
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যোগফল ভীষণ ফারাক সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে, এমন দাবি করেছেন দলটির অন্তত দুই ডজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলছেন, এ ফারাক কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে, যে কারণে দলীয় কাজকর্মে নিষ্ক্রিয় অনেকেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেককেই এখন দলীয় কার্যালয়ে দেখা যায় না।
ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নির্বাচিত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভালো কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকাংশে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন তারা। ২০০৯ থেকে গত বছর ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছে পাঁচটি। একই পদে থাকা একাধিক নেতার পদোন্নতি বা পদাবনতি কিছুই হয়নি। এটিও হতাশার বা নিষ্ক্রিয় থাকার অন্যতম কারণ। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এ ধরনের সমস্যা নেতৃত্ব তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটায়।
ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচন দেখে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা মনোবেদনায় ভুগছেন। অল্পসংখ্যক নেতা যারা কাজ না করেও পদ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন, ভালো আছেন তারাই।
সম্প্রতি সভাপতিমন্ডলী ও সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের। তাদের হতাশা ও মনোবেদনা গোপন করেননি তারা। কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পদে থাকা এ নেতারা দাবি করেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সারা বছর কাজ করা নেতারা পদোন্নতি যেমন পাননি দলের জন্য কাজ না করা নেতাদের পদাবনতিও ঘটেনি। এ নীতি অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করায় নেতারা মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন। হতাশা হয়েছেন। এমনটা হলে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার কাজে অন্তরায় সৃষ্টি হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা বলেন, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় রাগ-ক্ষোভ ভেতরে পুষে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন নেতারা। উচ্চবাচ্য করার সুযোগ নেই তাদের।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এক দিনের সম্মেলনে বিকেলের অধিবেশনে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক রেখেই কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে নতুন তিন-চারজন যোগ হয়েছেন। কয়েকজন বাদে পুরনোরা সবাই থেকে গেছেন। পদোন্নতি বা পদাবনতি তেমন হয়নি। এর আগে আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলনেও পুরনো নেতৃত্ব বহাল রেখে কমিটি করা হয়। এ নিয়ে তৃণমূলেও হতাশা-ক্ষোভ দেখা গেছে।
অবশ্য এবারের জাতীয় সম্মেলনে সক্রিয় নেতার বাদ পড়ার নজিরও আছে। গত কমিটি থেকে বাদ পড়া কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্মেলনে কমিটি নির্বাচন দেখে মনে হয়েছে আমাকে বাদ দিতেই এ সম্মেলন। সামাজিকভাবে ও পরিবারের সদস্যদের কাছে আমি খুব লজ্জা পেয়েছি। আমি বাদ পড়ার কারণটাও খুঁজে পাই না।’
বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছেন। কিন্তু মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম ও মাহাবুবউল আলম হানিফসহ দুই-তিনজনকেই ঘুরেফিরে কর্মসূচিতে দেখা যায়। সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় এক নেতাকে একটি মাত্র কর্মসূচিতে দেখা গেছে। অন্য এক নেতা বিদেশে গিয়ে বসে আছেন। আগে সক্রিয় ছিলেন এমন আরেক নেতাকে আর কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডিতে সভাপতির কার্যালয়ে আগে নেতাদের ঘিরে নিচের দিকের নেতা ও কর্মীদের আড্ডা হতো। সেই আড্ডায় এখন ভাটা দেখা যাচ্ছে।
গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় কেন্দ্রের ডজনখানেক নেতাকে মঞ্চে দেখা গেছে। সাধারণত দলীয়প্রধানের জেলা সফরে কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই থাকেন। নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া শ্রেয় মনে করছেন কোনো কোনো নেতা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দিনরাত খাটাখাটুনি করা নেতারা যে ফল পেয়েছেন এবং দলীয় কার্যক্রমে না থেকে পদকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে ফায়দা লোটা নেতারাও একই ফল পেয়েছেন। তাহলে আর খাটুনি করে লাভ কি? তারা দাবি করেন, এ ধারা দলকে ও দলীয় রাজনীতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলবে।
কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া নেতারা বলেন, দলীয় কাজে সক্রিয় থাকতে মন সায় দেয় না এখন। চলছেও তাই। সম্মেলনের পর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি তেমন লক্ষণীয় নয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ও ধানমণ্ডিতে সভাপতির কার্যালয়ের চিত্র দেখে স্পষ্টই বোঝা যায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা। বেসরকারি টেলিভিশনে টক শোতে অনেক নেতা যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
দলের দুটি কার্যালয়ের সহকারীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের পর একদিনও এখানে আসেননি এমন দুই ডজন নেতা রয়েছেন। তারা বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাদের নামে যেসব চিঠি আসে সেগুলো বিলি করতে হয় তাদের বাসায় গিয়ে। অফিস সহকারীরা আরও বলেন, অনেক কেন্দ্রীয় নেতা দেশের বাইরে গেছেন এবং পরিবার-পরিজনকে সময় দিচ্ছেন। দেশে থাকা নেতারা বাসাবাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভেতরে হতাশা বাসা বাঁধায় রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা দেখছেন অনেকে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় দলীয় ঐক্য দৃঢ় করে তোলার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোবলে চিড় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) সম্মেলনের দিন মঞ্চেই ঘোষণা করেছেন সামনের নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তেমন পরিবর্তন আনতে চান না। সে কারণেই কাউকে বাদ বা পদোন্নতি দেওয়া উল্লেখযোগ্য হারে হয়নি। যারা রাজনীতি করেন রাজনীতির স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত মানতে হয়।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলন মানে তিন বছর শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য একটি পরীক্ষার আয়োজন। তিন বছরের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া ও কাজ না করা নেতাদের বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তিরস্কার করা। কার কী অবদান তার পরিমাপক হলো জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সেখানে খাটাখাটুনির যাচাই করে কেউ মেধাতালিকায় জায়গা পান। আবার কেউ দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করেন। ফেল করেন কেউ। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গতিশীল হয়ে উঠে যেকোনো সংগঠন। কিন্তু গেল সম্মেলনের চিত্র হলো কেউ ফেল করেনি। সবাই গড়ে পাস করে গেছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরীক্ষার ফলাফলের চিত্র এমন হলে সারা বছর কাজ করার কী দরকার! পদোন্নতির প্রত্যাশা করা আওয়ামী লীগের নেতা সবাই এখন এ নীতি অনুসরণ করে চলতে মনস্থির করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের পর নেতা নির্বাচন দেখে প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতা ভেতরে ভেতরে মানসিকভাবে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। ওপরে ওপরে সবাই স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ভেতরের অবস্থা তাদের নিষ্ক্রিয় করে তুলছে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনীতি এখন ‘পাওয়ার হাউজ’কেন্দ্রিক। আওয়ামী লীগ এখন ‘পাওয়ার হাউজ’ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে রাজনীতিতে যতই সক্রিয় থাকি বা নিষ্ক্রিয় থাকি ‘পাওয়ার হাউজ’-এর কৃপা না পেলে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার চেয়ে পাওয়ার হাউজের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার কৌশলে এগিয়ে যেতে চান অনেক নেতা।
রাজনীতির বাইরের এই ‘পাওয়ার হাউজ’ একটি বলয়ে আবর্তিত জানিয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর ওই নেতা বলেন, দলের জন্য কাজ না করলেও রাজনীতির পদপদবি ধরে রাখা সম্ভব। খাটাখাটুনির রাজনীতি এখন কেউ করবে না।
ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন, ‘ডেটা সুরক্ষা আইন যদি স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করার শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাংলাদেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে।’ গতকাল রবিবার রাজধানীর টি এম কে সেন্টারে ‘বাংলাদেশ অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন পিটার হাস।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশে আসার পর থেকে দেশটির ডিজিটাল যুগে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া নিয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ফুডপান্ডা থেকে বিকাশ এবং এর বাইরেও অনেক বিস্তৃতি দেখেছি। এটা আমার কাছে এখন স্পষ্ট, এই শতকে ডিজিটাল বিশ্বে দেশটি
স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রধান ভূমিকা পালন করতে চায়। এর মধ্যে পৃথিবী দ্রুত বদলাচ্ছে। আর বদলানোর কারণে প্রতিটি দেশের সরকার ও সমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তির দ্রুতগতিতে নাটকীয় পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের আইনেও নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সাজানোর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সবাই। যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশসহ সব দেশে এই চ্যালেঞ্জ আছে।’
পিটার হাস বলেন, ‘অনলাইন বিশ্ব যেমন বড় ধরনের সুযোগ করে দিচ্ছে, তেমনি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। ফলে সরকারগুলোকে অবশ্যই অনলাইন ও এর সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যবহারকারীর ডেটাকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে এবং মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে হবে। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। তারপরও এর ভারসাম্য রাখতে হবে।’
বদলে যাওয়ার সঙ্গে অর্থনীতির সংযোগ অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেন পিটার হাস। তিনি বলেন, ‘আজকের বিশ্বে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত না করে বিশ্বের কোনো দেশের পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের আমাদের মিশনের কাজের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ অন্যতম। একইভাবে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে একটি টেকসই ও যৌথভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এমন একটা অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত। আর এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যকে বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছি। আমরা মনে করি, একটা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বৃহত্তর পরিসরে অর্থনৈতিক সংযোগ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের আসনে স্থান করে দেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আরও সংযুক্ত করতে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশি ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যেন বিদেশি ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে আগ্রহ বোধ করেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ দেশে বিনিয়োগ করা এবং এখানে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ইচ্ছার কথা জানতে পেরেছি।’
বাংলাদেশের বাজার খুবই আকর্ষণীয় উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, ‘এ কারণেই সম্প্রতি আমরা দূতাবাসের একটি ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অফিস চালু করেছি। আর এর মধ্যেই আমরা আমাদের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আশঙ্কার কথাও শুনতে পেয়েছি। তারা বলছেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনের প্রবিধানগুলো এখানে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিক থেকে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রণীত প্রবিধানগুলোর পাশাপাশি খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্যোগ রয়েছে। আমরা যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বকে মূল্য দিই, তাই আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা সরকারের কাছে সরাসরি তুলে ধরেছি।’
খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় হলো, ডেটা সুরক্ষা আইন যদি ডেটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয়, মানে তা যদি আইনে পরিণত করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন বেশ কিছু আমেরিকান কোম্পানি এ দেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। এ ছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তারা এখানে ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে না। এ ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের জন্য খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ প্রায় দুই হাজারের বেশি স্টার্টআপকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হতে পারে এবং প্রতিদিন যে কোটি কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী তাদের সেবা নিচ্ছেন, তারা আর সেবাগুলো পাবেন না। তাই আমি মনে করি ব্যবসাকে আকর্ষণীয় করার জন্য উদ্ভাবনের সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সে জন্য অনলাইন উন্মুক্ত ও স্বাধীন হওয়া দরকার।’
মানবাধিকারের বিষয় টেনে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহারকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য অনলাইন বিষয়বস্তুর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে এবং এটাও সত্যি এ কাজটি খুব সহজ নয়। তবে আমরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যে কোশ্চেন দেখেছি, সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এমন কনটেন্ট বিষয়বস্তুর সংজ্ঞার বিস্তৃত পরিসর নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে ১৯১টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্লক করার ঘোষণায় উদ্বেগের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সমালোচনা গ্রহণ করার সক্ষমতা এবং অপ্রীতিকর বক্তব্য হলেও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা শক্তিশালী গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। আমাদের দূতাবাস নাগরিক সমাজের অনেক সংস্থা এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে এ আইনটির বিষয়ে শুনেছে। তাদের ভয় হলো এই নিয়ম আইন মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সীমিত করবে। ডেটা সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো, ডেটা সুরক্ষা আইনের সর্বশেষ খসড়ায় একটি স্বাধীন ডেটা তদারকি কর্র্তৃপক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং এই আইনে ফৌজদারি শাস্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ তাদের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করবে কিন্তু আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশকে আন্তর্জাতিক মানদন্ড সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই।’
সবশেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ ডেটা সুরক্ষা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদ-, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে উপযুক্ত ভারসাম্য গড়ে তুললে সেটা এ দেশের অব্যাহত উন্নয়নকে আরও গতিশীল করবে। বাংলাদেশের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত অংশীদার আমরা এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাফল্য দেখতে চায়।’
কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি একতালে রাখতে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে এবার ২০০১ সাল থেকে বিএনপির পদধারী অথবা সমর্থিত বর্তমান ও সাবেক উপজেলা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে শুরু সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করতে চান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য মহাসচিব বরাবর আবেদনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এসব নেতার কাছ থেকে দলের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে কী করণীয় তা জানতে চাইবেন তারেক। এ লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক কাজও শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ১০টি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে গত সোমবার।
ওই চিঠিতে সারা দেশের তথ্য সংগ্রহ করে গত ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়। নেতাদের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে প্রাপ্ত তথ্য দপ্তরে জমা হওয়ার পর সমন্বয় করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘২০০১ সাল-পরবর্তী বিএনপির পদধারী/সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা), পৌরসভার মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের তথ্যাবলি’ সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। এ প্রক্রিয়ার সমন্বয় করছেন দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু।
প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলেছেন। বিএনপিও মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে সরকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তেমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে এ ধরনের পদক্ষেপ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়েছেন। ওই নেতা জানান, এর আগে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহসম্পাদকসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কয়েকবার লন্ডন থেকে স্কাইপে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। কিন্তু দলের প্রাণ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসা হয়নি। তারা কী চান সেটিও জানা হয়নি। তাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক করে আন্দোলন ও নির্বাচনের সার্বিক চিত্রটি জানতে চান তিনি। কবে এবং কীভাবে এ বৈঠক হবে সেটি চূড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পরামর্শ থাকবে, রাজধানীতে না এনে এসব নেতাকে বিভাগওয়ারি মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে। সাংগঠনিক জটিলতা বা সরকারের অসহযোগিতার কারণে সেটি সম্ভব না হলে অন্তত ব্যক্তিগতভাবে হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলবেন তারেক রহমান।
বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ রয়েছে ১০টি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ফরিদপুর। এসব বিভাগে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, ৫৫০ উপজেলা পরিষদ (চেয়ারম্যান, পুরুষ ও মহিলা সদস্য মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০), ১০ জন সিটি মেয়র, প্রায় ৪৫০ কাউন্সিলর রয়েছেন, ৫৫০ পৌর মেয়র রয়েছেন। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনিপর স্থায়ী কমিটির এক সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনসহ স্থানীয় কোনো নির্বাচনে দলগতভাবে বিএনপি অংশ নেবে না।
সে হিসেবে ২০০১ সাল থেকে প্রায় তিনটি স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি। এ ছাড়াও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী যারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন তারাও রয়েছেন। তাই কমবেশি বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো বিএনপি জনপ্রতিনিধি রয়েছেন বলে দলটির এক নেতা জানান।
ওই নেতা আরও জানান, একসঙ্গে বসা অনেকটা দুরূহ। তবে ভাগে ভাগে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা যায়। কীভাবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে সেটি হাইকমান্ড ভালো বলতে পারবেন।
সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়া, নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলনের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে মতামত, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কীভাবে আদায় করা যায় সে বিষয়ে প্রস্তাব আসতে পারে তৃণমূলের এ বৈঠক থেকে। পাশাপাশি তৃণমূল বিএনপিকে উজ্জীবিত করার কৌশল হিসেবেও এ পদক্ষেপ নিতে পারেন বিএনপির হাইকমান্ড। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ জন্য তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করে এবার অলআউট মাঠে নামতে চায় রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি।
এদিকে দলের বহিষ্কৃত প্রায় অর্ধশতাধিক নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে তারেক রহমান দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের অনেককে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার আবেদন করতেও বলেছেন। পরিস্থিতি বুঝে ওই নেতাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়ে কাউকে কাউকে ইতিমধ্যে পদও দেওয়া হয়েছে। এমনি একজন স্বেচ্ছাসেবক দল দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন। ছাত্রদলের যে ১২ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তিনি তাদেরই একজন। এ তালিকায় আরও রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য নাদিয়া পাঠান পাপন, ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুল হক জিসান প্রমুখ নেতা। যুবদলের বহিষ্কৃত সাবেক এক সহসভাপতিকে সম্প্রতি ফোন দিয়ে কথা বলেছেন তারেক রহমান। তাকে দলের মহাসচিব বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, ঢাকা কলেজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ ই এম রাশেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকার, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন থেকে নির্বাচন করা মনিরুল হক সাক্কু প্রমুখ বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে আবেদন করেছেন।
এমন সংখ্যা কত জানাতে চাইলে তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, দলে প্রায় শতাধিক বহিষ্কৃত নেতা রয়েছেন। অনেকেই আবেদন করছেন বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া জন্য। এদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা), পৌরসভার মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিল মিলিয়ে অর্ধশতাধিক হবে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তবে আমরা চাই সেই নির্বাচনটা হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এই মুহূর্তে আমাদের একমাত্র চাওয়া হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। শুধু বিএনপি নয়, দেশের প্রতিটি মানুষের চাওয়াও তাই। সে লক্ষ্যে আমরা বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছি। সাংগঠনিকভাবেও আমরা নিজেদের যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি রাখছি।
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। গতকাল রবিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ সেনাশাসক। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, বিবিসি, জিও নিউজ, ডনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে নির্বাসিত মোশাররফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পাকিস্তানের সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠা জেনারেল মোশাররফ ক্ষমতা থাকাকালে ও আগে একাধিকবার হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হন। তবে প্রতিবারই মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরেন তিনি। কিন্তু শেষ অবধি নির্বাসিত জীবনে নীরবেই মৃত্যুকে বরণ করতে হলো সাবেক এ জেনারেলকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পারভেজ মোশাররফ দীর্ঘ রোগভোগের পর রবিবার দুবাইয়ের অ্যামেরিকান ন্যাশনাল হাসপাতালে মারা গেছেন। তার অসুস্থতার ব্যাপারে গত বছর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, অ্যামিলোডয়সিস নামে এক জটিল রোগে ভুগছেন। তার শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তার সেরে ওঠার প্রায় কোনো সম্ভাবনাই নেই। ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর পশ্চিমের বন্ধুখ্যাত মোশাররফ বারবার বেঁচে গেছেন হত্যাচেষ্টা থেকে। ক্ষমতা ছাড়ার পর ছাড়তে হয়েছে দেশও। তবে দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের ইচ্ছা ছিল তার। গত বছর থেকেই মোশাররফের পরিবার তাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু যে নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেছিলেন তার ভাই শাহবাজ শরিফ সরকার অনুমতি দেয়নি। তাই আলোচিত-সমালোচিত মোশাররফকে পরবাসেই মৃত্যুবরণ করতে হলো। এখন দুবাই থেকে তার মরদেহ পাকিস্তানে আনা হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিবিসি বলছে, ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের দিল্লিতে জন্ম নেওয়া পারভেজ মোশাররফকে মাত্র চার বছর বয়সেই পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে চলে যেতে হয়। তবে কূটনীতিক বাবার সঙ্গে দীর্ঘ সময় থেকেছেন তুরস্কে। ১৯৫৬ সালে ফেরেন পাকিস্তানে। ১৯৬১ সালের পাকিস্তানের কাকুলের সামরিক একাডেমি থেকে কমিশন পান। এরপর তিনি স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপে যোগ দেন। সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর তিনি কোয়েটার আর্মি কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজে পড়াশোনা করেছেন।
সাবেক এ সামরিক শাসক ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৯৮ সালে তিনি জেনারেল পদে পদোন্নতি পান, নেন চিফ অব আর্মি স্টাফের দায়িত্ব। তবে এর পরের বছরই কারগিল যুদ্ধে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকা নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় তার। সে বছরের অক্টোবরে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরিফের সরকারকে উৎখাত করে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন মোশাররফ। তিনি দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। সংবিধান স্থগিত করেন। দেশটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন তিনি। ২০০১ সালের জুনে পাকিস্তানের দশম প্রেসিডেন্ট হন এ সেনাশাসক।
পাকিস্তানের জিও নিউজ বলছে, ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ সমর্থন ও ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ছিলেন। যদিও এ কারণে স্বদেশে ব্যাপক বিরোধিতার শিকার হতে হয় তাকে। ওই সময়ের মধ্যে বহুবার আততায়ীর হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন জেনারেল মোশাররফ। তাকে উৎখাতের বহু প্লটও ব্যর্থ হয়েছে সে সময়।
২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কমপক্ষে চারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন মোশাররফ। প্রথম চেষ্টাটি হয়েছিল ২০০২ সালের এপ্রিলে। সেদিন প্রেসিডেন্ট মোশাররফ যে পথ ব্যবহার করছিলেন, সেই পথে লুকিয়ে রাখা হয় একটি রিমোট-নিয়ন্ত্রিত গাড়িবোমা। কিন্তু চেষ্টাটি ব্যর্থ হয়। যমদূতের হাত থেকে বেঁচে ফেরেন জেনারেল মোশাররফ।
দ্বিতীয় হত্যাচেষ্টাটি হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সেদিন ইসলামাবাদে জেনারেল মোশাররফের খামারবাড়ির কাছে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। তবে তার ২০-২৫ মিনিট আগেই ঘটনাস্থল অতিক্রম করে মোশাররফের গাড়ি। বোমাটি রাখা হয়েছিল ফুটপাতের ঠিক পাশে, একটি ড্রেনেজ পাইপে। আবারও বেঁচে যান জেনারেল মোশাররফ।
এ ঘটনার ঠিক ১২ দিন পর দুই ব্যক্তি আত্মঘাতী বোমা নিয়ে জেনারেল মোশাররফকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরে বোমাবাহী দুটি ট্রাক নিয়ে ঢুকে পড়েন তারা। প্রতিটি গাড়িতে ৪০ কেজির মতো বিস্ফোরক ছিল। এ সময় বিস্ফোরণে ছয় পুলিশ সদস্য ও চার সেনাসদস্যসহ ১৬ জন নিহত হয়। আহত হয় আরও ৪০ জন। তবে হামলার সময় সাঁজোয়া গাড়িতে থাকায় আরেকবার বেঁচে যান জেনারেল মোশাররফ।
পরবর্তী হত্যাচেষ্টাটি হয় এর ঠিক চার বছর পর। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে। সেদিন রাওয়ালপিন্ডির একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে বিমানে উড্ডয়ন করেছিলেন জেনারেল মোশাররফ। আর সেই বিমান লক্ষ্য করেই ছোড়া হয় গুলি। বিমানটি পরে অন্য একটি শহরে অবতরণ করে। সে সময় এ ঘটনার জন্য সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ওপর দোষারোপ করেছিলেন তিনি।
এর মধ্যে ২০০৩ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে হত্যাচেষ্টার দায়ে খালিদ মাহমুদসহ আরও চারজনকে ২০০৫ সালে সামরিক আদালতের রায়ে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে তা কার্যকরও হয়। এ চারটি চেষ্টা ছাড়াও সেনা কর্মকর্তা থাকাকালেও হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সে কথা তার ২০০৬ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘ইন দ্য লাইন অব ফায়ার’ বইতেও বলেছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের ভাষ্য, ক্ষমতায় টিকে থাকতে ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর পারভেজ মোশাররফ ফের জরুরি অবস্থা জারি করেন। সংবিধান স্থগিত করেন। জরুরি অবস্থা জারির ২৫ দিনের মাথায় তিনি সেনাপ্রধানের পদ ছাড়েন, তবে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকেন। ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি জরুরি অবস্থা তুলে নেন। ২০০৮ সালের আগস্টে অভিশংসন এড়াতে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। পরে ছাড়তে হয় দেশও। তবে দেশের বাইরে বসেই ২০১০ সালে পারভেজ মোশাররফ একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তার দলের নাম অল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এপিএমএল)। ওই দলের ব্যানারেই ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পাকিস্তানে ফেরেন তিনি। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যর্থ হন মোশাররফ। ওই নির্বাচনে জিতে নওয়াজ শরিফ ফের ক্ষমতায় ফিরলে মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় ২০০৭ সালে তার সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারিকে অবৈধ ঘোষণা করায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলার বিচার চলাকালে তার বেশিরভাগ সময় কেটেছে সেনাবাহিনীর একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নয়তো ইসলামাবাদের একটি খামারে। পরে ২০১৪ সালের এপ্রিলে তিনি করাচি চলে যান। সেখানে দুই বছর থাকার পর ২০১৬ সালে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। মোশাররফ সংযুক্ত আরব আমিরাত চলে যান। রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অপরাধে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিশেষ আদালতে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। যদিও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে লাহোর হাইকোর্ট। এরপর তাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করে পরিবার। তবে পাকিস্তান সরকারের সাড়া না মেলায় সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
অর্থনৈতিক সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে চূড়ান্ত হিসাবে দেশের সাধারণ মানুষের আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে এখন ৭ দশমিক ১০-এ দাঁড়িয়েছে। গতকাল রবিবার ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হওয়ার সাত মাস পর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করল।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার। সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলার হলেও বাস্তবে দেশের প্রতিটি মানুষের আয় তা নয়। কারণ, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে দেশের জনসংখ্যা দিয়ে মাথাপিছু ভাগ করে এ আয়ের হিসাব করা হয়। ফলে দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও তাতে ব্যক্তির আয়ে কোনো তারতম্য হয় না।
২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে গত বছরের ৩০ জুন। সাত মাসের বেশি সময় পার হওয়ার পর রবিবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ ওই অর্থবছরের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করল পরিসংখ্যান ব্যুরো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগ কমেছে। সব মিলিয়েই জিডিপি প্রবৃদ্ধি খানিকটা কমেছে। ফলে মাথাপিছু আয়ও ৩১ ডলার কমে গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার। বিশ^ প্রেক্ষাপটে এই প্রবৃদ্ধি ‘খুবই ভালো’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭ দশমিক ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বিশে^র যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।’
করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৭ শতাংশের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থনীতিবিদসহ বিশ্লেষকদের মধ্যে ছিল ব্যাপক সংশয়। সেই সংশয়ের মধ্যেই সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ওই অর্থবছরই সোয়া ৭ শতাংশ হয়েছিল।
তবে গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের পর এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ নাগাদ জিডিপির প্রবৃদ্ধি নেমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে। জিডিপি যে কমবে, সেই ইঙ্গিত এর আগে বিশ^ব্যাংকও পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি আবার আগের ধারায় ফিরবে বলেও জানিয়েছে আইএমএফ।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম (গোলাম মোহাম্মদ) কাদেরের দায়িত্ব পালন নিয়ে অধস্তন আদালতের নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে করা রিভিশন আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল রবিবার বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আট সপ্তাহের এ স্থগিতাদেশ দেয়।
এই স্থগিতাদেশের ফলে জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালন করতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানান তার আইনজীবীরা।
জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩০ অক্টোবর ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত এক আদেশে জি এম কাদেরের কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত ও কার্য গ্রহণের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করলে ১৬ নভেম্বর একই আদালতে সেটি খারিজ হয়ে যায়। এরপর ঢাকা জেলা জজ আদালতে আপিল করলে আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য গত ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য হয়। তবে বিলম্বে শুনানির তারিখ ধার্যে আপত্তি জানিয়ে জি এম কাদের আবেদন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করলে গত বছরের ২৯ নভেম্বর হাইকোর্ট অধস্তন আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিতসহ জেলা জজ আদালতে আপিলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির তারিখ দ্রুত করার প্রশ্নে রুল দেয়।
এই আদেশ স্থগিত চেয়ে জিয়াউল হক মৃধা আবেদন করলে ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠায় চেম্বার আদালত। ১৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে জি এম কাদেরের বিষয়ে অধস্তন আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকা জেলা জজ আদালতের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল রেখে আদেশ দেন।
এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে আবেদন করেন জি এম কাদের। তার আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অধস্তন আদালতের আদেশটি যেহেতু স্থগিত হয়ে গেছে, তাই তিনি (জি এম কাদের) এখন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’
‘আমি গণমানুষের পক্ষে কথা বলব’ : কথা বলা মানুষের জন্মগত অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি গণমানুষের পক্ষে কথা বলব, এটা আমার শুধু অধিকারই নয়, কর্তব্যও। ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিলে সরকারের উপকার হয়। মানুষের সমালোচনার অধিকার নিশ্চিত হলে দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।’
গতকাল রবিবার দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিতের পর এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত সভাটি জাপা চেয়ারম্যানের রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই সমাজে জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। জবাবদিহি নিশ্চিত হলেই রাষ্ট্রে প্রজাতন্ত্র সফল হয়। প্রজারাই রাষ্ট্রের মালিক। তারা দেশ পরিচালনার জন্য পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন, আবার প্রজাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করলে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারবেন।’
দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেই আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই বৈষম্য হচ্ছে স্বাধীনতার চেতনাপরিপন্থী। দেশে দিনে দিনে বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। একদল মানুষ তিন বেলা খেতে পারছে না। টাকার অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছে না। আরেক দল হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। তারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে।’
দেশের মানুষ নিষ্পেশিত হচ্ছে মন্তব্য করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে এলসি খুলে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নেই। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। কাঁচামাল আমদানি সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা। প্রতিদিন বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের আয় বাড়ছে না। সাধারণ মানুষের কষ্ট বোঝার যেন কেউ নেই।’
সভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির প্রমুখ।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
মানহানির মামলায় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর লোকসভার সদস্য পদও হারিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে তাতে তিনি ভীত নন, বরং উৎফুল্ল। নিজের অবস্থান থেকেও পিছু হটবেন না বলে ঘোষণাও দিয়েছেন। কারণ হিসেবে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যখন পার্লামেন্টে আমার পরবর্তী বক্তব্য নিয়ে ভীত, তখন আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো। আমি তার চোখে ভয় দেখেছি। এ জন্যই তারা আমাকে পার্লামেন্টে বলতে দিতে চায় না।
গতকাল শনিবার দুপুরে কংগ্রেস সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গৌতম আদানির সঙ্গে বিপেজির সম্পর্ক নিয়ে তার অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শুরু থেকে তিনি যে প্রশ্ন করে চলেছেন, এখনো সেটাই করবেন। শিল্পপতি গৌতম আদানির গোষ্ঠীতে যে ২০ হাজার কোটি রুপি লগ্নি হয়েছে, সেই টাকার উৎস কী? তার সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কই-বা কী?
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্নাটকে এক সমাবেশে রাহুল ‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কী করে?’ মন্তব্য করেছিলেন। ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুরনেশ মোদির করা মানহানির মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয় সুরাটের এক আদালত। সাজা দিলেও রাহুলকে জামিন দেন বিচারক, উচ্চ আদালতে আপিল করতে, তার সাজা ৩০ দিনের জন্য স্থগিতও রাখা হয়। ওই সাজার ওপর ভিত্তি করে পরদিনই লোকসভা সচিবালয় কেরালার ওয়েনাড আসন থেকে নির্বাচিত রাহুলকে পার্লামেন্টে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এসব নিয়ে দেশজুড়ে কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছে কংগ্রেস, তার মধ্যেই গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাহুল। তিনি বলেন, তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হোক, কিংবা জেলেই পাঠানো হোক, তিনি তার কাজ চালিয়ে যাবেন।
লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি ভারতে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ’ চেয়েছেন, বিজেপির এমন অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। ওই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, আমার নাম সাভারকার নয়, আমি গান্ধী, ক্ষমা চাইব না।
লন্ডনে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে পার্লামেন্টে বলতে স্পিকারকে অনুরোধ করার কথাও জানান সাবেক এই কংগ্রেস সভাপতি।
বলেন, আমার পদক্ষেপ কেবল একটিই, তা হলো সত্যের জন্য লড়া এবং দেশের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে রক্ষা করা। আজীবনের জন্য আমাকে অযোগ্য ঘোষণা করুক, আজীবনের জন্য জেলে পাঠাক, আমি লড়ে যাব।
রাহুল বলেন, আমি ভারতের জনগণের গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বরের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য এখানে এসেছি। এটাই করে যাব। আমি কারও ভয়ে ভীত নই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।