
ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাংলাদেশের নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখছে ইউরোপীয় ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ (ইএফএসএএস)। তারা বলছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতা বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ইএফএসএএসের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গতকাল শনিবার এ খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএনআই (এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল)।
আমস্টারডামভিত্তিক ইএফএসএএস ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বীকৃত একটি স্বাধীন, অলাভজনক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই বাংলাদেশের সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হবে। ‘গুমের’ মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক সমস্যায় পড়েছে।
এতে আরও বলা হয়, গত বছর রাশিয়া ইউক্রেনে ‘আগ্রাসনের’ পর বাংলাদেশ যে বাহ্যিক চাপের মুখে পড়েছে তা এমন অনুপাতে পৌঁছেছে যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ চান না বলে সতর্ক করেছেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানানোর পর সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়। এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, তার দেশের গণতন্ত্রের বিষয়ে অন্য জাতির নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।
এএনআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গেও সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়েছে। কারণ উভয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। ঢাকা উভয়কেই বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে এবং প্রত্যেকের সঙ্গে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতা চায়। ড. মোমেন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। এটা একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার।’
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন, আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, বিরোধী দলের আন্দোলন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রসঙ্গও টানা হয়েছে।
অন্নচিন্তা বড় চিন্তা। তা মাসকাবারি আমজনতা হোক আর মহাপরাক্রমশালী সরকারই হোক। চালের চিন্তায় সবারই কপালে ভাঁজ পড়ে। গরিবের মোটা চাল হোক আর বিয়েবাড়ির সুগন্ধি চাল কোনো চালেরই দাম স্থির ছিল না গত বছরগুলোয়। আটার দামের দমও ধরা যায়নি। সাধনা করেও চাল-আটার চালচিত্র বুঝতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বুঝতে পারেননি বলেই একের পর এক উদ্যোগ। দেশের ঘুপচিঘর মাড়িয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিদেশের আলিশান বাজারও। তাতেও স্বস্তি মেলেনি। চালের দর নিয়ে চার বছর চিন্তায় ছিলেন। এখন মহাচিন্তায়। নির্বাচনী বছরটা অন্তত স্বস্তিতে রাখতে চান ভোটারকে, দলীয় নেতাদেরও।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছিল। পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্যের জোগান দেওয়া ছিল ইশতেহারের অন্যতম লক্ষ্য। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সফল ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। এর কোনোটাই হয়নি। স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা একদিকে বলা হয়েছে অন্যদিকে আতপ আর সিদ্ধ চালের জন্য মন্ত্রী সচিব হন্যে হয়ে ছুটেছেন থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম আর কম্বোডিয়ায়। হাত বাড়িয়েছেন প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতে। রাশিয়া থেকে গম আনতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের লবিং লেগেছে।
গত ৭ জানুয়ারি ছিল বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্ণতার দিন। সচিবালয়ে দপ্তরে বসে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজে নিজে চার বছরের হিসাব মেলাচ্ছিলেন। এ হিসাব মেলানোর মধ্যেই দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদক হাজির হন তার সামনে। প্রতিবেদকও জানতে চান কেমন করলেন চার বছর, সময় তো শেষ হয়ে আসছে। নির্বাচন হাতছানি দিচ্ছে।
পৌষের সূর্য তেরছাভাবে দক্ষিণ দিকে হেলে খাদ্যমন্ত্রীর রুমে আরামের উত্তাপ ছড়াচ্ছিল। সূর্যের উত্তাপ আর চাদরের ওমে মন্ত্রী আরামেই ছিলেন। নির্বাচনের কথা শুনে চাদরের ওম আর আরামদায়ক হয়নি মন্ত্রীর কাছে। চাদরখানা সরিয়ে চেয়ারের হাতলে রাখার সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যাচ্ছিল মূল্যায়নের জেরার মধ্যে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মন্ত্রী।
প্রসন্নমুখে মন্ত্রী বললেন, ‘বলুন কী শুনতে চান।’ চার বছর কেমন কাটল দেশ রূপান্তরের প্রশ্ন। সেটা তো গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আপনার কাছে শুনতে চাই, মন্ত্রীর জবাব।
মন্ত্রী হিসেবে আপনার নিজস্ব মূল্যায়ন কী? জবাবে তিনি তার চেষ্টার কথা জানান। মন্ত্রীর মতে, যখন বাজারদর চড়ে গেছে তখনই তা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করে বা বিদেশ থেকে আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। যখন বেশি সংকট দেখা দেয় তখন বেসরকারি উদ্যোগে চাল আমদানি উন্মুক্ত করা হয়। খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি করে (ওএমএস) নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তিতে রাখার চেষ্টাও ছিল। অতিদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারের কাছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল-আটা কালোবাজারে বিক্রি হয়েছে। বিশেষ করে মহামারীর সময় যখন ক্ষমতাসীন দলের তৃণমূলের নেতাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর কথা তখন কিছু ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বার সরকারের চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘অভিযোগ উঠেছে সত্য, কিন্তু সরকারও ব্যবস্থা নিয়েছে। এর দায় শুধু খাদ্য অধিদপ্তরের নয়, ব্যবসায়ীরাও এর জন্য দায়ী।’
দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি জানতে চান, গত চার বছরই বাম্পার ফলন হয়েছে। এ সময়ে চাল উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে হটিয়ে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও চার বছরের কোনো সময়ই বাজার স্বস্তিদায়ক ছিল না। প্রতিটি আমন ও বোরোর ভরা মৌসুমে বাজারে চালের দাম বেশি ছিল। এ অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, অন্যান্য নিত্যপণ্য বাজারের তুলনায় চালের বাজার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে ছিল। বলা হয়েছিল, করোনাকালে দুই লাখ লোক না খেয়ে মারা যাবে, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বলেছিল দুর্ভিক্ষ হবে। তা কিন্তু হয়নি। চালের বাজার বিভিন্ন পলিসি দিয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মনিটরিং করা হয়েছে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য দিয়ে ঠিকমতোই এ সেক্টর চলেছে বলে মনে করেন খাদ্যমন্ত্রী।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কি এককভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব জানতে চাইলে মন্ত্রী না-সূচক জবাব দেন। চাহিদা ও জোগান খাদ্য মন্ত্রণালয়কে দেখতে হয়। কীভাবে বাজারটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সবকিছু মিলেই সাফল্যের সঙ্গে কাজটি করার দাবি মন্ত্রীর।
সাধারণ মানুষের ধারণা এমনকি কিছু মিডিয়া রিপোর্টও করেছে যে, আপনি একসময় চাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মন্ত্রীর নিজের চাল ব্যবসার অভিজ্ঞতা থাকায় চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে বলে সাধারণের প্রত্যাশা ছিল। এ প্রত্যাশা কি আপনি মেটাতে পেরেছেন জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ধান-চালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। ১৯৭৩-৭৪-এর সংকটকালে দুই বছর সরকারের এজেন্ট ছিলাম। তখন সরকার বড় বড় জোতদারের ওপর লেভি ধার্য করেছিল। কর্মকর্তারা গিয়ে অর্ডার করে আসত নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান সরকারি গুদামে দেওয়ার। আমি ওই ধানটাই সংগ্রহ করে সরকারের গুদামে দিয়ে আসতাম। এর বেশি কিছু ছিল না। আমি কখনই চাল ব্যবসায়ী ছিলাম না।’
আপনি গত চার বছরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মিলাররা কতটুকু মজুদ করতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে আইনের খসড়া করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, জাত না থাকার পরও মিলাররা মিনিকেট উল্লেখ করলেই শাস্তি পেতে হবে। খসড়া করলেও সরকার তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অনেকে ধারণা করছেন বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান চালের ব্যবসায় নেমে পড়ার কারণে আইনের খসড়াটি আটকে গেছে। খসড়া আইনটি বাস্তবায়ন করতে সমস্যা কোথায় এ প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খসড়া আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। তাদের কাছ থেকে এলেই মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।
সরকার যে পরিমাণ চাল কেনে তা মোট চাহিদার মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ। এ পরিমাণ চাল কিনে বা আমদানি করে পুরো চালের বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ কি আদৌ সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে চাল কিনে রেশন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেওয়া হয়। এসব কর্মসূচিতে যেটুকু দরকার ওটুকুই সরকার কেনে। বাজারে চালের দর যদি আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় বা হঠাৎ কমে গিয়ে উৎপাদন খরচ তোলাটাই কষ্টকর হয়ে যায় তখন সরকারের এ কেনাকাটাটুকুই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আপনি কি সফল দেশ রূপান্তরের এ প্রশ্নে হ্যাঁ-সূচক জাবাব দেন মন্ত্রী।
আপনি দাবি করছেন আপনি সফল। অথচ ২০২১ সলে চালের কেজিপ্রতি দর ছিল ৪৮ টাকা। এক বছরের মাথায় সেটা ৫৮ টাকা হয়ে গেছে। তাহলে সফল হলেন কী করে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, তখন বেসরকারি আমদানির ওপর কোনো ট্যাক্স ছিল না। এ সুযোগে বেসরকারিভাবে অনেক চাল এসেছিল। কৃষক ন্যায্য দাম পেত না। এর প্রতিবাদে কৃষক ধানের ক্ষেতে আগুন দিয়েছিল। সেই অবস্থায় আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগের ওই অবস্থা থাকলে দেশে হাহাকার পড়ে যেত চালের জন্য। ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষক অন্য আবাদে চলে যাচ্ছে। অনেক জমি পতিত পড়ে থাকত। একটা কূলকে বাঁচাতে গিয়ে আরেকটাকে ধ্বংস করা যাবে না। ১০ টাকা দাম বেড়েছে শুধু এটা চিন্তা না করে ভোক্তার কেনার ক্ষমতাও বেড়েছে সেটাও চিন্তা করতে হবে। পণ্যের দাম বৈশি^কভাবে বেড়েছে। শুধু আমাদের এখানেই বাড়েনি। নিম্ন আয়ের মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সে জন্যই তো ওএমএস চালু করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
গত চার বছরের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই খাদ্য অধিদপ্তরের জনবল সংকট ছিল। আপনি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করেও সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেননি। জবাবে মন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করি। এ নিয়োগ শেষ হলে আরও দেড় হাজার পদে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়াও আমরা এগিয়ে নিচ্ছি।
আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর সারা দেশে প্রতিটি পাঁচ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ২০০টি পেডিসাইলো (ধানের গুদাম) নির্মাণ করার কথা বলেছিলেন। গত চার বছরে একটি গুদামও নির্মাণ করতে পারলেন না কেন? এ ব্যর্থতার জন্য কি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দায়ী নাকি কারও অদক্ষতা দায়ী এর সরাসরি জবাব না দিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প পাস হয়েছে। পেডিসাইলো নির্মাণের জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ হয়ে গেছে। আপাতত ৩০টি গুদাম হবে।
এসব গুদামের জনবলের জন্য কত বছর বসে থাকতে হবে খাদ্য অধিদপ্তরকে, এই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, বসে থাকতে হবে না। নিয়োগের প্রক্রিয়াও আমরা শুরু করে দিয়েছি। পেডিসাইলোগুলো উদ্বোধনের দিন থেকেই জনবল থাকবে।
একজন আমদানিকারক জানিয়েছেন, গত চার বছর চাল ও খোলা আটার বাজার অস্থির ছিল। সেই অস্থিরতা নির্বাচনী বছরে যেন না থাকে সেই চেষ্টা খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। ওই আমদানিকারক আরও জানিয়েছেন, সরকারের আয় কমেছে। এ কারণে খাদ্যে ভর্তুকিতেও টান পড়েছে। গরিবের ১০ টাকা কেজির চাল ১৫ টাকা হয়েছে। আটায় কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে। সবকিছু মিলে মন্ত্রী সাধন সাধনা করলেও সাধারণ মানুষ চাল-আটার বাজারে পিষ্ট হয়েছেন।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
রাজশাহী শহর জুড়ে উৎসবের আমেজ। প্রতিটি বড় রাস্তায় তৈরি করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক তোরণ। ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী। নগরবাসীর মধ্যেও ব্যাপক উদ্দীপনা। প্রায় ৫ বছর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার রাজশাহী সফরে আসবেন। ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে (হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ) জনসভায় অংশ নেবেন। আর প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে চান আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রধানের আগমনকে ঘিরে উল্লসিত দলীয় নেতাকর্মীরা। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর মধ্যেই চাঙ্গা ভাব লক্ষ করা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছিলেন। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করবেন। বিকেলে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেবেন। এখানে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর ৩২ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ। নৌকার আদলে বানানো হয়েছে মঞ্চ। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে রাজশাহী জুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, রাজশাহী জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিটি পয়েন্টেই নিরাপত্তা চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।
মাদ্রাসা মাঠ দেখা গেছে, মাঠের উত্তর পাশে প্রধান প্রবেশপথে বাঁশ দিয়ে এমনভাবে গেট তৈরি করা হয়েছে, যেন সুশৃঙ্খলভাবে মানুষ ভেতরে ঢুকতে পারেন। মাঠের মধ্যে একাধিক বাঁশের বেড়া দিয়ে মাঠকে কয়েক ভাগে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া মাঠে বেশিসংখ্যক মানুষের স্থান সংকুলানের জন্য মাঠের দক্ষিণ পাশের দেয়ালটি অপসারণ করা হয়েছে। এতে দক্ষিণ পাশের রাস্তাটি এখন মাঠের সঙ্গে সংযুক্ত।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মাদ্রাসা ও ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ হবে। শহরে ২২০টি মাইক ও ১২টি এলইডি স্ক্রিন থাকবে। এ ছাড়াও সমাবেশের জন্য ৫ শতাধিক ভলান্টিয়ার রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি ও পায়খানার ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, সকাল ৯টায় মাঠে নেতাকর্মীরা আসবেন। জনসভায় রাজশাহীসহ সব জেলার লোকজন প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাব। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নতুন চেহারায় সেজেছে রাজশাহী শহর। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে পুরো রাজশাহী শহরের প্রতিটি বড় রাস্তায় তৈরি করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক তোরণ। ব্যানার ফেস্টুন আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী।
সাতটি বিশেষ ট্রেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজশাহী জনসভা উপলক্ষে পশ্চিম অঞ্চলে রেলওয়েতে চালু করা হয়েছে সাত বিশেষ ট্রেন। রবিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এই ট্রেনগুলো রাজশাহীতে আসবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে সাতটি বিশেষ ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হলো, নাটোর স্পেশাল, সিরাজগঞ্জ স্পেশাল, জয়পুরহাট স্পেশাল, সান্তাহার স্পেশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্পেশাল, রহনপুর স্পেশাল ও রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানি স্পেশাল ট্রেন।
অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি শেখ হেলালের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রেনগুলো বেলা ১২টা থেকে ১টার মধ্যেই রাজশাহীতে পৌঁছাবে। সাতটি বিশেষ ট্রেনে সাড়ে ১৪ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহীতে রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে একদিন আগেই পৌঁছেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। গত কয়েক দিন ধরেই নেতারা রাজশাহী আসছেন। এরই মধ্যে দলের হেভিওয়েট নেতারা অবস্থান করছেন এখানে। শনিবার বিকেলে রাজশাহী পৌঁছছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাজশাহীতে পৌঁছেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে ১৫-২০ জন কেন্দ্রীয় নেতা এরই মধ্যে রাজশাহীতে পৌঁছেছেন। তারা বর্তমানে রাজশাহী পর্যটন মোটলে অবস্থান করছেন। এ ছাড়াও এমপি ও অন্যরাও রাজশাহীতে পৌঁছেছেন। ছাত্র লীগের কেন্দ্রীর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকও চলে এসেছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগে আলোচিত এক নির্দিষ্ট প্রার্থীকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। তাকে নিতে উপাচার্য একের পর এক অনিয়মের পসরা সাজিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। লিখিত পরীক্ষা শেষে শিক্ষক পদে এ নিয়োগে আজ রবিবার মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) গ্রহণের কথা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সুপারিশের কারণে ওই প্রার্থীকে নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন উপাচার্য। ওই প্রার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল কুবি নির্ধারিত মানের চেয়ে কম। ফলে তাকে নিতে বিশেষ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কুবি কর্র্তৃপক্ষ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে অননুমোদিত একটি অনুবিধি যোগ করা হয়। ওই অনুবিধিতে উল্লিখিত যোগ্যতাগুলো রয়েছে শুধু নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীর। গত ১৭ জানুয়ারি ওই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে লিখিত পরীক্ষা হয়। লিখিত পরীক্ষা থেকে ভাইভায় অংশ নেওয়ার জন্য চারজন প্রার্থীকে মনোনীত করা হয়। ওই চারজনের মধ্যে নির্দিষ্ট ওই প্রার্থীও রয়েছেন। এ ছাড়া বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটির সুপারিশ করা তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম না থাকলেও রেজিস্ট্রার দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম যুক্ত করে।
এদিকে পরীক্ষার্থীকে চিহ্নিত করা যাবে এমন কিছু লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্রে উল্লেখ করা যাবে না এমন নির্দেশনার পরও ওই প্রার্থী তার উত্তরপত্রে বিশেষ ‘চিহ্ন’ ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা চলাকালীনই বিষয়টি ধরা পড়লে পরে পর্যালোচনার জন্য হল পরিদর্শকই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে তার স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ, উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের শুধু তাদের অংশটুকুই মূল্যায়ন করতে দেওয়া হয়েছে। সার্বিক মূল্যায়ন নিয়ে তাদের থেকে কোনো কিছু জানতে চাওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে নিয়োগ বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তাদের অন্তত দুজন সার্বিক মূল্যায়নের বিষয়ে তাদের কোনো মতামত জানতে চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন।
সাধারণত নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা মিলে কাটমার্ক বা পাস নম্বর নির্ধারণ করে থাকেন। নিয়োগ বোর্ডের সভার কার্যবিবরণীতে তা উল্লেখ থাকে। ন্যূনতম ওই নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরই পরবর্তীকালে ভাইভার জন্য ডাকা হয়। এর ফলে কে কত নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ বা অনুত্তীর্ণ হলো তা জানা যায়। তবে মার্কেটিং বিভাগের কাটমার্ক কত নির্ধারিত হয়েছিল এ বিষয়ে জানেন না বোর্ড সদস্যরা। উপাচার্য নিজের মতো করেই প্রার্থীদের ভাইভার জন্য মনোনীত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বোর্ড সদস্যদের একজন এ বিষয়ে তার থেকে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি মন্তব্য করে আর কথা বলতে রাজি হননি।
এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষা থেকে যেসব প্রার্থীকে ভাইভার জন্য মনোনীত করা হয়, তাদের তালিকা প্রকাশ্যে দেওয়ার রীতি থাকলেও কুবি উপাচার্য এ ক্ষেত্রেও বিরত ছিলেন। মনোনীতদের শুধু রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে ফোন করে ভাইভার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অনিয়মের সুযোগ বিস্তৃত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের কথা বলে অযোগ্যদের নিতে যেরকম অনিয়ম করছেন, তাতে শিক্ষকের ওপর শিক্ষার্থীদের অশ্রদ্ধা তৈরি হবে। সর্বোচ্চ নির্বাহী হয়ে তিনি একের পর এক অনিয়ম করে যাচ্ছেন। যা মূলত এ বিশ্ববিদ্যালয়কেই পিছিয়ে দেবে।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
শিক্ষক নিয়োগের বিতর্কিত এ প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ এলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ১০ দফা দাবি আদায়ে পদযাত্রা কর্মসূচিতে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ আবার ফ্যাসিবাদকে হটানোর জন্য সামগ্রিক লড়াই শুরু হয়েছে। এ লড়াই শুধু বিএনপির লড়াই নয়, এটা বিরোধী দলের নয়, এটা জনগণের লড়াই। রাজধানী ঢাকায় মহানগর বিএনপির নীরব গণপদযাত্রার মধ্য দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতাসীন দানবীয় সরকারকে চলে যেতে বাধ্য করব। এ সময় তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘সসম্মানে বিদায় নিন। অন্যথায় ভারাক্রান্তভাবে চলে যেতে হবে। পালাবার কোনো পথ পাবেন না।’
গতকাল শনিবার রাজধানীতে দলের ‘পদযাত্রা’ শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অংশ নিয়ে এ কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব। দুপুর ২টায় রাজধানীর শাহজাদপুরের সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি হয়। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় চার দিনের এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদযাত্রার এ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। গতকাল ছিল কর্মসূচির প্রথম দিন। উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দুপুর ১২টা থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা শাহজাদপুরের সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। তারা দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার বহন করেন। নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, সাইফুল আলম নীরব, আবদুল মোনায়েম মুন্না, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আজকে আমরা এক নতুন আন্দোলন শুরু করলাম। এ সংগ্রামের মধ্যে ঢাকা শহরে এ নীরব যাত্রার মধ্য দিয়ে, এ নীরব প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব।’
দেশের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের চালের দাম বেড়ে গেছে, আমাদের ডালের দাম বাড়ছে, আমাদের ডিমের দাম বেড়ে গেছে, তেলের দাম বেড়েছে, লবণের দাম বেড়ে গেছে। এই যে রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা, কারখানার শ্রমিক ভাইয়েরা তারা এখন জীবনযাপন করতে পারছে না। তারা চাল-ডাল-তেল লবণ কিনতে পারছে না। বাচ্চাদের ডিম খেতে দিতে পারছে না। শুধু তাই নয়, আজকে কথা বলতে গেলে গ্রেপ্তার করা হয়, প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা হয়, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা দিয়ে সব বিরোধী দলকে আটক করে রাখা হচ্ছে। পুরো দেশকে সরকার একটা কারাগারে পরিণত করেছে। আমরা কি এটা মেনে নেব?’
মহানগর উত্তর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘নীরব’ পদযাত্রার এক কর্মসূচিতে অংশ নেন। পদযাত্রাটি বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, চৌধুরীপাড়া প্রভৃতি স্থান অতিক্রম করে বিকেল ৪টায় মালিবাগ আবুল হোটেলের কাছে এসে শেষ হয়। ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এ সড়কের পথযাত্রা শুরুর আগপর্যন্ত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখেন নেতাকর্মীরা। তবে পথযাত্রা শুরু হলে একদিকের সড়কের নেতাকর্মীদের ‘নীরব’ মিছিলে ব্যাপক যানজট সৃষ্ট হয়। অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যে যান। কারণ পথযাত্রার সামনেও ব্যাপক যানবাহন ধীরগতিতে চলায় পথযাত্রাও থেমে থেমে চলতে হয়েছে। পথযাত্রার এ কর্মসূচি ঘিরে বাড্ডা-মালিবাগ সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পদযাত্রা শুরুর আগে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেছেন, ‘নেতাকর্মীরা পদযাত্রায় অংশ নিতে বাড্ডায় আসছেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করতে চাই।’ কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ার ও এর আশপাশের, মালিবাগ ও মৌচাক মার্কেট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। একইভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত এবং ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে দলটির।
এদিকে বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের উদ্যোগে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অধিকার আপনারা নিয়ে নিয়েছেন। আমাদের দুবার ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। আমার জনগণের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকু কেড়ে নিয়েছেন। মানুষের পকেট কেটে আপনারা বড়লোক হচ্ছেন আর সেই টাকা বিদেশে পাচার করছেন।’
গতকাল দুপুরে উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির মরণযাত্রা শুরু হয়ে গেছে। এভাবেই তারা পরাজিত হবে। আন্দোলন হবে, আগামী নির্বাচনেও তাদের মরণ হবে। রাজনৈতিক মরণ।’
আলোচনা সভায় সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অদ্ভুত, এ ধরনের কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এগুলো জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছু নয়। আমাদের মূল কথা হচ্ছে, অনেক হয়েছে এবার বিদায় হও। জনগণের রক্ত শোষণ করে খেয়েছ, এবার বিদায় হও।’
এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারার চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বেপারি, সাম্যবাদী দলের চেয়ারম্যান কমরেড নুরুল ইসলাম, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, মাইনরিটি পার্টির চেয়ারম্যান সুকৃতি ম-ল, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী, এনপিপি প্রেসিডিয়াম সদস্য বেলাল হোসেন, নবী চৌধুরী, মো. ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়েই চলছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে, তারপরও যেন ভাগ্যটা ফেরানো যাচ্ছিল না। পরাশক্তির তকমাটা খসে যায় গেল এক যুগে। লিগ শিরোপা তাদের কাছে শুধুই মরীচিকা। সাদা-কালোদের কাছে টুর্নামেন্টের শিরোপাও দূর আকাশের তারায় রূপ নিয়েছিল। সেখান থেকে মোহামেডানকে বলতে গেলে একাই শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন ‘ঘরের ছেলে’ সুলেমান দিয়াবাতে। মালির এই স্ট্রাইকার টানা পাঁচ মৌসুম ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাঝারি মানের মোহামেডানকে। তার জাদুতে গতকাল ফেডারেশন কাপের মহা-ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়েছে সাদা-কালোরা। এই অর্জন এসেছে অনেক অপেক্ষার পর। তাই তো এই শিরোপাকে মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন দিয়াবাতেও। বিশ্বাস করেন, এই শিরোপা বদলে দেবে মোহামেডানের চিন্তাধারাকে।
টাইব্রেকারে শিরোপা জয়ের পর ড্রেসিং রুমে সতীর্থদের হুল্লোড়ের মধ্যে ম্যাচসেরা, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়ে এক কোনায় বসে দেশে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন দিয়াবাতে। সেই ফাঁকেই সাংবাদিকদের কাছে জানালেন প্রতিক্রিয়া, ‘পেনাল্টি শুটআউটের আগ পর্যন্ত ম্যাচটা ভীষণ কঠিন ছিল আমাদের জন্য। আল্লাহ আমাদের সহায়তা করেছেন এই ট্রফিটি জিততে। তাই আমি অনেক খুশি। আমার ক্যারিয়ারে কোনো ফাইনালে প্রথমবারের মতো চার গোল করলাম। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ দিয়াবাতে বলেন, ‘৯ বছর পর আমি একা নই, সব খেলোয়াড় মিলে মোহামেডানকে একটা শিরোপা এনে দিয়েছি। বিশ্বাস ছিল ম্যাচে ফিরতে পারলে আমরাই শিরোপা জিতব, সেটাই হয়েছে। আমি এই অর্জন মালিতে থাকা আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মাকে উৎসর্গ করছি।’ শিরোপাটা মোহামেডানের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ আলফাজ আহমেদের জন্যও বিশেষ অর্জন। ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ খেলেছেন এবং জিতেছেন। তবে এই জয়টাকে আলাদা করে রাখছেন তিনি, ‘আজকের খেলাটা অনেক বড় অর্জন। ব্যাকফুটে থেকে ফিরে আসা, ম্যাচ দেখে বোঝা যাচ্ছিল না কে জিতবে। দিয়াবাতে আসাধারণ ফুটবল খেলেছে। মুজাফ্ফারভের হাত ভেঙে দিয়েছিল, ওই অবস্থায়ও সে খেলা চালিয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের কমিটম্যান্ট ছিল অসাধারণ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি শিরোপা জিতেছি, এবার কোচ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ে প্রথম শিরোপা জিতলাম। তাই শিরোপাটাকেই আমি এগিয়ে রাখব।’ প্রথমার্ধে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েননি আলফাজ। শিষ্যদের শিখিয়েছেন মাথা ঠান্ডা রেখে পাল্টা জবাব দেওয়ার মন্ত্র, ‘প্রথমার্ধের খেলা শেষে শিষ্যদের বলেছি, তোমরা মাথা ঠা-া রেখে খেলো। তারা সেটাই করেছে।’
চোটে পড়ে মাঠ ছাড়া গোলকিপার সুজন সতীর্থ বিপুকে টাইব্রেকারে দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, ‘মাঠ ছাড়ার এক মিনিটের মধ্যে আবাহনী যখন গোল পরিশোধ করল, তখন ভীষণ খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমরা আর পারব না। তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে বিপু। আমি তাই অনেক বেশি খুশি।’
বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে।’
মুসলমানদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এটা করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই, তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ^সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোলসহ জ্ঞানের আরও অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে। সেই যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশে^ আধিপত্য বিস্তার করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে, বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে করে তারা এ ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখতে পারেন।’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়; বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসির মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিও বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।।
ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে। বাংলাদেশে ইস্যুকৃত মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২২ লাখ কিন্তু একক (ইউনিক) গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন পার্সোনাল ঋণ হলেও ঋণ পরিশোধের হার খুব সন্তোষজনক। গ্রাহক পর্যায়ে একটি ক্রেডিট কার্ড দিতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু অত্যাবশ্যক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এটিকে ঋণ হিসেবে না দেখে লাইফস্টাইল পণ্য হিসেবে দেখে এর আবশ্যকীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করা হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যাপ্তি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষরাও ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন, যা ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যেমন পিওএস, এটিএম, সিআরএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর কোড ইত্যাদি। বিগত বছরগুলোতে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাই বলা যায়, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রথাগত আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা।
তুলনামূলক কম ব্যবহারকারী
আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ যেখানে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যার মধ্যে যে বড় ব্যবধান, এর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এছাড়া রয়েছে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে হলে আগে কার্ড ব্যবহারের ইকোসিস্টেম প্রসারিত করতে হবে। কিউ-আরকোড এবং অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি পেলে পুরো দেশে ক্রেডিট কার্ড তথা সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে।
ব্যবহারকারী কারা
ব্যাংকগুলো চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী উভয় শ্রেণির গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে, তবে এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঋণের সহজলভ্যতা এবং সুবিধাজনক পরিশোধ ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল অফার যেমন ইএমআই, ক্যাশব্যাক ডিসকাউন্টসহ বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ইন্স্যুরেন্স, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, মিট অ্যান্ড গ্রিট, লাউঞ্জ সুবিধা ইত্যাদি।
ঋণ শোধের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়
ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। এটি নিতে হলে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতার প্রমাণের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও দাখিল করতে হয়। দেশে এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার হার বেড়েছে। সবাই প্রতি বছর তার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু অনেকে অসাবধানতাবশত আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। তাছাড়া অনেকের করযোগ্য আয় না থাকায় তারাও রিটার্ন জমা দেয় না। যা ক্রেডিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে করি।
জীবন সহজ করছে ক্রেডিট কার্ড
ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটির ব্যবহারও অত্যন্ত সহজ। ক্রেডিট কার্ড বিলম্বিত বিল পরিশোধের ভিত্তিতে কাজ করে, যার অর্থ আপনি এখন আপনার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করে অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং পরে তা সুবিধামতো সময়ে পরিশোধ করতে পারেন। ব্যবহৃত অর্থ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট হয় না। এভাবে গ্রাহক প্রতিবার তার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে। একজন গ্রাহক যদি নিয়মিত সঠিক সময়ে তার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন তাহলে কখনোই সেই গ্রাহক ঋণগ্রস্ত হবেন না। ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী মনিটরিং ও রিকভারি ব্যবস্থা থাকার কারণে এই সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলক অনেক কম।
নিরাপত্তায় প্রয়োজন সচেতনতা
ডিজিটাল পেমেন্টগুলো সাধারণত বিভিন্ন ব্যবহারিক কারণে অফলাইন পেমেন্টের চেয়ে বেশি নিরাপদ। যেমন নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি না থাকা, চুরি, জালিয়াতির আশঙ্কা কম থাকা। ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের যে ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন
কার্ড নম্বর, কার্ডের পেছনের ৩ সংখ্যার কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু (CVV2), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP), মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং নিরাপত্তা পিন কারও সঙ্গে বিনিময় না করা।
সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইটে ই-কমার্স লেনদেন থেকে বিরত থাকা ও কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকা।
সন্দেহজনক কোনো ই-মেইল অথবা এসএমএসে থাকা লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা।
সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় ডিজিটাল ডিভাইসের সব সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা এবং নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
যেকোনো সন্দেহজনক লেনদেন অতিসত্বর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চ অথবা ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
কার্ড হারানোর পরপরই ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
সাধারণত, অধিকাংশ ব্যাংকই নির্দিষ্ট লেনদেনের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে থাকে, যার ফলে এটি গ্রাহকের ওপর বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারের তুলনায় বাংলাদেশে তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তবে ব্যাংকগুলো সেটেলমেন্টের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনাসুদে বিল পরিশোধের সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই যদি কোনো গ্রাহক বুঝে সচেতনভাবে নিয়মিত বিল পরিশোধ করে তবে এটা কিন্তু গ্রাহকদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ।
গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উৎসবে নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে যার ফলে গ্রাহক বেশি বেশি লেনদেন করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।