
অব্যবহৃত ছয়টি বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। চলতি বছরই এসব বিমানবন্দর সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করার ব্যাপারেও আশাবাদী বেবিচক কর্মকর্তারা।
বিমানবন্দরগুলো কী অবস্থায় আছে তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা কোনো কোনো বিমানবন্দরে গরু-ছাগল চরানো হচ্ছে। আবার কোনোটিতে গরুর খামার গড়ে তোলা হয়েছে।
এদিকে, বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দরের কাজ দ্রত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালায়। দীর্ঘদিন ধরে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অব্যবহৃত বিমানবন্দরগুলো পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।’
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের সব বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে; বিশেষ করে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। যেসব অব্যবহৃত বিমানবন্দর রয়েছে, সেগুলো কীভাবে সক্রিয় করা যায়, সেই জন্য আমরা চিন্তভাবনা করছি।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, দিনে দিনে আকাশপথের যাত্রা বেড়ে গেছে। সড়কপথে যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতেই মূলত আকাশপথে যাতায়াতের প্রবণতা বাড়ছে নিয়মিত। ফলে এভিয়েশন খাতও লাভজনক হয়ে উঠেছে। আকাশপথের প্রতিটি রুটেই যাত্রী বাড়ায় চাহিদা অনুযায়ী টিকিট পাওয়া যায় না। বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ আমানত, সিলেট ওসমানী, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, বরিশাল ও রাজশাহী বিমানবন্দর দিয়ে বিমান চলাচল করছে। অকেজো অবস্থায় যেসব বিমানবন্দর পড়ে আছে, সেগুলো হলো পাবনার ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, মৌলভীবাজারের শমশেরনগর, কুমিল্লা, বগুড়া ও লালমনিরহাট। ব্রিটিশ আমলে বিমানবন্দরগুলো তৈরি করা হয়। কয়েকটি বিমানবন্দর চালু হলেও সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। কোনো কোনো বিমানবন্দর চালু করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবিও উঠেছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, বিমানবন্দরগুলো বর্তমান কী অবস্থায় আছে, তা নিয়ে বেবিচক কর্মকর্তারা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অব্যবহৃত বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে দুটিতে একটি বাহিনীর গরুর খামার আছে এবং সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অন্যগুলোর অবস্থা খারাপ। কয়েকটিতে গরু-ছাগল লালন-পালন করা হয়। সব কটি বিমানবন্দরই পুনরায় সক্রিয় করতে সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। কী পরিমাণ অর্থ লাগবে তা নিরূপণ করতে তারা কাজ করছেন। তারা আশা করছেন, চলতি বছর কাজ শুরু করা যাবে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঈশ^রদী বিমানবন্দরে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়। ২০১৩ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এখান থেকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করলেও পরের বছরই তা বন্ধ হয়ে যায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর ঘিরে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
ঈশ^রদী বিমানবন্দরটি চালু হলে পাবনা, নাটোর ও কুষ্টিয়ার মানুষ সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে বলে দাবি ওই এলাকার মানুষের। এ নিয়ে ওই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা সংসদে কথা বলেছেন। দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কারণে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে পাবনায় যেতে হচ্ছে।
ঈশ^রদী বিমানবন্দরের জন্য ৪৩৬ দশমিক ৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১৪৫ দশমিক ৯১ একর জমি এখন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দখলে রয়েছে। এই জমিতে বিমানবন্দরের টার্মিনাল বিল্ডিং, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, অ্যাপ্রোন, নেভিগেশন ও সংযোগ সরঞ্জাম, অফিসারদের আবাসিক এলাকা এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তা রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে করা বিমানবন্দরটি প্রথমবার বন্ধ হয়ে যায় ১৯৮৭ সালে।
বিমানবন্দরের বাকি ২৯০ দশমিক ৭৪ একর জমি সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে।
বেবিচকের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘১৯৯৫ সালে অ্যারো বেঙ্গল এয়ার সার্ভিস মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট চালু করলেও যাত্রীর অভাবে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের মানুষকে বিমানে যাতায়াত করতে সিলেট বিমানবন্দর ব্যবহার করতে হয়। সময় লাগছে বেশি। শমসেরনগর বিমানবন্দর চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষ অনেক উপকৃত হবে। কুমিল্লা মহানগরীর নেউরা-ঢুলিপাড়ার পাশে কুমিল্লা বিমানবন্দর ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে সচল ছিল। ১৯৯৪ সালে পুনরায় বিমানের ফ্লাইট চালু হলেও যাত্রী সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। বিমানবন্দর-সংলগ্ন ইপিজেড রয়েছে, কিন্তু যোগাযোগ সমস্যার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তিনি বলেন, এসব বিষয় আমরা প্রতিবেদনে উপস্থাপন করেছি।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি অকেজো। আশির দশকের পর লালমনিরহাট বিমানবন্দর দিয়ে ফ্লাইট চলাচল করেনি। বগুড়া বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
সূত্র জানায়, বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এই বিমানবন্দরের জন্য ২০১৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু চারদিকে দেয়াল নির্মাণ করা ছাড়া কোনো কাজই হয়নি। ২০১৮ সালের জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা ছিল।
এ বিষয়ে বেবিচকের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাকিস্তান আমলেই খুলনায় বিমানবন্দর নির্মাণের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ১৯৬১ সালে খুলনার মূল শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে ফুলতলার মশিয়ালীতে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়। ১৯৬৮ সালে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে খুলনা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতিতে স্থান নির্বাচন এবং জমি অধিগ্রহণও হয়। পরে সেই স্থান বাতিল করে আশির দশকে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালীতে স্থান নির্ধারণ করা হয়। এরশাদ সরকারের আমলে খুলনা-মোংলা মহাসড়কের ওপর স্টল বিমান নামানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে ৯৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বাগেরহাটের রামপালে খানজাহান আলী বিমানবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, পরে ২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর করার ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর নতুন করে আরও ৫৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ৫৪৪ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। মাস দুয়েক আগে বিমানবন্দরের কাজ শুরু করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার নানারকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দাবি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি তাতে গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বেশি দাম দিয়েও কৃষক ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেল, সার ও বীজের দাম বেড়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। তার মানে চারদিক থেকে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর ফলে কৃষকের ‘সিগনিফিকেন্ট লস’ হবে। এভাবে দাম বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বোরো উপকরণনির্ভর ফসল। কিন্তু উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে, কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেললে; সে ঠিকমতো উপকরণ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। উৎপাদন খারাপ হলে চালের ঘাটতি হবে। এমনিতেই এখন প্রায় ৭০ লাখ টন গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। এরমধ্যে যদি চাল আমদানি করতে হয়; তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
ড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সারাবিশ্ব নানারকম সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় আমাদের অন্তত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সে পরিমাণ নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে কৃষককে। ২০০৯-১০ সালের দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক কোটির বেশি কৃষককে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা সরাসরি নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলেছিলেন। তাদের সেই অ্যাকাউন্ট এখনো আছে, কিন্তু সহায়তা দেওয়া হয় না। এখন যদি সেই সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে কৃষক আবার উৎসাহ পাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি বছর সেচ মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের তুলনায় এ বছর সেচ সংযোগের সংখ্যা ১ হাজার ৯১টি বেড়ে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৯টি হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ লাগবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ভালো হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৭৭ হাজার ৪০০ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৬৬ হাজার ১০০ টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ করা বাস্তবে খুব কঠিন ব্যাপার। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর জ¦ালানির ঘাটতি আরও বেশি। তবে সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে তা নিয়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই সন্দিহান।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
দেশে নির্মাণাধীন ও আমদানিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে এলেও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
এদিকে ডলার সংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিলম্বের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সরকারের কাছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটা অঙ্কের বিল পাওনা থাকলেও তারা ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ এবং জ্বালানি আমদানির যে অগ্রগতি তাতে চাহিদার তুলনায় আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১ হাজার মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে।
এদিকে দাম সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে জানুয়ারি মাসে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর মধ্যে দু’দফায় অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে সেচে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২৯ টাকা দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে।
কুমিল্লার নাঙলকোট উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মজুমদার বলছিলেন, গত বছর এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ধান চাষ করতে সেচের জন্য ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বোরো মৌসুমে এ ব্যয় বেড়ে অন্তত ৪ হাজার টাকা হবে। এর বাইরে অন্যান্য খরচও আনুপাতিক হারে অনেক বেড়েছে। ফলে এখন ধান চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গ্রামের শিয়ালা গ্রামের কৃষক নাঈম। শনিবার রাতে টেলিফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর সেচের ব্যয় বেড়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বেড়েছে।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানির সময় বিইআরসি কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব কিছুই বিবেচনা করা হয় না।
অতীতে সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ, যাদের অধিকাংশই কৃষক। কিন্তু সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফ লাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩.৭৫ টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪.১৪ টাকা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সবসময়েই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৩৭ টাকা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৫৯ টাকা করা হয়েছে।
রংপুরের একজন কৃষক আনোয়ার আলী খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে চাষি তো আর বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘ধান চাষ করে এখন লাভ তো দূরের কথা খরচই ওঠে না। তাই আগের চেয়ে ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছি। এখন সারা বছর খাওয়ার জন্য যতটুকু ধান দরকার ততটুকুই চাষ করি। তাতে লোকসান হলেও কী করব? ডাল-ভাত তো খাওয়া লাগবে।’
১৯৭৬ সালে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন ও লিবিয়ায় ৬ হাজার ৮৭ জনকে পাঠানোর মাধ্যমে দেশের প্রবাসী কর্মসংস্থানের যাত্রা শুরু। ওই সময় থেকেই প্রবাসী আয়ের প্রধান অঞ্চল হিসেবে ধরা হয় মধ্যপ্রাচ্যকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর প্রবাসী আয়ের গতিপথে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। আর সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে পশ্চিমা দেশ। শীর্ষ স্থানে থাকা সৌদি আরবকে ডিঙিয়ে চলতি অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছেন। তুলনামূলক কম প্রবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় বেড়ে যাওয়া স্বস্তি দিলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। হঠাৎ হুন্ডির প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এরপরই অবস্থান সৌদি আরবের। অথচ গত দশ বছরে কখনো প্রবাসী আয়ে সৌদিকে পেছনে ফেলতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৯৬ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় (১০৭ টাকা দরে) যা ২১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। বিপরীতে সৌদি আরব থেকে আলোচিত সময়ে এসেছে ১৯০ কোটি ৯১ লাখ ডলার বা ২০ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। শুধু সৌদি নয়, একই অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোরও।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পরিবেশ রয়েছে। যে কারণে হুন্ডির পরিমাণ বাড়ছে। এতে দেশে রেমিট্যান্স কমতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের আয় কম। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠালে তারা ১০৭-৯ টাকা পাচ্ছে। অথচ হুন্ডিতে পাঠালে পাচ্ছে ১১৫-১৮ টাকা। তাই তারা হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছে।
পশ্চিমা দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স বাড়ার কারণ জানতে চাইলে সাবেক গভর্নর বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে কেউ হঠাৎ করে অনেক ডলারের মালিক হয়ে গেলে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এতে সেখানে হুন্ডির কারবারিরা সুবিধা করতে পারছে না। এ ছাড়া ওই দেশগুলোতে যাওয়া বাংলাদেশিদের অধিকাংশই শিক্ষিত ও সচেতন। তাই তারও রেমিট্যান্স হুন্ডিতে কম পাঠায়।
অসমর্থিত সূত্র মতে, অর্থ পাচারকারীরা হুন্ডির মাধ্যমেই পাচার করছে দেশের অর্থ। এজন্য তারা মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে হুন্ডি এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে। এমনকি কয়েকটি বেসরকারি খাতের ব্যাংকের নিয়োগ করা রেমিট্যান্স কর্মকর্তারাও হুন্ডি এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২১ সালের শেষে মোট প্রবাসী বাংলাদেশির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৩৩ লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন। ২০২২ সালে গিয়েছেন ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ কর্মী। আর গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গিয়েছেন ৫ লাখ ২০ হাজার ৩৫৫ জন। করোনার কারণে ২০২১ সালে অনেক দেশে কর্মী পাঠানো বন্ধ ছিল। বিপরীতে বিপুলসংখ্যক কর্মী দেশে ফিরেছে। গত বছর আবারও প্রচুর পরিমাণ জনশক্তি বিদেশে গেলেও প্রবাসী আয়ে এর প্রভাব পড়েনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা চলাকালে হুন্ডিসহ অবৈধ লেনদেনের সুযোগ কমে যাওয়ায় মানুষ বাধ্য হয়েই বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কিন্তু গেল বছর করোনার প্রকোপ না থাকায় আবারও অবৈধ অর্থ লেনদেনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ কারণে দেশে প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। তবে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় হুন্ডি কিছুটা কমেছে। এতে বাড়ছে প্রবাসী আয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সৌদি আরব থেকে প্রবাসী আয় এসেছিল ৪৫৪ কোটি ডলার। আর আগের চার অর্থবছরে দেশটি থেকে আসা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ যথাক্রমে ৫৭২ কোটি, ৪০১ কোটি, ৩১১ কোটি ও ২৫৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগের ৫ বছরই সৌদি থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল।
এ ছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৪৩ কোটি ডলার। এর পরের অর্থবছরগুলোতে যথাক্রমে ২৫৪ কোটি, ২৪৭ কোটি, ২৪৩ কোটি, ২০৭ কোটি ডলার এসেছে। আর চলতি অর্থবছর দেশটি থেকে এসেছে ১৩৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রতিনিয়তই দেশটি থেকে প্রবাসী আয় কমছে।
প্রবাসী আয় পাঠানোর দিক থেকে শীর্ষ পাঁচে থাকা আরেকটি দেশ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত। দেশটি থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১২০ কোটি ডলার। এর পরবর্তী বছরগুলোতে যথাক্রমে ১৪৬ কোটি, ১৩৭ কোটি, ১৮৮ কোটি ও ১৬৮ কোটি ডলার।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলেও বাড়ছে পশ্চিমা দেশগুলোতে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে কয়েকগুণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৯ কোটি ডলার। পরের অর্থবছরে এর পরিমাণ কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১৮৪ কোটি ডলার। এরপর হু হু করে দেশটি থেকে বেড়েছে প্রবাসী আয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসীরা ২৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। পরের অর্থবছর ২০২০-২১-এ ৩৪৬ কোটি, ২০২১-২২-এ ৩৪৪ কোটি আর চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই দেশটি থেকে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৯৭ কোটি ডলার।
একই অবস্থা ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যেরও। দেশটি থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১০ কোটি ডলার। পরের অর্থবছরেগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যথাক্রমে ১১৭ কোটি, ১৩৬ কোটি, ২০২ কোটি, ২০৩ কোটি ডলার দাঁড়িয়েছে। আর সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশির পরিমাণ ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৮ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ লাখ ৭৭ হাজার ২০৭ জন। এ ছাড়া কুয়েতে ৬ লাখ ৩০ হাজার ৭২৪, ওমানে ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৯৮৩, কাতারে ৮ লাখ ১৩ হাজার ৭১৬ এবং বাহরাইনে ৪ লাখ ১০ হাজার ৪৭২ জন প্রবাসী বসবাস করেন। অন্যদিকে, পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে (স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য) ১০ লাখ ৪২ হাজার ৭১০, যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ১৪৭, ইতালিতে ৫৫ হাজার ৫৯১ ও অন্য দেশগুলোতে ২ লাখের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন।
জিম্মাদারির লড়াই শুরু ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কে হবে জিম্মাদারÑ শিশুদের বাবা নাকি মা? জাপানে জন্ম নেওয়া দুই শিশুর অভিভাবকত্ব ও হেফাজত নিয়ে জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও তার স্বামী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইমরান শরীফের দ্বন্দ্ব চলছেই অশেষ সেই ফ্যামিলি ডিসপুট। যদিও সম্প্রতি বাংলাদেশের আদালত শিশুদের জিম্মা মা নাকানো এরিকোকেই দিয়েছে।
তবু দ্বন্দ্ব নিঃশেষিত হয়নি। অধস্তন আদালত, হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ, আবারও অধস্তন আদালত; অতঃপর আবারও আপিল। মাতৃত্ব-পিতৃত্বের দাবির লড়াই এখনো থামেনি। চলছে। গত রবিবার পারিবারিক আদালতের রায়ে যখন দুই মেয়েকে মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়, হতাশায় ভেঙে পড়েন বাবা ইমরান শরীফ।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতপাড়ায় কথা হয় বাবা ইমরান শরীফের সঙ্গে। ছলছল চোখে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিতৃত্বের দাবি প্রতিষ্ঠায় এত কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়! আদালত বলেছে, দুই মেয়ের মায়ের কাছে থাকাই মঙ্গলজনক। তিনি বলেন, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, বাবা হিসেবে আমার ভূমিকা কী? আমার কি কিছুই পাওয়ার নেই? নাকানো সন্তানদের পেটে ধরেছে। কিন্তু আমারও তো ঔরসজাত তারা। আমি কি তাদের কাছে পাব না? নাকানো সবকিছুর বিনিময়ে সন্তানদের চাইছে। আমিও তো তা-ই চাইছি। আমার পিতৃত্বের অধিকার ছিনতাই হয়ে যাবে! নিজের সন্তানের দাবি কি কোনো বাবা কখনো ছেড়ে দেয়!
বাবার ভরসা এখন মেয়ে লায়লাকে ঘিরে। তাও তার জিম্মাদার তিনি শেষ পর্যন্ত হতে পারবেন কি না সন্দেহ। ওই মেয়ে কিন্তু বাবার কাছেই থাকতে চায়। আদালতের রায়ের পর বাবাকে জড়িয়ে ধরে সে বলে, ‘বাবাকে ছাড়া কোথাও যাব না।’ এও এক মানসিক পীড়নের কারণ। বিষয়টি আদালতের বিবেচনাধীন। যা হওয়ার তা আইন অনুযায়ীই হবে। তবে ইমরান আশা করেন আদালত তার পিতৃত্বের দাবি আমলে নেবে।
১৩ ও ১১ বছর বয়সী দুই শিশুর জিম্মা পেতে ইমরান শরীফের মামলা গত ২৯ জানুয়ারি খারিজ করে রায় দেয় ঢাকার একটি পারিবারিক আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে ইমরান শরীফের করা আপিলের শুনানির জন্য ঢাকার পারিবারিক আপিল আদালত (জেলা ও দায়রা জজ) ১৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছে। তিনি বলেন, দুই বছর ধরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। এ আইনি জটিলতার শেষ কবে জানি না। তবে পিতৃত্বের দাবির লড়াইয়ে থামাতে চাই না। আমি পারিবারিক আদালতে ন্যায়বিচার পাইনি। এখন আপিলের রায়ের অপেক্ষা করছি। আশা করি ন্যায়বিচার পাব। যদি এতেও হেরে যাই উচ্চ আদালত আছে। বাবা হিসেবে আমার দাবি কেউ না কেউ দেখবে।
নাকানো এরিকোর আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, রায়ের নির্দেশনা না মেনে ইমরান শরীফ মেয়ে লায়লা লিনাকে নিয়ে উধাও হয়ে যান। গত ৩০ জানুয়ারি এ নিয়ে গুলশান থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করা হয়। গত বুধবার ভোরে র্যাব গুলশানের কালাচাঁদপুরের একটি বাসা থেকে তাদের উদ্ধার করে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে। সংশ্লিষ্ট একাধিক আইনজীবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, গুলশান থানায় ইমরান শরীফকে আদালতের রায়ের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আবেগী পিতা অবোধ, কিছু মানতে চাইছেন না। এরপর মেয়েকে ওইদিন পাঠানো হয় তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে।
গত বৃহস্পতিবার জিডির সূত্রে বিষয়টি আবারও আদালতে আসে। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান বিষয়টি তার এখতিয়ারে নেই জানিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে পাঠান। মহানগর হাকিম মো. মামুনুর রশীদ উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে দুই মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চান। বিচারকের খাস কামরায় কথা বলার পর অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বলা হয়, পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লায়লা এক দিন থাকবে বাবার কাছে, এক দিন থাকবে মায়ের কাছে।
এই আদেশের পর কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশু লায়লা বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে, সে বাবাকে ছাড়া কোথাও যাবে না। আদালতে সে সময় নাকানো এরিকো ও তাদের বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা ছাড়াও উভয়পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। ইমরান শরীফ বলেন, আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসছে। আমি নাকি সন্তানকে নিয়ে উধাও হয়েছি। আমি তো ফৌজদারি মামলার আসামি নই। আদালত রায় দিয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু আমার সন্তানের পরিচয় তো মুছে যায়নি।
ওই রায়ের পর নাকানো বড় মেয়েকে নিয়ে জাপান চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আদালতের রায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ইমরান শরীফের আইনজীবীরা বলেন, পারিবারিক আদালতের রায়ে মা তার সন্তানদের হেফাজতে নেওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পাননি। তবে নাকানো এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির দেশ রূপান্তরকে বলেন, আদালত দুই শিশুকে মায়ের হেফাজতে দিয়েছে। এরপর তিনি সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন সেটি তার ও তাদের বিষয়। পিতা হিসেবে সন্তানের প্রতি আবেগ থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু আদালতের রায় মানতে হবে।
দুই বছর ধরে কেন এ জটিলতা এ প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট একাধিক আইনজীবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাপানের একক অভিভাবকত্ব আইন হিসেবে পরিচিত সিভিল ল ‘সিঙ্গেল প্যারেন্ট কাস্টডি ল ইন জাপান’ অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রীর বিচ্ছেদ হলে বা তারা পৃথক হলে আদালতের আদেশ অনুযায়ী সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাবা বা মা যেকোনো একজনের হেফাজতে বা অভিভাবকত্বে থাকবে। জাপানের বাইরের নাগরিকের ক্ষেত্রে এ আইন বড় সমস্যা তৈরি করে।
ইমরান শরীফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পারিবারিক আদালতের রায় পড়ে মনে হয়েছে, বাবার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। সন্তানের অধিকার মা-বাবা দুজনেরই আছে। দুই বছর ধরে এ শিশুসন্তানরা অনেক মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি বলেন, জাপানের ওই আইন পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের দাবির প্রতি বড় বাধা। সেটা তাদের সমস্যা। নাকানো এরিকো যদি দুই মেয়েকে নিয়ে জাপানে চলে যান তাহলে বাবা হিসেবে ইমরান শরীফ কী পাবেন? এটি যেকোনো পিতার জন্য বেদনাদায়ক হবে। অন্তত একজন সন্তানকে কাছে রাখতে চাইছেন ইমরান শরীফ। সেটিও বেশ কঠিন মনে হচ্ছে।
প্রকৌশলী ইমরান শরীফ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মসূত্রে জাপানের টোকিওতে গিয়ে পরিচয় হয় চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে। ২০০৮ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের তিন কন্যাসন্তান। এ দুই মেয়ে ছাড়াও দুজনের পাঁচ বছর বয়সী আরও একটি সন্তান রয়েছে টোকিওতে। পারিবারিক কলহে ইমরান শরীফ বড় ও মেজো মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন ২০২১ সালে। নাকানোর অভিযোগ, তথ্য গোপন করে দুই মেয়েকে তার কাছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
দুই মেয়েকে পেতে নাকানো এরিকো বাংলাদেশে এসে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন। ওই বছরের ২১ নভেম্বর এক রায়ে ইমরান শরীফের জিম্মায় দুই শিশু থাকবে বলে রায় দেওয়া হয়। তবে শিশুদের মা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সন্তানদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নাকানোর আইনজীবীরা। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের আদেশে দুই শিশুকে তাদের মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় আপাতত রাখার আদেশ দেয়। এ সময়ে বাবা দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সন্তানদের সান্নিধ্য পাবেন বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়। পরে এ আদেশের সময়কাল কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দুই শিশু আপাতত মায়ের কাছে থাকবে আদেশ দিয়ে মামলাটি পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। অবশেষে ফখরুলের স্বপ্নভঙ্গ। ফখরুল সাহেব বলেন রাষ্ট্রতন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে হারানো হয়েছে। হায়রে মায়া। হিরো আলমের জন্য এত দরদ উঠল ফখরুলের। ফখরুল ভেবেছিল হিরো আলম জিতে যাবে।’ বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য অপরাজনীতি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে তার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। শনিবার কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল মাঠে শান্তি সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপি ছেড়ে দেওয়া ছয়টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হন দেশের আলোচিত আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনের আওয়ামী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটে পরাজিত হন হিরো আলম।
বিএনপি আন্দোলনের খেলায় হেরে গেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের উঁচু গলা নিচু হয়ে গেছে। কী খেলব তাদের সঙ্গে? বিএনপিকে বলি ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দারে’র সঙ্গে খেলতে চাই না। সেই রকম পার্টি দরকার, প্রতিপক্ষ দরকার। আন্দোলনের খেলাইতো পরাজিত হয়ে গেছেন, আর পারবেন না। আন্দোলনের বেলা চলে গেল।
বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে মোকাবিলা হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত, আপনারাও প্রস্তুত হোন। খালি মাঠে আমরা গোল দিতে চাই না, দুর্বল প্রতিপক্ষ চাই না। আসেন আপনারা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ চাই, নির্বাচন ফেয়ার হবে।
ওবায়দুল কাদের যখন বক্তব্য শুরু করেন তখন তার পেছনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলেন। তা দেখে মেজাজ হারিয়ে কাদের বলেন, পেছনে এত লোক কেন দাঁড়িয়েছেন? আমাদের এত নেতার দরকার নেই। সরে যান। ছাত্রনেতারা এত বড় নেতা হয়ে গেছেন? তারা মঞ্চে কেন? এটা আওয়ামী লীগের মিটিং। আমি যখন ছাত্রলীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগের মঞ্চ হতো বায়তুল মোকাররমের সামনে। আমি সভাপতি একদিনও মঞ্চে উঠতে পারিনি, বক্তৃতা তো দূরের কথা। তিনি বলেন, এখন আমার ছাত্র ভাইদের জ্বালায় মঞ্চ ভেঙে পড়ে। সব প্রাক্তন নেতা! ওয়ার্ড শাখার কোন সময় সেক্রেটারি ছিল, তিনিও এখন প্রাক্তন ছাত্রনেতা। সব মঞ্চে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এত সুন্দর পরিবেশ, হাজার হাজার শিক্ষার্থী। মঞ্চে এত ভিড়, ধারণ করতে পারেনি। আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেন। আমার পাঁচ পাঁচবার ড্রেসিং করতে হয়েছে। আমিতো সেটা বলিনি। এসব নিয়েই আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে আমি যাচ্ছি। প্রতিদিন পার্টি অফিসে আসি। দল করলে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে।
ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপারজেয় বাংলার সামনে শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশ করে সংগঠনটি। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ওবায়দুল কাদের। তার বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ করে মঞ্চ ভেঙে যায়। এতে ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতা আহত হন।
‘পাকিস্তান আমল ভালো ছিল’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের ৬ মাস আমদানি করার রিজার্ভ আছে। পাকিস্তানে ৩ সপ্তাহের রিজার্ভও নেই। তিন সপ্তাহে আমদানি করতে পারে সেই টাকা তাদের রিজার্ভে নেই। আজকে ক্ষুধায় সমস্ত পাকিস্তান কাঁপছে। সেই পাকিস্তান আপনার ভালো লাগে। বাংলাদেশ বাংলাদেশ থাকবে। এই বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু আপনারা যদি ক্ষমতায় যান বাংলাদেশ আজকের পাকিস্তান হবে। ফখরুল সাহেবের পেয়ারের পাকিস্তান বাংলাদেশকে বানাবে আমরা সেটা হতে দেব না।
দলের মধ্যে থেকে, সরকারের মধ্যে থেকে, দলের পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, মাস্তানী, জমি দখল, এসব যারা করবে, মাদক ব্যবসা যারা করবে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সঙ্গে আছে তাদের আওয়ামী লীগ করার সুযোগ নেই বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
তারেক রহমানকে সন্ত্রাসী উল্লেখ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, আপনাদের সন্ত্রাসী নেতাকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব খুঁজুন। কারণ আপনারা যাকে নেতা হিসেবে মানেন, সেই তারেক রহমান কোনো রাজনৈতিক নেতা নন। তার মধ্যে দুর্নীতি আর হত্যার রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নেই। তিনি রাজনীতি করে আসেননি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসেবে রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সন্ত্রাসীর নেতা হতে পারেন, জনগণের নেতা হতে পারেননি।
সরকারে পতনের দাবিতে শনিবার পল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি। একই দিন কামরাঙ্গীরচরে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। যদিও এটিকে পাল্টাপাল্টি বলতে রাজি নয় ক্ষমতাসীনরা। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির কর্মসূচির দিন রাজধানীতে পৃথক কর্মসূচি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা দাবি করছে জনগণের জানমাল রক্ষায় তারা মাঠে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
গতকাল শনিবার ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা বিএনপির কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন প্রমুখ। শান্তি সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। গতকাল শনিবার সারা দেশে বিভাগীয় সমাবেশ থেকে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণতন্ত্র হত্যা করেছে। দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সব গণমাধ্যম বন্ধ করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দেশ এখন লুটেরাদের কবলে পড়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের ছেড়ে দেওয়া ৬টি আসনের উপনির্বাচনে যা হয়েছে তাতে প্রমাণ হয়েছে সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। হিরো আলমের মতো একজন প্রার্থীকে হারাতে সরকার পুরো রাষ্ট্রীয় শক্তি কাজে লাগিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় কখন পদযাত্রা হবে, সেটা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। ইউনিয়নের পর পর্যায়ক্রমে উপজেলা, জেলা, মহানগর, সর্বশেষ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে নিয়ে তাদের ক্ষমতার মসনদ দখল করে নেব।’
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা সড়কে অবস্থান নেওয়ায় ফকিরাপুল থেকে নাইটিংঙ্গেল মোড়গামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে ঘুরে দৈনিক বাংলা মোড় ও বায়তুল মোকাররম ঘুরে যেতে হচ্ছে, তাতে যাত্রীদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার হিরো আলমের কাছেও অসহায়। আজ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে পরাজিত করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ব্যক্তিকে জেতাতে প্রার্থীকে গুম করা হয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিস্থিতি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন। সেই লক্ষ্যেই আমরা ১০ দফা ও ২৭ দফা প্রণয়ন করেছি। এর মধ্য দিয়েই দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে যে তারা একটি দাবিতে আন্দোলন করছে। সেটা হলো এই অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারের পদত্যাগ। আমরা বলে আসছি অনির্বাচিত সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ সরকার টিকে আছে চাপার জোরে। গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। তারা একদিকে ঋণ করছে আরেকদিকে জনগণের পকেট কাটছে। স্বাধীনতার আগে ছিল ২২ ফ্যামিলি এখন ১০ হাজার ফ্যামিলি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজ হাজার হাজার ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছে। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষ্টি কালচার নষ্ট করছে। সরকার সংসদ থেকে শুরু করে সবকিছু ধ্বংস করে একটি ব্যর্থ জাতি তৈরি করতে চায়। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানো হবে। এরপরে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা ধীরে ধীরে চলছি। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছি।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল খবির খোকন, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, তাবিথ আউয়াল, প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, আফরোজা আব্বাস, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্নাসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
এদিকে দুপুরে পূর্ব পান্থপথে এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি সমাবেশ করে। এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, সকালে পশ্চিম পাশে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমাবেশে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদী- লেনিনবাদী) সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরী, ফকিরেরপুল পানির ট্যাংকের কাছে ১২ দলীয় জোটের সমাবেশে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এবং পুরানা পল্টনে প্রীতম ভবনের উল্টো দিকের সড়কে জাতীয়তাবাদী সমমনা দলের সমাবেশে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ যুগপৎ আন্দোলনের অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গণমিছিল, গণ-অবস্থান ও বিক্ষোভ সমাবেশের পর এটি সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের পঞ্চম কর্মসূচি।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।