
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম (গোলাম মোহাম্মদ) কাদেরের দায়িত্ব পালন নিয়ে অধস্তন আদালতের নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে করা রিভিশন আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গতকাল রবিবার বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ আট সপ্তাহের এ স্থগিতাদেশ দেয়।
এই স্থগিতাদেশের ফলে জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরের দায়িত্ব পালন করতে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে জানান তার আইনজীবীরা।
জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩০ অক্টোবর ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত এক আদেশে জি এম কাদেরের কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত ও কার্য গ্রহণের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করলে ১৬ নভেম্বর একই আদালতে সেটি খারিজ হয়ে যায়। এরপর ঢাকা জেলা জজ আদালতে আপিল করলে আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য গত ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য হয়। তবে বিলম্বে শুনানির তারিখ ধার্যে আপত্তি জানিয়ে জি এম কাদের আবেদন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করলে গত বছরের ২৯ নভেম্বর হাইকোর্ট অধস্তন আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিতসহ জেলা জজ আদালতে আপিলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির তারিখ দ্রুত করার প্রশ্নে রুল দেয়।
এই আদেশ স্থগিত চেয়ে জিয়াউল হক মৃধা আবেদন করলে ৩০ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠায় চেম্বার আদালত। ১৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন নিষ্পত্তি করে জি এম কাদেরের বিষয়ে অধস্তন আদালতের দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকা জেলা জজ আদালতের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল রেখে আদেশ দেন।
এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে আবেদন করেন জি এম কাদের। তার আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অধস্তন আদালতের আদেশটি যেহেতু স্থগিত হয়ে গেছে, তাই তিনি (জি এম কাদের) এখন দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’
‘আমি গণমানুষের পক্ষে কথা বলব’ : কথা বলা মানুষের জন্মগত অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি গণমানুষের পক্ষে কথা বলব, এটা আমার শুধু অধিকারই নয়, কর্তব্যও। ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিলে সরকারের উপকার হয়। মানুষের সমালোচনার অধিকার নিশ্চিত হলে দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।’
গতকাল রবিবার দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিতের পর এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত সভাটি জাপা চেয়ারম্যানের রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেই সমাজে জবাবদিহি নিশ্চিত হয়। জবাবদিহি নিশ্চিত হলেই রাষ্ট্রে প্রজাতন্ত্র সফল হয়। প্রজারাই রাষ্ট্রের মালিক। তারা দেশ পরিচালনার জন্য পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন, আবার প্রজাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করলে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারবেন।’
দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাপা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেই আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই বৈষম্য হচ্ছে স্বাধীনতার চেতনাপরিপন্থী। দেশে দিনে দিনে বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। একদল মানুষ তিন বেলা খেতে পারছে না। টাকার অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছে না। আরেক দল হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। তারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে।’
দেশের মানুষ নিষ্পেশিত হচ্ছে মন্তব্য করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে এলসি খুলে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নেই। হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। কাঁচামাল আমদানি সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কলকারখানা। প্রতিদিন বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের আয় বাড়ছে না। সাধারণ মানুষের কষ্ট বোঝার যেন কেউ নেই।’
সভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠানের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির প্রমুখ।
ডেটা সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন, ‘ডেটা সুরক্ষা আইন যদি স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করার শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাংলাদেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে।’ গতকাল রবিবার রাজধানীর টি এম কে সেন্টারে ‘বাংলাদেশ অনলাইন স্বাধীনতা ও ব্যবসায় বিনিয়োগ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন পিটার হাস।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে বাংলাদেশে আসার পর থেকে দেশটির ডিজিটাল যুগে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া নিয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ফুডপান্ডা থেকে বিকাশ এবং এর বাইরেও অনেক বিস্তৃতি দেখেছি। এটা আমার কাছে এখন স্পষ্ট, এই শতকে ডিজিটাল বিশ্বে দেশটি
স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রধান ভূমিকা পালন করতে চায়। এর মধ্যে পৃথিবী দ্রুত বদলাচ্ছে। আর বদলানোর কারণে প্রতিটি দেশের সরকার ও সমাজ নতুন নতুন প্রযুক্তির দ্রুতগতিতে নাটকীয় পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের আইনেও নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সাজানোর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সবাই। যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশসহ সব দেশে এই চ্যালেঞ্জ আছে।’
পিটার হাস বলেন, ‘অনলাইন বিশ্ব যেমন বড় ধরনের সুযোগ করে দিচ্ছে, তেমনি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। ফলে সরকারগুলোকে অবশ্যই অনলাইন ও এর সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যবহারকারীর ডেটাকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে এবং মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে হবে। এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া। তারপরও এর ভারসাম্য রাখতে হবে।’
বদলে যাওয়ার সঙ্গে অর্থনীতির সংযোগ অনেক বেশি বলে উল্লেখ করেন পিটার হাস। তিনি বলেন, ‘আজকের বিশ্বে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত না করে বিশ্বের কোনো দেশের পক্ষেই সফল হওয়া সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের আমাদের মিশনের কাজের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ অন্যতম। একইভাবে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে একটি টেকসই ও যৌথভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এমন একটা অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত। আর এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যকে বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছি। আমরা মনে করি, একটা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বৃহত্তর পরিসরে অর্থনৈতিক সংযোগ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের আসনে স্থান করে দেবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আরও সংযুক্ত করতে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশি ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যেন বিদেশি ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে আগ্রহ বোধ করেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ দেশে বিনিয়োগ করা এবং এখানে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ইচ্ছার কথা জানতে পেরেছি।’
বাংলাদেশের বাজার খুবই আকর্ষণীয় উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, ‘এ কারণেই সম্প্রতি আমরা দূতাবাসের একটি ফরেন কমার্শিয়াল সার্ভিস অফিস চালু করেছি। আর এর মধ্যেই আমরা আমাদের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আশঙ্কার কথাও শুনতে পেয়েছি। তারা বলছেন, প্রস্তাবিত নতুন আইনের প্রবিধানগুলো এখানে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিক থেকে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য প্রণীত প্রবিধানগুলোর পাশাপাশি খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন নিয়ে উদ্যোগ রয়েছে। আমরা যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বকে মূল্য দিই, তাই আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা সরকারের কাছে সরাসরি তুলে ধরেছি।’
খসড়া ডেটা সুরক্ষা আইন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয় হলো, ডেটা সুরক্ষা আইন যদি ডেটা স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয়, মানে তা যদি আইনে পরিণত করা হয়, তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন বেশ কিছু আমেরিকান কোম্পানি এ দেশের বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। এ ছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তারা এখানে ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে না। এ ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশের জন্য খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ প্রায় দুই হাজারের বেশি স্টার্টআপকে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হতে পারে এবং প্রতিদিন যে কোটি কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারী তাদের সেবা নিচ্ছেন, তারা আর সেবাগুলো পাবেন না। তাই আমি মনে করি ব্যবসাকে আকর্ষণীয় করার জন্য উদ্ভাবনের সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সে জন্য অনলাইন উন্মুক্ত ও স্বাধীন হওয়া দরকার।’
মানবাধিকারের বিষয় টেনে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহারকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য অনলাইন বিষয়বস্তুর প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে এবং এটাও সত্যি এ কাজটি খুব সহজ নয়। তবে আমরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যে কোশ্চেন দেখেছি, সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এমন কনটেন্ট বিষয়বস্তুর সংজ্ঞার বিস্তৃত পরিসর নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’
সাম্প্রতিক সময়ে ১৯১টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্লক করার ঘোষণায় উদ্বেগের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সমালোচনা গ্রহণ করার সক্ষমতা এবং অপ্রীতিকর বক্তব্য হলেও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা শক্তিশালী গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। আমাদের দূতাবাস নাগরিক সমাজের অনেক সংস্থা এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে এ আইনটির বিষয়ে শুনেছে। তাদের ভয় হলো এই নিয়ম আইন মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সীমিত করবে। ডেটা সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো, ডেটা সুরক্ষা আইনের সর্বশেষ খসড়ায় একটি স্বাধীন ডেটা তদারকি কর্র্তৃপক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং এই আইনে ফৌজদারি শাস্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ তাদের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করবে কিন্তু আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশকে আন্তর্জাতিক মানদন্ড সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই।’
সবশেষে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ ডেটা সুরক্ষা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদ-, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং ব্যক্তিগত অধিকারের মধ্যে উপযুক্ত ভারসাম্য গড়ে তুললে সেটা এ দেশের অব্যাহত উন্নয়নকে আরও গতিশীল করবে। বাংলাদেশের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত অংশীদার আমরা এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাফল্য দেখতে চায়।’
প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যোগফল ভীষণ ফারাক সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে, এমন দাবি করেছেন দলটির অন্তত দুই ডজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলছেন, এ ফারাক কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে, যে কারণে দলীয় কাজকর্মে নিষ্ক্রিয় অনেকেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেককেই এখন দলীয় কার্যালয়ে দেখা যায় না।
ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নির্বাচিত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভালো কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত কেন্দ্রীয় নেতারা অনেকাংশে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন তারা। ২০০৯ থেকে গত বছর ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছে পাঁচটি। একই পদে থাকা একাধিক নেতার পদোন্নতি বা পদাবনতি কিছুই হয়নি। এটিও হতাশার বা নিষ্ক্রিয় থাকার অন্যতম কারণ। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এ ধরনের সমস্যা নেতৃত্ব তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটায়।
ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচন দেখে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা মনোবেদনায় ভুগছেন। অল্পসংখ্যক নেতা যারা কাজ না করেও পদ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন, ভালো আছেন তারাই।
সম্প্রতি সভাপতিমন্ডলী ও সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের। তাদের হতাশা ও মনোবেদনা গোপন করেননি তারা। কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পদে থাকা এ নেতারা দাবি করেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সারা বছর কাজ করা নেতারা পদোন্নতি যেমন পাননি দলের জন্য কাজ না করা নেতাদের পদাবনতিও ঘটেনি। এ নীতি অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করায় নেতারা মনোবল হারিয়ে ফেলেছেন। হতাশা হয়েছেন। এমনটা হলে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার কাজে অন্তরায় সৃষ্টি হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা বলেন, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় রাগ-ক্ষোভ ভেতরে পুষে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন নেতারা। উচ্চবাচ্য করার সুযোগ নেই তাদের।
গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এক দিনের সম্মেলনে বিকেলের অধিবেশনে ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক রেখেই কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে নতুন তিন-চারজন যোগ হয়েছেন। কয়েকজন বাদে পুরনোরা সবাই থেকে গেছেন। পদোন্নতি বা পদাবনতি তেমন হয়নি। এর আগে আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলনেও পুরনো নেতৃত্ব বহাল রেখে কমিটি করা হয়। এ নিয়ে তৃণমূলেও হতাশা-ক্ষোভ দেখা গেছে।
অবশ্য এবারের জাতীয় সম্মেলনে সক্রিয় নেতার বাদ পড়ার নজিরও আছে। গত কমিটি থেকে বাদ পড়া কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্মেলনে কমিটি নির্বাচন দেখে মনে হয়েছে আমাকে বাদ দিতেই এ সম্মেলন। সামাজিকভাবে ও পরিবারের সদস্যদের কাছে আমি খুব লজ্জা পেয়েছি। আমি বাদ পড়ার কারণটাও খুঁজে পাই না।’
বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আছেন। কিন্তু মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম ও মাহাবুবউল আলম হানিফসহ দুই-তিনজনকেই ঘুরেফিরে কর্মসূচিতে দেখা যায়। সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় এক নেতাকে একটি মাত্র কর্মসূচিতে দেখা গেছে। অন্য এক নেতা বিদেশে গিয়ে বসে আছেন। আগে সক্রিয় ছিলেন এমন আরেক নেতাকে আর কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায় না। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডিতে সভাপতির কার্যালয়ে আগে নেতাদের ঘিরে নিচের দিকের নেতা ও কর্মীদের আড্ডা হতো। সেই আড্ডায় এখন ভাটা দেখা যাচ্ছে।
গত ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় কেন্দ্রের ডজনখানেক নেতাকে মঞ্চে দেখা গেছে। সাধারণত দলীয়প্রধানের জেলা সফরে কেন্দ্রীয় প্রায় সব নেতাই থাকেন। নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া শ্রেয় মনে করছেন কোনো কোনো নেতা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, দিনরাত খাটাখাটুনি করা নেতারা যে ফল পেয়েছেন এবং দলীয় কার্যক্রমে না থেকে পদকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে ফায়দা লোটা নেতারাও একই ফল পেয়েছেন। তাহলে আর খাটুনি করে লাভ কি? তারা দাবি করেন, এ ধারা দলকে ও দলীয় রাজনীতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলবে।
কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া নেতারা বলেন, দলীয় কাজে সক্রিয় থাকতে মন সায় দেয় না এখন। চলছেও তাই। সম্মেলনের পর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি তেমন লক্ষণীয় নয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ও ধানমণ্ডিতে সভাপতির কার্যালয়ের চিত্র দেখে স্পষ্টই বোঝা যায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা। বেসরকারি টেলিভিশনে টক শোতে অনেক নেতা যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
দলের দুটি কার্যালয়ের সহকারীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের পর একদিনও এখানে আসেননি এমন দুই ডজন নেতা রয়েছেন। তারা বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাদের নামে যেসব চিঠি আসে সেগুলো বিলি করতে হয় তাদের বাসায় গিয়ে। অফিস সহকারীরা আরও বলেন, অনেক কেন্দ্রীয় নেতা দেশের বাইরে গেছেন এবং পরিবার-পরিজনকে সময় দিচ্ছেন। দেশে থাকা নেতারা বাসাবাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভেতরে হতাশা বাসা বাঁধায় রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা দেখছেন অনেকে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় দলীয় ঐক্য দৃঢ় করে তোলার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোবলে চিড় ঐক্য প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) সম্মেলনের দিন মঞ্চেই ঘোষণা করেছেন সামনের নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তেমন পরিবর্তন আনতে চান না। সে কারণেই কাউকে বাদ বা পদোন্নতি দেওয়া উল্লেখযোগ্য হারে হয়নি। যারা রাজনীতি করেন রাজনীতির স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত মানতে হয়।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলন মানে তিন বছর শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য একটি পরীক্ষার আয়োজন। তিন বছরের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া ও কাজ না করা নেতাদের বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে তিরস্কার করা। কার কী অবদান তার পরিমাপক হলো জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সেখানে খাটাখাটুনির যাচাই করে কেউ মেধাতালিকায় জায়গা পান। আবার কেউ দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করেন। ফেল করেন কেউ। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গতিশীল হয়ে উঠে যেকোনো সংগঠন। কিন্তু গেল সম্মেলনের চিত্র হলো কেউ ফেল করেনি। সবাই গড়ে পাস করে গেছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরীক্ষার ফলাফলের চিত্র এমন হলে সারা বছর কাজ করার কী দরকার! পদোন্নতির প্রত্যাশা করা আওয়ামী লীগের নেতা সবাই এখন এ নীতি অনুসরণ করে চলতে মনস্থির করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের পর নেতা নির্বাচন দেখে প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতা ভেতরে ভেতরে মানসিকভাবে হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন। ওপরে ওপরে সবাই স্বাভাবিক থাকতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ভেতরের অবস্থা তাদের নিষ্ক্রিয় করে তুলছে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজনীতি এখন ‘পাওয়ার হাউজ’কেন্দ্রিক। আওয়ামী লীগ এখন ‘পাওয়ার হাউজ’ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে রাজনীতিতে যতই সক্রিয় থাকি বা নিষ্ক্রিয় থাকি ‘পাওয়ার হাউজ’-এর কৃপা না পেলে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার চেয়ে পাওয়ার হাউজের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার কৌশলে এগিয়ে যেতে চান অনেক নেতা।
রাজনীতির বাইরের এই ‘পাওয়ার হাউজ’ একটি বলয়ে আবর্তিত জানিয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর ওই নেতা বলেন, দলের জন্য কাজ না করলেও রাজনীতির পদপদবি ধরে রাখা সম্ভব। খাটাখাটুনির রাজনীতি এখন কেউ করবে না।
কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি একতালে রাখতে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে এবার ২০০১ সাল থেকে বিএনপির পদধারী অথবা সমর্থিত বর্তমান ও সাবেক উপজেলা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে শুরু সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করতে চান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য মহাসচিব বরাবর আবেদনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এসব নেতার কাছ থেকে দলের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে কী করণীয় তা জানতে চাইবেন তারেক। এ লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক কাজও শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ১০টি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে গত সোমবার।
ওই চিঠিতে সারা দেশের তথ্য সংগ্রহ করে গত ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়। নেতাদের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে প্রাপ্ত তথ্য দপ্তরে জমা হওয়ার পর সমন্বয় করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘২০০১ সাল-পরবর্তী বিএনপির পদধারী/সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা), পৌরসভার মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের তথ্যাবলি’ সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। এ প্রক্রিয়ার সমন্বয় করছেন দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু।
প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এক নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলেছেন। বিএনপিও মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে সরকার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তেমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে এ ধরনের পদক্ষেপ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়েছেন। ওই নেতা জানান, এর আগে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহসম্পাদকসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কয়েকবার লন্ডন থেকে স্কাইপে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। কিন্তু দলের প্রাণ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসা হয়নি। তারা কী চান সেটিও জানা হয়নি। তাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক করে আন্দোলন ও নির্বাচনের সার্বিক চিত্রটি জানতে চান তিনি। কবে এবং কীভাবে এ বৈঠক হবে সেটি চূড়ান্ত হয়নি।
জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পরামর্শ থাকবে, রাজধানীতে না এনে এসব নেতাকে বিভাগওয়ারি মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে। সাংগঠনিক জটিলতা বা সরকারের অসহযোগিতার কারণে সেটি সম্ভব না হলে অন্তত ব্যক্তিগতভাবে হলেও তাদের সঙ্গে কথা বলবেন তারেক রহমান।
বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ রয়েছে ১০টি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ফরিদপুর। এসব বিভাগে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, ৫৫০ উপজেলা পরিষদ (চেয়ারম্যান, পুরুষ ও মহিলা সদস্য মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০), ১০ জন সিটি মেয়র, প্রায় ৪৫০ কাউন্সিলর রয়েছেন, ৫৫০ পৌর মেয়র রয়েছেন। ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনিপর স্থায়ী কমিটির এক সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনসহ স্থানীয় কোনো নির্বাচনে দলগতভাবে বিএনপি অংশ নেবে না।
সে হিসেবে ২০০১ সাল থেকে প্রায় তিনটি স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি। এ ছাড়াও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী যারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছেন তারাও রয়েছেন। তাই কমবেশি বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো বিএনপি জনপ্রতিনিধি রয়েছেন বলে দলটির এক নেতা জানান।
ওই নেতা আরও জানান, একসঙ্গে বসা অনেকটা দুরূহ। তবে ভাগে ভাগে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা যায়। কীভাবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে সেটি হাইকমান্ড ভালো বলতে পারবেন।
সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়া, নির্বাচন সামনে রেখে আন্দোলনের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে মতামত, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কীভাবে আদায় করা যায় সে বিষয়ে প্রস্তাব আসতে পারে তৃণমূলের এ বৈঠক থেকে। পাশাপাশি তৃণমূল বিএনপিকে উজ্জীবিত করার কৌশল হিসেবেও এ পদক্ষেপ নিতে পারেন বিএনপির হাইকমান্ড। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ জন্য তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করে এবার অলআউট মাঠে নামতে চায় রাজপথের প্রধান বিরোধী দলটি।
এদিকে দলের বহিষ্কৃত প্রায় অর্ধশতাধিক নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে তারেক রহমান দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের অনেককে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার আবেদন করতেও বলেছেন। পরিস্থিতি বুঝে ওই নেতাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়ে কাউকে কাউকে ইতিমধ্যে পদও দেওয়া হয়েছে। এমনি একজন স্বেচ্ছাসেবক দল দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন। ছাত্রদলের যে ১২ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তিনি তাদেরই একজন। এ তালিকায় আরও রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য নাদিয়া পাঠান পাপন, ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুল হক জিসান প্রমুখ নেতা। যুবদলের বহিষ্কৃত সাবেক এক সহসভাপতিকে সম্প্রতি ফোন দিয়ে কথা বলেছেন তারেক রহমান। তাকে দলের মহাসচিব বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, ঢাকা কলেজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ ই এম রাশেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক তৈমূর আলম খন্দকার, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন থেকে নির্বাচন করা মনিরুল হক সাক্কু প্রমুখ বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে আবেদন করেছেন।
এমন সংখ্যা কত জানাতে চাইলে তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, দলে প্রায় শতাধিক বহিষ্কৃত নেতা রয়েছেন। অনেকেই আবেদন করছেন বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া জন্য। এদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা), পৌরসভার মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিল মিলিয়ে অর্ধশতাধিক হবে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। তবে আমরা চাই সেই নির্বাচনটা হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এই মুহূর্তে আমাদের একমাত্র চাওয়া হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। শুধু বিএনপি নয়, দেশের প্রতিটি মানুষের চাওয়াও তাই। সে লক্ষ্যে আমরা বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগ নিয়েছি। সাংগঠনিকভাবেও আমরা নিজেদের যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি রাখছি।
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। গতকাল রবিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ সেনাশাসক। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, বিবিসি, জিও নিউজ, ডনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে নির্বাসিত মোশাররফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পাকিস্তানের সর্বময় কর্তা হয়ে ওঠা জেনারেল মোশাররফ ক্ষমতা থাকাকালে ও আগে একাধিকবার হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হন। তবে প্রতিবারই মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরেন তিনি। কিন্তু শেষ অবধি নির্বাসিত জীবনে নীরবেই মৃত্যুকে বরণ করতে হলো সাবেক এ জেনারেলকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পারভেজ মোশাররফ দীর্ঘ রোগভোগের পর রবিবার দুবাইয়ের অ্যামেরিকান ন্যাশনাল হাসপাতালে মারা গেছেন। তার অসুস্থতার ব্যাপারে গত বছর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, অ্যামিলোডয়সিস নামে এক জটিল রোগে ভুগছেন। তার শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তার সেরে ওঠার প্রায় কোনো সম্ভাবনাই নেই। ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর পশ্চিমের বন্ধুখ্যাত মোশাররফ বারবার বেঁচে গেছেন হত্যাচেষ্টা থেকে। ক্ষমতা ছাড়ার পর ছাড়তে হয়েছে দেশও। তবে দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের ইচ্ছা ছিল তার। গত বছর থেকেই মোশাররফের পরিবার তাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু যে নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেছিলেন তার ভাই শাহবাজ শরিফ সরকার অনুমতি দেয়নি। তাই আলোচিত-সমালোচিত মোশাররফকে পরবাসেই মৃত্যুবরণ করতে হলো। এখন দুবাই থেকে তার মরদেহ পাকিস্তানে আনা হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বিবিসি বলছে, ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের দিল্লিতে জন্ম নেওয়া পারভেজ মোশাররফকে মাত্র চার বছর বয়সেই পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তানে চলে যেতে হয়। তবে কূটনীতিক বাবার সঙ্গে দীর্ঘ সময় থেকেছেন তুরস্কে। ১৯৫৬ সালে ফেরেন পাকিস্তানে। ১৯৬১ সালের পাকিস্তানের কাকুলের সামরিক একাডেমি থেকে কমিশন পান। এরপর তিনি স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপে যোগ দেন। সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর তিনি কোয়েটার আর্মি কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজে পড়াশোনা করেছেন।
সাবেক এ সামরিক শাসক ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৯৮ সালে তিনি জেনারেল পদে পদোন্নতি পান, নেন চিফ অব আর্মি স্টাফের দায়িত্ব। তবে এর পরের বছরই কারগিল যুদ্ধে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকা নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় তার। সে বছরের অক্টোবরে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরিফের সরকারকে উৎখাত করে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন মোশাররফ। তিনি দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেন। সংবিধান স্থগিত করেন। দেশটির প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব নেন তিনি। ২০০১ সালের জুনে পাকিস্তানের দশম প্রেসিডেন্ট হন এ সেনাশাসক।
পাকিস্তানের জিও নিউজ বলছে, ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ সমর্থন ও ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ছিলেন। যদিও এ কারণে স্বদেশে ব্যাপক বিরোধিতার শিকার হতে হয় তাকে। ওই সময়ের মধ্যে বহুবার আততায়ীর হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন জেনারেল মোশাররফ। তাকে উৎখাতের বহু প্লটও ব্যর্থ হয়েছে সে সময়।
২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কমপক্ষে চারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন মোশাররফ। প্রথম চেষ্টাটি হয়েছিল ২০০২ সালের এপ্রিলে। সেদিন প্রেসিডেন্ট মোশাররফ যে পথ ব্যবহার করছিলেন, সেই পথে লুকিয়ে রাখা হয় একটি রিমোট-নিয়ন্ত্রিত গাড়িবোমা। কিন্তু চেষ্টাটি ব্যর্থ হয়। যমদূতের হাত থেকে বেঁচে ফেরেন জেনারেল মোশাররফ।
দ্বিতীয় হত্যাচেষ্টাটি হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সেদিন ইসলামাবাদে জেনারেল মোশাররফের খামারবাড়ির কাছে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। তবে তার ২০-২৫ মিনিট আগেই ঘটনাস্থল অতিক্রম করে মোশাররফের গাড়ি। বোমাটি রাখা হয়েছিল ফুটপাতের ঠিক পাশে, একটি ড্রেনেজ পাইপে। আবারও বেঁচে যান জেনারেল মোশাররফ।
এ ঘটনার ঠিক ১২ দিন পর দুই ব্যক্তি আত্মঘাতী বোমা নিয়ে জেনারেল মোশাররফকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন। প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরে বোমাবাহী দুটি ট্রাক নিয়ে ঢুকে পড়েন তারা। প্রতিটি গাড়িতে ৪০ কেজির মতো বিস্ফোরক ছিল। এ সময় বিস্ফোরণে ছয় পুলিশ সদস্য ও চার সেনাসদস্যসহ ১৬ জন নিহত হয়। আহত হয় আরও ৪০ জন। তবে হামলার সময় সাঁজোয়া গাড়িতে থাকায় আরেকবার বেঁচে যান জেনারেল মোশাররফ।
পরবর্তী হত্যাচেষ্টাটি হয় এর ঠিক চার বছর পর। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে। সেদিন রাওয়ালপিন্ডির একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে বিমানে উড্ডয়ন করেছিলেন জেনারেল মোশাররফ। আর সেই বিমান লক্ষ্য করেই ছোড়া হয় গুলি। বিমানটি পরে অন্য একটি শহরে অবতরণ করে। সে সময় এ ঘটনার জন্য সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নিম্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের ওপর দোষারোপ করেছিলেন তিনি।
এর মধ্যে ২০০৩ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে হত্যাচেষ্টার দায়ে খালিদ মাহমুদসহ আরও চারজনকে ২০০৫ সালে সামরিক আদালতের রায়ে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে তা কার্যকরও হয়। এ চারটি চেষ্টা ছাড়াও সেনা কর্মকর্তা থাকাকালেও হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সে কথা তার ২০০৬ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘ইন দ্য লাইন অব ফায়ার’ বইতেও বলেছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের ভাষ্য, ক্ষমতায় টিকে থাকতে ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর পারভেজ মোশাররফ ফের জরুরি অবস্থা জারি করেন। সংবিধান স্থগিত করেন। জরুরি অবস্থা জারির ২৫ দিনের মাথায় তিনি সেনাপ্রধানের পদ ছাড়েন, তবে প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকেন। ২০০৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি জরুরি অবস্থা তুলে নেন। ২০০৮ সালের আগস্টে অভিশংসন এড়াতে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন। পরে ছাড়তে হয় দেশও। তবে দেশের বাইরে বসেই ২০১০ সালে পারভেজ মোশাররফ একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তার দলের নাম অল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এপিএমএল)। ওই দলের ব্যানারেই ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পাকিস্তানে ফেরেন তিনি। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যর্থ হন মোশাররফ। ওই নির্বাচনে জিতে নওয়াজ শরিফ ফের ক্ষমতায় ফিরলে মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলায় ২০০৭ সালে তার সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারিকে অবৈধ ঘোষণা করায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। ওই মামলার বিচার চলাকালে তার বেশিরভাগ সময় কেটেছে সেনাবাহিনীর একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নয়তো ইসলামাবাদের একটি খামারে। পরে ২০১৪ সালের এপ্রিলে তিনি করাচি চলে যান। সেখানে দুই বছর থাকার পর ২০১৬ সালে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। মোশাররফ সংযুক্ত আরব আমিরাত চলে যান। রাষ্ট্রদ্রোহের গুরুতর অপরাধে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিশেষ আদালতে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। যদিও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে লাহোর হাইকোর্ট। এরপর তাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করে পরিবার। তবে পাকিস্তান সরকারের সাড়া না মেলায় সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
অর্থনৈতিক সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে চূড়ান্ত হিসাবে দেশের সাধারণ মানুষের আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলারে নেমে এসেছে। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে এখন ৭ দশমিক ১০-এ দাঁড়িয়েছে। গতকাল রবিবার ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হওয়ার সাত মাস পর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করল।
এর আগে গত ১৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার। সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলার হলেও বাস্তবে দেশের প্রতিটি মানুষের আয় তা নয়। কারণ, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে দেশের জনসংখ্যা দিয়ে মাথাপিছু ভাগ করে এ আয়ের হিসাব করা হয়। ফলে দেশে মাথাপিছু আয় বাড়লেও তাতে ব্যক্তির আয়ে কোনো তারতম্য হয় না।
২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে গত বছরের ৩০ জুন। সাত মাসের বেশি সময় পার হওয়ার পর রবিবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ ওই অর্থবছরের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করল পরিসংখ্যান ব্যুরো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগ কমেছে। সব মিলিয়েই জিডিপি প্রবৃদ্ধি খানিকটা কমেছে। ফলে মাথাপিছু আয়ও ৩১ ডলার কমে গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার। বিশ^ প্রেক্ষাপটে এই প্রবৃদ্ধি ‘খুবই ভালো’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭ দশমিক ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বিশে^র যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।’
করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৭ শতাংশের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থনীতিবিদসহ বিশ্লেষকদের মধ্যে ছিল ব্যাপক সংশয়। সেই সংশয়ের মধ্যেই সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ওই অর্থবছরই সোয়া ৭ শতাংশ হয়েছিল।
তবে গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের পর এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ নাগাদ জিডিপির প্রবৃদ্ধি নেমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে। জিডিপি যে কমবে, সেই ইঙ্গিত এর আগে বিশ^ব্যাংকও পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি আবার আগের ধারায় ফিরবে বলেও জানিয়েছে আইএমএফ।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।