
বাংলাদেশে দুর্নীতি আরও বেড়েছে। বিশে্বর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২। গত বছর ছিল ১৩তম অবস্থানে। এ বছর একধাপ অবনমন হয়েছে। দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২২-এ এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বিভিন্ন দেশের দুর্নীতির সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের ওঠানামা প্রতিবছরই হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অবস্থানের একধাপ অবনতি এবং গত এক দশকে স্কোর ও অবস্থানের কার্যকর উন্নতি না হওয়াকে হতাশাজনক বলেও উল্লেখ করেছে টিআইবি। দুর্নীতির দায়ে সব অভিযুক্তের কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিতে ছয় দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে গত এক দশকে সরকারি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা সত্ত্বেও কার্যকর কৌশল ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারায় সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থানের অবনমন ঘটেছে। সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, সিপিআই অনুযায়ী ০-১০০ স্কেলে টানা চার বছর স্কোর অপরিবর্তিত ২৬ থাকার পর ২০২২ সালের সূচকে আরও এক পয়েন্ট কমে সর্বনিম্ন ২৫ স্কোর (১২তম) করেছে বাংলাদেশ, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনি¤œ এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে চতুর্থ সর্বনিম্ন, যা অত্যন্ত বিব্রতকর। বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক এ কারণে যে ২০১২-২০২২ মেয়াদের দৃশ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে অবনমনের সম্ভাবনার সম্মুখীন।
সিপিআই উপস্থাপনায় বাংলাদেশের নিম্ন অবস্থানের ব্যাখ্যা তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র সবচেয়ে আলোচিত মেয়াদ। কিন্তু এই মেয়াদে এ ঘোষণাকে চর্চায় রূপ দেওয়ার যথাযথ কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। উল্টো দুর্নীতির ব্যাপকতা আরও ঘনীভূত ও বিস্তৃত হয়েছে। করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারি ক্রয় ও বিতরণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমেও দুর্নীতির অসংখ্য তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় বিদেশে অর্থ পাচারের আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে এলেও এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি; বরং এর জন্য যারা দায়ী তাদের জন্য বিচারহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে অর্জিত ক্ষমতার অবস্থানকে অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিকতায় রূপান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ব্যাপকতর হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈশি^ক দুর্নীতির পরিস্থিতি তথ্য তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের সিপিআই অনুযায়ী, সার্বিকভাবে বৈশি^ক বিবেচনায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ১৮০টির মধ্যে ১০৯টি দেশ বৈশি্বক গড় ৪৩-এর কম স্কোর করেছে। সূচকে অন্তর্ভুক্ত দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ১২২টি দেশের স্কোর ৫০-এর নিচে, যার অর্থ এসব দেশে দুর্নীতির মাত্রা উদ্বেগজনক। ২০২১ সালের তুলনায় ৭৩টি দেশের স্কোর কমেছে। এর মধ্যে ২৬টি দেশ তাদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর করেছে। যাদের স্কোর কমেছে, তাদের মধ্যে অনেক এমন দেশ রয়েছে, যারা সূচকে তুলনামূলক উচ্চতর অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একধরনের অসাধু চক্র বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচারের মাধ্যমে সম্পদ আহরণ ও বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছে এবং প্রকারান্তরে বৈশি^কভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ যারা দুর্নীতির তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী তথ্য প্রকাশ, দুর্নীতিবিরোধী চাহিদা সৃষ্টি ও তা প্রতিরোধে যারা যুক্ত, তাদের জন্য প্রতিকূল ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিপিআই সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০-১০০-এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। ‘০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়। সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশই এখন পর্যন্ত শতভাগ স্কোর পায়নি; অর্থাৎ দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বনিম্ন এমন দেশগুলোতে কম মাত্রায় হলেও দুর্নীতি বিরাজ করে।
ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এত ঘন ঘন নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দফায় দফায় অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর প্রভাবে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গত সোমবার রাতে খুচরা ও পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তা প্রকাশ করা হয়। পাইকারি পর্যায়ে ৮ ও গ্রাহক পর্যায়ে ন্যূনতম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আজ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১তম বারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম। আর পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ১০ বার।
অতীতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সময় প্রান্তিক গরিব জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের খরচ তুলনামূলক কম বাড়ানোর দিকে নজর রাখা হতো। কিন্তু এবার তা বিবেচনায় না নেওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে বলে গত অক্টোবরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সরকার অবশ্য বলছে, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য এখন থেকে প্রতি মাসেই বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানি তেলের দামও সমন্বয়ের একটি প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ভুলনীতি ও কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এই সংকট তৈরি হয়েছে। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এই দাম বৃদ্ধি একেবারেই অযৌক্তিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ভালো বিকল্প থাকলেও সরকার সে পথে যায়নি। এখন বলা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ঘাটতি মেটাতে দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিকল্প পথের মধ্যে অন্যতম হলো দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। এটা করলে কম দামে জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতার সঙ্গে থাকা মানুষকারোরই এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। ভুল পথে পরিচালিত করছে। ফলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অবিরাম বাড়তেই থাকবে।’ তিনি মনে করেন, যাদের ক্ষতি হচ্ছে সেই সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ করার সামর্থ্য নেই। ফলে সরকার ও আইএমএফ সাধারণ মানুষের সহ্যসীমা পরীক্ষা করছে।
সাধারণত গণশুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস-বিদ্যুতের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর সরকার সেই আইন সংশোধন করেছে। ফলে এখন গণশুনানি ছাড়াই কমিশনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ১০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্রাহক পর্যায়ে আগামী মার্চে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে।
এর আগে বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি শুরু করে কমিশন। মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় ১২ জানুয়ারি খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ায়; যা জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হয়। এতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয় বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরে কমিশন তাদের মূল্য সমন্বয় কার্যক্রম বাতিল করে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ৫ দিনের মাথায় ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
তবে সর্বশেষ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ‘এটা নতুন করে বাড়ানো নয়, আগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’
এর আগে গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ইউনিটপ্রতি ৫.১৭ টাকা থেকে গড়ে ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়, যা ডিসেম্বরে কার্যকর হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গত বছর রেকর্ড হারে বাড়ে জ্বালানি তেলের দাম।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। যার পরিণতি ভয়াবহ। সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। কিন্তু এ জন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা দরকার। এই টাকা সমন্বয় করে গ্যাস-বিদ্যুতের যে দাম হবে তা সোনার চেয়েও দামি হবে। করোনায় এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজেহাল। তারা এই দাম বাড়ানোর চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।’
অতীতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় কৃষি সেচ এবং প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতি মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ। কিন্তু সরকারের নির্বাহী আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফলাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
আবাসিক গ্রাহকদের মতো বৃহৎ শিল্পের তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বৃদ্ধি করা হতো। কিন্তু সরকারের নির্বাহী আদেশে এ সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে।
নতুন দর অনুযায়ী, ক্ষুদ্র শিল্পে বিদ্যুতের ফ্লাট দাম ৯ টাকা ৪১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বৃহৎ শিল্পে এর দাম ৯ টাকা ৪৩ পয়সা। অন্যদিকে গত ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের যে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, সেখানে সার ও চা-শিল্প ছাড়া অন্য সব শিল্পের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চলতি মাস থেকে এই দর কার্যকর করা হবে।
অথচ কমিশনের গণশুনানির মাধ্যমে ১৪ বছরে ছয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় প্রতিবারই ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্পের জন্য আলাদা দাম নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু মন্ত্রণালয় এবার তা অনুসরণ করেনি। ফলে বড় শিল্পের গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৮৭ শতাংশ বাড়লেও ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের গ্যাসের দাম একলাফে প্রায় ১৭৯ শতাংশ বেড়েছে। এতে বড়দের চেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। বাড়তি দাম দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এমনিতেই গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কারখানায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে ক্রেতার ওপর। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
এদিকে কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সব সময়ই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহায় পাচ্ছেন না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা করা হয়েছে। কৃষিতে মধ্যমচাপে ফ্ল্যাট রেটে ৫ টাকা ৫১ পয়সা, অফপিকে ৪ টাকা ৯৭ পয়সা এবং পিকে ৬ টাকা ৮৯ পয়সা করা হয়েছে। অন্যান্য সব শ্রেণির গ্রাহকের বিদ্যুতের ব্যয়ও বিভিন্ন ধাপে বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি তেল, সার, বীজসহ অন্যান্য সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংকটে থাকা কৃষকের সংকট আরও বাড়বে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে।
কল্যাণপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আরিফ হোসেন বলছিলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিই দিশেহারা। এ পরিস্থিতিতে ১৮ দিনে দফায় দফায় যেভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো, তাতে সবকিছুর দাম আবার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। অথচ ১৮ মাস তো দূরের কথা, ৫ বছরেও এক টাকা বেতন বাড়েনি। দৈনন্দিন ব্যয় কাটছাঁট করতে করতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন খাবার খরচ জোগাড় করতেই তো অবস্থা কাহিল হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে কারা ক্ষমতায় যাবে, তার সিদ্ধান্ত নিতে জনগণকে ক্ষমতা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনার ফলে এবং দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কারণে দেশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তাই এখন কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারছে না।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও এর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ‘মার্শাল ল’ জারি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে এসে গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি। এই গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শক্তিকে আরও দৃঢ় করা এবং ক্ষমতায় কে যাবে না যাবে, জনগণই যেন তা নির্ধারণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আনয়নের ফলে দেশে একটা স্থিতিশীলতা এসেছে, কারণ দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। এখন আর অনির্বাচিত কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারছে না। যদিও সেটা দেশের তথাকথিত একশ্রেণির বুদ্ধিজীবীর অন্তজর্¦ালার কারণ। তারা কোনো দিন ভোটে জিততে পারবে না, রাজনীতি করতে পারবে না বা জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবার মতো সাহস তাদের নেই। কোনো মতে ক্ষমতায় কীভাবে যাবে তাই তারা সব সময় এই গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে। তাদের এই প্রচেষ্টা আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে ২১ বছর পর সরকারে এসে আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল; যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র ঘটনা। এ ছাড়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, জরুরি অবস্থা জারি বা মার্শাল ল নানা ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তনই হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের গত তিন মেয়াদের টানা শাসনের ফলে ২০০৯-২৩ বাংলাদেশ বদলে গেছে। এ সময় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রস্তাবে নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে বাদ দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে নির্বাচন কমিশন আইন পাসসহ নির্বাচন কমিশনের ব্যয় নির্বাহের বিষয়টাও স্বাধীন করে দেওয়া তার সরকারের পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত রংপুর সিটির মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে শপথবাক্য পাঠ করান এবং নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফা টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয়ী হন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে নির্বাচিত মেয়র ও সব কাউন্সিলরকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়ার সময় কে কোন দলের তা দেখিনি। মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখেছি। মুজিবের এই বাংলায় একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না, তা তার সরকার নিশ্চিত করবে।’
জনগণ যাতে সরকারের সেবা পায় তা নিশ্চিত করার জন্যই রংপুর বিভাগ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা এবং রংপুর অঞ্চল সব সময়ই ছিল দুর্ভিক্ষ বা মঙ্গাপীড়িত। সে জন্যই আমি চেয়েছি যে এখানে যদি একটা বিভাগ হয় এবং সেবা যদি জনগণের দোরগোড়ায় আমরা পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে মানুষ ভালো থাকবে।’
এরপর রংপুর সিটি করপোরেশন করে দিয়ে তার সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পেরও একটি খতিয়ান তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। রংপুর সিটির ৮টি প্রকল্পে ১ হাজার ১৭৩ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কোন দলের মেয়র, সেটা কিন্তু দেখি নাই। আমরা কিন্তু মানুষের জন্যই কাজ করেছি। এটাই হলো বাস্তব কথা।’ তিনি এ সময় করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। বাসস
মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তার মুখের বিষ তখন উগরে ওঠে এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির নেতাদের শক্তি কমে আসছে, দম ফুরিয়ে আসছে। দম ফুরিয়ে গেছে বলে লাফালাফি বন্ধ করে এখন নীরব পদযাত্রা। কেউ মারা গেলে যেমন নীরব পদযাত্রা হয়, বিএনপির পদযাত্রাটা অনেকটা একইরকম। এ দিয়ে সরকার পতনের স্বপ্ন ভুয়া।’ দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও অগ্নি সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এক শান্তিসমাবেশে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তিব্বত কলোনি বাজার এলাকায় ঢাকা এ সমাবেশের আয়োজন করে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনাদের আন্দোলনের কী খবর? কী খবর? সবাই বলে ভুয়া। সরকার পতন, ১০ তারিখের লাল কার্ড, বিএনপির ৫৪ দল, বিএনপির ২৭ দফা, ১০ দফা, ১৪ দফা, অবশেষে পদযাত্রা, সবই ভুয়া।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক রহমান রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গিয়ে হুঙ্কার দিচ্ছেন টেক ব্যাক বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আলো থেকে আর অন্ধকারে ফিরে যাবে না। বাংলাদেশে রিমোট কন্ট্রোলে আন্দোলন হবে না। বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার সব রঙিন খোয়াব অচিরেই কর্পূরের মতো উড়ে যাবে।
আগামীকাল দেশের ৫টি আসনের উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে উল্লেখ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘মাগুরা মার্কা ফ্রি স্টাইলে নির্বাচন আর হবে না। আগামীকাল নির্বাচন নির্বাচনের মতোই হবে। আওয়ামী লীগের লোকদের সমর্থন দেওয়ার সুযোগ আছে। আমরা সমর্থন দিয়েছি, তার মানে এই নয় যে, নির্বাচন অন্য রকম হবে। আগামীকালকের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। মির্জা ফখরুল কালকের নির্বাচন দেখুন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএম মান্নান কচি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে এসে মামলা মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা কোনোদিন পালাননি। আমাদের নেত্রী পালাননি। আপনি (তারেক রহমান) ইংল্যান্ডে বসে ষড়যন্ত্র না করে দেশে আসুন, সাহস থাকলে দেশে আসুন। দেশে এসে মামলা ফেস করুন। এদেশের মানুষ দেখতে পারবে কী করেছিলেন আপনি।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে জন্মগ্রহণ করে যে দল সেই দল আবার জনগণের কাছে ভোট চায়। তারা নির্বাচনে আসা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’ তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কেউ হামলা করলে তার জবাব দেওয়া হবে।
রাজধানীতে বিএনপির পদযাত্রা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতার সমালোচনার জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারকে ও ক্ষমতাসীন দলকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনাদের সময় শেষ। আগামীতে হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বাংলাদেশ। আমরা আপনাদের বিদায়ের অগ্রিম শোভাযাত্রা হিসেবে এই পদযাত্রা করছি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবি আদায়ে তৃতীয় দিনের পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধনপূর্ব বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
আজ ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। গত শনিবার বাড্ডা থেকে রামপুরা হয়ে মালিবাগ হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়ে শ্যামপুর পর্যন্ত যায়, পালন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
গতকাল দুপুর ১২টা থেকে নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালের কাছে জড়ো হয়। তারা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। সে সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দেয় তারা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে শেষ হয় পদযাত্রা।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আওয়মী লীগ ভয় পেয়ে আমাদের পদযাত্রার সমালোচনা করছে। আমরা বলতে চাই, আপনাদের সময় শেষ। আগামীর বাংলাদেশ হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের। প্রস্তুতি নিন। এই পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা আপনাদের অগ্রিম বিদায়ের শোভাযাত্রা করছি।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা মনে করেছিলেন মামলা দিয়ে বিএনপিকে ঘরে বসিয়ে দেবেন। বিএনপি ও জনগণ প্রমাণ করেছে, তারা বসে যায়নি বরং আপনাদের বিদায় করার জন্য রাস্তায় নেমেছে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সব ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দেশের কিছুই আর মেরামত করতে পারবে না। তাদের বিদায় যত দ্রুত হবে জনগণের ও দেশের তত মঙ্গল। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব বিএনপির। কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক। খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তিনিই করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যারা ধ্বংস করেছে তারা কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। তাই এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করছে। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, লুটপাটের কারণে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। তারপরও সরকার বলে, অর্থনীতির সবদিক ভালো। তাহলে দ্রব্যমূল্য বাড়ে কেন? বিদ্যুতের দাম বাড়ে কেন? ১৯ দিন আগে তারা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল, এখন আবার ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। আবার বলেছে, মাসে মাসে নাকি দাম বাড়ানো হবে। তার মানে সরকারের হাতে টাকা নেই। জাহাজ এসে বসে থাকে, টাকা দিতে পারে না বলে মাল খালাস হয় না। সরকারকে বিদায় করতে হবে। দ্রুত আমরা এই সরকারকে বিদায় করতে সক্ষম হব।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, নাজিমুদ্দিন আলম, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও সদস্য সচিব মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো মেরুদন্ডে জোড়া লাগা শিশুর অস্ত্রোপচারের প্রথম ধাপ সফলভাবে শেষ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা। গত ২৯ জানুয়ারি রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে নুবা-নাহা নামের ৯ মাস ১২ দিনের শিশুর এই অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচার দলের নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নাবার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী চারটি ডিভাইস ‘এক্সপান্ডা’ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ছয় ঘণ্টা চলা এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সামন্তলাল সেন, বিএসএমএমইউর নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন, অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বণিকসহ আরও ১০ জন চিকিৎসক।
অস্ত্রোপচারের পর নুবা-নাহা এখন ভালো আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সাবধানতার জন্য শিশু দুটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাই কেয়ার ইউনিট এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসক ও নুবা-নাহার বাবা-মা সন্তানদের সুস্থতার জন্য দেশের মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার সব খরচ প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। তিনি নুহা ও নাবার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন। তিনি শিশু দুটির যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। চিকিৎসার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নুহা ও নাবা ভালো আছে। আশা করছি চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হবে। তাদের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করছি।’
তৃতীয় ধাপে আলাদা : অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে অস্ত্রোপচার দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। আরও দুটি অস্ত্রোপচার হবে। তৃতীয় ধাপের অস্ত্রোপচারে আমরা বাচ্চা দুটিকে আলাদা করার চেষ্টা করব। প্রথম ধাপ অস্ত্রোপচার শেষে বাচ্চা দুটি ভালো আছে। এ ধরনের রোগী খুবই স্পর্শকাতর, জটিল। প্রতিটা ধাপেই নানা ধরনের বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়।’
এ ধরনের অস্ত্রোপচার বাংলাদেশে প্রথম বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মেরুদন্ডে জোড়া লাগানো শিশুর অস্ত্রোপচার এই প্রথম এবং সেটা করছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরাই। এ রকম রোগী বাংলাদেশে আর দেখা যায়নি। এর আগে বাংলাদেশে মাথায় জোড়া লাগানো শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সেটাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে হয়েছিল। তিনি হাঙ্গেরি থেকে প্রায় ৩০-৪০ জন চিকিৎসক দল এনে সিএমএইচে করিয়েছেন। পেটে পেটে জোড়া লাগানো শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলেই। ওই শিশুগুলো ভালো আছে। এবার করলাম আমরা। আশা করছি পারব।’
তৃতীয় ধাপে বাচ্চা দুটিকে আলাদা করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপ ভালোভাবেই হয়েছে। চূড়ান্তভাবে যখন বাচ্চা দুটিকে আলাদা করব, জোড়া লাগানো দুটি স্পাইনাল কর্ড আলাদা করতে হবে। সেটা খুব কঠিন।’
শঙ্কা-সফলতা দুটোই আছে : এ ধরনের অস্ত্রোপচারের চূড়ান্ত ফল কী হতে পারে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘অপারেশনের পর দেখা যায় একটা বাচ্চা খারাপ হয়ে যায়। মরেও যেতে পারে। আবার পঙ্গুও হয়ে যেতে পারে। এ রকম ঝুঁকিও আছে। কোনো কোনো জায়গায় দেখা গেছে যে দুটি বাচ্চাই খারাপ হয়ে যায়। আবাার কোথাও কোথাও দেখা গেছে, একটা ভালো থাকে, আরেকটা খারাপ হয়ে যায়। আবার এমনও হয় একটা বাচ্চা ভালো থাকে। আরেকটা বেঁচে থাকে, কিন্তু পঙ্গুত্ব দেখা দেয়, হাত-পা নাড়াতে পারে না। অবশ হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশে এমনটাই ঘটছে। বাংলাদেশে এর আগে এ রকম বাচ্চার আর অস্ত্রোপচার হয়নি। বিভিন্ন দেশে যারা যারা করেছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
চূড়ান্ত ধাপের অপেক্ষায় বাবা-মা : অস্ত্রোপচারের পর গতকাল নুহা-নাবার বাবা আলমগীর হোসেন রানার সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কাটাকাটি করার কারণে বাচ্চা দুটির ব্যথা আছে। শরীর নড়াচড়া করতে পারে না। একটু জ¦রও এসেছে। কান্নাকাটি করে। ওষুধ চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছে। এ ধরনের অস্ত্রোপচার বাংলাদেশে প্রথম এবং সেটা আমাদের শিশুদের মাধ্যমে হচ্ছে। অপারেশন সফল হলে সবার কষ্ট সফল হবে।’
তিনি জানান, জন্মের কিছুদিন পর থেকেই তিনি, তার স্ত্রী ও মা বিএসএমএমইউতে বাচ্চা দুটির পাশে আছেন। প্রথম আট মাস নিজের খরচেই চলতে হয়েছে তাদের। সে সময় প্রায় পাঁচ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। শুধু বাচ্চাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বেড ফ্রি ছিল।
আলমগীর হোসেন রানা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪ ডিসেম্বর আমাদের কেবিন দিয়েছে। এখন সরকারি খরচে চলছি। এখন বাচ্চার ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, খাবার ও আমাদের খাবার সব হাসপাতাল দিচ্ছে। এখন আমরাও কেবিনে থাকি।’
তিনি জানান, এটা তাদের দ্বিতীয় বাচ্চা। প্রথম একটা ছেলে আছে। নয় বছর বয়স। ডাক নাম নীড়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নে। তিনি পরিবহনশ্রমিক। একটি গাড়ির কাউন্টার ম্যানেজার।
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সাতক্ষীরার পৌরসভার ব্যাংক লেনদেন সচল রাখার দাবিতে ময়লার গাড়ি রেখে ব্যাংকের প্রবেশ পথ আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন বেতন না পাওয়া পৌর কর্মচারীরা।
সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজার সড়কস্থ সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সামনে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকরা লেনদেন করতে না পেরে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যাংক ম্যানেজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে, সমস্যা সুরাহা করতে ১২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আন্দোলনকারী জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ২/৩ মাস যাবত বেতন তুলতে পারছেন না। বেতনের টাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক কর্মকর্তা ও পৌর কর্মচারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সে কারণে ব্যাংকের সামনে পৌরসভার ময়লার গাড়ি রেখে অবরোধ করা হয়।
পরে, পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যাংক ম্যানেজারের আশ্বাসে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে সুরাহা না হলে ফের আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব, যোগ করেন ওই আন্দোলনকারী।
জানা যায়, সাতক্ষীরার পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলায় হওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে বরখাস্ত হন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন কাজী ফিরোজ হাসান।
এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কে এম কামরু কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বিত হাইকোর্ট ডিভিশনের দ্বৈত বেঞ্চ এক আদেশে চিশতীর বরখাস্তের ওই আদেশ স্থগিত করেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে মেয়র পদে বসতে দেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, চিশতীর পক্ষে দেওয়া উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কপি সোনালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিলে পৌরসভার ব্যাংক লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে ২/৩ মাস পৌর কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এক পর্যায়ে তারা সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পৌরসভার ময়লার গাড়ি নিয়ে পূবালী ব্যাংক, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রবেশ পথ বন্ধ করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, পৌর কর্মচারীদের মাসিক বেতন দিতে তার এবং পৌরসভার সিইওয়ের যৌথ স্বাক্ষরে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে। কিন্তু হাইকোর্টের চিঠি আছে টাকা তোলা যাবে না বলে বিভিন্ন তালবাহানা করছে তারা।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছি আমি আর আমার পৌর কর্মচারীরা বেতন পাবে না। তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। টাকার জন্য পৌরসভার অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হবে, তাও কাম্য নয়। পৌরসভার ২ লাখ বাসিন্দা টাকার অভাবে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে, এ হতে পারে না। ব্যাংক ম্যানেজার কেন একক সিদ্ধান্তে এ রকম তালবাহানা করল তা জানা নেই। মঙ্গলবারের (২৮ মার্চ) মধ্যে ব্যাংকে জমা রাখা সমুদয় টাকা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
অন্যদিকে, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার সরফরাজ নেওয়াজ বলেন, পৌর কর্মচারীদের বেতন দিয়ে দিতে বাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হওয়া কথা উল্লেখ করে ৬ ফেব্রুয়ারি পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতীকে বরখাস্ত করে। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি নাশকতার মামলায় তিনি কারাগারে যান এবং ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে জামিনে মুক্ত হন।
পাবনার বেড়া উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্প ‘বীর নিবাস’-এ বাড়ি বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজ পরিবারের নামে সেখানে বাড়ি নিয়েছেন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তাকে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুজিববর্ষে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘বীর নিবাস’ নামে সারা দেশে ৩০ হাজার একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে সরকার। নীতিমালা অনুসারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে বরাদ্দ কমিটি গঠন করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ের কাজ করবেন।
বাস্তবে দেখা গেল, রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ছোট ভাই শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ, এখন তা হস্তান্তরের পালা।
‘বীর নিবাস’-এ বরাদ্দ নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি আবাসন কিংবা ভূমি সুবিধা পাননি এমন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবার সেখানে বরাদ্দ পাবেন। যুদ্ধাহতরা অগ্রাধিকার পাবেন। আবেদনকারী আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেই শুধু বিবেচনাধীন হবেন।
কিন্তু বেড়া উপজেলার কাজীরহাটে বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তার ভাই শফিউদ্দিন ফকির অসচ্ছল ব্যক্তি নন। তিনি সরকারি চাকরিজীবী, কাজীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। রফিকুলের আরেক ছোট ভাই শওকত আলী ফকির পাবনার সুজানগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। রফিকুল ইসলামরা তিন ভাই রফিকুল, শফিউদ্দিন ও শওকত।
অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ পরিবারের সদস্যকে বীর নিবাসে বরাদ্দ দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।
সরেজমিনে কাজীরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য বীর নিবাসের বাড়ি নির্মাণ শেষ হয়েছে। ওই বাড়ির পাশেই তিনতলা বাড়িতে থাকেন তার বড় ভাই বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
শফিউদ্দিন জানান, তাদের বাবা মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন ফকিরের নামে পরিবারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ কমিটির কাছে বীর নিবাসে বাড়ি বরাদ্দ চান তারা। পৈতৃক জমিতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তারা মাসুমদিয়া ইউনিয়নে জায়গা কেনেন। সেখানেই বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ করেছে বরাদ্দ কমিটি। ভালো বেতনে সরকারি চাকরি করেও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার ঘর কীভাবে বরাদ্দ পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ইউএনও সাহেব বলতে পারবেন।’
বরাদ্দপ্রাপ্তির পর বাড়ির ভোগদখলের জন্য শফিউদ্দিনকে ক্ষমতা দিয়ে হলফনামা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। সে সময় আবুল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা খাতুন বরাদ্দ দাবি করলে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে প্রভাব খাটিয়ে বীর নিবাসের স্বত্ব ছাড়তে লিখিত দলিল করিয়ে নেন প্রথম পক্ষের সন্তানরা। এ অভিযোগ করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা খাতুন।
হালিমা খাতুন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী হিসেবে বাড়িপ্রাপ্তিতে আমার অগ্রাধিকার আছে। আমার একটি নাবালিকা মেয়েও আছে। প্রথম পক্ষের ছেলেরা সরকারি চাকরি করে। তাদের অবস্থা ভালো।’
তিনি বলেন, ‘বাড়ি বরাদ্দের কথা শুনে আমি ইউএনও অফিসে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা আমাকে বরাদ্দ দেয়নি। শফির নামে বাড়ি বরাদ্দ হবে বলে জানায়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক করে আমার মেয়ের নামে এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে দলিলে সই করিয়ে নেয়। বাধ্য হয়েই তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে মেনে নিতে হয়েছে।’
রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম মোহন বলেন, ‘উপজেলা কমিটির কাছ থেকে বীর নিবাসে বরাদ্দ নেওয়ার পর মৃত আবুল হোসেন ফকিরের প্রথম পক্ষের ছেলেদের সঙ্গে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বিরোধ বাধে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনও আমার পরিষদে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নাবালিকা মেয়ের জন্য এক লাখ টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত ও বিয়ের সময় সহযোগিতার শর্তে বীর নিবাসের বাড়ির মালিকানা প্রথম পক্ষের মেজো ছেলে শফিউদ্দিনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’
শফিউদ্দিন বীর নিবাসের বাড়ির বরাদ্দ নেওয়ায় অনিয়ম হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়াই অনিয়মের মধ্য দিয়ে গেছে। কারণ আবুল হোসেন ফকির মুক্তিযোদ্ধাই নন। তিনি ভারতেও প্রশিক্ষণে জাননি, কোনো দিন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেও শুনিনি। অথচ এসব পরিবারের লোকজন মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা ভোগ করছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি এর বিপক্ষে।’
‘বীর নিবাস’ নিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুলের পারিবারিক সালিশ শেষে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর কাছ থেকে বীর নিবাসের দাবি না করার অঙ্গীকারনামা-দলিল করে নেওয়া হয়। সেই দলিলে সাক্ষী হিসেবে সই করেছেন বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন ফকিরের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম পক্ষের সন্তানদের বীর নিবাস নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। পরে উভয় পক্ষ বসে সমঝোতা করে নিয়েছে। বৈঠকে আমি অসচ্ছল বিধবা স্ত্রীর অগ্রাধিকারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু উভয় পক্ষ সমঝোতা করে স্ট্যাম্প করে। সবার অনুরোধে আমি সাক্ষী হিসেবে স্ট্যাম্পে সই করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আমার স্বাক্ষর দেওয়া ঠিক হয়নি। আমি তখন বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করিনি; সরল মনে স্বাক্ষর করেছি। সমাজসেবা কর্মকর্তার ক্ষমতা ব্যবহার করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি কেন নিতে হবে, আমার বোধগম্য হয় না। এটি লজ্জারও বিষয়।’
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বীর নিবাসে বাড়ির জন্য আবেদন আবেদন কম ছিল। আবার যারা আবেদন করেছিল তাদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় জমি নেই। আমার পরিবারের সদস্যকে বীর নিবাসে বাড়ি বরাদ্দ আমি একা দিইনি। কমিটি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বাড়ি বরাদ্দে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ও বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী। তিনি বলেন, কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শফিউদ্দিনের নিজের বাড়ি নেই। অসচ্ছল হিসেবেই তাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবারের কোনো সদস্যের বীর নিবাসে বরাদ্দপ্রাপ্তির সুযোগ নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চলতি রমজান মাসের শুরুতে টানা তিন দিন ছিল সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি। যে কারণে ওই তিন দিনে রাজধানীতে যানজট তেমন একটা সৃষ্টি হয়নি। তবে ছুটি শেষে গতকাল সোমবার রমজানের প্রথম কর্মদিবসে যানজটে নাকাল হতে হয়েছে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো রাজধানীতে যানজটের মাত্রাও বাড়তে থাকে। ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিসগামী ও বিভিন্ন গন্তব্যমুখী মানুষকে।
গতকাল রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, রামপুরা ও মিরপুরসহ বেশ কটি এলাকা ঘুরে সকাল থেকে তীব্র যানজট দেখা যায়। যানজটে আটকা পড়ে অনেককে হাঁসফাঁস করতে দেখা যায়। কাউকে কাউকে আবার বাসে দীর্ঘ সময় বসে থেকে পরে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য হেঁটেই রওনা দিতে দেখা যায়। অনেক জায়গায় শুধু সড়ক নয়, ফ্লাইওভারে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর অনেক জায়গায় রাস্তাঘাটের সংস্কারকাজ চলায় বিকল্প পথ ব্যবহারের কারণে যানজটের শিকার বেশি হতে হচ্ছে ওইসব এলাকার যাত্রীদের। বিশেষ করে অফিসের শুরু ও শেষের দিকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রাইসুল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মতিঝিল থেকে মহাখালী যেতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। মতিঝিলের চারপাশে জায়গায় জায়গায় রাস্তা কাটা থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তা ছাড়া কোনো কিছুরই সঠিক পরিকল্পনা নেই। এক রাস্তা কয়েকবার কাটতে দেখা যায়। আর এজন্যই মূলত এত যানজট।’
মিরপুরের বাসিন্দা মো. জয় বলেন, ‘অফিসের কাজে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হয়। কিন্তু যানজটের কারণে কোনো কাজই সময়মতো করতে পারছি না। রমজানের শুরু থেকেই সব রাস্তাঘাটে জ্যাম (যানজট) লেগেই আছে। রমজানের বাকি সময়ে যানজট পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’
যানজটের কারণে যাত্রীদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ গণপরিবহনের চালক ও কর্মীরাও। তানজীল পরিবহনের চালক মো. তানভীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল থেকেই রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট ছিল। কোনোভাবেই গাড়ি সামনে যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি থাকলে সারা দিন গাড়ি চালিয়েও লোকসানে পড়তে হবে।’
এদিকে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে যানজট নিরসনে ছোট ছোট গাড়ি কমিয়ে গণপরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত করার দাবি জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি শহরের জন্য যতটুকু পরিমাণ রাস্তাঘাট দরকার তার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না এই নগরীতে। আর প্রতিদিন কী পরিমাণ যানবাহন সড়কে চলছে তার সঠিক সংখ্যাও জানা নেই বিআরটিএর। এ ছাড়া এখনো অনেক জায়গায় প্রকাশ্যে অবৈধ অনেক যানবাহন চলাচল করছে। সেই সঙ্গে ছোট ছোট গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু গণপরিবহনের দিকে কারও নজর নেই। অথচ ছোট গাড়ি কমিয়ে গণপরিবহনকে আরও উন্নত করার বিষয়টি প্রাধান্য দিলে যানজট অনেকটাই কমে যেত।’
রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টির কারণ জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় ফার্মগেটে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. মমতাজ ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক পুলিশ সব সময় কাজ করে। টানা কয়েক দিনের ছুটির পর সড়কে গাড়ি বেশি নামায় কিছুটা যানজট বেড়েছে। সকালের দিকে একটু বেশি যানজট ছিল। বেলা ২টার পর কিছুটা কমলেও আবার বিকেলের দিকে অফিসগামীদের জন্য গাড়ির কিছুটা জটলা দেখা যায়। তবে যানজট নিরসনের জন্য আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তাও রাস্তায় নেমেছেন, কীভাবে যানজট নিরসন করা যায় সেই পদক্ষেপ নিতে।’
কনটেন্ট ক্রিয়েশন এখন চাহিদামূলক পেশার তালিকায় প্রথম। দেশের অনেকে কনটেন্ট ক্রিয়েশন করে উপার্জন করছেন। অনেকে আবার পেশা হিসেবেই বেছে নিয়েছেন। লিখেছেন অনিন্দ্য শোভা
সালটি ২০১৭। প্রথমে নিজ প্রোফাইলে মজার মজার ভিডিও আপলোড করতেন সাইফুদ্দিন সিয়াম। যা তার পরিচিতদের হাসির খোরাক হতো। পরে এসপি ক্রিয়েশন (SP. creation) ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে শুরু করেন। পছন্দের মানুষের মন খারাপ বা রাগ ভাঙানোর জন্য ছোট ছোট ফানি ভিডিও ইনবক্সে পাঠিয়ে ভালো-খারাপ ফ্রিডব্যাক পাওয়ার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট ক্রিয়েশন হিসেবে তার যাত্রা শুরু। শুরুতে পেশা হিসেবে না ভাবলেও পরে নিয়মিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পেশা হিসেবে কনটেন্ট ক্রিয়েশন ভালো আবার খারাপও দুটো দিকই আছে। ঝুঁকিও কম নয়। কারণ সফল হবেন কি না সেটার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তবে নিয়মিত ধৈর্য ধরে মানসম্পন্ন কাজটা করলে সফলতা অবশ্যই ধরা দেবে।’ ডাকো কেন (DAKO KEN) চ্যানেলের কনটেন্ট ক্রিয়েটর আবদুল্লাহ মজাদার (ফানি) কনটেন্ট ক্রিয়েটিং করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের দিকটা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে, চাহিদা বাড়ছে। পেশা হিসেবে কনটেন্ট ক্রিয়েশন ভালো একটি পছন্দ হতে পারে। অবসর সময়েই করতে হবে এমন নয়, এটিও যেহেতু একটি কাজ তাই পেশা হিসেবেও নেওয়া যায়।’
‘কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি করবেন তার ওপর নির্ভর করে যন্ত্রপাতি। তবে কনটেন্ট ক্রিয়েশন শুরু করতে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না। ভিডিও ধারণের জন্য একটা মোবাইল ফোন, মাইক্রোফোন হলেই হয়’ যোগ করেন আবদুল্লাহ। তার কণ্ঠে সুর মিলিয়ে সাইফুদ্দিন সিয়ামও বলেন, ‘অনেকে মনে করে নামিদামি ক্যামেরা, গ্যাজেট না হলে কনটেন্ট ক্রিয়েশন করা যায় না। এটা ভুল ধারণা।’
একটা সময় অনেকেই শখের বশে কন্টেন্ট ক্রিয়েশন করতেন। সময়ের দোলাচলে বিশ্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশন, স্মার্টফোন সহজলভ্য এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা হওয়ায় কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে ঝুঁকছে তরুণ-তরুণী থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। অনেকে পেশা হিসেবে নিতে শুরু করেছে। কনটেন্ট ক্রিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি বলতে ‘ইউটিউব’কেই একটা সময় সবাই জানত। তবে সময়ের ধারাবাহিকতায় ইউটিউবের বাইরেও ফেসবুক, ব্লগার, পোডকাস্টার, স্টিমার ইত্যাদিতে কনটেন্ট ক্রিয়েট চলছে সমানতালে। আয়ও করছে ভালো পরিমাণে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকেই গতানুগতিক এবং সাধারণ কনটেন্ট নিয়ে কাজ করে, তাদের জন্য পেশা হিসেবে কনটেন্ট ক্রিয়েশন না। যারা সিরিয়াসলি প্রফেশনালভাবে কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে নেবে এবং কোয়ালিটিপূর্ণ কনটেন্ট নিয়ে কাজ করবে, তাদের ভবিষ্যৎ আলোকিত।’
কী নিয়ে কাজ করব
প্রতি বছর বাংলাদেশে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সংখ্যা বাড়ছে। আগে সবাই ইউটিউবকেন্দ্রিক হলেও বর্তমানে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে নিয়মিত হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর (রান্নাবান্না, ভ্রমণ ভøগ, রিভিউ, হাস্য-রসাত্মক, শিক্ষণীয়, টিচিং ইত্যাদি) কনটেন্ট ক্রিয়েট করছে।
এ বিষয়ে কথা হয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর সোহাগ মিয়ার সঙ্গে, যিনি বর্তমানে ‘সোহাগ ৩৬০ ডিগ্রি’ এবং ‘বেসিক ভাই’ ফেসবুক পেজ পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ট্রাভেল, ফুড, টেক, কুকিং, বিনোদন নিয়ে কনটেন্টের চাহিদা বাড়ছে। তবে যে বিষয় নিয়েই কাজ করুক না কেন, সেটা প্রফেশনালি করতে হবে এবং ইউনিক কনটেন্ট হতে হবে।’
হরেক উপায়ে আয়
একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারেন। ফেসবুক ও ইউটিউবের ক্ষেত্রে প্রথমে মনিটাইজেশন করতে হয়। তবে এই মনিটাইজেশন পেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের ভিত্তিতে ফেসবুক এবং ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। এরপর থেকে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন ভিডিওতে দেখাবে এবং যত বেশি দর্শক (ভিউয়ার) দেখবে তার ওপর ভিত্তি করে টাকা পাবেন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বা পণ্যের স্পনসরশিপ, এফিলিয়েট মার্কেটিংসহ আরও কয়েকটি ধাপে আয় করা যায়।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর আবদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরে বেশি আয় হচ্ছে। স্পন্সরের বিষয়টা হলো, একটি ব্যান্ডের পণ্য ভিডিও বা পোস্টের মাধ্যমে প্রমোট করলে ব্যান্ড নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে থাকে।’
আয় কেমন
সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আয়টা ভিউয়ার এবং সাবসক্রাইবের ওপর নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে ২০ হাজার থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।’
বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ফলে মানুষও প্রযুক্তি-নির্ভর হচ্ছে, তাই কনটেন্ট ক্রিয়েটিংও পেশা হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য, নিয়মিত এবং প্রফেশনালভাবে কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে সামনে রেখে শুরু করলে এই পেশাতেও সাফল্য অর্জন সম্ভব বলে জানান কনটেন্ট ক্রিয়েটররা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’