
চূড়ান্ত হিসাবে দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জনশুমারির তথ্যের সঙ্গে এ হিসাবের ব্যবধান ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সরকারি আরেক সংস্থা বিআইডিএসের নতুন জরিপে বাদ পড়া ৪৭ লাখ যোগ হওয়ায় দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা শুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ প্রতিবেদন তুলে ধরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।
এর আগে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ। বেশ কয়েক মাস ধরে ঢাকঢোল পিটিয়েও শুধু জনসংখ্যা ছাড়া আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি এ গবেষণা সংস্থাটি। অথচ বিবিএসের জনশুমারির জরিপে ৩৫টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেগুলোর প্রতিটিতে কোনো গবেষণা করেনি বিআইডিএস।
বিবিএসের শুমারিতে কতসংখ্যক বাদ পড়েছে, তা জানতে আলাদাভাবে জরিপ করে সরকারি সংস্থা বিআইডিএস। তাতে দেখা যায়, বিবিএসের শুমারিতে ৪৭ লাখ বাদ পড়েছে। নতুন করে এরা যোগ হওয়ায় এখন জনসংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটি ৯৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিআইডিএস বলেছে, বিবিএসের শুমারিতে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে। তারা বাদ পড়াদের যোগ করেছে।
তবে গতকাল প্রকাশিত এ তথ্যে নারী ও পুরুষ কতজন বাদ পড়েছে তা আলাদা করে প্রকাশ করেনি এ গবেষণা সংস্থাটি। সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না করলেও তারা শুধু আনুপাতিক হিসাব দিয়েই কাজ শেষ করেছে। তবে মোট জনসংখ্যার বাইরে আর কোনো তথ্য দেয়নি বিবিএস ও বিআইডিএস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিনসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে শামসুল আলম বলেন, মানুষ উদগ্রীব ছিল জনসংখ্যার তথ্য জানার জন্য। মোট জনসংখ্যা কত, নারী-পুরুষ কত, প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা কত। এসব তথ্য ঘোষণা করলে ভালো হতো। বিআইডিএস চাইলে এসব তথ্য দিতে পারত। তাদের বুঝতে হবে, জাতি কী ধরনের তথ্য চায়।
বিআইডিএসের হিসাবে, জুনে অনুষ্ঠিত হওয়া জনশুমারিতে সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষ। গ্রামের মানুষ বাদ পড়েছে সবচেয়ে কম। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রামে ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ জনশুমারির হিসাব থেকে বাদ পড়েছে। তবে শহরের বাদ পড়েছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
নারী-পুরুষের শুধু আনুপাতিক হিসাব প্রকাশ করে গবেষণা সংস্থাটি বলছে, নারীদের চেয়ে পুরুষ বাদ পড়েছে বেশি। এতে নারী বাদ পড়েছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ আর পুরুষ বাদ পড়েছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
বয়সের বিচারে জনশুমারির হিসাবের সময় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। গবেষণায় চূড়ান্ত হিসাবে দেখা যায়, হিসাবের খাতায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা। এবার বাদ পড়েছে মাত্র ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। গণনায় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে ৭৫ বা তার বেশি বয়সীরা। এরা বাদ পড়েছে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এরপরই বাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী শিশু। এদের মধ্যে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশই হিসাবে আসেনি বলে জানানো হয়েছে চূড়ান্ত হিসেবে।
বিভাগের হিসাবে জনশুমারির গণনায় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়াদের তালিকায় আছে সিলেট বিভাগের মানুষ। এ বিভাগের ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানুষ গণনাতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে জুনে জনশুমারি চলাকালে সিলেট অঞ্চলে স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। ফলে ওই এলাকায় জনশুমারির সময় এক সপ্তাহ বাড়ানো হলেও ওই এলাকার অনেক মানুষ হিসাবে আসেনি। তবে ময়মনসিংহ এলাকার মানুষও বাদ পড়াদের তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষে আছে। এ এলাকার ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে। গণনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ, এ অঞ্চলের বাদ পড়েছে ২ দশমিক ১২ শতাংশ মানুষ।
পূর্ণাঙ্গ তথ্য কেন প্রকাশ করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, এটি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো মিডিয়া প্রতিষ্ঠান নয় যে সব তথ্য এখানে থাকতে হবে।
অবশ্য পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় উষ্মা জানিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বিআইডিএসকে বুঝতে হবে আমাদের জনগণ কী চায়। এটা করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে এটি আমাদের কারণে নয়।
এ সময় বিবিএসের মহাপরিচালক বলেন, এটাকে কোয়ালিটি চেক নাম দেওয়া উচিত ছিল। গণনা-পরবর্তী বাছাই কাজের জন্য এটি করা হয়। তবে এটুকু বলতে পারি, এখনো দেশের অধিকাংশ মানুষের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। তবে আমাদের গণনার সঙ্গে বিআইডিএসের হিসাবের পার্থক্য মাত্র ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হওয়ায় এটি সীমার মধ্যে রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সবসময় ক্ষোভ ঝাড়তেন বিবিএসের দুর্বলতা নিয়ে। তবে এবার তাদের দুর্বলতা কিছুটা কমেছে। আমাদের আরও পরিচ্ছন্ন হিসাব করা উচিত। আমাদের পরিসংখ্যান যত শুদ্ধ হবে, জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণেও তত সহজ হবে।
গত বছর ১৫ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা হয়। এ সময় সিলেট এলাকায় বন্যা হওয়ায় ওই এলাকায় আরও এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে ২৮ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। জনশুমারিতে এবার ৩৫টি তথ্য নেওয়া হয়েছে।
তখন ভোররাত। বাইরে ঝিরিঝিরি তুষার পড়ছে। তীব্র শীতে ঘরের উষ্ণতায় বেশিরভাগ মানুষই গভীর ঘুমে। কিন্তু সে ঘুম যে আর ভাঙবে না তা জানা ছিল না হাজারো মানুষের। ভোর সোয়া ৪টার সময় তীব্র ভূমিকম্পের আঘাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু শহরের বাসিন্দারা। এরপর বেলা বাড়তে থাকলে শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হতে শুরু করে একের পর এক মরদেহ আর আহত মানুষ। তবে দফায় দফায় ভূমিকম্প-পরবর্তী ঝাঁকুনি (আফটার শক) আর দুপুর দেড়টার দিকের আরেক দফায় কম্পনে একদিকে যেমন নতুন করে ধসে পড়ে বহু বাড়িঘর, তেমনি ব্যাহত হয় উদ্ধারকাজও। বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার রাত ২টা অবধি দুই দেশে অন্তত ২ হাজার ৬০০ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কয়েক হাজার মানুষকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো চাপা পড়ে আছে অনেকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ১৯৩৯ সালের পর একে তার দেশের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করে উদ্ধার তৎপরতা ও পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবিলায় বিদেশি সহায়তাও চেয়েছেন। আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে তুরস্কের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, ভোর সোয়া ৪টায় আঘাত হানে প্রথম ভূমিকম্প। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য বলছে, রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পনটির কেন্দ্র ছিল তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরে। এর পরে আরও কয়েকটি আফটার শকে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও সিরিয়ার কয়েকটি এলাকা। আর দুপুর দেড়টার দিকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পনে ফের কেঁপে ওঠে ওইসব এলাকা। এর কেন্দ্র ছিল কাহরামানমারাস শহরে। গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা গেছে, কাহরামানমারাস শহরে ধসে পড়া ভবনগুলোর চারপাশে লোকজন জড়ো হয়ে জীবিতদের খোঁজ করছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের দাবি, সেটিও ছিল আরেক দফার ভূমিকম্প, আফটার শক নয়। এদিন তুরস্ক বা সিরিয়া ছাড়াও লেবানন, মিসর, সাইপ্রাস এবং ইসরায়েল জুড়ে লাখ লাখ মানুষ কম্পন অনুভব করে। কেঁপে ওঠে সুদূর গ্রিনল্যান্ডও।
আলজাজিরা বলছে, নিহতদের মধ্যে দেড় হাজারের বেশি তুরস্কের আর এক হাজারের বেশি সিরিয়ার। যদিও দেশ দুটির সরকারি তথ্যের সঙ্গে এ সংখ্যার তফাত রয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে আলজাজিরা বলছে, তুরস্কে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো কাহরামানমারাস, গাজিয়ানতেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, আদানা, আদিয়ামান, মালত্য, ওসমানিয়ে, হাতায় ও কিলিস। ওইসব এলাকার ২ হাজার ৮১৮টি ভবন ধসে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে। তুরস্ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে উদ্ধারকারীদের পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়ে সহায়তা করতে জনসাধারণকে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে। ওই ১০টি শহর ও প্রদেশের স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি হাতায়, মারাশ এবং আন্তেপের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকাতে বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা দুর্গতদের কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করছি। প্রচণ্ড ঠান্ডা, অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তারা খোলা জায়গায় আছে। ইতিমধ্যে সিরিয়ার উত্তরাংশে লাখ লাখ মানুষ তাঁবুতে ঠাঁই নিয়েছে।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদলু আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাতে এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রথম ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দিনের তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে আর রাতে তা হিমাঙ্কের নিচে থাকবে। প্রায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পুরু তুষারপাত হতে পারে। আর উত্তরে ভারী তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে আগামী দিনগুলোর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ওপরে উঠবে না বলে মনে করা হচ্ছে। যার অর্থ ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার তুষারপাত হতে পারে। এতে করে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়ে প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে।
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার সরকার, হাসপাতাল ও উদ্ধারকর্মীরা ভূমিকম্পে ৮১০ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস প্রদেশে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো সিরিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত এলাকা। আর তুর্কিপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীনিয়ন্ত্রিত দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাও অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাসেবা এবং জরুরি সরবরাহের সুযোগ সীমিত। ওইসব এলাকায় কাজ করা একটি ত্রাণ সংস্থা হোয়াইট হেলমেট জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত মানুষজনকে ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে। আলেপ্পোর উত্তর-পশ্চিমে এক শহর থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভবনগুলো ধসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধুলোর বিশাল মেঘের মধ্য দিয়ে বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছে এবং চিৎকার করছে।
১৯৯৫ সালে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত সিরিয়ার জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্রের প্রধান রায়েদ আহমেদ রাষ্ট্রীয় বেতার স্টেশনকে বলেন, ‘আমাদের এ কেন্দ্রের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প।’
বিশ্বনেতাদের শোক, পাশে থাকার আশ্বাস : তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপ্রধান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। তিনি বলেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার এ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ পাশে আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার এ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ তাদের পাশে আছে। তিনি তার সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তুরস্ক ও সিরিয়াকে জরুরি মানবিক সেবা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে চীনও। ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ইউনিয়নের আটটি দেশ থেকে ১০টি উদ্ধার দলকে সক্রিয় করা হয়েছে তুরস্ককে সহযোগিতার জন্য। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ফ্রান্স, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও রোমানিয়া। কমিশন আরও জানিয়েছে, ইতালি ও হাঙ্গেরিও তুরস্কে টিম পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। জার্মানির ফেডারেল এজেন্সি ফর টেকনিক্যাল রিলিফ আশ্রয় শিবির ও চিকিৎসা ইউনিটের ব্যবস্থা করতে পারে বলে জানিয়েছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফায়েজার। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কারিয়াকোস মিতসোতাকিস শোক ও সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন তুরস্ককে। ভারত সরকার বলেছে, তাদের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনীর দুটি দলে ১০০ জনের মতো সদস্য তুরস্কের উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। চিকিৎসক দলও প্রস্তুত। ইরানও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থা সহযোগিতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তুরস্কে ইসরায়েলি ত্রাণ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরোধ পাওয়ার পর সিরিয়াতেও ত্রাণ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তুরস্কের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টোলটেনবার্গ টুইটারে লিখেছেন, তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং সহযোগিতা প্রস্তুত করছি। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি মধ্যপ্রাচ্য আঞ্চলিক প্রধান কার্স্টেন হানসেন বলেছেন, সিরিয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে সহযোগিতা পাঠানোর জন্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে বড় ধরনের মানবিক সহযোগিতা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কাতার। স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, স্পেনের শহুরে উদ্ধার টিম তুরস্ক যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়া ও তুরস্ককে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে তার দেশ। সিরীয় প্রেসিডেন্ট আসাদকেও প্রায় একই ধরনের বার্তা পাঠিয়েছেন পুতিন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, সহযোগিতা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে তার দেশ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্দি উভয় দেশের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেছেন, সংস্থাটি জীবিতদের জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছে। তুরস্কে উদ্ধার ও অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞ এবং একটি জরুরি মেডিকেল টিম পাঠাবে যুক্তরাজ্য। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভ্যান বলেছেন, ভূমিকম্পের ঘটনায় গভীর উদ্বেগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় যেকোনো সহযোগিতা প্রদানে আমরা প্রস্তুত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসোস বলেছেন, আহত ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের অত্যাবশ্যক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য জরুরি মেডিকেল টিমকে সক্রিয় করা হয়েছে।
বাংলাদেশিদের হতাহতের তথ্য নেই, সহায়তা করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ : তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। দেশ দুটির এ দুঃসময়ে বাংলাদেশ কী ধরনের সহযোগিতা করতে পারে সেটিও জানতে চেয়ে ঢাকার তরফে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, মানবিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য তুরস্কের কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা ইতিমধ্যেই জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের উত্তর পেলেই প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দিতে প্রস্তুত আমরা।
তিনি আরও বলেন, তুরস্কে আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে জেনেছি ভূমিকম্পে কোনো বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। কেউ আহত হয়েছে কি না সে বিষয়েও আমরা খোঁজখবর রাখছি। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুওলুকের কাছে পাঠানো শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তুরস্কে ঘটে যাওয়া মারাত্মক ভূমিকম্পে প্রাণহানির জন্য তুরস্কের সরকার এবং জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় তিনি বলেন, এই শোকাবহ মুহূর্তে তুরস্কের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণ এবং নিহতদের পরিবারের জন্য আমরা প্রার্থনা করছি। ভূমিকম্পে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ফয়সাল মেকদাদের কাছে পাঠানো শোকবার্তায় ড. মোমেন সিরিয়ার সীমান্তে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে হতাহতের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। এ ভয়াবহ দুর্যোগে নিহত ও আহত সবার পরিবারের সদস্য এবং সিরিয়ার জনগণের সঙ্গে আমরাও গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশ এ সংকটময় সময়ে সিরিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের সঙ্গে রয়েছে।’
গত ২২ বছর ধরে দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের ৩৩ জেলায় রোগটি দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের ১ মাস ৬ দিনে ৬ জেলার ৭ উপজেলায় ১০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ও তাদের মধ্যে ৭ জনই মারা গেছেন। সে হিসাবে মৃত্যুহার দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২২ বছরে রোগটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৩২৫ ও মারা গেছে ২৩০ জন। মৃত্যুহার ছিল ৭১ শতাংশ। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে নিপাহ রোগে মোট আক্রান্ত হলো ৩৩৫ ও মারা গেছে ২৩৭ জন।
এমন অবস্থায় সারা দেশে রোগটি নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সংগঠনের কাছে এক চিঠিতে নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরের ঝুঁকির কথা জানায়।
চিঠিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, রোগী দেখার সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। রোগী দেখার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। জ্বরের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে অবশ্যই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে। জ্বরের পাশাপাশি রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে রোগীকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখতে হবে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিচর্যাকারীরা শুধু গ্লাভস, মাস্ক পরলেই হবে।
নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০টি আইসোলেশন শয্যা এবং ১০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ধরনের রোগীদের রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা, নওগাঁর নওগাঁ সদর, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ, পাবনার ঈশ্বরদী, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ ও নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় রোগী পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে।’
একমাত্র বাহক খেজুরের কাঁচা রস ও উৎস বাদুড় : বাংলাদেশে নিপাহ রোগের একমাত্র বাহক খেজুরের কাঁচা রস ও উৎস বাদুড় বলে জানান সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কোনো গবেষণাতেই এখনো বাদুড় ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর থেকে নিপাহ রোগ ছড়ানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু বাদুড়ের মধ্যেই নিপাহ পাওয়া গেছে। অন্য কোনো প্রাণী, যেমন মুরগি, হাঁস, গরু, বাছুর, ভেড়া এগুলোর কোনোটার মধ্যেই নিপাহ পাওয়া যায়নি। এমনকি শূকরের মধ্যে পাওয়া যায়নি।’
এ বিশেষজ্ঞ জানান, বাংলাদেশে প্রথমে নিপাহ ভাইরাস রোগের জন্য শূকরকে কারণ হিসেবে দেখা হতো। কারণ বাদুড়ের কাছে থেকে শূকর আক্রান্ত হতো। শূকর থেকে মানুষে হতো। কিন্তু ২০০৪ সালে টাঙ্গাইলে যখন নিপাহর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন আবিষ্কার হয় খেজুরের কাঁচা রস খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
ডা. মুশতাক বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে বাদুড়ের খাওয়া পাম ফল শূকরের পানি খাওয়ার বড় বড় গামলার মধ্যে পড়ে। সেই পানি খেয়ে শূকর আক্রান্ত হয় এবং এসব শূকরের সংস্পর্শে যেসব মানুষ যেত, তারা আক্রান্ত হতো। ভারতের কেরালায় যে নিপাহ পাওয়া গেছে, সেটা সম্ভবত আধা খাওয়া ফল থেকে হয়েছে। আর বাংলাদেশে বহু বছর আগে সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় নিপাহ পাওয়া গিয়েছিল খেজুরের রস থেকে। কিন্তু তখন সেটার কারণ সঠিকভাবে আবিষ্কৃত হয়নি। এখন ধারণা করা হয় সম্ভবত খেজুরের কাঁচা রস খেয়েই হয়েছিল।’
আক্রান্ত কম হলেও রোগটি বিপজ্জনক : নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের হার কম হলেও এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা বেঁচে থাকে, তারা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভোগে। কয়েকটি জেলায় এখন পর্যন্ত রোগী পাওয়া গেলেও সব জেলাই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বিভিন্ন অনলাইন শপে এখন খেঁজুরের রস বিক্রি হচ্ছে। তারা প্রচার করছে, সব ধরনের সতর্কতা মেনে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু শুধু বাদুড় মুখ দিলেই নয়, বাদুড়ের লালা এবং প্রস্রাব থেকে ভাইরাসটি রসের মধ্যে আসতে পারে। খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার পর নিপাহতে আক্রান্তের লক্ষণ দেখা যায় সাধারণ ৮ থেকে ৯ দিনের মধ্যে। অন্যদিকে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসাদের লক্ষণ দেখা যায় ৬ থেকে ১১ দিনের মধ্যে।’
বাংলাদেশে মৃত্যুহার ৭১% : বাংলাদেশে গত ২২ বছর ১ মাস ৬ দিনে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭১ শতাংশই মারা গেছে। এমনকি এ বছর গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই মারা গেছে। সে হিসাবে এ রোগে মৃত্যুহার অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিপাহ ভাইরাসকে ‘ডেডলি ডিজিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, এ ভাইরাসবাহিত রোগের কোনো ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। যার কারণে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা ৭০ থেকে ১০০ ভাগ। আর যারা বেঁচে থাকে তাদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের স্নায়বিক দুর্বলতায় ভোগে।
এ ব্যাপারে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্ক আক্রান্ত করে। মস্তিষ্ক প্রদাহেই মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এই প্রদাহ বেশ মারাত্মক রোগ। এ রোগের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো আবিষ্কার হয়নি। কোনো ওষুধও আবিষ্কার হয়নি। মস্তিষ্ক প্রদাহের চিকিৎসায় একমাত্র উপায়। যারা দ্রুত মস্তিষ্ক প্রদাহের চিকিৎসায় আওতায় আসে, তারা বেঁচে যায়। কিন্তু বেঁচে গেলেও তাদের এটার ধকল বয়ে বেড়াতে হয়।’
খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না : এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে কিছুতেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না বলে সতর্ক করে দেন ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘কোনো আধা খাওয়া বা আংশিক খাওয়া ফল পড়ে থাকলে সেটা খাওয়া যাবে না। এমনকি তালগাছের রস থেকে যে তাড়ি তৈরি হয়, সেটা খেয়েও বাংলাদেশে মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। তালের রসও বাদুড়ের লালা অথবা মূত্রের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। সুতরাং তালের রসও খাওয়া যাবে না।’
ডা. মুশতাক বলেন, ‘বাংলাদেশে আগে বাদুড় কাঁচা রসে মুখ দিত না। বাদুড়ের দ্বারা কাঁচা রস সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিককালের। বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। কারণ আগে বন-জঙ্গলের ফল খেয়ে বাদুড় থাকত। বনের গভীরে দিনের বেলায় ঘুমাত। কিন্তু বন কেটে আমরা সাফ করে ফেলেছি। এখন বাদুড় খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে এবং খেজুরের রস খাচ্ছে।’
আক্রান্তের লক্ষণ, চিকিৎসা : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, নাক, মুখগহ্বর দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নিপাহ ভাইরাস। এতে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বর, মাথা ঘোরা, বমি, খিঁচুনি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রলাপ বকে, অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায়। শরীরে ভাইরাস প্রবেশের ৭-১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্কে আক্রমণ করে। এতে মস্তিষ্কে এনকেফেলাইটিস (মস্তিষ্কে প্রদাহ) হয়। এনকেফেলাইটিসের বিরুদ্ধে কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল নেই। ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ রোগের চিকিৎসা হয় লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। ব্রেনের প্রদাহ কমানোর জন্য সম্ভাব্য ওষুধ যেগুলো আছে, সেগুলো দেওয়া হয়। রোগীকে আমরা আইভি ফ্লুইড ও জ¦র থাকলে তা কমানোর ওষুধ দিই। অবস্থা খুব খারাপ হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়।’
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পাওনার পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি এলএনজি আমদানি করেও চালানের বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে না। বছরের পর বছর এনবিআর থেকে বকেয়া পরিশোধে এবং বিল অব এন্ট্রি দাখিল করতে তাগাদা দেওয়া হলেও অগ্রগতি নেই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দে অনুমতি চেয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পেট্রোবাংলার কাছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বকেয়া থাকায় কাস্টম হাউসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফিসক্যাল ডিসিপ্লিন ও শুল্ক আনুষ্ঠানিকতার শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।’
বকেয়া রাজস্বের বিষয়ে সম্প্রতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জগেন্দ্র নাথ সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। রাজস্ব পাওনা হলে অবশ্যই পরিশোধ করা হবে। তিতাস থেকেও এনবিআরের কাছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে বলে জানি। সব বিষয় নিয়েই বৈঠক করা হবে।’
এনবিআরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, বকেয়া পরিশোধ না করলে ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করা হবে বলেও পেট্রোবাংলাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এবার এনবিআরের অনুমতি নিয়ে ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পথে হাঁটছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ২২ হাজার ৬০১ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর সঙ্গে গত অর্থবছরের পাওনা যোগ হয়ে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
সম্প্রতি এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট থেকে পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপকের (এফএমডি) বকেয়া পরিশোধে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ‘বকেয়া পাওনা আদায়ে পেট্রোবাংলা দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনাসহ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) দপ্তর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সভা হয়েছে। এসব সভায় পেট্রোবাংলা বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কোনো মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বকেয়া রাখবে না বলে জানালেও বাস্তবায়ন হয়নি। পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়নি।’
পাওনা পরিশোধ না করলে বিদ্যমান মূসক আইন অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ কর্তনের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও এনবিআরের চিঠিতে জানানো হয়েছে। এনবিআর থেকে পাঠানো চিঠিতে দাবিনামার অন্তত ২০ শতাংশ পরিশোধের পাশাপাশি বাকি টাকা ছয় মাসের কিস্তিতে পরিশোধের অনুরোধ করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় এলএনজি আমদানিতে। পেট্রোবাংলা চেষ্টা করছে রাজস্বের বিষয়ে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে।’
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পেট্রোবাংলার আমদানি করা এলএনজি বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ায় গ্যাস পরিবহনকারী কার্গো জাহাজ থেকে মহেশখালীতে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনালের এফএসআরইউতে এলএনজি আনলোড করা হয়। এই ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কাস্টমস আইনের ৭৯(এ) ধারা অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রেরিত বিল অব এন্ট্রি এবং এনবিআরের ২০০১ সালের এক আদেশ অনুযায়ী বিল অব এন্ট্রিসহ আনুষঙ্গিক দলিলাদি সংশ্লিষ্ট কমিশনারে দাখিল করতে হয়। সেই অনুযায়ী পণ্য শুল্কায়ন ও শুল্ককর পরিশোধ করে খালাসের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলার পণ্যচালান আমদানি হওয়ার ছয় মাস পরে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি, যা কাস্টমস আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, কাস্টম হাউস থেকে পেট্রোবাংলাকে ১০ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২০ জুন আমদানিকারক পেট্রোবাংলাকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়, কিন্তু কোনো জবাব দেয়নি। ২৬ জুন আবার চিঠি দেওয়া হয়; যাতে বলা হয়, বকেয়া পরিশোধ ও আইনের পরিপালন করা না হলে কাস্টমস আইন ও মূসক আইন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের বিন লক, পণ্য খালাস বন্ধ ও ব্যাংক হিসাবের লেনদেন কার্যক্রম অপরিচালন করা হবে। এরপরও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বকেয়া পরিশোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে ৭ জুলাই ও ২১ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলা থেকে চিঠির মাধ্যমে কাস্টম হাউসকে জানানো হয় যে অর্থ বিভাগ থেকে ভর্তুকি প্রাপ্তি সাপেক্ষে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে বকেয়া শুল্ককর পরিশোধ করা হবে।
প্রসঙ্গত, পেট্রোবাংলা সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ অনুসন্ধান এবং উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, পরিশোধন ও বাজারজাতকরণেও কাজ করে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়নে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তিও সম্পাদন করে থাকে।
নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী মে মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সব প্রস্তুতি সারতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরকে প্রধান করে গঠিত কমিটি আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসবে। শেরেবাংলা নগরে ইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সীমানা পরিবর্তনের বিষয়ে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হবে।
ইসির সূত্র বলছে, সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য এ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন আসনের বিষয়ে ১০০টির মতো আবেদন জমা পড়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছে ইসি। তবে আবেদন যা-ই জমা পড়ুক, বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজন অনুসারে সীমানায় পরিবর্তনের পক্ষে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য দিলেই আমরা সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ দ্রুত শেষ করতে পারতাম। কিন্তু তাদের তথ্য দিতে আরও দেরি হবে। আবার নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী আমাদের মে মাসের মধ্যেই এ সংক্রান্ত কাজ শেষ করতে হবে। সেটি কীভাবে হবে তা নিয়েই আগামীকাল (আজ) বৈঠক হবে। বৈঠকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে। যে খসড়া প্রতিবেদন পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে পেয়েছি, তা থেকে চূড়ান্ত প্রতিবদেন ৪-৫ শতাংশ এদিক-ওদিক হয়। তারপরও আমাদের কাজে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
তিনি জানান, ইসি কীভাবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নাকি আসনের আয়তনের ভিত্তিতে তা নিয়ে, কীভাবে কাজ সম্পন্ন হবে, এই প্রক্রিয়ায় কারা দায়িত্বে থাকবে প্রভৃতি ঠিক করা হবে বৈঠকে। মূলত প্রাথমিক কর্মপন্থা নির্ধারণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে।
সূত্র জানায়, জনশুমারি ও গৃহগণনার খসড়া প্রতিবেদন ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে আরও সময় লাগতে পারে। ইতিমধ্যে জেলাভিত্তিক জনসংখ্যাও প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক হিসাব প্রস্তুতের কাজ চলছে। ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যে সফটওয়্যারের সাহায্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ করেন, সেটি দিয়ে এক মাস ধরে বিভিন্ন তথ্যের পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে পাওয়া খসড়া তথ্যের ভিত্তিতেই কাজ হচ্ছে।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিকল্পনা ব্যুরোর কাছ থেকে জনশুমারির একটা খসড়া পেয়েছি। তা দিয়েই কাজ এগিয়ে রাখছি।’
সূত্র বলেছে, আগে সীমানা নির্ধারণ করতে আইনি অনেক সমস্যা হতো। কোনো কোনো আসনের ভোটাররা বা প্রার্থীরা মামলাও করতেন। ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল ওই এলাকার ভোট। কিন্তু ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনকে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়ে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ’ আইন পাস হয়। আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, ইসির সীমানা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে দেশের কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন করা যাবে না।
সীমানা আইন-২০২১-এ আরও বলা আছে, সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিতসংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পুরো দেশকে উক্ত সংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং জনশুমারির ভিত্তিতে যথাসম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়। তাতে বলা আছে, দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। তবে ইসিকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলেও বিতর্ক ও ঝামেলা এড়াতে এবার জনসংখ্যা নয়, প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গেলে নানা প্রশাসনিক অসুবিধার সৃষ্টি হবে। তাই সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখণ্ডতা এবার সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কাছে ইসি আবেদন না চাইলেও অনেকেই নিজ থেকে আবেদন জমা দিচ্ছেন। এর মধ্যেই প্রায় ১০০ আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে আবেদন করেছেন সংক্ষুব্ধরা। সংশ্লিষ্ট আসনের সরকারি-বিরোধী প্রার্থীর দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি চাইলে সীমানার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আপত্তি ও পরামর্শ জমা দিতে পারবেন।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘কত আবেদন জমা পড়েছে তার সমন্বিত হিসাব আমরা এখনো করিনি। প্রায় ১০০টির মতো আবেদন জমা পড়েছে।’
সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহল থেকেই বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। অনেকেই বর্তমান সীমানা বহাল রাখা, কেউ কেউ আগে যে সীমানায় নির্বাচন হয়েছিল তা বহাল রাখার কথা বলেছেন। মৌখিক তদবির থাকলেও এমপিদের কেউ এখনো লিখিত আবেদন করেননি। মন্ত্রী, এমপি ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য আবেদনে রয়েছে। বেশির ভাগ মন্ত্রী-এমপির পক্ষে যারা আবেদন করেছেন, তারা বর্তমান সীমানাতেই নির্বাচন করার পক্ষে।
সূত্র বলছে, কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনের সীমানা নিয়ে পাঁচটি আবেদন জমা পড়েছে। একটিতে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) ও কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে আসন পুনর্নির্ধারণ এবং আরেকটি আবেদনে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলায় সীমানা পুনর্নির্ধারণ চাওয়া হয়েছে। পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী, হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের আবেদনও জমা পড়েছে ইসিতে।
সিরাজগঞ্জ-১ ও ৫ আসন নিয়েও আবেদন জমা পড়েছে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলায় সমন্বয়ের (বেলকুচি ও কামারখন্দ) ভিত্তিতে আসন পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। পিরোজপুর-৩ আসনের (মঠবাড়িয়া উপজেলা) বর্তমান সীমানা বহাল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেওয়ার সময় শেষ হলে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। এরপর দাবি, আপত্তি ও শুনানি শেষে চূড়ান্ত করা হবে সংসদীয় আসনের সীমানা। বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজন অনুসারে আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনার পক্ষে এবং সেভাবে প্রস্তুতি রাখছেন বলে একাধিক কর্মকর্তার দাবি।
সীমানা পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত আবেদন আহ্বান করিনি। তারপরও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দরখাস্ত দিচ্ছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারা যোগাযোগ করছেন। দুই রকম দরখাস্তই আসছে আমাদের কাছে। আমরা জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে পারব না। জুনের মধ্যে আমরা সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করব।’
২০০১ সালের নির্বাচনের সময় ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সেনাসমর্থিত নির্বাচন কমিশন ১৩৩ সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল। প্রতি আদমশুমারির পর সীমানা পুনর্নির্ধারণের নিয়ম রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই ৫৩টি আসনে পরিবর্তন আনে কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন সর্বশেষ ২৫টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন করেছিল।
জনশুমারির জন্য গত বছরের জুন মাসে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন ও নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
দফায় দফায় আঘাত হানা ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ধসে পড়া হাজার হাজার ভবন থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে একের পর এক মরদেহ আর আহতদের। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে আহতদের উপচেপড়া ভিড়। আহত আর স্বজনহারাদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে ভূমিকম্পকবলিত এলাকার বাতাস। আকস্মিক এ দুর্যোগে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। এরমধ্যে তুরস্কের কিছু অঞ্চলের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তীব্র শীতে দেখা দিয়েছে ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা। গতকাল দুপুরে দ্বিতীয় দফার ভূমিকম্পে ও অসংখ্য ভূমিকম্পন-পরবর্তী ঝাঁকুনির (আফটার শক) কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে তুরস্ক জুড়েই। রাজধানী আঙ্কারায় ভূকম্পন তেমনটা অনুভূত না হলেও এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
আমিও থাকি রাজধানী আঙ্কারায়। তীব্র শীতের কারণে গভীর ঘুমে ছিল পুরো শহর। এ কারণে হয়তো এখানে যে মৃদু কম্পন হয়েছে তা অনুভব করতে পারেননি বেশিরভাগ বাসিন্দা। আমিও টের পাইনি। তবে নামাজের জন্য খুব ভোরেই ঘুম ভাঙে আমার। নামাজ শেষ করে মোবাইল ফোনটা হাতে নিতেই একজনের ফোন আসে। তার মাধ্যমেই জানতে পারি কাহারামানমারাশ, গাজিয়ানতেপ শহরসহ অন্তত ১০ শহর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ভূমিকম্পে। সে সময় বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ববহ মনে হয়নি। তবে সময় যত বাড়তে থাকে ততই আসতে থাকে ক্ষয়ক্ষতির খবর। স্পষ্ট হতে থাকে ধ্বংসের চিত্র। বাংলাদেশ, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল থেকে উদ্বিগ্ন মানুষজনও খবর নিতে শুরু করেন। তুরস্কের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি স্টুডেন্টস ইন তুর্কির (অ্যাবাস্ট) সভাপতি হওয়ার কারণে দায়িত্ব হিসেবেই আমিও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাংলাদেশিসহ পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। যোগাযোগ করি বাংলাদেশ দূতাবাসেও। তবে আশার কথা, দূতাবাস বা বিভিন্ন শহরের সূত্রগুলো কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর দেয়নি।
এবারের ভূমিকম্পের সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল মোবাইল ফোনেও কোনো সতর্কতামূলক বার্তা না আসা। আগে ৫ মাত্রার ভূমিকম্পেও সতর্কতামূলক বার্তা পেয়েছিলাম। অথচ ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের আগে কোনো অ্যালার্ট আসেনি। এমনকি পরে বড় মাত্রার আফটার শকেরও কোনো আগাম আভাস পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের ঘটনায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে তুরস্ক সরকার। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে। তবে তীব্র শীত আর তুষারপাতের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। সরকারি হিসাবেই ইতিমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। এরমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শীত থেকে বাঁচাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওইসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। টেলিফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি শহরে। তাই সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পেতে হয়তো আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আর অবকাঠামোগত ক্ষতি যে স্মরণকালের যেকোনো ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। এখন দেখার বিষয় তুরস্ক সরকার কীভাবে এ বিপর্যয়ের মোকাবিলা করে?
লেখক: পিএইচডি গবেষক, সাংবাদিকতা বিভাগ, আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়, তুর্কিয়ে।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।