
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে সরকারের নির্বাহী আদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। পাশাপাশি গ্যাসের বিতরণ চার্জও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারির সম্ভাবনা আছে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘আমরা বলেছি প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’ চলতি সপ্তাহে দাম বাড়ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাড়তে পারে, কিন্তু সেটা আমি জানি না।’ এর আগে ১২ জানুয়ারি গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পর ১৭ জানুয়ারি অস্বাভাবিক হারে সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, যা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কার্যকর হবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৫০ পয়সা করে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
মন্ত্রণালয়ের হাতে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা দেওয়ার আগে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। তখন সাধারণ মানুষের কথা কিছুটা বিবেচনা করার সুযোগ থাকলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব করা হয় না। দফায় দফায় এভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দৈনন্দিন ব্যয় বাড়বে; যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার যেভাবে বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করছে, তা ভোক্তার জন্য এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত তথা সামগ্রিক দেশের জন্য অশনিসংকেত। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত পুরোপুরি কারিগরি। এর সঙ্গে আইনের নানা বিষয় জড়িত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সই করা ছাড়া তারা কিছুই করে না। এভাবে তো সাধারণ মানুষের কল্যাণ সম্ভব নয়। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বিধায় সেখানে কিছুটা হলেও বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর জবাবদিহি থাকত। তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল। সেখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল বিধায় কোম্পানিগুলোও যেনতেন হিসাব উপস্থাপন করে মূল্যহার বাড়ানোর ব্যাপারে কঠিন চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হয়। কিন্তু আইন সংশোধনে সেই সুযোগ আর থাকল না। তড়িঘড়ি করে করা এ সংশোধন অসাধু ব্যবসাকে সুরক্ষা দেবে।
সরকারের নির্বাহী আদেশ আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হস্তক্ষেপের কারণে লাইসেন্সসংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি সীমিত পরিসরে বিরোধ মীমাংসা ছাড়া আর কিছুই এককভাবে করতে পারছে না জ্বালানি খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কমিশনের সদস্যরা এ ব্যাপারে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে কমিশনের চলমান প্রক্রিয়া বাতিল করে ২৯ জানুয়ারি বিইআরসি এ-সংক্রান্ত যে আদেশ দিয়েছে, তাতে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বিইআরসি সূত্রমতে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করে কমিশন। এরপর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি-উত্তর লিখিত মতামত কমিশনে দাখিলের সুযোগ দেওয়া হয়। কমিশনের এই কার্যক্রম চলা অবস্থায় ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। জানুয়ারি থেকেই বিদ্যুতের নতুন মূল্য কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়। সরকারের এমন নির্বাহী আদেশের ফলে কমিশন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চলমান কার্যক্রম নিষ্পত্তির ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সবগুলো গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি প্রতি বছর মুনাফা করলেও বিতরণ চার্জ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে কোম্পানিগুলো এ ধরনের আবেদন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দিলেও আইন সংশোধনের কারণে জ¦ালানি বিভাগে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় চার্জ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শিগগির এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তাদের বিতরণ চার্জ ৫ গুণ বৃদ্ধি করে প্রতি ঘনমিটারে ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে প্রায় ৬৪ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
যদিও প্রতিষ্ঠানটি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪৫ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তিতাসের মতো অন্যান্য গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি প্রতি বছরই মুনাফা করছে। সর্বশেষ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের মুনাফার পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির শুনানিতে গ্যাসের বিতরণ চার্জ বাতিল করার সুপারিশ করেছিল বিইআরসির কারিগরি কমিটি। এতে বলা হয়েছিল, সবগুলো গ্যাস বিতরণ কোম্পানি মুনাফা করছে। ফলে তাদের বিতরণ চার্জ আদায় না করলেও মুনাফায় থাকবে। এ কারণে শুধু কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯ পয়সা করার সুপারিশ দেওয়া হয়। অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির বিতরণ চার্জ বিলুপ্ত করার সুপারিশ দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই রাজধানীর মিন্টো রোডের মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কার্যালয়ে নির্যাতনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামীম রেজা রুবেল মারা যান। এর জেরে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল যুগান্তকারী এক রায়ে ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ৫৪ ধারা এবং রিমান্ডে নিয়ে ১৬৭ ধারার অপ্রয়োগ রোধে ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা পরে আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
ধর্ষণ প্রমাণ করতে ভুক্তভোগীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ বিষয়ে জোরালো আপত্তি ছিল নারী অধিকারকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীদের। ২০১৩ সালে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে আইনজীবীরা হাইকোর্টে রিট করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল এ পরীক্ষা নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট বলে, ধর্ষণ-প্রমাণে অযৌক্তিক এ শারীরিক পরীক্ষার কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ৫৪ ও ১৬৭ ধারার অপপ্রয়োগ হয়তো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবে জনস্বার্থের এসব মামলার ফলে নাগরিকের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকার বিষয়ে সুফল মিলেছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রেও নিবর্তনমূলক শারীরিক পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে না ভুক্তভোগীকে।
রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ বা প্রশাসনের নীরবতা-নিষ্ক্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থের মামলার গুরুত্ব রয়েছে সারা বিশ্বে। জনমানুষেরও স্বার্থ, আগ্রহ রয়েছে। তারা বলেন, এ ধরনের মামলা এমন এক আইনি পদক্ষেপ, যা রাষ্ট্র বা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হলে, কার্যকরী না হলে ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পথ তৈরি করে। নিখরচায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত হয় আদালতের রায়ে বা আদেশে।
উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা পরিচালনা করেন এমন আটজনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদক। তারা বলেন, রিট মামলা ও জনস্বার্থের মামলা ভিন্ন কিছু না হলেও বিষয়বস্তুতে পার্থক্য রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, শ্রমিকের অধিকার, সাংবিধানিক ও আইনি ইস্যু, নারী অধিকার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নিরাপদ খাদ্য, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও জলবায়ুর ক্ষতি, নদীদখল, শিক্ষা, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের দৈনন্দিন প্রয়োজন প্রভৃতি বিষয়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের নীরবতা-উদাসীনতার প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে। এসব বিষয়ে প্রায়ই প্রভাবশালীরা হস্তক্ষেপ করেন। তখন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি-গোষ্ঠীর একমাত্র আশ্রয় উচ্চ আদালত।
জনস্বার্থবিষয়ক মামলার পরিসংখ্যান রাখার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এ দেশে নেই। দেশ রূপান্তরের চেষ্টায় গত ২৫ বছরে ১০টির মতো আইনি সংগঠন, মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক সংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠনের ৯১০টির মতো মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবীরাও প্রায়ই মামলা করেন। বেশিরভাগ মামলায় উচ্চ আদালতের রায়, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ও রুল হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানান। মামলা চালাতে গিয়ে প্রভাবশালীদের হুমকিতেও পড়তে হয়। দ্রুত প্রচার পেতে অনেক মামলার ‘মেরিট’ বা প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। তবে জনস্বার্থের মামলা বেড়েছে। এ নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
বাংলাদেশে জনস্বার্থের মামলা : প্রবীণ আইনবিদরা জানান, বাংলাদেশে জনস্বার্থের মামলার ধারণা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে আলোচিত ‘বেরুবাড়ি’ মামলা দিয়ে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য রায় হয় ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) মহাসচিব ড. মহিউদ্দিনের করা ফ্যাপ-২০ (ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান) বিষয়ক মামলায়। বন্যা ঠেকাতে টাঙ্গাইল জেলায় বাঁধ নির্মাণ এবং এর ফলে এলাকার কৃষি, মৎস্যচাষ, গবাদিপশু ও পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে ১৯৯৪ সালের জুনে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। রিটকারীর লোকাস স্ট্যান্ডি (আবেদনের এখতিয়ার) নিয়ে আপত্তি তুলে হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে দেয়। তবে আপিল বিভাগ ১৯৯৬ সালের ২৫ জুলাই হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায়ের পর্যবেক্ষণে সংবিধানে রিট-সংক্রান্ত ১০২(১) ও ১০২(২) (ক) অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় বলে, ‘যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি’ কথাটি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সমষ্টিগত ও সংহত ব্যক্তিত্ব হিসেবে জনগণও এর আওতায় আসবে।
জনস্বার্থের মামলায় সরব আইনজীবী ও সংগঠন : দুই দশকের বেশি সময় ধরে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জনস্বার্থের মামলা করছে নিয়মিত। ১৯৯৩ সাল থেকে নাগরিককে আইনি সহায়তা দিচ্ছে আইনি সহায়তা সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। দুটি সংগঠন প্রায় ২০০ মামলা করেছে। ফতোয়া বিষয়ে মামলা, শিক্ষার্থীর ফরমে মায়ের অধিকার নিশ্চিত করার মামলা, নিকাহনামায় ‘কুমারী’ শব্দ বাতিল, পুনর্বাসন না করে বস্তি উচ্ছেদ, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ অসংখ্য মামলা কখনো যৌথভাবে, কখনো পৃথকভাবে করছে সংগঠন দুটি।
সারা দেশের অন্তত দুই হাজার আইনজীবী নিয়মিত ব্লাস্ট ও আসকের পক্ষে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন। কেন জনস্বার্থে মামলা করেন এ প্রশ্নের জবাবে ব্লাস্টের ট্রাস্টি ও আসকের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশপ্রেম এখানে মুখ্য বিবেচনা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এ রাষ্ট্র জনগণের। মানুষ অধিকার-বঞ্চিত হলে কষ্ট হয়। এ জন্যই আদালতে দাঁড়িয়ে মানুষের কথা বলি। এ জন্য কোনো ফি নেন না আইনজীবীরা। অনেক সময় বাধা ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। পিছপা হইনি। তরুণ আইনজীবীরা এ ধরনের মামলায় আসছে। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক। আদালত কিন্তু মানুষের জন্যই। খুব ব্যতিক্রম না হলে মানুষের অধিকার আদালতে অগ্রাহ্য হয় না।
৩০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি উচ্ছেদ মামলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জলাধার দখল, অবৈধ ইটভাটা, নদীদখল-দূষণ এবং পরিবেশ ও জলবায়ুসংক্রান্ত প্রায় ৩৫০টি জনস্বার্থের মামলা করেছে। ৫০টিরও বেশি মামলায় চূড়ান্ত রায় তারা পেয়েছে। বেলার প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ পরিবেশগত বিপর্যয় ও দুর্যোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটেপুটে খেতে চায়। তারা রাজনীতির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে। আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে জনস্বার্থমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে প্রাকৃতিক সম্পদের লুণ্ঠন ও ধ্বংস ত্বরান্বিত হচ্ছে। জনগোষ্ঠীর ও সামাজিক পশ্চাদপদতার কারণে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া চালানো যাচ্ছে না। এ কারণে জনস্বার্থে আমরা মামলা করি। এতে জনস্বার্থমূলক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্র যত বিকশিত হবে, জবাবদিহি যত বাড়বে, আদালতের রায় কার্যকর করা তত সহজ হবে। মামলার রায় হলে মানুষ মনে শক্তি পায়। জবাবদিহির ক্ষেত্র তৈরি করা, প্রশাসনকে প্রশ্ন করার মামলার সুফল একেবারে কম নয়।
২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। দেড় দশকের বেশি সময়ে সংগঠনটি উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা করেছে ৩৩০টি। ৯৮ ভাগ মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ এসেছে। ৯০টি মামলায় রুলের ওপর চূড়ান্ত রায় এসেছে। ২৩০টি মামলায় রুল ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ এসেছে হাইকোর্ট থেকে। এসবের মধ্যে ঢাকার পাশের চার নদী রক্ষার মামলা, হাতিরঝিল নিয়ে মামলা, ঢাকায় পরিবেশ দূষণ, উচ্চশব্দের হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের মামলা রয়েছে। এইচআরপিবির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনস্বার্থের মামলার পেছনের কারণ সুশাসনের ঘাটতি। যে কাজ প্রশাসনের করার কথা তা অনেক সময়ই হয় না। আইনজীবীদের পেশাগত মনোভাব হলো, মক্কেল ফি দেবে আর তারা মামলা পরিচালনা করবে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক কিছু করা যায়। তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল আদালতকে সামনে রেখে জনস্বার্থে মামলার নামে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে কাজ করে। সতর্ক না হলে মামলার মর্যাদা লঙ্ঘিত হবে।
গত সাত বছরে তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ইস্যুতে উচ্চ আদালতে অন্তত ২২টি মামলা করেছে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব)। প্রায় সবগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ হয়েছে বলে জানান ক্যাবের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, জনস্বার্থের মামলায় মানুষের অধিকার রক্ষার, আদালতে উপস্থাপন করার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক, থানা হেফাজতে কাউকে নির্যাতন করা হলো। তখনই উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। প্রমাণ করতে হয়, ওই ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা মুখে বলি জনগণের রাষ্ট্র। কিন্তু জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্র ভূমিকা কতটুকু? রাষ্ট্রীয় কাজে সীমাবদ্ধতা ও উদাসীনতা দুটোই আছে। আমাদের মতো দেশে এসব স্বাভাবিক বিষয়। প্রশাসন সব কাজ করবে না জেনেই মানুষকে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন অনেক আইনজীবী।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ল লাইফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ল ল্যাব ফাউন্ডেশন, চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন প্রভৃতি সংগঠন জনস্বার্থে মামলা করছে নিয়মিত। বিএনডব্লিউএলএ নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতা, যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ রোধ প্রভৃতি ইস্যুতে ৫০টি মামলা করেছে গত দুই দশকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রায় ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে এসেছে বলে জানান সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংবিধান আমাকে যে অধিকার দিয়েছে তা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। অনেক ক্ষেত্রেই তা পালিত হয় না। তখনই আমরা মামলা করি, সাংবিধানিক অধিকার পূরণে সরকারকে বাধ্য করার জন্য।
জনস্বার্থে মামলার উদ্যোগ খুব ভালো কাজ বলে মনে করি। কেননা এটা করা হয় জনগণের স্বার্থে মানুষের ভালোর জন্যই কিন্তু আদালত রায় ও আদেশ দিয়ে থাকেন। মানুষ যাতে অন্যায়ভাবে সাজা না পায়, কেউ যেন বিনা দোষে হাজতবাস না করেন, কাউকে যেন নির্যাতনের শিকার হতে না হয়, কেউ যেন তার ন্যায্য সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন। মোদ্দা কথা হলো এটা কিন্তু ব্যক্তি কিংবা সংগঠনের নিজের স্বার্থে নয়, দেশের ও রাষ্ট্রের স্বার্থে এ মামলাগুলো হচ্ছে। মামলাটিতে জয়ী হয়েছে। এ জন্য তাদের পরিশ্রম করতে হয়েছে। কখনো কখনো ঝুঁকিও নিতে হচ্ছে। আদালতও মনে করেন, এটা যেহেতু জনগণের স্বার্থের বিষয় তাই খুব বেশি ব্যতিক্রম না হলেই তারা আদেশ ও রায় দেন। এখানে আইনজীবীদের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে। এই যে পুরো প্রক্রিয়াটি সত্যিকার অর্থে আমি বলব, এটি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হ্যাঁ, জনস্বার্থের মামলাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিগত চিন্তা ও গণমাধ্যমে প্রচারের আলোয় আসতে চান। কিন্তু এ প্রবণতা খুব বেশি নয়।
কথা হচ্ছে, যে কাজটা রাষ্ট্রের প্রশাসনের করার কথা সেই কাজটা আইনজীবীরা কেন করেন? এ ক্ষেত্রে মানুষের জন্য কাজ করতে রাষ্ট্রের সমস্যা আছে, এটা বলব না। কখনো কখনো রাষ্ট্র হয় তো মনে করে যে, এমনিতেই অনেক মামলা, অনেক সমস্যা। অনেক দায়িত্ব। এতকিছু করতে গেলে দায়িত্বের মধ্যে যদি আরও দায়িত্ব নেওয়া হয় তাহলে সঠিকভাবে কাজ করা যাবে কি না এটা নিয়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন। আর এ কারণেই নানা সময়ে নানা কারণে উদাসীতার পরিচয় দেওয়া হয়। আমি বলব, রাষ্ট্র যেমন মানুষের জন্য তেমনি মানুষের প্রয়োজনে প্রশাসন ও নির্বাহী বিভাগের সবসময় তৎপর থাকা উচিত।
লেখক : জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী
এবারের অমর একুশে বইমেলায় বই প্রকাশ ও বিক্রির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা করছেন প্রকাশক-লেখকরা। কাগজের দাম দ্বিগুণ এবং বই মুদ্রণের অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম প্রায় দেড়গুণের বেশি বেড়ে যাওয়ায় প্রকাশকরা অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কম বই প্রকাশ করছেন। পা-ুলিপি প্রস্তুতির পরও প্রকাশ করতে পারছেন না অনেক লেখক। এসবের পাশাপাশি বইমেলার স্টলের জায়গার দাম ও নির্মাণ ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে এবং প্রকাশনা ব্যবসায় মন্দার আশঙ্কায় মেলায় অংশ নিচ্ছে না অনেক প্রকাশনা সংস্থাও।
বইমেলার এমন চিত্র ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন লেখক-প্রকাশকরা। তারা বলছেন, এমনিতেই গত দু’তিন বছর ধরে বই বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তার ওপর এবার বই বিক্রি ও প্রকাশ কম হলে মনন ও সৃজনশীল লেখক-পাঠক তৈরিতে ও সৃজনশীল সাহিত্য বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে লেখক, গবেষক ও শিক্ষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাগজের দাম বৃদ্ধির প্রভাব শুধু বইমেলা, নতুন বই প্রকাশ কিংবা পাঠক-লেখকের মনন-সৃজনশীলতায় পড়ে না; সামগ্রিকভাবে দেশ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর পড়ে।
অবশ্য মেলায় মানসম্পন্ন ভালো বই প্রকাশের পক্ষে এই লেখক ও গবেষক। তিনি বলেন, বইমেলায় বই কম বের হোক, ভালো বই বের হোক। কম বই বের হলে খারাপ কিছু দেখি না। যদিও দাম বাড়বে, কিন্তু বই বিক্রি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করি। কারণ গত দু’বছর লোকজন সেভাবে মেলায় আসতে পারেনি। এবার আশা করি, সেদিক থেকে এবার ভারসাম্য রক্ষা হতে পারে।
একইভাবে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি, একুশ বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক এবং পুঁথি নিলয় প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বই বিক্রি ও বই প্রকাশের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রভাব আমাদের সৃজনশীলতা মননশীলতায় পড়বে। সংস্কৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে মননশীল পাঠক ও লেখক তৈরি এবং নতুন সাহিত্য বিকাশ সবকিছু নিয়েই একটা সংকটের মধ্যে পড়ব আমরা।
এমন অবস্থায় আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন চলছে প্রকাশকদের ব্যস্ত সময়। স্টল নির্মাণ ও সাজসজ্জায় রাতদিন কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের আগে সব কাজ সম্পন্ন হবে বলে একাডেমির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বই প্রকাশ ও বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসবে : শ্যামল পাল বলেন, বিলাসী লোকজন বই কেনে না, পাঠক বই কেনে। পাঠকের বই কেনার একটা বাজেট থাকে। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে এবার সেই বাজেট কমবে। তার ওপর বইয়ের দাম বেড়েছে। ২০০ টাকার বই ৩০০ টাকা, ৪০০ টাকার বই ৬০০ টাকা হচ্ছে। তাতে বই বিক্রি কমে যাবে। আবার নতুন বই প্রকাশের সংখ্যাও এবার কমে যাবে। একটা বই বের করতে বিগত বছরগুলোতে যদি ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হতো, এবার সেটা ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ পড়বে। সেক্ষেত্রে প্রকাশকদেরও তো পুঁজির সংকট আছে।
নিজের প্রকাশনা সংস্থা থেকেও বই প্রকাশ কম হচ্ছে জানিয়ে এই প্রকাশক বলেন, এবার আমি ৫২-৫৫টা বই করছি। অথচ প্রতি বছর ১৩০-১৩৫টা বই করি। অর্থাৎ বই প্রকাশ ও বিক্রির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে এবার। বই প্রকাশ নিয়ে এবার তাড়াহুড়ো নেই। বই প্রকাশ করতে আগের বছরগুলোতে প্রকাশকদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস ছিল, এবার সেটা নেই।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরপর দুইবারের সাবেক সভাপতি এবং আকাশ প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী আলমগীর সিকদার লোটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা সারা বছরই বই প্রকাশ করি। মেলায় গড়ে ২৫টির মতো বই বের হয়। এবার সেখানে ১৫টা প্রকাশ হতে পারে। কারণ কাগজের দাম চড়া। আবার চড়া দামেও প্রয়োজন অনুযায়ী কাগজ পাচ্ছি না।
প্রকাশনা সংস্থা ভাষাচিত্রের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল বলেন, বইয়ের সংখ্যা এবার অবশ্যই কমে এসেছে। আমি নিজেও বইমেলায় ৭০-৮০টা বই করতাম, সেখানে এবার ২০টা বই করব কি না সন্দেহ আছে। পা-ুলিপি তৈরি আছে। কিন্তু সাহস পাই না। অসংখ্য প্রকাশক বই প্রকাশ কমিয়ে দিয়েছেন। গত বছর যে বইটার দাম ছিল ২০০ টাকা, সেটার দাম এবার হবে ৩৫০-৪০০ টাকা। স্বভাবতই এত টাকা দিয়ে এরকম চিকন একটা বই আমাদের পাঠককরা কিনবেন বলে মনে হয় না।
বেহুলা বাংলার প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী চন্দন চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর আমরা শতাধিক বই করি। গত বছর করেছিলাম ১২৭টা বই। এইবার খুব বেশি হলে ৭০-৮০টা করব। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ কমে যাবে। এটার কারণ কাগজের দাম বেড়েছে। প্লেট, বোর্ডসহ বইয়ের জন্য যে সব জিনিস লাগে, সেগুলোর দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বছরজুড়ে বই প্রকাশনাতেও ভাটা পড়েছে। অর্ধেক হয়ে গেছে বই বিক্রি।
কাগজের দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেই : অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সাংস্কৃতিক জিডিপি বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু সেই সাংস্কৃতিক জিডিপির পেছনে সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকার এটাতে মনোযোগ দেয়নি। সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে সংস্কৃতির দ্বারা। সাংস্কৃতিক জিডিপি বৃদ্ধি একটা হতে পারত কাগজের মূল্য নিয়ন্ত্রণ অথবা সুলভ মূল্যে দেওয়া। সরকার যদি ঋণখেলাপিদের এত সুযোগ-সুবিধা দিতে পারে, তাহলে সামান্য একটা বইমেলায় ৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিত, তা হলে কী হতো। এই জিনিসগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে দেখা উচিত ছিল। প্রকাশকদের বারবার আলাপ-আলোচনা করা উচিত ছিল। সংস্কৃতির প্রতি প্রধানমন্ত্রী সবসময় নমনীয়। তার কাছে তো জিনিসটা পৌঁছাতে হবে।
এ ব্যাপারে শ্যামল পাল বলেন, কাগজের দামটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা বারবার সরকারকে বলেছি, প্রতিযোগী কমিশনকে বলেছি, বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়েছি। দিকনির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। কাগজ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তার ওপর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে কাগজের দাম আরেক ধাপ, প্রায় ২০ শতাংশ দাম বেড়ে গেল।
মুদ্রণের সবকিছুর দাম বেড়েছে : মুদ্রণের সব কিছুর দাম বেড়েছে- জানিয়ে শ্যামল পাল বলেন, যে কালির দাম ছিল ১৬০০-১৮০০ টাকা সেট, সেই কালি হয়েছে ৪ হাজার টাকা সেট। প্লেটের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। মুদ্রণের জন্য যে সব জিনিস আমদানি করতে হয়, সেগুলোর সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রকাশক সোহেল খন্দকার বলেন, গত বছর যে বই পেস্টিং করেছি ৩০ টাকা দিয়ে, এবার তাকে দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। প্লেটেও সমহারে বেড়েছে। কালি ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রিন্টিং রেট বেড়েছে। ছাপানো খরচ যেটা ছিল ৩০০ টাকা, সেটাতে ৫০ টাকা বেড়েছে। অন্যগুলো এক-তৃতীয়াংশ থেকে এক-চতুর্থাংশ বেড়েছে। বাঁধাইয়ের বোর্ড কাগজ ও কাপড়েরও দাম বেড়েছে।
অনেক প্রকাশক অংশ নিচ্ছেন না : আকাশ প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী আলমগীর সিকদার লোটন বলেন, বাংলাবাজারের অনেক নামকরা প্রকাশক এবার মেলায় যাচ্ছেন না। এর মধ্যে একটি আছে যারা বাম রাজনীতির বই বের করেন। আবার রাজনীতিসহ মূলধারার বই বের করেন এমন কিছু প্রকাশকও স্টল নেননি। কাগজের দাম তো বেড়েছেই। তার ওপর স্টলের জায়গার দাম বেশি হয়েছে। স্টল বানাতে যেসব জিনিসপত্র লাগবে সেগুলোর দামও বেড়েছে।
ভাষাচিত্রের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল বলেন, ৫-১০ বছর আগে প্রকাশকরা বইমেলায় স্টল নিলে, তাদের পরবর্তী ছয় মাস আর কিছু করতে হতো না, তাদের এত লাভ হতো। কিন্তু এবার অন্তত ১০০ প্রকাশক বইমেলায় স্টল নিচ্ছেন না। এটা গত দুই বছর ধরেই হচ্ছে। কারণ বইমেলায় স্টল নিলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অর্থাৎ প্রকাশনা সংস্থাগুলো বইমেলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
তবুও বইমেলা : গত দু’বছরও করোনার কারণে প্রকাশনা ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। তারা বলেছেন, তারপরও চেতনার জায়গা থেকে তারা বইমেলায় অংশ নিয়েছেন এবং এবারও নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে আলমগীর সিকদার লোটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেলা থেমে থাকবে না। একুশের মেলা বাঙালির একটা চেতনার জায়গা। তারা মেলায় যাবেন। কিন্তু বই অতটা কিনতে পারবেন না। কারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই। সে হিসেবে বই বিক্রি কমে যাবে।
প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, এবারের বইমেলা নিয়ে এখনো আমরা দোদুল্যমানতায় আছি। একই সঙ্গে আশাবাদী, আবার উদ্বেগেও আছি। আশাবাদী এই কারণে যে, এবারের বইমেলার করোনার কোনো প্রভাব নেই, যেটা গত দুই বছর ছিল। মেলার সময় ও স্টল বিন্যাস নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। এবার মেলায় প্রচুর লোক আসবে। এইবারের মেলার ডিজাইনটা সুন্দর হয়েছে। কিন্তু শঙ্কার জায়গা হলো নতুন বই বিক্রি নিয়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনেএ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জে তোলপাড় চলছে। তার স্ত্রীর দাবি, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন তিনি আত্মগোপনে থেকে নাটক করছেন। এদিকে একটি অডিও রেকড ফাঁস হওয়ার পর গতকাল সোমবার আবু আসিফ টক অব দ্য টাউন হয়ে উঠেছেন।
আবু আসিফ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) উপনির্বাচনে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা এবং এই আসন থেকে পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য বহিষ্কৃত নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আবু আসিফ মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কয়েক দিন আগে আসিফ অভিযোগ করেছিলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তার ওপর প্রচন্ড চাপ আসছে। তার নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও তিনি নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।
২৬ জানুয়ারি আসিফ অভিযোগ করেছিলেন, ২৫ জানুয়ারি রাত থেকে তার শ্যালক ও নির্বাচন পরিচালনাকারী কমিটির প্রধান সমন্বয় শাফায়েত হোসেন ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। ওই দিনই রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মুসা মিয়াকে। যদিও পুলিশ বলেছে, মারামারির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত রবিবার বিকেল থেকে আশুগঞ্জে খবর ছড়িয়ে পড়ে আবু আসিফ নিখোঁজ। তার স্ত্রী মেহেরুন্নিছা রবিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানান, দুই দিন ধরে আমার স্বামী ঘরে ফেরেনি। আমাদের লোকজনও ভয়ে থাকছে। আসিফ আত্মগোপনে রয়েছেন কি না জানতে চাইলে মেহেরুন্নিছা বলেন, ‘আমার স্বামী আত্মগোপনে যাননি।’ এ বিষয়ে থানায় বা কোথাও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমিও ভয়ের মধ্যে আছি। দ্রুত একটা কিছু করব।’
তবে আবু আসিফ নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসিফের স্ত্রী এবং বাসার কেয়ারটেকারের মধ্যে ফোনালাপ বলে একটি অডিও ফাঁস হয়। যেখানে আসিফের স্ত্রীকে কেয়ারটেকারকে আসিফের জন্য জামাকাপড় গোছানোর নির্দেশ দিতে শোনা যায়। সেখানে একটি নারী কণ্ঠ, ‘ইফসুফ (কেয়ারটেকার) স্যার কই, স্যারের (আসিফ) কতগুলো জামাকাপড়, গেঞ্জি, প্যান্ট, শীতের কাপড়, জুতা মোজা ব্যাগে ভরে দিয়ে দে তাড়াতাড়ি। আরে তাড়াতাড়ি দে। কেউ যেন না জানে স্যার কই গেছে। ক্যামেরা বন্ধ করে দে। ক্যামেরার লাইন বন্ধ কর বাসার। স্যার গেলে আরও ১০ মিনিট পর ক্যামেরার লাইন খুলবে।
এমন কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর বিএনপি নেতা আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনে গেছেন, এ নিয়ে আলোচনা আরও ডালপালা মেলতে শুরু করে। এরপর থেকে সোমবার সারা দিন ফোন করলেও আসিফের স্ত্রী ফোন রিসিভ করেননি। আসিফের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
আসিফ নাটকের ঘটনায় বিব্রতবোধ করছেন তার নিকটাত্মীয় ও স্বজনরা। তারা নিখোঁজ বা আত্মগোপন কোনোটাই বলতে চান না।
আসিফের ভাতিজা ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের বলেন, ‘আমি সাত্তার সাহেবের (কলার ছড়ি) নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। চাচা আসিফের বিষয়ে কিছুই জানি না। আপনারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিব্রতবোধ করি।’
তবে আবু আসিফের এ ঘটনাকে নাটক বলে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (১) এম এম তোফায়েল আলী রুবেল বলেন, ‘আসিফ নিজেই আত্মগোপন করে নাটকের জন্ম দিয়েছেন। নির্বাচনে আলোচনায় থাকার জন্যই তিনি এ কাজ করেছেন।’
আবু আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনে, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান। তিনি গতকাল বলেন, ‘আবু আসিফের বিষয়ে তার স্ত্রী বা পরিবারের কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তবে যেহেতু মিডিয়ায় খবর এসেছে, তাই আমরা স্থানীয়ভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছি তিনি কোথায় আছেন। আমরা তার বাসায় যাইনি বা আশপাশে ঘোরাফেরাও করছে না কেউ।
জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। এখন কেউ যদি নিজেকে লুকিয়ে রাখে, তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই।’
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারের পুলিশ লাইনস এলাকায় মসজিদে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৫৯ জন নিহত এবং কমপক্ষে ১৪২ জন আহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পেশোয়ারের কমিশনার রিয়াজ মেহসুদ হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। মসজিদের একটি অংশ ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপাপড়া লোকজনকে উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। খাইবার পাখতুনখাওয়ার তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ আজম খান পেশোয়ারের সব হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা পরিস্থিতি জারি করেছেন। বেশিরভাগ আহতকে পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের জিও নিউজ জানিয়েছে, গতকাল সোমবার জোহরের মসজিদের সামনের সারিতে উপস্থিত আত্মঘাতী হামলাকারী শরীরে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে এ বিপুল হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতদের অনেকেই পুলিশ কর্মকর্তা, তারা মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন।
মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন সিভিল সেক্রেটারিয়েট অ্যাসোসিয়েশন পেশোয়ারের সভাপতি তাসাভুর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘পুলিশ লাইনস এলাকায় সবসময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরিচয়পত্র এবং দেহতল্লাশি ছাড়া কেউই এ মসজিদে প্রবেশ করতে পারে না।’ পেশোয়ারের এ বাসিন্দা বলেন, আজকের এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা অনেক বড় মসজিদ। একসঙ্গে অসংখ্য মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।
পেশোয়ারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা। সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ হামলা পুরো পাকিস্তানের ওপর হামলার শামিল, আমার কোনো সন্দেহ নেই দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা।’
এদিকে বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে দেশটির সশস্ত্রগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। পাকিস্তানি তালেবানের কমান্ডার সারবাকাফ মোহমান্দ টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় পেশোয়ার মসজিদে হামলার দায় স্বীকার করেছেন। তবে এ হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জঙ্গিগোষ্ঠীটির প্রধান মুখপাত্রের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত টিটিপি কমান্ডার উমর খালিদ খুরাসানির ভাই মোহমান্দ। গত বছর আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর এক অভিযানে নিহত হন উমর খালিদ। ভাইকে হত্যার প্রতিশোধ নিতেই পেশোয়ারের মসজিদে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তালেবানের কমান্ডার মোহমান্দ।
গত বছর নভেম্বরে টিটিপির সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর প্রকাশ্য ঘোষণায় আবার পাকিস্তানজুড়ে হামলা শুরুর ঘোষণা দেয় পাকিস্তানি তালেবান গোষ্ঠী। সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটছে পুলিশকে লক্ষ্য করে। এ বছর জানুয়ারিতেই পুলিশের ওপর হামলায় তিনজন নিহত হন। এর আগে গত বছর পেশোয়ারের কোচা রিসালদার এলাকার একটি শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় ৬৩ জন নিহত হয়েছিলেন।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
অর্থনৈতিক সংকট আর রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে নতুন বছরে নতুন শুরুর আশা ছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সংকটের অভিঘাত এখনো সইতে হচ্ছে দেশটির। বিদেশি সহায়তার পরও হু হু করে বাড়ছে দেশটির মূল্যস্ফীতি। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার ৫০ শতাংশের ওপরে ছিল। অথচ শ্রমিক-চাকরিজীবীদের বেতন বাড়েনি। অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারানো লোকের সংখ্যাও কম না। এ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার তরুণদের অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশটির সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালেই ৩ লাখের বেশি মানুষ বাইরের দেশে কাজ খুঁজতে গিয়েছে। আর চলতি বছর প্রথম দিনেই দেশ ছেড়েছে আরও ৭৩ হাজার মানুষ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দেশটি তার বিভিন্ন শিল্প খাতের প্রয়োজনীয় লোকবলই পাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চললে উৎপাদন কমে গিয়ে আরেক দফা সংকটে পড়তে পারে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে দেশটির ব্যবসায়ীদের বরাতে বলা হয়েছে, তারা কর্মী সংকটে ভুগছেন, যাদের মধ্যে ম্যানেজার পদও রয়েছে। খালি থাকা ম্যানেজার পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাদের আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কোম্পানিগুলো সাধারণত ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদেরই নিয়োগ দিত এবং এ বয়সের তরুণরাই চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরিতে যোগ দিতেন। তবে এখন চল্লিশ এবং পঞ্চাশ বছর বয়সীরাও চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আইএমএফ-এর ঋণ প্যাকেজের শর্ত হিসেবে বেশ কয়েক দফা কর বাড়িয়েছেন। বর্তমানে দেশটিতে আয়করের হার ৩৬ শতাংশ। এর সঙ্গে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি জনগণকে ফেলেছে ভীষণ চাপে। দ্বিমুখী এই চাপে দেশ ছাড়ছেন নাগরিকরা। দেশটির বিরোধী দল ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির ভাষ্য, সরকার অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানোয় দলে দলে দেশ ছাড়ছেন মানুষ।
সাময়িকীটি বলছে, শত শত ডাক্তার ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, যার মধ্যে গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসেই গিয়েছেন ৪৭৭ জন। এভাবে এগোতে থাকলে গ্রামীণ অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার সংকট দেখা যাবে।
এদিকে শ্রীলঙ্কান সরকারও এই দেশ ছেড়ে পালানোকে উৎসাহিত করছে। প্রথমত, সরকারি খাতে বেতনের বোঝা কমানোর জন্য এবং দ্বিতীয়ত, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের আশায়। গত জুন মাসে সরকার মাসে ১০০-৫০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্তে দেশটির ডাক্তারদের পাঁচ বছরের জন্য ছুটি দেওয়ার ঘোষণাও দেয়।
ইকোনমিস্ট বলছে, দেশটির প্রবাসী নিয়োগ মন্ত্রী মনুশা নানায়াক্কার বিভিন্নভাবে শ্রীলঙ্কান কর্মীদের দেশের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরির সুযোগের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। চলো বিদেশে যাই- নামের এক ইউটিউব চ্যানেল থেকে জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিদেশে চাকরির সুযোগ প্রচার করা হচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, নার্সিং, কেয়ার-গিভিংসহ অন্যান্য সেবামূলক কাজেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে শ্রীলঙ্কান সরকার, যাতে করে কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে তারা কাজের ব্যবস্থা করতে পারে। আর এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছে শ্রীলঙ্কান সরকার। গত চার মাসে রেমিট্যান্সের হার বেশ খানিকটা বেড়েছে। তবে এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় মেধাবীরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন, যাদের দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন।
নানায়াক্কার জানিয়েছেন সেবা এবং উৎপাদন খাতে ইতিমধ্যেই কর্মী সংকট দেখা গিয়েছে। এটি প্রতিরোধের জন্য কিছু কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘লয়্যালটি বোনাস’ ঘোষণা করেছে, অর্থাৎ চাকরি না ছাড়লে অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তায় ইটের প্রাচীর তুলে প্রতিবেশী দুই পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। আর শুধু তাই নয় মাইনুদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম নামে ওই দুই সহোদরের তোলা প্রাচীরের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে একটি মাদ্রাসাও। ফলে নিরুপায় হয়ে মই দিয়ে ৭ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর পার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মাদ্রাসাটির শতাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীকে, যা তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অন্যদিকে প্রাচীরে আটকে পড়া দুটি পরিবারের শিক্ষার্থীরাও মই দিয়ে প্রাচীর টপকে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবার দুটি। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার রামচন্দ্রপুর উত্তর বাখরাবাদ গ্রামে।
এদিকে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছে, প্রত্যেকেরই যার যার বাড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রয়োজন রয়েছে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে তা কারও কাম্য নয়।
জানা গেছে, উত্তর বাখরাবাদ গ্রামের প্রভাবশালী মাইনুদ্দিনের বাড়ির পাশে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় রাবেয়া বসরী মাদ্রাসা। তার পাশে বসবাস দুটি পরিবারের। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবার দুটির সদস্যদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ছিল মাইনুদ্দিন ও শফিকুলের জমির ওপর দিয়ে। কিন্তু তিনি হঠাৎই তার বাড়ির চারপাশে ইটের সীমানা দেয়াল তুলে দেন। এতে বাধ্য হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন মাদ্রাসায় যেতে হচ্ছে বাঁশের মই বেয়ে প্রতিবেশীদের দেয়াল টপকে। আবার তাদের বাড়ি ফিরতেও হয় দেয়াল বেয়ে। এরই মধ্যে পা ফসকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে অনেকেই।
ভুক্তভোগী রাবেয়া বসরী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বি চাপিতলা গ্রামের মরহুম হাজি আব্দুর রহমান ২০১৮ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি মৌখিকভাবে দিয়ে যান। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ছেলে মাইনুদ্দিন ও তার ভাই শফিকুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। সমাধান চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার গেলেও তিনি দুই বছর ধরে আমাকে ঘুরাচ্ছেন। দুই বছর আগে বাড়িসহ জমি কেনার প্রস্তাব দেন তারা। কিনতে রাজি না হওয়ায় সীমানা প্রচীর নির্মাণ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন।’ এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান হাফেজ নজরুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক কবির আহমেদ ভূঁইয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে বসবাস করছি এবং বসবাসের শুরু থেকেই ওই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। হঠাৎ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
তবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকারী মাইনুদ্দিন বলেন, ‘প্রাচীর নির্মাণ করে আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার জমিতে আমি প্রাচীর নির্মাণ করেছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমি চেষ্টা করেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার। কিন্তু জমির মালিক মাইনুদ্দিন তার জমির ওপর দিয়ে সড়ক দিতে রাজি হচ্ছেন না।’
সার্বিক বিষয়ে মুরাদনগরের ইউএনও মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী বলেন, ‘অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য। এর পরও ভুক্তভোগীরা আদালতের সহযোগিতা নিতে পারেন।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।