
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। গতকাল রবিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ সেনাশাসক। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, বিবিসি, জিও নিউজ, ডনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে নির্বাসিত মোশাররফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পাকিস্তানের সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠা জেনারেল মোশাররফ ক্ষমতা থাকাকালে ও আগে একাধিকবার হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হন। তবে প্রতিবারই মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরেন তিনি। কিন্তু শেষ অবধি নির্বাসিত জীবনে নীরবেই মৃত্যুকে বরণ করতে হলো সাবেক এ জেনারেলকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পারভেজ মোশাররফ দীর্ঘ রোগভোগের পর রবিবার দুবাইয়ের অ্যামেরিকান ন্যাশনাল হাসপাতালে মারা গেছেন। তার অসুস্থতার ব্যাপারে গত বছর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, অ্যামিলোডয়সিস নামে এক জটিল রোগে ভুগছেন। তার শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তার সেরে ওঠার প্রায় কোনো সম্ভাবনাই নেই। ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর পশ্চিমের বন্ধুখ্যাত মোশাররফ বারবার বেঁচে গেছেন হত্যাচেষ্টা থেকে। ক্ষমতা ছাড়ার পর ছাড়তে হয়েছে দেশও। তবে দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের ইচ্ছা ছিল তার। গত বছর থেকেই মোশাররফের পরিবার তাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু যে নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেছিলেন তার ভাই শাহবাজ শরিফ সরকার অনুমতি দেয়নি। তাই আলোচিত-সমালোচিত মোশাররফকে পরবাসেই মৃত্যুবরণ করতে হলো। এখন দুবাই থেকে তার মরদেহ পাকিস্তানে আনা হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিবিসি বলছে, ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের দিল্লিতে জন্ম নেওয়া পারভেজ মোশাররফকে মাত্র চার বছর বয়সেই পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে চলে যেতে হয়। তবে কূটনীতিক বাবার সঙ্গে দীর্ঘ সময় থেকেছেন তুরস্কে। ১৯৫৬ সালে ফেরেন পাকিস্তানে। ১৯৬১ সালের পাকিস্তানের কাকুলের সামরিক একাডেমি থেকে কমিশন পান। এরপর তিনি স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপে যোগ দেন। সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর তিনি কোয়েটার আর্মি কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজে পড়াশোনা করেছেন।
সাবেক এ সামরিক শাসক ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৯৮ সালে তিনি জেনারেল পদে পদোন্নতি পান, নেন চিফ অব আর্মি স্টাফের দায়িত্ব। তবে এর পরের বছরই কারগিল যুদ্ধে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকা নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় তার। সে বছরের অক্টোবরে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরিফের সরকারকে উৎখাত করে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন মোশাররফ। তিনি দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। সংবিধান স্থগিত করেন। দেশটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন তিনি। ২০০১ সালের জুনে পাকিস্তানের দশম প্রেসিডেন্ট হন এ সেনাশাসক।
পাকিস্তানের জিও নিউজ বলছে, ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ সমর্থন ও ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ছিলেন। যদিও এ কারণে স্বদেশে ব্যাপক বিরোধিতার শিকার হতে হয় তাকে। ওই সময়ের মধ্যে বহুবার আততায়ীর হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন জেনারেল মোশাররফ। তাকে উৎখাতের বহু প্লটও ব্যর্থ হয়েছে সে সময়।
২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কমপক্ষে চারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন মোশাররফ। প্রথম চেষ্টাটি হয়েছিল ২০০২ সালের এপ্রিলে। সেদিন প্রেসিডেন্ট মোশাররফ যে পথ ব্যবহার করছিলেন, সেই পথে লুকিয়ে রাখা হয় একটি রিমোট-নিয়ন্ত্রিত গাড়িবোমা। কিন্তু চেষ্টাটি ব্যর্থ হয়। যমদূতের হাত থেকে বেঁচে ফেরেন জেনারেল মোশাররফ।
দ্বিতীয় হত্যাচেষ্টাটি হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সেদিন ইসলামাবাদে জেনারেল মোশাররফের খামারবাড়ির কাছে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। তবে তার ২০-২৫ মিনিট আগেই ঘটনাস্থল অতিক্রম করে মোশাররফের গাড়ি। বোমাটি রাখা হয়েছিল ফুটপাতের ঠিক পাশে, একটি ড্রেনেজ পাইপে। আবারও বেঁচে যান জেনারেল মোশাররফ।
এ ঘটনার ঠিক ১২ দিন পর দুই ব্যক্তি আত্মঘাতী বোমা নিয়ে জেনারেল মোশাররফকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরে বোমাবাহী দুটি ট্রাক নিয়ে ঢুকে পড়েন তারা। প্রতিটি গাড়িতে ৪০ কেজির মতো বিস্ফোরক ছিল। এ সময় বিস্ফোরণে ছয় পুলিশ সদস্য ও চার সেনাসদস্যসহ ১৬ জন নিহত হয়। আহত হয় আরও ৪০ জন। তবে হামলার সময় সাঁজোয়া গাড়িতে থাকায় আরেকবার বেঁচে যান জেনারেল মোশাররফ।
পরবর্তী হত্যাচেষ্টাটি হয় এর ঠিক চার বছর পর। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে। সেদিন রাওয়ালপিন্ডির একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে বিমানে উড্ডয়ন করেছিলেন জেনারেল মোশাররফ। আর সেই বিমান লক্ষ্য করেই ছোড়া হয় গুলি। বিমানটি পরে অন্য একটি শহরে অবতরণ করে। সে সময় এ ঘটনার জন্য সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ওপর দোষারোপ করেছিলেন তিনি।
এর মধ্যে ২০০৩ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে হত্যাচেষ্টার দায়ে খালিদ মাহমুদসহ আরও চারজনকে ২০০৫ সালে সামরিক আদালতের রায়ে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে তা কার্যকরও হয়। এ চারটি চেষ্টা ছাড়াও সেনা কর্মকর্তা থাকাকালেও হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সে কথা তার ২০০৬ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘ইন দ্য লাইন অব ফায়ার’ বইতেও বলেছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের ভাষ্য, ক্ষমতায় টিকে থাকতে ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর পারভেজ মোশাররফ ফের জরুরি অবস্থা জারি করেন। সংবিধান স্থগিত করেন। জরুরি অবস্থা জারির ২৫ দিনের মাথায় তিনি সেনাপ্রধানের পদ ছাড়েন, তবে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকেন। ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি জরুরি অবস্থা তুলে নেন। ২০০৮ সালের আগস্টে অভিশংসন এড়াতে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। পরে ছাড়তে হয় দেশও। তবে দেশের বাইরে বসেই ২০১০ সালে পারভেজ মোশাররফ একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তার দলের নাম অল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এপিএমএল)। ওই দলের ব্যানারেই ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পাকিস্তানে ফেরেন তিনি। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যর্থ হন মোশাররফ। ওই নির্বাচনে জিতে নওয়াজ শরিফ ফের ক্ষমতায় ফিরলে মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় ২০০৭ সালে তার সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারিকে অবৈধ ঘোষণা করায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলার বিচার চলাকালে তার বেশিরভাগ সময় কেটেছে সেনাবাহিনীর একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নয়তো ইসলামাবাদের একটি খামারে। পরে ২০১৪ সালের এপ্রিলে তিনি করাচি চলে যান। সেখানে দুই বছর থাকার পর ২০১৬ সালে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। মোশাররফ সংযুক্ত আরব আমিরাত চলে যান। রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অপরাধে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিশেষ আদালতে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। যদিও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে লাহোর হাইকোর্ট। এরপর তাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করে পরিবার। তবে পাকিস্তান সরকারের সাড়া না মেলায় সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন, ‘ডেটা সুরক্ষা আইন যদি স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করার শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাংলাদেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে।’ গতকাল রবিবার রাজধানীর টি এম কে সেন্টারে ‘বাংলাদেশ অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন পিটার হাস।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশে আসার পর থেকে দেশটির ডিজিটাল যুগে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া নিয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ফুডপান্ডা থেকে বিকাশ এবং এর বাইরেও অনেক বিস্তৃতি দেখেছি। এটা আমার কাছে এখন স্পষ্ট, এই শতকে ডিজিটাল বিশ্বে দেশটি
স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রধান ভূমিকা পালন করতে চায়। এর মধ্যে পৃথিবী দ্রুত বদলাচ্ছে। আর বদলানোর কারণে প্রতিটি দেশের সরকার ও সমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তির দ্রুতগতিতে নাটকীয় পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের আইনেও নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সাজানোর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সবাই। যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশসহ সব দেশে এই চ্যালেঞ্জ আছে।’
পিটার হাস বলেন, ‘অনলাইন বিশ্ব যেমন বড় ধরনের সুযোগ করে দিচ্ছে, তেমনি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। ফলে সরকারগুলোকে অবশ্যই অনলাইন ও এর সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যবহারকারীর ডেটাকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে এবং মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে হবে। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। তারপরও এর ভারসাম্য রাখতে হবে।’
বদলে যাওয়ার সঙ্গে অর্থনীতির সংযোগ অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেন পিটার হাস। তিনি বলেন, ‘আজকের বিশ্বে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত না করে বিশ্বের কোনো দেশের পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের আমাদের মিশনের কাজের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ অন্যতম। একইভাবে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে একটি টেকসই ও যৌথভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এমন একটা অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত। আর এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যকে বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছি। আমরা মনে করি, একটা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বৃহত্তর পরিসরে অর্থনৈতিক সংযোগ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের আসনে স্থান করে দেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আরও সংযুক্ত করতে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশি ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যেন বিদেশি ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে আগ্রহ বোধ করেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ দেশে বিনিয়োগ করা এবং এখানে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ইচ্ছার কথা জানতে পেরেছি।’
বাংলাদেশের বাজার খুবই আকর্ষণীয় উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, ‘এ কারণেই সম্প্রতি আমরা দূতাবাসের একটি ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অফিস চালু করেছি। আর এর মধ্যেই আমরা আমাদের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আশঙ্কার কথাও শুনতে পেয়েছি। তারা বলছেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনের প্রবিধানগুলো এখানে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিক থেকে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রণীত প্রবিধানগুলোর পাশাপাশি খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্যোগ রয়েছে। আমরা যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বকে মূল্য দিই, তাই আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা সরকারের কাছে সরাসরি তুলে ধরেছি।’
খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় হলো, ডেটা সুরক্ষা আইন যদি ডেটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয়, মানে তা যদি আইনে পরিণত করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন বেশ কিছু আমেরিকান কোম্পানি এ দেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। এ ছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তারা এখানে ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে না। এ ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের জন্য খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ প্রায় দুই হাজারের বেশি স্টার্টআপকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হতে পারে এবং প্রতিদিন যে কোটি কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী তাদের সেবা নিচ্ছেন, তারা আর সেবাগুলো পাবেন না। তাই আমি মনে করি ব্যবসাকে আকর্ষণীয় করার জন্য উদ্ভাবনের সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সে জন্য অনলাইন উন্মুক্ত ও স্বাধীন হওয়া দরকার।’
মানবাধিকারের বিষয় টেনে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহারকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য অনলাইন বিষয়বস্তুর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে এবং এটাও সত্যি এ কাজটি খুব সহজ নয়। তবে আমরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যে কোশ্চেন দেখেছি, সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এমন কনটেন্ট বিষয়বস্তুর সংজ্ঞার বিস্তৃত পরিসর নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে ১৯১টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্লক করার ঘোষণায় উদ্বেগের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সমালোচনা গ্রহণ করার সক্ষমতা এবং অপ্রীতিকর বক্তব্য হলেও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা শক্তিশালী গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। আমাদের দূতাবাস নাগরিক সমাজের অনেক সংস্থা এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে এ আইনটির বিষয়ে শুনেছে। তাদের ভয় হলো এই নিয়ম আইন মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সীমিত করবে। ডেটা সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো, ডেটা সুরক্ষা আইনের সর্বশেষ খসড়ায় একটি স্বাধীন ডেটা তদারকি কর্র্তৃপক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং এই আইনে ফৌজদারি শাস্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ তাদের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করবে কিন্তু আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশকে আন্তর্জাতিক মানদন্ড সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই।’
সবশেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ ডেটা সুরক্ষা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদ-, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে উপযুক্ত ভারসাম্য গড়ে তুললে সেটা এ দেশের অব্যাহত উন্নয়নকে আরও গতিশীল করবে। বাংলাদেশের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত অংশীদার আমরা এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাফল্য দেখতে চায়।’
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যোগফল ভীষণ ফারাক সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে, এমন দাবি করেছেন দলটির অন্তত দুই ডজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলছেন, এ ফারাক কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে, যে কারণে দলীয় কাজকর্মে নিষ্ক্রিয় অনেকেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেককেই এখন দলীয় কার্যালয়ে দেখা যায় না।
ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নির্বাচিত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভালো কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকাংশে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন তারা। ২০০৯ থেকে গত বছর ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছে পাঁচটি। একই পদে থাকা একাধিক নেতার পদোন্নতি বা পদাবনতি কিছুই হয়নি। এটিও হতাশার বা নিষ্ক্রিয় থাকার অন্যতম কারণ। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এ ধরনের সমস্যা নেতৃত্ব তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটায়।
ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচন দেখে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা মনোবেদনায় ভুগছেন। অল্পসংখ্যক নেতা যারা কাজ না করেও পদ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন, ভালো আছেন তারাই।
সম্প্রতি সভাপতিমন্ডলী ও সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের। তাদের হতাশা ও মনোবেদনা গোপন করেননি তারা। কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পদে থাকা এ নেতারা দাবি করেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সারা বছর কাজ করা নেতারা পদোন্নতি যেমন পাননি দলের জন্য কাজ না করা নেতাদের পদাবনতিও ঘটেনি। এ নীতি অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করায় নেতারা মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন। হতাশা হয়েছেন। এমনটা হলে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার কাজে অন্তরায় সৃষ্টি হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা বলেন, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় রাগ-ক্ষোভ ভেতরে পুষে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন নেতারা। উচ্চবাচ্য করার সুযোগ নেই তাদের।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এক দিনের সম্মেলনে বিকেলের অধিবেশনে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক রেখেই কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে নতুন তিন-চারজন যোগ হয়েছেন। কয়েকজন বাদে পুরনোরা সবাই থেকে গেছেন। পদোন্নতি বা পদাবনতি তেমন হয়নি। এর আগে আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলনেও পুরনো নেতৃত্ব বহাল রেখে কমিটি করা হয়। এ নিয়ে তৃণমূলেও হতাশা-ক্ষোভ দেখা গেছে।
অবশ্য এবারের জাতীয় সম্মেলনে সক্রিয় নেতার বাদ পড়ার নজিরও আছে। গত কমিটি থেকে বাদ পড়া কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্মেলনে কমিটি নির্বাচন দেখে মনে হয়েছে আমাকে বাদ দিতেই এ সম্মেলন। সামাজিকভাবে ও পরিবারের সদস্যদের কাছে আমি খুব লজ্জা পেয়েছি। আমি বাদ পড়ার কারণটাও খুঁজে পাই না।’
বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছেন। কিন্তু মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম ও মাহাবুবউল আলম হানিফসহ দুই-তিনজনকেই ঘুরেফিরে কর্মসূচিতে দেখা যায়। সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় এক নেতাকে একটি মাত্র কর্মসূচিতে দেখা গেছে। অন্য এক নেতা বিদেশে গিয়ে বসে আছেন। আগে সক্রিয় ছিলেন এমন আরেক নেতাকে আর কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডিতে সভাপতির কার্যালয়ে আগে নেতাদের ঘিরে নিচের দিকের নেতা ও কর্মীদের আড্ডা হতো। সেই আড্ডায় এখন ভাটা দেখা যাচ্ছে।
গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় কেন্দ্রের ডজনখানেক নেতাকে মঞ্চে দেখা গেছে। সাধারণত দলীয়প্রধানের জেলা সফরে কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই থাকেন। নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া শ্রেয় মনে করছেন কোনো কোনো নেতা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দিনরাত খাটাখাটুনি করা নেতারা যে ফল পেয়েছেন এবং দলীয় কার্যক্রমে না থেকে পদকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে ফায়দা লোটা নেতারাও একই ফল পেয়েছেন। তাহলে আর খাটুনি করে লাভ কি? তারা দাবি করেন, এ ধারা দলকে ও দলীয় রাজনীতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলবে।
কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া নেতারা বলেন, দলীয় কাজে সক্রিয় থাকতে মন সায় দেয় না এখন। চলছেও তাই। সম্মেলনের পর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি তেমন লক্ষণীয় নয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ও ধানমণ্ডিতে সভাপতির কার্যালয়ের চিত্র দেখে স্পষ্টই বোঝা যায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা। বেসরকারি টেলিভিশনে টক শোতে অনেক নেতা যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
দলের দুটি কার্যালয়ের সহকারীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের পর একদিনও এখানে আসেননি এমন দুই ডজন নেতা রয়েছেন। তারা বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাদের নামে যেসব চিঠি আসে সেগুলো বিলি করতে হয় তাদের বাসায় গিয়ে। অফিস সহকারীরা আরও বলেন, অনেক কেন্দ্রীয় নেতা দেশের বাইরে গেছেন এবং পরিবার-পরিজনকে সময় দিচ্ছেন। দেশে থাকা নেতারা বাসাবাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভেতরে হতাশা বাসা বাঁধায় রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা দেখছেন অনেকে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় দলীয় ঐক্য দৃঢ় করে তোলার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোবলে চিড় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) সম্মেলনের দিন মঞ্চেই ঘোষণা করেছেন সামনের নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তেমন পরিবর্তন আনতে চান না। সে কারণেই কাউকে বাদ বা পদোন্নতি দেওয়া উল্লেখযোগ্য হারে হয়নি। যারা রাজনীতি করেন রাজনীতির স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত মানতে হয়।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলন মানে তিন বছর শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য একটি পরীক্ষার আয়োজন। তিন বছরের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া ও কাজ না করা নেতাদের বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তিরস্কার করা। কার কী অবদান তার পরিমাপক হলো জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সেখানে খাটাখাটুনির যাচাই করে কেউ মেধাতালিকায় জায়গা পান। আবার কেউ দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করেন। ফেল করেন কেউ। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গতিশীল হয়ে উঠে যেকোনো সংগঠন। কিন্তু গেল সম্মেলনের চিত্র হলো কেউ ফেল করেনি। সবাই গড়ে পাস করে গেছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরীক্ষার ফলাফলের চিত্র এমন হলে সারা বছর কাজ করার কী দরকার! পদোন্নতির প্রত্যাশা করা আওয়ামী লীগের নেতা সবাই এখন এ নীতি অনুসরণ করে চলতে মনস্থির করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের পর নেতা নির্বাচন দেখে প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতা ভেতরে ভেতরে মানসিকভাবে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। ওপরে ওপরে সবাই স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ভেতরের অবস্থা তাদের নিষ্ক্রিয় করে তুলছে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনীতি এখন ‘পাওয়ার হাউজ’কেন্দ্রিক। আওয়ামী লীগ এখন ‘পাওয়ার হাউজ’ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে রাজনীতিতে যতই সক্রিয় থাকি বা নিষ্ক্রিয় থাকি ‘পাওয়ার হাউজ’-এর কৃপা না পেলে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার চেয়ে পাওয়ার হাউজের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার কৌশলে এগিয়ে যেতে চান অনেক নেতা।
রাজনীতির বাইরের এই ‘পাওয়ার হাউজ’ একটি বলয়ে আবর্তিত জানিয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর ওই নেতা বলেন, দলের জন্য কাজ না করলেও রাজনীতির পদপদবি ধরে রাখা সম্ভব। খাটাখাটুনির রাজনীতি এখন কেউ করবে না।
কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি একতালে রাখতে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে এবার ২০০১ সাল থেকে বিএনপির পদধারী অথবা সমর্থিত বর্তমান ও সাবেক উপজেলা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে শুরু সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করতে চান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য মহাসচিব বরাবর আবেদনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এসব নেতার কাছ থেকে দলের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে কী করণীয় তা জানতে চাইবেন তারেক। এ লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক কাজও শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ১০টি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে গত সোমবার।
ওই চিঠিতে সারা দেশের তথ্য সংগ্রহ করে গত ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়। নেতাদের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে প্রাপ্ত তথ্য দপ্তরে জমা হওয়ার পর সমন্বয় করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘২০০১ সাল-পরবর্তী বিএনপির পদধারী/সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা), পৌরসভার মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের তথ্যাবলি’ সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। এ প্রক্রিয়ার সমন্বয় করছেন দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু।
প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলেছেন। বিএনপিও মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে সরকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তেমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে এ ধরনের পদক্ষেপ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়েছেন। ওই নেতা জানান, এর আগে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহসম্পাদকসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কয়েকবার লন্ডন থেকে স্কাইপে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। কিন্তু দলের প্রাণ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসা হয়নি। তারা কী চান সেটিও জানা হয়নি। তাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক করে আন্দোলন ও নির্বাচনের সার্বিক চিত্রটি জানতে চান তিনি। কবে এবং কীভাবে এ বৈঠক হবে সেটি চূড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পরামর্শ থাকবে, রাজধানীতে না এনে এসব নেতাকে বিভাগওয়ারি মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে। সাংগঠনিক জটিলতা বা সরকারের অসহযোগিতার কারণে সেটি সম্ভব না হলে অন্তত ব্যক্তিগতভাবে হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলবেন তারেক রহমান।
বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ রয়েছে ১০টি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ফরিদপুর। এসব বিভাগে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, ৫৫০ উপজেলা পরিষদ (চেয়ারম্যান, পুরুষ ও মহিলা সদস্য মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০), ১০ জন সিটি মেয়র, প্রায় ৪৫০ কাউন্সিলর রয়েছেন, ৫৫০ পৌর মেয়র রয়েছেন। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনিপর স্থায়ী কমিটির এক সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনসহ স্থানীয় কোনো নির্বাচনে দলগতভাবে বিএনপি অংশ নেবে না।
সে হিসেবে ২০০১ সাল থেকে প্রায় তিনটি স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি। এ ছাড়াও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী যারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন তারাও রয়েছেন। তাই কমবেশি বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো বিএনপি জনপ্রতিনিধি রয়েছেন বলে দলটির এক নেতা জানান।
ওই নেতা আরও জানান, একসঙ্গে বসা অনেকটা দুরূহ। তবে ভাগে ভাগে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা যায়। কীভাবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে সেটি হাইকমান্ড ভালো বলতে পারবেন।
সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়া, নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলনের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে মতামত, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কীভাবে আদায় করা যায় সে বিষয়ে প্রস্তাব আসতে পারে তৃণমূলের এ বৈঠক থেকে। পাশাপাশি তৃণমূল বিএনপিকে উজ্জীবিত করার কৌশল হিসেবেও এ পদক্ষেপ নিতে পারেন বিএনপির হাইকমান্ড। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ জন্য তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করে এবার অলআউট মাঠে নামতে চায় রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি।
এদিকে দলের বহিষ্কৃত প্রায় অর্ধশতাধিক নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে তারেক রহমান দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের অনেককে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার আবেদন করতেও বলেছেন। পরিস্থিতি বুঝে ওই নেতাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়ে কাউকে কাউকে ইতিমধ্যে পদও দেওয়া হয়েছে। এমনি একজন স্বেচ্ছাসেবক দল দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন। ছাত্রদলের যে ১২ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তিনি তাদেরই একজন। এ তালিকায় আরও রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য নাদিয়া পাঠান পাপন, ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুল হক জিসান প্রমুখ নেতা। যুবদলের বহিষ্কৃত সাবেক এক সহসভাপতিকে সম্প্রতি ফোন দিয়ে কথা বলেছেন তারেক রহমান। তাকে দলের মহাসচিব বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, ঢাকা কলেজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ ই এম রাশেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকার, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন থেকে নির্বাচন করা মনিরুল হক সাক্কু প্রমুখ বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে আবেদন করেছেন।
এমন সংখ্যা কত জানাতে চাইলে তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, দলে প্রায় শতাধিক বহিষ্কৃত নেতা রয়েছেন। অনেকেই আবেদন করছেন বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া জন্য। এদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা), পৌরসভার মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিল মিলিয়ে অর্ধশতাধিক হবে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তবে আমরা চাই সেই নির্বাচনটা হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এই মুহূর্তে আমাদের একমাত্র চাওয়া হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। শুধু বিএনপি নয়, দেশের প্রতিটি মানুষের চাওয়াও তাই। সে লক্ষ্যে আমরা বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছি। সাংগঠনিকভাবেও আমরা নিজেদের যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি রাখছি।
অর্থনৈতিক সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে চূড়ান্ত হিসাবে দেশের সাধারণ মানুষের আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে এখন ৭ দশমিক ১০-এ দাঁড়িয়েছে। গতকাল রবিবার ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হওয়ার সাত মাস পর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করল।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার। সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলার হলেও বাস্তবে দেশের প্রতিটি মানুষের আয় তা নয়। কারণ, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে দেশের জনসংখ্যা দিয়ে মাথাপিছু ভাগ করে এ আয়ের হিসাব করা হয়। ফলে দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও তাতে ব্যক্তির আয়ে কোনো তারতম্য হয় না।
২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে গত বছরের ৩০ জুন। সাত মাসের বেশি সময় পার হওয়ার পর রবিবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ ওই অর্থবছরের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করল পরিসংখ্যান ব্যুরো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগ কমেছে। সব মিলিয়েই জিডিপি প্রবৃদ্ধি খানিকটা কমেছে। ফলে মাথাপিছু আয়ও ৩১ ডলার কমে গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার। বিশ^ প্রেক্ষাপটে এই প্রবৃদ্ধি ‘খুবই ভালো’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭ দশমিক ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বিশে^র যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।’
করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৭ শতাংশের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থনীতিবিদসহ বিশ্লেষকদের মধ্যে ছিল ব্যাপক সংশয়। সেই সংশয়ের মধ্যেই সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ওই অর্থবছরই সোয়া ৭ শতাংশ হয়েছিল।
তবে গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের পর এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ নাগাদ জিডিপির প্রবৃদ্ধি নেমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে। জিডিপি যে কমবে, সেই ইঙ্গিত এর আগে বিশ^ব্যাংকও পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি আবার আগের ধারায় ফিরবে বলেও জানিয়েছে আইএমএফ।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম (গোলাম মোহাম্মদ) কাদেরের দায়িত্ব পালন নিয়ে অধস্তন আদালতের নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে করা রিভিশন আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল রবিবার বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আট সপ্তাহের এ স্থগিতাদেশ দেয়।
এই স্থগিতাদেশের ফলে জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালন করতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানান তার আইনজীবীরা।
জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩০ অক্টোবর ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত এক আদেশে জি এম কাদেরের কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত ও কার্য গ্রহণের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করলে ১৬ নভেম্বর একই আদালতে সেটি খারিজ হয়ে যায়। এরপর ঢাকা জেলা জজ আদালতে আপিল করলে আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য গত ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য হয়। তবে বিলম্বে শুনানির তারিখ ধার্যে আপত্তি জানিয়ে জি এম কাদের আবেদন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করলে গত বছরের ২৯ নভেম্বর হাইকোর্ট অধস্তন আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিতসহ জেলা জজ আদালতে আপিলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির তারিখ দ্রুত করার প্রশ্নে রুল দেয়।
এই আদেশ স্থগিত চেয়ে জিয়াউল হক মৃধা আবেদন করলে ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠায় চেম্বার আদালত। ১৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে জি এম কাদেরের বিষয়ে অধস্তন আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকা জেলা জজ আদালতের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল রেখে আদেশ দেন।
এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে আবেদন করেন জি এম কাদের। তার আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অধস্তন আদালতের আদেশটি যেহেতু স্থগিত হয়ে গেছে, তাই তিনি (জি এম কাদের) এখন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’
‘আমি গণমানুষের পক্ষে কথা বলব’ : কথা বলা মানুষের জন্মগত অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি গণমানুষের পক্ষে কথা বলব, এটা আমার শুধু অধিকারই নয়, কর্তব্যও। ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিলে সরকারের উপকার হয়। মানুষের সমালোচনার অধিকার নিশ্চিত হলে দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।’
গতকাল রবিবার দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিতের পর এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত সভাটি জাপা চেয়ারম্যানের রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই সমাজে জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। জবাবদিহি নিশ্চিত হলেই রাষ্ট্রে প্রজাতন্ত্র সফল হয়। প্রজারাই রাষ্ট্রের মালিক। তারা দেশ পরিচালনার জন্য পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন, আবার প্রজাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করলে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারবেন।’
দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেই আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই বৈষম্য হচ্ছে স্বাধীনতার চেতনাপরিপন্থী। দেশে দিনে দিনে বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। একদল মানুষ তিন বেলা খেতে পারছে না। টাকার অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছে না। আরেক দল হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। তারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে।’
দেশের মানুষ নিষ্পেশিত হচ্ছে মন্তব্য করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে এলসি খুলে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নেই। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। কাঁচামাল আমদানি সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা। প্রতিদিন বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের আয় বাড়ছে না। সাধারণ মানুষের কষ্ট বোঝার যেন কেউ নেই।’
সভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির প্রমুখ।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে হিটস্ট্রোকে মাঠেই রিয়া আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে মঙ্গলবারের (৩০ মে) খেলায় সদর উপজেলার এক ছাত্রী মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নিহত রিয়া আক্তার কালিহাতীর ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলা ছিল। রিয়া মাঠে খেলতে নেমে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোঘণা করেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, মরদেহ সোমবারই দাফন করা হয়েছে। আমরা রিয়ার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে খেলতে গিয়ে মেয়েটি মারা গেছে। মঙ্গলবারের খেলায় সদর উপজেলার একটি মেয়ে মাঠে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টটি আগামী ১২ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রচণ্ড রোদে ছাত্রীদের খেলতে অসুবিধার বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
রিয়া আক্তারকে খেলতে নামতে বাধ্য করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজা উদ্দিন তালুকদার বলেন, এখনকার বাচ্চারা রোদের মধ্যে এ ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নয়। প্রচণ্ড রোদে হঠাৎ করে মাঠে খেলতে নামলে তাদের জীবন ঝুঁকি থাকে। রোদের তাপে অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। তাই রোদের মধ্যে এভাবে বাচ্চাদের দিয়ে খেলানো উচিত নয়। বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা দরকার।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
আকাশযাত্রা নিরাপদ ও শান্তিময় করাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুদের একমাত্র ব্রত। ফ্লাইট ছাড়ার পর মধ্য আকাশে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে যিনি স্মিত হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, স্যার আপনার সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলবেন, চা কফি, কিংবা অন্য কিছু? এরপর যারা খাবার দেবেন, আবার সুনিপুণভাবে সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাবেন, আপনার ঘুম পাড়ানোর জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করবেন, সেটাই কেবিন ক্রুদের পেশা।
তারাই কেবিন ক্রু। যারা উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত সময়টুকু সার্বক্ষণিক সেবা শুশ্রূষা নিশ্চিত করেন। ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ করলে কিংবা ঘরে অসুস্থ স্বজন রেখে আসলেও আপনার সামনে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। এটাই তাদের মূল দায়িত্ব। বিশ্বব্যাপী এটাকে বলা হয় ‘গ্লামার জব ইন দ্য স্কাই‘।
আজ ৩১ মে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস। কানাডা ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০১৫ সালে বিশ্বে প্রথম কেবিন ক্রু দিবস পালন করা হয়। প্রথম ৪৮০ জন কেবিন ক্রু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান সেবা প্রতিষ্ঠান- যেখানে কাজ করছেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও নবীন কেবিন ক্রু। যারা পরিবার আত্মীস্বজনকে দূরে রেখে বিভিন্ন উৎসব, ছুটি ও বিশেষ দিনেও নিজেদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ কর্মঘণ্টার বিপরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত। অতীতে বিমানের দেশে ও দেশের বাইরে জরুরি অবতরণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রুদের প্রচেষ্টায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে রাখা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও বিমান কেবিন ক্রুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া অসুস্থ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদান, আকাশপথে প্রসূতি যাত্রীদের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা ও গুরুতর আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর তারা রেখেছেন। আকাশপথে কেবিন ক্রুদের নিবিড় সেবায় অসংখ্যা অসুস্থ যাত্রী সুস্থতার সঙ্গে তাদের গন্তব্যে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য কেবিন ক্রু একটি অনন্য সাধারণ পেশা হিসেবে পরিচিত।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সীমিত পরিসরে বিশেষ আয়োজন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েন। এবার হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকায় তারা সীমিত করেছে সব কর্মসূচি। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম দস্তগীর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সমস্ত কেবিন ক্রুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এ উপলক্ষে আজ বুধবার কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েশন অফিসে একটি কেক কেটে সব সদস্যকে শুভ্চ্ছো জানানো হবে। দিবসটিতে তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় ও সবার কুশলাদি বিনিময় করে করোনার মাঝেও এই কঠিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সবাইকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত।
সুশিক্ষিত ও আলট্রা মডার্ন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহলও লক্ষ্যণীয়। বিমানে কেবিন ক্রুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দস্তগীর বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা অবশ্যই মর্যাদাসম্পন্ন পেশা। বিমান সেই মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। এখন আমাদের দাবি ২০১৮ সালের এডমিন অর্ডার অনুযায়ী আমাদের সকল সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রদান করা হোক।
কেবিন ক্রুদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে গোলাম দস্তগীর জানান, কেবিন ক্রুদের দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ফেস অব দ্য এয়ারলাইন হিসেবে। কারণ কেবিন ক্রুদের আচরণ ও পেশাদারিত্বই এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী ধরে রাখা এবং নতুন যাত্রীদের আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, লাস্ট লাইন অব দ্য ডিফেন্স হিসেবে। কারণ আকাশে উড্ডয়নের পরে যে কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কেবিন ক্রু ছাড়া আর কোনো সিকিউরিটি পার্সোনাল থাকেন না। সমগ্র পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব পেশা রয়েছে তন্মধ্যে কেবিন ক্রু অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রুরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় স্বল্প সুবিধা সংবলিত পরিবেশে কেবিন ক্রুরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
একজন ভ্রমণকারীর ভ্রমণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিরাপদ করে তোলাই কেবিন ক্রুদের মূল কর্তব্য। প্রতিটি সফল উড্ডয়ন ও অবতরণ একজন কেবিন ক্রুকে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ, রাজনৈতিক ভ্রমণ, চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশযাত্রা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই থাকেন কেবিন ক্রুদের ভ্রমণসঙ্গী। কেবিন ক্রুদের বলা হয়, ফার্স্ট রেসপনডার।
দস্তগীর বলেন, কেবিন ক্রুদের হার্টঅ্যাটাক, হাইপোক্সিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, হাইপোগ্লাসেমিয়া, হাইপারগ্লোসিমায়, চকিং, নোজ ব্লিডিং এবং প্রেগন্যান্ট ডেলিভারির দায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। পেশাদারিত্বের এই দক্ষতায় সত্যিকার অর্থেই আকাশ হয়ে উঠুক শান্তির নীড়। বিমান আকাশে ওড়ার একঘণ্টা আগে ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রুদের আবহাওয়া ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেয়।
এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, সি পকেট সংক্রান্ত তথ্য, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইক্যুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইড প্রভৃতি ঠিকঠাক আছে কিনা এসব কেবিন ক্রুদের দেখে নিতে হয়।
বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা, যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং বিমান আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীদের সিট বেল্ট লাগাতে বলাও কেবিন ক্রুদের কাজের পর্যায়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিমান ওঠানামা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পাইলটের হয় কেবিন ক্রুদের বলতে হয়। এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।