
আগের সীমানা বহাল রেখে সংসদীয় আসনের খসড়া প্রকাশের আগেই নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সীমানা পুনর্বিন্যাসের আবেদন জমা পড়ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ২৫টি আসনের সীমানা নিয়ে আবেদন জমা পড়ার তথ্য পেয়েছে দেশ রূপান্তর। নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, আবেদনকারীদের মধ্যে কেউ পুনর্বিন্যাস আর কেউ বহাল চান। এসব আবেদনের বেশিরভাগেই দেখা যায়, সংসদ সদস্যরা (এমপি) সরাসরি করেননি। তাদের অনুসারী বা এলাকার পক্ষে কয়েকজন মিলে ইসিতে আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আবেদনের বিষয়ে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন তারা। তবে কেউ কেউ ইসিতে সশরীরে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও দাবি করেন, সীমানার বদলের ব্যাপারে যাননি। আগের সীমানা বহাল রাখার ব্যাপারে গেছেন। সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদন সম্পর্কে তারা কিছু জানে না বলেও দাবি করেন।
সূত্রমতে, সিরাজগঞ্জ সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) এসএম নাছিম রেজা নূর ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) হাসনা হেনা। এ তিন জনপ্রতিনিধি সীমানা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন। তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অখ-তা বজায় রেখে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাকে সিরাজগঞ্জ-২ (সিরাজগঞ্জ-কামারখন্দ) আসনে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছেন।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি কাজিপুর উপজেলা ও সিরাজগঞ্জ সদর আসনের পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে। এ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। সিরাজগঞ্জ-২ আসন সদরের ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে। অর্থাৎ জয়ের আসনে পাঁচটি ইউনিয়ন হাবিবে মিল্লাতের আসনের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে।
দেশ রূপান্তরের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস চেয়ে যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান এসএম নাছিম রেজা নূর সদরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক। ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) হাসনা হেনা সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন আলীর মেয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ তিনজনই স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাতের অনুসারী।
আবেদনপত্রে তারা বলেছেন, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ সদর উপজেলা নিয়ে একটি নির্বাচনী আসন ছিল। সদরের ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০০৮ সালে ৪টি ইউনিয়ন ও ২০১৮ সালে ১টি ইউনিয়ন কাজীপুর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে সিরাজগঞ্জ-১ আসন বিন্যাস করা হয়। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে কাজীপুরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার থেকে ওই ইউনিয়নগুলোর দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলাকে দুটি আসনে ভাগ করার ফলে প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা পরিষদসহ সব ক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তারা জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইন ২০২১ অনুযায়ী, উপজেলাকে অবিভাজিত রাখার বিষয়টি বিবেচনার জন্য আবেদন করেছেন।
জানতে চাইলে সরকারি দলের আরেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদন করিনি। আমার কর্মী-সমর্থক করা মানে আমি করেছি এটা প্রমাণ হয় না। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
আবেদনকারীরা তার অনুসারী এ বিষয়ে হাবিবে মিল্লাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তারা আওয়ামী লীগ করে। আমাদের দল করে, আমাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু আবেদনের বিষয়টি আমি জানি না।’ তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে আবেদনের কপি চেয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করিনি। সীমানা নিয়ে আমার আসনের জনগণ সন্তুষ্ট। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
কমিশনে সশরীরে গিয়ে আবেদন জমা দেওয়ার কথাও জানা গেছে। ইসি সূত্র বলছে, কুমিল্লা-১ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান কবিতাসহ অন্তত পাঁচজন ইসিতে গিয়েছিলেন। সুবিদ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার ইসিতে যান। এর আগে গিয়েছেন মেরিনা জাহান।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া ইসিতে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কোনো আবেদন করিনি। দাউদকান্দি-মেঘনা দুই উপজেলা মিলিয়ে কুমিল্লা-১ অনেক বড় আসন। আমি ইসিতে গিয়েছিলাম। আগের সীমানা বজায় রাখার কথা বলতে গিয়েছি।’
ইসি সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত ২৫টি আসনে শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনে ছয়টি। সীমানা পুনর্বিন্যাসে সরকারি দলের ঝোঁক থাকলেও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে আবেদন করা হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে তাদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই।
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন দপ্তরে শতাধিকের ওপর আবেদন জমা পড়েছে। সরকারের এমপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ আবেদন আসছে। কোনো এমপি চান তার নির্বাচনী এলাকার সীমানা পরিবর্তন যেন না হয়। আবার কেউ কেউ চান তিনি তার এলাকার পরিবর্তন করে অন্য আসন থেকে কিছু অংশ যুক্ত করতে।’ আবেদনের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসন নিয়ে করা আবেদনে বেলকুচি ও কামারকন্দ উপজেলার ভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ মেরিনা জাহান কবিতা তার নির্বাচনী এলাকার সীমানা বিন্যাসের কথা তুলে ধরেছেন। একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনটি হয়েছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে মেরিনা জাহানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ধরেননি। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
কুমিল্লা-২ আসনের বিষয়ে করা আবেদনে হোমনা ও তিতাসের পরিবর্তে হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে আসন পুনর্নির্ধারণ চাওয়া হয়েছে।
পিরোজপুর-৩ আসনের (মঠবাড়িয়া উপজেলা) সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানা বহাল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। গাজীপুর, ঠাকুরগাঁও, যশোর ও রাজধানী ঢাকার একটি আসনের বিষয়েও আবেদন পড়েছে বলে সূত্র জানাচ্ছে।
ইসির একাধিক সূত্র বলছে, বেশিরভাগ আবেদনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট নেতা, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ করেছেন। এদের মধ্যে এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহলের লোক রয়েছেন। আবেদনগুলো নানা মাধ্যমে ইসিতে আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, ইসির সচিব, অতিরিক্ত সচিব, নির্বাচনব্যবস্থা অনুবিভাগ, সেন্টাল ডেস্কসহ বিভাগীয় কার্যালয়ে জমা হচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো নির্দেশনা না থাকায় যেসব দপ্তর জমা দেওয়া হচ্ছে সেখানেই থেকে যাচ্ছে।
যেমন নির্বাচনব্যবস্থা অনুবিভাগে এখন পর্যন্ত ১৫টি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ওই অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম। ৮ ফেব্রুয়ারি ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, তার দপ্তরে ২৫টি আবেদন জমা পড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্যমান সীমানা বহাল রেখে এ সপ্তাহে খসড়া প্রকাশ করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
গতকাল সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘গত পাঁচ বছর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জনগণ বর্তমান সীমানায় কাজ করেছেন। যেহেতু ২০১৮ সালে কমিশন শুনানি করে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাই তাদের যদি কোথাও সমস্যা থাকে, তাহলে তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারব। কাজেই যেটা আছে, সেটা থাকুক। সেটার ওপর আবেদন আহ্বান করলে তখন দেখা যাবে।’
খসড়া প্রকাশের আগে যে আবেদনগুলো ইসিতে জমা হয়েছে সেগুলো আমলে নেওয়া হবে কি না তা নিয়ে এখনো কিছু জানায়নি নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খসড়া প্রকাশের পর কমিশন যদি আমলে নেয় তাহলে এ আবেদনগুলো থাকবে। আর আমলে না নিলে যারা যারা আবেদন করেছেন তাদের পুনরায় নতুন করে আবেদন করতে হবে।’
সীমানা নিয়ে খসড়া তালিকা প্রণয়নের পর আগামী মার্চে দাবি, আপত্তি অথবা সুপারিশ আহ্বান নিয়ে বসবে ইসি। মে মাসে আপত্তির বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক শুনানি নিষ্পত্তি করে তা গেজেট আকারে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
ইসি সূত্র বলছে, বর্তমানে এক উপজেলার ইউনিয়ন ভাগ হয়ে অন্য সংসদীয় আসনে চলে গেছে এমন সংসদীয় আসন কমবেশি ৪৫টি রয়েছে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপজেলার অখণ্ডতা বজায় রাখতে হলে এ ৪৫টি আসনে কমবেশি পরিবর্তন আনতে হবে।
সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়ে বিএনপির আগ্রহ না থাকার বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না তা তো ২০১৪ সালের নির্বাচন বলুন, ২০১৮ সালের নির্বাচন বলুন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বলুন, সব নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দলের অবস্থান পরিষ্কার, নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। দাবি মেনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বাকি বিষয়গুলো আলোচনা করে নেওয়া যাবে।’
রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনের নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি। দলটির নির্বাচনী প্রতীক হবে ‘সোনালি আঁশ’। আদালতের আদেশে দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হবে। দেরি করার সুযোগ নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আদালত নির্দেশনা দেওয়ার পর আর মাঠে খতিয়ে দেখার সুযোগ নেই। কেননা, আদালতের নির্দেশ আমরা পালন করতে বাধ্য। আদালত নিশ্চয়ই সেগুলোর প্রমাণ পেয়েছে।’
এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ইসির নিবন্ধন পেতে আবেদন করে তৃণমূল বিএনপি। যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছিল দলটি। পরে আদালতের দ্বারস্থ হন দলটির প্রধান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধনের জন্য ইসির প্রতি আদেশ জারি করে।
একই নামে দুটি দলের নিবন্ধন হয়ে যাচ্ছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘জাসদের তো একই নামে দুটি দল আছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ। তাদের মার্কা কী হবে তাও বলে দিয়েছে আদালত। তাদের মার্কা হবে সোনালি আঁশ।’
নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ৯৩টি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। পাঁচটি দল নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। দুটি দল আবেদন উইথড্র করেছে (তুলে নিয়েছে)।
আলমগীর আরও বলেন, ‘প্রাথমিক যাচাইয়ে আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব তথ্য দেওয়া প্রয়োজন ছিল সেগুলো অনেক দল দেয়নি। আমরা সেগুলো দেওয়ার জন্য বলেছি। তারা দিয়েছে। আগামী রবিবার যাচাই কমিটি ফের সেগুলো নিয়ে বসবে। এরপর মাঠ পর্যায়ে দলগুলোর কার্যালয়, কমিটি আছে কি না, এসব খতিয়ে দেখা হবে। এতে তারা উত্তীর্ণ না হলে নিবন্ধন পাবে না। অর্থাৎ প্রত্যেকটি বিষয় দেখা হবে।’
জামায়াত নেতাদের নতুন দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধী, অথবা যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাদের সংবিধান, ইসি নীতিমালা এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধন দেওয়া যাবে না। অনুমাননির্ভর কিছু বলা যাবে না। সবকিছু আমাদের আইনের দৃষ্টিতে বলতে হবে। আমাদের বলতে হবে সংবিধানবিরোধী কিছু থাকলে, আমাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নিষেধ আছে এমন কিছু যদি থাকে, আদালতের যে পর্যবেক্ষণ আছে, বিশেষ করে জামায়াতের বিষয়ে সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।’
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৩৯টি। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ২১ বাংলাদেশিকে সরিয়ে দেশটির রাজধানী আঙ্কারায় নেওয়া হয়েছে। আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের সহায়তায় তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ২১ জনকে আঙ্কারায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন হাসপাতালে ভর্তি। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, তুরস্কে বর্তমানে পাঁচ থেকে সাত হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির মৃত্যুর আঙ্কারায় তথ্য পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পের প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ৭ ফেব্রুয়ারি ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গোলাম সাঈদ রিংকুকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার অবস্থা গুরুতর। রিংকু তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের কাহরামানমারাশ সুতচু ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কয়েক বছর আগে উচ্চশিক্ষা নিতে তুরস্কে যান। এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নূরে আলমকে উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি চাঁদপুরে।
এদিকে আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ে হটলাইন চালু করা হয়েছে। যেকোনো সহায়তার জন্য এ হটলাইনে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। আঙ্কারার দূতাবাস ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রবাসীদের দুটি হটলাইনে যোগাযোগ করতে বলেছে, সেগুলো হলো +৯০ ৫৪৬ ৯৯৫ ০৬৪৭ ও +৯০ ৫৩৮ ৯১০ ৯৬৩৫। ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয় জরুরি প্রয়োজনে হটলাইন নম্বরে (+৯০৮০০২৬১০০২৬) যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশের অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য বাংলাদেশের কাছে শীতের কাপড়, ওষুধ এবং শুকনো খাবার চেয়েছে তুরস্ক। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান দূতাবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সহায়তার আহ্বান জানান।
ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে সৃষ্ট মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, দেশটি নগদ কোনো অর্থ সহায়তা নেবে না।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে ছয় হাজারের মতো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের সহায়তা চাই। ঘটনা জানার পরপরই বাংলাদেশ সরকার দ্রুত সাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখেছে। এ মানবিকতা দেখানোয় আমরা বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ।
মোস্তফা তুরান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে সহায়তাসামগ্রী নিতে চাই। শীতের কাপড়, ওষুধ, শুকনো খাবার ইত্যাদি সহায়তা দিতে পারে। ঢাকার টার্কিশ কো-অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন এজেন্সি (টিকা) অফিস এসব সহায়তা নেবে। তারা এসব সামগ্রী তুরস্কে পাঠাবে।’
বিশ্বায়ন ও ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে সংবাদপত্র রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ছাপা পত্রিকার সার্কুলেশন কমেছে এবং করোনা মহামারীতে তা আরও বিস্তৃত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এ শিল্পের টিকে থাকা কঠিন বলে উল্লেখ করেছেন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ. কে. আজাদ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলনকক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, টিডিএস ও এআইটি অব্যাহতি, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতি, করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনা, কর্মীর আয়কর থেকে প্রতিষ্ঠানের দায়মুক্তিসহ পাঁচ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। একই আলোচনায় অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) পক্ষ থেকেও কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে সভায় সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দুই সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নোয়াবের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নিউজপ্রিন্টের ওপর বর্তমানে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ। এর সঙ্গে মূসক ১৫ শতাংশ ও এআইটি ৫ শতাংশ মিলে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে নোয়াব। সেই সঙ্গে বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর ৪ শতাংশ টিডিএস ও কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশ এআইটি এবং নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূসক ধার্য করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে টিডিএস, এআইটি ও মূসক থেকে অব্যাহতির দাবি জানানো হয়েছে।
নোয়াবের প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক শিল্প মুনাফা অর্জনকারী শিল্প হওয়ার পরও তার ট্যাক্স ১০-১২ শতাংশ। অথচ সংবাদপত্র একটি রুগ্ণ শিল্প হওয়া সত্ত্বেও করপোরেট ট্যাক্স ২৭.৫ শতাংশ নির্ধারিত আছে। বিদ্যমান হার ১০-১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া কর্মীর আয়কর থেকে প্রতিষ্ঠানের দায়মুক্তি চেয়েছে নোয়াব।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘সরকার সংবাদপত্রকে ঘোষণা করেছে শিল্প হিসেবে। পরে আবারও ঘোষণা করেছে সেবা শিল্প হিসেবে। কিন্তু সংবাদপত্র সরকারের কাছ থেকে কোনো সেবা, সাহায্য, সমর্থন পায় না। কোথাও একটা ঝামেলা-বিভেদ তৈরি হয়ে আছে। সেটা বের করার দায়িত্ব কার, সেটা আমি বলতে পারব না। কিন্তু আমি ১৪ বছর ধরে এ বৈঠকগুলোতে আসি। ২০১৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো ক্ষেত্রে কোনো সামান্যতম সুযোগ-সুবিধা-ছাড় আমরা পাইনি। আপনারা যদি জিনিসটা বোঝেন এবং মানেন; তাহলে আমাদের দাবি রাখতে না পারার কোনো কারণ নেই।’
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘একটি রাষ্ট্র বিকশিত হওয়ার জন্য ভালো কর ব্যবস্থা দরকার। কর-জিডিপি অনুপাত আমাদের এত কম, নেপালের থেকেও কম কেন হবে? আমরা এটা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই আপনাদের সব কাজে যেখানে আপনারা মনে করেন ন্যায্য কর মানুষরা দিচ্ছে না বা করের আওতায় লোকজন আসছে না সেখানে আমরা সংবাদপত্র হিসেবে সাহায্য করতে পারি। এখন আপনাদের কোথায় দুর্বলতা এবং কোথায় আপনারা আটকে গেছেন, সেটা যদি শেয়ার করেন; আমরা সত্যিকার অর্থে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের দাবির পাশাপাশি পাবলিক ফোরাম হিসেবে আমাদের সমর্থন থাকবে।’
অ্যাটকোর পক্ষে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী। প্রস্তাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেবা রপ্তানি (ইউটিউব, ফেইসবুক ইত্যাদি) করে যে রেমিট্যান্স পাওয়া যায়, তা ব্যাংকে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০ শতাংশ উৎসে আয়কর কাটা হয়। যা মিডিয়া শিল্পের আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। একই ধরনের বৈদেশিক ব্যক্তি-শ্রেণির ক্ষেত্রে আয়কর মুক্ত রাখা হয়েছে। এ ধরনের রেমিট্যান্সের জন্য মিডিয়া কোম্পানির ক্ষেত্রেও আয়কর মুক্ত রাখার দাবি জানান তিনি।
ইকবাল সোবহান তার বক্তব্যে বর্তমান আয়কর আইন অনুযায়ী, বিজ্ঞাপন বিল থেকে ৪ শতাংশ উৎসে আয়কর কাটার বদলে তা ২ শতাংশে নামিয়ে আনা, মিডিয়া শিল্পের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির ক্ষেত্রে অন্যান্য শিল্পের মতো শুল্ক ও ভ্যাট মুক্ত করা এবং ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শনের জন্য ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে চার্জের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানান।
নোয়াব ও অ্যাটকোর প্রস্তাবনা শোনার পর সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘করের আওতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। ঠিকাদারদের টিন ও রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। অনেক কোম্পানির টিন সনদ দেখা হয়। এটার কারণে নেট (করজাল) বাড়ছে।’
এনবিআর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সঙ্গে কাজ করছি। গাড়ির মালিক ট্যাক্স দেন কি না? আমরা ডিপিডিসি ও ডেসকোর সঙ্গে কাজ করছি। বাড়ির মালিক খুঁজে ট্যাক্স নেব। ঢাকার সব ফ্ল্যাটের মালিকের ট্যাক্স নেওয়া হবে। মিটারের মালিক ধরে বাড়ির মালিক খুঁজে ট্যাক্স নেওয়া হবে। সেই কাজ আমরা করে যাচ্ছি। সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে ইন্ট্রিগেশন করছি। এভাবে কর বাড়ানোর কাজ করছি।’ এ সময় নোয়াব ও অ্যাটকোর প্রস্তাবনা বিবেচনার আশ্বাস দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
আলোচনায় নোয়াবের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। অন্যদিকে অ্যাটকোর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিদুল হাসান, মাছরাঙা টেলিভিশনের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার আবদুল্লাহ আল যাবেদ, সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের ও বাংলাভিশনের চেয়ারম্যান আবদুল হক।
বাংলাদেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে তা পর্যবেক্ষণ করবে উন্নয়ন সহযোগী ৯টি দেশ। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা বৈঠক করবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এই দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয় সভা থেকে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। যাতে বলা হয়, মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন (এমএফসি) নামে একটি বৈশ্বিক জোটের সদস্য ওই ৯ দেশের কূটনীতিকরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গতকাল আলোচনায় বসেন। মার্কিন দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত হেলেন লা-ফেইভ ঢাকায় এমএফসির কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক উদ্যোগ চালুর জন্য এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমর্থন করায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান। নাগরিক সমাজের সদস্য ও সাংবাদিকরা উদ্বোধনী বৈঠকে উপস্থিত
হয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে তাদের কাজের বর্ণনা দেন। উপস্থিত প্রতিনিধিরা গণমাধ্যমের বর্তমান পরিস্থিতি, অনলাইন নিউজ পোর্টালের সেন্সরিং এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয় দেখানোর সাম্প্রতিক ঘটনাসহ বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এমএফসি বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমর্থন করতে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, সরকার এবং অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে এখন থেকে বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি একটি আন্তঃআঞ্চলিক অংশীদারত্ব, যা অনলাইন ও অফলাইনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমর্থনে একসঙ্গে কাজ করে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তাকে সমর্থন করে এবং যারা সাংবাদিকদের ক্ষতি করে তথা গণমাধ্যমের কাজকে কঠোরভাবে সংকুচিত করার অপচেষ্টা চালায় তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ করে।
ডিপ্লোম্যাটিক নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভ সারা পৃথিবীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত। যেসব দেশে এমএফসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কূটনৈতিক মিশন রয়েছে সেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও অগ্রসরের জন্য বিভিন্ন সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম। এমএফসি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে গ্লোবাল কনফারেন্স ফর মিডিয়া ফ্রিডমে প্রতিষ্ঠিত হয়। ছয়টি মহাদেশের অর্ধশতের বেশি দেশ এই কোয়ালিশনের সঙ্গে রয়েছে।
ক্রীড়া প্রতিবেদক : বয়সভিত্তিক আসরগুলোতে আধিপত্য ধরে রেখে ফের দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গত রাতে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি দেশের ফুটবলের ঋণের বোঝাটাও যেন বাড়িয়ে নিচ্ছে অকুতোভয় মেয়েরা। নিয়মিত সাফল্যে তারাই যে বিশ্বমানচিত্রে ফুটবলজাতি হিসেবে বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে।
কমলাপুরকে ঠিক যেন গত বছর সেপ্টেম্বরের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় রূপ দিয়েছিল মেয়েরা। সেবার সিনিয়র সাফে নেপালকেই ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব জিতেছিল সাবিনা-কৃষ্ণরা। মাঝে নভেম্বরে কমলাপুরে ভাগ্য বিড়ম্বনায় নেপালের কাছে খোয়াতে হয় সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী আসরের শিরোপা। তবে এবার আর ভুল করেননি গোলাম রব্বানী ছোটনের কোনো শিষ্য। নিজেদের ঘর সুরক্ষিত রেখে তারা দুমড়েমুচড়ে ফেলেছে নেপালের রক্ষণ। পুরোটা সময় নির্ভুল ফুটবল উপহার দিয়ে উপস্থিত হাজার ছয়েক দর্শককে দারুণ একটা ম্যাচের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ করে দেন তারা।
কমলাপুরের চোটপ্রবণ কৃত্রিম টার্ফ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। অথচ এই মাঠটাই নারী ফুটবল জাগরণের তীর্থক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে। এই মাঠে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সাফের বয়সভিত্তিক আসরের শিরোপা জিতেছে স্বাগতিকরা। এ ছাড়া একবার এখানেই এএফসির একটি বয়সভিত্তিক আসরের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মেয়েরা। ছেলেদের ফুটবল যখন উল্টো পথে হাঁটছে, মেয়েরা তখন বারবার দেশকে দিচ্ছে মাথা উঁচু করে রাখার উপলক্ষ। এ নিয়ে সাফ আটটি বয়সভিত্তিক আসর আয়োজন করেছে। এর মধ্যে চারটিতেই শিরোপা বাংলাদেশের। বাকি চারটিতে রানার্স-আপ। কালকের রাত আরেকবার প্রমাণ করল, ভারত, নেপালকে ছাপিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলের নতুন পাওয়ার হাউজ বাংলাদেশ।
লিগপর্বে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে অভিযান শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র। শেষ ম্যাচে ভুটানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে আসা। নেপালও বলতে গেলে অসাধ্য সাধন করে এসেছিল ফাইনালে। হট ফেভারিট ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দেয় দলটি। তবে বাংলাদেশের ভীতিটা জয় করতে পারেনি তারা। শুরু থেকেই নেপালকে কোণঠাসা করে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। যদিও নেপালের গোলের দরজা খুলতে তাদের সময় লেগেছে অনেকটা। ৪২ মিনিটে ফাইনালে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার সাজেদা আক্তার রিপা অসাধারণ গোলে নেপালের প্রতিরোধ ভাঙেন। এর কিছু বাদেই শামসুন্নাহারের লক্ষ্যভেদ। আর ম্যাচের শেষ দিকে বদলি উন্নতি খাতুন নেপালের কফিনে ঠুকে দেন শেষ পেরেক।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোল পেতে পারতেন বাংলাদেশের লোন স্ট্রাইকার আকলিমা খাতুন। মাহফুজা খাতুনের চিপ নেপাল কিপার কবিতা বিকে এগিয়ে এসে ঠিকঠাক ক্লিয়ার করতে পারেননি। আকলিমা সেই ক্লিয়ারেন্স পেয়ে ফাঁকা পোস্টে বল রাখতে পারেননি। ১৮ মিনিটে রিপার আড়াআড়ি পাস বক্সে ভালো জায়গায় পেয়েও শট নিতে দেরি করেন আকলিমা। তার এলোমেলো শট শুয়ে পড়ে রুখে দেন নেপাল কিপার কবিতা। ৩৬ মিনিটে প্রথম বলার মতো আক্রমণ করেছিল নেপাল। তবে মমতা পুনের লো-ক্রস আয়ত্তে নিয়ে আমিশা কারকি যে শট নেন তা বার ঘেঁষে বাইরে যায়। পরের মিনিটে শামসুন্নাহারের ক্রস গোলমুখ থেকে পা ছোঁয়াতে পারেননি আকলিমা। এরপর মাহফুজার পাস ধরে বক্সের বাইরে থেকে রিপার ডান পায়ের শট কিপার ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ফিস্ট করেন। বারবার হতাশ হওয়া বাংলাদেশকে দিশা দেখান রিপা। ৪২ মিনিটে স্বপ্না রানীর লং বল রিপা আলতো টোকায় বাড়ান আকলিমাকে। তবে তিনি ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি। নেপাল ডিফেন্ডার কুমারী তামাং ক্লিয়ার করতে গিয়ে রিপার পায়ে তুলে দেন। বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের বাঁকানো শটে দূরের পোস্টে বল জমা দেন এই উইঙ্গার। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ২-০ করেন শামসুন্নাহার। আফিদা খন্দকারের লং বল নেপালের ডিফেন্ডার প্রতীক্ষা চৌধুরী ক্লিয়ার করতে পারেননি। দ্রুত বক্সে ঢুকে আগুয়ান কিপারের পাশ দিয়ে বল দূরের পোস্টে জড়িয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাতে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাবটাও নিশ্চিত হয় ৫ গোল করা শামসুন্নাহারের।
প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর নেপাল চেষ্টা করেছিল খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আক্রমণে ওঠার। তবে বেশিক্ষণ সেটা বজায় রাখতে পারেনি। উল্টো বাংলাদেশই বারবার চড়াও হয়ে খেলেছে। ৫৬ মিনিটে আফিদার লম্বা ফ্রি-কিকে শামসুন্নাহার দ্রুত বক্সে গিয়ে পা ছোঁয়ালেও বল বারের ওপর দিয়ে যায়। ম্যাচের ৮০ মিনিটে বাংলাদেশ কিপার রুপনা চাকমার দৃঢ়তায় গোল পায়নি নেপাল। আমিশা কারকির শট ডান দিকে শুয়ে কোনোমতে রুখে দেন আসর সেরা গোলকিপার। ৮৭ মিনিটে অসাধারণ ফ্রি-কিকে বদলি উন্নতি খাতুনকে গোল উৎসবে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেন রিপা। বক্সের ডান দিক থেকে রিপার ফ্রি-কিক সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্টে জড়ানোর আগে আলতো টোকায় গোলের কৃতিত্ব নিজের করে নেন উন্নতি।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
ব্রাজিলের সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় খেলতে এসেছিলেন নেইমার। তখন কাতালানদের মধ্যমণি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। দুই দেশের রাজনৈতিক বিরোধ চরমে। তবু সেসবকে পাশ কাটিয়ে দুজনে হয়ে ওঠেন বন্ধু।
ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে নেইমার পাড়ি জমিয়েছিলেন প্যারিসে। তবুও বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তার টানেই মেসিকে যখন বার্সা ছেড়ে দেয়, তখন এই ব্রাজিলিয়ান পার্ক দে প্রিন্সেসে ভেড়াতে মধ্যস্ততা করেন।
পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে মেসির। কিংবদন্তি এই ফুটবলার এবার ফুটবল ছেড়ে যাচ্ছেন সকার খেলতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে মাঠ মাতাবেন তিনি।
মেসি নিজে সেই ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার দলবদল নিয়ে চলছিল নানা নাটকীয়তা। সেই সব রহস্যময় দিনগুলোতে নেইমার কি জানতেন মেসির ঠিকানা হতে চলেছে কোনটা?
এক সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেছেন, 'আমি জানতাম মেসি মায়ামিতে যাবে (হাসি)।'
তারপর নেইমার যোগ করেন, 'মেসি আমার সেরা বন্ধুদের একজন। সে আমাকে দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি তার সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি এটা আমার সৌভাগ্য। আমি জানতাম সে মায়ামিতে যাচ্ছে, এ নিয়ে আমার সঙ্গে তার কথাও হয়েছে। শহর ও জীবনযাত্রার কারণে মেসি সেখানে দারুণ সময় কাটাবে, এটা তাকে বলেছিলাম। আমি নিশ্চিত তার পদচারণায় দেশটির লিগে আসবে আমুল পরিবর্তন।'
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’