
বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো মেরুদন্ডে জোড়া লাগা শিশুর অস্ত্রোপচারের প্রথম ধাপ সফলভাবে শেষ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা। গত ২৯ জানুয়ারি রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের অপারেশন থিয়েটারে নুবা-নাহা নামের ৯ মাস ১২ দিনের শিশুর এই অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচার দলের নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নুহা ও নাবার দেহে টিস্যু বর্ধনকারী চারটি ডিভাইস ‘এক্সপান্ডা’ সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ছয় ঘণ্টা চলা এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সামন্তলাল সেন, বিএসএমএমইউর নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন, অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশীষ বণিকসহ আরও ১০ জন চিকিৎসক।
অস্ত্রোপচারের পর নুবা-নাহা এখন ভালো আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সাবধানতার জন্য শিশু দুটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাই কেয়ার ইউনিট এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। চিকিৎসক ও নুবা-নাহার বাবা-মা সন্তানদের সুস্থতার জন্য দেশের মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। শিশু নুহা ও নাবার চিকিৎসার সব খরচ প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বহন করছেন। তিনি নুহা ও নাবার সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন। তিনি শিশু দুটির যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। চিকিৎসার প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নুহা ও নাবা ভালো আছে। আশা করছি চূড়ান্ত অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হবে। তাদের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করছি।’
তৃতীয় ধাপে আলাদা : অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে অস্ত্রোপচার দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। আরও দুটি অস্ত্রোপচার হবে। তৃতীয় ধাপের অস্ত্রোপচারে আমরা বাচ্চা দুটিকে আলাদা করার চেষ্টা করব। প্রথম ধাপ অস্ত্রোপচার শেষে বাচ্চা দুটি ভালো আছে। এ ধরনের রোগী খুবই স্পর্শকাতর, জটিল। প্রতিটা ধাপেই নানা ধরনের বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হয়।’
এ ধরনের অস্ত্রোপচার বাংলাদেশে প্রথম বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মেরুদন্ডে জোড়া লাগানো শিশুর অস্ত্রোপচার এই প্রথম এবং সেটা করছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরাই। এ রকম রোগী বাংলাদেশে আর দেখা যায়নি। এর আগে বাংলাদেশে মাথায় জোড়া লাগানো শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সেটাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে হয়েছিল। তিনি হাঙ্গেরি থেকে প্রায় ৩০-৪০ জন চিকিৎসক দল এনে সিএমএইচে করিয়েছেন। পেটে পেটে জোড়া লাগানো শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলেই। ওই শিশুগুলো ভালো আছে। এবার করলাম আমরা। আশা করছি পারব।’
তৃতীয় ধাপে বাচ্চা দুটিকে আলাদা করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপ ভালোভাবেই হয়েছে। চূড়ান্তভাবে যখন বাচ্চা দুটিকে আলাদা করব, জোড়া লাগানো দুটি স্পাইনাল কর্ড আলাদা করতে হবে। সেটা খুব কঠিন।’
শঙ্কা-সফলতা দুটোই আছে : এ ধরনের অস্ত্রোপচারের চূড়ান্ত ফল কী হতে পারে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, ‘অপারেশনের পর দেখা যায় একটা বাচ্চা খারাপ হয়ে যায়। মরেও যেতে পারে। আবার পঙ্গুও হয়ে যেতে পারে। এ রকম ঝুঁকিও আছে। কোনো কোনো জায়গায় দেখা গেছে যে দুটি বাচ্চাই খারাপ হয়ে যায়। আবাার কোথাও কোথাও দেখা গেছে, একটা ভালো থাকে, আরেকটা খারাপ হয়ে যায়। আবার এমনও হয় একটা বাচ্চা ভালো থাকে। আরেকটা বেঁচে থাকে, কিন্তু পঙ্গুত্ব দেখা দেয়, হাত-পা নাড়াতে পারে না। অবশ হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশে এমনটাই ঘটছে। বাংলাদেশে এর আগে এ রকম বাচ্চার আর অস্ত্রোপচার হয়নি। বিভিন্ন দেশে যারা যারা করেছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
চূড়ান্ত ধাপের অপেক্ষায় বাবা-মা : অস্ত্রোপচারের পর গতকাল নুহা-নাবার বাবা আলমগীর হোসেন রানার সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কাটাকাটি করার কারণে বাচ্চা দুটির ব্যথা আছে। শরীর নড়াচড়া করতে পারে না। একটু জ¦রও এসেছে। কান্নাকাটি করে। ওষুধ চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছে। এ ধরনের অস্ত্রোপচার বাংলাদেশে প্রথম এবং সেটা আমাদের শিশুদের মাধ্যমে হচ্ছে। অপারেশন সফল হলে সবার কষ্ট সফল হবে।’
তিনি জানান, জন্মের কিছুদিন পর থেকেই তিনি, তার স্ত্রী ও মা বিএসএমএমইউতে বাচ্চা দুটির পাশে আছেন। প্রথম আট মাস নিজের খরচেই চলতে হয়েছে তাদের। সে সময় প্রায় পাঁচ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। শুধু বাচ্চাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বেড ফ্রি ছিল।
আলমগীর হোসেন রানা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪ ডিসেম্বর আমাদের কেবিন দিয়েছে। এখন সরকারি খরচে চলছি। এখন বাচ্চার ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, খাবার ও আমাদের খাবার সব হাসপাতাল দিচ্ছে। এখন আমরাও কেবিনে থাকি।’
তিনি জানান, এটা তাদের দ্বিতীয় বাচ্চা। প্রথম একটা ছেলে আছে। নয় বছর বয়স। ডাক নাম নীড়। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরে কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নে। তিনি পরিবহনশ্রমিক। একটি গাড়ির কাউন্টার ম্যানেজার।
ভর্তুকি সমন্বয়ের নামে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এত ঘন ঘন নিত্যপ্রয়োজনীয় এ দুটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দফায় দফায় অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর প্রভাবে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গত সোমবার রাতে খুচরা ও পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তা প্রকাশ করা হয়। পাইকারি পর্যায়ে ৮ ও গ্রাহক পর্যায়ে ন্যূনতম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আজ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। ১৪ বছরে এ নিয়ে ১১তম বারের মতো গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ল বিদ্যুতের দাম। আর পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে ১০ বার।
অতীতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সময় প্রান্তিক গরিব জনগোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের খরচ তুলনামূলক কম বাড়ানোর দিকে নজর রাখা হতো। কিন্তু এবার তা বিবেচনায় না নেওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষ সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে ডলার সংকটসহ নানা কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও কমেছে। দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছে বলে গত অক্টোবরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সরকার অবশ্য বলছে, ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য এখন থেকে প্রতি মাসেই বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করা হবে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে জ্বালানি তেলের দামও সমন্বয়ের একটি প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের ভুলনীতি ও কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে এই সংকট তৈরি হয়েছে। যার মাশুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির এই দাম বৃদ্ধি একেবারেই অযৌক্তিক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ভালো বিকল্প থাকলেও সরকার সে পথে যায়নি। এখন বলা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ঘাটতি মেটাতে দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিকল্প পথের মধ্যে অন্যতম হলো দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। এটা করলে কম দামে জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতার সঙ্গে থাকা মানুষকারোরই এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও ব্যবসায়িক সুবিধার জন্য সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। ভুল পথে পরিচালিত করছে। ফলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অবিরাম বাড়তেই থাকবে।’ তিনি মনে করেন, যাদের ক্ষতি হচ্ছে সেই সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ করার সামর্থ্য নেই। ফলে সরকার ও আইএমএফ সাধারণ মানুষের সহ্যসীমা পরীক্ষা করছে।
সাধারণত গণশুনানির পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গ্যাস-বিদ্যুতের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু গত ১ ডিসেম্বর সরকার সেই আইন সংশোধন করেছে। ফলে এখন গণশুনানি ছাড়াই কমিশনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ১০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্রাহক পর্যায়ে আগামী মার্চে আরেক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে।
এর আগে বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি শুরু করে কমিশন। মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান অবস্থায় ১২ জানুয়ারি খুচরা পর্যায়ে সরকার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ায়; যা জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হয়। এতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর আয় বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরে কমিশন তাদের মূল্য সমন্বয় কার্যক্রম বাতিল করে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ৫ দিনের মাথায় ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক হারে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
তবে সর্বশেষ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ‘এটা নতুন করে বাড়ানো নয়, আগের জারি করা প্রজ্ঞাপনটি সংশোধন করে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’
এর আগে গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ইউনিটপ্রতি ৫.১৭ টাকা থেকে গড়ে ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়, যা ডিসেম্বরে কার্যকর হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গত বছর রেকর্ড হারে বাড়ে জ্বালানি তেলের দাম।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় সমন্বয় না করে বারবার বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। যার পরিণতি ভয়াবহ। সরকার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। কিন্তু এ জন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা দরকার। এই টাকা সমন্বয় করে গ্যাস-বিদ্যুতের যে দাম হবে তা সোনার চেয়েও দামি হবে। করোনায় এমনিতেই মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজেহাল। তারা এই দাম বাড়ানোর চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।’
অতীতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় কৃষি সেচ এবং প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতি মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছেন ১ কোটি ৬৩ লাখ। কিন্তু সরকারের নির্বাহী আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফলাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
আবাসিক গ্রাহকদের মতো বৃহৎ শিল্পের তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বৃদ্ধি করা হতো। কিন্তু সরকারের নির্বাহী আদেশে এ সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে।
নতুন দর অনুযায়ী, ক্ষুদ্র শিল্পে বিদ্যুতের ফ্লাট দাম ৯ টাকা ৪১ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বৃহৎ শিল্পে এর দাম ৯ টাকা ৪৩ পয়সা। অন্যদিকে গত ১৮ জানুয়ারি গ্যাসের যে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে, সেখানে সার ও চা-শিল্প ছাড়া অন্য সব শিল্পের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চলতি মাস থেকে এই দর কার্যকর করা হবে।
অথচ কমিশনের গণশুনানির মাধ্যমে ১৪ বছরে ছয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময় প্রতিবারই ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্পের জন্য আলাদা দাম নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু মন্ত্রণালয় এবার তা অনুসরণ করেনি। ফলে বড় শিল্পের গ্যাসের দাম ইউনিটপ্রতি ৮৭ শতাংশ বাড়লেও ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের গ্যাসের দাম একলাফে প্রায় ১৭৯ শতাংশ বেড়েছে। এতে বড়দের চেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। বাড়তি দাম দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এমনিতেই গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কারখানায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। পরোক্ষভাবে এর প্রভাব পড়বে ক্রেতার ওপর। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।
এদিকে কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সব সময়ই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহায় পাচ্ছেন না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪ টাকা ৫৯ পয়সা করা হয়েছে। কৃষিতে মধ্যমচাপে ফ্ল্যাট রেটে ৫ টাকা ৫১ পয়সা, অফপিকে ৪ টাকা ৯৭ পয়সা এবং পিকে ৬ টাকা ৮৯ পয়সা করা হয়েছে। অন্যান্য সব শ্রেণির গ্রাহকের বিদ্যুতের ব্যয়ও বিভিন্ন ধাপে বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি তেল, সার, বীজসহ অন্যান্য সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংকটে থাকা কৃষকের সংকট আরও বাড়বে নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে।
কল্যাণপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আরিফ হোসেন বলছিলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিই দিশেহারা। এ পরিস্থিতিতে ১৮ দিনে দফায় দফায় যেভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো, তাতে সবকিছুর দাম আবার কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। অথচ ১৮ মাস তো দূরের কথা, ৫ বছরেও এক টাকা বেতন বাড়েনি। দৈনন্দিন ব্যয় কাটছাঁট করতে করতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন খাবার খরচ জোগাড় করতেই তো অবস্থা কাহিল হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে এবং অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করে কারা ক্ষমতায় যাবে, তার সিদ্ধান্ত নিতে জনগণকে ক্ষমতা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনার ফলে এবং দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কারণে দেশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। তাই এখন কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারছে না।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও এর ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ‘মার্শাল ল’ জারি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে এসে গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি। এই গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শক্তিকে আরও দৃঢ় করা এবং ক্ষমতায় কে যাবে না যাবে, জনগণই যেন তা নির্ধারণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী আনয়নের ফলে দেশে একটা স্থিতিশীলতা এসেছে, কারণ দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। এখন আর অনির্বাচিত কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারছে না। যদিও সেটা দেশের তথাকথিত একশ্রেণির বুদ্ধিজীবীর অন্তজর্¦ালার কারণ। তারা কোনো দিন ভোটে জিততে পারবে না, রাজনীতি করতে পারবে না বা জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবার মতো সাহস তাদের নেই। কোনো মতে ক্ষমতায় কীভাবে যাবে তাই তারা সব সময় এই গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে। তাদের এই প্রচেষ্টা আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে ২১ বছর পর সরকারে এসে আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল; যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র ঘটনা। এ ছাড়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, জরুরি অবস্থা জারি বা মার্শাল ল নানা ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তনই হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের গত তিন মেয়াদের টানা শাসনের ফলে ২০০৯-২৩ বাংলাদেশ বদলে গেছে। এ সময় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রস্তাবে নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে বাদ দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে নির্বাচন কমিশন আইন পাসসহ নির্বাচন কমিশনের ব্যয় নির্বাহের বিষয়টাও স্বাধীন করে দেওয়া তার সরকারের পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত রংপুর সিটির মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে শপথবাক্য পাঠ করান এবং নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
গত ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফা টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে জয়ী হন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে নির্বাচিত মেয়র ও সব কাউন্সিলরকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
ভূমিহীন-গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়ার সময় কে কোন দলের তা দেখিনি। মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখেছি। মুজিবের এই বাংলায় একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না, তা তার সরকার নিশ্চিত করবে।’
জনগণ যাতে সরকারের সেবা পায় তা নিশ্চিত করার জন্যই রংপুর বিভাগ করে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা এবং রংপুর অঞ্চল সব সময়ই ছিল দুর্ভিক্ষ বা মঙ্গাপীড়িত। সে জন্যই আমি চেয়েছি যে এখানে যদি একটা বিভাগ হয় এবং সেবা যদি জনগণের দোরগোড়ায় আমরা পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে মানুষ ভালো থাকবে।’
এরপর রংপুর সিটি করপোরেশন করে দিয়ে তার সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পেরও একটি খতিয়ান তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। রংপুর সিটির ৮টি প্রকল্পে ১ হাজার ১৭৩ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কোন দলের মেয়র, সেটা কিন্তু দেখি নাই। আমরা কিন্তু মানুষের জন্যই কাজ করেছি। এটাই হলো বাস্তব কথা।’ তিনি এ সময় করোনা-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। বাসস
বাংলাদেশে দুর্নীতি আরও বেড়েছে। বিশে্বর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২। গত বছর ছিল ১৩তম অবস্থানে। এ বছর একধাপ অবনমন হয়েছে। দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২২-এ এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বিভিন্ন দেশের দুর্নীতির সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রতি বছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের ওঠানামা প্রতিবছরই হয়ে থাকে। বাংলাদেশের অবস্থানের একধাপ অবনতি এবং গত এক দশকে স্কোর ও অবস্থানের কার্যকর উন্নতি না হওয়াকে হতাশাজনক বলেও উল্লেখ করেছে টিআইবি। দুর্নীতির দায়ে সব অভিযুক্তের কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিতে ছয় দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে গত এক দশকে সরকারি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা সত্ত্বেও কার্যকর কৌশল ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারায় সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থানের অবনমন ঘটেছে। সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, সিপিআই অনুযায়ী ০-১০০ স্কেলে টানা চার বছর স্কোর অপরিবর্তিত ২৬ থাকার পর ২০২২ সালের সূচকে আরও এক পয়েন্ট কমে সর্বনিম্ন ২৫ স্কোর (১২তম) করেছে বাংলাদেশ, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনি¤œ এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে চতুর্থ সর্বনিম্ন, যা অত্যন্ত বিব্রতকর। বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক এ কারণে যে ২০১২-২০২২ মেয়াদের দৃশ্যমান ধারা অব্যাহত থাকলেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে অবনমনের সম্ভাবনার সম্মুখীন।
সিপিআই উপস্থাপনায় বাংলাদেশের নিম্ন অবস্থানের ব্যাখ্যা তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঘোষিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র সবচেয়ে আলোচিত মেয়াদ। কিন্তু এই মেয়াদে এ ঘোষণাকে চর্চায় রূপ দেওয়ার যথাযথ কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। উল্টো দুর্নীতির ব্যাপকতা আরও ঘনীভূত ও বিস্তৃত হয়েছে। করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারি ক্রয় ও বিতরণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমেও দুর্নীতির অসংখ্য তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় বিদেশে অর্থ পাচারের আশঙ্কাজনক চিত্র উঠে এলেও এর প্রতিরোধ ও প্রতিকারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। ঋণখেলাপি, জালিয়াতি ও অর্থ পাচারে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি; বরং এর জন্য যারা দায়ী তাদের জন্য বিচারহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে অর্জিত ক্ষমতার অবস্থানকে অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিকতায় রূপান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব ব্যাপকতর হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈশি^ক দুর্নীতির পরিস্থিতি তথ্য তুলে ধরে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের সিপিআই অনুযায়ী, সার্বিকভাবে বৈশি^ক বিবেচনায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ১৮০টির মধ্যে ১০৯টি দেশ বৈশি্বক গড় ৪৩-এর কম স্কোর করেছে। সূচকে অন্তর্ভুক্ত দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ১২২টি দেশের স্কোর ৫০-এর নিচে, যার অর্থ এসব দেশে দুর্নীতির মাত্রা উদ্বেগজনক। ২০২১ সালের তুলনায় ৭৩টি দেশের স্কোর কমেছে। এর মধ্যে ২৬টি দেশ তাদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর করেছে। যাদের স্কোর কমেছে, তাদের মধ্যে অনেক এমন দেশ রয়েছে, যারা সূচকে তুলনামূলক উচ্চতর অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একধরনের অসাধু চক্র বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচারের মাধ্যমে সম্পদ আহরণ ও বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছে এবং প্রকারান্তরে বৈশি^কভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণমাধ্যমসহ যারা দুর্নীতির তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী তথ্য প্রকাশ, দুর্নীতিবিরোধী চাহিদা সৃষ্টি ও তা প্রতিরোধে যারা যুক্ত, তাদের জন্য প্রতিকূল ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সিপিআই সূচকে দুর্নীতির ধারণার মাত্রাকে ০-১০০-এর স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। ‘০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ‘১০০’ স্কোরকে দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসিত বলে ধারণা করা হয়। সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশই এখন পর্যন্ত শতভাগ স্কোর পায়নি; অর্থাৎ দুর্নীতির ব্যাপকতা সর্বনিম্ন এমন দেশগুলোতে কম মাত্রায় হলেও দুর্নীতি বিরাজ করে।
মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তার মুখের বিষ তখন উগরে ওঠে এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির নেতাদের শক্তি কমে আসছে, দম ফুরিয়ে আসছে। দম ফুরিয়ে গেছে বলে লাফালাফি বন্ধ করে এখন নীরব পদযাত্রা। কেউ মারা গেলে যেমন নীরব পদযাত্রা হয়, বিএনপির পদযাত্রাটা অনেকটা একইরকম। এ দিয়ে সরকার পতনের স্বপ্ন ভুয়া।’ দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও অগ্নি সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এক শান্তিসমাবেশে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তিব্বত কলোনি বাজার এলাকায় ঢাকা এ সমাবেশের আয়োজন করে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনাদের আন্দোলনের কী খবর? কী খবর? সবাই বলে ভুয়া। সরকার পতন, ১০ তারিখের লাল কার্ড, বিএনপির ৫৪ দল, বিএনপির ২৭ দফা, ১০ দফা, ১৪ দফা, অবশেষে পদযাত্রা, সবই ভুয়া।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক রহমান রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গিয়ে হুঙ্কার দিচ্ছেন টেক ব্যাক বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আলো থেকে আর অন্ধকারে ফিরে যাবে না। বাংলাদেশে রিমোট কন্ট্রোলে আন্দোলন হবে না। বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার সব রঙিন খোয়াব অচিরেই কর্পূরের মতো উড়ে যাবে।
আগামীকাল দেশের ৫টি আসনের উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে উল্লেখ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘মাগুরা মার্কা ফ্রি স্টাইলে নির্বাচন আর হবে না। আগামীকাল নির্বাচন নির্বাচনের মতোই হবে। আওয়ামী লীগের লোকদের সমর্থন দেওয়ার সুযোগ আছে। আমরা সমর্থন দিয়েছি, তার মানে এই নয় যে, নির্বাচন অন্য রকম হবে। আগামীকালকের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। মির্জা ফখরুল কালকের নির্বাচন দেখুন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএম মান্নান কচি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে এসে মামলা মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা কোনোদিন পালাননি। আমাদের নেত্রী পালাননি। আপনি (তারেক রহমান) ইংল্যান্ডে বসে ষড়যন্ত্র না করে দেশে আসুন, সাহস থাকলে দেশে আসুন। দেশে এসে মামলা ফেস করুন। এদেশের মানুষ দেখতে পারবে কী করেছিলেন আপনি।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্টে জন্মগ্রহণ করে যে দল সেই দল আবার জনগণের কাছে ভোট চায়। তারা নির্বাচনে আসা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।’ তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কেউ হামলা করলে তার জবাব দেওয়া হবে।
রাজধানীতে বিএনপির পদযাত্রা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতার সমালোচনার জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারকে ও ক্ষমতাসীন দলকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনাদের সময় শেষ। আগামীতে হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বাংলাদেশ। আমরা আপনাদের বিদায়ের অগ্রিম শোভাযাত্রা হিসেবে এই পদযাত্রা করছি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবি আদায়ে তৃতীয় দিনের পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধনপূর্ব বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
আজ ১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। গত শনিবার বাড্ডা থেকে রামপুরা হয়ে মালিবাগ হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে পদযাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়ে শ্যামপুর পর্যন্ত যায়, পালন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
গতকাল দুপুর ১২টা থেকে নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালের কাছে জড়ো হয়। তারা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে। সে সময় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দেয় তারা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে গিয়ে শেষ হয় পদযাত্রা।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আওয়মী লীগ ভয় পেয়ে আমাদের পদযাত্রার সমালোচনা করছে। আমরা বলতে চাই, আপনাদের সময় শেষ। আগামীর বাংলাদেশ হবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের। প্রস্তুতি নিন। এই পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা আপনাদের অগ্রিম বিদায়ের শোভাযাত্রা করছি।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা মনে করেছিলেন মামলা দিয়ে বিএনপিকে ঘরে বসিয়ে দেবেন। বিএনপি ও জনগণ প্রমাণ করেছে, তারা বসে যায়নি বরং আপনাদের বিদায় করার জন্য রাস্তায় নেমেছে।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সব ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দেশের কিছুই আর মেরামত করতে পারবে না। তাদের বিদায় যত দ্রুত হবে জনগণের ও দেশের তত মঙ্গল। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব বিএনপির। কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক। খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তিনিই করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যারা ধ্বংস করেছে তারা কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। তাই এ সরকারকে বিদায় করতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করছে। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে, লুটপাটের কারণে ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। তারপরও সরকার বলে, অর্থনীতির সবদিক ভালো। তাহলে দ্রব্যমূল্য বাড়ে কেন? বিদ্যুতের দাম বাড়ে কেন? ১৯ দিন আগে তারা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিল, এখন আবার ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। আবার বলেছে, মাসে মাসে নাকি দাম বাড়ানো হবে। তার মানে সরকারের হাতে টাকা নেই। জাহাজ এসে বসে থাকে, টাকা দিতে পারে না বলে মাল খালাস হয় না। সরকারকে বিদায় করতে হবে। দ্রুত আমরা এই সরকারকে বিদায় করতে সক্ষম হব।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, নাজিমুদ্দিন আলম, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও সদস্য সচিব মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেল, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আজ থেকে ছেষট্টি বছর আগে ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) ১৩৬৪’র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫’র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান শনাক্ত করতে এই লেখা। প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক একাডেমিক ও নির্মোহ- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রচিত, এর সঙ্গে কলাম লেখকের নিজস্ব বোধ বিশ্বাস চিন্তা চেতনা কিংবা কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগের সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক দেশে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
ভাষার গঠনপ্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতিপ্রকৃতি তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র-নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
খোদ ‘রাজনীতি’র ধারণার বিবর্তন ও ব্যবহারিক তাৎপর্যে পরিবর্তন-পর্যালোচনায় দেখা যায় কৌটিল্য (খ্রি.পূর্ব ৩৭৬-২৮৩) এর মতে রাজনীতি হচ্ছে নিজ সমাজ পোষণ তোষণ কিংবা শত্রু মোকাবিলায় রাজার ক্ষমতা ধরে রাখা বা প্রয়োগ করার কৌশল। কৌটিল্য বিশ্বাস করতেন রাজার দায়িত্ব বা লক্ষ্য হচ্ছে বহু বৈষয়িক সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাম্ভিক আনন্দলাভ ও বিলাস উপভোগ করা, আর এ জন্য রাজা যেকোনোভাবে সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনে সচেষ্ট হবে, সৈন্য পুষবে নিজের নিরাপত্তা বিধান এবং অন্য রাজ্য দখল করে সাম্রাজ্যের আকার বাড়ানোর কাজে। প্রজাকল্যাণ সাধন এবং নিজের ক্ষমতা সংরক্ষণে রাজাকে কূট-কৌশলী হতে হয়। কৌটিল্যের মতে রাজনীতি হচ্ছে একই সঙ্গে সেরা কৌশল বিজ্ঞান (সুপার সায়েন্স) ও সেরা কলা (সুপার আর্ট)। কৌটিল্যের অর্ধশতাব্দী পর প্লেটো (খ্রি.পূ ৪২৮-৩৪৮) মনে করতেন সমাজে চাওয়া পাওয়ার সব ধরনের প্রয়াস-প্রচেষ্টা, বাদ-বিসংবাদ, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নিরসনে সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ন্যায়নীতিনির্ভরতা, যৌক্তিতা, সুশাসন বা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে সব পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ বা সমন্বিত শক্তি হিসেবে বিকাশ লাভ করবে। ঐকবদ্ধ করাই সৎ বা সফল রাজনীতি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল (খ্রি.পূর্ব ৩৮৪-৩২২) যদিও তার গুরুর অনুসারী ছিলেন তথাপি তার মতে রাজনীতি is highly critical of the ideal constitution set forth in Plato’s Republic on the grounds that it overvalues political unity, it embraces a system of communism that is impractical and inimical to human nature, and it neglects the happiness. সমসাময়িক আরেক পন্ডিত সক্রেটিসও (৪৭০-৩৯৯) ভাবতেন ভিন্নভাবে- the purpose of politics was not to capture power, nor it was an art hwo to remain in power. Political ethics make good and proper citizens. Both public and private persons must learn the art of political ethics. ম্যাকিয়াভেলি (১৪৫৯-১৫২৭) মনে করতেন for a ruler, it was better to be widely feared than to be greatly loved; a loved ruler retains authority by obligation, while a feared leader rules by fear of punishment.
রাজনীতির ভাষায় শব্দ একটি বড় অনুষঙ্গ। সময়ের অবসরে সৃষ্ট ও বহুল উচ্চারিত বা ব্যবহৃত এসব শব্দের ব্যঞ্জনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র ও চারিত্র ফুটে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবৎ দেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়। অন্যকথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা দলীয় প্রয়োজনে ভাষার যে ব্যবহার করেছেন, তা দেখানোর আগে দুনিয়ার কয়েকটি বড় বড় রাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রয়োজনে ভাষার কী ব্যবহার করেছে তার দু একটি দৃষ্টান্ত অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের রচনা থেকেই দেখা যাক ‘১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় গোয়েবলসের নেতৃত্বাধীনে ‘রাইখ সংস্কৃতি সংসদ’ গড়ে উঠছে। এ সংস্কৃতি সংসদের বিভাগ ছিল সাতটি-সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, শিল্প, সংগীত, থিয়েটার এবং সিনেমা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করে তোলার জন্য সাতটি বিভাগই একযোগে প্রচারণার কাজ করতে শুরু দিল। যারা এর কিছুদিন আগে জনমত প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল যখন ক্ষমতাসীন হয়, অন্যদল রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে। সেজন্য সরকারি দলের অস্তিত্বের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সরকার সমর্থিত বিরোধী দলের। সমগ্র জাতিকে এ দুই দল আপনাপন মতে দীক্ষিত করে তুলবার জন্য খবরের কাগজ, সভা-সমিতি ও ভাষা ব্যবহারের অন্য পন্থাগুলোকে অবলম্বন করে জোর প্রচারণা চালায়। জনমত যাদের প্রচারণায় অধিক পরিমাণে সাড়া দেয়, তারাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায়।’
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ নিচয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সে সব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কাজ করার জন্য নয়। রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতকগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্র করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্রে ত্যক্তবিরক্ত ও বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়। দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দরকষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রাজনৈতিক দল তাদের না থাকে, তাহলে যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়। আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিয়ালদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতাদের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।