
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার রাজধানী পেশোয়ারের পুলিশ লাইনস এলাকায় মসজিদে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৫৯ জন নিহত এবং কমপক্ষে ১৪২ জন আহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। পেশোয়ারের কমিশনার রিয়াজ মেহসুদ হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। মসজিদের একটি অংশ ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপাপড়া লোকজনকে উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। খাইবার পাখতুনখাওয়ার তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ আজম খান পেশোয়ারের সব হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা পরিস্থিতি জারি করেছেন। বেশিরভাগ আহতকে পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের জিও নিউজ জানিয়েছে, গতকাল সোমবার জোহরের মসজিদের সামনের সারিতে উপস্থিত আত্মঘাতী হামলাকারী শরীরে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে এ বিপুল হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতদের অনেকেই পুলিশ কর্মকর্তা, তারা মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন।
মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন সিভিল সেক্রেটারিয়েট অ্যাসোসিয়েশন পেশোয়ারের সভাপতি তাসাভুর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘পুলিশ লাইনস এলাকায় সবসময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরিচয়পত্র এবং দেহতল্লাশি ছাড়া কেউই এ মসজিদে প্রবেশ করতে পারে না।’ পেশোয়ারের এ বাসিন্দা বলেন, আজকের এ ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা অনেক বড় মসজিদ। একসঙ্গে অসংখ্য মানুষ নামাজ পড়তে পারেন।
পেশোয়ারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা। সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ হামলা পুরো পাকিস্তানের ওপর হামলার শামিল, আমার কোনো সন্দেহ নেই দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা।’
এদিকে বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে দেশটির সশস্ত্রগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। পাকিস্তানি তালেবানের কমান্ডার সারবাকাফ মোহমান্দ টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় পেশোয়ার মসজিদে হামলার দায় স্বীকার করেছেন। তবে এ হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জঙ্গিগোষ্ঠীটির প্রধান মুখপাত্রের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত টিটিপি কমান্ডার উমর খালিদ খুরাসানির ভাই মোহমান্দ। গত বছর আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর এক অভিযানে নিহত হন উমর খালিদ। ভাইকে হত্যার প্রতিশোধ নিতেই পেশোয়ারের মসজিদে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তালেবানের কমান্ডার মোহমান্দ।
গত বছর নভেম্বরে টিটিপির সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর প্রকাশ্য ঘোষণায় আবার পাকিস্তানজুড়ে হামলা শুরুর ঘোষণা দেয় পাকিস্তানি তালেবান গোষ্ঠী। সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটছে পুলিশকে লক্ষ্য করে। এ বছর জানুয়ারিতেই পুলিশের ওপর হামলায় তিনজন নিহত হন। এর আগে গত বছর পেশোয়ারের কোচা রিসালদার এলাকার একটি শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় ৬৩ জন নিহত হয়েছিলেন।
১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই রাজধানীর মিন্টো রোডের মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কার্যালয়ে নির্যাতনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামীম রেজা রুবেল মারা যান। এর জেরে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল যুগান্তকারী এক রায়ে ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ৫৪ ধারা এবং রিমান্ডে নিয়ে ১৬৭ ধারার অপ্রয়োগ রোধে ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা পরে আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
ধর্ষণ প্রমাণ করতে ভুক্তভোগীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ বিষয়ে জোরালো আপত্তি ছিল নারী অধিকারকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীদের। ২০১৩ সালে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে আইনজীবীরা হাইকোর্টে রিট করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল এ পরীক্ষা নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট বলে, ধর্ষণ-প্রমাণে অযৌক্তিক এ শারীরিক পরীক্ষার কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ৫৪ ও ১৬৭ ধারার অপপ্রয়োগ হয়তো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবে জনস্বার্থের এসব মামলার ফলে নাগরিকের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকার বিষয়ে সুফল মিলেছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রেও নিবর্তনমূলক শারীরিক পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে না ভুক্তভোগীকে।
রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ বা প্রশাসনের নীরবতা-নিষ্ক্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থের মামলার গুরুত্ব রয়েছে সারা বিশ্বে। জনমানুষেরও স্বার্থ, আগ্রহ রয়েছে। তারা বলেন, এ ধরনের মামলা এমন এক আইনি পদক্ষেপ, যা রাষ্ট্র বা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হলে, কার্যকরী না হলে ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পথ তৈরি করে। নিখরচায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত হয় আদালতের রায়ে বা আদেশে।
উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা পরিচালনা করেন এমন আটজনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদক। তারা বলেন, রিট মামলা ও জনস্বার্থের মামলা ভিন্ন কিছু না হলেও বিষয়বস্তুতে পার্থক্য রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, শ্রমিকের অধিকার, সাংবিধানিক ও আইনি ইস্যু, নারী অধিকার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নিরাপদ খাদ্য, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও জলবায়ুর ক্ষতি, নদীদখল, শিক্ষা, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের দৈনন্দিন প্রয়োজন প্রভৃতি বিষয়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের নীরবতা-উদাসীনতার প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে। এসব বিষয়ে প্রায়ই প্রভাবশালীরা হস্তক্ষেপ করেন। তখন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি-গোষ্ঠীর একমাত্র আশ্রয় উচ্চ আদালত।
জনস্বার্থবিষয়ক মামলার পরিসংখ্যান রাখার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এ দেশে নেই। দেশ রূপান্তরের চেষ্টায় গত ২৫ বছরে ১০টির মতো আইনি সংগঠন, মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক সংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠনের ৯১০টির মতো মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবীরাও প্রায়ই মামলা করেন। বেশিরভাগ মামলায় উচ্চ আদালতের রায়, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ও রুল হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানান। মামলা চালাতে গিয়ে প্রভাবশালীদের হুমকিতেও পড়তে হয়। দ্রুত প্রচার পেতে অনেক মামলার ‘মেরিট’ বা প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। তবে জনস্বার্থের মামলা বেড়েছে। এ নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
বাংলাদেশে জনস্বার্থের মামলা : প্রবীণ আইনবিদরা জানান, বাংলাদেশে জনস্বার্থের মামলার ধারণা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে আলোচিত ‘বেরুবাড়ি’ মামলা দিয়ে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য রায় হয় ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) মহাসচিব ড. মহিউদ্দিনের করা ফ্যাপ-২০ (ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান) বিষয়ক মামলায়। বন্যা ঠেকাতে টাঙ্গাইল জেলায় বাঁধ নির্মাণ এবং এর ফলে এলাকার কৃষি, মৎস্যচাষ, গবাদিপশু ও পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে ১৯৯৪ সালের জুনে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। রিটকারীর লোকাস স্ট্যান্ডি (আবেদনের এখতিয়ার) নিয়ে আপত্তি তুলে হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে দেয়। তবে আপিল বিভাগ ১৯৯৬ সালের ২৫ জুলাই হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায়ের পর্যবেক্ষণে সংবিধানে রিট-সংক্রান্ত ১০২(১) ও ১০২(২) (ক) অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় বলে, ‘যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি’ কথাটি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সমষ্টিগত ও সংহত ব্যক্তিত্ব হিসেবে জনগণও এর আওতায় আসবে।
জনস্বার্থের মামলায় সরব আইনজীবী ও সংগঠন : দুই দশকের বেশি সময় ধরে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জনস্বার্থের মামলা করছে নিয়মিত। ১৯৯৩ সাল থেকে নাগরিককে আইনি সহায়তা দিচ্ছে আইনি সহায়তা সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। দুটি সংগঠন প্রায় ২০০ মামলা করেছে। ফতোয়া বিষয়ে মামলা, শিক্ষার্থীর ফরমে মায়ের অধিকার নিশ্চিত করার মামলা, নিকাহনামায় ‘কুমারী’ শব্দ বাতিল, পুনর্বাসন না করে বস্তি উচ্ছেদ, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ অসংখ্য মামলা কখনো যৌথভাবে, কখনো পৃথকভাবে করছে সংগঠন দুটি।
সারা দেশের অন্তত দুই হাজার আইনজীবী নিয়মিত ব্লাস্ট ও আসকের পক্ষে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন। কেন জনস্বার্থে মামলা করেন এ প্রশ্নের জবাবে ব্লাস্টের ট্রাস্টি ও আসকের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশপ্রেম এখানে মুখ্য বিবেচনা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এ রাষ্ট্র জনগণের। মানুষ অধিকার-বঞ্চিত হলে কষ্ট হয়। এ জন্যই আদালতে দাঁড়িয়ে মানুষের কথা বলি। এ জন্য কোনো ফি নেন না আইনজীবীরা। অনেক সময় বাধা ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। পিছপা হইনি। তরুণ আইনজীবীরা এ ধরনের মামলায় আসছে। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক। আদালত কিন্তু মানুষের জন্যই। খুব ব্যতিক্রম না হলে মানুষের অধিকার আদালতে অগ্রাহ্য হয় না।
৩০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি উচ্ছেদ মামলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জলাধার দখল, অবৈধ ইটভাটা, নদীদখল-দূষণ এবং পরিবেশ ও জলবায়ুসংক্রান্ত প্রায় ৩৫০টি জনস্বার্থের মামলা করেছে। ৫০টিরও বেশি মামলায় চূড়ান্ত রায় তারা পেয়েছে। বেলার প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ পরিবেশগত বিপর্যয় ও দুর্যোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটেপুটে খেতে চায়। তারা রাজনীতির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে। আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে জনস্বার্থমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে প্রাকৃতিক সম্পদের লুণ্ঠন ও ধ্বংস ত্বরান্বিত হচ্ছে। জনগোষ্ঠীর ও সামাজিক পশ্চাদপদতার কারণে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া চালানো যাচ্ছে না। এ কারণে জনস্বার্থে আমরা মামলা করি। এতে জনস্বার্থমূলক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্র যত বিকশিত হবে, জবাবদিহি যত বাড়বে, আদালতের রায় কার্যকর করা তত সহজ হবে। মামলার রায় হলে মানুষ মনে শক্তি পায়। জবাবদিহির ক্ষেত্র তৈরি করা, প্রশাসনকে প্রশ্ন করার মামলার সুফল একেবারে কম নয়।
২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। দেড় দশকের বেশি সময়ে সংগঠনটি উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা করেছে ৩৩০টি। ৯৮ ভাগ মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ এসেছে। ৯০টি মামলায় রুলের ওপর চূড়ান্ত রায় এসেছে। ২৩০টি মামলায় রুল ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ এসেছে হাইকোর্ট থেকে। এসবের মধ্যে ঢাকার পাশের চার নদী রক্ষার মামলা, হাতিরঝিল নিয়ে মামলা, ঢাকায় পরিবেশ দূষণ, উচ্চশব্দের হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের মামলা রয়েছে। এইচআরপিবির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনস্বার্থের মামলার পেছনের কারণ সুশাসনের ঘাটতি। যে কাজ প্রশাসনের করার কথা তা অনেক সময়ই হয় না। আইনজীবীদের পেশাগত মনোভাব হলো, মক্কেল ফি দেবে আর তারা মামলা পরিচালনা করবে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক কিছু করা যায়। তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল আদালতকে সামনে রেখে জনস্বার্থে মামলার নামে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে কাজ করে। সতর্ক না হলে মামলার মর্যাদা লঙ্ঘিত হবে।
গত সাত বছরে তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ইস্যুতে উচ্চ আদালতে অন্তত ২২টি মামলা করেছে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব)। প্রায় সবগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ হয়েছে বলে জানান ক্যাবের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, জনস্বার্থের মামলায় মানুষের অধিকার রক্ষার, আদালতে উপস্থাপন করার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক, থানা হেফাজতে কাউকে নির্যাতন করা হলো। তখনই উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। প্রমাণ করতে হয়, ওই ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা মুখে বলি জনগণের রাষ্ট্র। কিন্তু জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্র ভূমিকা কতটুকু? রাষ্ট্রীয় কাজে সীমাবদ্ধতা ও উদাসীনতা দুটোই আছে। আমাদের মতো দেশে এসব স্বাভাবিক বিষয়। প্রশাসন সব কাজ করবে না জেনেই মানুষকে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন অনেক আইনজীবী।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ল লাইফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ল ল্যাব ফাউন্ডেশন, চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন প্রভৃতি সংগঠন জনস্বার্থে মামলা করছে নিয়মিত। বিএনডব্লিউএলএ নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতা, যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ রোধ প্রভৃতি ইস্যুতে ৫০টি মামলা করেছে গত দুই দশকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রায় ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে এসেছে বলে জানান সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংবিধান আমাকে যে অধিকার দিয়েছে তা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। অনেক ক্ষেত্রেই তা পালিত হয় না। তখনই আমরা মামলা করি, সাংবিধানিক অধিকার পূরণে সরকারকে বাধ্য করার জন্য।
জনস্বার্থে মামলার উদ্যোগ খুব ভালো কাজ বলে মনে করি। কেননা এটা করা হয় জনগণের স্বার্থে মানুষের ভালোর জন্যই কিন্তু আদালত রায় ও আদেশ দিয়ে থাকেন। মানুষ যাতে অন্যায়ভাবে সাজা না পায়, কেউ যেন বিনা দোষে হাজতবাস না করেন, কাউকে যেন নির্যাতনের শিকার হতে না হয়, কেউ যেন তার ন্যায্য সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন। মোদ্দা কথা হলো এটা কিন্তু ব্যক্তি কিংবা সংগঠনের নিজের স্বার্থে নয়, দেশের ও রাষ্ট্রের স্বার্থে এ মামলাগুলো হচ্ছে। মামলাটিতে জয়ী হয়েছে। এ জন্য তাদের পরিশ্রম করতে হয়েছে। কখনো কখনো ঝুঁকিও নিতে হচ্ছে। আদালতও মনে করেন, এটা যেহেতু জনগণের স্বার্থের বিষয় তাই খুব বেশি ব্যতিক্রম না হলেই তারা আদেশ ও রায় দেন। এখানে আইনজীবীদের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে। এই যে পুরো প্রক্রিয়াটি সত্যিকার অর্থে আমি বলব, এটি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হ্যাঁ, জনস্বার্থের মামলাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিগত চিন্তা ও গণমাধ্যমে প্রচারের আলোয় আসতে চান। কিন্তু এ প্রবণতা খুব বেশি নয়।
কথা হচ্ছে, যে কাজটা রাষ্ট্রের প্রশাসনের করার কথা সেই কাজটা আইনজীবীরা কেন করেন? এ ক্ষেত্রে মানুষের জন্য কাজ করতে রাষ্ট্রের সমস্যা আছে, এটা বলব না। কখনো কখনো রাষ্ট্র হয় তো মনে করে যে, এমনিতেই অনেক মামলা, অনেক সমস্যা। অনেক দায়িত্ব। এতকিছু করতে গেলে দায়িত্বের মধ্যে যদি আরও দায়িত্ব নেওয়া হয় তাহলে সঠিকভাবে কাজ করা যাবে কি না এটা নিয়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন। আর এ কারণেই নানা সময়ে নানা কারণে উদাসীতার পরিচয় দেওয়া হয়। আমি বলব, রাষ্ট্র যেমন মানুষের জন্য তেমনি মানুষের প্রয়োজনে প্রশাসন ও নির্বাহী বিভাগের সবসময় তৎপর থাকা উচিত।
লেখক : জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে সরকারের নির্বাহী আদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। পাশাপাশি গ্যাসের বিতরণ চার্জও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারির সম্ভাবনা আছে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘আমরা বলেছি প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’ চলতি সপ্তাহে দাম বাড়ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাড়তে পারে, কিন্তু সেটা আমি জানি না।’ এর আগে ১২ জানুয়ারি গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পর ১৭ জানুয়ারি অস্বাভাবিক হারে সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, যা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কার্যকর হবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৫০ পয়সা করে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
মন্ত্রণালয়ের হাতে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা দেওয়ার আগে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। তখন সাধারণ মানুষের কথা কিছুটা বিবেচনা করার সুযোগ থাকলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব করা হয় না। দফায় দফায় এভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দৈনন্দিন ব্যয় বাড়বে; যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার যেভাবে বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করছে, তা ভোক্তার জন্য এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত তথা সামগ্রিক দেশের জন্য অশনিসংকেত। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত পুরোপুরি কারিগরি। এর সঙ্গে আইনের নানা বিষয় জড়িত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সই করা ছাড়া তারা কিছুই করে না। এভাবে তো সাধারণ মানুষের কল্যাণ সম্ভব নয়। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বিধায় সেখানে কিছুটা হলেও বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর জবাবদিহি থাকত। তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল। সেখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল বিধায় কোম্পানিগুলোও যেনতেন হিসাব উপস্থাপন করে মূল্যহার বাড়ানোর ব্যাপারে কঠিন চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হয়। কিন্তু আইন সংশোধনে সেই সুযোগ আর থাকল না। তড়িঘড়ি করে করা এ সংশোধন অসাধু ব্যবসাকে সুরক্ষা দেবে।
সরকারের নির্বাহী আদেশ আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হস্তক্ষেপের কারণে লাইসেন্সসংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি সীমিত পরিসরে বিরোধ মীমাংসা ছাড়া আর কিছুই এককভাবে করতে পারছে না জ্বালানি খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কমিশনের সদস্যরা এ ব্যাপারে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে কমিশনের চলমান প্রক্রিয়া বাতিল করে ২৯ জানুয়ারি বিইআরসি এ-সংক্রান্ত যে আদেশ দিয়েছে, তাতে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বিইআরসি সূত্রমতে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করে কমিশন। এরপর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি-উত্তর লিখিত মতামত কমিশনে দাখিলের সুযোগ দেওয়া হয়। কমিশনের এই কার্যক্রম চলা অবস্থায় ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। জানুয়ারি থেকেই বিদ্যুতের নতুন মূল্য কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়। সরকারের এমন নির্বাহী আদেশের ফলে কমিশন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চলমান কার্যক্রম নিষ্পত্তির ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সবগুলো গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি প্রতি বছর মুনাফা করলেও বিতরণ চার্জ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে কোম্পানিগুলো এ ধরনের আবেদন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দিলেও আইন সংশোধনের কারণে জ¦ালানি বিভাগে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় চার্জ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শিগগির এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তাদের বিতরণ চার্জ ৫ গুণ বৃদ্ধি করে প্রতি ঘনমিটারে ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে প্রায় ৬৪ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
যদিও প্রতিষ্ঠানটি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪৫ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তিতাসের মতো অন্যান্য গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি প্রতি বছরই মুনাফা করছে। সর্বশেষ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের মুনাফার পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির শুনানিতে গ্যাসের বিতরণ চার্জ বাতিল করার সুপারিশ করেছিল বিইআরসির কারিগরি কমিটি। এতে বলা হয়েছিল, সবগুলো গ্যাস বিতরণ কোম্পানি মুনাফা করছে। ফলে তাদের বিতরণ চার্জ আদায় না করলেও মুনাফায় থাকবে। এ কারণে শুধু কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯ পয়সা করার সুপারিশ দেওয়া হয়। অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির বিতরণ চার্জ বিলুপ্ত করার সুপারিশ দেওয়া হয়।
এবারের অমর একুশে বইমেলায় বই প্রকাশ ও বিক্রির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা করছেন প্রকাশক-লেখকরা। কাগজের দাম দ্বিগুণ এবং বই মুদ্রণের অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম প্রায় দেড়গুণের বেশি বেড়ে যাওয়ায় প্রকাশকরা অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কম বই প্রকাশ করছেন। পা-ুলিপি প্রস্তুতির পরও প্রকাশ করতে পারছেন না অনেক লেখক। এসবের পাশাপাশি বইমেলার স্টলের জায়গার দাম ও নির্মাণ ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে এবং প্রকাশনা ব্যবসায় মন্দার আশঙ্কায় মেলায় অংশ নিচ্ছে না অনেক প্রকাশনা সংস্থাও।
বইমেলার এমন চিত্র ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন লেখক-প্রকাশকরা। তারা বলছেন, এমনিতেই গত দু’তিন বছর ধরে বই বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তার ওপর এবার বই বিক্রি ও প্রকাশ কম হলে মনন ও সৃজনশীল লেখক-পাঠক তৈরিতে ও সৃজনশীল সাহিত্য বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে লেখক, গবেষক ও শিক্ষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাগজের দাম বৃদ্ধির প্রভাব শুধু বইমেলা, নতুন বই প্রকাশ কিংবা পাঠক-লেখকের মনন-সৃজনশীলতায় পড়ে না; সামগ্রিকভাবে দেশ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর পড়ে।
অবশ্য মেলায় মানসম্পন্ন ভালো বই প্রকাশের পক্ষে এই লেখক ও গবেষক। তিনি বলেন, বইমেলায় বই কম বের হোক, ভালো বই বের হোক। কম বই বের হলে খারাপ কিছু দেখি না। যদিও দাম বাড়বে, কিন্তু বই বিক্রি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করি। কারণ গত দু’বছর লোকজন সেভাবে মেলায় আসতে পারেনি। এবার আশা করি, সেদিক থেকে এবার ভারসাম্য রক্ষা হতে পারে।
একইভাবে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি, একুশ বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক এবং পুঁথি নিলয় প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বই বিক্রি ও বই প্রকাশের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রভাব আমাদের সৃজনশীলতা মননশীলতায় পড়বে। সংস্কৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে মননশীল পাঠক ও লেখক তৈরি এবং নতুন সাহিত্য বিকাশ সবকিছু নিয়েই একটা সংকটের মধ্যে পড়ব আমরা।
এমন অবস্থায় আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন চলছে প্রকাশকদের ব্যস্ত সময়। স্টল নির্মাণ ও সাজসজ্জায় রাতদিন কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের আগে সব কাজ সম্পন্ন হবে বলে একাডেমির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বই প্রকাশ ও বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসবে : শ্যামল পাল বলেন, বিলাসী লোকজন বই কেনে না, পাঠক বই কেনে। পাঠকের বই কেনার একটা বাজেট থাকে। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে এবার সেই বাজেট কমবে। তার ওপর বইয়ের দাম বেড়েছে। ২০০ টাকার বই ৩০০ টাকা, ৪০০ টাকার বই ৬০০ টাকা হচ্ছে। তাতে বই বিক্রি কমে যাবে। আবার নতুন বই প্রকাশের সংখ্যাও এবার কমে যাবে। একটা বই বের করতে বিগত বছরগুলোতে যদি ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হতো, এবার সেটা ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ পড়বে। সেক্ষেত্রে প্রকাশকদেরও তো পুঁজির সংকট আছে।
নিজের প্রকাশনা সংস্থা থেকেও বই প্রকাশ কম হচ্ছে জানিয়ে এই প্রকাশক বলেন, এবার আমি ৫২-৫৫টা বই করছি। অথচ প্রতি বছর ১৩০-১৩৫টা বই করি। অর্থাৎ বই প্রকাশ ও বিক্রির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে এবার। বই প্রকাশ নিয়ে এবার তাড়াহুড়ো নেই। বই প্রকাশ করতে আগের বছরগুলোতে প্রকাশকদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস ছিল, এবার সেটা নেই।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরপর দুইবারের সাবেক সভাপতি এবং আকাশ প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী আলমগীর সিকদার লোটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা সারা বছরই বই প্রকাশ করি। মেলায় গড়ে ২৫টির মতো বই বের হয়। এবার সেখানে ১৫টা প্রকাশ হতে পারে। কারণ কাগজের দাম চড়া। আবার চড়া দামেও প্রয়োজন অনুযায়ী কাগজ পাচ্ছি না।
প্রকাশনা সংস্থা ভাষাচিত্রের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল বলেন, বইয়ের সংখ্যা এবার অবশ্যই কমে এসেছে। আমি নিজেও বইমেলায় ৭০-৮০টা বই করতাম, সেখানে এবার ২০টা বই করব কি না সন্দেহ আছে। পা-ুলিপি তৈরি আছে। কিন্তু সাহস পাই না। অসংখ্য প্রকাশক বই প্রকাশ কমিয়ে দিয়েছেন। গত বছর যে বইটার দাম ছিল ২০০ টাকা, সেটার দাম এবার হবে ৩৫০-৪০০ টাকা। স্বভাবতই এত টাকা দিয়ে এরকম চিকন একটা বই আমাদের পাঠককরা কিনবেন বলে মনে হয় না।
বেহুলা বাংলার প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী চন্দন চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর আমরা শতাধিক বই করি। গত বছর করেছিলাম ১২৭টা বই। এইবার খুব বেশি হলে ৭০-৮০টা করব। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ কমে যাবে। এটার কারণ কাগজের দাম বেড়েছে। প্লেট, বোর্ডসহ বইয়ের জন্য যে সব জিনিস লাগে, সেগুলোর দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বছরজুড়ে বই প্রকাশনাতেও ভাটা পড়েছে। অর্ধেক হয়ে গেছে বই বিক্রি।
কাগজের দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেই : অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সাংস্কৃতিক জিডিপি বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু সেই সাংস্কৃতিক জিডিপির পেছনে সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকার এটাতে মনোযোগ দেয়নি। সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে সংস্কৃতির দ্বারা। সাংস্কৃতিক জিডিপি বৃদ্ধি একটা হতে পারত কাগজের মূল্য নিয়ন্ত্রণ অথবা সুলভ মূল্যে দেওয়া। সরকার যদি ঋণখেলাপিদের এত সুযোগ-সুবিধা দিতে পারে, তাহলে সামান্য একটা বইমেলায় ৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিত, তা হলে কী হতো। এই জিনিসগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে দেখা উচিত ছিল। প্রকাশকদের বারবার আলাপ-আলোচনা করা উচিত ছিল। সংস্কৃতির প্রতি প্রধানমন্ত্রী সবসময় নমনীয়। তার কাছে তো জিনিসটা পৌঁছাতে হবে।
এ ব্যাপারে শ্যামল পাল বলেন, কাগজের দামটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা বারবার সরকারকে বলেছি, প্রতিযোগী কমিশনকে বলেছি, বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়েছি। দিকনির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। কাগজ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তার ওপর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে কাগজের দাম আরেক ধাপ, প্রায় ২০ শতাংশ দাম বেড়ে গেল।
মুদ্রণের সবকিছুর দাম বেড়েছে : মুদ্রণের সব কিছুর দাম বেড়েছে- জানিয়ে শ্যামল পাল বলেন, যে কালির দাম ছিল ১৬০০-১৮০০ টাকা সেট, সেই কালি হয়েছে ৪ হাজার টাকা সেট। প্লেটের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। মুদ্রণের জন্য যে সব জিনিস আমদানি করতে হয়, সেগুলোর সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রকাশক সোহেল খন্দকার বলেন, গত বছর যে বই পেস্টিং করেছি ৩০ টাকা দিয়ে, এবার তাকে দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। প্লেটেও সমহারে বেড়েছে। কালি ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রিন্টিং রেট বেড়েছে। ছাপানো খরচ যেটা ছিল ৩০০ টাকা, সেটাতে ৫০ টাকা বেড়েছে। অন্যগুলো এক-তৃতীয়াংশ থেকে এক-চতুর্থাংশ বেড়েছে। বাঁধাইয়ের বোর্ড কাগজ ও কাপড়েরও দাম বেড়েছে।
অনেক প্রকাশক অংশ নিচ্ছেন না : আকাশ প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী আলমগীর সিকদার লোটন বলেন, বাংলাবাজারের অনেক নামকরা প্রকাশক এবার মেলায় যাচ্ছেন না। এর মধ্যে একটি আছে যারা বাম রাজনীতির বই বের করেন। আবার রাজনীতিসহ মূলধারার বই বের করেন এমন কিছু প্রকাশকও স্টল নেননি। কাগজের দাম তো বেড়েছেই। তার ওপর স্টলের জায়গার দাম বেশি হয়েছে। স্টল বানাতে যেসব জিনিসপত্র লাগবে সেগুলোর দামও বেড়েছে।
ভাষাচিত্রের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল বলেন, ৫-১০ বছর আগে প্রকাশকরা বইমেলায় স্টল নিলে, তাদের পরবর্তী ছয় মাস আর কিছু করতে হতো না, তাদের এত লাভ হতো। কিন্তু এবার অন্তত ১০০ প্রকাশক বইমেলায় স্টল নিচ্ছেন না। এটা গত দুই বছর ধরেই হচ্ছে। কারণ বইমেলায় স্টল নিলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অর্থাৎ প্রকাশনা সংস্থাগুলো বইমেলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
তবুও বইমেলা : গত দু’বছরও করোনার কারণে প্রকাশনা ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। তারা বলেছেন, তারপরও চেতনার জায়গা থেকে তারা বইমেলায় অংশ নিয়েছেন এবং এবারও নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে আলমগীর সিকদার লোটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেলা থেমে থাকবে না। একুশের মেলা বাঙালির একটা চেতনার জায়গা। তারা মেলায় যাবেন। কিন্তু বই অতটা কিনতে পারবেন না। কারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই। সে হিসেবে বই বিক্রি কমে যাবে।
প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, এবারের বইমেলা নিয়ে এখনো আমরা দোদুল্যমানতায় আছি। একই সঙ্গে আশাবাদী, আবার উদ্বেগেও আছি। আশাবাদী এই কারণে যে, এবারের বইমেলার করোনার কোনো প্রভাব নেই, যেটা গত দুই বছর ছিল। মেলার সময় ও স্টল বিন্যাস নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। এবার মেলায় প্রচুর লোক আসবে। এইবারের মেলার ডিজাইনটা সুন্দর হয়েছে। কিন্তু শঙ্কার জায়গা হলো নতুন বই বিক্রি নিয়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনেএ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জে তোলপাড় চলছে। তার স্ত্রীর দাবি, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন তিনি আত্মগোপনে থেকে নাটক করছেন। এদিকে একটি অডিও রেকড ফাঁস হওয়ার পর গতকাল সোমবার আবু আসিফ টক অব দ্য টাউন হয়ে উঠেছেন।
আবু আসিফ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) উপনির্বাচনে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা এবং এই আসন থেকে পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য বহিষ্কৃত নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আবু আসিফ মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কয়েক দিন আগে আসিফ অভিযোগ করেছিলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তার ওপর প্রচন্ড চাপ আসছে। তার নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও তিনি নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।
২৬ জানুয়ারি আসিফ অভিযোগ করেছিলেন, ২৫ জানুয়ারি রাত থেকে তার শ্যালক ও নির্বাচন পরিচালনাকারী কমিটির প্রধান সমন্বয় শাফায়েত হোসেন ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। ওই দিনই রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মুসা মিয়াকে। যদিও পুলিশ বলেছে, মারামারির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত রবিবার বিকেল থেকে আশুগঞ্জে খবর ছড়িয়ে পড়ে আবু আসিফ নিখোঁজ। তার স্ত্রী মেহেরুন্নিছা রবিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানান, দুই দিন ধরে আমার স্বামী ঘরে ফেরেনি। আমাদের লোকজনও ভয়ে থাকছে। আসিফ আত্মগোপনে রয়েছেন কি না জানতে চাইলে মেহেরুন্নিছা বলেন, ‘আমার স্বামী আত্মগোপনে যাননি।’ এ বিষয়ে থানায় বা কোথাও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমিও ভয়ের মধ্যে আছি। দ্রুত একটা কিছু করব।’
তবে আবু আসিফ নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসিফের স্ত্রী এবং বাসার কেয়ারটেকারের মধ্যে ফোনালাপ বলে একটি অডিও ফাঁস হয়। যেখানে আসিফের স্ত্রীকে কেয়ারটেকারকে আসিফের জন্য জামাকাপড় গোছানোর নির্দেশ দিতে শোনা যায়। সেখানে একটি নারী কণ্ঠ, ‘ইফসুফ (কেয়ারটেকার) স্যার কই, স্যারের (আসিফ) কতগুলো জামাকাপড়, গেঞ্জি, প্যান্ট, শীতের কাপড়, জুতা মোজা ব্যাগে ভরে দিয়ে দে তাড়াতাড়ি। আরে তাড়াতাড়ি দে। কেউ যেন না জানে স্যার কই গেছে। ক্যামেরা বন্ধ করে দে। ক্যামেরার লাইন বন্ধ কর বাসার। স্যার গেলে আরও ১০ মিনিট পর ক্যামেরার লাইন খুলবে।
এমন কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর বিএনপি নেতা আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনে গেছেন, এ নিয়ে আলোচনা আরও ডালপালা মেলতে শুরু করে। এরপর থেকে সোমবার সারা দিন ফোন করলেও আসিফের স্ত্রী ফোন রিসিভ করেননি। আসিফের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
আসিফ নাটকের ঘটনায় বিব্রতবোধ করছেন তার নিকটাত্মীয় ও স্বজনরা। তারা নিখোঁজ বা আত্মগোপন কোনোটাই বলতে চান না।
আসিফের ভাতিজা ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের বলেন, ‘আমি সাত্তার সাহেবের (কলার ছড়ি) নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। চাচা আসিফের বিষয়ে কিছুই জানি না। আপনারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিব্রতবোধ করি।’
তবে আবু আসিফের এ ঘটনাকে নাটক বলে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (১) এম এম তোফায়েল আলী রুবেল বলেন, ‘আসিফ নিজেই আত্মগোপন করে নাটকের জন্ম দিয়েছেন। নির্বাচনে আলোচনায় থাকার জন্যই তিনি এ কাজ করেছেন।’
আবু আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনে, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান। তিনি গতকাল বলেন, ‘আবু আসিফের বিষয়ে তার স্ত্রী বা পরিবারের কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তবে যেহেতু মিডিয়ায় খবর এসেছে, তাই আমরা স্থানীয়ভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছি তিনি কোথায় আছেন। আমরা তার বাসায় যাইনি বা আশপাশে ঘোরাফেরাও করছে না কেউ।
জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। এখন কেউ যদি নিজেকে লুকিয়ে রাখে, তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই।’
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা গুচ্ছ ভর্তি। স্বাভাবিকভাবেই তিন বছরে অনেকটাই গুছিয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তা তো হয়নি, বরং আরও অনেকটা অগোছালো হয়ে উঠেছে। এমনকি গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আর অনেকটা জোর করেই তাদের গুচ্ছে রাখার চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফলে গুচ্ছ ভর্তি নিয়েই টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জোর করে হয়তো এ বছর ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে রেখে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই অনুযায়ীই এগুনো উচিত।
জানা যায়, গত বছরের এইচএসসির ফল প্রায় সাত মাস দেরিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। অথচ এর আগেই তাদের প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার তাগিদ দিয়েছিল ইউজিসি। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দফায় দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করেও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব কারণ দেখিয়ে গুচ্ছ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে তা যুক্তিসংগত নয়। আমাদের প্রত্যাশা, তারা গুচ্ছে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাষ্ট্রপতি নিজেই গুচ্ছ ভর্তি শুরু করার তাগিদ দিয়েছিলেন। যারা গুচ্ছে এসেছিলেন তাদের এখন দায়িত্ব হয়ে পড়েছে, এখানে থাকা। আর গুচ্ছে গত দুই বছর যেসব ত্রুটি ছিল, সেসব ইতিমধ্যেই সমাধান করা হয়েছে। ফলে এ বছর অনেকটাই ত্রুটিমুক্ত হবে গুচ্ছ ভর্তি।’
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। সেখানে আলোচনা হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই বলে এখান থেকে পিছু হটার বা বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বছরও গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে থাকছে। তবে আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনিক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সভায় গুচ্ছে থাকার আলোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই গুচ্ছে থাকতে চান না। প্রয়োজনে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতেও পিছপা হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আর আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছে।
সূত্র জানায়, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরুর কথা ছিল। আর জুলাইয়ের শেষ নাগাদ যাতে ক্লাস শুরু করা যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত গুচ্ছে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু বা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে পারছে না গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি।
গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসাবে আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি গঠন ও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা আন্দোলন ও কর্মসূচির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে দাবি আদায় করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পরও যদি গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫ সালের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই অবস্থায় গুচ্ছে থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে সে কথা বলেই আমাদের গুচ্ছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসায় আমরা আমাদের স্বকীয়তাই হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি। আর গুচ্ছে হাজারো ত্রুটি। এতে দীর্ঘসূত্রতা ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি সারা বছর ধরে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ফলে গুচ্ছে ভালো ছেলেমেয়েরা আসছে না। অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। এরমধ্যে ফল না এলে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।’
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিজস্ব পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২৫তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সর্বসম্মতভাবে গুচ্ছে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সভায় কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা, ১ জুলাই নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু করা, আবেদনের জন্য ন্যূনতম ফি নির্ধারণ এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ভর্তি পরীক্ষার পর শুধু ভর্তি হওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে আসবে এবং বাকি কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে।
গত ২৮ মার্চ শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা থেকে আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা আহ্বানের জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। ইতিমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা আহ্বান করে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে অনুরোধ জানিয়েছি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাব না।’
জানা যায়, সাধারণ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। প্রকৌশল গুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি গুচ্ছের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আলাদা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) গুচ্ছ ভর্তিতে আসেনি। এ তালিকায় আছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিজেদের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় আসছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় অন্যদের ফের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। এভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পাঁচ-সাতবার মেধা তালিকা প্রকাশের পরও তাদের আসন শূন্য থাকছে। এমনকি গত বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন পূর্ণ করতে পারেনি।
প্রথম আলোর সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের মুক্তির দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বেলা ৩টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী সড়ক অবরোধ করা হয়। সোয়া ৩টার দিকে ঢাকাগামী অপর সড়কটিও অবরোধ করা হয়। এর আগে পৌনে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের নিঃশর্ত মুক্তিসহ তিন দাবি জানান। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো শামসুজ্জামান শামস ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানে কীভাবে শামস ভাইকে মুক্ত করতে হবে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তির আগ পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখব। শামস ভাই দিনমজুরের বরাতে যে কথা লিখেছেন, তা এদেশের কোটি কোটি মানুষের মনের কথা। সত্য বললে তার গলা টিপে ধরার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মুখ চেপে ধরার সাহস করলে আবার একটি গণ-অভ্যুত্থান দেখবে এই দেশ। অনতিবিলম্বে শামস ভাই এর নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তাকে তার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে, তা নাহলে জাহাঙ্গীরনগরের এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের খবরে সেখানে অবস্থান নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিসহ প্রশাসনসংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা।
সুপারস্টার শাকিব খানের জন্মদিন ছিল ২৮ মার্চ। বিশেষ দিনটিতে অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীরা শুভেচ্ছায় সিক্ত হন নায়ক। একই সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীরাও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান তাকে।
বিশেষ ওই দিনটি ঘরোয়া আয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে উদযাপন করেন তিনি। পরিবারের সদস্য এবং দুই ছেলে আব্রাম খান জয় ও শেহজাদ খান বীরের সঙ্গে কেক কাটেন তিনি। সমাজমাধ্যম ছড়িয়ে আছে সেসব ছবি।
অভিনেতার জন্মদিনে ছেলে বীরকে নিয়ে শাকিবের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠেছিলেন বুবলী। তারই একটি ভিডিও বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টায় ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট করেছেন বুবলী।
নায়িকা ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ করে ক্যাপশনে লেখেন—'বাবার জন্মদিনে যখন বাবা ছেলের দুষ্ট-মিষ্টি খুনসুটি।' এর পরই জুড়ে দেন একটি রেড হার্ট ইমো।
বুবলীর পোস্ট করা নজরকাড়া ভিডিওটি ইতিমধ্যে প্রায় চার লাখবার দেখা হয়েছে। এ ছাড়া মন্তব্য পড়েছে প্রায় তিন হাজার।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুক্রবার মাঠে গড়াবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ষোড়শ আসর।
আহমেদাবাদে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। দশ দলকে নিয়ে আট সপ্তাহে ১২টি ভেন্যুতে এবারের আসরের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। মোট ম্যাচের সংখ্যা ৭৪টি।
গেল বছর আইপিএলে নতুন দুটি দল যুক্ত হয়- গুজরাট ও লখনউ সুপার জায়ান্টস। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ ক্রিকেট খেলে তারা। লিগ পর্ব শেষে টেবিলের শীর্ষে ছিল হার্ডিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন গুজরাট। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয় হয় লখনউ।
কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঠিকই জায়গা করে নেয় গুজরাট। ফাইনালে রাজস্থানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে গুজরাট। এবারও শিরোপা ধরে রাখার মিশন গুজরাটের। যথারীতি দলকে নেতৃত্ব দিবেন পান্ডিয়া।
টুর্নামেন্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। ধোনির নেতৃত্বেই রেকর্ড নয়বার ফাইনালে খেলেছে তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দুই বছর আগে অবসর নিলেও এখনও আইপিএল খেলছেন ৪১ বছর বয়সী ধোনি। চেন্নাই দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ধোনির উপর। ধরনা করা হচ্ছে এবারের আইপিএল ধোনির ক্যারিয়ারের শেষ আইপিএল।
আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডের মালিক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গেল বছর টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করে রোহিত শর্মার দল। দ্বিতীয় সফল দল চেন্নাইও ভালো করতে পারেনি। দশ দলের মধ্যে নবম ছিল চেন্নাই। মুম্বাই শেষ করেছিল সবার শেষে থেকে। এবার এই দুই দলের ওপরই আলাদা নজর থাকবে সবার।
আগামী ২৮ মে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আইপিএলের এবারের আসরের।
পবিত্র রমজান মাস যেহেতু প্রতি বছরই আসে, সেজন্য এটা অনেকের জন্য পরীক্ষার বিষয় হয়ে যায়। কারণ যে কাজ বারবার করা হয় তাতে গভীর মনোযোগ ও একনিষ্ঠতা ধরে রাখা এবং ওই কাজের মাধ্যমে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা এবং সওয়াবের প্রত্যাশা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অনেকেই এ জাতীয় কাজ করেন অভ্যাসবশত। ফলে ওই কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা আর বজায় থাকে না। তার বিনিময়ে আল্লাহতায়ালার যে ওয়াদা সেটা স্মরণ থাকে না। কিংবা সেই ওয়াদার ওপর বিশ্বাস যথাযথভাবে মনে থাকে না। কারণ কোনো কাজ অভ্যাসজাত হয়ে গেলে তা অনেকটা অভ্যাসের তাগিদেই করা হয়। তাতে অন্য কোনো বিষয় খেয়াল করা হয় না। অথচ স্পষ্টভাবে হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)-এর সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীত গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৮
বর্ণিত হাদিসে ইমান তথা বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে সওয়াবের প্রত্যাশা নিয়ে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। এখান থেকে খুব খেয়াল করে শিক্ষাগ্রহণ এবং পুরো রমজান মাস সেই শিক্ষা মনে রাখা।
একটু চিন্তা করা দরকার, মানুষ কেন রোজা রাখে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করে? প্রচ- গরমেও সে পানি পান করে না! তীব্র ক্ষুধায়ও খাবার খায় না। অথচ সবকিছুর ব্যবস্থা আছে। চাইলেই সে যে কোনো কিছু গ্রহণ করতে পারে। এমনিভাবে সে আরও অনেক ধরনের কষ্ট করে। অনেক কিছু সয়ে নেয়। এসব কেন করে?
উত্তর পরিষ্কার। আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে। তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। তার কাছ থেকে বিনিময় ও সওয়াবের আশায়।
যারা মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান এবং মানবীয় দুর্বলতার খবর রাখেন, তারা জানেন- যখন কোনো বিষয় ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয় এবং নির্ধারিত রুটিনের আওতাভুক্ত হয়, তখন সেটা অনেক সময়ই উদাসীনভাবে পালন করা হয় এবং অবচেতন মনে আদায় করা হয়। রোজা রাখতে হবে, তাই রাখা। রোজা না রাখলে মানুষ মন্দ ভাববে, ঘরের লোক খারাপ বলবে। মানুষের কাছে লজ্জা পেতে হবে, সমালোচনা শুনতে হবে। তাই সে রোজা পালন করে।
আবার অনেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তেই রোজা রাখে কিন্তু তাদের হৃদয় সবসময় জাগ্রত থাকে না। রোজার প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তাদের স্মরণ থাকে না। অথচ আমলের হিসাব নেওয়া, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবুও মানুষ সেদিকে মনোযোগী হয় না। খেয়াল করে না- কেন সে রোজা রাখছে? কেন সে পানাহার ত্যাগ করছে? চাহিদা ও চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা থাকার পরও সে কেন তা থেকে বিরত থাকছে? রোজাপালনের ক্ষেত্রে এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
রোজার যেসব ফজিলত এবং রোজার মাধ্যমে যেসব বিষয় অর্জনের কথা বলা হয়েছে, তার একটি হলো- তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি। সরাসরি কোরআন মাজিদে এই ফজিলতের কথা এসেছে। আর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রোজার অসিলায় কামাই-রোজগারে বরকত হয়। মানব হৃদয় আলোকিত হয়। গোনাহ থেকে বাঁচার শক্তি অর্জিত হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। সর্বোপরি তাতে আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নবী কারিম (সা.)-এর অনুসরণ করা হয়।
আমরা পানাহারে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তা পরিত্যাগ করি, তখন প্রতিটি মুহূর্তে সওয়াব হতে থাকে, আমাদের মর্যাদা উঁচু হতে থাকে। কারণ এই ত্যাগ আল্লাহর কাছে খুবই দামি, তাতে আল্লাহ খুব খুশি হন। বান্দা যখন তার হুকুম পালনার্থে এবং তাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট সহ্য করছে- এর মর্যাদা তার কাছে অনেক বেশি।
কিন্তু আফসোসের কথা হলো- অধিকাংশ রোজাদারেরই এসব কথা মনে থাকে না। রোজাদারের মর্যাদা, তার জন্য আল্লাহ কী পুরস্কার নির্ধারণ করেছেন, আল্লাহ তাকে কত ভালোবাসেন ইত্যাদি বিষয়ের দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ হয় না। অথচ সেটা খুবই জরুরি। আল্লাহর হুকুমের কথা মনে করা, তার সন্তুষ্টি লাভের নিয়ত স্মরণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যখন একটা অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়, নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় এবং সবাই তাতে অংশগ্রহণ করে তখন কে কী নিয়তে অংশগ্রহণ করে সেটা স্পষ্ট থাকা জরুরি। প্রত্যেকের মূল্যায়ন হবে তার নিয়তের ভিত্তিতে।
রমজানের রোজার ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেন একধরনের বাতাস আসে এবং সেইসঙ্গে একটি মৌসুম আসে। তাতে চারপাশে নতুন আবহ ছড়িয়ে পড়ে। সবাই ওই আবহে প্রভাবিত হয় এবং সে অনুযায়ী আমল শুরু করে। অথচ আসল উদ্দেশ্য ও নিয়তের কথা সবার মনে থাকে না।
জীবনের সব কাজে এই ‘ইমান (বিশ্বাস) ও ইহতিসাব (একনিষ্ঠতা)’ যদি আমাদের অর্জন হয়ে যায়, তাহলে পুরো জীবন আল্লাহর রহমত ও করুণার বারিধারায় স্নাত হবে। এর প্রকৃত ফায়দা দেখা যাবে কেয়ামতের দিন। যখন সবাই আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, তখন বুঝে আসবে ‘ইমান ও ইহতিসাব’-এর মূল্য। ছোট ছোট এই আমলগুলোও দেখা যাবে- কত বড় আকারে সামনে আসছে! কারও কোনো ছোট্ট একটি কাজ করে দিয়েছিলাম, কারও সঙ্গে একটু হেসে কথা বলেছিলাম, সেগুলোই দেখা যাবে অনেক সওয়াবের মাধ্যম হয়ে গেছে। এটাই রমজান মাসের প্রথম ও সবচেয়ে বড় হাদিয়া। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তের গুণ অর্জন। এটাই জীবনের জন্য বরকতময় এ মাসের বার্তা।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সন্ধ্যার আকাশে রহস্যময় চাঁদ দেখে আটকে যায় চোখ। চাঁদের নিচে আলোকরেখার মতো ছোট এক বিন্দু। এ নিয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা থেকেই সোশালে মাতামাতি। এ সংক্রান্ত ছবি সমানে শেয়ার করে চলেছে নেটিজেনরা। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন নানা রকম মন্তব্য।
কেউ কেউ বলছেন, এটি দেখতে ঠিক আরবি হরফ ‘বা’-এর মতো। আবার কেউ কেউ বলছেন, দৃশ্যটির সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান মোর ‘প্রিয়া হবে এসো রানী’র। গানে প্রিয়তমার খোঁপায় ‘তারার ফুল’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন বিদ্রোহী কবি।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বসন্তের আকাশে ধরা পড়া রহস্যময় এই আলোকরেখা আসলে শুক্র গ্রহ। অবশ্য এই মহাজাগতিক দৃশ্য বিরল। সৌরমণ্ডলের উজ্জ্বলতম গ্রহটি শুক্রবার চলে আসে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের কাছাকাছি। নতুন অবস্থানের কারণেই মানুষের কাছে ভিন্নভাবে ধরা দেয় গ্রহটি। তবে সেটি আবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যায়।
এদিন সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ-ভারতসহ কয়েকটি দেশে আকাশে চাঁদের নিচে আলোকবিন্দুটি দেখা যায়। এ সময় অনেকেই চাঁদ দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে যান। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই বিরল মহাজাগতিক মিলন দেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকস টেলিস্কোপ ও ক্যামেরা ব্যবহার করে এই মহাজাগতিক ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করে।
সোশালে সাইফুদ্দিন আহমেদ নামে একজন কলেজ শিক্ষক মন্তব্য করেন, ‘এটিই নজরুলের ‘তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল...। কবি তার একটি গানে লিখেছিলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল / কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল ...।’ গতকাল ছিল চৈত্র মাস, চাঁদ আর শুক্রের সম্মিলিত এই মোহনীয় রূপও ছিল ঠিক তৃতীয়া তিথিতে।
তবে শুধু এই কলেজ শিক্ষকই নন, আরও অনেকে চাঁদ ও শুক্র গ্রহের বিরল এবং যৌথ রূপকে কানের দুলের মতো দেখতে বলে মন্তব্য করেছেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে চাঁদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল শুক্র ও সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিকে। এবার চাঁদের নিচে দেখা মিলল শুক্র গ্রহের। চাঁদের নিচে অবস্থানের পাশাপাশি কিছুক্ষণের জন্য চাঁদের আড়ালেও চলে গিয়েছিল গ্রহটি।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, গত ১ মার্চ থেকেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। বিভিন্ন দেশে রাতের আকাশেই দেখা মিলছে এ বিরল দৃশ্যের। সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতি ও শুক্র। আকাশে মেঘ না থাকলে কাছাকাছি আসার দৃশ্য খালি চোখেই দেখতে পারছেন যে কেউ।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকিউ ওয়েদার বলছে, পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র ও মঙ্গল একে অপরের সবচেয়ে নিকটে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে এক সারিতে দেখা যাবে শুক্র-মঙ্গল ও চাঁদকে। এমন ঘটনাকে ‘প্ল্যানেটরি কনজাংশন’ বলে আখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আগামী ২৬ মার্চ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিজেদের কক্ষপথ থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে ও একই সারিতে অবস্থান করবে। ওই দিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দুটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে। এর আগে, ২৫ মার্চ রাতে চাঁদের কাছাকাছি আসবে এই দুই প্রতিবেশী গ্রহ, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে বেশ বিরল ঘটনা।