এর ফলে ভারতীয় নাগরিকরা অনাকাক্সিক্ষত মানসিক চাপে পড়েছেন।’
জালুনধোয়ালা অভিযোগ করেছেন, আদানি গ্রুপের শেয়ারের দরপতনের অশুভ উদ্দেশ্য নিয়েই এই রিপোর্টে ‘প্রমাণ ছাড়া’ বিভিন্ন তথ্য এবং অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, হিনডেনবার্গ তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই এ কাজ করেছে। তবে বৃহস্পতিবার হিনডেনবার্গ তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, যেসব গুরুতর বিষয় তাদের রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে, সে বিষয়ে আদানি গ্রুপ কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেয়নি। হিনডেনবার্গ বলেছে, তাদের রিপোর্ট সঠিক এবং আদানি গ্রুপ মামলা করতে চাইলে তারা মোকাবিলা করবে। খবর বিবিসি বাংলা।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
আদানি গ্রুপকে নিয়ে জালিয়াতির এসব অভিযোগ ওঠার পর ভারতে তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো প্রায়ই অভিযোগ করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগে গৌতম আদানি ব্যবসায় অনেক অনৈতিক সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। শিবসেনা দলের নেতা এবং পার্লামেন্ট সদস্য প্রিয়ংকা চতুর্বেদি টুইট করেছেন, ‘বিস্তারিত গবেষণা রিপোর্টটি জনসমক্ষে প্রকাশ হওয়ার পর সরকারের উচিত এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত দেখা।’
শুক্রবার বাজারে ২৪০ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার ছাড়ার কথা ছিল আদানি গ্রুপের। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন অনেক বিনিয়োগকারী এখন সতর্ক অবস্থানে থাকতে পারেন। তবে মার্কিন এই গবেষণা রিপোর্টের প্রভাব শুধু আদানি গ্রুপ নয়, তার বাইরেও গিয়ে পড়তে পারে। ব্লুমবার্গের কলামিস্ট অ্যান্ডি মুখার্জি বলেছেন, ‘আদানি ছাড়াও সামগ্রিকভাবে ভারতের শেয়ারবাজারের বিশ্বস্ততা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।’ তার মতে, এর অন্যতম কারণ হলো ভারতের শেয়ারবাজার এখনো একদিকে আর্থিক ব্যবস্থার বৈশ্বিকীকরণ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের ভেতরে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে।
মুখার্জি লিখেছেন, ‘জঞ্জাল দূর করার জন্য ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি রাস্তায় মানুষের ক্ষোভের জন্য অপেক্ষা করবে?’
ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ার ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ। ১৮ জানুয়ারি আরেক দফা গ্যাসের দাম বাড়ায় দৈনন্দিন ব্যয় বাড়বে, জনদুর্ভোগ বাড়বে। গণপরিবহন তো বিপত্তিতে পড়বেই, বিপাকে পড়বেন ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের মালিকরা। বলা যায় বিপত্তি শুরু হয়েছে। ফলে অনেকে বিকল্প বাহন সাইকেলের দিকে ঝুঁকছেন। এর প্রভাব পড়েছে সাইকেল বিক্রিতে।
সংখ্যাটা এখনো বেশি নয়, কারণ ঢাকা শহরে সাইকেল চলাচলের জন্য ভালো রাস্তা নেই। সাইকেল-আরোহীদের ঢাকার রাস্তা এখন সুগম্য নয়। উন্নত দেশে সাইকেলে যাতায়াতের জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সাইকেলযাত্রী-বান্ধব রাস্তা হয়নি বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বংশালে সাইকেল বিক্রির দোকানগুলোতে তুলনামূলকভাবে ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে। কিন্তু দাম বাড়ায় সাইকেল-ক্রেতারা বেশ দ্বিধাগ্রস্ত; পছন্দের সাইকেল কেনার জন্য ভেবেচিন্তে দরদাম করছেন তারা। তবে কিনছেন। কয়েক মাস আগেও সারা দিনে একটি সাইকেল বিক্রি না হলেও এখন তিন থেকে পাঁচটি সাইকেল বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত মৌসুমে বিক্রি হয়েছিল ২৫ থেকে ৩০টি।
বাংলাদেশ বাইসাইকেল মার্চেন্টস অ্যাসেম্বলিং অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএমএআইএ) তথ্য অনুযায়ী, বংশালে দুইশোর বেশি বাইসাইকেল বিক্রির দোকান আছে। সারা দেশে সাড়ে চার হাজার খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও রংপুরে বাইসাইকেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আছে। প্রায় ৮০টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাইকেল বা সাইকেল-পার্টস আনছে। বেশিরভাগই যন্ত্রাংশ এনে দেশে সংযোজন করছে। বাজারে ৭ হাজার থেকে শুরু করে ৪-৫ লাখ টাকার সাইকেলও আছে। মেঘনা ও আরএফএল ছাড়াও জার্মান-বাংলা, আলিটা ও করভো ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে রপ্তানিমুখী সাইকেল কারখানা করেছে।
পুরান ঢাকার বংশালে দুই ছেলের জন্য সাইকেল কিনতে এসেছেন কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা আল-আমিন হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছেলেদের জন্য সাইকেল কিনতে আসলাম। দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। ছোট সাইকেলও এখন ৫ হাজার টাকা। দরদাম করছি, দেখি বাজেটের মধ্যে পাই কি না।’
একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. রাকিব হাসান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক মাস আগেও বাইক চালিয়ে অফিসে যাতায়াত করা যেত। তেলের দাম বাড়তি। বাইক চালাতে অনেক বাড়তি খরচ লেগে যায়। তাই সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। সাইকেল চালানোর আলাদা লেন তেমন একটা নেই।’
রয়েল সাইকেল স্টোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান হোসেন জিদান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা দেশের সাইকেলের বাজার ধরে রেখেছে এই বংশাল। ব্যবসাটি আমার বাপ-দাদার। তখন ব্যবসা খুব জমজমাট ছিল। এখন রমরমা ব্যবসা নেই বললেই চলে। শীতের এ মৌসুমে বেচাকেনা কিছুটা বাড়ে। এখন প্রতিদিন খুচরায় চারটি সাইকেল বিক্রি হচ্ছে।’
নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সাইকেল বিক্রেতা মো. সানাউল্লাহ এসেছেন বংশালে পাইকারি দরে সাইকেল কিনতে। তিনি জানান, গ্রামে শীতের এ সময়ে সাইকেল বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তাই ঢাকায় আসলাম নতুন মডেলের সাইকেল কিনতে। তবে দাম বেশ বাড়তি।’
বিবিএমএআইএর সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম জাহিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে সব জিনিসের দাম বাড়তি। সেই চাপ এখন সাইকেলের বাজারে। সাইকেল আমদানিতে এখন অনেক শুল্ক দিতে হয়। সরকার শুল্ক কমালে সাইকেলের দাম অনেকটাই কমে যায়। কারণ জিনিসের দাম বাড়তি থাকলে শেষ পর্যন্ত ভোক্তাকেই সেই দাম গুনতে হয়। পরিবেশবান্ধব যাতায়াতমাধ্যম বিবেচনায় সাইকেলের বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত, যাতে সহজে সাইকেল পাওয়া যায়।’
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণাকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ও যোগাযোগ-বিশেষজ্ঞ সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাইকেল পরিবেশবান্ধব বাহন। কিন্তু ঢাকা সাইকেল-নগরী হয়ে উঠছে না। কারণ আমাদের রাস্তাগুলো এখনো যাত্রীবান্ধব নয়। সাইকেলের জন্য বিশেষ লেন নেই বললেই চলে। মানুষ সুষ্ঠুভাবে সাইকেল চালাতে না পারলে আগ্রহী হবে কেন? সরকারের উচিত সাইকেলের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা।’
একসময় হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকলেও এখন নেই। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে তারা রাজনীতি করছে। গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এ কথা বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তারা বলেছেন, বিএনপি সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রভৃতি ১০ দফার আন্দোলন করে যাচ্ছে।
তারা বলেছেন, আন্দোলন যখন চূড়ান্তে পৌঁছবে তখন আরও অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন তাতে যুক্ত হবে। হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতের সঙ্গে এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গে বিএনপির কোনো আলোচনা হয়নি।
অবশ্য বিএনপির কিছু নেতার এমন আশাবাদের বিপরীতে হেফাজতে ইসলামের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি কী আশা করল না করল তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের পথ এখন ভিন্ন।
হেফাজতে ইসলামের দপ্তর সম্পাদক মহিউদ্দিন রব্বানী গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাই আমাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ হয়নি। আমাদের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে ১৩ দফা দাবিতে রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় হেফাজতে ইসলাম। সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। তখন হেফাজতের পক্ষ থেকে হতাহতের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। বিএনপি তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে ঢাকার নেতাদের হেফাজতের নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা আগত আলেম-ওলামাদের খাবারদাবার ও উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা দেয়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, ব্রাহ্মণবাড়িয় ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধায়। তাদের কারাগারে নেওয়া হয়। নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে হেফাজত। সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে হেফাজত মুচলেকা দিয়েছে রাজনীতি না করার। বিএনপি তাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগাযোগ নেই। তারা তাদের কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে সখ্য রেখে চলছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পারলাম, তারা রাজনীতি না করার বিষয়ে সরকারকে মুচলেকা দিয়েছে। পরে অবশ্য সরকারকে মুচলেকা দেয়নি বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে।’
হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান বলেছেন, ‘হেফাজতে ইসলাম রাজনীতি না করার বিষয়ে কাউকে মুচলেকা দেয়নি। আমাদের সম্পর্কে উদ্দেশ্যমূলক গালগল্প ছড়ানো হচ্ছে। হেফাজত কখনই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না, আগামীতেও রাজনীতি করবে না। হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। নতুন করে কাউকে রাজনীতিতে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া অবান্তর প্রসঙ্গ।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে বিএনপি গত বছর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। অবশ্য ইসলামি দল যেমন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, হেফাজতে ইসলাম প্রভৃতির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক করেনি। তবে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া প্রভৃতি ১০ দফা দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে চাইলে যে কেউ অংশ নিতে পারে। জনআকাক্সক্ষা পূরণে সংশ্লিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল এ আন্দোলনের বাইরে থাকতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির দাবির মধ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি রাজনৈতিক নেতা ও আলেম-ওলামাদের মুক্তির বিষয়টি রয়েছে।’
২৬ মার্চ ২০২১ হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এর জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারী এবং ঢাকায় বায়তুল মোকাররম এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটে। তখন পুলিশ হেফাজতের পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীদেরও গ্রেপ্তার করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
৩০ মার্চ ২০২১ গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে হেফাজতি তা-বে বিএনপি ইন্ধন দিয়েছে, তাদের কর্মসূচি পালনে সমর্থন দিয়েছে। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং হেফাজতকে উসকানি দিয়েছে, ইন্ধন জুগিয়েছে সরকার। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আজ থেকে ছেষট্টি বছর আগে ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) ১৩৬৪’র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫’র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান শনাক্ত করতে এই লেখা। প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক একাডেমিক ও নির্মোহ- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রচিত, এর সঙ্গে কলাম লেখকের নিজস্ব বোধ বিশ্বাস চিন্তা চেতনা কিংবা কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগের সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক দেশে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
ভাষার গঠনপ্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতিপ্রকৃতি তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র-নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
খোদ ‘রাজনীতি’র ধারণার বিবর্তন ও ব্যবহারিক তাৎপর্যে পরিবর্তন-পর্যালোচনায় দেখা যায় কৌটিল্য (খ্রি.পূর্ব ৩৭৬-২৮৩) এর মতে রাজনীতি হচ্ছে নিজ সমাজ পোষণ তোষণ কিংবা শত্রু মোকাবিলায় রাজার ক্ষমতা ধরে রাখা বা প্রয়োগ করার কৌশল। কৌটিল্য বিশ্বাস করতেন রাজার দায়িত্ব বা লক্ষ্য হচ্ছে বহু বৈষয়িক সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাম্ভিক আনন্দলাভ ও বিলাস উপভোগ করা, আর এ জন্য রাজা যেকোনোভাবে সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনে সচেষ্ট হবে, সৈন্য পুষবে নিজের নিরাপত্তা বিধান এবং অন্য রাজ্য দখল করে সাম্রাজ্যের আকার বাড়ানোর কাজে। প্রজাকল্যাণ সাধন এবং নিজের ক্ষমতা সংরক্ষণে রাজাকে কূট-কৌশলী হতে হয়। কৌটিল্যের মতে রাজনীতি হচ্ছে একই সঙ্গে সেরা কৌশল বিজ্ঞান (সুপার সায়েন্স) ও সেরা কলা (সুপার আর্ট)। কৌটিল্যের অর্ধশতাব্দী পর প্লেটো (খ্রি.পূ ৪২৮-৩৪৮) মনে করতেন সমাজে চাওয়া পাওয়ার সব ধরনের প্রয়াস-প্রচেষ্টা, বাদ-বিসংবাদ, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নিরসনে সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ন্যায়নীতিনির্ভরতা, যৌক্তিতা, সুশাসন বা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে সব পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ বা সমন্বিত শক্তি হিসেবে বিকাশ লাভ করবে। ঐকবদ্ধ করাই সৎ বা সফল রাজনীতি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল (খ্রি.পূর্ব ৩৮৪-৩২২) যদিও তার গুরুর অনুসারী ছিলেন তথাপি তার মতে রাজনীতি is highly critical of the ideal constitution set forth in Plato’s Republic on the grounds that it overvalues political unity, it embraces a system of communism that is impractical and inimical to human nature, and it neglects the happiness. সমসাময়িক আরেক পন্ডিত সক্রেটিসও (৪৭০-৩৯৯) ভাবতেন ভিন্নভাবে- the purpose of politics was not to capture power, nor it was an art hwo to remain in power. Political ethics make good and proper citizens. Both public and private persons must learn the art of political ethics. ম্যাকিয়াভেলি (১৪৫৯-১৫২৭) মনে করতেন for a ruler, it was better to be widely feared than to be greatly loved; a loved ruler retains authority by obligation, while a feared leader rules by fear of punishment.
রাজনীতির ভাষায় শব্দ একটি বড় অনুষঙ্গ। সময়ের অবসরে সৃষ্ট ও বহুল উচ্চারিত বা ব্যবহৃত এসব শব্দের ব্যঞ্জনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র ও চারিত্র ফুটে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবৎ দেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়। অন্যকথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা দলীয় প্রয়োজনে ভাষার যে ব্যবহার করেছেন, তা দেখানোর আগে দুনিয়ার কয়েকটি বড় বড় রাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রয়োজনে ভাষার কী ব্যবহার করেছে তার দু একটি দৃষ্টান্ত অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের রচনা থেকেই দেখা যাক ‘১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় গোয়েবলসের নেতৃত্বাধীনে ‘রাইখ সংস্কৃতি সংসদ’ গড়ে উঠছে। এ সংস্কৃতি সংসদের বিভাগ ছিল সাতটি-সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, শিল্প, সংগীত, থিয়েটার এবং সিনেমা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করে তোলার জন্য সাতটি বিভাগই একযোগে প্রচারণার কাজ করতে শুরু দিল। যারা এর কিছুদিন আগে জনমত প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল যখন ক্ষমতাসীন হয়, অন্যদল রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে। সেজন্য সরকারি দলের অস্তিত্বের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সরকার সমর্থিত বিরোধী দলের। সমগ্র জাতিকে এ দুই দল আপনাপন মতে দীক্ষিত করে তুলবার জন্য খবরের কাগজ, সভা-সমিতি ও ভাষা ব্যবহারের অন্য পন্থাগুলোকে অবলম্বন করে জোর প্রচারণা চালায়। জনমত যাদের প্রচারণায় অধিক পরিমাণে সাড়া দেয়, তারাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায়।’
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ নিচয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সে সব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কাজ করার জন্য নয়। রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতকগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্র করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্রে ত্যক্তবিরক্ত ও বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়। দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দরকষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রাজনৈতিক দল তাদের না থাকে, তাহলে যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়। আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিয়ালদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতাদের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।