
তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে পশ্চিমের পুরনো শহর গাজিয়ানতেপ, সেখান থেকে ১৩০ মাইলেরও বেশি পশ্চিমের শহর আদানায় বসবাস করেন নিলুফার আসলান। গতকাল সোমবারের ভোর তার কাছে স্মরণীয় হয়ে গেল। সবার অজান্তে যখন নড়ে উঠল অভিশপ্ত আনাতোলিয়া ফল্ট লাইন, ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তখন কেঁপে উঠল গোটা গাজিয়ানতেপ। এ ভূমিকম্পে যখন নিলুফারদের পঞ্চমতলার অ্যাপার্টমেন্ট কেঁপে উঠে তখন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সবাই মারা যাবেন, এমনটা ধরেই নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এমন ভূমিকম্প কখনো দেখিনি। আমরা প্রায় এক মিনিটের জন্য দুলছিলাম। তখন আমি পরিবারের সদস্যদের বললাম, ভূমিকম্প হচ্ছে, চলো সবাই একসঙ্গে এক জায়গায় মরি। এ বিষয়টিই তখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।’
ভূমিকম্প থেমে যাওয়ায় বাসা থেকে বেরিয়ে আসা আসলান বলেন, ‘আমি কোনো কিছু সঙ্গে নিতে পারিনি। শুধু জুতো পরেই বাইরে চলে এসেছি। আমাদের ভবনের আশপাশের অন্তত চারটি ভবন একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে।’
ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে যখন ভয়াবহ ঝাঁকুনিতে ভবনগুলো দুলছে তখন গাজিয়ানতেপের বাড়িতে ঘুম থেকে ধড়মড়িয়ে ওঠেন এরদেম। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার ৪০ বছরের জীবনে এমন ভূমিকম্প কখনোই দেখিনি। আমরা অন্তত তিনবার অত্যন্ত জোরালভাবে কেঁপে উঠলাম। ঠিক যেভাবে দোলনায় শিশুরা দোল খায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে বাঁচার জন্য লোকজন তাদের গাড়িতে করে পালাতে থাকে। আমার ধারণা গাজিয়ানতেপের কোনো বাড়িতে একজন মানুষও আর নেই।’
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল গাজিয়ানতেপ থেকে ৩০০ মাইল পূর্বের দিয়ারবাকির এলাকায় উদ্ধারকারীদের সাহায্য করার জন্য রাস্তায় ছুটে আসেন লোকজন। ৩০ বছর বয়সী এক যুবক বিবিসিকে বলেন, সর্বত্রই চিৎকার। আমি হাত দিয়ে পাথর সরাতে শুরু করলাম। আমরা বন্ধুদের সহায়তায় আহতদের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করেছি। কিন্তু আর্তনাদ থামছে না। এরপর উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা আসেন। শহরের অন্য একটি এলাকায় মুহিত্তিন ওরাকসি নামে এক ব্যক্তির পরিবারের সাত সদস্য চাপা পড়েছেন বলে জানান তিনি। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে মুহিত্তিন বলেন, ‘আমার বোন এবং তার তিন সন্তানও চাপা পড়েছে এবং তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িও চাপা পড়েছে।’
ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক জিয়াদ হাজে তাহা বলেন, ‘বিপর্যয়ের পর আহত ব্যক্তিরা ঢেউয়ের মতো ছুটে আসছে।’
ভোরের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ইতিমধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে তুরস্ক-সিরিয়া। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে অসংখ্য মানুষ, প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশে চলছে উদ্ধারকাজ। নিহতের সংখ্যা বাড়ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়।
চূড়ান্ত হিসাবে দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত জনশুমারির তথ্যের সঙ্গে এ হিসাবের ব্যবধান ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সরকারি আরেক সংস্থা বিআইডিএসের নতুন জরিপে বাদ পড়া ৪৭ লাখ যোগ হওয়ায় দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। জনশুমারি ও গৃহগণনা শুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এ প্রতিবেদন তুলে ধরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।
এর আগে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রাথমিক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ। বেশ কয়েক মাস ধরে ঢাকঢোল পিটিয়েও শুধু জনসংখ্যা ছাড়া আর কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি এ গবেষণা সংস্থাটি। অথচ বিবিএসের জনশুমারির জরিপে ৩৫টি প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেগুলোর প্রতিটিতে কোনো গবেষণা করেনি বিআইডিএস।
বিবিএসের শুমারিতে কতসংখ্যক বাদ পড়েছে, তা জানতে আলাদাভাবে জরিপ করে সরকারি সংস্থা বিআইডিএস। তাতে দেখা যায়, বিবিএসের শুমারিতে ৪৭ লাখ বাদ পড়েছে। নতুন করে এরা যোগ হওয়ায় এখন জনসংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটি ৯৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিআইডিএস বলেছে, বিবিএসের শুমারিতে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে। তারা বাদ পড়াদের যোগ করেছে।
তবে গতকাল প্রকাশিত এ তথ্যে নারী ও পুরুষ কতজন বাদ পড়েছে তা আলাদা করে প্রকাশ করেনি এ গবেষণা সংস্থাটি। সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না করলেও তারা শুধু আনুপাতিক হিসাব দিয়েই কাজ শেষ করেছে। তবে মোট জনসংখ্যার বাইরে আর কোনো তথ্য দেয়নি বিবিএস ও বিআইডিএস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিনসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে শামসুল আলম বলেন, মানুষ উদগ্রীব ছিল জনসংখ্যার তথ্য জানার জন্য। মোট জনসংখ্যা কত, নারী-পুরুষ কত, প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা কত। এসব তথ্য ঘোষণা করলে ভালো হতো। বিআইডিএস চাইলে এসব তথ্য দিতে পারত। তাদের বুঝতে হবে, জাতি কী ধরনের তথ্য চায়।
বিআইডিএসের হিসাবে, জুনে অনুষ্ঠিত হওয়া জনশুমারিতে সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার মানুষ। গ্রামের মানুষ বাদ পড়েছে সবচেয়ে কম। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গ্রামে ২ দশমিক ৫৪ শতাংশ জনশুমারির হিসাব থেকে বাদ পড়েছে। তবে শহরের বাদ পড়েছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
নারী-পুরুষের শুধু আনুপাতিক হিসাব প্রকাশ করে গবেষণা সংস্থাটি বলছে, নারীদের চেয়ে পুরুষ বাদ পড়েছে বেশি। এতে নারী বাদ পড়েছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ আর পুরুষ বাদ পড়েছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
বয়সের বিচারে জনশুমারির হিসাবের সময় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। গবেষণায় চূড়ান্ত হিসাবে দেখা যায়, হিসাবের খাতায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা। এবার বাদ পড়েছে মাত্র ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। গণনায় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়েছে ৭৫ বা তার বেশি বয়সীরা। এরা বাদ পড়েছে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এরপরই বাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী শিশু। এদের মধ্যে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশই হিসাবে আসেনি বলে জানানো হয়েছে চূড়ান্ত হিসেবে।
বিভাগের হিসাবে জনশুমারির গণনায় সবচেয়ে বেশি বাদ পড়াদের তালিকায় আছে সিলেট বিভাগের মানুষ। এ বিভাগের ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানুষ গণনাতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে জুনে জনশুমারি চলাকালে সিলেট অঞ্চলে স্মরণকালে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। ফলে ওই এলাকায় জনশুমারির সময় এক সপ্তাহ বাড়ানো হলেও ওই এলাকার অনেক মানুষ হিসাবে আসেনি। তবে ময়মনসিংহ এলাকার মানুষও বাদ পড়াদের তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষে আছে। এ এলাকার ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ মানুষ বাদ পড়েছে। গণনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ, এ অঞ্চলের বাদ পড়েছে ২ দশমিক ১২ শতাংশ মানুষ।
পূর্ণাঙ্গ তথ্য কেন প্রকাশ করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, এটি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো মিডিয়া প্রতিষ্ঠান নয় যে সব তথ্য এখানে থাকতে হবে।
অবশ্য পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় উষ্মা জানিয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বিআইডিএসকে বুঝতে হবে আমাদের জনগণ কী চায়। এটা করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে এটি আমাদের কারণে নয়।
এ সময় বিবিএসের মহাপরিচালক বলেন, এটাকে কোয়ালিটি চেক নাম দেওয়া উচিত ছিল। গণনা-পরবর্তী বাছাই কাজের জন্য এটি করা হয়। তবে এটুকু বলতে পারি, এখনো দেশের অধিকাংশ মানুষের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই। তবে আমাদের গণনার সঙ্গে বিআইডিএসের হিসাবের পার্থক্য মাত্র ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ হওয়ায় এটি সীমার মধ্যে রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সবসময় ক্ষোভ ঝাড়তেন বিবিএসের দুর্বলতা নিয়ে। তবে এবার তাদের দুর্বলতা কিছুটা কমেছে। আমাদের আরও পরিচ্ছন্ন হিসাব করা উচিত। আমাদের পরিসংখ্যান যত শুদ্ধ হবে, জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণেও তত সহজ হবে।
গত বছর ১৫ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা হয়। এ সময় সিলেট এলাকায় বন্যা হওয়ায় ওই এলাকায় আরও এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়ে ২৮ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। জনশুমারিতে এবার ৩৫টি তথ্য নেওয়া হয়েছে।
তখন ভোররাত। বাইরে ঝিরিঝিরি তুষার পড়ছে। তীব্র শীতে ঘরের উষ্ণতায় বেশিরভাগ মানুষই গভীর ঘুমে। কিন্তু সে ঘুম যে আর ভাঙবে না তা জানা ছিল না হাজারো মানুষের। ভোর সোয়া ৪টার সময় তীব্র ভূমিকম্পের আঘাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু শহরের বাসিন্দারা। এরপর বেলা বাড়তে থাকলে শুরু হয় উদ্ধার তৎপরতা। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার হতে শুরু করে একের পর এক মরদেহ আর আহত মানুষ। তবে দফায় দফায় ভূমিকম্প-পরবর্তী ঝাঁকুনি (আফটার শক) আর দুপুর দেড়টার দিকের আরেক দফায় কম্পনে একদিকে যেমন নতুন করে ধসে পড়ে বহু বাড়িঘর, তেমনি ব্যাহত হয় উদ্ধারকাজও। বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার রাত ২টা অবধি দুই দেশে অন্তত ২ হাজার ৬০০ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কয়েক হাজার মানুষকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো চাপা পড়ে আছে অনেকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ১৯৩৯ সালের পর একে তার দেশের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করে উদ্ধার তৎপরতা ও পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবিলায় বিদেশি সহায়তাও চেয়েছেন। আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে তুরস্কের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, ভোর সোয়া ৪টায় আঘাত হানে প্রথম ভূমিকম্প। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য বলছে, রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পনটির কেন্দ্র ছিল তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরে। এর পরে আরও কয়েকটি আফটার শকে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও সিরিয়ার কয়েকটি এলাকা। আর দুপুর দেড়টার দিকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পনে ফের কেঁপে ওঠে ওইসব এলাকা। এর কেন্দ্র ছিল কাহরামানমারাস শহরে। গণমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা গেছে, কাহরামানমারাস শহরে ধসে পড়া ভবনগুলোর চারপাশে লোকজন জড়ো হয়ে জীবিতদের খোঁজ করছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের দাবি, সেটিও ছিল আরেক দফার ভূমিকম্প, আফটার শক নয়। এদিন তুরস্ক বা সিরিয়া ছাড়াও লেবানন, মিসর, সাইপ্রাস এবং ইসরায়েল জুড়ে লাখ লাখ মানুষ কম্পন অনুভব করে। কেঁপে ওঠে সুদূর গ্রিনল্যান্ডও।
আলজাজিরা বলছে, নিহতদের মধ্যে দেড় হাজারের বেশি তুরস্কের আর এক হাজারের বেশি সিরিয়ার। যদিও দেশ দুটির সরকারি তথ্যের সঙ্গে এ সংখ্যার তফাত রয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে আলজাজিরা বলছে, তুরস্কে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো কাহরামানমারাস, গাজিয়ানতেপ, সানলিউরফা, দিয়ারবাকির, আদানা, আদিয়ামান, মালত্য, ওসমানিয়ে, হাতায় ও কিলিস। ওইসব এলাকার ২ হাজার ৮১৮টি ভবন ধসে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে। তুরস্ক সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে উদ্ধারকারীদের পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়ে সহায়তা করতে জনসাধারণকে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছে। ওই ১০টি শহর ও প্রদেশের স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি হাতায়, মারাশ এবং আন্তেপের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকাতে বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা দুর্গতদের কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করছি। প্রচণ্ড ঠান্ডা, অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তারা খোলা জায়গায় আছে। ইতিমধ্যে সিরিয়ার উত্তরাংশে লাখ লাখ মানুষ তাঁবুতে ঠাঁই নিয়েছে।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদলু আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাতে এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রথম ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের অঞ্চলে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দিনের তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসবে আর রাতে তা হিমাঙ্কের নিচে থাকবে। প্রায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পুরু তুষারপাত হতে পারে। আর উত্তরে ভারী তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলে আগামী দিনগুলোর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ওপরে উঠবে না বলে মনে করা হচ্ছে। যার অর্থ ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার তুষারপাত হতে পারে। এতে করে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়ে প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে।
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার সরকার, হাসপাতাল ও উদ্ধারকর্মীরা ভূমিকম্পে ৮১০ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা ও তারতুস প্রদেশে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এগুলো সিরিয়ার সরকারনিয়ন্ত্রিত এলাকা। আর তুর্কিপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠীনিয়ন্ত্রিত দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাও অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাসেবা এবং জরুরি সরবরাহের সুযোগ সীমিত। ওইসব এলাকায় কাজ করা একটি ত্রাণ সংস্থা হোয়াইট হেলমেট জরুরি সাহায্যের আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত মানুষজনকে ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে। আলেপ্পোর উত্তর-পশ্চিমে এক শহর থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভবনগুলো ধসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধুলোর বিশাল মেঘের মধ্য দিয়ে বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছে এবং চিৎকার করছে।
১৯৯৫ সালে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত সিরিয়ার জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্রের প্রধান রায়েদ আহমেদ রাষ্ট্রীয় বেতার স্টেশনকে বলেন, ‘আমাদের এ কেন্দ্রের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প।’
বিশ্বনেতাদের শোক, পাশে থাকার আশ্বাস : তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপ্রধান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। তিনি বলেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার এ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ পাশে আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তুরস্ক ও সিরিয়ার এ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ তাদের পাশে আছে। তিনি তার সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
তুরস্ক ও সিরিয়াকে জরুরি মানবিক সেবা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে চীনও। ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ইউনিয়নের আটটি দেশ থেকে ১০টি উদ্ধার দলকে সক্রিয় করা হয়েছে তুরস্ককে সহযোগিতার জন্য। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ফ্রান্স, গ্রিস, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও রোমানিয়া। কমিশন আরও জানিয়েছে, ইতালি ও হাঙ্গেরিও তুরস্কে টিম পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। জার্মানির ফেডারেল এজেন্সি ফর টেকনিক্যাল রিলিফ আশ্রয় শিবির ও চিকিৎসা ইউনিটের ব্যবস্থা করতে পারে বলে জানিয়েছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফায়েজার। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কারিয়াকোস মিতসোতাকিস শোক ও সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছেন তুরস্ককে। ভারত সরকার বলেছে, তাদের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনীর দুটি দলে ১০০ জনের মতো সদস্য তুরস্কের উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। চিকিৎসক দলও প্রস্তুত। ইরানও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থা সহযোগিতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তুরস্কে ইসরায়েলি ত্রাণ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরোধ পাওয়ার পর সিরিয়াতেও ত্রাণ পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তুরস্কের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টোলটেনবার্গ টুইটারে লিখেছেন, তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং সহযোগিতা প্রস্তুত করছি। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি মধ্যপ্রাচ্য আঞ্চলিক প্রধান কার্স্টেন হানসেন বলেছেন, সিরিয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে সহযোগিতা পাঠানোর জন্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে বড় ধরনের মানবিক সহযোগিতা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কাতার। স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, স্পেনের শহুরে উদ্ধার টিম তুরস্ক যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়া ও তুরস্ককে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে তার দেশ। সিরীয় প্রেসিডেন্ট আসাদকেও প্রায় একই ধরনের বার্তা পাঠিয়েছেন পুতিন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, সহযোগিতা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে তার দেশ। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্দি উভয় দেশের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেছেন, সংস্থাটি জীবিতদের জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছে। তুরস্কে উদ্ধার ও অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞ এবং একটি জরুরি মেডিকেল টিম পাঠাবে যুক্তরাজ্য। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভ্যান বলেছেন, ভূমিকম্পের ঘটনায় গভীর উদ্বেগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় যেকোনো সহযোগিতা প্রদানে আমরা প্রস্তুত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসোস বলেছেন, আহত ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের অত্যাবশ্যক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য জরুরি মেডিকেল টিমকে সক্রিয় করা হয়েছে।
বাংলাদেশিদের হতাহতের তথ্য নেই, সহায়তা করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ : তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। দেশ দুটির এ দুঃসময়ে বাংলাদেশ কী ধরনের সহযোগিতা করতে পারে সেটিও জানতে চেয়ে ঢাকার তরফে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, মানবিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য তুরস্কের কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা ইতিমধ্যেই জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের উত্তর পেলেই প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দিতে প্রস্তুত আমরা।
তিনি আরও বলেন, তুরস্কে আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে জেনেছি ভূমিকম্পে কোনো বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। কেউ আহত হয়েছে কি না সে বিষয়েও আমরা খোঁজখবর রাখছি। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুওলুকের কাছে পাঠানো শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তুরস্কে ঘটে যাওয়া মারাত্মক ভূমিকম্পে প্রাণহানির জন্য তুরস্কের সরকার এবং জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় তিনি বলেন, এই শোকাবহ মুহূর্তে তুরস্কের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণ এবং নিহতদের পরিবারের জন্য আমরা প্রার্থনা করছি। ভূমিকম্পে যারা প্রাণ হারিয়েছে তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ফয়সাল মেকদাদের কাছে পাঠানো শোকবার্তায় ড. মোমেন সিরিয়ার সীমান্তে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে হতাহতের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। এ ভয়াবহ দুর্যোগে নিহত ও আহত সবার পরিবারের সদস্য এবং সিরিয়ার জনগণের সঙ্গে আমরাও গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশ এ সংকটময় সময়ে সিরিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের সঙ্গে রয়েছে।’
গত ২২ বছর ধরে দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের ৩৩ জেলায় রোগটি দেখা দিয়েছে। চলতি বছরের ১ মাস ৬ দিনে ৬ জেলার ৭ উপজেলায় ১০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ও তাদের মধ্যে ৭ জনই মারা গেছেন। সে হিসাবে মৃত্যুহার দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২২ বছরে রোগটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৩২৫ ও মারা গেছে ২৩০ জন। মৃত্যুহার ছিল ৭১ শতাংশ। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে নিপাহ রোগে মোট আক্রান্ত হলো ৩৩৫ ও মারা গেছে ২৩৭ জন।
এমন অবস্থায় সারা দেশে রোগটি নিয়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ২ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের সংগঠনের কাছে এক চিঠিতে নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরের ঝুঁকির কথা জানায়।
চিঠিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, রোগী দেখার সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। রোগী দেখার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। জ্বরের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে অবশ্যই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে। জ্বরের পাশাপাশি রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে রোগীকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখতে হবে। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিচর্যাকারীরা শুধু গ্লাভস, মাস্ক পরলেই হবে।
নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০টি আইসোলেশন শয্যা এবং ১০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ধরনের রোগীদের রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গতকাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা, নওগাঁর নওগাঁ সদর, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ, পাবনার ঈশ্বরদী, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ ও নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় রোগী পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে হবে।’
একমাত্র বাহক খেজুরের কাঁচা রস ও উৎস বাদুড় : বাংলাদেশে নিপাহ রোগের একমাত্র বাহক খেজুরের কাঁচা রস ও উৎস বাদুড় বলে জানান সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কোনো গবেষণাতেই এখনো বাদুড় ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর থেকে নিপাহ রোগ ছড়ানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু বাদুড়ের মধ্যেই নিপাহ পাওয়া গেছে। অন্য কোনো প্রাণী, যেমন মুরগি, হাঁস, গরু, বাছুর, ভেড়া এগুলোর কোনোটার মধ্যেই নিপাহ পাওয়া যায়নি। এমনকি শূকরের মধ্যে পাওয়া যায়নি।’
এ বিশেষজ্ঞ জানান, বাংলাদেশে প্রথমে নিপাহ ভাইরাস রোগের জন্য শূকরকে কারণ হিসেবে দেখা হতো। কারণ বাদুড়ের কাছে থেকে শূকর আক্রান্ত হতো। শূকর থেকে মানুষে হতো। কিন্তু ২০০৪ সালে টাঙ্গাইলে যখন নিপাহর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তখন আবিষ্কার হয় খেজুরের কাঁচা রস খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।
ডা. মুশতাক বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে বাদুড়ের খাওয়া পাম ফল শূকরের পানি খাওয়ার বড় বড় গামলার মধ্যে পড়ে। সেই পানি খেয়ে শূকর আক্রান্ত হয় এবং এসব শূকরের সংস্পর্শে যেসব মানুষ যেত, তারা আক্রান্ত হতো। ভারতের কেরালায় যে নিপাহ পাওয়া গেছে, সেটা সম্ভবত আধা খাওয়া ফল থেকে হয়েছে। আর বাংলাদেশে বহু বছর আগে সীমান্তসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় নিপাহ পাওয়া গিয়েছিল খেজুরের রস থেকে। কিন্তু তখন সেটার কারণ সঠিকভাবে আবিষ্কৃত হয়নি। এখন ধারণা করা হয় সম্ভবত খেজুরের কাঁচা রস খেয়েই হয়েছিল।’
আক্রান্ত কম হলেও রোগটি বিপজ্জনক : নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের হার কম হলেও এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা বেঁচে থাকে, তারা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভোগে। কয়েকটি জেলায় এখন পর্যন্ত রোগী পাওয়া গেলেও সব জেলাই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বিভিন্ন অনলাইন শপে এখন খেঁজুরের রস বিক্রি হচ্ছে। তারা প্রচার করছে, সব ধরনের সতর্কতা মেনে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু শুধু বাদুড় মুখ দিলেই নয়, বাদুড়ের লালা এবং প্রস্রাব থেকে ভাইরাসটি রসের মধ্যে আসতে পারে। খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার পর নিপাহতে আক্রান্তের লক্ষণ দেখা যায় সাধারণ ৮ থেকে ৯ দিনের মধ্যে। অন্যদিকে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসাদের লক্ষণ দেখা যায় ৬ থেকে ১১ দিনের মধ্যে।’
বাংলাদেশে মৃত্যুহার ৭১% : বাংলাদেশে গত ২২ বছর ১ মাস ৬ দিনে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭১ শতাংশই মারা গেছে। এমনকি এ বছর গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই মারা গেছে। সে হিসাবে এ রোগে মৃত্যুহার অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিপাহ ভাইরাসকে ‘ডেডলি ডিজিজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, এ ভাইরাসবাহিত রোগের কোনো ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। যার কারণে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা ৭০ থেকে ১০০ ভাগ। আর যারা বেঁচে থাকে তাদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের স্নায়বিক দুর্বলতায় ভোগে।
এ ব্যাপারে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্ক আক্রান্ত করে। মস্তিষ্ক প্রদাহেই মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এই প্রদাহ বেশ মারাত্মক রোগ। এ রোগের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এখনো আবিষ্কার হয়নি। কোনো ওষুধও আবিষ্কার হয়নি। মস্তিষ্ক প্রদাহের চিকিৎসায় একমাত্র উপায়। যারা দ্রুত মস্তিষ্ক প্রদাহের চিকিৎসায় আওতায় আসে, তারা বেঁচে যায়। কিন্তু বেঁচে গেলেও তাদের এটার ধকল বয়ে বেড়াতে হয়।’
খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না : এ রোগ থেকে বাঁচতে হলে কিছুতেই খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া যাবে না বলে সতর্ক করে দেন ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘কোনো আধা খাওয়া বা আংশিক খাওয়া ফল পড়ে থাকলে সেটা খাওয়া যাবে না। এমনকি তালগাছের রস থেকে যে তাড়ি তৈরি হয়, সেটা খেয়েও বাংলাদেশে মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। তালের রসও বাদুড়ের লালা অথবা মূত্রের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। সুতরাং তালের রসও খাওয়া যাবে না।’
ডা. মুশতাক বলেন, ‘বাংলাদেশে আগে বাদুড় কাঁচা রসে মুখ দিত না। বাদুড়ের দ্বারা কাঁচা রস সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিককালের। বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। কারণ আগে বন-জঙ্গলের ফল খেয়ে বাদুড় থাকত। বনের গভীরে দিনের বেলায় ঘুমাত। কিন্তু বন কেটে আমরা সাফ করে ফেলেছি। এখন বাদুড় খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে এবং খেজুরের রস খাচ্ছে।’
আক্রান্তের লক্ষণ, চিকিৎসা : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, নাক, মুখগহ্বর দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নিপাহ ভাইরাস। এতে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বর, মাথা ঘোরা, বমি, খিঁচুনি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রলাপ বকে, অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায়। শরীরে ভাইরাস প্রবেশের ৭-১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্কে আক্রমণ করে। এতে মস্তিষ্কে এনকেফেলাইটিস (মস্তিষ্কে প্রদাহ) হয়। এনকেফেলাইটিসের বিরুদ্ধে কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল নেই। ভাইরাস শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ রোগের চিকিৎসা হয় লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। ব্রেনের প্রদাহ কমানোর জন্য সম্ভাব্য ওষুধ যেগুলো আছে, সেগুলো দেওয়া হয়। রোগীকে আমরা আইভি ফ্লুইড ও জ¦র থাকলে তা কমানোর ওষুধ দিই। অবস্থা খুব খারাপ হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়।’
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) কাছে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পাওনার পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটি এলএনজি আমদানি করেও চালানের বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে না। বছরের পর বছর এনবিআর থেকে বকেয়া পরিশোধে এবং বিল অব এন্ট্রি দাখিল করতে তাগাদা দেওয়া হলেও অগ্রগতি নেই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দে অনুমতি চেয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পেট্রোবাংলার কাছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বকেয়া থাকায় কাস্টম হাউসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফিসক্যাল ডিসিপ্লিন ও শুল্ক আনুষ্ঠানিকতার শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।’
বকেয়া রাজস্বের বিষয়ে সম্প্রতি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া জগেন্দ্র নাথ সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। রাজস্ব পাওনা হলে অবশ্যই পরিশোধ করা হবে। তিতাস থেকেও এনবিআরের কাছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা আছে বলে জানি। সব বিষয় নিয়েই বৈঠক করা হবে।’
এনবিআরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, বকেয়া পরিশোধ না করলে ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করা হবে বলেও পেট্রোবাংলাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এবার এনবিআরের অনুমতি নিয়ে ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পথে হাঁটছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ২২ হাজার ৬০১ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর সঙ্গে গত অর্থবছরের পাওনা যোগ হয়ে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।
সম্প্রতি এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট থেকে পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপকের (এফএমডি) বকেয়া পরিশোধে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, ‘বকেয়া পাওনা আদায়ে পেট্রোবাংলা দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনাসহ বৃহৎ করদাতা ইউনিট (মূসক) দপ্তর ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সভা হয়েছে। এসব সভায় পেট্রোবাংলা বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কোনো মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বকেয়া রাখবে না বলে জানালেও বাস্তবায়ন হয়নি। পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ বকেয়া পরিশোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়নি।’
পাওনা পরিশোধ না করলে বিদ্যমান মূসক আইন অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব থেকে অর্থ কর্তনের বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও এনবিআরের চিঠিতে জানানো হয়েছে। এনবিআর থেকে পাঠানো চিঠিতে দাবিনামার অন্তত ২০ শতাংশ পরিশোধের পাশাপাশি বাকি টাকা ছয় মাসের কিস্তিতে পরিশোধের অনুরোধ করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় এলএনজি আমদানিতে। পেট্রোবাংলা চেষ্টা করছে রাজস্বের বিষয়ে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে।’
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে পাঠানো আরেক চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পেট্রোবাংলার আমদানি করা এলএনজি বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ায় গ্যাস পরিবহনকারী কার্গো জাহাজ থেকে মহেশখালীতে অবস্থিত এলএনজি টার্মিনালের এফএসআরইউতে এলএনজি আনলোড করা হয়। এই ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কাস্টমস আইনের ৭৯(এ) ধারা অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রেরিত বিল অব এন্ট্রি এবং এনবিআরের ২০০১ সালের এক আদেশ অনুযায়ী বিল অব এন্ট্রিসহ আনুষঙ্গিক দলিলাদি সংশ্লিষ্ট কমিশনারে দাখিল করতে হয়। সেই অনুযায়ী পণ্য শুল্কায়ন ও শুল্ককর পরিশোধ করে খালাসের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলার পণ্যচালান আমদানি হওয়ার ছয় মাস পরে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়নি, যা কাস্টমস আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, কাস্টম হাউস থেকে পেট্রোবাংলাকে ১০ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২০ জুন আমদানিকারক পেট্রোবাংলাকে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়, কিন্তু কোনো জবাব দেয়নি। ২৬ জুন আবার চিঠি দেওয়া হয়; যাতে বলা হয়, বকেয়া পরিশোধ ও আইনের পরিপালন করা না হলে কাস্টমস আইন ও মূসক আইন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের বিন লক, পণ্য খালাস বন্ধ ও ব্যাংক হিসাবের লেনদেন কার্যক্রম অপরিচালন করা হবে। এরপরও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বকেয়া পরিশোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে ৭ জুলাই ও ২১ সেপ্টেম্বর পেট্রোবাংলা থেকে চিঠির মাধ্যমে কাস্টম হাউসকে জানানো হয় যে অর্থ বিভাগ থেকে ভর্তুকি প্রাপ্তি সাপেক্ষে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে বকেয়া শুল্ককর পরিশোধ করা হবে।
প্রসঙ্গত, পেট্রোবাংলা সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশের তেল, গ্যাস ও খনিজ অনুসন্ধান এবং উন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, পরিশোধন ও বাজারজাতকরণেও কাজ করে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়নে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারি চুক্তিও সম্পাদন করে থাকে।
নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী মে মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সব প্রস্তুতি সারতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরকে প্রধান করে গঠিত কমিটি আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসবে। শেরেবাংলা নগরে ইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সীমানা পরিবর্তনের বিষয়ে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নেওয়া হবে।
ইসির সূত্র বলছে, সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য এ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন আসনের বিষয়ে ১০০টির মতো আবেদন জমা পড়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করছে ইসি। তবে আবেদন যা-ই জমা পড়ুক, বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজন অনুসারে সীমানায় পরিবর্তনের পক্ষে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরো তথ্য দিলেই আমরা সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ দ্রুত শেষ করতে পারতাম। কিন্তু তাদের তথ্য দিতে আরও দেরি হবে। আবার নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী আমাদের মে মাসের মধ্যেই এ সংক্রান্ত কাজ শেষ করতে হবে। সেটি কীভাবে হবে তা নিয়েই আগামীকাল (আজ) বৈঠক হবে। বৈঠকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে। যে খসড়া প্রতিবেদন পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে পেয়েছি, তা থেকে চূড়ান্ত প্রতিবদেন ৪-৫ শতাংশ এদিক-ওদিক হয়। তারপরও আমাদের কাজে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
তিনি জানান, ইসি কীভাবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নাকি আসনের আয়তনের ভিত্তিতে তা নিয়ে, কীভাবে কাজ সম্পন্ন হবে, এই প্রক্রিয়ায় কারা দায়িত্বে থাকবে প্রভৃতি ঠিক করা হবে বৈঠকে। মূলত প্রাথমিক কর্মপন্থা নির্ধারণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে।
সূত্র জানায়, জনশুমারি ও গৃহগণনার খসড়া প্রতিবেদন ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে আরও সময় লাগতে পারে। ইতিমধ্যে জেলাভিত্তিক জনসংখ্যাও প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক হিসাব প্রস্তুতের কাজ চলছে। ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা যে সফটওয়্যারের সাহায্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ করেন, সেটি দিয়ে এক মাস ধরে বিভিন্ন তথ্যের পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে পাওয়া খসড়া তথ্যের ভিত্তিতেই কাজ হচ্ছে।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিকল্পনা ব্যুরোর কাছ থেকে জনশুমারির একটা খসড়া পেয়েছি। তা দিয়েই কাজ এগিয়ে রাখছি।’
সূত্র বলেছে, আগে সীমানা নির্ধারণ করতে আইনি অনেক সমস্যা হতো। কোনো কোনো আসনের ভোটাররা বা প্রার্থীরা মামলাও করতেন। ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ছিল ওই এলাকার ভোট। কিন্তু ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনকে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়ে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ’ আইন পাস হয়। আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, ইসির সীমানা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে দেশের কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন করা যাবে না।
সীমানা আইন-২০২১-এ আরও বলা আছে, সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে উল্লিখিতসংখ্যক সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে পুরো দেশকে উক্ত সংখ্যক একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় রাখা এবং জনশুমারির ভিত্তিতে যথাসম্ভব বাস্তবভিত্তিক বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। আইনের ৮ নম্বর ধারায় একটি উপধারা যুক্ত করা হয়। তাতে বলা আছে, দৈব-দুর্বিপাকে বা অন্য কোনো কারণে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে বিদ্যমান সীমানার ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। তবে ইসিকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলেও বিতর্ক ও ঝামেলা এড়াতে এবার জনসংখ্যা নয়, প্রশাসনিক ও ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গেলে নানা প্রশাসনিক অসুবিধার সৃষ্টি হবে। তাই সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখণ্ডতা এবার সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কাছে ইসি আবেদন না চাইলেও অনেকেই নিজ থেকে আবেদন জমা দিচ্ছেন। এর মধ্যেই প্রায় ১০০ আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে আবেদন করেছেন সংক্ষুব্ধরা। সংশ্লিষ্ট আসনের সরকারি-বিরোধী প্রার্থীর দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি চাইলে সীমানার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আপত্তি ও পরামর্শ জমা দিতে পারবেন।
অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘কত আবেদন জমা পড়েছে তার সমন্বিত হিসাব আমরা এখনো করিনি। প্রায় ১০০টির মতো আবেদন জমা পড়েছে।’
সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহল থেকেই বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। অনেকেই বর্তমান সীমানা বহাল রাখা, কেউ কেউ আগে যে সীমানায় নির্বাচন হয়েছিল তা বহাল রাখার কথা বলেছেন। মৌখিক তদবির থাকলেও এমপিদের কেউ এখনো লিখিত আবেদন করেননি। মন্ত্রী, এমপি ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য আবেদনে রয়েছে। বেশির ভাগ মন্ত্রী-এমপির পক্ষে যারা আবেদন করেছেন, তারা বর্তমান সীমানাতেই নির্বাচন করার পক্ষে।
সূত্র বলছে, কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনের সীমানা নিয়ে পাঁচটি আবেদন জমা পড়েছে। একটিতে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) ও কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে আসন পুনর্নির্ধারণ এবং আরেকটি আবেদনে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলায় সীমানা পুনর্নির্ধারণ চাওয়া হয়েছে। পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী, হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের আবেদনও জমা পড়েছে ইসিতে।
সিরাজগঞ্জ-১ ও ৫ আসন নিয়েও আবেদন জমা পড়েছে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলায় সমন্বয়ের (বেলকুচি ও কামারখন্দ) ভিত্তিতে আসন পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। পিরোজপুর-৩ আসনের (মঠবাড়িয়া উপজেলা) বর্তমান সীমানা বহাল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেওয়ার সময় শেষ হলে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। এরপর দাবি, আপত্তি ও শুনানি শেষে চূড়ান্ত করা হবে সংসদীয় আসনের সীমানা। বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক বিতর্ক এড়াতে প্রয়োজন অনুসারে আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনার পক্ষে এবং সেভাবে প্রস্তুতি রাখছেন বলে একাধিক কর্মকর্তার দাবি।
সীমানা পুনর্নির্ধারণসংক্রান্ত কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত আবেদন আহ্বান করিনি। তারপরও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দরখাস্ত দিচ্ছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারা যোগাযোগ করছেন। দুই রকম দরখাস্তই আসছে আমাদের কাছে। আমরা জনশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে পারব না। জুনের মধ্যে আমরা সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করব।’
২০০১ সালের নির্বাচনের সময় ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে সেনাসমর্থিত নির্বাচন কমিশন ১৩৩ সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল। প্রতি আদমশুমারির পর সীমানা পুনর্নির্ধারণের নিয়ম রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই ৫৩টি আসনে পরিবর্তন আনে কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন সর্বশেষ ২৫টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন করেছিল।
জনশুমারির জন্য গত বছরের জুন মাসে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন ও নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।