
ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এত ঘন ঘন নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দফায় দফায় অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর প্রভাবে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গত সোমবার রাতে খুচরা ও পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তা প্রকাশ করা হয়। পাইকারি পর্যায়ে ৮ ও গ্রাহক পর্যায়ে ন্যূনতম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আজ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১তম বারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম। আর পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ১০ বার।
অতীতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সময় প্রান্তিক গরিব জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের খরচ তুলনামূলক কম বাড়ানোর দিকে নজর রাখা হতো। কিন্তু এবার তা বিবেচনায় না নেওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে বলে গত অক্টোবরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সরকার অবশ্য বলছে, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য এখন থেকে প্রতি মাসেই বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানি তেলের দামও সমন্বয়ের একটি প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ভুলনীতি ও কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এই সংকট তৈরি হয়েছে। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এই দাম বৃদ্ধি একেবারেই অযৌক্তিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ভালো বিকল্প থাকলেও সরকার সে পথে যায়নি। এখন বলা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ঘাটতি মেটাতে দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিকল্প পথের মধ্যে অন্যতম হলো দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। এটা করলে কম দামে জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতার সঙ্গে থাকা মানুষকারোরই এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। ভুল পথে পরিচালিত করছে। ফলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অবিরাম বাড়তেই থাকবে।’ তিনি মনে করেন, যাদের ক্ষতি হচ্ছে সেই সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ করার সামর্থ্য নেই। ফলে সরকার ও আইএমএফ সাধারণ মানুষের সহ্যসীমা পরীক্ষা করছে।
সাধারণত গণশুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস-বিদ্যুতের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর সরকার সেই আইন সংশোধন করেছে। ফলে এখন গণশুনানি ছাড়াই কমিশনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ১০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্রাহক পর্যায়ে আগামী মার্চে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে।
এর আগে বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি শুরু করে কমিশন। মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় ১২ জানুয়ারি খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ায়; যা জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হয়। এতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয় বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরে কমিশন তাদের মূল্য সমন্বয় কার্যক্রম বাতিল করে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ৫ দিনের মাথায় ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
তবে সর্বশেষ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ‘এটা নতুন করে বাড়ানো নয়, আগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’
এর আগে গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ইউনিটপ্রতি ৫.১৭ টাকা থেকে গড়ে ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়, যা ডিসেম্বরে কার্যকর হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গত বছর রেকর্ড হারে বাড়ে জ্বালানি তেলের দাম।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। যার পরিণতি ভয়াবহ। সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। কিন্তু এ জন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা দরকার। এই টাকা সমন্বয় করে গ্যাস-বিদ্যুতের যে দাম হবে তা সোনার চেয়েও দামি হবে। করোনায় এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজেহাল। তারা এই দাম বাড়ানোর চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।’
অতীতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় কৃষি সেচ এবং প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতি মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ। কিন্তু সরকারের নির্বাহী আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফলাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
আবাসিক গ্রাহকদের মতো বৃহৎ শিল্পের তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বৃদ্ধি করা হতো। কিন্তু সরকারের নির্বাহী আদেশে এ সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে।
নতুন দর অনুযায়ী, ক্ষুদ্র শিল্পে বিদ্যুতের ফ্লাট দাম ৯ টাকা ৪১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বৃহৎ শিল্পে এর দাম ৯ টাকা ৪৩ পয়সা। অন্যদিকে গত ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের যে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, সেখানে সার ও চা-শিল্প ছাড়া অন্য সব শিল্পের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চলতি মাস থেকে এই দর কার্যকর করা হবে।
অথচ কমিশনের গণশুনানির মাধ্যমে ১৪ বছরে ছয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় প্রতিবারই ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্পের জন্য আলাদা দাম নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু মন্ত্রণালয় এবার তা অনুসরণ করেনি। ফলে বড় শিল্পের গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৮৭ শতাংশ বাড়লেও ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের গ্যাসের দাম একলাফে প্রায় ১৭৯ শতাংশ বেড়েছে। এতে বড়দের চেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। বাড়তি দাম দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এমনিতেই গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কারখানায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে ক্রেতার ওপর। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
এদিকে কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সব সময়ই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহায় পাচ্ছেন না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা করা হয়েছে। কৃষিতে মধ্যমচাপে ফ্ল্যাট রেটে ৫ টাকা ৫১ পয়সা, অফপিকে ৪ টাকা ৯৭ পয়সা এবং পিকে ৬ টাকা ৮৯ পয়সা করা হয়েছে। অন্যান্য সব শ্রেণির গ্রাহকের বিদ্যুতের ব্যয়ও বিভিন্ন ধাপে বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি তেল, সার, বীজসহ অন্যান্য সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংকটে থাকা কৃষকের সংকট আরও বাড়বে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে।
কল্যাণপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আরিফ হোসেন বলছিলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিই দিশেহারা। এ পরিস্থিতিতে ১৮ দিনে দফায় দফায় যেভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো, তাতে সবকিছুর দাম আবার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। অথচ ১৮ মাস তো দূরের কথা, ৫ বছরেও এক টাকা বেতন বাড়েনি। দৈনন্দিন ব্যয় কাটছাঁট করতে করতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন খাবার খরচ জোগাড় করতেই তো অবস্থা কাহিল হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে কারা ক্ষমতায় যাবে, তার সিদ্ধান্ত নিতে জনগণকে ক্ষমতা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনার ফলে এবং দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কারণে দেশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তাই এখন কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারছে না।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও এর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ‘মার্শাল ল’ জারি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে এসে গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি। এই গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শক্তিকে আরও দৃঢ় করা এবং ক্ষমতায় কে যাবে না যাবে, জনগণই যেন তা নির্ধারণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আনয়নের ফলে দেশে একটা স্থিতিশীলতা এসেছে, কারণ দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। এখন আর অনির্বাচিত কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারছে না। যদিও সেটা দেশের তথাকথিত একশ্রেণির বুদ্ধিজীবীর অন্তজর্¦ালার কারণ। তারা কোনো দিন ভোটে জিততে পারবে না, রাজনীতি করতে পারবে না বা জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবার মতো সাহস তাদের নেই। কোনো মতে ক্ষমতায় কীভাবে যাবে তাই তারা সব সময় এই গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে। তাদের এই প্রচেষ্টা আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে ২১ বছর পর সরকারে এসে আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল; যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র ঘটনা। এ ছাড়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, জরুরি অবস্থা জারি বা মার্শাল ল নানা ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তনই হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের গত তিন মেয়াদের টানা শাসনের ফলে ২০০৯-২৩ বাংলাদেশ বদলে গেছে। এ সময় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রস্তাবে নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে বাদ দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে নির্বাচন কমিশন আইন পাসসহ নির্বাচন কমিশনের ব্যয় নির্বাহের বিষয়টাও স্বাধীন করে দেওয়া তার সরকারের পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত রংপুর সিটির মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে শপথবাক্য পাঠ করান এবং নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফা টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয়ী হন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে নির্বাচিত মেয়র ও সব কাউন্সিলরকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়ার সময় কে কোন দলের তা দেখিনি। মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখেছি। মুজিবের এই বাংলায় একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না, তা তার সরকার নিশ্চিত করবে।’
জনগণ যাতে সরকারের সেবা পায় তা নিশ্চিত করার জন্যই রংপুর বিভাগ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা এবং রংপুর অঞ্চল সব সময়ই ছিল দুর্ভিক্ষ বা মঙ্গাপীড়িত। সে জন্যই আমি চেয়েছি যে এখানে যদি একটা বিভাগ হয় এবং সেবা যদি জনগণের দোরগোড়ায় আমরা পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে মানুষ ভালো থাকবে।’
এরপর রংপুর সিটি করপোরেশন করে দিয়ে তার সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পেরও একটি খতিয়ান তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। রংপুর সিটির ৮টি প্রকল্পে ১ হাজার ১৭৩ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কোন দলের মেয়র, সেটা কিন্তু দেখি নাই। আমরা কিন্তু মানুষের জন্যই কাজ করেছি। এটাই হলো বাস্তব কথা।’ তিনি এ সময় করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। বাসস
বাংলাদেশে দুর্নীতি আরও বেড়েছে। বিশে্বর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২। গত বছর ছিল ১৩তম অবস্থানে। এ বছর একধাপ অবনমন হয়েছে। দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২২-এ এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বিভিন্ন দেশের দুর্নীতির সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের ওঠানামা প্রতিবছরই হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অবস্থানের একধাপ অবনতি এবং গত এক দশকে স্কোর ও অবস্থানের কার্যকর উন্নতি না হওয়াকে হতাশাজনক বলেও উল্লেখ করেছে টিআইবি। দুর্নীতির দায়ে সব অভিযুক্তের কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিতে ছয় দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে গত এক দশকে সরকারি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা সত্ত্বেও কার্যকর কৌশল ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারায় সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থানের অবনমন ঘটেছে। সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, সিপিআই অনুযায়ী ০-১০০ স্কেলে টানা চার বছর স্কোর অপরিবর্তিত ২৬ থাকার পর ২০২২ সালের সূচকে আরও এক পয়েন্ট কমে সর্বনিম্ন ২৫ স্কোর (১২তম) করেছে বাংলাদেশ, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনি¤œ এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে চতুর্থ সর্বনিম্ন, যা অত্যন্ত বিব্রতকর। বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক এ কারণে যে ২০১২-২০২২ মেয়াদের দৃশ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে অবনমনের সম্ভাবনার সম্মুখীন।
সিপিআই উপস্থাপনায় বাংলাদেশের নিম্ন অবস্থানের ব্যাখ্যা তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র সবচেয়ে আলোচিত মেয়াদ। কিন্তু এই মেয়াদে এ ঘোষণাকে চর্চায় রূপ দেওয়ার যথাযথ কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। উল্টো দুর্নীতির ব্যাপকতা আরও ঘনীভূত ও বিস্তৃত হয়েছে। করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারি ক্রয় ও বিতরণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমেও দুর্নীতির অসংখ্য তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় বিদেশে অর্থ পাচারের আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে এলেও এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি; বরং এর জন্য যারা দায়ী তাদের জন্য বিচারহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে অর্জিত ক্ষমতার অবস্থানকে অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিকতায় রূপান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ব্যাপকতর হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈশি^ক দুর্নীতির পরিস্থিতি তথ্য তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের সিপিআই অনুযায়ী, সার্বিকভাবে বৈশি^ক বিবেচনায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ১৮০টির মধ্যে ১০৯টি দেশ বৈশি্বক গড় ৪৩-এর কম স্কোর করেছে। সূচকে অন্তর্ভুক্ত দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ১২২টি দেশের স্কোর ৫০-এর নিচে, যার অর্থ এসব দেশে দুর্নীতির মাত্রা উদ্বেগজনক। ২০২১ সালের তুলনায় ৭৩টি দেশের স্কোর কমেছে। এর মধ্যে ২৬টি দেশ তাদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর করেছে। যাদের স্কোর কমেছে, তাদের মধ্যে অনেক এমন দেশ রয়েছে, যারা সূচকে তুলনামূলক উচ্চতর অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একধরনের অসাধু চক্র বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচারের মাধ্যমে সম্পদ আহরণ ও বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছে এবং প্রকারান্তরে বৈশি^কভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ যারা দুর্নীতির তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী তথ্য প্রকাশ, দুর্নীতিবিরোধী চাহিদা সৃষ্টি ও তা প্রতিরোধে যারা যুক্ত, তাদের জন্য প্রতিকূল ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিপিআই সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০-১০০-এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। ‘০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়। সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশই এখন পর্যন্ত শতভাগ স্কোর পায়নি; অর্থাৎ দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বনিম্ন এমন দেশগুলোতে কম মাত্রায় হলেও দুর্নীতি বিরাজ করে।
মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তার মুখের বিষ তখন উগরে ওঠে এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির নেতাদের শক্তি কমে আসছে, দম ফুরিয়ে আসছে। দম ফুরিয়ে গেছে বলে লাফালাফি বন্ধ করে এখন নীরব পদযাত্রা। কেউ মারা গেলে যেমন নীরব পদযাত্রা হয়, বিএনপির পদযাত্রাটা অনেকটা একইরকম। এ দিয়ে সরকার পতনের স্বপ্ন ভুয়া।’ দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও অগ্নি সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এক শান্তিসমাবেশে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তিব্বত কলোনি বাজার এলাকায় ঢাকা এ সমাবেশের আয়োজন করে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনাদের আন্দোলনের কী খবর? কী খবর? সবাই বলে ভুয়া। সরকার পতন, ১০ তারিখের লাল কার্ড, বিএনপির ৫৪ দল, বিএনপির ২৭ দফা, ১০ দফা, ১৪ দফা, অবশেষে পদযাত্রা, সবই ভুয়া।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক রহমান রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গিয়ে হুঙ্কার দিচ্ছেন টেক ব্যাক বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আলো থেকে আর অন্ধকারে ফিরে যাবে না। বাংলাদেশে রিমোট কন্ট্রোলে আন্দোলন হবে না। বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার সব রঙিন খোয়াব অচিরেই কর্পূরের মতো উড়ে যাবে।
আগামীকাল দেশের ৫টি আসনের উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে উল্লেখ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘মাগুরা মার্কা ফ্রি স্টাইলে নির্বাচন আর হবে না। আগামীকাল নির্বাচন নির্বাচনের মতোই হবে। আওয়ামী লীগের লোকদের সমর্থন দেওয়ার সুযোগ আছে। আমরা সমর্থন দিয়েছি, তার মানে এই নয় যে, নির্বাচন অন্য রকম হবে। আগামীকালকের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। মির্জা ফখরুল কালকের নির্বাচন দেখুন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএম মান্নান কচি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে এসে মামলা মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা কোনোদিন পালাননি। আমাদের নেত্রী পালাননি। আপনি (তারেক রহমান) ইংল্যান্ডে বসে ষড়যন্ত্র না করে দেশে আসুন, সাহস থাকলে দেশে আসুন। দেশে এসে মামলা ফেস করুন। এদেশের মানুষ দেখতে পারবে কী করেছিলেন আপনি।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে জন্মগ্রহণ করে যে দল সেই দল আবার জনগণের কাছে ভোট চায়। তারা নির্বাচনে আসা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’ তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কেউ হামলা করলে তার জবাব দেওয়া হবে।
রাজধানীতে বিএনপির পদযাত্রা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতার সমালোচনার জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারকে ও ক্ষমতাসীন দলকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনাদের সময় শেষ। আগামীতে হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বাংলাদেশ। আমরা আপনাদের বিদায়ের অগ্রিম শোভাযাত্রা হিসেবে এই পদযাত্রা করছি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবি আদায়ে তৃতীয় দিনের পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধনপূর্ব বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
আজ ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। গত শনিবার বাড্ডা থেকে রামপুরা হয়ে মালিবাগ হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়ে শ্যামপুর পর্যন্ত যায়, পালন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
গতকাল দুপুর ১২টা থেকে নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালের কাছে জড়ো হয়। তারা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। সে সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দেয় তারা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে শেষ হয় পদযাত্রা।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আওয়মী লীগ ভয় পেয়ে আমাদের পদযাত্রার সমালোচনা করছে। আমরা বলতে চাই, আপনাদের সময় শেষ। আগামীর বাংলাদেশ হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের। প্রস্তুতি নিন। এই পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা আপনাদের অগ্রিম বিদায়ের শোভাযাত্রা করছি।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা মনে করেছিলেন মামলা দিয়ে বিএনপিকে ঘরে বসিয়ে দেবেন। বিএনপি ও জনগণ প্রমাণ করেছে, তারা বসে যায়নি বরং আপনাদের বিদায় করার জন্য রাস্তায় নেমেছে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সব ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দেশের কিছুই আর মেরামত করতে পারবে না। তাদের বিদায় যত দ্রুত হবে জনগণের ও দেশের তত মঙ্গল। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব বিএনপির। কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক। খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তিনিই করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যারা ধ্বংস করেছে তারা কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। তাই এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করছে। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, লুটপাটের কারণে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। তারপরও সরকার বলে, অর্থনীতির সবদিক ভালো। তাহলে দ্রব্যমূল্য বাড়ে কেন? বিদ্যুতের দাম বাড়ে কেন? ১৯ দিন আগে তারা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল, এখন আবার ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। আবার বলেছে, মাসে মাসে নাকি দাম বাড়ানো হবে। তার মানে সরকারের হাতে টাকা নেই। জাহাজ এসে বসে থাকে, টাকা দিতে পারে না বলে মাল খালাস হয় না। সরকারকে বিদায় করতে হবে। দ্রুত আমরা এই সরকারকে বিদায় করতে সক্ষম হব।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, নাজিমুদ্দিন আলম, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও সদস্য সচিব মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো মেরুদন্ডে জোড়া লাগা শিশুর অস্ত্রোপচারের প্রথম ধাপ সফলভাবে শেষ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা। গত ২৯ জানুয়ারি রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে নুবা-নাহা নামের ৯ মাস ১২ দিনের শিশুর এই অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচার দলের নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নাবার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী চারটি ডিভাইস ‘এক্সপান্ডা’ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ছয় ঘণ্টা চলা এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সামন্তলাল সেন, বিএসএমএমইউর নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন, অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বণিকসহ আরও ১০ জন চিকিৎসক।
অস্ত্রোপচারের পর নুবা-নাহা এখন ভালো আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সাবধানতার জন্য শিশু দুটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাই কেয়ার ইউনিট এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসক ও নুবা-নাহার বাবা-মা সন্তানদের সুস্থতার জন্য দেশের মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার সব খরচ প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। তিনি নুহা ও নাবার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন। তিনি শিশু দুটির যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। চিকিৎসার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নুহা ও নাবা ভালো আছে। আশা করছি চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হবে। তাদের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করছি।’
তৃতীয় ধাপে আলাদা : অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে অস্ত্রোপচার দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। আরও দুটি অস্ত্রোপচার হবে। তৃতীয় ধাপের অস্ত্রোপচারে আমরা বাচ্চা দুটিকে আলাদা করার চেষ্টা করব। প্রথম ধাপ অস্ত্রোপচার শেষে বাচ্চা দুটি ভালো আছে। এ ধরনের রোগী খুবই স্পর্শকাতর, জটিল। প্রতিটা ধাপেই নানা ধরনের বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়।’
এ ধরনের অস্ত্রোপচার বাংলাদেশে প্রথম বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মেরুদন্ডে জোড়া লাগানো শিশুর অস্ত্রোপচার এই প্রথম এবং সেটা করছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরাই। এ রকম রোগী বাংলাদেশে আর দেখা যায়নি। এর আগে বাংলাদেশে মাথায় জোড়া লাগানো শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সেটাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে হয়েছিল। তিনি হাঙ্গেরি থেকে প্রায় ৩০-৪০ জন চিকিৎসক দল এনে সিএমএইচে করিয়েছেন। পেটে পেটে জোড়া লাগানো শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলেই। ওই শিশুগুলো ভালো আছে। এবার করলাম আমরা। আশা করছি পারব।’
তৃতীয় ধাপে বাচ্চা দুটিকে আলাদা করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপ ভালোভাবেই হয়েছে। চূড়ান্তভাবে যখন বাচ্চা দুটিকে আলাদা করব, জোড়া লাগানো দুটি স্পাইনাল কর্ড আলাদা করতে হবে। সেটা খুব কঠিন।’
শঙ্কা-সফলতা দুটোই আছে : এ ধরনের অস্ত্রোপচারের চূড়ান্ত ফল কী হতে পারে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘অপারেশনের পর দেখা যায় একটা বাচ্চা খারাপ হয়ে যায়। মরেও যেতে পারে। আবার পঙ্গুও হয়ে যেতে পারে। এ রকম ঝুঁকিও আছে। কোনো কোনো জায়গায় দেখা গেছে যে দুটি বাচ্চাই খারাপ হয়ে যায়। আবাার কোথাও কোথাও দেখা গেছে, একটা ভালো থাকে, আরেকটা খারাপ হয়ে যায়। আবার এমনও হয় একটা বাচ্চা ভালো থাকে। আরেকটা বেঁচে থাকে, কিন্তু পঙ্গুত্ব দেখা দেয়, হাত-পা নাড়াতে পারে না। অবশ হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশে এমনটাই ঘটছে। বাংলাদেশে এর আগে এ রকম বাচ্চার আর অস্ত্রোপচার হয়নি। বিভিন্ন দেশে যারা যারা করেছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
চূড়ান্ত ধাপের অপেক্ষায় বাবা-মা : অস্ত্রোপচারের পর গতকাল নুহা-নাবার বাবা আলমগীর হোসেন রানার সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কাটাকাটি করার কারণে বাচ্চা দুটির ব্যথা আছে। শরীর নড়াচড়া করতে পারে না। একটু জ¦রও এসেছে। কান্নাকাটি করে। ওষুধ চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছে। এ ধরনের অস্ত্রোপচার বাংলাদেশে প্রথম এবং সেটা আমাদের শিশুদের মাধ্যমে হচ্ছে। অপারেশন সফল হলে সবার কষ্ট সফল হবে।’
তিনি জানান, জন্মের কিছুদিন পর থেকেই তিনি, তার স্ত্রী ও মা বিএসএমএমইউতে বাচ্চা দুটির পাশে আছেন। প্রথম আট মাস নিজের খরচেই চলতে হয়েছে তাদের। সে সময় প্রায় পাঁচ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। শুধু বাচ্চাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বেড ফ্রি ছিল।
আলমগীর হোসেন রানা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪ ডিসেম্বর আমাদের কেবিন দিয়েছে। এখন সরকারি খরচে চলছি। এখন বাচ্চার ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, খাবার ও আমাদের খাবার সব হাসপাতাল দিচ্ছে। এখন আমরাও কেবিনে থাকি।’
তিনি জানান, এটা তাদের দ্বিতীয় বাচ্চা। প্রথম একটা ছেলে আছে। নয় বছর বয়স। ডাক নাম নীড়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নে। তিনি পরিবহনশ্রমিক। একটি গাড়ির কাউন্টার ম্যানেজার।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।