
বিশ্বায়ন ও ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে সংবাদপত্র রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ছাপা পত্রিকার সার্কুলেশন কমেছে এবং করোনা মহামারীতে তা আরও বিস্তৃত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এ শিল্পের টিকে থাকা কঠিন বলে উল্লেখ করেছেন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ. কে. আজাদ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলনকক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, টিডিএস ও এআইটি অব্যাহতি, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতি, করপোরেট ট্যাক্স কমিয়ে আনা, কর্মীর আয়কর থেকে প্রতিষ্ঠানের দায়মুক্তিসহ পাঁচ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। একই আলোচনায় অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) পক্ষ থেকেও কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে সভায় সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দুই সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নোয়াবের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নিউজপ্রিন্টের ওপর বর্তমানে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ। এর সঙ্গে মূসক ১৫ শতাংশ ও এআইটি ৫ শতাংশ মিলে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে নোয়াব। সেই সঙ্গে বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর ৪ শতাংশ টিডিএস ও কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশ এআইটি এবং নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূসক ধার্য করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে টিডিএস, এআইটি ও মূসক থেকে অব্যাহতির দাবি জানানো হয়েছে।
নোয়াবের প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক শিল্প মুনাফা অর্জনকারী শিল্প হওয়ার পরও তার ট্যাক্স ১০-১২ শতাংশ। অথচ সংবাদপত্র একটি রুগ্ণ শিল্প হওয়া সত্ত্বেও করপোরেট ট্যাক্স ২৭.৫ শতাংশ নির্ধারিত আছে। বিদ্যমান হার ১০-১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া কর্মীর আয়কর থেকে প্রতিষ্ঠানের দায়মুক্তি চেয়েছে নোয়াব।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘সরকার সংবাদপত্রকে ঘোষণা করেছে শিল্প হিসেবে। পরে আবারও ঘোষণা করেছে সেবা শিল্প হিসেবে। কিন্তু সংবাদপত্র সরকারের কাছ থেকে কোনো সেবা, সাহায্য, সমর্থন পায় না। কোথাও একটা ঝামেলা-বিভেদ তৈরি হয়ে আছে। সেটা বের করার দায়িত্ব কার, সেটা আমি বলতে পারব না। কিন্তু আমি ১৪ বছর ধরে এ বৈঠকগুলোতে আসি। ২০১৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো ক্ষেত্রে কোনো সামান্যতম সুযোগ-সুবিধা-ছাড় আমরা পাইনি। আপনারা যদি জিনিসটা বোঝেন এবং মানেন; তাহলে আমাদের দাবি রাখতে না পারার কোনো কারণ নেই।’
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘একটি রাষ্ট্র বিকশিত হওয়ার জন্য ভালো কর ব্যবস্থা দরকার। কর-জিডিপি অনুপাত আমাদের এত কম, নেপালের থেকেও কম কেন হবে? আমরা এটা বিশ্বাস করি না। আমরা চাই আপনাদের সব কাজে যেখানে আপনারা মনে করেন ন্যায্য কর মানুষরা দিচ্ছে না বা করের আওতায় লোকজন আসছে না সেখানে আমরা সংবাদপত্র হিসেবে সাহায্য করতে পারি। এখন আপনাদের কোথায় দুর্বলতা এবং কোথায় আপনারা আটকে গেছেন, সেটা যদি শেয়ার করেন; আমরা সত্যিকার অর্থে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের দাবির পাশাপাশি পাবলিক ফোরাম হিসেবে আমাদের সমর্থন থাকবে।’
অ্যাটকোর পক্ষে প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসির চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী। প্রস্তাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেবা রপ্তানি (ইউটিউব, ফেইসবুক ইত্যাদি) করে যে রেমিট্যান্স পাওয়া যায়, তা ব্যাংকে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১০ শতাংশ উৎসে আয়কর কাটা হয়। যা মিডিয়া শিল্পের আয়ের তুলনায় অনেক বেশি। একই ধরনের বৈদেশিক ব্যক্তি-শ্রেণির ক্ষেত্রে আয়কর মুক্ত রাখা হয়েছে। এ ধরনের রেমিট্যান্সের জন্য মিডিয়া কোম্পানির ক্ষেত্রেও আয়কর মুক্ত রাখার দাবি জানান তিনি।
ইকবাল সোবহান তার বক্তব্যে বর্তমান আয়কর আইন অনুযায়ী, বিজ্ঞাপন বিল থেকে ৪ শতাংশ উৎসে আয়কর কাটার বদলে তা ২ শতাংশে নামিয়ে আনা, মিডিয়া শিল্পের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির ক্ষেত্রে অন্যান্য শিল্পের মতো শুল্ক ও ভ্যাট মুক্ত করা এবং ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শনের জন্য ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে চার্জের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানান।
নোয়াব ও অ্যাটকোর প্রস্তাবনা শোনার পর সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘করের আওতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। ঠিকাদারদের টিন ও রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। অনেক কোম্পানির টিন সনদ দেখা হয়। এটার কারণে নেট (করজাল) বাড়ছে।’
এনবিআর বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সঙ্গে কাজ করছি। গাড়ির মালিক ট্যাক্স দেন কি না? আমরা ডিপিডিসি ও ডেসকোর সঙ্গে কাজ করছি। বাড়ির মালিক খুঁজে ট্যাক্স নেব। ঢাকার সব ফ্ল্যাটের মালিকের ট্যাক্স নেওয়া হবে। মিটারের মালিক ধরে বাড়ির মালিক খুঁজে ট্যাক্স নেওয়া হবে। সেই কাজ আমরা করে যাচ্ছি। সঞ্চয়পত্রের সঙ্গে ইন্ট্রিগেশন করছি। এভাবে কর বাড়ানোর কাজ করছি।’ এ সময় নোয়াব ও অ্যাটকোর প্রস্তাবনা বিবেচনার আশ্বাস দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
আলোচনায় নোয়াবের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। অন্যদিকে অ্যাটকোর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিদুল হাসান, মাছরাঙা টেলিভিশনের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার আবদুল্লাহ আল যাবেদ, সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের ও বাংলাভিশনের চেয়ারম্যান আবদুল হক।
রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনের নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি। দলটির নির্বাচনী প্রতীক হবে ‘সোনালি আঁশ’। আদালতের আদেশে দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হবে। দেরি করার সুযোগ নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আদালত নির্দেশনা দেওয়ার পর আর মাঠে খতিয়ে দেখার সুযোগ নেই। কেননা, আদালতের নির্দেশ আমরা পালন করতে বাধ্য। আদালত নিশ্চয়ই সেগুলোর প্রমাণ পেয়েছে।’
এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ইসির নিবন্ধন পেতে আবেদন করে তৃণমূল বিএনপি। যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছিল দলটি। পরে আদালতের দ্বারস্থ হন দলটির প্রধান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধনের জন্য ইসির প্রতি আদেশ জারি করে।
একই নামে দুটি দলের নিবন্ধন হয়ে যাচ্ছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘জাসদের তো একই নামে দুটি দল আছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ। তাদের মার্কা কী হবে তাও বলে দিয়েছে আদালত। তাদের মার্কা হবে সোনালি আঁশ।’
নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ৯৩টি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। পাঁচটি দল নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। দুটি দল আবেদন উইথড্র করেছে (তুলে নিয়েছে)।
আলমগীর আরও বলেন, ‘প্রাথমিক যাচাইয়ে আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব তথ্য দেওয়া প্রয়োজন ছিল সেগুলো অনেক দল দেয়নি। আমরা সেগুলো দেওয়ার জন্য বলেছি। তারা দিয়েছে। আগামী রবিবার যাচাই কমিটি ফের সেগুলো নিয়ে বসবে। এরপর মাঠ পর্যায়ে দলগুলোর কার্যালয়, কমিটি আছে কি না, এসব খতিয়ে দেখা হবে। এতে তারা উত্তীর্ণ না হলে নিবন্ধন পাবে না। অর্থাৎ প্রত্যেকটি বিষয় দেখা হবে।’
জামায়াত নেতাদের নতুন দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধী, অথবা যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, তাদের সংবিধান, ইসি নীতিমালা এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধন দেওয়া যাবে না। অনুমাননির্ভর কিছু বলা যাবে না। সবকিছু আমাদের আইনের দৃষ্টিতে বলতে হবে। আমাদের বলতে হবে সংবিধানবিরোধী কিছু থাকলে, আমাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নিষেধ আছে এমন কিছু যদি থাকে, আদালতের যে পর্যবেক্ষণ আছে, বিশেষ করে জামায়াতের বিষয়ে সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।’
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৩৯টি। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ২১ বাংলাদেশিকে সরিয়ে দেশটির রাজধানী আঙ্কারায় নেওয়া হয়েছে। আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ের সহায়তায় তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ২১ জনকে আঙ্কারায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন হাসপাতালে ভর্তি। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, তুরস্কে বর্তমানে পাঁচ থেকে সাত হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির মৃত্যুর আঙ্কারায় তথ্য পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পের প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ৭ ফেব্রুয়ারি ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গোলাম সাঈদ রিংকুকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার অবস্থা গুরুতর। রিংকু তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের কাহরামানমারাশ সুতচু ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কয়েক বছর আগে উচ্চশিক্ষা নিতে তুরস্কে যান। এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নূরে আলমকে উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি চাঁদপুরে।
এদিকে আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়ে হটলাইন চালু করা হয়েছে। যেকোনো সহায়তার জন্য এ হটলাইনে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। আঙ্কারার দূতাবাস ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রবাসীদের দুটি হটলাইনে যোগাযোগ করতে বলেছে, সেগুলো হলো +৯০ ৫৪৬ ৯৯৫ ০৬৪৭ ও +৯০ ৫৩৮ ৯১০ ৯৬৩৫। ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয় জরুরি প্রয়োজনে হটলাইন নম্বরে (+৯০৮০০২৬১০০২৬) যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি প্রদেশের অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য বাংলাদেশের কাছে শীতের কাপড়, ওষুধ এবং শুকনো খাবার চেয়েছে তুরস্ক। গতকাল বিকেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান দূতাবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সহায়তার আহ্বান জানান।
ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে সৃষ্ট মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, দেশটি নগদ কোনো অর্থ সহায়তা নেবে না।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে ছয় হাজারের মতো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের সহায়তা চাই। ঘটনা জানার পরপরই বাংলাদেশ সরকার দ্রুত সাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখেছে। এ মানবিকতা দেখানোয় আমরা বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞ।
মোস্তফা তুরান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে সহায়তাসামগ্রী নিতে চাই। শীতের কাপড়, ওষুধ, শুকনো খাবার ইত্যাদি সহায়তা দিতে পারে। ঢাকার টার্কিশ কো-অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন এজেন্সি (টিকা) অফিস এসব সহায়তা নেবে। তারা এসব সামগ্রী তুরস্কে পাঠাবে।’
বাংলাদেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে তা পর্যবেক্ষণ করবে উন্নয়ন সহযোগী ৯টি দেশ। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা বৈঠক করবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এই দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সমন্বয় সভা থেকে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। যাতে বলা হয়, মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন (এমএফসি) নামে একটি বৈশ্বিক জোটের সদস্য ওই ৯ দেশের কূটনীতিকরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গতকাল আলোচনায় বসেন। মার্কিন দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত হেলেন লা-ফেইভ ঢাকায় এমএফসির কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক উদ্যোগ চালুর জন্য এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমর্থন করায় উপস্থিত প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান। নাগরিক সমাজের সদস্য ও সাংবাদিকরা উদ্বোধনী বৈঠকে উপস্থিত
হয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে তাদের কাজের বর্ণনা দেন। উপস্থিত প্রতিনিধিরা গণমাধ্যমের বর্তমান পরিস্থিতি, অনলাইন নিউজ পোর্টালের সেন্সরিং এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয় দেখানোর সাম্প্রতিক ঘটনাসহ বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এমএফসি বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমর্থন করতে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, সরকার এবং অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে এখন থেকে বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি একটি আন্তঃআঞ্চলিক অংশীদারত্ব, যা অনলাইন ও অফলাইনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমর্থনে একসঙ্গে কাজ করে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তাকে সমর্থন করে এবং যারা সাংবাদিকদের ক্ষতি করে তথা গণমাধ্যমের কাজকে কঠোরভাবে সংকুচিত করার অপচেষ্টা চালায় তাদের জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ করে।
ডিপ্লোম্যাটিক নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভ সারা পৃথিবীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত। যেসব দেশে এমএফসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কূটনৈতিক মিশন রয়েছে সেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা ও অগ্রসরের জন্য বিভিন্ন সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সক্ষম। এমএফসি ২০১৯ সালের জুলাইয়ে গ্লোবাল কনফারেন্স ফর মিডিয়া ফ্রিডমে প্রতিষ্ঠিত হয়। ছয়টি মহাদেশের অর্ধশতের বেশি দেশ এই কোয়ালিশনের সঙ্গে রয়েছে।
আগের সীমানা বহাল রেখে সংসদীয় আসনের খসড়া প্রকাশের আগেই নির্বাচন কমিশনে (ইসি) সীমানা পুনর্বিন্যাসের আবেদন জমা পড়ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ২৫টি আসনের সীমানা নিয়ে আবেদন জমা পড়ার তথ্য পেয়েছে দেশ রূপান্তর। নির্বাচন কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, আবেদনকারীদের মধ্যে কেউ পুনর্বিন্যাস আর কেউ বহাল চান। এসব আবেদনের বেশিরভাগেই দেখা যায়, সংসদ সদস্যরা (এমপি) সরাসরি করেননি। তাদের অনুসারী বা এলাকার পক্ষে কয়েকজন মিলে ইসিতে আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আবেদনের বিষয়ে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন তারা। তবে কেউ কেউ ইসিতে সশরীরে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও দাবি করেন, সীমানার বদলের ব্যাপারে যাননি। আগের সীমানা বহাল রাখার ব্যাপারে গেছেন। সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদন সম্পর্কে তারা কিছু জানে না বলেও দাবি করেন।
সূত্রমতে, সিরাজগঞ্জ সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) এসএম নাছিম রেজা নূর ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) হাসনা হেনা। এ তিন জনপ্রতিনিধি সীমানা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন। তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অখ-তা বজায় রেখে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাকে সিরাজগঞ্জ-২ (সিরাজগঞ্জ-কামারখন্দ) আসনে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছেন।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনটি কাজিপুর উপজেলা ও সিরাজগঞ্জ সদর আসনের পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে। এ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। সিরাজগঞ্জ-২ আসন সদরের ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে। অর্থাৎ জয়ের আসনে পাঁচটি ইউনিয়ন হাবিবে মিল্লাতের আসনের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করা হয়েছে।
দেশ রূপান্তরের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস চেয়ে যারা আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান এসএম নাছিম রেজা নূর সদরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক। ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) হাসনা হেনা সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন আলীর মেয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ তিনজনই স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাতের অনুসারী।
আবেদনপত্রে তারা বলেছেন, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ সদর উপজেলা নিয়ে একটি নির্বাচনী আসন ছিল। সদরের ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ২০০৮ সালে ৪টি ইউনিয়ন ও ২০১৮ সালে ১টি ইউনিয়ন কাজীপুর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে সিরাজগঞ্জ-১ আসন বিন্যাস করা হয়। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে কাজীপুরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার থেকে ওই ইউনিয়নগুলোর দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলাকে দুটি আসনে ভাগ করার ফলে প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা পরিষদসহ সব ক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তারা জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইন ২০২১ অনুযায়ী, উপজেলাকে অবিভাজিত রাখার বিষয়টি বিবেচনার জন্য আবেদন করেছেন।
জানতে চাইলে সরকারি দলের আরেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি সীমানা পুনর্নির্ধারণের আবেদন করিনি। আমার কর্মী-সমর্থক করা মানে আমি করেছি এটা প্রমাণ হয় না। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
আবেদনকারীরা তার অনুসারী এ বিষয়ে হাবিবে মিল্লাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তারা আওয়ামী লীগ করে। আমাদের দল করে, আমাদের সঙ্গে আছে। কিন্তু আবেদনের বিষয়টি আমি জানি না।’ তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে আবেদনের কপি চেয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে কোনো আবেদন করিনি। সীমানা নিয়ে আমার আসনের জনগণ সন্তুষ্ট। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
কমিশনে সশরীরে গিয়ে আবেদন জমা দেওয়ার কথাও জানা গেছে। ইসি সূত্র বলছে, কুমিল্লা-১ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান কবিতাসহ অন্তত পাঁচজন ইসিতে গিয়েছিলেন। সুবিদ আলী গতকাল বৃহস্পতিবার ইসিতে যান। এর আগে গিয়েছেন মেরিনা জাহান।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া ইসিতে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কোনো আবেদন করিনি। দাউদকান্দি-মেঘনা দুই উপজেলা মিলিয়ে কুমিল্লা-১ অনেক বড় আসন। আমি ইসিতে গিয়েছিলাম। আগের সীমানা বজায় রাখার কথা বলতে গিয়েছি।’
ইসি সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত ২৫টি আসনে শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনে ছয়টি। সীমানা পুনর্বিন্যাসে সরকারি দলের ঝোঁক থাকলেও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে আবেদন করা হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, এই মুহূর্তে তাদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই।
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন দপ্তরে শতাধিকের ওপর আবেদন জমা পড়েছে। সরকারের এমপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে এ আবেদন আসছে। কোনো এমপি চান তার নির্বাচনী এলাকার সীমানা পরিবর্তন যেন না হয়। আবার কেউ কেউ চান তিনি তার এলাকার পরিবর্তন করে অন্য আসন থেকে কিছু অংশ যুক্ত করতে।’ আবেদনের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা।
সিরাজগঞ্জ-৫ আসন নিয়ে করা আবেদনে বেলকুচি ও কামারকন্দ উপজেলার ভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ মেরিনা জাহান কবিতা তার নির্বাচনী এলাকার সীমানা বিন্যাসের কথা তুলে ধরেছেন। একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসনটি হয়েছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে মেরিনা জাহানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ধরেননি। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
কুমিল্লা-২ আসনের বিষয়ে করা আবেদনে হোমনা ও তিতাসের পরিবর্তে হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে আসন পুনর্নির্ধারণ চাওয়া হয়েছে।
পিরোজপুর-৩ আসনের (মঠবাড়িয়া উপজেলা) সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানা বহাল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। গাজীপুর, ঠাকুরগাঁও, যশোর ও রাজধানী ঢাকার একটি আসনের বিষয়েও আবেদন পড়েছে বলে সূত্র জানাচ্ছে।
ইসির একাধিক সূত্র বলছে, বেশিরভাগ আবেদনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট নেতা, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ করেছেন। এদের মধ্যে এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, আইনজীবীসহ বিভিন্ন মহলের লোক রয়েছেন। আবেদনগুলো নানা মাধ্যমে ইসিতে আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, ইসির সচিব, অতিরিক্ত সচিব, নির্বাচনব্যবস্থা অনুবিভাগ, সেন্টাল ডেস্কসহ বিভাগীয় কার্যালয়ে জমা হচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো নির্দেশনা না থাকায় যেসব দপ্তর জমা দেওয়া হচ্ছে সেখানেই থেকে যাচ্ছে।
যেমন নির্বাচনব্যবস্থা অনুবিভাগে এখন পর্যন্ত ১৫টি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ওই অনুবিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম। ৮ ফেব্রুয়ারি ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, তার দপ্তরে ২৫টি আবেদন জমা পড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিদ্যমান সীমানা বহাল রেখে এ সপ্তাহে খসড়া প্রকাশ করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
গতকাল সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘গত পাঁচ বছর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জনগণ বর্তমান সীমানায় কাজ করেছেন। যেহেতু ২০১৮ সালে কমিশন শুনানি করে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তাই তাদের যদি কোথাও সমস্যা থাকে, তাহলে তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে জানতে পারব। কাজেই যেটা আছে, সেটা থাকুক। সেটার ওপর আবেদন আহ্বান করলে তখন দেখা যাবে।’
খসড়া প্রকাশের আগে যে আবেদনগুলো ইসিতে জমা হয়েছে সেগুলো আমলে নেওয়া হবে কি না তা নিয়ে এখনো কিছু জানায়নি নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খসড়া প্রকাশের পর কমিশন যদি আমলে নেয় তাহলে এ আবেদনগুলো থাকবে। আর আমলে না নিলে যারা যারা আবেদন করেছেন তাদের পুনরায় নতুন করে আবেদন করতে হবে।’
সীমানা নিয়ে খসড়া তালিকা প্রণয়নের পর আগামী মার্চে দাবি, আপত্তি অথবা সুপারিশ আহ্বান নিয়ে বসবে ইসি। মে মাসে আপত্তির বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক শুনানি নিষ্পত্তি করে তা গেজেট আকারে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।
ইসি সূত্র বলছে, বর্তমানে এক উপজেলার ইউনিয়ন ভাগ হয়ে অন্য সংসদীয় আসনে চলে গেছে এমন সংসদীয় আসন কমবেশি ৪৫টি রয়েছে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপজেলার অখণ্ডতা বজায় রাখতে হলে এ ৪৫টি আসনে কমবেশি পরিবর্তন আনতে হবে।
সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়ে বিএনপির আগ্রহ না থাকার বিষয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না তা তো ২০১৪ সালের নির্বাচন বলুন, ২০১৮ সালের নির্বাচন বলুন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বলুন, সব নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দলের অবস্থান পরিষ্কার, নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। দাবি মেনে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বাকি বিষয়গুলো আলোচনা করে নেওয়া যাবে।’
ক্রীড়া প্রতিবেদক : বয়সভিত্তিক আসরগুলোতে আধিপত্য ধরে রেখে ফের দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গত রাতে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি দেশের ফুটবলের ঋণের বোঝাটাও যেন বাড়িয়ে নিচ্ছে অকুতোভয় মেয়েরা। নিয়মিত সাফল্যে তারাই যে বিশ্বমানচিত্রে ফুটবলজাতি হিসেবে বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে।
কমলাপুরকে ঠিক যেন গত বছর সেপ্টেম্বরের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় রূপ দিয়েছিল মেয়েরা। সেবার সিনিয়র সাফে নেপালকেই ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব জিতেছিল সাবিনা-কৃষ্ণরা। মাঝে নভেম্বরে কমলাপুরে ভাগ্য বিড়ম্বনায় নেপালের কাছে খোয়াতে হয় সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী আসরের শিরোপা। তবে এবার আর ভুল করেননি গোলাম রব্বানী ছোটনের কোনো শিষ্য। নিজেদের ঘর সুরক্ষিত রেখে তারা দুমড়েমুচড়ে ফেলেছে নেপালের রক্ষণ। পুরোটা সময় নির্ভুল ফুটবল উপহার দিয়ে উপস্থিত হাজার ছয়েক দর্শককে দারুণ একটা ম্যাচের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ করে দেন তারা।
কমলাপুরের চোটপ্রবণ কৃত্রিম টার্ফ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। অথচ এই মাঠটাই নারী ফুটবল জাগরণের তীর্থক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে। এই মাঠে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সাফের বয়সভিত্তিক আসরের শিরোপা জিতেছে স্বাগতিকরা। এ ছাড়া একবার এখানেই এএফসির একটি বয়সভিত্তিক আসরের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মেয়েরা। ছেলেদের ফুটবল যখন উল্টো পথে হাঁটছে, মেয়েরা তখন বারবার দেশকে দিচ্ছে মাথা উঁচু করে রাখার উপলক্ষ। এ নিয়ে সাফ আটটি বয়সভিত্তিক আসর আয়োজন করেছে। এর মধ্যে চারটিতেই শিরোপা বাংলাদেশের। বাকি চারটিতে রানার্স-আপ। কালকের রাত আরেকবার প্রমাণ করল, ভারত, নেপালকে ছাপিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবলের নতুন পাওয়ার হাউজ বাংলাদেশ।
লিগপর্বে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে অভিযান শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র। শেষ ম্যাচে ভুটানকে ৫-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে আসা। নেপালও বলতে গেলে অসাধ্য সাধন করে এসেছিল ফাইনালে। হট ফেভারিট ভারতকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দেয় দলটি। তবে বাংলাদেশের ভীতিটা জয় করতে পারেনি তারা। শুরু থেকেই নেপালকে কোণঠাসা করে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। যদিও নেপালের গোলের দরজা খুলতে তাদের সময় লেগেছে অনেকটা। ৪২ মিনিটে ফাইনালে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার সাজেদা আক্তার রিপা অসাধারণ গোলে নেপালের প্রতিরোধ ভাঙেন। এর কিছু বাদেই শামসুন্নাহারের লক্ষ্যভেদ। আর ম্যাচের শেষ দিকে বদলি উন্নতি খাতুন নেপালের কফিনে ঠুকে দেন শেষ পেরেক।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোল পেতে পারতেন বাংলাদেশের লোন স্ট্রাইকার আকলিমা খাতুন। মাহফুজা খাতুনের চিপ নেপাল কিপার কবিতা বিকে এগিয়ে এসে ঠিকঠাক ক্লিয়ার করতে পারেননি। আকলিমা সেই ক্লিয়ারেন্স পেয়ে ফাঁকা পোস্টে বল রাখতে পারেননি। ১৮ মিনিটে রিপার আড়াআড়ি পাস বক্সে ভালো জায়গায় পেয়েও শট নিতে দেরি করেন আকলিমা। তার এলোমেলো শট শুয়ে পড়ে রুখে দেন নেপাল কিপার কবিতা। ৩৬ মিনিটে প্রথম বলার মতো আক্রমণ করেছিল নেপাল। তবে মমতা পুনের লো-ক্রস আয়ত্তে নিয়ে আমিশা কারকি যে শট নেন তা বার ঘেঁষে বাইরে যায়। পরের মিনিটে শামসুন্নাহারের ক্রস গোলমুখ থেকে পা ছোঁয়াতে পারেননি আকলিমা। এরপর মাহফুজার পাস ধরে বক্সের বাইরে থেকে রিপার ডান পায়ের শট কিপার ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ফিস্ট করেন। বারবার হতাশ হওয়া বাংলাদেশকে দিশা দেখান রিপা। ৪২ মিনিটে স্বপ্না রানীর লং বল রিপা আলতো টোকায় বাড়ান আকলিমাকে। তবে তিনি ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি। নেপাল ডিফেন্ডার কুমারী তামাং ক্লিয়ার করতে গিয়ে রিপার পায়ে তুলে দেন। বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের বাঁকানো শটে দূরের পোস্টে বল জমা দেন এই উইঙ্গার। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ২-০ করেন শামসুন্নাহার। আফিদা খন্দকারের লং বল নেপালের ডিফেন্ডার প্রতীক্ষা চৌধুরী ক্লিয়ার করতে পারেননি। দ্রুত বক্সে ঢুকে আগুয়ান কিপারের পাশ দিয়ে বল দূরের পোস্টে জড়িয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাতে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাবটাও নিশ্চিত হয় ৫ গোল করা শামসুন্নাহারের।
প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর নেপাল চেষ্টা করেছিল খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আক্রমণে ওঠার। তবে বেশিক্ষণ সেটা বজায় রাখতে পারেনি। উল্টো বাংলাদেশই বারবার চড়াও হয়ে খেলেছে। ৫৬ মিনিটে আফিদার লম্বা ফ্রি-কিকে শামসুন্নাহার দ্রুত বক্সে গিয়ে পা ছোঁয়ালেও বল বারের ওপর দিয়ে যায়। ম্যাচের ৮০ মিনিটে বাংলাদেশ কিপার রুপনা চাকমার দৃঢ়তায় গোল পায়নি নেপাল। আমিশা কারকির শট ডান দিকে শুয়ে কোনোমতে রুখে দেন আসর সেরা গোলকিপার। ৮৭ মিনিটে অসাধারণ ফ্রি-কিকে বদলি উন্নতি খাতুনকে গোল উৎসবে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেন রিপা। বক্সের ডান দিক থেকে রিপার ফ্রি-কিক সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দূরের পোস্টে জড়ানোর আগে আলতো টোকায় গোলের কৃতিত্ব নিজের করে নেন উন্নতি।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।