
তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে পশ্চিমের পুরনো শহর গাজিয়ানতেপ, সেখান থেকে ১৩০ মাইলেরও বেশি পশ্চিমের শহর আদানায় বসবাস করেন নিলুফার আসলান। গতকাল সোমবারের ভোর তার কাছে স্মরণীয় হয়ে গেল। সবার অজান্তে যখন নড়ে উঠল অভিশপ্ত আনাতোলিয়া ফল্ট লাইন, ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তখন কেঁপে উঠল গোটা গাজিয়ানতেপ। এ ভূমিকম্পে যখন নিলুফারদের পঞ্চমতলার অ্যাপার্টমেন্ট কেঁপে উঠে তখন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সবাই মারা যাবেন, এমনটা ধরেই নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ভূমিকম্প কখনো দেখিনি। আমরা প্রায় এক মিনিটের জন্য দুলছিলাম। তখন আমি পরিবারের সদস্যদের বললাম, ভূমিকম্প হচ্ছে, চলো সবাই একসঙ্গে এক জায়গায় মরি। এ বিষয়টিই তখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।’
ভূমিকম্প থেমে যাওয়ায় বাসা থেকে বেরিয়ে আসা আসলান বলেন, ‘আমি কোনো কিছু সঙ্গে নিতে পারিনি। শুধু জুতো পরেই বাইরে চলে এসেছি। আমাদের ভবনের আশপাশের অন্তত চারটি ভবন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।’
ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে যখন ভয়াবহ ঝাঁকুনিতে ভবনগুলো দুলছে তখন গাজিয়ানতেপের বাড়িতে ঘুম থেকে ধড়মড়িয়ে ওঠেন এরদেম। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার ৪০ বছরের জীবনে এমন ভূমিকম্প কখনোই দেখিনি। আমরা অন্তত তিনবার অত্যন্ত জোরালভাবে কেঁপে উঠলাম। ঠিক যেভাবে দোলনায় শিশুরা দোল খায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে বাঁচার জন্য লোকজন তাদের গাড়িতে করে পালাতে থাকে। আমার ধারণা গাজিয়ানতেপের কোনো বাড়িতে একজন মানুষও আর নেই।’
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল গাজিয়ানতেপ থেকে ৩০০ মাইল পূর্বের দিয়ারবাকির এলাকায় উদ্ধারকারীদের সাহায্য করার জন্য রাস্তায় ছুটে আসেন লোকজন। ৩০ বছর বয়সী এক যুবক বিবিসিকে বলেন, সর্বত্রই চিৎকার। আমি হাত দিয়ে পাথর সরাতে শুরু করলাম। আমরা বন্ধুদের সহায়তায় আহতদের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করেছি। কিন্তু আর্তনাদ থামছে না। এরপর উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা আসেন। শহরের অন্য একটি এলাকায় মুহিত্তিন ওরাকসি নামে এক ব্যক্তির পরিবারের সাত সদস্য চাপা পড়েছেন বলে জানান তিনি। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে মুহিত্তিন বলেন, ‘আমার বোন এবং তার তিন সন্তানও চাপা পড়েছে এবং তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িও চাপা পড়েছে।’
ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক জিয়াদ হাজে তাহা বলেন, ‘বিপর্যয়ের পর আহত ব্যক্তিরা ঢেউয়ের মতো ছুটে আসছে।’
ভোরের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ইতিমধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তুরস্ক-সিরিয়া। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে অসংখ্য মানুষ, প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশে চলছে উদ্ধারকাজ। নিহতের সংখ্যা বাড়ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়।
চূড়ান্ত হিসাবে দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জনশুমারির তথ্যের সঙ্গে এ হিসাবের ব্যবধান ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সরকারি আরেক সংস্থা বিআইডিএসের নতুন জরিপে বাদ পড়া ৪৭ লাখ যোগ হওয়ায় দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা শুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ প্রতিবেদন তুলে ধরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।
এর আগে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ। বেশ কয়েক মাস ধরে ঢাকঢোল পিটিয়েও শুধু জনসংখ্যা ছাড়া আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি এ গবেষণা সংস্থাটি। অথচ বিবিএসের জনশুমারির জরিপে ৩৫টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেগুলোর প্রতিটিতে কোনো গবেষণা করেনি বিআইডিএস।
বিবিএসের শুমারিতে কতসংখ্যক বাদ পড়েছে, তা জানতে আলাদাভাবে জরিপ করে সরকারি সংস্থা বিআইডিএস। তাতে দেখা যায়, বিবিএসের শুমারিতে ৪৭ লাখ বাদ পড়েছে। নতুন করে এরা যোগ হওয়ায় এখন জনসংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটি ৯৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিআইডিএস বলেছে, বিবিএসের শুমারিতে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে। তারা বাদ পড়াদের যোগ করেছে।
তবে গতকাল প্রকাশিত এ তথ্যে নারী ও পুরুষ কতজন বাদ পড়েছে তা আলাদা করে প্রকাশ করেনি এ গবেষণা সংস্থাটি। সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না করলেও তারা শুধু আনুপাতিক হিসাব দিয়েই কাজ শেষ করেছে। তবে মোট জনসংখ্যার বাইরে আর কোনো তথ্য দেয়নি বিবিএস ও বিআইডিএস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিনসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে শামসুল আলম বলেন, মানুষ উদগ্রীব ছিল জনসংখ্যার তথ্য জানার জন্য। মোট জনসংখ্যা কত, নারী-পুরুষ কত, প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা কত। এসব তথ্য ঘোষণা করলে ভালো হতো। বিআইডিএস চাইলে এসব তথ্য দিতে পারত। তাদের বুঝতে হবে, জাতি কী ধরনের তথ্য চায়।
বিআইডিএসের হিসাবে, জুনে অনুষ্ঠিত হওয়া জনশুমারিতে সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষ। গ্রামের মানুষ বাদ পড়েছে সবচেয়ে কম। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রামে ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ জনশুমারির হিসাব থেকে বাদ পড়েছে। তবে শহরের বাদ পড়েছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
নারী-পুরুষের শুধু আনুপাতিক হিসাব প্রকাশ করে গবেষণা সংস্থাটি বলছে, নারীদের চেয়ে পুরুষ বাদ পড়েছে বেশি। এতে নারী বাদ পড়েছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ আর পুরুষ বাদ পড়েছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
বয়সের বিচারে জনশুমারির হিসাবের সময় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। গবেষণায় চূড়ান্ত হিসাবে দেখা যায়, হিসাবের খাতায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা। এবার বাদ পড়েছে মাত্র ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। গণনায় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে ৭৫ বা তার বেশি বয়সীরা। এরা বাদ পড়েছে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এরপরই বাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী শিশু। এদের মধ্যে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশই হিসাবে আসেনি বলে জানানো হয়েছে চূড়ান্ত হিসেবে।
বিভাগের হিসাবে জনশুমারির গণনায় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়াদের তালিকায় আছে সিলেট বিভাগের মানুষ। এ বিভাগের ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানুষ গণনাতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে জুনে জনশুমারি চলাকালে সিলেট অঞ্চলে স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। ফলে ওই এলাকায় জনশুমারির সময় এক সপ্তাহ বাড়ানো হলেও ওই এলাকার অনেক মানুষ হিসাবে আসেনি। তবে ময়মনসিংহ এলাকার মানুষও বাদ পড়াদের তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষে আছে। এ এলাকার ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে। গণনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ, এ অঞ্চলের বাদ পড়েছে ২ দশমিক ১২ শতাংশ মানুষ।
পূর্ণাঙ্গ তথ্য কেন প্রকাশ করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, এটি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো মিডিয়া প্রতিষ্ঠান নয় যে সব তথ্য এখানে থাকতে হবে।
অবশ্য পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় উষ্মা জানিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বিআইডিএসকে বুঝতে হবে আমাদের জনগণ কী চায়। এটা করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে এটি আমাদের কারণে নয়।
এ সময় বিবিএসের মহাপরিচালক বলেন, এটাকে কোয়ালিটি চেক নাম দেওয়া উচিত ছিল। গণনা-পরবর্তী বাছাই কাজের জন্য এটি করা হয়। তবে এটুকু বলতে পারি, এখনো দেশের অধিকাংশ মানুষের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। তবে আমাদের গণনার সঙ্গে বিআইডিএসের হিসাবের পার্থক্য মাত্র ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হওয়ায় এটি সীমার মধ্যে রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সবসময় ক্ষোভ ঝাড়তেন বিবিএসের দুর্বলতা নিয়ে। তবে এবার তাদের দুর্বলতা কিছুটা কমেছে। আমাদের আরও পরিচ্ছন্ন হিসাব করা উচিত। আমাদের পরিসংখ্যান যত শুদ্ধ হবে, জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণেও তত সহজ হবে।
গত বছর ১৫ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা হয়। এ সময় সিলেট এলাকায় বন্যা হওয়ায় ওই এলাকায় আরও এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে ২৮ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। জনশুমারিতে এবার ৩৫টি তথ্য নেওয়া হয়েছে।
তখন ভোররাত। বাইরে ঝিরিঝিরি তুষার পড়ছে। তীব্র শীতে ঘরের উষ্ণতায় বেশিরভাগ মানুষই গভীর ঘুমে। কিন্তু সে ঘুম যে আর ভাঙবে না তা জানা ছিল না হাজারো মানুষের। ভোর সোয়া ৪টার সময় তীব্র ভূমিকম্পের আঘাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু শহরের বাসিন্দারা। এরপর বেলা বাড়তে থাকলে শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হতে শুরু করে একের পর এক মরদেহ আর আহত মানুষ। তবে দফায় দফায় ভূমিকম্প-পরবর্তী ঝাঁকুনি (আফটার শক) আর দুপুর দেড়টার দিকের আরেক দফায় কম্পনে একদিকে যেমন নতুন করে ধসে পড়ে বহু বাড়িঘর, তেমনি ব্যাহত হয় উদ্ধারকাজও। বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার রাত ২টা অবধি দুই দেশে অন্তত ২ হাজার ৬০০ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কয়েক হাজার মানুষকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো চাপা পড়ে আছে অনেকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ১৯৩৯ সালের পর একে তার দেশের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করে উদ্ধার তৎপরতা ও পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবিলায় বিদেশি সহায়তাও চেয়েছেন। আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে তুরস্কের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, ভোর সোয়া ৪টায় আঘাত হানে প্রথম ভূমিকম্প। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য বলছে, রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পনটির কেন্দ্র ছিল তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরে। এর পরে আরও কয়েকটি আফটার শকে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও সিরিয়ার কয়েকটি এলাকা। আর দুপুর দেড়টার দিকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পনে ফের কেঁপে ওঠে ওইসব এলাকা। এর কেন্দ্র ছিল কাহরামানমারাস শহরে। গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা গেছে, কাহরামানমারাস শহরে ধসে পড়া ভবনগুলোর চারপাশে লোকজন জড়ো হয়ে জীবিতদের খোঁজ করছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের দাবি, সেটিও ছিল আরেক দফার ভূমিকম্প, আফটার শক নয়। এদিন তুরস্ক বা সিরিয়া ছাড়াও লেবানন, মিসর, সাইপ্রাস এবং ইসরায়েল জুড়ে লাখ লাখ মানুষ কম্পন অনুভব করে। কেঁপে ওঠে সুদূর গ্রিনল্যান্ডও।
আলজাজিরা বলছে, নিহতদের মধ্যে দেড় হাজারের বেশি তুরস্কের আর এক হাজারের বেশি সিরিয়ার। যদিও দেশ দুটির সরকারি তথ্যের সঙ্গে এ সংখ্যার তফাত রয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে আলজাজিরা বলছে, তুরস্কে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো কাহরামানমারাস, গাজিয়ানতেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, আদানা, আদিয়ামান, মালত্য, ওসমানিয়ে, হাতায় ও কিলিস। ওইসব এলাকার ২ হাজার ৮১৮টি ভবন ধসে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে। তুরস্ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে উদ্ধারকারীদের পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়ে সহায়তা করতে জনসাধারণকে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে। ওই ১০টি শহর ও প্রদেশের স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি হাতায়, মারাশ এবং আন্তেপের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকাতে বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা দুর্গতদের কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করছি। প্রচণ্ড ঠান্ডা, অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তারা খোলা জায়গায় আছে। ইতিমধ্যে সিরিয়ার উত্তরাংশে লাখ লাখ মানুষ তাঁবুতে ঠাঁই নিয়েছে।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদলু আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাতে এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রথম ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দিনের তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে আর রাতে তা হিমাঙ্কের নিচে থাকবে। প্রায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পুরু তুষারপাত হতে পারে। আর উত্তরে ভারী তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে আগামী দিনগুলোর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ওপরে উঠবে না বলে মনে করা হচ্ছে। যার অর্থ ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার তুষারপাত হতে পারে। এতে করে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়ে প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে।
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার সরকার, হাসপাতাল ও উদ্ধারকর্মীরা ভূমিকম্পে ৮১০ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস প্রদেশে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো সিরিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত এলাকা। আর তুর্কিপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীনিয়ন্ত্রিত দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাও অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাসেবা এবং জরুরি সরবরাহের সুযোগ সীমিত। ওইসব এলাকায় কাজ করা একটি ত্রাণ সংস্থা হোয়াইট হেলমেট জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত মানুষজনকে ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে। আলেপ্পোর উত্তর-পশ্চিমে এক শহর থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভবনগুলো ধসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধুলোর বিশাল মেঘের মধ্য দিয়ে বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছে এবং চিৎকার করছে।
১৯৯৫ সালে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত সিরিয়ার জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্রের প্রধান রায়েদ আহমেদ রাষ্ট্রীয় বেতার স্টেশনকে বলেন, ‘আমাদের এ কেন্দ্রের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প।’
বিশ্বনেতাদের শোক, পাশে থাকার আশ্বাস : তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপ্রধান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। তিনি বলেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার এ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ পাশে আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার এ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ তাদের পাশে আছে। তিনি তার সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তুরস্ক ও সিরিয়াকে জরুরি মানবিক সেবা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে চীনও। ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ইউনিয়নের আটটি দেশ থেকে ১০টি উদ্ধার দলকে সক্রিয় করা হয়েছে তুরস্ককে সহযোগিতার জন্য। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ফ্রান্স, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও রোমানিয়া। কমিশন আরও জানিয়েছে, ইতালি ও হাঙ্গেরিও তুরস্কে টিম পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। জার্মানির ফেডারেল এজেন্সি ফর টেকনিক্যাল রিলিফ আশ্রয় শিবির ও চিকিৎসা ইউনিটের ব্যবস্থা করতে পারে বলে জানিয়েছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফায়েজার। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কারিয়াকোস মিতসোতাকিস শোক ও সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন তুরস্ককে। ভারত সরকার বলেছে, তাদের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনীর দুটি দলে ১০০ জনের মতো সদস্য তুরস্কের উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। চিকিৎসক দলও প্রস্তুত। ইরানও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থা সহযোগিতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তুরস্কে ইসরায়েলি ত্রাণ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরোধ পাওয়ার পর সিরিয়াতেও ত্রাণ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তুরস্কের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টোলটেনবার্গ টুইটারে লিখেছেন, তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং সহযোগিতা প্রস্তুত করছি। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি মধ্যপ্রাচ্য আঞ্চলিক প্রধান কার্স্টেন হানসেন বলেছেন, সিরিয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে সহযোগিতা পাঠানোর জন্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে বড় ধরনের মানবিক সহযোগিতা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কাতার। স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, স্পেনের শহুরে উদ্ধার টিম তুরস্ক যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়া ও তুরস্ককে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে তার দেশ। সিরীয় প্রেসিডেন্ট আসাদকেও প্রায় একই ধরনের বার্তা পাঠিয়েছেন পুতিন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, সহযোগিতা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে তার দেশ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্দি উভয় দেশের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেছেন, সংস্থাটি জীবিতদের জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছে। তুরস্কে উদ্ধার ও অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞ এবং একটি জরুরি মেডিকেল টিম পাঠাবে যুক্তরাজ্য। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভ্যান বলেছেন, ভূমিকম্পের ঘটনায় গভীর উদ্বেগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় যেকোনো সহযোগিতা প্রদানে আমরা প্রস্তুত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসোস বলেছেন, আহত ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের অত্যাবশ্যক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য জরুরি মেডিকেল টিমকে সক্রিয় করা হয়েছে।
বাংলাদেশিদের হতাহতের তথ্য নেই, সহায়তা করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ : তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। দেশ দুটির এ দুঃসময়ে বাংলাদেশ কী ধরনের সহযোগিতা করতে পারে সেটিও জানতে চেয়ে ঢাকার তরফে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, মানবিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য তুরস্কের কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা ইতিমধ্যেই জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের উত্তর পেলেই প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দিতে প্রস্তুত আমরা।
তিনি আরও বলেন, তুরস্কে আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে জেনেছি ভূমিকম্পে কোনো বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। কেউ আহত হয়েছে কি না সে বিষয়েও আমরা খোঁজখবর রাখছি। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুওলুকের কাছে পাঠানো শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তুরস্কে ঘটে যাওয়া মারাত্মক ভূমিকম্পে প্রাণহানির জন্য তুরস্কের সরকার এবং জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় তিনি বলেন, এই শোকাবহ মুহূর্তে তুরস্কের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণ এবং নিহতদের পরিবারের জন্য আমরা প্রার্থনা করছি। ভূমিকম্পে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ফয়সাল মেকদাদের কাছে পাঠানো শোকবার্তায় ড. মোমেন সিরিয়ার সীমান্তে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে হতাহতের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। এ ভয়াবহ দুর্যোগে নিহত ও আহত সবার পরিবারের সদস্য এবং সিরিয়ার জনগণের সঙ্গে আমরাও গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশ এ সংকটময় সময়ে সিরিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের সঙ্গে রয়েছে।’
গত ২২ বছর ধরে দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের ৩৩ জেলায় রোগটি দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের ১ মাস ৬ দিনে ৬ জেলার ৭ উপজেলায় ১০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ও তাদের মধ্যে ৭ জনই মারা গেছেন। সে হিসাবে মৃত্যুহার দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২২ বছরে রোগটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৩২৫ ও মারা গেছে ২৩০ জন। মৃত্যুহার ছিল ৭১ শতাংশ। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে নিপাহ রোগে মোট আক্রান্ত হলো ৩৩৫ ও মারা গেছে ২৩৭ জন।
এমন অবস্থায় সারা দেশে রোগটি নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সংগঠনের কাছে এক চিঠিতে নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরের ঝুঁকির কথা জানায়।
চিঠিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, রোগী দেখার সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। রোগী দেখার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। জ্বরের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে অবশ্যই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে। জ্বরের পাশাপাশি রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে রোগীকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখতে হবে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিচর্যাকারীরা শুধু গ্লাভস, মাস্ক পরলেই হবে।
নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০টি আইসোলেশন শয্যা এবং ১০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ধরনের রোগীদের রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা, নওগাঁর নওগাঁ সদর, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ, পাবনার ঈশ্বরদী, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ ও নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় রোগী পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে।’
একমাত্র বাহক খেজুরের কাঁচা রস ও উৎস বাদুড় : বাংলাদেশে নিপাহ রোগের একমাত্র বাহক খেজুরের কাঁচা রস ও উৎস বাদুড় বলে জানান সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কোনো গবেষণাতেই এখনো বাদুড় ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর থেকে নিপাহ রোগ ছড়ানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু বাদুড়ের মধ্যেই নিপাহ পাওয়া গেছে। অন্য কোনো প্রাণী, যেমন মুরগি, হাঁস, গরু, বাছুর, ভেড়া এগুলোর কোনোটার মধ্যেই নিপাহ পাওয়া যায়নি। এমনকি শূকরের মধ্যে পাওয়া যায়নি।’
এ বিশেষজ্ঞ জানান, বাংলাদেশে প্রথমে নিপাহ ভাইরাস রোগের জন্য শূকরকে কারণ হিসেবে দেখা হতো। কারণ বাদুড়ের কাছে থেকে শূকর আক্রান্ত হতো। শূকর থেকে মানুষে হতো। কিন্তু ২০০৪ সালে টাঙ্গাইলে যখন নিপাহর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন আবিষ্কার হয় খেজুরের কাঁচা রস খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
ডা. মুশতাক বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে বাদুড়ের খাওয়া পাম ফল শূকরের পানি খাওয়ার বড় বড় গামলার মধ্যে পড়ে। সেই পানি খেয়ে শূকর আক্রান্ত হয় এবং এসব শূকরের সংস্পর্শে যেসব মানুষ যেত, তারা আক্রান্ত হতো। ভারতের কেরালায় যে নিপাহ পাওয়া গেছে, সেটা সম্ভবত আধা খাওয়া ফল থেকে হয়েছে। আর বাংলাদেশে বহু বছর আগে সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় নিপাহ পাওয়া গিয়েছিল খেজুরের রস থেকে। কিন্তু তখন সেটার কারণ সঠিকভাবে আবিষ্কৃত হয়নি। এখন ধারণা করা হয় সম্ভবত খেজুরের কাঁচা রস খেয়েই হয়েছিল।’
আক্রান্ত কম হলেও রোগটি বিপজ্জনক : নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের হার কম হলেও এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা বেঁচে থাকে, তারা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভোগে। কয়েকটি জেলায় এখন পর্যন্ত রোগী পাওয়া গেলেও সব জেলাই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বিভিন্ন অনলাইন শপে এখন খেঁজুরের রস বিক্রি হচ্ছে। তারা প্রচার করছে, সব ধরনের সতর্কতা মেনে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু শুধু বাদুড় মুখ দিলেই নয়, বাদুড়ের লালা এবং প্রস্রাব থেকে ভাইরাসটি রসের মধ্যে আসতে পারে। খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার পর নিপাহতে আক্রান্তের লক্ষণ দেখা যায় সাধারণ ৮ থেকে ৯ দিনের মধ্যে। অন্যদিকে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসাদের লক্ষণ দেখা যায় ৬ থেকে ১১ দিনের মধ্যে।’
বাংলাদেশে মৃত্যুহার ৭১% : বাংলাদেশে গত ২২ বছর ১ মাস ৬ দিনে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭১ শতাংশই মারা গেছে। এমনকি এ বছর গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই মারা গেছে। সে হিসাবে এ রোগে মৃত্যুহার অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিপাহ ভাইরাসকে ‘ডেডলি ডিজিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, এ ভাইরাসবাহিত রোগের কোনো ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। যার কারণে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা ৭০ থেকে ১০০ ভাগ। আর যারা বেঁচে থাকে তাদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের স্নায়বিক দুর্বলতায় ভোগে।
এ ব্যাপারে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্ক আক্রান্ত করে। মস্তিষ্ক প্রদাহেই মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এই প্রদাহ বেশ মারাত্মক রোগ। এ রোগের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো আবিষ্কার হয়নি। কোনো ওষুধও আবিষ্কার হয়নি। মস্তিষ্ক প্রদাহের চিকিৎসায় একমাত্র উপায়। যারা দ্রুত মস্তিষ্ক প্রদাহের চিকিৎসায় আওতায় আসে, তারা বেঁচে যায়। কিন্তু বেঁচে গেলেও তাদের এটার ধকল বয়ে বেড়াতে হয়।’
খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না : এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে কিছুতেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না বলে সতর্ক করে দেন ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘কোনো আধা খাওয়া বা আংশিক খাওয়া ফল পড়ে থাকলে সেটা খাওয়া যাবে না। এমনকি তালগাছের রস থেকে যে তাড়ি তৈরি হয়, সেটা খেয়েও বাংলাদেশে মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। তালের রসও বাদুড়ের লালা অথবা মূত্রের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। সুতরাং তালের রসও খাওয়া যাবে না।’
ডা. মুশতাক বলেন, ‘বাংলাদেশে আগে বাদুড় কাঁচা রসে মুখ দিত না। বাদুড়ের দ্বারা কাঁচা রস সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিককালের। বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। কারণ আগে বন-জঙ্গলের ফল খেয়ে বাদুড় থাকত। বনের গভীরে দিনের বেলায় ঘুমাত। কিন্তু বন কেটে আমরা সাফ করে ফেলেছি। এখন বাদুড় খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে এবং খেজুরের রস খাচ্ছে।’
আক্রান্তের লক্ষণ, চিকিৎসা : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, নাক, মুখগহ্বর দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নিপাহ ভাইরাস। এতে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বর, মাথা ঘোরা, বমি, খিঁচুনি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রলাপ বকে, অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায়। শরীরে ভাইরাস প্রবেশের ৭-১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্কে আক্রমণ করে। এতে মস্তিষ্কে এনকেফেলাইটিস (মস্তিষ্কে প্রদাহ) হয়। এনকেফেলাইটিসের বিরুদ্ধে কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল নেই। ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ রোগের চিকিৎসা হয় লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। ব্রেনের প্রদাহ কমানোর জন্য সম্ভাব্য ওষুধ যেগুলো আছে, সেগুলো দেওয়া হয়। রোগীকে আমরা আইভি ফ্লুইড ও জ¦র থাকলে তা কমানোর ওষুধ দিই। অবস্থা খুব খারাপ হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়।’
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পাওনার পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি এলএনজি আমদানি করেও চালানের বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে না। বছরের পর বছর এনবিআর থেকে বকেয়া পরিশোধে এবং বিল অব এন্ট্রি দাখিল করতে তাগাদা দেওয়া হলেও অগ্রগতি নেই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দে অনুমতি চেয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পেট্রোবাংলার কাছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বকেয়া থাকায় কাস্টম হাউসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফিসক্যাল ডিসিপ্লিন ও শুল্ক আনুষ্ঠানিকতার শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।’
বকেয়া রাজস্বের বিষয়ে সম্প্রতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জগেন্দ্র নাথ সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। রাজস্ব পাওনা হলে অবশ্যই পরিশোধ করা হবে। তিতাস থেকেও এনবিআরের কাছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে বলে জানি। সব বিষয় নিয়েই বৈঠক করা হবে।’
এনবিআরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, বকেয়া পরিশোধ না করলে ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করা হবে বলেও পেট্রোবাংলাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এবার এনবিআরের অনুমতি নিয়ে ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পথে হাঁটছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ২২ হাজার ৬০১ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর সঙ্গে গত অর্থবছরের পাওনা যোগ হয়ে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
সম্প্রতি এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট থেকে পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপকের (এফএমডি) বকেয়া পরিশোধে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ‘বকেয়া পাওনা আদায়ে পেট্রোবাংলা দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনাসহ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) দপ্তর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সভা হয়েছে। এসব সভায় পেট্রোবাংলা বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কোনো মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বকেয়া রাখবে না বলে জানালেও বাস্তবায়ন হয়নি। পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়নি।’
পাওনা পরিশোধ না করলে বিদ্যমান মূসক আইন অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ কর্তনের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও এনবিআরের চিঠিতে জানানো হয়েছে। এনবিআর থেকে পাঠানো চিঠিতে দাবিনামার অন্তত ২০ শতাংশ পরিশোধের পাশাপাশি বাকি টাকা ছয় মাসের কিস্তিতে পরিশোধের অনুরোধ করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় এলএনজি আমদানিতে। পেট্রোবাংলা চেষ্টা করছে রাজস্বের বিষয়ে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে।’
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পেট্রোবাংলার আমদানি করা এলএনজি বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ায় গ্যাস পরিবহনকারী কার্গো জাহাজ থেকে মহেশখালীতে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনালের এফএসআরইউতে এলএনজি আনলোড করা হয়। এই ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কাস্টমস আইনের ৭৯(এ) ধারা অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রেরিত বিল অব এন্ট্রি এবং এনবিআরের ২০০১ সালের এক আদেশ অনুযায়ী বিল অব এন্ট্রিসহ আনুষঙ্গিক দলিলাদি সংশ্লিষ্ট কমিশনারে দাখিল করতে হয়। সেই অনুযায়ী পণ্য শুল্কায়ন ও শুল্ককর পরিশোধ করে খালাসের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলার পণ্যচালান আমদানি হওয়ার ছয় মাস পরে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি, যা কাস্টমস আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, কাস্টম হাউস থেকে পেট্রোবাংলাকে ১০ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২০ জুন আমদানিকারক পেট্রোবাংলাকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়, কিন্তু কোনো জবাব দেয়নি। ২৬ জুন আবার চিঠি দেওয়া হয়; যাতে বলা হয়, বকেয়া পরিশোধ ও আইনের পরিপালন করা না হলে কাস্টমস আইন ও মূসক আইন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের বিন লক, পণ্য খালাস বন্ধ ও ব্যাংক হিসাবের লেনদেন কার্যক্রম অপরিচালন করা হবে। এরপরও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বকেয়া পরিশোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে ৭ জুলাই ও ২১ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলা থেকে চিঠির মাধ্যমে কাস্টম হাউসকে জানানো হয় যে অর্থ বিভাগ থেকে ভর্তুকি প্রাপ্তি সাপেক্ষে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে বকেয়া শুল্ককর পরিশোধ করা হবে।
প্রসঙ্গত, পেট্রোবাংলা সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ অনুসন্ধান এবং উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, পরিশোধন ও বাজারজাতকরণেও কাজ করে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়নে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তিও সম্পাদন করে থাকে।
নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী মে মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সব প্রস্তুতি সারতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরকে প্রধান করে গঠিত কমিটি আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসবে। শেরেবাংলা নগরে ইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সীমানা পরিবর্তনের বিষয়ে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হবে।
ইসির সূত্র বলছে, সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য এ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন আসনের বিষয়ে ১০০টির মতো আবেদন জমা পড়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছে ইসি। তবে আবেদন যা-ই জমা পড়ুক, বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজন অনুসারে সীমানায় পরিবর্তনের পক্ষে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য দিলেই আমরা সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ দ্রুত শেষ করতে পারতাম। কিন্তু তাদের তথ্য দিতে আরও দেরি হবে। আবার নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী আমাদের মে মাসের মধ্যেই এ সংক্রান্ত কাজ শেষ করতে হবে। সেটি কীভাবে হবে তা নিয়েই আগামীকাল (আজ) বৈঠক হবে। বৈঠকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে। যে খসড়া প্রতিবেদন পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে পেয়েছি, তা থেকে চূড়ান্ত প্রতিবদেন ৪-৫ শতাংশ এদিক-ওদিক হয়। তারপরও আমাদের কাজে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
তিনি জানান, ইসি কীভাবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নাকি আসনের আয়তনের ভিত্তিতে তা নিয়ে, কীভাবে কাজ সম্পন্ন হবে, এই প্রক্রিয়ায় কারা দায়িত্বে থাকবে প্রভৃতি ঠিক করা হবে বৈঠকে। মূলত প্রাথমিক কর্মপন্থা নির্ধারণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে।
সূত্র জানায়, জনশুমারি ও গৃহগণনার খসড়া প্রতিবেদন ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে আরও সময় লাগতে পারে। ইতিমধ্যে জেলাভিত্তিক জনসংখ্যাও প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক হিসাব প্রস্তুতের কাজ চলছে। ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যে সফটওয়্যারের সাহায্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ করেন, সেটি দিয়ে এক মাস ধরে বিভিন্ন তথ্যের পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে পাওয়া খসড়া তথ্যের ভিত্তিতেই কাজ হচ্ছে।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিকল্পনা ব্যুরোর কাছ থেকে জনশুমারির একটা খসড়া পেয়েছি। তা দিয়েই কাজ এগিয়ে রাখছি।’
সূত্র বলেছে, আগে সীমানা নির্ধারণ করতে আইনি অনেক সমস্যা হতো। কোনো কোনো আসনের ভোটাররা বা প্রার্থীরা মামলাও করতেন। ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল ওই এলাকার ভোট। কিন্তু ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনকে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়ে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ’ আইন পাস হয়। আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, ইসির সীমানা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে দেশের কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন করা যাবে না।
সীমানা আইন-২০২১-এ আরও বলা আছে, সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিতসংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পুরো দেশকে উক্ত সংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং জনশুমারির ভিত্তিতে যথাসম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়। তাতে বলা আছে, দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। তবে ইসিকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলেও বিতর্ক ও ঝামেলা এড়াতে এবার জনসংখ্যা নয়, প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গেলে নানা প্রশাসনিক অসুবিধার সৃষ্টি হবে। তাই সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখণ্ডতা এবার সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কাছে ইসি আবেদন না চাইলেও অনেকেই নিজ থেকে আবেদন জমা দিচ্ছেন। এর মধ্যেই প্রায় ১০০ আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে আবেদন করেছেন সংক্ষুব্ধরা। সংশ্লিষ্ট আসনের সরকারি-বিরোধী প্রার্থীর দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি চাইলে সীমানার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আপত্তি ও পরামর্শ জমা দিতে পারবেন।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘কত আবেদন জমা পড়েছে তার সমন্বিত হিসাব আমরা এখনো করিনি। প্রায় ১০০টির মতো আবেদন জমা পড়েছে।’
সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহল থেকেই বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। অনেকেই বর্তমান সীমানা বহাল রাখা, কেউ কেউ আগে যে সীমানায় নির্বাচন হয়েছিল তা বহাল রাখার কথা বলেছেন। মৌখিক তদবির থাকলেও এমপিদের কেউ এখনো লিখিত আবেদন করেননি। মন্ত্রী, এমপি ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য আবেদনে রয়েছে। বেশির ভাগ মন্ত্রী-এমপির পক্ষে যারা আবেদন করেছেন, তারা বর্তমান সীমানাতেই নির্বাচন করার পক্ষে।
সূত্র বলছে, কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনের সীমানা নিয়ে পাঁচটি আবেদন জমা পড়েছে। একটিতে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) ও কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে আসন পুনর্নির্ধারণ এবং আরেকটি আবেদনে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলায় সীমানা পুনর্নির্ধারণ চাওয়া হয়েছে। পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী, হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের আবেদনও জমা পড়েছে ইসিতে।
সিরাজগঞ্জ-১ ও ৫ আসন নিয়েও আবেদন জমা পড়েছে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলায় সমন্বয়ের (বেলকুচি ও কামারখন্দ) ভিত্তিতে আসন পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। পিরোজপুর-৩ আসনের (মঠবাড়িয়া উপজেলা) বর্তমান সীমানা বহাল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেওয়ার সময় শেষ হলে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। এরপর দাবি, আপত্তি ও শুনানি শেষে চূড়ান্ত করা হবে সংসদীয় আসনের সীমানা। বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজন অনুসারে আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনার পক্ষে এবং সেভাবে প্রস্তুতি রাখছেন বলে একাধিক কর্মকর্তার দাবি।
সীমানা পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত আবেদন আহ্বান করিনি। তারপরও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দরখাস্ত দিচ্ছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারা যোগাযোগ করছেন। দুই রকম দরখাস্তই আসছে আমাদের কাছে। আমরা জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে পারব না। জুনের মধ্যে আমরা সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করব।’
২০০১ সালের নির্বাচনের সময় ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সেনাসমর্থিত নির্বাচন কমিশন ১৩৩ সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল। প্রতি আদমশুমারির পর সীমানা পুনর্নির্ধারণের নিয়ম রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই ৫৩টি আসনে পরিবর্তন আনে কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন সর্বশেষ ২৫টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন করেছিল।
জনশুমারির জন্য গত বছরের জুন মাসে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন ও নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রনজিদা বেগম (৬০) থাকেন পুরান ঢাকার লালবাগে। রোজা রেখে বাসাবাড়ির কাজ শেষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাজির হন লালবাগের হরনাথ ঘোষ সড়কে। এখানে ‘নবীনের মেহমান খানায়’ প্রতিদিন তার মতো হাজার মানুষের জন্য বিনামূল্যের ইফতারি দেয় নবীন বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
রনজিদা বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এত কষ্ট করে মানুষের বাসায় কাজ করে খাই। ছেলে খোঁজ লয় না, তাই লাইনে দাঁড়াইছি। রোজা রেখে কেউ কি ছেলের নামে মিথ্যা কথে বলে? আর রমজানে এখানে প্রতিদিন পোলাও, মাংস, মাছ, রুটি ও ফলসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হয়। সাহরির জন্য দুধও দেওয়া হয়। তাই খরচ বাঁচাতে এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নেই।’
আয়োজকেরা জানান, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী এনামুল হাসান নবীনের উদ্যোগে চার বছর ধরে লালবাগ, চকবাজার ও কামরাঙ্গীরচরসহ আশপাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ইফতারি দেওয়া হচ্ছে। রোজা শুরুর আগেই নবীন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন জায়গা ঘুরে হাজার সুবিধাবঞ্চিতকে কার্ড দেন। পরে কার্ড নিয়ে এলে তাকে খাবার দেওয়া হয়।
মেহমানখানার খাবারে বৈচিত্র্য আনার জন্য একেক দিন একেক রকম আয়োজন থাকে। পোলাও, মুরগি, গরুর মাংস, রুই মাছ, দুধ, খেজুর, তরমুজ ও রুটিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইফতারের এক ঘণ্টা আগেই সড়কের দুই দিকে দীর্ঘ লাইন। সবাই অপেক্ষা করছেন। ইফতারের সময় একজন করে এসে সুশৃঙ্খলভাবে কার্ড দেখিয়ে নির্দিষ্ট খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন। হরনাথ ঘোষ এলাকার বাসিন্দারা জানান, নবীনের মতো ব্যবসায়ীরা সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ালে সমাজের চিত্র বদলে যেত। গত রমজানেও মেহমানখানা থেকে ইফতারি দেওয়া হয়। এবারও ঠিকঠাকভাবেই সবকিছু চলছে।
ইফতারি নিতে আসা সানজিদা বেগম বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম। রমজানে মাংস দিয়ে খেতে হলে অনেকগুলো টাকা চলে যাবে। এখানে মুরগি, গরু, মাছ সব ধরনের খাবার দেয় পুরো রমজানে। এই খাবার দিয়ে পরিবার নিয়ে প্রতিদিন খাওয়া হয়। ফলে সংসারে খাবারের খরচ কিছুটা সাশ্রয় হয়।’
পুরান ঢাকায় আরও অনেক ধনী আছে, কিন্তু আমরা সেভাবে কারও কাছ থেকে ইফতার পাই না জানিয়ে মো. রাকিব নামের এক বাসিন্দা জানান, ‘অনেক ধনী আছে পুরান ঢাকায়। কিন্তু কারও থেকে সেভাবে কোনো সহায়তা পাই না। গরিব মানুষ তাই এইখানে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নেই। শুধু রমজানে নয়, এলাকার গরিব-দুঃখী বিপদে পড়লে এখানে আসলে উপকার পাওয়া যায়। আর রমজান শেষে ঈদের দিনও বাজার দেওয়া হয়।’
নবীন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফেজ এনামুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যবসার লাভের অংশ দিয়ে প্রতি রমজানে ইফতারের আয়োজন করি। আমার মেহমানদের আগেই কার্ড দেই, তারা কার্ড দেখিয়ে খাবার নেন। ইফতারে তাদের জন্য যে খাবার দেওয়া হয়, তা আমি নিজেও খাই। ভালো বাবুর্চি দিয়ে মেহমানদের খাবার রান্না করা হয়। একজনকে যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়, তাতে চারজন খেতে পারেন। তবে গতবারের চেয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। তাতে মেহমানখানা চালাতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। বিবেকের তাড়না থেকেই রমজানে সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াই। আমার মতো সব ব্যবসায়ী তাদের পাশে দাঁড়ালে কিছুটা হলেও এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষ স্বস্তি পেতেন।’
মাঠে খেলা করছে ওরা। হঠাৎ বাতাস। এলো ঝড়। কণ্ঠে ভয়ানক স্বর। কার কণ্ঠে, লালুর কণ্ঠে। মাঠ থেকে দিল দৌড়। লালুর সঙ্গে কারা দিল দৌড়, দামাল ছেলেরা। পৌঁছালো কোথায় এসে। নিরাপদ এক ঘরে। এগিয়ে এলো এক বালক। সঙ্গে অনেক পালক। আওয়াজ দিয়ে বলল, ‘তোমরা কোথাও যাবে না আজ।’
লালু বলল, ‘কেন?’
বালক বলল, ‘এখন বাইরে বইছে ঝড়। তোমাদের করতে পারি না পর।’
লালু বলল, ‘মাঠঘাট করছে এখন ধুধু। আমরা তোমার কাছে কেন বসে থাকব শুধু।’
বালকের এক পালক বুঝতে পারল। এই ছেলেটা মনে হয় ঝড়বৃষ্টির দিনে মাছ ধরার অভ্যাস আছে। সেজন্য নিরাপদ ঘরে বসে শান্তি পাচ্ছে না। তার মন ছটফট করছে। মাছ ধরার জন্য। তাই পালক বলল, ‘তুমি কি ঝড়ের দিনে আম কুড়াবে নাকি মাছ ধরতে যাবে মাঠেঘাটে খালেবিলে।’
লালু বলল, ‘তোমরা আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছ। তাহলে আর এই মুহূর্তে কোথায় যাব বলো।’
বালক বলল, ‘এখন আর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। মাঠে ফসলের হচ্ছে অনেক ক্ষতি।’
লালু বলল, ‘তুমি ঝড় থামাতে দেখাও বড় রকমের কেরামতি।’
বালক মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘এখন দেখানো যাবে না কোনো কেরামতি। কারণ বাতাসের আছে অনেক গতি। হয়ে যাবে আমাদের অনেকে বড় রকমের ক্ষতি। লালু নাম না হয়ে তোমার নাম হওয়া উচিত ছিল মতি।’
লালু বলল, ‘নামে কীই-বা আসে যায়। আমার ইচ্ছা করছে উড়াতে লাটাই। এখনই সুতো দিয়ে আকাশে পাঠাই।’
বালক বলল, ‘তোমার মাথা নেই ঠিক। উড়ে এসে তোমার লাটাই রক্ষা করবে কি পরি! ঝড়ের মাঝে লাটাইকে রক্ষা করতে পারবে না পরি। অবশেষে তীরে এসে ডুবে যাবে লাটাই সোনার তরী।’
লালু বলল, ‘তুমি তো দেখছি মনের দিক দিয়ে মানুষ হিসেবে শক্ত। বিপদে পড়েই হয়ে গেলাম তোমার ভক্ত।’
বালকের কানের কাছে এক পালক মুখ নিয়ে ধীরে ধীরে বলল, ‘লালু ছেলেটা খুবই বুদ্ধিমান। মনে হচ্ছে ও গোপাল ভাঁড়ের শিষ্য। কথায় পারা যাবে না। আপনি এখন কম কথা বলে ওদের খাওয়া দাওয়ার আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। খাওয়া পেলে কথা কম বলবে ও।’
বালক বলল, ‘ঠিক বলেছ। খাওয়ার আয়োজন করো।’
‘ঠিক আছে।’
ওরা দুজন যে কানে মুখে কথা বলল। তা দেখে লালু বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হবে। লালু কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছে। এর মধ্যে বালক এসে বলল, ‘আমি বিভিন্ন রকমের রান্না করি রোজ। একটু পর করব আমরা ভূরিভোজ।’
লালু বলল, ‘বাবা মা এখন নিশ্চয় চিন্তা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় নিচ্ছেন প্রতি মুহূর্তে খোঁজ।’
বালক বলল, ‘ঝড় থামা না পর্যন্ত তোমাদের ছেড়ে দেব না। ঝড় থামলে আনন্দ করতে করতে যাবে বাড়ি।’
লালু বলল, ‘পরদিন ফুলের বাগানের পাশ দিয়ে যাবে আমাদের স্কুলের গাড়ি।’
বালক বলল, ‘মনোযোগ দিয়ে করবে পড়ালেখা। এটা আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা।’
লালু বলল, ‘অনেক ধন্যবাদ।’
গল্পের মাঝেই থেমে গেল ঝড়। ঘর থেকে বের হওয়াতে লালুদের কাছে বালক হয়ে গেল পর।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সন্ধ্যার আকাশে রহস্যময় চাঁদ দেখে আটকে যায় চোখ। চাঁদের নিচে আলোকরেখার মতো ছোট এক বিন্দু। এ নিয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা থেকেই সোশালে মাতামাতি। এ সংক্রান্ত ছবি সমানে শেয়ার করে চলেছে নেটিজেনরা। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন নানা রকম মন্তব্য।
কেউ কেউ বলছেন, এটি দেখতে ঠিক আরবি হরফ ‘বা’-এর মতো। আবার কেউ কেউ বলছেন, দৃশ্যটির সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান মোর ‘প্রিয়া হবে এসো রানী’র। গানে প্রিয়তমার খোঁপায় ‘তারার ফুল’ দেওয়ার কথা বলেছিলেন বিদ্রোহী কবি।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বসন্তের আকাশে ধরা পড়া রহস্যময় এই আলোকরেখা আসলে শুক্র গ্রহ। অবশ্য এই মহাজাগতিক দৃশ্য বিরল। সৌরমণ্ডলের উজ্জ্বলতম গ্রহটি শুক্রবার চলে আসে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের কাছাকাছি। নতুন অবস্থানের কারণেই মানুষের কাছে ভিন্নভাবে ধরা দেয় গ্রহটি। তবে সেটি আবার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হারিয়ে যায়।
এদিন সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ-ভারতসহ কয়েকটি দেশে আকাশে চাঁদের নিচে আলোকবিন্দুটি দেখা যায়। এ সময় অনেকেই চাঁদ দেখতে ঘর থেকে বের হয়ে যান। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই বিরল মহাজাগতিক মিলন দেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিকস টেলিস্কোপ ও ক্যামেরা ব্যবহার করে এই মহাজাগতিক ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করে।
সোশালে সাইফুদ্দিন আহমেদ নামে একজন কলেজ শিক্ষক মন্তব্য করেন, ‘এটিই নজরুলের ‘তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল...। কবি তার একটি গানে লিখেছিলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেব খোঁপায় তারার ফুল / কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতি চাঁদের দুল ...।’ গতকাল ছিল চৈত্র মাস, চাঁদ আর শুক্রের সম্মিলিত এই মোহনীয় রূপও ছিল ঠিক তৃতীয়া তিথিতে।
তবে শুধু এই কলেজ শিক্ষকই নন, আরও অনেকে চাঁদ ও শুক্র গ্রহের বিরল এবং যৌথ রূপকে কানের দুলের মতো দেখতে বলে মন্তব্য করেছেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে চাঁদের সঙ্গে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল শুক্র ও সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিকে। এবার চাঁদের নিচে দেখা মিলল শুক্র গ্রহের। চাঁদের নিচে অবস্থানের পাশাপাশি কিছুক্ষণের জন্য চাঁদের আড়ালেও চলে গিয়েছিল গ্রহটি।
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, গত ১ মার্চ থেকেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। বিভিন্ন দেশে রাতের আকাশেই দেখা মিলছে এ বিরল দৃশ্যের। সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতি ও শুক্র। আকাশে মেঘ না থাকলে কাছাকাছি আসার দৃশ্য খালি চোখেই দেখতে পারছেন যে কেউ।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকিউ ওয়েদার বলছে, পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র ও মঙ্গল একে অপরের সবচেয়ে নিকটে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে এক সারিতে দেখা যাবে শুক্র-মঙ্গল ও চাঁদকে। এমন ঘটনাকে ‘প্ল্যানেটরি কনজাংশন’ বলে আখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আগামী ২৬ মার্চ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিজেদের কক্ষপথ থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে ও একই সারিতে অবস্থান করবে। ওই দিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দুটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে। এর আগে, ২৫ মার্চ রাতে চাঁদের কাছাকাছি আসবে এই দুই প্রতিবেশী গ্রহ, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে বেশ বিরল ঘটনা।