
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন বিবেচনায় নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি গত ১৪ বছরে বাংলাদেশে যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, জনগণ সেদিকে একটু বিশেষভাবে মনোযোগ দেবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
অনির্বাচিত লোক দিয়ে দেশের উন্নতি হয় না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যার পর যিনি সেনাপ্রধান হলেন, তিনিই একদিন নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিলেন। এ ঘোষিত রাষ্ট্রপতি, অনির্বাচিত লোক দিয়ে কখনো দেশের উন্নতি হয় না, এটা প্রমাণিত সত্য।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার সকালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্র্তৃপক্ষ এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের (রাজউক) ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রমনার বটমূলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। এ সময় রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ এবং মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে ১ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ ২০১৪ ও ’১৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে এবং তারা এটা করেছে শুধু এ কারণেই যে, আমরা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। কাজেই দেশ ও দেশের জনগণের জন্য আমাদের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা সেই দায়িত্ববোধ থেকেই দেশ চালিয়ে যাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ আমরা গড়ে তুলব। আমরা ই-গভর্ন্যান্স চালু করব, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করব।’
দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা করা সম্ভব হয়েছে এ কারণেই যে, দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ক্ষমতায় আছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন শুধু আর্থসামাজিক উন্নয়নই নয়, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায়ও আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে তার সরকার ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, প্রত্যেকটা নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো যাতে পূরণ হয়, তার নিশ্চয়তা রেখেই সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে এবং তা সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনে যাতে একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ আসে তার ব্যবস্থাও করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকারের উন্নয়ন শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, বরং একেবারে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা বা ইন্টারনেট কানেকশন পৌঁছে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে আমরা স্যাটেলাইট যুগেও প্রবেশ করেছি। তাছাড়া ’৯৬ সালে যে বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট তাকে ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি করার পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি তা আবার ৩ হাজারে (মেগাওয়াট) নেমে গেছে। সেখান থেকে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের প্রত্যেকটি ঘরকে আমরা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করতে পেরেছি। প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা মানুষকে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, পানি ও জ¦ালানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে প্রায় ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এমন অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কাজেই এখানেও আমি সবাইকে অনুরোধ করব বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাই আবার একটু সাশ্রয়ী হবেন।
দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২৩ সালে বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দা প্রত্যক্ষ করবে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর এবং প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের খাবার উৎপাদন বাড়াই তবে অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের আঘাত করতে সক্ষম হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও তার সরকারের বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো জিডিপিতে গড়ে সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সফলভাবে চলছে।
শেখ হাসিনা রাজধানীবাসীর অতীতের পানির কষ্টের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ঢাকা শহরে সুপেয় পানির বড় অভাব ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই আমরা রাজধানীর সায়েদাবাদ ১, ২ ও ৩-সহ বিভিন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলো করে দিয়েছি। কাজেই পানির ব্যবহারেও সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। তার সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতাই শুধু বাড়ায়নি তাদের আবাসন সুবিধা ৩২ শতাংশে উন্নীত করেছে। এর লক্ষ্য ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া।
হাইকোর্টে অ্যানেক্স ভবন নির্মাণ, আইনজীবীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, বিচারকদের জন্য আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, জেলায় জেলায় নতুন আদালত ভবন তৈরিসহ তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমস্যা দূর করার পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর এ দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে বন্দুকের নল দিয়ে। অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে মার্শাল ল চলেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে দেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত হয়েছিল সেটা ব্যাহত হয়ে যায়। এভাবেই ২১ বছর সরকার পরিচালিত হয়। ফলে মানুষের উন্নয়নের গতিও ব্যাহত হয়। অথচ জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের ওপরে তুলে দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর এই অগ্রগতি থেমে যায়, কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী দিয়ে কখনো দেশের উন্নয়ন হয় না। আর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেই এ জনগণের কিছুটা হলেও উন্নয়ন করতে পেরেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করেছি। জনগণের উন্নয়ন অন্তত আমরা করতে পেরেছিলাম। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সাক্ষরতার হার, খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম। তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করি। আমাদের যে পরিকল্পনা সেই পরিকল্পনার মধ্য দিয়েই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। বাংলাদেশ ’২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যদি এই ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ধারা না থাকত তাহলে এ দেশ কিন্তু এত উন্নত হতে পারত না।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকল্প : ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য ২০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ (৯০টি ফ্ল্যাট), তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল (১৩ তলা) আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ (ছয়টি ১৩ তলা ভবনে ২৮৮টি ফ্ল্যাট), মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট, নোয়াখালী সদরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ (৯টি ১০ তলা ভবনে ৩২৪টি ফ্ল্যাট)। এ ছাড়াও রয়েছে ঢাকার রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার লাইব্রেরি ভবন, অ্যানেক্স ভবন এবং অডিটরিয়াম নবায়নসহ আনুষঙ্গিক কাজ।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প : মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ১ হাজার ৪০টি আবাসিক ফ্ল্যাট (স্বপ্ননগর-১) নির্মাণ, মিরপুর ১৫ নম্বর সেকশনে ১৪ তলাবিশিষ্ট ১২৫০ বর্গফুট আয়তনের ১০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও সিলেটের সুনামগঞ্জে সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন।
রাজউকের প্রকল্প : পূর্বাচল পানি সরবরাহ প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, পলখান উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্বাচল আদর্শ কলেজ ভবন।
১৯৯৮ সালের ২৩ জুলাই রাজধানীর মিন্টো রোডের মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কার্যালয়ে নির্যাতনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামীম রেজা রুবেল মারা যান। এর জেরে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল যুগান্তকারী এক রায়ে ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ৫৪ ধারা এবং রিমান্ডে নিয়ে ১৬৭ ধারার অপ্রয়োগ রোধে ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়, যা পরে আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
ধর্ষণ প্রমাণ করতে ভুক্তভোগীর ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ বিষয়ে জোরালো আপত্তি ছিল নারী অধিকারকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীদের। ২০১৩ সালে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষে আইনজীবীরা হাইকোর্টে রিট করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল এ পরীক্ষা নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট বলে, ধর্ষণ-প্রমাণে অযৌক্তিক এ শারীরিক পরীক্ষার কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ৫৪ ও ১৬৭ ধারার অপপ্রয়োগ হয়তো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি, তবে জনস্বার্থের এসব মামলার ফলে নাগরিকের নিরাপত্তা ও সাংবিধানিক অধিকার বিষয়ে সুফল মিলেছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রেও নিবর্তনমূলক শারীরিক পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে না ভুক্তভোগীকে।
রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ বা প্রশাসনের নীরবতা-নিষ্ক্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থের মামলার গুরুত্ব রয়েছে সারা বিশ্বে। জনমানুষেরও স্বার্থ, আগ্রহ রয়েছে। তারা বলেন, এ ধরনের মামলা এমন এক আইনি পদক্ষেপ, যা রাষ্ট্র বা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হলে, কার্যকরী না হলে ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পথ তৈরি করে। নিখরচায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত হয় আদালতের রায়ে বা আদেশে।
উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা পরিচালনা করেন এমন আটজনের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদক। তারা বলেন, রিট মামলা ও জনস্বার্থের মামলা ভিন্ন কিছু না হলেও বিষয়বস্তুতে পার্থক্য রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন, শ্রমিকের অধিকার, সাংবিধানিক ও আইনি ইস্যু, নারী অধিকার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, নিরাপদ খাদ্য, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ ও জলবায়ুর ক্ষতি, নদীদখল, শিক্ষা, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের দৈনন্দিন প্রয়োজন প্রভৃতি বিষয়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের নীরবতা-উদাসীনতার প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে। এসব বিষয়ে প্রায়ই প্রভাবশালীরা হস্তক্ষেপ করেন। তখন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি-গোষ্ঠীর একমাত্র আশ্রয় উচ্চ আদালত।
জনস্বার্থবিষয়ক মামলার পরিসংখ্যান রাখার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এ দেশে নেই। দেশ রূপান্তরের চেষ্টায় গত ২৫ বছরে ১০টির মতো আইনি সংগঠন, মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক সংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠনের ৯১০টির মতো মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগতভাবে আইনজীবীরাও প্রায়ই মামলা করেন। বেশিরভাগ মামলায় উচ্চ আদালতের রায়, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ও রুল হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানান। মামলা চালাতে গিয়ে প্রভাবশালীদের হুমকিতেও পড়তে হয়। দ্রুত প্রচার পেতে অনেক মামলার ‘মেরিট’ বা প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। তবে জনস্বার্থের মামলা বেড়েছে। এ নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
বাংলাদেশে জনস্বার্থের মামলা : প্রবীণ আইনবিদরা জানান, বাংলাদেশে জনস্বার্থের মামলার ধারণা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে আলোচিত ‘বেরুবাড়ি’ মামলা দিয়ে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য রায় হয় ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) মহাসচিব ড. মহিউদ্দিনের করা ফ্যাপ-২০ (ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান) বিষয়ক মামলায়। বন্যা ঠেকাতে টাঙ্গাইল জেলায় বাঁধ নির্মাণ এবং এর ফলে এলাকার কৃষি, মৎস্যচাষ, গবাদিপশু ও পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে ১৯৯৪ সালের জুনে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। রিটকারীর লোকাস স্ট্যান্ডি (আবেদনের এখতিয়ার) নিয়ে আপত্তি তুলে হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে দেয়। তবে আপিল বিভাগ ১৯৯৬ সালের ২৫ জুলাই হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিল করে রায়ের পর্যবেক্ষণে সংবিধানে রিট-সংক্রান্ত ১০২(১) ও ১০২(২) (ক) অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় বলে, ‘যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি’ কথাটি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সমষ্টিগত ও সংহত ব্যক্তিত্ব হিসেবে জনগণও এর আওতায় আসবে।
জনস্বার্থের মামলায় সরব আইনজীবী ও সংগঠন : দুই দশকের বেশি সময় ধরে মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জনস্বার্থের মামলা করছে নিয়মিত। ১৯৯৩ সাল থেকে নাগরিককে আইনি সহায়তা দিচ্ছে আইনি সহায়তা সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। দুটি সংগঠন প্রায় ২০০ মামলা করেছে। ফতোয়া বিষয়ে মামলা, শিক্ষার্থীর ফরমে মায়ের অধিকার নিশ্চিত করার মামলা, নিকাহনামায় ‘কুমারী’ শব্দ বাতিল, পুনর্বাসন না করে বস্তি উচ্ছেদ, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ অসংখ্য মামলা কখনো যৌথভাবে, কখনো পৃথকভাবে করছে সংগঠন দুটি।
সারা দেশের অন্তত দুই হাজার আইনজীবী নিয়মিত ব্লাস্ট ও আসকের পক্ষে আইনি সহায়তা দিচ্ছেন। কেন জনস্বার্থে মামলা করেন এ প্রশ্নের জবাবে ব্লাস্টের ট্রাস্টি ও আসকের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশপ্রেম এখানে মুখ্য বিবেচনা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এ রাষ্ট্র জনগণের। মানুষ অধিকার-বঞ্চিত হলে কষ্ট হয়। এ জন্যই আদালতে দাঁড়িয়ে মানুষের কথা বলি। এ জন্য কোনো ফি নেন না আইনজীবীরা। অনেক সময় বাধা ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছি। পিছপা হইনি। তরুণ আইনজীবীরা এ ধরনের মামলায় আসছে। এটি খুবই আশাব্যঞ্জক। আদালত কিন্তু মানুষের জন্যই। খুব ব্যতিক্রম না হলে মানুষের অধিকার আদালতে অগ্রাহ্য হয় না।
৩০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি উচ্ছেদ মামলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জলাধার দখল, অবৈধ ইটভাটা, নদীদখল-দূষণ এবং পরিবেশ ও জলবায়ুসংক্রান্ত প্রায় ৩৫০টি জনস্বার্থের মামলা করেছে। ৫০টিরও বেশি মামলায় চূড়ান্ত রায় তারা পেয়েছে। বেলার প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ পরিবেশগত বিপর্যয় ও দুর্যোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসে। মুষ্টিমেয় কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটেপুটে খেতে চায়। তারা রাজনীতির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে। আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে জনস্বার্থমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে প্রাকৃতিক সম্পদের লুণ্ঠন ও ধ্বংস ত্বরান্বিত হচ্ছে। জনগোষ্ঠীর ও সামাজিক পশ্চাদপদতার কারণে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া চালানো যাচ্ছে না। এ কারণে জনস্বার্থে আমরা মামলা করি। এতে জনস্বার্থমূলক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্র যত বিকশিত হবে, জবাবদিহি যত বাড়বে, আদালতের রায় কার্যকর করা তত সহজ হবে। মামলার রায় হলে মানুষ মনে শক্তি পায়। জবাবদিহির ক্ষেত্র তৈরি করা, প্রশাসনকে প্রশ্ন করার মামলার সুফল একেবারে কম নয়।
২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। দেড় দশকের বেশি সময়ে সংগঠনটি উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা করেছে ৩৩০টি। ৯৮ ভাগ মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ এসেছে। ৯০টি মামলায় রুলের ওপর চূড়ান্ত রায় এসেছে। ২৩০টি মামলায় রুল ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ এসেছে হাইকোর্ট থেকে। এসবের মধ্যে ঢাকার পাশের চার নদী রক্ষার মামলা, হাতিরঝিল নিয়ে মামলা, ঢাকায় পরিবেশ দূষণ, উচ্চশব্দের হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধের মামলা রয়েছে। এইচআরপিবির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনস্বার্থের মামলার পেছনের কারণ সুশাসনের ঘাটতি। যে কাজ প্রশাসনের করার কথা তা অনেক সময়ই হয় না। আইনজীবীদের পেশাগত মনোভাব হলো, মক্কেল ফি দেবে আর তারা মামলা পরিচালনা করবে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক কিছু করা যায়। তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল আদালতকে সামনে রেখে জনস্বার্থে মামলার নামে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে কাজ করে। সতর্ক না হলে মামলার মর্যাদা লঙ্ঘিত হবে।
গত সাত বছরে তেল, গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ইস্যুতে উচ্চ আদালতে অন্তত ২২টি মামলা করেছে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব)। প্রায় সবগুলোতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ হয়েছে বলে জানান ক্যাবের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, জনস্বার্থের মামলায় মানুষের অধিকার রক্ষার, আদালতে উপস্থাপন করার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক, থানা হেফাজতে কাউকে নির্যাতন করা হলো। তখনই উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। প্রমাণ করতে হয়, ওই ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা মুখে বলি জনগণের রাষ্ট্র। কিন্তু জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্র ভূমিকা কতটুকু? রাষ্ট্রীয় কাজে সীমাবদ্ধতা ও উদাসীনতা দুটোই আছে। আমাদের মতো দেশে এসব স্বাভাবিক বিষয়। প্রশাসন সব কাজ করবে না জেনেই মানুষকে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন অনেক আইনজীবী।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ল লাইফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ল ল্যাব ফাউন্ডেশন, চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন প্রভৃতি সংগঠন জনস্বার্থে মামলা করছে নিয়মিত। বিএনডব্লিউএলএ নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতা, যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ রোধ প্রভৃতি ইস্যুতে ৫০টি মামলা করেছে গত দুই দশকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রায় ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে এসেছে বলে জানান সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংবিধান আমাকে যে অধিকার দিয়েছে তা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। অনেক ক্ষেত্রেই তা পালিত হয় না। তখনই আমরা মামলা করি, সাংবিধানিক অধিকার পূরণে সরকারকে বাধ্য করার জন্য।
জনস্বার্থে মামলার উদ্যোগ খুব ভালো কাজ বলে মনে করি। কেননা এটা করা হয় জনগণের স্বার্থে মানুষের ভালোর জন্যই কিন্তু আদালত রায় ও আদেশ দিয়ে থাকেন। মানুষ যাতে অন্যায়ভাবে সাজা না পায়, কেউ যেন বিনা দোষে হাজতবাস না করেন, কাউকে যেন নির্যাতনের শিকার হতে না হয়, কেউ যেন তার ন্যায্য সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন। মোদ্দা কথা হলো এটা কিন্তু ব্যক্তি কিংবা সংগঠনের নিজের স্বার্থে নয়, দেশের ও রাষ্ট্রের স্বার্থে এ মামলাগুলো হচ্ছে। মামলাটিতে জয়ী হয়েছে। এ জন্য তাদের পরিশ্রম করতে হয়েছে। কখনো কখনো ঝুঁকিও নিতে হচ্ছে। আদালতও মনে করেন, এটা যেহেতু জনগণের স্বার্থের বিষয় তাই খুব বেশি ব্যতিক্রম না হলেই তারা আদেশ ও রায় দেন। এখানে আইনজীবীদের বড় একটা ভূমিকা রয়েছে। এই যে পুরো প্রক্রিয়াটি সত্যিকার অর্থে আমি বলব, এটি সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। হ্যাঁ, জনস্বার্থের মামলাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিগত চিন্তা ও গণমাধ্যমে প্রচারের আলোয় আসতে চান। কিন্তু এ প্রবণতা খুব বেশি নয়।
কথা হচ্ছে, যে কাজটা রাষ্ট্রের প্রশাসনের করার কথা সেই কাজটা আইনজীবীরা কেন করেন? এ ক্ষেত্রে মানুষের জন্য কাজ করতে রাষ্ট্রের সমস্যা আছে, এটা বলব না। কখনো কখনো রাষ্ট্র হয় তো মনে করে যে, এমনিতেই অনেক মামলা, অনেক সমস্যা। অনেক দায়িত্ব। এতকিছু করতে গেলে দায়িত্বের মধ্যে যদি আরও দায়িত্ব নেওয়া হয় তাহলে সঠিকভাবে কাজ করা যাবে কি না এটা নিয়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ এক ধরনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন। আর এ কারণেই নানা সময়ে নানা কারণে উদাসীতার পরিচয় দেওয়া হয়। আমি বলব, রাষ্ট্র যেমন মানুষের জন্য তেমনি মানুষের প্রয়োজনে প্রশাসন ও নির্বাহী বিভাগের সবসময় তৎপর থাকা উচিত।
লেখক : জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে সরকারের নির্বাহী আদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। পাশাপাশি গ্যাসের বিতরণ চার্জও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারির সম্ভাবনা আছে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘আমরা বলেছি প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে। সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’ চলতি সপ্তাহে দাম বাড়ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাড়তে পারে, কিন্তু সেটা আমি জানি না।’ এর আগে ১২ জানুয়ারি গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পর ১৭ জানুয়ারি অস্বাভাবিক হারে সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, যা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কার্যকর হবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৫০ পয়সা করে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
মন্ত্রণালয়ের হাতে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা দেওয়ার আগে গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। তখন সাধারণ মানুষের কথা কিছুটা বিবেচনা করার সুযোগ থাকলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব করা হয় না। দফায় দফায় এভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দৈনন্দিন ব্যয় বাড়বে; যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার যেভাবে বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করছে, তা ভোক্তার জন্য এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত তথা সামগ্রিক দেশের জন্য অশনিসংকেত। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত পুরোপুরি কারিগরি। এর সঙ্গে আইনের নানা বিষয় জড়িত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সই করা ছাড়া তারা কিছুই করে না। এভাবে তো সাধারণ মানুষের কল্যাণ সম্ভব নয়। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করত বিধায় সেখানে কিছুটা হলেও বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর জবাবদিহি থাকত। তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল। সেখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল বিধায় কোম্পানিগুলোও যেনতেন হিসাব উপস্থাপন করে মূল্যহার বাড়ানোর ব্যাপারে কঠিন চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন হয়। কিন্তু আইন সংশোধনে সেই সুযোগ আর থাকল না। তড়িঘড়ি করে করা এ সংশোধন অসাধু ব্যবসাকে সুরক্ষা দেবে।
সরকারের নির্বাহী আদেশ আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হস্তক্ষেপের কারণে লাইসেন্সসংক্রান্ত কাজের পাশাপাশি সীমিত পরিসরে বিরোধ মীমাংসা ছাড়া আর কিছুই এককভাবে করতে পারছে না জ্বালানি খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কমিশনের সদস্যরা এ ব্যাপারে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে কমিশনের চলমান প্রক্রিয়া বাতিল করে ২৯ জানুয়ারি বিইআরসি এ-সংক্রান্ত যে আদেশ দিয়েছে, তাতে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে।
বিইআরসি সূত্রমতে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করে কমিশন। এরপর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি-উত্তর লিখিত মতামত কমিশনে দাখিলের সুযোগ দেওয়া হয়। কমিশনের এই কার্যক্রম চলা অবস্থায় ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। জানুয়ারি থেকেই বিদ্যুতের নতুন মূল্য কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়। সরকারের এমন নির্বাহী আদেশের ফলে কমিশন বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চলমান কার্যক্রম নিষ্পত্তির ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সবগুলো গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি প্রতি বছর মুনাফা করলেও বিতরণ চার্জ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে কোম্পানিগুলো এ ধরনের আবেদন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে দিলেও আইন সংশোধনের কারণে জ¦ালানি বিভাগে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় চার্জ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শিগগির এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি হতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তাদের বিতরণ চার্জ ৫ গুণ বৃদ্ধি করে প্রতি ঘনমিটারে ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে প্রায় ৬৪ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
যদিও প্রতিষ্ঠানটি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪৫ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তিতাসের মতো অন্যান্য গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি প্রতি বছরই মুনাফা করছে। সর্বশেষ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের মুনাফার পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির শুনানিতে গ্যাসের বিতরণ চার্জ বাতিল করার সুপারিশ করেছিল বিইআরসির কারিগরি কমিটি। এতে বলা হয়েছিল, সবগুলো গ্যাস বিতরণ কোম্পানি মুনাফা করছে। ফলে তাদের বিতরণ চার্জ আদায় না করলেও মুনাফায় থাকবে। এ কারণে শুধু কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিতরণ চার্জ ২৫ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯ পয়সা করার সুপারিশ দেওয়া হয়। অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির বিতরণ চার্জ বিলুপ্ত করার সুপারিশ দেওয়া হয়।
এবারের অমর একুশে বইমেলায় বই প্রকাশ ও বিক্রির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা করছেন প্রকাশক-লেখকরা। কাগজের দাম দ্বিগুণ এবং বই মুদ্রণের অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম প্রায় দেড়গুণের বেশি বেড়ে যাওয়ায় প্রকাশকরা অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কম বই প্রকাশ করছেন। পা-ুলিপি প্রস্তুতির পরও প্রকাশ করতে পারছেন না অনেক লেখক। এসবের পাশাপাশি বইমেলার স্টলের জায়গার দাম ও নির্মাণ ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে এবং প্রকাশনা ব্যবসায় মন্দার আশঙ্কায় মেলায় অংশ নিচ্ছে না অনেক প্রকাশনা সংস্থাও।
বইমেলার এমন চিত্র ভবিষ্যৎ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন লেখক-প্রকাশকরা। তারা বলছেন, এমনিতেই গত দু’তিন বছর ধরে বই বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তার ওপর এবার বই বিক্রি ও প্রকাশ কম হলে মনন ও সৃজনশীল লেখক-পাঠক তৈরিতে ও সৃজনশীল সাহিত্য বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে লেখক, গবেষক ও শিক্ষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাগজের দাম বৃদ্ধির প্রভাব শুধু বইমেলা, নতুন বই প্রকাশ কিংবা পাঠক-লেখকের মনন-সৃজনশীলতায় পড়ে না; সামগ্রিকভাবে দেশ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর পড়ে।
অবশ্য মেলায় মানসম্পন্ন ভালো বই প্রকাশের পক্ষে এই লেখক ও গবেষক। তিনি বলেন, বইমেলায় বই কম বের হোক, ভালো বই বের হোক। কম বই বের হলে খারাপ কিছু দেখি না। যদিও দাম বাড়বে, কিন্তু বই বিক্রি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করি। কারণ গত দু’বছর লোকজন সেভাবে মেলায় আসতে পারেনি। এবার আশা করি, সেদিক থেকে এবার ভারসাম্য রক্ষা হতে পারে।
একইভাবে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি, একুশ বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক এবং পুঁথি নিলয় প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বই বিক্রি ও বই প্রকাশের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রভাব আমাদের সৃজনশীলতা মননশীলতায় পড়বে। সংস্কৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে মননশীল পাঠক ও লেখক তৈরি এবং নতুন সাহিত্য বিকাশ সবকিছু নিয়েই একটা সংকটের মধ্যে পড়ব আমরা।
এমন অবস্থায় আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন চলছে প্রকাশকদের ব্যস্ত সময়। স্টল নির্মাণ ও সাজসজ্জায় রাতদিন কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের আগে সব কাজ সম্পন্ন হবে বলে একাডেমির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বই প্রকাশ ও বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসবে : শ্যামল পাল বলেন, বিলাসী লোকজন বই কেনে না, পাঠক বই কেনে। পাঠকের বই কেনার একটা বাজেট থাকে। অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে এবার সেই বাজেট কমবে। তার ওপর বইয়ের দাম বেড়েছে। ২০০ টাকার বই ৩০০ টাকা, ৪০০ টাকার বই ৬০০ টাকা হচ্ছে। তাতে বই বিক্রি কমে যাবে। আবার নতুন বই প্রকাশের সংখ্যাও এবার কমে যাবে। একটা বই বের করতে বিগত বছরগুলোতে যদি ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হতো, এবার সেটা ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ পড়বে। সেক্ষেত্রে প্রকাশকদেরও তো পুঁজির সংকট আছে।
নিজের প্রকাশনা সংস্থা থেকেও বই প্রকাশ কম হচ্ছে জানিয়ে এই প্রকাশক বলেন, এবার আমি ৫২-৫৫টা বই করছি। অথচ প্রতি বছর ১৩০-১৩৫টা বই করি। অর্থাৎ বই প্রকাশ ও বিক্রির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে এবার। বই প্রকাশ নিয়ে এবার তাড়াহুড়ো নেই। বই প্রকাশ করতে আগের বছরগুলোতে প্রকাশকদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস ছিল, এবার সেটা নেই।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পরপর দুইবারের সাবেক সভাপতি এবং আকাশ প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী আলমগীর সিকদার লোটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমরা সারা বছরই বই প্রকাশ করি। মেলায় গড়ে ২৫টির মতো বই বের হয়। এবার সেখানে ১৫টা প্রকাশ হতে পারে। কারণ কাগজের দাম চড়া। আবার চড়া দামেও প্রয়োজন অনুযায়ী কাগজ পাচ্ছি না।
প্রকাশনা সংস্থা ভাষাচিত্রের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল বলেন, বইয়ের সংখ্যা এবার অবশ্যই কমে এসেছে। আমি নিজেও বইমেলায় ৭০-৮০টা বই করতাম, সেখানে এবার ২০টা বই করব কি না সন্দেহ আছে। পা-ুলিপি তৈরি আছে। কিন্তু সাহস পাই না। অসংখ্য প্রকাশক বই প্রকাশ কমিয়ে দিয়েছেন। গত বছর যে বইটার দাম ছিল ২০০ টাকা, সেটার দাম এবার হবে ৩৫০-৪০০ টাকা। স্বভাবতই এত টাকা দিয়ে এরকম চিকন একটা বই আমাদের পাঠককরা কিনবেন বলে মনে হয় না।
বেহুলা বাংলার প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী চন্দন চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর আমরা শতাধিক বই করি। গত বছর করেছিলাম ১২৭টা বই। এইবার খুব বেশি হলে ৭০-৮০টা করব। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ কমে যাবে। এটার কারণ কাগজের দাম বেড়েছে। প্লেট, বোর্ডসহ বইয়ের জন্য যে সব জিনিস লাগে, সেগুলোর দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বছরজুড়ে বই প্রকাশনাতেও ভাটা পড়েছে। অর্ধেক হয়ে গেছে বই বিক্রি।
কাগজের দাম নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেই : অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সাংস্কৃতিক জিডিপি বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু সেই সাংস্কৃতিক জিডিপির পেছনে সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরকার এটাতে মনোযোগ দেয়নি। সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে সংস্কৃতির দ্বারা। সাংস্কৃতিক জিডিপি বৃদ্ধি একটা হতে পারত কাগজের মূল্য নিয়ন্ত্রণ অথবা সুলভ মূল্যে দেওয়া। সরকার যদি ঋণখেলাপিদের এত সুযোগ-সুবিধা দিতে পারে, তাহলে সামান্য একটা বইমেলায় ৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দিত, তা হলে কী হতো। এই জিনিসগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে দেখা উচিত ছিল। প্রকাশকদের বারবার আলাপ-আলোচনা করা উচিত ছিল। সংস্কৃতির প্রতি প্রধানমন্ত্রী সবসময় নমনীয়। তার কাছে তো জিনিসটা পৌঁছাতে হবে।
এ ব্যাপারে শ্যামল পাল বলেন, কাগজের দামটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা বারবার সরকারকে বলেছি, প্রতিযোগী কমিশনকে বলেছি, বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়েছি। দিকনির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। কাগজ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তার ওপর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে কাগজের দাম আরেক ধাপ, প্রায় ২০ শতাংশ দাম বেড়ে গেল।
মুদ্রণের সবকিছুর দাম বেড়েছে : মুদ্রণের সব কিছুর দাম বেড়েছে- জানিয়ে শ্যামল পাল বলেন, যে কালির দাম ছিল ১৬০০-১৮০০ টাকা সেট, সেই কালি হয়েছে ৪ হাজার টাকা সেট। প্লেটের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। মুদ্রণের জন্য যে সব জিনিস আমদানি করতে হয়, সেগুলোর সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রকাশক সোহেল খন্দকার বলেন, গত বছর যে বই পেস্টিং করেছি ৩০ টাকা দিয়ে, এবার তাকে দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা। প্লেটেও সমহারে বেড়েছে। কালি ও কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রিন্টিং রেট বেড়েছে। ছাপানো খরচ যেটা ছিল ৩০০ টাকা, সেটাতে ৫০ টাকা বেড়েছে। অন্যগুলো এক-তৃতীয়াংশ থেকে এক-চতুর্থাংশ বেড়েছে। বাঁধাইয়ের বোর্ড কাগজ ও কাপড়েরও দাম বেড়েছে।
অনেক প্রকাশক অংশ নিচ্ছেন না : আকাশ প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী আলমগীর সিকদার লোটন বলেন, বাংলাবাজারের অনেক নামকরা প্রকাশক এবার মেলায় যাচ্ছেন না। এর মধ্যে একটি আছে যারা বাম রাজনীতির বই বের করেন। আবার রাজনীতিসহ মূলধারার বই বের করেন এমন কিছু প্রকাশকও স্টল নেননি। কাগজের দাম তো বেড়েছেই। তার ওপর স্টলের জায়গার দাম বেশি হয়েছে। স্টল বানাতে যেসব জিনিসপত্র লাগবে সেগুলোর দামও বেড়েছে।
ভাষাচিত্রের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল বলেন, ৫-১০ বছর আগে প্রকাশকরা বইমেলায় স্টল নিলে, তাদের পরবর্তী ছয় মাস আর কিছু করতে হতো না, তাদের এত লাভ হতো। কিন্তু এবার অন্তত ১০০ প্রকাশক বইমেলায় স্টল নিচ্ছেন না। এটা গত দুই বছর ধরেই হচ্ছে। কারণ বইমেলায় স্টল নিলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অর্থাৎ প্রকাশনা সংস্থাগুলো বইমেলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
তবুও বইমেলা : গত দু’বছরও করোনার কারণে প্রকাশনা ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। তারা বলেছেন, তারপরও চেতনার জায়গা থেকে তারা বইমেলায় অংশ নিয়েছেন এবং এবারও নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে আলমগীর সিকদার লোটন দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেলা থেমে থাকবে না। একুশের মেলা বাঙালির একটা চেতনার জায়গা। তারা মেলায় যাবেন। কিন্তু বই অতটা কিনতে পারবেন না। কারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই। সে হিসেবে বই বিক্রি কমে যাবে।
প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, এবারের বইমেলা নিয়ে এখনো আমরা দোদুল্যমানতায় আছি। একই সঙ্গে আশাবাদী, আবার উদ্বেগেও আছি। আশাবাদী এই কারণে যে, এবারের বইমেলার করোনার কোনো প্রভাব নেই, যেটা গত দুই বছর ছিল। মেলার সময় ও স্টল বিন্যাস নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। এবার মেলায় প্রচুর লোক আসবে। এইবারের মেলার ডিজাইনটা সুন্দর হয়েছে। কিন্তু শঙ্কার জায়গা হলো নতুন বই বিক্রি নিয়ে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনেএ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জে তোলপাড় চলছে। তার স্ত্রীর দাবি, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন তিনি আত্মগোপনে থেকে নাটক করছেন। এদিকে একটি অডিও রেকড ফাঁস হওয়ার পর গতকাল সোমবার আবু আসিফ টক অব দ্য টাউন হয়ে উঠেছেন।
আবু আসিফ আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) উপনির্বাচনে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা এবং এই আসন থেকে পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য বহিষ্কৃত নেতা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। আবু আসিফ মোটরগাড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কয়েক দিন আগে আসিফ অভিযোগ করেছিলেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তার ওপর প্রচন্ড চাপ আসছে। তার নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হয়রানি করাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও তিনি নির্বাচন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।
২৬ জানুয়ারি আসিফ অভিযোগ করেছিলেন, ২৫ জানুয়ারি রাত থেকে তার শ্যালক ও নির্বাচন পরিচালনাকারী কমিটির প্রধান সমন্বয় শাফায়েত হোসেন ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন। ওই দিনই রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মুসা মিয়াকে। যদিও পুলিশ বলেছে, মারামারির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত রবিবার বিকেল থেকে আশুগঞ্জে খবর ছড়িয়ে পড়ে আবু আসিফ নিখোঁজ। তার স্ত্রী মেহেরুন্নিছা রবিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানান, দুই দিন ধরে আমার স্বামী ঘরে ফেরেনি। আমাদের লোকজনও ভয়ে থাকছে। আসিফ আত্মগোপনে রয়েছেন কি না জানতে চাইলে মেহেরুন্নিছা বলেন, ‘আমার স্বামী আত্মগোপনে যাননি।’ এ বিষয়ে থানায় বা কোথাও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। আমিও ভয়ের মধ্যে আছি। দ্রুত একটা কিছু করব।’
তবে আবু আসিফ নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসিফের স্ত্রী এবং বাসার কেয়ারটেকারের মধ্যে ফোনালাপ বলে একটি অডিও ফাঁস হয়। যেখানে আসিফের স্ত্রীকে কেয়ারটেকারকে আসিফের জন্য জামাকাপড় গোছানোর নির্দেশ দিতে শোনা যায়। সেখানে একটি নারী কণ্ঠ, ‘ইফসুফ (কেয়ারটেকার) স্যার কই, স্যারের (আসিফ) কতগুলো জামাকাপড়, গেঞ্জি, প্যান্ট, শীতের কাপড়, জুতা মোজা ব্যাগে ভরে দিয়ে দে তাড়াতাড়ি। আরে তাড়াতাড়ি দে। কেউ যেন না জানে স্যার কই গেছে। ক্যামেরা বন্ধ করে দে। ক্যামেরার লাইন বন্ধ কর বাসার। স্যার গেলে আরও ১০ মিনিট পর ক্যামেরার লাইন খুলবে।
এমন কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর বিএনপি নেতা আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনে গেছেন, এ নিয়ে আলোচনা আরও ডালপালা মেলতে শুরু করে। এরপর থেকে সোমবার সারা দিন ফোন করলেও আসিফের স্ত্রী ফোন রিসিভ করেননি। আসিফের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
আসিফ নাটকের ঘটনায় বিব্রতবোধ করছেন তার নিকটাত্মীয় ও স্বজনরা। তারা নিখোঁজ বা আত্মগোপন কোনোটাই বলতে চান না।
আসিফের ভাতিজা ও আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের বলেন, ‘আমি সাত্তার সাহেবের (কলার ছড়ি) নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। চাচা আসিফের বিষয়ে কিছুই জানি না। আপনারা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিব্রতবোধ করি।’
তবে আবু আসিফের এ ঘটনাকে নাটক বলে আখ্যায়িত করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (১) এম এম তোফায়েল আলী রুবেল বলেন, ‘আসিফ নিজেই আত্মগোপন করে নাটকের জন্ম দিয়েছেন। নির্বাচনে আলোচনায় থাকার জন্যই তিনি এ কাজ করেছেন।’
আবু আসিফ নিখোঁজ নাকি আত্মগোপনে, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান। তিনি গতকাল বলেন, ‘আবু আসিফের বিষয়ে তার স্ত্রী বা পরিবারের কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তবে যেহেতু মিডিয়ায় খবর এসেছে, তাই আমরা স্থানীয়ভাবে খোঁজ-খবর নিচ্ছি তিনি কোথায় আছেন। আমরা তার বাসায় যাইনি বা আশপাশে ঘোরাফেরাও করছে না কেউ।
জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। এখন কেউ যদি নিজেকে লুকিয়ে রাখে, তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই।’
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. রহুল আমিন (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ জুন) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় মামলা করলে তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. রহুল আমিন উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ ভোর আনুমানিক ৬টায় দিকে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামে ১২ বছরের শিশুকে গোয়ালঘরের পেছনে ধর্ষণ করেন মো. রহুল আমিন। এবিষয়ে এতোদিন জানাজানি না হলেও ৪ জুন (রোববার) হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে কর্তবরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে বিষয়টি জানান। ভুক্তভোগী শিশুটি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’