
রাজশাহী শহর জুড়ে উৎসবের আমেজ। প্রতিটি বড় রাস্তায় তৈরি করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক তোরণ। ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী। নগরবাসীর মধ্যেও ব্যাপক উদ্দীপনা। প্রায় ৫ বছর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার রাজশাহী সফরে আসবেন। ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে (হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ) জনসভায় অংশ নেবেন। আর প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চান আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রধানের আগমনকে ঘিরে উল্লসিত দলীয় নেতাকর্মীরা। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর মধ্যেই চাঙ্গা ভাব লক্ষ করা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছিলেন। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করবেন। বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর ৩২ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ। নৌকার আদলে বানানো হয়েছে মঞ্চ। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রাজশাহী জুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, রাজশাহী জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি পয়েন্টেই নিরাপত্তা চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।
মাদ্রাসা মাঠ দেখা গেছে, মাঠের উত্তর পাশে প্রধান প্রবেশপথে বাঁশ দিয়ে এমনভাবে গেট তৈরি করা হয়েছে, যেন সুশৃঙ্খলভাবে মানুষ ভেতরে ঢুকতে পারেন। মাঠের মধ্যে একাধিক বাঁশের বেড়া দিয়ে মাঠকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া মাঠে বেশিসংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলানের জন্য মাঠের দক্ষিণ পাশের দেয়ালটি অপসারণ করা হয়েছে। এতে দক্ষিণ পাশের রাস্তাটি এখন মাঠের সঙ্গে সংযুক্ত।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মাদ্রাসা ও ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ হবে। শহরে ২২০টি মাইক ও ১২টি এলইডি স্ক্রিন থাকবে। এ ছাড়াও সমাবেশের জন্য ৫ শতাধিক ভলান্টিয়ার রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি ও পায়খানার ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, সকাল ৯টায় মাঠে নেতাকর্মীরা আসবেন। জনসভায় রাজশাহীসহ সব জেলার লোকজন প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাব। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নতুন চেহারায় সেজেছে রাজশাহী শহর। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে পুরো রাজশাহী শহরের প্রতিটি বড় রাস্তায় তৈরি করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক তোরণ। ব্যানার ফেস্টুন আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী।
সাতটি বিশেষ ট্রেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজশাহী জনসভা উপলক্ষে পশ্চিম অঞ্চলে রেলওয়েতে চালু করা হয়েছে সাত বিশেষ ট্রেন। রবিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এই ট্রেনগুলো রাজশাহীতে আসবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে সাতটি বিশেষ ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হলো, নাটোর স্পেশাল, সিরাজগঞ্জ স্পেশাল, জয়পুরহাট স্পেশাল, সান্তাহার স্পেশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্পেশাল, রহনপুর স্পেশাল ও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি স্পেশাল ট্রেন।
অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি শেখ হেলালের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রেনগুলো বেলা ১২টা থেকে ১টার মধ্যেই রাজশাহীতে পৌঁছাবে। সাতটি বিশেষ ট্রেনে সাড়ে ১৪ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহীতে
রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে একদিন আগেই পৌঁছেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। গত কয়েক দিন ধরেই নেতারা রাজশাহী আসছেন। এরই মধ্যে দলের হেভিওয়েট নেতারা অবস্থান করছেন এখানে। শনিবার বিকেলে রাজশাহী পৌঁছছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাজশাহীতে পৌঁছেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে ১৫-২০ জন কেন্দ্রীয় নেতা এরই মধ্যে রাজশাহীতে পৌঁছেছেন। তারা বর্তমানে রাজশাহী পর্যটন মোটলে অবস্থান করছেন। এ ছাড়াও এমপি ও অন্যরাও রাজশাহীতে পৌঁছেছেন। ছাত্র লীগের কেন্দ্রীর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকও চলে এসেছেন।
অন্নচিন্তা বড় চিন্তা। তা মাসকাবারি আমজনতা হোক আর মহাপরাক্রমশালী সরকারই হোক। চালের চিন্তায় সবারই কপালে ভাঁজ পড়ে। গরিবের মোটা চাল হোক আর বিয়েবাড়ির সুগন্ধি চাল কোনো চালেরই দাম স্থির ছিল না গত বছরগুলোয়। আটার দামের দমও ধরা যায়নি। সাধনা করেও চাল-আটার চালচিত্র বুঝতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বুঝতে পারেননি বলেই একের পর এক উদ্যোগ। দেশের ঘুপচিঘর মাড়িয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিদেশের আলিশান বাজারও। তাতেও স্বস্তি মেলেনি। চালের দর নিয়ে চার বছর চিন্তায় ছিলেন। এখন মহাচিন্তায়। নির্বাচনী বছরটা অন্তত স্বস্তিতে রাখতে চান ভোটারকে, দলীয় নেতাদেরও।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছিল। পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের জোগান দেওয়া ছিল ইশতেহারের অন্যতম লক্ষ্য। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সফল ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। এর কোনোটাই হয়নি। স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা একদিকে বলা হয়েছে অন্যদিকে আতপ আর সিদ্ধ চালের জন্য মন্ত্রী সচিব হন্যে হয়ে ছুটেছেন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম আর কম্বোডিয়ায়। হাত বাড়িয়েছেন প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতে। রাশিয়া থেকে গম আনতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের লবিং লেগেছে।
গত ৭ জানুয়ারি ছিল বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্ণতার দিন। সচিবালয়ে দপ্তরে বসে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজে নিজে চার বছরের হিসাব মেলাচ্ছিলেন। এ হিসাব মেলানোর মধ্যেই দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদক হাজির হন তার সামনে। প্রতিবেদকও জানতে চান কেমন করলেন চার বছর, সময় তো শেষ হয়ে আসছে। নির্বাচন হাতছানি দিচ্ছে।
পৌষের সূর্য তেরছাভাবে দক্ষিণ দিকে হেলে খাদ্যমন্ত্রীর রুমে আরামের উত্তাপ ছড়াচ্ছিল। সূর্যের উত্তাপ আর চাদরের ওমে মন্ত্রী আরামেই ছিলেন। নির্বাচনের কথা শুনে চাদরের ওম আর আরামদায়ক হয়নি মন্ত্রীর কাছে। চাদরখানা সরিয়ে চেয়ারের হাতলে রাখার সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যাচ্ছিল মূল্যায়নের জেরার মধ্যে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মন্ত্রী।
প্রসন্নমুখে মন্ত্রী বললেন, ‘বলুন কী শুনতে চান।’ চার বছর কেমন কাটল দেশ রূপান্তরের প্রশ্ন। সেটা তো গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আপনার কাছে শুনতে চাই, মন্ত্রীর জবাব।
মন্ত্রী হিসেবে আপনার নিজস্ব মূল্যায়ন কী? জবাবে তিনি তার চেষ্টার কথা জানান। মন্ত্রীর মতে, যখন বাজারদর চড়ে গেছে তখনই তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করে বা বিদেশ থেকে আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। যখন বেশি সংকট দেখা দেয় তখন বেসরকারি উদ্যোগে চাল আমদানি উন্মুক্ত করা হয়। খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি করে (ওএমএস) নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তিতে রাখার চেষ্টাও ছিল। অতিদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারের কাছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল-আটা কালোবাজারে বিক্রি হয়েছে। বিশেষ করে মহামারীর সময় যখন ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর কথা তখন কিছু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বার সরকারের চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘অভিযোগ উঠেছে সত্য, কিন্তু সরকারও ব্যবস্থা নিয়েছে। এর দায় শুধু খাদ্য অধিদপ্তরের নয়, ব্যবসায়ীরাও এর জন্য দায়ী।’
দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি জানতে চান, গত চার বছরই বাম্পার ফলন হয়েছে। এ সময়ে চাল উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে হটিয়ে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও চার বছরের কোনো সময়ই বাজার স্বস্তিদায়ক ছিল না। প্রতিটি আমন ও বোরোর ভরা মৌসুমে বাজারে চালের দাম বেশি ছিল। এ অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, অন্যান্য নিত্যপণ্য বাজারের তুলনায় চালের বাজার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে ছিল। বলা হয়েছিল, করোনাকালে দুই লাখ লোক না খেয়ে মারা যাবে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বলেছিল দুর্ভিক্ষ হবে। তা কিন্তু হয়নি। চালের বাজার বিভিন্ন পলিসি দিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মনিটরিং করা হয়েছে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য দিয়ে ঠিকমতোই এ সেক্টর চলেছে বলে মনে করেন খাদ্যমন্ত্রী।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কি এককভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব জানতে চাইলে মন্ত্রী না-সূচক জবাব দেন। চাহিদা ও জোগান খাদ্য মন্ত্রণালয়কে দেখতে হয়। কীভাবে বাজারটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সবকিছু মিলেই সাফল্যের সঙ্গে কাজটি করার দাবি মন্ত্রীর।
সাধারণ মানুষের ধারণা এমনকি কিছু মিডিয়া রিপোর্টও করেছে যে, আপনি একসময় চাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মন্ত্রীর নিজের চাল ব্যবসার অভিজ্ঞতা থাকায় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে বলে সাধারণের প্রত্যাশা ছিল। এ প্রত্যাশা কি আপনি মেটাতে পেরেছেন জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ধান-চালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ১৯৭৩-৭৪-এর সংকটকালে দুই বছর সরকারের এজেন্ট ছিলাম। তখন সরকার বড় বড় জোতদারের ওপর লেভি ধার্য করেছিল। কর্মকর্তারা গিয়ে অর্ডার করে আসত নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান সরকারি গুদামে দেওয়ার। আমি ওই ধানটাই সংগ্রহ করে সরকারের গুদামে দিয়ে আসতাম। এর বেশি কিছু ছিল না। আমি কখনই চাল ব্যবসায়ী ছিলাম না।’
আপনি গত চার বছরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মিলাররা কতটুকু মজুদ করতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে আইনের খসড়া করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, জাত না থাকার পরও মিলাররা মিনিকেট উল্লেখ করলেই শাস্তি পেতে হবে। খসড়া করলেও সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অনেকে ধারণা করছেন বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান চালের ব্যবসায় নেমে পড়ার কারণে আইনের খসড়াটি আটকে গেছে। খসড়া আইনটি বাস্তবায়ন করতে সমস্যা কোথায় এ প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খসড়া আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। তাদের কাছ থেকে এলেই মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।
সরকার যে পরিমাণ চাল কেনে তা মোট চাহিদার মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এ পরিমাণ চাল কিনে বা আমদানি করে পুরো চালের বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ কি আদৌ সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে চাল কিনে রেশন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেওয়া হয়। এসব কর্মসূচিতে যেটুকু দরকার ওটুকুই সরকার কেনে। বাজারে চালের দর যদি আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় বা হঠাৎ কমে গিয়ে উৎপাদন খরচ তোলাটাই কষ্টকর হয়ে যায় তখন সরকারের এ কেনাকাটাটুকুই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আপনি কি সফল দেশ রূপান্তরের এ প্রশ্নে হ্যাঁ-সূচক জাবাব দেন মন্ত্রী।
আপনি দাবি করছেন আপনি সফল। অথচ ২০২১ সলে চালের কেজিপ্রতি দর ছিল ৪৮ টাকা। এক বছরের মাথায় সেটা ৫৮ টাকা হয়ে গেছে। তাহলে সফল হলেন কী করে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, তখন বেসরকারি আমদানির ওপর কোনো ট্যাক্স ছিল না। এ সুযোগে বেসরকারিভাবে অনেক চাল এসেছিল। কৃষক ন্যায্য দাম পেত না। এর প্রতিবাদে কৃষক ধানের ক্ষেতে আগুন দিয়েছিল। সেই অবস্থায় আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগের ওই অবস্থা থাকলে দেশে হাহাকার পড়ে যেত চালের জন্য। ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষক অন্য আবাদে চলে যাচ্ছে। অনেক জমি পতিত পড়ে থাকত। একটা কূলকে বাঁচাতে গিয়ে আরেকটাকে ধ্বংস করা যাবে না। ১০ টাকা দাম বেড়েছে শুধু এটা চিন্তা না করে ভোক্তার কেনার ক্ষমতাও বেড়েছে সেটাও চিন্তা করতে হবে। পণ্যের দাম বৈশি^কভাবে বেড়েছে। শুধু আমাদের এখানেই বাড়েনি। নিম্ন আয়ের মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সে জন্যই তো ওএমএস চালু করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
গত চার বছরের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই খাদ্য অধিদপ্তরের জনবল সংকট ছিল। আপনি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করেও সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি। জবাবে মন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করি। এ নিয়োগ শেষ হলে আরও দেড় হাজার পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়াও আমরা এগিয়ে নিচ্ছি।
আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর সারা দেশে প্রতিটি পাঁচ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২০০টি পেডিসাইলো (ধানের গুদাম) নির্মাণ করার কথা বলেছিলেন। গত চার বছরে একটি গুদামও নির্মাণ করতে পারলেন না কেন? এ ব্যর্থতার জন্য কি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দায়ী নাকি কারও অদক্ষতা দায়ী এর সরাসরি জবাব না দিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প পাস হয়েছে। পেডিসাইলো নির্মাণের জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ হয়ে গেছে। আপাতত ৩০টি গুদাম হবে।
এসব গুদামের জনবলের জন্য কত বছর বসে থাকতে হবে খাদ্য অধিদপ্তরকে, এই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, বসে থাকতে হবে না। নিয়োগের প্রক্রিয়াও আমরা শুরু করে দিয়েছি। পেডিসাইলোগুলো উদ্বোধনের দিন থেকেই জনবল থাকবে।
একজন আমদানিকারক জানিয়েছেন, গত চার বছর চাল ও খোলা আটার বাজার অস্থির ছিল। সেই অস্থিরতা নির্বাচনী বছরে যেন না থাকে সেই চেষ্টা খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। ওই আমদানিকারক আরও জানিয়েছেন, সরকারের আয় কমেছে। এ কারণে খাদ্যে ভর্তুকিতেও টান পড়েছে। গরিবের ১০ টাকা কেজির চাল ১৫ টাকা হয়েছে। আটায় কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে। সবকিছু মিলে মন্ত্রী সাধন সাধনা করলেও সাধারণ মানুষ চাল-আটার বাজারে পিষ্ট হয়েছেন।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগে আলোচিত এক নির্দিষ্ট প্রার্থীকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। তাকে নিতে উপাচার্য একের পর এক অনিয়মের পসরা সাজিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। লিখিত পরীক্ষা শেষে শিক্ষক পদে এ নিয়োগে আজ রবিবার মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) গ্রহণের কথা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সুপারিশের কারণে ওই প্রার্থীকে নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন উপাচার্য। ওই প্রার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল কুবি নির্ধারিত মানের চেয়ে কম। ফলে তাকে নিতে বিশেষ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কুবি কর্র্তৃপক্ষ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে অননুমোদিত একটি অনুবিধি যোগ করা হয়। ওই অনুবিধিতে উল্লিখিত যোগ্যতাগুলো রয়েছে শুধু নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীর। গত ১৭ জানুয়ারি ওই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে লিখিত পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষা থেকে ভাইভায় অংশ নেওয়ার জন্য চারজন প্রার্থীকে মনোনীত করা হয়। ওই চারজনের মধ্যে নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীও রয়েছেন। এ ছাড়া বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশ করা তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম না থাকলেও রেজিস্ট্রার দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম যুক্ত করে।
এদিকে পরীক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা যাবে এমন কিছু লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্রে উল্লেখ করা যাবে না এমন নির্দেশনার পরও ওই প্রার্থী তার উত্তরপত্রে বিশেষ ‘চিহ্ন’ ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা চলাকালীনই বিষয়টি ধরা পড়লে পরে পর্যালোচনার জন্য হল পরিদর্শকই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে তার স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ, উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের শুধু তাদের অংশটুকুই মূল্যায়ন করতে দেওয়া হয়েছে। সার্বিক মূল্যায়ন নিয়ে তাদের থেকে কোনো কিছু জানতে চাওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে নিয়োগ বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তাদের অন্তত দুজন সার্বিক মূল্যায়নের বিষয়ে তাদের কোনো মতামত জানতে চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন।
সাধারণত নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা মিলে কাটমার্ক বা পাস নম্বর নির্ধারণ করে থাকেন। নিয়োগ বোর্ডের সভার কার্যবিবরণীতে তা উল্লেখ থাকে। ন্যূনতম ওই নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরই পরবর্তীকালে ভাইভার জন্য ডাকা হয়। এর ফলে কে কত নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ হলো তা জানা যায়। তবে মার্কেটিং বিভাগের কাটমার্ক কত নির্ধারিত হয়েছিল এ বিষয়ে জানেন না বোর্ড সদস্যরা। উপাচার্য নিজের মতো করেই প্রার্থীদের ভাইভার জন্য মনোনীত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বোর্ড সদস্যদের একজন এ বিষয়ে তার থেকে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি মন্তব্য করে আর কথা বলতে রাজি হননি।
এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষা থেকে যেসব প্রার্থীকে ভাইভার জন্য মনোনীত করা হয়, তাদের তালিকা প্রকাশ্যে দেওয়ার রীতি থাকলেও কুবি উপাচার্য এ ক্ষেত্রেও বিরত ছিলেন। মনোনীতদের শুধু রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে ফোন করে ভাইভার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অনিয়মের সুযোগ বিস্তৃত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের কথা বলে অযোগ্যদের নিতে যেরকম অনিয়ম করছেন, তাতে শিক্ষকের ওপর শিক্ষার্থীদের অশ্রদ্ধা তৈরি হবে। সর্বোচ্চ নির্বাহী হয়ে তিনি একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন। যা মূলত এ বিশ্ববিদ্যালয়কেই পিছিয়ে দেবে।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
শিক্ষক নিয়োগের বিতর্কিত এ প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ এলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ১০ দফা দাবি আদায়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ আবার ফ্যাসিবাদকে হটানোর জন্য সামগ্রিক লড়াই শুরু হয়েছে। এ লড়াই শুধু বিএনপির লড়াই নয়, এটা বিরোধী দলের নয়, এটা জনগণের লড়াই। রাজধানী ঢাকায় মহানগর বিএনপির নীরব গণপদযাত্রার মধ্য দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতাসীন দানবীয় সরকারকে চলে যেতে বাধ্য করব। এ সময় তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সসম্মানে বিদায় নিন। অন্যথায় ভারাক্রান্তভাবে চলে যেতে হবে। পালাবার কোনো পথ পাবেন না।’
গতকাল শনিবার রাজধানীতে দলের ‘পদযাত্রা’ শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অংশ নিয়ে এ কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব। দুপুর ২টায় রাজধানীর শাহজাদপুরের সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি হয়। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় চার দিনের এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদযাত্রার এ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। গতকাল ছিল কর্মসূচির প্রথম দিন। উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দুপুর ১২টা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শাহজাদপুরের সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। তারা দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার বহন করেন। নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, সাইফুল আলম নীরব, আবদুল মোনায়েম মুন্না, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আজকে আমরা এক নতুন আন্দোলন শুরু করলাম। এ সংগ্রামের মধ্যে ঢাকা শহরে এ নীরব যাত্রার মধ্য দিয়ে, এ নীরব প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব।’
দেশের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের চালের দাম বেড়ে গেছে, আমাদের ডালের দাম বাড়ছে, আমাদের ডিমের দাম বেড়ে গেছে, তেলের দাম বেড়েছে, লবণের দাম বেড়ে গেছে। এই যে রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা, কারখানার শ্রমিক ভাইয়েরা তারা এখন জীবনযাপন করতে পারছে না। তারা চাল-ডাল-তেল লবণ কিনতে পারছে না। বাচ্চাদের ডিম খেতে দিতে পারছে না। শুধু তাই নয়, আজকে কথা বলতে গেলে গ্রেপ্তার করা হয়, প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা হয়, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা দিয়ে সব বিরোধী দলকে আটক করে রাখা হচ্ছে। পুরো দেশকে সরকার একটা কারাগারে পরিণত করেছে। আমরা কি এটা মেনে নেব?’
মহানগর উত্তর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘নীরব’ পদযাত্রার এক কর্মসূচিতে অংশ নেন। পদযাত্রাটি বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, চৌধুরীপাড়া প্রভৃতি স্থান অতিক্রম করে বিকেল ৪টায় মালিবাগ আবুল হোটেলের কাছে এসে শেষ হয়। ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এ সড়কের পথযাত্রা শুরুর আগপর্যন্ত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখেন নেতাকর্মীরা। তবে পথযাত্রা শুরু হলে একদিকের সড়কের নেতাকর্মীদের ‘নীরব’ মিছিলে ব্যাপক যানজট সৃষ্ট হয়। অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যে যান। কারণ পথযাত্রার সামনেও ব্যাপক যানবাহন ধীরগতিতে চলায় পথযাত্রাও থেমে থেমে চলতে হয়েছে। পথযাত্রার এ কর্মসূচি ঘিরে বাড্ডা-মালিবাগ সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পদযাত্রা শুরুর আগে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেছেন, ‘নেতাকর্মীরা পদযাত্রায় অংশ নিতে বাড্ডায় আসছেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করতে চাই।’ কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ার ও এর আশপাশের, মালিবাগ ও মৌচাক মার্কেট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। একইভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত এবং ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে দলটির।
এদিকে বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের উদ্যোগে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অধিকার আপনারা নিয়ে নিয়েছেন। আমাদের দুবার ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। আমার জনগণের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকু কেড়ে নিয়েছেন। মানুষের পকেট কেটে আপনারা বড়লোক হচ্ছেন আর সেই টাকা বিদেশে পাচার করছেন।’
গতকাল দুপুরে উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির মরণযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। এভাবেই তারা পরাজিত হবে। আন্দোলন হবে, আগামী নির্বাচনেও তাদের মরণ হবে। রাজনৈতিক মরণ।’
আলোচনা সভায় সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অদ্ভুত, এ ধরনের কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এগুলো জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছু নয়। আমাদের মূল কথা হচ্ছে, অনেক হয়েছে এবার বিদায় হও। জনগণের রক্ত শোষণ করে খেয়েছ, এবার বিদায় হও।’
এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারার চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বেপারি, সাম্যবাদী দলের চেয়ারম্যান কমরেড নুরুল ইসলাম, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, মাইনরিটি পার্টির চেয়ারম্যান সুকৃতি ম-ল, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী, এনপিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য বেলাল হোসেন, নবী চৌধুরী, মো. ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে বিএনপি যে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা পদযাত্রা নয়, মরণযাত্রা এমন মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপির গণজোয়ারে ভাটা পড়েছে। এভাবেই তারা পরাজিত হবে। আন্দোলনে হবে, আগামী নির্বাচনেও তাদের মরণ হবে, রাজনৈতিক মরণ।’
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরার আজমপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
‘বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। খবর বাসস।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এত লাফালাফি, এত ছোটাছুটি, এত লোটা-কম্বল, এত কাঁথা-বালিশ; সমাবেশ হলে সাত দিন ধরে সমাবেশস্থলে শুয়ে পড়ে; আর পাতিলের পর পাতিল খাবার তৈরি হয়; কোথায় গেল সে দিন? কোথায় গেল লাল কার্ড? কোথায় গেল গণঅভ্যুত্থান? কোথায় গেল গণজোয়ার? গণজোয়ারে এখন ভাটার টান। তাই এটা পদযাত্রা নয়, পেছনযাত্রা। এটা পদযাত্রা নয়, মরণযাত্রা।’
তিনি বলেন, ‘তারা পদযাত্রা করছে, আর আমরা শীতবস্ত্র বিতরণ করছি। আমরা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি করছি না। তারা বাড্ডায় পদযাত্রা করছে, আমরা উত্তরায় শীতবস্ত্র বিতরণ করছি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি তো এখন কথার রাজা। মির্জা ফখরুল, কাজ নেই শুধু কথা আর কথা। শুধু কথার মালার চাতুরী। কাজ করছি আর বাধ্য হয়ে তাদের কথার জবাব দিচ্ছি। তারা একতরফা মিথ্যাচার করবে। আমরা কি চুপচাপ বসে থাকব? আমাদের অবশ্যই জবাব দিতে হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুল রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী, ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে শান্তি সমাবেশ থেকে বলব, ডাক দিলে চলে আসবেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়াই করছি। রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ আমরা ছাড়ব না। আমরা মানুষের পাশে ছিলাম, এ শীতের কষ্টেও মানুষের পাশে আছি। মানুষের দুঃখে, মানুষের কষ্টে, দুর্যোগে, ঝড়ে, বন্যায় মানুষের পাশে ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের ইতিহাস, মানুষের পাশে থাকা, মানুষের পাশে আছি। নির্বাচনে জিতলেও আছি, নির্বাচনে হেরে গেলেও আছি। হার-জিত আল্লাহপাকের ইচ্ছা। জনগণের ইচ্ছা। জনগণ চাইলে আমরা নির্বাচিত হব। আর জনগণ না চাইলে ২০০১ সালের মতো আমরা বিদায় নেব। এটাই তো আওয়ামী লীগের রাজনীতি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ দলের শিকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে। অনেক গভীরে। তাই আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেবেন, এ দিবাস্বপ্ন দেখে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ পালাবে না। আওয়ামী লীগ পালাবার দল নয়, এদেশেতে জন্ম আমার যেন এ দেশেতে মরি।’
খেলা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনে খেলা হবে, নির্বাচনে হবে বিএনপির বিরুদ্ধে, খেলা হবে; বলে ৫৪ দল, আবার বলে ১০ দফা, আবার বলে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা। শুক্রবার দেখলাম ১৪ দফা। ৫১ দফার আন্দোলন চলছে, দল হচ্ছে ৫৪টা জগাখিচুড়ি, ঐক্যজোট জগাখিচুড়ি। কর্মসূচি কোনো দিনও এদেশে সফল হবে না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবার রাস্তায় নেমেছে। আমরা বারবার বলেছি, আগামী সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। আপনাদের (বিএনপি) যদি জনগণের ওপর আস্থা থাকে আসুন, নির্বাচনে অংশ নিন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে আপনাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। কিন্তু নির্বাচনে তারা (বিএনপি) যাবে না। বিএনপি-জামায়াত এই অশুভ শক্তি তারা আসলে নির্বাচন চায় না। তারা জানে, জনগণ কখনো তাদের ক্ষমতায় আনবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের গণমানুষের দল, আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের বিপদে-আপদে, দুর্যোগে, সুখে, দুঃখে সবসময় মানুষের পাশে থাকে, সেটা বারবার প্রমাণ করেছে। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশকে একটা উন্নয়ন রাষ্ট্রের মাইলফলক করতে সক্ষম হয়েছে।
রাজধানীর সরকারি কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এম ওয়াসিম রানার (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা। শুক্রবার (০২ জুন) রাত সাড়ে ১২টার দিকে চানখারপুলের একটি বাসায় তার বন্ধুরা তাকে দরজা ভেঙে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে।
অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু জানান, 'রানা কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলায়। কয়েক দিন যাবৎ রানার খু্ব মন খারাপ ছিল। একাকী থাকতে চাইত। চুপচাপ থাকত। তবে কী চিন্তা করত সে ব্যাপারে কিছু বলত না। তাই আমি তাকে বলেছিলাম- বন্ধু, তুমি কিছুদিনের জন্য কক্সবাজার ঘুরে আস।'
ঘটনার পরপরই রানার স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় সানজিদা নামে এক মেয়েকে আহাজারি করতে দেখা যায়। সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশী মাইদুল ইসলাম জানান, 'সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে অনেকদিন আগে। রাজনৈতিক কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সহসভাপতি বলেন, 'আমরা জানতাম, সানজিদার সঙ্গে প্রেম ছিল। বিয়ে হয়েছিল কি-না তা সঠিক জানি না।' মৃত্যুর কারণ যা-ই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে বিচারের দাবি জানান তিনি।
রানার মৃত্যুর খবরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তারা শোক জানান। আজ (০৩ জুন) শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় কবি নজরুল সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চাপ চাপ রক্ত, ছেঁড়া জামাকাপড়, খাবার, ব্যাগপত্র, রক্তমাখা দেহ। এসবের মাঝেই ভাঙা লাইনের উপর পাওয়া গেলো ছোপ ছোপ রক্তমাখা একটি কবিতার খাতা।
খাতায় লেখা বিভিন্ন রকমের ভালোবাসার কবিতা, মাঝে মাঝে আবার নকশাও আঁকা। হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল,
‘‘অল্প অল্প মেঘ থেকে হালকা হালকা বৃষ্টি হয়, ছোট্ট ছোট্ট গল্প থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়....’’
পাতা উল্টাতেই চোখে পড়ল আরও একটি কবিতা। তার শুরুতে লেখা,
‘ভালোবাসা এই মন তোকে চায় সারাক্ষণ,
আছিস তুই মনের মাঝে
পাশে থাকিস সকাল সাঁঝে।
কী করে তোকে ভুলবে এই মন,
তুই যে আমার জীবন...’
কবিতাটি লেখক কে, কার জন্য এই কবিতা লিখা, তা জানার উপায় নেই। সম্ভবত, কবিতার খাতার মালিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতেই ছিলেন। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, সেই কবিতার খাতা ছিটকে এসে পড়েছে ভাঙা লাইনে।
কবিতার খাতার মালিক সুস্থ, আহত না মৃত, তাও জানা সম্ভব হয়নি। যিনি লিখেছেন, তিনি পুরুষ না মহিলা তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। তবে লেখা পড়ে বোঝা যায়, কবিতাটি প্রিয় কারও উদ্দেশে লেখা। যাঁর উদ্দেশে এই কবিতা লেখা, এই কবিতার খাতা কি তাঁর কাছেও কোনও দিন পৌঁছাবে! তাও জানার উপায় নেই।
ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনাস্থলে এই কবিতার খাতা হাতে পায় আনন্দবাজারের প্রতিনিধি। এভাবেই এক প্রতিবেদনে বর্ণনা তুলে ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির তথ্যমতে, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনের বেশি। ভেতরে এখনও আটকে আছে অনেক মানুষ।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত গেজেটে কয়েকটি আসনে পরিবর্তন এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত গেজেট শনিবার (৩ জুন)বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১-এর ধারা ৬-এর উপধারা (৩)-এর অধীনে সংসদের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার প্রাথমিক তালিকা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং ওই বিজ্ঞপ্তির অনুচ্ছেদ ৩-এর অধীন পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার বিষয়ে দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত আহ্বান করা হয়।
আরও বলা হয়, পরে নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক প্রাপ্ত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামতের ওপর কমিশন কর্তৃক প্রকাশ্য শুনানি গ্রহণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন উক্ত আইনের ধারা ৬-এর উপধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত পর্যালোচনা করে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সংযুক্ত তপশিল মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।